আবহমান কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | Abohoman Kobitar Question Answer Class 9 Bengali wbbse
সাহিত্য সঞ্চয়ন
নবম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)
নবম শ্রেণি বাংলা আবহমান কবিতার প্রশ্ন উত্তর | Class 9 Bengali Abohoman Kobitar Question Answer wbbse
নবম শ্রেণির বাংলা কবিতা, কবি পরিচিতি, উৎস, বিষয় সংক্ষেপ, নামকরণ, বহু বিকল্পীয়, অতি সংক্ষিপ্ত, ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | Class 9 Bengali Abohoman Kobitar Question Answer wbbse
1. নবম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
2. নবম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন Click Here
নবম শ্রেণির বাংলা কবিতা, কবি পরিচিতি, উৎস, বিষয় সংক্ষেপ, নামকরণ, বহু বিকল্পীয়, অতি সংক্ষিপ্ত, ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | West Bengal Class 9 Bengali Abohoman Kobitar Question Answer wbbse
আবহমান
—নীরন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,
লাউমাচাটার পাশে।
ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল
সন্ধ্যার বাতাসে।
কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে,
কেউ এইখানে ঘর বেঁধেছে নিবিড় অনুরাগে।
কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে,
এই মাটিকে এই হাওয়াকে আবার ভালবাসে।
ফুরয় না্ তার কিছুই ফুরয় না,
নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না!
যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,
লাউমাচাটার পাশে।
ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল,
সন্ধ্যার বাতাসে।
ফুরয় না তার যাওয়া এবং ফুরয় না তার আসা,
ফুরয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা।
সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে,
সারাটা রাত তারায়-তারায় স্বপ্ন এঁকে রাখে।
ফুরয় না, তার কিছুই ফুরয় না,
নাটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না।
যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,
লাউমাচাটার পাশে।
ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল,
সন্ধ্যার বাতাসে।
নেভে না তার যন্ত্রণা যে, দুঃখ হয় না বাসী,
হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি
তেমনি করেই সূর্য ওঠে, তেমনি করেই ছায়া
নামলে আবার ছুটে আসে সান্ধ্য নদীর হাওয়া
ফুরয় না, তার কিছুই ফুরয় না,
নাটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না।
যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,
লাউমাচাটার পাশে।
ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল,
সন্ধ্যার বাতাসে।
মূলভাবঃ কবিতাটির মূলভাব হলো গ্রাম বাংলার আবহমান সৌন্দর্য, গ্রামবাসীর জীবনযাত্রা ও তাদের আবহমান সংস্কৃতির প্রতি কবির অগাধ ভালোবাসা। কবি কবিতাটিতে গ্রাম বাংলার প্রকৃতির বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি গ্রাম বাংলার আকাশ, বাতাস, নদী, মাঠ, ফুল, ফল, পাখি ইত্যাদির সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন। কবি গ্রামবাসীর জীবনযাত্রার কথাও বলেছেন। তিনি গ্রামবাসীদের সহজ-সরল জীবন, তাদের কঠোর পরিশ্রম, তাদের আবেগ-অনুভূতি ইত্যাদির কথা বলেছেন। কবি গ্রামবাসীদের আবহমান সংস্কৃতির কথাও বলেছেন। তিনি গ্রামবাসীদের ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, তাদের লোকসংস্কৃতি ইত্যাদির কথা বলেছেন।
উৎসঃ আবহমান কবিতাটির রচনাকাল ১৮ ভাদ্র, ১৩৬৫ বঙ্গাব্দ। আবহমান কবিতাটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থের ৩০ সংখ্যক কবিতা।
আবহমান কবিতার মূল বক্তব্যঃ আধুনিক বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘আবহমান’ কবিতাটি আধুনিক নগরজীবনের ক্লান্তি ও সেই ক্লান্তির নিরাময়ে গ্রাম জীবনে ফিরে যাওয়ার আহ্বানকে সূচিত করেছে। এই কবিতাটি কবির লেখা ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
‘আবহমান’ কথার অর্থ হল চিরন্তন বা চিরকালীন। এই কবিতায় ফুটে উঠেছে গ্রাম জীবনের চিরন্তন সমৃদ্ধি ও সৌন্দর্য। আধুনিক পৃথিবীতে মানুষ ভোগবাদী জীবনের প্রলোভনে শহরমুখী হয়েছে। কিন্তু নাগরিক জীবন ভোগের উপকরণ দিতে পারলেও মানুষকে দিতে পারেনি অন্তরাত্মার শান্তি। এই শান্তির খোঁজে তাই তাকে ফিরে যেতে হবে গ্রামের সহজ সরল আড়ম্বরহীন জীবনে। গ্রামের প্রকৃতি প্রতি মুহূর্তে তাকে ডাকছে। সুদূর অতীত কালে এই গ্রাম থেকেই শুরু হয়েছিলো মানব সভ্যতার বিকাশ। আজও সেই গ্রাম-সভ্যতা নিজের সমৃদ্ধি ও সৌন্দর্য নিয়ে তেমনি রয়েছে। গ্রাম সভ্যতার জীবনতৃষ্ণা কোনোদিন ফুরাবে না। অনেকেই তাকে ছেড়ে গেছে, অনেকেই আবার ফিরে এসেছে। তাই ছেলেভুলানো গল্পের নটেগাছটি মুড়িয়ে গেলেও গ্রাম সভ্যতার নটেগাছটি বুড়িয়ে যায়, তবু মুড়িয়ে যায় না। অর্থাৎ এই সভ্যতা প্রাচীন হয়েছে, তবু প্রাণহীন হয়নি। তাই এখানেই ফিরতে হবে মানুষকে। এসে দাঁড়াতে হবে আবহমান উঠোনটিতে, লাউমাচাটির পাশে। একটি ছোট্ট ফুল দুলে দুলে চিরকাল ডাকবে আমাদের। তার কাছে যেতে বলবে চিরকাল।
