দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় 2 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর | Class 10 History 2 Marks Question Answer Chapter-2 wbbse

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় 2 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর | Class 10 History 2 Marks Question Answer Chapter-2 wbbse

1. দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

2. দশম শ্রেণির ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

3. দশম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট Click Here

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : দশম শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা | SAQ Question Answer Class 10 (Madhyamik) History Chapter-2 wbbse

• সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : (দুই বা তিনটি বাক্যে উত্তর দাও) প্রতিটি প্রশ্নের মান-২

১. বাংলায় নবজাগরণের প্রধান ভিত্তি কী ছিল ?

উত্তরঃ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী আদর্শ ছিল বাংলার নবজাগরণের প্রধানতম ভিত্তি। প্রাচ্য আদর্শের ভিত্তিগুলি হল এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা মাদ্রাসা, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও কলকাতা সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা। প্রাচ্যবাদের চর্চা ভারতের ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটায়। অন্যদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষা বাংলায় মানবতাবাদ, যুক্তিবাদ, প্রগতিবাদী আদর্শের সঞ্চার ঘটায়। এই দুই আদর্শের ঘাত-প্রতিঘাতেই সৃষ্টি হয় বাংলার নবজাগরণ।

২. বাংলার নবজাগরণের সীমাবদ্ধতাগুলি কী ?

উত্তরঃ বাংলায় নবজাগরণের সীমাবদ্ধতাগুলি হল— সমাজ ও ধর্ম সংস্কার আন্দোলন মূলত হিন্দুসমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, তাই তা ছিল হিন্দু নবজাগরণ। এছাড়া নবজাগরণ ছিল শহরকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলন ; তাই তার প্রভাব সীমিত ছিল। উপরন্তু নবজাগরণের ফলে জমিদার, ব্যবসায়ী, শিক্ষিত পেশাজীবী ব্যক্তিরা লাভবান হলেও কৃষকসহ সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়নি।

৩. উমেশচন্দ্র দত্ত বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ উমেশচন্দ্র দত্ত বিখ্যাত (১৮৪০- ১৯০৭ খ্রি.) ছিলেন, কারণ প্রথমত, তিনি ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের বিশিষ্ট নেতা, শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক এবং কলকাতায় সিটি স্কুল ও কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ। দ্বিতীয়ত, তিনি সামাজিক কুসংস্কারের বিরোধিতার পাশাপাশি বাঙালি ‘বামা’ অর্থাৎ, নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার সাধন এবং নারীর সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ‘বামাবোধিনী’ (১৮৬৩ খ্রি.) সভা প্রতিষ্ঠা করেন। তৃতীয়ত, তিনি ‘বামাবোধিনী’ নামক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করে নারী সমাজের অবস্থা, নারীশিক্ষা গ্রহণ ও তার তাৎপর্য, চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় যোগদান ও তার অভিজ্ঞতা, গৃহ-চিকিৎসাসহ গৃহ পরিচালনার খুঁটিনাটি দিক তুলে ধরেন।

৪. স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে ‘ বামাবোধিনী পত্রিকা’র ভূমিকা কী ছিল ?

উত্তরঃ স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে বামাবোধিনী পত্রিকার ভূমিকাগুলি হল প্রথমত, বামাবোধিনী পত্রিকা’র বিভিন্ন লেখনীর (তৎকালীন সমাজের ধর্ম, নীতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ঘরোয়া ওষুধপত্র, শিশু পরিচর্যা, নারীশিক্ষা বিষয়ক) মাধ্যমে বাঙালি গৃহবধূসহ নারীদের শিক্ষিত করে তোলার কাজ শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, এই পত্রিকা নারীদের প্রতি বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নারীদের সচেতন করে তুলেছিল। তৃতীয়ত, এই পত্রিকা নারীদের মধ্যে বিদ্যাশিক্ষার প্রসারের জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করে কুসংস্কারমুক্ত শিক্ষিত নারী গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ‘বন্দিনী বামা মুক্তির যুগ’ শুরু করেছিল।

৫. কীভাবে সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্য থেকে উনিশ শতকের সমাজের প্রতিকলন পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ উনিশ শতকের বাংলার ইতিহাসের একটি বিশেষ উপাদান হল সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্য। এগুলিতে সমসাময়িক সমাজের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, কৃষি ও কৃষক, সমাজ ও জাতিবিন্যাসের কথা যেমন জানা যায় তেমনি সমাজের অগ্রগতি ও আধুনিকীকরণের কথাও জানা যায়। ‘বামাবোধিনী নামক সাময়িক পত্রিকা, হিন্দু প্যাট্রিয়ট’-এর মতো সংবাদপত্র, ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ ও ‘নীলদর্পণ’ নামক সাহিত্য থেকে একথা জানা যায়।

৬. ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিষয়ের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’য় প্রকাশিত বিষয়ের দুটি বৈশিষ্ট্য হল– প্রথমত, নারী জাতির মানসিক বিকাশের জন্য নারী সমাজের অবস্থা, নারীশিক্ষা গ্রহণ ও তার তাৎপর্য, চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় যোগদান ও তার অভিজ্ঞতা, গৃহচিকিৎসাসহ গৃহ পরিচালনার খুঁটিনাটি দিক প্রতিফলিত হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, পত্রিকাটি নারীদের জন্য হলেও প্রকাশিত বিষয়ের পত্রিকাটিতে পুরুষ লেখকদের রচনার পাশাপাশি নারীরাও স্বনামে অথবা বেনামে নিয়মিত লিখতেন । তৃতীয়ত, এই পত্রিকা নারীদের প্রতি বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নারীদের সচেতন করে তুলে ‘বন্দিনী বামামুক্তির’ যুগ শুরু করেছিল।

৭. বামাবোধিনী পত্রিকা থেকে নারীশিক্ষা বিষয়ে কী কী তথ্য পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ ঊনবিংশ শতকে বাঙালি নারীদের শিক্ষিত করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, যেমন— প্রথমত, বামা অর্থাৎ নারীদের বিদ্যাশিক্ষার প্রতিবন্ধকতার প্রতিফলন ঘটেছিল এই পত্রিকাটিতে। দ্বিতীয়ত, মেয়েদের জড়তা কাটিয়ে শিক্ষিত করে তোলাই ছিল এই পত্রিকার অন্যতম লক্ষ্য।

৮. বামাবোধিনী পত্রিকা বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের একটি বিশেষ দিক নারীশিক্ষার প্রসার ও নারী সমাজের উন্নয়ন। এই প্রচেষ্টার ফলশ্রুতি ছিল বামাবোধিনী’ পত্রিকার আত্মপ্রকাশ (১৮৬৩ খ্রি.)। এই পত্রিকায় নারী সমাজের অবস্থা, শিক্ষাগ্রহণ ও তার তাৎপর্য, চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় যোগদান ও তার অভিজ্ঞতা, গৃহচিকিৎসাসহ গৃহপরিচালনার খুঁটিনাটি সম্পর্কিত রচনা প্রকাশিত হত।

৯. স্ত্রীধন কী ?

