ক্রন্দনরতা জননীর পাশে —মৃদুল দাশগুপ্ত | Krondonrota Jononir Pase Question Answer [WBCHSE]

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

ক্রন্দনরতা জননীর পাশে
    —মৃদুল দাশগুপ্ত

• MCQ প্রশ্ন ও উত্তর—

১. কবি যে জননীর পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন তিনি—
(ক) ক্রন্দনরতা (খ) স্নেহময়ী (গ) সুজলা-সুফলা
(ঘ) জরাজীর্ন

উত্তরঃ (ক) ক্রন্দনরতা।

২. বিধির বিচার চাওয়ার চেয়ে কবির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল—
(ক) আত্মার শান্তিকামনা (খ) প্রতিবাদ
(গ) আত্মসুখ সন্ধান (ঘ) অন্য প্রসঙ্গে চলে যাওয়া

উত্তরঃ (খ) প্রতিবাদ।

৩. নিজের বিবেককে কবি যার সঙ্গে তুলনা করেছেন, তা হল—
(ক) ঝড় (খ) বারুদ (গ) বিদ্যুৎ (ঘ) আলাে

উত্তরঃ (খ) বারুদ।

৪. ক্রন্দনরতা জননীর পাশে না থাকলে কবির অর্থহীন মনে হয়েছে—
(ক) লেখা লেখিকে (খ) বেঁচে থাকাকে
(গ) নাগরিক হওয়াকে (ঘ) রাজনীতিকে

উত্তরঃ (ক) লেখা লেখিকে

৫. “আমি তা পারি না।” – যা না পারার কথা বলা হয়েছে, তা হল—
(ক) বিধির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা
(খ) নিজের সুখসন্ধান
(গ) প্রতিবাদ-বিমুখ হয়ে থাকা
(ঘ) কবিতা লেখা।

উত্তরঃ (ক) বিধির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা।

৬. নিহত ভাইয়ের শবদেহ কবির মনে জাগিয়েছিল—
(ক) বেদনা (খ) সহানুভূতি (গ) ক্রোধ
(ঘ) আত্মগ্লানি

উত্তরঃ (গ) ক্রোধ

৭. ছিন্নভিন্ন দেহ পাওয়া গিয়েছে যে মেয়েটির, সে–
(ক) পথ হারিয়েছিল (খ) নিখোঁজ ছিল
(গ) খেলতে গিয়েছিল (ঘ) পালিয়ে গিয়েছিল

উত্তরঃ (খ) নিখোঁজ ছিল।

৮. কবিতায় নিখোঁজ ছিন্ন ভিন্ন মেয়েটিকে পাওয়া গিয়েছিল—
(ক) নিজের বাড়িতে (খ) রাস্তায়
(গ) জঙ্গলে শত্রু শিবিরে (ঘ) জঙ্গলে

উত্তরঃ (ঘ) জঙ্গলে।

৯. আকাশের দিকে তাকিয়ে চাওয়া হয়—
(ক) বৃষ্টি (খ) বিধির বিচার (গ) ঈশ্বরের শুভেচ্ছা
(ঘ) চাঁদের টিপ

উত্তরঃ (খ) বিধির বিচার।

১০. নিখোঁজ মেয়েটিকে জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছিল—
(ক) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় (খ) রক্তাক্ত অবস্থায়
(গ) ছিন্ন ভিন্ন অবস্থায় (ঘ) অচৈতন্য অবস্থায়

উত্তরঃ (গ) ছিন্ন ভিন্ন অবস্থায়।

১১. কবির বিবেক জেগে ওঠার পটভূমি হল—
(ক) সমাজ (খ) পরিবার (গ) কবিতা
(ঘ) রাজনীতি

উত্তরঃ (গ) কবিতা।

১২. কবি যার পাশে থাকতে চেয়েছেন—
(ক) দরিদ্র মানুষের (খ) ক্রন্দনরতা জননীর
(গ) শহরের পাশে (ঘ) সমস্ত পৃথিবীবাসীর

