সাহিত্য মেলা
সপ্তম শ্রেণি বাংলা
ছন্দে শুধু কান রাখো
—অজিত দত্ত
মন্দ কথায় মন দিয়ো না
ছন্দে শুধু কান রাখো,
দ্বন্দ্ব ভুলে মন না দিলে
ছন্দ শোনা যায় নাকো।
ছন্দ আছে ঝড়-বাদলে
ছন্দ আছে জোছনাতে,
দিন দুপুরে পাখির ডাকে
ঝিঝির ডাকে ঘোর রাতে।
নদীর স্রোতের ছন্দ যদি
মনের মাঝে শুনতে পাও
দেখবে তখন তেমন ছড়া
কেউ লেখেনি আর কোথাও
ছন্দ বাজে মোটর চাকায়
ছন্দে চলে রেলগাড়ি
জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে
নৌকো জাহাজ দেয় পাড়ি
ছন্দে চলে ঘড়ির কাঁটা
ছন্দে বাঁধা রাত্রি-দিন,
কান পেতে যা শুনতে পাবে
কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন।
সকল ছন্দ শুনবে যারা
কান পেতে আর মন পেতে
চিনবে তারা ভুবনটাকে
ছন্দ সুরের সংকেতে।
মনের মাঝে জমবে মজা
জীবন হবে পদ্যময়,
কান না দিলে ছন্দে জেনো
পদ্য লেখা সহজ নয়।
শব্দার্থঃ
দ্বন্দ্ব– সংঘাত, ঝগড়া, বিবাদ।
ভুবন– পৃথিবী, জগত।
সংকেত– ইশারা, ইঙ্গিত।
বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর
কবি পরিচিতিঃ অবিভক্ত বাংলার পূর্ববঙ্গে, ঢাকার বিক্রমপুরে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর কবি অজিত দত্তের জন্ম হয়। অত্যন্ত মেধাবী এই মানুষটি ত্রিশ-চল্লিশের দশকে আধুনিক বাংলা কবিতার এক বিশিষ্টতম কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে তিনি এমএ পাশ করেন। তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয় কলকাতার রিপন কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। পরবর্তী ক্ষেত্রে চন্দননগর, বারাসাত, প্রেসিডেন্সি কলেজে খ্যাতির সঙ্গে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। অবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। অর্থাৎ কবির জীবনের একটা বড়ো অংশই জ্ঞানচর্চায় অতিবাহিত হয়। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দীর্ঘ শিক্ষকজীবন থেকে অবসর নেন তিনি। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরু। ক্রমে এক বলিষ্ঠ কবি হিসেবে অজিত দত্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে বন্ধু বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে’ প্রগতি’ (১৯২৭) পত্রিকার সম্পাদনা তাঁর সাহিত্যিক উত্তরাধিকারে গভীর দৃঢ়তা দেয়। পরে বুদ্ধদেব বসু যখন ‘কবিতা’ পত্রিকার প্রকাশ শুরু করেন, তখন সূচনালগ্ন থেকেই তিনি ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত থেকেছেন। পরবর্তীক্ষেত্রে গোকুলচন্দ্র নাগ ও দীনেশরঞ্জন দাশের যুগ্ম-সম্পাদনায় মাসিক পত্রিকা ‘কল্লোল’ প্রকাশিত হলে, তিনি নিয়মিত সেখানে লেখালেখি করে পত্রিকার এক যোগ্য সাহিত্যকার হয়ে ওঠেন। ‘দিগন্ত’ সাহিত্য-বার্ষিকীর সম্পাদক ছিলেন কবি। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কুসুমের মাস’ ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। কবির উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হল– ‘কুসুমের মাস’, ‘পাতাল কন্যা’, ‘নষ্টচাঁদ’, ‘পুনর্নবা’, ‘ছড়ার বই’, ‘ছায়ার আলপনা’, ‘জানালা’, ‘সাদা মেঘে কালো পাহাড়’ প্রভৃতি। কয়েকটি প্রবন্ধগ্রন্থেরও জনক ছিলেন তিনি। ‘জনান্তিকে’, ‘মন পবনের নাও’ ও ‘বাংলা সাহিত্যে হাস্যরস’ তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত ও গবেষণাধর্মী গদ্যগ্রন্থ। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর এই মহান কবি লোকান্তরিত হয়।
উৎসঃ “ছন্দে শুধু কান রাখো” একটি কিশোরমনষ্ক কবিতা, যেটি কবি অজিত দত্তের ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত “শ্রেষ্ঠ কবিতা” কবিতা সংকলন থেকে নেওয়া।
পাঠপ্রঙ্গঃ প্রকৃতির পরতে পরতে রয়েছে ছন্দময়তার আদর্শ উদাহরণ। প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে ছন্দের আশ্চর্য প্রকাশ। এই ছন্দেই জীব-জীবনও চালিত হয়। যুগ্মভাবে কান পাতলে আর মন দিলেই। শোনা যাবে ছন্দের টুং-টাং শব্দ। তবে কোলাহলমুখর এই বর্তমান পৃথিবীতে এই ছন্দময়তাকে অনুভব করা খুব সহজ নয়। কবি তাঁর কবিতায় এই বিশ্বাসকে নিবিড়ভাবে গেঁথে দিয়েছেন। আমাদের চারপাশের অনেক কিছুর মধ্যেই ছন্দের যে চলাচল, তাকে যথার্থ অনুভব করতে পারলেই জীবন হয়ে উঠবে সহজ ও সুন্দর। এতে মানবমনের সৃষ্টিশীলতাও বিকশিত হবে নিশ্চিত। জীবনকে পদ্যময় করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন কবি এবং সেক্ষেত্রে সহযোগ পেতে ছন্দের আশ্রয়কেই তিনি শ্রেষ্ঠ পথ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। নিজমনকে ছন্দের অবগাহনে সিক্ত করে এই ভুবনটিকে ছন্দ-সুরের সংকেতে অনুভব করে নিতে পারলেই মনে জমবে মজা। সেই ছন্দকেই কবি অনুভব করতে বলেছেন’ ছন্দে শুধু কান রাখো’ কবিতায়।
বিষয় সংক্ষেপঃ আলোচ্য ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ কবিতায় কবি বোঝাতে চেয়েছেন ছন্দ হল একপ্রকার পদ্যবন্ধ। ছন্দের উপর ভর দিয়ে কবিতা যেমন এগিয়ে চলে, তেমনি এই মহাবিশ্বের সব কিছই এক ছন্দময়তার বন্ধনে বাঁধা। অতএব বিশ্বময় ছড়ানো এক ছন্দস্পন্দন সঠিকভাবে অনুভব করতে গেলে, মন্দ কথায় কান দেওয়া চলবে না এবং ছন্দে কান রেখে চলতে হবে। দ্বন্দ্ব – বিবাদ ভুলে গিয়ে মনকে সজাগ করে না তুললে, ছন্দকে যথার্থ শোনা যায় না। অথচ বিশ্বপ্রকৃতির অজস্র উপাদানে ছড়িয়ে রয়েছে ছন্দ। ঝড়বাদল, জোছনা, দিনের পাখির কলতান কিংবা ঘোর রাতের ঝিঁঝির ডাকে ছন্দ থাকে টইটুম্বুর হয়ে। নদীর স্রোতের অসাধারণ কলরোলের ছন্দবদ্ধতা মনের মাঝে শুনতে পেলে দেখা যায়, এ যেন ছড়ার ছন্দ, যা কেউ কোথাও লেখেনি। মোটরের চাকাতেও ছন্দ বেজে উঠতে দেখা যায়। রেলগাড়ির চলাচলেও রয়েছে ছন্দের অনন্য উপস্থিতি। জলের উপরেও ছন্দ-তাল বজায় রেখে নৌকো-জাহাজকে পারাপার করতে দেখা যায়। ছন্দে চলার বড়ো উদাহরণ বুঝি ঘড়ির কাঁটা, যাতে বাঁধা পড়ে আছে রাত ও দিন। অতএব কান পেতে যা শুনতে পাওয়া যাবে, তার কিছুই ছন্দহীন নয়। এইসব ছন্দ যারা কান পেতে ও মন দিয়ে শুনবে, তারাই যথার্থভাবে ভুবনটাকে ছন্দ-সুরের সংকেতে চিনতে পারবে। আর বিশ্বপ্রকৃতির এই ছড়ানো ছন্দকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারলেই উপলব্ধি করা যাবে জীবনের আনন্দ। তখন জীবন হয়ে উঠবে’ পদ্যময়’। কান পেতে ও মন দিয়ে ছন্দের অনুভূতি গ্রহণ না করলে ছন্দবদ্ধ পদ্য লেখা সহজ হবে না।
নামকরণঃ নামকরণই সাহিত্যের এমন একটি বিষয়, যা যে-কোনো সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন না পাঠককুল ওই সাহিত্যের শৈলীতে প্রবেশের পূর্বে নামকরণ বা শিরোনাম দেখেই পাঠে প্রথম উৎসাহিত হন। অতএব দেখা যায় সাহিত্যকারেরা নামকরণটিকে বিষয়ানুগ ও যুক্তিগ্রাহ্য করে তোলার চেষ্টা করেন। তাই নামকরণ হয়ে ওঠে সাহিত্যের এক মৌলিক উপাদান। কবি অজিত দত্তের ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ এই কিশোরমনস্ক কবিতাটিতেও দেখা যায় নামকরণের প্রতি কবির ভাবনা যথেষ্ট নিজস্বতা পেয়েছে। কবিতার সূচনায় কবি মন্দ কথায় কান না দিয়ে কেবল ছন্দে কান রাখতে বলেন, কারণ তাঁর গভীর বিশ্বাস দ্বন্দ্ব বিবাদ ভুলে মনকে একাত্ম করতে না পারলে জগত্ময় ছড়িয়ে থাকা ছন্দকে যথার্থ অনুভব করা যায় না। বিশ্বময় ছন্দের সুন্দর প্রকাশকে যথার্থ অনুভব করার প্রেরণা দিতেই কবি কান পেতে ও মন দিয়ে ছন্দ শোনার পরামর্শ দেন। দেখিয়ে দেন ঝড়বাদলে, দিনের পাখির ডাকে, ঘোর রাতের ঝিঁঝির ডাকে সর্বত্রই প্রকৃতির নানা প্রসঙ্গে ছন্দ যেন নিজস্ব মাত্রা নিয়ে উপস্থিত। নদীর স্রোতে মাটির উপর মোটর চাকার, রেলের উপর রেলগাড়ি চলার, জলের উপর নৌকো-জাহাজের পাড়ি জমানোর ছন্দকে কবি কান পেতে শুনতে বলেন। ছন্দে চলা ঘড়ির কাঁটা যেমন দিনরাত্রিকে বেঁধে রেখেছে, তেমনি এ জগতের ‘কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন।’ অতএব সব কিছুর মধ্যে ছন্দের আশ্চর্য প্রকাশ। যারা ‘কান পেতে আর মনে পেতে’ শুনবে, তারাই ‘ছন্দ সুরের সংকেত’ ভুবনটাকে যথার্থ চিনবে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। কবিতাশেষে কবি এ কথা জানাতে ভোলেননি, ছন্দকে সঠিক অনুভব করতে পারলে মনে আসবে মজা, যা জীবনকে করে তুলবে পদ্যময়। আবার ছন্দ না থাকলে কবিতা লেখাও যে কঠিন হয়ে পড়বে, এ কথাও কবি উল্লেখ করেছেন। অতএব দেখা যাচ্ছে, কবি তাঁর কবিতায় প্রকৃতির ছন্দে কান রাখার বিশেষ প্রয়োজনীয়তাকে সর্বাধিক মূল্য দিয়েছেন। এই কান রাখার আসল উদ্দেশ্য জীবনের আনন্দকে সত্যিকারের অনুভব করা। সুতরাং কবিতার শিরোনামে উঠে আসা ছন্দে শুধু কান রাখো’ চমকপ্রদ, অর্থময়, ব্যঞ্জনাধর্মী হওয়ায় তা সার্থক হয়েছে।
∆অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর (এম. সি. কিউ)।
