আত্মকথা | রামকিঙ্কর বেইজ | প্রশ্নোত্তর

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now
                   সাহিত্য মেলা
               বাংলা সপ্তম শ্রেণি 

                  হাতে কলমে

 
লেখক পরিচিতিঃ
 
“রামকিঙ্কর পরিবারের একমাত্র ছেলে, যাকে এখনও জাত পেশা ক্ষৌরকার্যে লাগানো হয়নি। ওকে স্কুলে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যাশা, ও লেখাপড়া শিখবে”। ‘দেখি নাই ফিরে’ — সমরেশ বসু প্রখ্যাত ভাস্কর এবং চিত্রশিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ-এর জন্ম ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে। বাঁকুড়া জেলার কামারডাঙা গ্রামের যুগীপাড়ায় বসতি। জাতিতে তিনি পরামাণিক। বাবা চণ্ডীচরণ পুত্র রামপদকে জাত ব্যবসা ক্ষৌরকর্মে নিয়োজিত করলেও রামকিঙ্করকে ক্ষৌরকর্মে যুক্ত করেননি। ছোটোবেলা থেকেই রামকিঙ্কর ছিলেন ছবি আঁকায় পারদর্শী। তিনি দেবদেবীর ছবি আঁকতেন। কামার-কুমোরদের কাজেও আকৃষ্ট ছিলেন। পুতুলগড়া, থিয়েটারের সিন তৈরি, ছবি আঁকা ইত্যাদি কাজে তিনি যুক্ত ছিলেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত শিল্পী রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে শন্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন। তাঁর আঁকা ছবি দেখে নন্দলাল বসু বলেছিলেন, “তুমি সবই জানো, আবার এখানে কেন ?” সারাজীবন তিনি অজস্র ছবি এঁকেছেন, মূর্তি গড়েছেন। তাঁর ছবিতে, ভাস্কর্যে রাঢ় দেশের মাটি ও মানুষের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিল্পকলার নানা বিশেষত্ব তাঁর কাজে ধরা পড়েছে। শান্তিনিকেতনে তাঁর গড়া বিখ্যাত মূর্তিগুলির মধ্যে রয়েছে —‘সুজাতা’, ‘হাটের সাঁওতাল পরিবার’, ‘গান্ধিজি’, ‘বুদ্ধদেব’, ‘কাজের শেষে সাঁওতাল রমণী’ ইত্যাদি। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানে তিনি ভূষিত হন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ‘বিশ্বভারতী’ তাঁকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নেন ।
 
পাঠপ্রসঙ্গঃ
 
কোনো সাহিত্যিক যখন তাঁর নিজের জীবনের কথা সাহিত্যে তুলে ধরেন, তখন তা আত্মজীবনী বা আত্মচরিতমূলক রচনা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ‘আত্মকথা’ গদ্যাংশে লেখক রামকিঙ্কর বেইজ তাঁর শৈশবকাল থেকে বড়ো হয়ে ওঠা পর্যন্ত নিখুঁত বর্ণনা দিয়ে রচনাটিকে মনোগ্রাহী করে তুলেছেন। পাঠক হিসেবে তাঁর গ্রাম্য জীবন, শান্তিনিকেতনের জীবন এবং শিল্পী হিসেবে বড়ো হয়ে ওঠার নানা পথের হদিস পেয়ে আমরাও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছি।
 
