দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় 2 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর | Class 10 History 1st Chapter 2 Marks Question Answer wbbse

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় 2 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর | Class 10 History 1st Chapter 2 Marks Question Answer wbbse

1. দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

2. দশম শ্রেণির ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : দশম শ্রেণি ইতিহাস প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারণা | SAQ Question Answer Class 10 (Madhyamik) History Chapter-1 Itihaser Dharona wbbse

• সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : (দুই বা তিনটি বাক্যে উত্তর দাও) প্রতিটি প্রশ্নের মান-২

১. ইতিহাস কী ?

উত্তরঃ সাধারণভাবে ‘ইতিহাস’ হল অতীতের কথা। মানব প্রজাতির আবির্ভাবের সময় থেকে শুরু করে বর্তমানে মানবসভ্যতার চরম উৎকর্ষ লাভের সময় পর্যন্ত যাবতীয় ঘটনাবলি আলোচিত হয় যে শাস্ত্রে, তাই হল ইতিহাস। অন্যভাবে বলা যায় ইতিহাস হল মানবসভ্যতার ধারাবাহিক বিবর্তনের কাহিনি।

২. ইতিহাস তত্ত্ব কী ?

উত্তরঃ ইতিহাস রচনার পদ্ধতি ও ইতিহাস বিষয়ে অনুসন্ধানের কলাকৌশল ইতিহাস তত্ত্ব নামে পরিচিত।
ইতিহাস তত্ত্বের কয়েকটি দিক হল— গ্রিক ইতিহাস তত্ত্ব, রোমান ইতিহাস তত্ত্ব, খ্রিস্টান ইতিহাস তত্ত্ব, মধ্যযুগীয় ইতিহাস তত্ত্ব, রেনেসাঁ ইতিহাস তত্ত্ব ও আধুনিক ইতিহাস তত্ত্ব।

৩. আধুনিক ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতক থেকে শুরু করে বিংশ শতকের শেষ পর্যন্ত সময়কালের ইতিহাস চর্চা আধুনিক ইতিহাসচর্চা নামে পরিচিত। প্রথমত, যুক্তিবাদ, প্রগতিবাদ, রোমান্টিক ভাবধারা ও বৈজ্ঞানিক ভাবধারা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে এই ইতিহাসচর্চা । দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞানসম্মত, প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাজীবী ইতিহাসচর্চা হল আধুনিক ইতিহাসচর্চার মূল বৈশিষ্ট্য।

৪. আধুনিক ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিগুলি চিহ্নিত করো।

উত্তরঃ আধুনিক ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি হল যুক্তিবাদী, আপেক্ষিকতাবাদী, দৃষ্টবাদী, মার্কসবাদী, প্রত্যক্ষবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। এ ছাড়াও রয়েছে অ্যানাল গোষ্ঠীর মতবাদ, জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, নিম্নবর্গীয় (সাবস্টার্ন) মতবাদ এবং সামগ্রিক সমাজ বিশ্লেষণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি।

৫. ঐতিহাসিকের কাজ কী ?

উত্তরঃ ঐতিহাসিকের কাজ হল– প্রথমত, তথ্য অনুসন্ধান, উপস্থাপন ও তা বিশ্লেষণ। দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক লিওপোল্ড ভন র‍্যাঙ্কের মতে, যেমনভাবে ঘটনা ঘটেছিল ঠিক সেভাবেই তুলে রাখা হল ঐতিহাসিকের কাজ। তৃতীয়ত, ঐতিহাসিক লর্ড অ্যাকটনের মতে, ঐতিহাসিকের দেওয়া তথ্যের ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ ছাড়া ইতিহাস অর্থহীন।

৬. আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার প্রধান উপাদানগুলি কী ?

উত্তরঃ আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার প্রধান উপাদানগুলি হল সরকারি নথিপত্র, আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা, ব্যক্তিগত চিঠিপত্র, সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র।

৭. ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রগুলি মূলত কী কী ?

উত্তরঃ ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রগুলি হল পুলিশ ও গোয়েন্দাদের রিপোর্ট, সরকারি আধিকারিক ও দপ্তরগুলির প্রদত্ত বিভিন্ন বিবরণ, প্রতিবেদন, চিঠিপত্র প্রভৃতি।

৮. ঐতিহাসিক তথ্য কী ?

উত্তরঃ মানবসমাজের বিভিন্ন ঘটনা সমসাময়িক দলিল দস্তাবেজ বা অন্যান্য লিখিত ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের মধ্যে নিহিত থাকে। একজন ঐতিহাসিক বা গবেষক এই সমস্ত উপাদান থেকে সঠিক তথ্য নির্বাচন করে ইতিহাস রচনা করেন। এইসব আকর সূত্র ঐতিহাসিক তথ্য নামে পরিচিত।

৯. সরকারি নথিপত্রের বিবরণ থেকে প্রাপ্ত একটি ঐতিহাসিক তথ্যের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ সরকারি নথিপত্রের বিবরণ থেকে প্রাপ্ত একটি ঐতিহাসিক তথ্যের উদাহরণ হল সিপাহি বিদ্রোহের (১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে) প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ফরেস্ট তাঁর ‘হিস্ট্রি অব দি ইন্ডিয়ান মিউটিনি’ গ্রন্থটি লিখেছেন। এই গ্ৰন্থ থেকে সিপাহি বিদ্রোহের নানা তথ্য পাওয়া যায়।

১০. ব্রিটিশ আমলের পুলিশ, গোয়েন্দা প্রমুখের বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে কী ধরনের ঐতিহাসিক তথ্যাদি জানা যায় ?

উত্তরঃ ব্রিটিশ আমলের পুলিশ, গোয়েন্দা প্রমুখের বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে ব্রিটিশ বিরোধী বিভিন্ন গণ আন্দোলন, বিদ্রোহ, বিপ্লবী আন্দোলন, গুপ্ত সমিতির কার্যকলাপ প্রভৃতি সম্পর্কে নানান ঐতিহাসিক তথ্যাদি জানা যায়।

১১. মহাফেজখানা থেকে কীভাবে ইতিহাস জানা যায় ?

