চন্দ্রনাথ গল্পের বহুবিকল্পীয়, ছোট প্রশ্ন উত্তর, বড় প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি | Chondronath Golper Question Answer Class 9 [WBBSE]

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

চন্দ্রনাথ গল্পের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | Chandranath Golper Question Answer Class 9 Bengali wbbse

সাহিত্য সঞ্চয়ন
নবম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)

নবম শ্রেণি বাংলা চন্দ্রনাথ গল্পের প্রশ্ন উত্তর | Class 9 Bengali Chandranath Golper Question Answer wbbse

নবম শ্রেণির বাংলা চন্দ্রনাথ গল্পের বহু বিকল্পীয়, অতি সংক্ষিপ্ত, ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | West Bengal Class 9 Bengali Chandranath Golper Question Answer wbbse

1. নবম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

2. নবম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন Click Here

নবম শ্রেণির বাংলা চন্দ্রনাথ গল্পের বহু বিকল্পীয়, অতি সংক্ষিপ্ত, ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | West Bengal Class 9 Bengali Chandranath Golper Question Answer wbbse

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর : চন্দ্রনাথ গল্প (তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়) নবম শ্রেণি বাংলা | MCQ Question Answer Class 9 Bengali wbbse

• ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো : প্রতিটি প্রশ্নের মান-১

১. ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশটি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে—
(ক) আগুন
(খ) গণদেবতা
(গ) পঞ্চগ্রাম
(ঘ) ধাত্রী দেবতা

উত্তরঃ (ক) আগুন।

২. ‘চন্দ্রনাথ, হিরু, আমি সহপাঠী’-আমি হলো—
(ক) চন্দ্রনাথের দাদা
(খ) নিশা নাথ
(গ) স্কুলের সেক্রেটারি ভাইপো
(ঘ) নরেশ

উত্তরঃ (ঘ) নরেশ।

৩. চন্দ্রনাথের দাদার নাম ছিল—
(ক) নিশানাথ বাবু
(খ) কাশীনাথ বাবু
(গ) অমিয়নাথ বাবু
(ঘ) শম্ভুনাথ বাবু

উত্তরঃ (ক) নিশানাথ বাবু ।

৪. চন্দ্রনাথ পাঁচশো পঁচিশের নিচে পেলে তবে স্কুলের ফেলের সংখ্যা দাঁড়াবে—
(ক) পনেরো (খ) দশ (গ) কুড়ি (ঘ) পাঁচ

উত্তরঃ (খ) দশ৷

৫. ‘ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বর একবার কাঁপিতে ছিল’- ভদ্রলোকটি হলেন—
(ক) স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার
(খ) স্কুলের হেডমাস্টার
(গ) স্কুলের সেক্রেটারি
(ঘ) নিশানাথ বাবু

উত্তরঃ (ঘ) নিশানাথ বাবু।

৬. “এই দাম্ভিকটা যেন ফেল হয়”- দাম্ভিকটা
কে ?
(ক) নরু (খ) হীরু (গ) অবিনাশ (ঘ) চন্দ্রনাথ

উত্তরঃ (ঘ) চন্দ্রনাথ।

৭. “এই প্রস্তাবই আমার পক্ষে অপমানজনক।” প্রস্তাবটি ছিল—
(ক) আর্থিক সাহায্যের
(খ) ডবল প্রোমোশনের
(গ) বিশেষ পুরস্কারের
(ঘ) ক্ষমা প্রার্থনার

উত্তরঃ (গ) বিশেষ পুরস্কারের।

৮. ‘আজ থেকে তোমার সঙ্গে আমার আর কোনো সংস্রব রইল না।’-এ কথা বলেছিল—
(ক) হিরু
(খ) স্কুলের সেক্রেটারি
(গ) নিশানাথ বাবু
(ঘ) স্কুলের হেডমাস্টার

উত্তরঃ (গ) নিশানাথ বাবু।

৯. “নির্জন বাড়িখানা খাঁ খাঁ করিতেছিল” – কার বাড়ির কথা বলা হয়েছে ?
(ক) নরেশের (খ) হীরুর (গ) চন্দ্রনাথের (ঘ) মাস্টারমশায়ের

উত্তরঃ (গ) চন্দ্রনাথের।

১০. ‘আজ থেকে আমরা পৃথক’-এ কথা বলেছিল—
(ক) নিশানাথ বাবু
(খ) চন্দ্রনাথের বৌদি
(গ) হেডমাস্টার
(ঘ) হিরু

উত্তরঃ (ক) নিশানাথ বাবু।

১১. চন্দ্রনাথ তার চিঠির সম্বোধনে যে শব্দটা কেটে দিয়েছিল—
(ক) প্রিয় (খ) প্রিয়ভাজনেষু (গ) প্রিয়বরেষু (ঘ) প্রীতিভাজনেষু

উত্তরঃ (গ) প্রিয়বরেষু।

১২. চন্দ্রনাথ হীরুর সফলতায় যা প্ৰকাশ করেছিল—
(ক) আনন্দ (খ) শুভেচ্ছা (গ) হর্ষ (ঘ) কৃতজ্ঞতা

উত্তরঃ (ক) আনন্দ।

১৩. ‘হিরুর বাড়িতে প্রীতিভোজনের নিমন্ত্রণ পাইলাম’- প্রীতিভোজের নিমন্ত্রণের কারণ ?
(ক) হিরুর কাকা শৌখিন ধনী সন্তান তাই
(খ) চন্দ্রনাথের স্পেশাল প্রাইজের জন্য
(গ) হিরু স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য
(ঘ) চন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠত্বে সন্দেহ ছিল না তাই

উত্তরঃ (গ) হিরু স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য

১৪. “এইটেই আমার কাছে তার স্মৃতিচিহ্ন।” কথাটি বলেছে—
(ক) চন্দ্রনাথ (খ) হীরু (গ) নিশানাথ (ঘ) হেডমাস্টারমশাই

উত্তরঃ (খ) হীরু।

১৫. কথকের কল্পনায় জনহীন পথে একলা হেঁটে চলা চন্দ্রনাথের কাঁধে ছিল—
(ক) জগতের বোঝা
(খ) পোঁটলা বাঁধা লাঠি
(গ) বইয়ের বোঝা
(ঘ) নিজের ব্যর্থতার বোঝা