উত্তরঃ (খ) ক্রন্দনরতা জননীর।

১৩. ছিন্নভিন্ন মেয়ে টিকে দেখে কবি তাকাতে চান না—
(ক) পৃথিবীর দিকে (খ) সমাজের দিকে
(গ) জঙ্গলের দিকে (ঘ) আকাশের দিকে

উত্তরঃ (ঘ) আকাশের দিকে।

১৪. কবি মৃদুল দাশগুপ্তের একটি কাব্য গ্রন্থের নাম—
(ক) জল পাই কাঠের এসরাজ
(খ) ঝরা পালক
(গ) সোনার তরী
(ঘ) সোনার মাছি খুন করেছি

উত্তরঃ (ক) জলপাই কাঠের এসরাজ।

১৫. ‘ক্রন্দনরতা জননী পাশে’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে কোন কাব্য গ্রন্থ থেকে ?
(ক) ধানক্ষেত (খ) সোনার বুদ্ধ
(গ) এভাবে কাঁদে না (ঘ) সূর্যাস্তে নির্মিত গৃহ

উত্তরঃ (ক) ধানক্ষেত।

১৬. ‘কেন তবে আঁকা আঁকি ‘ কথাটির অর্থ হলো—
(ক) না আঁকায় শ্রেয়
(খ) আঁকা আঁকির অর্থ না বোঝা
(গ) আঁকা অর্থ সময়ের অপচয়
(ঘ) আঁকা আঁকি করাটাই অর্থহীন

উত্তরঃ (ক) না আঁকায় শ্রেয়।

১৭. “আমি তা পারিনা”। এখানে আমি কে ?
(ক) শ্রোতা (খ) পাঠক (গ) সচেতন মানুষ
(ঘ) কবি

উত্তরঃ (ঘ) কবি।

১৮. ‘বিস্ফোরনের আগে’ কী জেগে উঠে ?
(ক) আগ্নেয় গিরি (খ) জনগন (গ) কবির বিবেক (ঘ) প্রতিবাদী আন্দোলন

উত্তরঃ (গ) কবির বিবেক।

• SAQ প্রশ্ন ও উত্তর—

১.’ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটির উৎস লেখাে।
উত্তরঃ কবি মৃদুল দাশগুপ্তের ধানক্ষেত থেকে নামক কবিতাগ্রন্থ থেকে ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।

২.’ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি কোন্ পটভূমিতে লেখা ?
উত্তরঃ ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা।

৩.’ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’—এই কবিতায় কী ধ্বনিত হয়েছে ?
উত্তরঃ আলােচ্য কবিতাটি একটি প্রতিবাদী কবিতা। এখানে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে।

৪.”এখন যদি না-থাকি” -বলতে কার পাশে কখন না থাকার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতা থেকে নেওয়া প্রশ্নোধৃত অংশে ক্রন্দনরতা জননী বা বিপন্ন স্বদেশের পাশে না-থাকার কথা বলা হয়েছে।

৫.ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে না পারলে কবির কী মনে হবে ?
উত্তরঃ দেশজননীর বিপন্নতার মুহূর্তে তাঁর পাশে না থাকলে লেখালেখি, গান গাওয়া, ছবি আঁকা সব মিথ্যা হয়ে যাবে বলে কবি মনে করেছেন।

৬.”এখন যদি না থাকি”— এখন না থাকার ফল কী হবে ?
উত্তরঃ দেশজননীর বিপন্নতার মুহূর্তে তাঁর পাশে না থাকলে লেখালেখি, গান গাওয়া, ছবি আঁকা সব মিথ্যা হয়ে যাবে বলে কবি মনে করেছেন।

৭.’ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ না থাকলে কবি কী কী ব্যর্থ বলে মনে করেছেন ?
উত্তরঃ দেশজননীর বিপন্নতার মুহূর্তে তাঁর পাশে না থাকলে লেখালেখি, গান গাওয়া, ছবি আঁকা সব মিথ্যা হয়ে যাবে বলে কবি মনে করেছেন।