উত্তরঃ মহাফেজখানাগুলিতে সমকালীন বিভিন্ন সরকারি প্রতিবেদন, চিঠিপত্র, পুলিশ ও গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। এগুলিতে সমকালীন বিভিন্ন ঘটনার সঠিক তথ্যসমূহ পাওয়া সম্ভব। এইসব তথ্য পড়ে সমকালীন ইতিহাস জানা যায়।

১২. ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের বিশেষ গুরুত্ব আছে। যেমন–
(১) সরকারি নথিপত্র পাঠ, পুনর্পাঠ ও বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে সমসাময়িক নানা ঘটনার পিছনে সরকারের ভূমিকা ও মনোভাব স্পষ্টভাবে জানা যায়।
(২) আধুনিক ভারতের ইতিহাস পর্যালোচনায় ঔপনিবেশিক শাসকের দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনার চর্চা সম্ভব হয়।

১৩. সরকারি নথিপত্র থেকে ঐতিহাসিক সত্য উদ্‌ঘাটন করা যায় এমন একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ সরকারি নথিপত্র থেকে ঐতিহাসিক সত্য উদ্‌ঘাটন করা যায় এমন একটি উদাহরণ হল– স্বামী বিবেকানন্দ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের উদ্যোগকে ব্রিটিশ সরকার যে সুনজরে দেখত না তা সমকালীন সরকারি নথিপত্র থেকে জানা গেছে।

১৪. প্রচলিত ইতিহাসচর্চা কী ?

উত্তরঃ প্রচলিত ইতিহাস বলতে বোঝায়— প্রথমত, রাজার যুদ্ধজয়, দেশশাসন, রাজস্ব আদায় ও সাংবিধানিক কাজকর্মের ইতিহাসই ছিল প্রচলিত ইতিহাসচর্চার মূল বিষয়। দ্বিতীয়ত, বিশ শতকের গোড়া থেকে এই ধরনের ইতিহাসচর্চায় সমাজ ও অর্থনীতির অন্য বিষয়গুলিও যুক্ত হতে শুরু করে। তৃতীয়ত, এই ধরনের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিকরা হলেন লর্ড মেকলে।

১৫. ঐতিহাসিক বিবরণ বা তথ্যসমৃদ্ধ কয়েকটি সরকারি নথিপত্রের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ ঐতিহাসিক বিবরণ বা তথ্যসমৃদ্ধ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সরকারি নথিপত্র হল–
(i) ফরেস্ট রচিত “হিস্ট্রি অব দ্য ইন্ডিয়ান মিউটিনি’,
(ii) স্যার সৈয়দ আহমদ খান রচিত ‘দি কজেস অব ইন্ডিয়ান রিভোল্ট’,
(iii) কার্জনের স্বরাষ্ট্রসচিব রিজলে রচিত ব্যক্তিগত দিনলিপি,
(iv) কে লেপেল গ্রিফিন রচিত বিবরণ প্রভৃতি।

১৬. সরকারি নথিপত্র বলতে কী বোঝায় ? (২০২৩)

উত্তরঃ বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী, সেনাপতি, সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সমকালীন বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ঘটনা সম্পর্কে যে তথ্যাদি লিখে গিয়েছেন সেইসব বিবরণ সরকারি নথিপত্র নামে পরিচিত।

১৭. ইতিহাসচর্চায় ভিকোর মতামত কী ?

উত্তরঃ ইটালির ঐতিহাসিক ও মানবতাবাদী দর্শনের প্রবক্তা— গিয়ান বাতিস্তা ভিকোর (১৬৬৮–১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে) মতে, (১) ইতিহাস হল মানবসমাজ ও তার প্রতিষ্ঠান সমূহের বিবর্তনের কাহিনি : (২) পূর্ব পরিকল্পিত ধারণা বা অবরোহী পদ্ধতিতে ইতিহাসচর্চার পরিবর্তে তিনি ঐতিহাসিক পদ্ধতি ও ঐতিহাসিকের সৃজনশীল মানসিকতার ওপর জোর দেন; (৩) তিনি ইতিহাসকে তিনটি যুগে ভাগ করেন, যথা— দেবতা , বীরনায়ক ও সাধারণ মানুষের যুগ।

১৮. ইতিহাসচর্চায় ‘অ্যানাল স্কুল’ বলতে কী বোঝায় ?

উত্তরঃ বিশ শতকে ফ্রান্সে ঐতিহাসিক মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেভর ‘দ্য অ্যানালস’ (১৯২৯ খ্রিঃ) পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে ইতিহাসচর্চায় যে নতুন ঘরানার সূচনা করেন তা হল ‘অ্যানাল স্কুল’। এই ধরনের ইতিহাসচর্চায় প্রথমত, সামাজিক ইতিহাসসহ সার্বিক ইতিহাস রচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়; দ্বিতীয়ত, ভৌগোলিক কাঠামো, আর্থসামাজিক পটভূমি, জনসংখ্যাতত্ত্ব, মানসিক প্রবণতার ওপর গুরুত্ব দান করে ইতিহাস রচনার কাজ শুরু করা হয়।

১৯. ইন্দিরাকে লেখা জওহরলাল নেহরুর চিঠিগুলির নাম কী ? এই চিঠিগুলির হিন্দি অনুবাদ কে করেন ?

উত্তরঃ ইন্দিরাকে লেখা জওহরলাল নেহরুর লেখা চিঠিগুলির নাম হল “লেটার্স ফ্রম আ ফাদার টু হিজ ডটার”।
বিখ্যাত হিন্দি ঔপন্যাসিক মুন্সি প্রেমচাঁদ ‘পিতা কে পত্ৰ পুত্ৰী কে নাম’ শিরোনামে এই চিঠিগুলির হিন্দি অনুবাদ করেন।

২০. নিম্নবর্গের ইতিহাস বলতে কী বোঝায় ? অথবা সাবল্টার্ন স্টাডিজ কী ?

উত্তরঃ ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে রণজিৎ গুহ নিম্নবর্গের ইতিহাস রচনা পদ্ধতির কথা তুলে ধরেন যা সাবস্টার্ন স্টাডিজ নামে পরিচিত। এই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল– প্রথমত, প্রচলিত ইতিহাসচর্চায় সমাজের উচ্চবর্গের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হত; কিন্তু এই ইতিহাসচর্চায় নিম্নবর্গ, অর্থাৎ কৃষক, শ্রমিক, শহুরে জনতা, আদিবাসী এবং সমাজের নিম্নস্তরের মানুষ ও মহিলাদের উদ্যোগে বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় আন্দোলনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, নিম্নবর্গের ঐতিহাসিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জ্ঞান পাণ্ডে, স্টিফেন হেনিংহাম, দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র, শাহিদ আমিন প্রমুখ ।

২১. নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ ১৯৮০-র দশক থেকে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন দেশের গবেষকের উদ্যোগে জাতি, ধর্ম, শ্রেণি, লিঙ্গ প্রভৃতি নির্বিশেষে নিম্নবর্গের মানুষদের নিয়ে ইতিহাসচর্চা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধারা নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বা সাবল্টার্ন স্টাডিজ নামে পরিচিত।

২২. মার্কসবাদী ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝায় ?

