বাংলা ভাষাচর্চা নির্মিতি
প্রথম অধ্যায় – বাংলা প্রবাদ
অষ্টম শ্রেণি
ভাষাচর্চা বই প্রশ্ন উত্তর প্রথম অধ্যায় অষ্টম শ্রেণি বাংলা ব্যাকরণ | Bhasachorcha 1st Chapter Question Answer Class 8 Bengali Grammar wbbse
1. অষ্টম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
2. অষ্টম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন Click Here
হাতে কলমে প্রশ্নোত্তর : ভাষা চর্চা বই প্রশ্ন উত্তর প্রথম অধ্যায় অষ্টম শ্রেণি বাংলা ব্যাকরণ | Bhasachorcha 1st Chapter Question Answer Class 8 Bengali Grammar wbbse
১। তাল ঘষলে গন্ধ মিঠা, নেবু ঘষলে হয় তিতা।
(ক্ষেত্র অনুযায়ী ফল লাভ।)
উত্তরঃ প্রকাশবাবুর বড়ো ছেলে সৎ ও পরিশ্রমী তাই বাবার মতোই সুনাম অর্জন করেছে, কিন্তু ছোটো ছেলেটা অলস ও নির্বোধ বলেই কিছু করতে পারল না,। সাধে কী বলে তাল ঘষলে, গন্ধ মিঠা নেবু ঘষলে হয় তিতা।
২. শূন্য কলশির আওয়াজ বেশি।
(সারবস্তুহীন ব্যক্তির আস্ফালন।)
উত্তরঃ লোকটা লেখাপড়া না শিখেও সবজান্তা ভাব দেখায়, তাই তো বলে শূন্য কলশির আওয়াজ বেশি।
৩. নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। (দারিদ্র্যের অসহায় অবস্থা)।
উত্তরঃ রতনদের অভাব থাকলেও দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জুটতো কিন্তু বন্যার পরে এখন তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দশা হয়েছে।
৪. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। (অধিক লোকের সমাগমে কার্য নষ্ট )।
উত্তরঃ এবারের নববর্ষ উৎসব তেমন জমল না, অনেক বক্তা থাকার কারণে অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হল।
৫. যার কর্ম তারে সাজে, অন্যলোকে লাঠি বাজে।
(যে কাজে যে অভ্যস্ত, তার পক্ষেই সেই কাজ করা সহজ।)
উত্তরঃ পরীক্ষার আগে অনেকেই সাজেশন দিল, শেষ পর্যন্ত স্যারের সাজেশনই কাজে লাগলো। একেই বলে যার কর্ম তারে সাজে, অন্য লোকে লাঠি বাজে।
৬. যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই।
(অযোগ্য লোক ধনবানের অর্থ আত্মসাৎ করে।)
উত্তরঃ ডাক্তার বাবু কয়েক বছরেই প্রচুর সম্পত্তি করে মারা গেলেন, কিন্তু তাঁর বেকার ভাগ্নে এসে সব উড়িয়ে দিল, সাধে কি বলে যার ধন তার ধন নয় নেপোয় মারে দই।
৭. গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না। (অতি ঘনিষ্ঠজনের গুণের কদর হয় না)।
উত্তরঃ বিমলবাবু ভালো গান গাইলেও পাড়ার রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ডাক পান না, কারণ গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না।
৮. রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। (প্রতাপশালীদের সংঘর্ষে সাধারণের জীবন ধ্বংস হয়)।
উত্তরঃ রাজনৈতিক নেতারা ভাষণ দিতে ব্যস্ত আর মরছে সাধারণ কর্মী সমর্থকরা, সর্বত্রই রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।
৯. কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরোলে পাজি।
(কাজ করিয়ে পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করা এবং দুর্নাম করা।)
উত্তরঃ কারখানার মালিক গোটা বছর দিনরাত কাজ করিও পুজোর সময় বোনাস দিলেন না, প্রবাদটা মিলে গেল- কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরোলে পাজি।
১০. দুষ্ট গোরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। (খল ব্যক্তির বন্ধুত্বের থেকে বন্ধুহীন থাকা শ্রেয়)।
