ছোটদের পথের পাঁচালী তৃতীয় ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন উত্তর (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) অষ্টম শ্রেণি বাংলা | Chotoder Pother Panchali 3rd Unit Test Question Answer Class 8 Bengali wbbse
ছোটদের পথের পাঁচালী তৃতীয় ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন উত্তর (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) অষ্টম শ্রেণি বাংলা | Chotoder Pother Panchali 3rd Unit Test Question Answer Class 8 Bengali wbbse
ছোটদের পথের পাঁচালী ঊনিশ থেকে সাতাশ পরিচ্ছেদের প্রশ্নোত্তর অষ্টম শ্রেণির বাংলা | Chotoder Pother Panchali 3rd Unit Test Question Answer Class 8 Bengali wbbse
1. অষ্টম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
2. অষ্টম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন Click Here
ছোটদের পথের পাঁচালী ঊনিশ থেকে সাতাশ পরিচ্ছেদের প্রশ্নোত্তর অষ্টম শ্রেণির বাংলা | Chotoder Pother Panchali 3rd Unit Test Question Answer Class 8 Bengali wbbse
(১৯) ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ ৭৮ পৃষ্ঠা
বিষয় সংক্ষেপ : যাত্রা দেখা—
অপু বারোয়ারিতলায় যাত্রা শুনতে গিয়ে তার সঙ্গে আলাপ হয় যাত্রাদলের কিশোর অভিনেতা অজয়ের সঙ্গে। সেই সুবাদে অজয় অপুদের বাড়ি দুপুরে খেতে এলে তাদের বন্ধুত্ব আরো গভীর হয়। বাবা-মা হারা অজয়ের প্রতি সর্বজয়ার করুণা জন্মায়। নদীর ধারে বেড়াতে গিয়ে অপুর মিষ্টি গলার গান শুনে অজয় অবাক হয়ে যায় এবং তাকে যাত্রাদলে যোগ দিতে বলে। যাত্রা শেষের পর অজয়ের চলে যাওয়ার সময় এলে অপুর মন দুঃখে ভরে ওঠে। অজয়ও কৃতজ্ঞতায় দুর্গাদিদির বিয়ের জন্য পাঁচ টাকা দিতে গেলে সর্বজয়া তাকে অনেক বুঝিয়ে তাকে নিরস্ত করে। অপুর সঙ্গে অজয়ের ভাগ্যের তুলনা করে সর্বজয়ার মন করুণায় ভরে যায়।
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-১
১. অপুদের গ্রামে কোন্ যাত্রার দল এসেছিল ?
উত্তরঃ অপুদের গ্রামে নীলমণি হাজরার যাত্রার দল এসেছিল।
২. খোকা বেশ দেখতে পাচ্ছ তো-কে কাকে কী দেখতে পাওয়ার কথা বলেছে ?
উত্তরঃ পিতা হরিহর পুত্র অপুকে যাত্রা ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছে কিনা জিজ্ঞাসা করেছে।
৩. এমন তো সে কখনো দেখে নাই- সে কে ? সে কী দেখেনি ?
উত্তরঃ অপু বারোয়ারিতলায় অনুষ্ঠিত নীলমণি হাজরার দলের যাত্রার মতো পালাগান কখনও দেখেনি।
৪. অপুর সাথে কার ভাব হয়েছিল ?
উত্তরঃ নীলমণি হাজরার যাত্রাদলে অজয় নামের যে ছেলেটা রাজপুত্র সাজত তার অপুর ভাব হয়েছিল।
৫. যাত্রাদলে যোগ দিলে কত মাইনে পাওয়া যাবে বলে অজয় অপুকে জানিয়েছিল ?
উত্তরঃ যাত্রাদলে যোগ দিলে অপু পনেরো টাকা মাইনে পেত।
৬. অপুর জীবনের ধ্রুব লক্ষ্য কী ছিল ?
উত্তরঃ জরির মুকুট পরে সে যাত্রাদলের সেনাপতি সেজে তলোয়ার ঝোলাবে, যুদ্ধ করবে। বড়ো হলে সে যাত্রার দলে যাবেই—এটাই ছিল তার জীবনের ধ্রুব লক্ষ্য।
৭. প্রথম সাক্ষাতে অপু অজয়কে কী খাইয়েছিল ?
উত্তরঃ অজয়কে অপু প্রথম সাক্ষাতে পান খাইয়েছিল।
৭. পানের দোকানে গিয়ে অপু কী দেখে আশ্চর্য হয় ?
উত্তরঃ পানের দোকানে গিয়ে সেনাপতি বিচিত্রকেতু হাতিয়ারবদ্ধ অবস্থায় সিগারেট কিনে সোঁ সোঁ টান দিচ্ছিল।
৯. অপু অজয়কে কোথায় প্রথম গান শুনিয়েছিল ?
উত্তরঃ নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের নদীর ধারে বাঁশঝোপের আড়ালে বসে অপু অজয়কে প্রথম গান শুনিয়েছিল।
১০. অপু অজয়কে কোথায় প্রথম কোন গান শুনিয়েছিল ?
উত্তরঃ নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের নদীর ধারে বাঁশঝোপের আড়ালে বসে অপু অজয়ের অনুরোধে “শ্রীচরণে ভার একবার গা তোলো হে অনন্ত” গানটি শুনিয়েছিল।
১১. যাত্রাদলে কাজ করলে অপুকে কী পার্ট দেওয়া হবে বলে অজয় মনে করেছিল ?
উত্তরঃ যাত্রাদলে কাজ করলে অপুকে সখী বা বালকের পার্ট দেওয়া হবে বলে অজয় মনে করেছিল।
১২. অপু কীসের পার্ট করবে ভেবেছিল?
উত্তরঃ অপু সেনাপতির পার্ট করবে ভেবেছিল।
১৩. রাজপুত্র অজয় কোথায় দিদি ইন্দুলেখার মৃতদেহ খুঁজে পায় ?
উত্তরঃ নদীর ধারে ইন্দুলেখার মৃতদেহ খুঁজে পায়।
১৪. যাত্রাপালায় রাজপুত্র ও রাজকুমারীর নাম কী ছিল ?
উত্তরঃ রাজপুত্র অজয় ও রাজকুমারী ইন্দুলেখা।
১৫. ইন্দুলেখার কীভাবে মৃত্যু হয় ?
উত্তরঃ ইন্দুলেখা বিষফল খেয়ে মারা যায়।
১৬. কলিঙ্গরাজের সঙ্গে কার তলোয়ার যুদ্ধ হয় ?
উত্তরঃ বিচিত্রকেতুর।
১৭. রাজপুত্র অজয় দেখতে কেমন ?
উত্তরঃ রাজপুত্র অজয় টুকটুকে বেশ দেখতে। গানের গলা বড়ো সুন্দর।
১৮. অপু ইন্দুলেখার সঙ্গে কার মিল খুঁজে পেয়েছিল ?
উত্তরঃ অপু ইন্দুলেখার সঙ্গে তার দিদি দুর্গার মিল খুঁজে পেয়েছিল।
১৯. অপু কখন যাত্রা দেখে বাড়ি যাবে ?
উত্তরঃ শেষ রাত্রে যাত্রা ভাঙার পর অপু বাড়ি যাবে।
২০. রাজপুত্র অজয়ের বোনের নাম কী ?
উত্তরঃ রাজপুত্র অজয়ের বোনের নাম ইন্দুলেখা।
২১. অজয়ের বাড়িতে কে কে আছে ?
উত্তরঃ অজয়ের বাড়িতে কেউ নেই। অজয়ের এক মাসি ছিল, যে তাকে মানুষ করেছিল, সেও মারা গিয়েছে।
২২. অজয় কোন্ পালাতে ‘নিয়তি’ সাজত?
উত্তরঃ অজয় ‘পরশুরামের দর্প-সংহার’ পালাতে নিয়তি সাজত।
২৩. যাবার সময় অজয় কী বলে গিয়েছিল ?
উত্তরঃ যাবার সময় অজয় বারবার বলে গিয়েছিল দিদির বিয়ের সময় তাকে যেন পত্র দেওয়া হয়।
২৪. অজয় অপুর বাড়িতে টাকা দিতে চেয়েছিল কেন ?
