সাহিত্য মেলা
সপ্তম শ্রেণি
লেখক পরিচিতিঃ
বনফুল (১৮৯৯-১৯৭৯): ‘বনফুল’ সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম। তাঁর
জন্ম বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মণিহারীতে। সাহেবগঞ্জ হাইস্কুলে পড়ার সময় ১৯১৫ তে তাঁর প্রথম কবিতা ‘মালঞ্চ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর ‘প্রবাসী’ ও ‘ভারতী’ পত্রিকায় তিনি ‘বনফুল’ ছদ্মনামে কবিতা লেখেন। তিনি পাটনা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন। তাঁর লেখা প্রথম উপন্যাস ‘তৃণখণ্ড’ ডাক্তারি জীবনের প্রথম দিকের রচনা। বাংলা সাহিত্যে ক্ষুদ্রতম ছোটোগল্পেরও জনক তিনি। ছোটোগল্প, নাটক, উপন্যাস, কাব্য-সাহিত্যের সব শাখাতেই তিনি সমান দক্ষ। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য রচনা-‘স্থাবর’, ‘জঙ্গম’, ‘মন্ত্রমুগ্ধ’, ‘হাটেবাজারে’, ‘শ্রীমধুসূদন’, ‘বিদ্যাসাগর’ প্রভৃতি। আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘পশ্চাৎপট’ রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী পদক’ আর ভাগলপুর ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডি.লিট উপাধি লাভ করেন।
শব্দার্থ :
» ঝোঁক– আগ্রহ/প্রবণতা।
» হিজিবিজি– আঁকিঝুঁকি।
» ড্রইং– আঁকা।
» পুল– সেতু বা সাঁকো।
» চিত্রকর– শিল্পী, যিনি ছবি আঁকেন।
» নকল– অনুকরণ।
(হাতে কলমে প্রশ্নের উত্তর)
১. গল্প থেকে একইরকম অর্থযুক্ত আর একটি করে শব্দ খুঁজে নিয়ে লেখো :
উত্তরঃ
» শিল্পী > চিত্রকর।
» উজ্জ্বলতা > দীপ্তিময়তা।
» ঐরাবত > হাতি।
» নগর > শহর।
» অনুকরণ > নকল।
২. বিশেষ্য থেকে বিশেষণে রূপান্তরিত করো :
উত্তরঃ
» প্রকৃতি > প্রাকৃতিক।
» ফুল > ফুলেল।
» কল্পনা > কাল্পনিক।
» দীপ্তি > দীপ্তিময়।
» গাছ > গেছো।
৩. নিম্নরেখ অংশটির কারক-বিভক্তি নির্ণয় করো :
৩.১ প্রকৃতি থেকে ছবি আঁকো।
উত্তরঃ কর্মকারকে ‘শূন্য বিভক্তি।
৩.২ তোমার ছবি কই ?
উত্তরঃ সম্বন্ধ পদ, ‘র’ বিভক্তি।
৩.৩ একদিন তিনি খোকনদের বাড়িতে এলেন।
উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘তে’ বিভক্তি।
৩.৪ ড্রইং খাতার একটা পাতা কালো রঙে ভরে গেল।
উত্তরঃ করণকারকে ‘এ’ বিভক্তি।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর দাও :
৪.১ ড্রইং শিখতে লাগল খোকন’— খোকন কোথায় ড্রইং শিখত ? আর প্রথমদিকে কী কী আঁকত ?
উত্তরঃ খোকন স্কুলে ড্রইং শিখত।
»খোকন প্রথম দিকে টুল, টেবিল, চেয়ার, কলশি, কাপ, গোরু প্রভৃতি আঁকত।
৪.২ ‘একদিন তো মেঘের ছবি আঁকতে গিয়ে বেকুব হয়ে গেল খোকন’— ‘বেকুব’ শব্দটির অর্থ কী ? মেঘের ছবি আঁকতে গিয়ে খোকন বেকুব হয়ে গিয়েছিল কেন ?
