অসুখী একজন কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) বাংলা | Asukhi Ekjon Kobita Essay Type Questions Answers (Madhyamik) Class 10 Bengali wbbse
1. দশম শ্রেণির অসুখী একজন কবিতার সমস্ত ধরণের প্রশ্নোত্তর Click Here
2. দশম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
3. দশম শ্রেণির বাংলা সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট Click Here
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : অসুখী একজন কবিতা দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) বাংলা | Asukhi Ekjon Kobita Essay Type Questions Answers Madhyamik (Class 10) wbbse
• কম-বেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫
১. “যেখানে ছিল শহর / সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা।”— ‘অসুখী একজন’ কবিতা অবলম্বনে শহরের এই পরিণতি কীভাবে হল লেখো। ৫ [মাধ্যমিক ২০১৭]
অথবা, “তারপর যুদ্ধ এলো”- যুদ্ধ আসার আগের প্রেক্ষাপট এবং যুদ্ধের পরবর্তী অবস্থা কবিতা অনুসারে লেখো।
উত্তরঃ পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত একটি অসাধারণ কবিতা। যুদ্ধকে বলা হয় মানবতার শত্রু। আলোচ্য কবিতাতে সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে। যুদ্ধের নির্মম আঘাতে একটি প্রাণবন্ত শহর কীভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, কবি সেই কথাই তুলে ধরেছেন।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে শহরের অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল। এক জায়গায় উল্লেখ আছে- “একটা কুকুর চলে গেল, হেঁটে গেল গির্জার এক নান”। আরেক জায়গায় বলা হয়েছে ‘ঘাস জন্মাল রাস্তায়’। এইসব দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে শহরে শান্তিপূর্ণ নীরবতা বজায় ছিল। কিন্তু যুদ্ধের পরে চেনা শহরের ছবিটা পাল্টে গিয়েছিল।
কবি যুদ্ধটাকে রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যেমন মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু পুড়ে ছারখার হয়ে যায়, তেমনি যুদ্ধের ফলে সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গেল, বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাল, এমনকি দেবতারাও মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ল। আর, কথকের সেই মিষ্টি বাড়ি এবং তার প্রিয় জিনিসগুলি সব চূর্ণ হয়ে গেল। শহর জুড়ে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা এবং পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শহরের বুকে দগদগে ক্ষতের মতো ‘রক্তের একটা কালো দাগ’ এঁকে দিয়ে গেল।
৭. ‘অসুখী একজন’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো। ৫
উত্তরঃ সাহিত্যে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাঠক নামকরণের সাহায্যে পাঠ্য বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। নামকরণ কখনও চরিত্রকেন্দ্রিক, কখনও ঘটনাকেন্দ্রিক, আবার কখনও বা ব্যঞ্জনাধর্মীও হয়ে থাকে। এখন ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির নামকরণ কতটা সার্থক ও যুক্তিযুক্ত সেটাই আমাদের বিচার্য বিষয়।
