প্রথম অধ্যায় – বিসর্গ সন্ধি
(হাতে কলমে প্রশ্নের উত্তর)
১. সন্ধিতে কতরকম নিয়মে দুটি ধ্বনি যুক্ত হয়? এই নিয়মগুলির প্রত্যেকটি একটি করে উদাহরণ দিয়ে দেখাও। বিসর্গসন্ধির ক্ষেত্রে কোন্ নিয়ম খাটে ?
উত্তরঃ সন্ধিতে প্রধানত ছয়রকম নিয়মে দুটি ধ্বনি যুক্ত হয়ে থাকে। এই নিয়মগুলি হল—
(ক) দুটি ধ্বনি যুক্ত হওয়ার পর বদলে গিয়ে একটা নতুন ধ্বনি তৈরি হয়। যেমন—যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট (আ + ই = এ)।
(খ) দুটি ধ্বনি যুক্ত হওয়ার পর তারই মধ্যে একটা ধ্বনি, সন্ধির ফলে তৈরি ধ্বনিতে পরিণত হয়। যেমন–
পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা (ই + ঈ = ঈ)।
(গ) বাঁ-দিকের দুটো ধ্বনি জোড়ার পর ডান দিকে দুটো নতুন ধ্বনি হয়। যেমন—উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস (ত্ + শ্ = চ্ছ) (চ্ + ছ)
(ঘ) সন্ধিযুক্ত শব্দে প্রথম শব্দের শেষ ধ্বনি পরিবর্তিত হয়। কিন্তু দ্বিতীয় শব্দের প্রথম ধ্বনি একই থাকে। যেমন— বাক্ + আড়ম্বর= বাগাড়ম্বর (ক্ + আ) = গা (গ্ + আ)।
(ঙ) বাঁ-দিকের দুটো ধ্বনি যুক্ত হওয়ার পর ডান দিকেও সে দুটোই থাকে এবং তার সঙ্গে একটা অতিরিক্ত ধ্বনি যুক্ত হয়ে যায়। যেমন—
(চ) পরি + ছেদ = পরিচ্ছেদ (ই + ছ) = ইচ্ছ (ই + চ্ + ছ)। প্রথম শব্দের শেষে অবস্থিত বিসর্গের সঙ্গে পরের শব্দটির শুরুতে থাকা স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জনধ্বনি যুক্ত হলে সন্ধির ফলে তা নতুন শব্দে অন্য ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। যেমন—
পুরঃ + কার = পুরস্কার (ঃ + ক) = স্ক।
*** পূর্বে আলোচ্য সন্ধির ছয়রকম সূত্রের মধ্যে শেষ সূত্রটি বিসর্গসন্ধির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
২. বিসর্গসন্ধির ফলে বিসর্গটি কোন্ কোন্ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হতে পারে ? প্রত্যেকটির একটি করে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ বিসর্গসন্ধির ফলে বিসর্গটি ‘ও’, ‘স্’, ‘শ’, ‘ষ’ এবং ‘র্’ ইত্যাদি ধ্বনিতে রূপান্তরিত হতে পারে।
(ক) বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে ‘ও’-কার হয়। উদাহরণ— মনঃ + রম = মনোরম।
(খ) বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে ‘স্’, ‘শ্’, ‘ষ’ ধ্বনিতে পরিণত হয়। উদাহরণ—
»(স্)— নিঃ + তেজ = নিস্তেজ।
»(শ্)— নভঃ + চর = নভশ্চর
»(ষ)— বহিঃ + কার = বহিষ্কার
(গ) বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে ‘র্’-কার হয়। উদাহরণ— নিঃ + আকার = নিরাকার
৩. নীচে উল্লিখিত বাক্য থেকে বিসর্গসন্ধিযুক্ত পদগুলিকে চিহ্নিত করো।
৩.১ অহোরাত্র পরিশ্রম করে শেষে তার পুরস্কার পেলাম।
উত্তরঃ অহোরাত্র, পুরস্কার।
৩.২ নিরামিষ নানা পদ দিয়ে প্রাতরাশ সারলেন।
উত্তরঃ নিরামিষ, প্রাতরাশ।
৩.৩ দুরবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে মনোবাসনা পূর্ণ হতে পারে।
উত্তরঃ দুরবস্থা, মনোবাসনা।
৩.৪ চতুষ্পার্শ্ব পরিষ্কার রাখলে মশার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।
উত্তরঃ চতুষ্পার্শ্ব, পরিষ্কার, নিষ্কৃতি।
৩.৫ নিস্তব্ধ বাড়িতে বসে দুর্দান্ত সব জ্যোতির্বিজ্ঞানের আবিষ্কার করেন।
উত্তরঃ নিস্তব্ধ, দুর্দান্ত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, আবিষ্কার।
৪. নীচের পদগুলিকে বিসর্গসন্ধির নিয়মে বিশ্লেষণ করো :
উত্তরঃ মনোবাঞ্ছা, সরোজ, নিরীশ্বর, আবিষ্কার, অহর্নিশ, পরিষ্কার, চতুরানন, নির্মোহ।
»মনোবাঞ্ছা = মনঃ + বাঞ্ছা [বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে ‘ও’ হয়েছে]।