বিষয় সংক্ষেপঃ
 
লেখক গ্রামের ছেলে। শৈশব থেকেই তাঁর ছবি আঁকার প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল। বাড়ির দেয়ালে টাঙানো দেবদেবীর ছবি দেখে তিনি তা আঁকতে চেষ্টা করতেন। মূর্তি গড়ার কাজেও তাঁর দক্ষতার পরিচয় মেলে। লেখকের বাড়ির পাশে কুমোরপাড়া ছিল। সেখান থেকে তাঁর মাটির নানা কাজ দেখার অভ্যাস তৈরি হয়। আঁকার জন্য যে রংতুলির প্রয়োজন হত তা নানান জায়গা থেকে তিনি সংগ্রহ করতেন। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় এবং অঙ্কন বিদ্যায় পারদর্শিতার জন্য বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন। বাঁকুড়াতে ম্যাট্রিক পাশ করার পর ন্যাশনাল স্কুলে ভরতি হয়ে কংগ্রেস দলের হয়ে কাজ করতে শুরু করেন। এইসময় বেশ কিছু মহাপুরুষের ছবি ও বাণী অয়েল পেন্টিং – এর মাধ্যমে এঁকেছিলেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। তারপর তিনি চলে আসেন শান্তিনিকেতনে। সেখানে আচার্য নন্দলাল বসুর নির্দেশেই সব কাজ পরিচালিত হত। এখানে ছাত্রদের অ্যানাটমি ও মাসল্ সম্বন্ধেও শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। লেখক সেখানে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। নন্দলালবাবু ছিলেন ওরিয়েন্টাল আর্টের প্রবর্তক। লেখক রামকিঙ্করের বেশিরভাগ ছবি ছিল খুবই সাধারণ, তবে তা অনেকটা নন্দলালবাবুর পরোক্ষ প্রভাবে। অয়েল পেন্টিং -এ আঁকা সুন্দর ছবিটি— ‘গার্ল অ্যান্ড দ্য ডগ’। কারণ, নন্দলালবাবুর সাদামাটা সুরটা লেখককে আশ্চর্যরকমভাবে আকর্ষণ করত ।
 
নামকরণঃ
 
মানবসমাজে বাস করতে গেলে যেমন মানুষের একটা নাম জরুরি, তেমনি সাহিত্যরচনারও নামকরণ অত্যন্ত জরুরি। এটি এমন একটা বিষয়, যা তার পরিচয়ের ক্ষেত্রে প্রাথমিক শর্ত বলে মনে করা যেতে পারে। মানুষের নামকরণ যেমন খুশি রাখা যেতে পারে, কিন্তু সাহিত্যের নামকরণে তা চলবে না। কেন না, সাহিত্যের নামকরণের মধ্য দিয়ে সেই গল্প বা কবিতার মূলভাবটি যেমন ধরা পড়ে, তেমনি সাহিত্যিকের মনোভাবও স্পষ্ট বোঝা সম্ভব হয়। আমাদের আলোচ্য ‘আত্মকথা’ রচনাটির মধ্যে সেই ভাব সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ‘আত্মকথা’ শব্দের অর্থ হল নিজের কথা। লেখক এই রচনায় নিজের কথাই বলেছেন। খুব ছেলেবেলা থেকেই তিনি আঁকতে ভালোবাসতেন। বাড়ির দেয়ালে টাঙানো দেবদেবীর ছবি দেখে তিনি আঁকতে শুরু করেছিলেন।
কুমোরপাড়ায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে তাদের দেখে দেখে নিজেও মাটির নানান মূর্তি তৈরিতে হাত পাকিয়েছিলেন। পারিবারিক অবস্থা ভালো না হলেও নিজের আঁকার দক্ষতার জন্য বিনা বেতনে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনার থেকে আঁকার প্রতিই আগ্রহ ছিল বেশি। সারাজীবন তিনি জ্ঞানীগুণী মানুষের সান্নিধ্যলাভ করেছেন। শান্তিনিকেতনে থাকাকালীন বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন আচার্য নন্দলাল বসুর সঙ্গে থেকে। সেখানেই প্রথম তিনি অয়েল পেন্টিং -এর কাজ করেন। সঠিক অর্থে তিনি একজন শিল্পী। কেমনভাবে তিনি শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন তার সুন্দর নিখুঁত বর্ণনা ধরা পড়েছে তাঁর ‘আত্মকথা’র মধ্যে। সংগত কারণেই গদ্যাংশটির ‘আত্মকথা’ নামকরণটি যথাযথ ও সার্থক হয়েছে ।
 
১. ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে বাক্যটি আবার লেখো :
১.১ রামকিঙ্করের প্রথম শিল্পের স্কুল বাড়ির পাশে—(কামারপাড়া / কুমোরপাড়া / পটুয়াপাড়া।)
 