আলোচ্য কবিতার কথক তার প্রিয়তমা নারীকে অপেক্ষায় রেখে দূরে চলে যান আর কোনোদিনই ফিরে আসেন না। অপেক্ষারতা প্রিয় তোমার সাধারণ স্বাভাবিক ঘটনার মধ্য দিয়ে জীবনপ্রবাহ চলতে থাকে। বছরের পর বছর কেটে যায়, অপেক্ষা দীর্ঘতর হতে থাকে। মেয়েটির এই বিরহ যন্ত্রণার মধ্যে আবার যুদ্ধ নামে। প্রচন্ড ধ্বংসলীলায় কেড়ে নেয় অসংখ্য প্রাণ, ধ্বংস করে বাড়িঘর, শহর পরিণত হয় শ্মশান বা কবরখানায়। কেবলমাত্র বেঁচে থেকে একাকী মেয়েটি। মন্দির মসজিদ গির্জা যা সাধারণ মানুষের আশা ভরসার জায়গা তাও যুদ্ধের আগুনে ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষের স্বপ্ন পুড়ে যায় যুদ্ধের আগুনে।
ধ্বংসস্তূপের মাঝে শহরে বেঁচে থাকা সেই অপেক্ষারত মেয়েটি আসলে জীবনের প্রতিভূ। সেই মেয়েটি একাধারে কথকের মাতৃভূমি, ভালোবাসা ও মানবতার প্রতিমূর্তি। তাই সে মৃত্যুহীন। দীর্ঘ অপেক্ষা, অপূর্ণ প্রতীক্ষা আর যুদ্ধের বীভৎসতা তাকে অসুখী করেছে। সে অসুখী একজন। পক্ষান্তরে কথক তার প্রিয় নারী, প্রিয় মাতৃভূমিকে অপেক্ষায় রেখে দূরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন এবং কখনোই ফিরে আসতে পারেননি-সেই কথকও বিচ্ছেদের বেদনায় অসুখী। অতএব, দু-দিক থেকেই ‘অসুখী একজন’ কবিতার নামকরণটি সার্থক, তাৎপর্যপূর্ণ এবং ব্যঞ্জনাময় হয়েছে উঠেছে।
৩. “সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না”– মেয়েটি কে ? তার মৃত্যু না হওয়ার কারণ কী ? ১+৪
অথবা, “শিশু আর বাড়িরা খুন হলো / সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না”– ‘শিশু আর বাড়িরা’ খুন হলো কেন ? মেয়েটি কে ? তার মৃত্যু না হওয়ার কারণ কী ? ১+১+৩
উত্তরঃ চিলির কবি পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যে যুদ্ধের উল্লেখ রয়েছে, সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে শিশু এবং বাড়ির (অর্থাৎ, বাড়ির সকল লোকজন) মারা গিয়েছিল, কেবল একটি মেয়ের মৃত্যু হয়নি।
উদ্ধৃত অংশে উল্লেখিত ‘মেয়েটি’ হলো কথকের প্রিয় নারী।
কবিতার শুরুতেই দেখা যায় যে কথক তার প্রিয় নারীকে ছেড়ে বহুদূরে চলে যাচ্ছেন। এই কথক সম্পর্কে কবিতায় বিশেষ কিছু বলা হয়নি তবে অনুমান করা যায় যে তিনি একজন যোদ্ধা অথবা একজন বিপ্লবী। কর্তব্যের আহ্বানে তিনি তার প্রিয় মানুষকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তিনি নিজে জানতেন যে তার আর ফেরা হবে না কিন্তু সেই মেয়েটি তা জানত না। মেয়েটি তার প্রিয়জনের ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুনতে শুরু করে। দিন ফুরোয়, সপ্তাহ পার হয়ে বছর কেটে যায়। কিন্তু, মেয়েটির প্রতীক্ষার অবসান হয় না।
এদিকে, রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো ভয়ঙ্কর যুদ্ধ নেমে আসে। সমস্ত সমতলে আগুন লেগে যায়। নিষ্পাপ শিশু এবং সাধারণ মানুষ খুন হয়। শান্ত, নিরীহ দেবতারাও যুদ্ধের করালগ্রাস থেকে বাঁচতে পারেনি। শহরের সব ঘরবাড়ি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। কিন্তু সেই মেয়েটির মৃত্যু হয় না। কারণ, এই মেয়েটি হলো শাশ্বত প্রেমের প্রতীক। যুদ্ধ আর সবকিছু ধ্বংস করতে পারলেও ভালোবাসার মৃত্যু হয় না। হিংসা বনাম প্রেমের লড়াইয়ে সবসময় প্রেমেরই জয় হয় এবং হিংসার পরাজয় ঘটে। তাই যুদ্ধের পরেও সেই মেয়েটির মৃত্যু হয়নি।
৪. অসুখী একজন কবিতায় কাকে অসুখী বলা হয়েছে ? সে কেন অসুখী ? কবিতা অবলম্বনে তা বুঝিয়ে দাও।
অথবা, অসুখী একজন কবিতার মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ
অসুখী ব্যক্তির পরিচয়ঃ সাম্যবাদী ভাবধারার কবি পাবলাে নেরুদা তার অসুখী একজন কবিতায় আক্ষরিক ভাবে দুজন অসুখী মানুষের ছবি রয়েছে। এজন কবিতার কথক এবং অন্যজন বক্তার ফেলে আসা প্রিয়জন। সেই প্রিয়জনের সুখহীনতার কথা বা সমগ্র কবিতা জুড়ে তুলে ধরেছেন।