৮.”কেন তবে…. গান গাওয়া”— এই দ্বিধার কারণ কী ?
উত্তরঃ দেশের মানুষ আক্রান্ত হলে কোনাে শিল্পী প্রতিবাদ করতে না পারলে নিজের শিল্পীসত্তা নিয়ে তার মনেই দ্বিধা সৃষ্টি হয়। কবির মনেও সেই দ্বিধাই সৃষ্টি হয়েছে।

৯.”নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে”—কে এই ‘নিহত ভাই’ ?
উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় উল্লেখিত ‘নিহত ভাই হলেন গণ-আন্দোলনের শহিদ ও কবির সহনাগরিক।

১০.’নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে’ কবির কী মনে হয় ?
উত্তরঃ নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে কবির মনে হয় দেশমায়ের প্রতি ভালােবাসা, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বা মূল্যবােধের জন্যই ক্রোধের জন্ম হওয়া আবশ্যিক।

১১.”না-ই যদি হয় ক্রোধ”—কোন্ ক্রোধের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে কবির মনে ক্রোধের সঞ্চার হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

১২.“নাই যদি হয় ক্রোধ”—তাহলে কী হবে ?
উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি বলেছেন নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে ক্রোধ না জন্মালে দেশমায়ের প্রতি ভালােবাসা, সমাজ, মূল্যবােধ সবই অর্থহীন হয়ে যাবে।

১৩.”কেন ভালােবাসা, কেন-বা সমাজ / কীসের মূল্যবােধ।”— কোন্ মানসিক যন্ত্রণা থেকে কবি এ কথা বলেছেন ?
উত্তরঃ ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি মৃদুল দাশগুপ্ত নিহত দেশবাসী ভাইয়ের মৃতদেহ দেখে তীব্র ক্রোধ মানসিক যন্ত্রণা থেকে প্রশ্নোপ্ত মন্তব্যটি করেছেন।

১৪.’যে-মেয়ে নিখোঁজ’ তাকে কোথায় কীভাবে পাওয়া গিয়েছিল ?
উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় নিখোঁজ মেয়েটিকে জঙ্গলে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

১৫.“জঙ্গলে তাকে পেয়ে”— এই অবস্থায় কী করা উচিত নয় বলে কবি মনে করেছেন ?
উত্তরঃ নিখোঁজ মেয়েটিকে জঙ্গলে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পেয়েও এই নৃশংতার প্রতিবাদ না জানিয়ে ঈশ্বরের বিচারের আশায় বসে থাকা উচিত নয় বলে কবি মনে করেছেন।

১৬.”আমি কি তাকাব আকাশের দিকে”— কবি কখন এই প্রশ্ন করেছেন ?
উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন শরীর জঙ্গলে পেয়ে আকাশের দিকে বিধির বিচার চেয়ে তাকানাে উচিত কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করতেই প্রশ্নটি করেছেন।

১৭.”আমি কি তাকাব আকাশের দিকে”— কবি কার কাছে এই প্রশ্ন করেছেন ?
উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটিতে কবি প্রশ্নটি করেছেন নিজের কাছেই।

১৮.”আমি কি তাকাব আকাশের দিকে”— কবির এই জিজ্ঞাসার উত্তর কী ?
উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত জিজ্ঞাসার উত্তরে কবি জানিয়েছেন যে, তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধাতার বিচারের ভরসায় না থেকে কবিতার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাবেন।

১৯.”আমি তা পারি না।”—কবি কী পারেন না ?
উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি বলেছেন নিখোঁজ ছিন্নভিন্ন মেয়েটিকে জঙ্গলে পেয়ে কবি বিধির বিচার চেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন না।

২০.”যা পারি কেবল” -কে, কী পারেন?
উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় জঙ্গলে ছিন্নভিন্ন মেয়েটিকে দেখে কবি প্রতিবাদী কবিতার মাধ্যমে তার বিবেককে জাগিয়ে রাখতে পারেন।

২১.“সেই কবিতায় জাগে” -কী, কেন কবিতায় জাগে ?
উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবির বিবেক জাগে জঙ্গলে পাওয়া নিখোঁজ মেয়েটির ছিন্নভিন্ন করুণ অবস্থার প্রতিবাদে ফেটে পড়ার জন্য।