উত্তরঃ কুমোরপাড়া।
 
১.২ ‘পোর্ট্রেট’ শব্দটির অর্থ হল—(প্রতিকৃতি / আত্ম-প্রতিকৃতি / প্রকৃতির ছবি।)
 
উত্তরঃ প্রতিকৃতি।
 
১.৩ ‘অয়েল পেন্টিং’ বলতে বোঝায়—–(জলরঙে আঁকা ছবি / মোমরঙে আঁকা ছবি / তেলরঙে আঁকা ছবি।)
 
উত্তরঃ তেলরঙে আঁকা ছবি।
 
১.৪ রামকিঙ্করের ছবি বা মূর্তির অধিকাংশ ক্যারেকটারই খুব – (অসাধারণ / সাধারণ/ নগণ্য।)
 
উত্তরঃ সাধারণ।
 
(অতিরিক্ত প্রশ্ন)
১.৫ লেখককের বাড়িঘরের চারিদিকের দেওয়ালে টাঙানো থাকতো – (দেবদেবীর ছবি / নিজের আঁকা ছবি / গাছপালার ছবি)।
 
উত্তরঃ দেবদেবীর।
 
১.৬ রামকিঙ্কর বেইজ প্রথম ছবি আঁকা শুরু করেন ( জলরঙে / মোম রঙে / ভিসুয়াল আর্টে )।
 
উঃ ভিসুয়াল আর্টে।
 
১.৭ লেখক ছোটবেলায় পুতুল তৈরি করতেন – ( লাল রঙের মাটি দিয়ে / নীল রঙের মাটি দিয়ে / সবুজ রঙের মাটি দিয়ে )।
 
উঃ নীল রঙের মাটি দিয়ে।
 
১.৮ লেখক তুলে বানাতেন ( ছাগলের ঘাড়ের লোম কেটে / গরুর লেজের চুল কেটে / ভেড়ার লোম কেটে )।
 
উঃ ছাগলের ঘাড়ের লোম কেটে।
 
১.৯ রামকিঙ্কর বেইজ কে আচার্য নন্দলাল বাবুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন – ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর / রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় / রামনিধি গুপ্ত )।
 
উঃ রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়।
 
১.১০ প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন – ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর / রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় / রামকিঙ্কর বেইজ )।
 
উঃ রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়।
 
১.১১ শান্তিনিকেতনে প্রথম অয়েল পেইন্টিং শুরু করেন – ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর / রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় / রামকিঙ্কর বেইজ )।
 
উঃ রামকিঙ্কর বেইজ।
 
১.১২ রামকিঙ্কর বেইজ এর অয়েল পেন্টিং করা একটি ছবি হল – ( ডগ এন্ড দ্য গার্ল / গার্ল এন্ড দ্য ডগ / গার্ল এন্ড দ্য গোট )।
 
উঃ গার্ল এন্ড দ্য ডগ।
 
১.১৩ নন্দলাল বসু মে আর্টের প্রবর্তক – ( ওরিয়েন্টাল আর্ট / ওয়েস্টার্ন আর্ট অয়েল / পেইন্টিং আর্ট )।
 
উঃ ওরিয়েন্টাল আর্ট।
 
২. একই অর্থ-যুক্ত শব্দ রচনাংশ থেকে বেছে নিয়ে লেখো :
উত্তরঃ 
» বিনা ব্যয়ে – বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় আমার অঙ্কন-গুণটির জন্য স্কুলে আমি অবৈতনিক ছাত্র হিসেবে পড়াশুনার সুযোগ পেয়ে এসেছি।
 
» অভ্যুত্থান – অয়েল পেন্টিং তখন শান্তিনিকেতনে কেউ করতেন না, আমিই প্রথম শুরু করি। 
 