উত্তরঃ বামাবোধিনী পত্রিকা থেকে জানা যায় যে, ভারতীয় নারীর ব্যক্তিগত সম্পত্তিই হল স্ত্রীধন এবং এগুলি সাধারণত অলংকার ও পোশাক। বিবাহকালে নারীর ‘পিতৃদত্ত বা পিতার দেওয়া, ‘ভ্রাতৃদত্ত’ বা ভাইয়ের দেওয়া অলংকার ও উপহার ছিল স্ত্রীধনের উৎসস্থল। এছাড়া নারীর মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি স্বামী অথবা পুত্রেরা পেত না, তা পেত তার কন্যা বা কন্যারা।

১০. ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ থেকে বাংলার জনজীবন সম্পর্কে কী জানা যায় ?

উত্তরঃ ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ এ বাংলার জনগণের জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে প্রতিবেদন রচিত হয়েছিল, যেমন প্রথমত, ইংরেজ শাসনকালে অর্থকরী ফসল (যেমন– পাট, তুলা, তৈলবীজ, আখ) চাষ ও তা বিদেশে রপ্তানির কারণে কৃষিপণ্য ও খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধির ফলে জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয়ত, শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তাদের কর্মসংস্থানও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তৃতীয়ত, নীলকরদের অত্যাচার ও নীলচাষিদের দুরবস্থার কথাও জানা যায়।

১১. ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ কেন বিখ্যাত ?

উত্তরঃ গিরিশচন্দ্র ঘোষের সম্পাদনায় মধুসুদন রায় ইংরেজি সাপ্তাহিক সংবাদপত্ররূপে (অবশ্য ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দ থেকে দৈনিক) প্রকাশ করেন (৬ ফেব্রুয়ারি, ১৮৫৩ খ্রি.) । এই পত্রিকা বিখ্যাত ছিল, কারণ— প্রথমত, এই পত্রিকার বিখ্যাত সম্পাদক ছিলেন হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। যিনি নীলকরদের অত্যাচার সম্পর্কে খবর প্রকাশ করে নীলচাষিদের বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, এই পত্রিকা ইংরেজ শাসন– শোষণের সমালোচনা ও বিরোধিতা করে এবং নীলচাষিদের পক্ষ সমর্থন করে জাতীয়তাবাদী পত্রিকার মর্যাদা লাভ করে।

১২. ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি লেখকের স্বনামে প্রকাশিত হয়নি কেন ?

উত্তরঃ ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি লেখকের স্বনামে প্রকাশিত হয়নি। কারণ প্রথমত, ‘নীলদর্পণ’ নাটকের লেখক দীনবন্ধু মিত্র একজন সরকারি চাকুরে ছিলেন। দ্বিতীয়ত, নীলকরদের বিরুদ্ধে লেখা এই নাটকটিতে নীলচাষিদের দুঃখদুর্দশার কথা তুলে ধরে তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিরাগভাজন হতে পারতেন এবং তার চাকুরির ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারত। তৃতীয়ত, তিনি মনে করেছিলেন পাদরি জেমস লঙ যেহেতু ইংরেজ সেহেতু তার নামে নাটকটা প্রকাশ করলে কোনো সমস্যা হবে না।

১৩. হিন্দু প্যাট্রিয়ট থেকে বাংলার জনজীবন সম্পর্কে কী জানা যায় ?

উত্তরঃ হিন্দু প্যাট্রিয়ট-এ বাংলার জনগণের জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে প্রতিবেদন রচিত হয়েছিল। ইংরেজ শাসনকালে অর্থকরী ফসল (যেমন– পাট, তুলা, তৈলবীজ, আখ) চাষ ও তা বিদেশে রফতানির কারণে কৃষিপণ্য ও খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধির কারণে জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তাদের কর্মসংস্থানও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে

১৪. হিন্দু প্যাট্রিয়ট থেকে নীলচাষ সম্পর্কে কী জানা যায় ?

উত্তরঃ হিন্দু প্যাট্রিয়ট নামক সংবাদপত্র হল নীলচাষ ও নীলকর সাহেবদের অত্যাচার সম্পর্কে জানার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কৃষকদের কাছে নীলচাষ অলাভজনক হলেও দাদন বা অগ্রিম অর্থ গ্রহণের কারণে নীলচাষিরা নীলচাষ করতে বাধ্য হত। নীলচাষে অনিচ্ছুক কৃষকরা নীলকর সাহেবদের দ্বারা অত্যাচারিত হত।

১৫. ‘নীলদর্পণ’ নাটকের কয়েকটি চরিত্রের নাম লেখো।

উত্তরঃ ‘নীলদর্পণ’ নাটকের প্রধান দুটি চরিত্র হল তোরাপ এবং গোলকচন্দ্র বসু। এ ছাড়াও নবীন মাধব, বিন্দু মাধব, সৈরিথ্রী, সাবিত্রী প্রমুখ ছিল এই নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্র ।

১৬. দেশপ্রেমের উন্মেষে ‘নীলদর্পণ’ নাটকের কী ভূমিকা ছিল ?

উত্তরঃ দেশপ্রেমের উন্মেষে ‘নীলদর্পণ’ নাটকের ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ— প্রথমত, দীনবন্ধু মিত্র তাঁর ‘নীলদর্পণ’ নাটকে অনিচ্ছুক নীলচাষিদের ওপর নীলকরদের অত্যাচারের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয়ত, প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা চোখের জল ও মুখের হাসি তুলে ধরেছিলেন তার নাটকে। তৃতীয়ত, নীলকরদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে রায়ত, সম্পন্ন কৃষক, মধ্যবিত্ত শ্রেণি একজোট হয়ে নীলচাষের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করেছিল তা ধরা পড়ে এই নাটকে, যা ভারতীয়দের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

১৭. ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’র কয়েকটি দিক চিহ্নিত করো। অথবা ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকার বিষয়বস্তু কী ছিল ?

উত্তরঃ হরিনাথ মজুমদার বা ‘কাঙাল হরিনাথ’ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ ছিল এক সাময়িক পত্রিকা। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি প্রথমত, গ্রাম ও গ্রামবাসী প্রজার অবস্থা সহ সমসাময়িক বিভিন্ন খবর প্রকাশ করতেন। দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ সরকার ও তার সহযোগী জমিদার ও মহাজন কর্তৃক প্রজা শোষণ ও অত্যাচারের কথা প্রকাশিত হয়েছিল। এমনকি জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়ির জমিদারি ব্যবস্থাও তাঁর সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পায়নি। তৃতীয়ত, এই পত্রিকায় সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ও বীরগাথা প্রকাশিত হয়েছিল।

১৮. হুতোম প্যাঁচার নক্শা থেকে কীভাবে কলকাতার সমাজ বিন্যাসের কথা জানা যায় ?

