WB Madhyamik Geography Question Paper 2020 /মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্নপত্র ২০২০

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

2020 Geography Question Paper with answers for Madhyamik students of West Bengal Board of Secondary Education. Question and Answers of the question paper are given below.
মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধীন মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ২০২০ সালের উত্তরসহ ভূগোল বিষয়ের প্রশ্নপত্র।

2020
GEOGRAPHY
Time-Three Hours Fifteen Minutes
(First FIFTEEN minutes for reading the question paper only)

Full Marks – 90
(For Regular and Sightless Regular Candidates)
Full Marks – 100
(For External and Sightless External Candidates)

Special credit will be given for answers which are brief and to the point. Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting.

[‘ক’ বিভাগ থেকে ‘চ’বিভাগ পর্যন্ত প্রদত্ত প্রশ্ন নিয়মিত ও বহিরাগত সব পরীক্ষার্থীদের জন্য এবং ছ’ বিভাগে প্রদত্ত প্রশ্ন শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য]

[‘ক’ বিভাগে সকল প্রশ্ন আবশ্যিক, অন্য বিভাগে বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়। ‘চ’ বিভাগে কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীরা বিকল্প প্রশ্নের নির্দেশ অনুযায়ী উত্তর লিখবে। অন্য সকলে মানচিত্র চিহ্নিত করবে।]


মাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের মক্ টেস্ট

মাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র


বিভাগ ‘ক’

১। বিকল্পগুলির থেকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখাে। ১×১৪=১৪

১.১ যে প্রক্রিয়ায় অভিকর্ষের টানে উচ্চভূমির ঢাল বরাবর মাটি ও শিলাস্তর নেমে আসে তাকে বলে—
(ক) আবহবিকার (খ) পর্যায়ন প্রক্রিয়া
(গ) অন্তর্জাত প্রক্রিয়া (ঘ) পুঞ্জয় প্রক্রিয়া

উত্তরঃ পুঞ্জয় প্রক্রিয়া

১.২ মরু সমপ্ৰায়ভূমিতে কঠিন শিলাগঠিত কিছু অনুচ্চ পাহাড় অবশিষ্টাংশ ভূমিরূপ হিসাবে থেকে যায়—
(ক) ইয়ার্দাঙ (খ) জুইগেন (গ) বালিয়াড়ি
(ঘ) ইনসেলবার্জ

উত্তরঃ (ঘ) ইনসেলবার্জ

১.৩ অশ্ব অক্ষাংশ অবস্থিত—
(ক) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়
(খ) উপক্ৰান্তীয় উচ্চচাপ বলয়
(গ) মেরু বৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়
(ঘ) মেরু উচ্চচাপ বলয়

উত্তরঃ (খ) উপক্ৰান্তীয় উচ্চচাপ বলয়

১.৪ দিনরাতের তাপমাত্রার পার্থক্য সবচেয়ে বেশি দেখা যায়—
(ক) নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে
(খ) উষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চলে
(গ) ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে
(ঘ) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে

উত্তরঃ (খ) উষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চলে


👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈


১.৫ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি নির্ভর করে—
(ক) বায়ুপ্রবাহ
(খ) পৃথিবীর পরিক্রমণ
(গ) মগ্নচড়া
(ঘ) সব কটিই প্রযােজ্য

উত্তরঃ (ঘ) সব কটিই প্রযােজ্য

১.৬ কোনাে স্থানের জোয়ার ও ভাটার প্রকৃত ব্যবধান প্রায়—
(ক) দু-ঘণ্টার বেশি (খ) ছয় ঘণ্টার বেশি
(গ) চার ঘণ্টার বেশি (ঘ) আট ঘণ্টার বেশি

উত্তরঃ (খ) ছয় ঘণ্টার বেশি

১.৭ যানবাহনের কার্বনকণা নির্গমন রােধের জন্য ব্যবহার করা হয়—
(ক) পরিস্রাবক ঘূর্ণায়ণ
(খ) তাড়িতিক অধঃক্ষেপক
(গ) স্ক্রাবার
(ঘ) আস্তরণযুক্ত অ্যালুমিনা

উত্তরঃ (গ) স্ক্রাবার

১.৮ ভারতের প্রায় মাঝখান দিয়ে যে অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে তা হ’ল—
(ক) নিরক্ষরেখা (খ) মকরক্রান্তিরেখা
(গ) মূল মধ্যরেখা (ঘ) কর্কটক্রান্তিরেখা

উত্তরঃ (ঘ) কর্কটক্রান্তিরেখা

১.৯ গােদাবরী ও কৃষা নদীর বদ্বীপের মাঝে অবস্থিত হ্রদের নাম হ’ল—
(ক) কোলেরু (খ) পুলিকট (গ) চিল্কা
(ঘ) ভেম্বনাদ

উত্তরঃ (ক) কোলেরু

১.১০ ভারতের সর্বাধিক জলসেচ করা হয় যে পদ্ধতিতে, সেটি হ’ল—
(ক) কূপ ও নলকূপ (খ) জলাশয় (গ) খাল
(ঘ) ফোয়ারা

উত্তরঃ (ক) কূপ ও নলকূপ

১.১১ ভারতে পশ্চিমীঝঞ্জা দেখা যায়—
(ক) গ্রীষ্মকালে (খ) শরৎকালে
(গ) বর্ষাকালে (ঘ) শীতকালে

উত্তরঃ (ঘ) শীতকালে

১.১২ সামুদ্রিক লবণাক্ত বাতাস প্রয়ােজন হয়—
(ক) ইক্ষু চাষে (খ) চা চাষে (গ) পাট চাষে
(ঘ) কফি চাষে

উত্তরঃ (ক) ইক্ষু চাষে

১.১৩ পশ্চিমবঙ্গে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পকেন্দ্র অবস্থিত—
(ক) জুনপুটে (খ) কোলকাতায়
(গ) শঙ্করপুরে (ঘ) হলদিয়ায়

উত্তরঃ (ঘ) হলদিয়ায়

১.১৪ ট্রপােগ্রাফিক্যাল মানচিত্রে সমােন্নতি রেখা অঙ্কন করা হয় যে রং দিয়ে তা হল—
(ক) বাদামি (খ) কালাে (গ) লাল (ঘ) নীল

উত্তরঃ (ক) বাদামি

বিভাগ – ‘খ’

২। ২.১ নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে ‘শু এবং অশুদ্ধ হলে পাশে ‘অ’ লেখাে (যে কোনাে ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১x৬=৬

২.১.১ ভাগিরথী এবং অলকানন্দা নদীর মিলনস্থল হ’ল দেবপ্রয়াগ।

উত্তরঃ ‘শু’

২.১.২ মিস্ট্রাল একটি উষ্ম স্থানীয় বায়ু যা ফ্রান্সের রােন নদী উপত্যকায় প্রবাহিত হয়।

উত্তরঃ ‘অ’

২.১.৩ এল নিনাের বছরগুলিতে ভারতে বন্যার সৃষ্টি হয়।

উত্তরঃ ‘শু’

২.১.৪ সূর্য, চাঁদ এবং পৃথিবীর সরলরৈখিক অবস্থানকে সিজিগি বলে।

উত্তরঃ ‘শু’

২.১.৫ পুনর্নবীকরণের ফলে পুরানাে খবরের কাগজকে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে কাগজ উৎপাদন করা যায়।

উত্তরঃ ‘শু’

২.১.৬ শিবালিক পর্বতের পাদদেশে নুড়ি, পলি ও বালি গঠিত মৃত্তিকাকে বেট বলে।

উত্তরঃ ‘অ’

২.১.৭ উপগ্রহ চিত্র ব্যাখার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার আবশ্যিক।

উত্তরঃ ‘শু’

২.২ উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করাে (যে কোনাে ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১x৬=৬

২.২.১ আবহবিকার ও ক্ষয়কার্যের যৌথ কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিভাগের পরিবর্তন করার প্রক্রিয়াকে ________ বলা হয়।

উত্তরঃ নগ্নীভবন।

২.২.২ মরুঅঞ্চলে বায়ুর ________ কার্যের ফলে মরুদ্যান সৃষ্টি হয়।

উত্তরঃ অপসারণ।

২.২.৩ বায়ুচাপের ঢাল বৃদ্ধি পেলে, বায়ুর গতিবেগ _________ পায়।

উত্তরঃ বৃদ্ধি।

২.২.৪ সমুদ্রের শীতল জল মেরু অঞ্চল থেকে ________ স্রোত রূপে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।

উত্তরঃ অন্তঃ।

২.২.৫ ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় সড়ক পথ হল NH ______.

