বাড়ির কাছে আরশিনগর
—লালন ফকির
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে
আমার বাড়ির কাছে আরশিনগর
ও এক পড়শি বসত করে।
গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি
ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে।
আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি
আমি কেমনে সে গাঁয় যাই রে।
বলব কি সেই পড়শির কথা
ও তার হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা নাই রে।
ও সে ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর
আবার ক্ষণেক ভাসে নীরে।
পড়শি যদি আমায় ছুঁত
আমার যম-যাতনা যেত দূরে।
আবার সে আর লালন একখানে রয়
তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে।
কবি-পরিচিতিঃ
আমাদের পাঠ্য ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর ’ একটি বাউলগান। গানটি লিখেছেন লালন ফকির (১৭৭২-১৮৯০)। তিনি একজন বাউল সাধক, সমাজ সংস্কারক এবং একজন মানবতাবাদের পূজারি ছিলেন।
কবিতাটির উৎসঃ
আলোচ্য কবিতাটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত ‘লালনগীতিকা’ সংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গীতিসংকলনে গানটি স্থান পেয়েছে।
বাউল এবং বাউলগান লালন ফকিরের ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ হল একটি বাউলগান। আর লালন ফকির ছিলেন সর্বকালের সেরা একজন বাউল-সাধক। বাউলগান কী এটা জানার আগে জানা প্রয়োজন ‘বাউল’ কথার অর্থ কী ?
গ্রামেগঞ্জে যে মানুষগুলি গেরুয়া বস্ত্র পরে, হাতে একতারা নিয়ে গান গেয়ে বেড়ায় তারাই বাউল। পন্ডিতদের মতে, ‘বাউল’ কথার অর্থ হল ‘বাতুল’ বা ‘বায়ুসেবনকারী’ অর্থাৎ বায়ুগ্রস্ত বা উন্মাদ। বাউল হল এমন এক সম্প্রদায় যারা সংসার-বিবাগী এবং সমস্তরকম জাতপাত, সংকীর্ণতা এবং সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধে। হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই বাউল রয়েছে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু কিছু পার্থক্য থাকলেও কয়েকটি মিল রয়েছে। যেমন—
১) বাউলসাধনা গুরুশিষ্য পরম্পরায় চলে;
২) তারা গানের মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা করেন;
৩) তারা বিশ্বাস করেন যে মানবদেহের মধ্যেই ঈশ্বর বাস করেন এবং
৪) বাউল সাধনায় দেহতত্ত্বের বিশেষ স্থান রয়েছে অর্থাৎ তাদের ঈশ্বরসাধনা হল দেহসাধনা। বাউলগানেও দেহসাধনার নানা ইঙ্গিত মেলে।
বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার
মূল বিষয় বস্তু—
আরশি’ শব্দের অর্থ আয়না। কিন্তু লালন তার গানে ‘আরশিনগর’ বলতে মনকে বুঝিয়েছেন। কারণ, মনের মধ্যেই চারপাশের জগৎ প্রতিফলিত হয়। সেখানে কবি এক পড়শির অস্তিত্বকে খুঁজে পেয়েছেন | এই পড়শিই হল বাউলসাধনার ঈশ্বর, যাকে তারা মনের মানুষ বলে মনে করেন। কিন্তু বাউলসাধনায় এই পড়শির সন্ধান পাওয়া বা তাঁকে লাভ করা খুব সহজ নয়। তিনি যেখানে আছেন, তার চারপাশে আছে অতি গভীর জলরাশি। কবি মানুষের জাগতিক আশা-আকাঙ্ক্ষা ও বিষয়বাসনা ইত্যাদিকে এই জলরাশির প্রতীক দ্বারা বোঝাতে চেয়েছেন। সেই পড়শির কাছে যাওয়ার উপযুক্ত কোনো তরণি বা উপায়ও আবার নেই। তার থেকেও বড়ো কথা, এই পড়শি বা আত্মতত্ত্ব-এর কোনো স্পষ্ট চেহারা হয় না, কারণ পড়শির হাত-পা -কাঁধ মাথা কিছুই নেই। অর্থাৎ, বাউলদের ঈশ্বর যে নিরাকার এ কথার মধ্য দিয়ে লালন তা-ই বোঝাতে চেয়েছেন। অতএব সেই ‘পড়শি শুধুই উপলদ্ধির জগতে অবস্থান করেন। তাঁকে কখনও বোঝা যায়, কখনও বোঝা যায় না। অথচ তাঁর সন্ধান পেলেই মানুষের সব জীবনযন্ত্রণার অবসান ঘটত। কিন্তু তার সঙ্গে যে দূরত্ব তা ঘোচার নয়, কবির কথায় সে হল লক্ষ যোজনের দূরত্ব।
• MCQ প্রশ্ন ও উত্তর।
১. লালন ও পড়শির মাঝে কতখানি ফাঁক ?
