বঙ্গ আমার ! জননী আমার ! কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর ষষ্ঠ শ্রেণি বাংলা | ‘Bongo Amar Jononi Amar’ Question Answer Class 6 Bengali wbbse

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

সাহিত্য মেলা
ষষ্ঠ শ্রেণি বাংলা

ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বঙ্গ আমার ! জননী আমার ! কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর | Class 6 Bengali ‘Bongo Amar Jononi Amar’ Kobitar Question Answer wbbse

ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বঙ্গ আমার ! জননী আমার ! লেখক পরিচিতি, বিষয় সংক্ষেপ, নামকরণ, হাতে কলমে প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Class 6 Bengali ‘Bongo Amar Jononi Amar’ Kobitar Question Answer wbbse

1. ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

2. ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

3. ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

4. ষষ্ঠ শ্রেণির ভূগোল সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

5. ষষ্ঠ শ্রেণির পরিবেশ ও বিজ্ঞান সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

6. ষষ্ঠ শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন Click Here

ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বঙ্গ আমার ! জননী আমার ! কবিতার কবি পরিচিতি, অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর, বিষয় সংক্ষেপ, নামকরণ, হাতে কলমে প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Class 6 Bengali ‘Bongo Amar Jononi Amar’ Kobitar Question Answer wbbse

বঙ্গ আমার ! জননী আমার !
—দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

বঙ্গ আমার ! জননী আমার ! ধাত্রী আমার ! আমার দেশ !
কেন-গো মা তোর শুষ্ক নয়ন, কেন-গো মা তোর রুক্ষ কেশ ?
কেন-গো মা তোর ধুলায় আসন, কেন-গো মা তোর মলিন বেশ ?
ত্রিংশ কোটি সন্তান যার ডাকে উচ্চে— ‘আমার দেশ’

উদিল যেখানে বুদ্ধ-আত্মা মুক্ত করিতে মোক্ষ দ্বার,
আজিও জুড়িয়া অর্ধ-জগৎ ভক্তি-প্রণত চরণে যাঁর;
অশোক যাহার কীর্তি ছাইল গান্ধার হতে জলধি শেষ,
তুই কি না মা গো তাদের জননী, তুই কি না মা গো তাদের দেশ !

একদা যাহার বিজয়-সেনানি হেলায় লঙ্কা করিল জয়,
একদা যাহার অর্ণব-পোত ভ্রমিল ভারত- সাগরময়;
সন্তান যার তিব্বত-চীন-জাপানে গঠিল উপনিবেশ,
তার কিনা এই ধূলায় আসন, তার কিনা এই ছিন্ন বেশ !

উঠিল যেখানে মুরজ-মন্ত্রে নিমাই-কণ্ঠে মধুর তান,
ন্যায়ের বিধান দিল রঘুমণি, চন্ডীদাস যেথা গাহিল গান।
যুদ্ধ করিল প্রতাপাদিত্য, তুই তো মা সেই ধন্য দেশ !
ধন্য আমরা, যদি এ শিরায় থাকে তাদের রক্ত লেশ।

যদিও মা তোর দিব্য আলোকে ঘিরে আছে আজ আঁধার ঘোর,
কেটে যাবে মেঘ, নবীন গরিমা ভাতিবে আবার ললাটে তোর,
আমরা ঘুচাব মা তোর দৈন্য; মানুষ আমরা; নহি তো মেষ ?
দেবী আমার ! সাধনা আমার ! স্বর্গ আমার ! আমার দেশ !

কিসের দুঃখ, কিসের দৈন্য, কিসের লজ্জা, কিসের ক্লেশ।
ত্রিংশ কোটি মিলিত-কন্ঠে ডাকে যখন— ‘আমার দেশ।’

শব্দার্থ : ধাত্রী– ধারণকারিণী। ত্রিংশ– ৩০ সংখ্যক। মোক্ষ– মুক্তি, নির্বাণ। ছাইল– আচ্ছাদন করা। গান্ধার– (কান্দাহারের প্রাচীন নাম), স্বরগ্রামের তৃতীয় স্বর ‘গা’, সংগীতের রাগ বিশেষ। সেনানি– সেনাপতি, সৈন্যদল। অর্ণব পোত– সমুদ্রগামী জাহাজ। ছিন্ন– ছিঁড়ে গেছে এমন। মুরজ– বাদ্যযন্ত্রবিশেষ। গরিমা– গৌরব, মাহাত্ম্য। ভাতিবে– প্রকাশিত হবে, দীপ্তি পাবে। দৈন্য– অভাব। ক্লেশ– কষ্ট, যন্ত্রণা।

