ভাব সম্মিলন (কবিতা) – কবি বিদ্যাপতি | Bhab Sommilon Kobita Vidyapati

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

ভাব সম্মিলন (কবিতা) – কবি বিদ্যাপতি | Bhab Sommilon Kobita Vidyapati

ভাব সম্মিলন (কবিতা) – কবি বিদ্যাপতি একাদশ শ্রেণি বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার | Bhab Sommilon Kobita Vidyapati Class 11 Bengali 2nd Semester wbbse

ভাব সম্মিলন

বিদ্যাপতি

কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।

চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর।।

পাপ সুধাকর যত দুখ দেল।

পিয়া-মুখ-দরশনে তত সুখ ভেল।।

আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই।

তব হাম পিয়া দূর দেশে না পাঠাই।।

শীতের ওঢ়নী পিয়া গীরিষির বা।

বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না।।

ভণয়ে বিদ্যাপতি শুন বরনারি।

সুজনক দুখ দিবস দুই-চারি।।

কবি পরিচিতিঃ

বিদ্যাপতিঃ পঞ্চদশ শতকের মৈথিলি কবি। বঙ্গদেশে তার প্রচলিত পদাবলীর ভাষা ব্রজবুলি। কথিত আছে যে পরমপুরুষ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রতিদিন তার রচিত পদ গাইতে ভালবাসতেন। বাঙালিরা চর্যাগীতির ভাষা থেকে এই ব্রজবুলীকে অনেক সহজে বুঝতে পারেন। বিদ্যাপতিকে বাঙালি কবিদের অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়। কবি বিদ্যাপতির জন্ম দ্বারভাঙা জেলার মধুবনী পরগনার বিসফী গ্রামের এক বিদগ্ধ ব্রাহ্মণ পরিবারে। তার রচনাবলির মধ্যে রয়েছে কীর্তিলতা, ভূপরিক্রমা, কীর্তিপতাকা, পুরুষ পরীক্ষা, শৈবসর্বস্বসার, গঙ্গাবাক্যাবলি, বিভাগসার, দানবাক্যাবলি, লিখনাবলি, দুর্গাভক্তি- তরঙ্গিনী। তিনি প্রায় আট শ’ পদ রচনা করেন। বিদ্যাপতি যে বিপুল সংখ্যক পদে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা রূপায়িত করেছেন, তার মধ্যে রাধার বয়ঃসন্ধি অভিসার, প্রেমবৈচিত্র্য ও আপেক্ষপানুরাগ, বিরহ ও ভাবসম্মিলনের পদগুলি বিশেষ উৎকর্ষপূর্ণ। কবি বিদ্যাপতি ‘মৈথিল কোকিল’ ও ‘অভিনব জয়দেব’ নামে খ্যাত। এই বিস্ময়কর প্রতিভাশালী কবি একাধারে কবি, শিক্ষক, কাহিনিকার, ঐতিহাসিক, ভুবৃত্তান্ত লেখক ও নিবন্ধকার হিসেবে ধর্মকর্মের ব্যবস্থাদাতা ও আইনের প্রামাণ্য গ্রন্থের লেখক ছিলেন।

ভাবসম্মিলন বা ভাবোল্লাস পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি হলেন বিদ্যাপতি।

কবিতার শব্দার্থ—

• কহব— বলব
• সখি— সখী শব্দের সম্বোধন; বন্ধু, সহচরী
• ওর— সীমা-পরিসীমা (ব্রজবুলি শব্দ)
• চিরদিন— চিরকাল
• মাধব— শ্রীকৃষ্ণ
• মন্দির— কবিতায় ‘গৃহ’ অর্থে
• মোর— আমার
• সুধাকর— চাঁদের আলো, জ্যোৎস্না (সুধা কথার অর্থ চাঁদ)
• দুখ— দুঃখ
• দেল— দিল (ব্রজবুলি শব্দ)
• পিয়া— প্রিয় (এখানে কৃষ্ণ)
• দরশন— দর্শন (স্বরভক্তি ঘটেছে)
• ভেল— হলো (ব্রজবুলি শব্দ)
• আঁচর— অঞ্চল, আঁচল, শাড়ির প্রান্ত
• মহানিধি— মহামূল্যবান সম্পদ বা ধন
• তব— তবুও
• হাম— আমি
• ওঢ়নী— ওড়না, গায়ের আবরণ
• গীরিষের— গ্রীষ্মের (গ্রীষ্ম > গীরিষ)
• বা— বায়ু, বাতাস
• বরিষার— বর্ষাকালের (বর্ষা > বরিষা)
• ছত্র— ছাতা
• দরিয়া— নদী বা সমুদ্র
• ভণয়ে— বলছে, বলে
• শুন— শোনো
• বরনারি— সুন্দরী (এখানে রাধিকার সম্বোধনসূচক শব্দ)
• সজনক— সৌভাগ্যবতীকে

কবিতার উৎস—

• কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত “বৈষ্ণব পদাবলী” সংকলন।

• এছাড়াও আরো কয়েকটি বৈষ্ণব পদ সংকলন গ্রন্থে এই কবিতাটি সংকলিত হয়েছে।

কবিতার পর্যায়—

• কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত “বৈষ্ণব পদাবলী” সংকলন গ্রন্থে কবিতাটি “ভাবোল্লাস ও মিলন’ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

• তবে শিক্ষাসংসদের পাঠ্য অনুযায়ী এটি “ভাব সম্মিলন” “ভাব সম্মিলন” পর্যায়ের। যদিও উভয়েই একার্থে প্রযুক্ত হয়েছে।

কবিতার মলভাব—

শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় গমন করলে শুরু হয়
রাধিকার বিরহ। এই বিরহ ও বিকারের আবেশে রাধা কল্পনার মাধ্যমে কৃষ্ণের সঙ্গ- সুখ উপভোগ করছেন– একেই ভাব সম্মিলন বা ভাবোল্লাস নাম দেওয়া হয়েছে। বিদ্যাপতির এই পদ বা কবিতাটিতেও বিরহে কাতর রাধাও যেন স্বপ্নে কিংবা কল্পনায় শ্রীকৃষ্ণের দেখা পেয়েছেন; তাই তাঁকে আর ছেড়ে দিতে চান না। অর্থাৎ এই পর্যায়ের কবিতাও প্রকান্তরে বিরহেরই কবিতা।

কবিতার সারাংশ—

শ্রীরাধিকা তাঁর সখীকে জানাচ্ছেন :

• হে সখি, আমার সীমাহীন আনন্দের কথা কী আর বলব; চিরকাল মাধব শ্রীকৃষ্ণ আমার হৃদয়-মন্দিরে থাকবেন।

• পাপী চন্দ্রকিরণ আমাকে যত না কষ্ট দিয়েছে, প্রিয় মাধবের মুখ দর্শনে আমি ততটাই সুখ পেয়েছি।

• যদি কেউ আঁচল ভরে মহামূল্যবান রত্নও দেয়, তবুও আমি প্রিয়তমকে দূর দেশে পাঠাবো না।

• প্রিয় আমার শীতের ওড়না, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা, উত্তাল নদীর নৌকো মতো।

• বিদ্যাপতি বলেন, শুন ওহে বরনারী রাধিকা, যে হয় সুজন বা সৌভাগ্যবতী তাঁর দুঃখ চিরকালের নয় বরং স্বল্পকালের।

📌আরও পড়ুনঃ

1. একাদশ শ্রেণির বাংলা সিলেবাস ও প্রশ্ন প্যাটার্নClick Here

2. একাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

Leave a Reply