লোকটা জানলই না কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণি বাংলা | Lokta Janloi Na Kobitar Question Answer Class 8 Bengali wbbse

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

সাহিত্য মেলা
অষ্টম শ্রেণি বাংলা

লোকটা জানলই না কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণি বাংলা | Lokta Janloi Na Kobitar Question Answer Class 8 Bengali wbbse

লোকটা জানলই না কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণির বাংলা | Lokta Janloi Na Kobitar Question Answer Class 8 Bengali wbbse

লোকটা জানলই না কবিতার কবিতা, কবি পরিচিতি, কবিতার ব্যাখ্যা, শব্দার্থ, হাতে কলমে প্রশ্ন ও উত্তর, অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর অষ্টম শ্রেণির বাংলা | Lokta Janloi Na Kobitar Question Answer Class 8 Bengali wbbse

1. অষ্টম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

2. অষ্টম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন Click Here

লোকটা জানলই না কবিতার কবিতা, কবি পরিচিতি, কবিতার ব্যাখ্যা, শব্দার্থ, হাতে কলমে প্রশ্ন ও উত্তর, অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর অষ্টম শ্রেণির বাংলা | Lokta Janloi Na Kobitar Question Answer Class 8 Bengali wbbse

লোকটা জানলই না
—সুভাষ মুখোপাধ্যায়

বাঁ দিকের বুক-পকেটটা সামলাতে সামলাতে
হায়-হায়
লোকটার ইহকাল পরকাল গেল।
অথচ
আর একটু নীচে
হাত দিলেই সে পেত
আলাদিনের আশ্চর্য-প্রদীপ
তার হৃদয়

লোকটা জানলই না।

তার কড়িগাছে কড়ি হলো
লক্ষ্মী এলেন
রণ-পায়ে।
দেয়াল দিল পাহারা
ছোটোলোক হাওয়া
যেন ঢুকতে না পারে।
তারপর
একদিন গোগ্রাসে গিলতে গিলতে
দু আঙুলের ফাঁক দিয়ে
কখন
খসে পড়ল তার জীবন

লোকটা জানলই না।।

কবি পরিচিতিঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯- ২০০৩) : বাংলা কবিতায় এক উল্লেখযোগ্য নাম কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ১৯৪০ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ পদাতিক প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে অগ্নিকোণ, চিরকুট, ফুল ফুটুক, যত দূরেই যাই, কাল মধুমাস, ছেলে গেছে বনে, জল সইতে, প্রভৃতি। তাঁর গদ্য রচনার দৃষ্টান্ত কাঁচা-পাকা, ঢোল গোবিন্দের আত্মদর্শন প্রভৃতি গ্রন্থে ছড়িয়ে রয়েছে।

সারসংক্ষেপঃ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় ‘লোকটা জানলই না’ কবিতায় নিজের অর্থসম্পদ রক্ষা করতে ব্যস্ত একটি মানুষের ছবি এঁকেছেন। তিনি সারা জীবন ধরে অর্থের পিছনে ছুটে বেড়িয়েছেন। জীবনের লাভক্ষতির হিসাব করতে গিয়ে তিনি স্বাভাবিক অনুভূতিগুলি হারিয়ে ফেলেছেন। এভাবেই বাঁ দিকের বুক পকেট অর্থাৎ অর্থ-বিষয়-সম্পদ সামলাতে সামলাতেই তাঁকে একদিন পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিতে হয়। অথচ আরেকটু নীচে হাত দিলেই যে তিনি পেয়ে যেতেন আল্লা দিনের আশ্চর্য প্রদীপ তাঁর হৃদয়কে। অর্থাৎ মানুষের জীবনের সুন্দর দিকগুলি ধরা দিত তাঁর মনে। নিজের অজান্তেই তিনি নিজের চারিদিকে অদৃশ্য প্রাচীর গড়ে তুলেছিলেন। বাইরের প্রকৃতি তার রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ নিয়ে তাঁর মনে কোনো ছাপ ফেলতে পারেনি। প্রচুর ধনসম্পদের অধিকারী হয়েও জীবনের প্রকৃত অর্থ তিনি বুঝতে পারেননি। এভাবেই জীবন কাটাতে কাটাতে একদিন সব আর্থিক হিসাব-নিকাশকে অসম্পূর্ণ রেখেই তাঁকে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিতে হয়। কিন্তু আশ্চর্যের কথা, মানুষটি নিজের এই দুর্ভাগ্যের কথা কোনোদিনই জানতে পারলেন না।

