দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতার উৎস, সারাংশ, MCQ, SAQ ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | Dipantorer Bondini Kobitar Question Answer [WBCHSE]

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

দ্বীপান্তরের বন্দিনী

—কাজী নজরুল ইসলাম
কবি পরিচিতিঃ
‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতাটি বিদ্রোহি কবি কাজী নজরুল ইসলামের (১৮৯৯- ১৯৭৬) লেখা। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল- ‘অগ্নিবীণা’, ‘সাম্যবাদী’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘ফণীমনসা’, ‘সর্বহারা’ প্রভৃতি। কবিতা ছাড়াও কাজী নজরুল ইসলাম প্রায় তিন হাজার গান রচনা করেছেন যেগুলি নজরুলগীতি নামে খ্যাত।
উৎসঃ আলোচ্য কবিতাটি কবির ‘ফণীমনসা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
বিষয়বস্তুঃ পরাধীন ভারতের প্রেক্ষাপটে লেখা এই কবিতাটি একটি রূপক কবিতা। ‘দ্বীপান্তর’ বা দ্বীপচালান হল এক বিশেষ শাস্তি যাতে অপরাধীকে আন্দামানের সেলুলার জেলে পাঠানো হত। কবির মতে ভারতাত্মা ভারতীই এখন আন্দামানের কারাগারে বন্দী।
বিভিন্ন রূপকের সাহায্যে কবি ব্রিটিশ ভারতের অন্যায়-অবিচারের ছবি তুলে ধরেছেন। একইসঙ্গে শৌখিন দেশভক্ত অর্থাৎ নরমপন্থী নেতাদের বিরুদ্ধেও কবি সমালোচনা করেছেন। এই সব নেতারা মাঝে মাঝে ভারতমাতার আরধনা করছে আর প্রচার করছে ভারত স্বাধীন হতে চলেছে। কবি মনে করেছেন এসবই বৃথা আয়োজন কারণ ভারত মায়ের দেড়শ বছরের নির্বাসন।
কবিতার শেষে কবিও আশা প্রকাশ
করেছেন ভারতের ভাগ্যচক্রে হয়তো পরিবর্তন আসতে চলেছে। তবে কবি বিশ্বাস করেন যে আবেদন-নিবেদন করে ভারতের স্বাধীনতা আসবে না, আসবে সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে।
সারাংশঃ
ব্রিটিশ শাসকের অত্যাচারে দেশবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্ন ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নির্বিচারে দ্বীপান্তরে নির্বাসন স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিকে অনেকাংশেই রুদ্ধ করে দিয়েছিল সেই সময়। আন্দামান তখন হয়ে উঠেছিল সাম্রাজ্যবাদী শােষণের ভয়াবহতার প্রতীক। ইংরেজদের অত্যাচারের সামনে স্বাধীনতার সমস্ত স্বপ্নই যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে মুক্তির সুরের কিছু ইঙ্গিতও মিলছিল, মনে হচ্ছিল রক্তাক্ত প্রেক্ষাপটে শান্তি এবং পবিত্রতার শুভ্রতা নেমে আসছে। কিন্তু দুঃখময় বাস্তব অবস্থাকে অস্বীকারের সুযােগ কবির সামনে কোনােভাবেই ছিল না।
  কবি দেখেছেন সত্য এবং সুন্দরের নিদারুণ লাঞ্ছনা| ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার নামে আইনের সাহায্য নিয়ে অত্যাচার কীভাবে নির্মম হয়ে ওঠে, সত্য বললেই বক্তাকে বন্দি করে কীভাবে তার কণ্ঠস্বর রােধ করে দেওয়া হয় ইত্যাদি ঘটনাও প্রত্যক্ষকরেছেন কবি। স্বাধীনতার মন্ত্র উচ্চারণ করলেই সেই সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শাসনব্যবস্থায় ‘বিদ্রোহী’ আখ্যা দেওয়া হত। এই পরিস্থিতিতে মুক্তির স্বপ্নে দেশে একদিন আন্দোলিত হয়েছেন কবি। ঈশ্বরের বিধানে এ দেশে একদিন স্বাধীনতার বাণী উচ্চারিত হবে বলে কবি মনে করেছেন। স্পষ্টভাবে দিনবদলের স্বপ্ন, যুগান্তরের ইঙ্গিতকেও এই কবিতায় প্রকাশ করেছেন কবি।
• MCQ Question Answer.
১. “মা’র কতোদিন দ্বীপান্তর ?”- এর উত্তরে কী শোনা যায় ?
(ক) একশত বছর (খ) দুইশত বছর
(গ) দেড়শত বছর (ঘ) আড়াইশ বছর
উত্তরঃ (গ) দেড়শত বছর
২. দ্বীপান্তর কোথায় ?
(ক) হাজার মাইল দূরে
(খ) সপ্ত সিন্ধু তেরো নদী পার
(গ) দেশান্তরে (ঘ) ইংল্যান্ডে
উত্তরঃ (খ) সপ্ত সিন্ধু তেরো নদী পার
৩. “যন্ত্রী যেখানে সান্ত্রী বসায়ে”- ‘সান্ত্রী’ কথার অৰ্থ কী ?
(ক) শাস্তি (খ) প্রহরী (গ) যন্ত্র (ঘ) গুপ্তচর
উত্তরঃ (খ) প্রহরী
৪. “সত্য বলিলে বন্দী হই” কারণ—
(ক) সত্য বলা নিষিদ্ধ
(খ) আইন এখানে ন্যায়ের শাসক
(গ) সত্য নিজেই বন্দী আছে
(ঘ) কেউ সত্য শুনতে চায়না।
উত্তরঃ (গ) সত্য নিজেই বন্দী আছে
৫. “মুক্ত কি আজ বন্দিনী বাণী ?”- ‘বন্দিনী বাণী’ আসলে কী ?
(ক) স্বাধীনতার কন্ঠস্বর (খ) দেবী সরস্বতী
(গ) ভারতমাতা (ঘ) স্বাধীনতা সংগ্রামী
উত্তরঃ (ক) স্বাধীনতার কন্ঠস্বর
৬. “বাজাও পাঞ্চজন্য শাঁখ”- ‘পাঞ্চজন্য’ আসলে কার শাঁখ ?
(ক) কৃষ্ণ (খ) অর্জুন (গ) কর্ণ (ঘ) ভগীরথ
উত্তরঃ (ক) কৃষ্ণ
৭. ব্রিটিশ সরকার ভয়ে সিংহকে কোথায়
রাখে ?
(ক) আন্দামানে (খ) দ্বীপান্তরে
(গ) কারাগারে (ঘ) পিঞ্জরে
উত্তরঃ (ঘ) পিঞ্জরে
৮. “বেজেছে বাণীর সেতারে আজ?”- কী
বাজার কথা বলা হয়েছে ?
(ক) বিধির বেতারমন্ত্র (খ) মুক্তবন্ধ সুর
(গ) পূজার মন্ত্র (ঘ) শঙ্খধ্বনি
উত্তরঃ (ক) বিধির বেতারমন্ত্র
৯. কে ‘বিদ্রোহী’ আখ্যা লাভ করল ?
