লেখক পরিচিতিঃ
সৈয়দ মুজতবা আলি (১৯০৪-১৯৭৪): জন্ম শ্রীহট্টের করিমগঞ্জে। বাবার নাম সৈয়দ সিকান্দর আলি। মহাত্মা গান্ধির ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে স্কুল ছাড়েন। শান্তিনিকেতনে পড়া শেষ করে তিনি কাবুলের শিক্ষাবিভাগে অধ্যাপক হন। তিনি আরবি, ফারসি, জার্মান সহ ১৫টি ভাষা জানতেন। প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, উপন্যাস ও রম্য-রচনায় তাঁর দক্ষতা অসামান্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘দেশে বিদেশে’, ‘পঞ্চতন্ত্র’, ‘চাচাকাহিনি’, ‘ময়ূরকণ্ঠী’, ‘শবনম’, ‘ধূপছায়া’, ‘টুনিমেম’, ‘হিটলার’ প্রভৃতি। তিনি ‘নরসিংহদাস পুরস্কারে’ সম্মানিত।
কুতুবমিনারের ইতিহাসঃ
ভারত বর্ষের প্রথম মুসলিম শাসক ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান কুতুব উদ্দিন আইবেক কুতুব মিনারের গোড়া পত্তন করেন। তার তত্ত্বাবধানে ১ম ও ২য় তলা নির্মিত হয়। পরবর্তী সময়ে (১২১১-৩৬) সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মিনারের ৩য় ও ৪র্থ তলা এবং শেষে সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের হাতে ৫ম তলা নির্মাণ সমাপ্ত হয়।
কুতুব মিনার ভারতীয়-মুসলিম স্থাপত্যকীর্তির অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। ভারতের দিল্লীতে অবস্থিত একটি স্তম্ভ বা মিনার, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ ইটনির্মিত মিনার। পরবৰ্তীকালে বজ্ৰপাতে মিনার ক্ষতিগ্ৰস্থ হয় যদিও তার সংস্কার করা হয়েছিল।এর আশে পাশে আরও বেশ কিছু প্রচীন এবং মধ্যযুগীয় স্থাপনা এবং ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যারা একত্রে কুতুব কমপ্লেক্স হিসেবে পরিচিত।
কুতুব মিনার বিভিন্ন নলাকার শ্যাফট দিয়ে গঠিত যা বারান্দা দ্বারা পৃথকীকৃত। মিনার লাল বেলেপাথর দিয়ে তৈরী যার আচ্ছাদন এর উপরে পবিত্র কোরআনের আয়াত খোদাই করা। ভূমিকম্প এবং বজ্রপাত এর দরুন মিনার এর কিছু ক্ষতি হয় কিন্তু সেটি পুণরায় শাসকদের দ্বারা ঠিক করা হয়।
ফিরোজ শাহ এর শাসনকালে, মিনার এর দুই শীর্ষ তলা বাজ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু তা ফিরোজ শাহ দ্বারা সংশোধিত হয়েছিল। ১৫০৫ সালে ভূমিকম্প প্রহত এবং সিকান্দার লোদী দ্বারা সংশোধিত হয়েছিল। কুতুব মিনার এর দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ২৫ ইঞ্চি একটি ঢাল আছে যা “নিরাপদ সীমার মধ্যে” বিবেচিত হয়। কুতুব মিনারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মনোরম একটি কমপ্লেক্স। ১০০ একর জমির উপর স্থাপিত এ কমপ্লেক্সে রয়েছে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ, আলাই মিনার, আলাই গেট, সুলতান ইলতুৎমিশ, সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবন, সুলতান আলাউদ্দিন খলজী ও ইমাম জামিনের সমাধি ও লৌহ পিলার।