১. ছন্দে শুধু কান রাখো” কবিতাটি কার লেখা ? ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর / ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর / অজিত দত্ত )।
উত্তরঃ অজিত দত্ত।
২. কবিতায় কোনটা ভূলে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে ?( দ্বন্দ্ব / ছন্দ / রাগ )
উত্তরঃ দ্বন্দ্ব।
৩. ছন্দ কোথায় কোথায় আছে বলে কবি মনে করেন ? ( ঝড় / বাদল / জোছনা / উপরের সবকটিই)।
উত্তরঃ উপরের সবকটিই।
৪. ঝিঁঝিঁ কখন ডাকে ? ( রাত্রে / ঘোর রাত্রে / সন্ধ্যাবেলায়)।
উত্তরঃ ঘোর রাত্রে
৫. মনের মাঝে কোন ছন্দ শুনতে পাওয়ার কথা বলা হয়েছে ? (নদীর স্রোতের / সমুদ্র স্রোতের / ঝরনা পড়ার)।
উত্তরঃ নদীর স্রোতের।
৬. কবিতায় ছন্দে যে গাড়ি চলার কথা বলা হয়েছে (ট্রাম গাড়ি / বাস গাড়ি / রেলগাড়ি)।
উত্তরঃ রেলগাড়ি।
৭. ছন্দে কান না দিলে যা লেখা সহজ নয় (গদ্য / পদ্য / কবিতা)।
উত্তরঃ পদ্য।
৮. যারা সকল ছন্দ শুনবে তাদের জীবন হবে (ছন্দময় / গদ্যময় / পদ্যময়)।
উত্তরঃ পদ্যময়।
(হাতে কলমে প্রশ্ন উত্তর)
১. অনধিক দুটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১.১ “মন্দ কথায় কান দিয়াে না”– মন্দ কথার প্রতি কবির কীরূপ মনােভাব কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে ?
উত্তরঃ মন্দকথা মনের মধ্যে রাখলে দ্বন্দ্ব বা বিবাদ তৈরি হয়; ফলে ছন্দ শােনা যায় না। তাই, মন্দ কথার প্রতি কবি বিরূপ মনােভাব প্রকাশ করেছেন।
১.২ “কেউ লেখেনি আর কোথাও”– কোন্ লেখার কথা এখানে বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ নদীস্রোতের মধ্যেও ছন্দ রয়েছে; সেই ছন্দ যদি মনের মাঝে শুনতে পাওয়া যায়, তবে সেই ছন্দ সুন্দর।
১.৩ “চিনবে তারা ভুবনটাকে”– কারা কীভাবে ভুবনটাকে চিনবে ?
উত্তরঃ ঘড়ির কাটার ছন্দ, দিন-রাত্রির ছন্দ যারা কান পেতে শুনতে পাবে সেই ছন্দ তাদের কাছে বিশ্বভুবন ছন্দময় হয়ে উঠবে।
১.৪ “পদ্য লেখা সহজ নয়”— পদ্য লেখা কখন সহজ হবে বলে কবি মনে করেন ?
উত্তরঃ পদ্য ছন্দে লিখতে হয়, তা সহজ কাজ নয়। তাই, ছন্দবােধ না থাকলে পদ্য লেখা সহজ নয়।
১.৫ “ছন্দ শােনা যায় নাকো”—কখন কবির ভাবনায় আর ছন্দ শােনা যায় না ?
উত্তরঃ মানুষের মন দ্বন্দ্ব-বিবাদময় থাকলে ছন্দ শােনা যায় না। সকল প্রকার ঝগড়া-বিবাদ ভুলে, দ্বন্দ্ব মিটিয়ে মন দিতে হবে, তবেই ছন্দ শােনা যাবে।
২. বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণে এবং বিশেষণগুলিকে বিশেষ্য পরিবর্তন করা এবং বাক্যরচনা করাে : ঝড়, মন, ছন্দ, দিন, সুর, সংকেত, দ্বন্দ্ব, মন্দ, ছদহীন, পদ্যময়, সহজ।
উত্তরঃ
» ঝড় (বি) > ঝােড়াে (বিণ) : বাক্য – আজ সকাল থেকেই ঝােড়াে হাওয়া বইছে।
» মন (বি) > মানস (বিণ) : আমারই মানসপটে তারই ছবি আঁকা।
» দিন (বি) > দৈনিক (বিণ) : সে দৈনিক তিন ঘণ্টার সাঁতার কাটে।
» ছন্দ (বি) > ছন্দময় (বিণ) : কবিতা ছন্দময় হয়ে থাকে।
