WBCHSE Class 11 Bengali Solved Question Paper 2019 | একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রশ্নপত্র ২০১৯ – Prosnodekho

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

WBCHSE HIGHER SECONDARY (XI) BENGALI QUESTION PAPER WITH ANSWER 2019
একাদশ শ্রেণি বাংলা প্রশ্নপত্র ২০১৯, পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার বাংলা বিষয়ের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র সঠিক এবং নির্ভুল উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তোমরা অবশ্যই তোমাদের সাবজেক্ট শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলিয়ে নেবে। নিচে বহু বিকল্পধর্মী প্রশ্ন (MCQ) এবং অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নের (SAQ) উত্তর দেওয়া হলো।

একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা
নতুন পাঠক্রম
বাংলা ‘ক’ ভাষা
২০১৯
সময় : ৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট          [পূর্ণমান : ৮০]

পরিমিত এবং যথাযথ উত্তরের জন্য বিশেষ মূল্য দেওয়া হবে। বর্ণাশুদ্ধি, অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরিষ্কার হস্তাক্ষরের ক্ষেত্রে নম্বর কাটা যাবে। ডানপাশে প্রশ্নের পূর্ণমান দেওয়া আছে।

একাদশ শ্রেণি বাংলা মক্ টেস্ট ২০১৯

1 / 18

১.১ “সেইখানেই তাে ভূত''– কথাটি বলেন—

2 / 18

১.২ তেলেনাপােতা আবিষ্কার কতদিন ছুটি পেলে হবে ?

3 / 18

১.৩ ... এ আনন্দ তার রাখবার জায়গা নেই।'– এত আনন্দ কার হয়েছে ?

4 / 18

১.৪ সনাতন ঘুম বলতে রবীন্দ্রনাথ কী বুঝিয়েছেন ?

5 / 18

১.৫ পরিব্রাজক' স্বামীজির কী রচনা ?

6 / 18

১.৬ সুয়েজ খাল কোন দুটি সাগরকে যুক্ত করেছে ?

7 / 18

১.৭ গ্যালিলিও দেহত্যাগ করেন—

8 / 18

১.৮ ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ পত্রকবিতার উপাদান আছে মহাভারতের—

9 / 18

১.৯ “আমরা তাে সামান্য লােক"- 'সামান্য কথাটির তাৎপর্য হল—

10 / 18

১.১০ 'পাঞ্চজন্য' ব্যবহারকারী হলেন—

11 / 18

১.১১ জয় গােস্বামীর একটি বিখ্যাত কাব্য—

12 / 18

১.১২ লালন ও পড়শির মধ্যে দূরত্ব হল—

13 / 18

১.১৩ ডানাওয়ালা বুড়াে লােকটা খায়—

14 / 18

১.১৪ 'শিক্ষার সার্কাস' কবিতার অনুবাদক কে ?

15 / 18

১.১৫ 'বীরবল' ছদ্মনামের বাংলা প্রবন্ধকার হলেন—

16 / 18

১.১৬ ‘অষ্টাধ্যায়ী' ব্যাকরণ গ্রন্থটি লিখেছিলেন—

17 / 18

১.১৭ তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের প্রাধান্য রয়েছে এমন ভাষারীতি—

18 / 18

১.১৮ শর বা কাঠ দিয়ে লেখা হত যে লিপি, তা হল—

Your score is

The average score is 79%

0%

১। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করাে: ১৮×১= ১৮

১.১ “সেইখানেই তাে ভূত’– কথাটি বলেন—
(ক) অভূতের পেয়াদা (খ) শিরােমণি-চূড়ামণি
(গ) বুড়াে কর্তা (ঘ) ভূতের দল

উত্তরঃ (গ) বুড়াে কর্তা।

১.২ তেলেনাপােতা আবিষ্কার কতদিন ছুটি
পেলে হবে ?
(ক) একদিন (খ) তিনদিন (গ) দুদিন
(ঘ) পাঁচদিন

উত্তরঃ (গ) দুদিন।

১.৩ … এ আনন্দ তার রাখবার জায়গা
নেই।’– এত আনন্দ কার হয়েছে ?
(ক) সৌখির বউয়ের
(খ) সৌখির মায়ের
(গ) সৌখির ছেলের
(ঘ) সৌখির দলের লােকের

উত্তরঃ (খ) সৌখির মায়ের।

১.৪ সনাতন ঘুম বলতে রবীন্দ্রনাথ কী
বুঝিয়েছেন ?
(ক) আদিমকালের ঘুম (খ) অন্ধকারে ঘুম
(গ) ভাত ঘুম (ঘ) চিরকালের ঘুম

উত্তরঃ (ক) আদিমকালের ঘুম।


👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈


১.৫ পরিব্রাজক’ স্বামীজির কী রচনা ?
(ক) রম্যরচনা (খ) অনুবাদ রচনা
(গ) ভ্রমণমূলক রচনা (ঘ) ধর্মমূলক রচনা

উত্তরঃ (গ) ভ্রমণমূলক রচনা।

১.৬ সুয়েজ খাল কোন দুটি সাগরকে যুক্ত
করেছে ?
(ক) বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর।
(খ) আর্কটিক ও আটলান্টিক
(গ) ভূমধ্যসাগর ও লােহিত সাগর
(ঘ) ক্যারিবিয়ান ও আরব সাগর

উত্তরঃ (গ) ভূমধ্যসাগর ও লােহিত সাগর।

১.৭ গ্যালিলিও দেহত্যাগ করেন—
(ক) ১৬৪২ সালে ৮ই জানুয়ারী
(খ) ১৬৪০ সালে ৮ই জানুয়ারী
(গ) ১৬৪৩ সালে ৮ই জানুয়ারী
(ঘ) ১৬৪৫ সালে ৮ই জানুয়ারী

উত্তরঃ (ক) ১৬৪২ সালে ৮ই জানুয়ারী।

১.৮ ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ পত্রকবিতার
উপাদান আছে মহাভারতের—
(ক) শান্তিপর্বে (খ) যুদ্ধপর্বে (গ) উদ্যোগপর্বে
(ঘ) অশ্বমেধ পর্বে

উত্তরঃ (ঘ) অশ্বমেধ পর্বে।

১.৯ “আমরা তাে সামান্য লােক”- ‘সামান্য
কথাটির তাৎপর্য হল—
(ক) অবহেলিত লাঞ্ছিত মানুষ
(খ) দয়ালু মানুষ
(গ) জনসাধারণ
(ঘ) গুণীব্যক্তি

উত্তরঃ (ক) অবহেলিত লাঞ্ছিত মানুষ।

১.১০ ‘পাঞ্চজন্য’ ব্যবহারকারী হলেন—
(ক) অর্জুন (খ) শ্রীকৃষ্ণ (গ) ইন্দ্র (ঘ) নারদ

উত্তরঃ (খ) শ্রীকৃষ্ণ।

১.১১ জয় গােস্বামীর একটি বিখ্যাত কাব্য—
(ক) কথােপকথন
(খ) যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল
(গ) যেতে পারি কিন্তু কেন যাব
(ঘ) বনলতা সেন

উত্তরঃ (খ) যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল।

১.১২ লালন ও পড়শির মধ্যে দূরত্ব হল—
(ক) একশাে যােজন (খ) কয়েক মাইল
(গ) হাজার যােজন (ঘ) লক্ষ যােজন

উত্তরঃ (ঘ) লক্ষ যােজন।

১.১৩ ডানাওয়ালা বুড়াে লােকটা খায়—
(ক) বেগুনভর্তা (খ) আলুর ভর্তা
(গ) কাঁকড়া (ঘ) ন্যাপথলিন

