রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ (শঙ্খ ঘোষ) দশম শ্রেণি বাংলা | Essay Type Question Answer Ai Aro Bedhe Bedhe Thaki (Madhyamik) Class 10 Bengali wbbse
1. দশম শ্রেণির ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতার সমস্ত ধরণের প্রশ্নোত্তর Click Here
2. দশম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
3. দশম শ্রেণির বাংলা সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট Click Here
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ (শঙ্খ ঘোষ) দশম শ্রেণি বাংলা | Essay Type Question Answer Ai Aro Bedhe Bedhe Thaki (Madhyamik) Class 10 Bengali wbbse
• কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫
১. আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতার ভাববস্তু নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় অস্থির সময়ের রাহুগ্রাসে বিপন্ন মানুষের টিকে থাকার কথা ব্যক্ত হয়েছে। আমাদের চলমান জীবনের সার্বিক সংকটের কথা বোঝাতে গিয়ে কবি লিখেছেন আমাদের ডান পাশে ধ্বস, আমাদের বামে গিরিখাত আমাদের মাথায় বোমারু বিমান।
আলোচ্য কবিতায় প্রতিটি স্তবকে মানুষের অস্তিত্বের সংকট প্রকাশিত। রাজনৈতিক আদর্শহীনতা, সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মান্ধতার মতো অসুখ সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। এই অস্থির সময়ে মানুষের বিপন্নতার ছবি তুলে ধরেছেন কবি শঙ্খ ঘোষ। অস্তিত্বের সংকটে বিপন্ন মানুষ। কবি বলেছেন–
“আমাদের পথ নেই কোনো
আমাদের ঘর গেছে উড়ে
আমাদের শিশুদের শব
ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!”
এত হতাশার মাঝে বাঁচার একটাই পথ, তা হলো সংঘবদ্ধতা।
এই ক্ষয়ে যাওয়া সমাজে সাধারণ মানুষের কোনো ইতিহাস নেই। যদিও-বা থেকে থাকে তবে তা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে পদানত হওয়ার ইতিহাস। কিন্তু এতসব প্রতিকূল ও নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু মানুষ এখনও তাদের শুভবুদ্ধি বিবেকবোধ বিসর্জন দেননি। কবি তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা যদি আরো সংঘবদ্ধভাবে থাকেন, তবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর কবিতার মাধ্যমে মানুষের কাছে এই বার্তায় পৌঁছে দিতে চেয়েছেন যে, প্রতিকূলতা ও অসহায়তা বঞ্চনা ও সংশয়ের মাঝেও সঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে। কারণ একতা, সম্প্রীতি ও সম্মিলিত শক্তির কাছে উদ্ধত শক্তিকে নতজানু হতেই হয়- এটাই সভ্যতার ইতিহাস, এটাই বাস্তব।
২. ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা করে নামকরণের সার্থকতা বুঝিয়ে দাও। ৫
উত্তরঃ যদিও শেক্সপীয়র বলেছেন What’s in a name ? তবুও আমাদের মনে হয় সাহিত্যে নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণ হয়ে থাকে চরিত্রকেন্দ্রিক, কখনও বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, আবার কখনও বা ব্যঞ্জনাধর্মী।
এবার আমরা কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা করে দেখবো নামকরণ কতটা সার্থক হয়েছে।
‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় অস্থির সময়ের রাহুগ্রাসে বিপন্ন মানুষের টিকে থাকার কথা ব্যক্ত হয়েছে। আমাদের চলমান জীবনের সার্বিক সংকটের কথা বোঝাতে গিয়ে কবি লিখেছেন আমাদের ডান পাশে ধ্বস, আমাদের বামে গিরিখাত আমাদের মাথায় বোমারু বিমান।
আলোচ্য কবিতায় প্রতিটি স্তবকে মানুষের অস্তিত্বের সংকট প্রকাশিত। রাজনৈতিক আদর্শহীনতা, সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মান্ধতার মতো অসুখ সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। এই অস্থির সময়ে মানুষের বিপন্নতার ছবি তুলে ধরেছেন কবি শঙ্খ ঘোষ। অস্তিত্বের সংকটে বিপন্ন মানুষ। কবি বলেছেন-
“আমাদের পথ নেই কোনো
আমাদের ঘর গেছে উড়ে
আমাদের শিশুদের শব
ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!”
