WBCHSE Class 11 Education Question Paper With Answer 2016 | একাদশ শ্রেণি শিক্ষা বিজ্ঞান প্রশ্ন প্রশ্নপত্র ২০১৬

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

WBCHSE CLASS 11 EDUCATION QUESTION PAPER WITH ANSWER 2016 (একাদশ শ্রেণির শিক্ষা বিজ্ঞান প্রশ্নপত্র ২০১৬)

পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার শিক্ষা বিজ্ঞান বিষয়ের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র যত্নসহকারে সঠিক এবং নির্ভুল উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বহু বিকল্পধর্মী প্রশ্ন (MCQ) এবং অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নের (SAQ) উত্তর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হলো। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জানানো যাচ্ছে তোমরা অবশ্যই তোমাদের সাবজেক্ট শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলিয়ে নেবে।

EDUCATION (XI)
(New Syllabus)
2016

Time : 3 hrs 15 mts        Full Marks : 80

পরিমিত এবং যথাযথ উত্তরের জন্য বিশেষ মূল্য দেওয়া হবে। বর্ণাশুদ্ধি, অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরিষ্কার হস্তাক্ষরের ক্ষেত্রে নম্বর কেটে দেওয়া হবে। উপান্তে পূর্ণমান সূচিত আছে।

Special credit will be given for answers which are brief and to the point. Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting. Figures in the margin indicate full marks for the questions.

Group – A (Mark – 30)

1. নিম্নলিখিত বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলি থেকে সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করে লেখো : 1×9=9

(i) “শিক্ষার্থী যা কিছু শেখে তাই হল পাঠক্রম” – এই উক্তিটি কার ?
(a) পেইনির (b) ফ্রয়েবেলের (c) হর্নির (d) কিলপ্যাট্রিকের

উত্তরঃ (c) হর্নির

(ii) ‘Currere’ শব্দের অর্থ হল—
(a) দৌড়ের পথ (b) বেড়ানোর পথ
(c) পাঠক্রম (d) জ্ঞানার্জন করা

উত্তরঃ (a) দৌড়ের পথ

(iii) ‘গ্রামোন্নয়নে অংশগ্রহণ’ যে ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি হিসেবে বিবেচিত তা হল—
(a) শিক্ষামূলক (b) সৃজনাত্মক
(c) সামাজিক (d) আত্মপ্রকাশমূলক

উত্তরঃ (c) সামাজিক

(iv) শিশুদের প্রথম সুঅভ্যাস গঠিত হয়—
(a) বিদ্যালয়ে (b) পরিবারে
(c) সমাজে (d) ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে

উত্তরঃ (b) পরিবারে

(v) ‘জ্ঞানবানী’ শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মসূচি দেখানো হয়—
(a) দূরদর্শনে (b) রেডিয়োতে
(c) সংবাদপত্রে (d) স্যাটেলাইটে

উত্তরঃ (b) রেডিয়োতে

(vi) ‘ইকো ক্লাব’ হল একটি—
(a) ধর্মীয় সংস্থা
(b) সংবাদ সংস্থা
(c) উৎপাদন কেন্দ্ৰ
(d) পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা

উত্তরঃ (d) পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা

(vii) “শিক্ষা হল মানুষের অন্তর্নিহিত সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ” – একথা বলেছেন—
(a) ডিউই (b) বিবেকানন্দ (c) রবীন্দ্রনাথ
(d) গান্ধিজি

উত্তরঃ (b) বিবেকানন্দ

(viii) আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা হল—
(a) শিশুকেন্দ্রিক (c) পাঠক্রমকেন্দ্রিক
(b) শিক্ষককেন্দ্রিক (d) বিদ্যালয়কেন্দ্রিক

উত্তরঃ (a) শিশুকেন্দ্ৰিক

(ix) ‘এডুকেয়ার’ (Educare) কথাটির অর্থ কী ?
(a) নির্দেশদান করা (b) প্রকাশ করা
(c) শিক্ষাদান করা (d) পরিচর্যা করা

উত্তরঃ (d) পরিচর্যা করা


👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈


2. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্ন গুলি লক্ষণীয়) : 1x 5 = 5

(i) সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার একটি বা দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার দুটি বৈশিষ্ট্য হল- এটি (১) শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষার্থীর মধ্যে জ্ঞানের সঞ্চালন ঘটায় এবং (২) স্মৃতি, কল্পনা, বিচারক্ষমতা প্রভৃতি কয়েকটি মৌলিক শক্তির বিকাশে সাহায্য করে।

(ii) মধ্যযুগে ভারতের শিক্ষার যে-কোনো একটি লক্ষ্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ মধ্যযুগে ভারতের শিক্ষার একটি লক্ষ্য হল- ‘চরিত্রবান ও ধার্মিক মানুষ সৃষ্টি করা’।

অথবা,

ভারতের শিক্ষার যে-কোনো একটি জাতীয় লক্ষ্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ভারতের শিক্ষার একটি জাতীয় লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক ও জাতীয় সংহতি স্থাপন করা।

(iii) পাঠক্রমের একটি মৌলিক নির্ধারক উপাদান উল্লেখ করো।

উত্তরঃ শিক্ষার উদ্দেশ্য বা শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্য।

(iv) পাঠ্যসূচি বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ পাঠ্যসূচি বলতে বোঝায় কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য শিক্ষার্থীদের উপযোগী পাঠ্য কোনো বিষয়ের নির্বাচিত অংশ (Content area ) যাকে মূল্যায়নের ক্ষেত্র হিসেবে সীমিত রাখা হয়।

অথবা,

একটি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির নাম উল্লেখ করো।

উত্তরঃ একটি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি হল সাহিত্যচর্চা।

(v) একজন আদর্শ শিক্ষকের দুটি গুন উল্লেখ করো।

উত্তরঃ একজন আদর্শ শিক্ষকের দুটি গুন হল- (১) আদর্শ ব্যক্তিত্ব ও উন্নত জীবনাদর্শ, (২) দায়িত্ববোধ।

অথবা,

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা অসংগঠিত। এক্ষেত্রে শিক্ষার স্তর বলে কিছু নেই।

3. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) : 8×2 =16

(i) শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ শিক্ষার যে সকল লক্ষ্য সমাজকে কেন্দ্র করে স্থির হয়, সেগুলিকে শিক্ষার সমাজতান্তিক লক্ষ্য বলে। শিশু সমাজে জন্মগ্রহণ করে। সমাজের কোলেই সে লালিতপালিত হয়। সমাজের মধ্যেই শিশু কালক্রমে ব্যক্তিতে পরিণত হয়। সমাজের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করে, সমাজের সমৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে সে একজন সুস্থ নাগরিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। একেই আমরা সামাজিক বিকাশ বলি। শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক বিকাশ ঘটিয়ে নিম্নলিখিত কর্মসূচিগুলি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে সাহায্য করা।