কবি পরিচিতিঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩) – বাংলা সাহিত্যের নামকরা নাট্যকার হলেও দ্বিজেন্দ্রলালের প্রথম পরিচয় কবি হিসাবে। মাত্র উনিশ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ আৰ্য্যগাথা (১ম ভাগ)। কবি রচিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হলো- আর্য্যগাথা (২য় ভাগ), মন্ত্র, আষাঢ়ে, আলেখ্য, ত্রিবেণী ইত্যাদি। দ্বিজেন্দ্রলালের কবি প্রতিভার প্রশংসা করেছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। দ্বিজেন্দ্রলাল ছন্দ নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, তিনি মানুষের মুখের ভাষাকে ছন্দে প্রয়োগ করেছেন। তিনি অনেক হাসির কবিতা রচনা করেছেন। ‘দ্বিজেন্দ্রগীতি’ হিসেবে পরিচিত তাঁর গানগুলি আজও বাঙালিজীবনে সমাদৃত। কবি দ্বিজেন্দ্রলালের কবিতার মূল সুর ছিল স্বদেশপ্রেম।

সারমর্মঃ কবি দ্বিজেন্দ্রলাল আলোচ্য কবিতায় পরাধীন বঙ্গমাতার বন্দনা করেছেন। পাশাপাশি ভারতমাতার প্রতিও তিনি অন্তরের শ্রদ্ধাবোধ তুলে ধরেছেন। কবি পরাধীন ভারতের নাগরিক। তাই তাঁর চোখে দেশমাতৃকার আসন বর্তমানে যেন ধুলায় পাতা; মায়ের ‘বেশ’ ‘মলিন’, ‘নয়ন’ ‘শুষ্ক’। তিনি আশাবাদী একদিন-না-একদিন এই ঘোর অন্ধকার কেটে যাবে, নতুন গৌরবে সেজে উঠবেন দেশমাতা। আর এই দুর্দশা ঘোচাবে তাঁরই ত্রিশ কোটি সন্তানেরা, কারণ তিনিই সকলের ‘দেবী’, তাদের ‘সাধনা’ ও ‘স্বর্গ’। সমস্ত দুঃখ, দৈন্য, লজ্জা, ক্লেশ ভুলে প্রত্যেকে সমবেত ভাবে ‘আমার দেশ’ বলে ডেকে উঠবে।

নামকরণঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় আলোচ্য কবিতায় বঙ্গমাতা ও দেশমাতা ভারতবর্ষের বন্দনা করেছেন। তিনি দেখেছেন, পরাধীন ভারতের শ্রীহীন রূপ, চেয়েছেন তাঁর হারানো গৌরব পুনরায় উদ্ধার করে আনতে। তাই আলোচ্য কবিতার মূল সুর ‘দেশাত্মবোধ’। দেশকে আপন ভেবে, নিজের মনে করে তাঁকে স্বাধীনতা দানই সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত। এই দৃষ্টিতে দেখলে কবিতার নাম ‘বঙ্গ আমার! জননী আমার! সার্থক ও যথার্থ।

অতিরিক্ত বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ কবিতা ষষ্ঠ শ্রেণি বাংলা | Extra Question Answer ‘Bongo Amar Jononi Amar’ Kobita Class 6 Bengali wbbse

• বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর :

১. বঙ্গ আমার জননী আমার কবিতাটির কবি হলেন—
(ক) মধুসূদন দত্ত (খ) দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (গ) কাজী নজরুল ইসলাম (ঘ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উত্তরঃ (খ) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।

২. সাহিত্য জগতে কবি দ্বিজেন্দ্রলালের প্রথম পরিচয়— (ক) কবি হিসেবে (খ) লেখক হিসেবে (গ) গল্পকার হিসেবে (ঘ) নাট্যকার হিসেবে

উত্তরঃ (ঘ) নাট্যকার হিসেবে।

৩. কবি দ্বিজেন্দ্রলালের কবিতার মূল সুর ছিল— (ক) স্বদেশপ্রেম (খ) কাব্য প্রেম (গ) সাহিত্য প্রেম (ঘ) মানব প্রেম

উত্তরঃ (ক) স্বদেশপ্রেম।

৪. দ্বিজেন্দ্রলালের কবি প্রতিভা প্রশংসা করেছেন— (ক) রবীন্দ্রনাথ (খ) বিদ্যাসাগর (গ) বঙ্কিমচন্দ্র (ঘ) কাজী নজরুল

উত্তরঃ (ক) রবীন্দ্রনাথ।

৫. কবি বাংলাকে সম্বোধন করেছেন— (ক) মা বলে (খ) জননী বলে (গ) মাতা বলে (ঘ) জন্মভূমি বলে