এত হতাশার মাঝে বাঁচার একটাই পথ, তা হলো সংঘবদ্ধতা।
এই ক্ষয়ে যাওয়া সমাজে সাধারণ মানুষের কোনো ইতিহাস নেই। যদিও-বা থেকে থাকে তবে তা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে পদানত হওয়ার ইতিহাস। কিন্তু এতসব প্রতিকূল ও নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু মানুষ এখনও তাদের শুভবুদ্ধি বিবেকবোধ বিসর্জন দেননি। কবি তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা যদি আরো সংঘবদ্ধভাবে থাকেন, তবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর কবিতার মাধ্যমে মানুষের কাছে এই বার্তায় পৌঁছে দিতে চেয়েছেন যে, প্রতিকূলতা ও অসহায়তা, বঞ্চনা ও সংশয়ের মাঝেও সঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে।
আলোচ্য কবিতার বিষয়বস্তু বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে কবিতার নামকরণ ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ সম্পূর্ণরূপে সার্থক হয়েছে।
৩. ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটি যুগ যন্ত্রণার এক নির্মম ইতিহাস– আলোচনা করো।
উত্তরঃ আধুনিক যুগের অত্যন্ত সংবেদনশীল কবি হলেন শঙ্খ ঘোষ। তাঁর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটিতে সমাজ- ব্যবস্থার এক সংকট মুহূর্তের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে নির্মম ইতিহাসের আবাস পাওয়া যায় তার আলোচ্য কবিতায়।
বিশ্বের পশ্চিম প্রান্তে ঘটে চলা যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডের সাধারণ মানুষের বিপর্যস্ত জীবন জীবিকা, আশ্রয় কবিকে ব্যথিত করেছে। ভূগর্ভস্থ তেলভান্ডারের দখলদারি নিয়ে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সংঘাত, গৃহযুদ্ধ, জঙ্গিহামলা, বিত্তশালী রাষ্ট্রগুলির আধিপত্যে নিরীহ জনগণ দিশাহারা। তাদের চারপাশে মৃত্যুর হাতছানি, প্রতি পদে বাধা আর প্রতিকূলতা, তার চলার সব পথ রুদ্ধ। হানাদারী শত্রুর আঘাতে মানুষ নিরাশ্রয় হয়েছে। হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী যেন আজ এক মৃত্যু উপত্যকা।
কেবল নির্দিষ্ট যুগ বা দেশই নয়, এই কবিতা সামগ্রিকভাবে দেশকাল নির্বিশেষে সাম্রাজ্যবাদী আর সুবিধাবাদী শক্তি গোটা বিশ্বকে অস্থির করে তুলেছে। বঞ্চিত জনগণের কোন ইতিহাস নেই, এই দুঃখ-যন্ত্রণার ইতিহাস হয়তো অলিখিতই রয়ে যাবে চিরকাল। অথবা যদি লেখা হয় তবে তা হবে অর্ধসত্য এবং অসম্পূর্ণতায় ভরা। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষদের চিরকাল এভাবেই ক্ষমতাবানের প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে আপস করে বেঁচে থাকতে হয়। ক্ষমতালোভী মানুষেরা সাধারণ মানুষকে ধর্মান্ধ করে রেখেছে। তাদের ন্যায়-অন্যায়, ভালোমন্দ, বিবেচনাবোধ আজ লুপ্ত। বিশ শতকের শেষের দিকে ও একবিংশ শতকের সূচনায় সভ্যতার এই চরম সংকট মানবসমাজের এক নির্মম ইতিহাস রচনা করেছে।
৪. আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবির সমাজসচেতনতার পরিচয় পাওয়া যায়– আলোচনা করো। ৫
উত্তরঃ সাহিত্যকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। তাই একজন সাহিত্যিক সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ। ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটিতে কবি শঙ্খ ঘোষের গভীর সমাজভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। সমাজ সচেতন কবির ভাবনা দেশকালের সীমা অতিক্রম করে বিশ্বমানবসমাজকে পর্যবেক্ষণ করেছে। গভীর সহমর্মিতায় তিনি দেখেছেন একবিংশ শতকেও আমাদের এই পৃথিবী হিংসামুক্ত হতে পারেনি। রাষ্ট্রীয় নির্যাতন রাজনৈতিক ভ্রস্টাচার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ধর্মীয় সন্ত্রাস আর সামাজিক অবক্ষয়ের সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা।
তাই বিপন্ন কবি লেখেন– ‘আমরাও তবে এইভাবে এ মুহূর্তে মরে যাব না কি ?’
