আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর মাধ্যমিক বাংলা | Class 10 Africa Poem Question Answer WBBSE

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর মাধ্যমিক বাংলা | Class 10 Africa Poem Question Answer WBBSE

1. দশম শ্রেণি সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র | Class 10 All Subject Unit Test Question Paper CLICK HERE

2. দশম শ্রেণি বাংলা পাঠ্যবই সমাধান | Class 10 Bengali Textbook Solution CLICK HERE

3. মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যসূচী ২০২৪-২৫ | Madhyamik Bengali Syllabus 2024-25 CLICK HERE

4. মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫ | Madhyamik Exam Routine 2025 CLICK HERE

5. মাধ্যমিক বিগত বছরের সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র | Madhyamik Previous Years Question Paper CLICK HERE

6. মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি অনলাইন MCQ মক্ টেস্ট | Madhyamik Preparation MCQ Mock Test CLICK HERE

আফ্রিকা (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বহু বিকল্পভিত্তিক (MCQ) প্রশ্নোত্তর | আফ্রিকা (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – মাধ্যমিক বাংলা | Madhyamik Bengali Question Answer WBBSE

১. ‘সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পূণ্যবাণী’- ‘সভ্যতার শেষ পূণ্যবাণী’ হলো —
(ক) বিদ্বেষ ত্যাগ করো (খ) ক্ষমা করো
(গ) ভালোবাস (ঘ) মঙ্গল করো

উত্তরঃ (খ) ক্ষমা করো

২. ‘কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল’ — কী বেজে উঠেছিল ?
(ক) সংগীতের মূর্চ্ছনা
(খ) সুন্দরের আরাধনা
(গ) সুরের ঝংকার (ঘ) রাগরাগিনী

উত্তরঃ (খ) সুন্দরের আরাধনা।

৩. ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে’ — ‘তোমাকে’ বলতে বোঝানো হয়েছে —
(ক) ইউরোপকে (খ) আফ্রিকাকে
(গ) আমেরিকাকে (ঘ) ভারতবর্ষকে

উত্তরঃ (খ) আফ্রিকাকে।

৪.’হায় ছায়াবৃতা’ — ‘ছায়াবৃতা’ বলতে বোঝানো হয়েছে —
(ক) এশিয়া মহাদেশকে
(খ) আফ্রিকা মহাদেশকে
(গ) সমগ্র বিশ্বকে (ঘ) ভারতবর্ষকে

উত্তরঃ (খ) আফ্রিকা মহাদেশকে।

৫. দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে’ — মানহারা মানবী হল—
(ক) ইউরোপ (খ) আফ্রিকা (গ) সমগ্র বিশ্ব (ঘ) ভারতবর্ষ

উত্তরঃ (খ) আফ্রিকা

৬. নিভৃত অবকাশে আফ্রিকা চিনেছিল —
(ক) দুর্গমের রহস্য
(খ) জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত
(গ) প্রাকৃতিক রহস্য
(ঘ) রহস্য ও দুর্বোধ সংকেত

উত্তরঃ (খ) জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত

৭. ‘এল মানুষ-ধরার দল’ যাদের নখ ছিল—
(ক) শেয়ালের চেয়ে তীক্ষ্ণ
(খ) নেকড়ের চেয়ে তীক্ষ্ণ
(গ) হায়নার চেয়ে তীক্ষ্ণ
(ঘ) সিংহের চেয়ে ধারালাে

উত্তরঃ (খ) নেকড়ের চেয়ে তীক্ষ্ণ

৮. ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তােমাকে’-কে ছিনিয়ে নিয়ে গেল?
(ক) প্রাচী ধরিত্রী (খ) বনস্পতি
(গ) প্রকৃতির দৃষ্টি (ঘ) রুদ্র সমুদ্রের বাহু

উত্তরঃ (ঘ) রুদ্র সমুদ্রের বাহু

৯. ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি যে কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত –
(ক) মানসী (খ) চিত্রা (গ) গীতাঞ্জলি
(ঘ) পত্রপুট

উত্তরঃ (ঘ) পত্রপুট

১০. ‘এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে’ – ওরা হল –
(ক) ভারতীয় (খ) ইউরোপীয়
(গ) আমেরিকান (ঘ) আফ্রিকান

উত্তরঃ (খ) ইউরোপীয়।

১১.আফ্রিকা হল একটি –
(ক) শহর (খ) মহাসাগর (গ) মহাদেশ
(ঘ) উপমহাদেশ

উত্তরঃ (গ) মহাদেশ

১২.স্রষ্টার অসন্তোষ ছিল –
(ক) তাঁর সৃষ্টির প্রতি (খ) নিজের প্রতি
(গ) আফ্রিকার প্রতি
(ঘ) পশ্চিমি দুনিয়ার প্রতি

উত্তরঃ (খ) নিজের প্রতি

১৩.কবি আদিম যুগের যে বিশেষণ ব্যবহার করেছেন, তা হল—
(ক) চেতনাতীত (খ) দৃষ্টি অতীত
(গ) অপমানিত (ঘ) উদভ্রান্ত

উত্তরঃ (ঘ) উদভ্রান্ত

১৪.নতুন সৃষ্টিকে বারবার বিধ্বস্ত করছিলেন—
(ক) কবি (খ) ছায়াবৃতা (গ) দয়াময় দেবতা
(ঘ) স্রষ্টা

উত্তরঃ (ঘ) স্রষ্টা

১৫.নিজের সৃষ্টিকে বারবার বিধ্বস্ত করছিলেন, কারণ—
(ক) বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমা
(খ) সভ্যের বর্বর লোভ
(গ) নিজের প্রতি অসন্তোষ
(ঘ) আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাত

উত্তরঃ (গ) নিজের প্রতি অসন্তোষ

১৬.যে প্রাচী ধরিত্রীর বুক থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, সে হলো –
(ক) দুর্গমের রহস্য
(খ) দৃষ্টি অতীত জাদু
(গ) যুগান্তরের কবি
(ঘ) রুদ্র সমুদ্রের বাহু

উত্তরঃ (ঘ) রুদ্র সমুদ্রের বাহু

১৭.’রুদ্র সমুদ্রের বাহু’ আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে বেঁধেছিল –
(ক) জলতরঙ্গের বন্ধনে
(খ) নিভৃত অবকাশে (গ) পর্বতকন্দরে
(ঘ) বনস্পতির নিবিড় পাহারায়

উত্তরঃ (ঘ) বনস্পতির নিবিড় পাহারায়

১৮.আফ্রিকার অন্তঃপুরে আলো ছিল –
(ক) দুর্বোধ (খ) কৃপণ (গ) আবিল (ঘ) নগ্ন

উত্তরঃ (খ) কৃপণ

১৯.নিভৃত অবকাশে আফ্রিকা সংগ্রহ করছিল—
(ক) দুর্বোধ সংকেত (খ) ভাষাহীন ক্রন্দন
(গ) নির্লজ্জ অমানুষতা (ঘ) দুর্গমের রহস্য

উত্তরঃ (ঘ) দুর্গমের রহস্য

২০.আফ্রিকা চিনেছিল জল-স্থল-আকাশের –
(ক) দুর্বোধ সংকেত (খ) দুর্গমের রহস্য
(গ) জাদু (ঘ) বিদ্রূপ

উত্তরঃ (ক) দুর্বোধ সংকেত

২১.প্রকৃতির দৃষ্টি অতীত জাদু আফ্রিকার মনে যা জাগাচ্ছিল , তা হল –
(ক) বিভীষিকা (খ) অসন্তোষ (গ) ক্রন্দন
(ঘ) মন্ত্র

উত্তরঃ (ঘ) মন্ত্র

২২.আফ্রিকা বিদ্রূপ করছিল –
(ক) নতুন সৃষ্টিকে (খ) শঙ্কাকে
(গ) আপনাকে (ঘ) ভীষণকে

উত্তরঃ (ঘ) ভীষণকে

২৩.আফ্রিকা বিদ্রূপ করছিল ভীষণকে –
(ক) বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়
(খ) কালো ঘোমটার নীচে
(গ) বিরূপের ছদ্মবেশে
(ঘ) তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে

উত্তরঃ (গ) বিরূপের ছদ্মবেশে

২৪.কে শঙ্কাকে হার মানাতে চাইছিল ?
(ক) কবি (খ) আফ্রিকা
(গ) রুদ্র সমুদ্রের বাহু (ঘ) দৃষ্টি অতীত জাদু

উত্তরঃ (খ) আফ্রিকা

২৫.’তাণ্ডব’ শব্দের অর্থ হলো –
(ক) উদ্দাম নাচ (খ) তছনছ করা
(গ) হইচই করা (ঘ) অপমান

উত্তরঃ (ক) উদ্দাম নাচ

২৬.’আফ্রিকা’ কবিতায় কবি ‘ছায়াবৃতা’ সম্বোধন করেছেন –
(ক) আদিম অরণ্যকে
(খ) আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গী ক্রীতদাসীকে
(গ) আফ্রিকাকে
(ঘ) ঔপনিবেশিক শাসনকে

উত্তরঃ (গ) আফ্রিকাকে

২৭.আফ্রিকাকে কবি ছায়াবৃতা বলে সম্বোধন করেছেন, কারণ—
(ক) আফ্রিকার লোকেদের গায়ের রং কালো
(খ) আফ্রিকা জঙ্গলাকীর্ণ
(গ) আফ্রিকায় ছ – মাস রাত্রি থাকে
(ঘ) মানচিত্রে আফ্রিকাকে কালো বিন্দুর মতো লাগে

উত্তরঃ (খ) আফ্রিকা জঙ্গলাকীর্ণ

২৮.কালো ঘোমটার নীচে কী অপরিচিত ছিল ?
(ক) উপেক্ষার আবিল দৃষ্টি
(খ) আফ্রিকার মানবরূপ
(গ) সভ্যের বর্বর লোভ
(ঘ) মানুষের শুভবুদ্ধি

উত্তরঃ (খ) আফ্রিকার মানবরূপ

২৯.উপেক্ষার দৃষ্টি কেমন ছিল ?
(ক) আবিল (খ) তীক্ষ্ণ (গ) বর্বর (ঘ) অন্ধ

উত্তরঃ (ক) আবিল

৩০.’আফ্রিকা’ কবিতায় ‘ওরা’ এলো—
(ক) লোহার হাতকড়ি নিয়ে
(খ) মানুষ ধরার দল নিয়ে
(গ) অরণ্যপথে (ঘ) সমুদ্রপারে