২২.“সেই কবিতায় জাগে/আমার বিবেক,”—বিবেককে কার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ?
উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় বিবেককে বিস্ফোরণের বারুদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

২৩.”আমার বিবেক, আমার বারুদ” -কবির বিবেক কী করে ?
উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবির বিবেক জেগে ওঠে প্রতিবাদে ফেটে পড়ার জন্য। এই অবস্থাটি বিস্ফোরণের আগে বারুদের সঙ্গেই তুলনীয়।

• রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর—

১. ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতায় কবির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লিখ।

উত্তরঃ কবি মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি সমকালীন যুগের একটি সমাজমনস্ক কবিতা। লেখক, শিল্পী তথা বুদ্ধিজীবীরা সমজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমাজের প্রতি তাদের বিশেষ দায়বদ্ধতা থাকে। কবিতার প্রথম স্তবকেই কবি লেখক-শিল্পীদেরকে তাদের দায়িত্বশীলতার কথা মনে করিয়ে দেন। কবি বলেন—

“ক্রন্দনরতা জননীর পাশে …. কেন তবে লেখা, কেন গান গাওয়া / কেন তবে আঁকাআঁকি ?”

প্রতিহিংসার কারণে যখন ভ্রাতৃসম সহ নাগরিকের মৃত্যু হয় তখন তো রাগ হওয়াই স্বাভাবিক। তা না হলে সমাজ, সামাজিকতা এবং মুল্যবোধের কি বা দাম!

হিংসার লেলিহান শিখা যখন নারীকেও গ্রাস করে তখন ঈশ্বরের দোয়া পাড়া মুর্খামীর পরিচায়ক। কবির মতে ঈশ্বরকে স্মরণ করা মানেই ঈশ্বরানুগত্য নয় বরং মানুষ নিজের ভীরুতা, কাপুরুষতার কারণে বিপদে পড়ে ঈশ্বরকে ডাকে।

কবিতার শেষ স্তবকে কবি নিজের অবস্থান জানিয়েছেন। মানুষের অস্তিত্ব যখন সঙ্কটে তখন তিনি ঈশ্বর আরাধনা করবেন না। নিজের বিবেককে জাগিয়ে রেখে প্রতিবাদের বারুদ সঞ্চয় করতে চান তিনি। কবি তার উপলব্দির সঙ্গের ভাষা মিশিয়ে সৃষ্টি করেন প্রতিবাদের কবিতা। মনুষ্যত্বের উপর চরম আঘাত নেমে আসার আগে অর্থাৎ বিস্ফোরণেই আগেই কবি প্রতিবাদে সোচ্চার হন।

২.”নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে / নাই যদি হয় ক্রোধ..”— নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে কবির মনে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।

উত্তরঃ ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতার কবি মৃদুল দাশগুপ্ত সিঙ্গুর আন্দোলনে নিহত কৃষকদের ভাই বলে সম্বোধন করেছেন।

কবির মনে হয়েছে তার এই শহীদ ভাইদের মৃত্যু দেখে দেশমাতা আজ বড় পীড়িত। অমানুষিক নিপীড়ন আর হত্যা কান্ড দেখে কবির মনে হয়েছে আজ দেশমাতার পাশে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। কবি আরো আক্ষেপ করেছেন- যদি মায়ের দুর্দিনে তার পাশে না দাঁড়াতে পারি তবে নিজের লেখালেখি কোন প্রয়োজনে নয়।

এই কারণে কবিতার লেখালেখির মধ্যে বিদ্রোহী সত্তা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন যা বিস্ফোরণের আগে বারুদের মত শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে পারে। মৃদুল দাশগুপ্তের কাছে কবি হিসাবে এটাই যেন কবি ধর্ম। আর মৃত ভাইয়ের শবদেহ দেখে কবি এভাবেই তার বিবেককে জাগ্রত করে তুলেছেন সমাজ ধর্মের কাজে।

