WBCHSE HIGHER SECONDARY HISTORY QUESTION WITH ANSWER 2017
2017
HISTORY
(New Syllabus)
Total Time : 3 hours 15 Minutes
Total Marks : 80
1. পরিমিত এবং যথাযথ উত্তরের জন্য বিশেষ মূল্য দেওয়া হবে।
Special credit will be given for answers which are brief and to the point.
2. বর্ণাশুদ্ধি, অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরিষ্কার হস্তাক্ষরের ক্ষেত্রে নম্বর কেটে নেওয়া হবে।
Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting.
3. উপান্তে প্রশ্নের পূর্ণমান সূচিত আছে।
Figures in the margin indicate full marks for the questions.
PART- A (Marks – 40)
1. যে-কোনো পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দাও (প্রতিটি বিভাগ থেকে ন্যূনতম দুটি প্রশ্নের উত্তর আবশ্যক) : 8×5=40
👉HS History MCQ Online Mock Test👈
খণ্ড-ক
(i) পেশাদারি ইতিহাস বলতে কী বোঝায় ? অপেশাদারি ইতিহাসের সঙ্গে পেশাদারি ইতিহাসের পার্থক্য কী ?
উত্তরঃ ইতিহাস হল মানব স্মৃতির অতীত কর্মকাণ্ডের কালানুক্রমিক ও ধারাবাহিক লিখিত বিবরণ। এই ইতিহাস নিয়ে যারা চর্চা করে তাদেরকে ইতিহাসবিদ বা ঐতিহাসিক বলে। এই ঐতিহাসিক এর মধ্যে অনেকেই ইতিহাস চর্চাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন, তাই তাদেরকে পেশাদারী ঐতিহাসিক নামে অভিহিত করা হয়। আবার ঐতিহাসিকদের মধ্যে কেউ কেউ অবসর হিসাবে শখের ইতিহাস চর্চা করেন তারা হলেন মূলত অপেশাদারী ঐতিহাসিক। বর্তমানকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশাদারী ভিত্তিতে নানা ধরনের ঐতিহাসিক গবেষণার কাজ হয়ে চলেছে।
পেশাদারি ও অপেশাদার ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য।
পেশাদারী ইতিহাসের সাথে অপেশাদারী বিষয়ে যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল যথা—
উদ্ভবগত পার্থক্যঃ প্রকৃতপক্ষে উনবিংশ শতকের শেষে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউরোপের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিহাস চর্চার কাজ পেশাদারী ভিত্তিক হয়। সেই সময় থেকে কোন কোন ঐতিহাসিক ইতিহাস চর্চা বা ইতিহাসের গবেষণাকে পেশাদারী কাজ হিসেবে গ্রহণ করেন। যার ফলে নতুন দিক উন্মোচন হয়।
অন্যদিকে,অপেশাদার ইতিহাস চর্চা উনিশ শতকের অনেক আগেই অর্থাৎ প্রাচীনকাল থেকে শুরু বলা যায়। তাই বলা যায় হেরোডোটাস, থুকিডিডিস যে ইতিহাস চর্চার সূচনা ঘটান তাতে পেশাদারি তত্ত্বের কোন ছাপ ছিল না।
আর্থিক সম্পর্ক গত পার্থক্যঃ পেশাদারী ইতিহাস চর্চায় আর্থিক সম্পর্ক বিষয়ে ছড়িয়ে থাকে। এই ইতিহাস চর্চার জন্য অনেক সময় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়। পাশাপাশি এই ইতিহাস চর্চায় ইতিহাসবিদ ব্যক্তিগতভাবেও আর্থিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ পান।
অন্যদিকে, অপেশাদার ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে সাধারণত সরকারি আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়না। ইতিহাসবিদ বা গবেষকগণ নিজের আর্থিক ব্যয়ে ইতিহাস চর্চা বা গবেষণা করেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সুবিধা লাভের তেমন কোনো সুযোগ নেই।
পদ্ধতিগত পার্থক্যঃ পেশাদারী ইতিহাসবিদগণ তাদের গবেষণার কাজে খুব উন্নতমানের আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
অন্যদিকে, অপেশাদার ইতিহাস চর্চায় সাধারণত স্থানীয় তথ্যাদি,ক্ষেত্রসমীক্ষা প্রভৃতি পদ্ধতি ব্যবহার করে ঐতিহাসিক তত্ত্ব সংগ্রহ করা হয়।
সময়গত পার্থক্যঃ পেশাদারী ইতিহাস হলো একটি দীর্ঘ সর্বক্ষণের কাজ। তাই গবেষকরা বা ইতিহাসবিদরা তাদের প্রধান পেশা হিসেবে ইতিহাস চর্চার কাজ করেন।
অন্যদিকে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপেশাদারি ইতিহাস চর্চায় গবেষকগণ তাদের ইতিহাস চর্চার কাজকে একটি আংশিক সময়ের কাজ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।
ব্যক্তিগত পার্থক্যঃ বর্তমানকালে অধিকাংশ বর্বর ধরনের প্রেক্ষাপটে ইতিহাস চর্চা পেশাদারী ইতিহাসবিদরা করেন। এক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে এই জাতি বা রাষ্ট্রের এমনকি সভ্যতার উত্থান পতন, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন দিকের ওপর আলোকপাত করা হয়।
অন্যদিকে, বর্তমানকালে অপেশাদারী ইতিহাস চর্চা তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র প্রেক্ষাপটে হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেসব স্থানীয় ইতিহাস চর্চা হয় সেগুলি স্থানীয় ইতিহাসকে তুলে ধরে।
জীবিকাগত পার্থক্যঃ পেশাদারী ইতিহাসবিদের জীবন ও জীবিকা অনেকাংশে নির্ভরশীল হয় তাদের ইতিহাস চর্চার কাজের ওপর।
অন্যদিকে, অপেশাদারী ইতিহাসবিদের জীবন ও জীবিকা ইতিহাস চর্চার কাজের ওপর তেমন ভাবে সাহায্য করে না বললেই চলে।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে পেশাদারি ও অপেশাদারী ইতিহাসের পার্থক্য নিহিত আছে।
👉আরও দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈
(ii) উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো। (২০১৫ সালে প্রশ্নটি এসেছিল)
উত্তরঃ আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল নয়া উপনিবেশবাদ ও নয়া সাম্রাজ্যবাদ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
• উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসনের ব্যাখ্যা।
ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তার ‘সাম্রাজ্যবাদ : একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল一
[1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভঃ হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনাে মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে মূলধনের পাহাড় সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়ােগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে।
[2] পুঁজিপতিদের চাপঃ হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়ােগ করার জন্য পুঁজিপতিরা নিজ দেশের সরকারকে উপনিবেশ দখলে বাধ্য করে। অর্থাৎ হবসনের মতে, বাড়তি মূলধনের চাপ ই সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশ দখলের মূল কারণ।
[3] অর্থনৈতিক শােষণঃ হবসন দেখিয়েছেন যে, অধিক মুনাফা ও সম্পদ অর্জনের জন্য ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র উপনিবেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং উপনিবেশের বাজারে নিজেদের শিল্পজাত পণ্য বিক্রয় করতে থাকে। এইভাবে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র কর্তৃক উপনিবেশগুলি শােষিত হয় এবং পরিণামে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও ফুলে ফেঁপে ওঠে।
[4] ঔপনিবেশিকতাবাদের অবসানের উপায়ঃ হবসনের মতে, এই ব্যবস্থার প্রতিকার করতে হলে পুঁজিপতিদের বাড়তি মূলধন দরিদ্র শ্রেণির মানুষগুলাের মধ্যে বিতরণ এবং বিভিন্ন উন্নয়নকার্যে তা ব্যবহার করতে হবে। তার মতে, যদি লােকের জীবনযাত্রার মান বাড়ে, তবে তারা কলকারখানায় তৈরি বাড়তি জিনিস কিনে উদ্বৃত্ত মালকে ব্যবহার করতে পারবে। ফলে উদ্বৃত্ত মালের বিক্রির জন্য উপনিবেশ দখলের দরকার হবে না।
• উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে লেনিনের ব্যাখ্যা।
রাশিয়ার বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার ‘সাম্রাজ্যবাদ : পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর’ নামক গ্রন্থে (১৯১৬ খ্রি.)। এ সম্পর্কে তার প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল一
১. পুঁজির উদ্ভব এবং তা বিনিয়ােগঃ ইউরোপের দেশগুলিতে শিল্পের অগ্রগতি ঘটার ফলে পুঁজিপতিদের হাতে বিপুল পরিমাণ পুঁজি জমা হয়। এবার তারা আরও বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য সেই পুঁজি পুনরায় বিনিয়ােগ করতে উদ্যত হয় এবং এজন্য তারা বেছে নেয় উপনিবেশগুলিকে।
