MADHYAMIK HISTORY QUESTION PAPER 2022
WBBSE Madhyamik History Question Paper 2022 Solved | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র 2022
2022 History Question Paper with answers for Madhyamik students of West Bengal Board of Secondary Education. Question and Answers of the question paper are given below.
মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধীন মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ২০২২ সালের উত্তরসহ ইতিহাস বিষয়ের প্রশ্নপত্র।
📌 মাধ্যমিক বিগত বছরের প্রশ্নপত্র | Madhyamik Previous Years Question Paper CLICK HERE
2022
HISTORY
Time – 3 Hours 15 Minutes
(First 15 minutes for reading the question paper only)
Full Marks: 90 For Regular Candidates
Full Marks: 100 For External Candidates
Special credit will be given for answers which are brief and to the point. Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting.
[ ‘ক’ বিভাগ থেকে ও বিভাগ পর্যন্ত প্রদত্ত প্রশ্ন নিয়মিত ও বহিরাগত সব পরীক্ষার্থীদের জন্য। ‘চ’ বিভাগে প্রদত্ত প্রশ্ন শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য। ]
(‘ক’ বিভাগে সকল প্রশ্ন আবশ্যিক। অন্য বিভাগে বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়।
‘খ’ বিভাগে কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীরা বিকল্প প্রশ্নের নির্দেশ অনুযায়ী উত্তর লিখবে। অন্য সকলে মানচিত্র চিহ্নিত করবে।)
বিভাগ ‘ক’
১। সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখ : ১x২০=২০
১.১ সত্যজিৎ রায় যুক্ত ছিলেন—
(ক) খেলার ইতিহাসে
(গ) নারীর ইতিহাসে
(খ) শহরের ইতিহাসে
(ঘ) শিল্পচর্চার ইতিহাসে
উত্তরঃ (ঘ) শিল্পচর্চার ইতিহাসে
১.২ রেশম আবিষ্কৃত হয় প্রাচীন—
(ক) ভারতে (গ) পারস্যে (খ) রােমে
(ঘ) চীনদেশে
উত্তরঃ (ঘ) চীনদেশে
১.৩ ‘নিষিদ্ধ শহর’ বলা হয়—
(ক) লাসাকে (খ) বেইজিংকে
(গ) রোমকে (ঘ) কনস্ট্যাটিনােপলকে
উত্তরঃ (ক) লাসাকে
১.৪ বঙ্গদর্শন সাময়িক পত্রটি ছিল একটি—
(ক) সাপ্তাহিক পত্রিকা (খ) পাক্ষিক পত্রিকা
(গ) মাসিক পত্রিকা (ঘ) বাৎসরিক পত্রিকা
উত্তরঃ (গ) মাসিক পত্রিকা
১.৫ ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি ছাপা হয়েছিল—
(খ) ঢাকায় (ক) নদীয়াতে (ঘ) কলকাতায়
(গ) শ্রীরামপুরে
উত্তরঃ (খ) ঢাকায়
👉মাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈
১.৬ রামমােহন রায় এর পরবর্তীকালে ব্রাহ্মসমাজ পরিচালনা করেন—
(ক) অক্ষয়কুমার দত্ত
(খ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ
(ঘ) তারাচাঁদ চক্রবর্তী
উত্তরঃ (খ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
১.৭ বাঙালি পরিচালিত প্রথম বাংলা সংবাদপত্রটি হল—
(ক) সমাচার দর্পণ (খ) সম্বাদ প্রভাকর
(ঘ) বাঙাল গেজেটি (গ) ব্রাহ্মণ সেবধি
উত্তরঃ (ঘ) বাঙাল গেজেটি
১.৮ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম স্নাতক ছিলেন—
(ক) সৈয়দ আমীর আলি
(খ) আব্দুল লতিফ
(গ) দেলওয়ার হােসেন আহমেদ
(ঘ) সৈয়দ আহমেদ
উত্তরঃ (গ) দেলওয়ার হােসেন আহমেদ
১.৯ ঔপনিবেশিক অরণ্যআইনের বিরুদ্ধে সংঘটিত একটি আদিবাসী বিদ্রোহ হল—
(ক) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ
(খ) চূয়াড় বিদ্রোহ
(গ) কোল বিদ্রোহ
(ঘ) রম্পা বিদ্রোহ
উত্তরঃ (খ) চূয়াড় বিদ্রোহ
১.১০ ‘সন্ন্যাসী বিদ্রোহ’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন—
(ক) ভিনসেন্ট স্মিথ (গ) ওয়ারেন হেস্টিংস
(খ) জেমস্ মিল (ঘ) লর্ড কর্ণওয়ালিশ
উত্তরঃ (গ) ওয়ারেন হেস্টিংস
১.১১ সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী কৃষক বিদ্রোহটি হল—
(ক) চূয়াড় বিদ্রোহ
(গ) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ
(খ) ফরাজি আন্দোলন
(ঘ) সাঁওতাল বিদ্রোহ
উত্তরঃ (গ) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ
১.১২ মির নিশার আলি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন—
(ক) বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনে
(গ) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহে
(খ) ফরাজি আন্দোলনে
(ঘ) নীল বিদ্রোহে
উত্তরঃ (ক) বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনে
১.১৩ ‘রাষ্ট্রগুরু’ নামে পরিচিত ছিলেন—
(ক) রামমােহন রায়
(খ) রাজনারায়ণ বসু,
(গ) নবগােপাল মিত্র
(ঘ) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তরঃ (ঘ) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
১.১৪ মহাবিদ্রোহকে (১৮৫৭) ‘কৃষক বিদ্রোহ’ আখ্যা দিয়েছেন—
(ক) সুরেন্দ্রনাথ সেন
(খ) রমেশচন্দ্র মজুমদার
(গ) শশীভূষণ চৌধুরি
(ঘ) বিনায়ক দামােদর সাভারকর
উত্তরঃ (ক) সুরেন্দ্রনাথ সেন
১.১৫ আনন্দ মােহন বসু ছিলেন ভারত সভার—
(ক) প্রতিষ্ঠাতা (খ) সভাপতি
(গ) সহ-সভাপতি (ঘ) সচিব
উত্তরঃ (গ) সহ-সভাপতি
১.১৬ ‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীতটি রচনা করেন—
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(ঘ) স্বামী বিবেকানন্দ
উত্তরঃ (গ) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
১.১৭ বসুবিজ্ঞান মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা, জগদীশচন্দ্র বসু অধ্যাপক ছিলেন—
(ক) গণিত শাস্ত্রের (খ) রসায়ন শাস্ত্রের
(গ) পদার্থ বিদ্যার (ঘ) উদ্ভিদ বিদ্যার
উত্তরঃ (গ) পদার্থ বিদ্যার
১.১৮ ‘বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল—
(ক) ১৮৩৩ খ্রিঃ (খ) ১৮৫৬ খ্রিঃ
(গ) ১৮৮০ খ্রিঃ (ঘ) ১৯০৩ খ্রিঃ
উত্তরঃ (খ) ১৮৫৬ খ্রিঃ
১.১৯ ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ (১৯০৬) -এর প্রথম সভাপতি ছিলেন—
(ক) রাসবিহারী ঘােষ
(খ) অরবিন্দ ঘােষ
(গ) তারকনাথ পালিত
(ঘ) সতীশচন্দ্র মুখােপাধ্যায়
উত্তরঃ (ক) রাসবিহারী ঘােষ
১.২০ ‘দিগদর্শন’-এর সম্পাদক ছিলেন—
(ক) উইলিয়ম কেরি (খ) জোশুয়া মার্শম্যান
(গ) ফেলিক্স কেরি (ঘ) জনক্লার্ক মার্শম্যান
উত্তরঃ (ঘ) জনক্লার্ক মার্শম্যান
বিভাগ ‘খ’
২। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ ১টি করে মােট ১৬টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১x১৬=১৬
উপবিভাগ : ২.১
একটি বাক্যে উত্তর দাও : ১x৪=৪
(২.১.১) কোন্ বছর ‘সােমপ্রকাশ’-এর প্রকাশনা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয় ?