উত্তরঃ (খ) জননী বলে।

৬. ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ কবিতাটি লেখার সময় বাংলার জনসংখ্যা ছিল— (ক) ২৮ কোটি (খ) ২৯ কোটি (গ) ৩০ কোটি (ঘ) ৩১ কোটি

উত্তরঃ (গ) ৩০ কোটি।

৭. বঙ্গ আমার জননী আমার কবিতায় কার কীর্তির কথা উল্লেখ আছে— (ক) সম্রাট অশোক (খ) সম্রাট আকবর (গ) রাজা প্রতাপাদিত্য (ঘ) সিরাজউদ্দৌলা

উত্তরঃ (ক) সম্রাট অশোক।

৮. ‘উঠিল যেখানে মুরজ মন্ত্র’- এখানে মুরজ শব্দের অর্থ হলো—(ক) মন্ত্র বিশেষ (খ) বাদ্যযন্ত্রবিশেষ (গ) গান বিশেষ (ঘ) নৃত্য বিশেষ

উত্তরঃ (খ) বাদ্যযন্ত্রবিশেষ।

হাতে কলমে’র প্রশ্নোত্তর ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ ষষ্ঠ শ্রেণি বাংলা | ‘Bongo Amar Jononi Amar’ Kobitar Question Answer Class 6 Bengali wbbse

১.১ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তরঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত দুই কাব্যগ্রন্থের নাম হল—‘মন্ত্র’, ‘আষাঢ়ে’।

১.২ কবি দ্বিজেন্দ্রলালের কবিতার মূল সুর কী ছিল ?

উত্তরঃ কবি দ্বিজেন্দ্রলালের কবিতার মূল সুর ছিল স্বদেশ প্রেম।

২. নীচের বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণে ও বিশেষণগুলিকে বিশেষ্যে রপান্তরিত করো :

উত্তরঃ

বিশেষ্য বিশেষণ
মলিনতা মনিল
মাধুর্য মধুর
দৈন্য দীন
প্রণাম প্ৰণত
আসন আসীন

৩. নীচে কতগুলি উপসর্গযুক্ত শব্দ দেওয়া হল। শব্দগুলি থেকে উপসর্গ আলাদা করে দেখাও : উপনিবেশ, অশোক, আলোক, প্রণত৷

উত্তরঃ

উপসর্গ শব্দ
উপ নিবেশ
শোক
লোক
প্র ণত

৪. নীচের বাক্যগুলির উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ ভাগ করে দেখাও :

৪.১ কেন গো মা তোর মলিন বেশ?

৪.২ অশোক যাঁহার কীর্তি ছাইল গান্ধার হতে জলধি শেষ।

৪.৩ একাকী যাহার বিজয়-সেনানী হেলায় লঙ্কা করিল জয়।

৪.৪ ন্যায়ের বিধান দিল রঘুমণি।

৪.৫ নবীন গরিমা ভাতিবে আবার ললাটে তোর।

উত্তরঃ

উদ্দেশ্য বিধেয়
মা কেন গো তার মলিন বেশ
অশোক যাঁহার কীর্তি ছাইল গান্ধার হতে জলধি শেষ।
একাকী যাহার বিজয় সেনানী হেলায় লঙ্কা করিল জয়।
রঘুমণি ন্যায়ের বিধান দিল
নবীন গরিমা ভাতিবে আবার ললাটে তোর।

৫. নীচের বিশেষ্য ও সর্বনাম শব্দগুলি নির্দেশমতো লেখো :

(উদাহরণ : মা + নিমিত্ত + একবচন = মায়ের জন্য)

৫.১ আমি + সম্বন্ধপদ + বহুবচন = আমাদের।

৫.২ আমি + কর্তৃকারক + বহুবচন = আমরা।

৫.৩ তুই + সম্বন্ধপদ + একবচন = তোর।

৫.৪ যিনি + সম্বন্ধপদ + একবচন= যাঁর।

৬. এইরকম অর্থযুক্ত শব্দ কবিতা থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো : গৌরব, সুর, মুক্তি, নতুন, জলধি।

উত্তরঃ গৌরব— গরিমা। সুর— তাল। মুক্তি— মোক্ষ। জলধি— সাগর।
নতুন— নবীন।

৭. নিম্নলিখিত প্রত্যেক ব্যক্তি ও প্রতিটি স্থান সম্পর্কে দু চারটি বাক্য লেখো : বুদ্ধ, রঘুমণি, নিমাই, চণ্ডীদাস।