উত্তরঃ অজয়ের কেউ ছিল না, সে অপুর বাড়ি এসে খুবই আদর যত্ন পেয়েছিল, যা সে কখন পায়নি। দুর্গাকে সে দিদির মতো ভেবেছিল। তাই বিদায় নেবার সময় দিদিকে একটা ভালো কাপড় কিনে দেবার জন্য পাঁচ টাকা দিতে চেয়েছিল।
ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৩)
১. অপুর যাত্রা দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তরঃ যাত্রার দিন সন্ধে থেকেই অপু যাত্রার আসরে গিয়ে বসে। যাত্রা আরম্ভ হলে পুরো জগৎসংসার অপুর কাছে মুছে যায়। শুধুমাত্র যাত্রার মঞ্চটি ছাড়া সে আর কিছু দেখতে পায় না। কোনো দিকেই তার খেয়াল থাকে না। বেহালার সুর, রাজা, মন্ত্রীর আনাগোনা তার মনকে মাতিয়ে দেয়। বাবা দেখল না বলে অপু আপশোস করে। পরে বাবা এসেছে দেখে সে খুশি হয়। রাজার কার্যকলাপ, মন্ত্রীর চক্রান্ত, রাজপুত্র অজয়, রাজকুমারী ইন্দুলেখার কষ্ট, ইন্দুলেখার মৃত্যুতে অজয়ের হাহাকার অপুকে মুগ্ধ করে। যাত্রার চরিত্রদের দুঃখে অপুর মনও ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
২. “তাহার মা দুজনকে এক জায়গায় খাইতে দিয়া অজয়ের পরিচয় লইতে বসিল।”– অপুর মায়ের নাম কী ? সে অজয়ের কোন্ পরিচয় পেয়েছিল ? ১+২
উত্তরঃ অপুর মায়ের নাম সর্বজয়া।
সর্বজয়া জেনেছিল, অজয় ব্রাহ্মণের ছেলে। তার কেউ নেই। এক মাসি তাকে মানুষ করেছিল। কিন্তু সে মারা গেছে। প্রায় একবছর হল অজয় যাত্রার দলে কাজ করছে। অজয়ের মুখে এইসব কথা শুনে সর্বজয়া তার প্রতি অত্যন্ত স্নেহ অনুভব করে এবং যত্ন সহকারে তাকে খাওয়ায়।
৩. “অপু তাহাকে সঙ্গে করিয়া নদীর ধারের দিকে বেড়াইতে গেল।”- অপু কাকে সঙ্গে নিয়ে নদীর ধারে গেল? সে কী কী গান গেয়েছিল ? ১+২
উত্তরঃ অপু যাত্রার দলের অভিনেতা অজয়কে সঙ্গে নিয়ে গেল।
নদীর ধারে গিয়ে অজয় অপুকে গান গাইতে অনুরোধ করে। অপুর গান গেয়ে বাহাদুরি নিতে ইচ্ছে হয়। যাত্রাদলের ছেলের সামনে গান গাইতে তার মনে ভয় হয়। শেষে অনেক কষ্টে লজ্জা কাটিয়ে সে বাবার মুখে শোনা দাশুরায়ের পাঁচালি থেকে-‘শ্রীচরণে ভার একবার গা তোলো হে অনন্ত’ গানটি শোনায়। অজয়ের প্রশংসায় উৎসাহিত হয়ে সে দিদির কাছে শেখা- ‘খেয়ার পাশে বসে রে মন ডুবল বেলা খেয়ার ধারে’ গানটিও করে।
৪. “আর থাকিতে পারে না, ফুলিয়া ফুলিয়া কাঁদে।”– কার কথা বলা হয়েছে? কেন সে কেঁদেছিল ? ১+২
উত্তরঃ ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে অপু নীলমণি হাজরার যাত্রাদলের যাত্রা দেখতে গিয়েছিল। এখানে যাত্রার দর্শক অপুর কথা বলা হয়েছে।
উল্লিখিত যাত্রাপালায় রাজা, রানি ও পুত্রকন্যার হাত ধরে মন্ত্রীর চক্রান্তে বনবাসে যান। তারপর রাজা রানির আর খোঁজ পাওয়া যায় না। রাজপুত্র অজয় ও রাজকুমারী ইন্দুলেখা বনে বনে ঘোরে। অজয় ফল আনতে গেলে রাজকুমারী খিদের জ্বালায় বিষফল খেয়ে মারা যায়। অজয় দিদির মৃতদেহ দেখার পর করুণ সুরে গেয়ে বেড়ায়-“কোথা ছেড়ে গেলি এ বন কান্ডারে প্রাণপ্রিয় প্রাণ সাথি রে”। এই শুনে অপু প্রথমটায় মুগ্ধ হয়ে চেয়েছিল। যাত্রার রাজপুত্রের এরূপ কষ্ট অপু সহ্য করতে না পেরে কেঁদে উঠেছিল।
৫. অজয় কে ছিল ? সে সর্বজয়াকে টাকা দিতে চেয়েছিল কেন ? ১+২
উত্তরঃ অজয় ছিল নীলমণি হাজরার যাত্রা দলের অপুরই সমবয়সি একটি বালক। সে রাজপুত্রের চরিত্রে অভিনয় করত। সে ছিল বাপ-মা মরা ব্রাহ্মণ সন্তান।
যাত্রা দেখতে গিয়ে অজয় ও অপুর বন্ধুত্ব হয়েছিল। সে অপুদের বাড়ি খেতে আসত। সর্বজয়া, দুর্গা, অপু সকলেই অজয়কে ভালোবাসত। কয়েকদিনেই অজয় অপুদের বাড়ির একজন হয়ে উঠেছিল। দিন পাঁচেক পর যাত্রার দলের যখন গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় আসে, তখন অপুদের বাড়িতে অজয় দেখা করতে এসে পুঁটুলি খুলে সঞ্চিত পাঁচটি টাকা বের করে সর্বজয়ার হাতে দিতে যায়। তার একান্ত ইচ্ছা ছিল ওই টাকাটা দিয়ে দুর্গার বিয়ের সময় যেন একখানা ভালো কাপড় কেনা হয়।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৫)
পরে আপডেট দেওয়া হবে।
(২০) বিংশ পরিচ্ছেদ ৮৪ পৃষ্ঠা
বিষয় সংক্ষেপ : সর্বজয়ার সংগ্রাম—
হরিহর কাশীতে যেত উপার্জনের আশায়। কিন্তু আশানুরূপ উপার্জন সে কোনওদিন করতে পারেনি। এদিকে সর্বজয়া ছেলে মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটায়। দুর্গার মাঝেমাঝেই ম্যালেরিয়ার স্বর আসে। স্বরের ঘোরেই সে এটা-ওটা খেতে চায় কিন্তু সর্বজয়া তার শরীরের কথা মনে করে খেতে দেয় না। এরই মাঝে বর্ষা ঋতুর আগমন ঘটে। একনাগাড়ে অনেকদিন বৃষ্টি চলে | হরিহরের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। সর্বজয়া বাড়ির সামান্য জিনিসগুলো বিক্রি করে সংসার চালাতে থাকে। দুর্গার ইচ্ছে করে টিনের বাক্সের বায়োস্কোপ অপুকে দেখাতে। অপু এখন অবসর সময়ে নাটক লেখে। ইচ্ছেমতো বই পায় না বলে তার পড়তে ভালো লাগে না।
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-১
১. হরিহার কোন বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরল ?
উত্তরঃ হরিহার কাশী থেকে বাড়ি ফিরল।
২. দুর্গা কী অসুখে ভুগছিল ?
উত্তরঃ দুর্গা ম্যালেরিয়ায় ভুগছিল।
৩. দুর্গা কী খাবে বলে এনেছিল এবং কেন ?
উত্তরঃ দুর্গা মানকচু এনেছিল, ভাতে দিয়ে দুটো ভাত খাবে বলে। তার খুব জ্বর তাই তাকে ভাত দেওয়া হয়নি।
৪. একটু পরে দুর্গার হাই উঠে, এটা কীসের লক্ষণ ?
উত্তরঃ এটা জ্বর আসার পূর্ব লক্ষণ।
৫. তালতলায় কেবেল কাটা পুঁতে রেখেছিল ?
উত্তরঃ সতু তালতলায় বেল কাটা বোঁদে রেখেছিল।
৬. কে টিনের বাক্স নিয়ে খেলা দেখাতে এসেছিল ?
উত্তরঃ এক বুড়ো বাঙালি মুসলমান টিনের বাক্স নিয়ে খেলা দেখাতে এসেছিল।
৭. বুড়ো মুসলমানের টিনের বাক্সের খেলা না দেখে দুর্গা চলে যাচ্ছিল কেন ?
উত্তরঃ দুর্গার কাছে খেলা দেখার পয়সা ছিল না।
৮. বুড়ো মুসলমানের খেলা দুর্গা তার ভাইকে দেখাতে পারেনি কেন ?
উত্তরঃ এই খেলা আর কোনদিন আসেনি।
৯. অপু মায়ের কাছে খয়ের চেয়েছিল কেন ?
উত্তরঃ দোয়াতের কালির রং উজ্জ্বল করার জন্য অপু মায়ের কাছে খয়ের চেয়েছিল।
১০. অপুর দপ্তরে চরিত মালা বইটির লেখক কে ?
উত্তরঃ অপুর দপ্তরে চরিতমালা বইটির লেখক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
১১. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা কোন বইটি অপুর দপ্তরে ছিল ?
উত্তরঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা চরিতমালা বইটি অপুর দপ্তরে ছিল।
১২. অপু কার মত বীজগণিত পড়তে চায় ?
উত্তরঃ অপু রস্কোর মত বীজগণিত পড়তে চায়।
১৩. অপূর কী পড়তে ভালো লাগে না ?
উত্তরঃ ধারাপাত কী শুভঙ্করী অপুর ভালো লাগে না।
১৪. বিদেশে যাওয়ার সময় হরিহর কি বলে গিয়েছিল ?
উত্তরঃ বিদেশ থেকে ফিরলেই সে অন্য জায়গায় বাড়ি করবে।
ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৩)
১. কাশি থেকে হরিহর ফিরলে সর্বজয়া কী ভাবতো ?
উত্তরঃ সর্বজয়া ভাবত, শীঘ্রই কেউ তার স্বামীকে ডেকে একটা ভালো চাকুরি দেবে। কিন্তু মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কেটে গেলেও, কোনরকমে দিন চলা এই গরিব পরিবারের অবস্থা ভালো হয় না। উল্টে সে ঘরের পোকা কাটা কপাট দিন দিন আরো ভেঙে যেতে লাগলো, বাড়ির কলিকাট আরো ঝুলে পড়তে লাগলো, আগে যা ছিল তাও আর থাকছে না। তবু সর্বজয়া আসার ছাড়েনি। হরিহরও বিদেশ থেকে এসে প্রতিবারই একটা আশার কথা এমন ভাবে বলে যেন সব ঠিক হয়ে যাবে। আর কিছুদিন গেলেই তাদের সব দুঃখ ঘচে যাবে। কিন্তু তাদের অবস্থা আর ভালো হয় না।
২. সর্বজয়া দিনরাত যে স্বপ্ন দেখে তা লেখো ?
উত্তরঃ পাড়ার এক পাশে নিকানো-পুছানো ছোট্ট খড়ের দুই-তিন খানা ঘর। গোয়ালে হৃষ্টপুষ্ট দুটো দুগ্ধবতী গাভী বাঁধা, মাচা ভরা বিচালি, গোলা ভরা ধান। মাঠের ধারের মটর খেতের তাজা, সবুজ গন্ধ খোলা হাওয়ায় উঠান দিয়ে বয়ে যায়। নীলকণ্ঠ, বাবুই, শ্যামা পাখিগুলো ডাকে। অপু সকালে উঠে মাটির ভাঁড়ে দোয়া তাজা সফেন কালো গাইয়ের দুধের সঙ্গে গরম মুড়ির ফলার খেয়ে পড়তে বসে। দুর্গা ম্যালেরিয়া জ্বরে ভোগে না। গরিব বলে কেউ তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে না। এসবই সর্বজয়ার স্বপ্ন ছিল।
৩. “আর একদিন যা আশ্চর্য ব্যাপার !”— আশ্চর্য ব্যাপার কী কী ছিল ?