তারা উপনিবেশ থেকে সংগ্রহ করা কাঁচামাল নিজের দেশে না নিয়ে গিয়ে উপনিবেশেই পুঁজি বিনিয়ােগ করতে চায়। তাই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পুঁজিবাদী শ্রেণির স্বার্থে উপনিবেশ দখল করে এবং পুঁজিবাদীরা সেখানেই পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা চালায়।
২. বাজার দখল ও কাঁচামাল সংগ্রহঃ অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের শিল্প মালিকরা নিজ দেশের প্রয়ােজনের তুলনায় অনেক বেশি পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করে। প্রয়ােজনের অতিরিক্ত এই পণ্য উৎপাদনের জন্য সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহ এবং সেই পণ্যকে বিক্রি করার জন্য প্রয়ােজন ছিল উপনিবেশের। লেনিনের মতে, এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি উপনিবেশ দখলের চেষ্টা চালায়।
৩. প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সাম্রাজ্যবাদঃ লেনিন বলেছেন, পুঁজিবাদের জঠরে সাম্রাজ্যবাদের জন্ম। উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে যায়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা জন্ম দেয় যুদ্ধের। অর্থাৎ পুঁজিবাদী অর্থনীতিই হল যুদ্ধের জন্মদাতা—যার সূত্রপাত হয় উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে।
৪. অনুগত অভিজাত শ্রমিক শ্রেণির প্রতিষ্ঠাঃ পুঁজিবাদী অর্থনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, মালিক শ্রেণির কর্তৃক শ্রমিক শ্রেণির শােষণ। কিন্তু লেনিনের মতে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিকে উপনিবেশে পরিণত করে সেখানকার নতুন শ্রমিক শ্রেণির ওপর শােষণ চালালেও নিজ দেশের শ্রমিকদের উৎকোচ দিয়ে বশীভূত করেছিল। কারণ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির লক্ষ্য ছিল নিজ দেশের এই অনুগত অভিজাত শ্রমিক শ্রেণি-কে শ্রমিক বিপ্লব থেকে বিরত রাখা।
মূল্যায়ণঃ উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন ও লেনিনের তত্ত্ব সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয়। বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই তত্ত্বের ভ্রান্তি ধরা পড়ে। তবে এই তত্ত্বের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। তাই ডেভিড থমসনকে সমর্থন করে বলা যায় যে, সাগরপারে নিরাপদ বিনিয়ােগের ক্ষেত্র সন্ধানের আগ্রহই ইউরােপীয় দেশগুলিকে উপনিবেশ দখলে বিশেষ উদ্যোগী করে তুলেছিল।
(iii) ক্যান্টন বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ? এই বাণিজ্যের অবসান কেন হয় ? (২০১৫ সালে প্রশ্নটি এসেছিল)
অথবা,
আলিগড় আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ
আলিগড় আন্দোলন (Aligarh Movement)—
আলিগড় আন্দোলনের প্রবর্তক ছিলেন স্যার সৈয়দ আহমেদ খাঁ (Sir Syed Ahmed Khan)। পিছিয়ে পড়া মুসলমান সম্প্রদায়কে যুক্তিবাদী আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য স্যার সৈয়দ আহমেদ খাঁ উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে যে আন্দোলনের সূচনা করেন তা আলিগড় আন্দোলন নামে খ্যাত। ভারতীয় মুসলমান সমাজ এ যাবৎ সকল প্রকার সংস্কার আন্দোলন থেকে নিজেদের দুরে সরিয়ে রেখেছিলেন। ইতিপূর্বে ওয়াহাবি ও ফরাজি আন্দোলন হলেও তা রক্ষণশীল মুসলিম সমাজকে স্পর্শ করেনি। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহের পর অনগ্রসর মুসলিম সমাজে কিছু কিছু সংস্কারের প্রয়োজন অনুভূত হয়। হিন্দুদের তুলনায় অনগ্রসর পাশ্চাত্য শিক্ষায় উদাসীন মুসলিম সমাজের দুরবস্থার কথা স্যার সৈয়দ আহমেদ খাঁ অবগত ছিলেন। স্যার সৈয়দ আহমেদ খাঁ ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষাকে প্রগতির যথার্থ সোপান বলে মনে করতেন, তাই তিনি মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রসারে উদ্যোগী হন।
শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে আলিগড় আন্দোলনের প্রভাব (Impact of Aligarh Movement on spread of Muslim Education)—
(১) ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি গাজিপুরে একটি ইংরেজি স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেন।
(২) ইংরেজি ভাষায় লেখা মূল্যবান কিছু কিছু বই উর্দু ভাষায় অনুবাদ করে তা মুসলমানদের মধ্যে বিতরণ করার উদ্দেশ্যে তিনি বিজ্ঞান সমিতি (Scientific society) নামে একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন।
(৩) তিনি মুসলমানদের মন থেকে পাশ্চাত্যের ভয় ভীতি দূর করার জন্য ও মুসলমানদের মধ্যে উদারনৈতিক ভাবধারা প্রচারের জন্য ‘তাহজিব-উল-আখলার্ক’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে ‘কমিটি ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ লার্নিং’ নামে একটি সংস্থারও তিনি প্রতিষ্ঠা করেন।
(৪) অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে আলিগড়ে তিনি ‘মহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ’ (Muhammedan Anglo-Oriental College) -এর প্রতিষ্ঠা করেন। এই কলেজটিই পরে ‘আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়’ (Aligarh Muslim University) নামে পরিচিত হয়। ইংরেজ শিক্ষাবিদগণের তত্ত্বাবধানে এই কলেজে কলা ও বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ও প্রগতিমূলক মনোভাবের উন্মেষ ঘটানোর ক্ষেত্রে এই কলেজের অবদান অস্বীকার করা যায় না।
(৫) আলিগড় আন্দোলন মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে তাদের আধুনিক যুগোপযোগী ভাবধারায় দীক্ষিত করেছিল।
(৬) এই আন্দোলন ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে যুক্তিবাদের প্রসার ঘটিয়ে তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামি পরিত্যাগেও সাহায্য করেছিল।
(৭) এই আন্দোলন মুসলিম সমাজে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি, পর্দা প্রথার অপসারণ ও নারী শিক্ষা প্রসারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আলিগড় আন্দোলনের ফলাফল (Impact of Aligarh Movement on Political Platform)—
(১) আলিগড় আন্দোলন মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটাতে সাহায্য করে।
(২) আলিগড় অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ ও ঘোর সাম্রাজ্যবাদী থিওডোর বেক-এর প্রভাবে আলিগড় আন্দোলনের নেতা সৈয়দ আহমেদ খাঁ ইংরেজ শাসনের প্রতি আনুগত্য এবং জাতীয় কংগ্রেসের বিরোধিতার নীতি গ্রহণ করেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা রুখতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তিনি ‘এডুকেশানাল কংগ্রেস’, ‘ইউনাইটেড পেট্রিয়াটিক অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘মহামেডান অ্যাসোসিয়েশন’ নামে তিনি কংগ্রেসের তিনটি প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা গঠন করেন।
(৩) আলিগড় আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করার অপূর্ব সুযোগ পায় এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদ নীতিকে তোষণ করতে শুরু করে। বঙ্গভঙ্গ ছিল ইংরেজ সরকারের সাম্প্রদায়িক বিভেদ নীতির প্রথম দৃষ্টান্ত।
(৪) সর্বোপরি আলিগড় আন্দোলনের কার্যকলাপ পরাধীন ভারতের রাজনীতিতে দ্বিজাতি তত্ত্ব ও বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্ম দেয়।
মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ও পাঞ্জাবের মুসলমানগণ আলিগড়ের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। শুধুমাত্র উত্তর প্রদেশের উচ্চবিত্ত সমাজের মুসলমানরাই আলিগড় কলেজে শিক্ষার সুযোগ পায়। এইসব দোষত্রুটি সত্ত্বেও ভারতীয় মুসলমান সমাজের নবজাগরণে স্যার সৈয়দ আহমেদ তথা আলিগড় আন্দোলনের অবদান অস্বীকার করা যায় না। সাম্প্রদায়িক দিকটা ছাড়া মুসলমান সমাজের সংস্কার সাধনে স্যার সৈয়দ আহমেদের অবদান স্মরনীয়। এক্ষেত্রে তিনি রাজা রামমোহন রায়ের সমগোত্রীয় ছিলেন। রাজা রামমোহন রায়ের মতো স্যার সৈয়দ আহমেদ খাঁও মুসলিম সমাজে বহু বিবাহ, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি তুলে দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন। মুসলিমদের ‘তালাক প্রথা, ও ‘বোরখা’ তুলে দেওয়ারও তিনি পক্ষপাতী ছিলেন। তবে সাধারণভাবে রক্ষণশীল মুসলমান সমাজ তাঁর এসব সংস্কার প্রয়াস ভালোভাবে মেনে নেয় নি। ফলে তাঁর প্রয়াস অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আলিগড় আন্দোলনের অবদান প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার মন্তব্য করে বলেছেন যে, ‘উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণ ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হিন্দুদের কাছে যা ছিল, আলিগড় আন্দোলনও ছিল মুসলিমদের কাছে ঠিক তাই’।
