উপসর্গ কাকে বলে ? উপসর্গ কি ? উপসর্গ কত প্রকার ও কি কি ? উপসর্গের কাজ কী ? উদাহরনসহ ব্যাখ্যা করো।

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

উপসর্গ কাকে বলে ? উপসর্গ কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরনসহ ব্যাখ্যা কর। উপসর্গের কাজ কী ?

উঃ যেসব বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি ধাতু এবং শব্দের পূর্বে বসে ধাতু বা শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ কিংবা সংকোচন ঘটায়, তাদেরকে বলা হয় উপসর্গ।
                          অথবা,
যে সকল অব্যয়সূচক শব্দাংশ ধাতু বা শব্দের আগে বসে নতুন শব্দ তৈরি করে, তাকে উপসর্গ বলে।
                         অথবা,
উপসর্গ হলো অব্যয়সূচক শব্দাংশ যা ধাতু বা শব্দমূলের পূর্বে বসে ধাতু বা শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় এবং নতুন নতুন অর্থ যুক্ত শব্দ সৃষ্টি করে। যেমন— প্র, পরা, পরি, নির ইত্যাদি। বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক্, যেমন—

‘হার’ একটি শব্দ। যার অর্থ গলার হার বা হেরে যাওয়া। এর পূর্বে ‘প্র’ বা ‘আ’ অথবা ‘উপ’ বসালে যথাক্রমে—
  » প্রহার (প্র+হার), যার অর্থ মারা।
  » আহার (আ+হার), যার অর্থ খাওয়া।
  » উপহার (উপর+হার), যার অর্থ কাউকে কিছু দেওয়া। 
 
উপরের উদাহরণ থেকে আমরা কী পেলাম— প্র, আ, উপ । এগুলো —
১. বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি বা শব্দের অংশ।
২. অব্যয় (তার নিজস্ব কোন অর্থ নেই, স্বাধীনভাবে কোন বাক্যেও ব্যবহৃত হতে পারে না।)
৩. শব্দের আগে বসে।
৪. নতুন শব্দ সৃষ্টি করে।

‘উপসর্গ’ কথাটির মূল অর্থ ‘উপসৃষ্ট’। এর কাজ হলো নতুন শব্দ গঠন করা। উপসর্গের নিজস্ব কোন অর্থ নেই, তবে এগুলো অন্য শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে থাকে।

উপসর্গের প্রকারভেদ:

উপসর্গ তিন প্রকার: যেমন-
 
(১) সংস্কৃত উপসর্গ,
(২) বাংলা উপসর্গ,
(৩) বিদেশী উপসর্গ।

(১) সংস্কৃত উপসর্গ: বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস্কৃত উপসর্গ ২০টি। 

যেমন: প্র, পরা, অপ, সম, নি, অব, অনু, নির, দুর, বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অভি, অতি, আপ, উপ, আ।

• ছড়ার মত করে মুখস্থ করো:—
          প্র, পরা, অপ্, সম্, নি, 
          অব, অনু, নির্, দুর্, বি। 
          অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, 
          অভি, অতি, অপি, উপ, আ।

উদাহরণ: 
• প্র : প্রহার, প্রকৃষ্ট, প্রবাহ, প্রবোধ, প্রগত, প্রলয়, প্রকার, প্রতারণা, প্রয়াণ, প্রমুখ, প্রপিতামহ, প্রশংসা, প্রণতি, প্রস্তাব, প্রসার ইত্যাদি।
• পরা : পরাজয়, পরাহত, পরামর্শ, পরাকাষ্ঠা, পরাক্রান্ত, পরাভব, পরাবিদ্যা ইত্যাদি।
• অপ্ : অপমান, অপরূপ, অপব্যাখ্যা, অপকার, অপচয়, অপসারণ, অপবাদ, অপকর্ম, অপহরণ, অপশব্দ, অপসংস্কৃতি ইত্যাদি।
• সম্ : সমাবর্তন, সন্ধান, সংবিধান, সংযোগ, সম্মুখ, সংকীর্তন, সন্নিবেশ, সম্পূর্ণ ইত্যাদি।
• নি : নিগূঢ়, নিয়োগ, নিগ্রহ, নিদারুণ, নিকৃষ্ট, নিবেশ, নিক্ষেপ ইত্যাদি।
• অব : অবদান, অবচেতন, অবগাহন, অবদমন, অবমাননা, অবকাশ, অবজ্ঞা, অবতরণ ইত্যাদি।
• অনু : অনুচর, অনুমান, অনুকরণ, অনুভব, অনুকম্পা, অনুশোচনা, অনুজ্ঞা ইত্যাদি।
• নির্ : নির্লোভ, নিরাকার, নিরাশ্রয়, নিরালা, নির্বোধ, নির্ণয়, নির্গম, নির্ধারণ ইত্যাদি।
• দুর : দুর্বল, দুরাচার, দুশ্চিন্তা, দুর্মূল্য, দুরাশয়, দুর্ভিক্ষ, দুর্ভাগা ইত্যাদি।
• বি : বিকৃতি, বিকার, বিপদ, বিধাতা, বিস্তার, বিবর্ণ, বিতৃয়া, বিখ্যাত ইত্যাদি।
• অধি : অধিকার, অধিনায়ক, অধীশ্বর, অধিপতি, অধিনায়ক, অধিবাসী ইত্যাদি ।
• সু : সুজন, সুপ্রিয়, সুলভ, সুচতুর, সুতীব্র, সুদূর ইত্যাদি।
• উৎ : উৎকর্ষ, উচ্ছেদ, উদ্‌গম, উন্নতি, উৎপাদন, উৎকোচ ইত্যাদি।
• পরি : পরিচয়, পরিধান, পরিশ্রম, পরিহার, পরিণয়, পরিজন, পরিবার, পরিপূর্ণ, পরিতাপ, পরিষ্কার ইত্যাদি।
• প্রতি : প্রতিবাদ, প্রতিকার, প্রতিশোধ, প্রতিরোধ, প্রতিষ্ঠান, প্রতিদান ইত্যাদি।
• অভি : অভিনয়, অভিমান, অভিভাবক, অভিভূত, অভিমান, অভিনন্দন, অভিশাপ, অভিসার, অভিমুখ ইত্যাদি।
• অতি : অতিকায়, অতিমানব, অতিপ্রাকৃত, অত্যাচার, অতিরঞ্জন, অত্যুক্তি ইত্যাদি।
• অপি : অপিনিহিতি ।
• উপ : উপকার, উপহার, উপকথা, উপনদী, উপভোগ, উপবন ইত্যাদি ।
• আ : আকণ্ঠ, আজীবন, আমরণ, আভাস, আসমুদ্র, আকাঙ্ক্ষা, আগমন, আবাস ইত্যাদি।