‘যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া’– ব্যাখ্যা।
উদ্ধৃত অংশটি আধুনিক বাংলা ভাষার অন্যতম খ্যাতনামা কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘আবহমান’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আধুনিক নগরজীবনের ছুটোছুটিতে ক্লান্ত মানুষের প্রতি কবি এই পরামর্শ দিয়েছেন।
বিগত শতক থেকেই ভোগবাদী জীবনের টানে গ্রামের মানুষ ধীরে ধীরে শহরমুখী হয়েছে। গ্রাম ছেড়ে তারা বাসা বেঁধেছে শহরে। শহরের জীবন তাদের হয়তো কিছু ভোগের উপকরণ দিতে পেরেছে, কিন্তু যা দিতে পারেনি, তা হল অনাবিল শান্তি ও সৌন্দর্য। গ্রাম জীবনের চিরন্তন সৌন্দর্য আর অনাবিল শান্তি কবির মনে বার বার জাগিয়েছে প্রত্যাবর্তনের বাসনা। কবির সেই সুপ্ত বাসনাই এই কবিতায় বাত্ময় হয়ে উঠেছে। কবি বিশ্বাস করেন, গ্রামের এই জীবন কোনোদিনও প্রাণহীন হয় না। এই জীবন যতই পুরোনো হোক, কখনও মুড়িয়ে যায় না। এখানে ফিরতে পারলেই মিলবে এক পরিপূর্ণ আনন্দময় জীবনের আশ্বাস। এখানেই আছে আধুনিক শহুরে মানুষের সমস্ত যন্ত্রণার সুনিশ্চিত নিরাময়। গ্রাম জীবনের এই চিরন্তন সৌন্দর্য, চিরন্তন শান্তির মধ্যেই ফিরে আসতে হবে। শহরের রুক্ষ কঠোর জীবনের ক্লান্তি মুছে এক মুঠো সুখের সন্ধান পেতে হলে আমাদের কাছে আর অন্য কোনো পথ নেই।
আবহমান কবিতার নামকরণের সার্থকতাঃ
কবিতার ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবিতার নামকরণের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে কবিতার গভীর তাৎপর্য। এখন আমরা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘আবহমান’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করে দেখবো।
আবহমান কথাটির অর্থ হল চিরন্তন। ‘আবহমান’ কবিতায় কবি আধুনিক সভ্যতার এক গভীর সত্যকে তুলে ধরেছেন। আধুনিক নগর- জীবনের জটিলতায় ক্লান্ত মানুষ বেঁচে থাকার সুখ খুঁজে পায় না। ভোগবাদী জীবনের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে তারা কেবল ছুটে বেড়ায়। অন্য দিকে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ধীর স্থির গ্রাম্য জীবনে ভোগের উপকরণ না থাকলেও রয়েছে শান্তির উপকরণ। গ্রামের সরল সিধা জীবনের এই রূপ চিরকালীন। এই সভ্যতা পুরাতন, কিন্তু প্রাণহীন নয়। রূপকথার গল্পের নটেগাছটি মুড়িয়ে গেলেও পল্লী বাংলার জীবন কখনোই মুড়য় না। পল্লীবাংলার জীবনতৃষ্ণা কখনও ফুরোয় না। বহু যুগ ধরে বহু মানুষ এই পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছে, ছেড়ে চলে গেছে, আবার ফিরেও এসেছে। এ ভাবেই যুগে যুগে বেঁচে আছে এই সভ্যতা। গ্রামজীবনের এই আবহমানতার কথাই ‘আবহমান’ কবিতায় উঠে এসেছে। তাই বলা যায় কবিতাটির নামকরণ সম্পূর্ণ সার্থক।
বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর আবহমান কবিতা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী – নবম শ্রেণি বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Class 9 Bengali Abohoman MCQ Question and Answer wbbse
• ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো : প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
১.‘আবহমান’ কবিতাটির কবি হলেন–
(ক) জীবনানন্দ দাশ
(খ) নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
(গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) জসীমউদ্দীন
উত্তরঃ (খ) নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
২.নটে গাছটি বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু–
(ক) বিকোয় না
(খ) ফুরয় না
(গ) জড়ায় না
(ঘ) মুড়য় না
উত্তরঃ (ঘ) মুড়য় না
৩.‘কে এইখানে এসেছিল ______ বছর আগে।’
(ক) অনেক
(খ) কয়েক
(গ) দু-এক
(ঘ) শতেক
উত্তরঃ (ক) অনেক
৪.কার দুরন্ত পিপাসা ফুরোয় না ?
(ক) দস্যি ছেলেটার
(খ) দুষ্টু ছেলেটার
(গ) একগুঁয়ে ছেলেটার
(ঘ) জেদি ছেলেটার
উত্তরঃ (গ) একগুঁয়ে ছেলেটার
৫.সারাটা দিন আপন মনে কিসের গন্ধ মাখে ?
(ক) পাতার
(খ) ফুলের
(গ) মাটির
(ঘ) ঘাসের
উত্তরঃ (ঘ) ঘাসের
৬.“এখনও সেই ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল”—
(ক) মৃদুমন্দ বাতাসে
(খ) সন্ধ্যার বাতাসে
(গ) ভোরের হাওয়ায়
(ঘ) শরতের হাওয়ায়
উত্তরঃ (খ) সন্ধ্যার বাতাসে।
৭.“নেভেনা তার যন্ত্রণা যে, ___ হয় না বাসি।” (শূন্যস্থান পূরণ করো)
(ক) হাসি
(খ) কান্না
(গ) সুখ
(ঘ) দুঃখ
উত্তরঃ (ঘ) দুঃখ
৮.বাগান থেকে কোন ফুলের হাসি হারায় না ?