উত্তরঃ

বুদ্ধ : ভগবান বুদ্ধদেব নেপালের কপিলাবস্তু নগরে শাক্য বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্য নাম ছিল সিদ্ধার্থ। সাধনায় সিদ্ধিলাভ করার পর তাঁর নাম হয় বুদ্ধদেব। তাঁর প্রচারিত ধর্ম বৌদ্ধধর্ম নামে পরিচিত।

রঘুমণি : রঘুমণির পুরোনাম রঘুনাথ শিরোমণি। তিনি নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ন্যায়শাস্ত্রে সুপন্ডিত মানুষ ছিলেন। তিনি মিথিলার বিখ্যাত পণ্ডিত পদ্মধর মিশ্রকে ন্যায়যুদ্ধে পরাস্ত করেন। তিনি চৈতন্য দেবের সমসাময়িক ছিলেন।

নিমাই : শ্রীচৈতন্যদেবের আসল নাম ছিল নিমাই। তিনি নদিয়ার নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন জগন্নাথ মিশ্র ও শচীদেবীর সন্তান। ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব চৈতন্যদেব বৈঘ্নবধর্ম প্রচারক হিসেবে রাধাকৃষ্ণের পদাবলিকে সারা ভারতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বৈষুব ধর্মাবলম্বীরা তাঁকে প্রেমের ঠাকুর হিসেবে শ্রদ্ধাভক্তি করেন।

চণ্ডীদাস : বাংলা পদাবলি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি চণ্ডীদাস। আদি মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচয়িতা হিসেবে বড়ু চণ্ডীদাসের নাম পাই। পদাবলি সাহিত্যে একাধিক চণ্ডীদাসের পদ পাওয়া যায়। রাধাকৃষ্ণের | প্রেমলীলা বিষয়ক তাঁর পদগুলি আজও সকলকে মুগ্ধ করে।

৮. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো :

৮.১ কবি দেশকে কী কী নামে সম্বোধন করেছেন?

উত্তরঃ কবি দেশকে মা, বঙ্গ, জননী, দেবী, ধাত্রী, সাধনা, স্বর্গ নামে সম্বোধন করেছেন।

৮.২ ‘কেন গো মা তোর মলিন বেশ’ ‘মা’ বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন ? তাকে মা বলা হয়েছে কেন ?

উত্তরঃ ‘বঙ্গ আমার! জননী আমার!’ কবিতায় কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় মা বলতে তাঁর জন্মভূমি ‘বঙ্গ’ তথা ভারতবর্ষকে বুঝিয়েছেন।

কবি ভারতবর্ষের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন। জন্মভূমি মায়ের সন্তান। মা যেমন তার সন্তানকে লালন পালন করে তাকে বড়ো করে তোলে তেমনি কবি জন্মভূমির বুকে লালিত পালিত হয়েছেন। কবি জন্মভূমি মায়ের শীতল স্পর্শ পেয়েছেন। এই কারণে জন্মভূমিকে ‘মা’ বলা হয়েছে।

৮.৩ ‘মা’ এর বেশ মলিন ও কেশ রুক্ষ কেন ?

উত্তরঃ ‘মা’ এর বেশ মলিন ও কেশ রুক্ষ কারণ বিদেশি ইংরেজ শাসনে ভারতমাতার আসনের গৌরব ধূলিসাৎ।

পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনে দেশমাতা লাঞ্ছিত ও অপমানিত। মায়ের লাঞ্ছনা ও অপমান কবিও বেদনাবোধ করছেন। ভারতমাতার ত্রিশকোটি সন্তান দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মোচন করতে পারেনি। তাই ভারতমাতার মলিন বেশ ও রুক্ষকেশ।

৮.৪ অশোক কোথায় কোথায় তাঁর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন?

উত্তরঃ সম্রাট অশোক মগধের রাজা ছিলেন। কলিঙ্গ জয়ের পর অশোক যুদ্ধবিজয় পরিত্যাগ করে ধর্মবিজয়ে মনোনিবেশ করেন। তিনি সুদূর সিংহলে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রাকে পাঠান। সুদূর গান্ধার থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত এমনকি ভারতের বাইরেও অশোক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।

৮.৫ ‘অর্ধ-জগৎ ভক্তি প্ৰণত চরণে যাঁর’—‘অর্ধ-জগৎ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? কার চরণে তা প্রণত হয়েছে?