অসুখী হওয়ার কারণঃ অসুখী একজন কবিতায় কবি দেখিয়েছেন যুদ্ধ মানুষকে অসুখী করে। কবি একজনকে চিহ্নিত করে তার জবানীতে এক পারিবারিক তথা সামাজিক ও রাষ্ট্রনৈতিক জীবনের চালচিত্র অঙ্কন করেছেন। বক্তা যুদ্ধের প্রয়ােজনে ঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। আর তার প্রিয়জন মেয়েটিকে বাড়িতে রেখে যায়। মেয়েটি তার অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকে। দিন, মাস, বছর পেরিয়ে গেলেও সে আর ফিরে আসে না। যুদ্ধে সমতলে আগুন ধরে।
কবির মিষ্টি বাড়ি, বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, করতলের মতাে পাতা, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ সবকিছু যুদ্ধের আগুনে চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যায়। যেখানে শহর ছিল সেখানে পড়ে থাকে কাঠকয়লা। দোমড়ানাে লােহা। পাথরের মূর্তির বিভৎস মাথা, রক্তের কালাে দাগ। মানুষের জীবনের আশা ভরসার দেবতারা ভেঙে যায়। টুকরাে টুকরাে হয়ে তাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়।
মূল্যায়নঃ এরুপ প্রেক্ষাপটে একাকী দাঁড়িয়ে অসুখী মেয়েটি শুধু জীবন ধারণের কষ্ট নিয়ে অপেক্ষমান। তার পরিচিত ব্যক্তির আগমন। প্রত্যাশা তাকে অধীর করে তুলছে। অন্তরকে বিদীর্ণ করে তুলেছে। তাই বলা যায় কবিতাটি যুদ্ধ বিরােধী তথা মানবতাবাদী কবি।
৫. ‘সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না’— মেয়েটি কে, কোন প্রসঙ্গে এই বক্তব্য ? বক্তব্যটির তাৎপর্য লেখো।
উত্তরঃ
মেয়েটির পরিচয়ঃ চিলিয়ান কবি পাবলাে নেরুদা রচিত অসুখী একজন কবিতায় মেয়েটি হল কবির প্রিয়তমা। অর্থাৎ কবিতার কথক ও সৈনিকের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে।
প্রসঙ্গঃ দরজার সামনে অনন্ত প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল প্রিয়তমা। কবি তাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে চলে এসেছিলেন। অনেক সময় অতিক্রান্ত হলেও কবিতার কথক ফিরতে পারেননি। যুদ্ধের ভয়াবহ আগুনে সবকিছু ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু মেয়েটি তবুও অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। সেই প্রসঙ্গ আলােচ্য অংশটির অবতারণা।
তাৎপর্যঃ কবির প্রিয়তমা কখনােই অনুমান করতে পারেননি যে, কবি কখনাে আর ফিরে আসবে না। সময়ের ধারায় একের পর এক বছর কেটে যায়। বৃষ্টির ধারা কবির পথচলা পায়ের চিহ্ন মুছে দেয়। ঘাম জন্ম নেয় পথের বুকে একের পর এক পাথরের মতাে বছরগুলাে চেপে বসে মেয়েটির বুকে। মাথার ওপর অসহ্য যন্ত্রণা নেমে আসে।
যুদ্ধ শুরু হলে চারিদিকের সময়ে পরিবেশ যুদ্ধের আগুনে ধ্বংস হয়। শিশু আর বাড়িরা মৃত্যুবরণ করে। তবুও সেই মৃত্যুপুরীর মধ্যে প্রিয়তমা মেয়েটি অনন্ত প্রতীক্ষা নিয়ে বেঁচে থাকেন। সমস্ত ভাঙনের মধ্যে সে যেন একমাত্র জীবনের প্রতীক। যুদ্ধের বিধ্বংশি আগুনের মন্দিরের দেবতা পর্যন্ত মন্দির থেকে বাইরে বেরিয়ে এল। কবির স্বপ্নের বাসভূমি চূর্ণ হয়ে গেল। তবুও সেই মেয়েটি অনন্ত। প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে রইল।
৬. ‘তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না’— এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ? কোন প্রসঙ্গে এই বক্তব্য ? স্বপ্ন দেখতে না পারার কারণ কী ?