উত্তরঃ ‘বেকুব’ শব্দের অর্থ হল বোকা বনে যাওয়া।
» মেঘের ছবি আঁকতে গিয়ে খোকন বেকুব হয়েছিল তার কারণ হল— সে যখন আঁকতে শুরু করে তখন একটি মেঘ প্রথমে দেখতে ছিল হাতির মতো। আবার আঁকা শেষ হলে ওই হাতি যেন কুমির হয়ে যায়।
৪.৩ ‘এগুলো সব নকল করা ছবি।’— কে কাকে একথা বলেছেন ? ‘নকল করা ছবি’ বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন ?
উত্তরঃ খোকনের বাবার বন্ধু বিখ্যাত চিত্রকর খোকনকে একথা বলেছেন।
» ‘নকল করা ছবি’ বলতে তিনি বলেছেন প্রকৃতিতে যা আছে অবিকল তাকে ছবিতে আঁকা হল নকল করা ছবি।
৫. নীচের প্রতিটি বাক্যকে দুটি বাক্যে ভেঙে লেখো :
৫.১ সে যখন খুব ছোটো কাগজের উপর রঙিন পেনসিল দিয়ে হিজিবিজি কাটত।
উত্তরঃ
» সে খুব ছোটো ছিল।
» কাগজের উপর রঙিন পেনসিল দিয়ে হিজিবিজি কাটত।
৫.২ পুলের ছবিটা দেখেও খুব প্রশংসা করলেন মাস্টারমশাই।
উত্তরঃ
» পুলের ছবিটা দেখলেন।
» মাস্টারমশাই খুব প্রশংসা করলেন।
৫.৩ সূর্যের যে ছবিটা এঁকেছে সেটা তো সূর্যের মতো নয়।
উত্তরঃ
» সে সূর্যের ছবিটা এঁকেছে।
» ছবিটা সূর্যের মতো নয়।
৫.৪ একদিন তো মেঘের ছবিটা আঁকতে গিয়ে বেকুব হয়ে গেল খোকন।
উত্তরঃ
» একদিন সে মেঘের ছবিটা আঁকতে গেল। » মেঘের ছবিটা আঁকতে গিয়ে খোকন বেকুব হল।
৫.৫ খোকন একদিন নিজের ঘরে চোখ বুজে বসে রইল।
উত্তরঃ
» খোকন নিজের ঘরে রইল।
» সে চোখ বুজে বসে রইল।
৬. নীচের আলাদা আলাদা বাক্যগুলি জুড়ে একটি বাক্য তৈরি করো :
৬.১ খোকন বড়ো হয়েছে। ক্লাস টেন-এ পড়ে।
উত্তরঃ খোকন বড়ো হয়ে ক্লাস টেন-এ পড়ে।
৬.২ খোকনের বাবার একজন বন্ধু বিখ্যাত চিত্রকর। তিনি লক্ষ্ণৌ শহরে থাকেন।
উত্তরঃ খোকনের বাবার একজন বন্ধু বিখ্যাত চিত্রকর লক্ষ্ণৌ শহরে থাকেন।
৬.৩ নিজের আঁকা ছবি ? তা কী করে আঁকব ?
উত্তরঃ নিজের আঁকা ছবি কী করে আঁকব ?
