WBCHSE CLASS 11 EDUCATION QUESTION PAPER WITH ANSWER 2014 (একাদশ শ্রেণির শিক্ষা বিজ্ঞান প্রশ্নপত্র ২০১৪)
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার শিক্ষা বিজ্ঞান বিষয়ের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র যত্নসহকারে সঠিক এবং নির্ভুল উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বহু বিকল্পধর্মী প্রশ্ন (MCQ) এবং অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নের (SAQ) উত্তর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হলো। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জানানো যাচ্ছে তোমরা অবশ্যই তোমাদের সাবজেক্ট শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলিয়ে নেবে।
EDUCATION (XI)
(New Syllabus)
2014
Time : 3 hrs 15 mts Full Marks : 80
পরিমিত এবং যথাযথ উত্তরের জন্য বিশেষ মূল্য দেওয়া হবে। বর্ণাশুদ্ধি, অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরিষ্কার হস্তাক্ষরের ক্ষেত্রে নম্বর কেটে দেওয়া হবে। উপান্তে পূর্ণমান সূচিত আছে।
Special credit will be given for answers which are brief and to the point. Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting. Figures in the margin indicate full marks for the questions.
Group – A
1. নিম্নলিখিত বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলি থেকে সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করে লেখো : 1×9=9
(i) লাতিন শব্দ ‘Educere’ -এর অর্থ হল—
(a) লালনপালন করা,
(c) শৃঙ্খলাবদ্ধ করা
(b) বাইরে নিয়ে আসা বা নিষ্কাশন করা
(d) শিক্ষণ কর্ম
উত্তরঃ (b) বাইরে নিয়ে আসা বা নিষ্কাশন করা।
(ii) সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা হল—
(a) জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া
(b) এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষক সক্রিয় ও শিক্ষার্থী নিষ্ক্রিয়
(c) একটি গতিশীল প্ৰক্ৰিয়া
(d) অভিযোজনের প্রক্রিয়া
উত্তরঃ (b) এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষক সক্রিয় ও শিক্ষার্থী নিষ্ক্রিয়।
(iii) ডিউইয়ের মতে শিক্ষার উদ্দেশ্য হল—
(a) সামাজিক বিকাশ (c) দৈহিক বিকাশ
(b) নৈতিক বিকাশ (d) মানসিক বিকাশ
উত্তরঃ (a) সামাজিক বিকাশ।
(iv) নিম্নলিখিত যে দুটি উপাদানের নিরন্তর মিথস্ক্রিয়ার ফলশ্রুতি হল শিক্ষার্থী, সে দুটি হল—
(a) পরিবেশ ও বিদ্যালয়
(c) পরিবেশ ও বংশগতি
(b) বংশগতি ও জিনোম
(d) প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশ
উত্তরঃ (c) পরিবেশ ও বংশগতি।
(v) নীচের কোনটি শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত ?
(a) কম্পিউটার (b) শিক্ষক (c) পাঠ্যপুস্তক
(d) ব্ল্যাকবোর্ড
উত্তরঃ (b) শিক্ষক।
(vi) আধুনিক শিক্ষায় সংগীত ও বিতর্ক যে ধরনের কার্যাবলি হিসেবে বিবেচিত হয়, তা হল—
(a) পাঠক্রমিক কার্যাবলী
(c) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী
(b) পাঠক্রম-বহির্ভূত কার্যাবলী
(d) বিনোদনমূলক কার্যাবলী
উত্তরঃ (c) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী।
(vii) নিম্নলিখিত সংস্থাগুলির মধ্যে একটি প্রথাগত শিক্ষার সংস্থা হল—
(a) টেলিভিশন
(c) উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
(b) পরিবার
(d) নৈশ বিদ্যালয়
উত্তরঃ (c) উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
(viii) প্রথামুক্ত (non-formal) শিক্ষার একটি বৈশিষ্ট্য হল—
(a) নমনীয়তা
(b) কোনো সুনির্দিষ্ট পাঠক্রমভিত্তিক নয়
(c) সুদূর নিয়ম ও শর্তাবলীবিশিষ্ট
(d) নির্দিষ্ট সময়সারণিনির্ভর
উত্তরঃ (a) নমনীয়তা।
(ix) শিক্ষার যেরূপ দূরাগত শিক্ষার সহায়ক তা হল—
(a) নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা (Formal Education) (b) ধর্মীয় শিক্ষা
(c) অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা (Informal Education)
(d) প্রথামুক্তশিক্ষা (Non formal Education)
উত্তরঃ (d) প্রথামুক্তশিক্ষা (Non-formal Education)
👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈
2. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়)। 1x 5 = 5
(i) স্বামী বিবেকানন্দ প্রদত্ত শিক্ষার সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ স্বামী বিবেকানন্দ শিক্ষার যে সংজ্ঞাটি দিয়েছেন, তা হল-
Education is the manifestation of perfection already in man” অর্থাৎ শিক্ষা হল মানুষের অন্তর্নিহিত সত্তার বিকাশসাধন।
(ii) ব্যাপক অর্থে শিক্ষা এবং সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার মধ্যে একটি পার্থক্য লেখো।
উত্তরঃ ব্যাপক অর্থে শিক্ষা – শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাগুলির বিকাশসাধন সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা- কিছু জ্ঞান ও কৌশল আয়ত্ত করা।
(iii) শিক্ষার দ্বিমেরু প্রক্রিয়ার দুটি মেরু কী কী ?
উত্তরঃ শিক্ষার দ্বিমেরু প্রক্রিয়ার দুটি মেরু হল – (১) শিক্ষার্থী এবং (২) শিক্ষক।
অথবা,
সামাজিক বিকাশে সহায়ক শিক্ষার যে-কোনো একটি লক্ষ্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ সামাজিক বিকাশে সহায়ক শিক্ষার একটি লক্ষ্য হল- সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করা ও তার সমাধান করা।
(iv) জাতীয় বিকাশে সহায়ক শিক্ষার একটি লক্ষ্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ জাতীয় বিকাশে সহায়ক শিক্ষার একটি লক্ষ্য হল- সামাজিক ঐক্যস্থাপন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ।
অথবা,
একজন সুশিক্ষকের যে-কোনো দুটি গুণ উল্লেখ করো।
উত্তরঃ একজন সুশিক্ষকের দুটি গুণ হল – (১) আদর্শ ব্যক্তিত্ব ও উন্নত – জীবনাদর্শ, (২) দায়িত্ববোধ।
(v) পাঠক্রম সংগঠনের যে-কোনো একটি নীতি উল্লেখ করো।
উত্তরঃ পাঠক্রম সংগঠনের একটি নীতি হল – উদ্দেশ্যকেন্দ্রিকতার নীতি।
অথবা,
প্রথাগত শিক্ষার একটি সুবিধা ও একটি অসুবিধা উল্লেখ করো।
উত্তরঃ প্রথাগত শিক্ষার একটি সুবিধা হল – এতে একটি নির্দিষ্ট পাঠক্রম অনুসৃত হয় এবং একটি অসুবিধা হল – এই শিক্ষা পরীক্ষানির্ভর।
3. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) : 8×2=16
(i) শিক্ষার লক্ষ্যের প্রয়োজনীয়তা কী ? শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ব্যক্তির বিকাশ সম্বন্ধে আলোচনা করো।
উত্তরঃ
শিক্ষার লক্ষ্যের প্রয়োজনীয়তাঃ (Determination of Aims of Education)
নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া কোন কর্মের সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয় তাই শিক্ষার ক্ষেত্রে ও সঠিক উদ্দেশ্য স্থির করার প্রয়োজন আছে। শিক্ষা একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। সমস্ত বৌদ্ধিক কাজের যেমন একটি বিশেষ লক্ষ্য থাকে তেমনি শিক্ষারও একটি বিশেষ লক্ষ্য থাকা বাঞ্ছনীয়। যেসব কারণে শিক্ষার লক্ষ্য সমূহের বা উদ্দেশ্য সমূহের প্রয়োজনীয়তা আছে, তা হলো—
(১) শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষামূলক কর্মসম্পাদনের প্রেষণা বৃদ্ধি করে।
(২) শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা অর্থবহ ও উদ্দেশ্য মুখি করে তোলে।
(৩) শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার পাঠক্রম প্রণয়নের সাহায্য করে।
(৪) শিক্ষার অগ্রগতি পরিমাপ করতে এবং সাফল্যের পরিমাপ করতে সচেতন করে।
(৫) শিক্ষামূলক কর্মসম্পাদনের সঠিক পথ নির্দেশ করে সময় ও শ্রম সাশ্রয় করে।
(৬) শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে।
(৭) শিক্ষা পরিকল্পনার সার্থক রূপায়নের জন্য শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
(৮) শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষা প্রক্রিয়া নিরবিচ্ছন্ন ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
(৯) বিদ্যালয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা কে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
(১০) প্রতিটি দেশের জাতীয় উন্নয়নের জন্য শিক্ষা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন।
ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, শিক্ষাপ্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হল শিক্ষার উদ্দেশ্য স্থির করা। শিক্ষার্থী কী শিখবে, কতখানি শিখবে, কেন শিখবে এবং শিক্ষকশিক্ষিকারা কী শেখাবেন এইসব বিষয় শিক্ষার উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। কাজেই উপযুক্ত উদ্দেশ্য ছাড়া শিক্ষাপ্রক্রিয়া দিশাহীন নৌকার মতোই লক্ষ্যহীন।