উত্তরঃ (খ) পোঁটলা বাঁধা লাঠি।

১৬. “… চন্দ্ৰনাথ বলিল, বেশ।” – চন্দ্ৰনাথ যে কথা মেনে নিয়েছে, তা হল—
(ক) সে দ্বিতীয় পুরস্কারই গ্রহণ করবে
(খ) প্রধানশিক্ষকের কাছে গিয়ে সে ক্ষমা চাইবে
(গ) প্রধানশিক্ষকের কাছে চিঠি লিখে আগের চিঠি প্রত্যাখ্যানের কথা জানাবে
(ঘ) দাদার থেকে সে পৃথক হয়ে যাবে

উত্তরঃ (ঘ) দাদার থেকে সে পৃথক হয়ে যাবে।

১৭. ‘হীরুই সেবার ফার্স্ট হইয়াছিল’— হিরু কে ?
(ক) চন্দ্রনাথের বন্ধু
(খ) নরেশের সহপাঠী
(গ) স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো
(ঘ) চন্দ্রনাথের সহপাঠী

উত্তরঃ (গ) স্কুলের সেক্রেটারি ভাইপো।

১৮. “… আমার অন্যায় হলো।” —বক্তার যে কাজকে অন্যায় বলে মনে হয়েছে, তা হল—
(ক) চন্দ্রনাথের চিঠি গ্রহণ করা
(খ) নিশানাথবাবুকে বিদ্যালয়ের ঘটনাটি জানানো
(গ) চন্দ্রনাথের পারিবারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা
(ঘ) বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারা

উত্তরঃ (খ) নিশানাথবাবুকে বিদ্যালয়ের ঘটনাটি জানানো।

১৯. “দিস ইজ ম্যাথম্যাটিকস্।” —বক্তা ‘ম্যাথম্যাটিকস’ বলেছে-
(ক) অনুপাতের গাণিতিক নিয়মকে
(খ) হীরুর কাকার কৌশলকে
(গ) পরীক্ষার কঠিন প্রশ্নপত্রকে
(ঘ) শিক্ষকদের নীতিহীনতাকে

উত্তরঃ (ক) অনুপাতের গাণিতিক নিয়মকে।

২০. ‘বিলেতে যেতে হবে আমাকে’- বিলেতে যেতে হবে—
(ক) চন্দ্রনাথকে
(খ) হিরুকে
(গ) নিশানাথ বাবুকে
(ঘ) নরেশকে

উত্তরঃ (খ) হিরুকে।

২১. প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশনের সময় চন্দ্ৰনাথ—
(ক) পরীক্ষার অনিয়মের কথা সকলকে জানিয়ে দিয়েছে
(খ) প্রাইজ প্রত্যাখান করে চিঠি দিয়েছে
(গ) বাড়ি ছেড়ে অন্য স্থানে চলে গেছে
(ঘ) দ্বিতীয় পুরস্কারকেই হাসিমুখে গ্রহণ করেছে

উত্তরঃ (খ) প্রাইজ প্রত্যাখান করে চিঠি দিয়েছে।

২২. “…পড়ব আমি।” – বক্তা ইচ্ছা প্ৰকাশ করেছেন—
(ক) চন্দ্রনাথের চিঠি পড়ার
(খ) বিদ্যাল্যের পূর্ণাঙ্গ ফলাফলের তালিকা পড়ার
(গ) পত্রিকায় প্রকাশিত নরেশের লেখা পড়ার
(ঘ) পরীক্ষা সংক্রান্ত খবরের কাগজের রিপোর্ট পড়ার

উত্তরঃ (গ) পত্রিকায় প্রকাশিত নরেশের লেখা পড়ার।

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নেত্তর : চন্দ্রনাথ গল্প (তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়) নবম শ্রেণি বাংলা | Very Short Answer Type Question Answer Class 9 Bengali wbbse

• কমবেশি ১৫ টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রশ্নের মান-১

১. ‘চন্দ্রনাথ’ রচনাংশের কথকের নাম কী ?

উত্তরঃ ‘চন্দ্রনাথ’ রচনাংশের পতকের নাম নরেশ, সংক্ষেপে নরু।

২. চন্দ্রনাথ গল্পের গল্পকথক কোথা থেকে কোথায় ফিরছিল ?

উত্তরঃ গল্পকথক নরেশ সারকুলার রােডের সমাধিক্ষেত্র থেকে বার হয়ে চন্দ্রনাথের কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরছিল।

৩. নরেশের দীর্ঘ জীবন-ইতিহাসে চন্দ্রনাথ কীভাবে প্রদীপ্ত ও প্রধান হয়ে আছে ?

উত্তরঃ চন্দ্রনাথ গভীর রাত্রির মধ্য আকাশে বিচরণকারী কালপুরুষ নক্ষত্রের মতাে দীপ্তিতে, পরিধিতে প্রদীপ্ত ও প্রধান হয়ে আছে।

৪. কালপুরুষ নক্ষত্রটির সঙ্গে চন্দ্রনাথের কী সাদৃশ্য রয়েছে ?

উত্তরঃ কালপুরুষ নক্ষত্রটির খড়্গধারী ভীমকায় আকৃতির সঙ্গে চন্দ্রনাথের আকৃতির যেন একটা সাদৃশ্য আছে।

৫. নরেশের তিন সহপাঠীসহ আর কার কথা মনে পড়েছিল ?

উত্তরঃ তিন সহপাঠী চন্দ্রনাথ, হীরু ও সে নিজে ছাড়াও আরএকজন চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথবাবুর কথা নরেশের মনে পড়েছিল।

৬. ঘরের কীরকম পরিবেশে নরেশ কাদেৱ কথা ভাবছিল ?

উত্তরঃ ঘরের টেবিল ল্যাম্পের অকম্পিত প্রদীপ্ত আলােয় আলােকিত কক্ষে নরেশ একা বসে চন্দ্রনাথ, হীরু ও নিশানাথের কথা ভাবছিল।

৭. চন্দ্রনাথের কপালে ত্রিশূল চিহ্ন কখন দেখা যায় ?

উত্তরঃ সামান্য উত্তেজনায় চন্দ্রনাথের রক্তের চাপ একটু প্রবল হলেই তার কপালের মধ্যস্থ ত্রিশূল-চিহ্ন মোটা হয়ে ফুলে ওঠে।

৮. কিশাের চন্দ্রনাথের চেহারার পরিচয় দাও।

উত্তরঃ কিশাের চন্দ্রনাথের আকৃতি ছিল দীর্ঘ, দেহ ছিল সবল ও সুস্থ এবং চোখের দৃষ্টি ছিল নির্ভীক। মােটা, সামান্য উত্তেজনায় তার নাকের প্রান্ত স্ফীত হয়ে উঠত।

৯. নরেশের স্মৃতিচারণে চন্দ্রনাথ, হীরু ও নিশানাথ ছাড়া আর কাকে মনে পড়েছিল ?