উত্তরঃ 7 / 34

২.২.৬ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ________এ অবস্থিত।

উত্তরঃ ব্যাঙ্গালুরু।

২.২.৭ বৈদ্যুতিন বর্জকে সংক্ষেপে বলা হয় _________ বর্জ্য।

উত্তরঃ E

৩. একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও (যে কোনাে ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১৬=৬

২.৩.১ পৃথিবীর বৃহত্তম উপত্যকা হিমবাহের নাম কী ?

উত্তরঃ আলাস্কার হুবার্ড।

২.৩.২ ভূপৃষ্ঠের কোন অঞ্চলের উপর বায়ুমণ্ডলে প্রথম ওজোন গহ্বর আবিষ্কৃত হয়েছে ?

উত্তরঃ আন্টার্টিকায়।

২.৩.৩ পশ্চিমঘাট পর্বতমালার দক্ষিণতম গিরিপথটির নাম কী ?

উত্তরঃ পলঘাট।

২.৩.৪ কেরালার উপকূলের উপহ্রদগুলিকে স্থানীয় ভাষায় কি বলে ?

উত্তরঃ কয়াল।

২.৩.৫ ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাতটির নাম লেখাে।

উত্তরঃ কুঞ্চিকল / যোগ।

২.৩.৬ ভারতের কোন শহরে প্রথম পাতাল রেলের যাত্রা শুরু হয় ?

উত্তরঃ কলকাতা।

২.৩.৭ ভারতের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য কোনটি ?

উত্তরঃ উত্তরপ্রদেশ।

২.৩.৮ উপগ্রহ চিত্র কোন রূপে প্রকাশ করা হয় ?

উত্তরঃ সেন্সর ব্যান্ড, পিক্সেল, অ্যানোটেশন লাইন, ছদ্ম রঙ বা FCC (False Colour Composite).

২.৪ বামদিকের সাথে ডানদিকের গুলি মিলিয়ে লেখাে : ১x৪=৪

বামদিক ডানদিক
২.৪.১ রত্না ১. পাইন
২.৪.২ সরলবর্গীয় অরণ্য ২. মার্মাগাঁও
২.৪.৩ রেলের বগি নির্মাণ কেন্দ্র ৩. উচ্চ ফলনশীল ধান বীজ
২.৪.৪ লৌহ আকরিক ৪. পেরাম্বুর
রপ্তানীকারক বন্দর

উত্তরঃ
২.৪.১ — ৩
২.৪.২ — ১
২.৪.৩ — ৪
২.৪.৪ — ২

বিভাগ – ‘গ’

৩। নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) : ২x৩=১২

৩.১ প্রপাতকুপ কাকে বলে ?

উত্তরঃ জলপ্রপাতের জল প্রবল বেগে যেখানে পড়ে সেখানে বিশালাকার গহ্বরের মত সৃষ্টি হয়, একে প্রপাত কূপ (Plunge Pool) বলে।

অথবা,

লোয়েশের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ লোয়েশ এক প্রকার সুক্ষ হলুদ বর্ণের বায়ু বাহিত ধুলো। সাধারনত মরুভুমি হতে অতি সুক্ষ বালুকরাশি বায়ু দ্বারা বাহিত হয়ে বহুদুরে অবস্থিত কোন নিম্নভুমিতে সঞ্চিত হলে তাকে লোয়েশ বলে।

৩.২ আপেক্ষিক আর্দ্রতা কী ?

উত্তরঃ আপেক্ষিক আর্দ্রতা হলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে কতটুকু জলীয় বাষ্প আছে এবং একই তাপমাত্রায় ঐ বায়ু সম্ভাব্য (সর্বোচ্চ) কতটুকু জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে তার অনুপাত।

অথবা,

পেরিগি জোয়ার বলতে কি বােঝাে ?

উত্তরঃ উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণের সময় চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে (3 লক্ষ 56 হাজার কিমি) থাকে, চাদের সেই অবস্থানকে পেরিজি বা অনুসুর অবস্থান বলে (কাছে থাকার জন্য এই সময় চাঁদকে প্রায় 14 শতাংশ বড়াে এবং প্রায় 25 গুণ উজ্জ্বল দেখায়)। এই সময়ে সৃষ্ট জোয়ারকে পেরিজি বা অনুভূ জোয়ার বলে।

৩.৩ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভরাটকরণ কাকে বলে ?

উত্তরঃ ফাঁকা জমিতে গর্ত খুঁড়ে বর্জ্য পদার্থ ভরাট করাকে বর্জ্য ভরাটকরণ বলে। এতে বর্জ্য পদার্থ ধীরে ধীরে বিশ্লেষিত হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায়।

অথবা,

পৌরসভার বর্জ্যের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ শহরের গৃহস্থালি, হাসপাতাল প্রভৃতি উৎস থেকে আগত সমস্ত কঠিন বর্জ্য (বাজার থেকে আনা পলিপ্যাক, কাগজের ঠোঙা, পলিব্যাগ, গাছের পাতা, খড়, শাকসবজির অবশিষ্টাংশ) যেগুলি গারবেজ হিসাবে বেশি পরিচিত তাদের পুরসভার বর্জ্য বলে।

৩.৪ ভারতের মরু উদ্ভিদের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখাে।

উত্তরঃ (১) মরুজ উদ্ভিদ সাধারণত আকারে ছোট ও ঝোপযুক্ত হয়। (২) পাতা রূপান্তরিত হতে কন্টকে পরিণত হতে দেখা যায়।

অথবা,

দুন বলতে কি বােঝাে ?

উত্তরঃ ‘দুন’ কথার অর্থ হলো ‘পার্বত্য অঞ্চলের উপত্যকা’। সংকীর্ণ পর্বতের মাঝে অবস্থিত নিম্নস্থানকে বলা হয় দুন। যেমন– দেরাদুন ।

৩.৫ অনুসারী শিল্প কাকে বলে ?

উত্তরঃ একটি বৃহদায়তন শিল্পকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে, এই বৃহদায়তন শিল্পকে কেন্দ্রীয় শিল্প এবং এই কেন্দ্রীয় শিল্পকে ঘিরে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পগুলিকে অনুসারী শিল্প বা সহযোগী শিল্প বলা হয়।

অথবা

ভারতের প্রধান আভ্যন্তরীণ জলপথের যুক্তকারী কেন্দ্রদুটির নাম লেখাে।

উত্তরঃ

৩.৬ সেন্সর বলতে কি বােঝাে ?