শিক্ষার লক্ষ্য-ব্যক্তিগত বিকাশঃ ব্যক্তিগত বিকাশ বলতে ব্যক্তির দৈহিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক সকল ধরনের সামর্থ্য ও সম্ভাবনাগুলির বিকাশকে বোঝানো হয়। ‘শিক্ষার লক্ষ্য-ব্যক্তিগত বিকাশ’ এই কথাটির মধ্যে ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথাই বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার যাবতীয় কর্মসূচি ও পরিকল্পনা রচিত হবে ব্যক্তির বিকাশকে কেন্দ্র করে। এক্ষেত্রে সমাজের আগে ব্যক্তিকে স্থান দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তির সমবায়ে সমাজ গঠিত হয়। ব্যক্তির বিকাশ ঘটলে সমাজের অগ্রগতি ঘটবে। ব্যক্তির স্বাধীনচিন্তা ও কাজ ছাড়া সমাজ উন্নয়নমূলক কোনো কাজই সম্পাদিত হতে পারে না। তাই ব্যক্তির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত শিক্ষার ইতিহাস ও বিবর্তন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়—সকল যুগেই ব্যক্তিগত বিকাশকে শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশ্চাত্য শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল, পেস্তালৎসি, মন্তেসরি, স্যার পার্সিনান, বাট্রান্ড রাসেল প্রমুখরা শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ব্যক্তিগত বিকাশকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। ভারতীয় শিক্ষাবিদ বিবেকানন্দ, গান্ধিজি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখরাও শিক্ষায় শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশকে গুরুত্বদানের কথা উল্লেখ করেছেন। ব্যক্তির বিভিন্ন বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার লক্ষ্যের ভূমিকা এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল—
(১) দৈহিক বিকাশঃ শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল শিশুকে দৈহিক সামর্থ্য অর্জনে সহায়তা করা। সুস্থ দেহের মধ্যে থাকে সুস্থ মন শিক্ষার ক্ষেত্রে মনোযোগ সৃষ্টির অন্য একটি দিক হল সুস্থ-স্বাভাবিক দৈহিক সামর্থ্য। শরীরচর্চা, খেলাধুলা ও সুখাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ, স্বাভাবিক রাখা যায়৷ এর জন্য শিক্ষার প্রয়োজন আছে। তাই দৈহিক বিকাশের জন্য শিক্ষা অপরিহার্য।
(২) মানসিক বিকাশঃ ব্যক্তিগত বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল মানসিক বিকাশ মানসিক বিকাশ বলতে শিশুর ইচ্ছা, প্রক্ষোভ, অনুরাগ, মনোযোগ, চিন্তা, কল্পনা, স্মৃতি, প্রবৃত্তি, বুদ্ধি প্রভৃতির যথাযথ বিকাশকে বোঝানো হয়। শিক্ষার লক্ষ্য ব্যক্তিগত বিকাশ হলে, শিশুর মানসিক বৈশিষ্ট্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবস্থা করে তার মানসিক বিকাশকে তরান্বিত করা হয়।
(৩) গ্লাক্ষোভিক বিকাশঃ শিক্ষার প্রতি সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি, শিখনের প্রতি আন্তরিকতা, শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রতি শ্রদ্ধা, জ্ঞানার্জনের প্রতি নিষ্ঠা সবই প্রাক্ষোভিক বিকাশের অন্তর্গত, যা। শিক্ষার মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। শিক্ষার ব্যক্তিগত লক্ষ্যের মাধ্যমে শিশুর বাঞ্ছিত প্রক্ষোভগুলিকে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
(৪) বৌদ্ধিক বিকাশঃ ব্যক্তিগত বিকাশের আর-একটি দিক হল শিশুর বৌদ্ধিক
বিকাশ, জ্ঞান ও বুদ্ধির বিকাশের ফলে শিশু তার পরিবেশকে সঠিকভাবে বুঝতে পারে ও ও জীবনের নানান সমস্যার যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাধানের রাস্তা বের করতে পারে। এ ছাড়া ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে নিজেকে প্রস্তুতও করতে পারে। নানান কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুর মধ্যে জ্ঞান ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটানো শিক্ষার ব্যক্তিগত লক্ষ্য।
(৫) নৈতিক বিকাশঃ শিশুর মধ্যে ভালোমন্দ বিচারের দক্ষতা সৃষ্টি, সত্যের প্রতি নিষ্ঠাবান হওয়ার মানসিকতা অর্জন, জীবন সংগ্রামে যোগদানের সাহস প্রভৃতি বিষয়গুলি নৈতিক বিকাশের অন্তর্গত। ব্যক্তিগত বিকাশকে শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করলে শিশুর মধ্যে এই জাতীয় মূল্যবোধগুলি গড়ে তোলার দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়। নৈতিকতার সাথে সমাজের সম্পর্ক বিদ্যমান। সৎ মানুষরা নৈতিক পথ অবলম্বন করে সমাজের কল্যাণের দিকে দৃষ্টি দিয়েই জীবনযাপন করতে চায়।
(৬) সামাজিক বিকাশঃ সমাজে বসবাসকারী বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, সামাজিক রীতিনীতি মেনে চলা, সামাজিক সমস্যাগুলিকে সঠিকভাবে বোঝা এবং তার সমাধানে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া ইত্যাদি হল সামাজিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যাবলি। শিক্ষার লক্ষ্যপুরণে শিশুর মধ্যে তথা ব্যক্তির মধ্যে এই ধরনের বিকাশ বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। এই ধরনের বিকাশ ব্যক্তিকে সমাজের দায়িত্বশীল ও আত্মনির্ভরশীল সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।
(৭) আধ্যাত্নিক বিকাশঃ ব্যক্তি তার
অন্তরের যাবতীয় সংকীর্ণতা দূর করে যাতে
আত্মোপলব্বির স্তরে উপনীত হতে পারে,
তার জন্য আধ্যাত্মিক বিকাশ বিশেষভাবে
প্রয়োজনীয়। শিক্ষার লক্ষ্য ব্যক্তিগত বিকাশ হলে শিক্ষার্থীর আধ্যাত্মিক চেতনার জন্য প্রয়োজনীয় পাঠক্রম ও শিক্ষায় কর্মসূচি নির্ধারণে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
(৮) সৃজনশীলতার বিকাশঃ ব্যক্তিগত বিকাশ শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে অনুসৃত হলে
শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বা শিশুর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সৃজনশীলতার ক্ষেত্রটিকে খুঁজে বের করে, সেটির যথাযথ বিকাশের প্রতি নজর দেওয়া হয়।
(৯) সংস্কৃতির বিকাশঃ দেশের জনসাধারণের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি অনুভূতিশীল হওয়া, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, সঞ্চালন ও উন্নয়নে যথাযথভাবে অংশ নেওয়াই হল ব্যক্তির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিকাশ সাধন। এই বিকাশের মধ্য দিয়েই শিক্ষাক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যপূরণ হয়।
(ii) গণমাধ্যম বলতে কী বোঝ ? আধুনিক শিক্ষায় গণমাধ্যমের গুরুত্ব উল্লেখ করো। 2+6
উত্তরঃ
গণমাধ্যমঃ একই সময়ে একসাথে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে যেসকল মাধ্যমের সাহায্যে সংযোগ রক্ষা করা যায়, তাদের বলা হয় গণমাধ্যম। অন্যভাবে বললে, মানুষের জানার চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানবসভ্যতা সম্পর্কে নানান তথ্য সরবরাহের জন্য যেসকল মাধ্যম ব্যবহৃত হয়, তাদের গণমাধ্যম বলে।
বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যমগুলি হল— সংবাদপত্র, বেতার, চলচ্চিত্র, দূরদর্শন, ইনটারনেট ইত্যাদি।
আধুনিক শিক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকাঃ
আধুনিক শিক্ষায় গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকাগুলি নীচে সংক্ষেপে আলোচনা করা
হল।
(১) গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশঃ আদর্শ গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বস্তুত, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে জনগণের বিশ্লেষণাত্মক চিন্তন ক্ষমতার উপর। সংবাদপত্র, বেতার, দূরদর্শন প্রভৃতি গণমাধ্যমগুলি এক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে বিশ্লেষণমূলক চিন্তনের বিকাশ ঘটিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে মূল্যবান অভিমত প্রকাশে সহায়তা করে।
(২) চিন্তন ক্ষমতার বিকাশ সাধনঃ গণমাধ্যমগুলি জনগণের চিন্তন প্রক্রিয়াকে শানিত করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেসকল তথ্য পরিবেশিত হয়, সেগুলি সম্পর্কে বিচারবিবেচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে গিয়ে জনগণের নিজস্ব চিন্তন ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে ওঠে। বস্তুত, নিয়মিত গণমাধ্যমগুলির ওপর নজর রাখলে ব্যক্তির চিন্তন শক্তির বিকাশ ঘটে। এই ধরনের চিন্তন প্রক্রিয়া জনগণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরোক্ষভাবে এই চিন্তন প্রক্রিয়া জনগণের জ্ঞানকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করে।
(৩) ব্যক্তির আচরণ সংশোধনে সহায়তাঃ
গণমাধ্যমগুলি ব্যক্তির আচরণকে সংশোধিত ও মার্জিত করে। এইগুলি ব্যক্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। অনেক সময়, দেখা যায় সমস্যা সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানা না-থাকার কারণে ব্যক্তি ভুল আচরণ করে। গণমাধ্যমগুলি এই ক্ষেত্রে সমস্যার বিশ্লেষণ করে ব্যক্তির আচরণকে সংশোধিত করে।
(৪) ব্যক্তিকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নীতির
সঙ্গে পরিচিত হতে সাহায্য করাঃ সকল ব্যক্তির পক্ষে সংবিধান পড়ে গণতান্ত্রিক আদর্শ জানা সম্ভব নয়। এই জন্য গণমাধ্যমগুলি ওই আদর্শ, রীতিনীতিকে জানার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংবাদপত্রের বিশ্লেষণ, দূরদর্শন ও বেতারের আলোচনা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল নীতিগুলি সম্পর্কে বিশদ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যক্তিকে তার অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধিতে
সাহায্য করে।
(৫) মূল্যবোধের বিকাশ সাধনঃ গণমাধ্যমগুলি ব্যক্তির মধ্যে নতুন নতুন মূল্যবোধ গঠনেও সাহায্যে করে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বা আলোচিত বিভিন্ন বিষয় ব্যক্তির মধ্যে পুরোনো মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটায় এবং নতুন মূল্যবোধের ভিত্তি স্থাপন
করে।
(৬) ভাষা-জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তাঃ গণমাধ্যমগুলিতে বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হয়। ব্যক্তিরা নিয়মিত ওই মাধ্যমগুলিতে নজর রাখলে নিত্যনতুন বহু শব্দ এবং সেগুলির যথাযথ প্রয়োগ সম্পর্কে জ্ঞানলাভের সুযোগ পায়। তাদের মধ্যে বিশ্লেষণী ক্ষমতার যেমন বিকাশ ঘটে, তেমনই তাদের ভাষার বিকাশও ঘটে।
(৭) জ্ঞান লাভে সহায়তাঃ প্রাত্যহিক ঘটনা পরিবেশনের সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন আবিষ্কার, পৃথিবীর বিভিন্ন মনীষী সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ ইত্যাদি বহু মূল্যবান এবং জ্ঞানমূলক তথ্য প্রকাশ করে। যারা নিয়মিত গণমাধ্যমগুলির পরিবেশিত তথ্য পাঠ করে বা শ্রবণ করে, তাদের জ্ঞানের পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়।
(৮) সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তাঃ গণমাধ্যমগুলি ব্যক্তি, স্বাস্থ্য, সমাজ ও পরিবেশ সম্পর্কে, সচেতন করে তোলে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দৈনিক শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, রাজনীতি, খেলাধুলো ইত্যাদি বিষয়ে যেসকল তথ্য পরিবেশিত হয়, সেগুলি জনসাধারণের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
(৯) কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশে সহায়তাঃ সংবাদপত্র, দূরদর্শন, বেতার এবং ইনটারনেট প্রভৃতি গণমাধ্যমগুলি দেশ- বিদেশের নানা সংবাদের পাশাপাশি কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিষয়েও বিভিন্ন তথ্য পরিবেশন করে। গণমাধ্যমে চোখ রাখলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। এর মাধ্যমে তাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে ।
অথবা,
বিভিন্ন প্রকারের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী গুলি কী কী ? সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী গুলির চারটি উপযোগিতা লেখো।
উত্তরঃ যে সকল কার্যাবলী শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার জীবনের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের সাহায্য করে, সেই কার্যাবলী গুলিকে একত্রে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী বলা হয়।
সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন – (ক) শরীর চর্চামূলক কার্যাবলী, খ) মানসিক কার্যাবলী ও (গ) সামাজিক কার্যাবলী।
শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশে বিদ্যালয়ে যে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী গ্রহন করা হয় সেগুলি হল—
(ক) শরীর চর্চামূলক কার্যাবলীঃ
শরীর চর্চামূলক কার্যাবলীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর দেহ, মন, কর্মদক্ষতা ও নানান সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটায়। যেমন – ব্যায়াম, খেলাধুলা প্রভৃতি।
(খ) মানসিক কার্যাবলীঃ
যে সকল সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশে এবং তার সম্প্রসারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করে সেগুলিকে মানসিক সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী বলা হয়। যেমন কবিতা লেখা, ছবি আঁকা, মাটির কাজ ইত্যাদি।
এই মানসিক কার্যাবলীকে আবার কতগুলি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন—
(১) আত্মপ্রকাশ মূলক কার্যাবলী, যা শিক্ষার্থীকে প্রকাশ হতে সাহায্য করে। যেমন– সাহিত্য সভা, বিতর্ক সভা, অভিনয় ইত্যাদি।
(২) রসবোধ মূলক কার্যাবলি, যা শিক্ষার্থীকে রসোপলব্ধি মূলক বোধ জাগাতে সাহায্য করে। যেমন– আবৃত্তি, শিক্ষা-ভ্রমন, সভার আয়োজন, কৌতুক ইত্যাদি।
(৩) অবসর জীবন কার্যাবলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অবসর জীবনযাপনে সাহায্য করে। যেমন– শব্দকোষ তৈরি, হবি, বিজ্ঞান ও সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা ইত্যাদি।
(৪) সৃজনশীল কার্যাবলি শিক্ষার্থীর সৃজন মূলক বিকাশে সাহায্য করে। যেমন– গল্পরচনা, কবিতা লেখা, গানবাজনা, অঙ্কন, নৃত্য ইত্যাদি।
(গ) সামাজিক কার্যাবলীঃ
যে সকল কার্যাবলী শিক্ষার্থীর সামাজিক গুণাবলির বিকাশে সাহায্য করে, সেই কার্যাবলীকে সামাজিক কার্যাবলী বলে।
সামাজিক কার্যাবলীকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেগুলি হল—
(১) সেবামূলক কার্যাবলী, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেবামূলক মনোভাব গড়ে তোলে ও সেবাপরায়ন হতে সাহায্য করে। যেমন – স্বাস্থ্য-সপ্তাহ পালন, সাক্ষরতা কর্মসূচি, NCC, NSS, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি।
(২) সামাজিক প্রশাসনমূলক কার্যাবলীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক ভাবধারার দ্বারা নেতৃত্বদানের গুনের বিকাশ ঘটায়। যেমন– বিদ্যালয়ে সংসদ গঠন, সমবায় সমিতি, সঞ্চয় প্রকল্প ইত্যাদি।
• সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীর উপযোগিতাঃ
(১) সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়কঃ সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়ক হয়। শিক্ষার্থীরা সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীতে অংশ নিলে তাদের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক, নৈতিক বিকাশ ঘটে। তারা বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে মানিয়ে নিতে শেখে।
(২) অগ্রহােদ্দীপকঃ সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। তাদের মধ্যের একঘেয়েমি দূর করে। বহু শিক্ষার্থী সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণের তাগিদে বিদ্যালয়মুখী হয়।
(৩) সৃজনশীলতার বিকাশে সহায়কঃ বহু শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল গুণ সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশ নেওয়ার মধ্যে দিয়ে ওই সমস্ত গুণের বিকাশ ঘটার সুযােগ সষ্টি হয়।
(৪) চাহিদাপূরণে সহায়কঃ বিভিন্ন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চাহিদা লক্ষ করা যায়। সহপাঠক্রমিক কার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন আনন্দ পায়, অন্যদিকে তাদের বিশেষ বিশেষ চাহিদাও পূরণ হয়।
(৫) জাতীয় সংহতি বিকাশে সহায়কঃ বিভিন্ন রকমের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় সংহতি বা জাতীয়তাবােধের বিকাশে সহায়ক হয়।
সবশেষে বলা যায় সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার প্রকৃত লক্ষে পৌঁছাতে ও ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশে নানা দিক থেকে সাহায্য করে।
Group – B (Mark – 30)
4. নিম্নলিখিত বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলি থেকে সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করে লেখো। 1×9=9
(i) আধুনিক ধারণা অনুযায়ী মনোবিজ্ঞান হল—
(a) চেতনার বিজ্ঞান (b) আত্মার বিজ্ঞান
(c) মনের বিজ্ঞান (d) আচরণের বিজ্ঞান
উত্তরঃ (d) আচরণের বিজ্ঞান
(ii) শিক্ষার যে ক্ষেত্রটি মনোবিজ্ঞান দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্ধারিত হয় না, তা হল—
(a) পাঠক্রম (c) শিক্ষার লক্ষ্য
(b) শিক্ষণপদ্ধতি (d) শৃঙ্খলা
উত্তরঃ (c) শিক্ষার লক্ষ্য
(iii) ব্যক্তির বিকাশের প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হতে থাকে—
(a) কৈশোর কালের সমাপ্তি পর্যন্ত
(b) বয়ঃপ্রাপ্তি কাল পর্যন্ত
(c) মধ্যবয়স পর্যন্ত
(d) সারাজীবন ব্যাপী
উত্তরঃ (d) সারাজীবন ব্যাপী
(iv) জীবন বিকাশের শৈশব স্তরের অন্তর্ভুক্ত একটি শিশুর বয়স হল—
(a) 3 বছর (b) 8 বার (c) 11 বছর (d) 6 বছর
উত্তরঃ (a) 3 বছর
(v) যে শিক্ষার স্তর বাল্যকালের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, তা হল –
(a) প্রাক্ প্রাথমিক শিক্ষা স্তর
(b) প্রাথমিক শিক্ষা স্তর
(c) উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর
(d) স্নাতক স্তরের শিক্ষা
উত্তরঃ (b) প্রাথমিক শিক্ষা স্তর
(vi) শিখন ও পরিণমনের মধ্যে একটি পার্থক্য হল –
(a) শিখন স্বতঃস্ফূর্ত কিন্তু পরিণমন অভ্যাসনির্ভর
(b) শিখনের ফলে দৈহিক পরিবর্তন ঘটে কিন্তু পরিণমনে ঘটে না
(c) শিখন হল সচেতন প্রক্রিয়া কিন্তু পরিণমন হল স্বাভাবিক প্রক্রিয়া
(d) পরিণমন প্রেষণা নির্ভর কিন্তু শিখন নয়
উত্তরঃ (c) শিখন হল সচেতন প্রক্রিয়া কিন্তু পরিণমন হল স্বাভাবিক প্রক্রিয়া
(vii) নিম্নলিখিত কোনটি মূলত পূর্ব অভিজ্ঞতা অপেক্ষা দেহযন্ত্রের বিকাশের ওপরে বেশি নির্ভরশীল?