উত্তরঃ স্মৃতিচারণে নরেশের মনে পড়েছিল চন্দ্রনাথ, হীরু ও নিশানাথ ছাড়া হেডমাস্টার মশাইকে।

১০. চন্দ্রনাথের দুর্দান্ত আঘাতে স্কুলের অবস্থা কেমন হয়ে উঠেছে ?

উত্তরঃ স্কুলের কৃতী ছাত্র চন্দ্রনাথের দুর্দান্ত আঘাতে সমস্ত স্কুল চঞ্চল ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

১১. সমস্ত স্কুল চঞ্চল ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে কেন ?

উত্তরঃ বিদ্যালয়ের পুরস্কার বিতরণীতে চন্দ্রনাথ সেকেন্ড প্রাইজ গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় সমস্ত স্কুল চঞ্চল ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

১২. দাদার দেওয়া পত্রখানির ওপর চোখ বুলিয়ে চন্দ্রনাথ কী বলল ?

উত্তরঃ দাদার দেওয়া পত্রখানি পড়ে চন্দ্রনাথ অকপটে ও সাহসের সঙ্গে বলল যে, সে প্রাইজ রিফিউজ করেছে।

১৩. হেডমাস্টার মশাই চন্দ্রনাথকে ডেকে পাঠালে চন্দ্রনাথ গিয়ে কী বলেছিল?

উত্তরঃ চন্দ্রনাথ হেডমাস্টার মশাইকে বলেছিল যে, গুরুদক্ষিণার যুগ চলে গেছে এবং স্কুলের সঙ্গে তার দেনাপাওনা মিটে গেছে।

১৪. ‘আজ থেকে আমরা পৃথক’— কে, কাকে, কেন এ কথা বলেছেন ?

উত্তরঃ চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথ বাবু চেয়েছিলেন দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে হেডমাস্টারকে লেখা চিঠি চন্দ্রনাথ ফিরিয়ে নিক। কিন্তু ভাই নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় লাগে ও দুঃখে এ মন্তব্য করেছেন।

১৫. হেডমাস্টার মশাই নরেশের সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে কী বলেছিলেন ?

উত্তরঃ নরেশের সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে হেডমাস্টার মশাই বলেছিলেন যে, পড়ার সময় সাহিত্যচর্চা একেবারে না ছেড়ে একটু কম করতে।

১৬. হীরু চন্দ্রনাথের চিঠিখানা রেখে দিল কেন?

উত্তরঃ হীরু চন্দ্রনাথের চিঠিখানা রেখে দিল কারণ চিঠি তার কাছে চন্দ্রনাথের স্মৃতিচিহ্ন ছিল।

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর : চন্দ্রনাথ গল্প (তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়) নবম শ্রেণি বাংলা | Short Answer Type Question Answer Class 9 Bengali wbbse

• কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : (প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৩)

প্রশ্নঃ ‘তাঁহাকে অকপটেই সমস্ত বলিলাম’ – কার কথা বলা হয়েছে? তাঁকে কী বলা হয়েছিল ?

উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটিতে স্কুলের হেড মাস্টারমশায়ের কথা বলা হয়েছে।

চন্দ্রনাথের বাড়ি থেকে ফিরে গল্পকথক অকপটে মাস্টারমশাইকে সমস্ত ঘটনা বলেছিল। মাস্টারমশাই জেনেছিলেন চন্দ্রনাথের আচরণের অর্থাৎ সেকেন্ড প্রাইজ রিফিউজ করে লেখা চিঠিটি ফিরিয়ে না নেওয়ায় তার দাদা নিশানাথবাবু ভাইকে পৃথক করে দিয়েছিলেন। এইসব কথাই নরেশ মাস্টারমশাইকে বলেছিল ।

প্রশ্নঃ ‘অসাধারণ তাহার মুখাকৃতি’ – কার মুখের কথা বলা হয়েছে? তার মুখশ্রীটি কেমন ?

উত্তরঃ চন্দ্রনাথের মুখের কথা বলা হয়েছে।

চন্দ্রনাথের দেহ সবল সুস্থ। আকৃতি দীর্ঘাকার। চোখের দৃষ্টি নির্ভীক। মুখশ্রীর মধ্যে প্রথমেই চোখে পড়ে তার অদ্ভুত মোটা নাক। খুব সামান্য উত্তেজনাতেই তা স্ফীত হয়ে ওঠে। বড়ো বড়ো চোখ, চওড়া কপাল আর সেই কপালের ঠিক মাঝখানে শিরায় রচিত ত্রিশূল চিহ্ন। কিশোর বয়সেও ললাটের মাঝখানে ত্রিশূল চিহ্ন মোটা হয়ে ফুটে ওঠে।

প্রশ্নঃ ‘হীরুই সেবার ফার্স্ট হইয়াছিল’ – হীরু কে ? সে কীভাবে ফার্স্ট হয়েছিল লেখো।

উত্তরঃ নরেশ, চন্দ্রনাথ ও হীরু সহপাঠী ছিল। হীরু হল স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো।

চন্দ্রনাথ বলেছিল, হীরু তার সাহায্যেই ফার্স্ট হয়েছে। ওর প্রাইভেট মাস্টার যে, সে স্কুলেরও অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার। কাজেই প্রশ্নপত্রটি হীরুর কাছে তিনি লুকিয়ে রাখেননি। এছাড়া খাতা দেখার সময় উত্তর বিচারের ক্ষেত্রেও তিনি ইচ্ছাকৃত পক্ষপাতিত্ত করেছেন। অঙ্কের পরীক্ষার দিন সে চন্দ্রনাথের কাছে মিনতি করলে তার খাতা থেকে তিনটি অঙ্ক টুকেছিল হীরু। মাস্টারমশাই আগে বলে দেওয়া সত্ত্বেও অংক গুলি করতে পারেনি। এইরকমভাবেই হীরু স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হয়েহিল। নিজের যোগ্যতায় সে ফার্স্ট হয়নি।

প্রশ্নঃ ‘তবু সে চলিয়াছে’ – কার চলার কথা বলা হয়েছে ? তার চলার সঙ্গে কার তুলনা করা হয়েছে ?