উত্তরঃ কালীপ্রসন্ন সিংহের রচিত ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ নামক ব্যঙ্গাত্মক গ্রন্থ থেকে ইংরেজ শাসনের পূর্বে বাংলার বড় বড় বংশের (কৃষ্ণচন্দ্র, রাজবল্লভ, মানসিংহ, নন্দকুমার, জগৎশেঠ) পতন এবং নতুন বংশের (মল্লিক পরিবার, শীল পরিবার) উত্থানের কথা জানা যায়। এর পাশাপাশি নতুন নতুন জাতের উদ্ভব হয়। এর মূল কারণ ছিল ইংরেজ শাসন ও ব্যাবসা-বাণিজ্য।

১৯. হুতোম প্যাঁচার নক্শা থেকে উনিশ শতকের সংস্কৃতির কথা কীভাবে জানা যায় ?

উত্তরঃ হুতোম প্যাঁচার নক্শা’ থেকে উনিশ শতকের বিভিন্নধর্মী সংস্কৃতির কথা জানা যায়— যেমন, নীলের ব্রত, গাজন সন্ন্যাসী (চড়কি)-দের শিবের কাছে মাথা ঘোরানো বা মাথা চালা, যাত্রাগান, বুলবুলের গান, অশ্লীল শব্দযুক্ত আখড়াই গান প্রভৃতি। এছাড়া চড়কপূজা, নীলষষ্ঠী, রামলীলা, রথ উৎসব, বারোয়ারি দুর্গাপূজাও ছিল সংস্কৃতির অঙ্গ।

২০. ‘গ্রামাবার্তা প্রকাশিকা’ কেন ব্যতিক্রমী ছিল ?

উত্তরঃ ‘গ্রামাবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকা বিভিন্ন কারণে ব্যাতিক্রমী ছিল, যেমন প্রথমত, এর আগের সমস্ত পত্রপত্রিকা কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বলে তাতে শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানসিক প্রতিফলন ধরা পড়েছিল। কিন্তু ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ সর্বপ্রথম গ্রাম থেকেই প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয়ত, এতে গ্রামের মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, বঞ্চনা, নিপীড়নের কথা, নীলকরদের অত্যাচারের কথা তুলে ধরা হয়েছিল বলেই এটি ব্যতিক্রমী। তৃতীয়ত, এটিই ছিল বাংলার গ্রামীণ সংবাদপত্রের জনক।

২১. হরিনাথকে ‘কাঙাল হরিনাথ’ বলা হয় কেন ? অথবা, কে, কেন কাঙাল হরিনাথ নামে পরিচিত ছিলেন ?

উত্তরঃ হরিনাথকে ‘কাঙাল হরিনাথ’ বলা হয়, কারণ– প্রথমত, কুমারখালি পাঠশালার পণ্ডিত হরিনাথ মজুমদার ‘কাঙাল হরিনাথ’ নামে ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন। দ্বিতীয়ত, নিদারুণ আর্থিক দুরবস্থা, পরিকাঠামোগত অসুবিধে সত্ত্বেও দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে তিনি এই সমাজের নিপীড়িত, অত্যাচারিত, অবহেলিত মানুষের অবস্থা প্রকাশ করেন। তৃতীয়ত, হরিনাথ নিজে শুধুমাত্র সমাজের ওইসব মানুষগুলির প্রতি সমব্যথীই ছিলেন না, এক গভীর একাত্মবোধে আবদ্ধ হয়েছিলেন বলে তিনি নিজে তার নামের আগে ‘কাঙাল’ কথাটি ব্যবহার করতেন ।

২২. দেশীয় শিক্ষা বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ প্রাক-ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা দেশীয় শিক্ষা নামে পরিচিত ছিল; এর বিভিন্ন দিকগুলি হল প্রথমত, হিন্দুদের পাঠশালা ও টোল এবং মুসলিমদের মক্তব ও মাদ্রাসাগুলি ছিল দেশীয় শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র। দ্বিতীয়ত, হিন্দুরা সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় এবং মুসলিমরা মারবি ও ফারসি ভাষায় ধর্মীয় কাহিনিসহ সাধারণ কিছু বিষয়ের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করত। তৃতীয়ত, এই শিক্ষা ছিল ধর্মভিত্তিক এবং একারণেই এই শিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান, গণিত, ভূগোল, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদান অবহেলিত ছিল।

২৩. নীলদর্পণ নাটকের গুরুত্ব কি ?

উত্তরঃ নীলচাষিদের নীলচাষ ও অনিচ্ছুক নীলচাষিদের উপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারই ছিল ‘নীলদর্পণ’ নাটকের মূল বিষয়। অনুমান করা হয় যে, নদিয়ার গুয়াতেলির মিত্র পরিবারের দুর্দশাই এই নাটকের মাধ্যমে ফুটে উঠেছিল। নীল বিদ্রোহ ও ‘নীল কমিশন’ গঠনের পর এই নাটকটি প্রকাশিত হলে পাদ্রি জেমস্ লং এই নাটকটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন।

২৪. গ্রামবার্তা প্রকাশিকা-র কয়েকটি দিক চিহ্নিত করো।

উত্তরঃ হরিনাথ মজুমদার বা কাঙাল হরিনাথ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ ছিল এক সাময়িক পত্রিকা। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি গ্রাম ও গ্রামবাসী প্রজার অবস্থা প্রকাশ করতে সচেষ্ট হন। এছাড়া এই পত্রিকায় সমসাময়িক বিভিন্ন খবরও প্রকাশিত হত।

২৫. জনশিক্ষা কমিটি কেন তৈরি হয়েছিল ?

উত্তরঃ লর্ড হেস্টিংসের আমলে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলা প্রদেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে জনশিক্ষা কমিটি বা General Committee of Public Instruction ( GCPI ) তৈরি হয়েছিল ।

২৬. বাংলায় নবজাগরণের প্রধান ভিত্তি কী ছিল ?

উত্তরঃ বাংলায় নবজাগরণের প্রধান ভিত্তি ছিল প্রাচ্যবাদ ও পাশ্চাত্যবাদ এবং এই দুই আদর্শের ঘাত-প্রতিঘাতেই সৃষ্টি হয় বাংলার নবজাগরণ। প্রাচ্যবাদী প্রতিষ্ঠানগুলিতে (এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা মাদ্রাসা, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও কলকাতা সংস্কৃত কলেজ) প্রাচ্যবাদের চর্চা ভারতের ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটায়। অন্যদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষা বাংলায় মানবতাবাদ, যুক্তিবাদ, প্রগতিবাদী আদর্শের সঞ্চার ঘটায়।

২৭. বাংলার নবজাগরণের সীমাবদ্ধতাগুলি কী ?