সমাজের বিভিন্ন অত্যাচারকে তিনি অনুভব করে গভীরভাবে সমাজের সঙ্গে একাকার হয়েছেন। সমাজের প্রতি এবং দেশমাতার সন্তানদের প্রতি হওয়া অত্যাচারকে তিনি উপলব্ধি করে কবিতায় বিদ্রোহ প্রকাশ করেছেন। তিনি অত্যাচারের প্রতিকার স্বরূপ ঈশ্বরের দিকে দুহাত তুলে প্রার্থনা করাকে মেনে নেননি।

কবি মৃদুল দাশগুপ্ত সামাজিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে দায় বদ্ধ হয়ে লেখনী ধারণ করেছেন। তিনি তার আবেগ বিবেক আর প্রতিবাদকে কলমের কালিতে কবিতায় তুলে ধরেছেন। মৃত ভাইয়ের শবদেহ দেখে তার মধ্যে ক্রন্দনরতা জননীর জন্য যে দুঃখ প্রকাশ পেয়েছে তাকে তিনি কলমের অক্ষরে কবিতায় বারুদের মত প্রকাশ করেছেন।

৩. “কেন তবে লেখা, কেন গান গাওয়া / কেন তবে আঁকাআঁকি”– কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ?

উত্তরঃ ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি বলেছেন একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে যে-কোনো কবি, লেখক বা শিল্পী সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন। সেই কারনে সামাজিক বিপর্যয়ের সময় ক্রন্দনরতা জননীর পাশে দাঁড়ানোটা যে-কোনো বুদ্ধিজীবির কর্তব্য। সমাজে লেখকদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বলা হয় ‘Pen is mightier than sword’ অর্থাৎ তরবারির চেয়ে কলমের ক্ষমতা বেশি। একজন লেখক তার লেখনীর সাহায্যে যেমন সমসাময়িক সমাজকে লিপিবদ্ধ করে রাখেন তেমনি প্রতীবাদের তীব্রতায় যে-কোনো শাসকের ডানা ছাঁটতে পারেন। সামাজিক অবক্ষয়ের কালপর্বে কবি লেখকদের প্রতিবাদীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে বলেছেন।

গান প্রতীবাদের অন্যতম ভাষা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তো বটেই এমনকি ভারতেও বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রধান হাতিয়ার হয়েছে গান। গানের মাধ্যমে যেমন শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানানো যায় তেমনি সমস্ত নিপীড়িতদের ঐক্যবদ্ধ হবার প্রেরণা দেওয়া যায়। সেই জন্য কবি প্রতিবাদের মঞ্চে গায়কদেরও আমন্ত্রন জানিয়েছেন। ক্রন্দনরতা জননীর পাশে দাঁড়ানোটা একজন গায়কেরও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

চারুশিল্পের মধ্যে অঙ্কন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। যথার্থ শিল্পীর কাছে তার ছবি প্রতীবাদের ভাষা হিসাবে কাজ করে। সেই জন্য সন্তান হারা জননীর পাশে অঙ্কন শিল্পীকে দাঁড়াতে বলেছেন কবি। এই ভাবে বিপন্ন সময়ে লেখক-শিল্পীরা এগিয়ে আসুক এটাই কবির বক্তব্য।

৪. “আমি তা পারি না! যা পারি কেবল…।”— কবি কী পারেন না ? আর কবি কী পারেন ? ২+৩
                            অথবা,
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি জননীকে ‘ক্রন্দনরতা’ কেন বলেছেন, তা নিজের ভাষায় লিখ। ৫
                            অথবা,
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতায় কবি কীভাবে ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে চেয়েছেন তা নিজের ভাষায় লিখ। ৫

উত্তরঃ কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় স্বাধীনতা পরবর্তী এক অস্থির সময়ের ছবি একেঁছেন। শিল্পের জন্য কৃষিজমি কেড়ে নেওয়া, উর্বর জমিকে এক ফসলি জমি হিসাবে চিহ্নিত করা, এই সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে রক্তাক্ত ও লাঞ্ছিত হতে কবি স্বচক্ষে দেখেছেন। এইসব ঘটনা কবিকে ব্যথিত করে তোলে। কবি দেখেছেন নিখোঁজ একটি মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ, নিহত ভাই এর শবদেহ। তাই কবি জানিয়েছেন—
“আমি কী তাকাব আকাশের দিকে বিধির বিচার চেয়ে ?”