উত্তরঃ কোথা থেকে একদিন এক বুড়ো বাঙালি মুসলমান একটা বড়ো রং-চঙে কাঁচ বসানো টিনের বাক্স নিয়ে খেলা দেখাতে এসেছিল। ও পাড়ার জীবন চৌধুরিদের উঠানেই খেলা দেখাচ্ছিলো। দুর্গা ও পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল। সবাই এক এক পয়সা দিয়ে নলে চোখ লাগিয়ে খেলা দেখছিল। দুর্গার কাছে পয়সা ছিল না। খেলা শেষ হলে সে বাড়ি চলে যাচ্ছিল। বুড়ো মুসলমান লোকটি তাকে পয়সা ছাড়াই খেলা দেখিয়েছিল। নলে চোখ লাগিয়ে সে যা দেখেছিল তা খুবই আশ্চর্যের। তার মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। সত্যিকারের মানুষ ছবিতে কী করে দেখা যায় ? এমন অবিশ্বাস্য জিনিস দেখে সে ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না।
৪. অপু খাতায় যে নাটক লিখেছিল তা লেখো।
উত্তরঃ অপুর গত বৈশাখ মাসে নিজের চোখে দেখা দেখা যাত্রা পালা অনুসরণ করে যে নাটকটি লিখেছিল, তাহলো এইরকম—
মন্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতায় রাজা রাজ্য ছেড়ে বনে যান, রাজপুত্র নীলাম্বর ও রাজকুমারী অম্বা বনের মধ্যে দস্যুর হাতে পড়েন, ঘোর যুদ্ধ হয়, পরে রাজকুমারীর মৃতদেহ নদীতীরে দেখা যায়। নাটকে সতু বলে একটি জটিল চরিত্র আছে, বিশেষ কোনো মারাত্মক দোষের না থাকা সত্ত্বেও সে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হয়। নাটকের শেষদিকে রাজপুত্রী অম্বার নারদের বরে পুনর্জীবন প্রাপ্তি বা বিশ্বস্ত সেনাপতি জীবনকেতুর সঙ্গে তাঁর বিবাহ প্রভৃতি ঘটনা অপু তার খাতায় লিখেছিল।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৫)
পরে আপডেট দেওয়া হবে।
(২১) একবিংশ পরিচ্ছেদ ৮৮ পৃষ্ঠা
বিষয় সংক্ষেপ : বর্ষায় দুর্ভোগ—
কদিন ধরে খুব বর্ষা চলছে। হরিহরের কোনো খবর নেই। মায়ের কথামতো চণ্ডীমণ্ডপে পিয়নের জন্য বসে থাকে, যদি বাবার চিঠি আসে। বর্ষার ভয়ংকর রূপ দেখে অপু ভয় পায় । সর্বজয়া পুরানো বাসন বিক্রি করে সংসার চালায় | ঘরে জল পড়ে, দুর্গার জ্বর ছাড়ে না। অপু ভাত খাওয়ার জন্য ছটফট করে। সর্বজয়া নিবারণের মার কাছ থেকে মোটা চালের ধান জোগাড় করে। অভাবের মধ্যেও দুর্গা বিস্কুট খেতে চায়।
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-১
১. হরিহর কাশি থেকে মোট কত টাকা বাড়িতে পাঠিয়েছিল ?
উত্তরঃ হরিহর কাশি থেকে মোট পাঁচ টাকা বাড়িতে পাঠিয়েছিল।
২. অপু মায়ের কথায় ঠাঁই রায়দের চণ্ডী মন্ডপে বসে থাকে কেন ?
উত্তরঃ অপু মায়ের কথায় ঠাঁই রায়দের চণ্ডী মন্ডপে বসে থাকে পিওনের প্রত্যাশায়, তার বাবা চিঠি পাঠিয়েছে কিনা।
৩. অপুর মা ও দিদি সারা বিকালে ভিজে ভিজে কী তুলেছিল ?
উত্তরঃ অপুর মা ও দিদি সারা বিকালে ভিজে ভিজে কচুর শাক তুলেছিল।
৪. অপুর মা সংসার চালাতে নাপিত বউয়ের কাছে কি বিক্রি করেছিল ?
উত্তরঃ অপুর মা সংসার চালাতে নাপিত বউয়ের কাছে কাঁসার রেকাবি অর্থাৎ কাচার থালা বিক্রি করেছিল।
৫. সর্বজয়া কোথায় কৈ মাছ পেয়েছিল ?
উত্তরঃ রাতে প্রবল বৃষ্টির পরদিন সর্বজয়া বাঁশতলায় একটা ভেসে আসা কৈ মাছ পেয়েছিল।
৬. অপুর মাকে মা সিদ্ধেশ্বরী দেবী ভালো খবর এনে দিলে কি দেবে বলেছিল ?
উত্তরঃ স-পাঁচ আনার ভোগ দেবে বলেছিল।
৭. ঔষধ না থাকায় দুর্গা জ্বর ভালো করার জন্য কী খেত ?
উত্তরঃ ঔষধ না থাকায় দুর্গা জ্বর ভালো করার জন্য নিমছাল সিদ্ধ খেত।
ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৩)
১. দারিদ্র্যের কারণে সর্বজয়া কার কাছে কী বিক্রি করতে গিয়েছিল ? সর্বজয়া কত মূল্য পেয়েছিল ? ২+১
উত্তরঃ দারিদ্র্যের কারণে সর্বজয়া গ্রামের মহিলাদের কাছে নিজের গৃহস্থলীর অনেক জিনিসই বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সে গ্রামের নাপিত-বউয়ের কাছে কাঁসার একটি রেকাবি বিক্রি করতে গিয়েছিল। নাপিত বউয়ের কাছে জিনিসটির বহু গুণগানও করেছিল।
নাপিত বউ বহু দরদস্তুর করে কাঁসার রেকাবিটির জন্য একটি আধুলি দিতে সম্মত হয়েছিল।
২. “ছেলেমেয়ে ঘুমাইয়া পড়িলেও সর্বজয়ার ঘুম আসে না।”- সর্বজয়ার ঘুম আসে না কেন ?
উত্তরঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত পথের পাঁচালী উপন্যাসে উদ্ধৃত অংশটি রয়েছে।
ছেলেমেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও নানা দুশ্চিন্তায় সর্বজয়ার ঘুম আসে না। এক ঘন বর্ষার রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে অপু-দুর্গাকে নিয়ে সর্বজয়ার খুব ভয় হয়। হরিহরও তখন বাড়িতে ছিলেন না। এক অজানা আশঙ্কায় সর্বজয়ার বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠে। টাকা-পয়সার চেয়েও বাড়ির বাইরে থাকা হরিহরের জন্য তার বেশি চিন্তা হয়।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৫)
১. বর্ষা অপুদের দারিদ্র্যকে কীভাবে প্রকট করেছে তোমাদের পাঠ্য অংশ অনুযায়ী আলোচনা করো।
উত্তরঃ হরিহর কাজের খোঁজে যখন বাইরে ছিলেন সেইসময় নিশ্চিন্দপুর গ্রামে প্রবল বর্ষা নামে। নদীর জল বাড়তে থাকে, পথঘাট জলে পূর্ণ হয়ে যায়। অপুদের বাড়ির বাঁশতলা, গ্রামের তেঁতুলতলাতে একহাঁটু জল জমে যায়। গ্রামের একধারের জীর্ণ কোঠাবাড়িতে অপু-দুর্গাকে নিয়ে সর্বজয়া নিঃসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে। নিজে উপবাসী থেকে কয়েকদিন ছেলেমেয়েকে ওলশাক, কচুশাক প্রভৃতি খাওয়ানোর পর ঘরে তার আর কিছুই ছিল না। একদিকে প্রবল বৃষ্টি ও দুর্গার জ্বর এবং অন্যদিকে বাইরে-থাকা স্বামীর জন্য চিন্তা সর্বজয়ার অসহায়তাকে অনেকখানি বাড়িয়ে তোলে। সংসারের অভাব চরমে ওঠে। ঘরের জিনিস বিক্রি করে দিয়ে কিছুটা চাল জোগাড়ের চেষ্টা করে সর্বজয়া। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ঘরের ফুটো ছাদ দিয়ে সর্বত্র জল পড়তে থাকে। খাবার ও ওষুধের অভাবে দুর্গার জ্বর বাড়তে থাকে। বৃষ্টির জল যত বেশি ঘরে ঢোকে, অপুদের দারিদ্র্য তার থেকেও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। প্রবল বৃষ্টিতে অপুদের বাড়ির রান্নাঘরের দেয়াল পড়ে যায়। এক সময় ঝড়বৃষ্টি থেমে গেলেও দুর্গার জ্বর কমে না। নবাবগঞ্জ থেকে ডাক্তার এসে দেখে যান। শেষপর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় দুর্গার মৃত্যু হয়। এভাবেই ঝড় ও বৃষ্টির দাপট হরিহর ও সর্বজয়ার অভাবের সংসারকে সবদিক দিয়েই আরও বেশি দরিদ্র করে দিয়ে যায়।
(২২) বাইশ পরিচ্ছেদ ৯১ পৃষ্ঠা
বিষয় সংক্ষেপ : দুর্গার মৃত্যু—
একদিন বিকেল থেকে ভয়ানক ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। হরিহর বাড়ি নেই, সর্বজয়া ভয়ে ছেলেমেয়েকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারে না। দুর্গার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সর্বজয়া অমঙ্গলের আশঙ্কায় ভেঙে পড়ে। সকাল হতেই সে প্রতিবেশী নীলমণি মুখুজ্যেদের খবর দেয়। বেলার দিকে নবাবগঞ্জ থেকে শরৎ ডাক্তার দুর্গাকে দেখে অভয় দিয়ে ওষুধের ব্যবস্থা করেন। হরিহরকে পুরোনো ঠিকানায় চিঠি দেওয়া হয়। পরের দিন থেকে দুর্গার জ্বর আরও বাড়তে থাকে। বিকেলের দিকে জ্বর একটু কমলে সে অপুর কাছে রেলগাড়ি দেখতে চায়। পরেরদিন সকালের দিকে দুর্গা আর চোখ মেলে তাকায় না। শরৎ ডাক্তার এসে জানায়, ম্যালেরিয়ার শেষ স্টেজে পৌঁছে দুর্গা হার্টফেল করে মারা গেছে। অপুদের বাড়ির উঠোনে সারা পাড়ার লোক ভেঙে পড়ে।
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-১
১. সর্বজয়া প্রচন্ড বৃষ্টিতে হুড়ুম করে কিসের শব্দ শুনে ছিল ?