(১) সামাজিক প্রক্রিয়া আত্মীকরণঃ সহযোগিতা, প্রতিযোগিতা, দ্বন্দ্ব, বোঝাপড়া প্রভৃতি সামাজিক প্রক্রিয়াগুলি ব্যক্তি আয়ত্ত করে সমাজে বাস করতে গিয়ে। বিদ্যালয় হল সমাজেরই একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ। বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন ও অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীরাও সামাজিক প্রক্রিয়াগুলি আয়ত্ত করে।

(২) সামাজিক চেতনা বৃদ্ধিঃ বিদ্যালয়ে আসার পর শিশু বিভিন্ন সামাজিক পটভূমি থেকে আসা সমবয়সিদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পায়, পরস্পরের টিফিন ভাগ করে খেতে শেখে। একজন যদি পেনসিল, রবার, স্কেল আনতে ভুলে যায় তাহলে অন্য একজন তাকে সাহায্য করে। এইভাবে সামাজিক চেতনা বৃদ্ধি পায়।

(৩) সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারঃ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বলতে বোঝায় সমাজের প্রতি অনুভূতিশীল হওয়া, সমাজের মঙ্গল কামনা করা, সামাজিক উন্নতিতে অংশগ্রহণ করা, সামাজিক ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করা, সামাজিক বিভেদ দূর করা, সামাজিক ন্যায়ের প্রতি আস্থা রাখা ইত্যাদি। এই দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্তিকে একদিকে যেমন সামাজিক কাজে দক্ষ করে তোলে, অন্যদিকে জাতীয়তাবোধ এবং আন্তর্জাতিকতাবোধের বিকাশে সাহায্য করে।

(৪) সামাজিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানঃ প্রতিটি সমাজেই বিভিন্ন রকমের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। সামাজিক সমস্যার প্রতিরােধ ও সমাধানে শিশুকে দক্ষ করে তােলাই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। শিক্ষার্থীকে একদিকে যেমন সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়ােজন, অন্যদিকে সমস্যাসমাধানে কী করণীয়, সে বিষয়েও তাকে অবহিত করা দরকার।

(৫) সামাজিক দায়িত্বপালনঃ শিক্ষা সামাজিক বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে সামাজিক দায়িত্বপালনে সক্ষম করে তোলে। এই দায়িত্বপালন করার জন্য যা যা প্রয়োজন, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই সে লাভ করে। যেমন, পরিবারের আর্থিক উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করা সব শিক্ষার্থীরই দায়িত্ব।

(৬) সামাজিকীকরণঃ সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে শিক্ষার্থী সামাজিক আদবকায়দা, রীতিনীতি, নিয়মশৃঙ্খলা, দায়দায়িত্ব, ঐতিহ্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং ব্যক্তিজীবনের আচার-আচরণে তা প্রতিফলিত হয়। একেই সামাজিকীকরণ বলে। তাই সামাজিকীকরণ শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

(৭) সামাজিক মূল্যবোধ গঠনঃ সামাজিক মূল্যবোধ গঠন সামাজিক বিকাশের একটি বিশেষ দিক। প্রতিটি সমাজেরই কিছু মূল্যবোধ থাকে। সমাজের স্থায়িত্ব ও গভীরতা অনেকাংশে তার মূল্যবোধের ওপরই নির্ভর করে।

(৮) সামাজিক প্রগতিতে অংশগ্রহণঃ শুধুমাত্র সামাজিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করাই সামাজিক সদস্য হিসেবে শিক্ষার্থীর পক্ষে যথেষ্ট নয়। সমাজের প্রগতিতে তার ভূমিকা থাকাটাও প্রত্যাশিত।

(৯) সমাজ সংরক্ষণঃ সমাজের রীতিনীতি, প্রথা এবং সামাজিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা সমাজের সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শিক্ষার্থীদের এই দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিকাশের মধ্য দিয়ে শিক্ষা এই লক্ষ্যটি পূরণে সচেষ্ট হয়।

(১০) সামাজিক সঞ্চালনঃ সমাজের রীতিনীতি, প্রথা এবং সামাজিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের হাতে ওইগুলি তুলে দেওয়া সামাজিক সদস্য হিসেবে প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিকাশের মধ্য দিয়ে শিক্ষা এই লক্ষ্যটির বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়।

উপরিউক্ত আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে, ব্যক্তির বিকাশের পাশাপাশি সমাজের বিকাশও শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। প্রকৃতপক্ষে সমাজ তার স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শিক্ষা কর্মসূচির ব্যবস্থা করেছে। এই কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়েই প্রতিটি শিক্ষার্থী জানবে কীভাবে সে সমাজের স্বার্থ এবং সামাজিক প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।

(ii) পাঠক্রম বলতে কী বোঝ ? একটি আধুনিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্যগুলি বর্ণনা করো। 2+6

উত্তরঃ

পাঠক্রমঃ পাঠক্রম শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ “শিক্ষার্থীকে শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার পথ বা মাধ্যম”।

পাঠক্রম বলতে বোঝায়- শিক্ষার্থীদের সমস্ত রকমের অভিজ্ঞতা যা দ্বারা শ্রেণীকক্ষে, কর্মশালায়, খেলার মাঠে এবং শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে লাভ করে। এই অর্থে বিদ্যালয়ের সমগ্র জীবনই পাঠক্রম যা শিক্ষার্থী জীবনে সমস্ত ক্ষেত্রেই স্পর্শ করে এবং সুসংহত ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলে।

পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য বা আধুনিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Curriculum) :
শিক্ষা একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে সংগতি রেখে পরিবর্তিত হচ্ছে শিক্ষার গুরুপ্তপূর্ণ উপাদান পাঠক্রম। পাঠক্রম সংক্রান্ত আধুনিক ধারণা বিশ্লেষণ করলে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

(১) লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ভরঃ পাঠক্রমের মূল কাঠমো শিক্ষার মূল লক্ষ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই পাঠক্রমে বিষয়বস্তু, পরিবেশ ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় সাধন করা হয়।

(২) শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশে সহায়কঃ শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের সঙ্গেসঙ্গে দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক, বৃত্তিমূলক বিকাশ; এককথায় সর্বাঙ্গীন বিকাশ। তাই শিক্ষার্থীর সমস্ত দিকের বিকাশের উপযোগী বিভিন্ন অভিজ্ঞতাই আধুনিক পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত।

(৩) পরিবর্তনশীলতাঃ পাঠক্রম একটি প্রবহমান ও গতিশীল প্রক্রিয়া। আধুনিক প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন,