উত্তরঃ পুরানো কাজের লোকটার দিন দিন চুরি করার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছিল, তাই সে চলে যাওয়ার পর অসীমার মনে হল দুষ্ট গোরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।
১১. পিপীলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে। (পতনের পূর্বে মাত্রাধিক সক্রিয়তা)।
উত্তরঃ অহংকার আর উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়িতে অতিষ্ঠ করে শেষে যখন স্বপনরা ফুটবল ম্যাচটা হেরে গেল তখন লোকের কথাই সত্যি হল— পিপীলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে।
১২. ঘরে নেই ভাত, কোঁচা তিন-হাত।
(বাহ্যিক বাবুয়ানির সমালোচনা।)
উত্তরঃ পয়সার জোর না থাকলেও বাপনদের বড়লোকি চাল দেখে মনে হয় ঘরে নেই ভাত কোঁচা তিন-হাত।
১৩. কাজের মধ্যে দুই খাই আর শুই। (আলস্যময় জীবনচর্চার প্রতি ব্যঙ্গ)।
উত্তরঃ নিবারণবাবুর মেজো ছেলেটি বাবার টাকার ভরসাতেই জীবন কাটাচ্ছে, তার কাজের মধ্যে দুই খাই আর শুই।
১৪. থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়।
(একঘেয়ে পুনরাবৃত্তি)
উত্তরঃ বাংলা শিশুসাহিত্য পড়ে মনে হয় নতুন ভাবনার লেখক নেই, সেই রহস্য আর বাঘের গল্প যেন থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়।
১৫. তাদের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়।
(সম্পূর্ণ বিরোধী)
উত্তরঃ শান্তি বাবুর বড় ছেলের বিয়ের পর থেকে দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক একেবারে আদায় কাঁচকলায়, কোনো ব্যাপারেই বনিবনা হয় না।
১৬. ঘর পোড়া গোরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়।
(পূর্বঅভিজ্ঞতার নিরিখে আশঙ্কা করা।)
উত্তরঃ মেঘের গর্জন শুনেই গ্রামবাসীরা ঘর গোছাতে লেগেছে, কারণ ঘর পোড়া গোরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়।
১৭. হেলে ধরতে পারে না / কেউটে ধরতে যায়।
(যোগ্যতার সীমা না বুঝে কাজ করার চেষ্টা।)
উত্তরঃ সবে কুস্তি শিখতে না শিখতেই একেবারে ভীম পালোয়ানের সঙ্গে কেউ লড়তে যায়! কথায় বলে না, হেলে ধরতে পারে না, কেউটে ধরতে যায়।
১৮. মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার। (বড়ো কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করা)।
উত্তরঃ পাড়ার দুর্গোৎসবের মিটিংয়ে এ বছরের খরচের পরিকল্পনা শুনে মনে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের মনোভাব যেন মারি তো গণ্ডার, লুটি তো ভান্ডার।
১৯. বাজারে আগুন লাগলে পিরের ঘর মানে না।
(দুঃসময় কোনো সৎ-অসৎ মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ করে না।)
উত্তরঃ একটা ভূমিকম্পে গ্রামের কোনো ঘরই বাদ পড়লো না, সব ভেঙে তছনছ হয়ে গেল। কারণ, বাজারে আগুন লাগলে পিরের ঘর মানে না।
২০. এক হাতে তালি বাজে না।
(দুপক্ষের দোষ থেকেই বিবাদ হয়।)
উত্তরঃ দুপক্ষের ঝগড়া দেখে কে প্রকৃত দোষী তার মীমাংসা করতে যাওয়া মুশকিল কারণ একহাতে তালি বাজে না।
অতিরিক্ত প্রবাদ প্রবচনের নমুনা : ভাষা চর্চা নির্মিতি প্রথম অধ্যায় অষ্টম শ্রেণি বাংলা ব্যাকরণ
১. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।
(বেশি লোভ করে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা)
উত্তরঃ রাতারাতি বড়োলোক হওয়ার আশায় চিটফান্ডে টাকা রেখে অনেকেরই অতি লোভে তাঁতি নষ্ট হয়েছে।
২. আঙুল ফুলে কলাগাছ।
(হঠাৎ বড়োলোক হওয়া)
উত্তরঃ যুদ্ধের বাজারে দু-নম্বরি ব্যাবসা করে অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।