(a) শিখন (c) পরিণমন (b) প্ৰত্যক্ষণ (d) ভাষার বিকাশ
উত্তরঃ (c) পরিণমন
(viii) আমরা বাইরের জগৎ থেকে জ্ঞান অর্জন করি –
(a) ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে
(b) অনুমানের সাহায্যে
(c) দৈহিক সক্রিয়তার সাহায্যে
(d) অভিজ্ঞতার সাহায্যে
উত্তরঃ (a) ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে
(ix) প্রত্যক্ষণ ও সংবেদনের মধ্যে পার্থক্য হল –
(a) প্রত্যক্ষণ হল জ্ঞান আহরণের প্রথম স্তর কিন্তু সংবেদন হল দ্বিতীয় স্তর
(b) সংবেদন হল জ্ঞান আহরণের প্রথম স্তর কিন্তু প্রত্যক্ষণ হল দ্বিতীয় স্তর
(c) সংবেদন হল সক্রিয় প্রক্রিয়া কিন্তু প্রত্যক্ষণ হল নিষ্ক্রিয় প্রক্রিয়া
(d) সংবেদন অর্থবাহী কিন্তু প্রত্যক্ষণ অর্থবাহী নয়
উত্তরঃ (b) সংবেদন হল জ্ঞান আহরণের প্রথম স্তর কিন্তু প্রত্যক্ষণ হল দ্বিতীয় স্তর
5. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) : 1x 5 = 5
(i) মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার কে প্রথম স্থাপন করেন ?
উত্তরঃ মনোবিদ উইলিয়াম উন্ড 1879 খ্রিস্টাব্দে প্রথম মনোবিজ্ঞানের পরীক্ষাগার তৈরি করেন।
(ii) শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ শিক্ষা মনোবিজ্ঞান হল সেই বিজ্ঞান যা ব্যক্তির শিক্ষাকালীন আচরণ নিয়ে আলোচনা করে এবং সেই আচরণের উন্নতিসাধনে সচেষ্ট হয়।
অথবা,
শিখনের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ শিখন প্রক্রিয়া চাহিদানির্ভর অর্থাৎ চাহিদা পূরণ শিখনকে নিয়ন্ত্রন
(iii) বৃদ্ধি বলতে কী বোঝ ?
উত্তরঃ একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দেহের আকার বা আয়তন, ওজন ও উচ্চতার স্বতঃস্ফূর্ত ও স্থায়ী পরিবর্তনই হল বৃদ্ধি।
অথবা,
বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে একটি পার্থক্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ বৃদ্ধি পরিমাণগত ও পরিমাপযোগ্য কিন্তু বিকাশ গুণগত ও পর্যবেক্ষণসাপেক্ষ৷
(iv) বাল্যকালের একটি চাহিদার উল্লেখ করো।
উত্তরঃ বাল্যকালের একটি চাহিদা হল খাদ্যের চাহিদা।
অথবা,
কৈশোর কালের একটি মনোবৈজ্ঞানিক চাহিদার উল্লেখ করো।
উত্তরঃ কৈশোর কালের একটি মনোবৈজ্ঞানিক চাহিদা হল আত্মপ্রকাশের চাহিদা ।
(v) মাধ্যমিক শিক্ষা কীভাবে কৈশোরের চাহিদা পরিতৃপ্ত করে তার একটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ মাধ্যমিক শিক্ষা কৈশোরের জ্ঞান আহরণের চাহিদা পূরণে সহায়তা করে৷
অথবা,
শিখনের সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ অনুশীলনের ফলে আচরনের সৃষ্টি বা পরিবর্তনকে শিখন বলে ।
6. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়)। 8×2 = 16
(i) মনোবিজ্ঞান কীভাবে শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ মনোবিজ্ঞান হলো প্রাণীর আচরণ অনুশীলনকারী বিজ্ঞান এর কাজ হলো ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের আচরণ অনুশীলনী করা, সেগুলির বিশ্লেষণ করা এবং বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া মানুষের শিক্ষাকালীন এই আচরণ অনুশীলনের জন্য শিক্ষামনোবিজ্ঞানের শাখাটি গড়ে উঠেছে । শিক্ষার কাজকে শিক্ষামনোবিজ্ঞান বিশেষভাবে প্রভাবিত করে । স্কিনারের মতে, মনোবিজ্ঞানের যে শাখা শিক্ষণ ও শিখন নিয়ে কাজ করে, তাকেই বলে শিক্ষামনোবিজ্ঞান। মনোবিজ্ঞানী জার্ড বলেন— জীবনবিকাশের নানা স্তরের মধ্যে দিয়ে অতিক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটে সেবিষয়ে বিজ্ঞানের যে শাখা আলোচনা করে সেটাই শিক্ষামনোবিজ্ঞান ।
বিদ্যালয়ের ধারণাঃ আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় সমাজের প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিদ্যালয়কে বিবেচনা করা হয় । শিক্ষাবিদগণ মনে করেন , আদর্শ সমাজ পরিবেশের মধ্যেই সার্থক শিক্ষা সম্ভব । শিক্ষার্থীরা সমাজের ক্ষুদ্ররূপ বিদ্যালয়ের মাধ্যমেই তাদের জীবনের প্রয়োজনীয় আচার – আচরণগুলি অনুধাবন করে ।
শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যক্রমঃ আধুনিক শিক্ষাক্ষেত্রে মনোবিদ্যাভিত্তিক পাঠ্যক্রমের ব্যবহার হয়ে থাকে । পাঠ্যক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষাদর্শনের ভূমিকা থাকলেও শিক্ষার বিষয়বস্তু সংগঠনের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের গুরুত্ব সর্বাধিক । পাঠ্যক্রম হওয়া উচিত শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশসাধনের উপযোগী । এই কারণে পাঠক্রম তৈরিতে মনোবিদ্যার উপর নির্ভরশীল হতে হয় ।
সময় তালিকা তৈরিঃ আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠক্রম অনুসারে শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনের জন্যে প্রয়োজন হয় একটি সময় তালিকা । আর এই সময় তালিকা প্রস্তুতি অবশ্যই মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন ।
গণতান্ত্রিকপ্রশাসনঃ যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট নিয়মরীতি মেনে গণতান্ত্রিক প্রশাসনের নীতি অনুসারে পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক – শিক্ষিকাদের মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হয় । এক্ষেত্রেও মনোবিজ্ঞানের গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয় ।
শিক্ষার লক্ষ্যঃ আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাতত্ত্বে আলোচনা করা হয় শিক্ষার লক্ষ্য নিয়ে । এর বাস্তব রূপায়ণের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় শিক্ষাশ্রয়ী মনোবিজ্ঞানের ।
শৃঙ্খলাঃ বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা স্থাপনের জন্যে দরকার শৃঙ্খলাপরায়ণ শিক্ষার্থী । এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নেয় মনোবিজ্ঞান শিক্ষালয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়ে ছাত্রকে সচেতন করার ক্ষেত্রে শিক্ষককে মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হয় ।
শিক্ষণ পদ্ধতিঃ এটি শিক্ষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক । সর্বাধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতির সঙ্গে মনোবিদ্যার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ডালটন পরিকল্পনা , প্রজেক্ট পদ্ধতি , সমস্যা সমাধান পদ্ধতি – এর প্রতিটি মনোবিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কার্যকারী প্রয়োগ । বর্তমানে গৃহীত হার্বার্ট পরিকল্পনাও মনোবৈজ্ঞানিক নীতিরই ফসল ।
আচরণঃ শিক্ষার্থী অনেক সময় অসংগত আচরণ করে । এতে বিদ্যালয়ের পবিত্রতা নষ্ট হয় । মনোবিজ্ঞানের সাহায্যে এই আচরণের পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীকে মূলস্রোতে ফেরানো যায় ।
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষাঃ শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় মনোবিজ্ঞান বিশেষভাবে সাহায্য করে । কারণ আধুনিক শিক্ষায় শিশুর চাহিদা, পছন্দ– অপছন্দ, আগ্রহ, মনোভাব সবকিছুই মনোবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে ।
শিক্ষার বিষয়বস্তুঃ একটি শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে , অর্থাৎ তার শেখা বা জানার আগ্রহ , শিক্ষাক্ষেত্রে তার পছন্দ – অপছন্দ প্রভৃতি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় মনোবিজ্ঞান । উপরিত্ত আলোচনায় স্পষ্ট , শিক্ষার সকল দিকে মনোবিদ্যার প্রভাব সমানভাবে রয়েছে । শিক্ষাক্ষেত্রে মনোবিদ্যা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকায় শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রকে মনোবিদ্যা নানাভাবে প্রভাবিত করে ।
(ii) সংবেদনের বিভিন্ন প্রকার কী কী ? শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদনের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তরঃ কোন পার্থিব উদ্দীপক ইন্দ্রিয় কোষে আঘাত হানার পর আমাদের মধ্যে যে প্রাথমিক সরল অনুভূতি জাগে তাকে সংবেদন বলে।
সংবেদনের বিভিন্ন প্রকারঃ
জ্ঞানেন্দ্রিয়ের প্রেক্ষিতে সংবেদনকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ–
(১) দর্শন সংবেদন, (২) শ্রবণ সংবেদন, (৩) (৪) ঘ্রাণ সংবেদন, (৫) স্বাদ সংবেদন এবং
(৬) ত্বক সংবেদন।
শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদনের গুরুত্বঃ
শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদন-এর গুরুত্ব অপরিসীম। কোনো শিক্ষার্থী যখন কোনো বিষয় অধ্যয়ন করে তখন তার চক্ষু এবং কর্ণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। মনোবিদ ও শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষার্থীর শিখনের প্রায়। চুরানব্বই শতাংশ চক্ষু ও কর্ণের মাধ্যমে ঘটে থাকে। অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলিও সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলিকে তাই জ্ঞানের প্রবেশ দ্বার বলা হয়। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, ত্বক এবং জিহ্বা এই পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাহায্যেই আমরা কোনো বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক অভিজ্ঞতা লাভ করি। শিক্ষাক্ষেত্রে এই প্রাথমিক অভিজ্ঞতার মূল্য, আধুনিক শিক্ষাবিদগণ উপলব্ধি করেছেন। কোনো বস্তুধর্মী অভিজ্ঞতার জন্যে ইন্দ্রিয়গুলির উত্তেজিত হওয়া দরকার। শৈশবকালে যখন ব্যক্তির চিন্তনশক্তির সঠিক বিকাশ ঘটেনি, তখন জ্ঞান অর্জন শুধুমাত্র সংবেদন-এর দ্বারাই ঘটে থাকে। আধুনিক যুগের শিক্ষাবিদগণ তাই শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদন-এর গুরুত্বকে স্বীকার করেছেন। নীচে সংবেদন- এর গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা করা হল
(১) ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণঃ
আধুনিক শিক্ষাদান কৌশলে শিক্ষার্থীর ইন্দ্রিয়গুলিকে ব্যবহার করে শিক্ষাদানের রীতি প্রচলিত হয়েছে। তাই চার্ট, মডেল, প্রোজেক্টর প্রভৃতিকে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। শিক্ষার্থীর ইন্দ্রিয়গুলিকে যত বেশি সক্রিয় করে তোলা যাবে, তারা তত বেশি সংবেদন গ্রহণ করবে এবং নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল ও মন্তেসরি তাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।
(২) সক্রিয়তাভিত্তিক শিক্ষণঃ
শিক্ষায় সক্রিয়তার নীতি প্রচলিত রয়েছে। শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে কোনো বিষয়ে অংশগ্রহণ করলে তার জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলিও সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। সংবেদনের কাজও ত্বরান্বিত হবে। সার্বিকভাবে জ্ঞানার্জনের কাজটিও সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে সংবেদন শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকা পালন করে।
(৩) শিক্ষণ-শিখন সহায়ক উপাদান ও সংবেদনঃ
বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষণ-শিখন উপাদান ব্যবহার করা হয়। এদের মধ্যে বেশি প্রচলিত হল ‘অডিও ভিস্যুয়াল এইডস। এগুলি শিক্ষার্থীর একাধিক জ্ঞানেন্দ্রিয়কে উদ্দীপিত করে সংবেদন সৃষ্টি করে। ফলে শিক্ষার্থীরা দ্রুত অভিজ্ঞতা অর্জনে সক্ষম হয়। জ্ঞানার্জন ক্রিয়াটিও সম্পন্ন হয়।
(৪) বিমূর্ত চিন্তনের ক্ষেত্রে সংবেদনঃ
সংবেদন শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জন প্রক্রিয়াকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। এটি শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মসক্রিয়তা এমনভাবে বর্ধিত করে যে, তার মধ্যে বিমূর্ত চিন্তনের বিকাশ তরান্বিত হয়।
(৫) শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের ক্ষেত্রে
সংবেদনঃ
বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষাবিজ্ঞানীরা শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে সঠিক ও শক্তিশালী সংবেদনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক, সামাজিক, নৈতিক প্রভৃতি বিকাশের জন্য সঠিক সংবেদন প্রয়োজন– এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
(৬) শিখন সলিনের ক্ষেত্রে সংবেদনঃ
সংবেদন শিখন সঞ্চালনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শ্রেণিতে কোনো বিষয় আলোচনার সময় জটিল বিষয়বস্তুকে যখন কোনো ছবি বা মডেলের সাহায্যে শিক্ষার্থীর কাছে তুলে ধরা হয় তখন শিক্ষার্থীর মধ্যে একসঙ্গে একাধিক ইন্দ্ৰিয়ে সংবেদন সৃষ্টি হয়। শ্রবণের সঙ্গে দর্শনও হয়। ফলে শিখন ক্রিয়াটি দ্রুত। সম্পন্ন হয় ৷ একটি বিষয়ের জ্ঞান অন্য বিষয়ের জ্ঞানলাভকে সহজ করে তোলে। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জ্ঞানার্জন-এর ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায় বা স্তর হল সংবেদন। সংবেদন সঠিকভাবে না-হলে পরবর্তী পর্যায়গুলি যেমন প্রত্যক্ষণ ও ধারণা গঠনের কাজ ব্যাহত হয়। মোটকথা, জ্ঞান আহরণের জন্য বা সার্থক শিক্ষণের জন্য সঠিক বা উপযুক্ত সংবেদন হওয়া দরকার। শিক্ষা ক্ষেত্রে এটিই হল সংবেদন-এর অতিগুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য।
অথবা,
ধারণা বলতে কি বোঝায় ? ধারণা গঠনের বিভিন্ন স্তরগুলি আলোচনা করো।
উত্তরঃ বহু মনােবিদ ধারণাকে সব রকম শিখনের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। একই ধরনের বস্তুসমূহের মধ্যে যে সাধারণ বৈশিষ্ট্য বা বৈশিষ্ট্যগুলি বর্তমান, সে সম্পর্কে জ্ঞান বা জানাকে ধারণা বলা হয়।
ধারণার সংজ্ঞাঃ সাধারণ অর্থে ধারণা হল বিষয়, ব্যক্তি বা ঘটনার প্রেক্ষিতে সাধারণীকৃত একটি মানসিক প্রতীক।
(ক) একই শ্রেণির নানা বস্তুর মধ্যে যে সাধারণ গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকে, তার অভিজ্ঞতাই হল ধারণা।
(খ) যেসব গুণ, বৈশিষ্ট্য বা অবস্থার ভিত্তিতে মানুষ কোনাে জাতির বা কোনাে শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তি বা বস্তুসমূহের বিষয়ে অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান অর্জন করে, তাকেই ধারণা বলা যায়।
ধারণা গঠনের বিভিন্ন স্তরঃ
ধারণা গঠন দু-ভাবে হতে পারে- বিনা চেষ্টায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে, প্রচেষ্টার সাহায্যে। লৌকিক ধারণাগুলি বিনা চেষ্টায় গঠিত হয়। বিজ্ঞানসম্মত ধারণাগুলি প্রচেষ্টার মাধ্যমেই গঠিত হয়। এই ধরনের ধারণা গঠন সাতটি স্তর বা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। এই সাতটি স্তর হল一
(১) পর্যবেক্ষণঃ ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সমগােত্রীয় বিভিন্ন বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। যেমন, ফুল সম্পর্কে ধারণা গঠন করতে হলে নানা প্রকারের ফুল পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
(২) বিশ্লেষণঃ পর্যবেক্ষণের পর বিভিন্ন বস্তুর ধর্ম, গুণ, জাতি প্রভৃতি বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন, ফুলের বিভিন্ন প্রকার বর্ণ, গন্ধ, আকার প্রভৃতি বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়।
(৩) তুলনাঃ বিশ্লেষণের পর গুণ বা ধর্মের মধ্যে কী কী মিল রয়েছে এবং অমিল রয়েছে তা নির্ণয় করা হয়। যেমন, বিভিন্ন ধরনের কয়েকটি ফুলের মধ্যে তুলনা করে তাদের মধ্যে ধর্ম বা গুণের ভিত্তিতে সাদৃশ্য খুঁজে বের করা হয়।
(৪) পৃথককরণঃ যেসব ধর্ম বা গুণের ভিত্তিতে বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে এই প্রক্রিয়ার দ্বারা সেগুলিকে মনে মনে আলাদা করে নেওয়া হয় এবং সেগুলির প্রতি মনােনিবেশ করা হয়।
(৫) সামান্যীকরণঃ যেসব গুণ বা ধর্মের ভিত্তিতে পৃথককরণ হয়েছিল, এই স্তরে সেই গুণ বা ধর্মের ভিত্তিতে সাধারণ সূত্র স্থির করা হয়।
(৬) শ্রেণিকরণঃ শিশু যখন ন্যূনতম দুটি পরিস্থিতিতে বস্তু বা ঘটনাকে সমতুল্য বলে স্থির করবে তখনই শিশু শ্রেণিকরণ স্তরের সবচেয়ে নিম্নস্তরে উপনীত হবে, যদিও সে সমতুল্যতার কারণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নাও হতে পারে।
(৭) নামকরণঃ ধারণা গঠনের শেষ স্তর হল নামকরণ। অনেকে একে প্রথাগত স্তর বলেন। এক্ষেত্রে বস্তুটিকে একটি বিশেষ নামে চিহ্নিত করা হয়। এই নামকরণ ধারণার গুণাবলি এবং সমাজ-সমর্থিত হবে। কোনগুলি এই নামের অন্তর্ভুক্ত হবে বা হবে না শিশু তার উল্লেখ করতে পারবে।
Group – C (Mark – 20)
7. নিম্নলিখিত বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলি থেকে সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করে লেখো। 1 x 6 = 6
(i) ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার সুযোগ লাভ করত—
(a) সকল বর্ণের শিক্ষার্থী
(b) শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ শিক্ষার্থী
(c) ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় এবং ক্ষুদ্র শিক্ষার্থী
(d) ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য শিক্ষার্থী
উত্তরঃ (d) ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য শিক্ষার্থী
(ii) কোন্ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৌদ্ধ শিক্ষার সূচনা ঘটত ?
