Class 11 Education Solved Question Paper 2015 WBCHSE | একাদশ শ্রেণি শিক্ষা বিজ্ঞান প্রশ্ন প্রশ্নপত্র ২০১৫

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

WBCHSE CLASS 11 EDUCATION QUESTION PAPER WITH ANSWER 2015 (একাদশ শ্রেণির শিক্ষা বিজ্ঞান প্রশ্নপত্র ২০১৫)

পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার শিক্ষা বিজ্ঞান বিষয়ের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র যত্নসহকারে সঠিক এবং নির্ভুল উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বহু বিকল্পধর্মী প্রশ্ন (MCQ) এবং অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নের (SAQ) উত্তর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হলো। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জানানো যাচ্ছে তোমরা অবশ্যই তোমাদের সাবজেক্ট শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলিয়ে নেবে।

EDUCATION (XI)
(New Syllabus)
2015

Time : 3 hrs 15 mts      Full Marks : 80

পরিমিত এবং যথাযথ উত্তরের জন্য বিশেষ মূল্য দেওয়া হবে। বর্ণাশুদ্ধি, অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরিষ্কার হস্তাক্ষরের ক্ষেত্রে নম্বর কেটে দেওয়া হবে। উপান্তে পূর্ণমান সূচিত আছে।

Special credit will be given for answers which are brief and to the point. Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting. Figures in the margin indicate full marks for the questions.

Group – A (Mark – 30)

1. নিম্নলিখিত বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলি থেকে সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করে লেখো। 1×9=9

(i) ‘Educatum’ শব্দটির অর্থ হল—
(a) লালনপালন করা (c) শিক্ষা দান করা
(b) পরিচর্যা করা (d) নির্দেশনা দান

উত্তরঃ (c) শিক্ষা দান করা।

(ii) বিবেকানন্দের মতে শিক্ষা হল—
(a) মানুষের আধ্যাত্মিক বিকাশ
(b) মানুষের অন্তর্নিহিত শিক্ষা
(c) মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের পথ
(d) মানুষের সামাজিক বিকাশ

উত্তরঃ (b) মানুষের অন্তর্নিহিত শিক্ষা।

(iii) ‘শিক্ষা একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া’-উক্তিটি কার ?
(a) অ্যাডামসের (c) ডিউইয়ের (b) রুশোর (d) রবীন্দ্রনাথের

উত্তরঃ (a) অ্যাডামসের।

(iv) শিক্ষার্থী নিম্নলিখিত যে দুটি উপাদানের নিরন্তর মিথস্ক্রিয়ার ফল সে দুটি হল—
(a) বংশগতি ও পরিবেশ
(c) প্রথাবর্হিভূত শিক্ষা
(b) বংশগতি ও সমাজ
(d) কোনোটিই নয়

উত্তরঃ (a) বংশগতি ও পরিবেশ।

(v) নির্দিষ্ট পাঠক্রমের উপস্থিতি যে শিক্ষাব্যবস্থায় দেখা যায় তা হল—
(a) নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা (c) পরিবেশ ও শিক্ষা
(b) দূরাগত শিক্ষা। (d) কোনোটিই নয়

উত্তরঃ (a) নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা।

(vi) ‘আলোচনা ও বিতর্ক’ যে ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি হিসেবে বিবেচিত তা হল—
(a) আত্মপ্রকাশমূলক। (c) সৃজনমূলক
(b) শরীরচর্চামূলক। (d) সামাজিক

উত্তরঃ (c) সৃজনমূলক।

(vii) নিম্নলিখিত সংস্থাগুলির মধ্যে যেটি গণমাধ্যম তা হল—
(a) পরিবার। (c) সংবাদপত্র (b) ক্লাব। (d) বিদ্যালয়

উত্তরঃ (c) সংবাদপত্র।

(viii) নিম্নলিখিত কোনটি সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ ?
(a) পরিবার। (c) গ্রন্থাগার (b) বিদ্যালয় (d) ক্লাব

উত্তরঃ (b) বিদ্যালয়

(ix) ভারতে প্রথম ‘মুক্ত বিদ্যালয়’ স্থাপিত হয়—
(a) কলকাতায় (c) মাদ্রাজে (b) দিল্লিতে। (d) বোম্বেতে

উত্তরঃ (b) দিল্লিতে।


👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈


2. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও ( বিকল্প প্ৰশ্ন গুলি লক্ষণীয়) : 1x 5 = 5

(i) ‘বিদ্যা’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী ?

উত্তরঃ বাংলা ভাষায় ‘শিক্ষা’ শব্দের সমার্থক হিসেবে ‘বিদ্যা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ‘বিদ্যা’ শব্দটি সংস্কৃত ‘বিদ্‌’ ধাতু থেকে এসেছে। ‘বিদ্‌’ ধাতুর অর্থ হল ‘জ্ঞান’।

(ii) ব্যাপক অর্থে শিক্ষার একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ব্যাপক অর্থে শিক্ষার দুটি বৈশিষ্ট্য হল- (১) শিক্ষা হল সহজাত সম্ভাবনাগুলির পূর্ণ বিকাশ; (২) শিক্ষা হলো অভিযোজন।

অথবা,

শিক্ষার উপাদান কয়টি ও কী কী ?

উত্তরঃ শিক্ষার উপাদান চারটি, সেগুলি হল- শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষালয় এবং পাঠক্রম।

(iii) পাঠক্রম রচনার যে-কোনো একটি নীতির উল্লেখ করো।

উত্তরঃ নমনীয়তার নীতি: পাঠক্রমকে নমনীয় করে তুলতে হবে। প্রয়োজন অনুসারে পাঠক্রমে যাতে পরিবর্তন আনা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

অথবা,

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি কাকে বলে ?