উত্তরঃ বাংলায় নবজাগরণের সীমাবদ্ধতাগুলি হল— প্রথমত, সমাজ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলন মূলত হিন্দুসমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, তাই তা ছিল হিন্দু নবজাগরণ। দ্বিতীয়ত, নবজাগরণ শহরকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলন হওয়ার কারণে এর প্রভাব ছিল সীমিত। তৃতীয়ত, নবজাগরণের ফলে জমিদার, ব্যবসায়ী, শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিরা লাভবান হলেও কৃষক-সহ সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়নি।

২৮. ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে ভারতে শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রতি বছর অন্তত এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করার জন্য সুপারিশ করা হয়। এভাবে সরকার ভারতীয় প্রজাদের শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আবার এই সুপারিশকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী শিক্ষার বিতর্ক।

২৯. ভারতে শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক বলতে কী বোঝো ?

উত্তরঃ ঊনবিংশ শতকে ভারতীয় জনগণের মধ্যে ‘ভারতে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে শিক্ষাচর্চার মাধ্যম’ কী হওয়া উচিত সে বিষয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। এইচ. টি. প্রিন্সেপ, কোলব্রুক প্রমুখ পণ্ডিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে মাতৃভাষা অর্থাৎ প্রাচ্য ভাষাকে সমর্থন জানালেও স্যার জন শোর, চার্লস গ্রান্ট, লর্ড মেকলে প্রমুখ পণ্ডিত ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাচর্চার পক্ষেই মত প্রকাশ করেন। আধুনিক ভারতের শিক্ষাচর্চার ইতিহাসে এই বির্তক ‘প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক’ নামে পরিচিত।

৩০. ইটালির নবজাগরণের সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের দুটি বৈসাদৃশ্য লেখো ।

উত্তরঃ ইটালির নবজাগরণের সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের দুটি বৈসাদৃশ্য হল— প্রথমত, ইটালির নবজাগরণের উন্মেষ ও বিকাশ ঘটেছিল মুক্ত পরিবেশে কিন্তু বাংলার নবজাগরণের বিকাশ ঘটেছিল ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে। দ্বিতীয়ত, ইটালির স্বাধীন নগর রাষ্ট্রগুলির বুর্জোয়া ব্যবসায়ী, বণিক শ্রেণি ও শাসকবর্গ ইটালীয় নবজাগরণের পৃষ্ঠপোষকতা দান করেছিল, কিন্তু বাংলার নবজাগরণের মূল পৃষ্ঠপোষক ও কারিগর ছিল চাকরজীবী, উকিল, ডাক্তার ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি।

৩১. ভারতে নারীশিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগরের অবদান কী ছিল ?

উত্তরঃ উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারতের নারীশিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগরের অবদানগুলি হল প্রথমত, ১৮৫০ এর দশকে দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শকের সরকারি পদে থাকার সুবাদে তিনি ৩৫টি (মতান্তরে ৪০টি ) বালিকা বিদ্যালয় এবং ১০০টি বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব ছিল ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে বেথুন সাহেবের সহযোগিতায় ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল’ স্থাপন ও এই স্কুলের জন্য নিয়মাবলি রচনা।

৩২. শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান ছিল ?

উত্তরঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সারাজীবন ধরে শিক্ষাবিস্তারে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, যেমন— প্রথমত, নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয়ত, পাঠ্যপুস্তকের অভাব দূর করার জন্য তিনি নানা ধরনের সহজ পুস্তক রচনা করেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয় ইত্যাদি ।

৩৩. কে, কবে ইংরেজি ভাষাকে ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যম হিসাবে ঘোষণা করেন ? এর গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮৩৫ সালে ইংরেজি ভাষাকে ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যম হিসাবে ঘোষণা করেন। এর ফলে ভারতে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের সরকারি নীতি গৃহীত হয় এবং প্রাচ্য-পাশ্চাত্যবাদী বিতর্কের অবসান ঘটে।

৩৪. উডের নির্দেশনামা কী ?

উত্তরঃ ভারতের প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষার মধ্যে সামঞ্চসা প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষা-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করার জন্য উনিশ শতকে চার্লস উডের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের সুপারিশগুলিকে ‘উডের নির্দেশনামা বলা হয় (১৮৫৪ খ্রি.)।

৩৫. বেথুন কলেজ কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ?

উত্তরঃ জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই স্কুলের সঙ্গে বালিগঞ্জের ‘বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়’ সম্মিলিত বা একত্রিত হয়ে বেথুন কলেজে পরিণত হয়।

৩৬. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কেন ? অথবা, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ?

উত্তরঃ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলি কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্যগুলি হল প্রথমত, ওয়েলেসলি ভেবেছিলেন যে, ইংল্যান্ড থেকে যেসব যুবক ভারতে সিভিল সার্ভিসের চাকরি নিয়ে ভারতে আসবে তাদের অদেশের ভাষা, সামাজিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে পরিচয় থাকা দরকার। দ্বিতীয়ত, এই সিভিল সার্ভেন্টদের ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতি, আইন ও রীতিনীতি শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩৭. হিন্দু কলেজ কখন ও কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ?

উত্তরঃ ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় ও ইউরোপীয়দের যৌথ উদ্যোগে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে রাজা রামমোহন রায়, ডেভিড হেয়ার এবং বিচারপতি হাইড ইস্ট এর নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অধিকাংশের মতে, হিন্দু কলেজের প্রস্তাবক ডেভিড হেয়ার এদেশীয় ধনবান ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতায় এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন, কিন্তু ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, হাইড ইস্ট-ই এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

৩৮. ভারতে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারের ক্ষেত্রে চার্লস উডের দুইটি সুপারিশ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ভারতে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারের ক্ষেত্রে চার্লস উডের অনেকগুলি সুপারিশের (১৮৫৪ খ্রি.) মধ্যে দুইটি সুপারিশ ছিল–
(1) সরকারি শিক্ষানীতি রূপায়ণ ও পরিচালনার জন্য সরকারি শিক্ষা বিভাগ গঠন করা।
(2) ভারতের প্রেসিডেন্সি শহরগুলিতে (কলকাতা, মাদ্রাজ ও বোম্বাই) একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।

৩৯. হান্টার কমিশন কী ?

উত্তরঃ ভারতের উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে স্যার উইলিয়াম হান্টার নামে এক শিক্ষাবিদের নেতৃত্বে ভারত সরকার একটি কমিশন নিয়োগ করে, যা ‘হান্টার কমিশন’ নামে পরিচিত।

৪০. বাংলার নারীশিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো ।

উত্তরঃ বাংলার নারীশিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ— প্রথমত, তিনি নিজে সংস্কৃত পণ্ডিত হয়েও জাতির নৈতিক চরিত্র ও সামাজিক সুখ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নারীদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে ‘ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন (১৮১৯ খ্রি.)। দ্বিতীয়ত, তিনি ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটির অবৈতনিক সম্পাদকরূপে তাঁর বাড়িতে ক্যালাকাটা স্কুল সোসাইটির অধীনস্থ স্কুলের ছাত্রীদের পরীক্ষা দানের সুযোগ করে দেন। তৃতীয়ত, স্ত্রীশিক্ষা প্রসারের সমর্থনে রাধাকান্ত দেব গৌরমোহন বিদ্যালংকারকে ‘স্ত্রীশিক্ষা বিধায়ক’ (১৮২২ খ্রি.) পুস্তিকাটি রচনার জন্য অনুরোধ করেন ও সাহায্য করেন। এই সমস্ত কারণে জে. ডি. বেথুন রাধাকান্ত দেবকে ‘স্ত্রীশিক্ষার সমর্থক প্রথম বাঙালি’ বলে অভিহিত করেছেন।

৪১. কে কবে কেন এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ?