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের উদ্‌গাতা কার্ল মার্কসের অনুসৃত অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ, ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ও দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের ওপর ভিত্তি করে উনিশ শতক থেকে ইতিহাসচর্চায় যে নতুন ধারার সূচনা হয়েছে তা মার্কসবাদী ইতিহাসচর্চা নামে পরিচিত। এই ইতিহাসচর্চার উল্লেখযোগ্য দিকগুলি হল প্রথমত, ইতিহাসকে বিশ্লেষণের সময় শোষক– শোষিত সম্পর্ক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উৎপাদনের ধরন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, মার্কসবাদী ঐতিহাসিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন এরিক হবস্বম, ক্রিস্টোফার হিল, রজনীপাম দত্ত, সুশোভন সরকার, ইরফান হাবিব প্রমুখ।

২৩. আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা কী ?

উত্তরঃ নিজের জীবন ও সেই সংক্রান্ত ঘটনাগুলো যখন কোনো ব্যক্তি নিজে লিপিবদ্ধ করেন, তখন সেই লিপিবদ্ধ কাহিনিকে আত্মজীবনী বলা হয়। যখন কোনো ব্যক্তি অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা দীর্ঘদিন পর স্মৃতি থেকে মনে করে লিপিবদ্ধ করেন তখন তা হয়ে ওঠে স্মৃতিকথা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সব আত্মজীবনীই স্মৃতিকথা; কিন্তু সব স্মৃতিকথাই আত্মজীবনী নয়।

২৪. ব্রিটিশ সরকার কেন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ‘সোমপ্রকাশ’ সাময়িকপত্রের প্রকাশ বন্ধ করে দেয় ?

উত্তরঃ বড়োলাট লর্ড লিটন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ‘দেশীয় সংবাদপত্র আইন’ পাসের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদপত্রগুলির ওপর হস্তক্ষেপ করে ব্রিটিশ বিরোধিতার পথ বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়। এই আইনের দ্বারা ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকাটিও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২৫. আত্মজীবনী কীভাবে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে ?

অথবা, স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনীকে কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদানরূপে ব্যবহার করা হয় ?

উত্তরঃ বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা আত্মজীবনী ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন–
(১) আত্মজীবনী থেকে অনেক সময় সমকালীন সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাবলির কথা জানা যায়।
(২) আত্মজীবনীতে উল্লিখিত সমকালীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
(৩) আত্মজীবনীতে উল্লিখিত সমকালীন আর্থসামাজিক ঘটনাবলিও ইতিহাস রচনায় ব্যবহৃত হতে পারে।
(৪) আত্মজীবনীতে উল্লিখিত লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিগুলি ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজে লাগতে পারে।

২৬. সামাজিক ইতিহাস কী ?

উত্তরঃ ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে ইউরোপ ও আমেরিকায় ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে প্রচলিত রাজনৈতিক, সামরিক, সাংবিধানিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসের পরিবর্তে সমাজের অবহেলিত দিকগুলিসহ সমগ্র সমাজের ইতিহাস রচনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় যা নতুন সামাজিক ইতিহাস নামে পরিচিত। এই ইতিহাস সংশোধনবাদী ইতিহাস নামেও পরিচিত। প্রথমত, এই ইতিহাসের বিভিন্ন দিকগুলি হল– সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, জাতি-বর্ণ ও জাতিবিদ্বেষ, হিংসা ও সম্প্রীতি। দ্বিতীয়ত, এই ইতিহাসচর্চায় যুক্ত গবেষকরা হলেন ইউজিন জেনোভিস, হারবার্ট গুটম্যান, রণজিৎ গুহ, জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে, শাহিদ আমিন, সুমিত সরকার, গৌতম ভদ্র, দীপেশ চক্রবর্তী।

২৭. নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার প্রতিষ্ঠান ও তার মুখপত্রের নাম কী ?

উত্তরঃ নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার প্রতিষ্ঠানটি হল ‘দ্য সোশ্যাল সায়েন্স হিস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন’ (১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ)। এটির মুখপত্র হল ‘সোশ্যাল সায়েন্স হিস্ট্রি’।

২৮. ইতিহাসচর্চা কি সত্যিই নিখুঁত ও বাস্তবসম্মত ?

উত্তরঃ ইতিহাসচর্চা কতটা নিখুঁত ও বিজ্ঞানসম্মত সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। জার্মান লেখক উইলহেলম ডিলথে মনে করেন ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিককে এক সারিতে বসানো যায় না। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান, পরীক্ষানিরীক্ষার ওপর নির্ভর করেন আর ঐতিহাসিক নিজস্ব ধ্যানধারণার ওপর ভিত্তি করে ইতিহাস লেখেন। ব্রিটিশ লেখক আর. জি. কলিংউড (১৮৮৯-১৯৪৩) তাঁর বিখ্যাত The Idea of History গ্রন্থে দেখিয়েছেন সমস্ত ঐতিহাসিক তাঁর সমসাময়িককালের ভাবনাচিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হন। ই. এইচ. কার অনুরূপভাবে মনে করেন ঐতিহাসিক তাঁর নিজের সময়ের আয়নায় অতীত ঘটনাক্রমকে বাছাই করেন।

২৯. ইতিহাসের উপাদানরূপে সংবাদপত্রের গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ ইতিহাসের উপাদানরূপে সংবাদপত্রের বিভিন্ন গুরুত্ব রয়েছে। যেমন—
(১) সংবাদপত্রগুলিতে উল্লিখিত সমসাময়িক রাজনৈতিক খবরাখবর থেকে সমকালীন রাজনৈতিক ইতিহাস জানা যায়।
(২) সংবাদপত্রগুলিতে মুদ্রিত সমসাময়িক সমাজ ও সংস্কৃতির খবরাখবর থেকে সেই সময়ের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
(৩) সংবাদপত্রে মুদ্রিত সমকালীন সরকার ও রাষ্ট্রপরিচালনার বিভিন্ন খবর থেকে সেই সময়ের রাষ্ট্রীয় ইতিহাস জানা সম্ভব হয়।
(৪) জনগণের অসন্তোষ, ক্ষোভ, বিদ্রোহ প্রভৃতি বিষয়েও সংবাদপত্র থেকে জানা যায়।
(৫) কোনো ঘটনা সম্পর্কে জনমত কোন দিকে তাও সংবাদপত্র থেকে জানা যায়।

৩০. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আত্মজীবনীর নাম কী ? এই গ্রন্থ থেকে ইতিহাস রচনার জন্য কী ধরনের তথ্য পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আত্মজীবনীর নাম হল ‘জীবনস্মৃতি’।
‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থটি থেকে ঠাকুরবাড়ির নানা তথ্য, তৎকালীন ইংরেজি ভাষা ও বিদেশি প্রথা সম্পর্কে বাঙালি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, হিন্দুমেলা সম্পর্কে নানা তথ্য, স্বদেশিয়ানার প্রতি বাঙালিদের আগ্রহ ও উদ্যোগ প্রভৃতি সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায়, যেগুলি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

৩১. ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকায় নারীদের সম্পর্কে কী ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হত ?