উত্তরঃ পরিবেশের কোন পরিস্থিতি (শব্দ, তাপ, আলো) ইত্যাদি প্রতি সাড়া দিতে পারে। Sensor হচ্ছে এক ধরনের কনভার্টার যা পরিবেশগত কোন পরিবর্তনকে সিগন্যালে পরিণত করে।

অথবা,

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের দুটি ব্যবহার লেখাে।

উত্তরঃ ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের তিনটি ব্যবহার হল—

(১) সামরিক প্রয়োজন : ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সামরিক প্রয়োজনে।

(২) ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন বা নদীর গতিপথের পরিবর্তন বোঝার জন্য : কোনো অঞ্চলের ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন বা নদীর গতিপথের পরিবর্তন বোঝার জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ব্যবহার করা হয়

বিভাগ – ‘ঘ’

৪। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) : ৩x৪=১২

৪.১ নদীর বহন কার্যের তিনটি প্রক্রিয়া সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

উত্তরঃ নদীর বহনকার্যের প্রক্রিয়াসমূহ – নদী নিম্নলিখিত 4টি প্রক্রিয়ায় বহন কাজ করে থাকে, যেমন–

(ক) দ্রবণ (Solution) : এই প্রক্রিয়ায় বহন নদীর গতিপথে লবণ (ক্লোরাইড, সালফেট প্রভৃতি) কিংবা চুনাপাথরজাতীয় জলে দ্রবণীয় কোনো শিলাখণ্ড অবস্থান করলে জলস্রোতে ওই সকল শিলার দ্রবণ একস্থান থেকে অন্যত্র বাহিত হয়।

(খ) ভাসমান (Suspension) প্রক্রিয়ায় বহন : ক্ষুদ্রাকার ও কম ওজনের প্রস্তরখণ্ড, বালি কিংবা কাদার কণাগুলি নদীর স্রোতে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে এক স্থান থেকে অন্যত্র ভেসে বাহিত হয়।

(গ) লম্ফদান (Saltation) প্রক্রিয়ায় বহন : নদীর স্রোতের টানে কিছু মাঝারি আকৃতির শিলাখণ্ড নদীখাতের সঙ্গে ক্রমান্বয়ে ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে অন্যত্র বাহিত হয়। নদীখাতে এই শিলাখণ্ডগুলি 30- 120 সেমি পর্যন্ত লাফিয়ে স্থানান্তরিত হতে পারে।

(ঘ) আকর্ষণ (Traction) প্রক্রিয়ায় বহন : নদীগর্ভে পতিত বিভিন্ন রকম ভারী প্রস্তরখণ্ড স্রোতের টানে নদীর তলদেশ দিয়ে বোঝা (Bed-Load) হিসেবে গড়িয়ে গড়িয়ে অন্যত্র বাহিত হয়।

অথবা, জেট বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে ভারতীয় মৌসুমিবায়ুর সম্পর্ক উল্লেখ করাে।

উত্তরঃ ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সঠিক সময়ে আগমন ও সক্রিয়তা বহুলাংশে এই ক্রান্তীয় পুবালি জেটের অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল। যদি এই ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে বেশি উত্তরে সরে যায়, তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিম। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহে ছেদ (Break of Monsoon) ঘটে। অর্থাৎ ভারতে দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ফলে বৃষ্টিহীন ও খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া, বর্ষাকালে ভারতের ওপর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি এবং সেগুলির তীব্রতার হ্রাসবৃদ্ধি, মৌসুমি বায়ুর স্থায়িত্ব ও তীব্রতা, বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত, ঋতুপরিবর্তন প্রভৃতি এই জেট বায়ুর অবস্থান ও গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।

৪.২ প্রকৃতি অনুসারে বর্জ্যের উদাহরণসহ শ্রেণিবিভাগ করাে।

উত্তরঃ বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste) : বিভিন্ন কারণে পরিবেশে নানা প্রকারের বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে । বর্জ্য পদার্থ তিন প্রকার, যেমন— (ক) কঠিন বর্জ্য, (খ) তরল বর্জ্য ও (গ) গ্যাসীয় বর্জ্য ।

(ক) কঠিন বর্জ্য (Solid waste) : অব্যবহার্য ও অপ্রয়োজনীয় কঠিন পদার্থগুলিকে কঠিন বর্জ্য বলে । গৃহস্থালির আবর্জনা, পৌর আবর্জনা, ভাঙ্গা প্লাস্টিক, ভাঙ্গা কাচ, ধাতব টুকরো, ওষুধের প্যাকেট, ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ প্রভৃতি হল কঠিন বর্জ্য ।

(খ) তরল বর্জ্য (Liquid waste) : ব্যবহৃত তরল পদার্থের অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর অবশিষ্টাংশকে তরল বর্জ্য বলে । বর্জ্যজল, গ্রিজ, স্নেহপদার্থ, রান্নার পোড়া তেল, স্নান ও শৌচাগারের জল, প্রাণীর মলমূত্র, সাবান ও ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জল ইত্যাদি হল উল্লেখযোগ্য তরল বর্জ্য । এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পারমাণবিককেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় তরল বর্জ্য পদার্থ নির্গত হয় ।

(গ) গ্যাসীয় বর্জ্য (Gaseous waste) : গ্যাস রূপে নির্গত দূষিত বর্জ্যকে গ্যাসীয় বর্জ্য বলে। কলকারখানা, বিদ্যুৎ শক্তিকেন্দ্র, গাড়ির ইঞ্জিন প্রভৃতির ধোঁয়ায় নিঃসৃত কার্বন ডাইঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রিত দূষিত কণা গ্যাসীয় বর্জ্য হিসাবে অতি সহজেই বায়ুদূষণ ঘটায় ।

অথবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তিনটি প্রয়ােজনীয়তা উল্লেখ করাে।

উত্তরঃ বিভিন্ন কারণে বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা খুবই প্রয়োজনীয়। যেমন—

(1) পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা : জল, বায়ু, মাটি প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে দূষণমুক্ত রেখে পরিবেশকে নির্মল ও স্বচ্ছ করার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজনীয়।

(2) বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা : বনভূমি, তৃণভূমি, জলাভূমিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি।

(3) জীববৈচিত্র্যকে বাঁচানো : বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা না করলে পৃথিবীর জীবজগৎ সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

(4) রোগব্যাধি প্রতিরোধ : বিভিন্ন প্রকার সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

(5) বিদ্যুৎ শক্তি ও সার উৎপাদন : বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যবান বিদ্যুৎ শক্তি ও জৈব সার উৎপাদন করা যায়।

(6) প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার্থে : বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অধীনে পুনর্ব্যবহার ও পুনরাবর্তনের মাধ্যমে লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদগুলিকে লুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করা যায়।

৪.৩ ভারতের সড়কপথ ও রেলপথের প্রতিটির তিনটি করে সুবিধাগুলি আলােচনা করাে।

উত্তরঃ সড়কপথে পরিবহণের সুবিধাগুলি হল—

(1) দ্রুত পরিবহণ : সড়কপথে যে-কোনো
হালকা পণ্য অতিদ্রুত গন্তব্যে পৌছে দেওয়া যায়।

(2) যে-কোনো সময় পরিবহণ : সড়কপথে যে-কোনো সময় পরিবহণ করা যায়। রেল বা বিমান পথের মতো কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সড়কপথ পরিবহণ ব্যবস্থা চলে না।

(3) প্রতিরক্ষা : দুর্গম স্থানে অথবা প্রতিরক্ষার কাজে সেনাবাহিনীর জন্য রসদ, অস্ত্রশস্ত্র, ওষুধ প্রভৃতি সড়কপথে পাঠানো সুবিধাজনক।

রেলপথে পরিবহণের সুবিধাগুলি হল—

(1) রেলওয়ে বিপুল সংখ্যক যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করতে পারে।

(2) এগুলি পরিবহনের একটি পরিবেশ বান্ধব মাধ্যম।

(3) রেলওয়ে তুলনামূলকভাবে সস্তা পরিবহনের মাধ্যম।

অথবা, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের কৃষি বিপ্লবের সুফলগুলি উল্লেখ করাে।