(ক) কেয়া
(খ) জবা
(গ) কুন্দ
(ঘ) চাঁপা
উত্তরঃ (গ) কুন্দ
৯.‘আবহমান’ কবিতায় কবি কার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন ?
(ক) লাউমাচার পাশে
(খ) পুঁইমাচার পাশে
(গ) সিমমাচার পাশে
(ঘ) কুমড়োমাচার পাশে
উত্তরঃ (ক) লাউমাচার পাশে
১০.ছোট্ট একটা ফুল কখন বাতাসে দোলে ?
(ক) দুপুরবেলা
(খ) সকালবেলা
(গ) বিকেলবেলা
(ঘ) সন্ধ্যাবেলা
উত্তরঃ (ঘ) সন্ধ্যাবেলা
১১.“কে এখানে ঘর বেঁধেছে __________ অনুরাগে।” (শূন্যস্থান পূরণ করো)
(ক) গভীর
(খ) নিবিড়
(গ) দারুন
(ঘ) ভীষণ
উত্তরঃ (খ) নিবিড়
১২.“নটে গাছটি বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু ______ ।” (শূন্যস্থান পূরণ করো)
(ক) ফুরয় না
(খ) জড়ায় না
(গ) মুড়য় না
(ঘ) বিকোয় না
উত্তরঃ (গ) মুড়য় না
১৩. ‘কে এইখানে ঘর বেঁধেছে নিবিড় __________’ –
(ক) গভীরতায়
(খ) অনুরাগে
(গ) ভালোবাসায়
(ঘ) ভরসায়
উত্তরঃ (খ) অনুরাগে
১৪. নেভে না তার যন্ত্রণা যে, দুঃখ হয় না –
(ক) খাঁটি
(খ) হাসি
(গ) অসাড়
(ঘ) বাসি
উত্তরঃ (ঘ) বাসি
১৫. এখনও সেই ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল –
(ক) নিবিড় অন্ধকারে
(খ) সন্ধ্যার বাতাসে
(গ) গভীর হাওয়ায়
(ঘ) স্বপ্নের তারায়
উত্তরঃ (খ) সন্ধ্যার বাতাসে
১৬. ‘আবহমান’ কবিতাটির মূল কাব্যগ্রন্থ–
(ক) উলঙ্গ রাজা
(খ) কলকাতার যীশু
(গ) অন্ধকার বারান্দা
(ঘ) জসীমউদ্দীন
উত্তরঃ (গ) অন্ধকার বারান্দা
১৭. “নেভে না তার”– কী নেভে না ?
(ক) বেদনা
(খ) দুঃখের আগুন
(গ) যন্ত্রণা
(ঘ) ঘরের প্রদীপ
উত্তরঃ (গ) যন্ত্রণা
১৮. ‘আবহমান’ কবিতাটির মূল কাব্যগ্রন্থ —
(ক) অন্ধকার বারান্দা
(খ) কলকাতার যীশু
(গ) উলঙ্গ রাজা
(ঘ) কবিতার বদলে কবিতা
উত্তরঃ (ক) অন্ধকার বারান্দা
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর আবহমান কবিতা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী – নবম শ্রেণির বাংলা | Class 9 Bengali Abohoman Question and Answer :
∆ কমবেশি ১৫ টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
১. ‘আবহমান’ কবিতায় কবি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন ?
উত্তরঃ আবহমান কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী গ্রামবাংলার কোন এক গরিবের ঘরের উঠোনে লাউমাচার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন।
২. কবি লাউমাচার পাশে কেন দাঁড়াতে বলেছেন ?
উত্তরঃ কবি লাউমাচার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন কারণ পল্লিবাংলার প্রকৃতিলালিত সহজসরল জীবনকে সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়।
৩. ‘কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে।’– এইখানে বলতে কোথায় আসার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ আবহমান কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশে এইখানে বলতে শৈশবের গ্রামে আসার কথা বলা হয়েছে।
৪. ‘যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া।’– এখানে উঠান বলতে কি বুঝানো হয়েছে ?
উত্তরঃ আবহমান কবিতায় উঠান বলতে জন্মস্থান বা মাতৃভূমিকে বোঝানো হয়েছে।
৫. কবির মতে কোন্ গাছ বুড়িয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত মুড়য় না ?
উত্তরঃ কবির মতে নটে গাছ বুড়িয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত মুড়য় না।
৬. আবহমান কবিতায় মানুষের কোথায় হারিয়ে গিয়েও আবার কোথায় ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ গ্রামবাংলার নতুন প্রজন্মের মানুষরা নাগরিক যন্ত্রসভ্যতায় হারিয়ে গিয়েও আবার বাঁচার জন্য গ্রামবাংলার বুকেই ফিরে আসে।
৭. ‘নেভে না তার যন্ত্রণা’– কীসের যন্ত্রণা ?
উত্তরঃ আবহমান কবিতায় কবি মাতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মানসিক যন্ত্রণাকে বুঝিয়েছেন।
৮. আবহমান কবিতায় কী কখনো হারায় না বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ গ্রামবাংলার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি হারায় না।
৯. ‘এখনও সেই ফুল দুলছে, ফুল দুলছে।’– এখনো ফুল দুলছে কেন ?