উত্তরঃ ‘সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি কথাটির মধ্য দিয়ে উন্নত ও বৈচিত্র্যময় এমন সব কাজকে বোঝানো হয় যা বিদ্যালয়ের চার দেয়ালের মধ্যেকার পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত নয়, অথচ শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়। এই কার্যাবলি শিক্ষার্থীর চরিত্রগঠনে অপরিহার্য, সর্বোপরি তাকে সামাজিক দিক থেকে সচেতন ও যোগ্য করে৷

(iv) নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার একটি ত্রুটি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা হল – (১) শিক্ষার্থীর চাহিদাপূরণ – সম্ভব হয় না। (২) ‘সকলের জন্য শিক্ষা’-র ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না।

অথবা,

দূরাগত শিক্ষা বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ যে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না গিয়ে শিক্ষকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াই ডাকযোগে বা অন্য কোনো মাধ্যমের সহায়তায় শিক্ষালাভ করে, তাকে দূরাগত শিক্ষা বলে।

(v) প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা বলতে কী বোঝো ?

উত্তরঃ যে শিক্ষা বিদ্যালয়ের বা অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ না হয়েও কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আংশিক নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাকে বলে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা।

3. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) : 8×2=16

(i) শিক্ষার লক্ষ্যের প্রয়োজনীয়তা কী ? ‘শিক্ষা হল একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া’– বিষয়টি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ

শিক্ষার লক্ষ্যের প্রয়োজনীয়তাঃ (Determination of Aims of Education)
নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া কোন কর্মের সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়, তাই শিক্ষার ক্ষেত্রেও সঠিক উদ্দেশ্য স্থির করার প্রয়োজন আছে। শিক্ষা একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। সমস্ত বৌদ্ধিক কাজের যেমন একটি বিশেষ লক্ষ্য থাকে তেমনি শিক্ষারও একটি বিশেষ লক্ষ্য থাকা বাঞ্ছনীয়। যেসব কারণে শিক্ষার লক্ষ্য সমূহের বা উদ্দেশ্য সমূহের প্রয়োজনীয়তা আছে, তা হলো—

(১) শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষামূলক কর্মসম্পাদনের প্রেষণা বৃদ্ধি করে।

(২) শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা অর্থবহ ও উদ্দেশ্যমুখী করে তোলে।

(৩) শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার পাঠক্রম প্রণয়নে সাহায্য করে।

(৪) শিক্ষার অগ্রগতি পরিমাপ করতে এবং সাফল্যের পরিমাপ করতে সচেতন করে।

(৫) শিক্ষামূলক কর্মসম্পাদনের সঠিক পথ নির্দেশ করে সময় ও শ্রম সাশ্রয় করে।

(৬) শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে।

(৭) শিক্ষা পরিকল্পনার সার্থক রূপায়নের জন্য শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

(৮) শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষা প্রক্রিয়া নিরবিচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

(৯) বিদ্যালয় প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

(১০) প্রতিটি দেশের জাতীয় উন্নয়নের জন্য শিক্ষা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন।

ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, শিক্ষাপ্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হল শিক্ষার উদ্দেশ্য স্থির করা। শিক্ষার্থী কী শিখবে, কতখানি শিখবে, কেন শিখবে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা কী শেখাবেন এইসব বিষয় শিক্ষার উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। কাজেই উপযুক্ত উদ্দেশ্য ছাড়া শিক্ষাপ্রক্রিয়া দিশাহীন নৌকার মতোই লক্ষ্যহীন।

‘শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া’

খুব সহজভাবে বলতে গেলে জীবনব্যাপী শিক্ষা হল “যত দিন বাঁচি ততই শিখি”। জীবনব্যাপী শিক্ষা মনে করে শিক্ষা কেবলমাত্র বাল্যকাল থেকে বয়ঃসন্ধিক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে পা চালিয়ে চলতে গেলে শিক্ষার ব্যাপ্তি হবে সমগ্রজীবন—জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত।

সুতরাং, ব্যাপক অর্থে—শিক্ষা সমাজবদ্ধ মানুষের ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে সমব্যাপী একটি নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক সকল সম্ভাবনার ক্রমবিকাশ যেমন পূর্ণতা লাভ করে তেমনি, ব্যক্তির সামাজিক সম্ভাবনার বিকাশ ঘটিয়ে সমাজ সংরক্ষণ ও তার প্রগতিতে সাহায্য করার ক্ষমতা দান করে।

নিম্নলিখিত যুক্তির ভিত্তিতে শিক্ষাকে একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়ারূপে অভিহিত করা যায়—

(১) ব্যাপক অর্থে শিক্ষাঃ সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা হল চার দেয়ালে আবদ্ধ প্রথাগত শিক্ষা। অন্যদিকে, বৃহত্তর অর্থে শিক্ষা হল জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। এই শিক্ষা আমৃত্যু চলতে থাকে।

(২) শিক্ষা হল অভিযোজনঃ বেঁচে থাকার জন্য সারাজীবন বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে আমাদের অভিযােজন করে বা খাপ খাইয়ে নিয়ে চলতে হয়। এই অভিযােজনের ফলে আমাদের আচরণের পরিবর্তন ঘটে। আর আচরণগত পরিবর্তনকেই শিক্ষা বলে। তাই শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া।

(৩) শিক্ষা হল বিকাশঃ শিক্ষা একটি বিকাশমূলক প্রক্রিয়া। বিকাশ বা গুণগত পরিবর্তন যেমন ব্যক্তির আমৃত্যু চলতে থাকে, তেমনই শিক্ষা প্রক্রিয়াও জীবনব্যাপী চলতে থাকে।

(৪) অভিজ্ঞতা অর্জন হল শিক্ষাঃ প্রতি মুহূর্তে পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করি, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়, এগুলিই হল শিক্ষা। তাই শিক্ষা হল জীবনব্যাপী একটি প্রক্রিয়া।

(ii) গণমাধ্যম বলতে কী বোঝ ? গণমাধ্যম হিসেবে দূরদর্শনের শিক্ষা মূলক ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো। 2+6