ইসলামিক স্থাপত্য এবং শিল্পকৌশলের এক অনবদ্য প্ৰতিফলন হিসাবে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার (iv) বিভাগে এই প্রাঙ্গণ বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মৰ্যাদা লাভ করে। এটি দিল্লীর অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং এটি ২০০৬ সালে সর্বোচ্চ পরিদর্শিত সৌধ, এবং পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৩৮.৯৫ লাখ যা তাজমহলের চেয়েও বেশি, যেখানে তাজমহলের পর্যটন সংখ্যা ছিল ২৫.৪ লাখ।
তথ্য : ইন্টারনেট।
শব্দার্থ :
» মিনার– মোচার আকারে বা শাঁখের মতো ঊর্ধ্বমুখী উন্নত চূড়া।
» মোগল কলা– মুঘল আমলের শিল্প সংস্কৃতি।
» এক্সপেরিমেন্ট– পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
» সিক্রি– এখানে ফতেহপুর সিক্রি।
» স্থপতি– সৌধ, প্রাসাদ, ইমারত প্রভৃতি তৈরির কাজে নিযুক্ত।
» গুলদন্তাজ– মিনারেট জাতীয় ছোটো চূড়া বা শীর্ষদেশ।
» থাম– স্তম্ভ।
» আর্চ– খিলান। ছত্রি– চাল বা ছাদ।
» মিনারেট– মিনারের চেয়ে ছোটো চূড়া।
» ছজ্জা– বৃষ্টির ছাট ঠেকানোর জন্য দরজা বা জানলার উপরস্থিত ছাদের প্রলম্বিত অংশ।
» ব্র্যাকেট– প্রধানত দেওয়ালের গায়ে আটকানো তাকের প্রলম্বিত আলম্ব বা দেয়ালগিরি।
» প্রপর্শন– সঙ্গতি।
» অপটিমাম সাইজ– সামঞ্জস্যপূর্ণ আকার।
» ডোম– গোলাকার গম্বুজ।
» জিওমেট্রিক ডিজাইন– জ্যামিতিক বিন্যাস।
» দার্ঢ্য– দৃঢ়তা।
(হাতে কলমে প্রশ্নের উত্তর)
১. অনধিক দুটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১.১ কোন সম্রাট অশোক স্তম্ভ’ কে দিল্লি নিয়ে এসেছিলেন ?
উত্তরঃ ফিরোজ তুঘলক ‘অশোক স্তম্ভ’ কে দিল্লি নিয়ে এসেছিলেন।
১.২ কুতুব মিনার নামটি কার নামানুসারে রাখা হয়েছে এবং কেন ?
উত্তরঃ কুতুবুদ্দিন আইবকের নামে কুতুব মিনার নামকরণ করা হয়। কারণ উনি এই মিনারটি তৈরি করার পরিকল্পনা করেন
১.৩ কুতুবের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য আর কে মিনার গড়তে চেষ্টা করেছিলেন ?
উত্তরঃ আলাউদ্দিন খিলজি কুতুবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মিনার গড়তে চেষ্টা করেছিলেন।
১.৪ মিনারেট বা মিনারিকা কী ? মিনারের সঙ্গে এর পার্থক্য কোথায় ?
উত্তরঃ মসজিদ, সমাধি কিংবা অন্য কোনো ইমারতের অঙ্গ হিসেবে যে মিনার কখনো থাকে, কখনো থাকে না, তার নাম মিনারেট বা মিনারিকা।
» মিনারের সঙ্গে মিনারিকার পার্থক্য হল মিনার আপন মহিমায় নিজস্ব ক্ষমতায় স্তম্ভ হিসেবে দাঁড়ায়। কিন্তু মিনারিকা কোনো ইমারতের অঙ্গ হিসেবে থাকে।
১.৫ আহমদাবাদ শহরটি কোন রাজার নামানুসারে হয়েছে ? এই শহরটি কোন রাজ্যের রাজধানী ?