» দরকার –রঙের প্রয়োজনও ছিল।
নিপুণ – এত বড়ো পেইন্টার, এত নিখুঁত স্ট্রোক।
 
» সম্মানীয় – শিল্পী হিসেবে যেমন মর্যাদাবান, শিক্ষক হিসেবেও তেমনি।
 
৩. বিশেষ্য থেকে বিশেষণে এবং বিশেষণ থেকে বিশেষ্যে বদলাও :
উত্তরঃ 
» সার্থক (বিণ.) > সার্থকতা (বি.), 
» সুন্দর (বিণ.) > সৌন্দর্য (বি.), 
» মূর্তি (নি) > মূর্ত (বিণ),
» চরিত্র (বি.) > চারিত্রিক (বিণ.), 
» উদ্ধৃতি (বি.) > উদ্ধৃত (বিণ.)।
 
৪. একটি বাক্যে উত্তর দাও।
 
৪.১ কী কী দিয়ে শিল্পী রামকিঙ্কর রঙের প্রয়োজন মেটাতেন?
উত্তরঃ গাছের পাতার রস, বাটনা-বাটা শিলের হলুদ, মেয়েদের পায়ের আলতা ও মুড়ি-ভাজা খোলার চাঁছা ভুসোকালি দিয়ে শিল্পী রামকিঙ্কর রঙের প্রয়োজন মেটাতেন।
 
৪.২ কার সৌজন্যে রামকিঙ্করের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের যোগাযোগ হয়?
উত্তরঃ ‘প্রবাসী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সৌজন্যে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে রামকিঙ্করের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের যোগাযোগ হয়।
 
৪.৩ শান্তিনিকেতনের আচার্য নন্দলাল বসু কাজের ক্ষেত্রে কেমন মনোভাব দেখাতেন?
উত্তরঃ শান্তিনিকেতনের কলাভবনের আচার্য নন্দলাল বসু কাজের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে সবসময় আগ্রহী ছিলেন।
 
 ৪.৪ নন্দলাল বসুর কাজের কোন্ দিকটা শিল্পী রামকিঙ্করকে বেশি প্রভাবিত করেছিল? 
উত্তরঃ নন্দলাল বসুর কাজের সাদামাটা সুরটাই শিল্পী রামকিঙ্করকে বেশি প্রভাবিত করেছিল।
 
৫. নিম্নলিখিত ব্যক্তি ও বিষয়গুলি নিয়ে দু-একটি বাক্য লেখো: নন্-কোঅপারেশন মুভমেন্ট, অয়েল পেন্টিং, আচার্য নন্দলাল বসু, ল্যান্ডস্কেপ।
 
উত্তরঃ 
» নন্-কোঅপারেশন মুভমেন্ট: ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে নন্-কোঅপারেশন মুভমেন্ট বা অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। ‘জাতির জনক’ মহাত্মা গান্ধি ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে এই আন্দোলনের ডাক দেন।
 
» অয়েলপেন্টিং: অয়েলপেন্টিং-এর বাংলা প্রতিশব্দ হল তৈলচিত্র। রং ও তেল ব্যবহার করে এই ছবি আঁকা হয়। আচার্য নন্দলাল বসু: আচার্য নন্দলাল বসু হলেন ভারতবর্ষের বিখ্যাত এক ভাস্কর ও শিল্পী। তিনি শান্তিনিকেতনের কলাভবনের অধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁকে ওরিয়েন্টাল আর্টের পথপ্রদর্শক বলা হয়।
 
» ল্যান্ডস্কেপ: ল্যান্ডস্কেপ (Landscape) কথাটির অর্থ প্রাকৃতিক দৃশ্য। প্রকৃতির বিচিত্র রূপ শিল্পীর কল্পনায় ও নিপুণ তুলির টানে ক্যানভাসের ওপর যে দৃশ্যপট তৈরি করে, তাকেই সাধারণভাবে ল্যান্ডস্কেপ বলা হয়।
 
৬. নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো
 
৬.১ “ভিসুয়াল আর্টে আমার প্রথম বর্ণপরিচয়।”— শিল্পী রামকিঙ্করের ছবির সঙ্গে প্রথম বর্ণপরিচয় হয়েছিল কীভাবে?
 