(ক) ব্রিটিশরা
(খ) পরাধীন দেশবাসীরা
(গ) স্বাধীনতা সংগ্রামীরা
(ঘ) বাণীর মুক্ত শতদল
উত্তরঃ (ঘ) বাণীর মুক্ত শতদল।
১০. “উঠেছে বাণীর শিশ-মহল”- ‘শিশ-মহল’ কথার অর্থ হল
(ক) সীসা নিৰ্মিত মহল (খ) কাঁচের ঘর
(গ) শীর্ষ মহল (ঘ) গুপ্ত কক্ষ
উত্তরঃ (খ) কাঁচের ঘর
১১.“সহিছে বিচার-চেড়ীর মার”- কে সহ্য
করছে ?
(ক) দেশবাসী (খ) শৌখিন পূজারী
(গ) বন্দিনী সীতা-সম বাণী
(ঘ) ভারত-ভারতী
উত্তরঃ (গ) বন্দিনী সীতা-সম বাণী
১২. ব্যাঘ্রের জন্য ব্রিটিশ সরকার কী শাস্তি বরাদ্দ করে ?
(ক) জেল খাটানো হয়
(খ) দ্বীপচালানে দেওয়া হয়
(গ) গুলি করা হয়
(ঘ) অগ্নিশেল হানা হয়
উত্তরঃ (ঘ) অগ্নিশেল হানা হয়
১৩. কবি কোথা থেকে আরতির তেল আনতে বলেছেন ?
(ক) জীবন চুয়ানো ঘানি থেকে
(খ) মন্দির থেকে (গ) গৃহস্থ্য থেকে
(ঘ) অন্য দেশ থেকে
উত্তরঃ (ক) জীবন চুয়ানো ঘানি থেকে
১৪. “পদ্মে রেখেছে চরণ-পদ্ম”- কে ?
(ক) ভারত-ভারতী (খ) পূজারী (গ) কৃষ্ণ
(ঘ) যুগান্তরের ধর্মরাজ
উত্তরঃ (ঘ) যুগান্তরের ধর্মরাজ
১৫. “পুণ্যবেদীর শূন্যে ধ্বনিল ক্রন্দন _________” (২০১৪)
(ক) এক শত বছর (খ) দেড় শত বছর
(গ) দুই শত বছর (ঘ) তিন শত বছর
উত্তরঃ (খ) দেড়শত বছর
১৬. ‘বাজাও পাঞ্চজন্য’ — পাঞ্চজন্য কী ? (২০১৫)
(ক) কৃষ্ণের বাঁশি (খ) অর্জুনের শাঁখ
(গ) কৃষ্ণের শাঁখ (ঘ) নারদের বীণা ।
উত্তরঃ (গ) কৃষ্ণের শাঁখ।
১৭. দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতাটির মুল
কাব্যগ্রন্থের নাম (২০১৬)—
(ক) ফণি-মনসা। (খ) দোলন চাঁপা
(গ) অগ্নিবীণা। (ঘ) সর্বহারা
উত্তরঃ (ক) ফণি-মনসা
১৮. ‘দীপান্তর’ কথার অর্থ হল— (২০১৭)
(ক) অন্য দ্বীপ (খ) সবুজ দ্বীপ
(গ) অনেক দ্বীপ (ঘ) দ্বীপের বাইরে
উত্তরঃ (ক) অন্য দ্বীপ।
১৯. ‘পুণ্যবেদীর শূন্যে’ কতদিন ক্রন্দন
ধ্বনিত হয়েছে ? (২০১৮)
(ক) হাজার বছর (খ) একশত বছর
(গ) দেড়শত বছর (ঘ) তিনশত বছর
উত্তরঃ (গ) দেড়শত বছর।
২০. ‘পাঞ্চজন্য’ ব্যবহারকারী হলেন— (২০১৯)
(ক) অর্জুন (খ) শ্রীকৃষ্ণ (গ) ইন্দ্র (ঘ) নারদ
উত্তরঃ (খ) শ্রীকৃষ্ণ।
২১. ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতাটির মূল
কাব্যগ্রন্থের নাম- (২০২০)
(ক) ফণিমনসা (খ) অগ্নিবীণা
(গ) দোলনচাঁপা (ঘ) সর্বহারা।
উত্তরঃ (ক) ফণিমনসা।
২২. ‘চণ্ডালের পদধূলি ব্রাহ্মণের ভালে ?’ চণ্ডাল ও ব্রাক্ষ্মণ কারা ? (২০২২)
(ক) অর্জুন ও কৃষ্ণ (খ) কৃষ্ণ ও ব্যাস
(গ) ব্যাস ও বিধুর (ঘ) অর্জুন ও নীলধ্বজ।
উত্তরঃ (ঘ) অর্জুন ও নীলধ্বজ।
২৩. ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতাটি কবি কাজী নজরুল কোথায় বসে লেখেন ?
(ক) কলকাতায় বসে (খ) কুমিল্লায় বসে
(গ) ঢাকায় বসে (ঘ) হুগলিতে বসে
উত্তরঃ (ঘ) হুগলিতে বসে
২৪. ______ভয়ে রাখে পিঞ্জরে।
(ক) ব্যাঘ্রেরে (খ) ভাল্লুকেরে (গ) হায়নারে
(ঘ) সিংহেরে
উত্তরঃ (ঘ) সিংহেরে
২৫. বাণী যেথা ঘানি টানে________।
(ক) দিনরাত্রি (খ) দিবারাত্রি (গ) নিশিদিন
(ঘ) অহর্নিশ
উত্তরঃ (গ) নিশিদিন
২৬. রূপের কলম কীসে ম্লান হয় ?
(ক) রুপোর কাঠির কোমল স্পর্শে
(খ) সোনার কাঠির কঠিন স্পর্শে
(গ) রুপোর কাঠির কঠিন স্পর্শে
(ঘ) সোনার কাঠির কোমল স্পর্শে
উত্তরঃ (গ) রুপোর কাঠির কঠিন স্পর্শে
২৭. ‘ধ্বংস হল কি _______?’
(ক) যক্ষ পুর (খ) রক্ষ পুর (গ) পরাধীনতা
(ঘ) স্বাধীনতা
উত্তরঃ (খ) রক্ষ পুর
২৮. ‘বাজাও পাঞ্চজন্য’ পাঞ্চজন্য কি ?
(ক) কৃষ্ণের বাঁশি (খ) অর্জুনের শাঁখ
(গ) কৃষ্ণের শাঁখ (ঘ) নারদের বীণা
উত্তরঃ (গ) কৃষ্ণের শাঁখ
২৯. দ্বীপান্তর কথার অর্থ হল ?
(ক) অন্য দ্বীপ (খ) সবুজ দ্বীপ
(গ) অনেক দ্বীপ (ঘ) দ্বীপের বাইরে
উত্তরঃ (ক) অন্য দ্বীপ
৩০. ‘বাণী যেথা ঘানি টানে’ কতদিন ?
(ক) নিশিদিন (খ) রাতদিন (গ) সারাদিন
(ঘ) দিবারাত্রি
উত্তরঃ (ক) নিশিদিন
৩১. ‘সিংহেরে ভয়ে রাখে’ কোথায় ?
(ক) খাঁচায় (খ) পিঞ্জরে (গ) বাঁধনে
(ঘ) বদ্ধ ঘরে
উত্তরঃ (খ) পিঞ্জরে
৩২. ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী ’ কবিতাটি কে লিখেছেন ?