উত্তরঃ নরেশের সহপাঠী চন্দ্রনাথের চলার কথা বলা হয়েছে।

চন্দ্রনাথের জীবন-ইতিহাসের সবটুকুই মহাকালের পাতায় রাত্রির মধ্যগগনচারী কালপুরুষ নক্ষত্রের চলার সঙ্গে তুলনীয়। কালপুরুষ নক্ষত্রের মতোই তার দীপ্তি। চন্দ্রনাথের বলিষ্ঠ উন্নত চরিত্র, নির্ভীক দৃষ্টির সঙ্গে কালপুরুষের খড়্গধারী আকৃতির একটা আশ্চর্য সাদৃশ্য আছে। কালপুরুষের মতোই দৃপ্ত ভঙ্গিতে সে আপনার জীবনের কক্ষপথেও যাত্রা করে চলেছে।

প্রশ্নঃ ‘উৎসবের বিপুল সমারোহ সেখানে’ – উৎসবের সমারোহ কোথায় ? কেন এই উৎসবের আয়োজন ?

উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে কথকের সহপাঠী হীরুর স্কলারশি পাওয়ার উপলক্ষ্যে তার বাড়িতে উৎসবের বিপুল সমারোহের আয়োজন করা হয়েছিল।

চন্দ্রনাথের সহপাঠী হীরু ছিল স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো। পরীক্ষার ফল বের হওয়ার পর দেখা গিয়েছিল, চন্দ্রনাথের বদলে হীরুই প্রথম হয়ে স্কলারশিপ পেয়েছিল। তার এই অনুমান মেলেনি। সেই উপলক্ষ্যেই হীরুদের বাড়ির নিকটস্থ আমবাগানে প্রীতিভোজনের আয়োজন হয়। হীরুর শৌখিন কাকা চিনা লণ্ঠন ও রঙিন কাগজের মালার নিপুণ বিন্যাসে বাগানটিকে অতুলনীয় সাজে সাজিয়ে তুলেছিলেন।

প্রশ্নঃ ‘চন্দ্রনাথ একখানা চিঠি দিয়ে গেছে’ – উক্তিটি কার ? চন্দ্রনাথ কাকে কী চিঠি দিয়ে গেছে ?

উত্তরঃ চন্দ্রনাথ গাদ্দাংশে প্রশ্নের উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন কথকের সহপাঠী হীরু।

» স্কলারশিপ পাওয়ার আনন্দে হীরু যে প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল, সেই অনুষ্ঠানে চন্দ্রনাথও নিমন্ত্রিত ছিল। কিন্তু সেই উৎসবের আগেই চন্দ্রনাথ গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। হীরুকে দিয়ে যায় একটি চিঠি। তাতে লেখা ছিল, হীরুর সফলতায় চন্দ্রনাথ আনন্দিত। কিন্তু সেই সাফল্যের উৎসবে সে যোগ দিতে পারছে না। একটা কথা বারবার মনে হচ্ছে, স্কলারশিপ পাওয়ার আনন্দে এই উৎসব সে না করলেই পারত। স্কলারশিপ পাওয়াটা এমন কিছু বড়ো জিনিস নয়।

প্রশ্নঃ ‘চন্দ্রনাথের অনুমান অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়া গিয়াছে’- অনুমানটি কী লেখো।

উত্তরঃ ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশের কথক দারিদ্র্যজীর্ণ-স্বল্পালোকিত চন্দ্রনাথের ঘরে গিয়ে দেখেছিল, সে একমনে ইউনিভার্সিটি এগ্‌জামিনের রেজাল্ট তৈরি করছিল। পুরোটাই ছিল অনুপাতের আঙ্কিক নিয়মের উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা একটি অনুমান। চন্দ্রনাথের সেই অনুমান অনুযায়ী সে নিজে যদি সাড়ে পাঁচশো কী তার বেশি পায়, তবে স্কুলের রেজাল্টে দুটো ফেল এবং বাকি সব পাস হবে। আর যদি তার নিজের নম্বর পাঁচশো পঁচিশের নীচে হয়, তবে দশটা ফেল হবে, আর কথক নরেশ থার্ড ডিভিশনে পাস করবে। ফলাফল বেরোনোর পর দেখা গিয়েছিল, একটি বাদে বাকি সবক্ষেত্রেই চন্দ্রনাথের অনুমান অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : চন্দ্রনাথ গল্প (তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়) নবম শ্রেণি বাংলা | Essay Type Question Answer Class 9 Bengali wbbse

• কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৫

১. ‘দুর্দান্ত চন্দ্রনাথেৱ আঘাতে সমস্ত স্কুলটা চঞল, বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে।”— চন্দ্রনাথের দেওয়া আঘাতটা কী ? আঘাত দেওয়ার কারণই বা কী ? আঘাত দেওয়ার পরিণামে কী ফল চন্দ্রনাথকে ভােগ করতে হয়েছিল ? ২+২+১

উত্তরঃ ‘চন্দ্রনাথ’ গল্পাংশটি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যয়ের লেখা। চন্দ্রনাথ মেধাবী ছাত্র। স্কুলে তার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কোনাে প্রশ্নের অবকাশ নেই। সে প্রতি বছর প্রতি ক্লাসে প্রথম হয়ে এসেছে। কেবল এবারের পরীক্ষায় সে হয়েছে দ্বিতীয়। হীরু হয়েছে প্রথম। চন্দ্রনাথ তার দ্বিতীয় হওয়াকে মেনে নিতে পারেনি। সে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর পুরস্কার নেবে না জানিয়ে প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের কাছে প্রত্যাখ্যানের চিঠি পাঠায়। এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যানই হলো চন্দ্রনাথের দেওয়া আঘাত।