উত্তরঃ ১৮৭৮ খ্রীষ্টাব্দে।
(২.১.২) কলকাতার ঔপনিবেশিক স্থাপত্যগুলির যেকোনাে একটি উল্লেখ করো।
উত্তরঃ রাইটার্স বিল্ডিং/ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল।
(২.১.৩) রেভাঃ জেমস্ ল কোন অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ নীলদর্পণ নাটক অনুবাদ করার জন্য।
(২.১.৪) “বিদ্যাহারাবলী’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন ?
উত্তরঃ ফেলিক্স কেরি।
উপবিভাগ : ২.২
ঠিক বা ভুল নির্ণয় করো : ১x৪=৪
(২.২.১) ভারতে কামান প্রথম ব্যবহৃত হয় পলাশীর যুদ্ধে ।
উত্তরঃ ভুল।
(২.২.২) ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে মােহন বাগান ক্লাব আই.এফ.এ. শিল্ড জয় করেছিল ।
উত্তরঃ ঠিক।
(২.২.৩) প্রথম বিধবা বিবাহ করেন শ্রীশচন্দ্র ন্যায়রত্ন ।
উত্তরঃ ঠিক।
(২.২.৪) ল্যাণ্ডহােল্ডার্স সােসাইটির অন্যতম সম্পাদক ছিলেন প্রসন্ন কুমার ঠাকুর ।
উত্তরঃ ঠিক।
উপবিভাগ : ২.৩
‘ক’ স্তম্ভের সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভ মেলাও : ১x৪=৪
‘ক’ স্তম্ভ | ‘খ’ স্তম্ভ |
(২.৩.১) লর্ড রিপন। | (১) জমিদার সভা |
(২.৩.২) রামমােহন রায় | (২) হান্টার কমিশন |
(২.৩.৩) দ্বারকানাথ ঠাকুর | (৩) বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট |
(২.৩.৪) তারকনাথ পালিত | (৪) অ্যাংলাে হিন্দু স্কুল |
উত্তরঃ
(২.৩.১) লর্ড রিপন (২) হান্টার কমিশন
(২.৩.২) রামমােহন রায় (৪) অ্যাংলো হিন্দু স্কুল
(২.৩.৩) দ্বারকানাথ ঠাকুর (১) জমিদার সভা
(২.৩.৪) তারকনাথ পালিত (৩) বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট
উপবিভাগ : ২.৪
প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত কর ও নামাঙ্কিত কর : ১x৪=৪
(২.৪.১) নীল বিদ্রোহের অন্যতম কেন্দ্র – নদীয়া ।
(২.৪.২) কোল বিদ্রোহের এলাকা – ছােটনাগপুর ।
(২.৪.৩) মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) অন্যতম কেন্দ্র – দিল্লি।
(২.৪.৪) মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) অন্যতম কেন্দ্র – কানপুর ।
অথবা
(কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য)
শূন্যস্থান পূরণ কর : ১x৪=৪
(২.৪.১) ‘হূল’ কথাটির অর্থ হল _______।
উত্তরঃ বিদ্রোহ।
(২.৪.২) নীল দর্পণ’ নাটকটি রচনা করেন __________।
উত্তরঃ দীনবন্ধু মিত্র।
(২.৪.৩) ভারতের প্রথম ভাইসরয় ছিলেন ___________।
উত্তরঃ লর্ড ক্যানিং।
(২.৪.৪) ‘শ্রীরামপুর মিশন প্রেস’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ________ খ্রিষ্টাব্দে।
উত্তরঃ ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দে।
উপবিভাগ : ২.৫
নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলিব সঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যাটি নির্বাচন করো : ১x৪=৪
(২.৫.১) বিবৃতি : ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
ব্যাখ্যা ১: এই কলেজে শুধুমাত্র হিন্দু ছাত্রদের প্রবেশাধিকার ছিল।
ব্যাখ্যা ২ : এই কলেজে হিন্দু ও ব্রাহ্ম ছাত্রদের প্রবেশাধিকার ছিল।
ব্যাখ্যা ৩ : এই কলেজে সকল ধর্মের ছাত্রদের প্রবেশাধিকার ছিল।
উত্তরঃ ব্যাখ্যা ২ : এই কলেজে হিন্দু ও ব্রাহ্ম ছাত্রদের প্রবেশাধিকার ছিল।
(২.৫.২) বিবৃতি : ঔপনিবেশিক সরকার উপজাতিদের জন্য ‘দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সী’ নামে একটি পৃথক অঞ্চল গঠন করেছিলেন।
ব্যাখ্যা ১ : এটি গঠিত হয়েছিল চূয়াড় বিদ্রোহের পর।
ব্যাখ্যা ২ : এটি গঠিত হয়েছিল কোল বিদ্রোহের পর।
ব্যাখ্যা ৩ : এটি গঠিত হয়েছিল মুণ্ডা বিদ্রোহের পর।
উত্তরঃ ব্যাখ্যা ২ : এটি গঠিত হয়েছিল কোল বিদ্রোহের পর।
(২.৫.৩) বিবৃতি : ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে জগদীশচন্দ্র বসু বসুবিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্যাখ্যা ১ : এটি উদ্ভিদ বিদ্যা গবেষণার উন্নতির জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।
ব্যাখ্যা ২ : এটি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।
ব্যাখ্যা ৩ : এটি বিজ্ঞান গবেষণার উন্নতির জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : এটি বিজ্ঞান গবেষণার উন্নতির জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
(২.৫.৪) বিবৃতি : উনিশ শতকে বাংলার প্রকাশকগণ তাদের বই বিক্রির জন্য ফেরিওয়ালাদের উপর নির্ভর করতেন।
ব্যাখ্যা ১ : কারণ, বইয়ের দোকান ছিল অত্যন্ত সীমিত।
ব্যাখ্যা ২ : কারণ, বই বিক্রি করাকে নিম্নস্তরের পেশা বলে মনে করা হত।
ব্যাখ্যা ৩ : কারণ, এটি ছিল সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছবার সুলভতম ও সহজতম উপায়।
উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : কারণ, এটি ছিল সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছবার সুলভতম ও সহজতম উপায়।
বিভাগ ‘গ’
৩। দুটি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনাে ১১টি) : ২x১১=২২
৩.১ সামরিক ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব কী ?
উত্তরঃ সামরিক ইতিহাসচর্চা থেকে সমকালীন সামরিক সরঞ্জামের গুণগতমান, যুদ্ধ প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়। সমাজ ও পরিবেশে যুদ্ধের কি প্রভাব পড়ে এবং এর পিছনে থাকা কূটনৈতিক নীতি সমূহের প্রয়োগের মতো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সামরিক ইতিহাসে আলোচনা করা হয়। তাই আধুনিক ইতিহাসে সামরিক ইতিহাসের গুরুত্ব অপরিসীম।
৩.২ ‘সরকারি নথিপত্র’ বলতে কী বােঝায় ?