উত্তরঃ স্যার উইলিয়াম জোন্স 1784 খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উইলিয়াম জোন্স প্রাচ্য ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা এবং প্রাচ্য বিষয়ের গবেষণা করার জন্য কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

৪২. সতীদাহ প্রথা কে কবে নিষিদ্ধ করেন ?

উত্তরঃ গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1829 খ্রীষ্টাব্দে সপ্তাদশ বিধি দ্বারা আইন করে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন।

৪৩. ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইনে (১৯০৪ খ্রি.) কী বলা হয়েছিল ?

উত্তরঃ ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় আইনে (১৯০৪ খ্রি.) বলা হয়েছিল যে—
(1) বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পাবে।
(2) বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে সরকার মনোনীত সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে।

৪৪. ভারতে নারীশিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগরের অবদান কী ছিল ?

উত্তরঃ ঊনবিংশ শতকে বাংলা তথা ভারতের নারীমুক্তি আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিদ্যালয় পরিদর্শকের সরকারি পদে থাকার সুবাদে তিনি ৩৫টি (মতান্তরে ৪০টি) বালিকা বিদ্যালয় এবং ১০০টি বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব ছিল ১৮৪৯ সালে বেথুন সাহেবের সহযোগিতায় ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল স্থাপন।

৪৫. উডের ডেসপ্যাচ কী ?

উত্তরঃ 1854 খ্রীষ্টাব্দে বোর্ড অফ কান্ট্রলের সভাপতি চার্লস উড ভারতের ভবিষ্যৎ শিক্ষা কাঠামো গঠনের উদ্দেশ্যে যে পরিকল্পনা পেশ করেন তা উডের ডেসপ্যাচ নামে পরিচিত।
নির্দেশনামা বা ডেসপ্যাচঃ
(i) প্রতিটি প্রেসিডেন্সিতে (কলকাতা,বোম্বাই ও মাদ্রাজ) একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত।
(ii) প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়া হবে।
(iii) নারী শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এ নির্দেশনামাকে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে মহাসনদ বা ম্যাগনাকার্টা বলা হয় এর ফলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

৪৬. শ্রীরামপুর ত্রয়ী কাদের বলা হয় ?

উত্তরঃ হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও শিক্ষাবিস্তারের কাজ শুরু করে। শ্রীরামপুর ত্রয়ী উইলিয়ম কেরি, ফ্রাঁসোয়া মার্শম্যান ও উইলিয়ম ওয়ার্ড— এই তিনজন পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। এঁদের একত্রে বলা হয় শ্রীরামপুর ত্রয়ী।

অবদান : এঁরা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা, “দিগদর্শন’ ও ‘সমাচার দর্পণ পত্রিকা প্রকাশ, 26টি আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল অনুবাদ এবং বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

৪৭. চুঁইয়ে পড়া নীতি কী ?

উত্তরঃ পাশ্চাত্য শিল্পবিস্তারের সূচনায় ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, বাংলার উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির  মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটানো হলে ওই উচ্চশিক্ষিত লোকেরা সাধারণ জনগণের মধ্যেও তার বিস্তার ঘটাবে। ফিলটারের জল যেমন উপর থেকে পরিত হয়ে চুইয়ে নীচে নামে, তেমনই সমাজের উচ্চস্তর থেকে নিম্নস্তরে শিক্ষাবিস্তারের এই নীতিকেই চুইয়ে পড়া নীতি বা ‘Filtration Theory’ বলা হয়ে থাকে।

৪৮. বেথুন কলেজ কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ?

উত্তরঃ জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই স্কুলের সঙ্গে বালিগঞ্জের ‘বলামহিলা বিদ্যালয়’ বেথুন স্কুলের সঙ্গে সম্মিলিত বা একত্রিত হয়ে বেথুন কলেজে পরিণত হয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রথম শ্রেণির কলেজে পরিণত হয়।

৪৯. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কেন ?

উত্তরঃ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলি কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মরত উচ্চপদস্থ ইংরেজ কর্মচারীদের ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতি, আইন ও রীতিনীতি শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

৫০. ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উত্তরঃ সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গদের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
(i) এই গোষ্ঠী হিন্দুধর্মের পৌত্তলিকতা অস্পৃশ্যতা জাতিভেদ, সতীদাহ প্রভৃতি কুপ্রথার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রতিবাদে সোচ্চার হয়।
(ii) তাদের উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে, নারীশিক্ষা বিস্তারের পথ প্রশস্ত হয়।
(iii) জুরির মাধ্যমে বিচার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই গোষ্ঠী সোচ্চার হয়।
(iv) ভারতবাসীর মধ্যে যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী মানসিকতা সৃষ্টিতে ও র‍্যাডিক্যাল চিন্তাভাবনার প্রসারে এই দলের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

৫১. 1813 সালের সনদ আইন এর দুটি গুরুত্ব আলোচনা করো ?

উত্তরঃ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই সনদ আইনে প্রথম ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বার্ষিক 1 লক্ষ টাকা ব্যয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আইন দ্বারা ভারতের কোম্পানির এক চেটিয়া বানিজ্যের অবসান হয়।

৫২. নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হত ?

উত্তরঃ হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও তৎকালীন সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। তাদের আন্দোলন নব্যবঙ্গ আন্দোলন’ নামে পরিচিত এবং ডিরোজিওর অনুগামীদের নব্যবঙ্গ’ বা ‘ইয়ং বেঙ্গল’ বলা হত। নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্য হলেন রামতনু লাহিড়ী, রাধানাথ শিকদার, রসিককৃষ্ণ মল্লিক প্রমুখ।

৫৩. হিন্দু কলেজ কখন ও কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তরঃ ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় ও ইউরোপীয়দের যৌথ উদ্যোগে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে রাজা রামমোহন রায়, ডেভিড হেয়ার এবং বিচারপতি হাইড ইস্ট-এর নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অধিকাংশের মতে, ডেভিড হেয়ার ছিলেন হিন্দু কলেজের প্রস্তাবক ও এদেশীয় ক ধনবান ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতায় তিনি এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। আবার ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, হাইড ইস্ট-ই এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

৫৪. পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রাধাকান্ত দেব গুরুত্বপূর্ণ কেন ?