উত্তরঃ অর্ধ-জগৎ বলতে এখানে কবি অর্ধেক পৃথিবীকে বোঝাতে চেয়েছেন।

ভগবান বুদ্ধদেব তাঁর শান্তি ও মুক্তির বাণী সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বৌদ্ধধর্ম তৎকালীন সময়ে পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভগবান বুদ্ধের চরণে অর্ধেক পৃথিবী প্রণত হয়েছিল।

৮.৭ ‘যুদ্ধ করিল প্রতাপাদিত্য’—প্রতাপাদিত্য কে ছিলেন ? তিনি কাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন ?

উত্তরঃ বাংলাদেশের বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম ছিলেন প্রতাপাদিত্য। তিনি যশোহরের যথেষ্ট শ্রীবৃদ্ধি ঘটান এবং অনেক জনহিতকর কাজ করেন।

তিনি দিল্লির মোগল সম্রাট আকবরের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। প্রথমে আকবরের পাঠানো সেনাপতি তাঁর কাছে পরাজিত হয়ে ফিরে যান। তিনি মোগল সম্রাটকে কর দেওয়া বন্ধ করে দেন। মোগল সেনাপতি মানসিংহের হাতে তিনি পরাজিত হন এবং বন্দি অবস্থায় দিল্লি যাত্রাকালে পথে বারাণসীতে তাঁর মৃত্যু হয়।

৮.৮ ‘ধন্য আমরা’—‘আমরা’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? আমরা কখন নিজেদের ধন্য বলে মনে করতে পারি ?

উত্তরঃ ‘আমরা’ বলতে এখানে কবি বলতে চেয়েছেন যারা বঙ্গভূমিতে বসবাস করছে সেই বঙ্গমাতার সন্তানদের বঙ্গমাতা তথা ভারতমাতার হাতে পরাধীনতার শৃঙ্খল। বিদেশি শাসন মুক্ত স্বাধীন ভারত গঠনের দায়িত্ব তাঁর সন্তানদের। আমরা যদি সংবদ্ধ হয়ে ভারতমাতার সেই পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করতে পারি তাহলে জন্মভূমি স্বমহিমায় গৌরবের আসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। তখন আমরা নিজেদেরকে ধন্য বলে মনে করতে পারব।

৮.৯ নবীন গরিমা কীভাবে ললাটে ফুটে উঠবে ?

উত্তরঃ কবি যখন কবিতাটি রচনা করেন তখন ব্রিটিশ শাসকরা ভারত শাসন করছিলেন। ভারতমাতার হাতে পড়েছিল। পরাধীনতার শৃঙ্খল। ভারতমাতা লাঞ্ছিত ও অপমানিত। ভারতবর্ষ থেকে বিদেশি ইংরেজ শাসককে তাড়াতে পারলে ভারত জননীর শৃঙ্খল মোচন হবে। ভারতজননী তথা বঙ্গজননী নবীন গৌরবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এবং তার ললাটে স্বাধীনতার সূর্য উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবে।

৮.১০ আমরা কীভাবে বঙ্গজননীর দুঃখদৈন্য, লজ্জা দূর করতে পারি ?

উত্তরঃ আমরা ভারত তথা বঙ্গজননীর সন্তান। কবিতাটি যখন লেখা হয় তখন ভারতের জনসংখ্যা ছিল ত্রিশ কোটি। পরাধীনতার গ্লানি, অপমান ভারতমাতাকে মলিনবেশ, রুক্ষ্ম চুলে পরিণত করেছে। তাঁর সমস্ত গৌরব ধুলিসাৎ। কবি মনে করেন ত্রিশ কোটি ভারতবাসী যদি দেশমাতার পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচনের জন্য সম্মিলিতভাবে শপথ গ্রহণ করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাহলে অবশ্যই বিদেশি শাসক ভারতের বুক থেকে বিদায় নিতে বাধ্য। এইভাবেই আমরা বঙ্গজননীর দুঃখদৈন্য, লজ্জা দূর করতে পারি।

৯. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর দাও :

৯.১ ‘যদিও মা তোর দিব্য আলোকে ঘিরে আছে আজ আঁধার ঘোর’—কবির কেন মনে হয়েছে যে বঙ্গ জননীকে আঁধার ঘিরে আছে ?

উত্তরঃ কবি যখন এই কবিতাটি রচনা করেন তখন ভারতবর্ষ পরাধীনতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। এখানে পরাধীনতাবে আঁধারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ভারত তথা বঙ্গমাতা পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। বঙ্গ জননীর সৌরভ ধুলোয় লুণ্ঠিত পরাধীনতার গ্লানি তিনি বহন করে চলেছেন। যদিও কবি আশাবাদী, তিনি মনে করেন ভারতবর্ষ আবার স্বাধীনতার সূর্য লাভ করবে। পরাধীন অবস্থাকালীন পরিস্থিতিকে কবি আঁধারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

Leave a Reply