(ক) মাইকেল মধুসূদন দত্ত
(খ) দেবেন্দ্রনাথ সেন
(গ) কাজী নজরুল ইসলাম
(ঘ) হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তরঃ (গ) কাজী নজরুল ইসলাম
৩৩. ‘পদ্মে রেখেছে চরণ পদ্ম’ কে রেখেছে ?
(ক) সৌভাগ্য দেবী লক্ষ্মী
(খ) বানীর দেবী সরস্বতী
(গ) প্রলয় দেবতা নটরাজ
(ঘ) যুগান্তরের ধর্মরাজ
উত্তরঃ (ঘ) যুগান্তরের ধর্মরাজ
৩৪. কে ধান ভানছে ?
(ক) বন্দিনী বাণী (খ) বন্দিনী সীতা
(গ) বানীর কমল (ঘ) বন্দি সত্য
উত্তরঃ (ঘ) বন্দি সত্য
৩৫. ‘আসে নাই ফিরে ভারত ভারতী ?’ ‘ভারতী’ কে ?
(ক) দূর্গা দেবী (খ) মনসা দেবী
(গ) সরস্বতী দেবী (ঘ) মহামায়া দেবী
উত্তরঃ (গ) সরস্বতী দেবী
৩৬. দ্বীপান্তরের স্থানটি কোথায় ছিল ?
(ক) সিংহল (খ) আন্দামান (গ) মালদ্বীপ
(ঘ) নিকোবর
উত্তরঃ (খ) আন্দামান
৩৭. ‘সপ্ত সিন্ধু তেরো নদী পার’ বলতে কি বোঝানো হয় ?
(ক) কাছের (খ) দূরের (গ) দূরতর স্থান
(ঘ) দূরতম স্থান
উত্তরঃ (ঘ) দূরতম স্থান
৩৮. আন্দামান কোথায় অবস্থিত ?
(ক) আরব সাগরে (খ) বঙ্গোপসাগরে
(গ) কচ্চ উপসাগরে (ঘ) ভারত মহাসাগরে
উত্তরঃ (খ) বঙ্গোপসাগরে
৩৯. আন্দামান কি ?
(ক) এশিয়ার মূলখন্ড
(খ) ভারতের মূলখন্ড
(গ) ভারতের অঙ্গরাজ্য
(ঘ) ভারতের অধীন দ্বীপপুঞ্জ
উত্তরঃ (ঘ) ভারতের অধীন দ্বীপপুঞ্জ
৪০. ‘সত্য বলিলে’ কি হতে হয় ?
(ক) তিরস্কৃত হতে হয় (খ) বন্দি হতে হয়
(গ) অত্যাচারিত হতে হয় (ঘ) শাস্তি পেতে হয়
উত্তরঃ (খ) বন্দি হতে হয়
৪১ দ্বীপান্তরের ঘানিতে কি লেগেছে ?
(ক) নতুন যুগের ছোঁয়া
(খ) যুগ পরিবর্তনের স্পর্শ
(গ) নব যুগের আবর্তন
(ঘ) যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক
উত্তরঃ (ঘ) যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক
৪২. কে ‘ঘানি টানে নিশিদিন’ ?
(ক) সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত কয়েদি
(খ) দ্বীপান্তরে নির্বাসিত কয়েদি
(গ) বাণী
(ঘ) আন্দামানের বন্দিপল্লীর কয়েদি
উত্তরঃ (গ) বাণী
৪৩. পূণ্যবেদীর শূন্য ভেদ করে কি উঠেছে ?
(ক) ক্রন্দন (খ) হা হুতাশ (গ) দীর্ঘশ্বাস
(ঘ) যন্ত্রণার আওয়াজ
উত্তরঃ (ক) ক্রন্দন
৪৪. সীতা কোথায় বন্দিনী ছিলেন ?
(ক) পঞ্চবটিতে (খ) দন্ডকার্ণ (গ) সুন্দর বনে
(ঘ) অশোক কাননে
উত্তরঃ (ঘ) অশোক কাননে
৪৫. প্রকৃতপক্ষে বাণীর মুক্ত শতদল হলেন কারা ?
(ক) যাঁরা বাণী মায়ের সেবক
(খ) যাঁরা বন্দিনী বাণী মায়ের মুক্তির জন্য উৎসর্গিত প্রাণ
(গ) যাঁরা বাণীর মুক্ত ভক্ত
(ঘ) যাঁরা বাণী মায়ের সেবায় রত
উত্তরঃ (ক) যাঁরা বাণী মায়ের সেবক
দ্বীপান্তরের বন্দিনী SAQ প্রশ্ন ও উত্তর।
১.”আসে নাই ফিরে ভারত-ভারতী ? / মার কতদিন দ্বীপান্তর ?”— ‘মা’কে দ্বীপান্তরিতা বলা হয়েছে কেন ?
উত্তরঃ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামীদের দ্বীপান্তরে পাঠানাে হত বলেই সেই তাৎপর্যে দেশ ‘মা’কে দ্বীপান্তরিতা বলা হয়েছে।
২.”মা’র কতদিন দ্বীপান্তর ?”- এই ‘মা’ কে ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতার উদ্ধৃতাংশে ‘মা’ হলেন কবি তথা ভারতবাসীর দেশ মা।
৩.”পুণ্য বেদীর শূন্যে ধ্বনিল”—বেদি শূন্য, কী কারণে ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতার উদ্ধৃতাংশে বেদিকে শূন্য বলা হয়েছে, কারণ বেদিতে অধিষ্ঠিত দেশমাতা দ্বীপান্তরে বন্দিনি হয়েছেন।
৪.”শতদল যেথা শতধা ভিন্ন / শস্ত্র-পাণির অস্ত্র-ঘায়”- এই শস্ত্র-পাণি’ কী ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় উদ্ধৃতাংশে শস্ত্রপাণি হল ইংরেজ সরকারের পুলিশ প্রশাসন।
৫.“যন্ত্রী যেখানে সান্ত্রী বসায়ে / বীণার তন্ত্রী কাটিছে হায়”- বীণার তন্ত্রী কী ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতার উদ্ধৃতাংশে ‘বীণার তন্ত্রী’ হল মানুষের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর।
৬.”ধ্বংস হ’ল কি রক্ষপুর”- এই ‘রক্ষ-পুর’ কী ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতার উদ্ধৃতাংশে ‘রক্ষ-পুর’ হল ইংরেজ শাসিত ভারত।
৭.”যক্ষপুরীর রৌপ্য পঙ্কে / ফুটিল কি তবে রূপ কমল ?”- এই ‘রূপ-কমল’ কী ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতার উদ্ধৃতাংশে ‘রূপ-কমল’ হল প্রাণশক্তি।
৮.”বাণী যেথা ঘানি টানে নিশিদিন”— কথাটির দ্বারা কী বােঝানাে হয়েছে ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতার উদ্ধৃতাংশটির দ্বারা মানুষের মুক্ত কণ্ঠকে রুদ্ধ করে রাখার চেষ্টাকে বােঝানাে হয়েছে।
৯.দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবি কাদের শৌখিন পূজারী বলেছেন ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবি সখের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শৌখিন পূজারী বলেছেন।
১০.”পূজারী, কাহারে দাও অঞ্জলি ?” কবির এই প্রশ্নের কারণ কী ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতার উদ্ধৃতাংশে কবির এই প্রশ্নের মূলে রয়েছে মুক্ত স্বদেশকে দেখতে না পাওয়া।
১১.”অত্যাচারিত হইয়া যেখানে / বলিতে পারি না অত্যাচার”—এই বলতে না পারার কারণ কী ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতার উদ্ধৃতাংশে অত্যাচারিত হয়েও কিছু বলতে না পারার কারণ হল প্রবল বিরুদ্ধ শক্তিশালীর সামনে অসহায়তা।
১২.“বাণীর মুক্ত শতদল যথা / আখ্যা লভিল বিদ্রোহী”–এর অর্থ কী ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতার উদ্ধৃতাংশের অর্থ হল কেউ স্বাধীনভাবে কথা বললে রাষ্ট্রশক্তি তাকে ‘বিদ্রোহী’ ঘােষণা করে।
১৩.“তবে কি বিধির বেতার-মন্ত্র /বেজেছে বাণীর সেতারে আজ,”- এই ‘বিধির বেতার-মন্ত্র’ কী ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতার উদ্ধৃতাংশে ‘বিধির বেতার-মন্ত্র’ হল স্বাধীনতার বার্তা।
১৪.’দ্বীপান্তর’ বলতে কোন্ জায়গার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় দ্বীপান্তর বলতে আন্দামানের কথা বলা হয়েছে।