(a) প্ৰব্ৰজ্যা (b) উপনয়ন (c) সমাবর্তন (d) উপসম্পদা
উত্তরঃ (a) প্রব্রজ্যা
(iii) ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হল—
(a) বিহার (c) মাদ্রাসা (b) মক্তব (d) টোল
উত্তরঃ (b) মক্তব
(iv) শিক্ষার খাতে বার্ষিক এক লক্ষ টাকার অনুদান বরাদ্দ হয়েছিল –
(a) 1854-র ডেসপ্যাচের মাধ্যমে
(b) 1813-র চার্টার অ্যাক্টের মাধ্যমে
(c) 1882-র হান্টার কমিশনের মাধ্যমে
(d) 1944-র সার্জেন্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে
উত্তরঃ (b) 1813-র চার্টার অ্যাক্টের মাধ্যমে
(v) মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে ‘এ’ এবং ‘বি’ কোর্সের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল—
(a) স্যাডলার কমিশনে
(b) হান্টার কমিশনে
(c) সার্জেন্ট পরিকল্পনায়
(d) কার্জনের শিক্ষানীতিতে
উত্তরঃ (b) হান্টার কমিশনে
(vi) হস্তশিল্পকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রস্তাবনা করেছিলেন—
(a) রাজা রামমোহন রায় (b) বিদ্যাসাগর
(c) বিবেকানন্দ (d) গান্ধিজী
উত্তরঃ (d) গান্ধিজী
8. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়)। 1 x 6 = 6
(i) ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল আত্মোপলব্ধি ও আধ্যাত্মিক বিকাশ।
(ii) ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে একটি করে পার্থক্য লেখো ।
উত্তরঃ বৌদ্ধ শিক্ষা ও ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার মধ্যে একটি বৈসাদৃশ্য হল ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ছিল গুরুকুল কেন্দ্রিক, বৌদ্ধ শিক্ষা ছিল বিহার বা সংঘকেন্দ্রিক।
অথবা,
বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার যে-কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল – এখানে শিক্ষার্থীদের বাইশ বছর ধরে শিক্ষা লাভ করতে হত।
(iii) মধ্যযুগে মাদ্রাসায় শিক্ষার মাধ্যম কী ছিল ?
উত্তরঃ মধ্যযুগে মাদ্রাসায় মাতৃভাষাকে অবহেলা করা হত। মাতৃভাষার পরিবর্তে ফারসি এবং আরবি ভাষাচর্চা করা হত।
অথবা,
1854 খ্রিস্টাব্দে উডের ডেসপ্যাচের যে-কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উল্লেখ করো।
উত্তরঃ 1854 খ্রিস্টাব্দে উডের ডেসপ্যাচে কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি প্রদেশে একটি করে সরকারি শিক্ষা বিভাগ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
(iv) ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় ইন্টারমিডিয়েট স্তরের সুপারিশ কোন্ কমিশন করে?
উত্তরঃ ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় স্যাডলার কমিশন 1817 খ্রিস্টাব্দে ইন্টারমিডিয়েট স্তরের সুপারিশ করে।
অথবা,
সার্জেন্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষা বিষয়ে যে-কোনো একটি সুপারিশ উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ সার্জেন্ট পরিকল্পনার মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হল – মাধ্যমিক শিক্ষা হবে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা।
(v) ‘নারীশিক্ষার ভান্ডার’ কে এবং কী উদ্দেশ্যে গঠন করেন ?
উত্তরঃ বিদ্যাসাগর ‘নারীশিক্ষার ভান্ডার’ গঠন করেন। ‘নারীশিক্ষার ভান্ডার’ গঠনের উদ্দেশ্য ছিল বালিকা বিদ্যালয় গুলির আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য তহবিল গঠন বা অর্থ সংগ্রহ করা।
(vi) বর্ণপরিচয় কে রচনা করেন এবং কত খ্রিস্টাব্দে তা প্রকাশিত হয় ?
উত্তরঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বর্ণপরিচয় রচনা করেন এবং তা 1855 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
9. নিম্নলিখিত যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নটি লক্ষণীয়)। 8×1=8
(i) শিক্ষাক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করো।
উত্তরঃ রামমোহন তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা ও যুক্তিবাদী চিন্তাধারার আলোকে উনিশ শতকের ভারতীয় সমাজকে সঞ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন। দেশবাসী যাতে জ্ঞানে, শিক্ষাদীক্ষায় জগতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম হয়, সেই উদ্দেশ্যে তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জ্ঞানের সার্থক সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেন। জ্ঞানান্বেষণের স্বাধীনতা, বিজ্ঞান মনস্কতা, নীতিবোধ, অতীত সংস্কৃতিমনস্কতা ইত্যাদি বিষয় গুলি ছিল তাঁর শিক্ষাভাবনার মূলভিত্তি তিনি জানতেন, ভারতীয় জনসমাজের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, রক্ষণশীলতা, মানসিক জড়ত্ব দূরীভূত হতে পারে শুধুমাত্র শিক্ষার আলোকেই। তাই, শিক্ষা সংস্কারে তাঁর ছিল অগ্রণী ভূমিকা। শিক্ষা সংস্কারে তাঁর প্রধান অবদানগুলি হল–
(১) বিভিন্ন ভাষা অধ্যয়নঃ
পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার আরামবাগ মহকুমার অন্তর্গত খানাকুল থানার রাধানগর গ্রামে ১৭৭৪ খ্রিঃ রাজা রামমোহন রায় জন্মগ্রহণ করেন। রামমোহন ছিলেন প্রতিভাবান ও মেধাবী বালক। মাত্র ১৮ বছর বয়সে মাতৃভাষা বাংলা ছাড়াও আরবি, ফারসি ও সংস্কৃতে অসাধারণ ব্যুৎপত্তি লাভ করেছিলেন। ২২ বছর বয়সে তিনি ইংরেজি ভাষা শিখতে আরম্ভ করেন। তিনি গ্রিক ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষাও অধ্যায়ন করেছিলেন। এই গভীর ও ব্যাপক অধ্যায়নের ফলেই তাঁর মানসলোকে পৃথিবীর বিভিন্ন সৃষ্টির এক অপূর্ব সমন্বয় সাধন হয়েছিল।
(২) শিক্ষার লক্ষ্যঃ
রামমোহনের মতে শিক্ষার লক্ষ্য হবে জাগতিক ও সমাজকল্যাণ। শিক্ষার মাধ্যমে একটি পরিশীলিত ও যুক্তিবাদী মনের জন্ম হোক এই তাঁর লক্ষ্য ছিল। রামমোহন মনে করতেন শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে বুদ্ধির জড়তা ও মনের পরবশ্যতা দূর করার জন্য জ্ঞান বৃদ্ধি করা শিক্ষার মাধ্যমে তিনি মানুষের মনে পরিপূর্ণ বিকাশ ও উন্নতির দিকে নজর দিয়েছিলেন।
(৩) প্রাচ্য পাশ্চাত্য বিদ্যার সমন্বয়ঃ
যে সময় মিশনারীর৷ এদেশে নতুন ধারার শিক্ষা প্রসারে ব্যস্ত ছিলেন, সে সময় এদেশে তখন রামমোহন নতুন শিক্ষার প্রয়োজনের কথা অনুভব করেছিলেন। রামমোহনই প্রথম বুঝেছিলেন যে, ভারতে সত্যিকারের উন্নতি নির্ভর করেছে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সমন্বয়ের উপর। তিনি হিন্দু ধর্ম বা সংস্কৃতিকে ত্যাগ করেননি। বরং পাশ্চাত্যের আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের যা কিছু ভাল ও গ্রহণীয়, তা গ্রহণ করে তিনি নিজের দেশের সংস্কৃতির ভাণ্ডারকে পুষ্ট ও সমৃদ্ধ করতে চেষ্টা করেন। রামমোহনের এই নতুন শিক্ষার ধারণা ভারতের শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রকৃত পক্ষে এক বিপ্লব এনেছিল।
(৪) সাংবাদিকতা ও পত্র-পত্রিকা প্রকাশনঃ
ভারত পথিক রামমোহনের জীবনের ব্রত ছিল দেশবাসীর কুসংস্কারচ্ছন্ন মনকে আলোকিত করা। শিক্ষা ও সংস্কারের ভিতর দিয়ে জাতিকে প্রগতির পথে নিয়ে যেতে হবে– এই ছিল তার পণ। তাঁর ধর্ম সম্বন্ধীয় ও শিক্ষা প্রচেষ্টার মূলে যে প্রেরণা, ছিল তাঁর নানা পুস্তিকা রচনার মূলেও ছিল সেই প্রেরণা। আর এই প্রেরণার বলেই তিনি সাংবাদিকতার দিকে মনোনিবেশ করেন। রামমোহনের প্রগতিশীল আন্দোলনের মধ্যে ভূমিষ্ঠ হল বাংলা সংবাদপত্র। এদেশীয়গণের মধ্যে রামমোহনই সর্বপ্রথম সংবাদ প্রকাশের জন্য মুদ্রণ যন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। সংবাদপত্রের সাহায্যে জনমত গঠনের জন্য তিনি বাংলা ভাষায় ‘ সম্বাদ কৌমুদী ‘ ( ১৮২১ খ্রিঃ ) এবং ১৮২২ খ্রিঃ ১২ ই এপ্রিল ফারসি ভাষায় “মীরাৎ-উল- আখবার” নামে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এসব পত্রিকায় সে যুগের যেমন বিতর্কমূলক বিষয়ের সমাধান প্রকাশিত হত রচিত হত। তেমনি প্রয়োজনীয় শিক্ষার পরিবেশ
