প্রশ্ন: ‘বাদার ভাত খেলে তবে তো সে আসল বাদার খোঁজ পেয়ে যাবে একদিন।’- বাদা কাকে বলে ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির এইরকম মনে হওয়ার কারণ কী ?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পের অন্তর্গত। সাধারণভাবে বাধা শব্দটির অর্থ হলো জঙ্গল বেষ্টিত অনাবাদি জমি। আলোচ্য গল্পে লেখিকা বাতা শব্দটিকে দুটি ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করেছেন। ১. বড় বাড়ির অধিকৃত বাদা অঞ্চল হল- ফসলে পরিপূর্ণ উর্বর ভূমি। ২. অন্যদিকে উৎসব যে বাদায় বাস করে সেটা অনুর্বর ভূমি সেখানে শুধু গুগলি, গেঁড়ি, কচু শাক, সুশনো শাক পাওয়া যায়।
গল্পের প্রধান চরিত্র উচ্ছব মাতলা নদীর বন্যা স্ত্রী-পুত্র-কন্যা এবং শেষ সম্বল ভিটেবাড়ি হারিয়ে ফেলে। একমুঠো ভাত পাওয়ার আশায় গ্রাম সম্পর্কিত বোন বাসিনীর মনি বাড়িতে আসে কলকাতায়। ক্ষুধার্থ উৎসব সেখানে সে দেখে দুর্ভিক্ষের দিনে বাসিনীর মনিব বাড়িতে বিভিন্ন রকমের চার। বাসিনীকে প্রশ্ন করে উচ্ছব জানতে পারে বড়ো কর্তার বাড়িতে যে নানা ধরনের চাল আসে সেই চালের উৎস হলো ‘বাদা’।‘কেনা চাল নয় বাদা থেকে চাল আসছে।’ কিন্তু উচ্ছবের বাদায় তো ধান হয় না। উচ্ছবের মনে প্রশ্ন জাগে- ‘সে কোন বাদা ? উচ্ছবের বাদায় শুধু গুগলি,গেঁড়ি, কচু শাক, সুশনো শাক।’ আসলে এ স্বপ্ন তার শুধু একার নয় প্রতিটি নিরন্ন মানুষের স্বপ্ন এমন একটি বাদা খুঁজে বের করা। ধনীদের অধিকৃত বাদার মতো অবিকল আরেকটি বাদা হয়তো হত দরিদ্র মানুষদের জন্য আছে এমনটাই সে ভাবে, এবং বাদার ভাত খেলেই হয়তো সেই বাদার খোঁজ মিলবে। তাই ভাত খেয়ে দেয়ে শক্তি পেলে উচ্ছব সেই বাদাটা খুঁজে বের করবে।
অথবা,
প্রশ্ন: ‘বাদার ভাত খেলে তবে তো সে আসল বাদার খোঁজ পেয়ে যাবে একদিন।’- আসল ‘বাদা’ কোনটা ? উচ্ছব আর আসল ‘বাদা’টার খোঁজ করতে পারল না কেন ?
উত্তরঃ সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ গল্পে আসল ‘বাদা’ বলতে উচ্ছবের গ্রাম সম্পর্কিত বোন বাসিনীর মনিবের যে বাদা অঞ্চলে ঝিঙেশাল , রামশাল , কনকপানি , পদ্মজালি, মোটা সাপটা ইত্যাদি ধান উৎপাদিত হতো সেই অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে।
গল্পে দেখা যায়, বাসিনী উচ্ছবকে বড়ো বাড়িতে নিয়ে এসেছে হোমযজ্ঞের কাঠ কাটার জন্য । উচ্ছবও একমুঠো ভাতের আশায় আড়াই মণ কাঠ কেটে ফেলে । ক্ষুধার্ত উচ্ছব ভাতের জন্য উতলা হয়ে ওঠে । কিন্তু তান্ত্রিকের বিধানে তার কাঙ্ক্ষিত ভাত খাওয়া অধরা থেকে যায় । কেননা অসুস্থ বুড়োকর্তা মরে গিয়ে নাকি বাড়ির রান্না করা ভাত অশুচি করে দিয়েছে । তাই এই ভাত আর খাওয়া চলবে না । সংস্কার মতো এই অশুচি ভাত ফেলে দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছে উচ্ছবের ওপর । কিন্তু ভাতের ডেকচি হাতের নাগালে পেতেই উচ্ছব অশুচি ভাত খাওয়ার ব্যাপারে কোনোরূপ বাধানিষেধ মানতে রাজি নয় । মনের আনন্দে ভাত খেয়ে ভুখা পেটের খিদে মিটাবে এই আশায় সে ভাতের ডেকচি নিয়ে হনহন করে হাঁটতে শুরু করে । সে খুব দ্রুত স্টেশনে উপস্থিত হয় , এবং প্রাণভরে ভাত খেয়ে স্বর্গসুখ অনুভব করে । সব ভাত খেয়ে উচ্ছব ডেকচির কানায় মাথা স্পর্শ করে ঘুমিয়ে পড়ে ।
আর এখানেই উচ্ছবের স্বর্গসুখের স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায় । সকাল না হতেই পেতলের ডেকচি চুরি করার অপরাধে লোকজন উচ্ছবকে ধরে ফেলে এবং মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায় । উচ্ছব একদিন যে আসল বাদাটার খোঁজ করার স্বপ্ন দেখেছিল , সেই বাদাটার খোঁজ করা তার আর সম্ভব হয়নি।