উত্তরঃ জীবন জীবিকার টানে মানুষ গ্রাম ছাড়ে, কিন্তু গ্রামের মায়া তাকে ছাড়ে না তাই বারবার সে ফিরে আসতে চায় আপন জন্মভূমিতে। জন্মভূমির সৌন্দর্য আর আকর্ষণ চিরন্তন বুঝাতে এখনো ফুল দুলছে শব্দ গুলি ব্যবহৃত হয়েছে।
১০. ‘ফুরয় না তার কিছুই ফুরয় না’- কী ফুরায় না ?
উত্তরঃ আবহমান কবিতার উদ্ধৃত অংশে মানুষের মাতৃভূমির প্রতি আকর্ষণ, ভালোবাসা এবং টান কখনোই ফুরায় না।
১১. ‘কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে’- ‘এইখানে’ আবার ফিরে আসার কারণ কী ?
উত্তরঃ ‘আবহমান’ কবিতায় গ্রামছাড়া মানুষ জন্মভূমির টানে, অর্থাৎ নিজের গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে ‘আবার ফিরে আসে’।
১২. কিন্তু মুড়য় না’– ‘মুড়য় না’ বলতে কবি কী বলতে চেয়েছেন ?
উত্তরঃ সময়ের সাথে মাতৃভূমির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ছেদ পড়লেও তা কখনও মুছে যায় না। কবি সে কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর আবহমান কবিতা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নবম শ্রেণি বাংলা | Class 9 Bengali Abohoman Kobitar Question Answer wbbse
∆ কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩
১. যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া”— উদ্ধৃত অংশে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
উত্তরঃ ‘আবহমান’ কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নাগরিক জীবনে ক্লান্ত মানুষকে তার একদা ফেলে-আসা গ্রামবাংলার উঠোনে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন। কারণ, জীবন সেখানে অনাবিল এবং সহজভাবে বয়ে চলে আজও। লাউমাচায় সন্ধ্যার বাতাসে দুলতে থাকা ছোট্ট ফুল সেই স্নিগ্ধ জীবনের প্রতীক। এই জীবনই ক্লান্ত মানুষকে বেঁচে থাকার আশ্বাস দিতে পারে, অবসন্নতার পরে তাকে আবার প্রাণময় করে তুলতে পারে। এইজন্যই কবি গ্রামবাংলার উঠোনে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন।
২. ‘কে এইখানে ঘর বেঁধেছে নিবিড় অনুরাগে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উত্তরঃ ‘আবহমান’ কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আলোচ্য পঙক্তিটির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, অনাদি অতীতে এই বাংলার ভূখণ্ডে প্রথম মানুষরা বসবাস করতে এসেছিলেন তার কথা কোনো ইতিহাস বইয়ের পাতায় লেখা নেই। কিন্তু যিনি বা যাঁরা এখানে এসেছিলেন, তাঁরা এই সুজলা সুফলা-শস্যশ্যামলা দেশকে ভালোবেসেই এখানে বসতি গড়েছিলেন। পরম মমতায় তাঁরা এই দেশকে নিজেদের আত্মার আত্মীয় করে নিয়েছিলেন।
৩. “কে এইখানে ঘর বেঁধেছে”— ‘ঘর বেঁধেছে’ কথাটির তাৎপর্য কী ?
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে। মানুষের জীবনধারণের প্রাথমিক তিনটি চাহিদা হল অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান। বাস করতে মানুষ ঘরবাড়ি তৈরি করে। কিন্তু ঘর বাঁধা কথাটি ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ শুধু ইট-কাঠ-পাথর দিয়ে বাসস্থান তৈরি করা নয়। এর ভিত তৈরি হয় স্নেহ-মমতামাখা সম্পর্কের উষ্ণতা দিয়ে এবং আপন করে নেওয়ার চেষ্টা থেকেই। বাংলায় আসা মানুষজনও সেভাবেই এদেশকে ভালোবেসে এখানে ঘর বেঁধেছে।
৪. “কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে”– উদ্ধৃত পঙক্তিটিতে কবির বক্তব্য সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতায় নগরজীবনের যান্ত্রিকতায় ক্লান্ত মানুষের গ্রাম্যজীবনের টানে ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে। একদা মানুষ তার গভীর ভালোবাসায় আশ্রয় নিয়েছিল গ্রামবাংলায়। আপন করে নিয়েছিল তার আশ্রয়কে। কিন্তু গ্রামীণ সভ্যতার ভাঙন ঘটিয়ে নগরসভ্যতার বিকাশে মানুষ শহরমুখী হয়। কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য, বিলাস, আড়ম্বরের উল্টোদিকে সেখানে তৈরি হয় ব্যস্ততা, ক্লান্তি, অবসাদ। মানুষকে তাই বারবার শিকড়ের সন্ধানে বেঁচে থাকার তাগিদে ফিরে আসতে হয় তার ফেলে আসা গ্রাম আর প্রকৃতির কাছে।
৫. ‘ফুরয় না তার যাওয়া এবং ফুরয় না তার আসা।’– উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ নগরসভ্যতার সৃষ্টির সঙ্গেই গ্রাম থেকে মানুষের শহরের উদ্দেশ্যে চলা এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দের খোঁজে মানুষের এই চলা অবিরাম। কিন্তু ফিরে আসার প্রক্রিয়াও এর মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে থাকে। যন্ত্রসভ্যতার চাপে ক্লান্ত, অবসন্ন মানুষ চায় অবসর। তখনই সে ফিরে আসে গ্রামে। প্রকৃতির সহজ জীবনধারার সংস্পর্শে এসেই নাগরিক মানুষ পেতে চায় মুক্তির নিশ্বাস। এভাবেই অবিরাম যাওয়া-আসা চলতেই থাকে।
৬. “নটে গাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না”– পংক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর ‘আবহমান’ কবিতায় দেখিয়েছেন যে, একদা মানুষ নিবিড় অনুরাগে ঘর বেঁধেছিল গ্রামবাংলায়। পরবর্তীকালে গ্রামসভ্যতার সমৃদ্ধি নষ্ট হয়ে যায় নাগরিক সভ্যতার আগ্রাসনে। কিন্তু প্রকৃতি সেখানে নিজের হাতে একইভাবে সাজিয়ে রাখে, জীবন বয়ে চলে স্বচ্ছন্দ সহজ গতিতে। আর শহরের ক্লান্ত মানুষেরা শান্তির খোঁজে বারবার ফিরে আসে তার কাছে। ‘নটে গাছটা বুড়িয়ে ওঠে; কিন্তু ‘মুড়য় না’ অর্থাৎ গ্রামবাংলা প্রাচীন হলেও তার গ্রহণযোগ্যতা শেষ হয় না।
৭. ‘সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে’– কে কেন ঘাসের গন্ধ মাখে ?