(iv) ব্রিটিশ শাসনকালে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের বিবরণ দাও। 8
উত্তরঃ
• আদিবাসী সম্প্রদায়—
১. সূচনাঃ ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের সর্বাধিক শোষিত ও নিপীড়িত সম্প্রদায়গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ভারতের প্রাচীন বাসিন্দা আদিবাসী বা উপজাতি সম্প্রদায়। সাঁওতাল, কোল, ভীল, মুন্ডা, ওরাঁও, হো, ভূমিজ, খন্দ, গোণ্ড, ভারলি, নাগারা প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায় প্রকৃতির কোলে বসবাস করত এবং প্রকৃতির সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সরকার, জমিদার ও মহাজনদের তীব্র শোষণের শিকার হয়ে তারা প্রতিবাদে গর্জে ওঠে।
২. কর আরোপঃ ব্রিটিশ সরকার উনিশ শতকে আদিবাসী সম্প্রদায়কে আইন, শাসন ও বিচার-ব্যবস্থার আওতায় আনে। ভূমি বন্দোবস্ত করে সরকার আদিবাসীদের জমির ওপর কর আরোপ করে ও আদিবাসী কৃষকদের কাছ থেকে কর আদায়ে তীব্র নির্যাতন চালায়।
৩. ‘দিকু’দের ভূমিকাঃ বহিরাগত জমিদার জোতদার, বণিক, মহাজন, ঠিকাদার, দালাল প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরের মধ্যস্বত্বভোগী বহিরাগতদের আদিবাসীরা ‘দিকু’ বলত। ‘দিকু’-রা আদিবাসীদের সঙ্গে নানাভাবে প্রতারণা ও শোষণ চালায়।
৪. অরণ্যের অধিকার ব্যাহতঃ আদিবাসীরা পাহাড় ও মালভূমির অরণ্যাঞলে ঝুম চাষ করে খাদ্য উৎপাদন করত এবং অরণ্য থেকে বিভিন্ন সম্পদ আহরণ করত। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে সংরক্ষিত অরণ্যাঞ্চলে ঝুম চাষ নিষিদ্ধ করে এবং অরণ্য-সম্পদের ওপর সরকার একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
৫. সামাজিক আগ্রাসনঃ ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায় বিভিন্ন সামাজিক আগ্রাসনের শিকার হয়। খ্রিস্টান মিশনারিরা আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি তাদের খ্রিস্টানধর্মে দীক্ষিত করতে থাকে। নতুন পাশ্চাত্য খ্রিস্টান সংস্কৃতির প্রভাবে আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাদী সংস্কৃতি আক্রান্ত হয়।
৬. শোষণ ও বঞ্চনাঃ সারা দেশে রেলপথ স্থাপনের কাজ শুরু হলে প্রচুর আদিবাসী শ্রমিককে এই কাজে নিয়োগ করা হয়। কয়লা উৎপাদনের কাজেও প্রচুর সংখ্যক আদিবাসী শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ন্যায্য পারিশ্রমিক না দিয়ে দিনের পর দিন নানাভাবে তাদের বঞ্চিত করা হয়।
৭. মুক্তির উদ্যোগঃ ব্রিটিশ সরকার, পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও অন্যান্য শোষকদের হাত থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে আদিবাসী সম্প্রদায় প্রয়াস চালায়। তারা নিজেদের সামাজিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে শুদ্ধি আন্দোলন শুরু করে। শোষণ থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্যতম শাখা ছোটোনাগপুর অঞ্চলের কোল উপজাতি ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে এবং বিহারের সাঁওতাল উপজাতি ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ করে। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে মুন্ডা বিদ্রোহের নেপথ্যেও একই ধরনের পটভূমি কাজ করেছিল।
উপসংহারঃ ঔপনিবেশিক আমলে আদিবাসী সম্প্রদায় সর্বাধিক সামাজিক অসাম্যের শিকার হয়। ব্রিটিশবিরোধী মহাবিদ্রোহ (১৮৫৭ খ্রি.) বা জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহ শুরু হওয়ার আগে ভারতের শোষিত ও নিপীড়িত আদিবাসী সম্প্রদায়ই প্রথম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ভিত তৈরি করে। তাদের বিদ্রোহ ব্রিটিশবিরোধী কৃষক বিদ্রোহগুলিকেও শক্তি সরবরাহ করে।
• দলিত সম্প্রদায়—
১. সূচনাঃ খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে বৈদিক সভ্যতার যুগ থেকেই ভারতে জাতির বৈষম্যের সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীকালে আরও বহু অনগ্রসর ও অস্পৃশ্য জাতির উদ্ভব ঘটে। এই অনগ্রসর, শোষিত ও নির্যাতিত সম্প্রদায় ব্রিটিশ শাসনকালে দলিত নামে পরিচিত হয়। এই সময় তারা উচ্চবর্ণের নানা শোষণ ও অত্যাচারের শিকার হয়। তাই দলিতদের কাছে ইংরেজ বিরোধিতার চেয়ে নিজেদের সামাজিক মর্যাদা লাভের বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
২. অবহেলার শিকারঃ শিক্ষা-সংস্কৃতিতে পিছিয়ে থাকা গ্রামগঞ্জের দলিত শ্রেণির মানুষ সংস্কৃত বা ইংরেজি ভাষা জানত না বলে তারা নিজেদের কথ্যভাষায় ভাবের আদান-প্রদান করত। উচ্চবর্ণের মানুষ দলিতদের এই কথ্যভাষাকে খুবই অবজ্ঞা করত। ব্রাক্ষ্মণরা দক্ষিণ ভারতের তামিল ভাষাকে যথেষ্ট ঘৃণার চোখে দেখত।
৩. কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গিঃ জাতীয় কংগ্রেসে উচ্চবর্ণের নেতাদের প্রাধান্য ছিল। তারা অনেকেই জাতিভেদপ্রথার সমর্থক ছিল। কংগ্রেস নেতাদের এরূপ মনোভাবের ফলে দলিতদের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব বাড়তে থাকে এবং তারা ক্রমে কংগ্রেসের বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি হওয়ার সক্রিয় চেষ্টা চালায়। অবশ্য মহাত্মা গান্ধি হরিজন আন্দোলন শুরু করে কংগ্রেসের প্রতি দলিতদের আকৃষ্ট করা চেষ্টা করেন। কিন্তু গান্ধিজির সাবধানী উদ্যোগ দলিতদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
৪. বাংলায় দলিতদের সক্রিয়তাঃ উনবিংশ শতকে বাংলার দলিত নমঃশূদ্র সম্প্রদায় ব্রাহ্মণ্য আধিপত্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সরব হয়। প্রথমদিকে মতুয়া ধর্মের প্রবর্তক হরিচাদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুর এবং পরবর্তীকালে প্রমথরঞ্জন ঠাকুর, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল প্রমুখ দলিত নেতা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারিতে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী ও কোচদের তপশিলি জাতিভুক্ত করলে এর বিরুদ্ধে তারা সামাজিক আন্দোলন শুরু করে।
৫. দলিত সংগঠনঃ দক্ষিণ ভারতে তামিল ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে অব্রাহ্মণদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ‘জাস্টিস পার্টি’ (১৯১৭ খ্রি.) নামে দলিতদের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে নাগপুরে অনুষ্ঠিত দলিত নেতাদের সম্মেলনে দলিত আন্দোলনের গতি আসে। এখানে সর্বভারতীয় নিপীড়িত সমিতি গঠিত হয়। এস. সি. রাজা এই সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ড. আম্বেদকর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দলিতদের পৃথক নির্বাচনের অধিকার দাবি করেন।
৬. আম্বেদকরের ভূমিকাঃ গান্ধিজি-সহ অন্যান্য কিছু নেতার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা অস্পৃশ্যতা-বিরোধী দলিত নেতা আম্বেদকরের কাছে বিশেষ মূল্যবান ছিল না। দলিতদের মন্দিরে প্রবেশ বা উচ্চবর্ণের সঙ্গে মেলামেশার অধিকারের চেয়ে তিনি দলিতদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটানোর বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। তিনি ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে দলিতদের নিয়ে মহারাষ্ট্রে সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেন এবং প্রকাশ্যে ‘মনুস্মৃতি’ গ্রন্থটি পুড়িয়ে তিনি ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরোধিতা করেন। তিনি দলিতদের শিক্ষা, সংগঠন ও বিক্ষোভ আন্দোলনের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন।