(ক) কোটি মাইল (খ) লক্ষ যোজন
(গ) লক্ষ মিটার (ঘ) হাজার যোজন
উত্তরঃ (খ) লক্ষ যোজন
২. ‘পড়শী’ কোথায় বাস করে ?
(ক) রূপনগরে (খ) মায়াপুরীতে
(গ) যক্ষপুরীতে (ঘ) আরশিনগরে
উত্তরঃ (ঘ) আরশিনগরে
৩. ‘পড়শী’ ছুঁলে কী হবে ?
(ক) যম-যাতনা দূরে যাবে
(খ) ব্যথা বেদনা দূর হবে
(গ) আরোগ্য লাভ হবে
(ঘ) জ্ঞানচক্ষু খুলবে
উত্তরঃ (ক) যম-যাতনা দূরে যাবে
৪. পড়শি কোথায়, কীভাবে বাস করে ?
(ক) সে জলে থাকে (খ) সে মহাকাশে থাকে
(গ) সে সর্বত্র বিরাজমান
(ঘ) সে শূন্যেও থাকে আবার জলেও থাকে
উত্তরঃ (ঘ) সে শূন্যেও থাকে আবার জলেও থাকে
৫. পড়শি দেখতে কেমন ?
(ক) তার হাত, পা, কাঁধ, মাথা নাই
(খ) তার হাত, পা, চোখ নাই
(গ) তার মাথা আছে চোখ নাই
(ঘ) তার হাত, পা, কাঁধ, মাথা আছে
উত্তরঃ (ক) তার হাত, পা, কাঁধ, মাথা নাই
৬. ‘গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি।’- এখানে ‘বেড়িয়ে’ শব্দের অর্থ হলো—
(ক) পার হয়ে (খ) ঘুরে ঘুরে (গ) বেষ্টন করে
(ঘ) মধ্যে খানে
উত্তরঃ (গ) বেষ্টন করে
৭. ‘আমি একদিনও না দেখিলাম তারে’— কাকে ?
(ক) মনের মানুষকে (খ) পড়শিকে
(গ) পড়শির আরশীনগরকে
(ঘ) আরশীনগরের পড়শিকে
উত্তরঃ (ঘ) আরশীনগরের পড়শিকে
৮. ‘ও তার হস্ত-পদ স্কন্ধ-মাথা নাই রে !’- বলতে বোঝায়—
(ক) ঈশ্বর নিরাকার (খ) ঈশ্বর সবাকার
(গ) নিরাকার মানুষ (ঘ) কোনোটাই নয় ।
উত্তরঃ (ক) ঈশ্বর নিরাকার।
৯. ‘সে আর লালন একখানে রয়’– সে কে ?
(ক) কবির বন্ধু (খ) কবির কেউ নন
(গ) সে ভগবান (ঘ) মনের মানুষ
উত্তরঃ (ঘ) মনের মানুষ
১০. ‘আমার বাড়ির কাছে আরশীনগর’ ‘আরশীনগর’ শব্দের ভাব-অর্থ হলো—
(ক) দেবভূমি (খ) শহর (গ) ছবির মতো নগর
(ঘ) পরিষ্কার নগর
উত্তরঃ (ক) দেবভূমি
১১. বাউল শব্দটি কোথা থেকে এসেছে ?
(ক) বাংলা বাতুল (খ) হিন্দি বাহুল
(গ) সংস্কৃত বাতুল (ঘ) অসমীয়া বাতুল
উত্তরঃ (গ) সংস্কৃত বাতুল
১২. বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতাটির লেখক—
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (খ) মাইকেল মুধুসুদন দও
(গ) লালন ফকির (ঘ) কাজী নজরুল ইসলাম
উত্তরঃ (গ) লালন ফকির
১৩. বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতাটি আসলে একটি—
(ক) বাউল গান (খ) মারফতি গান
(গ) কবিগান (ঘ) গজল
উত্তরঃ (ক) বাউল গান
১৪. বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতাটির মূল উৎস কি ?