৬.৪ চোখ বুজে বসে কল্পনা করো। কল্পনায় যা দেখবে সেটাই এঁকে ফেলো।
উত্তরঃ চোখ বুজে বসে কল্পনায় যা দেখবে সেটাই এঁকে ফেলো।
৬.৫ তারপর হঠাৎ দেখতে পেল ওই কালোর ভেতরেই একটা মুখ রয়েছে। চোখও আছে।
উত্তরঃ তারপর হঠাৎ দেখতে পেল ওই কালোর ভেতরেই একটা মুখ ও চোখ রয়েছে।
৭. গল্পে রয়েছে এমন দশটি ইংরাজি শব্দ খুঁজে নিয়ে লেখো।
উত্তরঃ
(ক) ক্লাস টেন। (খ) পেনসিল।
(গ) স্কুল। (ঘ) ড্রইং।
(ঙ) টেবিল। (চ) চেয়ার।
(ছ) কাপ। (জ) বুক।
(ঝ) মাস্টার। (ঞ) ফটো।
৮. খোকন জিজ্ঞেস করলে— প্রকৃতি থেকে ?’—প্রশ্ন পরিহার করো।
উত্তরঃ খোকন জিজ্ঞেস করলে তা প্রকৃতি থেকে কি না।
৯. লক্ষ্ণৌ শহরটি কোথায় ? সেখানকার একটি বিখ্যাত স্থাপত্যের নাম লেখো।
উত্তরঃ লক্ষ্ণৌ শহরটি উত্তর প্রদেশে অবস্থিত। দিলখুশ প্যালেস হল সেখানকার বিখ্যাত স্থাপত্য।
১০. খোকনের ‘ড্রইংয়ের মাস্টারমশাই’ কীভাবে খোকনকে প্রকৃতি দেখতে শিখিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ প্রকৃতিতে অনেক ছবি ছড়িয়ে আছে। সেগুলোকে দেখে দেখে আঁকবার উৎসাহ দিয়েছিলেন। বাড়ির সামনে বড়ো গাছকে দেখিয়ে তিনি খোকনকে আঁকতে শিখিয়েছিলেন।
১১. প্রকৃতির দৃশ্যের যে বদল অহরহ হয় তা খোকন কীভাবে বুঝল ?
উত্তরঃ খোকন একদিন মেঘ দেখে ছবি আঁকছিল। মেঘটা দেখতে অনেকটা হাতির মতো। ছবি আঁকা শেষ হলে খোকন দেখে যে মেঘটা কুমিরের মতো হয়ে গেছে। এই দৃশ্য দেখে খোকন বুঝতে পারে যে প্রাকৃতিক দৃশ্যের অহরহ বদল হয়।
১২. ‘খোকন অবাক হয়ে গেল’, আর ‘অবাক হয়ে চেয়ে রইল খোকন’—এই দুই ক্ষেত্রে খোকনের ‘অবাক’ হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ খোকনের বাবার বন্ধু বিখ্যাত চিত্রকর যখন খোকনের আঁকা ছবি চাইলেন তখন খোকন সব ছবি দেখায়। চিত্রকর বলেন–’তোমার ছবি কই ? এ সবই তো কপি করেছ। এগুলো সব নকল করা ছবি। তোমার নিজের আঁকা ছবি কই?’ এই কথা শুনে খোকন অবাক হয়ে গেল।
» খোকন নিজের ছবি আঁকতে চেষ্টা করল। অন্ধকার ছাড়া আর কিছু দেখতে পেল না। কালো রং আর তুলি নিয়ে, আঁকতে চেষ্টা করল। খাতার পাতা কালো রঙে ভরে গেলো। হঠাৎ খোকন কালো রঙের ভিতর মুখ দেখতে পেল। চোখও দেখল। আর দেখল সে চোখে অদ্ভুত হাসি। নিজের প্রথম সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে খোকন তাবাক হয়ে চেয়ে রইল।
১৩. “চিত্রকর চলে গেলেন’– এই চিত্রকরের পরিচয় দাও। চলে যাওয়ার আগে তিনি খোকনকে কী বলে গেলেন ?
উত্তরঃ চিত্রকর হলেন খোকনের বাবার বন্ধু। তিনি লক্ষ্ণৌ শহরে থাকেন।
» তিনি প্রকৃতির ছবি কপি বা নকল করা থেকে নিজের মনে ছবি আঁকতে বেশি পছন্দ করেন। চলে যাওয়ার আগে সেই কথা খোকনকেও বলে যান।
১৪. ‘এই অন্ধকারেরই ছবি আঁকবে’– কখন খোকন এমন সিদ্ধান্ত নিল ? অন্ধকারের সেই ছবির দিকে তাকিয়ে খোকন কী দেখতে পেল ?