৭. পুনা চুক্তিঃ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাকডোনাল্ড তাঁর সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ (১৯৩২ খ্রি.) নীতির মাধ্যমে দলিতদের পৃথক নির্বাচনের অধিকার দিলে গান্ধিজি এর তীব্র প্রতিবাদ করে অনশন শুরু করেন। (২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২খ্রি.)। শেষপর্যন্ত পুনা চুক্তির (২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ খ্রি.) মাধ্যমে আম্বেদকর দলিতদের পৃথক নির্বাচনের অধিকারের দাবি থেকে সরে আসেন এবং গান্ধিজি ও দলিতদের আরও বেশি সংখ্যক আসন সংরক্ষণের দাবি মেনে নেন।
উপসংহারঃ আম্বেদকরের নেতৃত্বে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় তপশিলি জাতি ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে দলিত আন্দোলনকে জাতীয় কংগ্রেসও গুরুত্ব দিতে শুরু করে। স্বাধীনতা লাভের প্রাক্-মুহূর্তে দলিত নেতা আম্বেদকরকে সংবিধানের খসড়া রচনা কমিটির সভাপতি নির্বাচন করা হয়। একজন দলিত নেতার নেতৃত্বাধীন কমিটি স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনার অধিকার পায়। তাঁর নেতৃত্বে রচিত নতুন সংবিধানে অস্পৃশ্যতাকে বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়৷
খণ্ড-খ
(v) মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কারের (1919) বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। এই আইনের ত্রুটিগুলি আলোচনা করো। 4+4
উত্তরঃ মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ—
প্রেক্ষাপটঃ মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কার আইন (১৯০৯ খ্রি.) ভারতীয়দের খুশি করতে পারেনি। কারণ আইনের দ্বারা ভারতে কোনাে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা গড়ে তােলা হয়নি বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতেও কোনাে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে পরবর্তী কয়েক বছরের পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ ভারতের জনবল এবং অর্থবল ব্যবহার করার প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করে, তাই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দান করে ভারতীয়দের খুশি করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ এক নতুন শাসন সংস্কার আইন প্রবর্তনে উদ্যোগী হয়। যা ‘মন্টেগু চেম্সফোর্ড সংস্কার আইন’ নামে পরিচিত।
আইনের বৈশিষ্ট্যঃ
১. মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা ও আয় সুনির্দিষ্টভাবে বন্টিত হয়।
২. মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা ৭ জন সদস্য নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদ বা বড়ােলাটের শাসনপরিষদ গঠিত হয়। এই ৭ জনের মধ্যে অন্তত ৩ জন সদস্য হবেন ভারতীয়।
৩. কেন্দ্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয়। এর নিম্নকক্ষের নাম হয় কেন্দ্রীয় আইনসভা এবং উচ্চকক্ষের নাম হয় রাষ্ট্রীয় পরিষদ।
৪. এই আইনের মাধ্যমে প্রদেশগুলিতে একদিকে গভর্নরের কার্যনির্বাহক সভা এবং অন্যদিকে প্রাদেশিক মন্ত্রীসভার দ্বৈত শাসনব্যবস্থা চালু হয়।
৫. মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনে বলা হয় যে, ভারত-সচিবের কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা ৮ থেকে ১২ জন হবে।
গুরুত্বঃ মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের দ্বারা ভারতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের সূচনা হয় এবং ভােটাধিকারের সম্প্রসারণ ঘটে। এই আইনের দ্বারা মন্ত্রীসভাকে তার কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে ভারতে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে।
মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের
ত্রুটিসমূহঃ
মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন ভারতবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়। এই সংস্কার আইনের ত্রুটিগুলি নীচে আলোচনা করা হল—
(১) বড়লাটের স্বৈরাচারিতাঃ এই আইনের মাধ্যমে বড়োলাট ও তার কার্যনির্বাহক সভার হাতে সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা হয়। বড়োলাট তার কাজের জন্য ভারতীয় আইন সভার কাছে নয় ইংল্যান্ডের ভারত সচিবের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিলেন। তাই এই নতুন আইনে পূর্বেকার কেন্দ্রীভূত সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনই বহাল থাকে।
(২) সার্বজনীন ভোটাধিকারের অস্বীকৃতিঃ
এই আইনে সর্বসাধারণের ভোটাধিকার স্বীকৃতি পায়নি। মুষ্টিমেয় বিত্তবান ব্যক্তির মধ্যেই ভোটাধিকার সীমাবদ্ধ ছিল।
(৩) পৃথক নির্বাচন পদ্ধতিঃ মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনে মুসলিমদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার অধিকার দান করা হয়৷
(vi) ভারত-ছাড়ো আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো এবং এই আন্দোলনে মহিলাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। 8
উত্তরঃ ১৯৪২ সালের ২৬ শে এপ্রিল। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী ‘হরিজন’ পত্রিকায় ‘ভারতছাড়ো’ আন্দোলনের পরিকল্পনা পেশ করেন। এই বছর ১৪ ই জুলাই ওয়ার্ধা অধিবেশনে ভারতছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। শুরু হয় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বশেষ বৃহত্তর গণআন্দোলন। এই আন্দোলনের নেতা হিসেবে গান্ধিজী ঘোষণা করেন, অবিলম্বে ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগ করতে হবে, অন্যথায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও কংগ্রেস প্রত্যক্ষ সংগ্রামে নামবে।
আন্দোলনের পটভুমিঃ
তবে এই আন্দোলনের পটভূমি তৈরি ছিল আগে থেকেই—
(১) ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতাঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি ভারতীয়দের সমর্থন ও সহযোগিতার আশায় 1942 সালে 23 শে মার্চ ক্রিপস মিশন কিছু প্রস্তাব নিয়ে ভারতে আসেন। কিন্তু এই প্রস্তাবে ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি না থাকায় এই মিশন ব্যর্থ হয়। ফলে গান্ধীজীর মনে তীব্র ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয়। তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন, ‘পুর্ণ স্বাধীনতা, অপেক্ষা কম কোন কিছুতেই আমি সন্তুষ্ট হবো না।’
(২) জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনাঃ ১৯৪২ সালের প্রথম থেকেই জাপান একে একে সিঙ্গাপুর, মালয় ও ব্রহ্মদেশকে পদানত করে এবং মার্চ মাসে রেঙ্গুনের পতন হয়৷ এই পরিস্থিতিতে ভারতে জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দেয়। মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মতে, জাপানি আক্রমণের এই সম্ভাবনাই গান্ধীজীকে গণআন্দোলেেনর দিকে ঠেলে দেয়।
(৩) দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। ১৯৪০-৪১ সালে এই বৃদ্ধির হার প্রায় ১৩.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ব্রিটিশ সরকারের ওপর কংগ্রেস ও সাধারণ মানুষ তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে, যা গণআন্দোলনের চেহারা নেয়।
(৪) তীব্র দমননীতিঃ এই গণআন্দোলন দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর ওপর অকথ্য নির্যাতন ও সীমাহীন অত্যাচার শুরু করে। ফলে ভারতীয়রা অত্যন্ত বিক্ষিপ্ত হয়ে মুক্তির পথ খুঁজতে শুরু করে।
(৫) স্বাধীনতার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষাঃ ব্রিটিশ সরকারের স্বাধীনতা প্রদানের ক্ষেত্রে ঔদাসীন্য এবং সাংবিধানিক সংস্কারের অনাগ্রহ ভারতীয় নেতৃবৃন্দকে অসন্তুষ্ট করে তোলে। ভারতবাসী যে-কোনো মূল্যে স্বাধীনতা লাভকে নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর হয়ে উঠেছিলেন। ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী লিখেছেন, ” ভারত ছাড়ো আন্দোলনে গান্ধী যতটা নেতা, ততটাই জনগণের ইচ্ছার দাস।”