(ক) বাউল গীতিকা সংকলন (খ) লোকসাহিত্য
(গ) লালন-গীতিকা (ঘ) পল্লীগীতি
উত্তরঃ (গ) লালন-গীতিকা
১৫. ‘আমি একদিনও না দেখিলাম তারে’- এখানে আমি কে ?
(ক) কবি স্বয়ং (খ) পড়শি (গ) উভয়ই
(ঘ) ওপরের কেউ না
উত্তরঃ (ক) কবি স্বয়ং
১৬. ‘আমি একদিনও না দেখিলাম তারে’- কবি এখানে কাকে দেখতে চেয়েছেন ?
(ক) কবির মনের মানুষকে (খ) কবির বন্ধুকে
(গ) কবির জীবন সঙ্গিনীকে (ঘ) কবির গুরুকে
উত্তরঃ কবির মনের মানুষকে।
১৭. ‘আমার বাড়ির কাছে আরশিনগর’- কবি এখানে বাড়ি বলতে কী বুঝিয়েছেন ?
(ক) দালান (খ) নিজের দেহ (গ) নিজের মন
(ঘ) কবির পাড়া
উত্তরঃ (খ) নিজের দেহ
১৮. আরশিনগর বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
(ক) কবির গ্রাম (খ) কবির দেহ
(গ) কবির মন (ঘ) কবির পাড়া
উত্তরঃ (গ) কবির মন
১৯. ‘আরশিনগর’ কবিতায় আরশি নগরে কে বাস করত ?
(ক) কবীর মনের মানুষ (খ) কবির বন্ধু
(গ) কবির জীবন সঙ্গিনী (ঘ) কবির পড়শি
উত্তরঃ (ঘ) কবির পড়শি।
২০. কবি যাকে পড়শী বলেছেন সে আসলে হলেন—
(ক) কবীর পরমাত্মা বা মনের মানুষ
(খ) কবির বন্ধু (গ) কবির জীবন সঙ্গিনী
(ঘ) কবির পিতা-মাতা
উত্তরঃ (ক) কবির পরমাত্মা বা মনের মানুষ।
২১. আরশিনগর গ্রামকে কী ঘিরে রয়েছে ?
(ক) জলঙ্গ (খ) অগাধ পানি (গ) কুয়াশা
(ঘ) শূন্যতা
উত্তরঃ (খ) অগাধ পানি।
২২. ‘গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি’- এই অগাধ পানি বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
(ক) বিরাট জলরাশি
(খ) মানুষের দুঃখ কষ্ট
(গ) মানুষের যাবতীয় বিষয়বাসনা
(ঘ) বন্যার জল
উত্তরঃ (গ) মানুষের যাবতীয় বিষয়বাসনা।
২৩. ‘আমি বাঞ্ছা করি দেখবো তারি’ কাকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে ?
(ক) কবীর পড়শিকে
(খ) কবির বন্ধুকে
(গ) কবির জীবন সঙ্গিনীকে
(ঘ) কবির গুরুকে
উত্তরঃ (ক) কবীর পড়শিকে।
২৪. ‘আরশি’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ কী ?
(ক) গ্রাম (খ) আয়না (গ) পরমপুরুষ
(ঘ) আকাশ
উত্তরঃ (খ) আয়না।
২৫. “ও তার নাই কিনারা”—এই কিনারা না থাকা যার ইঙ্গিত দেয়, তা হল—
(ক) সীমাহীন বিষয়বাসনা
(খ) নদীর অথই জলরাশি
(গ) মানবজীবনের অনিশ্চয়তা
(ঘ) রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অত্যাচারের তীব্রতা।
উত্তরঃ (ক) সীমাহীন বিষয়বাসনা।
২৬. “নাই তরণী পারে”—‘তরণী’র অন্তর্নিহিত অর্থ হল—
(ক) অগাধ জলরাশি পেরোনোর জলযান
(খ) ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা
(গ) পরপারে যাওয়ার অবলম্বন
(ঘ) আরাধ্যের কাছে পৌঁছোনোর বাধা অতিক্রমণের উপকরণ
উত্তরঃ (ঘ) আরাধ্যের কাছে পৌঁছোনোর বাধা অতিক্রমণের উপকরণ।
• SAQ প্রশ্ন ও উত্তর।
১.আরশিনগরকে বেষ্টন করে থাকা অগাধ পানি আসলে কী ?