আর্থসামাজিক অবস্থা ও পরিবেশ, জনসংখ্যার বৃদ্ধি, উন্নয়নের পরিবর্তনশীল গতি ও প্রেক্ষাপটে শিক্ষার লক্ষ্যের নিরন্তর বিবর্তন ঘটছে। তাই পরিবর্তনশীল জগতে ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবনের সহায়ক বিষয়বস্তু ও অভিজ্ঞতা নিরন্তর সংযোজিত হচ্ছে।

(৪) তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিকঃ পাঠক্রমের মাধ্যমেই শিক্ষা নামক জীবন প্রক্রিয়াকে সুনির্দিষ্ট ও পরিকল্পিত পথে পরিচালিত করা হয়। এর একটি তাত্ত্বিক দিক আছে, তেমনি ব্যবহারিক উপযোগিতাও লক্ষ্য করার মতো।

(৫) বিষয়গুলি পরিপুরকঃ পাঠক্রমের বিষয়বস্তুগুলি একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও পরিপূরক।

(৬) শ্রেণিকক্ষের মধ্যে ও বাইরে বিস্তৃতঃ শিক্ষার্থীর জ্ঞানমূলক বিকাশের উপযোগী বিষয়বস্তুগুলির আলোচনা শ্রেণিকক্ষের মধ্যে সম্ভব হলেও, দৈহিক ও মানসিক বিকাশের উপযোগী জ্ঞান শ্রেণিকক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, আধুনিক বিকাশমুখী পাঠক্রমের দুটি অংশ—

(১) শ্রেণিকক্ষের পঠন-পাঠনের কাজ, (২) শ্রেণিকক্ষ বহির্ভূত কাজ।

(৭) আদর্শগত ও বাস্তবসম্মত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিতঃ পাঠক্রমের ভিত্তি হল তার আদর্শগত ও বাস্তবগত দিক। কারণ কেবল আদর্শের দিকে লক্ষ রেখে পাঠক্রম সংগঠিত করলে শিক্ষার্থীকে হয়তো সামাজিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ করা যাবে, কিন্তু বাস্তব জ্ঞানের অভাবে সে জীবনসংগ্রামে পিছিয়ে পড়বে। তাই আদর্শ ও বাস্তব দুটি দিকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

(৮) তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক দিকসম্পন্নঃ আধুনিক পাঠক্রমে দুটি দিক দেখা যায়—তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক। শিক্ষার্থীকে সুপরিকল্পিত পথে পরিচালনার জন্য পাঠক্রমের তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক উভয় দিকই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

(৯) চাহিদা ও সামর্থ্যভিত্তিকঃ পাঠক্রম প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, চাহিদা ও সামর্থ্যের ওপর যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়, তেমনই চাহিদা ও সামর্থ্যের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বিভিন্নতা রয়েছে, তার প্রতিও লক্ষ রাখা হয়ে থাকে।

ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আধুনিক পাঠক্রম হল অভিজ্ঞতানির্ভর, পরিবর্তনশীল জীবনকেন্দ্রিক, কর্মভিত্তিক, চাহিদাভিত্তিক ও উদ্দেশ্যমুখী।

অথবা,

প্রথাবহির্ভূত বা নিয়মবহির্ভূত শিক্ষা বলতে কী বোঝো ? নিয়ম বহির্ভূত শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো। 2+6

উত্তরঃ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার সংজ্ঞাঃ—

শিক্ষাবিদ জে. পি. নায়েক প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বাইরে সংগঠিত শিক্ষাব্যবস্থাকে শিক্ষা বলে। কুম্বস্ এবং আহমেদ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার সংজ্ঞায় বলেছেন一

এই শিক্ষাব্যবস্থা প্রথাগত বিদ্যালয়ের বাইরে সংগঠিত একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।

এই শিক্ষাব্যবস্থা নির্দিষ্ট শিখন পরিস্থিতিতে সম্পন্ন হয়।

এই শিক্ষাব্যবস্থা নির্দিষ্ট জনগণের (শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক) জন্য স্থির করা হয়।

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য—

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় সেগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল一

(১) প্রাসঙ্গিকতাঃ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার কর্মসূচি প্রয়ােজনভিত্তিক এবং সকল বয়সের শিক্ষার্থীদের চাহিদার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হয়।

(২) নমনীয়তাঃ নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষার কড়াকড়ি প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় একেবারেই নেই। এই শিক্ষাব্যবস্থা সময়, স্থান, ব্যাপ্তি, হাজিরা, পাঠ্যসূচি, পদ্ধতি এবং মূল্যায়ন প্রভৃতি দিক থেকে অত্যন্ত নমনীয়।

(৩) ব্যবহারিক দিকঃ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক উভয় ক্ষেত্রের ওপর পাঠদান বা কর্মসূচি গ্রহণের ব্যবস্থা থাকে।

(৪) বিদ্যালয়ছুট শিক্ষার্থীদের পুনরায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগঃ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় বিদ্যালয়ছুট শিক্ষার্থীদেরও শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

(৫) নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকাঃ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় সময়সীমা নির্দিষ্ট থাকে না। শিক্ষার্থী নিজের কাজের ফাকে যে-কোনাে সময়ে পড়াশােনা করতে পারে।

(৬) বয়সসীমা না থাকাঃ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে। কোনাে নির্দিষ্ট বয়সসীমা থাকেনা।

(৭) নির্দিষ্ট শিক্ষালয় না থাকাঃ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার পঠনপাঠন চার দেয়ালে ঘেরা কোনাে নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয় না।

(৮) কম খরচে শিক্ষার সুবিধাঃ প্রথাগত শিক্ষার তুলনায় প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার খরচ অনেক কম।

(৯) পাঠক্রম নির্বাচনে স্বাধীনতাঃ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা নিজের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী আলাদা আলাদা পাঠক্রম নির্বাচন করতে পারে।

(১০) মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার নমনীয়তাঃ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মতাে কঠোর নয়। একসঙ্গে সব পত্রের পরীক্ষায় না বসলেও চলে।

(১১) জীবনব্যাপী জ্ঞানলাভের সুবিধাঃ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় যেহেতু শিক্ষার্থীর বয়সজনিত কোনাে বাধা নেই, শিক্ষার্থী তাই জীবনব্যাপী পড়াশােনা করতে পারে এবং এই শিক্ষার মধ্য দিয়ে সারাজীবন ধরে নতুন নতুন তথ্য ও জ্ঞান অর্জনের সুযােগ পায়।

(১২) নির্দেশভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থাঃ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় স্টাডি মেটিরিয়াল বিশেষভাবে প্রস্তুত করে এবং বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়ে শিক্ষার্থীর কাছে পাঠানাে হয়।