দ্বিতীয় স্তবকে কবির ভাবনা আরও গভীরে প্রবেশ করেছে। তিনি উপলব্ধি করেছেন ইতিহাসের অবিচারের কথা। এই সকল নিপীড়িতদের কথা ইতিহাসে নেই। যদিও থাকে, তা অসত্য ইতিহাস। নিপীড়িত মানুষরা অর্থনৈতিক এবং মানসিক দিক দিয়ে রিক্ত। কিন্তু পৃথিবীর কেউ তাদের নিয়ে ভাবিত নয়—
“আমাদের কথা কে-বা জানে
আমরা ফিরেছি দোরে দোরে।”
কিন্তু কবি বিপন্নদের মধ্যে স্বতন্ত্র, তিনি আশার আলো দেখার প্রত্যাশা রাখেন। কিছুই কোথাও যদি না থাকে তবু এখনও কিছু মানুষ আছে, যাদের মধ্যে মানবিক গুণগুলি বর্তমান, সেইসব বিবেকবান মানুষদের বিচ্ছিন্নতা ভুলে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত আরও প্রশস্ত করতে বলেছেন। তাই আশাবাদী কবির আহ্বান—
‘আয় আরো হাতে হাত রেখে
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।’
এভাবেই কবি আলোচ্য কবিতায় তাঁর সমাজসচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন।
৫. “আমাদের পথ নেই কোনো”– ‘আমাদের’ বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন এবং তাদের ‘পথ’ নেই কেন ? পথহারা মানুষগুলিকে কবি কোন্ পথের সন্ধান দিয়েছেন ? ৩+২
উত্তরঃ স্বাধীনোত্তর যুগের অন্যতম সমাজ সচেতন কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় আমাদের বলতে আজকের যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, নিপীড়িত, শ্রমজীবী ও শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষদের বুঝিয়েছেন।
এখানে ‘পথ’ বলতে কবি সাধারণ মানুষের জীবনের চলার পথের কথা বলেছেন। সুস্থ সমাজ ও সুন্দর পৃথিবীই পারে মানুষের চলার পথকে মসৃণ করতে। কিন্তু আজকের পৃথিবী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনে ভীত সন্ত্রস্ত। শান্তিকামী মানুষ তাদের অত্যাচারে বিপন্ন ও অসহায়। গৃহহারা এইসব মানুষ তাদের ভাবী প্রজন্মকে বাঁচাতে ব্যর্থ। তাদের নিজেদের অস্তিত্বও আজ সংকটের মুখে। তাই তাদের মনে হয়েছে তারা পথহারা।
কবি-সাহিত্যিকরা মানুষকে কোনোদিন নিরাশার অন্ধকারে হারিয়ে যেতে দেন না। কবি শঙ্খ ঘোষও এর ব্যতিক্রম নন। পথ হারাদের আরো বেঁধে বেঁধে থাকার অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের বেঁচে থাকার পথ যখন ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে আসে, তখন তাদের ঘুরে দাঁড়াতে, রুখে দাঁড়াতে হয়। সহযোগিতা-সহানুভূতির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকা দরকার। এককভাবে মানুষ দুর্বল, কিন্তু সংঘবদ্ধ হলে বিরাট শক্তিতে পরিণত হয়। তাই আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকা প্রয়োজন—
‘আয় আরো হাতে হাত রেখে
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।’
বেঁধে বেঁধে থাকাই পথহীন মানুষদের একমাত্র পথ বলে কবি মনে করেন।
৬. ‘আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি ?”– এমনটা মনে হচ্ছে কেন ? ৫ (মাধ্যমিক, ২০১৮)
উত্তরঃ শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় দেশকাল নির্বিশেষে যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর অসহায় ও বিপন্ন মানুষের যন্ত্রণা ব্যক্ত হয়েছে। পৃথিবী জুড়ে ক্ষমতার দম্ভ, সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন, হিংসা, হানাহানি, মানবতার চরম অবক্ষয়। ক্ষমতালোভী স্বার্থান্বেষী মানুষগুলির বিবেকের দৈন্যতা প্রকাশ পেয়েছে।