উত্তরঃ (ক) লোহার হাতকড়ি নিয়ে

৩১.’এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে’ — ওরা হল –
(ক) ভারতীয় (খ) আমেরিকান
(গ) ইউরোপীয় (ঘ) জংলি উপজাতি

উত্তরঃ (গ) ইউরোপীয়

৩২.মানুষ ধরার দলের নথ ছিল –
(ক) নেকড়ের চেয়ে তীক্ষ্ণ
(খ) ইগলের চেয়ে কঠিন
(গ) সিংহের চেয়ে ধারালো
(ঘ) বাঘের চেয়ে নির্দয়

উত্তরঃ (ক) নেকড়ের চেয়ে তীক্ষ্ণ

৩৩.মানুষ ধরার দল গর্বে যার চেয়েও বেশি অন্ধ ছিল –
(ক) ভাষাহীন ক্রন্দন (খ) কৃপণ আলো
(গ) সূর্যহারা অরণ্য (ঘ) বীভৎস কাদার শিশু

উত্তরঃ (গ) সূর্যহারা অরণ্য

৩৪.সভ্যের লোভ কেমন ?
(ক) নির্লজ্জ (খ) আবিল (গ) বর্বর (ঘ) পঙ্কিল

উত্তরঃ (গ) বর্বর

৩৫.সভ্যের বর্বর লোভ নগ্ন করল –
(ক) উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিকে
(খ) আপন নির্লজ্জ অমানুষতাকে
(গ) আফ্রিকার মানবরুপকে
(ঘ) মানুষ ধরার দলকে

উত্তরঃ (খ) আপন নির্লজ্জ অমানুষতাকে

৩৬.আফ্রিকার ক্রন্দন কেমন ?
(ক) ভদ্র (খ) বীভৎস (গ) আবিল
(ঘ) ভাষাহীন

উত্তরঃ (ঘ) ভাষাহীন

৩৭.অরণ্যপথ কেমন হলো ?
(ক) সূর্যহারা (খ) অন্ধ (গ) বাষ্পাকুল
(ঘ) পিচ্ছিল

উত্তরঃ (গ) বাষ্পাকুল

৩৮.অরণ্যপথে ধূলি পঙ্কিল হল –
(ক) রক্তে মিশে (খ) অশ্রুতে মিশে
(গ) ঘামে ভিজে (ঘ) রক্তে অশ্রুতে মিশে

উত্তরঃ (ঘ) রক্তে অশ্রুতে মিশে

৩৯.‘তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে / পঙ্কিল হল ধূলি তোমার ____ মিশে।’ ( শূন্যস্থান )
(ক) বিরূপের ছদ্মবেশে
(খ) অপমানিত ইতিহাসে
(গ) শেষ রশ্মিপাতে
(ঘ) রক্তে অশ্রুতে

উত্তরঃ (ঘ) রক্তে অশ্রুতে

৪০.যারা কাঁটা-মারা জুতো পরেছিল, তারা হল—
(ক) দস্যু (খ) নেকড়ে (গ) মানুষ ধরার দল
(ঘ) পশু

উত্তরঃ (ক) দস্যু

৪১.বীভৎস কাদার পিন্ড কী দিয়ে গেল ?
(ক) ভাষাহীন ক্রন্দন (খ) পদচিহ্ন
(গ) চিরচিহ্ন (ঘ) অপমান

উত্তরঃ (গ) চিরচিহ্ন

৪২.‘বীভৎস কাদার পিণ্ড চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার ____ ( শূন্যস্থান)।
(ক) কালো ঘোমটার নীচে
(খ) কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে
(গ) অপমানিত ইতিহাসে
(ঘ) মায়ের কোলে

উত্তরঃ (গ) অপমানিত ইতিহাসে।

৪৩.যে মন্দিরে পূজার ঘণ্টা বাজছিল, তা অবস্থিত –
(ক) রুদ্ধ সমুদ্রে (খ) সমুদ্রপারে
(গ) সূর্যহারা অরণ্যে (ঘ) মানবীর দ্বারে

উত্তরঃ (খ) সমুদ্রপারে

৪৪.পূজার ঘণ্টা কখন বাজছিল ।
(ক) সকালে (খ) সন্ধ্যায় (গ) সকালে সন্ধ্যায়
(ঘ) মধ্যরাতে

উত্তরঃ (গ) সকালে সন্ধ্যায়

৪৫.কার নামে পুজার ঘণ্টা বাজছিল ?
(ক) সভ্য দেশগুলির নামে
(খ) ঔপনিবেশিক শাসকের নামে
(গ) আফ্রিকার রাজার নামে
(ঘ) দয়াময় দেবতার নামে

উত্তরঃ (ঘ) দয়াময় দেবতার নামে

৪৬.কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল—
(ক) মধুর বাংকার (খ) পূজার ঘণ্টা
(গ) সুন্দরের আরাধনা (ঘ) সুরের মূর্ছনা

উত্তরঃ (গ) সুন্দরের আরাধনা

৪৭.শিশুরা খেলছিল _____ ।
(ক) মায়ের কোলে (খ) পাড়ায় পাড়ায়
(গ) গুপ্ত গহ্বরে (ঘ) বাষ্পাকুল অরণ্যপথে

উত্তরঃ (ক) মায়ের কোলে

৪৮.আজ কোন্ দিকে ঝড় আসছে ?
(ক) পূর্ব দিগন্তে (খ) পশ্চিম দিগন্তে
(গ) উত্তর দিগন্তে (ঘ) দক্ষিণ দিগন্তে

উত্তরঃ (ঘ) পশ্চিম দিগন্তে

৪৯.পশ্চিম দিগন্তে কোন সময়ে ঝড় আসছে ?
(ক) প্রভাত কালে (খ) দ্বিপ্রহরে
(গ) গোধূলি বেলায় (ঘ) প্রদোষ কালে

উত্তরঃ (ঘ) প্রদোষ কালে

৫০.‘প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস’— ‘ ‘প্রদোষ’ শব্দের অর্থ –
(ক) ভোর (খ) রাত্রি (গ) দুপুর (ঘ) সন্ধ্যা

উত্তরঃ (ঘ) সন্ধ্যা

আফ্রিকা (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর | আফ্রিকা (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – মাধ্যমিক বাংলা | Madhyamik Bengali Question Answer WBBSE

১. “ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে”- কে, কাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ?

উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতায় রুদ্র সমুদ্রের বাহু অর্থাৎ উত্তাল সমুদ্র পৃথিবীর পূর্বভাগ থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ।

২. “হায় ছায়াবৃতা”- আফ্রিকাকে ছায়াবৃতা বলার কারণ কী ?

উত্তরঃ মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকা পৃথিবীর জ্ঞানালোক থেকে বিছিন্ন হয় অন্যদিকে দুর্গম ও আদিম জঙ্গলাকীর্ণ প্রকৃতি তাকে ছায়াবৃতা করে রাখে।

৩. “কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল” – কী বেজে উঠেছিল ?

উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতায় কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল সুন্দরের আরাধনা।

৪. “এসো যুগান্তের কবি” – কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘যুগান্তের কবি’র কাছে কোন্ আহ্বান জানিয়েছেন ?

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় যুগান্তের কবির কাছে মানহারা মানবী তথা আফ্রিকার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সকলের হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন।

৫. “বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে” – কীভাবে ‘বিদ্রূপ’ করেছিল ?

উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আফ্রিকা মহাদেশ রহস্যময়তায় ভর করে ভয়াবহ ভীষণকেই যেন বিদ্রুপ করেছিল ?

৬. “শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে”- কে, কীভাবে শঙ্কাকে হার মানাতে চেয়েছিল ?

উত্তরঃ দুর্গম দুর্ভেদ্য ছায়াবৃতা আফ্রিকা নিজেকে উগ্র করে বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়, বিধ্বংসী তাণ্ডবলীলার প্রচন্ড শব্দে শঙ্কাকে হার মানাতে চেয়েছিল।

৭. “… অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ/ উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।”- কার মানবরূপ, কাদের কাছে উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে অপরিচিত ছিল ?

উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতার প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে আফ্রিকা মহাদেশের মানবরূপ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর কাছে উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে যেন অরণ্যে ঢাকা কালো ঘোমটার নীচে অপরিচিত ছিল।

৮. “চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে”- চিরচিহ্ন বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তরঃ আফ্রিকা কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক অত্যাচারে যুগ যুগ ধরে ক্ষতবিক্ষত আফ্রিকার কলঙ্কিত ইতিহাসকে ‘চিরচিহ্ন’ বলতে চেয়েছেন।

৯. “নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে”- এর দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আফ্রিকার মানুষদের উপর সাম্রাজ্যবাদী শাসকের বর্বর ও পাশবিক অত্যাচারের ভয়াবহতার কথা বলতে গিয়ে তাদের বন্য নেকড়ের চেয়েও নিষ্ঠুর অহিংস বলে অভিহিত করেছেন।

১০. “বলো ক্ষমা করো” – কীসের জন্য এই ক্ষমাপ্রার্থনা ?

উত্তরঃ ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীর দল যুগ যুগ ধরে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আফ্রিকার সংস্কৃতি ও জনগোষ্ঠীর ওপর পাশবিক শোষণ চালিয়েছে। তার জন্য মানব সভ্যতার প্রতিনিধি হয়ে যুগান্তের কবির এই ক্ষমাপ্রার্থনা।

১১. “এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে”- ওরা কারা ?

উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ‘ওরা’ বলতে সভ্যতার গর্বে গরিমাময় অত্যাচারী ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

১২. ‘নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত – নতুন সৃষ্টিটি কী ?

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় নতুন সৃষ্টি বলতে এই পৃথিবীর আদিম শৈশবের কথা বলেছেন।

১৩. ‘কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল— কী বেজে উঠেছিল ?

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ আফ্রিকা ’ কবিতা অনুসারে কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল সুন্দরের আরাধনা ।

১৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ আফ্রিকা ‘ কবিতায় শেষ পুণ্যবাণীটি কী ছিল ?