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতায় যে মানুষ শহরজীবনে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তার সমৃদ্ধি আর স্বচ্ছলতার আড়ালে থাকে গ্রামজীবনে ফিরে আসার আর্তি। মনের মধ্যে ফিরে আসার এই আকুলতাকেই কবি বলেছেন ‘একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা’। এই পিপাসাতেই সে সারাদিন প্রকৃতি আর গ্রামের সান্নিধ্য পাওয়ার আশাকে বাঁচিয়ে রাখে। ‘আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে’— এই কথাটির মধ্যে দিয়ে প্রকৃতির প্রতি মানুষের সেই আকর্ষণকেই বোঝানো হয়েছে।
৮. “হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি”– পঙক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি কোন্ জীবনসত্যকে তুলে ধরেছেন ?
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতায় কবি গ্রাম-বাংলার সহজসরল, অনাবিল জীবনধারার কথা তুলে ধরেছেন। প্রকৃতিলালিত এই জীবনধারা গ্রামের মধ্যে চিরবহমান। সেখানে দুঃখ-যন্ত্রণা অব্যাহত থাকলেও প্রকৃতির স্নিগ্ধতা কোনোভাবেই বিঘ্নিত হয় না। জীবনের সহজ প্রবাহ এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যের এই অবিনশ্বরতাকে বোঝাতে “হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি” কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
৯. “এখনও সেই ফুল দুলছে”– পঙক্তিটিতে ব্যবহৃত ‘এখনও’ শব্দটির তাৎপর্য কী ?
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতায় গ্রামবাংলার প্রকৃতি এবং জীবনের চিরকালীনতাকে বোঝানো হয়েছে। একসময় গভীর অনুরাগে মানুষ বসতি নির্মাণ করেছিল। যে মাটি আর হাওয়াকে ভালোবেসে গড়ে উঠেছিল গ্রামসভ্যতা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার গৌরব নষ্ট হয়ে গেলেও প্রকৃতির সৌন্দর্যের গরিমা একইরকম থাকে। ‘এখনও সেই ফুল দুলছে’ কথাটির মধ্য দিয়ে গ্রামজীবন ও গ্রাম্য প্রকৃতির সেই চিরকালীনতাকেই বোঝানো হয়েছে।
১০. ‘এই মাটিকে এই হাওয়াকে আবার ভালোবাসে।’– এই মাটি হাওয়াকে আবার ভালোবাসার কারণ কী ?
উত্তরঃ জীবন সৃষ্টির শুরু থেকে মাটি ও হাওয়ার উপরেই নির্ভর করেই জীবন গড়ে উঠেছে। মাটি তার বাসস্থান, বাতাস তার শ্বাসবায়ু। তার পর কতযুগ চলে গেছে কিন্তু মানুষের ঘর বাঁধার আকাঙ্ক্ষা এখনো অটুট আছে। যে জন্মভূমির মাটিতে সে বড় হয়ে উঠেছে, সেই মাটিতে ফিরে আসার তাঁর ইচ্ছা চিরন্তন। মানুষের এই চিরকালীন ঘর বাঁধার ইচ্ছা, ফেলে আসা ঘরের প্রতি তাঁর মমতা, জন্মভূমির প্রতি অদম্য আকর্ষণ তাঁর চিরন্তন। বারংবার এই মাটির টানে মানুষ ফিরে আসে, ভালোবেসে ঘর বাঁধে। বারংবার এই ঘর বাঁধার তাগিদ, জন্মভিটের টান, এইগুলো বোঝাতে কবি ‘আবার’ কথাটা ব্যবহার করেছেন।
১১. ‘ফুরয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা।’– কোন্ পিপাসাকে, কেন দুরন্ত বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ পিপাসা কথার অর্থ হল তৃষ্ণা। তৃষ্ণার্ন্ত মানুষ তার পিপাসা নিবারণের জন্য জল পান করে। এই কবিতা অনুযায়ী পিপাসা বলতে বলা হয়েছে জন্মভূমির প্রতি টান যা মানুষের কাছে প্রবল আকাঙ্খা, যা মানুষ কখনো অস্বীকার করতে পারে না। জন্মভূমি প্রত্যেকেই তীব্র ভাবে আকৃষ্ট করে।
গাছের শিকড় যেমন মাটির তলায় থাকে, কোনো ব্যাক্তি যেখানে বড় হয়ে ওঠে সেখানে তার শিকড় প্রোথিত হয়ে যায়। যদি কোনো কারণে জন্মভূমির সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ ঘটে, তবুও সে বারবার তাঁর জন্মভিটেতে ফিরে আসতে চায়। কারণ সেই জন্মস্থানের মাটির সঙ্গে তার আত্মিক যোগাযোগ। তাই তাঁর এই পিপাসা দুরন্ত।
১২. “কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে”— পঙক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতা থেকে এই উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে। কবিতায় যে মানুষ একদিন গভীর অনুরাগ দিয়ে গ্রামসভ্যতা গড়ে তুলেছিল সেই মানুষই নগরসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য আর সমৃদ্ধির টানে গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু শহরের জীবন ঐশ্বর্য আর সমৃদ্ধি দিলেও মানুষকে শান্তি দিতে পারেনি। তাই ‘এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে’ অর্থাৎ গ্রাম্যজীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া মানুষ আবার শান্তির খোঁজে গ্রামেই ফিরে আসে।