আঘাত দেওয়ার কারণ হিসেবে চন্দ্রনাথ কয়েকটি ঘটনাকে প্রাধান্য দিয়েছিল। ঘটনাগুলি হলাে—এক, হীরু হলাে স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপাে। সেই সুবাদে পরীক্ষার ফলের ওপর প্রভাব পড়েছে বলে চন্দ্রনাথের ধারণা। দুই, স্কুলের জনৈক শিক্ষক হীরুর গৃহশিক্ষক। চন্দ্রনাথ মনে করে তিনি পরীক্ষার আগে হীরুকে প্রশ্নপত্র দেখিয়েছেন। তিন, চন্দ্রনাথের বিশ্বাস পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্ব হয়েছে। চার, হীরু অঙ্কের পরীক্ষায় চন্দ্রনাথের খাতা থেকে তিনটে অঙ্ক টুকে নিয়েছে। এইসব ঘটনার প্রতিবাদে চন্দ্রনাথ দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহাশয়কে চিঠি লিখে পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের পরিণামে চন্দ্রনাথকে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। তার দাদা নিশানাথ প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারটা প্রধানশিক্ষক মহাশয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন। তিনি ভাইকে চিঠি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। কিন্তু দাদার নির্দেশ চন্দ্রনাথ দৃঢ়ভাবে অমান্য করে। ফলে দুভাইয়ের সম্পর্ক নষ্ট হয়। দুজনে পৃথক হয়ে যায়। শ্রীশ্রী চন্দ্রনাথ কে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয়।

২. ‘একে তুমি ডিগনিটি বল ? তােমার অক্ষমতার অপরাধ!’-বক্তা কে ? কী প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন ? বক্তা এ কথার দ্বারা কী বােঝাতে চেয়েছেন ? 

উত্তরঃ

বক্তা হলেন চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথ।

চন্দ্রনাথ স্কুলের এই পরীক্ষা ছাড়া প্রতি বছর প্রতি ক্লাসে প্রথম হয়েছে। প্রতি বছর প্রথম পুরস্কার পেয়ে এসেছে। এবারের পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়ায় স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বয়কট করেছে। শুধু তাই নয়, প্রধানশিক্ষক মহাশয়কে চিঠি লিখে দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছে। চন্দ্রনাথের দাদা সেকথা জানতে পারায় ভাইয়ের কাছে কারণ জানতে চান। তার প্রত্যুত্তরে চন্দ্রনাথ বলে, দ্বিতীয় পুরস্কার নেওয়া তার কাছে ‘বিনিথ মাই ডিগনিটি’ । চন্দ্রনাথের এই আচরণ নিশানাথ সমর্থন করতে পারেননি। তিনি প্রতিবাদ হিসেবে প্রশ্নোধৃত মন্তব্য করেন।

চন্দ্রনাথের এ হেন প্রত্যাখ্যান নিশানাথের ভাবনাচিন্তার বিরুদ্ধ কাজ। পরীক্ষার ফল অস্বীকার করা, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বয়কট করা, স্কুলের প্রধানশিক্ষক মহাশয়কে প্রত্যাখ্যানের চিঠি লিখে অসম্মান করা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তা ছাড়া চন্দ্রনাথের আচার-আচরণ স্কুল পরিচালন ব্যবস্থাকে অসম্মানিত করেছে। এইসব কারণে নিশানাথ ভাইয়ের ওপর অসন্তুষ্ট ও বেশ রুষ্ট। তাই তিনি জানিয়েছেন, এটা তার ডিগনিটির প্রশ্ন নয়, পরীক্ষার ফলকে মেনে নিতে না পারা অক্ষমতার অপরাধ ।

৩. ‘উৎসবের বিপুল সমারােহ সেখানে’— কী উপলক্ষ্যে উৎসব ? উৎসবের বর্ণনা প্রসঙ্গে চন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়ার পরিচয় দাও।

উত্তরঃ হীরুর বাড়িতে উৎসবের বিপুল সমারােহের উপলক্ষ্য হলাে হীরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় প্রথম হয়ে স্কলারশিপ পেয়েছে। হীরুর অত বড়াে সাফল্যের সম্মানে প্রীতিভােজের বিশাল আয়ােজন।

হীরু ধনী পরিবারের সন্তান। বহু অর্থ ব্যয় করে হীরুর বাড়ি অতি মনােরম করে সাজানাে হয়েছে। শুধু টাকাই খরচ হয়নি, শৌখিনতার প্রকাশ রয়েছে সাজসজ্জার প্রতিক্ষেত্রে। বাড়ির পাশের আমের বাগান চিনা লণ্ঠন ও রঙিন কাগজের সজ্জায় সুদৃশ্য হয়ে সেজে উঠেছে। বহু বছর পরেও গল্পের কথক নরেশের স্মৃতিতে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। অবশ্য ওই সুসজ্জার কৃতিত্ব হীরুর কাকার। প্রীতিভােজের অনুষ্ঠানে গণ্যমান্য ও সম্মানীয় অনেকেই আমন্ত্রিত ছিলেন। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী, যেমন—দুজন ডেপুটি ডিএসপি, সাব-রেজিস্টার, থানার দারােগা, তা ছাড়া গ্রামের ব্রাহ্মণ, কায়স্থ উচ্চবর্ণীয় মানুষজন ইত্যাদি।

হীরুর বাড়ির উৎসবে চন্দ্রনাথ আদৌ খুশি ছিল না। তার মনের অসন্তোষ ও বিরূপতা হীরুকে লেখা চিঠিতে কোনােরকম রাখঢাক না রেখে প্রকাশ করেছিল। স্কলারশিপ পাওয়া এমন কিছু বড়াে সাফল্য নয়, যার জন্য উৎসবের আয়ােজন করতে হবে। উৎসবে হীরুর আমন্ত্রণ পেয়েও উৎসবে যােগ না দিয়ে উৎসবের দিন দুপুরে সে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিল। অবশ্য হীরুকে একটা চিঠি লিখে জানিয়েছিল, হিরো এই উৎসব না করলেই পারতো। এই ভাবেই চন্দ্রনাথ তার প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল।

৪. প্রথিতযশা কথাশিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ কাহিনি অবলম্বনে চন্দ্রনাথ চরিত্ৰ আলােচনা করাে।

উত্তরঃ

মুখাকৃতি : সুখ্যাত কথাশিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ কাহিনির প্রধান চরিত্র হলাে চন্দ্রনাথ। তখন সে কিশাের, স্কুলের ছাত্র। তার দীর্ঘ আকৃতি, সুস্থ সবল দেহ, চোখের নির্ভীক দৃষ্টি। তার মুখাকৃতি অসাধারণ। তার দিকে তাকালে প্রথমেই চোখে পড়ে তার মােটা নাক। সামান্য উত্তেজনাতে তার নাকের প্রান্ত ফুলে ওঠে। বড়াে বড়াে চোখ। চওড়া কপাল। কপালের মাঝখানে শিরায় রচিত ত্রিশূলচিহ্ন। উত্তেজনায় রক্তের চাপ বাড়লেই কপালের ত্রিশূল-চিহ্ন মােটা হয়ে ফুলে ওঠে।