উত্তরঃ রাধাকান্ত দেব কলকাতার রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের নেতা হলেও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের একজন উৎসাহী সমর্থক ছিলেন। তিনি হিন্দু কলেজের পরিচালনা এবং ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। তাঁর সহযোগিতায় ব্যাপটিস্ট মিশনারিরা ‘ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন।

৫৫. ডেভিড হেয়ার বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ডেভিড হেয়ার কলকাতার একজন ঘড়ি সারাইওয়ালা হলেও এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। এছাড়াও তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘পটলডাঙা অ্যাকাডেমি’ (হেয়ার স্কুল); ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি’ ও ‘ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি’। এর পাশাপাশি তিনি ছিলেন মানবতাবাদী ও সমাজসেবী।

৫৬. বেথুন বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন ভারতের বড়োলাটের কাউন্সিলের আইন সদস্যরূপে যোগদান করেন (১৮৪৮ খ্রি.)। তিনি এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে সচেষ্ট হন এবং কয়েকজন বিশিষ্ট বাঙালির সহযোগিতায় ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে ‘ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই স্কুল পরবর্তীকালে ‘বেথুন স্কুল’ নামে পরিচিত হয়।

৫৭. নব্য বঙ্গ আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল কেন ?

উত্তরঃ হিন্দু কলেজের তরুণ অধ্যাপক ডিরোজিওকে কেন্দ্র করে যে অনুগত ছাত্রগোষ্ঠী গড়ে ওঠে, তারা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী নামে পরিচিত।
ব্যর্থতার কারণ—
(i) আন্দোলনকারীদের গঠনমূলক কর্মসূচি ছিল না এবং আন্দোলনকারীদের চিন্তাধারা ছিল নেতিবাচক।
(ii) তাদের আন্দোলনের পিছনে জনসমর্থন ছিল না।
(iii) কৃষক-শ্রমিক ও মুসলিমদের নিয়ে তারা ভাবেননি।
(iv) ডিরোজিওর মৃত্যুর পর নেতৃত্বের অভাব ঘটে।

৫৮. মধুসূদন গুপ্ত বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ ভারতের আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসে মধুসূদন গুপ্ত একটি স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। মধুসূদন গুপ্ত 1800 খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার বৈদ্যবাটীতে জন্মগ্রহণ করেন।

অবদান : তৎকালীন পরিস্থিতিতে কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে তথা সমাজে পতিত হওয়ার ভয়ে কোনও ছাত্র শবব্যবচ্ছেদে এগিয়ে আসতেন না। কিন্তু 1836 খ্রিস্টাব্দের 28শে অক্টোবর রাজকৃষ্ণ দে, উমাচরণ শেঠ-সহ আরও কয়েকজনের সহায়তায় মধুসূদন গুপ্ত প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করেন।এই জন্য তিনি আজও ভারতের চিকিৎসা জগতের ইতিহাসে স্মরনীয় হয়ে আছেন।

৫৮. ডা. মধুসূদন গুপ্ত বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ ডা. মধুসূদন গুপ্ত ছিলেন কলকাতা সংস্কৃত কলেজের ছাত্র। এই কলেজে তিনি হিন্দু ওষুধের পণ্ডিতরূপে নিযুক্ত হন (১৮৩০ খ্রি.)। আবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এখানে ডাক্তাররূপে যোগদান করেন। তিনি ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি হিন্দু কুসংস্কার উপেক্ষা করে নিজহাতে শব ব্যবচ্ছেদ করেন।

৫৯. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থার কার্য পরিচালনা করত ?

উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন হত না। শুরুতে এই বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন স্কুল ও কলেজকে অনুমোদন প্রদান করত এবং এন্ট্রান্স ও বি. এ পরীক্ষা পরিচালনা করত। পরীক্ষা শেষে ছাত্রদের সার্টিফিকেট ও ডিগ্রি প্রদান করত।

৬০. হাজী মহম্মদ মহসীন বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ হুগলিতে জন্মগ্রহণকারী হাজী মহম্মদ মহসীন (১৭৩০-১৮১২ খ্রি.) ছিলেন একজন বিত্তবান, মানবতাবাদী ও পরোপকারী ব্যক্তি। তিনি তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি ও সম্পদের উপর ভিত্তি করে দানমূলক একটি ট্রাস্টি সংস্থা গঠন করেন। সমাজসেবামূলক কাজ ও শিক্ষার প্রসারে তিনি এবং তাঁর এই সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৬১. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ কবে কেন প্রতিষ্ঠিত হয় ? অথবা, লর্ড ওয়েলেসলি কেন ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ?

উত্তরঃ লর্ড ওয়েলেসলি 1800 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

উদ্দেশ্য : তার উদ্দেশ্য ছিল, ভারতে চাকুরি করতে আসা ইউরোপীয়দের ভালো করে প্রশিক্ষণ দেওয়া। এর জন্য তিনি তাদের ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দিতে চেয়েছিলেন। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে তাদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।

৬২. জনশিক্ষা কমিটি কেন গঠিত হয় ?

উত্তরঃ 1823 খ্রিস্টাব্দে ‘জেনারেল কমিটি অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন’ বা জনশিক্ষা কমিটি গঠিত হয়।

জনশিক্ষা কমিটি উদ্দেশ্য : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি-শাসিত তৎকালীন ভারতে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ করা। শিক্ষার প্রসার ও গুণগত মানোন্নয়নের জন্য কী কী করা উচিত সে বিষয়ে সুপারিশ করা।

৬৩. উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনগুলির প্রধান লক্ষ্য বা মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উত্তরঃ উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনগুলির প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল–
(1) প্রগতিশীল ও যুক্তিবাদী চিন্তাধারা দ্বারা সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও কুপ্রথার অবসান ঘটানো
(2) নারীকল্যাণ সাধন করা
(3) সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটানো।

৬৪. ব্রাহ্মসমাজ কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তরঃ ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট রাজা রামমোহন রায় ‘ব্রাহ্মসভা’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে ব্রাহ্মসভার নাম পরিবর্তন করে ‘ব্রাহ্মসমাজ’ রাখা হয়।

৬৫. ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তরঃ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল–
(1) হিন্দুধর্মের প্রচলিত কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতা দূর করে একেশ্বরবাদের প্রচার বা নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করা
(2) খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরণের হাত থেকে হিন্দুধর্মকে রক্ষা করা।

৬৬. তিন আইন কী ?

উত্তরঃ ব্রাহ্ম সমাজের নেতৃত্ববৃন্দের আন্দোলনের ফলে বিশেষ করে কেশবচন্দ্রের উদ্যোগে 1872 সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ‘তিন আইন’ বলে।

৬৭. ‘প্রাচ্যবাদী’ (Orientalist) ও পাশ্চাত্যবাদী (Anolicist) কাদের বলা হয় ?