উত্তরঃ (ক) বেগুনভর্তা।

১.১৪ ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতার অনুবাদক
কে ?
(ক) শঙ্খ ঘােষ (খ) শক্তি চট্টোপাধ্যায়
(গ) সুনীল গাঙ্গুলী (ঘ) উৎপল কুমার বসু

উত্তরঃ (ঘ) উৎপল কুমার বসু।

১.১৫ ‘বীরবল’ ছদ্মনামের বাংলা প্রবন্ধকার
হলেন—
(ক) কালীপ্রসন্ন সিংহ
(খ) রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী
(গ) অন্নদাশঙ্কর রায়
(ঘ) প্রমথ চৌধুরী

উত্তরঃ (ঘ) প্রমথ চৌধুরী।

১.১৬ ‘অষ্টাধ্যায়ী’ ব্যাকরণ গ্রন্থটি লিখেছিলেন—
(ক) পাণিনি (খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) ব্যাসদেব (ঘ) জয় গােস্বামী

উত্তরঃ (ক) পাণিনি।

১.১৭ তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের প্রাধান্য রয়েছে এমন ভাষারীতি—
(ক) চলিত (খ) শিষ্ঠ চলিত (গ) সাধু
(ঘ) সাধু-চলিত মিশ্র।

উত্তরঃ (গ) সাধু।

১.১৮ শর বা কাঠ দিয়ে লেখা হত যে লিপি, তা হল—
(ক) চিত্রপ্রতীক লিপি (খ) চিনীয় লিপি
(গ) বাণমুখ লিপি (ঘ) স্বরলিপি।

উত্তরঃ (গ) বাণমুখ লিপি।

২. অনধিক ২০ টি শব্দে উত্তর দাও। (বিকল্প
প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) ১২×১=১২

২.১ “দেশের লােক ভারি নিশ্চিন্ত হল।”- নিশ্চিন্ত হওয়ার কারণ কী ?

উত্তরঃ বুড়াে কর্তা মারা যাওয়ার পরেও ভূত হয়ে দেশবাসীর ঘাড়ে চেপে থাকবেন, এই জন্য দেশের লােক নিশ্চিন্ত হয়েছিল।

২.২ ‘মহারথী-প্রথা কিহে এই, মহারথি ?’- কোন্ কাজ মহারথী প্রথার বিরােধী ?

উত্তরঃ মহারথী প্রথা অনুযায়ী অস্ত্রধারী যোদ্ধা নিরস্ত্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবে না। পার্থ এই নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। জনার পুত্র প্রবীর পাণ্ডবদের অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া প্রতিরোধ করলে পার্থ তথা অর্জুন তাকে নিহত করেন। এই কাজকে জনা মহারথী প্রথার বিরোধী বলেছেন।

২.৩ “লক্ষ যােজন ফাঁক রে”- ফাঁকের কারণ কী ?

উত্তরঃ মানুষের সাংসারিক মােহমুগ্ধতা, ইন্দ্রিয়মুখ ও বিষয়বাসনা ঈশ্বরকে পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই একই দেহে সাধক ও ঈশ্বরের অবস্থান হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে ‘লক্ষ যােজন’ ফাঁক রয়েছে।

২.৪”… বেজেছে বাণীর সেতারে আজ ?” –
বাণীর সেতারে কবি কী শুনতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবি
বাণীর সেতারে ‘মুক্তবন্ধ সুর’ শুনতে চান।

২.৫ জাহাজে খালাসী বেচারাদের আপদের
কারণ কী ?

উত্তরঃ জাহাজে খালাসী বেচারাদের আপদের কারণ ছিল ‘প্লেগ’ রোগ। এই রােগের আতঙ্কে সুয়েজের কুলিরা জাহাজে উঠতে পায়নি, তাই জাহাজের খালাসিদেরকেই মাল নামাতে হচ্ছিল।

২.৬ গ্যালিলিও নিজের দূরবীণ দিয়ে নতুন কী কী আবিষ্কার করেন ?

উত্তরঃ নিজের দূরবীন দিয়ে গ্যালিলিও বৃহস্পতির উপগ্রহ, সূর্যবিম্বে কলঙ্কবিন্দু, শনির বলয় ইত্যাদি জিনিস আবিষ্কার করেছিলেন।

২.৭ “অন্যায় সমরে মূঢ় নাশিল বালকে”- মূঢ় বলতে কার কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ পুত্র প্রবীরের হত্যাকারী পান্ডু পুত্র
অর্জুনকে জনা ‘মূঢ়’ বলেছেন।

২.৮ “পুণ্য বেদির শূন্য ভেদিয়া / ক্রন্দন উঠিতেছে শুধু।”- কেন এই ক্রন্দন ?

উত্তরঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতানুসারে ভারত মাতা দ্বীপান্তরিতা, তাই এই ক্রন্দন।

২.৯ সর্বাধিক জনপ্রিয় সার্থক বিশ্বভাষাটির নাম কী ?

উত্তরঃ সর্বাধিক জনপ্রিয় সার্থক বিশ্ব ভাষাটির নাম হল এসপারেন্তো।

২.১০ ‘চিত্রলিপি’ কী ?

উত্তরঃ লিপির বিবর্তনের একটি পর্যায়ে
ছবির আদলে যে লিখন পদ্ধতির প্রচলন
হয়েছিল, তারই নাম চিত্রলিপি।

২.১১ মধ্যভারতীয় আর্যভাষার আনুমানিক
সময়সীমা উল্লেখ করাে।

উত্তরঃ মধ্যভারতীয় আর্যভাষার আনুমানিক
সময়সীমা হল ৬০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

২.১২ কামরূপী উপভাষা কোন্ কোন্ অঞ্চলে প্রচলিত ?

উত্তরঃ জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আসামের
কাছাড় অঞ্চলে কামরূপী উপভাষা প্রচলিত
রয়েছে।

৩। অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে যে-কোনাে
একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x১ = ৫

৩.১ “ওরে অবােধ, আমার ধরাও নেই। ছাড়াও নেই, তােরা ছাড়লেই আমার ছাড়া।”– এখানে কে, কাদের অবােধ বলেছেন ? উক্তিটির তাৎপর্য আলােচনা করাে। ১+১+৩

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ গল্পে বুড়ো কর্তা ‘ভূতগ্রস্ত’ দেশবাসীকে ‘অবোধ’ বলে সম্বোধন করেছেন।

গল্পের শেষ অংশে কর্তার এই কথাটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কর্তা মারা যাওয়ার পর দেশবাসী মনে করল যে কর্তা ভূত হয়ে তাদের ধরে রেখেছে। কর্তার অভিভাবকত্বে অনেকে শান্তি অনুভব করলেও দেশের নবীন প্রজন্ম বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এরকম অবস্থায় দেশের দু-একজন মানুষ যারা দিনের বেলায় ভুতুড়ে নায়েবের ভয়ে মুখ খুলতে পারে না, গভীর রাতে কর্তার শরনাপন্ন হয়। কর্তাকে তারা জিজ্ঞাসা করে যে কখন তিনি ছাড়বেন। কর্তা দেশবাসীকে অভয় দিয়ে বলেন-“তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া”।