(১৩) বিশেষ ধরনের সাহায্যদানঃ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল কোনাে কারণে কোনাে শিক্ষার্থী প্রথাগত শিক্ষাগ্রহণে অপারগ হলে, এই শিক্ষাপদ্ধতি তাদের শিক্ষাগ্রহণে সাহায্য করে।

প্রথাগত বা বিধিবদ্ধ শিক্ষার সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য প্রথাবহির্ভূত বা প্রথামুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হলেও এই শিক্ষাব্যবস্থাও সম্পূর্ণ দুটিমুক্ত নয়। তবে সমাজের বিস্তৃত অংশের মানুষের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ায় এই শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য।

Group-B (Mark – 30)

4. নিম্নলিখিত বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলি থেকে সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করে লেখো : 1×9=9

(i) মনোবিদ্যাকেন, ‘চেতনার অনুশীলনকারী বিজ্ঞান’- এটির প্রবক্তা হলেন—
(a) উইলিয়াম জেমস (c) পিলসবারি
(b) ম্যাকডুগাল (d) ওয়াটসন

উত্তরঃ (a) উইলিয়াম জেমস।

(ii) ‘কাসা দাই বামদিনি’ – এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন—
(a) মন্তেসরি (c) রুশো (b) ফ্রয়েবেল (d) ডিউই

উত্তরঃ (a) মন্তেসরি

(iii) কিন্ডারগার্টেনে যে উপকরণটি ব্যবহৃত হয় সেটি হল—
(a) কম্পিউটার (b) রেডিয়ো (c) ব্ল্যাকবোর্ড (d) মাদার প্লে

উত্তরঃ (d) মাদার প্লে।

(iv) পরিণমন হল একটি __________ প্রক্রিয়া।
(a) কৃত্রিম (b) স্বাভাবিক (c) জটিল (d) সরল

উত্তরঃ (b) স্বাভাবিক।

(v) ‘পুনরুদ্রেক’ কথাটির অর্থ হল
(a) চেনা (b) মনে করা (c) দেখা (d) অভিজ্ঞতা

উত্তরঃ (b) মনে করা।

(vi) পিলসবারি বলেছেন প্রত্যক্ষণ হল __________ ও স্মৃতির সংমিশ্রণ।
(a) সংবেদন (b) পুনরুদ্রেক (c) ধারণা। (d) বুদ্ধি

উত্তরঃ (a) সংবেদন

(vii) বিখ্যাত মনোবিদ জোনস্ জীবন বিকাশের স্তরগুলিকে _________ ভাগে ভাগ করেছেন।
(a) চারটি (b) দশটি (c) পাঁচটি (d) আটটি

উত্তরঃ (a) চারটি

(viii) জ্ঞান আহরণের প্রথম প্রক্রিয়াটি হল—
(a) প্রত্যক্ষণ (b) সংবেদন (c) ধারণা (d) পরিণমন

উত্তরঃ (b) সংবেদন

(ix) বাল্যকালে শিশুর প্রথাগত শিক্ষাকে বলা হয়—
(a) প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা
(b) প্রাথমিক শিক্ষা
(c) মাধ্যমিক শিক্ষা
(d) উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা

উত্তরঃ (b) প্রাথমিক শিক্ষা

5. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) : 1x 5 = 5

(i) ‘Text book of Psychology’ গ্রন্থের লেখক কে ?

উত্তরঃ ‘Text book of Psychology’ গ্রন্থের লেখক মেরি এলেন ফোলে (Mary Allen Foley)

(ii) বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে একটি পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বুদ্ধি পরিমাণগত ও পরিমাপযোগ্য কিন্তু বিকাশ গুণগত ও পর্যবেক্ষণসাপেক্ষ।

(iii) ICDS কর্মসূচি কোথায় গ্রহণ করা হয় ?

উত্তরঃ ভারত সরকার 1975-এ প্রথম ICDS কর্মসূচি গ্রহণ করে। মা এবং ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিসেবা, অনুপূরক খাদ্য সরবরাহ এবং প্রাক্-বিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে ICDS কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

অথবা,

কিন্ডারগার্টেনে চারাগাছ ও মালি কারা ?

উত্তরঃ কিন্ডারগার্টেনে শিশুরা হচ্ছে চারাগাছ, শিক্ষিকারা হলেন মালি।

(iv) ধারণা গঠনের একটি নিয়মের উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ধারণা গঠনের জন্য প্রথমে নির্দিষ্ট শ্রেণীর বিভিন্ন বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

(v) সংবেদন ও প্রত্যক্ষণের মধ্যে একটি পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সংবেদন বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা তৈরি করে কিন্তু প্রত্যক্ষণ বস্তু সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা তৈরি করে।

6. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়)। 8×2 = 16

(i) সংবেদন কাকে বলে ? শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদনের গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তরঃ সংবেদন হল উদ্দীপনার জন্য প্রাথমিক অনুভূতি বা চেতনাবোধ। সংবেদন প্রাণীকে জগৎ সম্পর্কে অবহিত করে এবং এ সংবেদনের মাধ্যমেই প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন উদ্দীপক (যেমন – শব্দ, তাপ, আলো) ইন্দ্রিয়ে আঘাত করলে (যেমন – কান, ত্বক, চোখ) যে অনুভূতি বা সচেতনতার সৃষ্টি হয় তাকেই সংবেদন বলে।
(২০১৪ সালের প্রশ্ন দেখো।)

(ii) শিখন বলতে কী বোঝো ? শিখন ও পরিণমনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ শিখন হলো নতুন কোন জ্ঞান, অভিজ্ঞতা অর্জন, দক্ষতা বা দৃষ্টিভঙ্গি যা প্রাণীকে অভিযোজিত হতে সাহায্য করে। অর্থাৎ নতুন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রাণীর আচরণের মধ্যে যে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটায় তাকে শিখন (Learning) বলা হয়। অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নতুন কোনো কিছু আয়ত্ত করার নাম শিখন।

আমরা বলতে পারি, অভিজ্ঞতা ও অনুশীলনের মাধ্যমে আচরণের যে অপেক্ষাকৃত স্থায়ী পরিবর্তন সাধিত হয় তাকে শিখন বলে।

শিখন ও পরিনমনের মধ্যে পার্থক্যঃ

(১) যে মানসিক প্রক্রিয়া অতীত অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের প্রভাবে আচরণ ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে ব্যক্তির মানসিক বিকাশের মাধ্যমে তাকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে অভিযোজন করতে সাহায্য করে তাই হলো শিখন।
অন্যদিকে, পরিনমন হল শিশুর জন্মগত সম্ভাবনা গুলির বাস্তবায়িত হওয়ার প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে শিশুর আচরণের পরিবর্তন ঘটে।