উত্তরঃ

গণমাধ্যমঃ একই সময়ে একসাথে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে যেসকল মাধ্যমের সাহায্যে সংযোগ রক্ষা করা যায়, তাদের বলা হয় গণমাধ্যম। অন্যভাবে বললে, মানুষের জানার চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানবসভ্যতা সম্পর্কে নানান তথ্য সরবরাহের জন্য যেসকল মাধ্যম ব্যবহৃত হয়, তাদের গণমাধ্যম বলে।

বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যমগুলি হল— সংবাদপত্র, বেতার, চলচ্চিত্র, দূরদর্শন, ইনটারনেট ইত্যাদি।

গণশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে দূরদর্শনের ভূমিকাঃ

আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার একটি অনন্য অবদান হল দুরদর্শন। এটি সিনেমা বা রেডিয়ো-র থেকে অনেক বেশি জনপ্রিয় জনসংযোগ মাধ্যম। এতে ব্যক্তি একই সাথে দেখতেও পায় এবং শুনতেও পায়। বর্তমানে দূরদর্শনের সম্প্রসারণ আমাদের দেশের দুরদুরান্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে। যদিও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে এটি আমাদের দেশে এখনও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। তবু গণশিক্ষার মাধ্যমে হিসেবে এর ভূমিকা কম নয়। নীচে দূরদর্শনের শিক্ষামূলক ভূমিকাগুলি আলোচনা করা হল—

(১) বাস্তবধর্মী শিক্ষাদানঃ দূরদর্শন হল এমন একটি গণমাধ্যম যেখানে বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।

(২) সর্বজনীন গণমাধ্যমঃ দূরদর্শন অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার এমন একটি মাধ্যম যা সমাজের সব স্তরের শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত মানুষের কাছে গ্রহণযােগ্য। নিরক্ষর জনগণ (যা আমাদের দেশে বহু আছে) দূরদর্শনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি দেখে এবং কথাবার্তা বা আলাপ-আলােচনা শুনে বিভিন্ন বিষয়ে অবহিত এবং আকৃষ্ট হতে পারে।

(৩) দর্শন ও শ্রবণ-নির্ভর মাধ্যমঃ দূরদর্শন হল দর্শন এবং শ্রবণ-নির্ভর মাধ্যম। এই মাধ্যম অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, কারণ এটি একই সঙ্গে মানুষের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দুটি ইন্দ্রিয়কে কার্যকরী করে তােলে। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে এই মাধ্যমের গুরুত্ব অনেক বেশি।

(৪) দ্বিমুখী শিক্ষা মাধ্যমঃ বর্তমানে দূরদর্শনকে শিক্ষার একটি দ্বিমুখী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষে যেমন ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয় না বুঝলে শিক্ষকশিক্ষিকার কাছে জিজ্ঞাসা করে সেই বিষয় জেনে নেয়, তেমনি বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচারকালে শিক্ষার্থীরা টেলিফোনের মাধ্যমে তাদের প্রশ্ন জানাতে পারে।

(৫) নান্দনিক রুচি বিকাশে সহায়তাঃ দূরদর্শন জনগণের মধ্যে নান্দনিক রুচির বিকাশ ঘটায়। দূরদর্শনের বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে মানুষের মধ্যে সুন্দর রুচি গড়ে ওঠে।

(৬) সংস্কৃতির ধারক ও বাহকঃ কোনাে দেশের সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করা ও বাঁচিয়ে রাখায় দূরদর্শনের উল্লেখযােগ্য ভূমিকা রয়েছে। অতীত দিনের বহু সিনেমা, নাটক, গানকে দূরদর্শনে বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা আছে।

(৭) জনমত গঠনঃ বর্তমানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এস এম এস-এ দর্শকের মতামত চায় দূরদর্শন। তাই জনমত গঠনের ক্ষেত্রে দূরদর্শনের অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকরী ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না।

(৮) বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুষ্ঠান প্রচারঃ কেবল নাটক, গান, সিনেমা বা সংবাদ নয়—এখন দূরদর্শন শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের উপযােগী ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে।

(৯) কেবল লাইন-এর সংযােগঃ বর্তমানে দূরদর্শন যন্ত্রের সঙ্গে কেবল লাইন-এর সংযােগ ঘটানাের ফলে বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখার সুযােগ ঘটেছে। সারা বিশ্বের খবরাখবর, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযােগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

(১০) দূরশিক্ষাঃ বর্তমানে দূরশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এই শিক্ষায় দূরদর্শনের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।

(১১) বৃত্তিকালীন শিক্ষাঃ বৃত্তিকালীন শিক্ষার প্রসারে দূরদর্শনের ব্যবহার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

(১২) মানসিক বিকাশে সহায়তাঃ দূরদর্শন জনগণের মানসিক বিকাশে সহায়তা করে যা তাদের বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি।

(১৩) সুষ্ঠু অবকাশ সময় যাপনের মাধ্যমঃ দূরদর্শন সুষ্ঠু এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে অবকাশ সময় যাপনের একটি উপায়। দূরদর্শন আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত।

অথবা,

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কী ? এই শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পরিবারের ভূমিকা মূল্যায়ন করো। 2+6

উত্তরঃ

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সংজ্ঞা (Definition of Informal Education) : পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে সার্থকভাবে মানিয়ে নিতে গিয়ে এবং নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পরিবেশ থেকে কোন শিশুর যে জ্ঞান, দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা অর্জন করে তাই হলো অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা।

সাধারণভাবে বিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের বাইরে কোনরকম পূর্বনির্ধারিত রীতিনীতি বা আচার অনুষ্ঠান বা বাধ্যবাধকতা ছাড়াই শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে যে শিক্ষা লাভ করে তাকে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বলে।