উত্তরঃ লালন ফকির রচিত বাড়ির কাছে আরশীনগর’ নামক কবিতা বা বাউল গানে আরশিনগরকে বেষ্টন করে থাকা অগাধ পানি বলতে আসলে মানুষের বিষয়ভাবনা ও সাংসারিক আসক্তির কথা বলা হয়েছে।
২.লালন তাঁর গানে পড়শী বলেছেন কাকে ?
উত্তরঃ পড়শী শব্দটি ‘প্রতিবেশী শব্দের কথ্য রূপ। লালন ফকির রচিত বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতায় লালন পড়শী বলতে অন্তরাত্মাকে বুঝিয়েছেন। যাকে ঈশ্বর কিংবা বাউলদের ভাষায় মনের মানুষ বলা যেতে পারে।
৩.”ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর”- এই শূন্য আসলে কী ?
উত্তরঃ লালন ফকির রচিত বাড়ির কাছে আরশীনগর’ নামক কবিতার উচ্বৃতাংশে শূন্য হল বস্তুজগত-নিরপেক্ষ অবস্থা।
৪.”পড়শী যদি আমায় ছুঁত”- এই ছোঁয়ার তাৎপর্য কী?
উত্তরঃ‘পড়শী’ অর্থাৎ মনের মানুষ যদি কবিকে ছুঁত বা কবির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটত তাহলে কবির যাবতীয় জীবন যন্ত্রণার অবসান ঘটত।
৫.”যম-যাতনা সকল যেত দূরে”—তা সম্ভব হত কেমন করে ?
উত্তরঃ কবির মতে যম-যাতনা অর্থাৎ জীবন-যন্ত্রণা দূর করা সম্ভব হত মনের মানুষের সঙ্গে সংযােগে। কারণ এই সংযােগ ঘটলেই প্রকৃত আত্মদর্শন তথা ঈশ্বরলাভ সম্ভব হত।
৬.”আমার যম-যাতনা যেত দূরে”— যমযাতনা’ শব্দবন্ধটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ যম-যাতনা শব্দবন্ধটির দ্বারা কবি জীবনযন্ত্রণাকে বুঝিয়েছেন।
৭.“সে আর লালন একখানে রয়”- এই সে কে ?
উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘সে’ হল কবির আত্মদর্শন বা আত্মানুভূতি। একেই বাউল সাধকেরা ‘মনের মানুষ বা ঈশ্বর বলতে চেয়েছেন।
৮.”তবু লক্ষ যােজন ফাক রে”— ‘এই লক্ষ যােজন ফাঁক’ এর অর্থ কী ?
উত্তরঃ‘এই লক্ষ যােজন ফাক’-এর অর্থ হল বিষয়বাসনার কারণে ঈশ্বর কিংবা মনের মানুষের সঙ্গে মিলনের সীমাবদ্ধতা।
৯.পড়শিকে দেখতে কেমন ?
উত্তরঃ কবির পড়শি দেখতে নিরাকার, তার হাত, পা, কাঁধ, মাথা কিছুই নেই।
১০.লালন ফকির কে ছিলেন ?
উত্তরঃ লালন ফকির মূলত একজন বাউল সাধক ছিলেন। ধর্ম, বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি মানবাত্মার অনুসন্ধানের কথা বলে গেছেন।
১১.কবি একদিনের জন্যও কাকে দেখতে পাননি ?
উত্তরঃ কবি লালন ফকির তাঁর বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতায় আক্ষেপ করে বলেছেন একদিনের জন্যও তাঁর পড়শি মনের মানুষকে দেখতে পাননি।
১২.কবি এই অগাধ পানি পার করতে পারছেন না কেন ?
উত্তরঃ কবি এই অগাধ পানি পার করতে পারছেন না কারণ পার করার মাধ্যম ও পন্থা কবির জানা নেই।
১৩.বাউল সাধনার মূল তত্ত্ব কী ?
উত্তরঃ বাউল সাধনার মূল তত্ত্ব হল জ্ঞানের পথ বা প্রাতিষ্ঠানিক সাধনার পথ ত্যাগ করে মনের সাধনায় আত্মদর্শনের মাধ্যমে ঈশ্বর লাভ করা।
১৪.কবির মনের মানুষের হাত-পা-মাথা নেই কেন ?