(৫) ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য প্রবর্তনের পক্ষপাতীঃ
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংরেজি শিক্ষা ও পাশ্চাত্য ভাবধারার সম্পর্কে বাংলাদেশে যে নব যুগের সূচনা হয়েছিল, রাজা রামমোহন রায় ছিলেন সেই অভিনব যুগের ঋত্বিক। ইউরোপের জাগরণের বাহন হল ইংরেজি ভাষা। তাই তিনি ইংরেজি শিক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন। মরণোন্মুখ জাতিকে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করার পণ করলেন। বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতার আহ্বানে তিনি অগ্রণী হলেন। তিনি ভারতে ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন করেন।
(৬) হিন্দু কলেজ স্থাপনের উৎসাহ দাতাঃ
১৮১৭ খ্রিঃ হিন্দু কলেজ স্থাপনের অন্যতম উৎসাহ দাতা ডেভিড হেয়ার ছিলেন রামমোহনের বন্ধু। হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা। কিন্তু রামমোহন বিরোধী হিন্দু সমাজ হিন্দু কলেজের ব্যাপারে তাঁর উৎসাহকে সুনজরে না দেখায় তিনি শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান।
(৭) অ্যাংলো- হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠাঃ
হিন্দু কলেজ কমিটি হতে সরে গিয়ে রামমোহন বাঙালি হিন্দু ছেলেদের ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায়ে ১৮২২ খ্রিঃ ‘ Anglo Hindu School ‘ স্থাপন করেন। এ স্কুলের সমস্ত খরচ রামমোহনকেই দিতে হত । ডেভিড হেয়ার, উইলিয়াম এ্যাডাম, উইলসন প্রমুখ মনীষীগণ তাঁকে স্কুল পরিচালনায় সাহায্য করতেন। এই স্কুলের পাঠ্য তালিকায় কারিগরি বিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভলটেয়ারের তত্ত্ব এবং ইউক্লিড্ এর জ্যামিতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম স্রষ্টা Voltaire প্রণীত History of Charles XII of Sweeden পুস্তকটি উচ্চ শ্রেণিতে পাঠ্যরূপে ধার্য হয়েছিল।
(৮) ১৮২৩ খ্রিঃ লর্ড আমহার্ষ্টকে লেখা পত্রঃ
শিক্ষা সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল এদেশে পাশ্চাত্যে জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসারকল্পে লর্ড আমহার্ষ্টকে প্রেরিত একটি চিঠি। এই পত্রটি নব যুগের নব্য শিক্ষা ব্যবস্থার শঙ্খধ্বনি। তিনি ১৮২৩ খ্রিঃ তৎকালীন বড়লাট লর্ড আমহার্স্টের কাছে পত্রে প্রস্তাব করেছিলেন যে ১৮১৩ খ্রিঃ সনদ মঞ্জুরীকৃত অর্থের দ্বারা কলিকাতায় একটি সংস্কৃত মহাবিদ্যালয় স্থাপন না করে ওই অর্থের সাহায্যে পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। ওই চিঠিতে তিনি ভারতবাসীকে পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানে শিক্ষিত করে তোলার প্রস্তাব রেখেছিলেন। ‘ It would be a folly to load the minds of youths with grammatical niceties and metaphysical distinction of little or no practical use to the possessors or to society’. তিনি চেয়েছিলেন ভারতবাসীকে পাশ্চাত্য গণিত, বিজ্ঞান, দর্শন, রাজনীতি প্রভৃতি বিদ্যায় সুশিক্ষিত করে তুলতে। রামমোহনের এই পত্রখানি ছিল ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষার প্রথম সনদ।
(৯) উদার উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থাঃ
তিনি এদেশের জন্য চাইলেন এক উদার ও উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে গণিত, প্রকৃতি বিজ্ঞান, রসায়ন, শারীরবিদ্যা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান চর্চার ব্যবস্থা থাকবে।
(১০) রামমোহনের মত সরকারি নীতি হিসাবে গ্রহণঃ
১৮২৩ খ্রিঃ এদেশে শিক্ষা বিস্তার কল্পে একটি কমিটি General Committee of Public Instruction ( G.C.P.I ) প্রতিষ্ঠিত হয় । এই সংস্থার উপর সরকারি শিক্ষা পরিকল্পনা রূপায়নের দায়িত্ব দেওয়া হল। এই সংস্থার উপর দায়িত্ব পড়ল সরকারি বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ের। প্রাচ্য অথবা পাশ্চাত্য ঠিক কোন শিক্ষার জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হবে তা নিয়ে তুমুল তর্কের সৃষ্টি হল। দীর্ঘ বারো বছর বিতর্কের পর ১৮৩৫ খ্রিঃ বেন্টিঙ্ক ও মেকলে রামমোহনের মতকেই সরকারি নীতি হিসাবে গ্রহণ করেন।
(১১) প্রাচ্য শিক্ষার অন্তর্ভুক্তিকরণঃ
প্রকৃতপক্ষে রামমোহনের চেষ্টার ফলে ১৮৫৪ খ্রিঃ উডেড ডেসপ্যাচে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার নতুন খসড়ায় প্রাচ্য শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
(১২) বেদ বিদ্যালয় স্থাপনঃ
১৮২৫ খ্রিঃ রামমোহন বেদ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই বিদ্যালয়ে হিন্দু দর্শন ও সাহিত্যের সাথে সাথে পাশ্চাত্য সাহিত্য ও বিজ্ঞান পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল। প্রমাণিত হয় যে তিনি এদেশে নবজাগরণের পথ হিসাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বিদ্যার সুষ্ঠ সমন্বয় সাধন করতে চেয়েছিলেন। বেদ বিদ্যা প্রতিষ্ঠা এবং বেদান্ত থেকে বিভিন্ন অনুবাদ প্রকাশ ও প্রচার ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা প্রমাণ করে। ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যের দৃঢ় ভিত্তির উপরই তিনি তাঁর স্বপ্নের প্রগতিশীল ভারত গড়তে চেয়েছিলেন পাশ্চাত্যের জ্ঞান বিজ্ঞান আমদানি করে।
(১৩) জনশিক্ষা বিস্তারঃ
উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও রামমোহন অজ্ঞ, দরিদ্র ও অনগ্রসর জনসাধারণের কথা ভুলে যান নি। তিনি তাঁদের সর্বাঙ্গীন উন্নতির জন্য পরিশ্রম ও চেষ্টা করেছেন। তিনি একজন প্রকৃত সংস্কারক ছিলেন। সাধারণ মানুষ যাতে নিজেরাই সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে– আর একাজ যে একমাত্র শিক্ষা বিস্তারের মধ্যেই সম্ভব, তা তিনি অনুভব করেছিলেন। তাঁর সমাজ সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য ছিল, সাধারণ মানুষকে কুসংস্কার ও অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের পথে, সত্যের পথে আনা। তিনি চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষকে মূল হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের মধ্যে অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করতে। দরিদ্র কৃষকদের প্রতি তাঁর দরদী মনোভাব ছিল।
(১৪) ভারতীয় ভাষা চর্চা ও উন্নয়নঃ
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিলেও তিনি আধুনিক ভারতীয় শিক্ষাকে মোটেই অবহেলা করেননি। বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও বিস্তারে মিশনারীরা যে চেষ্টা করেন, রামমোহন সেই চেষ্টাকে সাফল্যমণ্ডিত করতে চেষ্টা করেন। তিনি ভারতীয় ছাত্রদের জন্য বাংলা ভাষায় বহু বই রচনা করেন। ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্যের উজ্জীবনের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
(১৫) নারীশিক্ষার প্রসারঃ