১৩. ‘সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে’,– উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ জন্মভিটে জন্মভূমির আকর্ষণ চিরন্তন। সব কিছুর মধ্যে মিশে আছে তার ভালোবাসা ভরা জন্মভূমির স্মৃতি। যা কখনো কোনোদিন ভোলা যায় না। মনে সবসময় তার প্রবল ইচ্ছা থাকে মাতৃভূমির বুকে ফিরে আসার জন্য। যখন সে এসে পৌঁছাতে পারে তার মাতৃভূমির কাছে তখন সে প্রকৃতির মধ্যে খুঁজে নিতে চায় তার পুরোনো সময়ের সুগন্ধ। আপন মনে স্মৃতিচারনায় সে থাকে নিমগ্ন। ঘাস জন্মায় মাটির বুক থেকে। সেই মাটির সঙ্গে মানুষের নিবিড় যোগাযোগ। সেই মাটির মধ্যে সে নিজেকে খুঁজে পায়। তাই এখানে কবি বলেছেন সারাটাদিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর আবহমান কবিতা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নবম শ্রেণি বাংলা | Class 9 Bengali Abohoman Kobitar Question and Answer wbbse
∆ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৫
১. ‘আবহমান’ কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক সে বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ যে-কোনো সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামের মধ্য দিয়েই পাঠকের মনে লেখাটি সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করে দেবার চেষ্টা করেন সাহিত্যস্রষ্টা। পাঠককে আকর্ষণ করার তাগিদ থেকেই স্রষ্টা সাহিত্যকর্মের নামকরণের দিকটিতে লক্ষ রাখেন। কবিতার ক্ষেত্রে সাধারণত বিষয়বস্তু, ভাব বা ব্যঞ্জনা অনুসারে নামকরণ করা হয়ে থাকে।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত আলোচ্য কবিতাটির নাম ‘আবহমান’। ‘আবহমান’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ক্রমাগত বা চিরপ্রচলিত। সহজ কথায় যুগ যুগ ধরে একইভাবে চলে আসা যে-কোনো কিছুকেই আবহমান বলা হয়। ‘আবহমান’ কবিতায় কবি গ্রামবাংলার মানুষের দুঃখকষ্টে ভরা অথচ অনাবিল এবং প্রকৃতিলালিত জীবনের চিরন্তন ছবিকে নিপুণ তুলিতে এঁকেছেন। অনাদি অতীতে মানুষ সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা বাংলাকে ভালোবেসে এখানেই বসতি বানিয়েছিল। ‘আবহমান’ কবিতায় লাউমাচার পাশে সেই সহজ-সুন্দর গ্রামজীবনকেই পাওয়া যায়। করি এই লাউমাচার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন কারণ সেখান থেকেই নাগরিক জীবনে ক্লান্ত মানুষ খুঁজে পেতে পারে শান্তির নিশ্বাস। মাটি আর হাওয়াকে ভালোবেসে মানুষ তাই গিয়ে দাঁড়ায় সেই প্রকৃতির কাছে। ঘাসের গন্ধ মেখে আর সারা রাত তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে রেখে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়। যুগ যুগ ধরে বয়ে চলা বাংলার গ্রামজীবন, তার প্রকৃতি আর তার কাছে মানুষের দুর্নিবার আকর্ষণের কাহিনি এই কবিতায় তুলে ধরা হয়েছে। তাই বলা যায় কবিতাটির ‘আবহমান’ নামটি অসাধারণ ব্যঞ্জনাধর্মী এবং যথাযথ।
২. ‘ফুরয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা’— এখানে ‘একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? পিপাসা ফুরোয় না বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতায় সৌন্দর্যের জন্য যে মানুষের মধ্যে আকুলতা দেখা যায়, তাকেই ‘একগুঁয়ে’ বলা হয়েছে। ‘একগুঁয়ে’ মানুষটির মধ্যে রয়েছে প্রকৃতি এবং গ্রামজীবনের কাছে ফিরে আসার আকর্ষণ। এই ফিরে আসার ইচ্ছাকেই কবি ‘দুরন্ত পিপাসা’ বলেছেন।
একদা গ্রামজীবনকে নিবিড়ভাবে ভালোবেসে মানুষ তার বসতি তৈরি করেছিল। নিজের মতো করে গড়ে তুলেছিল জীবনের ছন্দ। বাংলার মাটিকে, হাওয়াকে ভালোবেসে তারা ঘর বেঁধেছিল। উঠোনের লাউমাচার সেই সযত্নে লালিত ছোট্ট ফুল ছিল জীবনের প্রতীক। পরবর্তীকালে নগরসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য এবং সুখের সন্ধানে মানুষ শহরমুখী হয়। কিন্তু শহরজীবন তাকে বিত্ত-বৈভবের অধিকারী করলেও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সন্ধান দিতে পারে না। ক্লান্তি আর অবসন্নতা ঘিরে ধরে তাকে। যন্ত্রসভ্যতার দমবন্ধ করা চাপে হাঁপিয়ে ওঠে মানুষ। এখান থেকে তার মধ্যে তীব্র হয় ফিরে আসার আর্তি। গ্রামজীবনের সারল্য আর প্রকৃতির সহজতা তার মধ্যে এই ফিরে আসার আকর্ষণ তৈরি করে। মাটিকে, হাওয়াকে ভালোবেসে ফিরে আসা তাই চলতেই থাকে। সারাদিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মেখে আর সারারাত তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে প্রকৃতির কাছে ফিরে আসার যে আকাঙ্ক্ষা, তা মানুষের মনে চিরকালীন, তা কখনো ফুরোয় না।
৩. “ফুরয় না তার কিছুই ফুরয় না”— এখানে কী না ফুরোনোর কথা বলা হয়েছে? কেন কিছুই ফুরোয় না ?