কর্তা সম্পূর্ণ বাস্তব কথাই বলেছেন। আসলে কর্তা তো তাদের ধরে রাখেনি বরং তারাই কর্তাকে ধরে রেখেছে। কর্তা অনেক আগেই গত হয়েছেন কিন্তু পুরাতনপন্থী মানুষেরা নতুনের কাছে আত্মসমৰ্পণ করবে না বলেই কর্তার ভূতকে আঁকড়ে ধরে পড়ে ছিল। কর্তার ভূতের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই- জ্ঞানবিমুখ, ধর্মভীরু মানুষের মনেই তার আধিপত্য। মনোবিজ্ঞান অনুসারে, মানুষের ভয় থেকেই ভুতের জন্ম হয় এবং মানুষই তাকে পোষণ করে। কর্তার ভূত প্রসঙ্গেও একই কথা প্রযোজ্য।

৩.২ ‘তেলেনাপােতা’ যাওয়ার কারণ কী ? একে লেখক আবিষ্কার বলেছেন কেন ? ১+৪

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তিনজন যুবকের তেলেনাপোতায় যাওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। উক্ত তিনজন যুবকের একজন ছিল মৎস্যশিকারি, আরেকজন পানরসিক এবং তৃতীয়জন নিদ্রাবিলাসী। তবে, মৎসশিকারি বন্ধুর সঙ্গী হিসেবেই অপর দু’জন তেলেনাপোতায় গিয়েছিল।

তেলেনাপোতা একসময় একটি সমৃদ্ধ গ্ৰাম ছিল। কিন্তু এক-দেড়শো বছর আগে ম্যালেরিয়ার প্রকোপে গ্রামের বহু মানুষ মারা যায়। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে বহু মানুষ অন্যত্র বসতি স্থাপন করে। কেবল যাদের গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার উপায় ছিল না, তারাই রয়ে গেল সেখানে। সেই তখন থেকে তেলেনাপোতা যেন ‘শ্মশানের দেশ’। মহানগরী থেকে মাত্র তিরিশ মাইল দূরে থেকেও লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গিয়েছিল তেলেনাপোতা। আলোচ্য গল্পে তিনজন শহুরে যুবক তেলেনাপোতায় গিয়েছিল। তবে, তাদের এই যাওয়াটা নেহাত ভ্ৰমণ বা পর্যটন নয়, লেখক তাদের যাওয়ার ঘটনাকে আবিষ্কারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বস্তুতপক্ষে, ‘আবিষ্কার’ বলতে বোঝায় অজ্ঞাত বা অপ্রকাশিত কোনো বস্তু বা বিষয়ের সন্ধান পাওয়া। প্রাচীনকালে অভিযাত্রীর দল নতুন দেশ আবিষ্কারের নেশায় দূর সমুদ্রে পাড়ি দিত এবং পৌঁছে যেত অজানা-অচেনা দেশে। গল্পে উল্লেখিত তিন যুবক যেন বিস্মৃতির অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া তেলেনাপোতাকে নতুন করে আবিষ্কার করেছিল। তাদের মাধ্যমেই প্রকাশ্যে এসেছিল মৃত্যুপুরী তেলেনাপোতা এবং সেখানকার মানুষের কথা। সেইজন্য লেখক একে ‘আবিষ্কার’ বলেছেন।

৪। অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে যে-কোনাে
একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ৫×১ = ৫

৪.১ “হে ভারতের শ্রমজীবী।” – শ্রমজীবী সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দের ধারণা ‘সুয়েজখালে : হাঙর শিকার’ রচনা অবলম্বনে লেখাে। ৫

উত্তরঃ স্বামী বিবেকানন্দের ‘পরিব্রাজক গ্রন্থের অন্তর্গত ‘সুয়েজখালেঃ হাঙ্গর শিকার প্রবন্ধে ভারতের অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে লেখক ভারতের শ্রমজীবীদের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন।

প্রথমেই স্বামীজি বলেছেন তাদের অনলস পরিশ্রমের কথা । প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় সভ্যতা একটি সম্পদশালী সভ্যতা হিসাবে বহির্বিশ্বে খ্যাত ছিল আর এই সম্পদের ভিত্তি ছিল ভারতের শ্রমজীবী মানুষ। এই সম্পদের টানে বহু বিদেশী জাতি ভারতে ছুটে এসেছে- কেউ বাণিজ্য করার জন্য আবার, কেউ বা লুণ্ঠন করার জন্য। এইজন্য স্বামীজি বলেছেন- পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, দিনেমার, ইংরেজ প্রভৃতি জাতির ঐশ্বর্য হল এই সব সাধারণ মানুষের শ্রমদানের ফল ।

একইসঙ্গে স্বামীজি একথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, মানব সভ্যতার মূল কান্ডারী এই শ্রমজীবীরা হলেও তারা কোনোদিন যোগ্য সম্মান পায়নি, বরং চিরকাল তারা দারিদ্র আর অবহেলার শিকার। স্বামীজী বলেছেন “দশ হাজার লোকের বাহবার সামনে কাপুরুষও অক্লেশে প্রাণ দেয়, ঘোর স্বার্থপরও নিষ্কাম হয়”, কিন্তু ভারতের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ কারো বাহবার আশা না করে নিজ নিজ কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সকলের অজান্তে তারা যেসব ক্ষুদ্র কাজ করে যাচ্ছে তাতেই আসল বীরত্ব। তাই স্বামীজি তাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়েছেন।

৪.২ “Venice এ কর্তৃপক্ষের কাছে তার কদর বেড়ে গেল।”– কার কদর বাড়ে ? এই কদর বাড়ার কারণ ও পরিণাম উল্লেখ করাে। ১+৪

উত্তরঃ মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান প্রচারে যে কয়েকজন বাঙালি বিজ্ঞানী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিদগ্ধ পণ্ডিত সত্যেন্দ্রনাথ বসু। লেখকের ‘সত্যেন্দ্রনাথ বসু রচনা সংকলন’ গ্রন্থের ‘জীবনকথা ‘ শিরােনামের অন্যতম প্রবন্ধ ‘গালিলিও’। আর এই প্রবন্ধে কদর বেড়ে গিয়েছিল মুক্তবুদ্ধি, ধর্মনিরপেক্ষ বিজ্ঞান সাধক ও দূরবিন যন্ত্রের উদ্ভাবক গালিলিওর।

প্রবন্ধ অনুসারে ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে হল্যান্ডবাসী এক ভদ্রলোেক কাচের লেন্স নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে হঠাৎ একটি নলের দু-পাশে চোখ রেখে দেখলেন, দূরের জিনিস এভাবে বড়াে দেখায়— মনে হয় কাছে এগিয়ে এসেছে। গালিলিও এই খবর পেয়ে কাগজে প্ল্যান এঁকে আলাের রেখাপথের বিষয় বিচার করতে লাগলেন। শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হল আর তৈরি হল দূরবিন। সমুদ্রপথে Venice- এর নৌবাহিনী তখন ঘুরে বেড়ায় , নানা দেশ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে এনে ইউরােপের নানা স্থানে বেচাকেনা করে। রূপকথার স্বপ্নপুরীর মতাে তখন Venice শহরের সম্পদ। সমুদ্রপথে নৌবহরকে সুরক্ষা দিতে শত্রুপক্ষের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকার দূরবিনের সাহায্য নিতে শুরু করল। Venice সরকার গালিলিওকে দূরবিনের জোগান দিতে অনুরােধ করলেন। গালিলিও রাজি হলেন— বাড়ি হয়ে উঠল ফ্যাক্টরি কারুশালা । দেশ রক্ষার যন্ত্র পেয়ে Venice কর্তৃপক্ষের কাছে গালিলিওর কদর বেড়ে গেল।