১৫.দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় মার কতদিন দ্বীপান্তর ঘটেছে বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতা অনুযায়ী দেশ মায়ের দেড়শত বছর দ্বীপান্তর ঘটেছে।
১৬.দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় ‘পুণ্যবেদীর শূন্যে কী ধ্বনিত হচ্ছে ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কবি অনুভব করেছেন পুণ্যবেদীর শূন্যে পরাধীন ভারতবাসীর ক্রন্দন ধ্বনিত হচ্ছে।
১৭.’দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় ‘রূপের কমল’ কীভাবে স্নান হয়েছে ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতা অনুযায়ী রূপের কমল রুপাের কাঠির স্পর্শে বা আঘাতে ম্লান হয়েছে।
১৮.দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় অস্ত্রের আঘাতে কী হয়েছে ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় অস্ত্রের আঘাতে শতদল বা পদ্মের পাপড়িগুলি শত খণ্ডে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
১৯.’দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কোথা থেকে ‘মুক্ত-বন্ধ সুর’ উঠে আসে ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় ছিন্ন বীণা ও তারহীন সেতার থেকে মুক্ত বন্ধ সুর উঠে আসে।
২০.দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় ‘রক্ষ-পুর’ ধ্বংস হলে কী কী ঘটবে ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় রক্ষপুর ধ্বংস হলে যক্ষপুরীর রৌপ্য রঙে রূপ কমল ফুটবে ও কামান গােলার সীসাস্তূপে বাণীর শিশ মহল উঠবে।
২১.দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় ‘বাণীর শিশ-মহল’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় বাণীর শিশমহল বলতে ক্ষণস্থায়ী অথচ গম্ভীর অব্যক্ত প্রতিবাদ বােঝানাে হয়েছে।
২২.দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় ‘রক্ত সোঁদাল’ কথার অর্থ কী ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় ‘রক্ত সোঁদাল’ কথার অর্থ হল রক্তে সিক্ত বা রক্তে ভেজা।
২৩.দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় জীবন চুয়ানাে ঘানি থেকে কবি তেল আনতে বলেছেন কেন ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় জীবন চুয়ানাে ঘানি থেকে কবি তেল আনতে বলেছেন শক্তিদেবীর আরতি করবার জন্য।
২৪.“জীবন-চুয়ানাে সেই ঘানি”র তাৎপর্য কী ?
উত্তরঃ “জীবন-চুয়ানাে সেই ঘানি”র অর্থ হল দেশের জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাস
২৫.‘শৌখিন পূজারী’ কী করছে ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় শৌখিন পূজারি দেবীর অনুপস্থিতিতেও বৃথা দেবীর শঙ্খে ফু দিচ্ছে ও অঞ্জলি দিচ্ছে।
২৬.কবি পূজারির কাছে কার সন্ধান করেছেনৎ ?
উত্তরঃ কবি পূজারির কাছে ‘মুক্ত ভারতী’ অর্থাৎ স্বাধীন দেশের সন্ধান করেছেন।
২৭.’ন্যায়ের শাসক’ বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় ন্যায়ের শাসক বলতে কবি বিদ্রুপার্থে ইংরেজ শাসনব্যবস্থাকে বুঝিয়েছেন।
২৮.কবি ভারতের বন্দি দশাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কবি ভারতের বন্দি দশাকে পৌরাণিক চরিত্র সীতার লঙ্কায় বন্দি দশার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
২৯.কারা বিদ্রোহী আখ্যা লাভ করল ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় দেশের সাহসী মানুষ যারা মুক্ত কণ্ঠে প্রতিবাদ করে উঠল তারা বিদ্রোহী আখ্যা লাভ করল।
৩০.কারা সিংহকে খাঁচায় রাখে ?
উত্তরঃ ইংরেজ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে সিংহ বিক্ৰমে লড়তে থাকা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের খাঁচায় অর্থাৎ কারাগারে বন্দি করে রাখে।
৩১.বাঘকে কীসে আঘাত করা হয় ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় বাঘকে অগ্নিশেলে আঘাত করা হয়।
৩২.দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় বাঘ ও সিংহের প্রতীকে কবি কাদের বােঝাতে চেয়েছেন ?
উত্তরঃ দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় বাঘ ও সিংহের প্রতীকে কবি অসমসাহসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বােঝাতে চেয়েছেন।
৩৩.কবি কেন ঢাক ও পাঞ্চজন্য শাঁখ বাজাতে বলেছেন ?
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলাম রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কবি মনে করেন দ্বীপান্তরের ঘানিতে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক লেগেছে, তাই কবি ঢাক ও পাঞ্চজন্য শাঁখ বাজাতে বলেছেন।
৩৪.যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে কী হবে বলে কবি মনে করেন ?
উত্তরঃ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে দেশের বর্তমান পরাধীনতার বিনাশ হয়ে নতুন যুগের সূচনা হবে বলে কবি মনে করেন।
৩৫.ভারত-ভারতী বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন ?
উত্তরঃ ‘ভারত-ভারতী’ বলতে কবি দেশমা-কে বুঝিয়েছেন।
৩৬.ভারত-ভারতী’কে কবি কোথায় দেখেছেন ?
উত্তরঃ ভারত-ভারতী-কে কবি দ্বীপান্তরে দেখেছেন।
৩৭.পুণ্যবেদীর শূন্য বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?
উত্তরঃ পুণ্যবেদীর শূন্য বলতে স্বদেশভূমিকে বােঝানাে হয়েছে।
৩৮.’সপ্তসিন্ধু তের নদী পারে’ কবি কী দেখেছেন ?
উত্তরঃ সপ্তসিন্ধু তের নদী পারে কবি দ্বীপান্তরের আন্দামানকে দেখেছেন।
৩৯.”শতদল যেথা শতধা ভিন্ন”- এই ‘শতদল’ কী ?
উত্তরঃ ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় এই ‘শতদল’ হল স্বাধীনতার বাসনা।
৪০.যক্ষপুরী বলতে ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কাকে বােঝানাে হয়েছে ?