৩. উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে।
(একের দোষ অন্যের ওপর)
উত্তরঃ দোষ করল শ্রেয়া আর মার খেল দিয়া—একেই বলে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে।
৪. গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল।
(অন্যে না চাইলেও নিজেকে জাহির করা)
উত্তরঃ পাড়াপ্রতিবেশী ঘোর বিরক্ত হলেও নিশিকান্তবাবু এলাকার সব ব্যাপারে নাক গলিয়ে চলেছেন– এ যেন গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল।
৫. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে।
(অন্যের বিপদে খুশি হওয়া)
উত্তরঃ ছেলেকে নিয়ে নাজেহাল অজয়বাবুকে দেখে কমলবাবু হাসছেন, কিন্তু উনি বোঝেন না, ওঁর ছেলেও বড়ো হচ্ছে, একেই বলে ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে।
৬. চোখে সরষে ফুল দেখা।
(দিশেহারা হওয়া)
উত্তরঃ প্রশ্নপত্রের মধ্যে একটাও জানা প্রশ্ন খুঁজে না পেয়ে চোখে সরষে ফুল দেখতে লাগলাম।
৭. ধরি মাছ না ছুঁই পানি।
(দায়িত্ব না নিয়ে কার্যসিদ্ধি করা)
উত্তরঃ ধরি মাছ না ছুঁই পানি স্বভাবের মানুষদের ওপর কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যায় না।
৮. বাঘে-গোরুতে এক ঘাটে জল খায়।
(ভয়ানক দাপট)
উত্তরঃ প্রভাবশালী জমিদার নিশিকান্তবাবুর নামে আউশগ্রামে একসময় বাঘে-গোরুতে এক ঘাটে জল খেত।
৯. অতি চালাকের গলায় দড়ি।
(চালাকি করে অন্যকে ঠকালে নিজেকেও বিপদগ্রস্ত হতে হয়)
উত্তরঃ অনাদিবাবু চালাকি করে সবার থেকেই ঘুস আদায় করলেও ঘুস চাইতে গিয়ে পুলিশ অফিসার সুরেশবাবুর হাতে ধরা পড়লেন, তাহলে অতি চালাকের গলায় দড়ি। কথাটা মিথ্যে নয়।
১০. ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়।
(অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়)
উত্তরঃ আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে ছেলেগুলো কালীপুজোর প্যান্ডেলে অবিরাম মাইক বাজাতে থাকলে পাড়ার লোকেরা রুখে দাঁড়াল, একেই বলে, ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়।
১১. এক ঢিলে দুই পাখি মারা।
(একবারের চেষ্টায় দুই স্বার্থসিদ্ধি)
উত্তরঃ দিদির ছেলের বিয়েতে কলকাতা গিয়ে আমার এক ঢিলে দুই পাখি মারা হল; বিয়েও দেখলাম, আবার কলকাতাও ঘুরলাম।
১২. খাল কেটে কুমির আনা।
(নিজের দোষে বিপদ ডেকে আনা)
উত্তরঃ বিধবা অসহায় পিসিকে নিজের সংসারে স্থান দিয়ে রিমা খাল কেটে কুমির এনেছে। ওঁর যা কুঁদুলে স্বভাব, সংসারে ভাঙন ধরিয়ে ছাড়বেন।
১৩. ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো।
(অবহেলার অথচ কাজের পাত্র)
উত্তরঃ আনন্দের দিনে মামার কথা মনে কর না ঠিকই, কিন্তু দরকারে অদরকারে ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো এই মামাকেই কাজে লাগে।
১৪. ঝোপ বুঝে কোপ মারা।
(অবস্থার সুযোগ নেওয়া)
উত্তরঃ প্রবল বৃষ্টিতে রাস্তায় জল হওয়ার জন্য রিকশাওলারাও ঝোপ বুঝে কোপ মারছেন, দশ টাকা ভাড়ার পথ যেতে তিরিশ টাকা চাইছেন।
১৫. ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়।
(সিংহভাগই মন্দ)
উত্তরঃ পৃথিবীতে স্বার্থপর মানুষের সংখ্যাই বেশি, নিঃস্বার্থ মানুষ চাইলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।
১৬. ডুবে ডুবে জল খাওয়া।
(চুপিচুপি কার্যসিদ্ধি করা)
উত্তরঃ আজ বুঝতে পারলাম, আমার বাড়িতে বাস করে তুমি গোপনে শত্রুপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছ, তা এই ডুবে ডুবে জল খাওয়া কত দিনের ?