উত্তরঃ ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকায় বাল্যবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে এবং নারীশিক্ষা, বিধবাবিবাহ প্রভৃতির পক্ষে সংবাদ পরিবেশন করা হত। এভাবে নারীসমাজের উন্নতির পক্ষে জনমত গঠনে সোমপ্রকাশ পত্রিকা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩২. খেলার ইতিহাস বলতে কী বোঝায় ?

উত্তরঃ আধুনিক সভ্যতায় অবসর বিনোদন ও শারীরিক দক্ষতা প্রদর্শনের একটি বিশেষ মাধ্যম হল খেলা বা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। প্রথমত, বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, টেনিস, গল্ফ, দাবা, রাগবি প্রভৃতি খেলার উদ্ভব, বিবর্তন, প্রসার ও প্রভাব সম্পর্কে চর্চা শুরু হয় যা খেলার ইতিহাস নামে পরিচিত। দ্বিতীয়ত, এই ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা হলেন জে. এ. ম্যাসান, রিচার্ড হোল্ট, গ্রান্ট জারভিস, মাইকেল ম্যাক কিনলে, আশিস নন্দী, রামচন্দ্র গুহ, বোরিয়া মজুমদার।

৩৩. ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলার উদ্ভবকে কীভাবে চিহ্নিত করবে ?

উত্তরঃ আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে ইংল্যান্ডে ‘স্টিক অ্যান্ড বল’ নামক খেলা থেকেই ক্রিকেট খেলার উদ্ভব ঘটেছে। প্রথমত, প্রাক্‌-শিল্পবিপ্লব পর্বের এই খেলায় হাতে তৈরি কাঠের ব্যাট ও স্ট্যাম্প বেল, বল ব্যবহার করা হত এবং আঠারো শতকে এই খেলা একটি পরিণত খেলার চরিত্র লাভ করে। দ্বিতীয়ত, ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ক্রিকেটের নিয়মবিধি রচিত হয়। ১৭৬০ এর দশকে ইংল্যান্ডের হাম্বেলডন-এ প্রথম ক্রিকেট ক্লাব গঠিত হয় এবং ১৭৮০-র দশকে শুরু হল ‘ক্রিকেটের অভিভাবক’ রূপে পরিচিত মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব (MCC)।

৩৪. ঢাকাই খাবার কী ?

উত্তরঃ সুলতানি ও মুঘল শাসনকালে বাংলার প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসে (ভাত, ডাল ও নিরামিষ খাবার) পরিবর্তন এসেছিল। পুরাতন ঢাকা এলাকায় অযোধ্যার নবাবী খাবারের (কাবাব, নান, কাচ্চি ও পাকি বিরিয়ানী, হালিম, মাটন, ভুনি– খিচুড়ি ) প্রচলন ঘটে। এর পাশাপাশি ভাতের সঙ্গে সরষের তেল, ঘি ও বিভিন্ন মশলা সহযোগে বিভিন্নধর্মী তরকারি ও ইলিশ, পাবদা, রুই, চিতল, ভেটকি মাছের বিভিন্ন পদও প্রচলিত ছিল। এই বৈচিত্র্যময় খাবার ঢাকাই খাবার নামে পরিচিত ।

৩৫. আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য যেসব সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র তথ্য সরবরাহ করে তার কয়েকটির নাম লেখো।

উত্তরঃ ব্রিটিশ শাসনকালে প্রকাশিত হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট, মার্শম্যানের ‘দিগদর্শন’ ও ‘সমাচার দর্পণ’, রামমোহন রায় সম্পাদিত সম্বাদ কৌমুদি, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘সমাচার চন্দ্রিকা’, অক্ষয়কুমার দত্ত সম্পাদিত ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’, ঈশ্বর গুপ্ত সম্পাদিত ‘সংবাদ প্রভাকর’, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত ‘সোমপ্রকাশ’, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ প্রভৃতি ভারতীয় সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য তথ্য সরবরাহ করে থাকে।

৩৬. বিপিনচন্দ্র পালের লেখা আত্মজীবনীর নাম কী ? এই গ্রন্থ থেকে ইতিহাস রচনার জন্য কী ধরনের তথ্য পাওয়া যায়।

উত্তরঃ বিপিনচন্দ্র পালের লেখা আত্মজীবনীর নাম ‘সত্তর বৎসর’।
‘সত্তর বৎসর’ গ্রন্থটি থেকে বিপিনচন্দ্র পালের সঙ্গে আনন্দমোহন বসু, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ জাতীয় নেতার ঘনিষ্ঠতা, তাঁর ব্রাহ্মসমাজে যোগদান, স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর ঝাঁপিয়ে পড়া, স্বদেশি, বয়কট, পূর্ণ স্বরাজ প্রভৃতি আন্দোলনে তাঁর অংশগ্রহণ প্রভৃতি তথ্য পাওয়া যায়। এইসব তথ্য আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

৩৭. ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা থেকে সমকালীন ভারতের ইতিহাস রচনার কী ধরনের তথ্য পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা থেকে বাংলায় ব্রিটিশদের শাসন ও শোষণ, জমিদারদের শোষণ-অত্যাচার, তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি, সাধারণ মানুষের অবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। এই সব তথ্য সমকালীন ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

৩৮. শিল্পচর্চার ইতিহাস বলতে কী বোঝায় ?