বুদ্ধিদীপ্তি, বিরামহীন চলা : চন্দ্রনাথ গভীর রাত্রির মধ্য আকাশের বিচরণকারী কালপুরুষ নক্ষত্র যেন। দীপ্তির পরিধিতে কালপুরুষ যেমন প্রদীপ্ত ও নক্ষত্রমণ্ডলীর মধ্যে প্রধান, স্কুল জীবনে চন্দ্রনাথ তেমনি বুদ্ধির দীপ্তিতে উজ্জ্বল, ছাত্রমহলে সেরা বা প্রধান হিসেবে পরিচিত। কালপুরুষের ভীমকায় খঙ্গধারী আকৃতির সঙ্গে চন্দ্রনাথের মিল। চন্দ্রনাথ কালপুরুষের মতাে দৃপ্ত ভঙ্গিতে আপনার জীবন পথে চলমান। কালপুরুষের মতাে তার চলার বিরাম নেই। বিশ্রাম নেই। যা নিজের হস্তগত করার অভিপ্রায় আছে, উন্মত্ত গতিতে ছুটে চলা তার প্রকৃতি।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও পুরস্কার প্রত্যাখ্যান : ছাত্র হিসেবে তার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতেই হয়। সে স্কুল জীবনে প্রতি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। দ্বিতীয় স্থান তার জন্য ছিল না। স্কুল জীবনের শেষ পরীক্ষায় সে প্রথম স্থান থেকে ছিটকে যায়। সে জানে সেজন্য কী অন্যায় করা হয়েছে পরিকল্পিত ভাবে। স্কুল সেক্রেটারির ভাইপাে হীরুকে প্রথম করার জন্য তার স্কুলের জনৈক শিক্ষক যিনি হীরুর প্রাইভেট শিক্ষক, তিনি হীরুর কাছে প্রশ্ন ফাঁস করে দিয়েছেন। পরীক্ষার খাতা দেখায় পক্ষপাতিত্ব করেছেন, শুধু তিনি নন, আরও দু-একজন। অঙ্কের পরীক্ষায় হীরু চন্দ্রনাথের খাতা থেকে তিনটি অঙ্ক টুকেছে। চন্দ্রনাথ এসব জানে বলেই স্কুলের প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশনে প্রাইজ প্রত্যাখ্যান করেছে প্রতিবাদস্বরূপ হেডমাস্টার মশাইকে চিঠি লিখে। সে সিদ্ধান্তে অবিচল থেকেছে। তর্কবিতর্কে অনড় থেকে দাদার সঙ্গে পৃথক হওয়াকে মেনে নিয়েছে। গৃহত্যাগী হতেও কুণ্ঠিত হয়নি।

৫. “অন্ধকারের মধ্যে সুস্পষ্ট রূপ পরিগ্রহ করিয়া সম্মুখে দাঁড়াইল কিশোর চন্দ্রনাথ।”- চন্দ্রনাথের যে রূপের বর্ণনা কথক দিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখো। চন্দ্রনাথের স্বভাবের সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?

উত্তরঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের “চন্দ্রনাথ” ছোটগল্পে, স্কুলেজীবন দীর্ঘ বছর আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও একদিন স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে হঠাৎ সহপাঠী চন্দ্রনাথের কথা কথকের মনে ভেসে ওঠে। কথকের মনে, কিশোর চন্দ্রনাথের দীর্ঘাকৃতি সুস্থ-সবল দেহ এবং নির্ভীক দৃষ্টির ছবি ফুঁটে ওঠে। তার নাক অদ্ভুতরকম মোটা, এবং সামান্য চঞ্চল হলেই নাকের সামনের দিকটা ফুলে উঠতো। তার চোখ ছিল বড়ো বড়ো এবং কপাল ছিল চওড়া। চন্দ্রনাথ উত্তেজিত হলে তার মধ্যকপালের শিরা ফুলে গিয়ে ত্রিশূল চিহ্নের আকৃতি ধারণ করতো।

আচরণের দিক থেকেও চন্দ্রনাথ বিশিষ্ট ছিল। প্রতিভা যেমন তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছিলো ঠিক তেমনই অহংকারের প্রকাশও ঘটিয়েছিল। স্কুল সেক্রেটারির অনন্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করা, প্রধান শিক্ষকমহাশয়কে ‘গুরুদক্ষিণার যুগ নেই আর’ বলার মধ্য দিয়ে তার ঔদ্ধত্যের প্রকাশ ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় হীরুর প্রথম স্থান পাওয়া চন্দ্রনাথ মেনে নিতে পারেনি। হিরুর বাড়িতে আয়োজিত প্রীতিভোজে যোগ দেওয়ার পরিবর্তে, সে একটি চিঠির মাধ্যমে জানায় যে, হীরু এমন উৎসব না করলেই পারতো কারণ স্কলারশিপ পাওয়া কোনো বড়ো ব্যাপার নয়।

আসলে তারপক্ষে সম্ভব ছিল না, মনের মধ্যে লালিত শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার থেকে বেরিয়ে আসে।

৬. “দুর্দান্ত চন্দ্রনাথের আঘাতে সমস্ত স্কুলটা চঞ্চল, বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে।”- চন্দ্রনাথ যে ‘আঘাত’ করেছিল তার কারণ কী ছিল ? এ জন্য তাকে কী ফলভোগ করতে হয়েছিল ?

উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ ছোটগল্পের অংশ। সর্বদা প্রথম স্থানাধিকারী চন্দ্রনাথ দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে স্কুলকে চিঠি দেয়, এই প্রত্যাখ্যানকেই এখানে ‘আঘাত’ বলা হয়েছে।

স্কুলের প্রত্যেক পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারী চন্দ্রনাথের পক্ষে দ্বিতীয় পুরস্কার গ্রহণ করা অসম্ভব, সে তার চিঠিতে এরূপ মন্তব্য করেছিল । চন্দ্রনাথের মনে হয়েছিল, হীরুর কাকা স্কুলের সম্পাদক এবং স্কুলের জনৈক সহ-শিক্ষক তার গৃহশিক্ষক হওয়ায়, সে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তার মতে তিনি হীরুকে প্রশ্নপত্র দেখিয়েছেন এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। এমনকি অঙ্ক পরীক্ষায় হীরু তিনটে অঙ্ক চন্দ্রনাথের দেখে টুকেছিলো। ফলত, হীরুর প্রথম হওয়া চন্দ্রনাথ মেনে নিতে পারেনি আর তাই সে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছে।

চন্দ্রনাথের নির্বিরোধী দাদা তাকে চিঠিটি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলে চন্দ্রনাথ তাতে আপত্তি জানায়। চন্দ্রনাথ হেডমাস্টার মহাশয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লেখার পরামর্শটি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছিল। অবশেষে, তিনি চন্দ্রনাথের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার পরামর্শ দেন। তাতেও চন্দ্রনাথের কোনোরকম মত পরিবর্তন হয় না। উপরন্তু তিনি বলেন যে, সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সে স্বাবলম্বী হতে পারবে।

৭. “চন্দ্রনাথের সহিত সংস্রব রাখিব না। মনে মনে সংকল্পটা দৃঢ় করিতেছিলাম।”- কোন ঘটনার জন্য কথক এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন ? শেষপর্যন্ত চন্দ্রনাথ সম্পর্কে তাঁর মনোভাব কী হয়েছিল ?