উত্তরঃ 1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনে বলা হয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বছরে 1 লক্ষ টাকা ব্যয় করবে। এই অর্থ কোন্ শিক্ষাখাতে ব্যয় হবে তা নিয়ে জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা দু-ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল- প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী।

প্রাচ্যবাদী : এইচ টি প্রিন্সেপ, কোলব্রুক প্রমুখ যাঁরা প্রাচ্য বা প্রচলিত ভারতীয় শিক্ষাখাতে সরকারি অর্থ ব্যয় করার পক্ষপাতী ছিলেন, তাদের প্রাচ্যবাদী’ বলা হয়।

পাশ্চাত্যবাদী : আলেকজান্ডার ডাফ, স্যান্ডার্স প্রমুখ যাঁরা পাশ্চাত্য বা ইউরোপীয় ও ইংরেজি শিক্ষাখাতে সরকারি অর্থ ব্যয় করার পক্ষপাতী ছিলেন, তাদের পাশ্চাত্যবাদী বলা হয়।

৬৮. কে, কবে সতীদাহ প্রথা নিবারণ করেন?

উত্তরঃ রাজা রামমোহন রায়ের সহযোগিতায় গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর এক আইনের (সপ্তদশ বিধি) মাধ্যমে সতীদাহ প্রথা নিবারণ করেন।

৬৯. উনিশ শতকের একটি সমাজসংস্কার আন্দোলনের উল্লেখ করো। এই আন্দোলনের পুরোভাগে কে ছিলেন ?

উত্তরঃ উনিশ শতকের একটি সমাজসংস্কার আন্দোলন ছিল। ‘নব্যবঙ্গ আন্দোলন।’ এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও।

৭০. হাজী মোহাম্মদ মহসীন বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ হাজি মুহম্মদ মহসিন : হাজি মহম্মদ মহসিন ছিলেন বাংলার একজন ধর্মপ্রাণ ও মহান জনহিতৈষী ব্যক্তি। মহম্মদ মহসিন তার বিশাল সম্পত্তি বিভিন্ন সৎ ও উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করেন। তার অর্থে অনেক স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল, কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার মৃত্যুর পর সরকার মহসিন ফান্ড তৈরি করে তার সঞ্জিত অর্থ নানা জনহিতকর কার্যে ব্যয় করে চলেছে।

৭১. লালন ফকির বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ লালন ফকির ছিলেন বাউল সাধনার একজন। প্রধান গুরু। তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ বাউলগান রচয়িতা ও গায়ক। প্রায় ২ হাজার গান রচনা করেন তিনি। তার মর্মস্পর্শী গানগুলি মানবজীবনের রহস্য, আদর্শ ও মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে।

৭২. মেকলে মিনিট কী ?

উত্তরঃ থমাস ব্যাবিংটন মেকলে ছিলেন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের আইনসচিব ও জেনারেল কমিটি অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন বা জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি। মেকলে ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থক। তিনি 1835 খ্রিস্টাব্দের 2রা ফেব্রুয়ারি গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের কাছে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের পক্ষে যে মিনিট বা প্রস্তাব পেশ করেন, তাকে ‘মেকলে মিনিট’ বা ‘মেকলে প্রস্তাব’ বলা হয়। মেকলের প্রস্তাব দ্বারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে।

৭৩. ডিরোজিওকে মনে রাখা হয় কেন ?

উত্তরঃ ডিরোজিও ছিলেন একজন যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী ও হিন্দু কলেজের শিক্ষক। তিনি বিখ্যাত ছিলেন কারণ, উনিশ শতকের প্রথমার্ধের একজন উল্লেখযোগ্য সমাজসংস্কারক। প্রগতিশীল চিন্তাধারার ভিত্তিতে তিনি হিন্দু সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামি এবং কুসংস্কারের বিরোধিতা করেন। এছাড়া ‘নব্যবঙ্গ’ বা ‘ইয়ংবেঙ্গল’ আন্দোলনের নেতা হিসাবে ডিরোজিওকে মনে রাখা হয়।

৭৪. কার উদ্যোগে নব্যবঙ্গ আন্দোলন শুরু হয়েছিল ? এই আন্দোলনের কয়েকজন বিশিষ্ট নেতার নাম লেখো।

উত্তরঃ হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও-র উদ্যোগে নব্যবঙ্গ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী, প্যারীচাদ মিত্র প্রমুখরা ছিলেন নব্যবঙ্গ আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা।

৭৫. হুতোম প্যাঁচার নকশা থেকে কি ধরনের সমাজ চিত্র পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ উনিশ শতকে কলকাতায় ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত এক বিশেষ সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এঁরা তথাকথিত বাবু সম্প্রদায়’ নামে পরিচিত। ‘হুতোঁম পাচার নকশা’ গ্রন্থে লেখক কালীপ্রসন্ন সিংহ ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মাধ্যমে তাদের স্বরূপ উদঘাটনে প্রয়াসী হয়েছেন।

পরিচয় : এই বাবু’ সম্প্রদায় হঠাৎ ফুলে ফেঁপে ওঠা ধনী সম্প্রদায়। এঁরা নিজ সংস্কৃতি ভুলে পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্ধঅনুকরণে ব্যস্ত। কমবেশি জালজোচ্চুরি বা ফন্দিফিকির করেই এদের অর্থ উপার্জন হত। বাইজি নাচ, পায়রা ও বুলবুলি পোষা, বিড়ালের বিবাহদান ইত্যাদিতে বাবু সম্প্রদায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন। লেখক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের কষাঘাতে বাবুদের নিখুঁত চিত্র তুলে ধরেছেন। তাদের সঠিকপথে আনতে প্রয়াসী হয়েছেন।

৭৬. নীলদর্পণ নাটক থেকে কি ধরনের সমাজ চিত্র পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ ‘নীলদর্পণ’ নাটকে তৎকালীন বঙ্গসমাজে নীলচাষিদের অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে— নীলকর সাহেবরা বাংলার দরিদ্র চাষিদের নীলচাষে বাধ্য করে। নীলচাষ করে চাষিদের ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দেয়৷ ওঁ নীলচাষ না করলে নীলকর সাহেবরা চাষিদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার চালায়।

৭৭. ইয়ংবেঙ্গল কাদের বলা হত ? এই দলের উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উত্তরঃ উনিশ শতকের প্রথমার্ধে হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও-র অনুগামীরা ‘ইয়ং বেঙ্গল’ বা ‘নব্যবঙ্গ সম্প্রদায়’ নামে পরিচিত।

ইয়ংবেঙ্গল দলের উদ্দেশ্য ছিল—
(1) জনসাধারণের মধ্যে প্রগতিশীল ধ্যানধারণা প্রচার করা ও যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠা,
(2) হিন্দুসমাজে প্রচলিত ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরোধিতা করা,
(3) যুক্তিবাদী আধুনিক পাশ্চাত্য চিন্তাধারা ও শিক্ষার বিস্তার ঘটানো।

৭৮. সাধারণ জ্ঞানোপার্জিকা সভা’ কী ?