               (২) বাংলা উপসর্গ
বাংলা ভাষায় নিজস্ব কিছু উপসর্গ আছে। এগুলি বাংলা উপসর্গ। নীচে বাংলা উপসর্গগুলির উল্লেখ করে সেই উপসর্গ দিয়ে কীভাবে শব্দ তৈরি হয় তা উদাহরণ দিয়ে দেখানো হল—
• অ : অনড়, অফুরন্ত, অকেজো, অকথা, অধর্ম, অনিয়ম, অকর্মা, অলস, অসম, অবেলা ইত্যাদি।
• অনা : অনাবৃষ্টি, অনাচার, অনাসৃষ্টি, অনামুখো ইত্যাদি।
• আ : আচমকা, আকাল, আলুনি, আঘাটা, আকাশ, আকাড়া ইত্যাদি।

• কু : কুকথা, কুপুত্র, কুকাজ, কুনজর, কুসঙ্গ ইত্যাদি।
• না : নাবালক, নামঞ্জুর, নাবালিকা ইত্যাদি।
• স : সটান, সজোর, সপাট ইত্যাদি।

• হা : হাঘর, হাভাত, হাপিত্যেশ ইত্যাদি।
• পাতি : পাতিলেবু, পাতিহাস, পাতিপুকুর ইত্যাদি।
• নি/নির : নিখুঁত, নিপাট, নিখরচা, নির্ভেজাল, নির্ভুল ইত্যাদি।
• বি : বিভুঁই, বিদেশ, বিমুখ, বিশুদ্ধ, বিরোধ ইত্যাদি।
• সু : সুকাজ, সুনাম, সুনজর ইত্যাদি
• রাম : রামছাগল, রামদা, রামধোলাই, রামবোকা ইত্যাদি।
• গণ্ড : গণ্ডমূর্খ, গণ্ডগ্রাম ইত্যাদি।

         (৩) বিদেশি উপসর্গ
১. ইংরেজি উপসর্গ
• ফুল (পূর্ণ)— ফুলহাতা, ফুলমোজা, ফুলপ্যান্ট, ফুলবাবু, ফুলফ্রি।
• হাফ (অর্ধেক)— হাফহাতা, হাতনেতা, হাফছাড়, হাফপ্যান্ট, হাফশার্ট, হাফটিকিট, হাফফ্রি ইত্যাদি।
• মিনি — মিনিবাস, মিনিপত্রিকা, মিনিস্কার্ট ইত্যাদি।
• হেড (প্রধান) — হেড-মাস্টার, হেড-অফিস, হেড-পন্ডিত, হেড-মৌলভি
• সাব (অধীন) — সাব-অফিস, সাব-জর্জ, সাব-ইনসপক্টের

২. ফারসি উপসর্গ: 
• আম : আমজনতা, আমদরবার, আমআদমি, আমলোক, আমপাবলিক ইত্যাদি।
• খাস : খাসকামরা, খাসদরবার, খাসমহল, খাসচাকর ইত্যাদি।
• কার : কারসাজি, কারচুপি, কারবার, কারখানা ইত্যাদি।
• গর : গরহাজির, গরমিল, গররাজি ইত্যাদি।
• না : নালায়েক, নাচার, নারাজ ইত্যাদি।
• ব : বকলম।
• বে : বেচাল, বেসামাল, বেঘোর, বেবন্দোবস্ত ইত্যাদি।
• খোশ : খোশমেজাজ, খোশগল্প ইত্যাদি।
• ফি : ফিবছর, ফিসন, ফিহপ্তা ইত্যাদি।
• নিম : নিমরাজি।
• বদ : বদনাম, বদলোক, বদহজম, বদমেজাজ, বদস্বভাব, বদগন্ধ ইত্যাদি।
• হর : হরবোলা, হররোজ ইত্যাদি।

উপসর্গ অধ্যায় থেকে শীঘ্রই এমসিকিউ প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হবে।

Leave a Reply