(৬) পোড়ামাটির নীতিঃ জাপানি আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল পূর্ব ভারতে পোড়ামাটির নীতি গ্রহণ করে। ফলে এই এলাকায় প্রচুর খাদ্যশস্য ধ্বংস হয় এবং খাদ্য সংকট দেখা দেয়। তাদের এই নীতিও ভারতবর্ষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল।
(৭) গান্ধীজীর অনমনীয় মনোভাবঃ অসহযোগ, আইন অমান্য প্রভৃতি আন্দোলন সত্বেও ব্রিটিশ সরকারের উদাসীনতা এবং ভারতের নিরাপত্তার বিষয়ে ব্রিটিশদের সদিচ্ছার অভাব গান্ধীজিকে যারপরনাই ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। তার এই অনমনীয় ক্ষোভ ভারতছাড়ো আন্দোলনের মতো একটি গণআন্দোলনের পটভূমি তৈরি করেছিল। জওহরলাল নেহরু এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘গান্ধীজিকে ইতিপুর্বে আর কখনো এতটা ব্রিটিশবিরোধী হতে দেখা যায়নি।’
এই পটভূমিতে 7 ই আগস্ট বোম্বাইয়ে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সভা বসে। ৮ই আগস্ট ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। আন্দোলনের মূলমন্ত্র ঘোষিত হয় ‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে।’
আন্দোলনে নারী সমাজের ভূমিকাঃ
আন্দোলনের শুরু হতেই, ব্রিটিশ সরকার কঠোর দমননীতির শুরু করে। গান্ধিজি, নেহেরু, মৌলানা আজাদ সহ প্রথম সারির সমস্ত নেতাকে কারারুদ্ধ করে। ফলে আন্দোলন পুরোপুরি নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, নেতা হীন এই আন্দোলন বিদ্যুৎ গতিতে গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয়। ঐতিহাসিক ডঃ বিপানচন্দ্ৰ লিখেছেন, ‘জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটা প্রবল আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল। নেতৃত্বহীন এবং সংগঠনের জনতা যেভাবে খুশি সেইভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শনে মেতে উঠেছিল।’
এই স্বতস্ফূর্ত আন্দোলনে ভারতের নারী সমাজ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। স্কুল কলেজের ছাত্রীরা ব্যাপক পরিমাণে আন্দোলনে শামিল হয়। অরুনা আশরাফ আলী, সুচেতা কৃপালনী প্রমুখ নেত্রী গোপনে মেয়েদের সংগঠিত করেন।
গান্ধী বুড়ি নামে পরিচিত ৭৩ বছরের মাতঙ্গিনি হাজরা তমলুকের সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা তুলতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। মেদিনীপুর জেলার বিদ্যুৎ বাহিনী ও ভাগিনি সেবা শিবির নামে দুটো স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী এই আন্দোলনকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়।
আসামের 13 বছরের কনকলতা বড়ুয়া, পাঞ্জাবের গৃহবধূ ভোগেশ্বরী ফুকননী এই আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন।
(vii) ট্রুম্যান নীতি কী ? মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল ? 4+4
উত্তরঃ ট্রুম্যান নীতি—
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সমগ্র বিশ্ব পরস্পর বিরোধী দু’টি পৃথক শক্তি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। এর একদিকে ছিল আমেরিকা এবং অপরদিকে ছিল সোভিয়েত রাশিয়া। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসের এক বক্তৃতায় আশ্বাস দেন যে যদি কোনো মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বা কোনো বিদেশি রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হয় তা হলে আমেরিকা তাদের সাহায্য করবে। রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যানের এই ঘোষণা ‘ট্রুম্যান নীতি’ নামে পরিচিত।
মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্যঃ
মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিধ্বস্ত ইউরোপের আর্থিক পুনরুজ্জীবনের এই উদ্দেশ্যগুলি ছিল এই রকম—
অর্থনৈতিক উজ্জীবনঃ মার্শাল পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল আর্থিক পুনরুজ্জীবন। এই পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৪৮-৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মোট ১২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়। এই আর্থিক সাহায্য পাবার ফলে ইউরোপের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলির অর্থনীতি পূর্বের ন্যায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
অর্থ অনুমোদনঃ মার্শাল পরিকল্পনা অনুসারে রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান কর্তৃক ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে মার্কিন কংগ্রেসে ১৭ বিলিয়ন ডলার অর্থ মঞ্জুরের জন্য বিল উত্থাপন করা হলে ১৩ বিলিয়ন ডলার মঞ্জুর করা হয়।
পরিকল্পনা গ্রহণকারী বিভিন্ন দেশঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে ইউরোপের ছোটো বড়ো মিলে ১৬ টি দেশ মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। এই পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশগুলি একত্রিত হয়ে ‘European Economic Co-operation’ বা EEC নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়াঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বে রাশিয়া যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল সেই কারণেই মূলত মার্শাল পরিকল্পনায় ঋণ গ্রহণের পথ খোলা থাকলেও রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী মলটোভ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেননি। এছাড়া মার্শাল পরিকল্পনা ছিল ‘ডলার সাম্রাজ্যবাদের’ পরিকল্পিত রূপ। এর দ্বারা আমেরিকা সাহায্য গ্রহণ করা দেশগুলির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাবে যা রাশিয়া কখনোই চাইত না।
পূর্ব ইউরোপের বয়কট নীতিঃ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত ছিল।
অথবা,
কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 8
উত্তরঃ কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট—
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সর্ববৃহৎ দ্বীপ কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণকে কেন্দ্র করে সােভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক স্বল্পকালীন দ্বন্দ্ব শুরু হয় যার নাম কিউবার ক্ষেপনাস্ত্র সংকট।
(১) পটভূমিঃ কিউবা ১৮৯৮ খ্রীঃ স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার পর উন্নতির লক্ষ্যে মার্কিন মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। এই সুযােগ নিয়ে মার্কিন পুঁজিপতিরা কিউবার অর্থনীতির মূলভিত্তি আখের খেতের ৪০ ভাগ দখল করে নেয়। কিউবার ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমেরিকা তার অনুগামী ফ্যালজেনিকো বাতিস্তাকে ১৯৫৪ খ্রি. রাষ্ট্রপতি পদে বসায়। কিন্তু তিনি মার্কিন পুঁজিবাদের তাঁবেদারে পরিণত হওয়ায় কিউবাবাসী বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়।
(২) ফিদেল কাস্ত্রোর ভূমিকাঃ বাতিস্তা সরকারের জনবিরােধী কাজকর্মের প্রতিবাদে কিউবার তৎকালীন ছাত্রনেতা ফিদেল কাস্ত্রো তীব্র সরকারবিরােধী আন্দোলন গড়ে তােলেন। ক্রমশ জনসমর্থন আদায় করে এক বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের দ্বারা বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটিয়ে। কাস্ত্রো কিউবার ক্ষমতা দখল করেন (১৯৫৯ খ্রী, ১ জানুয়ারি)। কিউবার রাষ্ট্রপতি কাস্ত্রো এরপর পুঁজিবাদী আমেরিকার দিক থেকে সরে এসে রাশিয়া, চিন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তােলার উদ্যোগ নেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি কিউবায় মার্কিন পুঁজিপতিদের চিনি কলগুলি জাতীয়করণ করেন। তার পাশাপাশি মার্কিন পুঁজিপতি গােষ্ঠীর পরিচালনাধীন ব্যাংক ও অন্যান্য শিল্পকেন্দ্রগুলিও জাতীয়করণ করেন।