উত্তরঃ যক্ষপুরী কথাটির দ্বারা ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থাকে বােঝানাে হয়েছে।
৪১.’বাণীর শিশ-মহল’কে কবি কোথায় দেখতে চেয়েছেন ?
উত্তরঃ ব্রিটিশ শাসকদের কামান-গােলায় কবি ‘বাণী শিশ-মহল’-কে দেখতে চেয়েছেন।
৪২.দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় আন্দামানে কবি কাকে ঘানি টানতে দেখেছেন ?
উত্তরঃ‘বাণী’ অর্থাৎ স্বাধীনতার কণ্ঠস্বরকে ঘানি টানতে দেখেছেন।
৪৩.ইংরেজ শাসনে আইনের প্রয়ােগ কেমন ছিল ?
উত্তরঃ আইনের প্রয়ােগ ঘটিয়ে সত্যভাষীদের বন্দি করা হত।
৪৪.বাণী অর্থাৎ স্বাধীনতার দাবিকে কীভাবে কবি লক্ষ করেছিলেন ?
উত্তরঃ বন্দিনী সীতার মতাে স্বাধীনতার দাবিকে দেখেছিলেন কবি।
৪৫.স্বাধীনতার উচ্চারণ যারা করে তারা ইংরেজ শাসনে কী আখ্যা পেত ?
উত্তরঃ বিদ্রোহী আখ্যা পেত।
৪৬.পূজারির সঙ্গে কী থাকার কথা কবি জানতে চেয়েছেন ?
উত্তরঃ দেশ-মা’কে বন্দনার জন্য বাণী-উপচার সঙ্গে আছে কি না কবি জানতে চেয়েছেন।
৪৭.দেশ মার পূজার উপচার কী হতে পারে বলে কবি মনে করেছেন ?
উত্তরঃ দেশের জন্য বিপ্লবীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং আত্মদানই দেশ মার পূজার উপচার বলে কবি মনে করেছেন।
৪৮.বাণীর সেতারে কীসের বাজনা কবি শুনতে চেয়েছিলেন ?
উত্তরঃ বিধির বেতার মন্ত্র কবি শুনতে চেয়েছিলেন।
৪৯.কবি কাকে পদ্মে অধিষ্ঠিত হতে দেখেছেন ?
উত্তরঃ যুগান্তরের ধর্মরাজকে কবি পদ্মে অধিষ্ঠিত হতে দেখেছেন।
৫০.ধর্মরাজ কীসের বার্তা বহন করে এনেছেন ?
উত্তরঃ ধর্মরাজ যুগান্তরের বার্তা বহন করে এনেছেন।
৫১.ধর্মরাজের আবাহনে কবি কী বাজাতে বলেছেন ?
উত্তরঃ পাঞ্চজন্য শাঁখ বাজাতে বলেছেন।
৫২.দ্বীপান্তরের আন্দামান কথাটি কোন্ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে ?
উত্তরঃ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নির্বাসন এবং ইংরেজ শাসকদের দমনপীড়ন-এর প্রতীক হিসেবে ‘দ্বীপান্তরের আন্দামান’ কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে।
৫৩.”বন্দী সত্য ভানিছে ধান”- কথাটির অর্থ কী ?
উত্তরঃ ইংরেজ শাসনে যে সত্য মূল্যহীন এবং সত্যের পথে থাকলে অত্যাচারিত এমনকি কারারুদ্ধও হতে হয়, উদ্ধৃত অংশে সেকথাই বলতে চাওয়া হয়েছে।
৫৪.“আরতির তেল এনেছ কি ?”- আরতির তেল কোথা থেকে আনার কথা বলা হয়ছে ?
উত্তরঃ জীবন চুয়ানো ঘানি অর্থাৎ দেশের মানুষের আত্মনিবেদন ও সংগ্রামের যে ইতিহাস সেখান থেকেই আরতির তেল অর্থাৎ প্রেরণা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
৫৫.“পদ্মে রেখেছে চরণপদ্ম”- কথাটি আসলে কী ?
উত্তরঃ “পদ্মে রেখেছে পরণপদ্ম” কথাটিতে যুগান্তরের ধর্মরাজের আগমন বা ব্রিটিশ শাসনের অবসানের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
৫৬.”বাণী যেথা ঘানি টানে নিশিদিন”- কোথায় কেন বাণী ঘানি টানছে ?
উত্তরঃ পরাধীন ভারতে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনে ‘বাণী’ অর্থাৎ স্বাধীনতার কণ্ঠস্বরকে ঘানি টানতে হচ্ছে।
৫৭.”সত্য বলিলে বন্দী হই।”- কবির এমন উক্তির কারণ কী ?
উত্তরঃ ইংরেজ শাসনে সত্য বললে অর্থাৎ স্বাধীনতার পক্ষে এবং সাম্রাজ্যবাদী অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বললেই বন্দি হতে হয় বলে কবি এমন মন্তব্য করেছেন।
৫৮.”হােমানল হতে”- এখানে কোন্ হােমানলের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ হােমানল বলতে এখানে স্বাধীনতার পক্ষে এবং ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে বােঝানাে হয়েছে।
৫৯.”কিসের তরে এ শঙ্খারাব ?”— এ কথা বলার কারণ কী ?
উত্তরঃ স্বাধীনতার জন্য দেশবাসীর যে উন্মুখ হয়ে থাকা এবং তাকে আবাহনের আকাঙ্খা তাকেই বােঝানাের জন্য মন্তব্যটি করা হয়েছে।
৬০.”মুক্ত ভারতী ভারতে কই?”- ভারতী কাকে বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ ভারতী বলতে স্বদেশ ভারতকে বােঝানাে হয়েছে।
৬১.”যন্ত্রী যেখানে সান্ত্রী বসায়ে / বীণার তন্ত্রী কাটিছে হায়”- এখানে যন্ত্রী এবং সান্ত্রী বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?
উত্তরঃ‘যন্ত্ৰী’ বলতে ইংরেজ শাসক এবং ‘সান্ত্রী’ বলতে তার পুলিশ প্রশাসনকে বােঝানাে হয়েছে।
৬২.”মুক্ত কি আজ বন্দিনী বাণী ?”- ‘বন্দিনী বাণী’ বলতে কীসের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ বন্দিনী বাণী বলতে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত মানুষদের কারারুদ্ধ করে রাখার ঘটনাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
৬৩. “ক্রন্দন উঠিতেছে শুধু”- এই ক্রন্দন-এর কারণ কী ?
উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শক্তির অত্যাচার এবং স্বাধীনতার জন্য মানুষের আর্তিকে ক্রন্দন শব্দটির দ্বারা বােঝানাে হয়েছে।
৬৪.“সত্য বলিলে বন্দী হই”—কোন্ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বক্তা এই মন্তব্য করেছেন ?