উত্তরঃ
দেবতাদের কথা : চিলিয়ান কবি পাবলাে নেরুদার অসুখী একজন কবিতায় দেবতাদের কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : যুদ্ধের সময় চারদিকে মৃত মানুষের শব জমে উঠেছিল। যে দেবতারামানুষকে সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করে, মানুষের অনন্ত কল্যাণ করবেন, তারাওমন্দির থেকে টুকরাে টুকরাে হয়ে ভেঙে পড়েছিল। সেই প্রসঙ্গে এই উক্তি।
স্বপ্ন দেখতে না পারার কারণ : অষ্টাদশ শতাব্দীর অন্নদামঙ্গলের কবি ভারতচন্দ্র লিখেছিলেন— ‘নগর পুড়লে দেবালয় কী এড়ায় ? ‘এই তির্যক বক্তব্যের কারণ সঙ্গত। যখন চারিদিকে ধ্বংসের কোলাহল শােনা যায় তখন দেবতারা যেন মানুষের মতাে অসহায় হয়ে পড়েন। যুদ্ধের আগমনে চারিদিকে শােনা যায় ভয়ংকর শব্দ দানবের রণ উন্মত্ততা। বাতাসে যখন বারুদের গন্ধ ঘরবাড়ি সবকিছু ভেঙে যায়।
সারা অঞ্চল জুড়ে চলে আগুনের হােলি খেলা। ঈশ্বরের ধ্যানমগ্ন মূর্তিগুলি ছিন্নভিন্ন হয়। মন্দির থেকে তারা উল্টেপড়েন। টুকরাে টুকরাে হয়ে যায় দেবতাদের প্রতিকৃতি। কবির মনে হয়েছে এইদেবতারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। তারা যেন অসহায় মানুষের মতাে বিপন্নতারশিকার হল। তারা আর মুক্তির পথ দেখাতে পারবে না। আশার আলাে তাদেরজীবন থেকে দূরে চলে গেল কারণ তারা নিজেরাই অসহায়।
৭. “তারপর যুদ্ধ এল”— ‘তারপর’ বলতে কবি কোন সময়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন ? যুদ্ধের যে ছবি কবি এঁকেছেন তা বিবৃত করো। ২+৩
উত্তরঃ কবি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবিতার কথক প্রিয়তমাকে নিজ বাসভূমিতে ফেলে রেখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। অথচ জীবন তার নিজস্ব ছন্দে চলতে থাকে। কিন্তু প্রিয় নারীটির অপেক্ষার যন্ত্রণা ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। বছরের পর বছর কাটে। এমন সময় আসে যুদ্ধ। ঘটনা পরস্পরার এই ক্রমটিকে ফুটিয়ে তুলতেই এখানে কবি ‘তারপর’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
মানুষের শান্ত জীবনে ভয়াবহ যুদ্ধ ‘রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো’ নেমে এল। সমতলে যেখানে মানুষের বসতি, সেখানে আগুন ধরে গেল। সর্বগ্রাসী যুদ্ধের আগ্রাসন থেকে দেবতারাও নিস্তার পেল না। মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ছিটকে পড়ল দেবতাদের মূর্তিগুলো। মানুষের দেববিশ্বাস ভঙ্গ হল। প্রাণের প্রতীক শিশুরা এবং বস্তু তথা আশ্রয়ের প্রতীক বাড়িরা খুন হল। কথকের স্মৃতি-ঘেরা মিষ্টি বাড়ি, ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমিয়ে থাকার বারান্দা, গোলাপি গাছ, চিমনি, জলতরঙ্গ সব চূর্ণ হয়ে গেল। শহর জুড়ে পড়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, ভাঙা মূর্তি, রক্তের কালো দাগ। সর্বত্র কেবল রক্তপাত, ধ্বংস আর মৃত্যুর ছবি। শুধু সেই ধ্বংসস্তূপে বেঁচে থাকলেও মেয়েটির অপেক্ষা ও অবিচল ভালোবাসা।