উত্তরঃ পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের কৃষি বিপ্লবের সুফলগুলি সুফল গুলি হল–

(1) শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি : কৃষি বিপ্লবের
ফলে কৃষিজাত শস্যের উৎপাদন, বিশেষত গম ও ধানের উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

(2) হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বৃদ্ধিঃ উচ্চ ফলনশীল বীজ কীটনাশক রাসায়নিক সার ও জলসেচের ব্যবহারে হেক্টরপ্রতি ফসল উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পায়।

(3) কৃষি জমির সম্প্রসারণ : সবুজ বিপ্লবের ফলে কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি আসার কারণে দেশে কৃষি জমির সম্প্রসারণ ঘটে। কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটে এবং অনেক একফসলি জমি বহু ফসলি হয়ে ওঠে।

(4) কৃষকের আয় বৃদ্ধি : ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে কৃষকের আয় বৃদ্ধি হয় এবং অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। তবে প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষকের তুলনায় বৃহৎ চাষীদের আয় বৃদ্ধি বেশি ঘটে।

৪.৪ ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের স্কেলের উল্লেখ ছকের মাধ্যমে করাে।

উত্তরঃ 

অথবা, জিওষ্টেশনারী ও সানসিনক্রোনাশ উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য করাে।

উত্তরঃ স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ মানুষের এমন এক আবিষ্কার যা বাদ দিয়ে আধুনিক মানব সভ্যতা কল্পনা করা অসম্ভব। আধুনিক মানব সভ্যতার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে, যেমন– যোগাযোগ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, খনিজ সম্পদের সন্ধান, সুরক্ষা, ভূমিরূপ সম্পর্কে ধারণা প্রভৃতি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এই উপগ্রহের প্রয়োজন পড়ে আমাদের। এই স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ গুলি কে তাদের প্রবাহপথ, উচ্চতা, কার্যাবলী প্রভৃতি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যথা– জিওস্টেশনারী উপগ্রহ ও সানসিনক্রোনাশ উপগ্রহ। এখানে এই জিওস্টেশনারী ও সানসিনক্রোনাশ উপগ্রহের পার্থক্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

(1) সংজ্ঞা—
• কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে সারাবছর ধরে প্রবাহিত বায়ু আয়ন বায়ু বলে।
• কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সারা বছর ধরে সুমেরু ও কুমেরু বৃত্তের নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিত ভাবে প্রবাহিত বায়ু কে পশ্চিমা বায়ু বলে।

(2) অক্ষাংশ গত অবস্থান—
• 0⁰ থেকে 30⁰ উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে আয়ন বায়ুর প্রবাহ দেখা যায়।
• 30⁰ থেকে 60⁰ অক্ষাংশ এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়।

(3) প্রবাহ দিক—
• ফেরেলের সূত্র অনুসারে আয়ন বায়ু কিছুটা বেকে উত্তর গোলার্ধে উত্তর পূর্ব দিক থেকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়।
• উত্তর গোলার্ধে পশ্চিমা বায়ু দক্ষিণ পশ্চিম দিক দিয়ে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়।

(4) অপর নাম—
• অতীত কালে পাল তোলা বাণিজ্যিক জাহাজ গুলি আয়ন বায়ুর গতিপথ অনুসরণ করে চলাচল করতো বলে, এই বায়ুর আরেক নাম বাণিজ্য বায়ু বা Trade wind ।
• পশ্চিমা বায়ু আয়ন বায়ুর বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয় বলে, একে অনেকে প্রত্যয়ন বায়ু বলে। এছাড়া এই বায়ু গর্জন শীল চল্লিশা, ভয়ংকর পঞ্চাশ, ঝড়ো ষাট নামে পরিচিত।

(5) প্রভাব—
• অপেক্ষাকৃত উষ্ণ আয়ন বায়ু, সমুদ্রের উপর দিয়ে প্রবাহের সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প ধরো মহাদেশ গুলির পূর্ব অংশে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় কিন্তু বৃষ্টিপাতের অভাবে ক্রান্তীয় অঞ্চলে মহাদেশ গুলির পশ্চিম অংশে মরুভূমির সৃষ্টি হয়।
• পশ্চিমা বায়ুর প্রভাব নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মহাদেশ গুলির পশ্চিম অংশে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।

(6) প্রভাবিত কোশ—
• আয়ন বায়ুর দ্বারা প্রভাবিত কোশ কে হ্যাডলি কোশ বলে।
• পশ্চিমা বায়ুর দ্বারা ফেরেল কোশের সৃষ্টি হয়।

বিভাগ – ‘ঙ’

(দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে চিত্রাঙ্কন আবশ্যিক নয়)

৫। ৫.১ নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলি থেকে যে কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x২=১০

৫.১.১ হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি ভূমিরূপের সচিত্র বিবরণ দাও।

উত্তরঃ হিমবাহের কার্য মূলত তিন প্রকার। যেমন- (A) ক্ষয়সাধন; (B) বহন; (C) সঞ্চয়। হিমবাহের গতি, বরফের গুরুত্ব ও শিলা প্রকৃতির উপর হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ক্ষমতা নির্ভর করে। হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপ নিয়ে আলোচনা করো হল—

(1) সার্ক বা করি : পার্বত্য হিমবাহের মস্তক দেশে অর্থাৎ উৎস ক্ষেত্রে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে আরামকেদারার মতো দেখতে যে ভূমিরূপ গঠিত হয় তাকে বলে সার্ক বা করি। এটি ফ্রান্সে সার্ক, ইংল্যান্ডে করি; জার্মানিতে কার ওয়েলসে ঝুম, স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় বটন, নরওয়ে বন নামে পরিচিত।

গঠন : সার্কের তিনটি অংশ থাকে।

(i) খাড়া দেওয়াল : এটি হিমবাহের উৎপাটন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত।

(ii) বেসিন : মধ্যভাগে অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়া সৃষ্ট শর্ত বেসিন।

(iii) চৌকাঠ : কম ক্ষয় দ্বারা সৃষ্ট সম্মুখের চৌকাঠের ন্যায় উঁচু অংশ থাকে।

অনুকূল পরিবেশ : (i) পর্বতে প্রচুর তুষারপাত; (ii) হিমবাহে প্রবাহপথে সমসস্থ শিলার উপস্থিতি; (iii) পূর্বের নদী উপত্যকার উপস্থিতি।

উদাহরণ : অ্যান্টার্কটিকা ওয়ালকট নামক সার্ক।

(2) ‘U’ আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী : পার্বত্য অঞ্চলে পূর্বেকার নদী উপত্যকাগুলি হিমবাহের ঘর্ষণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে U আকৃতি প্রাপ্ত হলে যে ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়, তাকে বলে হিমদ্রোণী।

গঠন : অনেক সময় U আকৃতির উপত্যকায় শিলাস্তরের অসমান ক্ষয়ের ফলে গঠিত হয় হিমসোপান। এর তিনটি অংশ থাকে— (i) রাইজার; (ii) রিগ্যাল; (iii) ট্রেড।

বৈশিষ্ট্য : (i) অনেক সময় এইরকম গভীর উপত্যকায় হিমবাহ গলাজল জমে হ্রদ তৈরি হয়।

(ii) হিমদ্রোণীতে হিমসোপান দেখা যায়।

উদাহরণ: আমেরিকার ইয়োসেমিতি উপত্যকা।

(3) ঝুলন্ত উপত্যকা : অনেক সময় একটি
বৃহৎ প্রধান হিমবাহের সঙ্গে কয়েকটি ছোটো ছোটো উপ-হিমবাহ এসে মিলিত হয়। এরূপ স্থলে প্রধান হিমবাহ সরে গেলে উপ-হিমবাহগুলি উপত্যকা প্রধান হিমবাহের উপর ঝুলন্ত অবস্থায় আছে বলে মনে হয়, একে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে।