(২) শিখন অনুশীলন নির্ভর প্রক্রিয়া। কিন্তু পরিনমন অনুশীলন নির্ভর নয়।

(৩) শিখন এর ফলে মানসিক পরিবর্তন হয়। পরিণমনের ফলে জৈবিক পরিবর্তন হয়।

(৪) শিখন একটি উদ্দেশ্য ভিত্তিক ও লক্ষ্য অভিমুখী প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, পরিণমন প্রক্রিয়াটি উদ্দেশ্যভিত্তিক নয়। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

(৫) শিখন ব্যক্তির চাহিদা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ব্যাক্তি তার চাহিদা পূরণের জন্য নতুন আচরণ সম্পন্ন করে। পরিণমন চাহিদার ওপর নির্ভরশীল নয়।

(৬) শিখনের জন্য পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। পরিণমনের ক্ষেত্রে কোন পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না।

(৭) শিখন একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া ব্যক্তিজীবনে চলতে থাকে। পরিণমন একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ঘটে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে বৃদ্ধি একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছালে পরিণমন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

(৮) শিখন একটি সক্রিয়তা ভিত্তিক প্রক্রিয়া। শিখনের জন্য প্রাণীর সক্রিয়তা অপরিহার্য। পরিণমনের ক্ষেত্রে প্রাণীর সক্রিয়তার কোন প্রয়োজন নেই। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

অথবা,

কৈশোর বলতে কী বোঝো ? কৈশোরের মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো ।

উত্তরঃ

কৈশোর বা কৈশর (ইংরেজি: Adolecence) হল শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করার মধ্যবর্তী দশা। এ সময় জুড়ে বিভিন্ন রকম শারীরিক পরিবর্তন ঘটে এবং আকস্মিক হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মানসিক আবেগের তীব্রতার উত্থান পতন ঘটে থাকে, যা বয়ঃসন্ধি নামে পরিচিত।

ডরােথি রােজার্সের মতে, বয়ঃসন্ধিকাল হলো জীবনের এমন একটি সময় যখন সমাজ ব্যক্তিকে শিশু হিসেবেও গণ্য করে না, আবার প্রাপ্তবয়স্কদের মর্যাদাও দেয় না। মনােবিদ এ. টি. জারসিল্ডের মতে, বয়ঃসন্ধি হল এমন একটি বয়ঃস্তর যে সময়ে ছেলেমেয়েরা মানসিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক ও দৈহিক দিক থেকে বাল্যকাল থেকে বয়স্ককালের পথে এগিয়ে চলে।

কৈশোরের মানসিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যঃ

কৈশোরকালে প্রধান মানসিক পরিবর্তন দেখা যায় ছেলেমেয়েদের অনুভূতির জগতে। দেহের পরিবর্তন, ইন্দ্রিয় শক্তির পূর্ণতা লাভ এবং যৌনগ্রন্থিগুলির পরিপূর্ণ বিকাশ এ সময় মানসিক স্তরে এক বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই সময়কার মানসিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

(১) ভাবালু ও আবেগপ্রবণতা গুণের বিকাশঃ এইসময় ছেলেমেয়েরা ভাবালু ও আবেগপ্রবণ হয়। তারা নানা আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। মনে মনে কোনো মহাপুরুষ বা বীরের আদর্শ অনুসরণ করার চেষ্টা করে। এই বয়সে তাদের মধ্যে বীরপূজার প্রবণতা দেখা দেয়।

(২) স্মৃতি ও কল্পনার বিকাশঃ এইসময়ে
ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্মৃতি ও কল্পনা শক্তি
বিকশিত হয়।

(৩) সিদ্ধান্ত নেওয়ার সামর্থ্য অর্জনঃ এই
সময়ে ছেলেমেয়েরা যে-কোনো বিষয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার পাশাপাশি যুক্তি ও বিচার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে
পারে।

(৪) নীতিবোধের বিকাশঃ এই বয়সে পৌঁছালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে নীতিবোধের ধারণা গড়ে ওঠে।

(৫) সামাজিকীকরণের সামর্থ্যের বিকাশঃ কৈশোরকালে পৌঁছালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে যুক্তি, বিশ্লেষণ ও সামাজিকীকরণের সামর্থ্যের বিকাশ ঘটে।

কৈশোরের বৌদ্ধিক বিকাশের বৈশিষ্ট্য—

কৈশোরকালে ছেলেমেয়েদের বুদ্ধির চূড়ান্ত বিকাশ ঘটে। তবে এই বয়সে বুদ্ধি বিকাশের ক্ষেত্রে গতি ও প্রকৃতির মধ্যে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। আধুনিক মনোবিদদের মতে,বুদ্ধি বিকাশের ক্ষেত্রে একটি চরম সীমা থাকে। বড়োজোর 18 বছর বয়স পর্যন্ত বুদ্ধির বিকাশ চলে। কিন্তু কৈশোরকাল 12 থেকে শুরু হয়ে 20-21 বছর বয়স পর্যন্ত চলতে পারে। সুতরাং কৈশোরকাল বুদ্ধির চরম বিকাশের কাল না- হলেও এ সময়ই যে, বুদ্ধি বিকাশের প্রশস্ত ক্ষেত্র সেবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই স্তরের বৌদ্ধিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

(১) বৌদ্ধিক বিকাশ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়ঃ এই পর্যায়ে ছেলেমেয়েদের সব ধরনের বিমূর্ত ধারণা গঠন সম্পূর্ণ হয়ে যায়। যেসকল ধারণা কৈশোরের আগে পর্যন্ত অস্পষ্ট ছিল যেমন জীবের জন্মমৃত্যুর ঘটনা, স্ত্রী-পুরুষের প্রেম ইত্যাদি, সেগুলি এই পর্যায়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বুদ্ধির বিকাশের কারণে ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন ধরনের সৃজনাত্মক কাজে অংশগ্রহণের জন্য অগ্রসর হয়।

(২) বুদ্ধির পরিপক্কতার প্রকাশ ঘটেঃ এই পর্যায়ে ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন ইতিবাচক কাজ, সামাজিক আচার-আচরণ ও চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে বুদ্ধির পরিপক্বতা প্রকাশিত হতে থাকে। এইসময় ছেলেমেয়েরা কেবল পুথিগত জ্ঞানের মধ্যে আটকে না- থেকে নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হয়।

(৩) রহস্য উদঘাটনে এগিয়ে আসেঃ কৈশোরে পৌঁছালে বহু ছেলেমেয়ে আপনা থেকেই বিভিন্ন ধরনের রহস্যমুলক কাজের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং রহস্য উদঘাটনে অগ্রসর হয়।

(৪) অবরোহ পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ঃ কৈশোরকালে পৌঁছালে ছেলেমেয়েদের বুদ্ধির বিকাশ এমনভাবে ঘটে যে, ওই পর্যায়ে তারা আরোহ পদ্ধতি অপেক্ষা অবরোহ পদ্ধতিতে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণে উৎসাহী হয়। এই পর্যায়ে আপন বুদ্ধি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে যুক্তির জাল বুনে নতুন সত্যে উপনীত হতে চেষ্টা করে।