উত্তরঃ শ্বেতাঙ্গ সাম্রাজ্যবাদী শাসকের নির্দয় অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত আফ্রিকার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনাকেই কবি হিংস্র প্রলাপের মাঝে সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী বলে মনে করেছেন ।

১৫. ‘এসো যুগান্তের কবি …. – কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘যুগান্তের কবি’র কাছে কোন্ আহ্বান জানিয়েছেন ?

অথবা,

কবির ভূমিকাটি কী হবে ?

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ‘যুগান্তের কবি’র কাছে, ‘মানহারা মানবী’ তথা আফ্রিকার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সকলের হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন। অর্থাৎ যুগান্তের কবি মানবতার পুণ্যবাণীতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ ও দীক্ষিত করবেন।

১৬. ‘শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে;’— কখন শিশুরা খেলছিল ?

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতা অনুসারে বর্বর শ্বেতাঙ্গ শাসকের হাতে আফ্রিকার মানুষেরা যখন শোষিত ও অত্যাচারিত হচ্ছিল, তখন সমুদ্রপারে তাদের দেশে মন্দিরে বাজছিল ঘণ্টাধ্বনি আর নিশ্চিত্তে নিরাপদে শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে।

১৭. ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, – ‘তোমাকে’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ?

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা অনুসারে পৃথিবীর আদিম শৈশবে উত্তাল সমুদ্র, ধরিত্রীর পূর্বভাগ থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

১৮. ‘সভ্যের বর্বর লোভ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

উত্তরঃ ইউরোপের তথাকথিত ‘সভ্য’ জাতিগুলি আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে সেখানকার সম্পদ লুঠ করে স্থানীয় মানুষদেরকে ক্রীতদাসে পরিণত করে। এই নির্মমতাকেই কবি শ্বেতাঙ্গ সাম্রাজ্যবাদীদের ‘বর্বর লোভ’ বলে অভিহিত করেছেন।

১৯. ‘এল মানুষ-ধরার দল’– মানুষ ধরার দলের স্বভাব কেমন ছিল ?

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ‘মানুষ – ধরার দল’ অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদী শ্বেতাঙ্গ শাসকেরা ছিল নিষ্ঠুর অত্যাচারী দাসব্যবসায়ী। তারা পীড়ন – অপমান ও লাঞ্ছনায় আফ্রিকাকে বিধ্বস্ত করেছিল।

২০. ‘নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।’– কীভাবে নির্লজ্জ অমানুষতা প্রকাশ পেল ?

উত্তরঃ পাশ্চাত্য ঔপনিবেশিক শক্তির নির্মম অত্যাচার ও আগ্রাসনে ক্ষতবিক্ষত হয় আফ্রিকা মহাদেশ। প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ, স্থানীয় সংস্কৃতির বিনাশ এবং কদর্য দাসপ্রথার প্রচলনের মধ্য দিয়ে শ্বেতাঙ্গ শাসকেরা তাদের ‘নির্লজ্জ অমানুষতা’র প্রকাশ ঘটিয়েছিল।

২১. ‘স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে’— স্রষ্টা নিজের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন কেন ?

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা অনুসারে, উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম সময়ে স্রষ্টা তাঁর নিজের সৃষ্টির মধ্যে খুঁত বা ঘাটতি দেখে বিরূপতায় নিজের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছিলেন।

২২. বিদ্রূপ করেছিলে ভীষণকে কীভাবে ‘বিদ্রূপ’ করেছিল ?

উত্তরঃ পাঠ্য কবিতা অনুসারে আফ্রিকা মহাদেশ আদিম রহস্যময়তায় ভর করে ভয়াবহ ভীষণকেই যেন বিদ্রূপ করেছিল ।

২৩. ‘তোমার চেতনাতীত মনে।’— ‘চেতনাতীত’ কথাটি কী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে ?

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় কল্পনা করা যায় এমন সময়কালেরও আগেকার সময়কে বোঝাতে ‘চেতনাতীত’ শব্দটিকে ব্যবহার করা হয়েছে।

২৪. ‘এল মানুষ-ধরার দল ‘ মানুষ – ধরার দল বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় নির্মম অত্যাচারী ও দাসব্যবসায়ী ঔপনিবেশিক শ্বেতাঙ্গ শাসককে ‘মানুষ – ধরার দল’ বলা হয়েছে।

২৫. ‘কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে’ বলার অর্থ কী ?

উত্তরঃ ‘কৃপণ আলোর অন্তঃপুরো কথাটির অর্থ যেখানে আলোর প্রবেশপথ সুগম নয়। অর্থাৎ উদ্ধৃতাংশটি জঙ্গলময় আফ্রিকার দুর্গম ও অন্ধকার রহস্যময়তার প্রতীক।

২৬. ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, আফ্রিকা কোথা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ?

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতা অনুসারে উত্তাল সমুদ্র, প্রাচী ধরিত্রীর হৃদয় থেকে অর্থাৎ পৃথিবীর পূর্বভাগ থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

২৭. মানহারা মানবীর দ্বারে কাকে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতায় যুগান্তের কবিকে মানহারা মানবীর স্বারে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

২৮. ‘চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে ‘চিরচিহ্ন’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক শাসকের অত্যাচারে, অপমানে যুগ যুগ ধরে ক্ষতবিক্ষত আফ্রিকার কলঙ্কিত ইতিহাসকে কবি ‘চিরচিহ্ন’ শব্দটির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।

২৯. ‘কালো ঘোমটার নীচে / অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ…’– ‘কালো ঘোমটা’ বলা হয়েছে কেন ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকাস’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃত অংশে আদিম অরণ্যে ঘেরা আফ্রিকার যে ছায়া ও অন্ধকারের বিস্তার, তাকেই ‘কালো ঘোমটা’ আখ্যায়িত করা হয়েছে।

৩০. অপরিচিত ছিল তোমার মানবরুপ / উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে ! — কার মানবরূপ, কাদের কাছে উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে অপরিচিত ছিল ?

উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে আফ্রিকা মহাদশের মানবরূপ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির কাছে উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে যেন অরণ্যে ঢাকা ‘কালো ঘোমটা’র নীচে অপরিচিত ছিল।

৩১. ‘উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে’ কী ঘটেছিল ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় উদ্ভ্রান্ত আদিম যুগে স্রষ্টা নিজের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর সৃষ্টিকে নিখুঁত করার জন্য সৃষ্টিকে বারবার বিধ্বস্ত করছিলেন।

৩২. ‘তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা নাড়ার দিনে’– ঘনঘন মাথা নাড়ার কারণ কী ছিল ?

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতায় স্রষ্টা তাঁর নতুন সৃষ্টির প্রতি বিরূপ হয়ে তাকে নিখুঁত করার জন্য অর্থাৎ বারংবার প্রাকৃতিক পটভূমি পরিবর্তনের জন্য অধৈর্যে ঘনঘন মাথা নাড়ছিলেন ।

৩৩. ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, আফ্রিকা’– কে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ?

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতা অনুসারে স্রষ্টা নিজের সৃষ্টির প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যখন বারবার প্রাকৃতিক পটভূমির বদল ঘটাচ্ছিলেন সেইসময় উত্তাল সমুদ্র পৃথিবীর পূর্বভাগ থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

৩৪. সমুদ্র আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে কীভাবে রেখেছিল ?

উত্তরঃ সমুদ্র পৃথিবীর পূর্বভাগ থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে নিবিড় অরণ্যের অন্ধকারে বন্দি করে রেখেছিল।

৩৫. আফ্রিকা নিভৃত অবকাশে কী করছিল ?

উত্তরঃ সমুদ্র যখন পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকাকে বিচ্ছিন্ন করেছিল তখন অরণ্যের অন্ধকারে আফ্রিকা দুর্গমের রহস্য সংগ্রহে ব্যস্ত ছিল।

৩৬. ‘চিনেছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত’— কে চিনেছিল ?

উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে গৃহীত প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে জল-স্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেতকে আফ্রিকা চিনেছিল।

৩৭. আফ্রিকা উপেক্ষিত কেন ?

উত্তরঃ আফ্রিকার প্রাকৃতিক দুর্গমতা ও রহস্যময়তা পৃথিবীর বাকি অংশ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। আধুনিক সভ্যতার আলো সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি, তাই সে উপেক্ষিত।

৩৮. ‘এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে’– ‘ওরা’ কারা ?

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ‘ওরা’ বলতে অত্যাচারী ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের বলা হয়েছে, যারা আফ্রিকার মানুষদের বন্দি করে ক্রীতদাসে পরিণত করেছিল।

৩৯. ‘গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে’– তাৎপর্য লেখো।

উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ক্ষমতাবলে আফ্রিকার সভ্যতা, সংস্কৃতি ও মানবতার অপমৃত্যু ঘটিয়েছে। তাই ‘আফ্রিকা’ কবিতায় তাদের গর্বকে আফ্রিকার গভীর অন্ধকার বনভূমির চেয়েও অন্ধ বলা হয়েছে।

৪০. ঔপনিবেশিকদের আগমনে আফ্রিকার অবস্থা কী হয়েছিল ?

উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অমানবিক অত্যাচারে সাধারণ মানুষের রক্তে ও অশ্রুতে আফ্রিকার বনপথের ধুলো কর্দমাক্ত হয়েছে। শাসকের কাঁটা-মারা জুতোর তলার কাদার পিণ্ড আফ্রিকার ইতিহাসে চিরচিহ্ন এঁকে যায়।

৪১. ‘সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই’— কোন্ মুহূর্তের কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতার উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে আফ্রিকা যখন শোষিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছিল সেই মুহূর্তের কথা বলা হয়েছে।

৪২. আফ্রিকার দুর্দিনে কবি কীভাবে তার পাশে থাকতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ঘোর বিরোধী রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শাসন– পীড়নে ক্ষতবিক্ষত আফ্রিকার ওপর নির্মম অত্যাচার ও অপমানের জন্য যুগান্তের প্রতিভূ হয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইতে চান।

৪৩. ‘আজ যখন পশ্চিম দিগন্তে’– পশ্চিম দিগন্তে কী ঘটে চলেছিল ?