সংজ্ঞা প্রসঙ্গে জে. পি. নায়েক (J. P. Naik) বলেছেন—সমাজ জীবনের অঙ্গ হিসেবে একজন ব্যক্তি যা কিছু শেখে তাই হল অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা। শিক্ষাবিদ কুম্ (Coombs) বলেছেন—অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা হল সেই শিক্ষা প্রক্রিয়া যা সবসময় অনিয়ন্ত্রিত বা আকস্মিকভাবে মানুষের জীবনে কার্যকরী।

উপরিউক্ত আলোচনায় একথা স্পষ্ট, বাস্তব জীবনের সমস্যা প্রত্যক্ষভাবে অনুশীলন করতে গিয়ে যে বাস্তব জ্ঞান, জীবনবিধি ও আচরণ ধারা ব্যক্তি আয়ত্ত করে, তাকেই বলা হয় অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা।

পরিবারের শিক্ষামূলক কার্যাবলিঃ

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে শিশুর শিক্ষায় পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে পরিবারের শিক্ষামূলক কাজগুলি আলােচনা করা হল一

(১) সামাজিক আচরণের শিক্ষাঃ পরিবার শিশুকে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক আচার-আচরণের শিক্ষা দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া করতে করতে শিশু বিভিন্ন আচার-আচরণ শিখে ফেলে।

(২) সংস্কৃতির শিক্ষাঃ পরিবারই শিশুর মধ্যে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। ফলে শিশুর মধ্যে সুস্থ সংস্কৃতির বােধ জাগ্রত হয়।

(৩) সু-অভ্যাস গঠনের শিক্ষাঃ পরিবার শিশুকে বিভিন্ন ধরনের সু-অভ্যাস গড়ে তুলতে শেখায়। ওই সু-অভ্যাসগুলিই পরবর্তীকালে শিশুকে সুনাগরিক হয়ে উঠতে সাহায্য করে।

(৪) প্রাক্ষোভিক বিকাশের শিক্ষাঃ পরিবার শিশুর প্রক্ষোভ-গুলিকে যথাযথভাবে বিকশিত হতে সাহায্য করে। সংযত প্রাক্ষোভিক আচরণের শিক্ষা শিশুর সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রেও সহায়ক হয়।

(৫) জ্ঞানার্জনের শিক্ষাঃ পরিবার শিশুকে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত করে। জ্ঞানার্জনের শিক্ষা তাই প্রকৃতপক্ষে পরিবারেই শুরু হয়।

(৬) ঐতিহ্য সংরক্ষণের শিক্ষাঃ পরিবার শিশুকে সামাজিক ঐতিহ্য সম্পর্কে পরিচিত করে এবং সেই ঐতিহ্য সংরক্ষণের শিক্ষা দেয়।

(৭) বৃত্তিশিক্ষাঃ শিশুকে বৃত্তিশিক্ষা দেওয়ায় পরিবার বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আজও বহু পরিবারে ছেলেরা বাবার বৃত্তি এবং মেয়েরা মায়ের বৃত্তি গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

(৮) আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষাঃ পরিবার শিশুর মধ্যে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটায়। শিশু নিজের অজান্তেই তার পরিবারের আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করে থাকে।

(৯) মূল্যবোধের শিক্ষাঃ শিশুর মধ্যে মূল্যবােধ গড়ে তােলার ক্ষেত্রে তার পরিবার বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পারিবারিক জীবনের বিভিন্ন কাজ ও আচার-আচরণের মধ্য দিয়েই শিশুর মধ্যে মূল্যবােধ গড়ে ওঠে।

ওপরের আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, শিশুর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক বােধ গঠনে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরিবার সঠিকভাবে এই কাজগুলি করতে না পারলে, শিশুর যথাযথ বিকাশ ব্যাহত হয়।

Group-B (Mark – 30)

4. নিম্নলিখিত বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলি থেকে সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করে লেখো : 1×9=9

(i) আধুনিক মনোবিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তু হল—
(a) আত্মা (b) মন (c) আচরণ (d) চেতনা

উত্তরঃ (c) আচরণ।

(ii) “শিক্ষা মনোবিজ্ঞান হল আচরণের বিজ্ঞান”-এটির প্রবক্তা হলেন—
(a) ওয়াটসন (c) জেমস (b) ম্যাকডুগাল (d) রুশো

উত্তরঃ (a) ওয়াটসন।

(iii) জীবন বিকাশের যে স্তরটিকে ‘ঝড়-ঝঞ্ঝার কাল’ বলা হয় তা হল—
(a) শৈশব (b) বাল্য (c) কৈশোর (d) প্রাপ্তবয়স্ক

উত্তরঃ (c) কৈশোর।

(iv) কিন্ডারগার্টেনের প্রবর্তক হলেন—
(a) মন্তেসরি (c) মাদাম কুরি (b) ফ্রয়েবেল (d) ডিউই

উত্তরঃ (b) ফ্রয়েবেল।

(v) শৈশবে শিশুর শিক্ষালয় হল—
(a) প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়
(b) প্রাথমিক বিদ্যালয়
(c) পরিবারে
(d) মাধ্যমিক বিদ্যালয়

উত্তরঃ (a) প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়।

(vi) শিক্ষার ক্ষেত্রে ডাইড্যাকটিক অ্যাপারেটাসের স্রষ্টা হলেন—
(a) ফ্রয়েবেল। (b) মন্তেসরি
(c) হার্বাট স্পেনসার। (d) ডিউই

উত্তরঃ (b) মন্তেসরি।

(vii) ________ জন্য মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না।
(a) পরিণমনের (c) শিখনের
(b) পুনরুদ্রেকের (d) প্রত্যাভিজ্ঞতার

উত্তরঃ (a) পরিণমনের।

(viii) সংবেদন যা থেকে সৃষ্টি হয় তা হল—
(a) উদ্দীপক। (c) আচরণ (b) প্রতিক্রিয়া (d) চাহিদা

উত্তরঃ (a) উদ্দীপক।

(ix) বুদ্ধি একপ্রকার _________ প্রক্রিয়া।
(a) জৈবিক। (b) বৌদ্ধিক (c) সামাজিক (d) রাজনৈতিক

উত্তরঃ (a) জৈবিক।

5. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্ৰশ্ন গুলি লক্ষণীয়) : 1x 5 = 5

(i) ‘Psychology’ কথাটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী ?