Group-C (Mark – 20)

7. নিম্নলিখিত বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলি থেকে সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করে লেখো : 1×6=6

(i) কোন্ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৌদ্ধ শিক্ষার সূচনা ঘটত ?
(a) প্রব্রজ্যা (b) সমাবর্তন (c) উপনয়ন (d) উপসম্পদা

উত্তরঃ (a) প্রব্রজ্যা

(ii) ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ছিল—
(a) পারস্পরিক সেবামূলক
(b) বন্ধুর মতো
(c) গুরু-শিষ্যের মতো
(d) পিতা-পুত্রের মতো

উত্তরঃ (d) পিতা-পুত্রের মতো

(iii) সিমলা ‘শিক্ষা সম্মেলন’ হয়েছিল—
(a) 1895 সালে (b) 1890 সালে
(c) 1901 সালে (d) 1905 সালে

উত্তরঃ (c) 1901 সালে

(iv) সার্জেন্ট পরিকল্পনা গঠিত হয়েছিল—
(a) 1934 সালে (c) 1954 সালে
(b) 1924 সালে (d) 1944 সালে

উত্তরঃ (d) 1944 সালে

(v) ‘ব্রাহ্মসমাজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন—
(a) রামমোহন (b) গান্ধিজি
(c) বিদ্যাসাগর (d) বিবেকানন্দ

উত্তরঃ (a) রামমোহন

(vi) ‘মাতৃভাষাই মাতৃ দুগ্ধ’-এটির প্রবক্তা হলেন—
(a) বিদ্যাসাগর (b) গান্ধিজি
(c) রামমোহন (d) রবীন্দ্রনাথ

উত্তরঃ (d) রবীন্দ্রনাথ

৪. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্ন গুলি লক্ষণীয়) : 1×6=6

(i) ‘সমাবর্তন প্রথা’ কী ?

উত্তরঃ পরিবর্তী বৈদিক যুগে যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষাক্রমটি শেষ করা হত তার নাম সমাবর্তন।

অথবা,

প্রব্রজ্যা কী ?

উত্তরঃ বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা শুরু হত, তাকে প্রব্রজ্যা বলে। প্রব্রজ্যার মাধ্যমে যে শিক্ষার্থীরা সংঘে প্রবেশ করত তাদের বলা হত শ্ৰমণ।

(ii) ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান কী ছিল ?

উত্তরঃ ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছিল ‘মাদ্রাসা’ ।

(iii) ভারতে প্রথম শিক্ষা কমিশনটির নাম কী ?

উত্তরঃ ভারতে প্রথম শিক্ষা কমিশনটির নাম হান্টার কমিশন

অথবা,

সনদ আইন কত সালে প্রবর্তিত হয় ?

উত্তরঃ 1813 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন প্রবর্তিত হয়।

(iv) হান্টার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে ‘A কোর্স’ বলতে কী বোঝো ?

উত্তরঃ হান্টার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, A কোর্সের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রস্তুতির জন্য তত্ত্বমূলক শিক্ষাগ্রহণ করবে।

অথবা,

স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ‘ইন্টারমিডিয়েট’ স্তর কোনটিকে বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ দশম শ্রেণির পাঠ তথা ম্যাট্রিকুলেশনের পরের আরও দুই বছরে অতিরিক্ত পাঠ হল ইন্টারমিডিয়েট স্তর।

(v) কে বেদান্ত মহাবিদ্যালয় স্থাপন করেন ?

উত্তরঃ রামমোহন রায় বেদান্ত মহাবিদ্যালয় স্থাপন করেন।

(vi) শিক্ষাসত্র কী ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 1824 খ্রিস্টাব্দে শ্রীনিকেতনে যে গ্রামীন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, তার নাম ছিল শিক্ষাসত্র।

অথবা,

ওয়ার্ধা পরিকল্পনা কী ?

উত্তরঃ শিল্পকেন্দ্রিক স্বনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করার উদ্দেশ্যে 1937 খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ওয়ার্ধায় ড. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে সাতটি প্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলন ‘ওয়ার্ধা পরিকল্পনা’ নামে পরিচিত।

9. নিম্নলিখিত যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নটি লক্ষণীয়) : 8×1=8

(i) প্রাচীন ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ তক্ষশিলা ছিল প্রাচীন ভারতের উচ্চশিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বৈদিক যুগে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা হলেও এটি বৌদ্ধযুগ পর্যন্ত স্থায়িত্ব লাভ করেছিল। নীচে এই শিক্ষাকেন্দ্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করা হল―

(১) অবস্থানঃ তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল বর্তমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাওয়ালপিণ্ডির নিকটবর্তী অঞ্চলে।

(২) শিক্ষাব্যবস্থাঃ তক্ষশিলায় শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা দেওয়া হত। শিক্ষার্থীরা আসত ষােলাে বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ আবাসিক ছিল না, গুরুগৃহে বা পৃথকভাবেও থাকা যেত। শূদ্রদের পঠনপাঠনের কোনােরূপ ব্যবস্থা তক্ষশিলায় ছিল না।

(৩) শিক্ষার্থীর ব্যয়ঃ তক্ষশিলায় শিক্ষার্থীদের বেতন দিয়ে পড়তে হত। অবস্থাপন্ন শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ শিক্ষাক্রমের বেতন ভরতির সময়ে এবং অন্যরা শিক্ষার শেষের দিকে বেতন দিত। দরিদ্র এবং মেধাবী শিক্ষারথীরা অর্থ দিতে না পারলে তার বিনিময়ে গুরুগৃহে নানা ধরনের দৈহিক পরিশ্রম করত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেতন হিসেবে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা জমা দিতে হত। অনেক সময় ধনী ব্যক্তিরা দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার খরচ বহন করতেন।

(৪) গুরুর ক্ষমতাঃ তক্ষশিলার উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রে পুরুরা অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে, নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাঠ দান। করতেন। গুরুই শিক্ষার্থী নির্বাচন এবং পাঠক্রম নির্ধারণ করতেন।

(৫) পাঠক্রমঃ তক্ষশিলার উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিতে বেদ, জ্যোতির্বিজ্ঞান, কারিগরিবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, বাণিজ্য, কৃষি, হিসাবরক্ষণ, শিল্পকলা, অঙ্কন, যুদ্ধবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদান করা হত।