উত্তরঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের “চন্দ্রনাথ” ছোটগল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র চন্দ্রনাথ প্রথমবারের মতো স্কুলের পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়াটাকে মেনে নিতে না পেরে সে যেসমস্ত আচরণ করেছিল তা কথক মেনে নিতে পারেননি।

চিঠির মাধ্যমে দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করা, গল্পের কথককে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হবার ভবিষ্যৎবাণী কথকের পছন্দ হয়নি। পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের চিঠি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য এবং প্রধান শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য দাদার আদেশ সে ঔদ্ধত্যের কারণে তাচ্ছিল্য করে, যার দ্বারা কথক বিস্মিত হন। চন্দ্রনাথ অন্যের আবেগ অনুভূতিকে মর্যাদা না দিয়ে নিজের অহংবোধকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে আর তাই চন্দ্রনাথের সাথে কথক সম্পর্ক রাখতে চাননি।

চন্দ্রনাথের প্রতি কথকের মনোভাব ছিল ক্ষণস্থায়ী। আসলে কথক চন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধার করতেন। কারণ কথক নরেশ তার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন। কথক হীরুর স্কলারশিপ পাওয়ার ব্যাপারটা গ্রহণ করতে পারেনি। তিনি বিশ্বাস করেন যে চন্দ্রনাথ এবং হীরু একে অপরের থেকে অনেক আলাদা। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কথক চন্দ্রনাথের দৃপ্ত ভঙ্গির চলনকে কালপুরুষের নক্ষত্রের সাথে তুলনার মধ্যে দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছে।

৮. “চিঠিখানা হীরুকে ফিরাইয়া দিলাম।”-কোন্ চিঠির কথা বলা হয়েছে? চিঠিতে কী লেখা ছিল ? এই চিঠির বিষয়ে হীরু কী বলেছিল ?

উত্তরঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ গল্পাংশে, হীরুর বাড়ির অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকতে পাড়ার কারণ হিসেবে হিরুকে যে চিঠি লিখেছিলেন, এখানে সেই চিঠির কথাই বলা হয়েছে।

চিঠির শুরুতে হিরুকে প্রথমে “প্রিয়বরেষু” বলে সম্বোধন করেছিল, কিন্তু চন্দ্রনাথ পরে তা বাদ দিয়ে লিখেছিলেন “প্রীতিভাজনেষু”।

চিঠিতে হিরুর সাফল্যে তিনি তার আনন্দের প্রকাশ করলেও, আন্তরিকতার কোনো ছোঁয়া ছিল না। পরিবর্তে, জানিয়েছিল স্কলারশিপের জন্য প্রতিভোজের আয়োজন না করলেই পারতো কারণ স্কলারশিপ পাওয়াটা এমন কোনো বড়ো ব্যাপার নয়। চন্দ্রনাথ হীরুর বাড়িতে অনুপস্থিতির কারণে মার্জনা চেয়ে নেয়।

যদিও হিরু এবং চন্দ্রনাথের মধ্যে পরীক্ষায় প্রথম স্থানের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল এবং চন্দ্রনাথ কোনোদিনই হীরুকে তার সাফল্যের জন্য স্বীকৃতি দেয়নি কিন্তু তা সত্ত্বেও চন্দ্রনাথের প্রতি হীরুর শ্রদ্ধা ছিল। আর সেই জন্যই হীরু তার বাড়িতে অনুষ্ঠানে চন্দ্রনাথের উপস্থিতি কামনা করেছিল। কিন্তু না আসায় হীরু চন্দ্রনাথের চিঠিকে তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে করে। নিজের কাছে চিঠিটি রেখে দিয়ে বলেছে,”এইটেই আমার কাছে তার স্মৃতিচিহ্ন’।

৯. ‘চন্দ্রনাথ’ গল্পে চন্দ্রনাথ চরিত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

উত্তরঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের “চন্দ্রনাথ”
ছোটগল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো চন্দ্রনাথ, যে যে তার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য অত্যন্ত গর্বিত। স্কুলের পরীক্ষায় হীরুর প্রথম স্থান দখল এবং নিজের দ্বিতীয় স্থান পাওয়া সে মেনে নিতে পারেনি। সে মনে করে হীরু অসাধু উপায়ে প্রথম স্থান দখল করেছে। আর সেই জন্যই সে বাড়িতে বসে কাল্পনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল তৈরি করে এবং সেখানে তার নিজের নম্বরের অনুপাতে অন্যদের ফলাফল ঠিক করে।

দ্বিতীয় স্থানের পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করার জন্য চন্দ্রনাথ যখন স্কুলে চিঠি লিখলেন, তখন তার ঔদ্ধত্যের প্রকাশ ঘটে। প্রধান শিক্ষককে “গুরুদক্ষিণা যুগ আর নেই” বলার মধ্য দিয়ে তার দাম্ভিকতা ফুটে ওঠে। এই দৃষ্টান্তে, তিনি কেবল তার দাদার আদেশকে উপেক্ষা করেননি বরং তাদের সম্পর্কও ছিন্ন করেছিল।

ফলস্বরূপ, হিরুর কাকার কাছ থেকে বিশেষ পুরস্কারের প্রস্তাবকেও সে “অপমানজনক” বলে মনে করেছে। অহংবোধের কারণেই সে হীরুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও সেখানে যায় না। পরিবর্তে সে একটি চিঠি দিয়ে লেখে যে, স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য অনুষ্ঠান করার প্রয়োজন ছিল না। সামগ্রিকভাবে, চন্দ্রনাথ চরিত্রটি অহংকার, অহংবোধ এবং আত্মকেন্দ্রিকতার প্রতিনিধিত্ব করেছে।