উত্তরঃ মানুষ যখন কোনো শিল্প মাধ্যমকে, যথা- (সংগীত, নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র) বেছে নিয়ে তার সুকুমার বৃত্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তখন তা শিল্পচর্চা নামে পরিচিত। তাই প্রথমত, শিল্পচর্চার উদ্ভব, বিবর্তন ও প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করাই শিল্পচর্চার ইতিহাস নামে পরিচিত। দ্বিতীয়ত, এই ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা হলেন– ক্যারল ওয়েলস, ফিলিপ বি জারিল্লি, জ্যাকব বুর্খাহার্ট, নীহার রঞ্জন রায়, অশোক মিত্র, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, হিতেশ রঞ্জন সান্যাল, তপতী গুহ ঠাকুরতা।

৩৯. নৃত্যশিল্পের ইতিহাসের কয়েকটি দিক চিহ্নিত করো।

উত্তরঃ নৃত্যকলাচর্চার উদ্ভব, বিবর্তন ও তার প্রভাব সংক্রান্ত ইতিহাসচর্চা নৃত্যশিল্পের ইতিহাস নামে পরিচিত। এর কয়েকটি দিক হল প্রথমত, ছন্দ বা গানের তালে তালে মানবশরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঞ্চালনই হল নৃত্য। দ্বিতীয়ত, শাস্ত্রীয় ও ধর্মীয় নৃত্যের পাশাপাশি ভাবাবেগ প্রকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের নৃত্য (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিপ-হপ নৃত্য, চিনের ইয়াংকো নৃত্য, ভারতের কথক, ফ্রান্স ও রাশিয়ার ব্যালে নৃত্য) রয়েছে। তৃতীয়ত, এই ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যারা যুক্ত তাঁরা হলেন– ক্যারল ওয়েলস, ফিলিপ বি জারিল্লি, জ্যাকব বুৰ্খাহার্ট, চার্লস রাসেল ডে, তপতী গুহ ঠাকুরতা।

৪০. ব্রিটিশ শাসনকালে প্রকাশিত ভারতীয় সংবাদপত্রগুলি থেকে আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার কী ধরনের তথ্যাদি পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ ব্রিটিশ শাসনকালে প্রকাশিত ভারতীয় সংবাদপত্রগুলি থেকে তৎকালীন ভারতীয় আর্থসামাজিক অবস্থা, ব্রিটিশ সরকার ও তার সহযোগীদের শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা বিদ্রোহ ও আন্দোলন প্রভৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যাদি পাওয়া যায়।

৪১. বেঙ্গল গেজেট কে, কবে প্রকাশ করেন ?

উত্তরঃ বেঙ্গল গেজেট নামে সাপ্তাহিক ইংরেজি সংবাদপত্রটি জেমস অগাস্টাস হিকি ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন।

৪২. সংবাদপত্র এবং সাময়িক পত্রের মধ্যে পার্থক্য কী ?

উত্তরঃ সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যেমন–
(১) সাধারণত সংবাদপত্র প্রতিদিন প্রকাশিত হয়। কিন্তু সাময়িকপত্র একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রকাশিত হয়।
(২) সংবাদপত্রের মুদ্রণে রোজকার খবরাখবর গুরুত্ব পায়। সাময়িকপত্রে রোজকার খবরের পরিবর্তে সমকালীন বাছাই করা বিষয় গুরুত্ব পায়।
(৩) সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা আকারে বড়ো হয় এবং সেগুলো বাঁধানো থাকে না। অন্যদিকে, সাময়িকপত্রের পৃষ্ঠাগুলো অপেক্ষাকৃত ছোটো হয় এবং সাধারণত তা বইয়ের মতো বাঁধাই করা হয়।

৪৩. চলচ্চিত্রের ইতিহাস বলতে কী বোঝায় ?

উত্তরঃ উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে উন্নত ক্যামেরার মাধ্যমে সচল ছবি তোলার প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন ঘটে এবং অগাস্ট ল্যুমিয়ের ও লুই ল্যুমিয়ের নামক দুই ভাইয়ের হাত ধরে প্যারিসে প্রথম চলচ্চিত্রের উদ্ভব ঘটে (১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ)। প্রথমত, প্রথমদিকে কোনো ঘটনা বা গল্পকে কেন্দ্র করে তৈরি এই সচল ছবি ছিল নির্বাক, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ শতকের গোড়ায় আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে সবাক ও সচল ছবি তৈরি হয়, যা চলচ্চিত্র নামে পরিচিত। দ্বিতীয়ত, চলচ্চিত্রের উদ্ভব ও বিবর্তন সম্পর্কে বিশেষভাবে জড়িত ছিলেন— ফিলিপ বি জারিপি, চার্লস রাসেল ডে, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিককুমার ঘটক, গিরিশ কারনাড, আদুর গোপালকৃষ্ণ প্রমুখ।

৪৪. ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রাথমিক ইতিহাস কীভাবে চিহ্নিত করবে ?

উত্তরঃ ঔপনিবেশিক শাসনপর্বে ভারতে ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে হরিশ্চন্দ সখারাম ভাতওয়াডেকর ‘দ্য রেস্টলারস’ নামক একটি সচল ও নির্বাক ছবি নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে ধুন্দিরাজ গোবিন্দ ফালকে তৈরি করেন ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ নামক চলচ্চিত্র (১৯১৩ খ্রি.)। তবে ‘আলম আরা’ চলচ্চিত্রটি ছিল (১৯৩১ খ্রি.) ভারতের প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। ভারতে হীরালাল সেন প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন এবং এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’।

৪৫. সরলাদেবী চৌধুরানীর লেখা আত্মজীবনীর নাম কী ? এই গ্রন্থ থেকে ইতিহাস রচনার জন্য কী ধরনের তথ্য পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ সরলাদেবী চৌধুরানীর লেখা আত্মজীবনীর নাম হল ‘জীবনের ঝরাপাতা’।
‘জীবনের ঝরাপাতা’ গ্রন্থ থেকে ভারতের কৃষক ও শ্রমিকদের ওপর ব্রিটিশ ও তাদের সহযোগীদের শোষণ-অত্যাচার, ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন, স্বদেশি আন্দোলন, ঠাকুরবাড়ির সাংস্কৃতিক চর্চা প্রভৃতি সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায়। এইসব তথ্য আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

৪৬. আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান সমৃদ্ধ কয়েকটি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানসমৃদ্ধ উল্লেখযোগ্য আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার উদাহরণ হল–
(১) বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’,
(২) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’,
(৩) সরলাদেবী চৌধুরানীর ‘জীবনের ঝরাপাতা’,
(৪) মহাত্মা গান্ধির ‘দ্য স্টোরি অব মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথ’,
(৫) সুভাষচন্দ্র বসুর ‘অ্যান ইণ্ডিয়ান পিলগ্রিম’ (অসমাপ্ত),
(৬) জওহরলাল নেহরুর ‘অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ প্রভৃতি।