উত্তরঃ সর্বজয়া প্রচন্ড বৃষ্টিতে হুড়ুম শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখে রান্না ঘরের দেওয়াল পড়ে গেছে।
২. ভোর হতে না হতেই দুর্গার অসুখের বাড়াবাড়ির কারণে সর্বজয়া কাকে ডাকতে গিয়েছিল ?
উত্তরঃ ভোর হতে না হতেই দুর্গার অসুখের বাড়াবাড়ির কারণে সর্বজয়া নীলমণি মুখুজ্যেকে ডাকতে গিয়েছিল।
৩. নীলমণি মুখুজ্জে কোন ডাক্তারকে ডাকতে বলেছিল ?
উত্তরঃ নীলমণি মুখুজ্জে শরৎ ডাক্তারকে ডাকতে বলেছিল।
৪. শরৎ ডাক্তারকে ডাকতে কে গিয়েছিল ?
উত্তরঃ নীলমণি মুখুজ্যের বড় ছেলে ফণী শরৎ ডাক্তারকে ডাকতে গিয়েছিল।
৫. দুর্গাকে দেখতে শরৎ ডাক্তার কোথা থেকে এসেছিল ?
উত্তরঃ দুর্গাকে দেখতে শরৎ ডাক্তার নবাবগঞ্জ থেকে এসেছিল।
৬. দুর্গা অসুস্থ থাকার সময় হরিহরকে মোট কতবার চিঠি পাঠানো হয় ?
উত্তরঃ দুর্গা অসুস্থ থাকার সময় হরিহরের আগের ঠিকানায় মোট দুবার চিঠি পাঠানো হয়।
৭. দুর্গা মারা যাওয়ার আগে অপুর কাছে কোন ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল ?
উত্তরঃ মারা যাওয়ার আগে দুর্গা ভাই অপুর কাছে রেল গাড়ি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল।
৮. দুর্গা কী রোগে মারা গিয়েছিল ?
উত্তরঃ দুর্গা দীর্ঘদিন ম্যালেরিয়া জ্বরে ভুগে পথ্যহীন, চিকিৎসাহীন অবস্থায় থেকে অবশেষে হার্টফেল করে মারা গিয়েছিল।
ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৩)
১. দুর্গার কী হয়েছিল ? তাকে কোন্ ডাক্তার দেখেছিল এবং কী বলেছিল ? ১+২
উত্তরঃ দুর্গার ম্যালেরিয়া জ্বর হয়েছিল। সেই সঙ্গে অনিয়ম, ভিজে ভিজে কচু শাক তোলা, ওষুধপথ্যের অভাব ওই জ্বরকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।
দুর্গার জ্বর ভীষণ বেড়ে গেলে নীলমণি মুখুজ্যের ছেলে ফণী নবাবগঞ্জ থেকে শরৎ ডাক্তারকে ডেকে আনে। ডাক্তার দেখে শুনে ওষুধ দেন। জ্বর বেশি হলে জলপটি দেওয়ারও নির্দেশ দেন। পরদিন ঝড় বৃষ্টি থামে, রোদ ওঠে। দুর্গা একটু সুস্থ হয়ে করুণ স্বরে দু-একটা কথাও বলে। কিন্তু পরেরদিন দুর্গা মারা যায়। তখন শরৎ ডাক্তার এসে জানায়, ম্যালেরিয়ার শেষ পর্যায়ে, খুব জ্বরের পর যখন বিরাম হয়েছে তখনই দুর্গা হার্টফেল করেছে।
২. তবুও তাহার পূর্ব ঠিকানায় তাহাকে একদিন পত্র দেওয়া হইল।’ কাকে পত্র দেওয়া হয়েছিল ? কেন পত্র দেওয়া হয়েছিল ? ১+২
উত্তরঃ আলোচ্য অংশে দুর্গার অসুস্থতার খবর জানাতে হরিহরকে পত্র দেওয়া হয়েছিল।
দুর্গা ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল। তার জ্বর কমছিল না বরং প্রতিদিনই জ্বর বাড়ছিল। অন্যদিকে হরিহরও সেইসময় গ্রামে উপস্থিত ছিল না। সে কাজের খোঁজে বাইরে গিয়েছিল। তাই দুর্গার অসুস্থতার খবর পৌঁছে দিতে তাকে পত্র দেওয়া হয়েছিল।
৩. ‘ব্যাপারটা কী দেখিতে সকলে ছুটিয়া গেলেন।’ – কারা ব্যাপার দেখতে ছুটে এসেছিল ? তারা কী ব্যাপার দেখতে পেল ?
উত্তরঃ ব্যাপারটা দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন নীলমণি মুখুজ্যে এবং তার স্ত্রী।
সকাল দশটার সময় নীলমণি মুখুজ্যে গঙ্গাস্নানে যাবেন বলে গায়ে তেল মাখছিলেন। এমন সময় তার স্ত্রী উত্তেজিতভাবে এসে জানায় যে অপুদের বাড়ির দিক থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে, ব্যাপারখানা কী তা দেখা দরকার। তখন তারা ছুটে যায় অপুদের বাড়িতে। তারা দেখতে পান সর্বজয়া মেয়ের উপরে ঝুঁকে দুর্গাকে চোখ খুলে তাকাতে বলে। সবকিছু ভুলে সর্বজয়া চিৎকার করে মেয়ের জন্য বিলাপ করতে থাকে। শরৎ ডাক্তার এসে জানালেন দুর্গা হার্টফেল করেছে। আধ ঘণ্টার মধ্যে পাড়ার লোকে দুর্গাদের উঠোন ভরে গেল। এমনই মর্মান্তিক ঘটনা সকলে দেখেছিল।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৫)
পরে আপডেট দেওয়া হবে।
(২৩) তেইশ পরিচ্ছেদ ৯৫ পৃষ্ঠা
বিষয় সংক্ষেপ : হরিহরের ঘরে ফেরা
ঠিকানা বদল করার কারণে হরিহর বাড়ির চিঠি পায় না। উপার্জনের জন্য সে নানা স্থানে ঘুরতে থাকে। প্রথমে কৃষ্ণনগর গিয়ে খুব কষ্টে কিছুদিন কাটানোর পর একজনের বাড়িতে গৃহদেবতার পুজো-পাঠের কাজ পায়। আশ্রয়দাতা মহাজন বেশ ধনী ছিলেন, সেখানে হরিহর থাকার ঘর পায় ও খুব ভালোভাবে আদর-যত্ন পায়। দুর্গাপুজো এসে যাওয়ায় হরিহর বাড়ি ফিরতে চায়। ফেরার সময় স্ত্রী ও পুত্রকন্যার জন্য রানাঘাটের বাজার থেকে কাঠের চাকি-বেলুন, বই, কাপড়, আলতা কেনে। বাড়ি ফিরে আনন্দে সবাইকে ডাকতে থাকলে একমাত্র সর্বজয়া বেরিয়ে আসে। অনেক ডাকাডাকিতেও ছেলেমেয়েদের সাড়া না পেয়ে সর্বজয়ার কাছে তাদের খবর জানতে চায়। তখন সর্বজয়া কান্নায় ভেঙে পড়ে হরিহরকে দুর্গার মৃত্যুসংবাদ জানায়।
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-১
১. হরিহার বাড়ির চিঠি পায় নি কেন ?
উত্তরঃ হরিহর আগের ঠিকানায় না গিয়ে নতুন ঠিকানায় কাজের সন্ধানে গিয়েছিল। তাই বাড়ির চিঠি পায় নি।
২. বাড়ি থেকে বেরিয়ে হরিহর কাজের সন্ধানে প্রথমে কোথায় গিয়েছিল ?
উত্তরঃ বাড়ি থেকে বেরিয়ে হরিহর কাজের সন্ধানে প্রথমে নদিয়ার গোয়াড়ি কৃষ্ণনগর গিয়েছিল।
৩. হরিহরের বাড়ির পথের খরচ কত দিন চলেছিল ?
উত্তরঃ হরিহরের বাড়ির পথের খরচ দিন পনেরো চলেছিল।
৪. হরিহর শ্যামাবিষয় গান করে কত টাকা প্রণামী পেয়েছিল ?
উত্তরঃ হরিহর শ্যামাবিষয়ক গান করে এক টাকা প্রণামী পেয়েছিল।
৫. অপু হরিহারকে কোন বই কিনে আনতে আবদার করেছিল ?
উত্তরঃ অপু হরিহারকে পদ্মপুরাণ বই কিনে আনতে বলেছিল।
৬. “এই শর্তে বাবাকে রাজি করাইয়া তবে সে বই ফেরত দেয়।”— শর্ত কী ছিল ?
উত্তরঃ পদ্মপুরাণ কিনে দেওয়ার শর্তে অপু তার বাবাকে বই ফেরত দিয়েছিল।
৭. “এই শর্তে বাবাকে রাজি করাইয়া তবে সে বই ফেরত দেয়।”— অপু কোন বই ফেরত দিয়েছিল ?
উত্তরঃ যুগীপাড়া থেকে নিয়ে আসা বটতলার পদ্মপুরাণ।
৮. দুর্গা তার বাবাকে নিজের জন্য কী কিনে আনতে বলেছিল ?
উত্তরঃ দুর্গার বেশি চাহিদা নেই, সে একখানা সবুজ হাওয়াই কাপড় ও একপাতা ভালো দেখে আলতা কিনে আনতে বলেছিল।
৯. অবশেষে হরিহর কি কাজ পেয়েছিল ?
