বোঝাপড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাতে কলমে’র প্রশ্নোত্তর | Bojhapora Kobita Question Answer

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now
বোঝাপড়া
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
 
হাতে কলমে’র প্রশ্নোত্তর 
 
১.১ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন ?
উত্তরঃ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী ও বালক পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন।             
 
১.২ ভারতের কোন প্রতিবেশী দেশে তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয় ? 
উত্তরঃ ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গান ‘আমার সােনার বাংলা’ জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়। 
 
২। নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :  
 
২.১ ‘সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়।’— কোনটি সবার চেয়ে শ্রেয় ?                                                                        
উত্তরঃ অপ্রত্যাশিত আঘাতে অন্যের সঙ্গে বিবাদ না করে, সবার সাথে মিলে মিশে থাকতে হবে। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়। এটি সবার চেয়ে শ্রেয়। 
 
২.২ ‘ঘটনা সামান্য খুবই।”— কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ আলােচ্য উদ্ধৃতাংশে কবি অপ্রত্যাশিত আঘাতের ঘটনাকেই সামান্য ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। কোনোরকম ভয় যেখানে থাকে না সেখানেই আচমকা জাহাজডুবির মতাে বিপদ ঘটে যায়। সেই বিপদে বিচলিত না হয়ে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে এগিয়ে চলাই কবির মত।
 
২.৩‘তেমন করে হাত বাড়ালে/সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।’— উদ্ধৃতিটির নিহিতার্থ স্পষ্ট করাে।
উত্তরঃ আমরা কেউ কারো মতো নই,প্রত্যেকের স্বভাব-চরিত্র আলাদা। সামাজিক পরিচয়ও ভিন্ন ভিন্ন। তাই মানুষের মধ্যে মনোমালিন্য ভেদাভেদ থাকাটাই স্বাভাবিক তাই বলে বাড়াবাড়ি করাটা উচিত নয়। নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে, স্বার্থকে দূরে ঠেলে বন্ধুত্বের হাত বাড়ালেই জীবনে সহজেই সুখ খুঁজে পাওয়া যায।
 
২.৪ ‘মরণ এলে হঠাৎ দেখি/মরার চেয়ে বাঁচাই ভালাে।’— ব্যাখ্যা করাে।
উত্তরঃ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানুষ কখনো কখনো জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে মৃত্যু কামনা করে। সে মনে করে মৃত্যুতেই বুঝি সুখ দুঃখের অবসান। কিন্তু মৃত্যু যখন সামনে এসে দাঁড়ায়- তখন মানুষ আকুল হয়ে ভাবে, এ জীবন বড়ো সুন্দর– মানুষ আর প্রকৃতির মাঝে থাকার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা।
 
২.৫ ‘তাহারে বাদ দিয়েও দেখি / বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর।’— উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে জীবনের কোন্ সত্য প্রকাশ পেয়েছে ?
উত্তরঃ এই বিশ্বসংসারে সবকিছুই পরিবর্তনশীল কোন মানুষ আমাদের প্রিয় হলেও সে অপরিহার্য নয়। তাই প্রিয় মানুষটির মৃত্যুতে আমাদের দুঃখ হলেও বিশ্বসংসার কিন্তু তার স্বাভাবিক নিয়মেই চলে। জীবনের এই সত্যই প্রশ্নোদ্ধৃত পঙক্তি দুটির মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে।
 
২.৬ কীভাবে মনের সঙ্গে বােঝাপড়া করতে হবে ?
উত্তরঃ জীবনে চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে অনেক খারাপ থাকে। যদি ভেঙে যাওয়া স্বপ্নগুলো নিয়ে আমরা হাহাকার করতে থাকি, তাহলে কোনদিন এই জীবনে সুখী হতে পারব না। আমাদের নিজের মনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। না পাওয়ার কষ্ট ও হতাশা ঝেড়ে ফেলতে প্রয়োজনে কেঁদে মনের বোঝা হালকা করতে হবে। এভাবেই মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে।
 
২.৭ “দোহাই তবে এ কাৰ্যটা/যত শীঘ্র পারাে সারাে।”— কবি কোন্ কার্যের কথা বলেছেন ? সেই কার্যটি শীঘ্র সারতে হবে কেন ?
উত্তরঃ জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসাব করতে গিয়ে অনেক সময় পাওয়া সুখ টুকুও আমরা হারিয়ে ফেলি, আর না পাওয়ার হতাশায় ডঙবে কেঁদে মরি। ‘একার্যটা’ বলতে কবি হতাশার অন্ধকারে ডুবে সময় নষ্ট করার কথা বলেছেন।
 
২.৮ কখন আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানাে সম্ভব ?
উত্তরঃ জীবনে কেবল ব্যর্থতার হিসাব কষে চলা, অন্যের পাওয়ার সঙ্গে নিজের না পাওয়ার তুলনা করা, হতাশার অন্ধকারে জীবনকে ভরিয়ে তোলা। এসব অতিক্রম করে মনকে বুঝিয়ে কর্ম করে গেলে আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানো অর্থাৎ নিজের জীবনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলা সম্ভব।
 