উত্তরঃ ‘Psychology’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ “Psyche’ এবং logy’ থেকে। ‘Psyche’ শব্দের অর্থ ‘আত্মা” এবং logy’ শব্দের অর্থ ‘বিজ্ঞান’ বা ‘শাস্ত্ৰ’। অর্থাৎ ‘Psychology’ শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ হল ‘আত্মার বিজ্ঞান’।

অথবা,

শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ শিক্ষা মনোবিজ্ঞান হল সেই বিজ্ঞান যা ব্যক্তির শিক্ষা কালীন আচরণ নিয়ে আলোচনা করে এবং সেই আচরণের উন্নতি সাধনে সচেষ্ট হয়।

(ii) বিকাশ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ বিকাশ হল ক্রম-উন্নয়নশীল সামগ্রিক গুণগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়া।

অথবা,

বৌদ্ধিক বিকাশ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ বৌদ্ধিক বিকাশ বলতে শিশুর সেই ধরনের বিকাশকে বোঝানো হয়, যার সাহায্যে সে জীবনের নতুন সমস্যা বা পরিস্থিতির সঙ্গে সার্থকভাবে মানিয়ে নেওয়ার সাধারণ মানসিক ক্ষমতা অর্জন করে।

(iii) কৈশোরের দুটি সামাজিক চাহিদার উল্লেখ করো ।

উত্তরঃ [1] বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে মেলামেশার চাহিদা, [2] ক্লাব বা সংঘ গঠনের চাহিদা।

অথবা,

‘কাসা ডি বম্বিনি’ বা ‘কাসা দাই বামবিনি’ কী ?

উত্তরঃ মাদাম মন্তেসরি প্রবর্তিত শিক্ষানীতিকে বাস্তবে রূপদানের জন্য একটি বিশেষ ধরনের বিদ্যালয় হল ‘কাসা দাই বামবিনি’ । ‘কাসা দাই বামবিনি’ কথাটির অর্থ হল ‘শিশুদের জন্য গৃহ’ ।

(iv) পরিণমনের একটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ পরিণমনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল – [1] পরিণমন জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া নয়: পরিণমন জীবনের একটি বিশেষ পর্যায়ে শুরু হয় এবং একটি বিশেষ পর্যায়ে শেষ হয়। [2] পরিণমন প্রশিক্ষণ নির্ভর নয়: পরিণমন ঘটার জন্য কোনো প্রকার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে।

অথবা,

শিখন ও পরিণমনের একটি পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ শিখন ও পরিণমনের মধ্যে পার্থক্য হল-

[1] শিখন: শিখন অনুশীলনসাপেক্ষ প্রক্রিয়া। পরিণমন: পরিণমন অনুশীলনসাপেক্ষ নয় ৷

[2] শিখন: শিখন একটি কৃত্রিম প্রক্রিয়া। পরিণমন: পরিণমন একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া।

(v) সংবেদন বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ যেসব বিচ্ছিন্ন এবং নিরপেক্ষ স্নায়বিক অভিজ্ঞতা তাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে আমাদের দেহে একক বস্তুধর্মী অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করে, তাকে বলে সংবেদন।

অথবা,

প্রত্যক্ষনের যে-কোনো একটি স্তরের উল্লেখ করো।

উত্তরঃ প্রত্যক্ষনের প্রথম স্তরের নাম পৃথককরণ।

6. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়)। 8×2=16

(i) শৈশব বলতে কী বোঝ ? শৈশবের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো। 3+5

উত্তরঃ

শৈশবঃ জন্মের পর থেকে কৈশোর বা বয়ঃসন্ধি কালের পূর্বের সময়টাকে শৈশব বলে। পিয়াজেটস্ থিওরী অব্ কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট (Piaget’s theory of cognitive development) অনুসারে শৈশব কালের দুটি পর্ব রয়েছে। একটি হল প্রাক্ কর্মক্ষম পর্ব এবং অন্যটি হল কর্মক্ষম পর্ব। ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজি অনুসারে শৈশবকালকে হাঁটা শিক্ষার সময়, খেলার সময়, বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় এবং বয়ঃসন্ধিকাল সময়ে ভাগ করা হয়েছে। দার্শনিক জন লক ( John Locke ) এর শিক্ষা বিষয়ক মত্ববাদ অনুসারে শৈশবকালের ধারণাটি ১৭শ থেকে ১৮শ শতাব্দিতে উদ্ভব হয়। এর আগে শৈশবকালকে বড়দের অসম্পূর্ণ সংস্করণ হিসাবে দেখা হত।

শৈশবের বয়স পরিসীমাঃ শৈশবকালের নিদ্দিষ্ট কোন বয়স পরিসীমা নেই। সাধারণত জন্মের পর থেকে শৈশবকাল শুরু হয় এবং বয়ঃসন্ধিকালে শেষ হয়। বিশ্বের অনেক দেশে শৈশবকালের একটি বয়স সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে যা অতিক্রম করার পর তারা পূর্নবয়স্ক হিসাবে বিবেচিত হয়। এই বয়স সীমা বিভিন্ন দেশভেদে ১৫-২১ বছরের মধ্যে কিন্তু অধিকাংশ দেশে তা ১৮ বছর।

শৈশবের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যঃ

জন্মলাভের পর থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত কালকে বলা হয় শৈশব। শিক্ষার দিক দিয়ে এটি হল প্রাক্ বিদ্যালয় স্তর। এই স্তরে শিশুর বিকাশের হার খুব বেশি হয়। এই সময় শিশুর দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক এবং সামাজিক বিকাশ ঘটে।