উত্তরঃ নিজের আত্মকথায় শিল্পী রামকিঙ্কর জানান, শিশুকাল থেকেই তাঁর চোখে পড়ত তাঁদের বাড়িঘরের চারদিকের দেয়ালে টাঙানো নানান দেবদেবীর ছবি। তখন থেকেই ছবির প্রতি তাঁর আকর্ষণ। শৈশবে দেখা সেইসব ছবি তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ‘কপি’ করতেন। এইভাবেই ‘ভিসুয়াল আর্ট’ বা চিত্রকলার সঙ্গে রামকিঙ্করের প্রথম ‘বর্ণপরিচয়’।
 
 ৬.২ “জেনারেল লাইব্রেরির উপরতলায় কলাভবনে নিয়ে গেলেন”—কে কাকে নিয়ে গিয়েছিলেন? তারপর কী ঘটেছিল?
 
উত্তরঃ ‘প্রবাসী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের জেনারেল লাইব্রেরির উপরতলায় কলাভবনে রামকিঙ্কর বেইজকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
  » তারপর রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় কলাভবনের আচার্য নন্দলাল বসুর সঙ্গে রামকিঙ্করের পরিচয় করিয়ে দেন। ।
 
 ৬.৩ যতদূর মনে হচ্ছে—গার্ল অ্যান্ড দ্য ডগ।” কার উক্তি? ‘গার্ল অ্যান্ড দ্য ডগ’ কীসের নাম? তিনি কীভাবে এ ধরনের কাজ শিখলেন?
উত্তরঃ আলোচ্য উক্তিটি শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজের।
  » ‘গার্ল অ্যান্ড দ্য ডগ’ হল রামকিঙ্কর বেইজের একটি বিখ্যাত অয়েলপেন্টিং বা তৈলচিত্রের নাম।
  » অয়েলপেন্টিং-এর কাজ শান্তিনিকেতনে রামকিঙ্করই প্রথম শুরু করেন। এই বিদ্যা বা ছবি আঁকার কৌশল তাঁকে হাতে ধরে কেউ শেখাননি। সম্পূর্ণ নিজে নিজেই এই কলা তিনি রপ্ত করেছিলেন। অয়েলপেন্টিং বা তেল রং কেনার জন্য তিনি যখন দোকানে যান তখন দোকানদার তাঁকে শুধু জানান, টিউবের রং ও পাত্রের তেলে তুলি ডুবিয়েই রং করতে হয়। এইভাবেই তিনি অয়েলপেন্টিং-এর কাজ শিখেছিলেন।
 
৬.৪ “এই সাদামাটা সুরটাই আমাকে ভীষণভাবে টানে।”—কাকে টানে? ‘সাদামাটা সুর’ বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন? তাঁকে এই সুর টানে কেন?
উত্তরঃ 
 » আচার্য নন্দলালবসুর আঁকার ‘সাদামাটা সুরটাই’ লেখক রামকিঙ্কর বেইজকে টানে।
 
 » নন্দলাল বসু একেবারে সাধারণ চরিত্র, পরিচিত প্রকৃতি, গ্রামের পরিপূর্ণ রূপ দিয়ে অসাধারণ ছবি সৃষ্টি করতেন। আচার্য নন্দলালের ছবির এই বৈশিষ্ট্যটি রামকিঙ্করকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল। একেই রামকিঙ্কর ‘সাদামাটা সুর’ বলে উল্লেখ করেছেন।
 
 » রামকিঙ্কর বলেছেন, নন্দলালের আঁকা ছবিগুলির ভেতর যে সাদামাটা সুর রয়েছে, সেই সুরটিই তাঁকে টানত। এর কারণ তাঁর সমস্ত ছবির প্রেক্ষাপটেই থাকত সাধারণ চরিত্র আর একেবারে ‘কমন ল্যান্ডস্কেপ’, যা দিয়ে গ্রামের সম্পূর্ণরূপ অতি অনায়াসে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটে উঠত।
 
👉 পরবর্তী পাঠ 

This Post Has One Comment

Leave a Reply