উত্তরঃ ‘পশ্চিম দিগন্তে’ অর্থাৎ পাশ্চাত্য দেশগুলিতে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে মানুষের মধ্যেকার পাশবিক শক্তি বেরিয়ে এসে অশুভ ধ্বনিতে সভ্যতার অন্তিমকাল ঘোষণা করছিল।

৪৪. ‘বলো ‘ক্ষমা করো’ – কীসের জন্য এই ক্ষমাপ্রার্থনা ?

উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসহ সভ্য দুনিয়া যুগ যুগ ধরে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আফ্রিকার সংস্কৃতি ও জনজাতির ওপর বর্বরোচিত শোষণ চালিয়েছে । তার জন্য মানবসভ্যতার প্রতিনিধি হয়ে যুগান্তের কবির এই ক্ষমাপ্রার্থনা।

৪৫. ‘সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায় কী ঘটে চলেছিল ?

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতা অনুসারে সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়াতে দয়াময় দেবতার নামে সকাল-সন্ধ্যায় মন্দিরে বেজেছিল পুজোর ঘণ্টা। সেসময় মায়ের কোলে শিশুরা খেলছিল আর কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল সুন্দরের আরাধনা।

৪৬. ‘নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে এর দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ আফ্রিকার মানুষদের ওপর সাম্রাজ্যবাদী শ্বেতাঙ্গ শাসকের বর্বর ও পাশবিক অত্যাচারের ভয়াবহতার কথা বলতে গিয়ে তাদের বন্য নেকড়ের চেয়েও নিষ্ঠুর এবং হিংস্র বলে অভিহিত করেছেন।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নোত্তর | আফ্রিকা (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – মাধ্যমিক বাংলা | Madhyamik Bengali Question Answer WBBSE

১. ‘স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে’ – ‘স্রষ্টা কে ? তিনি নিজের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন কেন ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে অংশটি গৃহীত। যিনি সৃষ্টি করেন তিনিই স্রষ্টা। এখানে কবি ঈশ্বরকেই ‘স্রষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন।

অসন্তুষ্টির কারণ : স্রষ্টার ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্টি হয় না যতক্ষণ না তাঁর সৃষ্টিকর্ম নিজের মনোমতো হয়। সেই সত্যকে কল্পনা করেই কবি বলতে চেয়েছেন সৃষ্টির আদিম লগ্নে ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টিকে বারবার ধ্বংস করে নতুনভাবে গড়ে তুলছিলেন। কিন্তু তা কখনোই তাঁর মনোমতো হচ্ছিল না। এই কারণে তিনি নিজের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন।

২. ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে’ – ‘তোমাকে’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? কে তাকে কোথা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ?

অথবা,

“ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে’- ‘তোমাকে’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? এই উত্তির মধ্য দিয়ে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ‘তোমাকে’ বলতে আফ্রিকা মহাদেশকে বোঝানো হয়েছে।

আদিম পৃথিবীর বুকে ঘটে যাওয়া ভৌগোলিক বিবর্তনকে এখানে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন এক আশ্চর্য ব্যঞ্জনায়। বৈজ্ঞানিকদের মতে টেকটনিক প্লেটগুলির নড়াচড়ার ফলেই এশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কবি এরই কাব্যিক রূপ দিয়ে বলেছেন, রুদ্র সমুদ্র মূল ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে যেন বনস্পতির নিবিড় পাহারায় কৃপণ আলোর অন্তরালে তাকে নিক্ষেপ করেছিল।

৩. ‘হায় ছায়াবৃতা’ – ‘ছায়াবৃতা’ কে ? তাকে ছায়াবৃত বলার কারণ কী ?

‘অথবা,

‘অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ’ বলার কারণ কী ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আফ্রিকা মহাদেশকে ‘ছায়াবৃতা’ বলে সম্বোধন করেছেন।

ছায়াবৃতা বলার কারণ : ‘ছায়াবৃতা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ছায়া দ্বারা আবৃতা বা ছায়াঢাকা। দুর্গম অরণ্যে ঘেরা আফ্রিকা মূল ভূখণ্ড থেকে বহুদূরে অবস্থিত। আধুনিক সভ্যতা ও জ্ঞানের আলো থেকে সে বঞ্ছিত। দুর্গমতার কারণে উনিশ শতকের আগে পর্যন্ত আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ ও নিজস্ব সংস্কৃতি বাকি বিশ্বের কাছে অজানাই রয়ে গেছে তার রহস্যময় অরণ্যের মতোই।

৪. ‘দাঁড়াও মানহারা মানবীর দ্বারে’ – কাকে ‘মানহারা মানবী’ বলা হয়েছে ? তাকে আহ্বান করার কারন কি ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ‘মানহারা মানবী’ বলতে ‘আফ্রিকার কথা বলা হয়েছে।

আহ্বানের কারণ : ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী দস্যুদের পায়ের কাঁটা মারা জুতোর তলায় ক্ষত বিক্ষত হয়েছে আফ্রিকার মাটি। সভ্য মানুষ কখনো ফিরে তাকায়নি মানহারা মানবীর দিকে। যুগান্তরের কবি সভ্য মানুষের প্রতিনিধি। তাই মানহারা আফ্রিকার দ্বারে দাঁড়িয়ে সমগ্র সভ্য মানুষের হয়ে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। এই কারণেই কবি তাকে আহ্বান করেছেন৷

৫. ‘এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে’ – ওরা কারা ? ওদের হাতকড়ি নিয়ে আসার কারণ কী ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ আফ্রিকা’ কবিতায় ‘ওরা’ বলতে অত্যাচারী ইউরোপীয়
ঔপনিবেশিকদের কথা বলা হয়েছে।

হাতকড়ি নিয়ে আসার কারণ : ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী দস্যুদের পায়ের কাঁটা মারা জুতোর তলায় ক্ষত বিক্ষত হয়েছে আফ্রিকার মাটি। অত্যাচারী ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরা এসে আফ্রিকার মানুষদের বন্দি করে ক্রীতদাসে পরিনত করে। এই ক্রীতদাসদের বন্দি করার জন্য হাতকড়ি নিয়ে আসা হয়।

৬. ‘চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে’ – কারা, কীভাবে কিসের চিরচিহ্ন দিয়ে গেল ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ‘ওরা’ বলতে অত্যাচারী ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের কথা বলা হয়েছে।

চিরচিহ্নের মুদ্রন : সৃষ্টির সূচনা থেকে আফ্রিকা অরণ্যাবৃত। তথাকথিত সভ্য ইউরোপীয় সভ্যতার চোখেও আফ্রিকা ছিল উপেক্ষিত। আফ্রিকার সম্পদের সন্ধান পেতে এই শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিক তথা সাম্রাজ্যবাদীর দল শুরু করে মানবিক লাঞ্ছনা। এইসব অত্যাচারিত মানুষের রক্ত ও অশ্রুতে কর্দমাক্ত হয় আফ্রিকার বনপথের ধুলো। সাম্রাজ্যবাদী দস্যুদের কাঁটা মারা জুতোর তলার কাদার পিন্ড এভাবেই আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাসে চিরচিহ্ন দিয়ে গেল।

৭. ‘এসো যুগান্তেরের কবি’ – কবি কখন যুগান্তরের কবিকে আহ্বান করেছেন ? যুগান্তরের কবিকে কবি কোন উপদেশ শোনাবেন ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ আফ্রিকা’ কবিতায় কবি দেখতে পেলেন দিনের অন্তিম কালে পশ্চিম দিগন্তে অর্থাৎ ইউরোপের দেশে দেশে ‘প্রদোষকাল ঝঞ্ঝা বাতাসে রুদ্ধশ্বাস’ ‘গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল। ঠিক সেই সময়ে কবি যুগান্তরের কবিকে আহ্বান করেছেন।

উপদেশ : আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাত যখন প্রকৃতিকে অন্য এক মাত্রা দিয়েছে তখন ক্রান্তদর্শী কবি রবীন্দ্রনাথ যুগান্তরের কবিকে মানহারা মানবীর দ্বারে অর্থাৎ অপমানিত ইতিহাসের রূপাঙ্কনের বাস্তব ভূমিতে দাঁড়িয়ে হিংস্র প্রলাপের মধ্যে ‘ক্ষমা করো’র মতো উপদেশ শোনাবেন ।

৮. ‘কৃপন আলোর অন্তঃপুরে’- কবিতা অনুসারে বক্তব্যটি লেখো।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে।

বক্তব্য : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত আফ্রিকা কবিতায় আফ্রিকার ভৌগোলিক, রাজনৈতিক সম্পর্কে মরমি বিশ্লেষণ রয়েছে। বনস্পতির নিবিড় আলিঙ্গনে, অরণ্যের দুর্ভেদ্য আলো ছায়ায় আবৃত থাকে আফ্রিকা। নিরক্ষীয় জলবায়ুর অন্তর্গত হওয়ার জন্য বৃহৎ পাতা বিশিষ্ট গাছের সৃষ্টি হয় এখানে। অসংখ্য বৃক্ষ ঘন সন্নিবিষ্ট হওয়ায় অতি সামান্য আলোটুকু প্রবেশের অধিকার পায় না। অন্ধকারে আবৃত থাকে আফ্রিকার অধিকাংশ প্রান্তর।

৯. ‘বিদ্রপ করেছিল ভীষণকে’ – কে কীভাবে ভীষণকে বিদ্রুপ করেছিল?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে।

ভীষণকে ব্যঙ্গ : আফ্রিকা নামাঙ্কিত কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৃথিবীর অন্য মহাদেশ থেকে বিছিন্ন আফ্রিকাকে ধীরে ধীরে সাবলম্বী হতে দেখেছিলেন। নিভৃত অবকাশে দুর্গমের রহস্য সংগ্রহ করেছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ ভূখন্ড। চিনেছিল জল, স্থল। আকাশের দুর্বোধ সংকেত। প্রকৃতি তাকে দিয়েছিল অপার রহস্যময়তা। অতীত জাদু মন্ত্ৰ জাগাচ্ছিল আফ্রিকার চেতনাতীত মনে৷ আফ্রিকার ওপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আস্ফালনকে আফ্রিকা নিজেই চিনে নিতে চাইছিল। সেই ভীষণ শক্তিশালী শক্তিকে ব্যঙ্গ করার স্পর্ধা অর্জন করেছিল।

১০. ‘নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে’ – ‘তোমার’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? কাদের নখ কেন নেকড়ের থেকে তীক্ষন ?