উত্তরঃ অবশেষে হরিহর একজনের বাড়িতে পূজা পাঠ করবার কাজ পেয়েছিল।
১০. হরিহর নিজের বাড়ি যাবার সময় বাড়ির কর্তা কত টাকা প্রণামি দিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ হরিহর নিজের বাড়ি যাবার সময় বাড়ির কর্তা দশ টাকা প্রণামি দিয়েছিলেন।
১১. “সর্বজয়া …… ফুকারিয়া কাঁদিয়া উঠিল”– সর্বজয়া কার কাছে কিসের জন্য কাদিয়া উঠিল ?
উত্তরঃ সর্বজয়া হরিহরের কাছে দুর্গার মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ করে কেঁদে উঠেছিল।
ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৩)
১. হরিহর বাড়ি ফেরার সময় স্ত্রী ও পুত্রকন্যার জন্য কী কী কিনেছিল ?
উত্তরঃ হরিহর বাড়ি ফেরার সময় স্ত্রী ও পুত্রকন্যার জন্য রাণাঘাটের বাজারে সে স্ত্রী ও পুত্রকন্যার জন্য কাপড় কিনল। দুর্গার জন্য একখানা ভালো পছন্দের লালপাড় কাপড় এবং ভালো দেখে আলতা কয়েক পাতা। অপুর ‘পদ্মপুরাণ’ অনেক খুঁজে না পাওয়ায় অবশেষে একটা ‘সচিত্র চণ্ডী মাহাত্ম্য বা কালকেতুর উপাখ্যান’ ছয় আনা মূল্যে কিনল। গৃহস্থালির টুকটাক দু-একটা জিনিস- সর্বজয়া বলে দিয়েছিল একটা কাঠের চাকি-বেলুনের কথা, সেটা কিনে বাড়ি ফিরেছিল।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৫)
১. “মা যে আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েছে।”– ‘মা’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? সে কীভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে ?
উত্তরঃ ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ রচনা থেকে উদ্ধৃত অংশটিতে ‘মা’ বলতে হরিহর ও সর্বজয়ার কন্যা দুর্গাকে বোঝানো হয়েছে।
দুর্গা বেশ কিছুদিন ধরেই ম্যালেরিয়া জ্বরে ভুগছিল। বাবা হরিহর অনেকদিন আগে পাঁচ টাকা পাঠিয়েছিলেন। এরপর তাঁর না আসে কোনও খবর, না কোনও টাকা। তাঁকে দু-দুবার চিঠি পাঠানো সত্ত্বেও কোনও উত্তর আসে না। চাল ধার করে, রেকাবি বিক্রি করেও সর্বজয়া ছেলেমেয়ের মুখে ভাত তুলে দিতে পারে না। অসুস্থ মেয়েকে ডাক্তার দেখানো বা যথাযথ পথ্য দেওয়াও সর্বজয়ার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এরই মধ্যে অবিরাম বৃষ্টিতে তাদের বাড়িঘর ও ভগ্নপ্রায় ঘরের চাল ভেঙে জল পড়তে থাকে, দুর্গার জ্বর আরও বাড়ে। প্রতিবেশীদের সাহায্যে গঞ্জের শরৎ ডাক্তারকে ডেকে আনা হয়। তিনি দুর্গার জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করেন। ওষুধে দুর্গা খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠলেও শেষরক্ষা করা যায়নি। শেষপর্যন্ত সকলকে ফাঁকি দিয়ে দুর্গা মৃত্যুর পথে পা বাড়ায়।
(২৪) চব্বিশ পরিচ্ছেদ ৯৮ পৃষ্ঠা
বিষয় সংক্ষেপ : অপুর পড়ার নেশা
পরের বছর আরও একটা দুর্গাপুজো কেটে গেলো। দুর্গা মারা যাওয়ার পর সর্বজয়া হরিহরকে গ্রাম থেকে উঠে যাওয়ার তাগিদ দেয়। হরিহরের জ্ঞাতি ভ্রাতা নীলমণি রায়ের বিধবা স্ত্রী, মেয়ে অতসী ও ছোট ছেলে সুনীল এসেছে তার বাড়িতে। বড়ো ছেলে সুরেশ গরমের ছুটিতে কলকাতা থেকে গ্রামে বেড়াতে আসে। সে একটা ইংরেজি স্কুলে পড়ে। অপু বোঝে, সে সুরেশের থেকে পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে। হরিহর ছেলেকে বিদ্বান করে তুলতে চায় কিন্তু সামর্থ্যের অভাবে পেরে ওঠে না। সতুদের মাছ চৌকি দেওয়ার শর্তে অপু সতুদের বাড়ির আলমারির বই পড়ার অনুমতি লাভ করে।
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-১
১. কাদের বাড়ির পুজা অনেক কালের ?
উত্তরঃ গাঙ্গুলি বাড়ির পুজা।
২. পুজোর কয়দিন গাঙ্গুলি কড়িতে কেমন আয়েজন হয় ?
উত্তরঃ নির্দিষ্ট সময়ে কুমোর এসে প্রতিমা গড়ে, পোটো চালচিত্র করে, মালাকার সাজ জোগায়, বারাসে-মধুখালির দ থেকে বাউরিরা রাশি রাশি পদ্মফুল তুলে আনে।
৩. পুজোতে কে কোথা থেকে রসুনচৌকি বাজাতে আসে ?
উত্তরঃ আঁসমালীর দীনু সানাইদার অন্য অন্য বছরের মতো রসুনচৌকি বাজাতে আসে।
৪. ছেলেকে নতুন কাপড় পড়িয়ে হরিহর কোথায় যায় ?
উত্তরঃ ছেলেকে নতুন কাপড় পরিয়ে হরিহর গাঙ্গুলীর বাড়ি নিমন্ত্রণ খেতে যায়।
৫. হরিহরের জ্ঞাতিভ্রাতা নীলমণি রায়ের ছেলে মেয়ের নাম কী ?
উত্তরঃ বড় ছেলের নাম সুরেশ ছোট ছেলের নাম সুনীল এবং মেয়ে অতসী।
৬. নীলমণি রায়ের বড় ছেলে কোথায় পড়াশোনা করে ?
উত্তরঃ নীলমণি রায়ের বড় ছেলে সুরেশ কলকাতায় একটি ইংরেজি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে।
৭. সুরেশ অপুর সমবয়সী হলেও তাকে ভয় পায় কেন ?
উত্তরঃ সুরেশ ইংরেজী স্কুলে পড়ে, তার চালচলন খুব কথাবার্তার ধরন এমনই যে প্রতিপদেই দেখাতে চায়, গ্রামের ছেলেদের চেয়ে সে অনেক বেশি উঁচু।
৮. ‘বলত ইন্ডিয়ার বাউন্ডারি কী ? জিওগ্রাফি জানো ?’— উদ্ধৃত প্রশ্নটি কে, কাকে করেছিল ?
উত্তরঃ উদ্ধৃত প্রশ্নটি সুরেশ অপুকে জিজ্ঞাসা করেছিল।
৯. সুরেশ অপুকে কী কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিল ?
উত্তরঃ বলতো ইন্ডিয়ার বাউন্ডারি কী ? জিওগ্রাফি জানো ? অংক কী কষেছো ? ডেসিমেল ফ্রাকশন করতে পারো ? ইত্যাদি।
১০. অপুর টিনের বাক্সটিতে কী কী বই ছিল ?
উত্তরঃ একটি নিত্যকর্ম পদ্ধতি, একটি পুরোনো প্রাকৃতিক ভূগোল, একটি শুভঙ্করী, পাতা-ছেঁড়া বীরাঙ্গনা কাব্য একটি এবং মায়ের একটি মহাভারত।
১১. সতু কোন শর্তে অপুকে বই পড়তে দিয়েছিল ?
উত্তরঃ সতুদের মাঠের পুকুরে রোজ মাছ চুরি যায়, দুপুরবেলা সেখানে গিয়ে চৌকি (পাহারা) দিতে হবে।
১২. পুকুর পাহারা দেওয়ার সময় অপু কীভাবে বই পড়ত ?
উত্তরঃ বাঁশবনের ছায়ায় কতগুলো শ্যাওড়া গাছের কাঁচা ডাল পেতে তার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে এক মনে বই পড়তো।
১৩. ‘এমন হাবলা ছেলেও তুই ?’— কাকে কেন হাবলা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ একখানা বই পড়ার লোভে একা বনের মধ্যে বসে পরের মাছ চৌকি দেওয়ার ব্যাপারে অপুর মা অপুকে হাবলা বলেছে।
ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৩)
পরে আপডেট দেওয়া হবে।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৫)
পরে আপডেট দেওয়া হবে।
(২৫) পঁচিশ পরিচ্ছেদ ১০১ পৃষ্ঠা
বিষয় সংক্ষেপ : অপুর কল্পনা
হরিহর ছেলের বই পড়ার আগ্রহ দেখে স্ত্রীর চোখে ফাঁকি দিয়ে দু-টাকা খরচ করে ‘বঙ্গবাসী’ পত্রিকার ব্যবস্থা করে। সেই পত্রিকা পেয়ে অপু ভীষণ খুশি হয়। লুকিয়ে লুকিয়ে সে যে খাতায় গল্প লেখে একদিন রানি তা ধরে ফেলে। পরের দিন রানি গল্প লিখে দেওয়ার জন্য অপুকে একটা ছোটো খাতা দিয়ে যায়। অপু গল্প শেষ না করেই খাতাটা রানিকে ফেরত দেয়। রানি অবাক হয়ে তা আবার অতসীকে দেখায়। অপু মাছ ধরতেও খুব ভালোবাসে। মাছ ধরতে বসে সুরেশের কাছ থেকে একটা ইংরেজি বই নিয়ে সে পড়তে শুরু করে। পড়তে পড়তে তার বিদেশি গল্পের কাহিনি মনে পড়ে। এক বিকেলে অপু আর পটু ডিঙিনৌকো নিয়ে বেড়াতে যায়। অপু তার বাবার থেকে শেখা একখানা গান গায়। মাঝপথে প্রবল ঝড়ের কবলে পড়লেও অপু বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে কল্পনারাজ্যে ঘুরে বেড়ায়। তার মন এই বিরাট রহস্যময় পৃথিবীর প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়। রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্নে অপু বিভোর হয়ে যায়।
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-১
১. হরিহর কোন পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন ?