উত্তরঃ কবির মনের মানুষের হাত-পা-মাথা নেই কারণ তিনি নিরাকার এবং অন্তরের অধিবাসী।
১৫.কবিতায় ‘ক্ষণেক’ শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য কী ?
উত্তরঃ কবিতায় ‘ক্ষণেক’ শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে বােঝানাে হয়েছে ঈশ্বরের বাস এক জায়গায় নয়, কখনও তার অবস্থান শূন্যের ওপর, আবার কখনও-বা নীরে।
১৬.শূন্যের উপর বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উত্তরঃ লালন ফকির রচিত ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ নামক কবিতায় শূন্যের উপর বলতে কবি বস্তুজগত-নিরপেক্ষ এবং অনুভূতিনির্ভর অবস্থাকে বুঝিয়েছেন।
১৭.”আবার সে তার লালন একখানে রয়”—একখানে বলতে কোত্থানের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ একখানে বলতে কবি একই দেহাবয়ব বা শরীরের মধ্যে লালন এবং তার মনের মানুষের বাস করাকে বুঝিয়েছেন।
১৮.”ক্ষণেক ভাসে নীরে”-নীরে ভাসার কারণ কী?
উত্তরঃ লালন ফকির রচিত বাড়ির কাছে আরশীনগর’ নামক কবিতা বা বাউলগানে নীরে বা জলে ভাসার তাৎপর্য হল নিরাকার ঈশ্বরের কখনাে কখনাে বাস্তবজগতের বিষয়কে অবলম্বন করে আত্মপ্রকাশ ঘটা।
১৯.কাদের মধ্যে লক্ষ যােজন ফাঁক রয়েছে ?
উত্তরঃ সহজিয়া সাধক বা বাউল কবি লালন ফকির ও তাঁর পরমাত্মা বা মনের মানুষের মধ্যে লক্ষ যােজন ফাক রয়েছে।
২০.মনের মানুষের সঙ্গে লালনের কেন লক্ষযােজন ফাঁক রয়েছে ?
উত্তরঃ সাধক লালন ও তার মনের মানুষ বা পরমাত্মার মধ্যে এই ফাক থাকার কারণ হল তার নিজের বিষয়বাসনা ও লােভ লালসা।
২১.এই কবিতায় কবি তার কোন ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ?
উত্তরঃ এই কবিতায় কবি লালন তার মনের মানুষকে দর্শন করতে চেয়েছেন যাতে তিনি পার্থিব দুঃখ যন্ত্রণার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন।
২২.”আমি কেমনে সে গাঁয় যাই রে।”- বক্তার যাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা কোথায় ?
উত্তরঃ অগাধ পানি গ্রামকে বেষ্টন করে থাকায় এবং কোনাে নৌকাও পার হওয়ার জন্য না থাকায় বক্তা সে গ্রামে যেতে পারেননি।
২৩.লালনের মনের ‘বাঞ্ছা’ কী ছিল ?
উত্তরঃ লালনের মনের বাঞ্ছা ছিল আরশীনগর-এ বাস করা তার পড়শিকে দেখা।
২৪.”আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”— ‘আমি’ ও তারে দুজন কে কে ?
উত্তরঃ আমি এখানে কবি লালন ফকির আর তারে বলতে বােঝানাে হয়েছে আরশিনগরে বাস করা পড়শীকে।
২৫.”ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে।”-এ কথার অর্থ কী ?
উত্তরঃ মন্তব্যটির প্রকৃত অর্থ হল ‘অগাধ পানি’ রূপ মানুষের যে বিষয়বাসনা তার কোনাে সীমা নেই এবং তাকে অতিক্রমের কোনাে তরণী বা অবলম্বন নেই।
২৬.”ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে।”- এখানে তরণী কথাটির আক্ষরিক ও রূপকার্থ কী কী ?
উত্তরঃ তরণী কথাটির আক্ষরিক অর্থ নৌকা, কিন্তু এখানে তা বিষয়বাসনা থেকে মুক্ত হওয়ার অবলম্বন।
২৭.“বাড়ির কাছে আরশীনগর”—বাড়ি’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?
উত্তরঃ বাড়ি বলতে এখানে দেহভাণ্ডকে বােঝানাে হয়েছে।
২৮.”ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে”- কিনারা না থাকার তাৎপর্য কী ?