উত্তরঃ তোমার বলতে আফ্রিকা মহাদেশের কথা বলা হয়েছে।

সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হিংস্রতা : দুর্ভেদ্য জঙ্গলে পরিবৃত আফ্রিকার হিংস্র আরণ্যক প্রাণীদের অন্যতম হল নেকড়ে। নেকড়ের তীক্ষ্ণ নখের থেকেও সূচালো ও ধারালো হল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন। পশ্চিমী দুনিয়া আফ্রিকার ওপর বর্বর উল্লাসে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এদের আগ্রাসনের কথা বলতে গিয়ে কবি ‘নখ যাদের তীক্ষ্ণ’ এই বাক্য বন্ধটি প্রয়োগ করে দুনিয়ার লোলুপ হিংস্রতাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছেন। কবি এখানে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে আলোচ্য উক্তিটি প্রকাশ করেছেন।

১১. “বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়”– ‘বনস্পতির নিবিড় পাহারা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে আফ্রিকার কথা বলা হয়েছে।

বনস্পতির নিবিড় পাহারা’ : আফ্রিকা মহাদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল, বিশেষত, মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায় নিরক্ষীয় অঞ্চল হওয়ার জন্য ঘন অরণ্য রয়েছে। সেই নিবিড় অরণ্য ভেদ করে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। প্রকৃতি যেন নিবিড়, নিছিদ্র পাহারায় বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে আফ্রিকাকে। এই ভৌগোলিক সত্যকেই রবীন্দ্রনাথ কাব্যিকভাবে তুলে ধরেছেন।

১২. “আপনাকে উগ্র করে বিভীষিকার প্রচন্ড মহিমায়” – প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করো ।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে।

ব্যাখ্যা : সভ্যতাসৃষ্টির প্রথম পর্বে আফ্রিকা বাইরের পৃথিবীর কাছে নিজেকে পরিচিত করেছিল তার ভয়ংকর স্বরূপের মধ্য দিয়ে। আফ্রিকার প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাই একসময় তাকে রক্ষা করেছিল বহিঃশক্তির হাত থেকে। তার দুর্ভেদ্য অরণ্য ভেদ করে প্রবেশ করার অধিকার সূর্যরশ্মিরও ছিল না। বিরূপের ছদ্মবেশে আফ্রিকা যেন ভীষণ বহিঃপ্রকৃতিকে বিদ্রুপ করেছিল। নিজের ভয়কে সে জয় করেছিল বিভীষিকাকে আশ্রয় করে।

১৩. ‘এল মানুষ ধরার দল’ – কবি কাদের কথা বলেছেন ? তাদের স্বরূপ বিচার করো।

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ‘মানুষ-ধরার দল’ বলতে নির্দয় ও হিংস সাম্রাজ্যবাদী শাসকের কথা বলেছেন।

স্বরূপ বিচার : শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিক শক্তির লাঞ্ছনা এবং নির্যাতনে আফ্রিকার বনজঙ্গল বারংবার রক্তাক্ত হয়েছিল। তাদের নির্বিচার খুন ও হত্যার নৃশংসতায়; তারা হয়ে উঠেছিল বন্য নেকড়ের চেয়েও হিংস্র এবং কদর্য। অবক্ষয়ী এই তথাকথিত সভ্যরা ছিল দাস-ব্যবসায়ী। কবির মতে নিরীহ মানুষকে পণ্য হিসেবে কেনা-বেচা করার মিথ্যা গর্ব কিংবা অহমিকা আসলে এদের অসভ্য অমানবিকতার প্রকাশ। ইউরোপীয় শাসককুলের বর্বর লোভের এই ঘৃণ্য-করুণ ইতিহাসটিই কখনও ‘এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে’ কিংবা ‘এল মানুষ-ধরার দল’ শব্দবন্ধের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

১৪. “অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ / উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে”- মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখো ।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে ।

তাৎপর্য : আদিম অরণ্য আর মরুভূমি অধ্যুষিত আফ্রিকা এক দীর্ঘ সময় ছিল বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগহীন। উন্নত পৃথিবী মুখ ফিরিয়ে থেকেছে আফ্রিকার থেকে। রবীন্দ্রনাথ তাকে বলেছেন ‘ছায়াবৃতা’, ইতিহাস প্রমাণ করে ঊনবিংশ শতাব্দীর আগে কোনো ইউরোপীয় শক্তি আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের কথা ভাবেনি। আফ্রিকার সম্পদ এবং সংস্কৃতি এভাবেই উপেক্ষিত হয়েছিল সভ্য সমাজের দ্বারা।

১৫. ‘সেই হোক সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’ সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণীটি কী ? বিষয়টি ব্যাখ্যা করে লেখো।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতানুসারে সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণীটি হল- শ্বেতাঙ্গ শাসকের অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত আফ্রিকার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা।

বিষয়ের ব্যাখ্যাঃ সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে চিরকাল আফ্রিকা শোষিত ও অত্যাচারিত হয়েছে। তারা নির্বিচারে সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ করেছে, বন্যপ্রাণী আর মানুষদের হত্যা করেছে কিংবা ক্রীতদাসে পরিণত করেছে। আফ্রিকার নিরীহ, নিরপরাধ জনগণের ঘামে, রক্তে ও কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে সে দেশের মাটি ও বাতাস। এ ইতিহাস লাঞ্ছনা, বঞ্চনা এবং অপমানের। তাই এমন অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে মানবতাবাদী কবি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে বিশ্বব্যাপী হিংস্র প্রলাপের মধ্যে আফ্রিকার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সকলকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

১৬. ‘কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল / সুন্দরের আরাধনা’ – প্রসঙ্গ নির্দেশ করে তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ‘সমুদ্রপারে’ বলতে ইউরোপীয় মহাদেশকে বোঝানো হয়েছে। তাৎপর্য সাম্রাজ্যবাদী শাসকের দল যখন আফ্রিকায় নিজেদের অধিকার কায়েমের জন্য অমানবিক শোষণ চালাচ্ছিল, তখন আফ্রিকাবাসীর রক্তে ও ঘামে সেখানকার অরণ্যপথের ধুলো কাদায় পরিণত হয়েছিল। অথচ সেই সময় তাদের নিজেদের দেশে কিন্তু নিরুপদ্রব শান্তি বিরাজমান। সেখানে পাড়ায় পাড়ায় মন্দিরে পূজার ঘণ্টা বাজছিল আর ঈশ্বরের উপাসনা চলছিল। শিশুরা মায়ের কোলে নিরাপদে খেলে বেড়াচ্ছিল। সুন্দরের আরাধনায় বেজে উঠেছিল কবির সংগীত। এভাবেই শাসক ও শোষিতের বৈপরীত্যপূর্ণ অবস্থান বর্ণনার মাধ্যমে কবি সাম্রাজ্যবাদী শাসকের দ্বিচারিতাকে তুলে ধরেছেন ।

১৭. ‘অশুভ ধ্বনি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? ‘দিনের অন্তিমকাল’ ঘোষণা করার মর্মার্থ বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ ‘রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কবির এক সোচ্চার প্রতিবাদ। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হয় যার পরিণাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ক্ষুধিত পশুর মতোই ক্ষমতার লোভে মত্ত শ্বেতাঙ্গ শাসকদের রণ হুংকারকে এ কবিতায় ‘অশুভ ধ্বনি’ বলা হয়েছে।

দিনের অন্তিমকালঃ দিনের ‘অন্তিমকাল’ বলতে একদিকে যুগান্তের ইঙ্গিত ও ধ্বংসের পূর্বাভাস, আর অন্যদিকে ক্ষমতালোভী শাসকের নির্দয় শাসন অবসানের এক সুস্পষ্ট ঘোষণা।

১৮. ‘দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;’— কাকে দাঁড়াতে বলা হচ্ছে ? ‘মানহারা মানবী’ সম্বোধনের কারণ কী ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে কবি যুগান্তের কবিকে মানহারা মানবী আফ্রিকার সামনে দাঁড়াবার কথা বলেছেন।

সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে আফ্রিকা যুগে যুগে শোষিত হয়েছে। ক্ষমতালোভী তথাকথিত সভ্য পশ্চিমি দেশগুলি বার বার নিজেদের অধিকার কায়েম করেছে আফ্রিকায়। আফ্রিকার অধিবাসীদের ‘মানহারা মানবী’– কেন ! রক্ত ও অশ্রু ঝরে পড়ে তার বনভূমির ধূলিতে কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল করে তুলেছে। আফ্রিকায় আত্মসম্মান ও মর্যাদা ধূলিসাৎ হয়েছে বার বার। তাই কবি আফ্রিকাকে ‘মানহারা মানবী’ বলেছেন।

১৯. ‘অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ’— ‘মানবরূপ’ অপরিচিত থাকার কারণ উল্লেখ করো। ‘তোমার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ সভ্যতার আদিমতম লগ্নে পৃথিবীর পূর্বভাগের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকা মহাদেশের জন্ম। সেখানে দুর্গম জঙ্গলে ঢাকা রহস্যময় জগৎ ছিল ছায়াবৃত। দীর্ঘকাল ধরে তথাকথিত সভ্য মানুষদের চোখের আড়ালে প্রকৃতি তাকে মনের মতো করে সাজিয়েছিল। আরণ্যক প্রকৃতির নিবিড় পাহারায় সেখানকার বন্যপ্রাণী – মরুভূমি – মানুষ ও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ছিল সকলের দৃষ্টির অগোচর। এ জন্যই আফ্রিকার মানবরূপ বহির্বিশ্বের কাছে অচেনা আর অপরিচিত থেকে গিয়েছিল। ‘তোমার’ বলতে এখানে ‘আফ্রিকা’র কথা বলা হয়েছে।

২০. “সেই হোক সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।” — সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণীটি কী ? বিষয়টি ব্যাখ্যা করে লেখো।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা অনুসারে সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণীটি হল, শ্বেতাঙ্গ শাসকের অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত আফ্রিকার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা।

উদ্ধৃতাংশের অন্তর্নিহিত বিষয় সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে চিরকাল আফ্রিকা শোষিত ও অত্যাচারিত হয়েছে। তারা নির্বিচারে সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ করেছে, বন্যপ্রাণী আর মানুষদের হত্যা করেছে কিংবা ক্রীতদাসে পরিণত করেছে। আফ্রিকার নিরীহ, নিরপরাধ জনমণের ঘামে, রক্তে ও কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে সে – দেশের মাটি ও বাতাস। এ ইতিহাস লা বঞ্চনা এবং অপমানের। তাই এমন অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে মানবতাবাদী কবি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে বিশ্বব্যাপী হিংস্র প্রলাপের মধ্যে আফ্রিকার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সকলকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

২১. ‘কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে’ আফ্রিকাকে কে, কীভাবে এবং বেঁধেছিল ?