কবিতার প্রথম স্তবকে কবি উপলব্ধি করেছেন– সাধারণ মানুষের ডানদিকে ধ্বস ও বামে গিরিখাদ, অর্থাৎ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে তাদের অবস্থান। শুধু তাই নয়, ‘বোমারু’-র বিপদ সংকেত মাথার উপরে আর পায়ের নীচে হিমানীর বাঁধ। অর্থাৎ, চারিদিকে প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর ঘিরে রেখেছে বিপন্ন মানুষদের।
সভ্যতার সংকট কেবল বিপন্ন মানুষদের রুদ্ধ করেনি, কেড়ে নিয়েছে তাদের মাথার উপরের আচ্ছাদন—
“আমাদের ঘর গেছে উড়ে”
শুধু বর্তমান অস্তিত্বের সংকট নয়, তাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্নের আধার যে শিশুরা, তাদেরকেও রেহাই পাইনি। বোমার আঘাতে তাদেরও প্রাণ দিতে হয়—
“আমাদের শিশুদের শব
ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!”
আপামর জনগণ পৃথিবীর এহেন যুদ্ধময় পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করে নিজেদের জীবন নিয়েও সংশয়। সব মিলিয়ে রক্তপাত, মৃত্যু আর অসহায়তায় তারা আত্মহারা।
কবিতায় ‘এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি ?’- পঙ্ক্তিটিতে জিজ্ঞাসার চিহ্ন দিয়ে আশাবাদী কবি মানুষের মনে প্রশ্ন জাগাতে চেয়েছেন প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অতিক্রম করার পরিবর্তে মৃত্যুকেই বরণ করে নেওয়া উচিত কি না। মৃত্যু মানেই তো হেরে যাওয়া। সমাজসচেতন নাগরিক হিসেবে কবি এরকম পরিণতি আশা করেন না। তাই বিপন্ন মানুষের মধ্যে যারা টিকে আছে, তাদেরকে প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তুলতে আহ্বান জানিয়েছেন।
৭. “আমাদের ইতিহাস নেই / অথবা এমনই ইতিহাস”— ইতিহাস বলতে কী বোঝ ? উদ্ধৃত অংশটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ? ১+৪
উত্তরঃ ইতিহাস হল প্রাচীন কথা, যার মধ্যে দিয়ে কোনো জাতির বা সভ্যতার আত্মবিকাশের পর্যায়গুলি প্রকাশ পায়। ইতিহাস হল অতীতের প্রতিচ্ছবি যা বর্তমানে না থাকলেও বর্তমানকে অনুধাবন করতে সাহায্য করে।
ইতিহাস কেবল ক্ষমতাবানদের কথা বলে। আপামর জনগণের কোন ইতিহাস নেই অর্থাৎ ইতিহাসে তারা উপেক্ষিত। মেহনতি সাধারণ মানুষের বঞ্চনার খবর কেউ রাখে না। শোষণ অত্যাচার অবহেলা উপেক্ষা বঞ্চনার ধারাবাহিকতাই সাধারণ মানুষের ইতিহাস।
ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী সব সময় নিজেদের স্বার্থে নিজেদের গৌরবের ইতিহাস লিখেছে। কিন্তু তাদের সাম্রাজ্য বিজয়, নগর প্রতিষ্ঠা কিংবা চিরন্তন সৌধ নির্মাণের পিছনে যে সাধারণ শ্রমিক-কৃষক জনতা স্তম্ভ রূপে কাজ করে তাদের ইতিহাস সচেতনভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে রেখেছে। তাই প্রথাগত ইতিহাস মানুষকে অন্ধ করে তোলে প্রকৃত ঐতিহ্য সম্পর্কে। সাধারণ মানুষ চাপিয়ে দেওয়া ইতিহাসকে নিজেদের ইতিহাস বলে মেনে নিতে বাধ্য হয়। তাই ওই ইতিহাসে সাধারণ মানুষ খুঁজে পায় না নিজেদের ঐতিহ্যের সন্ধান। যুগে যুগে দেশে দেশে এমনকি একুশ শতকেও সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। এই বিপর্যয়, বিপন্নতা, অনিশ্চয়তা অসহায় সর্বহারা মানুষের ইতিকথা। তাদের তথাকথিত ইতিহাস গৌরবান্বিত নয়, বরং অত্যন্ত করুন ও অসহায়।
৮. “আমাদের চোখ মুখ ঢাকা”– চোখ মুখ ঢাকা বলতে কবি কি বুঝিয়েছেন ? এই পরিস্থিতিতে ‘আমাদের’ কী করা উচিত ? ৩+২
উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষ ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় বিশ্ববাসীর বিপর্যস্ত জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন এবং নিজেকেও তাদের একজন বলে মনে করেছেন। ‘আমাদের’ অর্থাৎ সাধারণ মানুষের চোখ-মুখ ঢাকা। শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ যুদ্ধ, হানাহানি চায় না। তাদের প্রত্যাশা সামান্য। সামান্য খাদ্য-বস্তু, অল্প থাকার জায়গা পেলে তারা শান্তিতে বেঁচে থাকতে চায়। কিন্তু লোভী ক্ষমতাবানরা শাসকেরা সাধারণ জনগণের বেঁচে থাকাকে দুর্বিষহ করে তোলে। ছলে-বলে-কৌশলে জনগণের উপর শোষণ-অত্যাচার চালায়। নানা ভাবে সাম্রাজ্যবাদীরা উগ্র জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় উন্মাদনা আর গোষ্ঠী সংঘর্ষের মাধ্যমে পৃথিবী জুড়ে হিংসা ছড়ায়, যুদ্ধ বাধায়।
একবিংশ শতকেও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো পৃথিবীকে বধ্যভূমিতে পরিণত করে তুলেছে, আর নিরীহ জনগণকে সেই বধ্যভূমিতে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় দাঁড় করিয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে প্রতিবাদ করতে না পারে, শাসকের অন্যায়কে দেখতে না পায়, তাই তাদের চোখ-মুখ ঢেকে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করে, যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে আড়াল করে জনগণের প্রতিবাদী বিবেককে স্বার্থান্বেষীরা হত্যা করতে চায়।
এই পরিস্থিতিতেও কবি নিরাশ বা হতাশ হয়ে পড়েননি। সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন—
‘আয় আরো হাতে হাত রেখে
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।’
অর্থাৎ সংকট যতই গভীর হোক, এই পরিস্থিতিতে সর্বহারা জনগণকে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পরস্পর সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে আরও বেশি সংঘবদ্ধ হওয়া উচিত বলে কবি মনে করেন। এভাবেই যৌথ শক্তিতে রুখে দাঁড়াতে হবে মানুষকে।
৯. ‘আমাদের কথা কে-বা জানে’– কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাদের কথা কেউ জানে না কেন ? ২+৩
উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষ রচিত ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত আলোচ্য পঙ্ক্তিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের গৃহহীন সর্বহারা সাধারণ নাগরিকদের কথাই বলতে চেয়েছেন।
এ পৃথিবীর ইতিহাস আসলে ক্ষমতাবান শাসকের ইতিহাস। শাসকেরা প্রতিনিয়ত তার গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তাদের মদতে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সমাজ-রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দেয়, যার বলি হয় সাধারণ মানুষ। তাদের সুখ-দুঃখ-শান্তি-স্বস্তির পরোয়া কেউ করে না। দুর্বল ও অসহায় আমজনতার কথা তাই কখনও সভ্যতার আয়নায় ধরা দেয় না। তাদের জন্য জোটে উপেক্ষা, অবহেলা ও বিস্মৃতি। সাধারণ মানুষের কোনো ইতিহাস নেই অথবা আছে শুধু বঞ্চনার ইতিহাস—
‘আমাদের ইতিহাস নেই
অথবা এমনই ইতিহাস’