উত্তরঃ সরকারের অধীনস্থ বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারী ও আধিকারিকদের লিপিবদ্ধ বিবরন, প্রতিবেদন ও চিঠিপত্রকেই এককথায় “সরকারি নথিপত্র” বলা হয়।
৩.৩ স্কুল বুক সােসাইটি কেন প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তরঃ প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ডেভিড হেয়ার ১৮১৭ সালে ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল– বিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপযোগী ইংরেজি ও ভারতীয় ভাষায় উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক প্ৰণয়ন, প্রকাশ ও স্বল্প মূল্যে বা বিনামূল্যে বিতরণ করা।
৩.৪ মধুসূদন গুপ্ত স্মরণীয় কেন ?
উত্তরঃ পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত (1800 – 15 নভেম্বর 1856) ছিলেন একজন বাঙালি ব্রাহ্মণ (বৈদ্য) অনুবাদক এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। তিনি পাশ্চাত্য চিকিৎসাতেও প্রশিক্ষিত ছিলেন এবং ১৮৩৬ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজে (সিএমসি) ভারতে প্রথম মানব ব্যবচ্ছেদ করার কৃতিত্ব অর্জন করেন।
৩.৫ লর্ড হার্ডিঞ্জ-এর ‘শিক্ষাবিষয়ক নির্দেশনামা’ গুরুত্বপূর্ণ কেন ?
উত্তরঃ লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৮৪৪ সালে ইংরেজির জ্ঞানকে সরকারি চাকরির সাথে যুক্ত করে ইংরেজি শিক্ষাকে আরও উদ্দীপনা দেন ৷ তিনি ঘোষণা করেন যে ইংরেজি জানা ভারতীয়দের সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই ঘোষণা ইংরেজি শিক্ষাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।
৩.৬ বাংলার নবজাগরণ বলতে কী বােঝায় ?
উত্তরঃ উনিশ শতকের প্রথম দিকে বাংলাদেশে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটলে বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, প্রভৃতি সর্বক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ে। এর ফলে বাঙালির ভাব জগতে এক ব্যাপক অগ্রগতি ঘটে। এই অগ্রগতি বাংলার নবজাগরণ নামে পরিচিত।
৩.৭ ফরাজি আন্দোলন ব্যর্থ হ’ল কেন ?
উত্তরঃ ফরাজি আন্দোলন পূর্ব বাংলার একটি সংকীর্ণ স্থানে আবদ্ধ ছিল। ইংরেজ সরকার, নীলকর ও জমিদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি আন্দোলনকারীদের ছিল না। সংকীর্ণ ধর্মীয় চেতনার ওপর ভিত্তি করে এই আন্দোলন গড়ে ওঠে। রক্ষণশীল মুসলিম সমাজ এর বিরোধী ছিল। ফলে এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
৩.৮ তিতুমীর স্মরণীয় কেন ?
উত্তরঃ তিতুমির ছিলেন বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান নেতা। তিনি দরিদ্র ও নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে অত্যাচারী জমিদার, মহাজন ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং বারাসাত বসিরহাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা করেন। শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি নিহত হন।
৩.৯ শিক্ষিত বাঙালি সমাজের একটি অংশ কেন মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) বিরােধিতা করেছিল ?
উত্তরঃ শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি বড়ো অংশ ব্রিটিশ শাসনকে ভারতের পক্ষে কল্যাণকর বলে মনে করত। এজন্য তারা মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) বিরোধিতা করেছিল। এই বিদ্রোহের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর পর কেউ ভারতে জাতীয় রাষ্ট্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে কি না এই বিষয়ে শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণি সন্দিহান ছিল।
৩.১০ ব্যঙ্গচিত্র আঁকা হয় কেন ?
উত্তরঃ পরাধীন ভারতে প্রচলিত সামাজিক কুপ্রথা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা এবং তাৎকালীন রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ত্রুটিগুলি জনসমক্ষে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গচিত্র আঁকা হয়।
৩.১১ নবগােপাল মিত্র কে ছিলেন ?
উত্তরঃ নবগোপাল মিত্র ছিলেন একাধারে একজন ভারতীয় নাট্যকার, কবি, প্রাবন্ধিক, দেশপ্রেমিক এবং অন্যদিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠাকর্তাদের মধ্যে অন্যতম। হিন্দু জাতীয়তাবাদ সৃষ্টির পটভূমিকায় ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
৩.১২ উনিশ শতকের বাংলায় জাতীয়তাবাদের বিকাশে বঙ্কিমচন্দ্রের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র রচিত ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীর মনে স্বাদেশিকতা ও সশস্ত্র অভ্যুত্থানের ধারণা সঞ্চারিত করেছিল। এই উপন্যাসে জন্মভূমিকে মাতৃরূপে কল্পনা করে ‘বন্দেমাতরম’ সংগীতটি পরাধীন ভারতের জাতীয় সংগীত, বিপ্লবীদের মন্ত্রে পরিণত হয়েছিল।
৩.১৩ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তরঃ জাতীয় আদর্শ অনুসারে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও কারিগরিশিক্ষা দান করা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশসেবার মনোভাব জাগিয়ে তোলা, নৈতিক শিক্ষা দান করা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রভৃতি উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গড়ে তোলা হয়।
৩.১৪ বিদ্যাসাগর সাট’ বলতে কী বােঝায় ?
উত্তরঃ বিদ্যাসাগর পূর্ববর্তী স্বরবর্ণ (১৬টি) ও ব্যঞ্জনবর্ণ (৩৪টি) মিলিয়ে ৫০টি বর্ণের পরিবর্তে ১২টি স্বরবর্ণ ও ৪০টি ব্যঞ্জনবর্ণের (মোট৫২টি) প্রস্তাব দিয়ে বাংলা বর্ণমালার যে যথাযথ রূপ দেন, বাংলা মুদ্রণের ইতিহাসে তা ‘বিদ্যাসাগর সার্ট’ নামে পরিচিত।
৩.১৫ বাংলা ছাপাখানার বিকাশে লাইনােটাইপ প্রবর্তনের গুরুত্ব কী ?
উত্তরঃ লাইনোটাইপ আদতে একটি কম্পোজিং মেশিন। এর সাহায্যে হাতের বদলে মেশিনে অত্যন্ত দ্রুত ও সুচারুরূপে চলমান ধাতব হরফ স্থাপন করা যেত। বাংলায় ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সুরেশচন্দ্ৰ মজুমদার, রাজশেখর বসু প্রমুখের উদ্যোগে এই প্রযুক্তিতে সংবাদপত্র ছাপা শুরু হয়।
৩.১৬ গ্রামীণ শিল্প ও বৃত্তি শিক্ষার প্রসারে রবীন্দ্রনাথ-এর অবদান কীরূপ ছিল ?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রাম সমাজ ও কৃষির উন্নয়নে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন। শিক্ষার মধ্য দিয়ে গ্রামীন পরিকাঠামো, অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন ঘটানোর কথা ভাবেন। এই উদ্দেশ্য পূরনের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন।
বিভাগ ‘ঘ’
৪। সাত বা আটটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও। প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ ২টি করে প্রশ্নসহ মােট ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ৪x৬=২৪
উপবিভাগ : ঘ.১
৪.১ উনিশ শতকে বাংলায় নারীশিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্তদেব কীরূপ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ?