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাঠ্য কবিতায় আফ্রিকা মহাদেশের নগ্ন জন্মরহস্যকে এক আশ্চর্য কাব্যিক রূপ দিয়েছেন। প্লেট টেকটনিক তত্ত্ব অনুযায়ী পাতের নড়াচড়ার ফলে এশিয়া মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েই এই আফ্রিকার সৃষ্টি। কবির ভাষায় সৃষ্টির আদিম লগ্নে রুদ্র সমুদ্রের বাহু তাকে মূল ভূখণ্ড থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারপর বিচ্ছিন্ন আফ্রিকাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায় অর্থাৎ দুর্গম আরণ্যক জগতের ছায়াঘেরা রহস্যময়তায় যেন চিরতরে বেঁধে রাখে।

২২. ‘স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে’— ‘স্রষ্টা’ কে ? তিনি নিজের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন কেন ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে অংশটি গৃহীত। যিনি সৃষ্টি করেন তিনিই স্রষ্টা। এখানে কবি ঈশ্বরকেই ‘স্রষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন।

স্রষ্টার ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্টি হয় না যতক্ষণ না তাঁর সৃষ্টিকর্ম নিজের মনোমতো হয়। সেই সত্যকে কল্পনা করেই কবি বলতে চেয়েছেন সৃষ্টির আদিম লগ্নে ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টিকে বারবার ধ্বংস করে নতুনভাবে গড়ে তুলছিলেন। কিন্তু তা কখনোই তাঁর মনোমতো হচ্ছিল না। এই কারণে তিনি নিজের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন।

২৩. ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, — ‘তোমাকে বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? কে তাকে কোথা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ?

অথবা,

‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে’— ‘তোমাকে’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? এই উক্তির মধ্য দিয়ে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ‘তোমাকে’ বলতে আফ্রিকা মহাদেশকে বোঝানো হয়েছে। কে, কোথা থেকে ছিনিয়েছিল আদিম পৃথিবীর বুকে ঘটে যাওয়া ভৌগোলিক বিবর্তনকে এখানে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন এক আশ্চর্য ব্যঞ্জনায়। বৈজ্ঞানিকদের মতে টেকটনিক প্লেটগুলির নড়াচড়ার ফলেই এশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কবি এরই কাব্যিক রূপ দিয়ে বলেছেন, রুদ্র সমুদ্র মূল ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে যেন বনস্পতির নিবিড় পাহারায় কৃপণ আলোর অন্তরালে তাকে নিক্ষেপ করেছিল।

২৪. প্রাচী ধরিত্রীর বুক থেকে সমুদ্র যখন আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল, তারপর আফ্রিকার কী হয়েছিল ব্যাখ্যা করো।

অথবা,

‘প্রকৃতির দৃষ্টি – অতীত জাদু / মন্ত্র জাগাচ্ছিল’ – কী বোঝানো হয়েছে লেখো।

উত্তরঃ আফ্রিকার মানুষের ওপর ঔপনিবেশিক শোষণের যে ছায়া নেমে এসেছিল, তারই প্রতিবাদ রবীন্দ্রনাথের এই ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি। সভ্যতার আদিলগ্নে সমুদ্র যখন আফ্রিকাকে মুল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করে তাকে অরণ্যের অন্ধকারে নির্বাসন দিয়েছিল, তখন থেকেই শুরু হয় তার একক সংগ্রাম। বিশ্বজগতের চোখের আড়ালে প্রকৃতি তাকে সাজিয়ে নিয়েছিল নিজের মনের মতো করে। বন্যপ্রাণী সংকুল অরণ্য, রুক্ষ মরুভূমি সব মিলিয়ে আদিম আফ্রিকা ছিল দুর্গম। সভ্যতা তথা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির কোনো স্পর্শ তখনও সে পায়নি।

২৫. ‘নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে’— ‘যাদের’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাদের নখ নেকড়ের চেয়ে তীক্ষ্ণ বলার কারণ কী ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ‘যাদের’ বলতে সাম্রাজ্যবাদী শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের বুঝিয়েছেন।

মুসোলিনির ইথিওপিয়ায় অনুপ্রবেশের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কবি তাঁর এই ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি লিখেছিলেন। কবি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হিংস্রতাকে বোঝাতে ‘নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন। অরণ্যসংকুল আফ্রিকা মহাদেশ হিংস্র শ্বাপদপূর্ণ। কিন্তু ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের নির্মম হিংস্রতা সেইসব হিংস্র প্রাণীদের চেয়েও ভয়ংকর এ কথা বোঝাতেই কবি শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন।

২৬. “সভ্যের বর্বর লোভ / নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ”– তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

অথবা,

গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।’— উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করো।

অথবা ,

সভ্যের বর্বর লোভ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তরঃ মানবতার পূজারি রবীন্দ্রনাথ। আফ্রিকার জনজাতি, তার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর নেমে আসা ঔপনিবেশিক শক্তির তথা পঙক্তি সমূহের তাৎপর্য / অন্তর্নিহিত সাম্রাজ্যবাদের হিংস্র অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি মুখর হয়েছেন। ইউরোপের প্রায় প্রতিটি সভ্য দেশই আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে। কিন্তু ক্ষমতালোভী সেইসব দেশ আফ্রিকার সম্পদ লুণ্ঠন করে সেখানকার মানুষকে অত্যাচারে, অপমানে ও লাঞ্ছনায় বিধ্বস্ত করে তোলে। নিরপরাধ আফ্রিকাবাসীর ঘামে রঙে আর কান্নায় ভিজে ওঠে সেখানকার মাটি। তথাকথিত সভ্যের এই বর্বর লোভ কবির কাছে তাদের নির্লজ্জ অমানুষতা-রূপে প্রতিভাত হয়েছে।

২৭. বর্বর সভ্যদের অনুপ্রবেশে ‘আফ্রিকা’র পরিণতি কী হয়েছিল ?

অথবা,

‘চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে’ – তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ আফ্রিকা ছিল এশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ভয়াবহ সৌন্দর্যে স্বতন্ত্র এক মহাদেশ। পাশ্চাত্য ঔপনিবেশিক শক্তি সেখানে তাদের অধিকার কায়েম করে। তাদের আগ্রাসনের থাবায় ক্ষতবিক্ষত বর্বরদের অনুপ্রবেশ ও আফ্রিকা হয় এই মহাদেশ। ঔপনিবেশিক অত্যাচারে আফ্রিকার পথের ধুলোয় মিশে যায় সাধারণ মানুষের রক্ত আর ঘাম। সেই কাদামাখা পথ ধরে উপেক্ষা ভরে হেঁটে যায় সভ্য দেশের বর্বর শাসকের দল। আফ্রিকার ইতিহাসে চিরস্থায়ীভাবে আঁকা হয়ে যায় অপমানের চিহ্ন।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | আফ্রিকা (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – মাধ্যমিক বাংলা | Madhyamik Bengali Question Answer WBBSE

১. ‘উদ্‌ভ্রান্ত সেই আদিমযুগে’-আফ্রিকা’ কবিতা অনুসারে উদ্‌ভ্রান্ত আদিম যুগের পরিচয় দাও। ৫

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আফ্রিকা’ কবিতার সূচনায় আদিম যুগের উদ্ভ্রান্ত রূপের উল্লেখ করেছেন। ঔপনিবেশিক ভাবধারায় লালিত কবি মনে করেন এই বিশ্বসংসারের সৃষ্টিকর্তা পরমব্রহ্ম বা বিধাতা।

ঈশ্বর যথার্থ শিল্পী। প্রকৃত শিল্পী নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে সম্পূর্ণ তৃপ্ত হতে পারেন না। বিশ্বসৃষ্টির আদি লগ্নে ঈশ্বরও নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে সন্তুষ্ট ছিলেন না। নিজের সৃষ্টিকর্ম যেন কিছুতেই তার নিজেরই পছন্দসই হচ্ছিল না। তাই তিনি ঘন ঘন মাথা নেড়ে তাঁর অসন্তোষ, অধৈর্য, অতৃপ্তি জানাচ্ছিলেন আর-‘নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত।’ বারবার ভেঙে আর গড়ে বিশ্বশিল্পী নিজের সৃষ্ট জগৎকে মনের মতো রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

এমনই একসময়ে সেই আদিম যুগের উদ্ভ্রান্তির মধ্যে প্রাচ্য ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘আফ্রিকা’ নামে একটি স্বতন্ত্র মহাদেশ গঠিত হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এই কাব্যিক ও দার্শনিক বর্ণনার আড়ালে রয়েছে এক ভূ-বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। বিভিন্ন মহাদেশের

আফ্রিকা সৃষ্টির ভৌগোলিক ব্যাখ্যা— তটরেখার বৈশিষ্ট্য এবং অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী অলফ্রেড ওয়েগনার সিদ্ধান্ত করেন যে, বহু প্রাচীনকালে সব মহাদেশই একটি ভূখণ্ডের অন্তর্গত ছিল। টেকটনিক প্লেটগুলির স্থানান্তর ঘটায় একসময়ে আফ্রিকান প্লেটের সৃষ্টি হয় এবং প্রাচ্য মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গড়ে ওঠে আফ্রিকা মহাদেশ। এই তত্ত্ব ‘কন্টিনেন্টাল ড্রিফ্ট’ নামে পরিচিত। এই তত্ত্বই যেন কবির লেখায় রূপলাভ করেছে। ‘দুর্গমের রহস্য’ আর ‘দুর্বোধ সংকেত’ দিয়ে গড়ে ওঠা আফ্রিকা রহস্যময়তাকেই আশ্রয় করেছিল। আর এর আড়ালেই সে নিজের যাবতীয় শঙ্কাকে পরাজিত করতে চেষ্টা করেছিল।

