মাধ্যমিকের বাংলা আশাপূর্ণা দেবীর জ্ঞানচক্ষু প্রশ্ন ও উত্তর – Gyanchokkhu by Ashapurna Devi Questions and Answers
দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই সমাধান | WBBSE Bengali Textbook Solution
দশম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট | WBBSE Madhyamik All Subject Unit Test Question Paper
মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫ | WBBSE Madhyamik Exam Routine 2025
দশম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের মক্ টেস্ট | WBBSE Class 10 All Subject MCQ MOCK Test
জ্ঞানচক্ষু – আশাপূর্ণা দেবী
‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর ‘কুমকুম’ গল্প সংকলন থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের লেখক পরিচিতি, বিষয় সংক্ষেপ, নামকরণ তুলে ধরা হল।
লেখক পরিচিতি—
জন্ম এবং শৈশবঃ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার এক রক্ষণশীল পরিবারে আশাপূর্ণা দেবীর জন্ম হয়। তাঁর আদি বাড়ি ছিল হুগলির বেগমপুরে। কোনাে স্কুল কলেজে আশাপূর্ণা দেবীর পড়ার সুযােগ হয়নি। মাত্র পনেরাে বছর বয়সে কালিদাস গুপ্তের সঙ্গে আশাপূর্ণা দেবীর বিয়ে হয়। দীর্ঘজীবনে একজন গৃহবধু ও মায়ের ভূমিকা পালনের পাশাপাশি তিনি বহু অনবদ্য সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন।
কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবনঃ তেরাে বছর বয়সে তার প্রথম লেখা শিশুসাথী পত্রিকায় ছাপা হয়। তার প্রথম প্রকাশিত বই ছােট ‘ঠাকুরদার কাশীযাত্রা’ (১৯৩৮)। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘প্রেম ও প্রয়ােজন’ (১৯৪৪)। তার লেখায় মধ্যবিত্ত পুরুষ ও নারী চরিত্র নানা মহিমায় প্রকাশ পেয়েছে। আশাপূর্ণা দেবী আধুনিক মেয়েদের কথা বলেছেন। কিন্তু আধুনিকতার বিলাসীদের প্রশ্রয় দেননি। তাঁর লেখা একদিকে যেমন বাঙালি নারীদের উজ্জীবিত করেছে, অন্যদিকে তেমনই পুরুষদের মানসিকতার দিকটিও তুলে ধরেছেন। তিনি বিরামহীনভাবে সত্তর বছরেরও বেশি বয়স পর্যন্ত লিখে গিয়েছেন। সহজ কথাটা সহজে বলার মতাে কঠিন কাজটাই আশাপূর্ণা দেবী আজীবন ধরে করে গেছেন। লেখা দেওয়ার ব্যাপারে কাউকে তিনি কখনও বিমুখ করতে পারতেন না। তাঁর এই বিশেষ স্বভাবটির জন্য কাগজের লােকেরা সবসময়ই তাঁর শরণাপন্ন হতেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ১৭৬টি উপন্যাস, ৩০টি ছােটোগল্প সংকলন, ৪৭টি ছােটোদের বই, ২৫টি অন্যান্য সংকলন। বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় তার ৬৩টি গ্রন্থ অনূদিত হয়েছে। তাঁর রচিত ট্রিলজি প্রথম প্রতিশ্রুতি, সুবর্ণলতা, বকুলকথায় তিনি নারী সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও দুঃখ বেদনার কথা বলেছেন।
পুরস্কারঃ প্রথম প্রতিশ্রুতি গ্রন্থের জন্য ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়াও সাহিত্যকৃতির জন্য তিনি পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার’, ‘সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট ডিগ্রি ও সরকারি খেতাব।
মৃত্যুঃ ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুলাই তাঁর দেহাবসান হয়।
উৎসঃ আশাপূর্ণা দেবী রচিত কুমকুম গল্পসংকলন থেকে জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি গৃহীত হয়েছে।
বিষয় সংক্ষেপঃ আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে আমরা তপন নামের একজন ছােটো ছেলের কথা পাই, যার কাছে লেখকমাত্রেই ধরাছোঁয়ার বাইরের কোনাে মানুষ। তারা যে আর পাঁচজন মানুষের মতােই সাধারণভাবে জীবন যাপন করেন, সেটা তপনের ধারণাতেই ছিল না। কিন্তু তপনের এই ধারণা ভেঙে যায় যখন সে শােনে তার সদ্যবিবাহিতা ছােটোমাসির স্বামী, অর্থাৎ তার নতুন মেসােমশাই একজন সত্যিকার লেখক’। সে এই দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় যে, লেখক হওয়া সত্ত্বেও তিনি তপনের বাবা, ছােটোমামা বা মেজোকাকুর মতাে সিগারেট খান, দাড়ি কামান, ঘুমােন কিংবা স্নান করেন।
ছােটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে মামাবাড়িতে এসেছে তপন। তার অধ্যাপক ছােটো মেসাে মশাইয়েরও কলেজ ছুটি থাকায় তিনিও শ্বশুরবাড়িতে রয়ে গিয়েছিলেন কিছুদিন। এই সময়ই তপন তার প্রথম গল্পটি লিখে ফেলে। তপনের গল্প লেখার কথা জানতে পেরে তার ছােটোমাসি গল্পখানি একরকম জোর করেই তুলে দেয় ছােটোমেসাের হাতে। তিনি গল্পটির প্রশংসা করেন এবং সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তা ছাপানাের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর বাড়ির লােকজনের ঠাট্টা ও ইয়ার্কির মধ্যেই তপন তার লেখা গল্পটি ছাপার অক্ষরে দেখতে পাওয়ার আশায় দিন গুনতে থাকে। এরমধ্যে তপন আরও দু-তিনটি নতুন গল্প লিখে ফেলে।
এদিকে দিন চলে যায়, তপনের লেখা গল্পটি প্রকাশিত হয় না। এ বিষয়ে সে যখন হাল প্রায় ছেড়েই দিয়েছে তখনই একদিন তার বাড়িতে ছােটোমাসি ও মেসাের আগমন হয় সন্ধ্যাতারা পত্রিকা হাতে নিয়ে। সেখানে সে নিজের চোখে দেখে, লেখকসূচিতে তার নাম প্রকাশিত হয়েছে—প্রথম দিন’ (গল্প), শ্ৰীতপন কুমার রায়। মেসোমশাই অবশ্য জানিয়ে দেন যে কাঁচা হাতের লেখা হওয়ার জন্য তপনের লেখাটিতে তাকে কিছু সংশােধন করতে হয়েছে। একসময় দেখা যায়, তপনের কৃতিত্বের পুরােটাই যেন চাপা পড়ে গেছে তার মেসোর কৃতিত্বের আড়ালে।
তপনের দুঃখ পাওয়ার অবশ্য এখানেই শেষ নয়। গল্পটি পড়তে গিয়ে সে দেখে কারেকশানের নামে তার লেখক মেসাে গল্পটি আগাগােড়াই পালটে ফেলেছেন। গল্পের প্রতিটি বাক্যই তপনের কাছে ঠেকেছে নতুনের মতাে। সে কিছুতেই গােটা গল্পটির সঙ্গে নিজেকে লেখক হিসেবে মেলাতে পারে না। গভীর দুঃখ ও হতাশায় তপন সংকল্প করে, এরপর যদি কখনও পত্রিকায় লেখা ছাপতে দিতে হয়, তাহলে সে নিজেই গিয়ে সেটা দেবে। কখনােই সে আর অন্যের কৃতিত্বের ভাগীদার হবে না। আর এভাবেই সাহিত্যসৃষ্টি সম্পর্কে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়।
নামকরণঃ যে-কোনাে সাহিত্যকর্মের নামকরণ করা হয় বিষয়বস্তু, চরিত্র বা ভাব অনুযায়ী, আবার কখনও তা হয় ব্যঞ্জনাধর্মী। যে-কোনাে সাহিত্যসৃষ্টির জীবনযাপন—এই সত্য উপলদ্ধি করেছে তপন। তপনের লেখা প্রথম ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের নামকরণটি মূলত ব্যঞ্জনাধর্মী। জ্ঞানচক্ষু’ কথাটির অর্থ হল অন্তর্দৃষ্টি বা জ্ঞানরুপ দৃষ্টি। এই গল্পের একেবারে শেষ পর্যায়ে দেখা যায় তপন চরিত্রটির প্রকৃত জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন হয়েছে। এই গল্পে প্রাথমিকভাবে তপনের জ্ঞানচক্ষুর উন্মােচন ঘটেছে যখন প্রথমবার সে তার লেখক ছােটো মেসােকে দেখেছে। লেখকরা যে অন্য জগতের বাসিন্দা নন, বাস্তবের চেনা মানুষদের মতােই তাদের গল্পটি নতুন মেসোমশাই অর্থাৎ ছােটোমেসাে কিছু সংশােধন করে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন। কিন্তু ছাপার অক্ষরে নিজের লেখাটি সকলের সামনে পড়তে গিয়ে তপন মনে খুব আঘাত পায়। কারণ সে বুঝতে পারে, মেসোমশাই সংশােধনের নামে পুরাে লেখাটাই বদলে দিয়েছেন। সেটাকে আর নিজের বলে চিনতেই পারে না তপন। লজ্জায়, অপমানে, দুঃখে সে যেন মাটিতে মিশে যায়। নিজের গল্প পড়তে বসে, অন্যের লেখা লাইন পড়তে গিয়ে তপনের ভিতরে গ্লানিবােধ জেগে ওঠে। সে সংকল্প করে, লেখা যদি ছাপতেই হয় তাহলে পত্রিকা দফতরে নিজে গিয়ে তা দিয়ে আসবে। নিজের সেই লেখাটি না ছাপলেও দুঃখ থাকবে না তার। সেখানে তপনেরই নিজস্বতা থাকবে, অন্য কেউ সেই কৃতিত্বের ভাগীদার হবে না। এভাবেই আত্মমর্যাদা ও নিজের লেখার প্রতি অধিকারবােধ তপনের জ্ঞানচক্ষুর উন্মেষ ঘটিয়েছে। তাই বলা যায়, গল্পের ‘জ্ঞানচক্ষু নামকরণটি যথাযথ হয়েছে।