উত্তরঃ মানুষের যে সীমাহীন বিষয়বাসনা তাকে বােঝানাের জন্যই কিনারা না থাকার কথা বলা হয়েছে।
২৯.“আমি একদিন না দেখিলাম তারে”- বক্তা তারে একদিনও দেখতে পাননি কেন ?
উত্তরঃ প্রথমত, বিষয়বাসনা এবং দ্বিতীয়ত, পড়শির স্বরূপ নিরাকার বলেই কবি তাকে দেখতে পাননি।
৩০.“গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি”—অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ গ্রাম কথাটি দেহভাণ্ড এবং অগাধ পানি বিষয়বাসনা অর্থে ব্যবহার করে কবি বলেছেন সীমাহীন বিষয়বাসনা দেহকে বেষ্টন করে আছে।
৩১.’পড়শী’র রূপ কেমন ছিল ?
উত্তরঃ ‘পড়শী’র হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা নেই অর্থাৎ তিনি নিরাকার স্বরূপ।
৩২.”ও এক পড়শী বসত করে।”- এই পড়শী আসলে কে ?
উত্তরঃ এই পড়শী হল বাউল সাধনার মনের মানুষ, যার সন্ধানে বাউল সাধকরা সাধনা করেন।
৩৩.“আমি কেমনে সে গাঁয় যাই রে।”- এই গ্রামে গেলে বক্তার কী লাভ হত ?
উত্তরঃ এই গ্রামে গেলে বক্তা তাঁর মনের ‘মানুষ’বা ‘পড়শী’র সঙ্গে মিলতে পারতেন।
৩৪.’পড়শী’ যে ‘শূন্য’ এবং ‘নীর’-এ থাকে তার অর্থ কী ?
উত্তরঃ ‘পড়শী’ নিরাকার, তাই তিনি ‘শূন্য’-এ থাকেন, আবার কখনাে কখনাে বাস্তব জগতেও তাকে পাওয়া যায়—’নীর’ তার প্রতীক।
বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর।
১. ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় কবি কীভাবে রূপকের আশ্রয়ে দেহতত্ত্ব বর্ননা করেছেন ?
উত্তরঃ লালন ফকিরের ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতাটিতে রূপকের আশ্রয়ে বাউল সাধনার ঈশ্বরতত্ত্ব তথা দেহতত্ত্বের কথা বলা হয়েছে। রূপক কবিতার মতো এই বাউলগানটিতেও দুরকমের অর্থ রয়েছে। সাধারণ অর্থটি হল- কবির বাড়ির কাছেই আরশিনগর নামের একটা গ্রাম আছে। সেই গ্রামে বসবাস করে একজন মানুষ- কবিতায় যাকে পড়শি বলা হয়েছে। তার শারীরিক পরিচয় দিতে গিয়ে কবি বলেছেন যে, তার ‘হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা’ কিছুই নেই। কবি তাকে দেখতে চান কিন্তু একমাত্র বাধা হল ‘অগাধ পানি’ যা আরশিনগরকে বেষ্টন করে রেখেছে। এই অগাধ পানির কোনো কিনারা নেই আর পারে কোনো মাঝিও বসে নেই। উক্ত পড়শি কবিকে ছুঁলে কবির মৃত্যুযন্ত্রণা দূর হয়ে যেত।
কবিতাটির অন্তর্নিহিত অর্থ হল- শরীরের মধ্যে যে শুদ্ধতম মন থাকে সেখানেই বাস করেন ঈশ্বর। এত কাছে থেকেও মানুষ ঈশ্বরের দর্শন পায়না। আসলে ঈশ্বর নিরাকার। তাকে উপলব্ধি করতে হলে মোহমুক্ত মন দরকার। কিন্তু মানুষের বিষয়বাসনা তার থেকে ঈশ্বরকে দূরে সরিয়ে রাখে। গানটিতে ঈশ্বর সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার অর্থ হল ঈশ্বর নিরাকার বলে সাধনমার্গের উচ্চতায় থাকেন, আবার কখনো অন্য কোনো বস্তুকে আশ্রয় করে ঈশ্বর প্রকাশিত হন। কবির কথায়- “ক্ষণেক থাকে শুন্যের উপর / ক্ষণেক ভাসে নীরে”। এভাবেই রূপকের আড়ালে ঈশ্বরতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে।