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবহমান কবিতায় প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য মানুষের যে চিরকালীন আকাঙ্ক্ষা, তা না ফুরোনোর কথা এখানে বলা হয়েছে।
অনেক বছর আগে মানুষ যখন গ্রামবাংলায় এসেছিল এবং ঘর বেঁধেছিল, তখন তার সেই চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত ছিল গভীর ভালোবাসা। এ দেশের মাটি, বাতাসের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেছিল সে। কিন্তু পরবর্তীকালে মানুষ ক্রমশ শহরমুখী হয়েছে। নগরসভ্যতার সুযোগসুবিধা, স্বাচ্ছন্দ্য তাকে আকৃষ্ট করেছে। শহরজীবনে মানুষ সমৃদ্ধি পেলেও শান্তি পায়নি, বরং যন্ত্রসভ্যতার ক্রমাগত চাপে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
তার আশ্রয় হয়ে ওঠে বাংলার প্রকৃতি আর সেই প্রকৃতির ছন্দে গাঁথা জীবন। সে যেন যখনই সুযোগ পায় আবার ফিরে আসে এই প্রকৃতিলালিত জীবনে। তার আসার পটভূমি তৈরি করে রাখে উঠোনের লাউমাচা, সন্ধ্যার বাতাসে দুলতে থাকা ছোট্ট ফুল। প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়া – পুরোনো জীবনের চেনা ছন্দে ফিরে আসার পরিপ্রেক্ষিতেই কবির মনে হয়েছে, কোনো কিছুই শেষ হয়ে যায় না। বাগানের কুন্দফুলের হাসি থেকে শুরু করে সূর্য ওঠা, ধীরে ধীরে ছায়া নামা, সন্ধ্যাবেলা নদীর বাতাসের বয়ে চলা— কিছুই শেষ হয় না, যেমন শেষ হয় না সেই প্রকৃতির কাছে ফিরে আসার জন্য মানুষের আকুলতা।
৪. ‘তেমনই করেই সূর্য ওঠে, তেমনি করেই ছায়া/ নামলে আবার ছুটে সান্ধ্য নদীর হাওয়া।’ – বক্তব্যটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আলোচ্য অংশে একাধিকবার ‘তেমনি’ ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ বহু বছর আগে মানুষ তার জীবন শুরু করেছিল প্রকৃতির মাঝে। ভালোবাসা দিয়ে সে গড়ে তুলেছিল তার বসতি। সময়ের সাথে বাসস্থান বদলালেও জন্মভিটের প্রতি আকর্ষণ আজও অমলিন। তাই বারবার সে জন্মভূমিতে ফিরে আসে। মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার ইচ্ছে, জন্মভিটের প্রতি টান- এগুলো বদলায় না। এগুলো অপরিবর্তনীয়। কারণ এই টান চিরন্তন। একই ভাবে যুগ যুগ ধরে প্রকৃতিও কোনো পরিবর্তন ঘটায়নি। এই প্রসঙ্গে কবি এই কথা বলেছেন।
‘তেমনি’ ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা—
উদ্ধৃত অংশের প্রথম শব্দগুচ্ছ ‘তেমনই করেই সূর্য ওঠে’ অর্থাৎ যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল, প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল তখন যেমন ভাবে পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠত ঠিক তেমন ভাবে আজও সূর্য ওঠে। এই ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। যতদিন পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকবে ততদিন এই ঘটনা একইরকম ভাবে ঘটে চলবে। এই ঘটনা চিরন্তন। দ্বিতীয় শব্দগুচ্ছ “তেমনি করেই ছায়া/ নামলে আবার ছুটে সান্ধ্য নদীর হাওয়া।” অর্থাৎ একই ভাবে পশ্চিম দিগন্তে সূর্যের অস্ত যাওয়া অথবা সন্ধ্যাবেলা নদীর ওপার থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে আসার মতো ঘটনা গুলি বারংবার ঘটতে থাকবে। সেই কথা বোঝানোর জন্য কবি ‘তেমনি’ কথাটি ব্যবহার করেছেন।
৫. ‘নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না।’– উদ্ধৃতাংশে নটেগাছের প্রসঙ্গ উত্থাপনে ‘আবহমান’ কবিতায় ‘রূপকথা’র আবেশ কীভাবে রচিত হয়েছে, বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ রূপকথার গল্পে আমরা কোনো সুয়োরাণী ও দুয়োরাণী বা কোনো দৈত্যের দানবের কথা শুনি। সেই গল্পে দুষ্টু রাণী তার সৎ মেয়েকে কষ্ট দিত, দানব বা দৈত্য রাজ্যের প্রজাদের কষ্ট দিত। গল্পের শেষে দুষ্টু বুদ্ধির পরাজয় ঘটত, শুভ বুদ্ধির জয়লাভ ঘটত। যা কিছু ভালো তা চিরস্থায়ী হয়। যা কিছু অন্যায় তার বিনাশ ঘটে এবং গল্পের শেষে লেখা থাকত নটে গাছটি মুড়ালো আমার কথাটি ফুরালো। গল্পের শেষে এর দ্বারা একটা সুখী পরিসমাপ্তি বোঝানো হত। নটে