প্রশ্ন: “যা আর নেই, যা ঝড়-জল-মাতলার গর্ভে গেছে তাই খুঁজে খুঁজে উচ্ছব পাগল হয়েছিল।”- দুর্যোগের বর্ণনা দাও। দুর্যোগটি উচ্ছবকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল? (H.S 2017) ২.৫+২.৫=৫
উঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর ভাত’ ছােটোগল্পে এক ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিচয় পাওয়া যায়, যা উচ্ছবের জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকে ঝড়ের পূর্বাভাস বোঝা গিয়েছিল। সেদিন রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রবল ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। উচ্ছবদের কাঁচা বাড়ির মাঝখানের খুঁটিটি মাতাল আনন্দে টলছিল ধনুষ্টংকার রোগীর মতাে। তাই উচ্ছব খুঁটিটা মাটির দিকে সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরে ভয়ে ভগবানের নাম নিচ্ছিল। অন্যদিকে, তার বউ ভয়ে, কনকনে ঠান্ডায় ছেলেমেয়েদের জাপটে কাঁপছিল। হঠাৎ বিদ্যুতের আলাের ঝলকানিতে উচ্ছব দেখতে পায় মাতলা নদীর ফেনিল জল বাতাসের তােড়ে দ্রুত ছুটে আসছে। নিমেষের মধ্যে সেই বানের জল উচ্ছবের বউ,ছেলে,মেয়েকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। গাছে বেঁধে কোনােক্রমে প্রাণে বেঁচে যায় উচ্ছব।
এই দুর্যোগের পর স্বজন হারানোর শোকে উৎসব প্রায় উন্মাদের মত হয়ে গিয়েছিল। কয়েকদিন ধরে সে ধ্বংসস্তূপ আগলে বসে ছিল এবং নিজের স্ত্রী পুত্রের নাম ধরে বারবার ডাকছিল কিন্তু কারো সাড়া পায়নি। সরকারি উদ্যোগে লঙ্গরখানা চললেও উচ্ছবের কোন হুঁশ ছিলো না। খিদের জ্বালায় যখন হুঁশ ফিরল এবং লঙ্গরখানায় গেল তখন কিছুরই শেষ। সেদিন শুকনো চাল চিবিয়ে জল খেয়ে রাত কাটিয়ে ছিল। ভাতের অভাবে মানুষ থেকে ভূতের চেহারা হয়েছিল উচ্ছবের। খিদের জ্বালায় সে কাঁদতে ভুলে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পেট ভরে খাবার আশায় গ্রাম সম্পর্কিত বোন বাসিনীর সঙ্গে কলকাতা গিয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহার সেখানে ভাতের বদলে তাকে জেলে যেতে হয়েছিল।
আরো দেখো….