(১) দৈহিক বিকাশঃ শৈশবে শিশুদের দৈহিক বিকাশ খুব দ্রুতগতিতে ঘটে। পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে জন্মাবার সময় শিশুর উচ্চতা থাকে 17 ইঞ্চি থেকে 21 ইঞ্চি। 2 বছরে তার উচ্চতা হয় 32 ইঞ্চি থেকে 34 ইঞ্চি। জন্মাবার সময় যা উচ্চতা থাকে 5 বছরের উচ্চতা তার দ্বিগুণ হয়। শিশু ছয়মাস বয়সে বসতে শেখে। দশমাস বয়সে হামাগুড়ি দেয়। বারােমাস বয়সে নিজে নিজে দাঁড়াতে পারে এবং প্রায় আঠারাে মাস বয়সে হাঁটতে পারে। 3 বছরে নিজের ভারসাম্য বজায় রেখে দৌড়াতে পারে।

(২) মানসিক বিকাশঃ দেহের পাশাপাশি শৈশবে শিশুর বিভিন্ন ধরনের মানসিক পরিবর্তনও ঘটে। এই সময় শিশুদের ভাষার বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক বছরে শিশু তিন থেকে চারটি শব্দ বলতে পারে। দুবছরে শিশু মােটামুটি 250টি এবং পাঁচ বছরে 2072টি শব্দ শেখে। তা ছাড়া এই বয়সে শিশুর মধ্যে স্মৃতি, কৌতূহল, কল্পনাশক্তির বিকাশ লক্ষ করা যায়। মনােযােগের পরিসর বৃদ্ধি পায়। মূর্ত বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করতে পারে এবং কারণ দর্শাতে পারে।

(৩) প্রাক্ষোভিক বিকাশঃ শিশুর প্রাক্ষোভিক বিকাশ তিনমাস বয়সে শুরু হয়। ওই সময় শিশু আনন্দ এবং অস্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করতে শেখে। দেখা গেছে, ছয় মাস বয়সে আনন্দের প্রক্ষোভটি উচ্ছ্বাসে এবং অস্বাচ্ছন্দ্য প্রক্ষোভটি বিরক্তিতে পরিণত হয়। শিশুর প্রক্ষোভের তীব্রতা খুব বেশি, স্থায়িত্ব খুব কম। প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে শিশুরা অক্ষম।

(৪) সামাজিক বিকাশঃ জন্মাবার পর শিশু সম্পূর্ণ আত্মকেন্দ্রিক থাকে। এক মাসের শিশুরা কাছাকাছি থাকা বয়স্কদের সম্পর্কে সচেতন হয়। দুমাস বয়সে হাসির দ্বারা প্রতিক্রিয়া করে। ‘মা’কে চিনতে পারে। তিন মাস বয়সে দেখা যায়, শিশুর সঙ্গে কেউ কথা বললে শিশু কান্না থামায় আর চলে গেলে কাঁদে। পাঁচ-ছয় মাসে আদর করা ও বকাবকির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে। নতুন লােককে চিনতে পারে। তার কাছে যেতে চায় না। আট-নয় মাসে বয়স্কদের কথা অনুকরণ করে। ‘না শব্দের অর্থ বুঝতে পারে। দেড় বছর বয়সে একটা নেতিবাচক মনােভাব দেখা যায়। এই বয়সে সমবয়সিদের থেকে বয়স্কদের বেশি পছন্দ করে। সমবয়সিদের সঙ্গে বড়াে একটা মেশে না। দুবছর বয়স থেকেই সত্যিকারের সমাজচেতনা দেখা যায়। এই সময় থেকেই শিশুদের মধ্যে সহযােগিতা এবং সহানুভূতির গুণগুলি বিকশিত হয়।

(ii) বাল্যকাল কোন্ সময়কালকে বোঝায় ? বাল্যকালের দুটি করে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক চাহিদার উল্লেখ করো। 2+6

উত্তরঃ

বাল্যকাল (Childhood) :

শৈশবের পরবর্তী কাল হল বাল্যকাল। সাধারণত 6 বছর থেকে 12 বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকে বাল্যকাল বলা হয়। মনোবিজ্ঞানীরা বাল্যকালকে আবার দু ভাগে ভাগ করেছেন- প্রারম্ভিক বাল্যকাল ও প্রান্তীয় বাল্যকাল।

প্রারম্ভিক বাল্যকালঃ 6 থেকে 8 বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় প্রারম্ভিক বাল্যকাল। প্রারম্ভিক বাল্যকাল হল বাল্যকালের প্রথম এবং শৈশবের পরবর্তী স্তর। তাই মনোবিজ্ঞানীরা বলেন এই সময় শিশুর বিকাশগত বৈশিষ্ট্য গুলি খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করা যায়। এই সময় শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালনমূলক কাজকর্মের উন্নতি ঘটে। ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শিশু সহজভাবে পরিবার ও বাইরের জগতের সঙ্গে মিশতে পারে।

প্রান্তীয় বাল্যকালঃ 8 থেকে 12 বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় প্রান্তীয় বাল্যকাল। এই সময় শিশুর দেহের অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য গুলি পূর্ণতা লাভ করে। শিশু এমন কাজ করে যার মধ্যে সাহসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। সামগ্রিকভাবে বলা যায় এই স্তরের বিকাশ অপেক্ষাকৃত পরিণত।

বাল্যকালের চাহিদা (Needs of Childhood) :

বাল্যকালে শিশুর চাহিদাগুলিকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়—
দৈহিক চাহিদা, মনোবৈজ্ঞানিক চাহিদা ও সামাজিক চাহিদা।

(১) দৈহিক চাহিদা (Physical Need ) :