উত্তরঃ খোকন যখন নিজের ছবি আঁকার কথা ভাবল এবং চোখ বন্ধ করে নিজেকে দেখতে গিয়ে অন্ধকারকেই দেখতে পেল তখন সে সিদ্ধান্ত নেয় এই অন্ধকারের ছবি আঁকবে।
» অন্ধকারের সেই ছবির দিকে তাকিয়ে খোকন দেখল একটা মুখের ছবি। চোখও দেখতে পেল এবং সেই চোখে অদ্ভুত
হাসি।
১৫. গল্পে ‘খোকনের প্রথম ছবি’ হিসেবে তুমি কোন্ ছবিটিকে স্বীকৃতি দেবে এবং কেন তা বুঝিয়ে লেখো।
উত্তরঃ নিজের আঁকা অন্ধকারের ছবি, যেখানে ধরা পড়েছে একটি মুখ, চোখ এবং অদ্ভুত হাসি। ওই ছবিটিকে প্রথম ছবি হিসেবে আমি স্বীকৃতি দেব। তার কারণ, ওই ছবি খোকনের নিজের কল্পনা ও অনুভূতি মিশিয়ে করা। তার আগে আঁকা যাবতীয় ছবি ছিল নকল করা। সেখানে নিজের ভাবনা-চিন্তা ছিল না।
১৬. পাঁচজন সাহিত্যিকের নাম এবং তাদের ছদ্মনাম পাশাপাশি লেখো। সাহিত্যিকেরা কেন ছদ্মনাম ব্যবহার করেন তা শিক্ষক/শিক্ষিকার থেকে জেনে নাও।
উত্তরঃ
সাহিত্যিকের নাম ছদ্মনাম
(ক) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়— কমলাকান্ত
(খ) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়— অনিলাদেবী
(গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর— ভানুসিংহ
(ঘ) সমরেশ বসু— কালকূট
(ঙ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়— নীললোহিত
» প্রথমদিকে ছদ্মনাম ব্যবহার এর রীতি রেওয়াজ থাকলেও পরবর্তীকালে বিভিন্ন কারণে ছদ্মনাম ব্যবহৃত হতে থাকে —
ছদ্মনাম ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য কোনো ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় গোপন রাখা।
রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রের রোষের থেকে আত্মরক্ষা, ধর্মীয় কারণে ছদ্মনাম ব্যবহার করা।
১৭. তুমি যদি বড়ো হয়ে সাহিত্যিক হও, কোন্ ছদ্মনাম তুমি ব্যবহার করবে এবং কেন— তা লেখো।
উত্তরঃ আমি ‘তারা’ ছদ্ম নাম ব্যবহার করতে চাই। কারন আমার বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন সাহিত্যিক হওয়া পছন্দ করেন না। উনাদের বক্তব্য লেখালেখির কোন ভবিষ্যৎ নেই।
১৮. খোকনের ড্রইংয়ের মাস্টারমশাই আর তার বাবার এক বন্ধু যে যে ভাবে তাকে ছবি আঁকতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, তা লেখো! কোন্ রীতিটিকে তোমার পছন্দ হল এবং কেন তা যুক্তিসহ লেখো।
উত্তরঃ খোকনের ড্রইং মাস্টারমশাই প্রকৃতির ছবি দেখে খোকনকে আঁকতে বলতেন। কিন্তু খোকনের বাবার এক বন্ধু নিজের কল্পনা দিয়ে ছবি আঁকতে বললেন।
» এই দুটি রীতির মধ্যে আমার পছন্দ দ্বিতীয় রীতিটি। তার কারণ হল এই দ্বিতীয় রীতিতে প্রকৃতি থেকে নকলের কোনো ব্যাপার নেই। নিজের মনের মধ্যে কল্পনা ও অনুভূতি দিয়ে ছবিটি আঁকলে সেটা নিজের হয়।