»সরোজ = সরঃ + জ [বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে ‘ও’ হয়েছে]।
»নিরীশ্বর = নিঃ + ঈশ্বর [বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে ‘র্’ হয়েছে]।
»আবিষ্কার = আবিঃ + কার [বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে ‘স্’ হয়েছে]।
»অহর্নিশ = অহঃ + নিশ [বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে (র্র) রেফ হয়েছে, রেফটি পরের ব্যঞ্জনে যুক্ত হয়েছে]।
»পরিষ্কার = পরিঃ + কার [বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে ‘স্’ হয়েছে]।
»চতুরানন = চতুঃ + আনন [বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে (র্) হয়]।
»নির্মোহ = নিঃ + মোহ [বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে (΄) রেফ হয়েছে, রেফটি পরের ব্যঞ্জনে যুক্ত হয়েছে]।
৫. বিসর্গসন্ধিতে কীভাবে বিসর্গ (ঃ)টি কখনো (র্) ধ্বনিতে বা কখনো (র্র) রেফ-এ রূপান্তরিত হয়-দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখাও।
উত্তরঃ বিসর্গসন্ধির তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী বিসর্গ রূপান্তরিত হয়ে ‘র্’ হয়। যেমন— ‘নিরাকার’ শব্দটিকে সন্ধি বিচ্ছেদ করে হয়— নিঃ + আকার। এখানেও ‘নিঃ’ পদের শেষে ‘ঃ’ সন্ধিবদ্ধ হয়ে ‘র্’ হয়েছে। এরকম আরও কয়েকটি উদাহরণ নিম্নরূপ—
»নিঃ + আনন্দ = নিরানন্দ
»নিঃ + আমিষ = নিরামিষ
»অন্তঃ + আত্মা = অন্তরাত্মা
»চতুঃ + অঙ্গ = চতুরঙ্গ
••• বিসর্গসন্ধির চতুর্থ সূত্র অনুযায়ী বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে (র্র) রেফ হয় এবং রেফটি পরের ব্যঞ্জনে যুক্ত হয়। যেমন— ‘অন্তর্গত’ শব্দটিকে সন্ধি বিচ্ছেদ করে হয়—অন্তঃ + গত। এখানে ‘অন্তঃ’ পদের ‘ঃ’ ‘গত’ পদের ‘গ্’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ‘র্গ’ হয়েছে। এরকম আরও কয়েকটি উদাহরণ নিম্নরূ—
»জ্যোতির্বিজ্ঞান = জ্যোতিঃ + বিজ্ঞান।
»দুর্ধর্ষ = দুঃ + ধর্ষ।
»পুনর্বার = পুনঃ + বার।
»অন্তর্লীন = অন্তঃ + লীন।
»বহির্জগৎ = বহিঃ + জগৎ।
»নির্ণয় = নিঃ + নয়।
৬. ‘শ’, ‘ঘ’, ‘স্’— বিসর্গসন্ধির ফলে কীভাবে সন্ধিবদ্ধ পদে এই তিনটি ধ্বনি সৃষ্টি হয়— দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখাও।
উত্তরঃ বিসর্গ (ঃ) রূপান্তরিত হয়ে যুক্তব্যঞ্জন হিসেবে ‘স্’, ‘শ’, ‘ষ’ হয়। যেমন–
(ক) তিরস্কার = তিরঃ + কার (‘তিরঃ’ পদের ‘ঃ’ এবং ‘কার’ পদের ‘কা’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ‘স্ক’ হয়েছে)।
(খ) নিশ্চয় = নিঃ+ চয় (‘নিঃ’ পদের ‘ঃ’ এবং ‘চয়’ পদের ‘চ্’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ‘শ্চ’ হয়েছে)।
(গ) দুষ্কর = দুঃ + কর (‘দুঃ’ পদের ‘ঃ ‘কর’ এবং পদের (ক্)-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ‘স্ক’ হয়েছে)।
৭. শিরঃ শব্দটির সঙ্গে একে একে উপরি, ছেদ, ত্রাণ, পীড়া, মণি যোগ করলে কোন্ কোন্ শব্দ পাওয়া যাবে তা লেখো।
উত্তরঃ
» শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ
» শিরঃ + মণি = শিরোমণি।
» শিরঃ + উপরি = শিরোপরি
» শিরঃ + ত্রাণ = শিরস্ত্রাণ
» শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া
৮. ঠিক উত্তরে (✓) টিক চিহ্ন দাও:
উত্তরঃ
» স্বঃ + গত = স্বগত / স্বর্গত✓
» মনঃ + কষ্ট = মনঃকষ্ট✓ / মনোকষ্ট
» নিঃ + তেজ = নিস্তেজ✓ /নিঃস্তেজ
» নিঃ + রোগ = নিরোগ / নীরোগ✓
» দুঃ + অবস্থা = দুরবস্থা✓ / দুরাবস্থা
» আবিঃ + কার = আবিস্কার / আবিষ্কার✓
আরও পড়ুনঃ ভাষাচর্চা দ্বিতীয় অধ্যায়।