২. ‘বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে / বিরুপের ছদ্মবেশে, / শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে’– ভীষণকে বিদ্রূপ করা বলতে বোঝানো হয়েছে ? ‘আফ্রিকা’ কবিতায় বিরূপের ছদ্মবেশে শঙ্কাকে হার মানানোর তাৎপর্য কবিতা অবলম্বনে বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ বনস্পতির নিবিড় পাহারায় কৃপণ আলোর অন্ধকারে জন্ম নেওয়া নবজাতক আফ্রিকা যখন রহস্যময় দুর্বোধ্য প্রকৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছিল তখন তার অন্তঃজগতে ভীতি জাগ্রত হয়েছিল। সেই ভয়ংকর ভীষণ ভীতিকে হার মানাতে চেয়ে তাকে আফ্রিকা বিদ্রুপ করেছে। প্রকৃতির রহস্যময়তার সাথে একাত্ম হয়ে, নিজের জন্মদাত্রী প্রকৃতি মায়ের কাছে বিরূপের ছদ্মবেশে তার আত্মপ্রকাশ।

মা-হারানো শিশুর মতোই জন্মকাল থেকে এশিয়া মহাদেশ থেকে আলাদা হয়ে পড়ে আফ্রিকা। অরণ্যময়, দুর্গম আফ্রিকা অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে ছিল। সভ্যতার সামান্যতম আলোক সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি। কিন্তু থেমে থাকলে চলবে না। থেমে থাকা মানে মৃত্যু। তাই অবজ্ঞা, অশিক্ষা, অজ্ঞানতা, অসহায়তার হাত থেকে মুক্তি পেতেই হবে তাকে। সে বেছে নিল প্রত্যাঘাতের পথ। তার চেতনাতীত মনে অনুরণিত হচ্ছিল জেগে ওঠার নতুন মন্ত্র। বিরূপের ছদ্মবেশে সে ভীষণকে বিদ্রুপ করছিল। হার মানাতে চাইছিল শঙ্কাকে। সে নিজেকে উগ্র ও বিভীষিকাময় করে তুলে তীব্র শব্দে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করে, যার ফলে শঙ্কা ভীত ও পরাস্ত হয়।

৩. ‘এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে’, — ওরা কারা ? পঙক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদের ঘোরতর বিরোধী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে ‘ওরা’ বলতে পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদীদের বোঝানো হয়েছে।

‘এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে’ পঙ্ক্তিটির সাহায্যে রবীন্দ্রনাথ সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকে ও তার নগ্ন রূপকে তুলে ধরেছেন। সৃষ্টির প্রথম থেকে বিচ্ছিন্ন আফ্রিকা নিভৃতে দুর্গমের রহস্য সন্ধানে ব্যাপিত ছিল। তার উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য চেতনাতীত মনে জাগ্রত হচ্ছিল নতুন মন্ত্র। নিজেকে উগ্র বিভীষিকাময় তাণ্ডবে শামিল করে শঙ্কাকে সে হার মানাচ্ছিল একটু একটু করে। সভ্যসমাজের উপেক্ষার পাত্র ছিল আফ্রিকা। তারপর একদিন ঔপনিবেশিক বিষবাষ্প গ্রাস করল আফ্রিকার স্বাভাবিক সারল্যকে। দাস ব্যাবসার মতো চরম পাশবিকতা নিয়ে উপস্থিত হল মানুষরূপী হিংস্র বর্বরের দল। যাদের হাতকড়িতে আবদ্ধ হল আফ্রিকার অসহায় মানুষ। এই সাম্রাজ্যবাদী শাসকের বর্বর লোভ নগ্ন করেছিল নিজেদের অমানবিকতাকে। আফ্রিকার অধিবাসীদের মানবিকতাকে উপেক্ষা করে শ্বেতাঙ্গ সাম্রাজ্যবাদীরা দিনের পর দিন আফ্রিকার সভ্যতা-সংস্কৃতিকে দলেছে, পিয়েছে, ধ্বংস করেছে। এককথায় নানানভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনে আফ্রিকার শৃঙ্খলিত হওয়ার ঘটনাকে কবি উদ্ধৃত পঙ্ক্তিতে ব্যস্ত করেছেন।

৪. “চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।”— কার উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে ? কীভাবে তার অপমানিত ইতিহাসে চিরচিহ্ন মুদ্রিত হল ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় উদ্ভূত পঙ্ক্তিটিতে অপমানিত আফ্রিকাকে এ কথা বলা হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আফ্রিকার ওপর সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের অত্যাচার ও শোষণ-বঞ্চনার কাহিনিকে বর্ণনা করেছেন।

প্রাকৃতিকভাবে দুর্গম আফ্রিকা দীর্ঘসময় ইউরোপীয় শক্তিগুলির নজরের বাইরে ছিল। সৃষ্টির সুচনা থেকেই আফ্রিকা অরণ্যাবৃত। সে অপমানিত ইতিহাসে তথাকথিত উন্নত সভ্যতার আলো থেকেও বহু দূরে নির্বাসিত ছিল। কিন্তু উনিশ শতকে ইউরোপীয়রা আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে। এই শতকের শেষে প্রায় পুরো আফ্রিকা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উপনিবেশে পরিণত হয়। এইসব তথাকথিত সভ্য রাষ্ট্রশক্তি আফ্রিকার মানুষদের ওপরে নির্মম অত্যাচার চালাত। তাদের নির্লজ্জ লোভ যেন বর্বরতার রূপ ধরে আত্মপ্রকাশ করেছিল। ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল আফ্রিকার মানুষ। তাদের রক্ত আর চোখের জলে কর্দমাক্ত হয়েছিল আফ্রিকার মাটি। সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রনায়কদের কাঁটা-মারা জুতোর নীচে বীভৎস কাদার পিন্ড যেন চিরকালের মতো অত্যাচারের চিহ্ন রেখে গিয়েছিল আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাসে।

৫. “প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস, / যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে প্রশুরা বেরিয়ে এল”– ‘প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে বুদ্ধশ্বাস’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? ‘গুপ্ত গহ্বর’ থেকে পশুদের বেরিয়ে আসা কোন্ ঐতিহাসিক ঘটনার ইঙ্গিত বহন করে ?

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের প্রত্যক্ষদর্শী রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদকে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদ দীর্ঘস্থায়ী হলেও তা যে চিরস্থায়ী নয় সে কথা বোঝাতেই কবি যেন আফ্রিকা কবিতা লিখেছেন। আফ্রিকার জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে সাম্রাজ্যবাদী হামলায় মানবতার অবক্ষয় এবং শেষে ঔপনিবেশিকতার যবনিকা তথা আসন্ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘোষণা এই কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে। ‘প্রদোষকাল’ শব্দটির অর্থ সন্ধ্যা অর্থাৎ দিনের শেষ সময়। ‘ঝঞ্ঝাবাতাস’ ও ‘রুদ্ধশ্বাস’ শব্দ দুটি সমকালীন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার সূচক। তাই উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটির সাহায্যে কবি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখিয়েছেন, যে সাম্রাজ্যবাদী শাসন এতদিন অসহায় আফ্রিকার ওপর অত্যাচার চালিয়ে এসেছে এবার তার শেষ সময়। এবার পশ্চিমি সভ্যতা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটের মুখে, বিপন্ন হতে চলেছে তার অস্তিত্ব ।

ঐতিহাসিক ঘটনার ইঙ্গিতঃ ‘গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুদের বেরিয়ে আসা’ বলতে কবি আড়াল থেকে শোষণ, অত্যাচার চালানো পাশবিক শক্তির সামনাসামনি আসাকে বোঝাতে চেয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা একসময় অসহায় আফ্রিকার ওপর চালিয়েছে অকথ্য অত্যাচার। হত্যা করেছে মানবিকতাকে। প্রথম যুদ্ধোত্তর কালে এই অসুখে মানুষ বেসামাল হয়ে পড়ে, তখন থেকেই অনিবার্যভাবে প্রকট হয়ে উঠেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা। গুপ্ত গহ্বর থেকে হিংস্র পশুর বেরিয়ে আসা আসলে সভ্যসমাজের বর্বর রূপের বহিঃপ্রকাশেরই ইঙ্গিতবাহী।

৬. “দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে ; / বলো ক্ষমা করো–/ হিংস্র প্রলাপের মধ্যে / সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।”– উদ্ধৃত পঙ্ক্তিগুলির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিসত্তার যে পরিচয় মেলে, তা আলোচনা করো।

অথবা,

‘দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;– কবি কোন্ মানহারা মানবীর দ্বারে দাঁড়াতে বলেছেন তা ‘আফ্রিকা’ কবিতার বিষয়বস্তু অবলম্বনে আলোচনা করো।

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের প্রতিবাদী সত্তার প্রতীক। সাম্রাজ্যবাদী শাসনের নগ্ন চেহারা কবি নিজে প্রত্যক্ষ করেছেন। তাই তিনি ছিলেন ঘোরতর সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী। কবির ‘মানহারা মানবী’ হল ‘আফ্রিকা’। সে যেন আমাদের রুপকথার দুয়োরানি। তাকে নিজের অধিকার পেতে হাজারো পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। পাশ্চাত্য ঔপনিবেশিক সভ্যতা ‘মানবী’ আফ্রিকার বুকের মধ্য থেকে ছিনিয়ে নেয় সম্পদের ভাণ্ডারকে আর স্থাপন করে উপনিবেশ। এরপর দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে তার সরল সাদাসিধে মানুষগুলিকে; কিন্তু স্বীকৃতি দেয় না তার সভ্যতা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে। তাই আফ্রিকাকে ডুবে থাকতে হয় উপেক্ষার আবিল অন্ধকারে। ‘ক্ষমা করো’ উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে কবি ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন। কবি-সাহিত্যিকেরা সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠাতা। তাই শোষণ-লাঞ্ছনার স্বীকার আফ্রিকার মর্মবাণী যেন সংবেদনশীল কবি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলেন। ‘আফ্রিকা’ কবিতার রচনার সময় গোটা ইউরোপে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা। শুরু হয় ঔপনিবেশিক ও ফ্যাসিস্ট শক্তির স্বার্থের টানাপোড়েন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের পালা। বিশ্বব্যাপী এই হিংস্র প্রলাপের মাঝে কবির দৃষ্টিভঙ্গিতে আফ্রিকা হয়ে ওঠে নিপীড়িত মানবাত্মার প্রতীক। তাই তাঁর মতে আফ্রিকা ও তার নাগরিকদের ওপর যে অত্যাচার সভ্যসমাজ করেছে, এর একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত ‘ক্ষমা ভিক্ষা’। হিংসার উন্মত্ততার মাঝে, মানবতার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাই হবে সভ্যতাবশেষ পুণ্যবাণী।