৮. ‘তারপর যুদ্ধ এল’— পাঠ্য কবিতায় কবি যুদ্ধের যে আশ্চর্য করুণ ও মর্মস্পর্শী ছবি এঁকেছেন তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
অথবা, শিশু আর বাড়িরা খুন হলো।’— এই আশ্চর্য সংহত ছবিটির মধ্যে যুদ্ধের পৈশাচিক বর্বরতা কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা কবিতা অবলম্বনে লেখো।
উত্তরঃ চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদা জীবনযুদ্ধের একজন লড়াকু সৈনিক। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দুই বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। তাই পাঠ্য কবিতায় তিনি যুদ্ধের যে করুণ ও মর্মস্পর্শী ছবি এঁকেছেন তা অত্যন্ত বাস্তবোচিত। ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি আসলে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এক শাশ্বত ভালোবাসার গল্প। কবি যুদ্ধের বীভৎসতার মাঝে প্রেম যে অনির্বাণ তা দেখাতে গিয়ে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধের চিত্র তুলে ধরেছেন। কবি তাঁর প্রিয়তমাকে অপেক্ষায় রেখে দূরে চলে যাওয়ার পর একদিন ভয়াবহ বীভৎসতা নিয়ে যুদ্ধ নেমে আসে। মানুষ আশ্রয়হীন হল। নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পেল না শিশুরাও। দাবানলের মতো যুদ্ধের আগুন সমতলে ছড়িয়ে পড়ল। ধ্বংস হল দেবালয় আর তার ভেতরের দেবতারা। তাদের দেবত্ব নষ্ট হল। মানুষকে তারা স্বপ্ন দেখাতে ব্যর্থ হল। কবির সেই মিষ্টি বাড়ির ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, প্রাচীন জলতরঙ্গ সব চূর্ণ ও ভস্ম হল যুদ্ধের আগুনে। ঠিক একইভাবে শহরটাও পুড়ে গেল। বীভৎসতার চিহ্ন নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা আর রক্তের একটা কালো দাগ। শুধু ধ্বংসস্তূপে বেঁচে থাকল সেই মেয়েটির অপেক্ষা ও অবিচল ভালোবাসা।
৯. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”– উদ্ধৃত অংশটির বক্তা কে ? তিনি কাকে ছেড়ে দেন ? তিনি চলে যাওয়ার পরবর্তী ঘটনার ব্যাখ্যা করো। ১+১+৩
উত্তরঃ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় উদ্ধৃত অংশটির বক্তা কবি স্বয়ং পাবলো নেরুদা।
তিনি তার প্রিয়তমা নারীকে অপেক্ষায় রেখে নিজ বাসভূমি ছেড়ে দূরে চলে যান। যদিও সে জানতো না যে কবি আর কখনো ফিরে আসবে না।
তার চলে যাওয়ার পর দিন-সপ্তাহ-মাস করে একটা বছর কেটে গেল। তার চলে যাওয়ার মুহূর্তের উপর বিস্মৃতির ঘাস জন্মাতে থাকল। আর তার চলে যাওয়ায় প্রতিটি মুহূর্ত যেন পাথরের মতো ভারী হয়ে উঠল অপেক্ষমান মেয়েটির কাছে। তার অনিশ্চিত ফিরে আসার পথের দিকে চেয়ে মেয়েটির দিন কাটতে লাগল। কিন্তু এরপর একসময় ভয়ংকর অভিশাপের মতো নেমে আসে যুদ্ধ। শেষ হয়ে যায় মানুষ, মানুষের বিশ্বাস, মানুষের আশ্রয়—
“সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।”