প্রচলিত ইতিহাস তো কেবল রাজা মহারাজাদের কথা বলে। ফলে জনতার কথা কেউ জানে না, কখনোই জানতে পারে না। পৃথিবীর আপামর নিরীহ মানুষ এতই সাধারণ যে, তাদের দুর্দশাময় জীবনে প্রচারের আলো এসে পড়ে না। রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের বঞ্চিত করে, সাম্রাজ্যবাদ তাদের শোষণ করে। ইতিহাসে তাদের বিপন্নতা ধরা পড়ে না। তারা চিরনির্যাতিত, সর্বহারা। তাই তাদের কথা কেউ জানে না
১০. “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি”- ‘বেঁধে বেঁধে থাকা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন এবং কাদের এভাবে থাকতে বলেছেন ? কবি বেঁধে বেঁধে থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন কেন ? ২+৩
উত্তরঃ রবীন্দ্রোত্তর কালের অন্যতম প্রধান কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় ‘বেঁধে বেঁধে থাকি’ বলতে সংঘবদ্ধভাবে বেঁচে থাকাকে বোঝাতে চেয়েছেন। বর্তমান বিশ্ব ক্ষমতাবান শাসক, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও মৌলবাদীদের যৌথ ষড়যন্ত্রে বিধ্বস্ত। মানুষ আজ বিপন্ন, বড় অসহায়। প্রতি পদে পদে তার বিপদ। সাধারণ মানুষ প্রতিমুহূর্তে প্রাণসংশয়ের ভয়ে ভীত। তাই এভাবে ক্রমাগত শোষিত পৃথিবীর শান্তিকামী সাধারণ মানুষকে কবি বেঁধে বেঁধে একত্রিত হয়ে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বলেছেন।
পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধময় পরিস্থিতি। ক্ষমতাবান, সাম্রাজ্যবাদী ও মৌলবাদী শক্তি তাদের নৃশংসতায় সাধারণ মানুষের সামনে অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি করেছে। বোমারু বিমানের হানায় নিরপরাধ নিষ্পাপ শিশুদেরও প্রাণ দিতে হয়। সাধারণ মানুষ আশ্রয়চ্যুত, জীবিকাহীন। চরম সংকটের দিনে সংঘবদ্ধ থাকলে অশুভ শক্তিকে, সময়ের বিপন্নতাকে প্রতিহত করা যায়। পরস্পরের সুখ-দুঃখে মিলেমিশে একসঙ্গে বাস করার জন্যই মানুষ সমাজ গড়েছিল। সমাজ-রাষ্ট্র-সভ্যতা মানুষের বেঁধে বেঁধে থাকার ফলাফল। সাধারণ মানুষের একতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং সহাবস্থানের কোনো বিকল্প নেই। সংঘবদ্ধ সাধারণ মানুষ যখন বিরাট শক্তিতে পরিণত হয়, তখন হামলাকারী যুদ্ধবাজ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিও সেই প্রতিরোধী, প্রতিবাদী জনশক্তিকে ভয় পায়। তাই বেঁধে বেঁধে থাকার প্রয়োজনীয়তা কবি অনুভব করেছেন।
📌 আরও দেখুনঃ
1. মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যসূচী ২০২৪-২৫ Click Here
2. মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫ Click Here
3. মাধ্যমিক বিগত বছরের সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র | Madhyamik Previous Years Question Paper Click Here
4. মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি অনলাইন MCQ মক্ টেস্ট | Madhyamik Preparation MCQ Mock Test Click Here
📌 অন্যান্য বিষয় দেখুনঃ
1. দশম শ্রেণির ইংরেজি সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
2. দশম শ্রেণির ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
3. দশম শ্রেণির ভূগোল সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
4. দশম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
5. দশম শ্রেণির ভৌত বিজ্ঞান সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here