উত্তরঃ রাজা আহমেদের নাম অনুসারে শহরটির নাম হয়েছে।
» আহমদাবাদ গুজরাতের রাজধানী।
২. নীচে যাদের নাম রয়েছে, তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও :
উত্তরঃ
২.১ কানিংহাম— কানিংহাম ছিলেন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক। তিনি নানাবিধ ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কুতুবমিনার নিয়ে ঐতিহাসিক ভাবনা।
২.২ ফার্গুসন— ফার্গুসনও একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ। ইতিহাসের নানা বিষয় নিয়ে তিনি যাবতীয় ঐতিহাসিক গবেষণা ও নানা প্রমাণের চেষ্টা করেন আজীবন।
২.৩ সৈয়দ আহমেদ— সৈয়দ আহমেদ ছিলেন একজন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক। স্থাপত্যবিদ্যায় তাঁর জ্ঞান সংশয়াতীত। ইনি মুঘল স্থাপত্য বিষয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা চালিয়েছেন।
৩. কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :
৩.১ ‘কুতুব মিনার পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মিনার’— এই উদ্ধৃতিটির আলোকে মিনারটির পাঁচটি বিশিষ্টতা উল্লেখ করো।
উত্তরঃ
(ক) কুতুব পাঁচতলার মিনার।
(খ) কুতুব মিনারের প্রথম তলাতে আছে ‘বাঁশি’ ও ‘কোণে’-র পর পর সাজানো নকশা।
(গ) কুতুব মিনারের দ্বিতীয় তলা সাজানো আছে শুধু বাঁশি দিয়ে।
(ঘ) কুতুব মিনারে কতকগুলি ব্যালকনি আছে।
(ঙ) কুতুব মিনারের গায়ে সারি সারি লতা-পাতা, ফুলের মালা এবং চক্রের নকশার যাবতীয় কারুকার্য আছে।
৩.২. মিনারটির গঠনে হিন্দু-মুসলিম সাংস্কৃতিক মিলনের চেহারাটি কীভাবে ধরা পড়েছে তা লেখো।
উত্তরঃ কুতুব মিনারের গায়ে বাঁশি ও কোণের উপর দিয়ে সমস্ত মিনারটিকে কোমরবন্ধের মতো ঘিরে রয়েছে সারি সারি লতা-পাতা, ফুলের মালা, চক্রের নকশা। এর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে এক সারি অন্তর অন্তর আরবি লেখার সারি। এভাবে সমগ্র শিল্পকর্মে হিন্দু ও মুসলিম সাংস্কৃতিক মিলনের চেহারা ধরা পড়ে।
৩.৩ কুতুব মিনারের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলতে গিয়ে লেখক আর কোন কোন স্থাপত্য কীর্তির প্রসঙ্গ এনেছেন ?
উত্তরঃ
(ক) তাজমহল। (খ) ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (গ) রাজভবন। (ঘ) দিল্লির সেক্রেটারিয়েট প্রভৃতি স্থাপত্য কীর্তির প্রসঙ্গ এনেছেন লেখক।
৩.৪ আলাউদ্দিন খিলজি চেষ্টা করেও কুতুব মিনারের চেয়ে মহত্তর স্থাপত্য গড়তে পারেননি কেন ?
উত্তরঃ আলাউদ্দিন কুতুব মিনারের চেয়ে দ্বিগুণ উচ্চতার মিনার গড়তে চেষ্টা করেন। কিন্তু ইমারত মাত্রেই অপটিমাম সাইজ অর্থাৎ কোন কিছুর সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম মাপ হয়ে থাকে। যার চেয়ে ইমারত বড়ো হলে খারাপ দেখায়, ছোটো হলেও খারাপ দেখায়। শেষ পর্যন্ত ইমারত গড়ে ওঠেনি। তার আগেই তিনি মারা যান। তাই, আলাউদ্দিন খিলজি চেষ্টা করেও কুতুব মিনারের চেয়ে মহত্তর স্থাপত্য গড়তে পারেননি।
👉 পরবর্তী পাঠঃ মাকু ১ম ও দ্বিতীয় অধ্যায়
Pingback: সপ্তম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর | WBBSE Class 7 Bengali Question Answer - Prosnodekho -