উত্তরঃ রাজা রাধাকান্তদেব শুধুমাত্র রাজা রামমোহন রায়ের প্রতিপক্ষ বা রক্ষনশীল হিন্দু সমাজের দলপতি ছিলেন না, তিনি ছিলেন উনিশ শতকে পাশ্চাত্য ও নারীশিক্ষার অন্যতম সমর্থক এবং প্রচারক। তিনি নিজের পরিবারের মহিলাদের শিক্ষাদানের জন্য ইংরেজি শিক্ষায়িত্রী নিযুক্ত করেছিলেন। ব্যাপটিস্ট মিশনারীদের উদ্যোগে নারীশিক্ষার জন্য ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি স্থাপিত হলে তা রাধাকান্তদেবের সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করে। তবে রাজা রাধাকাস্তদেব সম্ভ্রান্ত মহিলাদের অন্তঃপুর শিক্ষা এবং ছোট ছোট বালিকাদের গৃহস্থ পাঠশালায় শিক্ষা প্রদান করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি শোভাবাজারে নিজ বাড়িতে বালিকাদের পড়ানোর এবং পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য পারিতোষিকেরও ব্যবস্থা করেছিলেন।
নারী শিক্ষার মূল বাধা ছিল তৎকালীন রক্ষণশীল গোষ্ঠীর মানসিকতা। তাই তাঁর উৎসাহ এবং সহযোগিতায় স্কুল বুক সোসাইটির প্রধান পণ্ডিত গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে লেখেন ‘স্ত্রী শিক্ষা বিধায়ক’ নামে একটি পুস্তিকা, যেখানে আলোচিত হয় স্ত্রীলোকদের লেখাপড়া শেখা অশাস্ত্রীয় নয় এবং অতীতেও নারীরা সুশিক্ষিত হতেন— প্রভৃতি বিষয়।
তবে রাজা রাধাকান্তদেব ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কাঠামোর মধ্যে থেকে নারী শিক্ষার বিস্তার চেয়েছিলেন তাই বেথুন সাহেব মেয়েদের জন্য আধুনিক ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল’ গড়ে তুলতে উদ্যোগী হলে রাধাকান্তদের খ্রিষ্টধর্মের প্রসার ও হিন্দু ঐতিহ্যের অবক্ষয়ের আশঙ্কায় দ্বিধাগ্রস্থ হন। তবুও নারী শিক্ষার প্রসারে রাজা রাধাকান্তদেবের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না।
৪.২ লর্ড মেকলে-কে কী এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তক বলা যায় ?
উত্তরঃ ইংরেজ ইস্ট কোম্পানি এদেশে ক্ষমতা দখলের পর পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাদের ধারনা ছিল এদেশের আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারিত হলে ভারতবাসীর মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পাবে ও তারা ক্রমশ ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে উঠবে। ফলে তারা প্রাচ্য ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চাকেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
জনশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৮২৩ খ্রিঃ জনশিক্ষা কমিটি তৈরি হয়। গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করেন তাঁর আইন সচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলেকে। মেকলে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের উগ্র সমর্থক ছিলেন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে তিনি ভারতে পাশ্চাত্যশিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে ১৮৩৫ খ্রিঃ (২ ফেব্রুয়ারি) লর্ড বেন্টিঙ্কের কাছে একটি প্রস্তাব দেন যা ‘মেকলে মিনিটস’ নামে পরিচিত। মেকলে তাঁর প্রস্তাবে বলেন যে প্রাচ্যের শিক্ষা বৈজ্ঞানিক চেতনাহীন এবং পাশ্চাত্যের তুলনায় নিকৃষ্ট। প্রাচ্যের সভ্যতা দুর্নীতিগ্রস্থ ও অপবিত্র। তাই এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হওয়া উচিত। এদেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রাসর ঘটলে ‘চুঁইয়ে পড়া নীতি’ অনুসারে ক্রমশ সাধারণ দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের ফলে এদেশে এমন একটি সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশ ঘটবে যারা রক্তে ও বর্ণে ভারতীয় হলেও রুচি, মত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় হবে ইংরেজ’। শেষ পর্যন্ত তার প্রস্তাবের সুপারিশ মেনে বেন্টিঙ্ক ১৮৩৫ খ্রিঃ (৭ মার্চ) এদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারকে সরকারের শিক্ষানীতি হিসেবে ঘোষণা করেন— এই হিসেবে মেকলেকে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তক বলতে অত্যুক্তি হয় না।
৪.৩ ঔপনিবেশিক সরকার কী উদ্দেশ্যে অরণ্য আইন প্রণয়ন করেছিল ?
উত্তরঃ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার ভারতে পরপর দুটি অরণ্য আইন প্রণয়ন করে, একটি ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে এবং আরেকটি ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে। এই দুই আইনেরই মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক স্বার্থ রক্ষা করা এবং ভারতের বনভূমির ওপর আধিপত্য স্থাপন করা।
(ক) কাঠ সংগ্রহঃ উনিশ শতকের শেষদিকে ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর সম্প্রসারণের জন্য প্রচুর কাঠের প্রয়োয়জন দেখা যায়; পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য রেলপথ নির্মাণের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তার জন্য প্রচুর কাঠের তক্তার প্রয়োজন পড়ে। এইসব প্রয়োজনের নিরিখে অরণ্য সম্পদের ওপর অধিকার কায়েমের জন্য ঔপনিবেশিক সরকার ‘অরণ্য আইন’ পাশ করেছিল।
(খ) বনাঞ্চল পরিষ্কারঃ অরণ্য আইন পাশের পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল, ভারতের সুবিশাল বনভূমিকে পরিষ্কার করে কৃষিযোগ্য করে তোলা। এছাড়াও বনাঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ঝুম চাষের পরিবর্তে স্থায়ী কৃষিকাজে অভ্যস্থ করে তোলার তাগিদ ছিল।
(গ) রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধিঃ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল নতুন কৃষিজমির ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে রাজস্ব বৃদ্ধি করা ও ভারতের সম্পদ আত্মস্থ করা।
(ঘ) সরকারের আয় ও ব্যবসাবাণিজ্যের বৃদ্ধিঃ রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি বনজ সম্পদকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যয় করে আয় ও মুনাফা বৃদ্ধি করা ছিল ঔপনিবেশিক সরকারের উদ্দেশ্য।
(ঙ) বন সংরক্ষণঃ অরণ্য আইন জারি করার পেছনে ঔপনিবেশিক শক্তির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য যাই থাক না কেন, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই সরকার ভারতের বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত অরণ্য, সুরক্ষিত অরণ্য এবং গ্রামীণ অরণ্য (অশ্রেণিভুক্ত) – এই তিনটি ভাগে ভাগ করে বন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে ঔপনিবেশিক সরকার স্বার্থ ও মুনাফা বজায় রাখতে গিয়ে অরণ্য আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বাধিকার, জীবন ও জীবিকার মূলে কুঠারাঘাত করেছিল যার ফলে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন কৃষক উপজাতি বিদ্রোহ।
উপসংহারঃ উনিশ শতকের শেষদিকের সামাজিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে অরণ্য আইন প্রণয়ন ছিল একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এই আইনের প্রেক্ষিতে বাংলার আদিবাসী কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষ সর্বপ্রথম ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছি।
৪.৪ নীল বিদ্রোহে সংবাদপত্রের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
ভূমিকা : বাংলার বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও বুদ্ধিজীবীমহল বাংলার নীলচাষিদের দুরবস্থা ও নীলকরদের অবর্ণনীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছিল।
(ক) নীলকরদের অত্যাচারের প্রথম প্রকাশ :
সমকালীন প্রকশিত বিভিন্ন পত্র পত্রিকার মধ্যে সর্বপ্রথম ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে সমাচার চন্দ্রিকা ও সমাচার দর্পণ পত্রিকা নীলকরদের অত্যাচারের কথা প্রকাশিত হয়।
(খ) তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার ভূমিকা : ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে অক্ষয়কুমার দত্ত ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় নীলচাষ ও চাষিদের দুরবস্থা নিয়ে একটি বিশদ প্রতিবেদন বার করেন।