» সুর (বি) > সুরেলা (বিণ) : আরতির মতাে এমন সুরেলা কণ্ঠ আর শুনিনি।
» সংকেত (বি) > সাংকেতিক (বিণ) : সাংকেতিক চিহ্নগুলি মনে রাখাে।
» দ্বন্দ্ব (বি) > দ্বন্দ্বজ (বিণ) : দ্বজ সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী কোরাে না।
» মন্দ (বিণ) > মন্দত্ব (বি) : মন্দত্ব দূর করো ,নইলে ছন্দ শুনতে পাবে না।
» ছন্দহীন (বিণ) > ছন্দহীনতা (বি) : অকবিরা ছন্দহীনতায় আকুল।
» সহজ (বি) > সহজে (বিণ) : তুমি সহজে কাজটা করতে পারাে।
» পদ্যময় (বিণ) > পদ্য (বি) : সুদীপ্তর লেখা পদ্য ভালাে লাগে।
৩. নীচের শব্দগুলিকে আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহার করে দুটি করে বাক্য লেখাে :
মন্দ, দ্বন্দ্ব, তাল, ডাক, বাজে, ছড়া, মজা, নয়।
» মন্দ (খারাপ)— মন্দ কথা বলতে নেই।
» মন্দ (হালকা)— মৃদু-মন্দ বাতাস বয়ে চলেছে।
» দ্বন্দ্ব (সংশয়)— আশা করি রামবাবুর সমস্ত দ্বন্দ্ব ঘুচে যাবে।
» দ্বন্দ্ব (কলহ)— দ্বন্দ্ব থাকলে উন্নতি করা সম্ভব নয়।
» তাল (ফলবিশেষ)— ভাদ্র মাসে তাল পাকে।
» তাল (লয়)— সুর-তাল-লয় বােধ তােমার নেই।
» ডাক (আহ্বান)— তােমাকে সেই কখন থেকে ডাকছি।
» ডাক (চিঠির মাধ্যম) —ডাকে তােমার চিঠি পেয়েছি।
» বাজে (মন্দ)— বাজে কথা বলাে না।
» বাজে (আওয়াজ) —-সন্ধ্যা আরতিতে শাঁখ বাজে।
» ছড়া (গুচ্ছ)— একছড়া কলা কিনে আনতে হবে।
» ছড়া (ছন্দবদ্ধ পদ্য)— ছড়া পড়তে বেশ মজা লাগে।
» মজা (আনন্দ)— সুকুমার রায়ের ছড়াগুলি মজার।
» মজা (নষ্ট)— সমস্ত কাঁঠালটি মজে গেছে।
৪. নীচের শব্দগুলি কোন্ মূল শব্দ থেকে এসেছে লেখাে :
✓জ্যোৎস্না > জোছনা,
✓চক্র > চাকা,
✓কর্ণ > কান,
✓দ্বিপ্রহর > দুপুর,
✓ঝিল্লি > ঝিঝি
৫. কবিতার ভাষা থেকে মৌখিক ভাষায় রূপান্তরিত করাে।
৫.১ ছন্দ আছে ঝড়-বাদলে।
উত্তরঃ ঝড়-বৃষ্টিতে ছন্দ আছে।
৫.২ ছন্দে বাঁধা রাত্রি-দিন।
উত্তরঃ দিন-রাত্রি ছন্দে বাঁধা।
৫.৩ কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন।
উত্তরঃ কোনাে কিছুই ছন্দহীন নয়।
৫.৪ চিনবে তারা ভুবনটাকে/ ছন্দ-সুরের সংকেতে।
উত্তরঃ ছন্দ সুরের সংকেতে তারা ভুবনকে চিনবে।
৫.৫ কান না দিলে ছন্দে জেনাে / পদ্য লেখা সহজ নয়।
উত্তরঃ ছন্দে কান না দিলে পদ্য লেখা সহজ হবে না।
৬. ‘কান’ শব্দটিকে পাঁচটি বিশেষ অর্থে ব্যবহার করে বাক্য লেখাে :
» কান পাতলা (গােপন রাখতে অসমর্থ) : গােপালের মতাে এমন দেখিনি।
» কান কাটা (নির্লজ্জ) : লােকটা এমন দু-কান কাটা যে অপমানের পরেও দাঁড়িয়ে আছে।
» কান দেওয়া (শােনা) : একট কান দাও আমার কথায়।
» কানমলা (শাস্তি) : শিক্ষক মহাশয় তাকে কানমলা দিলেন।
» কান (কর্ণ) : কান পেতে শােননা তাহাদের কথা।
৭. ‘ঝড়-বাদল’— এমনই সমার্থক বা প্রায়সমার্থক পাঁচটি শব্দ লেখাে।
উত্তরঃ চিঠি-পত্র, খাতা-পত্তর, বন-জঙ্গল, নদী-নালা, খাল-বিল।
৮. তােমার পরিচিত আর কোন্ কোন্ যানবাহনের চলার মধ্যে নির্দিষ্ট ছন্দ রয়েছে ?