অত্যন্ত সহজসরল ভাষায়, গল্প বলার ভঙ্গিতে রচিত এই কবিতায় আধুনিক মানুষের জীবনের এক শোচনীয় পরিণামের কথাই কবি শুনিয়েছেন। অর্থের প্রতি অতিরিক্ত লোভ কীভাবে মানুষের মনুষ্যত্বকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করে চলেছে, মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবধানকে ক্রমশ কঠিন করে তুলছে, এই কবিতায় সেকথাই প্রকাশিত হয়েছে।

নামকরণঃ নামকরণের মধ্য দিয়েই কবি তাঁর কবিতা সম্পর্কে পাঠকদের প্রাথমিক ধারণাটি দেন। তাই পাঠকের কাছে নামকরণের একটি আকর্ষণ রয়েছে। ‘লোকটা জানলই না’ কবিতাটি একটি অর্থসর্বস্ব মানুষের জীবনের কাহিনি। একশ্রেণির মানুষ টাকাপয়সা রোজগার করেই জীবন কাটায়। আর অন্য কোনো দিকে তাদের কোনো আকর্ষণ থাকে না। এই কবিতার লোকটিও তাই। তিনি সারাজীবন ধরে ধনসম্পদ সামলাতে গিয়ে জীবনের সুন্দর দিকগুলির খোঁজই পাননি। তাঁর হৃদয় বা মন কীসে সত্যিকারের সুখী হতে পারে, তা তিনি সারাজীবনেও বুঝে উঠতে পারেননি। তাঁর ইহকাল পরকাল অর্থাৎ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এইভাবেই ব্যর্থ হয়েছে। বাইরের জগৎ, প্রকৃতি আর মানুষের স্পর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন এই মানুষটিকে একদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়। তিনি জানতেও পারেন না সত্যিকারের বাঁচা কাকে বলে। সারা কবিতায় লোকটার এই অজ্ঞতার কথাই বলা হয়েছে। তাই কবিতার নামকরণ অবশ্যই উপযুক্ত ও সার্থক হয়েছে।

শব্দার্থ ও টিকা—

সামলাতে সামলাতে– আগলে রাখতে; রক্ষা করতে। ইহকাল– জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়; জীবিতকাল। পরকাল– মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত অবস্থা। আলাদিন– ‘আরব্য রজনী’ উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য চরিত্র হল আলাদিন, তার একটি আশ্চর্য প্রদীপ ছিল। আশ্চর্য-প্রদীপ– ‘আরব্য রজনী’র উল্লেখযোগ্য চরিত্র আলাদিনের একটি আশ্চর্য প্রদীপ ছিল। ওই প্রদীপটি ঘষলে তার মধ্য থেকে অলৌকিক দৈত্য বেরিয়ে আসত। সে আলাদিনের কথা অনুসারে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলত। কড়ি– শামুক জাতীয় সামুদ্রিক জীববিশেষের খোল, প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে এটি মুদ্রারূপে ব্যবহৃত হত। লক্ষ্মী– ধনসম্পদ ও সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। রণ-পা– বাঁশ ও কাঠের দ্বারা কৃত্রিমভাবে তৈরি লম্বা পা। পাহারা– প্রহরা দেওয়া। ছোটোলোক– সমাজে যারা অবনত। গোগ্রাস– বড়ো বড়ো গ্রাস। ফাঁক– ব্যবধান। খসে পড়ল– (এক্ষেত্রে) মৃত্যু হল।

হাতে কলমে প্রশ্নের উত্তর : ‘লোকটা জানলই না’ কবিতা অষ্টম শ্রেণি বাংলা

১.১ কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায় রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ?

উত্তরঃ কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম হল- ‘পদাতিক’।

১.২ তাঁর লেখা দুটি গদ্যগ্রন্থের নাম লেখাে।

উত্তরঃ তাঁর লেখা দুটি গদ্যগ্রন্থ হল- একটি ‘কাঁচা-পাকা’ অন্যটি ‘ঢোল গোবিন্দের আত্ম দর্শন’।

২। নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :

২.১ বাঁ দিকের বুক পকেটটা সামলাতে …’ — এখানে ‘বাঁদিকের বুক পকেট’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?

উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙক্তিটি কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের ‘লােকটা জানলই না’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। ‘বাঁ-দিকের বুক-পকেট’ বলতে কবি লােকটির প্রাণে বেঁচে থাকার ঐকান্তিক আগ্রহে অর্থ উপার্জন ও তা রক্ষা করার সার্বিক চেষ্টাকে বুঝিয়েছেন। সাংসারিক, আত্মকেন্দ্রিক মানুষ সাধারণত তার অত্যাবশ্যকীয় প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র বিশেষত অর্থ নিজেদের জামার বাম দিকের পকেটে রাখে। কিন্তু, সৃষ্টিকর্তার দান, দেহের বাম দিকে থাকা হৃদয়ের খোঁজ সে করে না। বাহ্য সম্পদের প্রতি মানুষ এতই মােহমুগ্ধ হয়ে পড়ে যে, জীবনের মূল উদ্দেশ্য হৃদয়কে বিকশিত করার কথা সে ভাবে না। মানুষ তার অর্থ ও সম্পত্তির দিকটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। কবির ভাবনায় এটি হওয়া অনুচিত। তাই মানুষের উপার্জনসর্বস্ব মানসিকতার দিকটি কটাক্ষ করে, কবি আলােচ্য কথাটি বলেছেন।

২.২ ‘ইহকাল পরকাল’– এই শব্দদ্বয় এখানে কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ?

উত্তরঃ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘লোকটা জানলোই না’ কবিতায় ‘ইহকাল’ ‘পরকাল’ শব্দ দুটি রয়েছে।

‘ইহকাল শব্দের ইহ শব্দের অর্থ পৃথিবী। তাই ‘ইহকাল’ মানে মানুষ পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে থাকে সেই সময়কাল আর ‘পরকাল’ কথার অর্থ হল— মৃত্যুপরবর্তী জীবন। জীবদ্দশায় মানুষ পার্থিব রীতিনীতি, আচার আচরণ পালন করে। কিন্তু, ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় পৃথিবীর সৌন্দর্য, রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ সে উপভােগ করতে পারে না। ইহকালে বাবা-মা, ভাই-বােন, স্ত্রী-পুত্র-আত্মীয়স্বজন নিয়ে সে এতটাই বিমােহিত থাকে যে মনুষ্যত্ববােধ, সহমর্মিতা, পরােপকারিতা, মানবধর্ম নিয়ে সে ভাবেই না। জাগতিক ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনকেই সে সর্বস্ব মনে করে। সে বােঝে না মানুষের অস্তিত্ব— তার জীবনের আসল মূল্য নির্ধারিত হয় তার মঙ্গলময় কল্যাণ কর্মের মাধ্যমে। আলােচ্য ‘ইহকাল ও পরকাল’ শব্দের মাধ্যমে কবি আত্মসর্বস্ব মানুষের জীবনবিচ্ছিন্ন ভাবনার প্রতি করুণা দেখিয়ে এ ধরনের জীবনকে কবি কটাক্ষ করেছেন।

২.৩ কবিতায় লােকটির দু-আঙুলের ফাঁক দিয়ে কী খসে পড়ল ?

উত্তরঃ পদাতিক কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের লেখা ‘লােকটা জানলই না’ কবিতায় বর্ণিত লােকটির দু-আঙুলের ফাঁক দিয়ে তাঁর জীবন খসে পড়ল। অর্থ উপার্জন ও তার রক্ষণাবেক্ষণ করতে করতে লােকটি এতই মােহান্ধ হয়ে পড়ে যে, সে জীবনের মূল উদ্দেশ্য— হৃদয়বৃত্তির বিকাশ ঘটানাের ক্ষেত্রে মােটেই সচেষ্ট হয় না। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা লােকটি এভাবে চলতে চলতে একদিন মারা যায়। ব্যক্তিকেন্দ্রিক হওয়া ও জাগতিক সম্পদের প্রতি অত্যন্ত আসক্ত হয়ে থাকা থেকে হঠাৎই আগাম সতর্কতা না জানিয়ে দুই আঙুলের ফাঁক দিয়ে জীবন তারা খসে পড়া অর্থাৎ, এই পৃথিবীতে তার আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার কথাই কবি বুঝিয়েছেন।