উত্তরঃ আইনের দোহাই দিয়ে যেভাবে দেশবাসীকে স্বাধীনতার কথা বললেই কারারুদ্ধ করা এবং নির্বাসনে পাঠানাে হচ্ছিল সেই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই এই মন্তব্য।
• বড় প্রশ্ন (মান-৫)
১. ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবির স্বদেশপ্রেম কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে আলোচনা করো। ৫
উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলামের ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতাটি হল পরাধীন ভারত জননীর বন্দনাগীতি। আলোচ্য কবিতায় কবি ইংরেজ-শাসিত ভারতের করুণ রূপটি তুলে ধরেছেন এবং একইসঙ্গে “মুক্ত-ভারতীর” স্বপ্ন দেখেছেন।
(ক) পরাধীনতার জন্য দুঃখবোধঃ ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষ কবিকে ব্যথিত করেছে। পরাধীন জন্মভূমির সঙ্গে একাত্ম হয়ে কবি অনুভব করেছেন পুণ্যবেদীর শূন্যে ধ্বনিত বন্দিনী ভারত-আত্মার ক্রন্দন।
(খ) বিপ্লববাদের প্রতি সমর্থনঃ কবি নজরুল ইসলাম ছিলেন বিদ্রোহী কবি৷ তাই স্বাধীনতার জন্য আবেদন-নিবেদনের নীতিতে বিশ্বাসী নরমপন্থীদের তিনি “শৌখীন পূজারী” বলে সমালোচনা করেছেন। কবি বিশ্বাস করতেন যে, রাক্ষসপুরি-তুল্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে ভেঙে চুরমার করতে হলে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রয়োজন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এইসব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কারাগারে বন্দি করে তাদের প্রতি অকথ্য অমানবিক অত্যাচার চালাত। কবির ভাষায়–
    “সিংহেরে ভয়ে রাখে পিঞ্জরে, 
     ব্যাঘ্রেরে হানে অগ্নি-শেল”
আলোচ্য কবিতায় বীর বিপ্লবীদের প্রতি কবির সহানুভূতি, সমর্থন এবং শ্রদ্ধা বিশেষ ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কবির মতে, ভারতমাতার স্বাধীনতা-যজ্ঞে ‘বীর ছেলেদের
চর্বি ঘি’ একান্তভাবেই প্রয়োজন।
(গ)) স্বাধীনতার স্বপ্নঃ ঔপনিবেশিক শক্তি স্বাধীনতাকামী মানুষের কন্ঠস্বর চেপে ধরার চেষ্টা করলেও “বাণীর সেতারে” বেজে উঠেছে “বিধির বেতার-মন্ত্র”। ব্রিটিশ সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে কবি প্রত্যক্ষ করেছেন—
“পদ্মে রেখেছে চরণপদ্ম
যুগান্তরের ধর্মরাজ”।
পাঞ্চজন্য শাঁখ বাজিয়ে কবি তাঁকে বরণ করতে বলেছেন। স্বাধীনতা আর দূরাগত স্বপ্ন নয় কারণ “দ্বীপান্তরের ঘানিতে” শুরু হয়ে গেছে “যুগান্তরের ঘুর্ণিপাক”।
২. দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতার মূলভাব কী তা তোমার নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
উত্তরঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতাটি তার ফনিমনসা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত একটি অনবদ্য কবিতা, পরাধীন ভারতবর্ষের মাটিতে দাঁড়িয়ে ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে কবির বিদ্রোহী মনোভাব ব্যক্ত করেছেন এই কবিতার মাধ্যমে। আলোচ্য কবিতায় ইংরেজ শক্তির শোষণ যন্ত্রের স্বরূপ কবি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তথা বাংলা ১৩৩১ সনে ১৭ই মাঘ বিজলী পত্রিকায় এই কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। কবিতাটির মধ্যে কবি কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয়তাবোধ ও দেশপ্রেমের উজ্জল রুপটি ফুটে উঠেছে। সামাজিক অভিজ্ঞতা থেকে কবি নজরুল ইসলাম বুঝিয়েছেন যারা সত্যের পূজারী যারা দেশের মঙ্গলের জন্য স্বর্গ সুখ বিসর্জন দিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তাদেরকেই দেশদ্রোহী অথবা রাজদ্রোহী রূপে চিহ্নিত করা হচ্ছে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা ।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতে ভারতের বীর সন্তানেরা সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে অবস্থিত আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দী। কবি কাজী নজুল ইসলাম লক্ষ্য করেছেন শত শত বিপ্লবী শরীর রক্তে রাঙ্গা এবং তারা বন্দীশালার পিঞ্জরাবদ্ধ হয়ে আছে। তারা দেশমাতৃকার বেদনা বুকের মধ্যে উপলব্ধি করেছিলেন বলে এই শারীরিক যন্ত্রণাকে মাথা পেতে স্বীকার করে নিয়েছেন। তারা দেখেছিলেন আমাদের সৌন্দর্য পুরী ভারতবর্ষ ইংরেজদের অপশাসনে যক্ষপুরীতে পরিণত হয়েছে। তাইতো কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতার মাধ্যমে বলেছেন—
‘মুক্ত কি আজ বন্দিনী বাণী ?
ধ্বংস হলো কি রক্ষপুর।’
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় স্বদেশের দুর্দশার চিত্রটি অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনি দেখেছেন, কামান গোলা বর্ষণ। কামানের গোলা বর্ষণে সত্যের পূজারীরা হারিয়ে গিয়েছেন, একে একে নির্ভয়ে মৃত্যুর কবলে ঢলে পড়েছেন। শান্তি-সুচিতা-শুভ্রতা রক্তের বন্যায় ভেসে গেছে চারিদিক। চারিদিকে আর্তনাদ প্রতিবাদীদের কণ্ঠস্বর, নির্বাসিত দেশপ্রেমিকদের কথা বলতে গিয়ে কবির মনে প্রশ্নটি বারংবার জেগেছে, তাই তো তিনি তাঁর কবিতার মাধ্যমে প্রশ্নটি করেছেন—
‘হোমানল হতে বানীর রক্ষী
বীর ছেলেদের চর্বি ঘি ?