৪৭. বাংলা চলচ্চিত্রের আদিপর্বের ইতিহাস বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে সিনেমা বা চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি বাংলা ভাষাতেও চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রথম বাংলা ছবি ‘বিল্বমঙ্গল’ ছিল নির্বাক ছবি, কিন্তু ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পায় ‘জামাইষষ্ঠী’ নামক সবাক ছবি। পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিককুমার ঘটক, মৃণাল সেনের হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্র পরিণত হয়ে ওঠে এবং সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ দেশ ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি লাভ করে।

৪৮. সত্যজিৎ রায় বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায় বিখ্যাত ছিলেন, কারণ— প্রথমত, সত্যজিৎ রায় ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক ও বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য অস্কার পুরস্কার প্রাপক। দ্বিতীয়ত, বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বাগ্রগণ্য, কারণ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে তিনি ‘পথের পাঁচালি’ নামক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্বীকৃতি ও প্রশংসা লাভ করে। তৃতীয়ত, তাঁর অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘অপুর সংসার’, ‘শাখাপ্রশাখা’, ‘নায়ক’, ‘আগন্তুক’।

৪৯. ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইনটারনেট ব্যবহারের অসুবিধাগুলি কী ?

উত্তরঃ ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইনটারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অসুবিধা আছে। যেমন–
(১) ইনটারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনেকসময় অসম্পূর্ণ থাকে।
(২) তথ্যগুলি অনেকসময় মনগড়া হয়।
(৩) গবেষণার কাজে এই তথ্য ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ভরসা পাওয়া যায় না।
(৪) অনেকক্ষেত্রে ইনটারনেটের অসত্য বা অর্ধসত্য তথ্য গবেষণার গুণগত মান কমিয়ে দেয়।

৫০. পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস কী ?

উত্তরঃ পোশাক পরিচ্ছদের উদ্ভব ও তার বিবর্তনকে চিহ্নিত করা এবং পোশাক কীভাবে কর্তৃত্ব ও আভিজাত্যের মাপকাঠি হয়ে উঠেছিল তা ব্যাখ্যা করাই হল পোশাক পরিচ্ছদের ইতিহাস। এই ইতিহাসের দিকগুলি হল প্রথমত, ভৌগোলিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক অভিরুচি, সামাজিক রীতি কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পোশাক পরিচ্ছদের ক্ষেত্রকে প্রভাবিত তা চিহ্নিত করা এই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য। দ্বিতীয়ত, এই ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা হলেন ম্যাথেউস সোয়ার্জ, কার্ল কোহলার, এম্মা টারলো, এল টেলর, পিটার ম্যাকনিল, রবার্ট রস, মলয় রায়।

৫১. ঢাকাই খাবার কী ?

উত্তরঃ ঢাকা যখন প্রাদেশিক রাজধানী ছিল তখন এখানকার রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে পারসিক খাদ্যরীতির সংমিশ্রণ ঘটে। এর ফলে যে খাবার প্রস্তুত হয় তা ‘ঢাকাই খাবার’ নামে পরিচিত। এই খাবারের অন্তর্ভুক্ত ছিল খিচুড়ি, হালিম, চালের গুঁড়োর পিঠে প্রভৃতি।

৫২. সামরিক ইতিহাস বলতে কী বোঝায় ?

উত্তরঃ প্রাচীনকাল থেকে সংঘর্ষের মাধ্যমে ইতিহাসের গতি বয়ে চলেছে। যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, যুদ্ধাস্ত্রের বিবর্তন, সামরিক বাহিনীর প্রকৃতি ও সমরকুশলতা, যুদ্ধের প্রকৃতি ও প্রভাবকে তুলে ধরা হল সামরিক ইতিহাস।
এই প্রসঙ্গে প্রথমত, পেলোপনেসীয় যুদ্ধ, রামায়ণ ও মহাভারতের যুদ্ধসহ প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানের সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ঠান্ডা যুদ্ধের এই ইতিহাসচর্চায় স্থান পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই ইতিহাসের গবেষকরা হলেন— শেলফোর্ড বিডওয়েল, জন টেরাইন, রিচাড কন, যদুনাথ সরকার, সুরেন্দ্রনাথ সেন, এ জে পি টেলর, বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক রায়।

৫৩. বর্তমানকালে ইতিহাসের আলোচনায় সমাজের কোন্ স্তরের মানুষ স্থান পায় ?

উত্তরঃ বর্তমানকালে ইতিহাসের আলোচনায় সমাজের উচ্চস্তর থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত সমস্ত মানুষ অর্থাৎ রাজা, শাসক, অভিজাত, মধ্যবিত্ত, সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, সৈনিক, নারী প্রমুখ সকলেই স্থান পায়।

৫৪. আধুনিক ইতিহাসচর্চার নানা বৈচিত্র্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ আধুনিক ইতিহাসচর্চায় বহু নতুন বিষয়ের আলোচনা যুক্ত হওয়ার ফলে তা যথেষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইতিহাসের এই সব নতুন বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হল নতুন সমাজবিন্যাস, খেলাধুলা, খাদ্যাভ্যাস, শিল্পচর্চা, পোশাক-পরিচ্ছদ, যানবাহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, দৃশ্যশিল্প, স্থাপত্য, স্থানীয় অঞ্চল, শহর, যুদ্ধবিগ্রহ, পরিবেশ, বিজ্ঞান-প্ৰযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যা, নারী প্রভৃতির ইতিহাসচর্চা।

৫৫. শহরের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তরঃ শহরের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল পূর্ণেন্দু পত্রী রচিত ‘কলকাতা সংক্রান্ত’, নিখিল সরকার (শ্রীপান্থ) রচিত ‘কলকাতা’, রাধারমণ মিত্র রচিত ‘কলিকাতা দর্পণ’, বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘শহর বহরমপুর’, শামসুদ্দোহা চৌধুরী রচিত ‘প্রাচীন নগরী সোনারগাঁও’, মুনতাসীর মামুন রচিত ‘ঢাকা : স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’, পার্থ দত্ত রচিত ‘আরবানাইজেশন, ‘লোকাল পলিটিক্স অ্যান্ড লেবার প্রোটেস্ট’, নারায়ণী গুপ্ত রচিত ‘দ্য দিল্লি অমনিবাস’, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত রচিত ‘কলকাতার ফেরিওয়ালার ডাক আর রাস্তার আওয়াজ’ প্রভৃতি।

৫৬. ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’ কী ? অথবা, সামাজিক ইতিহাস কী ?