কবি দেশ জননীর এই সংকটময় মূহূর্তে পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেননা তা না হলে কবির লেখালেখি, ছবি আঁকা, গান গাওয়া সমস্ত মিথ্যে হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, নিহত ভাইয়ের শব দেহ দেখে কবির ক্রোধ জাগ্রত না হলে ভালোবাসা, সমাজ, মূল্যবোধ সমস্তই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। দেশ জননীর সংকটময় মূহুর্তে কবি চুপ করে বসে থাকতে পারেন না। তাই কবি জানিয়েছেন– “ আমি তা পারি না…।” কবি চোখের সামনে নিহত ভাইয়ের মৃতদেহ দেখেছেন আর ছিন্নভিন্ন একটি মেয়েকে জঙ্গলে পাওয়ার পর কবি আকাশের দিকে না তাকিয়ে, বিধাতার কাছে বিচার না চেয়ে কবিতার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাই কবি বলেছেন—

“আমি তা পারি না! যা পারি কেবল সে-ই কবিতায় জাগে।”

অর্থাৎ কবি যা পারেন তা হল কবিতার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো। তাই কবি তাঁর কবিতায় বিবেককে জাগিয়ে রাখেন। আর কবির বিবেক জেগে থাকে বিস্ফোরনের আগে বারুদের মতো। কবির ভাষায়—

“আমার বিবেক, আমার বারুদ বিস্ফোরনের আগে।”

সমগ্র কবিতাতেই কবি দেশ জননীর সংকটময় ছবি অঙ্কন করেছেন। দেশের সংকটময় মূহূর্তে জননী কাঁদছেন বলে কবি জননীকে ক্রন্দনরতা বলেছেন। কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর কবিতায় প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে চেয়েছেন।

৫. “ক্রন্দনরতা জননীর পাশে। / এখন যদি না থাকি”— ‘এখন’ বলতে কবি কোন সময়ের কথা বলেছেন ? এই প্রসঙ্গে কবি কীভাবে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তরঃ কবি মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতার শুরুতেই কবি জননীর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আলোচ্য অংশে ‘এখন’ বলতে সেই বিপন্ন সময়ের কথা বলা হয়েছে যখন রাষ্ট্রীয় পীড়নে জর্জরিত জননী এবং জন্মভূমি।

আলোচ্য কবিতায় সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে কবি তার অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ব্যক্তিপরিচয়ে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত একজন সাংবাদিক এবং একইসঙ্গে তিনি একজন সমাজদরদী কবি। সমাজের সত্যকে লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরাই তাঁর দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তাই চোখের সামনে অন্যায়-অবিচার হচ্ছে দেখলে তাঁর লেখার মাধ্যমেই তিনি প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন। তাই কবি বলেছেন–

 “যা পারি কেবল / সে-ই কবিতায় জাগে”।

ইতিহাস সাক্ষ্যি আছে- ‘Pen is mightier than sword’ অর্থাৎ তরবারির থেকে কলম বেশি শক্তিশালী। যথার্থ কলমের খোঁচায় স্বৈরাচারী রাজার সিংহাসনের ভিত নড়ে যেতে পারে। কবির প্রধান হাতিয়ার সেই লেখনী।

ক্রন্দনরতা জননীকে দেখে, নিহত সহনাগরিককে দেখে কিম্বা লাঞ্ছিতা কিশোরীর ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ দেখে কবি যথার্থই ক্ষুব্ধ। তিল তিল করে জমানো ক্ষোভ একসময় বারুদে পরিণত হয়। সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তথা সরকারের পেষণের বিরুদ্ধে কবির প্রতিবাদের ভাষা কবিতার মাধ্যমে বাণীরূপ লাভ করে। এভাবেই কবি ক্রন্দনরতা জননীর পাশে দাঁড়াতে চান।

৬. “কেন ভালবাসা, কেন বা সমাজ / কীসের মূল্যবোধ” – একথা বলা হয়েছে কেনো ?

উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অত্যাচারিতের কয়েকটি স্লোগান লিপিবদ্ধ হয়েছে । কবিতার দ্বিতীয় স্তবকে একজন সহ নাগরিকের মৃত্যুতে অপর একজন নাগরিকের রাগ হওয়াটা কতটা স্বাভাবিক সেই কথায় বলা হয়েছে । কবির ভাষায় এই রকম নিরপরাধ মৃত্যু দেখে যদি রাগ না হয় তাহলে “কেন ভালোবাসা, কেন বা সমাজ/ কীসের মূল্যবোধ ?”

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। আরণ্যের জীবন নিরাপদ ছিল না বলেই সেই সমাজ গড়ে তুলেছে আর রচনা করেছে সামাজিক অনুশাসন। সমাজবদ্ধ প্রতিটি মানুষ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কের জটিল জালে যুক্ত হয়ে আছে । এই সম্পর্ক কখনো রক্তের কখনো সমজের, আবার কখনো সহ নাগরিকের সম্পর্ক। মানুষের হিংসা যদি এই পর্যায়ে পৌছায় যে একজন মানুষ অবলীলাক্রমে আর একজন মানুষকে হত্যা করতে পারে, তবে যে-কোনো শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরই রাগ হাওয়া উচিত। নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্যই মানুষ সমাজ গড়েছিল। সেখানেও সে যদি নিরাপদ না থাকে তাহলে সমাজ, ভালোবাসা অথবা মূল্যবোধের গুরুত্ব কোথায়। এই ভাবে কবি সামাজিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে সমাজের প্রতিটি মানুষকে একজোট হয়ে মোকাবিলা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

৭. “আমি কি তাকাব আকাশের দিকে / বিধির বিচার চেয়ে”— কোন্ প্রসঙ্গে এই প্ৰশ্ন করা হয়েছে ? প্রশ্নটির তাৎপর্য কি ?

উত্তরঃ মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি সামাজিক অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে রচিত একটি অনবদ্য কবিতা। বিপদ যখন ঘনিয়ে আসে তখন সমজের লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা কী ভূমিকা নিতে পারেন এবং সেই একই প্রেক্ষাপটে কবির কী অবস্থান তা তিনি এই কবিতায় স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন। যদি বাড়ি থেকে নিখোঁজ কোন যুবতির ছিন্নভিন্ন শরীরের সন্ধান পাওয়া যায় গভীর জঙ্গলে তখন কবি নিশ্চয় ঈশ্বরের দোয়া পাড়বেন না। এই প্রসঙ্গে কবির এই উক্তি।

গীতার বাণীতে রয়েছে যে, মানুষ নিমিত্ত মাত্র। এর অর্থ আমরা স্বজ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে যা কিছু করি তার পিছনে ঈশ্বরের ভূমিকা রয়েছে। গীতার এই কথাটির অর্থ গভীরতর কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে সকল কাজেই ঈশ্বরের দোহায় দেওয়া একটি কু- অভ্যাসের মতো। যদি কোন অনিষ্ট ঘটে থাকে তবে ঈশ্বর তার বিচার করবেন আর নিজে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলেও চলবে —এমনটা ভাবা ঈশ্বরানুগত্য নয়। নিজের কাপুরুষতা দুর্বলতাকে ঢাকানোর জন্য মানুষ অনেক সময় ঈশ্বরের দোহায় দেয়৷ একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে কবি এই ভাবনার বিরুদ্ধে। কবি স্পষ্ট বলেছেন ‘আমি তা পারি না’। আসলে কবি চান যে সমাজবদ্ধ মানুষেরা অতাচারীর অপকর্মের প্রতিবাদ নিজেরাই করুক।

৮. ‘আমি তা পারিনা’- কবি কী পারেন না ? এই প্রসঙ্গে কবি কী কী পারার কথা বলেছেন ?