১৭. ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।
(অভ্যাস পরিবর্তিত হয় না)
উত্তরঃ নীতাদেবী মেয়ের বাড়ি বেড়াতে এসেও সবাইকে ভালো মন্দ রান্না করে খাওয়াচ্ছেন, আসলে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।
১৮. পাকা ধানে মই দেওয়া।
(সুসম্পাদিত কাজ পণ্ড করা)
উত্তরঃ তুমি দেখছি আমার সব কাজেই খুঁত ধরো, আমি তোমার কোন্ পাকা ধানে মই দিয়েছি।
১৯. ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাওয়া।
(সামান্য পরিশ্রমেই কাতর হয়ে পড়া)
উত্তরঃ সকাল থেকে দু-পদ রান্না করেই তোমার দেখছি ঘাম ছুটে গেল, তুমি কি ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাও না কি।
২০. বিষ নেই তার কুলোপানা চকর।
(ক্ষমতাহীন ব্যক্তির আস্ফালন)
উত্তরঃ পাশের বাড়ির নীহার বৌ, ছেলে, মেয়েকে দু-বেলা খেতে দিতে পারে না, ওদিকে বৌ চাকরি করতে চাইলে বাবুর মানে লাগে বিষ নেই তার কুলোপানা চক্কর।
২১. ভাঙবে তবু মচকাবে না।
(মনের জোরে সংকল্প রক্ষা)
উত্তরঃ চোরটি পুলিশের মার খেয়েও নিজের সঙ্গীদের নাম বলল না, ভাঙবে তবু মচকাবে না।
২২. মশা মারতে কামান দাগা।
(সামান্য কাজে বড়ো আয়োজন)
উত্তরঃ ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া তো কতই হয়, তা বলে এ নিয়ে থানা-পুলিশ করাকে আমি মশা মারতে কামান দাগা বলেই মনে করি।
২৩. রাখে হরি মারে কে।
(ভাগ্য প্রসন্ন হলে কেউ মারতে হয়ে যায় পারে না)
উত্তরঃ গুজরাটের এই ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রচুর লোক প্রাণ হারালেও দীপু যে প্রাণ নিয়ে ফিরেছে, তাতে মনে হচ্ছে রাখে হরি মারে কে ?
২৪. সাপের পাঁচ পা দেখা।
(যা ইচ্ছে তা-ই করা)
উত্তরঃ বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি, পড়াশোনায় তোমার তেমন মন নেই, যা ইচ্ছে তাই করে। বেড়াচ্ছ—সাপের পাঁচ পা দেখেছ না কি ?
২৫. হবুচন্দ্র রাজার গরুচন্দ্র মন্ত্রী।
(অকর্মণ্য ব্যক্তির একইরকম অযোগ্য দোসর)
উত্তরঃ প্রধানশিক্ষক আর সহকারী প্রধানশিক্ষকের কাজকর্মে এই নামকরা স্কুলটির শিক্ষাগত মান খুব কমে গেছে, সাথে কি আর লোকে বলে হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র ?