গালিলিও পেলেন হাতের মধ্যে বিশ্বসমীক্ষার এক প্রধান যন্ত্র। দূরবিনে ধরা পড়ল চাঁদের পাহাড়, ছায়াপথের মধ্যে লক্ষ লক্ষ তারার সমাবেশ চোখে ধরা পড়ল, আবার এলো নতুন নতুন উপগ্রহের খবর। কোপারনিকাসের সমীক্ষাকে প্রতিষ্ঠা দিতে চেষ্টা করলেন। তখনকার দিনে ধার্মিক পণ্ডিতেরা এসব বিশ্বাস করতে চাইলেন না। তারা ভাবলেন, যা চোখে দেখা যায় না তা যন্ত্রে প্রতিপন্ন হলে সেটা যন্ত্রেরই কারসাজি। গালিলিও এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ ও কোনাে কথাকে গ্রাহ্য না করে নিজের আবিষ্কারে মগ্ন থাকলেন। আর এর ফলেই গালিলিওর জীবনে। নেমে আসে চরম বিপর্যয়। ধর্মযাজকদের কুসংস্কারের বলি হলেন গালিলিও। লেখক মন্তব্য করেন— “তিনি কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার যাতায় গুঁড়াে হয়ে গেলেন।”

৫। অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে যে-কোনাে
দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x২ = ১০

৫.১ ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কবিতায় জনার ক্রুদ্ধ অভিমানী স্বর কীভাবে ধরা পড়েছে ?

৫.২ ‘বলবাে কী সেই পড়শীর কথা’- পড়শী কে ? পড়শী’র স্বরূপ সম্পর্কে আলােচনা করাে। ১ + ৪

উত্তরঃ লালন ফকিরের ‘বাড়ীর কাছে আরশিনগর’ কবিতাটি একটি বাউলগান। বাউল দর্শন অনুযায়ী মানবশরীরের মধ্যে ঈশ্বরের বাসা। এই ঈশ্বর হল মানুষের অন্তরাত্মা অর্থাৎ তার একান্ত আপন ‘মনের মানুষ’। আলোচ্য গানটিতে এই মনের মানুষকে কবি আরশিনগরে বসতকারী “পড়শী” বলে অভিহিত করেছেন।

পড়শীকে দেখার জন্য কবি আকুল হয়ে উঠেছেন কিন্তু সে এমন জায়গায় বসবাস করে যে তার কাছে পৌঁছানো খুবই কঠিন। পড়শির গ্রামের চারিদিকে অগাধ জলরাশি। কবি সেই জলরাশি অতিক্রম করে যেতে পারেন না কারণ সেই জলের কোনো কিনারা নেই। আবার কবিকে আরশীনগরে পৌঁছে দিতে পারে এমন কোনো মাঝিও সেখানে নেই। এখানে রূপকের আশ্রয়ে কবি যা বলতে চেয়েছেন তা হল, কবির পড়শী বা মনের মানুষ বিষয়-বাসনার উর্দ্ধে অবস্থান করেন কিন্তু কবিকে ঘিরে রেখেছে অগণিত পার্থিব বাসনা। এই জন্য একেই জায়গায় বসবাস করেও কবির সঙ্গে তাঁর মনের মানুষের ‘লক্ষ্য যোজন ফাঁক’ রয়ে গেছে।
পড়শির রূপ বর্ণনা প্রসঙ্গে লালন বলেছেন যে তার ‘হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা’ কিছুই নেই অর্থাৎ এই পড়শী নিরাকার। সে কখনো শুন্যে ভাসে আবার কখনো কোন বস্তুকে আশ্রয় করে দৃশ্যমান হয় ।

কবির চিরকাঙ্ক্ষিত পড়শী এবং কবির মাঝখানে সব ব্যবধান যদি ঘুচে যেত তাহলে হয়তো পড়শি কবিকে ছুঁতে পারতেন। আর তারপরই কবির ‘যম যাতনা’ চিরকালের মতো লোপ পেত।

৫.৩ ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কে ? ‘বন্দিনী’কে মুক্ত করার জন্য কবির যে আকুলতা প্রকাশিত হয়েছে, তা কবিতা অবলম্বনে লেখাে। ১+৪

উত্তরঃ ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী হলেন ভারত-ভারতী বা ভারতমাতারূপী বাকদেবী সরস্বতী। তিনি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতীক।

‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কবির স্বদেশপ্রেমের অসামান্য প্রকাশ দেখা যায়। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির প্রান্তরে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তাচলে গিয়েছিল, তার জন্য কবির আক্ষেপ এই কবিতায় তীব্র স্বরে ধ্বনিত হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে বন্দি ও দেশান্তরী হতে হয়েছে অসংখ্য দেশপ্রেমিককে। আন্দামান আর নির্বাসন তখন সমার্থক হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতার লাঞ্ছনা, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর ব্রিটিশ শাসকদের নির্মম অত্যাচারকে কবি মর্মস্পর্শী ভাষায় এই কবিতায় ব্যক্ত করেছেন। কবি দেখেছেন প্রতিবাদের আর মুক্তির কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নির্লজ্জ প্রয়াস।
এমন এক আইনের শাসনে দেশ বাঁধা, যেখানে সত্য কথা বললে বন্দি হতে হয়, স্বাধীনভাবে কথা বললে ‘বিদ্রোহী’ আখ্যা পেতে হয়। কিন্তু শোষণের অবসান আর স্বাধীনতার উন্মেষের মধ্যেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা—এটাই কবির বিশ্বাস। তাই ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’র উপসংহারে কবি এই বিপ্লবী প্রাণকে আহ্বানের জন্যই ‘পাঞ্চজন্য শাঁখ’ বাজাতে বলেছেন।
ইতিহাসের অনিবার্যতায় দ্বীপান্তর আন্দামানের ‘ঘানিতে লেগেছে’ এমন এক ‘ঘূর্ণিপাক’—যাকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না; যা নিশ্চিতরূপে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতকে স্বাধীনতার আলো দেখাবে বলে কবির বিশ্বাস।

৫.৪ “আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক।” – কে বলেছে ? এ দাবি কার কাছে ? কেন ? ১+১+৩

উত্তরঃ প্রখ্যাত কবি জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতার কথক শ্রমজীবী হতদরিদ্র মানুষটি। ‘আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক।’ এই দাবি সেই কর্তাব্যক্তিদের কাছে, সামান্য নুনটুকু জোগান দেওয়ার দায়দায়িত্ব যাঁদের।

ন্যায্য অধিকার দাবিঃ ধনতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সম্পদের অসম বণ্টনের ফলেই সমাজে ধনী ও গরিবের শ্রেণিবৈষম্য। শ্রমজীবী মানুষের শ্রমজাত সম্পদ ধনীর কুক্ষিগত হয়। শােষণ ও বঞ্চনার ফলে ধনী হয় আরও ধনী। গরিব নিঃস্ব থেকে আরও নিঃস্ব ও নিরন্ন হতে থাকে। তাদের আয়ের নিশ্চয়তা থাকে না। তাদের শ্রমের জোগানও থাকে না নিয়মিত। তাদের জীবন চলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, ধারদেনা করে। ‘সাধারণ ভাতকাপড়ে’। মাঝে মাঝে আয়ের অঙ্ক শূন্যতে থাকায় বাজার করাও হয় না। সেদিন বাড়ি ফিরতে মাঝরাত গড়িয়ে যায়। উদরপূর্তির জন্য জোটে সকালের ঠান্ডা শুকনাে ভাত। সামান্য নুনটুকুরও সংস্থান না থাকায় আলােনা ভাত মুখে বিস্বাদ ঠেকে। তখনই মাথায় রাগ চড়ে। তা নিয়ে বাপ ব্যাটায় কিংবা ভাইয়ে ভাইয়ে চেঁচামেচি শুরু হয়। চেঁচামেচিতে পাড়া মাথায় করে। ওই অপ্রিয় অসহিষ্ণুতার জন্য পরে তারা নিজেরাও ব্যথিত হয়। তাই তাদের কাতর আবেদন— নিদেনপক্ষে তাদের শুকনাে ভাতে নুনটুকুর ব্যবস্থা হোক। তাদের আর্জি এই সভ্যসমাজে, হতদরিদ্র, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এই প্রশাসনিক মানবিকতাটুকু তাদের ওপর বর্ষিত হােক। দয়া নয়, করুণা নয়, এ হল ন্যায্য অধিকারের বিনীত দাবি।