ঊনিশ শতকের প্রথম দিকে এদেশে নারী শিক্ষার তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। রামমোহন বিশ্বাস করতেন, শিক্ষার মাধ্যমেই নারীর মুক্তি সম্ভব। ১৮২২ খ্রিঃ নারীদের প্রাচীন অধিকারের বর্তমানে সংকোচনের ওপর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য বিষয়ে একটি বই লেখেন তিনি। নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে তিনি নিজেও যেমন সচেষ্ট ছিলেন, তেমনি মিশনারীদেরও তিনি প্রভূত সাহায্য করেছিলেন।
(১৬) পুস্তক রচনাঃ
১৮১৫ খ্রিঃ থেকে ১৮৩০ খ্রিঃ মধ্যে রামমোহন রায় তিরিশ খানি পুস্তক পুস্তিকা রচনা করেন। বাংলা ছাড়া ইংরেজি ভাষায় লেখা বই, প্রচার পুস্তিকার সংখ্যাও ছিল প্রচুর। তিনি প্রধানতঃ সমাজ ও ধর্ম সংস্কারের উদ্দেশ্যেই অনেক সংস্কৃত গ্রন্থ অনুবাদ, তর্ক ও বিচারমূলক গ্রন্থ রচনা করেন। প্রাচীন গ্রন্থের অনুবাদের মধ্যে ‘বেদান্ত গ্রন্থ’ (১৮১৫ খ্রিঃ), বেদান্তসার (১৮১৬ খ্রিঃ বিভিন্ন উপনিষদের অনুবাদ (১৮১৫- ১৮১৯ খ্রিঃ), বিতর্কমূলক রচনার মধ্যে ‘ উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশের সহিত বিচার (১৮১৬-১৮১৭ খ্রিঃ), ভট্টাচার্যের সহিত বিচার (১৮১৭ খ্রিঃ), গোস্বামীর সহিত বিচার (১৮১৮ খ্রিঃ), সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক নিবর্ত্তক সম্বাদ (১৮১৮ খ্রিঃ), ওই দ্বিতীয় সম্বাদ (১৮১৯ খ্রিঃ), কবিতাকারের সহিত বিচার (১৮২০ খ্রিঃ), ‘ ব্রাহ্মণ সেবধি ( ১৮২১ খ্রিঃ), ‘ পথ্যপ্রদান ‘, ‘ সহমরণ বিষয়ক ‘ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । এগুলি ছাড়াও তিনি ‘ গৌড়ীয় ব্যাকরণ ‘ (১৮৩০ খ্রিঃ) ও ‘ ব্রহ্মসঙ্গীত ‘ (১৮২৯ খ্রিঃ) রচনা করেছিলেন।
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, উনিশ শতকে শিক্ষা তথা সমাজের সর্বক্ষেত্রে যে নতুন যুগের সৃষ্টি হয়েছিল, তার অন্যতম পুরোধা ছিলেন রাজা রামমোহন রায়, বস্তুত, তাঁর প্রদর্শিত পথেই ভারতে আধুনিক শিক্ষার যাত্রা শুরু হয় এবং পরবর্তীকালে যেসব মনীষী আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁরা সবাই মূলত এই পথ অনুসরণ করেছেন। তাই, তাঁকে যথার্থই ভারতপথিক নামে আখ্যায়িত করা যায়।
(ii) স্বামী বিবেকানন্দের মানব গড়ার শিক্ষা সংক্রান্ত ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ
বিবেকানন্দের মানব গড়ার শিক্ষা সংক্রান্ত ধারণাঃ
ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে স্বামী বিবেকানন্দের আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি সারাজীবন ভারতবাসীর মুক্তির মহান আদর্শ প্রচার করে গেছেন। সমগ্র দেশবাসীকে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করার জন্য তিনি ছিলেন সচেষ্ট। প্রকৃত অর্থে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। দার্শনিক হিসেবে তিনি ভাববাদী হলেও তাঁর শিক্ষাদর্শ শুধুমাত্র অতীন্দ্রিয় জগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি শিক্ষার বাস্তব দিককে বিশেষ পুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর শিক্ষাচিন্তা, শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষাপরিকল্পনা নীচে আলােচনা করা হল一
(১) শিক্ষার সংজ্ঞাঃ বিবেকানন্দ শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন “Education is the manifestation of the perfection already in man” অর্থাৎ ব্যক্তি-মানুষের মধ্যে অবস্থিত মহত্বের প্রকাশই হল শিক্ষা। প্রচলিত পুথিগত শিক্ষাব্যবস্থার অন্তঃসারশূন্যতাকে উপলদ্ধি করে তিনি প্রকৃত মানুষ তৈরির শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
(২) শিক্ষার লক্ষ্যঃ বিবেকানন্দের মতে, শিক্ষার লক্ষ্য হল—
(ক) শিক্ষার্থীর মধ্যে সু-অভ্যাস গড়ে তােলা।
(খ) শিক্ষার্থীর চরিত্রগঠনে সহায়তা করা।
(গ) শিক্ষার্থীর মধ্যে শ্রদ্ধার ভাব জাগিয়ে তােলা।
(ঘ) শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি করা।
(ঙ) প্রকৃতির হিতকর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা।
(চ) আবাসিক বিদ্যালয়ে ছাত্রদের যৌথ জীবনযাপনে সহায়তা করা।
(ছ) শিক্ষার্থীদের সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ করা।
এক্ষেত্রে তিনি যে বিষয়গুলির ওপর গুরুত্ব আরোপ করতেন, সেগুলি হল মনুষ্যত্বের বিকাশসাধন ও চরিত্র গঠন, শিক্ষার্থীর নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক চেতনার উন্নতিসাধন এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার সমন্বয়সাধন।
(৩) পাঠক্রমঃ বিবেকানন্দ পাঠক্রম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলােচনা না করলেও তার বিভিন্ন রচনায় দেখা যায় যে, তিনি বিভিন্ন ভাষাশিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান, ভারতবর্ষকে জানার জন্য ইতিহাস ও ভূগােল, গীতা ও উপনিষদ পাঠ, সংগীত, চিত্রাঙ্কন, শরীরচর্চা ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
(৪) শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষাঃ স্বামী বিবেকানন্দ শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষানীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মতে, শিক্ষায় শিশুদের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। শিক্ষাদানের পদ্ধতি হিসেবে তিনি মনােযােগ, একাগ্রতা এবং ধ্যানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেছেন। তিনি মনে করতেন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে কিছু শেখাতে পারেন না। শিক্ষার্থী নিজেই শেখে। শিক্ষক তাকে কিছুটা সাহায্য করেন মাত্র।
(৫) মানবসেবাঃ মানবসেবা এবং আত্মার মুক্তি ছিল বিবেকানন্দের জীবনের আদর্শ। তিনি ধর্মের সঙ্গে শিক্ষার সংযােগকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। বিবেকানন্দের কাছে ধর্ম ছিল মানবতাবাদ, মানুষের প্রতি ভালােবাসা। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনায় মানুষকে সবকিছুর থেকে বেশি মর্যাদা দিতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন—“সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই”।
(৬) গণশিক্ষাঃ গণশিক্ষার জন্য তিনি মাতৃভাষার মাধ্যমে সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগােল, বিজ্ঞান এবং সাধারণজ্ঞান পঠনপাঠনের ওপর গুরুত্ব দেন। তাঁর মতে লােকসংস্কৃতির বাহন হবে কবিগান, কীর্তন, যাত্রা প্রভৃতি। স্বামীজি যথার্থই মনে করতেন, জনশিক্ষা প্রসারের ফলে এক নতুন ভারত জন্ম নিক।
(৭) স্ত্রীশিক্ষাঃ স্বামী বিবেকানন্দ নারীশিক্ষার জন্য নারীমঠ এবং মঠের সঙ্গে শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। এইসব শিক্ষালয়ে তিনি ধর্মশাস্ত্র, সাহিত্য, ব্যাকরণ, রান্না, সেলাই, সন্তান প্রতিপালন, সাংসারিক কাজকর্ম প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদানের কথা বলেন। তিনি বলেছেন, মেয়েরা মানুষ হলে তবে ভবিষ্যতে তাদের সন্তান-সন্ততি দ্বারা দেশের মুখ উজ্জ্বল হবে।
(৮) কারিগরি শিক্ষাঃ কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে স্বামীজির বক্তব্য হল, এই শিক্ষার বিকাশ ঘটলে ছাত্ররা কেবল চাকরির খোঁজে ছুটে বেড়াবে না। বরং নিজেরাই নানা ধরনের হস্তশিল্প উৎপাদন করে অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবে। শিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তােলার জন্য তিনি বৃত্তিমুখী শিক্ষার ওপরে গুরুত্ব দেন। বিবেকানন্দ ভারতবাসীর শিক্ষার অগ্রগতির বিষয়ে যেসব মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেছেন, তার জন্য আজও তিনি ভারতবাসীর কাছে ‘দেশীয় শিক্ষাচিন্তার জনক’।