(গ) সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার ভূমিকা : ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় নীলবিদ্রোহীদের সমর্থনে বিভিন্ন খবর প্রকাশ করেন।
(ঘ) হিন্দু প্যাটিয়ট পত্রিকার ভূমিকা : নীলকরদের অত্যাচারের বিবদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিল হিন্দু প্যাটিয়ট পত্রিকা। এই পত্রিকার বিভিন্ন সময়ের সম্পাদক নীলচাষিদের সম্পর্কে নানাভাবে সাহায্য ও নীলকরদের অত্যাচারের কথা সংবাদ পত্রে প্রকাশ করেন।
(ঙ) সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অবদান : হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় নিজে এবং সাংবাদিক নিয়োগ করে নীলচাষিদের দুর্দশার খবর সংগ্রহ করে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার ‘নীল জেলা’ নামে পাতায় তা প্রবন্ধাকারে প্রকাশ করেন। হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় তিনি লেখেন বাংলার নীলচাষ একটি সংগঠিত জুয়োচুরি ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা মাত্র। এই নীলচাষে চাষির লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। যে চাষি একবার নীলচাষ করেছে তার আর বেঁচে থাকতে মুক্তি নেই। হরিশচন্দ্রের উদ্যোগেই নীল বিদ্রোহের খবরাখবর বাংলার শিক্ষিত জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
(চ) সম্পাদক শিশিরকুমার ঘোষের অবদান : অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক শিশিরকুমার ঘোষ হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় নীলচাষিদের সমর্থনে একাধিক পত্র লেখেন। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে চাষিদের ওপর অত্যাচারের খবর সংগ্রহ করে বাংলার প্রথম ‘ফিল্ড জার্নালিস্ট’ নামে পরিচিতি লাভ করেন।
উপসংহার: বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, বুদ্ধিজীবীদের সমর্থন ও সহযোগিতা নীলবিদ্রোহকে ধর্মনিরপেক্ষ গণবিদ্রোহে পরিণত করেছিল।
উপবিভাগ : ঘ.২
৪.৫ জাতীয়তাবাদ প্রসারে হিন্দুমেলার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভারতে সাধারণ মানুষের মধ্যে জাতীয় চেতনার জাগরণে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠেছিল তার বেশিরভাগই ছিল ভারতীয় সামাজিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করে তৈরি।
(ক) হিন্দু মেলার প্রতিষ্ঠা : এই প্রেক্ষাপটে রাজনারায়ন বসু উপলব্ধি করেন জাতীয় গৌরবগাথার উন্মেষ ছাড়া জাতির মহত্বলাভ সম্ভব নয়। রাজনারায়ন বসুর প্রেরণা ও ভাবধারায় নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ খ্রীঃ কলকাতায় হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।
(খ) হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য : হিন্দু মেলার দ্বিতীয় অধিবেশনেই সম্পাদক জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন- আমাদের এই মিলন সাধারণ ধর্ম-কর্মের জন্য নয়, কোনো বিশেষ সুখের জন্য নয়, কোনো আমোদ-প্রমোদের জন্য নয়। এটি স্বদেশের জন্য, ভারতের জন্য। হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল—
(i) সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে হিন্দুধর্মের অতীত গৌরবের কথা ছড়িয়ে দেওয়া।
(ii) দেশীয় ভাষা চর্চা করা, জাতীয় প্রতীকগুলিকে মর্যাদা দেওয়া প্রভৃতি।
(iii) প্রাচীন হিন্দু ঐতিহ্য তুলে ধরে নবগোপাল মিয় এদেশে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রসার প্রতিরোধের উদ্যোগ নেন।
(iv) এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে যুবকদের দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি ও শৃংখলাবন্ধ হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা বৃটিশ স্যগ্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হতে পারে।
(v) সাধারণ মানুষকে তাদের অতীত ঐতিহ্য সম্বন্ধে অবহিত করা হয়।
(vi) কবি, সাহিত্যক, চিন্তাবিদ, শিল্পীদের অবদান সম্পর্কে সচেতন করা। শিল্পী, লেখকদের পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
হিন্দু মেলার গুরুত্ব :
(i) কবি, সাহিত্যক, চিন্তাবিদ, শিল্পীদের অবদান সম্পর্কে সচেতন করে তোলা সম্ভব হয়েছিল।
(ii) শিল্পী, লেখকদের পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
(iii) এই মেলায় সদস্যদের ইংরেজিতে কথাবর্তা বলা বারণ ছিল।
(iv) এই মেলা উপলক্ষ্যে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ এবং মনোমোহন বসু দেশাত্ববোধক গান রচনা করেছিলেন।
(v) এই মেলা ‘ন্যাশনাল পেপার’ নামক পত্রিকা প্রকাশ করে, যার লক্ষ্য ছিল দেশবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করা।
(vi) এ ছাড়াও মেলার উদ্দ্যোগে জাতীয় বিদ্যালয়, জিমনাসিয়াম এবং গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছিল।
সুতরাং বাংলা তথা ভারতের জাতীয় চেতনার কোন মাসে হিন্দু মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে হিন্দু মেলা ব্যর্থ হয়। ১৮৮০খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত চতুর্দশ অধিবেশন সম্ভবত হিন্দু মেলার শেষ অধিবেশন ছিল।
৪.৬ ‘গােরা’ উপন্যাসটিতে রবীন্দ্রনাথের যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার পরিচয় পাওয়া যায় তা বিশ্লেষণ করো।
ভুমিকা : স্বদেশী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতীয় জাতীয়তাবাদের শক্তি ও দুর্বলতা দুটিই প্রত্যক্ষ করেন এবং স্বদেশী আন্দোলনের ব্যর্থতা তাকে আত্মানুসন্ধানী করে তুলেছিল। তার পূর্ণপ্রকাশ ঘটেছিল ‘গোরা’উপন্যাসে। গোরা’ উপন্যাস একটি স্বাদেশিক উপন্যাস। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র গোরা, যাঁকে রবীন্দ্রনাথ একজন নির্ভেজাল দেশপ্রেমিক রূপে গড়ে তুলেছেন। ‘গোরা’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেন্দ্রীয় চরিত্র গোরার বক্তব্য ও কার্যকলাপের মাধ্যমে উগ্র জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে গঠনমূলক ও সমন্বয়বাদী জাতীয়তাবাদের কথা বলেছেন।
‘গোরা’ উপন্যাসের ভূমিকা—
প্রথমত, গোঁরা উপন্যাসে গোরার চোখে দেশের অগণিত দরিদ্র মানুষের দুঃখকষ্ট ধরা পড়েছে। অশিক্ষিত মানুষের প্রতি এদেশীয় ইংরেজি জানা তথাকথিত শিক্ষিত ও ভদ্রবেশী মানুষের অবজ্ঞা ও বিদ্রূপ তাঁকে গভীরভাবে আহত করেছে।
দ্বিতীয়ত, নায়ক গোরার কাছে পার্থিব প্রেম-ভালোবাসা, দেশাত্মবোধের কাছে হার মেনেছে। তাই তিনি তাঁর প্রেমিকা সুচরিতার প্রেমবন্ধন ছিন্ন করে দূরে সরে গিয়েছেন।
তৃতীয়ত, ব্রাহ্মনেতা পরেশবাবুকে গোঁরা একদিন বলেছেন, ‘আপনি আমাকে আজ সেই দেবতার মন্ত্র দিন, যিনি হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান-ব্রাক্ষ্মণ সকলেরই…. যিনি ভারতবর্ষের দেবতা।’ এই উক্তির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন গোরার অন্তরে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার নমুনা পাওয়া যায়, তেমনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলার মনোভাবও সুস্পষ্ট হয়েছে।
চতুর্থত, গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, ধর্মীয় সংকীর্ণতা জাতীয়তাবোধের পরিপন্থী। এর দ্বারা মানবগোষ্ঠী বা জাতির কোনো মঙ্গলসাধন হয় না। এজন্য তিনি গোরার মুখ দিয়ে তাঁর হিন্দু লালন-পালনকারি মা আনন্দময়ীর উদ্দেশ্যে বলিয়েছিলেন, “মা, তুমিই আমার মা।’… তোমার জাত নেই, বিচার নেই, ঘৃণা নেই ….তুমিই আমার ভারতবর্ষ।”।
মূল্যায়ন : ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় সমাজ সংস্কার আন্দোলন, পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার, বাংলা নবজাগরণের মতো ঘটনার মধ্যে দিয়ে পথ হাটছিল। সামাজিক টানাপোড়েন এই সময়ে বৈশিষ্ট্য। সেখানে দাঁড়িয়ে রবীনাথ ঠাকুর অসাম্প্রদায়িকতার বাণী ছড়িয়ে দিয়ে জাতীয়তাবাদের মূল রূপ কি হতে পারে তা ভারতীয়দের সামনে তুলে ধরেন এ গোরা উপন্যাসের মাধ্যমে। এককথায় বলা যায় যে, ‘গোরা’ শুধুমাত্র একটি সাহিত্যই নয়; এটি একটি দেশাত্মবোধক উপন্যাস।
৪.৭ ছাপাখানা বাংলায় শিক্ষা বিস্তারে কীরূপ পরিবর্তন এনেছিল ?