উত্তরঃ সাইকেল, রিকশা, গােরুরগাড়ি, ভ্যান ইত্যাদির চলার মধ্যে ছন্দ রয়েছে।
৯. নানা প্রাকৃতিক ঘটনায় কীভাবে প্রকৃতির ছন্দ ধরা পড়ে ?
উত্তরঃ
কান পেতে শােনা যাবে এমন | মন পেতে শােনা যাবে এমন |
মেঘ ডাকার ছন্দ | নদীর স্রোত |
কুকুরের ডাকের ছন্দ | পাখির ডাক |
বৃষ্টির শব্দ | নদীর বয়ে চলার ছন্দ |
বজ্রের শব্দ | জ্যোৎস্না রাতের ছন্দ |
• সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘পালকির গান’ কবিতাটি শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে সংগ্রহ করাে।
১০. সমার্থক শব্দ লেখাে : জল, দিন, রাত্রি, নদী, ভুবন।
উত্তরঃ
» জল : সলিল, নীর, বারি, পানি, অম্বু।
» দিন : দিবস, দিবা, অহ্ন, রােজ, অহ
» রাত্রি : নিশি, রাত,রজনি, শর্বরী, নিশীথ।
» নদী : তটিনী, নর্দু, সরিৎ, প্ৰবাহিণী, স্রোতস্বিনী।
» ভুবন : পৃথিবী, জগৎ, বিশ্ব, অবনী, মেদিনী।
১১. শব্দযুগলের অর্থ পার্থক্য দেখাও :
» দিন – দিবস
» দীন – দরিদ্র
» সুর – শূর,
» সুর – দেবতা
» মন – হৃদয়
» মণ – পরিমাপের একক
» সকল – সব
» শকল – মাছের আঁশ
১২. যারা-তারার মতাে তিনটি সাপেক্ষ শব্দজোড় তৈরি করাে।
উত্তরঃ যেমন-তেমন, যিনি-তিনি, যদি-তবে।
১৩. কবিতা থেকে খুঁজে নিয়ে তিনটি সর্বনাম লেখাে।
উত্তরঃ সকল, যারা, তারা।
১৪. কবিতায় রয়েছে এমন চারটি ‘সম্বন্ধ পদ’ উল্লেখ করাে।
উত্তরঃ পাখির, ঝিঝির, জলের, ঘড়ির।
১৫. নীচের বাক্য/বাক্যাংশের উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ আলাদা করাে।
১৫.১ ছন্দ আছে ঝড়-বাদলে।
১৫.২ দেখবে তখন তেমন ছড়া/কেউ লেখেনি আর কোথাও।
১৫.৩ জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে/নৌকো জাহাজ দেয় পাড়ি।
১৫.৪ চিনবে তারা ভুবনটাকে/ছন্দ সুরের সংকেতে।
উত্তরঃ
উদ্দেশ্য | বিধেয় |
ছন্দ | আছে ঝড়-বাদলে। |
কেউ | দেখবে তখন তেমন ছড়া / লেখেনি আর কোথাও। |
নৌকো জাহাজ | জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে দেয় পাড়ি। |
তারা | চিনবে ভুবনটাকে ছন্দ সুরের সংকেতে। |
১৬. কারক-বিভক্তি নির্ণয় করাে।
১৬.১ ছন্দে শুধু কান রাখাে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
১৬.২ ছন্দ আছে ঝড়-বাদলে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
১৬.৩ দিন দুপুরে পাখির ডাকে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
১৬.৪ ছন্দে চলে রেলগাড়ি।
উত্তরঃ কর্তৃকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
১৬.৫ চিনবে তারা ভুবনটাকে।
উত্তরঃ কর্তৃকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
👉 পরবর্তী পাঠঃ পাগলা গণেশ।