উত্তরঃ বর্তমানকালে রাজা-মহারাজা বা অভিজাত সমাজের মানুষের আলোচনা ছাড়াও ইতিহাসে সমাজের নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক, মজুর, নারী প্রমুখ সকলের আলোচনা করা হয়। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হওয়া এই ধরনের ইতিহাসচর্চা ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’ নামে পরিচিত।

৫৭. পরিবেশের ইতিহাস কী ?

উত্তরঃ পরিবেশের অর্থাৎ প্রকৃতি জগতের সঙ্গে মানবসমাজের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ইতিহাসই হল পরিবেশের ইতিহাস। এই ইতিহাসের বিভিন্ন দিকগুলি হল— প্রথমত, সুপ্রাচীন কালে মানুষের আবির্ভাব হয়। পশুশিকারি জীবন থেকে মানবসভ্যতার উত্তরণের পিছনে পরিবেশের ভূমিকা ও অবদানকে চিহ্নিত করাই এই ইতিহাসের মূল বৈশিষ্ট্য। দ্বিতীয়ত, ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশ সংক্রান্ত আলোচনা থেকেই পরিবেশের ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে; এই ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা হলেন– র‍্যাচেল কারসন, ডেভিড আরনল্ড, রামচন্দ্র গুহ, মাধব গ্যাডগিল, রিচার্ড গ্রোভ, স্যামুয়েল পি হাইজ, অ্যান্ড্রু সি ইসেনবার্গ, আলফ্রেড ডব্লিউ।

৫৮. নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।

উত্তরঃ নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রণজিৎ গুহ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে, শাহিদ আমিন, সুমিত সরকার, দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র প্রমুখ।

৫৯. ‘অ্যানাল স্কুল’ কী ?

উত্তরঃ ‘অ্যানাল স্কুল’ হল ফ্রান্সের একটি পত্রিকাগোষ্ঠী। মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেবর -এর উদ্যোগে ‘আনালস অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এই গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চায় সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাধারণ মানুষ, পরিবার, মনস্তত্ত্ব প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় স্থান পেয়েছে।

৬০. নতুন সামাজিক ইতিহাসের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলি কী ?

উত্তরঃ নতুন সামাজিক ইতিহাসের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলি হল জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক ঘটনাবলির বিবরণের বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের স্থানীয় পৌর ও সামাজিক জীবন, সংস্কৃতি, জনস্বাস্থ্য, জাতিগত পরিচয়, দারিদ্র্য, গণমাধ্যম প্রভৃতি।

৬১. নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তরঃ নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল রণজিৎ গুহ রচিত ‘সিলেক্টেড ‘সিলেক্টেড সাবল্টার্ন স্টাডিজ’, ‘সাবল্টার্ন স্টাডিজ রিডার : ১৯৮৬-১৯৯৫’, পার্থ চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘সাবল্টার্ন স্টাডিজ’, জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে রচিত ‘এ হিস্ট্রি অব প্রেজুডিস’, শাহিদ আমিন রচিত ‘ইভেন্ট, মেটাফোর, মেমোরি : চৌরিচৌরা ১৯২২-৯২’, গৌতম ভদ্র ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘নিম্নবর্গের ইতিহাস’, গৌতম ভদ্র রচিত ‘ইমান ও নিশান’ প্রভৃতি।

৬২. পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্বগুলি হল প্রথমত, মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে পরিবেশের ভূমিকা চিহ্নিত করে পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ রক্ষার ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, পরিবেশ সংকট ও তার প্রকৃতি, পরিবেশ বিপর্যয় ও তার ভয়াবহতা, বাসস্থানের সুস্বাস্থ্য, অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও তার প্রয়োগের ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত, পরিবেশের ইতিহাসের সঙ্গে ইতিহাসের অন্য দিকগুলির সম্পর্ক নির্ধারণ।

৬৩. খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তরঃ খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত খ্যাতনামা গবেষক হলেন কে টি আচয়, প্যাট চ্যাপম্যান, শরীফ উদ্দিন আহমেদ, হারভে লেভেনস্টেইন, জোনাথানরাইট, বিজয়া চৌধুরী, হরিপদ ভৌমিক প্রমুখ।

৬৪. ভারতে সংগঠিত দুটি পরিবেশ আন্দোলনের নাম লেখো।

উত্তরঃ ভারতে অনুষ্ঠিত দুটি পরিবেশ আন্দোলন হল– প্রথমত, ১৯৬০ এর দশকে উত্তরপ্রদেশের আদিবাসী নারী-পুরুষ, সরলা বেন ও সুন্দরলাল বহুগুণার নেতৃত্বে অরণ্য সংরক্ষণ আন্দোলন গড়ে ওঠে যা ‘চিপকো আন্দোলন’ নামে পরিচিত। দ্বিতীয়ত, উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল জেলায় ভাগীরথী ও ভীলাঙ্গনা নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত তেহেরি শহরকে জনমুক্ত করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সুন্দরলাল বহুগুণার নেতৃত্বে এর বিরুদ্ধে পরিবেশ রক্ষার যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তা ‘তেহেরি গাড়োয়াল আন্দোলন’ (১৯৬০-২০০৪ খ্রিস্টাব্দ) নামে পরিচিত।

৬৫. নারী ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তরঃ নারী ইতিহাসচর্চার উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব হল– প্রথমত, সভ্যতার ইতিহাসে রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকাকে তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয়ত, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ও নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় এই ইতিহাসচর্চা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। তৃতীয়ত, ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে প্রচলিত ইতিহাসের সংশোধন করতে চেয়ে নারী ইতিহাস এক বিকল্প ইতিহাসচর্চার সন্ধান দিয়েছে।

৬৬. হরিপদ ভৌমিক ইতিহাসে বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ গবেষক হরিপদ ভৌমিক তাঁর ‘রসগোল্লা বাংলার জগৎমাতানো আবিষ্কার’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, বাংলার নদিয়া জেলার ফুলিয়ায় হারাধন ময়রা আদি রসগোল্লার সৃষ্টিকর্তা। এই কারণে তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।

৬৭. নবীনচন্দ্র দাস কে ছিলেন ?

উত্তরঃ নবীনচন্দ্র দাস ছিলেন কলকাতার বাগবাজারের একজন ময়রা। নদিয়ার ফুলিয়ার হারাধন ময়রার তৈরি করা রসগোল্লা কিছুটা পরিবর্তন করে নবীনচন্দ্র ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরি করেন।

৬৮. মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে ইতিহাসচর্চার কী ধরনের উপাদান পাওয়া যেতে পারে ?