ভূমিকা : অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে ইউরোপের খ্রিস্টান মিশনারিদের মাধ্যমে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা হয়। বাংলায় শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে এই ছাপাখানাগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
(ক) পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ : বাংলার ছাপাখানাগুলিতে স্কুলকলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রচুর পরিমাণ পাঠ্যপুস্তক ছাপা হতে থাকে। এইসব পাঠ্যপুস্তকের প্রধান বিষয়বস্তু ছিল সাহিত্য, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি। ছাপাখানায় মুদ্রিত বইপত্রের সুন্দর মুদ্রণ এবং কম দাম হওয়ায় তা গ্রামবাংলার সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের হাতেও পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। এই সব বইগুলি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
(খ) অন্যান্য গ্রন্থ প্রকাশ : ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের পর থেকে বাংলায় বাইবেল, রামায়ণ, মহাভারত, বিভিন্ন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য প্রভৃতির অনুবাদ, বিভিন্ন গবেষণাপত্র প্রভৃতি প্রকাশিত হয়। এগুলি সুলভে বাংলার সাধারণ পাঠকদের হাতে পৌঁছে যায়।
(গ) সংবাদপত্রাদি প্রকাশ : ছাপাখানাগুলি থেকে বাংলা ও ইংরেজিতে বেশকিছু সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রও প্রকাশিত হতে থাকে। এইসব সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রগুলিতে দৈনন্দিন সংবাদ ছাড়াও নিয়মিত বিভিন্ন জ্ঞানমূলক বিষয়ের আলোচনা স্থান করে নেয়।
(ঘ) নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : ছাত্রদের পাঠ্যপুস্তক রচনা করে তা কম খরচে বা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি স্থাপিত হলে তার অধীনে বেশ কয়েকটি স্কুল গড়ে ওঠে।
উপসংহার : ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত সুলভ বইপত্র সাধারণ মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যায়। ফলে বাংলায় শিক্ষার ব্যাপক ও দ্রুত প্রসার শুরু হয়।
৪.৮ বাংলায় ছাপাখানার বিকাশে গঙ্গাকিশাের ভট্টাচার্য্যের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
ভূমিকা : বাংলা তথা ভারতের একজন প্রকাশক,মুদ্রণ-শিল্পবিদ, পুস্তক ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকতার পথ প্রদর্শক রূপে বাঙালি গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের ভূমিকা বিশেষ স্মরণীয়।
(ক) কর্মজীবন : শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনারি প্রেসের একজন কম্পোজিটার রূপে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি শ্রীরামপুর মিশন প্রেস ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন এবং ‘ফরিস অ্যান্ড কোম্পানি প্রেসে’ যোগদান করেন, এখানে থাকাকালীন তিনি বইয়ের ব্যাবসাও শুরু করেন।
(খ) বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস স্থাপন : 1818 খ্রিস্টাব্দে হরচন্দ্র রায়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তিনি কলকাতার চোরবাগান স্ট্রিটে ‘বাঙ্গালা গেজেট’ নামে একটি প্রেস স্থাপন করেন। সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এই প্রেসটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
(গ) প্রকাশিত গ্রন্থ : এই প্রেস থেকে নিজের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ যেমন বাংলা গ্রামার, ইংরেজি গ্রামার ছাড়াও ‘‘গঙ্গাভক্তিতরঙ্গিনী,‘লক্ষ্মীচরিত’, ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ চাণক্য শ্লোক প্রভৃতি প্রকাশিত হয়। এই প্রেস থেকেই তৎকালীন সাড়াজাগানো প্রথম বাংলা সচিত্র গ্রন্থ ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গাল’ কাব্য প্রকাশিত হয়।
(ঘ) সংবাদপত্র-সাময়িক পত্র প্রকাশনা : প্রথম বাঙালি সাংবাদিক হিসেবে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দেন। তার উদ্যোগে ‘বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস থেকে 1818 খ্রিস্টাব্দে 16 মে প্রথম প্রকাশিত হয় ‘বাঙ্গালা গেজেটি’ নামক পত্রিকা। দেশীয় উদ্যোগে তিনিই সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র প্রকাশনার পথপ্রদর্শক ছিলেন। রামমোহন রায়ের সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে বিভিন্ন লেখা এখানে প্রকাশিত হয়।
(ঙ) পুস্তক বিক্রেতা : পুস্তক বিক্রেতা রূপেও তিনি বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দান করেন। তিনিই ছিলেন প্রথম বাঙালি পুস্তক বিক্রেতা। সেই সময় শিক্ষার বিস্তার ও ছাপাখানার প্রসার ঘটলে তার দেখাদেখি অন্যান্য বাঙালিও পুস্তক ব্যাবসার কাজে লিপ্ত হয়।
উপসংহার : শেষ জীবনে তিনি কলকাতা ছেড়ে জন্মস্থানে ফিরে গেলেও সেখান থেকেই মুদ্রণ, প্রকাশনা ইত্যাদির কাজ চালিয়ে যান। তার হাত ধরেই মুদ্রণ, প্রকাশনা, পুস্তক ব্যাবসা, সংবাদ প্রকাশনা ইত্যাদির বিশেষ রূপ অগ্রগতি ঘটে। সমসাময়িক পত্রিকা ‘সমাচার দর্পণ’ ইত্যাদিতে তার সম্বন্ধে উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করা হয়।
বিভাগ- ‘ঙ’
৫। পনেরাে বা যােলটি বাক্যে যে কোন একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৮×১=৮
৫.১ উনিশ শতকের বাংলায় ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে রামকৃষ্ণদেবের ভূমিকা সংক্ষেপে আলােচনা করো।