(৩) কাস্ত্রো অপসারণে আমেরিকার ভূমিকাঃ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কাস্ত্রোর এরকম কার্যকলাপে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে নানাভাবে কাস্ত্রো সরকারের পতনের পরিকল্পনা নেয়। মার্কিন গােয়েন্দা বিভাগের (CIA) গােপন সহায়তায় ১,৪০০ ভাড়াটে সৈন্য মার্কিন জাহাজে করে কিউবার ফ্লোরিডা উপকূলের কাছে পিগ উপসাগরে পৌঁছােয়। বিদ্রোহীদের সহায়তার জন্য মার্কিন বি-২৬ বিমান প্রস্তুত ছিল। কিন্তু কিউবার সেনাদল তাদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করলে মার্কিন চক্রান্ত ব্যর্থ হয়।
(৪) কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি গঠনঃ কাস্ত্রো সরকার ৫০ লক্ষ কিউবাবাসীকে রক্ষার জন্য রাশিয়ার সাহায্যে কিউবাতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে কিউবার রাষ্ট্রপতি ফিদেল কাস্ত্রো রাশিয়া থেকে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র (IRBM অর্থাৎ Intermediate Range Ballistic Missiles) গােপনে আমদানি করে কিউবাতে প্রতিস্থাপন করেছিলেন।
(viii) স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ ভারত স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল ভারতের নবগঠিত সরকার। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশে খাদ্য উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রভৃতি দিকে অর্থনৈতিক সংকট দেখা যায়। জাতীয় জীবনে এই সংকটপূর্ণ অবস্থায় ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রশান্তচন্দ্ৰ মহলানবীশ ভারতের আর্থিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। এই রকম একটি পদক্ষেপ হলো পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।
প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা(১৯৫১-৫৬)
স্বাধীনতা লাভের পর ভারত যে বহুমুখী অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল তা দূর করার উদ্দেশ্যে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে প্ৰথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
• প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যঃ
(ক) এই পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য গুলি হল—
(১) খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
(২) ভারতে প্রভূত কাঁচা মাল ও খনিজ সম্পদকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করা।
(৩) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দেশ ভাগের ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে যে ভারসাম্য হীনতা দেখা দিয়েছিল সেই অর্থনৈতিক ভারসাম্যকে ফিরিয়ে আনা।
(৪) মুদ্রা স্ফীতির চাপ হ্রাস করা।
(৫) ব্যক্তির আয় ও সম্পদের মধ্যে অসমতা হ্রাস করা।
(খ) প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্বঃ
এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব গুলি
হল—
(১) এই পরিকল্পনা ছিল নবগঠিত ভারত সরকারের একটি সাহসী পদক্ষেপ। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মতো।
(২) এই পরিকল্পনা দ্বারা ভারতীয় আয় বৃদ্ধি পায় ১১ শতাংশ। তবে এই প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দেশের প্রকৃত আয় বাড়ে ১৮ শতাংশ।
(৩) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিধ্বস্ত প্রায় ৪৩০ মাইল রেল লাইন পুনর্নির্মাণ করা হয়। তার সঙ্গে আরও ৩৮০ মাইল রেল লাইন সংযুক্ত হয়।
(৪) খাদ্যশস্যের উৎপাদন যেখানে ১৯৫১ ৫২ খ্রিস্টাব্দে ছিল ৫২.২ মিলিয়ন টন তা ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে বেড়ে হয় ৬৫.৮ মিলিয়ন টন।
• দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫৬ – ১৯৬১)
প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় খাদ্য ও কাঁচামালের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পর পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু অর্থনীতির ক্ষেত্রে সামাজিক কল্যাণ সাধন এবং বে- সরকারি উদ্যোগ উভয়কেই সমান গুরুত্ব দিতে থাকেন।
নেহেরু-মহলানবিশ মডেল—
নেহেরুর আদর্শকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের প্রখ্যাত পরিসংখ্যান বিদ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ ১৯৫৬-১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার একটি রূপরেখা বা মডেল তৈরি করেন। কিছু পরিমাণ সংশোধনের পর তা প্রয়াগ করা হয়, যা নেহেরু মহলানবিশ মডেল নামে পরিচিত।
(ক) দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যঃ
এই পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি হল—
(১) জনসাধারণের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে জাতীয় আয় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা।
(২) ভারী শিল্প ও যন্ত্রপাতি নিৰ্মাণ শিল্পের উপর গুরুত্ব দিয়ে শিল্পায়নের গতি বৃদ্ধি করা।
(৩) কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
(৪) কুটির শিল্পের বিকাশ ঘটানো ।
(খ) দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্বঃ
এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব গুলি হল—
(১) জাতীয় আয় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
(২) ভারতের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে বলা হয়ে থাকে শিল্প ও লেনদেন সংক্রান্ত পরিকল্পনা। এই সময়কালে ভারতে যন্ত্রপাতির বিভিন্ন অংশ এবং কৃষি যন্ত্রপাতির উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
(৩) এই পরিকল্পনায় খাদ্য শস্যের উৎপাদন ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
(৪) ভারী শিল্প গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে দুর্গাপুর, রাওকেল্লা ও ভিলাইয়েতে তিনটি ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলা হয়।
• তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬১-৬৬)
এই পরিকল্পনা মোটামুটিভাবে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অনুকরণে তৈরি হয়। তবে দ্বিতীয় পরিকল্পনায় কৃষির উন্নতি ব্যাহত হওয়ায় তৃতীয় পরিকল্পনায় কৃষিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় ।
(ক) তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যঃ
এই পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য উদ্দেশ্য গুলি
ছিল—
(১) বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা।
(২) কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে কৃষকদের স্বনির্ভরতা বাড়ানো।
(৩) দেশের মানব সম্পদকে যথাযথ ব্যবহার করা ও জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি করা।
(৪) বৈষম্য দূর করে অর্থনৈতিক
ক্ষমতার সুষম বণ্টন।
(৫) ইস্পাত, রাসায়নিক দ্রব্য, শিল্প- যন্ত্রপাতি, শক্তি প্রভৃতির উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
(খ) তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্বঃ
এইপরিকল্পনার সময় বহুমুখী পরিকল্পনা গৃহীত হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর সুফল পাওয়া যায়নি। কেবলমাত্র যানবাহন, পণ্য লেনদেন ও সামাজিক পরিষেবা মূলক ক্ষেত্র গুলিতে কিছু উন্নয়ন দেখা দিয়েছিল। অন্যদিকে কৃষি উৎপাদনের হার কমেছিল ১০ মেট্রিক টনের মতো। খাদ্য সামগ্রীর ও ভোগ্য সামগ্রীর দাম উচ্চহারে বৃদ্ধি পেয়েছিল, শিল্প উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল।
• ব্যর্থতার কারণ—
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে (১) চীনের ভারত আক্রমণ (১৯৬২), (২) ভারত-পাক যুদ্ধ (১৯৬৫-৬৬), (৩) ব্যাপক খরা(১৯৬৫) প্রভৃতি ঘটনা এই ব্যর্থতার জন্য বহুলাংশে দায়ী।
উপসংহারঃ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গুলি রূপায়ণ করতে গিয়ে প্রথম থেকেই ভারতকে বিদেশী সহায়তার মুখাপেক্ষী থাকতে হয়েছে। প্রতিটি পরিকল্পনার সময় বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণের ফলে ভারত বিপুল ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছে।
PART – B (Marks – 40)
1. বিকল্প উত্তরগুলির মধ্যে থেকে সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো : 1 x 24 = 24
(i) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন ?