বৈশিষ্ট্য : (i) উপ-হিমবাহগুলি প্রধান হিমবাহ উপত্যকার উপর ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।

(ii) ঝুলন্ত উপত্যকায় জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।

উদাহরণ : (i) বদ্রীনাথের নিকট ঋষিগঙ্গা।

(ii) হিমালয় পর্বতের পর পর্বতের থেকে নিচের দিকে কুবের নামে ঝুলন্ত উপত্যকা।

৫.১.২ বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরগুলি আলোচনা করো৷

উত্তরঃ ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমন্ডল (Troposphere) : গ্রিক শব্দ ট্রপো (Tropo) কথার অর্থ হল পরিবর্তন (Change) এবং দৈনন্দিন আবহাওয়ায় আমরা যেরকম বিভিন্ন পরিবর্তন অনুভব করি, এই বায়ুস্তরেও সে ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তরে অবাধে তাপীয় মিশ্রণ ঘটে বলে, একে ট্রপোস্ফিয়ার বলে। বায়ুমণ্ডলের এই সর্বনিম্ন স্তরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ১৮ কিমি. এবং মেরু অঞ্চলে ৮ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বায়ুতে প্রায় ৯০% ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, কুয়াশা, মেঘ প্রভৃতি থাকায় এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত, তুষারপাত প্রভৃতি ঘটনাগুলি ঘটতে দেখা যায়, এজন্য ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে ‘ক্ষুব্ধ মন্ডল’ বলে। বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে আমরা বাস করি।

ট্রপোপজ (Tropopause) : ট্রপোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে বলে ট্রপোপজ। এই স্তরে বায়ুর উষ্ণতা একই রকম থাকে বলে একে সমতাপ অঞ্চল বলে।

বৈশিষ্ট্য :

(i) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় ততই তাপ মাত্রা কমতে থাকে। প্রতি কিলোমিটারে ৬.৪° বা প্রায় প্রতি ১৬৫ মিটার উচ্চতার জন্য ১° সেন্টিগ্রেড করে তাপ হ্রাস পায়, একে উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক হার বা ‘Normal Laps rate’ বলে। ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে ১০ — ১৩ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুর তাপ এই হারে কমতে থাকে । মধ্য অক্ষাংশে (Middle Latitude) ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্ব সীমায় বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ -৭৫° সেন্টিগ্রেড থেকে -৬০° সেন্টিগ্রেড হয়।

(ii) বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ট্রপোস্ফিয়ারই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর। বায়ুমণ্ডলের মোট গ্যাসীয় ভরের প্রায় ৮০% ধারণ করে ট্রপোস্ফিয়ার। এজন্য এখানে বায়ুরচাপ সবচেয়ে বেশি।

(iii) ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরে জলীয়বাষ্প বা মেঘ থাকে না বললেই চলে।

(iv) এই অংশে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর চাপ কমতে থাকে। এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমন্ডল (Stratosphere) : ট্রপোপজের ওপরে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় ৫০ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বলে। এটি বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তর। জলীয় বাষ্পহীন এই স্তরে ঝড়-বৃষ্টি হয় না বলে একে শান্তমন্ডলও বলে।

বৈশিষ্ট্য :

(i) স্ট্যাটোস্ফিয়ার স্তরটি নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় মেরু অঞ্চলে অধিক পুরু হয়ে থাকে।

(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ২০–৩৫ কিমি. উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের আধিক্য দেখা যায় বলে এই স্তরটিকে ওজোন স্তর বলে।

(iii) এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।

(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ধূলিকণা, মেঘ প্রভৃতি না থাকায় এখানে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে না।

(iii) স্ত্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত দেখা যায় না বলে দ্রুতগতিসম্পন্ন জেটবিমানগুলো ঝড়-বৃষ্টি এড়িয়ে চলার জন্য স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। জেটবিমানগুলি সাধারণত এই স্তরের মধ্যে দিয়ে চলার সময়ে আকাশে সাদা দাগ রেখে যায়।

স্ট্র্যাটোপজ : স্ট্যাটোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে স্ট্র্যাটোপজ বলে। এই স্তরে উষ্ণতার স্থিতাবস্থা বজায় থাকে।

৫.১.৩ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান এবং এই জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

উত্তরঃ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান-—

অক্ষাংশগত অবস্থান : ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের 30-40° অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশসমূহের পশ্চিমভাগে পরিলক্ষিত হয়।

মহাদেশগত অবস্থান: এই জলবায়ুর অন্তর্গত দেশ বা অঞ্চলগুলি হল–

(১) ইউরোপ : পোর্তুগাল, স্পেন, ইটালি,
গ্রিস প্রভৃতি দেশের ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন অঞ্চলসমূহ।

(২) এশিয়া : পশ্চিম তুরস্ক, লেবানন, ইজরায়েল, সিরিয়া প্রভৃতি দেশ।

(৩) আফ্রিকা : মিশর, লিবিয়া, মরক্কো,
আলজিরিয়া প্রভৃতি দেশের ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন অঞ্চলসমূহ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ উপকূল।

(৪) উত্তর আমেরিকা : দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া

(৫) দক্ষিণ আমেরিকা : মধ্য চিলি।

(৬) ওশিয়ানিয়া : অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল এবং নিউজিল্যান্ডের উত্তর দ্বীপ।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

(১) জলবায়ু : সারাবছর মাঝারি উয়তা এবং সমভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করে।

(২) উষ্ণতা : গ্রীষ্মকালে এখানে 20° সেলসিয়াস থেকে 27°সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। শীতকালে এই অঞ্চলে উষ্ণতা থাকে 5° সেলসিয়াস থেকে 10° সেলসিয়াস।

(৩) বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর : এখানে বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর হয় 15° সেলসিয়াস থেকে 17° সেলসিয়াস।

(৪) আকাশের অবস্থা : গ্রীষ্মকাল এখানে শুষ্ক এবং এইসময় এখানকার আকাশ পরিষ্কার থাকে।

(৫) বৃষ্টিপাত : শীতকালে আর্দ্র পশ্চিমা
বায়ুর প্রভাবে এখানে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত হয়। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 35 থেকে 65 সেমি।

(৬) তুষারপাত : শীতকালে কোনো কোনো স্থানে তুষারপাত হয়।

৫.১.৪ পৃথিবীর জলবায়ুর উপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাবগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ পৃথিবীর আবর্তন গতি, বায়ু প্রবাহ, সমুদ্র জলের লবণতা, ঘনত্ব ও উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য সমুদ্র জলরাশির নির্দিষ্ট দিকে নিয়মিত ভাবে একস্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহ কে সমুদ্র স্রোত বলে। এই সমুদ্র স্রোত পৃথিবীর জলবায়ু ও মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সমুদ্র স্রোতের প্রভাব গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। সাধারণত সমুদ্রে দুই ধরনের স্রোত প্রবাহিত হয়ে থাকে – শীতল স্রোত ও উষ্ণ সমুদ্র স্রোত। এই দুই ধরনের সমুদ্র স্রোত পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে এক গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