১০. ‘চন্দ্রনাথ’ গল্পে হীরুর চরিত্রটি যেভাবে পাওয়া যায় লেখো।

উত্তরঃ তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের “চন্দ্রনাথ” গল্পাংশে, হিরু একটি বিশেষ চিরিত্রের ভূমিকা পালন করেছেন।

মেধা : সর্বদা স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হওয়া চন্দ্রনাথকে পেছনে ফেলে সে স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে আর এটা যে কোনোরকম আকস্মিক ঘটনা নয় তার প্রমাণিত হয় যখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাতেও স্কলারশিপ পায়।

সৌজন্যবোধ : চন্দ্রনাথ স্কুল পরীক্ষায় হিরুর
প্রথম হওয়াটা মেনে নিতে না পেরে তাকে অপমান করে, দাবি করে যে তার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। কিন্তু হীরু চন্দ্রনাথকে তার সাফল্যের জন্য কোনোরকম অপমান করেনি বরং হীরু তার কাকার দ্বারা অনন্য পুরস্কার দিয়ে চন্দ্রনাথকে সান্ত্বনা দিতে চেয়েছে।

বন্ধুপ্রীতি : হীরু আন্তরিকভাবেই চেয়েছিলো যে, স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য তার বাড়িতে আয়োজিত হওয়া অনুষ্ঠানে চন্দ্রনাথ আসুক। কিন্তু চন্দ্রনাথের চলে যাওয়ায় তিনি ব্যথিত হয়েছিল। চন্দ্রনাথের চিঠিটি স্মৃতি হিসেবে রেখে দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট যে তার প্রতি হীরুর বন্ধুত্ব ছিল অকৃত্রিম। একজন ধনী ব্যক্তির ছেলে হয়েও এবং আইসিএস হওয়ার উচ্চাশা থাকা সত্ত্বেও হীরুর চরিত্রে ভদ্রতা এবং বন্ধুত্বের মিশ্রণ দেখা যায়।

১১. “একে তুমি ডিগনিটি বল ? তোমার অক্ষমতার অপরাধ!” – কোন প্রসঙ্গে বক্তা এ কথা বলেছেন ? বক্তা এখানে কী বোঝাতে চেয়েছে ?

উত্তরঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গল্পাংশে উদ্ধৃতাংশটি চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথ করেছেন। স্কুলের পরীক্ষার দ্বিতীয় হওয়ায় চন্দ্রনাথ দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে। চন্দ্রনাথের দাদা বিষয়টি জানতে পেরে, চন্দ্রনাথের কাছে এই আচরণের কারণ জানতে চাইলে সে বলে ‘সেকেন্ড প্রাইস নেওয়া আমি বিনিথ মাই ডিগনিটি বলে মনে করি’। ভাইয়ের এরূপ আচরণ মানতে না পেরে নিশানাথ এরূপ মন্তব্যটি করেন।

নিশানাথের নিজস্ব জীবন নীতি ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, চন্দ্রনাথের পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করাতে প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকসমাজ এবং বিদ্যালয়ের পরিচালন ব্যবস্থাকে অপমান করা হয়েছে।

নিশানাথের মন্তব্য অনুযায়ী, চন্দ্রনাথ যদি দ্বিতীয় পুরস্কার গ্রহণ না করে তবে চন্দ্রনাথের মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব হবে না ঠিকই, তেমনি যে প্রথম হয়েছে তার সাফল্যকেও অস্বীকার করা হবে। পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়াটা আসলে চন্দ্রনাথের ব্যর্থতা। আর এই সত্যটাকে চন্দ্রনাথ স্বীকার না করায় নিশানাথ তার উপর ক্রুদ্ধ হন এবং বলেন এটা তার অক্ষমতার অপরাধ।

১২. ‘চন্দ্রনাথ’ পাঠ্য অবলম্বনে চন্দ্রনাথের দৈহিক বিবরণ দাও। তাকে কালপুরুষ নক্ষত্রের সঙ্গে তুলনা করার কারণ নির্ণয় করো।

উত্তরঃ ‘চন্দ্রনাথ’ পাঠ্য অনুযায়ী, কিশোর চন্দ্রনাথের দীর্ঘাকৃতি সুস্থ-সবল দেহ এবং নির্ভীক দৃষ্টির ছবি ফুঁটে ওঠে। তার নাক অদ্ভুতরকম মোটা, এবং সামান্য চঞ্চল হলেই নাকের সামনের দিকটা ফুলে উঠতো। তার চোখ ছিল বড়ো বড়ো এবং কপাল ছিল চওড়া। চন্দ্রনাথ উত্তেজিত হলে তার মধ্যকপালের শিরা ফুলে গিয়ে ত্রিশূল চিহ্নের আকৃতি ধারণ করতো।

চন্দ্রনাথ তার চলার পথে একাকী ছিল। সর্বদা প্রথম হওয়া চন্দ্রনাথ, দ্বিতীয় হওয়াটা মেনে নিতে না পেরে সে স্কুলের পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে চিঠি দেয়।

সে বলে, “সেকেন্ড প্রাইজ নেওয়া আমি বিনিথ মাই ডিগনিটি বলে মনে করি।”

সে তার দাদার আদেশ অমান্য করার বা এমনকি তার নিজের মর্যাদা বজায় রাখার জন্য তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে দুবার ভাবে না। সে ঔদ্ধত্যের সাথে হেডমাস্টারমশাইয়ের ডাক ফিরিয়ে দিয়ে বলে ‘গুরুদক্ষিণার যুগ আর নেই’ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় হিরুর প্রথম হওয়ার জন্য যে অনুষ্ঠান হয় তাতে নিমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও চন্দ্রনাথ যায়নি। তার মনে হয়েছে স্কলারশিপ পাওয়া এমন কোনো বড়ো জিনিস নয়।

কালপুরুষ নক্ষত্র যেমন অনায়াসে নিঃস্বার্থভাবে রাতের আকাশে শিকারীর মতো জ্বলে, সর্বদা অন্যদের থেকে দূরে দাঁড়ায়, তেমনি চন্দ্রনাথ, যে লাঠির শেষ প্রান্তে পোঁটলা বেঁধে নির্জন প্রান্তরে হারিয়ে গেছে।

This Post Has One Comment

Leave a Reply