হাই সৌখিন পূজারী, বৃথাই
দেবীর শঙ্খে দিতেছে ফুঁ।’
যারাই মুক্ত শতদলের মত সত্যের পূজারী তারাই ইংরেজের রোষানলে আন্দামানে বন্দি, তাই কবি পাঞ্চজন্য শঙ্খ বাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এই পাঞ্চজন্য শঙ্খ যেন অত্যাচারী শাসকের বিনাশ ঘটিয়ে সত্যবাদী দেশমাতৃকার সন্তানদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটাক, এটাই কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাম্য।
পরিশেষে বলা যায় যে, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় তৎকালীন ভারত শাসক তথা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য মনোভাব পোষণ করেছেন। শুধু তাই নয় অপরপক্ষে দেশ জননীর বন্দি সন্তানদের প্রতি অমরতা প্রার্থনা করেছেন। সমগ্র কবিতার মাধ্যমে তিনি দেশ জননী তথা ভারত মাতার বিদ্রোহী সন্তানদের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করেছেন।
৩. কাজী নজরুল ইসলামে রচিত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতার উৎস নির্ণয় করে কবিতার ‘দ্বীপান্তৱ বন্দিনী’ নামকরণ কতখানি সংগত ও সার্থক হয়েছে তা বিশ্লেষণ করাে। ১+৪
উত্তরঃ উৎস কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এগারাে সংখ্যক কাব্যগ্রন্থ হল ‘ফণি-মনসা’। কাব্যগ্রন্থটির প্রকাশকাল ২৯ জুলাই ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ। ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতাটি প্রথম সংস্করণের সূচি অনুযায়ী ‘ফণি-মনসা’ কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় কবিতা। কবিতাটি লেখা হয়েছিল ১৩৩১ বঙ্গাব্দে, হুগলিতে। কবি তখন সেখানে থাকতেন। ‘বিজলী’ পত্রিকায় কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বন্দিনী’ শিরােনামে। ফণি-মনসা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতাটি সংকলিত হয়েছে।
উপস্থাপনাঃ কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বয়ং কবিতাটির নাম দিয়েছেন ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’। কবিতার ভাববস্তুর সঙ্গে সংগতি রেখে নামকরণ সংগত ও সার্থক হয়েছে কি না তা বিচার্য বিষয়।
নামকরণ আলােচনাঃ ব্রিটিশ শাসিত ভারতে দীর্ঘমেয়াদি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত কয়েদিদের দ্বীপান্তর হত। আন্দামান দ্বীপে তাঁরা নির্বাসিত হতেন। সেখানকার বন্দিজীবন ছিল দুর্বিষহ। ওই নির্মম বন্দিজীবনের প্রতীক হিসেবে কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় ভারতমাতা বাগদেবী সরস্বতীর বন্দিদশার কথা বলেছেন। মায়ের দ্বীপান্তরের মেয়াদ দেড়শাে বছরের। দেড়শাে বছরের বন্দিদশার দুর্বিষহ জীবনযন্ত্রণার ছবি এঁকেছেন কবি। সেইসঙ্গে শাসকের নির্মম অত্যাচার, সত্যভাষণ ও বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অন্যায়-অবিচারের লেখচিত্রও এঁকেছেন কবি। সবশেষে আশার কথাও শুনিয়েছেন যে, যুগান্তরের ধর্মরাজের উত্থান হয়েছে। দ্বীপান্তরের ঘানিতে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক লেগেছে।
যথাযথ ও সার্থক নামকরণঃ ওপরের আলােচনা থেকে দেখা গেল, কবিতার বিষয় হল আন্দামানে বন্দিনী ভারতীর বন্দিদশা। আন্দামানে বন্দি কয়েদিদের বন্দিজীবনের প্রতীক হিসেবে তা বর্ণিত হলেও দ্বীপান্তরের বন্দিজীবনের কথাই হল কবিতার কেন্দ্রীয় ভাববস্তু। ভাববস্তুর সঙ্গে সংগতি রেখেই কবিতার ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ নামকরণ হয়েছে। কাজেই নামকরণ যথাযথ ও সার্থক হয়েছে।
৪. ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কে ? ‘বন্দিনী’কে মুক্ত করার জন্য কবির যে আকুলতা প্রকাশিত হয়েছে, তা কবিতা অবলম্বনে লেখো।
উত্তরঃ ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কবির স্বদেশপ্রেমের অসামান্য প্রকাশ দেখা যায়।
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির প্রান্তরে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তাচলে গিয়েছিল, তার জন্য কবির আক্ষেপ এই কবিতায় তীব্র স্বরে ধ্বনিত হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে বন্দি ও দেশান্তরী হতে হয়েছে অসংখ্য দেশপ্রেমিককে। আন্দামান আর নির্বাসন তখন সমার্থক হয়ে উঠেছে।
স্বাধীনতার লাঞ্ছনা, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর ব্রিটিশ শাসকদের নির্মম অত্যাচারকে কবি মর্মস্পর্শী ভাষায় এই কবিতায় ব্যক্ত করেছেন। কবি দেখেছেন প্রতিবাদের আর মুক্তির কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নির্লজ্জ প্রয়াস।
এমন এক আইনের শাসনে দেশ বাঁধা, যেখানে সত্য কথা বললে বন্দি হতে হয়, স্বাধীনভাবে কথা বললে ‘বিদ্রোহী’ আখ্যা পেতে হয়। কিন্তু শোষণের অবসান আর স্বাধীনতার উন্মেষের মধ্যেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা—এটাই কবির বিশ্বাস। তাই ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’র উপসংহারে কবি এই বিপ্লবী প্রাণকে আহ্বানের জন্যই ‘পাঞ্চজন্য শাঁখ’ বাজাতে বলেছেন।
ইতিহাসের অনিবার্যতায় দ্বীপান্তর আন্দামানের ‘ঘানিতে লেগেছে’ এমন এক ‘ঘূর্ণিপাক’—যাকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না; যা নিশ্চিতরূপে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতকে স্বাধীনতার আলো দেখাবে বলে কবির বিশ্বাস ।
৫. “ধ্বংস হ’ল কি রক্ষ-পুর ?”— ‘রক্ষ-পুর’ কী এবং কীভাবে তা ধ্বংস করা সম্ভব‌ ? ১+৪
উত্তরঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের “দ্বীপান্তরের বন্দিনী” কবিতার উদ্ধৃত অংশে রক্ষপুর কথাটির আক্ষরিক অর্থ রাক্ষসপুরী অর্থাৎ স্বর্ণলঙ্কা।কিন্তু কবি এখানে রক্ষপুর কথাটির দ্বারা অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
রাক্ষসরাজ রাবণ সীতাকে হরণ করে রাক্ষসপুরীর পঞ্চবটী বনে বন্দি করে রাখেন এবং যথাসময়ে রামচন্দ্র ও তার সৈন্যরা তাকে মুক্ত করে। অত্যাচারী ইংরেজ একই ভাবে এদেশের বীর বিপ্লবীদের আন্দামানে দ্বীপান্তরে বন্দি করে রাখে। কিন্তু সংগ্রামীদের এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ বিফল হওয়ার নয়। ইংরেজ শক্তি যতই প্রবল হোক না কেন সংগ্রামীদের আশা পূরণ হবেই।
বিদ্রোহী কবিও মনেপ্রাণে চেয়েছেন এই রক্ষপুর রুপী ইংরেজ শাসন ব্যবস্থার অবসান। তাইতো তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে –
মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত। ‘ তিনি বারবার বলে ওঠেন – রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা।
স্বদেশ প্রেমের আগুনে পুড়ে কবিসত্তা চির বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন।তার বিদ্রোহের আগুন সহ্য করতে না পেরে বিদেশী শাসকর ইংরেজ তাকে বারবার কারাগারে বন্দি করেছে। এই দেশপ্রেমী বিদ্রোহী কবিরও এক বিরাট অবদান ছিল এই ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার বিনাশ ঘটাতে এবং ভারত মাতাকে। শৃংখল মুক্ত করার কাজে।
ইংরেজ শাসনের অবসান অনিবার্য। কারণ আমাদের দেশের বীর সংগ্রামীরা মাভৈঃ ও চরৈবেতি মন্ত্রে দীক্ষিত। তাই অনিবার্যভাবে এদেশের বুকে যুগান্তরের ধর্মরাজের চরণপদ্ম পড়বে। দ্বীপান্তরের ঘানিতে যে যুগান্তরের ঘূর্ণি- পাক লেগেছে তা দূর হবে পাঞ্চজন্য শঙ্খের ধ্বনিতে। এই ভাবেই বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্ম বলিদানের মাধ্যমেই ইংরেজ শাসক রূপ রক্ষপুর ধ্বংস করা সম্ভব হবে।
৬. ” হাই শৌখিন পুজারি”- শৌখিন পূজারী কে ? তাকে সৌখিন বলা হয়েছে কেন ? ১+৪
উত্তরঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম “দ্বীপান্তরের বন্দিনী” কবিতার উদ্ধৃত অংশে শৌখিন পূজারি বলতে শখের স্বাধীনতা সংগ্রামী বা ভন্ড দেশপ্রেমিকদেরকেই বুঝিয়েছেন।
মন্দির দেবতার আরাধনা স্থল। মন্দিরের পূজারী মানব কল্যাণের জন্য দেবতার আরাধনা করেন। কিন্তু সকল পূজারী প্রকৃত দেব বন্দনা করে না। কিছু অসৎ পূজারী নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভক্তরূপে পূজা করে থাকে। এই রকম সুযোগ সন্ধানী শখের পূজারীদের সঙ্গে এই দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন কারীদের কবি তুলনা করেছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের মধ্যে এমন কিছু ভন্ড দেশ প্রেমিক থাকে যারা শুধু নিজেদের নামকে বিখ্যাত করার জন্য বা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নকল দেশপ্রেম দেখিয়ে বেড়ায়। এদেরকে কবি শৌখিন পূজারি বা শখের আন্দোলনকারী বলেছেন।
এই শৌখিন পূজারীর উদ্দেশ্যে কবির বক্তব্য হল –
ক) দ্বীপান্তরের বাণী যেখানে দিন রাত্রি ঘানি টানছে, সে ঘানিতে শুধু জীবন চুঁইয়ে পরে।সেই ঘানি থেকে পূজারি কি আরতি তেল এনেছেন?