উত্তরঃ ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে ডিরোজিওর অনুগামী নব্যবঙ্গ সম্প্রদায়ের সদস্যগণ ‘সাধারণ জ্ঞানোপার্জিকা সভা’ নামে এক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের সর্বাঙ্গীন অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন এবং তা জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করার উদ্দেশ্যেই এই সভা স্থাপিত হয়।

৭৯. গ্রামবার্তা প্রকাশিকা থেকে কি ধরনের সমাজ চিত্র পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ (1863খ্রি.) ছিল সমকালীন বাংলার সমাজজীবনের এক বিশ্বস্ত দর্পণ। এতে—
(i) দরিদ্র গ্রামবাসীদের ওপর জমিদার, জোতদার, মহাজন ও কুঠিয়ালদের চরম নির্যাতনের করুণ কাহিনি ফুটে উঠেছে।
(ii) নীলকরদের চরম নির্যাতন কীভাবে দরিদ্র নীলচাষিদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল তারও বর্ণনা এখানে ফুটে উঠেছে।
(iii) এখানেই নারীশিক্ষা প্রসারের সংবাদ ইত্যাদি নিয়মিত প্রকাশিত হত।

৮০. বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী স্মরণীয় কেন ?

উত্তরঃ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ছিলেন ব্রাহ্বসমাজের অন্যতম আচার্য। তিনি নব্য বৈষ্ণববাদের প্রচারকও ছিলেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রথমে ব্রাত্মধর্মের আদর্শ প্রচার ও ব্রামন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিষ্ণবধর্মে আকৃষ্ট হয়ে বৈষ্ণবধর্ম প্রচার করেন। তিনি কুসংস্কারমুক্ত প্রগতিশীল সমাজ গঠনে সচেষ্ট ছিলেন।

৮১. ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হয়েছিল কেন ?

উত্তরঃ কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে কিছুদিন পর থেকেই ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্ম সমাজের সদস্যদের মতভেদ সৃষ্টি হয়।

কারণ :
(i) কেশবচন্দ্র সেন যুক্তিবাদ থেকে সরে গিয়ে ব্রাহ্রসমাজে গুরুবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন, যা ছিল ব্রাহ্মধর্মের নীতিবিরুদ্ধ।
(ii) ব্রাহ্ম সমাজের বিধান উপেক্ষা করে কেশবচন্দ্র সেন তাঁর 14 বছর বয়সি কন্যা সুনীতিদেবীর সঙ্গে কোচবিহারের নাবালক রাজপুত্র নৃপেন্দ্র নারায়ণের বিবাহ দেন।

বিভাজন : এর ফলশ্রুতিতে শিবনাথ শাস্ত্রীর নেতৃত্বে প্রগতিশীল ব্রাহ্মরা বিচ্ছিন্ন হয়ে 1878 খ্রিস্টাব্দে সাধারণ ব্রাহ্বসমাজ’ স্থাপন করেন। কেশবচন্দ্র সেনের গোষ্ঠীর ব্রাহ্মদের নাম হয় নববিধান ব্রাহ্রসমাজ।

৮২. লালন ফকির বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ লালন ফকির ছিলেন একজন বাউল সাধক ও মানবতাবাদী এবং জাতিবিদ্বেষের তীব্র বিরোধী। তিনি প্রথ মুরশিদাবাদের চেউরিয়াতে বাউল সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সে প্রায় দশ হাজারেরও বেশি সামাজিক ও আধ্যাত্মিক বাউল গান রচনা করেন। তাঁর এই গানগুলি দরিদ্র কৃষকসহ জনগণের কাছে খুব আকর্ষণের বিষয়।

৮৩. বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বিখ্যাত কেন ?

উত্তরঃ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী (১৮৪১ – ১৮৯১ খ্রি.) ছিলেন ব্রাত্মধর্মের একজন বিখ্যাত প্রচারক। তিনি কেশবচন্দ্র সেনের আ সঙ্গে কলকাতার বাইরে পূর্ববঙ্গে ব্রাত্মধর্ম প্রচার করেন। এর পাশাপাশি তিনি এই অঞ্চলে ব্রাত্ম উপাসনা মন্দির, বালিকা বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করেন।

৮৪. শ্রীরামকৃষ্ণ কীভাবে ধর্মসমন্বয়বাদী আদর্শ বাস্তবায়িত করেন।

উত্তরঃ শ্রীরামকৃষ্ণদেবের আবির্ভাবের পূর্বে বাংলার হিন্দু সমাজে ব্রাত্মধর্ম ও খ্রিস্টধর্মের প্রসারকে কেন্দ্র করে। একেশ্বরবাদ ও বহুদেবতাবাদ সম্পর্কিত দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। রামকৃয়দের বিভিন্ন ধর্ম বর্ণিত ঈশ্বরলাভের পথ ধরে ঈশ্বর সাধনা করেন ও সফল হন। তাঁর উপলব্ধির ভিত্তিতে তিনি প্রচার করেন যে, সাকার ও নিরাকার (একই ঈশ্বরের বিচিত্র = রূপ)। একেশ্বরবাদ ও বহুদেবতাবাদ হল ধর্মের বিভিন্ন অঙ্গ। এভাবে তিনি ধর্মসমন্বয়বাদী আদর্শের প্রচার করেন।

৮৫. আত্মীয় সভা কেন প্রতিষ্ঠিত করা হয় ? এই প্রতিষ্ঠানে তিনজন সদস্যের নাম লিখ ?

উত্তরঃ রাজা রামমোহন রায় 1815 সালে আত্মীয় সভা প্ৰতিষ্ঠা করেন। নিজের ধর্মমত এবং নানা সামাজিক ও ধর্মীয় সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে তিনি এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মূলত হিন্দু ধর্ম ও সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার দূর করা এবং একেশ্বরবাদী ধর্মমত সম্পর্কে জনমত গড়ে তোলা ছিল এর উদ্দেশ্য।

৮৬. বিবেকানন্দ কীভাবে নবাবেদান্ত মতাদর্শের সূচনা করেন ?

উত্তরঃ মানবতাবাদী ও সমাজপ্রেমী বিবেকানন্দ আত্মমুক্তি অপেক্ষা সমাজে উন্নতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। অদ্বৈতবাদে বিশ্বাসী বিবেকানন্দ ‘বনের বেদান্ত’কে ঘিরে’ আনার কথা প্রচার করেন এবং বেদান্তকে মানবহিতের কাজে ব্যবহারের কথা বলেন। এভাবে বিবেকানন্দ বেদান্তের নতুন যে ব্যাখ্যা দেন তা নব্যবেদান্ত নামে পরিচিত।

৮৭. বাংলার নবজাগরণ কী ?

উত্তরঃ উনিশ শতকে বাংলায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য আদর্শবাদের ভিত্তিতে সমাজ ও সংস্কৃতিতে এক নবচেতনার উন্মেষ ঘটে, যা নবজাগরণ নামে পরিচিত। নবজাগরণের একটি দিক ছিল বাংলা তথা ভারতের প্রাচীন গৌরবময় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পুনর্মূল্যায়ন করা। তবে বাংলার নবজাগরণ ক্রমশ সাহিত্য, দর্শন, রাজনীতি ও বিজ্ঞানচিন্তার ক্ষেত্রেও পরিব্যাপ্ত হয়েছিল।

Leave a Reply