উত্তরঃ আধুনিক ভারতের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব হলেন শ্রীরামকৃষ্ণ (১৮৩৬-১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ)। সামাজিক গোঁড়ামি ও ধর্মীয় রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে তাঁর সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ জাতীয় জীবনে এক বড় প্রাপ্তি।
(i) যত মত তত পথ : ধর্ম নিয়ে সনাতনপন্থীদের সঙ্গে নব্যপন্থীদের দ্বন্দ্বে রামকৃষ্ণ ছিলেন সমন্বয়ের মূর্ত প্রতীক। তিনি বুঝেছিলেন সর্বধর্মের সমন্বয় হল যুগের আদর্শ। বৈষ্ণব ও শক্তি সাধনার বিচিত্রপথ, ইসলাম থেকে খ্রীস্টীয় সাধনা, দ্বৈত থেকে অদ্বৈত, সাকার থেকে নিরাকার, সগুন থেকে নির্গুণ সব সাধনার মধ্যে বিরোধের তিনি মীমাংসা ঘটালেন – ‘যত মত তত পথ’ – এই মত দিয়ে তিনি বলেন মতের ভিত্তিতে পথ আলাদা হলেও লক্ষ্য সবারই এক ঈশ্বরের সান্নিধ্য।
(ii) কর্মই ধর্ম : শ্রীরামকৃষ্ণ ঈশ্বরলাভের জন্য বিশেষ কোন আচার-আচরণ, যাগ-যজ্ঞের প্রয়োজন নেই বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন ঈশ্বরলাভের জন্য পান্ডিত্য, শাস্ত্রজ্ঞান, মন্ত্র-তন্ত্র, জপ-তপ, সংসার ত্যাগ, শুচিতা এসব কোন কিছুর দরকার নেই। কেবল আন্তরিকভাবে ভক্তির সাথে যে কেউ ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে পারে। এই বক্তব্য দিয়ে রামকৃষ্ণ ঈশ্বরলাভের জন্য এক সহজ সরল পদ্ধতির কথা বলেন।
(iii) শিবজ্ঞানে জীবসেবা : শ্রীকৃষ্ণের কাছে ধর্মের অর্থ হলো জীবের কল্যাণ এবং জীব সেবা। জীব দয়া নয়, ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’ ই হলো ধর্মের মূল আদর্শ। তিনি বলেছেন যে, প্রতিটি মানুষ এই মুক্ত পুরুষ, ঈশ্বরের সন্তান। আচার অনুষ্ঠান সর্বস্ব উপাসনা নয়, শ্রী রামকৃষ্ণের কাছে জীবের সেবায় পরম ধর্ম।। তার প্রচারের ফলে আচার অনুষ্ঠান সর্বস্ব হিন্দু ধর্ম জটিলতা মুক্ত হয়ে আবার প্রানবন্ত হয়ে ওঠে।
(iv) ধর্মীয় আদর্শ : শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, ঈশ্বর লাভ উপাসনার মূল উদ্দেশ্য এবং চৈতন্যের পথে অগ্রসর হওয়াই মানুষের ধর্ম। পাপি তাপী, মদ্যপ, নাস্তিক, দুষ্কৃতী, পন্ডিত, সজ্জন-সকলকে সেই চৈতন্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। সাধন মার্গের সব পথই সত্য। তার মতে, আটা নিষ্পাপ ও অবিনশ্বর। তাই মানুষকে পাপী বলা অন্যায়। তিনি তার জীবন ও সাধন দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, হিন্দুরা পৌত্তলিক নয়, তারা মৃন্ময়ীতে চিন্ময়ীর উপাসনা করেন।
(v) নারী মুক্তি : শ্রীরামকৃষ্ণ ভারতীয় নবজাগরণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য নারী মুক্তি আদর্শ প্রচার করেন। তিনি মনে করতেন যে, নারী হলো স্বয়ং জগৎ মাতার প্রতিমূর্তি। নারী জাতির দূর্দশা মোচন ও নারী নেতৃত্ব কে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি নারীর সুইচ্চ মহিমা ঘোষনা করেন।
(vi) মানবতাবাদ : শ্রী রামকৃষ্ণ মনে করতেন যে, প্রতিটি মানুষই অনন্ত শক্তির অধিকারী। তিনি মানুষের চরম ভোগবাদ ও আভিজাত্যের বিরোধী টা করে মানবসেবা ও মানব কল্যাণের আদর্শ প্রচার করেন। তার মানবতাবাদী আদর্শের প্রচারের ফলে সমাজের জাত পাতের বেড়াজাল ভেঙে যায়। তিনি উনিশ শতকে বাবু কালাচারের নিন্দা করে বলেন, “আমি বাবু হতে পারব না।” তার গ্রাম্য আচার ব্যবহার, অর্ধনগ্ন বেশ, আমি জাতির প্রতি অহিনা তৎকালীন উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সংস্কৃতি বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
(vii) সরল আদর্শ : শ্রী রামকৃষ্ণ তার আদর্শ খুব সরল ভাষায়, বিভিন্ন গল্পের উপমা দিয়ে মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। সমাজের নিচুতলা বা ওপর তোলার সব ধরনের মানসী তার মুখ থেকে ধর্মের আদর্শ শোনার জন্য তার কাছে ছুটে আসতেন। তার কথা ও কাহিনী লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, অপমানের শিকার অগণিত মানুষের জীবনে শান্তির পথ দেখায়। স্বামী বিবেকানন্দ, কেশব চন্দ্র সেন, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বিনোদিনী দাসী প্রভুক সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ঠাকুরের সান্নিধ্য লাভ করেন।
উপসংহার : তাপ দগ্ধ পৃথিবী চারিদিকে যখন বিষবাষ্প উড়ে তখন শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী ও আদর্শ যন্ত্রণায় দগ্ধ ও কাতর মানুষের বুকে শান্তির বারিবিন্দুর মতো ঝরে পড়ে। ভারতীয় সমাজের আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশে তার অবদান অসামান্য। তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তার অন্যতম শীর্ষ স্বামী বিবেকানন্দ পরবর্তীকালে ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সমাজসেবা ও মানব কল্যাণ সুমহান আদর্শ প্রচার করেন। ঐতিহাসিক চার্লস হেমস্যাৎ ভারতীয় জাতীয় চেতনার বিকাশ ও বাঙালি মানুষের ওপর রামকৃষ্ণ সীমাহীন প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। অগ্নি যুদ্ধের বিপ্লবী শ্রী অরবিন্দ ঘোষ বলেছেন, “বাংলার পুনর্জাগরনে তার অবদান এই সর্বশ্রেষ্ঠ। তার দাঁড়ায় ভারতের মুক্তি ও পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে।” প্রাশ্চাত্য মনীষীর আমোরি ডি. রেইন কোট ভারতীয় ইতিহাসের সর্বযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও চকমপ্রদ ‘মিষ্টিক’ শ্রী রামকৃষ্ণের প্রভাবে কথা উল্লেখ করেছেন।
৫.২ সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী ছিল ? এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হ’ল কেন ?