(1) উষ্ণতার ওপর প্রভাব – সমুদ্র তীরবর্তী দেশ গুলির উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে সমুদ্র স্রোতের প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যে দেশের উপকূলের পাশ দিয়ে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয়, সেই সমস্ত উপকূল অঞ্চলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি হয়। যেমন – উষ্ণ আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে শীতকালেও ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল অঞ্চল গুলি বরফ মুক্ত থাকে। অন্য দিকে শীতল স্রোতের প্রভাবে উপকূল অঞ্চলের তাপমাত্রা অনেক টা হ্রাস পায়। যেমন – শীতকালে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রচণ্ড শীত পড়ে ও তুষার পাত হয়।

(2) বৃষ্টিপাতের ওপর প্রভাব – উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুতে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে বলে, উষ্ণ স্রোত দ্বারা প্রভাবিত উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু শীতল স্রোতের প্রভাবে উপকূল অঞ্চল গুলিতে তেমন একটা বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে।

(3) মরুভূমির সৃষ্টি – যে সমস্ত দেশের উপকূলের পাশ দিয়ে শীতল সমুদ্র স্রোত বাহিত হয়, সেই সমস্ত অঞ্চলে খুব নগন্য পরিমাণ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় বলে, বৃষ্টিপাতের অভাবে মরুভূমির সৃষ্টি হয়। যেমন – আফ্রিকার উত্তর পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত শীতল ক্যানারি স্রোতের প্রভাবে সাহারা মরুভূমি র সৃষ্টি হয়েছে। আবার দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত শীতল হ্যামবোল্ড স্রোতের প্রভাবে পৃথিবীর শুষ্ক তম মরুভূমি আটাকামার সৃষ্টি হয়েছে।

(4) দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়া – ঝড় কুয়াশা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক সময় সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে হয়ে থাকে। উপকূলবর্তী যে সমস্ত অঞ্চলে উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত মিলিত হয় সে সমস্ত অঞ্চলে উষ্ণতার তারতম্য বা পার্থক্য জনিত কারণে ঘন কুয়াশা ও ঝড় বৃষ্টির সৃষ্টি হয়।

(5) তাপের সমতা – উষ্ণ ও শীতল সমুদ্র স্রোত পৃথিবীব্যাপী তাপে ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতল মেরু অঞ্চল থেকে প্রবাহিত শীতল স্রোত গুলি উষ্ণ অঞ্চলের দিকে বাহিত হয় এবং উষ্ণ নিরক্ষীয় ক্রান্তীয় অঞ্চলে সৃষ্ট স্রোত গুলি শীতল অঞ্চলের দিকে বাহিত হয় বলে পৃথিবী ব্যাপী তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকে।

(6) এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব – এল নিনো ও লা নিনা দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত উষ্ণ (এল নিনো) ও শীতল স্রোত (লা নিনা)। এই দুটি উষ্ণ ও শীতল স্রোতের পর্যায়ক্রমিক আবির্ভাব প্রশান্ত মহাসাগরের দুই উপকূলবর্তী অঞ্চলের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন লা নিনা বছরগুলিতে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায় ও প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে এলনিনো যে বছর আবির্ভূত হয় সে বছরগুলিতে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে (পেরু ইকুয়েডর উপকূল) বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও পশ্চিম উপকূলে (দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া) হ্রাস পায়।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে সমুদ্র স্রোত পৃথিবীর জলবায়ুর উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে থাকে।

৫.২ নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলি থেকে যে কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫×২=১০

৫.২.১ ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের প্রধান কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ‌ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক—

বৃহদায়তন এই ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানের জলবায়ুর মধ্যে বৈচিত্র‍্য বা তারতম‍্য দেখা যায়। ভারতের এই জলবায়ুর বৈচিত্র্যের কারণগুলি বা জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক গুলি হল নিম্নরূপ—

অক্ষাংশঃ ভারত দক্ষিণে 8°4′ উত্তর অক্ষাংশ থেকে উত্তরে 37°6′ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ভারতের প্রায় মাঝখান দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে কর্কটক্রান্তি রেখা। ভারতের এই প্রকার অক্ষাংশগত অবস্থানের জন্য দক্ষিনাংশে উষ্ণ-আর্দ্র নিরক্ষীয় জলবায়ু, মধ্যাংশে ক্রান্তীয় জলবায়ু এবং উত্তরাংশে উপক্রান্তীয় প্রকৃতির জলবায়ু দেখা যায়।

উচ্চতাঃ সাধারণত সমুদ্রসমতল থেকে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। তাই উত্তরে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের উচ্চতা অধিক হওয়ায় জলবায়ু শীতল প্রকৃতির, আবার হিমালয়ের দক্ষিণের সমভূমি অঞ্চলের উষ্ণতা অধিক।

পর্বতের অবস্থানঃ পর্বতের অবস্থান বায়ুপ্রবাহকে বাধা দেয় এবং বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। জলীয় বাষ্পপূর্ণ মৌসুমী বায়ু হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ ঢালে, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে, মেঘালয় মালভূমিতে পর্বতের দক্ষিণ ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং অন্যদিকে পর্বতের বিপরীত ঢালে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। আবার উত্তরে হিমালয় পর্বতের অবস্থানের জন্য শীতকালে সাইবেরিয়া থেকে আগত অতি শীতল বায়ু ভারতে প্রবেশ করতে পারে না। এবং ভারত তীব্র শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়।

সমুদ্র থেকে দূরত্বঃ উত্তর, মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম ভারত সমুদ্র থেকে অধিক দূরে অবস্থিত হওয়ায় জলবায়ুর চরমভাব লক্ষ্য করা যায় এবং উপদ্বীপীয় দক্ষিণ ভারতের তিনদিক সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় দক্ষিণ ভারতে সমুদ্রের প্রভাব বেশি, তাই জলবায়ু অনেকটা সমভাবাপন্ন প্রকৃতির।

মৌসুমী বায়ুর প্রভাবঃ ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব সর্বাধিক। ভারতে বর্ষাকালের সূচনা হয় মৌসুমী বায়ুর আগমনের ফলে, এবং প্রত্যাগমনের দ্বারা শীতকাল। মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালীপনার জন্য কোনো বছর অনাবৃষ্টির কারণে খরা এবং কোনো বছর অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা দেখা যায়।

এল নিনোর প্রভাবঃ যে বছরগুলোতে দক্ষিণ-পশান্ত মহাসাগরে এল নিনোর আবির্ভাব ঘটে, সেই এল নিনো বছর গুলিতে ভারতে বৃষ্টিপাত কম হয় এবং খরার তীব্রতা বাড়ে।

মৃত্তিকাঃ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৃত্তিকা ভারতের জলবায়ুকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। শুষ্ক বালি ও পাথুরে জমি সূর্যকিরণে সহজে উত্তপ্ত হয় বলে উষ্ণতা বেশি, আবার রাতে তাপ বিকিরণ করে দ্রুত শীতল হয়ে যায়। ফলে জলবায়ুর চরমভাব দেখা যায়। তাই বালুকাময় মরুভূমি অঞ্চল এবং প্রস্তরময় ভূমিভাগে জলবায়ু চরম প্রকৃতির হয়।

স্বাভাবিক উদ্ভিদঃ উদ্ভিদ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেখানে অধিক পরিমাণ স্বাভাবিক উদ্ভিদের সমাবেশ দেখা যায় সেখানে বাষ্পীয় প্রস্বেদন অধিক মাত্রায় হওয়ায় বৃষ্টিপাত বেশি হয় এবং উষ্ণতার প্রসারও কম হয়।

ঘূর্ণবাতঃ আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের প্রভাবে উপকূলের রাজ্যগুলিতে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি সংঘটিত হয় এবং আবহাওয়া মনোরম প্রকৃতির হয়।

৫.২.২ ভারতের চা চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ বর্ণনা করাে।