বাল্যকালে শিশুর দৈহিক বিকাশ শৈশবকালে তুলনায় কম হলেও কতগুলি দৈহিক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। সেগুলি হল–

(ক) খাদ্যের চাহিদা (Need for food ) :

দেহের বিকাশের জন্য এই স্তরে শিশুদের মধ্যে খাদ্যের চাহিদা বেশি থাকলেও শিশুরা খাদ্য ও অখাদ্য বস্তুর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। তারা প্রয়োজনমতো ও পছন্দমত খাদ্যবস্তু নির্বাচন করতে পারে।

(খ) চলনের চাহিদা (Need for movement) :

এই বয়সের শিশুদের মধ্যে পেশী সঞ্চালনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়- দৌড়ানো, লাফানো ইত্যাদির কাজের মধ্যদিয়ে শিশুদের মধ্যে পেশী সঞ্চালনমূলক কাজে ক্ষমতা লাভ করে।

(গ) পুনরাবৃত্তির চাহিদা (Need for repetition ) :

এই স্তরের প্রথমদিকে শিশুদের মধ্যে পুনরাবৃত্তি চাহিদা খুব কমই থাকলেও শেষের দিকে তাদের এই চাহিদার আবার বৃদ্ধি পায়। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এই বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে দৈহিক পুনরাবৃত্তির তুলনায় মানসিক পুনরাবৃত্তি বেশি দেখা যায়। যেমন- বিভিন্ন জ্ঞানমূলক বিষয় পাঠে পুনরাবৃত্তি, শিশুদের বৌদ্ধিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

(২) মানসিক চাহিদা ( Psychological Need ) – এই স্তরে শিশুর মানসিক চাহিদা গুলো অনেকটা বাস্তব জীবনমুখী। শিশুদের মানসিক চাহিদা গুলি হল—

(ক) নিরাপত্তার চাহিদা (Need for security) :

এই সময় শিশুদের মধ্যে প্রবলভাবে নিরাপত্তা চাহিদা দেখা যায়। বাল্যকালে শিশু পরিবার ও পরিবারের বাইরে অন্যান্য ব্যাক্তিদের থেকে দৈহিক ও মানসিক নিরাপত্তা আশা করে। নিরাপদ আশ্রয় এবং সকলের সমর্থন পেতে চায়।

(খ) অনুকরণের চাহিদা (Need for imitation) :

এই সময় শিশু কিন্তু সম্পূর্ণ, সকলকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে না। শিশু যাদের পছন্দ করে বা সম্মানের চোখে দেখে, বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের অনুসরণ করার চেষ্টা করে। যেমন পিতা-মাতা, শিক্ষ-শিক্ষিকা, সমাজের কোনো সম্মানীয় ব্যক্তিকে অনুসরণের মাধ্যমে শিশুরা পরোক্ষভাবে তাদের ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্ত করে।

(গ) অনুসন্ধানের চাহিদা (Need for exploration ) :

এই স্তরে শিশুদের মধ্যে কৌতূহলের চাহিদা খুব বেশি মাত্রায় থাকে। কৌতুহলের বশে সমাজজীবনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ও ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চায়, সবকিছুকে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখতে চায়। পরিবেশের না জানা, না দেখা বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে চায়। অনুসন্ধানের এই তাড়নাতেই শিশু নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে করে।

(৩) সামাজিক চাহিদা ( social need ) –
সামাজিক বিকাশের কারণে এই সময় শিশুদের মধ্যে উন্নত ধরনের সামাজিক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। সেগুলি হল—

(ক) সহযোগিতার চাহিদা ( Need for Co-operation ) :

বাল্যকালে শিশুদের মধ্যে সহযোগিতার চাহিদা দেখা যায়। এই সময় শিশুদের মধ্যে পরস্পর সহযোগিতা করার মনোভাব দেখা যায়, তারা একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে চায়।

(খ) সমবেদনার চাহিদা (Need for Social approval ) :

এই বয়সে শিশুদের মধ্যে সমবেদনা মূলক মনোভাব দেখা যায়। অন্য কেউ সমস্যায় পড়লে তার সমস্যা দূর করার জন্য সমস্ত রকম চেষ্টা করে।

(গ) প্রতিদ্বন্দিতার চাহিদা (Need for Rivalry) :

শৈশবের তুলনায় বাল্যকালে প্রতিদ্বন্দিতার চাহিদা অনেকটাই কমে যায়। তবে নিজের সফলতা আনার জন্য প্রয়োজনবোধে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।

অথবা,

প্রত্যক্ষণ কাকে বলে ? শিক্ষাক্ষেত্রে প্রত্যক্ষণের গুরুত্ব আলোচনা করো। 2+6

উত্তরঃ সংবেদন হলো বহির্জগৎ বিষয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একক অভিজ্ঞতা। আর এ অভিজ্ঞতার সমষ্টিই হলো প্রত্যক্ষণ।

• প্রত্যক্ষণ হলো সংবেদনের বিশ্লেষণ, সমন্বয়সাধন ও একীভূতকরণ।

• প্রত্যক্ষণ হলো সংবেদনের অর্থবোধ৷

• প্রত্যক্ষণ হলো প্রকৃত জ্ঞান।

• প্রত্যক্ষণ অপেক্ষাকৃত সক্রিয় প্রক্রিয়া।

• প্রত্যক্ষণ বস্তুর সামগ্রিক পরিচয়।

• প্রত্যক্ষণ ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে।

• প্রত্যক্ষণ নির্ভরশীল শিক্ষণ ও অতীত অভিজ্ঞতার উপর।

শিক্ষায় প্রত্যক্ষণের গুরুত্বঃ

আধুনিক শিক্ষায় প্রত্যক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম। নীচে প্রত্যক্ষণের কয়েকটি শিক্ষামূলক গুরুত্ব সংক্ষেপে আলােচনা করা হল—