২.৪ ‘আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ’ আসলে কী ? তাকে এরকম বলার কারণ বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ আলোচ্য কবিতায় মানুষের হৃদয়কে ‘আলাদিনের আশ্চর্য-প্রদীপ’-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

আরব্য উপন্যাসের একটি জনপ্রিয় চরিত্র হল আলাদিন। সে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন একটি জাদু-প্রদীপ লাভ করেছিল। সেই প্রদীপটি ঘষলেই এসে দাঁড়াত এক জিন বা দৈত্য। সেই সর্বশক্তিমান দৈত্য তার মালিক আলাদিনের ইচ্ছা অনুসারে মুহূর্তের মধ্যে তার সব কাজ করে দিত।

কবি রূপক হিসাবে মানব হৃদয়ের সঙ্গে তার তুলনা করেছেন। কারণ হৃদয়বান মানুষ সমগ্র পৃথিবী জয় করতে পারে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো।

৩। নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :

৩.১ ‘লােকটা জানলই না’ পঙক্তিটি দু-বার কবিতায় আছে। একই পঙক্তি একাধিকবার ব্যবহারের কারণ কী ?

উত্তরঃ কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায় ‘লােকটা জানলই না’ কবিতাটিতে প্রশ্নোক্ত পঙক্তিটি দু-বার ব্যবহার করেছেন। প্রথমবার ব্যবহৃত হয়েছে কবিতায় বর্ণিত লােকটির বামদিকের বুক পকেটের সামান্য নীচে থাকা ‘হৃদয়’-এর সন্ধান-পাওয়ার প্রসঙ্গে। আর দ্বিতীয়বার ব্যবহৃত হয়েছে নিজের অজ্ঞাতেই সেই হৃদয় ও তার অমূল্য জীবন হারিয়ে ফেলার প্রসঙ্গে। কবিতার নামকরণেও পঙক্তিটি ব্যবহার করে কবি মানব জীবনের উদ্দেশ্যকে, তার মর্মার্থকে অধিকতর স্পষ্টতা দিয়েছেন। তা ছাড়া, একাধিকবার একই কথার উল্লেখ ও ভাবের পুনরাবৃত্তি তার গুরুত্বকে বাড়িয়ে দেয়। বিষয় ও ভাবনাকে সবার সামনে এনে তাকে উপলব্ধি করানাের চেষ্টা করা হয়। কবিও পাঠকের সামনে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর লক্ষ্য, মানুষ যেন জীবনের মূল উদ্দেশ্য থেকে হারিয়ে না যায়।

৩.২ কবি ‘হায়-হায়’ কোন প্রসঙ্গে বলেছেন ? কেন বলেছেন ?

উত্তরঃ পদাতিক কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায় তাঁর ‘লােকটা জানলই না’ কবিতায় খেদ, অনুতাপ ও আক্ষেপ প্রকাশক ‘হায়-হায়’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ব্যক্তিকেন্দ্রিক মানুষের আত্মসর্বস্ব সঞ্চয়ী জীবনের উদ্দেশ্যহীন শােচনীয় পরিণাম প্রসঙ্গে কবি শব্দটির প্রয়ােগ করেছেন।

আলোচ্য কবিতায় জীবনে অর্থ উপার্জন, সঞ্চয় ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যতীত লােকটি কোনাে মহৎ কার্য করেনি। অথচ, মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেরই কর্তব্য জীবনে পরের জন্য কিছু করা— মানবিক কার্য সম্পাদন করা। যেখানে অনন্ত সম্ভাবনায় জীবনের মহত্তর প্রকাশ হতে পারত, সেখানে কেবল সংকীর্ণতার ক্ষুদ্র ভাবকে আঁকড়ে ধরেই লােকটির জীবন কেটে গেল। আর এভাবেই সে নিজের ইহকাল, পরকাল দুটিই শেষ করেছে। অর্থ উপার্জন করেও তাকে মানবজাতির কল্যাণের কাজে খরচ করেনি। তারপর আচমকাই একদিন তার নশ্বর জীবন শেষ হল। তাই আত্মসর্বস্ব মানুষের জীবনের অসারতা, অসহায়তা, মূল্যহীনতা ও বেদনার স্বরূপ তুলে ধরতেই কবি ‘হায়-হায়’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন।

৩.৩ কবিতাটির নামকরণ যদি হত ‘হৃদয়’ বা ‘আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ’ তাহলে তা কতটা সার্থক হত ?