উত্তরঃ চা উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারতে অর্থকরী পানীয় ফসলগুলির মধ্যে চা অন্যতম। বৈদিশিক বাজারে চা রপ্তানী করে ভারতবর্ষ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। ভারতের মূলত: উত্তরপূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার দক্ষিণভাগে চা চাষ হতে দেখা যায়।

ভারতে চা চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশগুলি হল—

(i) উষ্ণতা : গড়ে চা চাষের জন্য 20°C – 25°C তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। চা পাতা রোপণের সময় 20°C, চা গাছ বড় হবার সময় 18°C-20°C তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। চা পাতা তোলা ও শোকানোর জন্য সর্বোচ্চ 32°C তাপমাত্রা চা গাছ সহ্য করতে পারে।

(ii) বৃষ্টিপাত : চা চাষের জন্য গড়ে 200cm-250cm বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়।

(iii) আর্দ্র জলবায়ু : চা গাছ রোপণের সময় জলবায়ু আর্দ্র থাকা প্রয়োজন। তবে চা গাছ বৃদ্ধির সময় এবং চা পাতা তোলার সময় জলবায়ু অবশ্যই শুষ্ক হতে হবে।

(iv) ভূমির প্রকৃতি : চা চাষের জন্য ঢালু পার্বত্য ভূমি প্রয়োজন। চা গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ালে চা গাছ নষ্ট হয়ে যায়। তাই জল দাঁড়াতে পারে না এরকম ঢালু জমি চা চাষের জন্য আদর্শ।

(v) মৃত্তিকা : উচ্চ জলনিকাশি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জৈব অম্লধর্মী মৃত্তিকায় চা চাষ ভাল হয়। সাধারণতঃ উর্বর লৌহমিশ্রিত দোআঁশ মৃত্তিকায় চা চাষ ভাল হয়। চা-এর ভাল ফলনের জন্য মাঝে মাঝে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সারের প্রয়োগ প্রয়োজন। উপপৃষ্ঠীয় স্তরের মৃত্তিকার গভীরতা 2 মিটারের মতো হলে চা গাছের বৃদ্ধি ভাল হয়।

(vi) ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষের উপস্থিতি : চা গাছ যেহেতু বেশী তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না, তাই চা গাছের সুস্থ বৃদ্ধির জন্য চা বাগানের মধ্যে মাঝারি উচ্চতার গাছ রোপণ করা হয়। এই গাছের ছায়া চা গাছের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

৫.২.৩ পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের অধিক উন্নতির কারণগুলি ব্যাখ্যা করাে।

উত্তরঃ ভারতে বিভিন্ন শিল্পগুলির মধ্যে কার্পাস বস্ত্রবয়ন শিল্প অন্যতম ও প্রাচীনতম। প্রথম কার্পাস বস্ত্রবয়ন শিল্পকেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের ঘুসুড়িতে গড়ে উঠলেও পরবর্তী সময়ে পশ্চিম ভারতে তা বিকাশ লাভ করেছে। পশ্চিম ভারতে কার্পাস বরন শিল্পের অধিক উন্নতির কারণগুলি হল—

(i) পর্যাপ্ত কাঁচামালের যোগান : পশ্চিম ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চল, মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমভাগ, গুজরাট অঞ্চলের মৃত্তিকা ও অন্যান্য ভৌগোলিক পরিবেশে কার্পাস চাষ খুব ভালভাবে হয়। এখানকার জলবায়ুতে আরবসাগরীয় সামুদ্রিক আবহাওয়ার প্রভাব থাকে এবং তুহিনমুক্ত দিন থাকায় কার্পাসের চাষ ও কার্পাস গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশ খুব ভাল হয়। এছাড়া কৃষ্ণ মৃত্তিকার উপস্থিতিতে কার্পাস গাছের বৃদ্ধি ভাল হয় এবং উন্নত প্রকৃতির সুতো নিষ্কাশন করা যায়।

(ii) সমতল ভূমির অবস্থান : পশ্চিম ভারতে পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমিতে, গুজরাট সমভূমিতে কার্পাস বয়ন কারখানা গড়ে তোলা সহজ হয়।

(iii) দক্ষ শ্রমিক : কার্পাস বয়ন শিল্প কারখানায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাটের জনবহুল অঞ্চল থেকে দক্ষ শ্রমিকের সহজ সরবরাহ সম্ভব হয়।

(iv) বিদ্যুৎ শক্তি : কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ শক্তির যোগান মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পাওয়া যায়। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মধ্যে ভিবপুরি, ভিরা, উকাই; তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মধ্যে ধুভারান, ভুসাওয়াল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তারাপুর, কাকড়াপাড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের যোগান পাওয়া যায়।

(v) মূলধন : কার্পাসবয়ন শিল্পকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় মূলধনের যোগান মূলতঃ এই অঞ্চলে বেসরকারি উদ্যোগে পাওয়া যায়। স্থানীয় পারসি, ভুটিয়া ও গুজরাতি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নিয়োজিত মূলধন এই শিল্পকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

(vi) পরিবহন : কার্পাস উৎপাদক অঞ্চল থেকে কার্পাসকে উৎপাদন কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং উৎপাদিত কার্পাসজাত উপাদানকে বাজারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সড়কপথ ও রেলপথ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সুতিবস্ত্র বিদেশের বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে আকাশপথ ব্যবহার করা হয়। মুম্বাইতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকায় তা সুবিধাজনক হয় ।

(vii) জলের যোগান : কার্পাস বস্ত্রবয়ন কারখানার ও উৎপাদনের প্রয়োজনীয় জল তাপী, মাহী, নর্মদা, সবরমতী প্রভৃতি নদীগুলি থেকে পাওয়া যায়।

(viii) চাহিদা বা বাজার : ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদিত সুতিবস্ত্রের চাহিদা ভারতের বাজারে তো বটেই বিদেশের বাজারেও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।

উপরিউক্ত কারণগুলির জন্য পশ্চিমভারতে বস্ত্রবয়নশিল্প বিকাশ লাভ করেছে।

৫.২.৪ ভারতের নগরায়ণের প্রধান সমস্যাগুলি আলােচনা করাে।

উত্তরঃ ভারতে নগরায়ণের সমস্যাসমূহ—

ভারতে দ্রুত বেড়ে চলা নগরায়ণের জন্য নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে, যা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অন্তরায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলি হল-

(1) অপরিকল্পিত নগরায়ণ : চণ্ডীগড়ের
মতো হাতেগোনা দু-একটি শহর বাদ দিয়ে ভারতের অধিকাংশ শহরই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। তাই শহরগুলির যত্রতত্র বাসস্থান, সড়কপথ, অফিস, আদালত, শিক্ষাকেন্দ্র, ধর্মস্থান প্রভৃতি লক্ষ করা যায়। এর ফলে বেশিরভাগ শহরেরই পরিবেশ ঘিঞ্জি প্রকৃতির, যা শহরগুলির সামগ্রিক অবস্থার অবনতি ঘটিয়েছে।

(2) মানুষের শহরমুখী প্রবণতা : শহর এবং গ্রামের উন্নয়নের পার্থক্যের জন্য ভারতে গ্রাম থেকে শহরে আসার প্রবণতা খুব বেশি। গ্রামের তুলনায় শহর-নগরে উন্নত জীবনযাত্রার সুবিধা, কর্মসংস্থান ও উন্নত পরিসেবার সুযোগ থাকার কারণে গ্রামের বহু মানুষই এখন শহরমুখী। কিন্তু এইসব মানুষদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং অদক্ষ বলে শহরগুলিতে বেকারত্ব, বাসস্থানের সমস্যা, বস্তির উদ্ভব, নানাবিধ রোগের প্রকোপ প্রভৃতি সমস্যা খুবই বেশি।