উত্তরঃ মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের উপাদান বা তথ্য পাওয়া যেতে পারে। যেমন–
(১) মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা,
(২) সামাজিক রুচিবোধ,
(৩) সামাজিক উদারতার মাত্রা,
(৪) লিঙ্গবৈষম্য প্রভৃতি।

৬৯. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস বলতে কী বোঝায় ?

উত্তরঃ বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বিকাশ ও বিবর্তন, প্রযুক্তির উদ্ভব ও তার অগ্রগতি এবং চিকিৎসাবিদ্যার বিবর্তন সম্পর্কিত ইতিহাসচর্চা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিদ্যার ইতিহাস নামে পরিচিত। এই ইতিহাসের মূল কথা হল প্রথমত, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যা কীভাবে মানবসমাজ ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছে তার অগ্রগতির পরিমাপ করা। দ্বিতীয়ত, আদিম সভ্যতা থেকে আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার উত্তরণই হল এই ইতিহাসচর্চার পরিধি; এই ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা হলেন— টমাস কুন, সি ডি ড্যামপিয়ার, আই. গোল্ডস্টাইন, জে ডি বারনাল, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ডেডিভ আরনল্ড, এস জি ব্রাস, দীপককুমার, আর্নস্ট মেয়র।

৭০. ব্রাহ্মিকা পদ্ধতি কী ?

উত্তরঃ ব্রাহ্মিকা পদ্ধতি হল বাঙালি মেয়েদের এক ধরনের শাড়ি পড়ার পদ্ধতি, যা মূলত অবাঙালিদের কুচি পদ্ধতিতে শাড়ি পড়ার বিবর্তিত রূপ। এই পদ্ধতিতে শাড়ির কুচির অংশটি অনেক বড়ো হয় এবং কোমর, বুক, পিঠ সর্বত্র হয়ে ওঠে টান টান। বর্তমানে বাঙালি মেয়েরা এই পদ্ধতিতেই শাড়ি পড়েন। উনিশ শতকের জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের মেয়েরা প্রথম শাড়ি পরার এই পদ্ধতিটি চালু করেছিলেন।

৭১. নারী ইতিহাস কী ?

উত্তরঃ প্রচলিত পুরুষকেন্দ্রিক ইতিহাসের সংশোধন ঘটিয়ে সমাজ ও সভ্যতার ইতিহাসে নারীর অবদান ও ভূমিকার পুনর্মূল্যায়ন সংক্রান্ত ইতিহাসচর্চাই হল নারী ইতিহাস। এই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য হল– প্রথমত, প্রথমদিকে প্রভাবশালী নারীদের সম্পর্কে ইতিহাসচর্চা করা হলেও বর্তমানে সাধারণ নারীরাও এর অন্তর্গত। দ্বিতীয়ত, সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে নারীর ভূমিকা ও অংশগ্রহণকে চিহ্নিত করাই এই ইতিহাসের প্রধানতম। তৃতীয়ত, নারী ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা হলেন– মেরি ওলস্টনস্ক্রাফট, সিমোন দ্য বোভোয়ার, জি লার্নের, বারবারা কান, স্টিভেন মিনজ, লুই এ টিল্লি, জেরান্ডিন ফরবেশ, শমিতা সেন, নীরা দেশাই।

৭২. কবে কোথায় ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ড্রেস হিস্টোরিয়ানস’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ? এর উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উত্তরঃ ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ড্রেস হিস্টোরিয়ানস’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ড্রেস হিস্টোরিয়ানস’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস চর্চা করা।

৭৩. মানুষের খাদ্যাভ্যাস থেকে ইতিহাসচর্চার কী ধরনের উপাদান পাওয়া যেতে পারে ?

উত্তরঃ মানুষের খাদ্যাভ্যাস থেকে ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের উপাদান পাওয়া যেতে পারে যেমন–
(১) কোনো সমাজের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা,
(২) সেই সমাজের খাদ্যাভ্যাস কতখানি অন্য সমাজের দ্বারা প্রভাবিত,
(৩) স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা প্রভৃতি।

৭৪. পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তরঃ পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত খ্যাতনামা গবেষক হালেন কার্ল কোহলার, এম্মা টারলো, মলয় রায়, নিরুপমা পুণ্ডীর, ত্রৈলোক্যনাথ বসু প্রমুখ।

৭৫. বর্তমানকালে কোনো দেশ বা জাতির জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ বর্তমানকালে কোনো দেশ বা জাতির জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন – (১) কোনো দেশ বা জাতির জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িক অবস্থান, নানান সামাজিক দিক খেলাধুলোর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। (২) বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে খেলাধুলোর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

৭৬. সাম্প্রতিককালে কারা খেলাধুলার ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন ?

উত্তরঃ সাম্প্রতিককালে জে এ ম্যাসান, রিচার্ড হোল্ট, গৌতম ভট্টাচার্য, রূপক সাহা, বোরিয়া মজুমদার, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ খ্যাতনামা গবেষক খেলাধুলার ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন।

৭৭. খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তরঃ খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল বোরিয়া মজুমদার রচিত ‘ক্রিকেট ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’, বোরিয়া মজুমদার ও কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান ফুটবল : স্ট্রাইভিং টু স্কোর’, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘খেলা যখন ইতিহাস’, গৌতম ভট্টাচার্য রচিত ‘কাপমহলা’, রূপক সাহা রচিত ‘বিদ্রোহী মারাদোনা’, উৎপল শুভ্র রচিত ‘বিশ্ব যখন ফুটবলময়’ প্রভৃতি।

৭৮. রণজিৎ গুহ রচিত নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তরঃ রণজিৎ গুহ রচিত নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হল–
(১) ‘সিলেক্টেড সাবল্টার্ন স্টাডিজ’,
(২) ‘এলিমেন্টারি অ্যাসপেক্ট অব পিজেন্ট ইনসারজেন্সি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’,
(৩) ‘এ সাবল্টার্ন স্টাডিজ রিডার : ১৯৮৬-১৯৯৫’।

৭৯. ‘জীবনস্মৃতি’ থেকে উনিশ শতকের বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাসের কী কী উপাদান পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ থেকে– প্রথমত, উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের ঔপনিবেশিক শিক্ষার কথা জানা যায়। দ্বিতীয়ত, এই গ্রন্থের ‘শিক্ষারম্ভ’ প্রভৃতি অধ্যায়ের বর্ণনা থেকে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ও নর্মাল স্কুল এর শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। তৃতীয়ত, ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্ধ এবং প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কবিহীন ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কথা জানা যায়।

Leave a Reply