২. “আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি বক্তা কাকে দেখতে চান ? কীভাবে তাঁর দর্শন পাওয়া যাবে ? ১+৪
উত্তরঃ লালন ফকির তার বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় তার মনের মানুষ ‘ অর্থাৎ ‘পড়শি’কে দেখতে চেয়েছেন।
কবি একজন বাউলসাধক হিসেবে জানেন ঈশ্বর রয়েছেন মনের ভিতরে। ‘মনের মানুষ হিসেবেই তার উপস্থিতি। কিন্তু বিষয়বাসনায় কাতর মানুষের পক্ষে তার সাক্ষাৎ পাওয়া সহজ কথা নয়। কোনো মন্ত্ৰ- তন্ত্র, সাধনপদ্ধতি নয়, শুধু আত্মোপলদ্ধির সাহায্যেই ‘মনের মানুষ’, যাঁকে কবি ‘পড়শি বলে উল্লেখ করেছেন তার দেখা পাওয়া যেতে পারে বলে কবি মনে করেছেন। তার সাক্ষাৎ পেলে পার্থিব জীবনের সব দুঃখ- যন্ত্রণা থেকে কবির মুক্তি ঘটবে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন বিষয়াসক্তিকে সম্পূর্ণ দূর করে শুদ্ধস্বভাবের অধিকারী হওয়া। “গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি”–এই পানি’ অর্থাৎ বিষয়বাসনাকে অতিক্রম করলেই ‘মনের মানুষ’ বা ‘পড়শি’র সান্নিধ্য পাওয়া সম্ভব। লোভ-মোহ, কামনা বাসনা আমাদের মনকে চারপাশ থেকে ঘিরে থাকে। এর থেকে মুক্ত হতে পারলেই চিত্তশুদ্ধি ঘটা সম্ভব। আর চিত্তশুদ্ধি ঘটলেই মনের ভিতরে থাকা অধর মানুষ’ বা পড়শির দেখা পাওয়া সম্ভব হয়। নিরাকার ঈশ্বর পরমভক্তের শুদ্ধ চেতনার মধ্য দিয়েই তার কাছে ধরা দেন।
৩.’আমি একদিন না দেখিলাম তারে’– কে , কাকে দেখেননি ? আক্ষেপের কারণ কী ?
উত্তরঃ বাংলার মরমি সাধক লালন ফকির ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতায় উদ্ধৃত মন্তব্য করেছেন। এখানে বাউলকবি তার মনের মানুষকে না দেখার কথা বলেছেন। লালন জানেন, ঈশ্বরের অবস্থান মানুষের মনের নিবিড় জায়গায়। তিনি বাস করেন হৃদয়ের গহন অভ্যন্তরে লালন কোনোদিন তাঁর দেখা পাননি। এজন্য লালন নিজের অজ্ঞতাকেই দায়ী করেন। মানুষের লোভ- লালসা আর বিষয়ভাবনাই তাকে পরমপুরুষের সঙ্গে মিলিত হতে দেয় না। তাই লালন ইচ্ছে করলেই সাধনার পড়শিকে কাছে পান না। তার প্রবল ‘বাঞ্ছা’ পড়শিকে দেখার। এর কারণ পড়শির দর্শন পেলে কবির ‘যম-যাতনা’ দূর হয়ে যেত। সংসারের প্রতি মোহ দূর হলে লালন নিশ্চিন্তে পড়শির সঙ্গে মিলিত হতে পারতেন। অনেক চেষ্টা করেও পার্থিব-মায়া-বাসনা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেন না বলেই লালনের আক্ষেপ। এটাই পড়শির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে।
৪.’বাড়ির কাছে আরশীনগর’— কার বাড়ি ? ‘আরশীনগর’ শব্দের তাৎপর্য কী ?