গ্রাম-শহর, নগর-বন্দর, মন্দির, মসজিদ- গির্জা তথা মানব-সভ্যতার ওপর চূড়ান্ত আঘাত নেমে আসে। হাজার বছরের সভ্যতা, সমাজ, কলকারখানা ধ্বংস হয়ে যায়। সেই ধ্বংসের তান্ডবের মধ্যেও আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে বসে থাকে মেয়েটি। তার প্রিয়জনের ফিরে আসার অন্তহীন অপেক্ষার ট্র্যাজিক মূর্ছনাতেই শেষ হয় কবিতাটি।
১০. “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়”– মেয়েটি কে ? কবিতা অবলম্বনে উদ্ধৃত অংশটির তাৎপর্য লেখ। ১+৪
উত্তরঃ কবি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় মানবমনের এক চিরন্তন সত্য প্রকাশ পেয়েছে। কবি যেন কোনো এক নারীকে তাঁরই অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে দূরে চলে যান। সেই অপেক্ষারতা যদিও জানত না যে, কবি আর কখনও ফিরবেন না।
কবিতার আরম্ভের বিচ্ছেদদৃশ্যে লুকিয়ে থাকে দুজন নরনারীর চিরকালীন প্রত্যাশা ও অপেক্ষার বীজ। যদিও জীবন তার নিজের গতিতে চলতে থাকে। টুকরো টুকরো প্রাত্যহিকতায় সপ্তাহ আর বছর কেটে যায়। বৃষ্টিতে কবির পদচিহ্ন ধুয়ে, ঘাস জন্মালো রাস্তায়। কবির অস্তিত্ব অনেকের মন থেকেই একটু একুট করে মুছে যেতে থাকে। কিন্তু পাথরের মতো ভারী, গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণায় সেই অপেক্ষারতা নারীর দিন কাটে। এরপর আসে যুদ্ধ। যুদ্ধ সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু যুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলার শেষেও কথকের প্রিয়তমা বেঁচে রইলো। এই বেঁচে থাকা আসলে শারীরিক বেঁচে থাকা নয়। গভীর ব্যঞ্জনার মধ্য দিয়ে কবি আসলে চিরন্তন প্রেমের অমরত্বের কথাই বলেছেন। প্রিয়জনের ঘরে ফেরার জন্য অপেক্ষা কখনও ফুরায় না। যুগে যুগে তামাম দুনিয়ার প্রতি ঘরে চলে আসছে এই অপেক্ষা প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা। এই অপেক্ষাই জ্বালিয়ে রাখে ভালোবাসার অনির্বাণ প্রদীপ। যুদ্ধ এসে সমাজকে ভেঙে দেয়, রাষ্ট্র টুকরো হয়, শহর ধূলিসাৎ হয়, কিন্তু মানবহৃদয়ের অনির্বাণ দীপশিখা ভালোবাসাকে কেউ ধ্বংস করতে পারে না। যুদ্ধও না। সমস্ত যুদ্ধের শেষেও সে বেঁচে থাকে, চির অমলিন, চিরসজীব।
📌 আরও দেখুনঃ
1. মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যসূচী ২০২৪-২৫ Click Here
2. মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫ Click Here
3. মাধ্যমিক বিগত বছরের সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র | Madhyamik Previous Years Question Paper Click Here
4. মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি অনলাইন MCQ মক্ টেস্ট | Madhyamik Preparation MCQ Mock Test Click Here
📌 অন্যান্য বিষয় দেখুনঃ
1. দশম শ্রেণির ইংরেজি সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
2. দশম শ্রেণির ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
3. দশম শ্রেণির ভূগোল সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
4. দশম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
5. দশম শ্রেণির ভৌত বিজ্ঞান সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here