(a) মহম্মদ আলি জিন্নাহ
(b) জুলফিকার আলি ভুট্টো
(c) ইয়াহিয়া খান
(d) নুরুল আমিন।
উত্তরঃ (c) ইয়াহিয়া খান।
(ii) ভারতের পরিকল্পনা কমিশন কবে গঠিত হয়েছিল ?
(a) 1950 খ্রিস্টাব্দে (b) 1951 খ্রিস্টাব্দে
(c) 1952 খ্রিস্টাব্দে (d) 1953 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তরঃ (a) 1950 খ্রিস্টাব্দে
(iii) ‘মিথ’ শব্দটি এসেছে ‘মিথোস’ থেকে যেটি একটি—
(a) গ্রিক শব্দ (b) রোমান শব্দ
(c) লাতিন শব্দ (d) জার্মান শব্দ।
উত্তরঃ (a) গ্রিক শব্দ
(iv) জীবনের জলসাঘরে’ কার আত্মজীবনী ?
(a) দক্ষিণারঞ্জন বসু (b) মণিকুন্তলা সেন
(c) নারায়ণ সান্যাল (d) মান্না দে।
উত্তরঃ (d) মান্না দে।
👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈
(v) SAARC-এর ধারণা কার মস্তিষ্কপ্রসূত ?
(a) রাজা বীরেন্দ্র (b) মোরারজি দেশাই
(c) ইন্দিরা গান্ধি (d) জিয়াউর রহমান।
উত্তরঃ (d) জিয়াউর রহমান।
(vi) ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ ধারণাটি কোন্ ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত ?
(a) নেহরু (b) হো-চি-মিন (c) সুকর্ণ
(d) সুহার্তো।
উত্তরঃ (c) সুকর্ণ
(vii) যে নীতির মাধ্যমে কোনো শক্তিশালী দেশ অন্যান্য দেশে শাসন কায়েম করে তাকে বলে—
(a) সাম্রাজ্যবাদ (b) মানবতাবাদ
(c) সামরিকবাদ (d) জাতীয়তাবাদ।
উত্তরঃ (a) সাম্রাজ্যবাদ
(viii) ‘নতুন বিশ্ব’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন—
(a) কলম্বাস
(b) আমেরিগো ভেসপুচি
(c) এ্যাডাম স্মিথ
(d) স্যার ওয়ালটার র্যালে।
উত্তরঃ (b) আমেরিগো ভেসপুচি
(ix) প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ কবে সংঘটিত হয়েছিল ?
(a) 1990 খ্রিস্টাব্দে (b) 1995 খ্রিস্টাব্দে
(c) 2000 খ্রিস্টাব্দে (d) 2003 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তরঃ (a) 1990 খ্রিস্টাব্দে
(x) দিয়েন বিয়েন ফু-র যুদ্ধে কে জয়ী হয়েছিল ?
(a) ভিয়েতনাম (b) ফ্রান্স
(c) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (d) কম্বোডিয়া।
উত্তরঃ (a) ভিয়েতনাম
(xi) ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়–
(a) 1780 খ্রিস্টাব্দে (b) 1818 খ্রিস্টাব্দে
(c) 1800 খ্রিস্টাব্দে (d) 1849 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তরঃ (c) 1800 খ্রিস্টাব্দে
(xii) স্তম্ভ-১ এর সঙ্গে স্তম্ভ-২ মেলাও :
স্তম্ভ-১ | স্তম্ভ-২ |
(i) টিপু সুলতান | (A) অমৃতসরের সন্ধি |
(ii) রণজিৎ সিং | (B) শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি |
(iii) মিরকাশিম | (C) বক্সারের যুদ্ধ |
(iv) লর্ড ডালহৌসি | (D) চিলিয়ানওয়ালার যুদ্ধ |
বিকল্পসমূহ :
(a) (i) – A, (ii) – B, (iii) – D, (iv) – C
(c) (i) – A, (ii) – C, (iii) – D, (iv) – B
(b) (i) – B, (ii) – D, (iii) – A, (iv) – C
(d) (i) – B, (ii) – A, (iii) – C, (iv) – D
উত্তরঃ (d) (i) – B, (ii) – A, (iii) – C, (iv) – D
(xii) উত্তর-আটলান্টিক সামরিক জোট (NATO) কবে গঠিত হয়েছিল ?
(a) 1948 খ্রিস্টাব্দে (b) 1949 খ্রিস্টাব্দে
(c) 1950 খ্রিস্টাব্দে (d) 1951 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তরঃ (b) 1949 খ্রিস্টাব্দে
(xiv) জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন—
(a) জওহরলাল নেহরু
(b) মার্শাল টিটো
(c) ড. সুকর্ণ
(d) গামেল আবদেল নাসের।
উত্তরঃ (a) জওহরলাল নেহরু
(xv) স্তম্ভ-১ এর সঙ্গে স্তম্ভ-২ মেলাও :
স্তম্ভ-১ | স্তম্ভ-২ |
(i) বোগ-এর সন্ধি | (A) 1843 |
(ii) তিয়েনসিন-এর সন্ধি | (B) 1842 |
(iii) পিকিং-এর সন্ধি (কনভেনসন) | (C) 1860 |
(iv) নানকিং-এর সন্ধি | (D) 1858 |
বিকল্পসমূহ :
(a) (i) – A, (ii) – C, (iii) – D, (iv) – B
(b) (i) – B, (ii) – C, (iii) – D, (iv) – A
(c) (i) – A, (ii) – D, (iii) – C, (iv) – B
(d) (i) – C, (ii) – D, (iii) – B, (iv) – A
উত্তরঃ (c) (i) – A, (ii) – D, (iii) – C, (iv) – B
(xvi) ‘দক্ষিণী বিদ্যাসাগর’ কাকে বলা হত ?
(a) বীরসালিঙ্গম পানতুলু
(b) শ্রী নারায়ণ গুরু
(c) বিশ্বনাথ সত্যারাম
(d) উন্নভা লক্ষ্মীনারায়ণ।
উত্তরঃ (a) বীরসালিঙ্গম পানতুলু
(xvii) গুজরাটের খেরা জেলার দরিদ্র কৃষক কী নামে পরিচিত ছিল ?
(a) হরিজন (b) কুনবি (c) পাত্তিদার
(d) বর্গাদার।
উত্তরঃ (b) কুনবি
(xviii) ‘আজাদ হিন্দ সরকার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কোথায় ?