৬। অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে যে-কোনাে
একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫×১=৫

৬.১ দেবদূতের আবির্ভাবে পেলাইও আর
এলিসেন্দার দারিদ্র্য কীভাবে দূর হলাে
‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্প
অবলম্বনে লেখাে। ৫

৬.২ ‘সর্বশিক্ষা একটি সার্কাস’ শিক্ষার সার্কাস’ কবিতা অবলম্বনে শিক্ষা সার্কাসের সঙ্গে কীভাবে তুলনীয় আলােচনা করাে। ৫

উত্তরঃ ‘শিক্ষা’ সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন— “Education is the manifestation of perfection already in man.” অর্থাৎ শিক্ষা হল আত্মশক্তির উদ্‌বোধন। এই আত্মশক্তির উদ্‌বোধন কখনোই আত্মপ্রতিষ্ঠার হাতিয়ার নয়, পরীক্ষা পাসের কৌশলও নয়। গ্রন্থ থেকে, পিতামাতার কাছ থেকে, শিক্ষকের কাছ থেকে, প্রকৃতি থেকে, সমাজ পরিবেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে তাকে অন্তরের জারক রসে জারিত করতে পারলে যা পাওয়া যায় তাকেই বলা যায় শিক্ষা। পানিকর একই কথা বলেছেন, “এক, দুই, তিন…চার”— এভাবে গণনা করে কৌশলী বিদ্যায় সেগুলি উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়াটা শিক্ষা নয়, উচ্চপদে প্রতিষ্ঠা পাওয়াটা শিক্ষা নয়। তাই তিনি বলেছেন— “সব শিক্ষা একটি সার্কাস যার সাহায্যে আমরা পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই।” ‘সার্কাস’ হল বিভিন্ন জীবজন্তু, ক্লাউন, নানা ক্রীড়াদক্ষ নারী-পুরুষ এবং মায়াবী আলো ও সম্মোহনী আবহ সংগীতের সাহায্যে অপূর্ব বিভ্রম তৈরি করে দর্শকদের আনন্দদায়ক খেলা দেখানোর জন্য বৃত্তাকার ক্রীড়াভূমিতে ভ্রাম্যমান প্রদর্শনী। সার্কাস সত্যি ব্যাপার নয়, প্রহসন মাত্র। এটি সমষ্টিকে নয়, ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক আনন্দ দেয় তার কৌশলী প্রক্রিয়ায়। শিক্ষাও বর্তমান জীবনে সার্কাসের মতোই প্রহসন মাত্র, ব্যক্তিকে ‘পাস’-এর ‘পরীক্ষা’য় তাৎক্ষণিক আনন্দ দেয়। এই শিক্ষা সমষ্টির কল্যাণ করে না, ‘প্রকৃত শিক্ষা’র দীর্ঘস্থায়ী আনন্দ দেয় না। তাই সার্কাস ও বর্তমান শিক্ষা—দুটিই সমান, দুটিই ‘ধোঁকা’। তাই কবি কবিতার শেষে বলেছেন : “জ্ঞান কোথায় গেল? সে যেখানে গেছে, সেটা ধোঁকা।”

৭। অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে যে-কোনাে দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x২ = ১০

৭.১ ‘শুনছি অচলায়তনে কারা সব লড়াই করতে এসেছে।’- শিক্ষায়তন কীভাবে অচলায়তনে পরিণত হয়েছিল ? সেখানে কারা, কেন লড়াই করতে এসেছিল ? ৩+১+১

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে আপাতভাবে শিক্ষায়তন হলেও শাস্ত্র, আচার-বিচার আর কুসংস্কারে নিমজ্জিত সেই আয়তন শেষ অবধি অচলায়তনেই পরিণত হয়। এই অচলায়তনে পাথরকে সত্য বলে মানা হয়, পাথরে ঘাস জন্মানো হয় নিন্দিত। কুলদত্তের ক্রিয়াসংগ্রহ, ভরদ্বাজ মিশ্রের প্রয়োগপ্রজ্ঞপ্তি আর জ্বলনানন্তের আধিকর্মিক বর্ষায়ণে অচলায়তন পথের সন্ধান খোঁজে। আচার্য এর ব্যাখ্যায় বলেছেন—“এখানকার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এখানকারই সমস্ত শাস্ত্রের ভিতর থেকে পাওয়া যায়….”। মুক্ত জীবনের বার্তাবাহক পঞ্চককে অচলায়তনে ‘দুর্লক্ষণ’ বলে চিহ্নিত করা হয়। বালক সুভদ্র কৌতূহলের বশে আয়তনের উত্তর দিকের জানলা খুলে দিলে তা ভয়ংকর পাপ হিসেবে বিবেচনা করে সকলেই তাকে প্রায়শ্চিত্ত করানোর জন্য ব্যগ্র হয়ে ওঠে। উপাধ্যায় যখন বলেন “তুচ্ছ মানুষের প্রাণ আজ আছে কাল নেই, কিন্তু সনাতন ধর্মবিধি তো চিরকালের।”— তখন মানবতার ওপরে শাস্ত্রকে স্থাপন করা হয়। আর শিক্ষালয়ের অচলায়তনে পরিণত হওয়াও নিশ্চিত হয়ে যায়।

দাদাঠাকুরের নেতৃত্বে ঘৃনকেরা অচলায়তনে লড়াই করতে এসেছিল। আপাতভাবে চণ্ডকের হত্যা এবং দশজন ঘৃনককে কালঝণ্টি দেবীর কাছে বলি দেওয়ার জন্য ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য শোধ নেওয়া তাদের উদ্দেশ্য হলেও, আসলে তারা এসেছিল অচলায়তনের পাপের প্রাচীরকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে।

৭.২ “আমি তার কান্না আমার বুকের মধ্যে করে এনেছি।”– বক্তা কে ? কোন প্রসঙ্গে, কাকে উদ্দেশ্য করে বক্তা এ কথা বলেছেন ? এই বক্তব্যের মধ্যে বক্তার চরিত্রের কোন্ দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে ? ১+২+২

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে উদ্ধৃত সংলাপের বক্তা হলেন আচার্য অদীনপুণ্য।

সুভদ্রের মর্ম নিঙড়ানাে চোখের জলের প্রসঙ্গে পঞ্চককে উদ্দেশ্য করে বক্তা একথা বলেছেন।