(৬) শিক্ষাদান পদ্ধতি ও মূল্যায়নঃ তক্ষশিলায় মৌখিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা হত। তবে লিপি এবং পুথির প্রচলনও ছিল। তক্ষশিলায় শিক্ষাক্রম শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের কোনােরকম পরীক্ষা নেওয়া হত না। শুধু তাই নয়, শিক্ষাশেষে কোনাে প্রকার শংসাপত্রও দেওয়া হত না।

(৭) শৃঙ্খলাঃ তক্ষশিলার শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়কেই কতকগুলি নিয়ম মেনে চলতে হত। আর্থিক সংগতি ও মর্যাদা নির্বিশেষে, সবাইকে নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসারে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হত।

(৮) বিশেষ উৎকর্ষকেন্দ্রঃ তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎকর্ষকেন্দ্র। সেখানে শিক্ষার্থীরা সাত বছর ধরে অধ্যয়ন করত। শল্যচিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষভাবে পাঠদান করা হত। শুধুমাত্র চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের শেষে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হত। এ ছাড়া সেখানে ভেষজবিদ্যা সম্পর্কেও পঠনপাঠনের ব্যবস্থা ছিল।

প্রাচীন ভারতে উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে তক্ষশিলা বিশেষ উল্লেখযােগ্য। সেখানকার উচ্চমানের শিক্ষা, বিশেষত ব্যাবহারিক শিক্ষা আজও শিক্ষাবিদরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

(ii) স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষাচিন্তা বিষয়ে আলোচনা করো।

উত্তরঃ শিক্ষায় স্বামী বিবেকানন্দের ভূমিকা – স্বামী বিবেকানন্দ একজন সন্ন্যাসী হবার সাথে সাথে মানুষের পথপ্রদর্শক ছিলেন সেই ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা দর্শন আমরা স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও বিভিন্ন ভাষণ এর মাধ্যমে জানতে পারি।

স্বামী বিবেকানন্দ মানবকল্যালনের জন্য শিক্ষার অবদান অসীম বলে মনে করতেন। কিন্তুু তিনি শিক্ষা বলতে তৎকালীন পারম্পরিককে শিক্ষাকে বোঝনি বরং তিনি এমন শিক্ষার কথা বলেছেন যা মানুষ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করতে পারে অর্থাৎ শিক্ষা হবে ব্যবহারিক ও যে শিক্ষার দ্বারা মানুষের আধ্যাত্মিক বিকাশ ঘটবে। তাই স্বামীজী শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন – “মানবের অন্তর্নিহিত পূর্ণতার বিকাশ সাধনই হল শিক্ষা।”

স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা ও দর্শন – স্বামী বিবেকানন্দ যে শিক্ষা বিস্তারের কথা বলেছেন সেই শিক্ষার মূল ভিত্তি হবে ধর্ম এবং সেই ধর্মে বৈজ্ঞানিক অনুশীলন থাকবে, থাকবে তাত্ত্বিক ভাবনা। তবে স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা চিন্তা একটি ব্যাপক পটভূমিতে বিধৃত হয়েছে।

মানবজীবনের সমস্ত স্তর বা অবস্থার সাথে শিক্ষা কীভাবে যুক্ত থাকতে পারে, সে প্রসঙ্গে তিনি তাঁর নিজস্ব মতবাদ বারবার ব্যক্ত করেছেন। পাশ্চাত্য বিভিন্ন দেশে গিয়ে তিনি শিক্ষা বিস্তারের ব্যাপক আয়োজন প্রত্যক্ষ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে নিজের দেশে সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করেছেন। এই প্রসঙ্গে বলা হয়, সেই সময়কালে স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা সম্পর্কে যা চিন্তা ভাবনা করেছিলেন তা সমকালীন খুব কম মনিষী সেইভাবে শিক্ষা সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তা করেন।

স্বামী বিবেকানন্দ তার বিভিন্ন গ্রন্থ ও তার ভাষণের মাধ্যমে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি রুপ হওয়া উচিত এবং কেমন শিক্ষা মানব কল্যাণের জন্য গ্রহণ করা উচিত সেই প্রসঙ্গে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। সেই সময় তিনি বলছেন শিক্ষা সবার অধিকার এবং ভারতের সমগ্র মানুষের কাছে শিক্ষা পৌছিয়ে দিতে হবে।

স্বামী বিবেকানন্দ তার শিক্ষা চিন্তায় দুই ধরনের শিক্ষার কথা তুলে ধরেছেন–
নেতিমূলক শিক্ষা ও দ্বিতীয়টি হলো ইতিবাচক শিক্ষা।

নেতিমূলক শিক্ষাঃ তখনকার দিনে ব্রিটিশ ভারতে আমাদের বিদ্যালয় গুলিতে যে শিক্ষা ব্যবস্থার পদ্ধতি চালু ছিল স্বামীজী তাকে একেবারে নেতিবাচক শিক্ষা বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন নেতিমূলক শিক্ষা কোনো উন্নতি করে না এবং চরিত্র গঠনে জন্য উপযোগী নই। এই শিক্ষা মানুষে মানুষে বিভাজন রেখার জন্ম দেয়। একদল এই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অন্য দলের ওপর প্রভুত্ব করার অধিকার অর্জন করে।

ইতিবাচক শিক্ষাঃ ইতিবাচক শিক্ষা বলতে স্বামীজী যা বলেছেন – “আমরা সেই শিক্ষা চাই, যার দ্বারা চরিত্র গঠিত হয়। মনের জোর বাড়ে, বুদ্ধি বিকশিত হয় এবং মানুষ নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। মানুষ গঠন করাই সমস্ত শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য। স্বভাব অনুযায়ী মানুষকে বর্ধিত হতে দেওয়াই শিক্ষার লক্ষ্য যার দ্বারা ইচ্ছা শক্তি বিকশিত, বর্ধিত এবং সৎভাবে চালিত হয় সেটাই হল ইতিবাচক শিক্ষা।

তিনি বিশ্বাস করতেন যে, শিক্ষার একটি সুনির্দিষ্ট অভিমুখ থাকা দরকার। শিক্ষা শুধু টাকা রোজগারের পন্থা হবে না, শিক্ষা আমাদের বিকশিত করবে। আমরা আরও আত্মানুসন্ধানে হয়ে উঠব। পরিদৃশ্যমান পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনাবলী সম্পর্কে আমাদের মনে ঔৎসুক্য জাগবে।

স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষাদর্শন আলোচনায় শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য কি হওয়া দরকার সেই প্রসঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোর দিয়েছেন। স্বামীজির মতে শিক্ষার লক্ষ্য কি হওয়া উচিত সেই ব্যাপারে নিম্নে আলোচনা করা হলো—