খ) হোমানল থেকে বাণীর রক্ষী বীর ছেলেদের চর্বি ঘি ও কি এনেছেন তিনি?
গ) যেখানে ভারতবর্ষে মুক্ত ভারতী নেই,সেখানে পূজারী কাকে অঞ্জলি দিচ্ছেন?
ঘ)পূজারি কি বাণী-পুজো-উপাচার বয়ে নিয়ে এনেছেন? যদি এই কাজে পূজারি অসফল হয়,তাহলে শঙ্খ বাদন সহ এই পূজা বৃথা।
এইভাবে কবি সৌখিন পূজারী ভন্ড দেশপ্রেমিকদের মুখোশ খুলে দিয়ে তাদের আসল রূপ সকলের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন।তাই কবি মনে করেন স্বাধীনতা আন্দোলনের নামে সমাজে আজ স্বার্থসিদ্ধির মানসিকতা সম্পন্ন এইরকম শখের আন্দোলনকারীর কোনো প্রয়োজন নেই ভারতমাতার শৃঙ্খলা মোচনের মহান কাজে।
৭. “জীবন-চুয়ানো সেই ঘানি হ’তে/আরতির তেল এনেছ কি?” —রূপকটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলামের স্বাধীনতার পটভূমিতে লেখা কবিতা ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ থেকে এই পঙ্ক্তিটি নেওয়া হয়েছে। পরাধীন ভারতভূমিকে স্বাধীন করবার জন্য প্রতিবাদী বিপ্লবীদের শাস্তিস্বরূপ আন্দামানে নির্বাসিত করা হত।
সেখানে লোহার কারাগারে ব্রিটিশ প্রহরীদের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করে তাদেরকে তেলের ঘানি ঘোরাতে হত, যেটা প্রকৃতপক্ষে পশুর ন্যায় শ্রমসাধ্য একটি কাজ। এখানে সেই ঘানির কথাই বলা হয়েছে | এই ঘানি পিষে তেল বের করতে করতে আমাদের বিপ্লবীদের চরম জীবনীশক্তি নিঃশেষিত হয়ে যেত, সমস্ত তেজ হারিয়ে তারা নিস্তেজ হয়ে পড়ত। হারিয়ে যেত তাদের পুনরায় লড়বার ক্ষমতা।
জীবনীশক্তিকে নষ্ট করে দেওয়ার ঘানিকেই এখানে ‘জীবনচুয়ানো’ বাক্যবন্ধের মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে। এইভাবে ক্রমাগত ঘানি ঘোরাতে ঘোরাতে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনীশক্তি ফুরিয়ে গেলেও কবি জানেন যে, এইসব স্বাধীনতা সংগ্রামীর আত্মত্যাগ কখনোই সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ার নয়।
তাদের জীবনের তিতিক্ষা ও আত্মদানের দৃষ্টান্তকে পাথেয় করে দেশের বাকি সকলের মনেও পরাধীনতার গ্লানি জাগিয়ে তুলতে হবে।
দ্বীপান্তরে বন্দি বীরদের আত্মত্যাগ আর তিতিক্ষাই হল এখানে ‘আরতির তেল’ । আর কবির স্থির বিশ্বাস — এই আরতির তেলের সাহায্যেই একদিন উজ্জ্বল হয়ে উঠবে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিময়ী শিখা।
৮. “তবে তাই হোক! ঢাক’ অঞ্জলি, / বাজাও পাঞ্চজন্য শাঁখ! / দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে/যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক।” – কবি কেন ‘বাজাও পাঞ্চজন্য শাঁখ’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন? ‘যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক’ কথাটির তাৎপর্য লেখো। ২+৩
উত্তরঃ কৃষ্ণের শঙ্খের নাম পাঞ্চজন্য। নজরুল ইসলাম তাঁর ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ মানুষদের এই পাঞ্চজন্য শাঁখ বাজাতে বলেছেন। এই শাঁখের শব্দেই থাকবে যুগান্তরকে স্বাগত জানানোর আহ্বান। দীর্ঘ অত্যাচার অবিচারের অবসানে নতুন যুগকে স্বাগত জানানোর জন্যই কবি পাঞ্চজন্য শাঁখ বাজাতে চেয়েছেন।
   পঞ্চজন নামক রাক্ষসকে হত্যা করার পর তার অস্থি দিয়ে তৈরি হয় পাঞ্চজন্য শাঁখ। সেই দৃষ্টান্তকে মনে রেখেই ব্রিটিশদের অত্যাচারী শাসনব্যবস্থা ‘রক্ষ-পুর’-কে ধ্বংস করার জন্যই কবি অত্যন্ত সুকৌশলে পাঞ্চজন্য শঙ্খের প্রসঙ্গ এই কবিতায় উল্লেখ করেছেন।
       সেই সময়ে দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য, তাদেরকে স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন করে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হত আন্দামানে।
কিন্তু এরই মধ্যে কবি লক্ষ করেন ইতিহাসের অনিবার্যতাকে। তাঁর কানে ভেসে ওঠে ‘মুক্ত বন্ধ সুর’, অর্থাৎ স্বাধীনতার কন্ঠস্বর। ‘যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক’ শব্দবন্ধের দ্বারা এই বিষয়টিকেই কবি ইঙ্গিত করেছেন।
ঘূর্ণিপাককে কেউ যেমন ঠেকিয়ে রাখতে পারে না, তেমনই দ্বীপান্তর আন্দামানের ঘানিতে লাগা ঘূর্ণিপাকের প্রবলতাকেও কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না বলে কবির বিশ্বাস। ফলে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতবর্ষ দ্রুত স্বাধীনতা লাভ করবে বলেই কবির নিশ্চিত প্রত্যয়।

This Post Has One Comment

Leave a Reply