ভূমিকা: মুঘল আমলের ইতিহাস গ্রন্থ ‘দবিস্তান’ বা গুলাম হুসেন রচিত ‘সিয়ার-উল-মুতাখ্খিরিন’ থেকে জানা যায়- অষ্টাদশ বা তার আগে উত্তর ভারতের দশনামী সন্ন্যাসী, শৈব সম্প্রদায়ভুক্ত নাগা, মারাঠা সম্প্রদায়ভুক্ত গোঁসাইরা বা বেশরা সুফি সম্প্রদায়ভুক্ত মাদারি ফকিররা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াত এবং ফেরার পথে স্থানীয় জমিদার ও ভূস্বামীদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করত।
বিদ্রোহ : এই সন্ন্যাসী ও ফকিরদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলা ও বিহারে স্থায়ীভাবে বসবাস করে এবং কৃষিকাজ ও সিল্ক, মশলা প্রভৃতির ব্যবসাকে তারা পেশা হিসেবে বেছে নেয়। ওয়ারেন হেস্টিংস এর সময়ে নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় এরা ভূমি থেকে উচ্ছেদ সহ সরকারের শাসন ও শোষণের শিকারে পরিণত হয় এবং প্রতিবাদে তারা বিদ্রোহে নামে।
(ক) ঐতিহাসিক তাৎপর্য—
(i) কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে ১৭৬৩ খ্রি. সংঘটিত প্রথম কৃষক বিদ্রোহ ঐতিহাসিকভাবে খুব তাৎপর্যপূর্ণ। সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ছিল ঔপনিবেশিক আমলে সংগঠিত প্রথম কৃষক বিদ্রোহ, প্রায় ৩৭ বছর (১৭৬৩ খ্রি.- ১৮০০ খ্রিঃ) ধরে চলেছিল এই বিদ্রোহ, যার নজির ঔপনিবেশিক আমলে কোন কৃষক বিদ্রোহে লক্ষ্য করা যায়নি।
(ii) হিন্দু-মুসলিম সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে শামিল হয়েছিল এই বিদ্রোহে, তাদের লক্ষ্য ছিল কোম্পানি শাসনের হাত থেকে মুক্তি, যেজন্য সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহকে অনেকে স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম বলেছেন।
(iii) অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকের আন্দোলন এবং বিদ্রোহগুলির মধ্যে সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ছিল প্রথম সশস্ত্র অভ্যুত্থান, প্রথম গেরিলা পদ্ধতি অনুসৃত হয়েছিল এই বিদ্রোহে। পরবর্তীকালে সংঘটিত সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের অগ্রদূত বলা যায় এই বিদ্রোহকে ।
(iv) স্থানীয় গণ্ডি অতিক্রম করে সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ বৃহৎ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল, রামপুর থেকে বোলপুর এবং ঢাকা থেকে রংপুর পর্যন্ত এই বিদ্রোহ প্রসারিত হয়েছিল, ফলে সেই অর্থে সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহকে ‘গণ বিদ্রোহ’ বলা যায়।
(খ) বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার কারণ—
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের লক্ষ্য ও আদর্শ প্রভাবিত করেছিল সাহিত্যিকদের, যার প্রভাব পরবর্তীকালে ‘আনন্দমঠ’ ও ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাসে লক্ষ্য করা যায়। আনন্দমঠ পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে মূল প্রেরণা হয়ে উঠেছিল। কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা এই বিদ্রোহ বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়—
(i) ইংরেজ সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের নেতাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার অভাব, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব বিদ্রোহকে ব্যর্থ করেছিল।
(ii) ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের অভাব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা বিদ্রোহীদের দুর্বল করেছিল।
(iii) বিদ্রোহের শেষদিকে নেতৃত্বের প্রশ্নে সন্ন্যাসী ও ফকিরদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ও ঐক্যহীনতা বিদ্রোহের লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল।
৫.৩ হ্যালহেডের ‘এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ কেন ? বাংলা ছাপাখানার বিকাশে চার্লস উইলকিন্স-এর ভূমিকা বিশ্লেষণ করো। ৩+৫
উত্তরঃ ভারতে বাংলা অক্ষরে প্রথম মুদ্রিত বই হল ১৭৭৮ খ্রি. হুগলির অ্যানড্রুজের ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড এর লেখা ‘এ গ্রামার অব দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ বাংলাভাষায় প্রকাশিত এই গ্রন্থটি ছাপাবইয়ের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে।
‘এ গ্রামার অব দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ গ্রন্থটি ইংরাজি ভাষায় লেখা হলেও এর পাতায় পাতায় বাক্যাংশ, শ্লোক সহ পদ্যাংশ প্রভৃতি ছাপা হয়েছিল বাংলা হরফে, স্থান পেয়েছিল কৃত্তিবাসী রামায়ণ, কাশীদাসী মহাভারত আর ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল ও বিদ্যাসুন্দর থেকে উদ্ধৃতি। ফলে এই গ্রন্থে বাংলা হরফের ব্যবহার বাংলা ছাপাবইয়ের ইতিহাসে অভিনব।
এছাড়াও হ্যালহেড রচিত এই গ্রন্থে প্রথম বিচল / সঞ্চলিত হরফ (moveable) ব্যবহৃত হয়, যা ছিল বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের ইতিহাসে নতুন সংযোজন ও নতুন যুগের সূচনা। এই প্রথম কোন বাংলা গ্রন্থ সরকারি খরচ ও উদ্যোগে, ওয়ারেন হেস্টিংসের তৎপরতায় ছাপানো হয় এবং যার ছাপানোর কাগজ আনা হয় বিলেত থেকে জাহাজে করে ।
ছাপাখানার বিকাশে চার্লস উইলকিন্স-এর ভূমিকা—
‘বাংলা মুদ্রণ শিল্পের জনক’ হলেন চার্লস উইলকিনস, তিনি বিলেত থেকে বাংলা অক্ষর তৈরির কৌশল রপ্ত করেন। উইলকিনসই প্রথম ধাতু নির্মিত সঞ্চালন যোগ্য (moveable) বাংলা হরফ এর সৃষ্টিকর্তা।
কোম্পানি সরকার রাজ্যশাসন ও বাণিজ্যের প্রয়োজনে হ্যালহেড রচিত বাংলা ব্যাকরণটি ছাপানোর প্রয়োজন উপলব্ধি করলে, তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য সিভিলিয়ান এবং বিশিষ্ট বাংলা ও সংস্কৃত পণ্ডিত চার্লস উইলকিনসকে দায়িত্ব দেন।
চার্লস উইলকিনস অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পঞ্চানন কর্মকার এর সাহায্য নিয়ে ছেনি কাটা বাংলা হরফ তৈরি করে আনড্রুজের ছাপাখানা থেকে ১৭৭৮ খ্রিঃ ‘গ্রামার অব দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ বার করেন। উইলকিনসের দক্ষতা ও নিপুণতায় বাংলা ভাষায় প্রথম বই প্রকাশিত হয়।
(কেবলমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য)
বিভাগ ‘চ’
৬। ৬.১ একটি পূর্ণবাক্যে উত্তর দাও (যে কোনাে চারটি) : ১x৪=৪
৬.১.১ কোন বছর ‘বঙ্গদর্শন’ প্রকাশিত হয় ?
৬.১.২ নীল কমিশন কবে গঠিত হয় ?
৬.১.৩ কোন বছর হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ?
৬.১.৪ ভাগনাডিহিতে কোন বিদ্রোহের সূচনা হয় ?
৬.১.৫ ভারতমাতা’ চিত্রটি কে এঁকে ছিলেন ?
৬.১.৬ বসুবিজ্ঞান মন্দির কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
৬.২ দু’টি বা তিনটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনাে তিনটি) : ২x৩=৬
৬.২.১ ডেভিড হেয়ার বিখ্যাত কেন ?
৬.২.২ ‘বিপ্লব’ বলতে কী বােঝায় ?
৬.২.৩ ভারত সভা প্রতিষ্ঠার দু’টি উদ্দেশ্য লেখ।
৬.২.৪ পঞ্চানন কর্মকার স্মরণীয় কেন ?
৬.২.৫ কী উদ্দেশ্যে শ্রীনিকেতন’ গড়ে ওঠে ?
📌 আরও দেখুনঃ
📌 আরও দেখুনঃ
» মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক ইংরেজি পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক ইতিহাস পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক ভূগোল পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পাঠ্যবই সমাধান
» দশম শ্রেণি সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র
» মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫
» মাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের MCQ মক টেস্ট