২.৯ ‘ভুলে যা ভাই, কাহার সঙ্গে/কতটুকুন তফাত হলাে।’— এই উদ্ধৃতির মধ্যে জীবনের চলার ক্ষেত্রে কোন্ পথের ঠিকানা মেলে ?
উত্তরঃ জীবনে কার কত আছে, কে কত বেশি পেল, কে কতখানি এগিয়ে গেল, আমার কতটুকু আছে– এসব তুলনামূলক ভাবনা জীবনে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। এসব দুশ্চিন্তা ভুলে গিয়ে যে পথে জীবনে মঙ্গল সাধিত হবে, সে পথে এগিয়ে যেতে হবে। উদ্ধৃত প্রশ্নে সেই পথের সন্ধান মেলে।
 
২.১০ ‘অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি / এলে সুখের বন্দরেতে’— ‘ঝঞ্ঝা কাটিয়ে’ আসা বলতে কী বােঝাে ?
উত্তরঃ জীবনে চলার পথে হাজারও বাধা-বিপত্তির সৃষ্টি হয়। তবুও সেইসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। বাধাবিঘ্ন, দুঃখ-যন্ত্রণায় কাতর হলে মন দুর্বল হয়ে পড়ে, লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। দুঃখকে অতিক্রম করেই সুখের সন্ধান মেলে। জীবনে চলার পথে বাধাবিঘ্নরূপ কাঁটা সরিয়ে সাফল্যের প্রকৃত আনন্দ পাওয়া যায়। সাফল্য লাভের পথে দুঃখ-যন্ত্রণা, ব্যথা-বেদনা-সহ সমস্ত বিরুদ্ধ পরিস্থিতিকে জয় করাকেই ‘ঝঞ্ঝা কাটিয়ে আসা’ বলে উপলদ্ধি করা যায় ।
 
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে:                                                              ৩.১ ‘ভালাে মন্দ যাহাই আসুক / সত্যেরে লও সহজে।’— তুমি কি কবির সঙ্গে একমত ? জীবনে চলার পথে নানা বাধাকে তুমি কীভাবে অতিক্রম করতে চাও ?         
 
উত্তরঃ আমি কবির এই কথার সঙ্গে সহমত পােষণ করি।                                                                                           
  » আমি বিশ্বাস করি, জীবনে কখনও নিরবচ্ছিন্ন সুখ যেমন মেলে না ঠিক তেমনই দুঃখও দীর্ঘস্থায়ী হয়। পালা করে একটির পর অন্যটি আসে। তাই সুখে যেমন অতি উচ্ছ্বসিত হতে নেই, তেমনই দুঃখেও ভেঙে পড়তে নেই— দুর্বল হতে নেই। আর এই পরিস্থিতি যে মানিয়ে নিতে পারে, সেই জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে পারে। জীবনে চলার পথে যেসব বাধা আসবে সেগুলিকে আমি পরিস্থিতি অনুযায়ী অতিক্রম করার চেষ্টা করব। কারণ, জীবন কখনই সহজ পথে প্রবাহিত হয় না, প্রতি পদক্ষেপেই আসবে কোনাে না কোনাে প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু তাতে যদি আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি, তাহলে জীবনযুদ্ধে হেরে যাব। সেজন্য উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিয়ে জীবনের ময়দানে টিকে থাকতে হবে।                                                                                                    ৩.২ ‘মনেরে আজ কহ যে, / ভালাে মন্দ যাহাই আসুক। সত্যেরে লও সহজে।’— কবির মতাে তুমি কি কখনও মনের সঙ্গে কথা বললা ? সত্যকে মেনে নেওয়ার জন্য মনকে তুমি কীভাবে বােঝাবে— একটি নীচের শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করে মুক্ত দল ও পরিস্থিতি কল্পনা করে বুঝিয়ে লেখাে।                                                                                                                        উত্তরঃ কবি একটি গানে বলেছিলেন, ‘ও তুই মুখ ফুটে তাের মনের কথা একলা বলাে রে।’ কবির এই ভাবনার সাথে আমিও বিশ্বাসী। নিজের মনের সাথে আত্মকথনের অর্থ হল— কোথাও গিয়ে হয়ত নিজেকেই খুঁজে পাওয়া। কবির মতাে আমিও নিজের মনের সঙ্গে কথা বলি। আসলে মনের সঙ্গে এই কথা বলা একধরনের আত্মবিশ্লেষণের প্রক্রিয়া। নিজের ত্রুটিগুলিকে খুঁজে বের করে তাকে পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে যাচাই করে নেওয়া।                                                                  
     » জীবনে চলার পথে নানারকম বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই বলে থমকে গেলে চলে না। আমি বরাবরই পড়াশুনায় ভালাে পরীক্ষায় ভালােই নম্বর পাই। এই অবস্থায় যদি কোনােবার ফল খারাপ হয় কিংবা নম্বর কম পাই, তবে আমি ভেঙে পড়ব না। মনকে বােঝাব এটি সাময়িক। তারপর খুঁজে বের করব, কী কারণে আমার রেজাল্ট খারাপ হল। এ ব্যাপারে গুরুজনের পরামর্শ নেব। মনকে বােঝাব, আমি সাধ্যমতাে পরিশ্রম করিনি বলেই এমন হল। তা ছাড়া এটিই তাে জীবনের একমাত্র পরীক্ষা নয়। সুতরাং, হতাশ না-হয়ে পূর্ণ উদ্যমে আবার পড়ায় মন দেব। মনের সব হতাশা ঝেড়ে ফেলে আগামী পরীক্ষার জন্য নিজেকে আরও ভালােভাবে তৈরি করব। সব সময় মনে রাখব ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে’ —এই আপ্তবাক্যটি।
 