৭. ‘আফ্রিকা’ কবিতা রচনার পটভূমি সম্পর্কে যা জান লেখো।

উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতার ঘোর বিরোধী রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইটালির ফ্যাসিস্ট নেতা মুসোলিনির ইথিওপিয়ার অনুপ্রবেশকে ধিক্কার জানান। সেই দমবন্ধ করা হিংসার পরিবেশে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য অনুজ কবি অমিয় চক্রবর্তী রবীন্দ্রনাথকে কবিতা লিখতে অনুরোধ জানান। সেই অনুরোধে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে রবীন্দ্রনাথ ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি রচনা করেন। তিনটি স্তবকে রচিত কবিতাটির প্রথম স্তবকে কবি আফ্রিকার সুন্দর অতীত ও তার আদিম স্বাতন্ত্র্যতাকে তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় স্তবকে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে আফ্রিকার অত্যাচারিত হওয়ার রক্ত ও অশ্রুর কাহিনি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তবকের মাঝখানে একটি সংক্ষিপ্ত স্তবকে কবি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নগ্ন দ্বিচারিতার ছবি তুলে ধরেছেন, যেখানে একদিকে আফ্রিকার অবক্ষয়ের মূলচক্রী হিসেবে প্রতিভাত হয় এই দাস ব্যবসায়ীর দল, অন্যদিকে তাদের নিজেদের দেশে ঠিক একই সময়ে ধ্বনিত হয় দেবতার আরাধনা, সুন্দরের জয়গান। তৃতীয় বা শেষ স্তবকে ধ্বনিত হয় এই শক্তিধর দেশগুলির প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিহিংসার ‘অশুভ ধ্বনি’ যার ফলশ্রুতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সভ্যতা যখন সংকটাপন্ন; তখন মানবতার পূজারি কবি ক্ষমার মন্ত্রে আস্থা রেখে অপমানিত আফ্রিকার কাছে নতজানু হয়েছেন। কারণ একমাত্র এইভাবেই বাঁচানো যেতে পারে সভ্যতাকে।

৮. ‘আফ্রিকা’ কবিতায় মানবতার মর্মবাণী ধ্বনিত হয়েছে— কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।

উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদের ঘোর বিরোধী, মানবতার পূজারি রবীন্দ্রনাথ। তাই মুসোলিনির ইথিওপিয়ায় অনুপ্রবেশকে ধিক্কার জানিয়ে লেখা ‘আফ্রিকা’ কবিতায় মানবতার মর্মবাণী ধ্বনিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কবিতাটি আফ্রিকার সমাজ ও রাজনৈতিক ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। ‘আফ্রিকা’ কবিতায় মানবতার মর্মবাণী সৃষ্টির আদিতে আফ্রিকা তৈরি হয়েছিল প্রকৃতির খেয়ালে। আদিম প্রকৃতি নিজের মনের মতো করে গড়ে তুলেছিল তাকে। বাকি পৃথিবীর কাছে সে ছিল অপরিচিত। পরবর্তীকালে সভ্যসমাজের দৃষ্টি পড়ে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশের ওপর। ক্রমে ক্রমে আফ্রিকা হয়ে ওঠে। পশ্চিমি সভ্য দেশগুলির জন্য ক্রীতদাস জোগানের ক্ষেত্র। এমনকি সে দেশের আদিম প্রকৃতির কোলে লুকিয়ে থাকা সম্পদও তাদের নজর এড়ায় না। পৃথিবীর তথাকথিত সভ্য দেশগুলির লোভ আর অমানবিকতায় লুণ্ঠিত হয় আফ্রিকা। তার ধুলো-মাটি কাদা হয় সেখানকার মানুষদের রক্তে আর কান্নায়। লেখা হয় তার অপমানের ইতিহাস। কিন্তু কবি মানবতার পূজারি, তাই সভ্যতার নামে মানবতার এই অপমান তিনি সহ্য করেননি। দিনবদলের সন্ধিক্ষণে তাই পৃথিবীর সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের হয়ে অপমানিত, লাঞ্ছিত আফ্রিকার কাছে তিনি ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। সভ্যতার এই সংকটের দিনে ঘৃণা বা হিংসা নয়, মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা আর সংবেদনশীলতাকেই আশ্রয় করতে চেয়েছেন তিনি।

৯. “এসো যুগান্তের কবি’ – কে, কাকে যুগান্তের কবি বলেছেন, এই আহ্বান ধ্বনির মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?

অথবা,

“দাঁড়াও এই মানহারা মানবীর দ্বারে’– মানহারা মানবী কে ? কবির এই আহ্বানের কারণ কী ?

অথবা,

“বলো ক্ষমা করো”– কাকে ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে ? এই ক্ষমা করা কীভাবে কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে ?

উত্তরঃ যুগান্তের কবি : কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আগামী দিনের ক্রান্তীকারী সেই কবিকে যুগান্তের কবি বলেছেন—যিনি বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।

মানহারা মানবীঃ মানহারা মানবী হল আফ্রিকা, যে পশ্চিমি সভ্যতার লোভ লালসার শিকার হয়েছে।

কবিতার ভাববস্তুঃ ছায়াবৃতা আফ্রিকা উপেক্ষিত হয়েছিল ইউরোপীয় সভ্য জাতির দ্বারা। তারা কৃয়কায় আফ্রিকাকে দেখেছিল উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে। তীক্ষ্ণ নখ যাদের নেকড়ের চেয়ে তারা আফ্রিকাকে দেখল খাদকের চোখে। সভ্যের বর্বর লোভ থেকে বাঁচল না সে। সভ্যের নির্লজ্জ অমানসিকতা দেখে হতাশ হল এই মহাদেশের অন্তরআত্মা। এদের ভাষাহীন ক্রন্দনে বাম্পাকুল হল অরণ্যপথ। রক্ত ঝরল কৃয় পৃথিবীর সরল নিস্পাপ বুক থেকে। অশুতে ভিজল পথ। লেখা হল অপমানিত নতুন ইতিহাস।

সভ্যতার বিবর্তন ঘটে সময়ের পট পরিবর্তিত হয়। পশ্চিম দিগন্তে দেখা যায় ঝক্কা বিক্ষুব্ধ মেঘ। পশ্চিমের গুপ্ত গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসে পশুরা। অশুভ ধ্বনিতে তারা ঘোষণা করে দিনের অন্তিম কাল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ মনে করেন অশুভ শক্তির পতন অনিবার্য। কালের রথের চাকার যেমন গমন আছে তেমন প্রত্যাগমনও আছে। তাই যুগান্তের কবির কাছে প্রার্থনা দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে বলো ক্ষমা করো।

হিংস্র প্রলাপের মধ্যে ক্ষমা হয়ে উঠুক বিচারের মানদ-। তাই কবি রবীন্দ্রনাথ যুগান্তের কবির কাছে আহ্বান করেছেন মানহারা মানবীর পাশে দাঁড়াতে। আর হিংস্র প্রলাপের মধ্যে ক্ষমা হয়ে উঠুক বিচারের মানদণ্ড। তাই কবি রবীন্দ্রনাথ যুগান্তের কবির কাছে আহ্বান করেছেন মানহারা মানবীর পাশে দাঁড়াতে। আর অনুরোধ করেছেন হিংসার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাকে দাঁড় না করিয়ে ক্ষমার আদর্শকে তুলে ধরতে।

১০. আফ্রিকা কবিতায় আফ্রিকা মহাদেশের জন্মের যে বিবরণ পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত আফ্রিকা কবিতায় আদিম পৃথিবীর বুকে ঘটে যাওয়া ভৌগোলিক বিবর্তনকে এখানে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন এক আশ্চর্য ব্যঞ্জনায়। সৃষ্টির আদি লগ্নে প্রাচী ধরিত্রীর স্থলভাগ থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল উত্তাল রুদ্ধ সমুদ্র। অর্থাৎ পৃথিবীর পূর্বভাগের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘আফ্রিকা’ নামে একটি স্বতন্ত্র মহাদেশ গঠিত হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এই কাব্যিক ও দার্শনিক বর্ণনার আড়ালে রয়েছে এক ভূ-বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। বিভিন্ন মহাদেশের তটরেখার বৈশিষ্ট্য এবং অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী অলফ্রেড ওয়েগনার সিদ্ধান্ত করেন যে, বহু প্রাচীনকালে সব মহাদেশই একটি ভূখণ্ডের অন্তর্গত ছিল। টেকটনিক প্লেটগুলির স্থানান্তর ঘটায় একসময়ে আফ্রিকান প্লেটের সৃষ্টি হয় এবং প্রাচ্য মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গড়ে ওঠে আফ্রিকা মহাদেশ। এই তত্ত্ব ‘কন্টিনেন্টাল ড্রিফ্ট’ নামে পরিচিত। এশিয়া মহাদেশ থেকে আফ্রিকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার প্লেটতত্ত্বকে কবি যেভাবে সৃষ্টির আদি লগ্নের প্রলয়ের মোড়কে তুলে ধরেছেন তা অনবদ্য। কবির মতে, সৃষ্টির আদি লগ্নে বিশ্বস্রষ্টা তাঁর নতুন সৃষ্টিকে যখন বারবার ভেঙে নতুন করে গড়ছিলেন তখনই সমুদ্র এসে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে আফ্রিকাকে।

This Post Has 2 Comments

  1. Riyaj

    Afrika mohadesh er jonmer je bornona Paua jai ta nijer vasay likho ……ei ans ta Amar dorkar

    1. proshnodekho

      চেষ্টা করবো দেওয়ার।

Leave a Reply