একবর্ষজীবি গাছ, এক বছর পরে নটে গাছটি শুকিয়ে যায়। কিন্তু এখানে কবিতায় কবি নটে গাছটিকে সময়ের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। মানুষের ঘর গড়ে তোলার ইচ্ছা,এই ভিটের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ, এর কোনো পরিবর্তন ঘটে না। এই যে জন্মভূমির প্রতি অদম্য আকর্ষণ তা মানুষের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। আবার অন্যদিকে বহুবছর বহুযুগ অতিক্রান্ত হলেও প্রকৃতির রূপ থাকে অমলিন। পূর্ব দিগন্তে সূর্যের উদয়, আবার পশ্চিম দিগন্তে সূর্যের অস্ত যাওয়া, নদীর উপর থেকে শীতল হাওয়া বয়ে আসা, গ্রাম বাংলার বুকে কুটিরে অনতিদূরে লাউমাচা– সবই যেন অপরিবর্তনীয় থাকে। গ্রাম বাংলার এই শান্ত সমাহিত চিত্র বহু বছর পার করেও একই থেকে যায়।
৬. “এই মাটিকে এই হাওয়াকে আবার ভালােবাসে।”— এই মাটি হাওয়াকে আবার ভালােবাসার কারণ কী ?
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতাটি নিজের শিকড়ের খোঁজে মানুষের অনিঃশেষ পথ চলার কাহিনি। সভ্যতার শুরুতে অরণ্যবাসী মানুষ বন কেটে বসতি গড়েছিল, তৈরি করেছিল তার গ্রামসভ্যতা! ঘর বেঁধেছিল নিবিড় অনুরাগে। সেই মানুষই ধীরে ধীরে নাগরিক হয়েছে। প্রকৃতি এবং গ্রামজীবনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটেছে। কিন্তু শহরজীবনের ব্যস্ততা এবং কৃত্রিমতায় ক্লান্ত মানুষ নিজের মনের মধ্যে ধরে রাখতে চেয়েছে ঘাসের গন্ধ, তারায় ভরা আকাশে সে নিজের স্বপ্ন এঁকে রেখেছে। বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসিকে মানুষ কখনও হারিয়ে যেতে দেয়নি। প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়েছে সেই দুরন্ত জীবনপিপাসা। চাকচিক্য, আড়ম্বরের কৃত্রিমতায় নয়, মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য জীবনকে তার
সহজভাবে রূপরস-গন্ধ-স্পর্শ-সহ উপলব্ধি করতে চেয়েছে। তাই প্রকৃতির কাছে, তার ফেলে আসা গ্রামজীবনের কাছে ফিরে যাওয়ার তাগিদ উপলব্ধি করেছে সে। সেখানে লাউমাচায় সন্ধ্যার বাতাসে ছােট্ট একটা ফুল আজও দোল খায়৷ সেই মাটিকে আর হাওয়াকে ভালােবেসে ফিরে যাওয়াটা যেন জীবনকে সুন্দরভাবে উপলব্ধি করার ও বেঁচে থাকার জন্য অবশ্য প্রয়ােজনীয় হয়ে ওঠে।
৭. ‘আবহমান’ শব্দের অর্থ কী ? কবিতায় ব্যক্ত ভাবের সঙ্গে এই নামকরণ কতদূর সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তুমি মনে করো ?
উত্তরঃ আবহমান কথাটার আক্ষরিক অর্থ হল যা অনন্ত কাল ধরে বহমান।এখানে চিরকালীন বা চিরন্তন অর্থ বোঝাতে আবহমান শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
বহু বছর আগে মানুষের ঘর বাঁধা শুরু হয়েছে। মানুষ তাঁর কুটির নির্মিত করছে সযত্নে। বেঁচে থাকার জন্য সবজি ফলিয়েছে। বহমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু ‘নিবিড় অনুরাগে’ এই ঘর বাঁধার ইচ্ছা, জন্মভূমির মাটিকে, হাওয়াকে ভালোবাসার অদম্য ইচ্ছার কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রিয় ভিটে, ভিটের সংলগ্ন ছোটো একটি লাউমাচা, যা কবি এখানে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তাঁর টান সার্বজনীন। যদি কখনো কাউকে কোনো প্রয়োজনে নিজের জায়গা ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে হয়, তবুও চেনা ভিটের জন্য সবসময় তার মন অস্থির হয়ে থাকে। পরিচিত ‘ঘাসের গন্ধ’ মাখার জন্য মন ভরে থাকে ‘দূরন্ত পিপাসায়’। সময় এগিয়ে চলে প্রতিদিন সূর্য উঠে, প্রতিদিন অস্ত যায়, সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যার বাতাস নদীর উপর থেকে গ্রামের বুকে ছুটে আসে। অফুরন এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তা চিরকালীন। বারবার, প্রতিদিন, অবিরাম একই ঘটনা ঘটে চলেছে। তবু এর কোনো শেষ নেই। ঠিক তেমনি মানুষের মনে ঘর বাঁধার আখাঙ্খাও চিরকালীন। এই ঘটনাগুলি আবহমান কাল ধরে লক্ষ্য করা যায়। তাই কবিতায় ব্যক্ত ভাবের সঙ্গে এই নামকরণ সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করি।