উত্তরঃ হরিহর বঙ্গবাসী পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন।
২. একসময় বঙ্গবাসী পত্রিকার জন্য অপু কোথায় বসে থাকতো ?
উত্তরঃ অপু ভুবন মুখুজ্জ্যেদের চন্ডীমণ্ডপের কাছে পিওনের অপেক্ষায় প্রতি শনিবার বঙ্গবাসী পত্রিকার জন্য বসে থাকতো।
৩. ‘বঙ্গবাসী’ পত্রিকায় নতুন কোন্ চিঠি বেরিয়েছিল ?
উত্তরঃ ‘বিলাত যাত্রী’-র চিঠিটি ‘বঙ্গবাসী’ পত্রিকায় বেরিয়েছিল।
৪. কে তার খাতায় অপুকে গল্প লিখে দিতে বলেছিল ?
উত্তরঃ ভুবন মুখুজ্জ্যের মেয়ে রানী একখানা ছোট বাঁধানো খাতা অপুর হাতে দিয়ে তাতে গল্প লিখে দিতে বলেছিল।
৫. অপু মাছ ধরতে কোথায় বসত ?
উত্তরঃ ইছামতি নদীর তীরে একটা বড় ছাতিম গাছের তলায় অপু মাছ ধরতে বসত।
৬. ‘আর একটা পলা তেল দাও না মা।’– কে, কার কাছে কেন একপলা তেল চেয়েছিল ?
উত্তরঃ আলো জ্বালানোর জন্য অপু তার মায়ের কাছে একপলা তেল চেয়েছিল। রাতে অপু বসে বসে খাতায় গল্প লিখত।
৭. সুরেশের কাছ থেকে নিয়ে আসা ইংরেজি বইয়ে কোন দেশ আবিষ্কারের গল্প আছে ?
উত্তরঃ ইংরেজি বইটিতে অনেক গল্পের মধ্যে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের গল্প ছিল।
৮. অপু অসমাপ্ত গল্পের খাতা রানিদিদিকে ফেরত দিয়েছিল কেন ?
উত্তরঃ অপু রানির খাতায় যে গল্পটি লিখে দিয়েছিল সেটার শেষটা কেমন হবে তা স্থির করতে পারছিল না, তাই সে অসমাপ্ত গল্পের খাতা ফেরত দিয়েছিল।
ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৩)
১. হরিহর পুত্র অপুর জন্য বঙ্গবাসী পত্রিকায় কীভাবে ব্যবস্থা করেছিলেন ?
উত্তরঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ছোটদের পথের পাঁচালী উপন্যাসে হরিহর ‘রামকবচ’ লিখে দিয়ে বেহারী ঘোষের শাশুড়ির কাছ থেকে তিন টাকা পেয়েছিল। স্ত্রীর কাছে গোপন রেখে বঙ্গবাসী পত্রিকার জন্য আগাম ২ টাকা দাম দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। স্ত্রী এ কথা জানলে সাংসারিক অভাব-অভিযোগ নিয়ে হাজির হত এবং সেই অভাব পূরণ করতে গিয়ে ওপার্জিত অর্থ খরচ হয়ে যেত। ফলে ছেলের ভালোলাগার বস্তুটি অধরাই থেকে যেত। এইভাবে হরিহর চরম অভাবের মাঝেও পুত্র অপূর্বর জন্য বঙ্গবাসী পত্রিকার ব্যবস্থা করেছিলেন।
২. “ছেলের এত আদরের জিনিসটা জোগাইতে না পারিয়া তাহার বুকের ভিতর বেদনায় টনটন করে।”– কোন জিনিসের কথা বলা হয়েছে ? হরিহরের বুকের ভিতর বেদনায় টনটন করত কেন ?
উত্তরঃ আলোচ্য উক্তিতে সাপ্তাহিক ‘বঙ্গবাসী’ পত্রিকার কথা বলা হয়েছে।
অপু পড়তে খুব ভালোবাসত। তাই হরিহর ছেলে বড়ো হয়ে পড়বে ভেবে অনেক ‘বঙ্গবাসী’ পত্রিকা সযত্নে বান্ডিল বেঁধে তুলে রেখেছিলেন। এই পত্রিকাটির জন্য অপু পাগল ছিল। তাই শনিবার সকালবেলা খেলা ফেলে সে ডাকবাক্সের কাছে অপেক্ষা করত। পত্রিকাটির প্রতি অপুর এত ভালোবাসার কথা হরিহর জানতেন। পত্রিকার দাম দিতে না পারায় হরিহরের বাড়িতে বঙ্গবাসী দেওয়া বন্ধ করেছিল কাগজওয়ালা। অর্থের অভাবে ছেলেকে তার আদরের পত্রিকাটি কিনে দিতে পারতেন না বলে হরিহর খুব কষ্ট পেতেন।
৩. “মাছ ধরিবার শখ অপুর অত্যন্ত বেশি।”– অপুর মাছ ধরার শখের কথা ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’-তে কীভাবে ফুটে উঠছে?
উত্তরঃ নিশ্চিন্তিপুরের মাঠ-বন-নদীর প্রতি এক অপূর্ব মোহ ছিল অপুর। নিজের মাছ ধরার শখ পূরণ করার জন্য অপু প্রায়ই সোনাডাঙা মাঠের নীচে ইছামতীর ধারে কাঁচিকাটা খালে ছিপ হাতে বসে যেত। নদীর তীরে ছাতিম গাছের ছায়ায় এক অপূর্ব পুলকে অপুর মন ভরে উঠত। প্রায়ই জলের ওপর শরের ফাতনা স্থির হতে থাকত, অপু মাছ পেত না। অনেকক্ষণ এক জায়গায় বৃথা বসে অধৈর্য হয়ে অপু ঝোপের মধ্যে পাখির বাসার খোঁজে চলে যেত। কোনোদিন বা সঙ্গে বই নিয়ে যেত, ছিপ ফেলে বই পড়ে সময় কাটাত। মাছ ধরার শখ পূরণ করতে গিয়ে সে বইয়ের গল্পের রাজ্যে প্রবেশ করে যেত। তার মাছ ধরার শখ সম্পর্কে বন্ধু পটুও ওয়াকিবহাল ছিল। তাই অপুর খোঁজে পটু ঠিক মাছ ধরার জায়গাতেই চলে আসত।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৫)
১. অপু ফ্রান্স দেশ সম্বন্ধে কী জেনেছিল ?
উত্তরঃ সুরেশদার ইংরেজি ম্যাপে অপু ভূমধ্যসাগর দেখেছিল। সে জানত ভূমধ্যসাগরের ওপারে ফ্রান্স দেশ। বহুদিন আগে ফ্রান্সের বুকে বিদেশি সৈন্যরা চেপে বসেছিল। ফ্রান্স তখন বিপন্ন, রাজা শক্তিহীন এবং চারিদিকে জ অরাজকতা, লুঠতরাজ চলছে। দেশের এই খারাপ সময়ে লোরেন প্রদেশের এক অজপাড়াগাঁয়ে এক চাষির মেয়ে ভেড়া চরাতে যেত। সে তার নীল চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেশের দুঃসময়ের কথা চিন্তা করত। অনেকদিন ি ধরে এই কথা ভাবতে ভাবতে তার সরল মনে যেন কার গলার আওয়াজ শুনতে পেল সে। কেউ যেন তাকে বলছে, তুমিই ফ্রান্সকে রক্ষা করবে। তুমি রাজসৈন্য জড়ো করে অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করো। দেশের মুক্তির ভার তোমার হাতে। দেবী মেরি তাকে উৎসাহ দেন। স্বর্গ থেকে তাঁর আহবান শুনতে পায় মেয়েটি। তারপর নতুন উৎসাহে ফরাসি সৈন্যরা শত্রুদলকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়। সেই ভাবুক কুমারী মেয়েটি নিজে অস্ত্র ধরে দেশের রাজাকে সিংহাসনে বসায়। কিন্তু তার দেশের কুসংস্কারাছন্ন মানুষ সেই মেয়েটিকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। অপু বই পড়ে ফ্রান্স দেশ সম্বন্ধে এইসব কথা জেনেছিল।
২. অপু ও পটুর নৌভ্রমণের পরিচয় নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ তেঁতুলতলার ঘাট থেকে একটা ছোটো ডিঙি খুলে নিয়ে তাতে অপু আর পটু চড়ে বসে। দুই বালক নদীর বুকে ডিঙিতে ভেসে চলেছে। খানিক পরে গান ধরে অপু, পটু বাঁশের চটায় বৈঠাখানা তুলে নিয়ে নৌকোর গলুই-এ চুপ করে বসে একমনে শোনে, স্রোতের টানে ডিঙিখানা ঘুরতে ঘুরতে লা-ভাঙার বড়ো বাঁকের দিকে চলে। কিছুক্ষণ পরেই দূরে সোঁ সোঁ রব উঠল, অস্পষ্ট পাখির কলরব ভেসে এল, ঠান্ডা হাওয়ার মতো ভিজে মাটির গন্ধ উড়ে আসতে লাগল, দেখতে দেখতে গাছপালা মাথা দুলিয়ে ভীষণ কালবৈশাখী আস্তে দেখে অপুর বুক আনন্দে ফুলে উঠল। পটু অপুকে উদ্দেশ করে বলে যে নৌকো আর নেওয়া যাবে না- উলটে যেতে পারে। অপুর সে কথায় মন নেই, সে গলুইতে বসে সামনের ঝটিকাক্ষুব্ধ নদী ও আকাশের দিকে তাকিয়ে চারদিকের প্রাকৃতিক ঘটনা উপভোগ করতে লাগল। এই অবস্থায় তার যেন মনে হয় সে সাগরদ্বীপ পিছনে ফেলে কত অজানা দ্বীপ পার হয়ে, সিংহলের নারকেল বনশ্রী দেখতে দেখতে নীল পাহাড় দূর চক্রবালে রেখে নতুন দেশের নব নব দৃশ্য দেখতে দেখতে চলেছে। সেও একদিন এমন স্থানে যেতে পারবে- রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে সে নৌকোয় বসে থাকে। একসময় নৌকো তেঁতুলতলার ঘাটে ভেড়ে, চমক ভাঙে অপুর। নৌকো বেঁধে পটুর আগে আগেই বাঁশবনের পথ দিয়ে অপু বাড়ির দিকে রওনা হয়। এমনই চিত্তাকর্ষক নৌভ্রমণের সাথি হয়েছিল অপু আর পটু।
(২৬) ছাব্বিশ পরিচ্ছেদ ১০৭ পৃষ্ঠা
বিষয় সংক্ষেপ : অপুদের গ্রাম থেকে চলে যাওয়ার উদ্যোগ।
একদিন রাতে চোখ বুজে শুয়ে থাকার সময় বাবা-মার কথা বার্তা শুনে অপু বুঝতে পারে তারা বৈশাখ মাসের প্রথম দিকে কাশীতে চলে যাবে। নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের জন্য তার মন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। অপুদের চলে যাওয়ার খবর আস্তে আস্তে সবাই জানতে পারে। চলে যাওয়ার আগে জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করতে গিয়ে অপু টুনির মায়ের সোনার সিঁদুর কৌটোটি খুঁজে পায়। বুঝতে পারে তার দিদিই ওটা চুরি করে লুকিয়ে রেখেছিল। অপু বাঁশবাগানের মধ্যে কৌটাটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়। জীবনে কাউকে সে ওই সিঁদুর কৌটোর কথা বলেনি। দুপুরের পর হিরু গাড়োয়ানের গোরুর গাড়িতে করে তারা চিরকালের জন্য গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-১
১. অপু ঘুমের ভান করে কী শুনেছিল ?