উত্তরঃ পঙ্ক্তিটিতে ‘বাড়ি’ বলতে বাউল কবি লালন ফকিরের বাড়ির কথা বলা হয়েছে। ‘বাড়ি’ কথার রূপকার্থ কবির দেহভাণ্ড। মরমিয়া সাধক কবি লালন ফকির ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতায় ‘আরশীনগর’ শব্দের দ্বারা কোনো নগর বা কোনো স্থানের কথা বলেননি। কবির কাছে ‘আরশীনগর’ হলো অন্তরভূমি, যেখানে পরম করুণাময় ঈশ্বর অবস্থান করেন। এই অন্তরভূমি কবির কাছে মনের মানুষ বা ‘পড়শী’। সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা এখানেই বিরাজ করেন। কবি এই মনের মানুষ ‘পড়শী’র সঙ্গে থেকেছেন কিন্তু তাকে চিনতে পারেননি। তাই কবির আক্ষেপ– “আমি একদিনও না দেখিলাম তারে।”
কবি বলতে চেয়েছেন, ‘আরশীনগর’ বা মনের মানুষের সন্ধান পাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। একমাত্র আত্মানুসন্ধানের মাধ্যমেই তার সন্ধান লাভ সম্ভব। এই আত্মানুসন্ধান আসলে নিজের ভেতরে যে মানুষ আছেন, তাঁকেই সন্ধান করা। মনকে শুচিশুদ্ধ করে, জাগতিক মায়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে আত্মানুসন্ধান করলে তবেই ‘আরশীনগর’-এ বিরাজিত ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ সম্ভব হবে। কিন্তু কবির পক্ষে এই আত্মানুসন্ধান করা সম্ভব হয়নি। তাই বাড়ির কাছে ‘আরশীনগর’ থাকা সত্ত্বেও ঈশ্বরের সঙ্গে কবির ব্যবধান ‘লক্ষ যোজন ফাঁক’।
৫.’যম-যাতনা যেত দূরে’– যম যাতনা কী ? কীভাবে দূর হবে ?
উত্তরঃ ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ গানটি লালন ফকিরের ‘লালন গীতিকা’ সংকলনের অন্তর্গত।
মরমিয়া সাধক লালনের কাছে ‘পড়শী’ হলেন মানুষের অন্তরাত্মা বা মনের মানুষ। এই মনের মানুষের সন্ধান না পেলে ‘যম যাতনা’ অর্থাৎ জাগতিক মৃত্যুভয় থেকে রেহাই পাবে না মানুষ। কবি মনে করেন এই পড়শি হলেন মানুষের মুক্তির অগ্রদূত। তিনি মনের ‘আরশীনগর’-এ থাকেন। তিনি প্রতিটি মানুষের পড়শি। তবে সাংসারিক মোহ-মায়া আর পার্থিব কামনা-বাসনার জালে মানুষ এমনভাবে ফেঁসে যায় যে মনের মানুষকে খুঁজেই পায় না। এজন্যই মানুষের জীবনে এতদুঃখ এত যন্ত্রণা। লালন চান, পার্থিব বাসনারূপ ‘অগাধ পানি’ পেরিয়ে পড়শিকে ছুঁতে, তাহলেই যম-যাতনা দূর হবে। পার্থিব যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে আত্মশুদ্ধিতে মনোনিবেশ করতে পারবে। অবশ্য সাধনা ছাড়া এটা সম্ভবও নয়। তবে মনের মানুষকে খুঁজে চলার এই চেষ্টা চক্রাকারে চলতেই থাকে।
৬.“বলবো কী সেই পড়শীর কথা” – পড়শি কে ? পড়শির স্বরূপ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ উক্তিটির বক্তা ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতার রচয়িতা স্বয়ং লালন ফকির। এখানে পড়শি বলতে অলৌকিক বা পার্থিব কোনো সত্তাকে বোঝানো হয়নি। পড়শি হলেন প্রত্যেকের মনে অবস্থানকারী আর এক মানুষ বা মনের মানুষ। তাঁকে উপলব্ধি করতে হয় হৃদয় দিয়ে।
স্বরূপঃ লালন বলেছেন, এই পড়শির কোনো আকার নেই। তাঁর হাত-পা নেই, না আছে কাঁধ-মাথা। তিনি নিরাকার। কখনো সাধনার উচ্চস্তরে তিনি বিরাজমান, কখনো বস্তুকে আশ্রয় করে তার প্রকাশ ঘটে। লালন তাঁর জীবনে কখনো এই মনের মানুষের দেখা পাননি। তাই বলেছেন, “কেমনে সে গাঁয় যাই রে।” পড়শি অন্তরে অবস্থান করেন কিন্তু লালন তার নাগাল পান না। লালনের মনে হয়েছে বিষয়ভাবনার জন্যই পড়শির সঙ্গে তাঁর “লক্ষ যোজন ফাক” ঘুচল না।
Pingback: একাদশ শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর | WBBSE Class 11 Bengali Question Answer - Prosnodekho -