উত্তরঃ কবিতার নামকরণে কবির মনের ইচ্ছাই প্রধান। তবু কবিতা পড়ে পাঠকের মনে হতেই পারে অন্য কোনো নাম হলে যথাযথ হতে পারত। ‘লোকটা জানলই না’ কবিতাটি পড়লে দেখা যায়, ‘হৃদয়’ শব্দটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। টাকাপয়সা নিয়ে সারাজীবন ব্যস্ত লোকটা তাঁর হৃদয়ের কথা শুনতে পান না। সেই হৃদয় আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হয়ে উঠতে পারত। অর্থাৎ হৃদয়ের কথা শুনে চললে লোকটা জীবনে আশ্চর্য ফল পেতেন। কিন্তু কবিতার নামকরণ ‘হৃদয়’ হলে লোকটার গুরুত্ব কমে যেত। তাঁর চরিত্র- বৈশিষ্ট্য প্রাধান্য পেত না। আবার ‘আলাদিনের আশ্চর্য-প্রদীপ’ নামকরণ হলেও লোকটার জীবন প্রধান হয়ে উঠত না। ‘লোকটা জানলই না’ নামকরণে ‘লোকটা’-ই প্রধান হয়ে উঠেছেন। আবার একইসঙ্গে ‘জানলই না’ শব্দ দুটিতে লোকটার অজ্ঞানতা ও বোকামির পরিচয় ফুটে উঠেছে। ‘হৃদয়’ বা ‘আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ’ নামকরণটি এক্ষেত্রে সার্থক হত না। কবিপ্রদত্ত ‘লোকটা জানলই না’ নামকরণটি তাই উপযুক্ত ও সার্থক হয়েছে।

৩.৪ সুভাষ মুখােপাধ্যায়-এর লেখার যে-ধরন তােমার চোখে পড়েছে তা নিয়ে বন্ধুকে একটি চিঠি লেখাে।

উত্তরঃ এ ধরনের প্রশ্ন না আসার সম্ভাবনাই বেশি, তাই এর উত্তর দেওয়া হলো না।

৪। ‘অথচ’ শব্দটিকে ব্যাকরণের ভাষায় কী বলি ? কবিতায় এই ‘অথচ’ শব্দটির প্রয়ােগ কবি কেন করেছেন ?

উত্তরঃ ‘অথচ’ শব্দটিকে ব্যাকরণের ভাষায় আমরা বলি অব্যয়। এর অর্থ ‘তা সত্ত্বেও’ বা ‘তথাপি’। কিন্তু অর্থেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

» আলোচ্য ‘লোকটা জানলই না’ কবিতায় কবি একবার মাত্র ‘অথচ’ শব্দটির প্রয়োগ করেছেন। ‘অথচ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় কোনো বিপরীত ভাব বোঝানোর উদ্দেশ্যে। কবিতাটির প্রথম তিন পঙ্ক্তিতে বলা হয়েছে যে, লোকটির সারা জীবন কেটে গেল বাঁ দিকের বুক পকেটটা সামলাতে সামলাতে। কিন্তু আর একটু নীচেই যে রয়েছে তাঁর হৃদয়, তা সেই ব্যক্তিটি জানতেই পারলেন না। এই বিপরীত ভাবনা বোঝাতেই কবি ‘অথচ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

৫। কবিতার মধ্যে অসমাপিকা ক্রিয়ার সংখ্যা ক-টি ও কী কী ?

উত্তরঃ লোকটা জানলোইনা কবিতায় অসমাপিকা ক্রিয়ার সংখ্যা ৫টি। যথা ‘সামলাতে সামলাতে’, ‘দিলেই’, ‘ঢুকতে’, ‘গিলতে গিলতে’, ‘খসে’।

Leave a Reply