উত্তরঃ অপু ঘুমের ভান করে তার বাবা-মায়ের নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার গোপন কথাবার্তা শুনেছিল।
২. অপুর মা বাবা নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম ছেড়ে কোথায় যাবে ?
উত্তরঃ অপুর মা বাবা নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম ছেড়ে কাশি যাবে।
৩. চড়ক পূজা কী ?
উত্তরঃ চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে শিব গাজনের পূজা উপলক্ষে চড়ক পূজা হয়। যা অপুদের গ্রামে মেলার উৎসবে পরিণত হয়েছে।
৪. চড়ক পূজোর আগের রাতে কোন পূজো হয় ?
উত্তরঃ চড়ক পুজোর আগের রাতে নীল পূজো হয়।
৫. অপু আতুরি বুড়িকে কোথায় আমসি বিক্রি করতে দেখেছিল ?
উত্তরঃ রথের মেলায় অপু আতুরি বুড়িকে আমসি বিক্রি করতে দেখেছিল।
৬. চড়ক মেলার গোলমালের মধ্যে অপু কাকে চমৎকার বাসি বাজাতে শুনেছিল ?
উত্তরঃ চড়ক মেলার গোলমালের মধ্যে অপু মালপাড়ার হারান মালকে চমৎকার বাসি বাজাতে শুনেছিল।
৭. চড়ক মেলায় অপু কত পয়সা দিয়ে বাসের বাসি কিনেছিল ?
উত্তরঃ চড়ক মেলায় অপু দেড় পয়সা দিয়ে বাসের বাসি কিনেছিল।
৮. চড়ক মেলার দিন কে মারা গিয়েছিল ?
উত্তরঃ চড়ক মেলার দিন আতুরি বুড়ি মারা গিয়েছিল।
ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৩)
১. দুপুরে এক কাণ্ড ঘটিল।’— কী কাণ্ড ঘটেছিল নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ চড়কের পরের দিন দুপুরে অপুর মা সাবিত্রীব্রতের নিমন্ত্রণে গিয়েছিল, হরিহর পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছিল। সেইসময় অপু ঘরের মধ্যে তাকের উপরিস্থিত কোন্ কোন্ জিনিস পত্র সঙ্গে নেওয়া যায় তা নেড়েচেড়ে দেখছিল। তারপর উঁচু তাকের উপর একটা কলসি সরাতে গিয়ে একটা কী জিনিস মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল। মেঝে থেকে সেটি তুলে নিয়ে অপু অবাক হয়ে গেল, ধুলা ও ঝুল মাখা হলেও অপুর বুঝতে অসুবিধা হল না যে জিনিসটা সেজোঠাকরুণের চুরি যাওয়া ছোটো সোনার কৌটো। সেই ছোট্ট সোনার কৌটোটা আগের বছর যেটা সেজো ঠাকুরনদের বাড়ি থেকে চুরি হয়েছিল। অপর দিদি হতভাগে চুরি করে ওই কলসি টার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল। অপু একটুখানি ভাবলো, পরে ধীরে ধীরে খিড়কি দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাতের কৌটোটা বাঁশবনের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিল।
২. অপুর চড়কের মেলা দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তরঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের ২৬তম পরিচ্ছদে চড়কের মেলার বর্ণনা আছে। এই চড়কের অভিজ্ঞতা অপুর জীবনে ভিন্ন রকমের ছিল। দিদি মারা যাওয়ার পর এ বারের চড়ক তার কাছে ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। আগের বছরও দুর্গা পট কিনে আনন্দ করেছিল। কিন্তু এবার আর সে নেই। মেলার গোলমালে বাঁশির সুর শুনে গিয়ে বাঁশি কেনে অপু। এ ছাড়াও চিনিবাস ময়রার কাছ থেকে সে দুপয়সার তেলেভাজা খাবার কেনে। সে দেখে নানা গাঁয়ের ছেলেমেয়েরা রঙিন কাপড়, জামা, কোরা শাড়ি পরে, বাঁশি ও নানারকম খেলনা কিনে বাড়ি ফিরছে। পরদিন অপুরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে, তাই অপু ঠিক করে নতুন জায়গায় যদি চড়ক না হয় তাহলে বাবাকে বলে সে নিশ্চিন্দিপুরে মেলা দেখতে আসবে।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৫)
১. ‘এই তো বেশ ছিল তাহারা’, –এরূপ মনোভাবটি কার ? তার মনে কোন্ অবস্থায় এমন ভাবনার উদয় হয়েছিল ?
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত মনোভাবটি ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের প্রাণচঞল বালক ‘অপু’র। চড়কের পরের দিন তাদের জিনিসপত্র বাঁধাছাঁদা হচ্ছিল, কারণ পরের দিন দুপুরের খাবার খেয়ে তারা রওনা হবে কাশীর উদ্দেশে। সন্ধ্যার সময় মা গরম গরম পরোটা ভাজছিলেন, কিন্তু অপুর চোখ পড়ে নীলমণি জেঠার ভিটায় নারকেল গাছের দিকে, যেখানে জ্যোৎস্নার আলোতে পাতাগুলি চিকচিক করছে; সেদিকে দৃষ্টি পড়তেই দুঃখে অপুর মন পূর্ণ হয়ে ওঠে। এতদিন নতুন দেশে যাওয়ার খুব উৎসাহ দেখিয়েছে। কিন্তু যাওয়ার সময় যতই কাছে আসতে লাগল, আসন্ন বিরহের ব্যথা ততই অপুর মনকে বেদনাতুর করে তুলতে লাগল। নিশ্চিন্দিপুরের বাঁশবন, সলতে-খাগির আমবাগান, নদীর ধার, দিদির সঙ্গে চড়ুইভাতি করার স্থানকে সে কতই না ভালোবাসে। এমন নারকেল গাছের সারি, জ্যোৎস্নালোকিত পাতার এমন সৌন্দর্য, দিদির সঙ্গে দশ-পঁচিশ খেলার স্থান আর কোথায় সে পাবে! যেখানে যাচ্ছে সেখানে কী রেল-রেল খেলতে পারবে, আম কুড়োতে বা নৌকো বাইতে পারবে ? কদমতলার ঘাট, রানুদিদি, সোনাডাঙার মাঠ তাকে নিবিড়ভাবে কাছে টানতে লাগল। এমন পরিস্থিতিতেই অপুর মনে হয়েছে ‘এই তো বেশ ছিল তাহারা, কেন এসব মিছামিছি ছাড়িয়া যাওয়া।’
(২৭) সাতাশ পরিচ্ছেদ ১১২ পৃষ্ঠা
বিষয় সংক্ষেপ : অপুর দিদির স্মৃতি
নিশ্চিন্তপুর গ্রাম ছাড়ার সময় অপুর চোখে পড়ে সোনাডাঙ্গা মাঠ ও মধুখালি বিলের সৌন্দর্য। রাত দশটা নাগাদ স্টেশনে পৌঁছে অপু ট্রেন দেখার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। ঘুরে ঘুরে সে প্ল্যাটফর্মের নানান দৃশ্য, টেলিগ্রামের কল দেখতে থাকে। ট্রেন আসে পরেরদিন সকাল সাড়ে সাতটায়। ট্রেন দেখে অপুর বিস্ময় ও আনন্দের সীমা থাকে না। একসময় ট্রেন ছেড়ে দেয়। অপু পিছনে ফেলে আসা শৈশবের কথা ভাবতে থাকে। হঠাৎ তার মনে পড়ে দিদির রেলগাড়ি দেখার ইচ্ছার কথা। তার মনে হয় এতদিনে দিদির সঙ্গে যেন তার চিরকালের মতো বিচ্ছেদ হয়ে গেল। সে ভাবে, দিদি যেন তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অপু মনে মনে বলতে থাকে, সে দিদিকে কখনও ভোলেনি। একসময় তার গ্রামের স্টেশনের চিহ্ন মুছে যায়।
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-১
১. অপুদের গরুর গাড়ি কটার সময় স্টেশনে পৌঁছেছিল ?
উত্তরঃ অপুদের গরুর গাড়ি রাত্রি প্রায় দশটার সময় স্টেশনে পৌঁছেছিল।
২. অপুরা কার গরুর গাড়িতে করে স্টেশনে গিয়েছিল ?
উত্তরঃ হিরো গাড়োয়ানের গরুর গাড়িতে চেপে অপুরা স্টেশনে গিয়েছিল।
৩. এলাকার কোন বড় মাঠটির ভিতর দিয়ে তারা স্টেশনে গিয়েছিল ?
উত্তরঃ এলাকার সবচেয়ে বড় সোনাডাঙ্গা মাঠটির ভিতর দিয়ে তারা স্টেশনে গিয়েছিল।
৪. তারা স্টেশনে কখন পৌঁছেছিল ?