গুরু মুক্তিসাধনার জন্য যে আয়তনের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাকে সংস্কারশাসিত অচলায়তনে পরিণত করার অন্যতম হােতা স্বয়ং আচার্য। শাস্ত্রনির্ভর জীবনবিমুখ ধর্মাদর্শের প্রতিষ্ঠা ও তার অনুবর্তনে অদীনপুণ্য ছিলেন উপাধ্যায় বা মহাপঞ্চকের মতাে একনিষ্ঠ। অমিতায়ুধারণী মন্ত্র, বজ্রশুদ্ধিব্রত, অষ্টাঙ্গশুদ্ধি উপবাস যেমন সেখানে ছিল, তেমনি ছিল মহাতামস ব্রতের মতাে এক মৃত্যুশীতল করুণ ব্রতও। বালক সুভদ্রের আয়তনের উত্তরের জানালা খােলার একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত তাকে দিয়ে মহাতামস ব্রত করানাে, কিন্তু আচার্য চান এই প্রাণঘাতী আচার থেকে তাকে নিবৃত্ত করতে। তাঁর এই চেষ্টা সুকোমল চিত্তবৃত্তির পরিচায়ক। সুভদ্রের প্রতি এই মানবিক সংবেদনশীলতা মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক। কিন্তু অচলায়তনের একজন আচার্য হিসেবে দেখলে সেটা তাঁর নিজেকে নতুন করে চেনবার চেষ্টা। সুভদ্রের উদ্গত কান্নাকে বুকের মধ্যে করে তিনি আয়তন ছেড়েছেন, আশ্রয় নিয়েছেন দীনহীন দর্ভক পল্লীতে। যে মন্ত্রের শাসনকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা এক ছােট্ট শিশুর মনকে কীভাবে চেপে বসেছে তাই দেখে তিনি শিউরে উঠেছেন। মন্ত্রতন্ত্রের প্রাণরােধকারী বজ্রমুষ্টি আর অভ্যাসের নিরলস চক্রাবর্তন থেকে তিনি তাই বেরিয়ে এসেছেন উদার মানবিকতার আলােকময় পথে।

৭.৩ “উনি আমাদের সব দলের শতদল পদ্ম” এখানে কাকে ‘শতদল পদ্ম’ বলা হয়েছে ? কেন তিনি শতদল পদ্ম ? ১+৪

উত্তরঃ ‘উনি’ হলেন নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু’ নাটকের যুনকদের একান্ত প্রাণের মানুষ দাদাঠাকুর।

দাদাঠাকুর সব গােষ্ঠীর, সব সম্প্রদায়ের, সব দলের, সব মানুষের। তাই অচলায়তনে তিনি গুরু, যুনকদের তিনি দাদাঠাকুর, দর্ভকপল্লির মানুষজনের গোঁসাই। তাঁর উপস্থিতি সর্বত্র। তাঁর প্রেমপ্রীতি ভালােবাসা সর্বজনে। তিনি কারও বিশেষ নন, তিনি সর্বজনীন। তাই প্রথম যুনকের কথা হল ‘দাদাঠাকুরকে নিয়ে আবার দল কীসের ?’ অর্থাৎ তিনি কোনাে বিশেষ দলভুক্ত নন। সে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে তিনি। সব গােষ্ঠী সব সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের তিনি, সেজন্য শতদলভুক্ত। ‘শত’, ‘সহস্র’ এগুলি বহুত্বজ্ঞাপক শব্দ। সেই অর্থে সর্বজনের। আবার পদ্মের অপর নাম শতদল। শত পাপড়িবিশিষ্ট। ‘দল’ অর্থে পাপড়ি। পদ্মের সৌরভ বা সুগন্ধ শত পাপড়ির মধ্যেই আবদ্ধ থাকে না, তা ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। তা আমােদিত করে পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে। দাদাঠাকুরের প্রেমপ্রীতি, ভালােবাসা, তাঁর প্রাণের উদারতা, মুক্ত প্রাণের ব্যাপ্তি সর্বব্যাপী, জগন্ময়। তা পদ্মের সৌরভের সঙ্গে তুলনীয় ।

৭.৪ ‘গুরু’ নাটকে মােট ক’টি সংগীত ‘রয়েছে ? নাটকটিতে সংগীতের ভূমিকা আলােচনা করাে। ১+ 8

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে মােট সাতটি সংগীত বা গান রয়েছে।

গুরু নাটকের সাতটি গানের মধ্যে ছটি গান অচলায়তনেও ছিল, একটি গান নতুন সংযােজিত হয়েছে। গানের প্রয়ােগেও কিছু বদল ঘটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। “তুমি ডাক দিয়েছ কোন্ সকালে” গানটিকে রবীন্দ্রনাথ গুরু নাটকে চারবারে ভেঙে ব্যবহার করেছেন, যেটি অচলায়তনে দুবারে ব্যবহৃত হয়েছিল। গুরুর আগমনে আত্মমগ্নভাবে পঞ্চক গেয়েছে তার এই আহ্বান গীত। পঞকের দ্বিতীয় গান “ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে”-তে আকাশের ঘননীল মেঘের মধ্যে পঞক শুনেছে। উদার মুক্তির ডাক। আবার “এ পথ গেছে কোত্থানে গাে কোত্থানে” গানে পঞ্চক তার মুক্তির পথের সন্ধান করেছে। পাহাড়ের পারে, সাগরের ধারে, ‘দুরাশার দিকপানে’।

যূনকদের “আমরা চাষ করি আনন্দে” আর “সব কাজে হাত লাগাই মোরা” -গান দুটিতে এই যৌথ কর্মমুখর জীবনের আনন্দের কথাই প্রকাশ পায়। “ও অকূলের কুল, ও অগতির গতি” দর্ভকদের এই গানটিতে প্রকাশ পেয়েছে অকৃত্রিম ঈশ্বরভক্তি।

গুরু নাটকের শেষে “ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়” গানটি অচলায়তন নাটকে ছিল না। যে গুরুর নেতৃত্বে অচলায়তনে দীর্ঘকাল ধরে সযত্নে লালিত যাবতীয় প্রথাসর্বস্বতা বা সংস্কার ভেঙে পড়েছে, তাকে কেন্দ্র করেই এই গানটি গাওয়া হয়েছে। এইভাবে ঘটনার আবহ, চরিত্রের তাৎপর্য এবং নাট্যব্যঞ্জনাকে সার্থক করে তুলতে ‘গুরু’ নাটকে গান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।

৮। অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে যে-কোনাে
দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও :৫ x ২ = ১০

৮.১ বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন কোনটি ? এটি কে, কোথা থেকে আবিষ্কার করেন ? বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এই গ্রন্থের গুরুত্ব কোথায় ? ১+১+১+২

উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হলো ‘চর্যাপদ’।

মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে ১৯০৭ সালে পুঁথিটি আবিষ্কার করেন।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এই গ্রন্থের গুরুত্বঃ

(১) বাংলা ভাষার প্রাচীন রূপ সম্বন্ধে জানা
যায় ‘চর্যাপদ’ থেকে।

(২) ‘চর্যাপদ’ থেকেই কবিতার মধ্যে যে অন্ত্যমিল রয়েছে তা জনা যায়।

(৩) বাংলা কবিতার ছন্দের ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গেলে ‘চর্যাপদ’ এর গুরুত্ব অপরিসীম।

(৪) বহু বাংলা শব্দের বিবর্তনের ধারা খুঁজে পেতে এই গ্রন্থের গুরুত্ব অপরিহার্য।

(৫) তৎকালীন সমাজ জীবনের ইতিহাস জানা যায় চর্যাপদ থেকে।

(৬) বাংলা ভাষার ইতিহাস, বাঙালির ইতিহাস, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিচয়, বাঙালির ধর্মচিন্তা, খাদ্য, পেশা, জীবনযাত্রা ইত্যাদি বিষয়ের এক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে ‘চর্যাপদ’ গ্রন্থটির গুরুত্ব অপরিসীম।