৩.৩ ‘তেমন করে হাত বাড়ালে / সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।’— তেমন করে কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও। এখানে কবি কী ধরনের সুখের ইঙ্গিত করেছেন লেখাে। 
 
উত্তরঃ ‘তেমন করে কথাটির সাধারণ অর্থ সেই ভাবে। অন্যভাবে বলা যায় আন্তরিকভাবে। আসলে কবি বলতে চেয়েছেন আন্তরিকতার সঙ্গে, মনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নারেখে যদি পারস্পরিক সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে অনেকটাই সুখ বা আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়।                                                                                              
    » কবি এখানে মানসিক সুখ-শান্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, মানসিক সুখই জীবনকে সহজ-সাবলীল-ছন্দময় করে তােলে। পার্থিব সুখ তথা ধন-দৌলত-অর্থ প্রধান নয়। আসল হল- মানসিক প্রশান্তি। এই মানসিক প্রশান্তি লাভেই প্রকৃত সুখ মেলে। পাওয়া যায় অনেকটা স্বস্তি। জগৎ ও জীবনকে পরম সুখের ও আনন্দের বলে মনে হয়। 
 
৪। রুদ্ধ দল চিহ্নিত করাে : বােঝাপড়া, কতকটা, সত্যেরে, পাঁজরগুলাে, বিশ্বভুবন,অশুসাগর।
 
» বোঝাপড়া = বাে – ঝা -প – ড়া (মুক্তদল— বাে, ঝা, প, ড়া, (৪টি), রুদ্ধদল— শূন্য (০)]।    
 
» কতকটা = ক – তক্ – টা [ মুক্তদল— ক, টা, (২ টি), রুদ্ধদল— তক (১টি)]।                                     
 
» সত্যেরে = সত্ – তে – রে [ মুক্তদল— তে, রে (২ টি), রুদ্ধদল— সত্ (১টি) ] ।                          
 
» পাঁজরগুলাে = পাঁ – জর – গু – লাে (মুক্তদল— পাঁ, গু, লাে (৩টি), রুদ্ধদল— জর (১টি)]।                                          
 
 »বিশ্বভুবন = বিশ্ – শ (ব) – ভু – বন্ [ মুক্তদলশ— শ (ব), ভু (২ টি), রুদ্ধদল— বিশ, বন্ (২ টি)] ।                                
 
» অশ্রুসাগর= অশ্ – রু – সা – গর (মুক্তদল— রু, সা (২ টি), রুদ্ধদল— অশ, গর (২ টি)]  
 
৫। নীচের প্রতিটি শব্দের তিনটি করে সমার্থক শব্দ লেখাে : মন , জখম, ঝঞ্ঝা , ঝগড়া, সামান্য, শঙ্কা, আকাশ।
 
» মন = হৃদয়, হিয়া, চিত্ত । » জখম = ক্ষত, আঘাত, চোট। » ঝঞ্ঝা = ঝড়, বাদল, ঝটিকা। » ঝগড়া = কলহ, বিবাদ, বচসা। » সামান্য = তুচ্ছ, অল্প, কম। » শঙ্কা = ভয়, আশঙ্কা, সংশয়। » আকাশ = গগন, অম্বর, শূন্য।
 
৬। নীচের প্রতিটি শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ দিয়ে শব্দজোড় তৈরি করে বাক্য রচনা করাে : আঁধার, সত্য, দোষ, আকাশ, সুখ।
 
» আঁধার (আলাে) = আলাে-আঁধার > ঘন জঙ্গলে চেয়েছেন আন্তরিকতার সঙ্গে, মনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নারেখে যদি পারস্পরিক সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া সূর্যের আলাে পড়ে যেন আলাে-আঁধারের খেলা চলছে। 
 
» সত্য (মিথ্যা) =সত্য-মিথ্যা > সত্য-মিথ্যা যাচাই করে তারপর যা করার করব। 
 
» দোষ (গুণ) = দোষ-গুণ > দোষ-গুণ নিয়েই মানুষ তার জীবন সহজ সাবলীল ছন্দময় করে তােলে।  
 
» আকাশ (পাতাল) = আকাশ-পাতাল > যা হয় যাবে, অত সব আকাশ-পাতাল ভেবে লাভ নেই।                                
 
» সুখ (দুঃখ) = সুখ-দুঃখ > জীবনে সুখ-দুঃখ পালাক্রমে আসে, তাই সব অবস্থাতেই তৈরি থাকতে হবে।

This Post Has One Comment

Leave a Reply