(3) পরিকাঠামোর অভাব : উন্নতমানের বাসস্থান, প্রশস্ত রাস্তা, উন্নতমানের শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ, নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ, জলনিকাশি ব্যবস্থা প্রভৃতি নিয়ে গড়ে ওঠে শহর-নগরের পরিকাঠামো। কিন্তু ভারতের অধিকাংশ শহরেরই দুর্বল পরিকাঠামোর ওপর ক্রমাগত জনসংখ্যার চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে বাসস্থান, পরিবহণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও জলনিকাশির অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। যেমন—

(i) বাসস্থানের সমস্যা : ভারতের অধিকাংশ শহরে বাসস্থানের সমস্যা প্রকট। বাসস্থানের অভাবে বহু মানুষ রেললাইনের পাশে, রাস্তার ধারে, খালপাড়ে, অত্যন্ত দূষিত বিপদসংকুল পরিবেশে বসবাস করে। প্রায় প্রতিটি শহরেই অগণিত মানুষ বস্তিতে, ঝুপড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে। মুম্বাই, কলকাতা প্রভৃতি শহরে বাসস্থানের সমস্যা খুবই বেশি।

(ii) পরিবহণের সমস্যা : শহর-নগরে রাস্তায় যানবাহন বেশি। অথচ অপরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য রাস্তাগুলি সংকীর্ণ। এর সাথে রাস্তা ও ফুটপাথ বেদখল হওয়ার কারণে যানবাহনের গতি অত্যন্ত মন্থর বা যানজট একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

(iii) স্বাস্থ্যের সমস্যা : শহর ও নগরে শিল্পকারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও যানবাহনের ধোঁয়া বায়ুদূষণ ঘটায়। আবর্জনা, জলাভূমি, নর্দমা থেকে নানা পতঙ্গবাহিত রোগ, বস্তিতে জলবাহিত রোগ, পুষ্টি সমস্যা শহরের মানুষকে ভোগায়। সেকারণে ভারতের নগরগুলি পৃথিবীর অন্যতম দূষিত নগরে পরিণত হয়েছে।

(iv) শিক্ষার সমস্যা : শহরে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি থাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত। কিন্তু দরিদ্র বস্তিবাসীর পক্ষে শিক্ষার সব সুযোগসুবিধা নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে অসাম্যতা লক্ষ করা যায়।

(v) বিদ্যুৎ সমস্যা : অপরিকল্পিত নগরায়ণে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা বিদ্যুতের ঘাটতি সৃষ্টি করে। এতে শিক্ষা, বাণিজ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়।

(vi) জলনিকাশির সমস্যা : বেশিরভাগ শহরে জলনিকাশি ব্যবস্থা অনুন্নত। এ ছাড়া, জলনিকাশি ড্রেনগুলিতে প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ করার জন্য ওই দুর্বল নিকাশি ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার মুখে। একটু বেশি বৃষ্টি হলে শহর জলপ্লাবিত হয়। ড্রেনে জমে থাকা নোংরা জল থেকে নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে।

বিভাগ – ‘চ’

৬। প্রশ্নপত্রের সাথে প্রদত্ত ভারতের রেখা-মানচিত্রে নিম্নলিখিতগুলি উপযুক্ত প্রতীক ও নামসহ চিহ্নিত করে মানচিত্রটি উত্তরপত্রের সঙ্গে জুড়ে দাও।
৬.১ আরাবল্লি পর্বত
৬.২ নর্মদা নদী
৬.৩ উত্তর-পূর্ব ভারতের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত কেন্দ্র
৬.৪ ভারতের অরণ্য গবেষণাগার
৬.৫ পূর্ব ভারতের একটি লবণাক্ত মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চল
৬.৬ একটি কফি উৎপাদক অঞ্চল
৬.৭ ভারতের রূঢ় অঞ্চল
৬.৮ ভারতের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকেন্দ্র
৬.৯ পশ্চিম ভারতের একটি স্বাভাবিক বন্দর।
৬.১০ উত্তর ভারতের বৃহত্তম মহানগর।

অথবা,

[ শুধুমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য ]

৬। যে কোনাে দশটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ১x১০=১০

৬.১ বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের মাঝে অবস্থিত গ্রস্ত উপত্যকার নাম লেখাে।

৬.২ ভারতের বৃহত্তম নদী দ্বীপের নাম কী ?

৬.৩ ভারতের একটি প্রবাল দ্বীপের নাম লেখাে।

৬.৪ ভারতের কোন্ রাজ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমিবায়ু সর্বপ্রথম এসে পৌঁছায় ?

৬.৫ পার্বত্য মৃত্তিকা দেখা যায় এমন একটি রাজ্যের নাম লেখাে।

৬.৬ ধান উৎপাদনে ভারতের কোন রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে ?

৬.৭ ভারতে উৎপাদিত একটি রবি শস্যের নাম লেখাে।

৬.৮ পশ্চিমবঙ্গের কোথায় রেলইঞ্জিন নির্মাণ শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে?

৬.৯ পূর্ব হিমালয়ের একটি গিরিপথের নাম লেখাে।

৬.১০ গাঙ্গেয় সমভূমিতে প্রাচীন পলিমাটি কি নামে পরিচিত ?

৬.১১ ভারতের সর্বনিম্ন জনঘনত্বপূর্ণ রাজ্য কোনটি ?

৬.১২ পূর্ব উপকূলের বৃহত্তম বন্দরের নাম লেখাে।

৬.১৩ কফি উৎপাদনে ভারতের কোন রাজ্য প্রথম স্থানাধিকারী ?

৬.১৪ ভারতের পূর্ব উপকূলের একটি স্বাভাবিক বন্দরের নাম লেখাে।

বিভাগ – ‘ছ’

[ শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য ]

৭.১ যে-কোনাে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দাও :
২x৩=৬
৭.১.১ বালিয়াড়ির সংজ্ঞা দাও।
৭.১.২ সামুদ্রিক মগ্নচড়া কাকে বলে ?
৭.১.৩ “শান্তবলয়” কী ?
৭.১.৪ ড্রামলিনের সংজ্ঞা দাও।

৭.২ যে-কোনাে চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ১x৪=৪
৭.২.১ যমুনা নদীর উৎসের নাম লেখাে ?
৭.২.২ একটি গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম লেখাে।
৭.২.৩ ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে নিত্যবহ নদী কোন্ রঙে দেখানাে
হয়।
৭.২.৪ ভারতে কোথাকার চা সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত ?
৭.২.৫ পশ্চিমবঙ্গের একটি সাংস্কৃতিক শহরের নাম লেখাে।

📌 আরও দেখুনঃ

» Madhyamik Geography Q.P 2024

» Madhyamik Geography Q.P 2023

» Madhyamik Geography Q.P 2022

» Madhyamik Geography Q.P 2020

» Madhyamik Geography Q.P 2019

» Madhyamik Geography Q.P 2018

» Madhyamik Geography Q.P 2017

📌 আরও দেখুনঃ

» মাধ্যমিক বাংলা সিলেবাস ২০২৫

» মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক ইংরেজি পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক ইতিহাস পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক ভূগোল পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পাঠ্যবই সমাধান

» দশম শ্রেণি সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র

» মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫

» মাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের MCQ মক টেস্ট

This Post Has 4 Comments

  1. Sneha Chanda

    Thank you so much for this….🙏🙏🙏

  2. Sneha Chanda

    Please give me every subject. Question papers.. for Madhyamik

    1. proshnodekho

      লিংক ধরে ধরে গেলে সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র পেয়ে যাবে। ২০১৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দেওয়া আছে।

Leave a Reply