৮.২ চণ্ডীমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি কে ? তার কাব্যপ্রতিভা আলােচনা করাে। ১+৪

উত্তরঃ চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারার সর্বশ্রেষ্ট কবি হলেন কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তী।

কবিকঙ্কণ তাঁর কাব্যটিকে কোথাও ‘অভয়ামঙ্গল’, কোথাও ‘চণ্ডীকামঙ্গল’ আবার কোথাও ‘অম্বিকামঙ্গল’ বলেছেন। তবে, সাধারণ বাঙালির কাছে তাঁর কাব্যটি ‘কবিকঙ্কণ চণ্ডী’ নামেই অধিক পরিচিত। এই কাব্যে কবির কাব্যপ্রতিভার যে নিদর্শন পাওয়া যায় তা হল—

(১) চরিত্রসৃষ্টিতে কবি নিপুণহস্ত ছিলেন। তাঁর কাব্যের প্রতিটি চরিত্র স্বমহিমায় উজ্জ্বল। কালকেতু, ফুল্লরা, ভাড়ু দত্ত প্রভৃতি চরিত্রসমূহ কবির হাতের ছোঁয়ায় যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সমালোচকদের মতে, ব্যক্তিগত জীবনে কবি নানান উত্থান-পতনের সম্মুখীন হয়েছিলেন, তাঁর কাব্যের চরিত্রগুলি সেই অভিজ্ঞতালব্ধ জীবনদর্শনের ফলবিশেষ।

(২) তাঁর কাব্যে বিবিধ ছন্দের প্রয়োগ এবং অলংকার ব্যবহারের বৈচিত্র পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছন্দ-অলংকার প্রয়োগে কবি যে বিশেষভাবে দক্ষ ছিলেন একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় ৷

(৩) কৌতুকরস পরিবেশনে কবি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। কাব্যের নানা স্থানে কবির কৌতুকবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।

(৪) চণ্ডীমঙ্গলের প্রচলিত কাহিনি অবলম্বনে কাব্য রচনা করলেও কাহিনি-বিন্যাসে কবি স্বকীয়তা দেখিয়েছেন।

পরিশেষে বলা যায় যে, মুকুন্দ চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটি কেবল সুপাঠ্য মঙ্গলকাব্য হিসাবে নয় সমগ্র মধ্যযুগের একটি ব্যতিক্রমী কাব্য- উপন্যাসের লক্ষণ যুক্ত একটি উৎকৃষ্ট কাব্য। সেদিক থেকে বিচার করলে, মুকুন্দ চক্রবর্তী মধ্যযুগের একজন অন্যতম প্রতিভাবান কবি।

৮.৩ রবীন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থগুলির কাল অনুসারে বিভাগ করাে। প্রতি বিভাগের একটি করে কাব্যগ্রন্থের নাম লেখাে।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের কাব্য গ্রন্থগুলিকে নিম্নলিখিত পর্বে বিভক্ত করা যায় । পর্বগুলি হল–

(১) সূচনাপর্ব (১৮৭৮-৮২ খ্রি.)— এই পর্বের রচনাগুলোর মধ্যে একটি কাব্যগ্রন্থ হলো— ‘কবিকাহিনী’। এই পর্বের কাব্য কবিতায় বিহারীলাল চক্রবর্তী, অক্ষয়চন্দ্ৰ চৌধুরী প্রমুখ কবির রচনার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

(২) উন্মেষপর্ব (১৮৮২-৮৬ খ্রি.)— এই পর্বের কাব্য হল – ‘সন্ধ্যাসংগীত’। এই সময়ের কাব্যগুলিতে মাটির পৃথিবীর কথা মুখ্য উঠেছে।

(৩) ঐশ্বর্য পর্ব (১৮৯০-৯৬ খ্রি.)— এই পর্বের রচনা হল– ‘মানসী’ । ৩০-৩৫ বছর বয়সে লেখা এই কা প্রেম ও প্রকৃতির ছবি এঁকেছেন।

(৪) অন্তর্বর্তীপর্ব (১৯০০-১৯১৩ খ্রি.)— এই পর্বের একটি কাব্য গ্রন্থ হল– ‘নৈবদ্য’। – এই পর্বের কাব্য গুলিতে রবীন্দ্রনাথ নিসর্গ, প্রেম, সৌন্দর্য ও জীবনদেবতার ভাবনায় ভাবিত হয়েছেন।

(৫) গীতাঞ্জলিপর্ব (১৯১০-১৯১৫ খ্রি.)— এই পর্বের একটি রচনা হল– ‘গীতাঞ্জলি’ । এই পর্বে কবি সম্পুর্নভাবে তাঁর অন্তর্দেবতাকে প্রিয়তম বন্ধুরূপে বিভিন্ন মানবরসের মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করেছেন ।

(৬) বলাকা পর্ব (১৯১৬-১৯২৯ খ্রি.)— এই
পর্বের একটি রচনা হল– ‘বলাকা’ ৷ এই কাব্যগুলিতে রবীন্দ্রনাথের প্রৌঢ় জীবনের দার্শনিক দিকটি ধরা পড়েছে ।

(৭) শেষপর্ব বা অন্ত্যপর্ব (১৯২৯-১৯৪১ খ্রি.)— এটি রবীন্দ্র কাব্য গ্রন্থের শেষ পর্ব। এই পর্বের একটি কাব্য গ্রন্থ হল– ‘নবজাতক’। এ পর্বে তাঁর প্রজ্ঞা ও বাস্তব চেতনার মধ্যে এক ঐক্যবোধ গড়ে উঠেছে। মৃত্যু সম্পর্কে তাঁর বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন

৮.৪ ছড়ার বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে। যে-কোনাে দুই ধরনের ছড়ার উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ বাংলা লোকসংস্কৃতির একটি বিশেষ অঙ্গ হল ছড়া। ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ অনুসারে ছড়া হল লৌকিক বিষয় নিয়ে রচিত গ্রাম্য কবিতা। ছড়াগুলি সাধারণত মৌখিক আবৃত্তির জন্য মুখে মুখে রচিত হয়। অনেক সময় সুর করেও ছড়া আবৃত্তি করা হয়।

ছড়ার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

(ক) ছড়া মুলত শিশুতোষ্য রচনা। কোনো বার্তা বা মনোভাব প্রকাশের জন্য ছড়া রচিত হয় না। শিশুদের ভোলানোর জন্য বা ঘুম পাড়ানোর জন্য ছড়ার জন্ম। অবশ্য মেয়েলি ছড়াগুলি একান্তভাবেই মেয়েদের সম্পদ।

(খ) শিশুর প্রলাপের মতো ছড়াগুলিও অনেকসময় অর্থহীন হয়। আসলে শিশুমনে অর্থের বিশেষ কোনো ভুমিকা নেই। তাই ছড়া রচনার সময় অর্থের দিকটি খেয়াল না রাখলেও চলে।

(গ) ছড়াতে পরস্পর সম্পর্কহীন কতকগুলি
ছবির সমাহার থাকে। শিশুর সদাচঞ্চল মনের মতো ছড়ার কথাগুলি এলোমেলো হয়।

(ঘ) ছড়াগুলি মুলত মৌখিক আবৃত্তি করার জন্য। সেজন্য এমন শব্দ ছড়াতে প্রয়োগ করা হয় যা শুনতে ভালো লাগে এবং সহজে মনে থাকে।