(a) টোকিওতে (b) ব্যাংককে (c) রেঙ্গুনে
(d) সিঙ্গাপুরে।
উত্তরঃ (d) সিঙ্গাপুরে।
(xix) কুয়োমিনটাং-এর প্রতিষ্ঠাতা কে ?
(a) চৌ-এন-লাই (b) সান-ইয়াৎ-সেন
(c) চিয়াং কাই-শেক (d) মাও সে-তুঙ।
উত্তরঃ (b) সান-ইয়াৎ-সেন
(xx) ‘হিন্দু পাইওনিয়ার’ পত্রিকাটি প্রকাশ করেন—
(a) নব্যবঙ্গ (b) প্রার্থনা সমাজ
(c) আর্য সমাজ (d) ব্রাহ্ম সমাজ।
উত্তরঃ (a) নব্যবঙ্গ
(xxi) বারদৌলি সত্যাগ্রহের নেতৃত্ব কে দেন ?
(a) রাজকুমার শুক্লা
(b) রাজেন্দ্র প্রসাদ
(c) বল্লভভাই প্যাটেল
(d) কল্যাণজি মেহেতা।
উত্তরঃ (c) বল্লভভাই প্যাটেল
(xxii) ক্রিপস্ মিশন যখন ভারতে এসেছিল তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন ?
(a) উইনস্টন চার্চিল (b) লিনলিথগো
(c) ক্লেমেন্ট এটলি (d) স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস্।
উত্তরঃ (a) উইনস্টন চার্চিল
(xxiii) লক্ষ্ণৌ চুক্তি কবে সম্পাদিত হয় ?
(a) 1916 খ্রিস্টাব্দে (b) 1919 খ্রিস্টাব্দে
(c) 1906 খ্রিস্টাব্দে (d) 1909 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তরঃ (a) 1916 খ্রিস্টাব্দে
(xxiv) ভাইকম-এর ‘মন্দির প্রবেশ’ আন্দোলনের নেতৃত্ব কে দেন ?
(a) ড. আম্বেদকর,
(b) এ কে গোপালন,
(c) জ্যোতিবা ফুলে,
(d) কে পি কেশব মেনন।
উত্তরঃ (d) কে পি কেশব মেনন।
2. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির সংক্ষেপে উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) : 1×16=16
(i) স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন ?
উত্তরঃ ড. সুকর্ন।
অথবা,
স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচন কবে হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৯৫১-১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে।
(ii) বার্লিন অবরোধ বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত বিরোধিতার কারণে রাশিয়া পশ্চিম জার্মানি থেকে বার্লিনকে আলাদা করতে যে অবরোধ নীতি ঘোষণা করে, তাকে বার্লিন অবরোধ বলে।
অথবা,
বুলগানিন কে ছিলেন ?
উত্তরঃ ১৯৫৫ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
(iii) লিনলিথগো প্রস্তাব অথবা আগস্ট প্রস্তাব কবে ঘোষিত হয় ?
উত্তরঃ ১৯৪০ সালের ৮ই আগস্ট।
অথবা,
ক্রিপস্ মিশনের প্রস্তাবে গান্ধিজি কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ?
উত্তরঃ ফেল পড়া ব্যাঙ্কের উপরে কাটা চেক- A post dated cheque on a crashing bank
(iv) মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় কতজন শ্রমিক নেতা অভিযুক্ত হন ?
উত্তরঃ ৩৩ জন।
(v) হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন কোনসালে প্রবর্তিত হয় ?
উত্তরঃ ১৮৫৬ সালে।
অথবা,
‘চুইয়ে পড়া’ নীতি বলতে কী বোঝায় ?
উত্তরঃ লর্ড মেকলে পাশ্চাত্যের ইংরেজি শিক্ষা উঁচুতলা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া বোঝাতে ‘চুঁইয়ে পড়া’ নীতি বলেছেন।
(vi) কোন আইন দ্বারা কলকাতার সুপ্রিম কোর্ট স্থাপিত হয় ?
উত্তরঃ ১৭৭৪ সালের রেগুলেটিং আইন অনুযায়ী।
অথবা,
তাইপিং বিদ্রোহ কবে এবং কোথায় হয়েছিল
উত্তরঃ ১৮৫০- ১৮৬৪ সালে, চিনে।
(vii) সোস্যাল ডারউইনবাদের প্রবক্তা কে ?
উত্তরঃ হারবার্ট স্পেনসার।
(viii) লগ্নি পুঁজি কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে পুঁজি বা অর্থ শিল্প প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের জন্য বিনিয়োগ করা হয় তাকে লগ্নি পুঁজি বলে।
(ix) বর্ণ বৈষম্য নীতি কোন দেশে বলবৎ হয় ?
উত্তরঃ দক্ষিণ আফ্রিকা।
(x) ফিদেল কাস্ত্রো কে ছিলেন ?
উত্তরঃ কিউবার রাষ্ট্রপতি।
(xi) কার নেতৃত্বে ঝাঁসি রেজিমেন্ট গঠিত হয় ?
উত্তরঃ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
(xii) সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি কে, কখন ঘোষণা করেন ?
উত্তরঃ ১৯৩২ সালে, র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড।
অথবা,
মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনের গুরুত্ব কী ?
উত্তরঃ পৃথক পাকিস্তানের দাবি উত্থাপন।
(xiii) ‘নব্যবঙ্গীয়’ কারা ?
উত্তরঃ ডিরোজিওর যুক্তিবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত রামতনু লাহিড়ি, প্যারিচাঁদ মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় এবং তৎসহ যুবসম্প্রদায়কে ‘নব্যবঙ্গীয়’ বলা হত।
অথবা,
চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক কাদের বলা হয় ?
উত্তরঃ যে শ্রমিকরা নিয়োগকর্তার চুক্তিতে আবদ্ধ।
(xiv) একশো দিনের সংস্কার কী ছিল?
উত্তরঃ ১৮৯৮ সালের ১১ জুন চিনা সম্রাট কোয়াং-সু শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে একশো তিন দিন ব্যাপী যে সংস্কার করেছিলেন, তা একশো দিনের সংস্কার নামে পরিচিত।
(xv) সর্বশেষ চার্টার আইন কবে প্রবর্তিত হয় ?
উত্তরঃ ১৮৫৩ সালে।
অথবা,
‘পলাশির লুণ্ঠন’ বলতে কী বোঝ ?
উত্তরঃ পলাশির যুদ্ধের পর বাংলার অর্থসম্পদ যেভাবে ইংল্যান্ডে পাচার হত তাকে ‘পলাশির লুণ্ঠন’ বলে।
(xvi) শ্বেতাঙ্গদের বোঝা’ বলতে কী বোঝানো হয় ?
উত্তরঃ শ্বেতাঙ্গ মানুষরা এশিয়া এবং আফ্রিকার অ-শ্বেতাঙ্গ মানুষের উপর যে অত্যাচার করত তাকে ‘শ্বেতাঙ্গদের বোঝা’ বলে।
H.S HISTORY QUESTION PAPER | ||||
---|---|---|---|---|
2015 | 2016 | 2017 | 2018 | 2019 |
2020 | NoEx | 2022 | 2023 |
Thanks for evrything
Pingback: HS History 2020 Question Paper With Answer | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস ২০২০ উত্তরসহ প্রশ্নপত্র। -
Pingback: WB HS Previous Years Question Paper | উচ্চমাধ্যমিক বিগত বছরের প্রশ্নপত্র [WBCHSE] -
Pingback: HS History 2016 Question Paper With Answer | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস ২০১৬ উত্তরসহ প্রশ্নপত্র। -
Pingback: HS History 2018 Question Paper With Answer | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস ২০১৮ উত্তরসহ প্রশ্নপত্র। -
Pingback: HS History 2019 Question Paper With Answer | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস ২০১৯ উত্তরসহ প্রশ্নপত্র। -
Pingback: WBCHSE Class 12 History Solved Question Paper 2022 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২২ - Prosnodekho - Prosnodekho
Pingback: WBCHSE HS History Solved Question Paper 2023 - Prosnodekho