উত্তরঃ কবি মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতার শেষ স্তবকে কবি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন- ‘আমি তা পারিনা’। কবি যা পারেন না তা হল— চোখের সামনে অন্যায় হচ্ছে দেখে তিনি নিরুত্তাপ থাকতে পারেন না। এইরকম বিপন্ন সময়ে তিনি অযথা ঈশ্বরভক্তি দেখিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতেও পারেন না।

ইতিহাস সাক্ষ্যি আছে- ‘Pen is mightier than sword‘ অর্থাৎ তরবারির থেকে কলম বেশি শক্তিশালী। যথাৰ্থ কলমের খোঁচায় স্বৈরাচারী রাজার সিংহাসনের ভিত নড়ে যেতে পারে। আলোচ্য অংশে কবির প্রধান হাতিয়ার সেই লেখনী।

ব্যক্তিপরিচয়ে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত একজন সাংবাদিক এবং একইসঙ্গে তিনি একজন সমাজদরদী কবি সমাজের সত্যকে লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরাই তাঁর দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তাই চোখের সামনে অন্যায়- অবিচার হচ্ছে দেখলে তাঁর লেখার মাধ্যমেই তিনি প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন। কবি বলেছেন- “যা পারি কেবল / সে-ই কবিতায় জাগে”।

সহনাগরিককে দেখে কিম্বা লাঞ্ছিতা ক্রন্দনরতা জননীকে দেখে, নিহত কিশোরীর ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ দেখে কবি যথার্থই ক্ষুব্ধ। তিল তিল করে জমানো ক্ষোভ একসময় বারুদে পরিনত হয়। সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তথা সরকারের পেষণের বিরুদ্ধে কবির প্রতিবাদের ভাষা কবিতার মাধ্যমে বাণীরূপ লাভ করে।

৯. “আমি তা পারি না।” – কে কী পারেন না ? তার না পারার বেদনা কবি মনকে কীভাবে আলোড়িত করেছে তা কবিতা অবলম্বনে লেখ।

উত্তরঃ আধুনিক যুগের অন্যতম কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তার ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতায় নিজে না পারার কথা বলেছেন।

সমাজের মানুষ হিসাবে কবি নিজেকে মানব ধর্মে দীক্ষিত করে তুলেছেন। বিভিন্ন বঞ্চনার প্রতিবাদের বিধান তিনি ভগবানের কাছে আবেদন করতে চান না। কারণ কোন নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন শরীর জঙ্গলে দেখতে পেলে সামাজিক মানুষ হিসেবে তার মধ্যে ক্রোধের জন্ম ঘটে।

দেশবাসীর কোন রকম বিপদের দিনে যদি ভাইয়ের মতো তার পাশে না থাকা যায় তবে মানুষের মানবতা বোধ থাকা আর না থাকা দুই সমান কথা। দেশবাসীর বিপন্ন অবস্থায় তিনি সদাসর্বদা ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে চেয়েছেন। এই কারণে মৃত ভাইয়ের শবদেহ দেখে তার মধ্যে বিদ্রোহের প্রকাশ ঘটেছে।

মানুষের অন্তহীন শোষণের প্রতিবাদ স্বরুপ ঈশ্বরের দিকে চেয়ে থাকাকে কবি কখনো গ্রহণ করতে পারেননি। দেশ মাতার অপচয় দেখে যদি প্রতিবাদ না করা হয় তবে কোনো দায়িত্ববোধের মূল্যবোধ থাকে না। এই কারণে সমাজের প্রতি নারকীয় অত্যাচার কবির মনে বারুদ রূপে বিদ্রোহের জন্ম নিয়েছে।

কবিরা যা পারেন তা তাদের কলমে প্রকাশিত হয়। যেমন বিদ্রোহী কবি লিখেছিলেন আমার রক্ত-লেখায় যেন হয় তাদের সর্বনাশ। ঠিক একই রকমভাবে মৃদুল দাশগুপ্ত তার বিবেক ও বিদ্রোহী সত্তাকে বারুদের মত কবিতায় প্রতিবাদ স্বরুপ তুলে ধরেছেন।

This Post Has One Comment

Leave a Reply