উত্তরঃ অপুরা রাত প্রায় দশটার সময় স্টেশনে পৌঁছেছিল।
৫. সন্ধ্যা সাড়ে আটটার ট্রেন ওরা ধরতে পারেনি কেন ?
উত্তরঃ হিরু কারওয়ানের গরু দুটোর জন্যই তারা সন্ধ্যার ট্রেনটা ধরতে পারেনি।
৬. স্টেশনের ধারে অপুর মা কী রান্নার আয়োজন করেছিল ?
উত্তরঃ রাত্রিবেলা স্টেশনের ধারে অপুর মা সর্বজয়া খিচুড়ি রান্নার আয়োজন করেছিল।
৭. হিরো গাড়োয়ান কে ?
উত্তরঃ হিরু গাড়োয়ান ছিল গরুর গাড়ির চালক। সে-ই তার গাড়ি করে অপুদের মাঝেরপাড়া স্টেশনে পৌঁছে দেন।
৮. কখন অপুর মনে হয়েছিল দিদির সঙ্গে তার চিরবিচ্ছেদ হয়ে গেল ?
উত্তরঃ নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম থেকে চলে গরুর গাড়িতে অপুর মনে হয়েছিল সত্যি সত্যিই দিদির সঙ্গে তার চিরকালের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল।
ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৩)
১. “সত্যিই সে ভুলে নাই!”– কোন্ কথা, কেন অপু ভোলেনি তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সময় দিদির জন্য অপুর মন কেঁদে ওঠে। মা-বাবার ইচ্ছায় গ্রাম ছেড়ে গেলেও দিদির কথা সে ভোলেনি।
দিদি ছিল অপুর শৈশবজীবনের প্রধান অবলম্বন। প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করার শিক্ষা অপু দিদির কাছেই পেয়েছিল। পরবর্তী জীবনে প্রকৃতির সঙ্গে তার যে ঘনিষ্ঠ পরিচয় গড়ে উঠেছিল তার প্রতিটি পদক্ষেপে দিদির স্মৃতি জড়িয়ে ছিল। গতির আনন্দ, দূরের টান যখনই অপু অনুভব করত, তখনই তার মনে দিদির ছবি ভেসে উঠত। যে জগতের সঙ্গে অপুর প্রাণের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, সেই জগৎ তার দিদিই তাকে চিনিয়েছিল। তাই গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সময় দিদির কথাই তার বেশি মনে পড়েছিল এবং পরবর্তী জীবনেও সে দিদির কথা ভোলেনি।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি বাংলা : (প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান-৫)
১. “রাত্রি প্রায় দশটার সময় স্টেশনে আসিয়া গাড়ি পৌঁছিল।”– স্টেশনে পৌঁছে অপুর যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা লেখো।
উত্তরঃ নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম থেকে গোরুর গাড়ি চড়ে রাত্রি দশটার সময় অপুরা স্টেশনে পৌঁছেছিল।
গাড়ি থেকে নেমে প্রবল উৎসাহ ও কৌতূহল নিয়ে অপু প্ল্যাটফর্মে হাজির হয়। ট্রেন অনেক আগেই চলে যাওয়ায় অপু তখন ট্রেন দেখতে পায়নি। প্ল্যাটফর্মে অনেক তামাক রাখা ছিল। রেলের দুজন লোক একটি লোহার কলে তামাকের গাঁট চাপিয়ে কিছু করছিল। জ্যোৎস্নায় রেলের লাইন চকচক করছিল। রেললাইনের ধারে উঁচু খুঁটির সঙ্গে দু-দিকেই লাল আলো লাগানো ছিল। স্টেশনের অফিসঘরে টেবিলের উপর লন্ঠন জ্বলছিল। সেই ঘরে অনেক বাঁধানো খাতাপত্র রাখা ছিল। স্টেশনের বাবুকে টেলিগ্রাফের কল নিয়ে কাজ করতে দেখে অপু। একরাশ বিস্ময় নিয়ে অপু মনে মনে ভাবতে থাকে পরের দিন সকালেই সে রেলগাড়ি দেখবে ও চড়বে। সেই রাতে স্টেশনের পুকুর- ধারে আরও একটি পরিবারের সঙ্গে তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। অবাক হয়ে অনেকক্ষণ ধরে প্ল্যাটফর্মে অপু অপেক্ষা করে। ভয়ংকর শব্দ করে সকাল সাড়ে সাতটায় মস্ত একটা ট্রেন অপুর সামনে উপস্থিত হয়। ট্রেনের প্রতিটা কামরায় কাঠের বেঞ্চি সামনাসামনি পাতা, মেঝেটা সিমেন্টের। একসময় অপুকে অবাক করে দিয়ে রেলগাড়ি চলতে শুরু করে।
২. “এরূপ অপরূপ বসন্তদৃশ্য অপু জীবনে এই প্রথম দেখিল।”– অপুর চোখে অপরূপ বসন্ত দৃশ্যটির বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ হিরু গাড়োয়ানের গাড়িতে অপু বাবা মায়ের সঙ্গে সোনাডাঙ্গার মাঠ হয়ে নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে যাচ্ছিল। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড়ো মাঠের এখানে-ওখানে বনঝোপ, শিমুল বাবলা আর খেঁজুর গাছ। চারিদিকে শোনা যাচ্ছে পাপিয়ার বউ কথা কও ডাক। বিরাট মাঠটির মাথার ওপরে তিমির ফুলের মতো ঘন নীল আকাশ উপুড় হয়ে পড়েছে। সবুজ ঘাসে মোড়া মাঠটির কোথাও চাষবাসের চিহ্ন নেই। শুধু গাছপালার সবুজ রং ছেয়ে গেছে। সামনের চওড়া মাটির রাস্তাটা দেখে মনে হয় যেন উদাস বাউলের মতো আপন মনে বেঁকে চলেছে। মাঠ পেরিয়ে তাদের সামনে পড়ল মধুখালির বিল। প্রাচীনকালের শুকিয়ে যাওয়া নদী এই মধুখালির বিলে ফুটে আছে অজস্র পদ্মফুল। অপু গাড়িতে বসে মাঠ ও চারদিকের অপরূপ আকাশের রংটা দেখতে দেখতে যাচ্ছিল। বসন্ত যেন চৈত্র বৈশাখের মাঠ-বন-বাগান অদ্ভুত আনন্দে ভরিয়ে তুলেছে। কোকিলের এলোমেলো ডাকে, নাগকেশর ফুলের ভারে, বনফুলের গন্ধ ভরা জ্যোৎস্নারাতের দক্ষিণ বাতাসে বসন্ত যেন আনন্দনৃত্য শুরু করেছে। অপু এমন অপরূপ বসন্তঋতু জীবনে প্রথম দেখল।
৩. অপুর শৈশবে দিদি দুর্গার ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে দুর্গা ছাড়া অপুকে ভাবা যায় না। দুর্গা অপুকে নানাভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। দুর্গা নিজে বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়াত এবং সে-ই অপুকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিল। দুর্গাকে আমরা কখনো-কখনো লোভী হিসেবে দেখি। কিন্তু সেই দুর্গাই ভাই অপুকে স্নেহ ও মমতায় ভরিয়ে রেখেছিল। অপুর সমস্ত দুরন্তপনা, মান-অভিমান একমাত্র বুঝতে পারত দুর্গাই। দিদির সঙ্গে আম কুড়োনো, মাঠে-জঙ্গলে ঘুরে গাছ, পাখি চেনা এগুলিতে অপুর খুব আগ্রহ ছিল। ঘরের চাল, নুন চুরি করে দিদির সঙ্গেই সে চড়ুইভাতি করার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। পুঁতির মালা চুরির অপবাদে দিদি মার খেলে মার ওপর অপুর রাগ এবং দিদির জন্য কষ্ট হয়েছিল। দিদির প্রতি রাগ, অভিমান হলেও দিদিকে ঘরে দেখতে না পেলেই তার মন খারাপ করত। দিদির সঙ্গেই রেলের রাস্তা দেখতে গিয়ে পথ হারানোর আনন্দ, পানিফল খাওয়ার আনন্দ, প্রভৃতি ছিল তার শৈশবের অভিজ্ঞতা। তাই গ্রামের বাইরে বেড়াতে গিয়েও দিদির অপূর্ণ সাধ পূরণ করার কথা ভেবেছিল সে। দিদিকে সে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসত।
দুর্গা ছিল অপুর বেড়ে ওঠার সঙ্গী। দিদি তাকে যে জগৎ চিনিয়েছিল তা ছিল অপুর প্রাণের জগৎ। তাই গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সময় দিদির কথাই অপুর বেশি মনে পড়ছিল।
৪. ‘অপু’ চরিত্রটি তোমার কেমন লেগেছে আলোচনা করো।
উত্তরঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র অপু। অপুর শৈশবই এই উপন্যাসের মূল বিষয়। অপু গ্রামবাংলার একটি অতি সাধারণ ছেলে হয়েও আমার চোখে সে অসাধারণ হয়ে উঠেছে। অপু প্রকৃতিকে নিজের মতো করেই দেখে। অপুকে ওর কল্পনাশক্তির জন্যই আর পাঁচজনের থেকে আমার আলাদা মনে হয়েছে। মনের কল্পনা দিয়ে সে মহাভারতের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, আকাশে ওড়ার বৃথা কল্পনা করেছে। আবার সে যাত্রা দেখতে গিয়েও যাত্রার ঘটনার মধ্য দিয়ে বাস্তবকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছে। জন্মভূমির প্রতি অপুর ভালোবাসা আমার মনকে ভরিয়ে তুলেছে। অপু যেভাবে আম কুড়োনোর আনন্দ পেয়েছে, তা এখন আমাদের শৈশবে আর প্রায় নেই বললেই চলে। অপু যেভাবে স্বাধীনভাবে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে পারত সেভাবে আমি পারি না। আমি তাই নিজেকে অপু হিসেবে কল্পনা করে আনন্দ পাই। এভাবেই অপু আমার কাছে একটি প্রিয় চরিত্র হয়ে উঠেছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ। বাকি গুলো একটু তাড়াতাড়ি দিও।
Hello.
Good cheer to all on this beautiful day!!!!!
Good luck 🙂
Thank you 😊