পরিশেষে বলা যায়, শিশুমনের প্রকৃতি সকল যুগে সকল দেশে একইরকমের। তাই সব ভাষাতেই ছড়ার ভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ। বাংলা ভাষার ছড়াগুলিও বাংলা লোকসাহিত্যের বিশেষ সম্পদ।

৯৷ অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে যে-কোনাে
একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :৫x১ = ৫

৯.১ ‘ভারতবর্ষ চার ভাষাবংশের দেশ’– উদ্ধৃতি অনুসারে চার ভাষাবংশের পরিচয় দাও।

উত্তরঃ ভারতে প্রচলিত চারটি ভাষাবংশের নাম ইন্দো ইউরােপীয়, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় এবং ভােট-চিনীয়।

ইন্দো-ইউরােপীয়ঃ ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাবংশ ভারত, ইরান এবং ইউরােপের অধিকাংশ ভাষার আদি উৎস। এই ভাষাবংশের আর্য বা ইন্দো-ইরানীয় শাখাটি দুটি উপশাখায় বিভক্ত-ইরানীয় আর্য এবং ভারতীয় আর্য। ভারতীয় আর্যভাষা ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে তিনটি স্তরে বিবর্তিত হয়ে অনেকগুলি আধুনিক ভারতীয় আর্য ভাষার জন্ম দিয়েছে।

অস্ট্রিকঃ অস্ট্রিক ভাষাবংশের যে একাধিক শাখা (কোল বা মুন্ডা, খাসি-নিকোবরি এবং মােখমের) রয়েছে, সেগুলির মধ্যে কোল বা মুন্ডা শাখাটিই ভারতবর্ষে প্রচলিত। কোল বা মুন্ডার দুটি ভাগের মধ্যে শবর, কোরকু, খরিয়া প্রভৃতি পূর্বী শাখার অন্তর্গত এবং সাঁওতালি, মুন্ডারি, হাে প্রভৃতি ভাষা পশ্চিমা শাখার অন্তর্গত।

দ্রাবিড়ঃ ভারতবর্ষের দক্ষিণাংশে প্রচলিত মালয়ালম, তামিল, তেলুগু প্রভৃতি ভাষা দ্রাবিড় ভাষাবংশের অন্তর্গত। অন্ধ্রপ্রদেশে তেলুগু, তামিলনাড়ু; পণ্ডিচেরি ও সিংহলে তামিল, কেরালায় মালয়ালম এবং কর্ণাটকে কন্নড় ভাষা প্রচলিত।

ভােট-চিনীয়ঃ এই ভাষাবংশের প্রধান শাখা তিনটিচিনীয়, থাই এবং তিব্বতি বর্মি বা ভােটবর্মি। চিনীয় ভাষার প্রচলন চিনদেশে এবং থাই শাখাটির শ্যাম দেশে। তিব্বতি বর্মি বা ভােট-বর্মি শাখার বেশ কয়েকটি উপশাখা (বােড়াে, নাগা, লুসাই, লেপচা প্রভৃতি) ভারতবর্ষে প্রচলিত।

৯.২ বাংলা লিপির উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে
আলােচনা করাে।

উত্তরঃ বাংলা লিপির উদ্ভব নিয়ে পণ্ডিতমহলে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। বিতর্কের বিষয় হলো দুটি— (১) বাংলা লিপি কোন লিপি থেকে এসেছে আর (২) কোন সময়ে বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছে।

সিন্ধু লিপি ছাড়া প্রাচীন ভারতের প্রধান দুটি লিপি হল ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী। সিন্ধু লিপির এখনো পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি তাই সিন্ধু লিপি থেকে বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছে একথা বলা যাবে না। খরোষ্ঠী লিপির সঙ্গে বাংলা লিপির কোনো সাদৃশ্য নেই। তাই একটা বিষয়ে পণ্ডিতগণ একমত যে বাংলা লিপি এসেছে ব্রাহ্মী লিপি থেকে। ব্রাহ্মী থেকে বাংলা লিপির ক্রমবিকাশের ইতিহাসটি এইরকম—

খ্রীঃ পূঃ অষ্টম-সপ্তম শতকে ব্রাহ্মী লিপির উদ্ভব হয়েছিল। খ্রীঃ পূঃ দ্বিতীয়-প্রথম শতকে ব্রাহ্মী লিপির উত্তর ভারতীয় লিপিরূপ থেকে জন্ম নেয় কুষাণ লিপি। কুষাণ লিপি থেকে আসে গুপ্ত লিপি(চতুর্থ- পঞ্চম শতক)। গুপ্তলিপির পুর্বী শাখার পুর্ব বিভাগ থেকে জন্ম নেয় সিদ্ধমাতৃকা লিপি(ষষ্ঠ শতক)। সপ্তম শতকে আসে কুটিল লিপি। আর কুটিল লিপি থেকেই বাংলা লিপির জন্ম হয়।

ঠিক কোন সময়ে বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছিল তা আজ আর জানা সম্ভব নয়, তবে অষ্টম শতক থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে কোনো এক সময়ে বাংলা লিপির জন্ম হয়েছিল বলে অধিকাংশ পণ্ডিত মত পোষণ করেছেন।

৯.৩ কিউনিফর্ম বা কীলক লিপির সবচেয়ে প্রাচীন নমুনাটি কোথায় পাওয়া গেছে ? এই লিপির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। অলচিকি লিপির উদ্ভাবক কে ? ১+৩+১

উত্তরঃ কিউনিফর্ম বা কীলক লিপির প্রাচীন নমুনাটি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের পুরনো এবং এটি পাওয়া গেছে উরুক শহরে। এই লিপির নামকরণ করেন লিপি বিশারদ টমাস হাইড।

লিপি বিশারদ জোহানস ফ্রেডরিকের মতে, পৃথিবীর সাতটি প্রাচীন সভ্যতায় লিপির ব্যাবহার শুরু হয়েছিল। সেগুলির মধ্যে সুমেরু সভ্যতায় প্রচলিত কিউনিফর্ম লিপি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পৃথিবীর প্রচীনতম লিপি হল কীলক লিপি বা কিউনিফর্ম। সুমেরু সভ্যতার মানুষেরা এই লিপি উদ্ভাবন করেন। কিউনিফর্ম কথাটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ কিউনিয়াস (পেরেক) আর ফরমা (আকৃতি) থেকে । নরম মাটির চাকতিতে লিখে সেটি আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা হত। শুকোনোর পর খোদিত লেখাটি পেরেকের মতো খোঁচা খোঁচা দেখাতো, যার জন্য এই লিপির নাম কিউনিফর্ম বা কীলক লিপি৷

মেসোপটেমিয়ার মানুষ মনে করতেন ‘নেবো’ নামের দেবতাই এই লিপির আবিষ্কর্তা। আনুমানিক আড়াই হাজার বছর আগে এই লিপির ব্যাবহার বন্ধ হয়ে যায়। যাইহোক, কিউনিফর্ম লিপিতে খোদিত বিভিন্ন নমুনা থেকে প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতা সম্পর্কে বহু তথ্য আজ জানা সম্ভব হয়েছে।

পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মূ (৫ মে, ১৯০৫, ডহরাডিহি, ময়ূরভঞ্জ, ওড়িশা– ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২) একজন ভাষাতত্ত্ববিদ, লেখক, নাট্যকার ও সাঁওতালি ভাষায় ব্যবহৃত “অলচিকি” লিপির উদ্ভাবক ছিলেন।

CLASS 11 BENGALI QUESTION PAPER
2014 2015 2016 2017 2018
2019 2020 2022 2023 2024

This Post Has 2 Comments

Leave a Reply