(১) আবিষ্কার (২) স্বাধীনতা এবং (৩) আত্মপ্রত্যয় বা আত্মবিশ্বাস

(১) আবিষ্কারঃ আমরা কী এবং কাকে আবিষ্কার করি? আমরা আবিষ্কার করি নিজের সাহস এবং শক্তিকে। এই পৃথিবীর সকল মানুষই যে বিশ্ববিধাতার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ, সেই বিষয়টি আবিষ্কার করতে হয়। যখন আমাদের মধ্যে সত্যি সত্যি উপলব্ধি জাগ্রত হয়, তখন আমরা পাহাড়ের মতো উঁচু এবং বাতাসের মতো গতিবান হয়ে উঠি।

(২) স্বাধীনতাঃ শিক্ষার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল স্বাধীনতা। কীসের স্বাধীনতা? চিন্তার স্বাধীনতা ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা, নিজেকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা। স্বাধীনতাই শিক্ষার আসল বৈশিষ্ট্য। শিক্ষা মানুষকে স্বাধীনচেতা করে তোলে যার ফলে মানুষ মানসিক, দৈহিক, বৌদ্ধিক, আত্মিক, আধ্যাত্মিক দিক থেকে স্বাধীন হয়ে ওঠে।

(৩) আত্মপ্রত্যয় বা আত্মবিশ্বাসঃ শিক্ষার তৃতীয় বিষয় হল আত্মপ্রত্যয়। শিক্ষিত মানুষ সবসময় আত্মপ্রত্যয়ী হয়। এই আত্মপ্রত্যয় বা আত্মবিশ্বাস আমাদের জন্য খুব দরকারি, আত্মপ্রত্যয় বা আত্মবিশ্বাস না থাকলে কোনো মানুষ জীবনে সফল হতে পারে না।

অথবা,

বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তক কে ? এই শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। 1+7

উত্তরঃ

বুনিয়াদি শিক্ষার প্রবর্তকঃ বুনিয়াদি শিক্ষার প্রবর্তক ছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি। যিনি ছিলেন জাতির জনক। তিনি ভারতবাসীর কাছে পরিচিত ছিলেন মহাত্মা গান্ধি বা গান্ধিজি রুপে।

বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থাঃ গান্ধিজির শিক্ষাদর্শন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় এক বিরাট পরিবর্তন এনেছে। ভারতের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বুনিয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনাটি রচিত হয়েছিল। নীচে বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল–

(1) গুরত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যঃ গান্ধিজি প্রবর্তিত নঈ-তালিম শিক্ষা বা বুনিয়াদি শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দিক হল–
(i) সাত থেকে চোদ্দো বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা শিক্ষালাভ করে।
(ii) এই শিক্ষাক্রম হবে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক।
(iii) এই শিক্ষা শিল্পনির্ভর ও উৎপাদনমুখী হবে।
(iv) মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হবে।

(2) শিক্ষা স্তরঃ বুনিয়াদি বা নঈ-তালিম শিক্ষার চারটি স্তর হল–
(i) 7 বছরের কমবয়সিরা শিক্ষালাভ করবে।
(ii) 7 থেকে 14 বয়সিরা শিক্ষালাভ করবে।
(iii) 14 বয়সের বেশিরা শিক্ষালাভ করবে।
(iv) প্রাপ্তবয়স্করা এই স্তরে শিক্ষালাভ করবে।

(3) শিক্ষার পাঠক্রমঃ বুনিয়াদি শিক্ষার পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি হল—
(i) মূল হস্তশিল্প (Basic craft) – যা স্থানীয় সমাজজীবনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। যথা— কৃষিকাজ, তাঁত বোনা, সুতা কাটা, ধাতুর কাজ, কাঠের কাজ ইত্যাদি।
(ii) গণিত যা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন।
(iii) সাধারণ বিজ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার জ্ঞান।
(iv) ছবি আঁকা ও সংগীত।
(v) গার্হস্থ্য বিজ্ঞান কেবল মেয়েদের জন্য।

(4) পাঠদান পদ্ধতিঃ বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থার পাঠদানের মূল কথা হল- একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষা। যেমন— এ শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তশিল্পকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ইতিহাস, ভূগোল, জ্যামিতির ধারণা সম্পর্কে শিক্ষা অর্জন করে।

বুনিয়াদি বা নঈ-তালিম শিক্ষার গুণাবলি
বা সাফল্য—

বুনিয়াদি শিক্ষার গুণগুলি হল—
(i) এই শিক্ষার কেন্দ্রে রয়েছে শিল্প, যা আত্মসক্রিয়তার মধ্য দিয়ে লাভ করবে।
(ii) এটি পুরোপুরি সামাজিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
(iii) এই শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিশুর শ্রমের প্রতি মর্যাদাদানের ক্ষমতা গড়ে উঠবে।
(iv) এই ব্যবস্থায় শিক্ষার্থী কোনো একটি বৃত্তিকে কেন্দ্র করে সেই বিষয়ে শিক্ষালাভ করত।
(v) বুনিয়াদি শিক্ষালাভের পর শিক্ষার্থীরা যে অভিজ্ঞতা লাভ করত তাকে কাজে লাগিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের কর্মজগতে অনেক সহজে প্রবেশ করতে পারবে।

বুনিয়াদি শিক্ষার ব্যর্থতার দিক বা ত্রুটি—

বুনিয়াদি শিক্ষার অসফলতার মূল কারণগুলি হল–
(i) শিক্ষার যে-কোনো স্তরে অর্থ উপার্জনের ভাবনা যুক্তিযুক্ত নয়।
(ii) বুনিয়াদি শিক্ষায় এই শিল্পের ওপর গুরুত্ব দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষা অনেকাংশে অবহেলিত হয়েছে।
(iii) গ্রামের দরিদ্র মানুষের উপযোগী হলেও শহরে তা জনপ্রিয় হয়নি।
(iv) সঠিক উপলব্ধি ছাড়া শিল্পের মাধ্যমে শিক্ষালাভ বিজ্ঞানসম্মত নয়।
(v) যোগ্য, প্রশিক্ষিত, শিক্ষক ও পরিকাঠামোর অভাব এই শিক্ষা ব্যর্থতার জন্য অনেকাংশে দায়ী।
(vi) শিল্পবিপ্লব, দ্রুত আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতি – এই সবের সাপেক্ষে একটিমাত্র শিল্পকেন্দ্রিক শিক্ষা বুনিয়াদি শিক্ষায় ব্যর্থ হতে থাকে।

উপসংহারঃ তৎকালীন ভারতবর্ষ ছিল দরিদ্রক্লিষ্ট, দুঃখদুর্দশাপূর্ণ। বুনিয়াদি শিক্ষার সাফল্য ও ব্যর্থতা পর্যালোচনা করে বলা যায় বুনিয়াদি বা নঈ-তালিম শিক্ষা হল ভারতবাসীর ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের ভিত্তিভূমি ও গণতান্ত্রিক আদর্শের মূল চাবিকাঠি।

Leave a Reply