(১) শিখন ও প্রত্যক্ষণের পারস্পরিক প্রভাবঃ শিখনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষণের মূল্য অপরিসীম। প্রত্যক্ষণের সময় যে অতীত। অভিজ্ঞতা আমাদের মনের মধ্যে কাজ করে তার পুরােটাই শিখন থেকে আসে। কারও মতে শিখন এবং প্রত্যক্ষ পরস্পরকে সহায়তা করে এবং পরস্পরকে প্রভাবিত করে।

(২) অনুকরণের ক্ষেত্রে আবশ্যকঃ শিখনের ক্ষেত্রে অনুকরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে প্রত্যক্ষণের ওপর নির্ভর করতে হয়, কারণ শিক্ষার্থী প্রাথমিক অবস্থায় শিক্ষকদের বা বয়স্কদের প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে অনুকরণ করে।

(৩) দক্ষতা অর্জনে সহায়কঃ কোনাে বিশেষ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষণ শিক্ষার্থীকে যথেষ্ট সাহায্য করে। যে-কোনাে কাজের উৎকর্ষ নির্ভর করে দক্ষতার ওপর। এই দক্ষতা অর্জন উপযুক্ত নিখুঁত প্রত্যক্ষণের উপর নির্ভর করে।

(৪) সমস্যা সমাধানে সহায়কঃ সমস্যা সমাধান একটি গুরুত্বপূর্ণ শিখন। সমস্যাপূর্ণ পরিস্থিতিতে কী ধরনের ঘটনাক্রম বা উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, সেইসব বিষয় ভালােভাবে প্রত্যক্ষণ না করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব হয় না।

(৫) পাঠ প্রস্তুতিতে সহায়কঃ প্রতিদিনকার পাঠ প্রস্তুত করার সময় শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বিষয়বস্তুকে সঠিক প্রত্যক্ষণের প্রয়ােজন হয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রত্যক্ষণ করার উপযুক্ত ক্ষমতা অর্জন করা উচিত।

(৬) জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগে প্রয়োজনীয়ঃ অর্জিত জ্ঞান যদি সঠিক ক্ষেত্রে সঠিকভাবে প্রয়ােগ করা না যায়, তাহলে সেই জ্ঞান মূল্যহীন। এই কারণে কোনাে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জনের সময় ওই জ্ঞানের বা অভিজ্ঞতার সামগ্রিক রূপটি প্রত্যক্ষ করা প্রয়ােজন। অন্যথায় ওই জ্ঞান প্রয়ােগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে অসুবিধায় পড়তে হয়।

ওপরের আলােচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, শিক্ষার উদ্দেশ্যকে সফল করতে গেলে প্রত্যক্ষণ অপরিহার্য।

Group – C (Mark – 20)

7. নিম্নলিখিত বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলি থেকে সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করে লেখো : 1×6 = 6

(i) প্রাচীন ভারতে কোন্ স্থানটি ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল ?
(a) নালন্দা (c) তক্ষশিলা (b) অযোধ্যা (d) জৌনপুর

উত্তরঃ (c) তক্ষশিলা

(ii) ‘প্রব্রজ্যা অনুষ্ঠানটি পালিত হত—
(a) বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থায়
(c) ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থায়
(b) বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায়
(d) ভারতে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থায়

উত্তরঃ (b) বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায়

(iii) উডের ডেসপ্যাচ প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল—
(a) 1813 খ্রিস্টাব্দে। (c) 1854 খ্রিস্টাব্দে
(b) 1823 খ্রিস্টাব্দে। (d) 1882 খ্রিস্টাব্দে

উত্তরঃ (c) 1854 খ্রিস্টাব্দে

(iv) স্যাডলার কমিশনের অপর নাম হল—
(a) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন
(c) মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন
(b) ভারতীয় শিক্ষা কমিশন
(d) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন

উত্তরঃ (a) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

(v) ‘নঈ তালিম’ শিক্ষার প্রবর্তন করেন—
(a) বিবেকানন্দ (c) গান্ধিজি
(b) রামমোহন (d) বিদ্যাসাগর

উত্তরঃ (c) গান্ধিজি

(vi) ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থায় মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হল—
(a) টোল (b) মাদ্রাসা (c) মক্তব (d) বিহার

উত্তরঃ (b) মাদ্রাসা

8. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্ৰশ্ন গুলি লক্ষণীয়)। 1 x 6 = 6

(i) ব্রাহ্মণ্য যুগে কোন্ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিদ্যাগ্রহণ শুরু হত ?

উত্তরঃ ব্রাহ্মণ্য যুগে উপনয়ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিদ্যাগ্রহণ শুরু হত।

অথবা,

চতুরাশ্রম প্ৰথা কী ?

উত্তরঃ চতুরাশ্রম বলতে ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস – জীবনের এই চারটি অধ্যায়কে বোঝায়।

(ii) অপরাবিদ্যা কী ?

উত্তরঃ চতুর্বেদ, শিক্ষা কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ, জ্যোতিষ ও ওই শ্রেণির সব বিদ্যাই অপরাবিদ্যা।

(iii) ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে একটি করে পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে একটি পার্থক্য হল – ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ছিল গুরুকুলকেন্দ্রিক, বৌদ্ধ শিক্ষা ছিল বিহার বা সংঘকেন্দ্রিক।

অথবা,

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন কত সালে গঠিত হয় ?

উত্তরঃ 1917 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের লিডস্ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মাইকেল স্যাডলার-কে সভাপতি করে ‘কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন’ গঠন করা হয়।

(iv) CABE-এর পুরো নাম কী ?

উত্তরঃ CABE-এর পুরো নাম হল – Central Advisory Board Of Education.

অথবা,

‘নর্মাল স্কুল’ কে প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তরঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নর্মাল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন।

(v) মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনের বর্তমান নাম কী ?

উত্তরঃ মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনের বর্তমান নাম হল বিদ্যাসাগর কলেজ।

অথবা,

বুনিয়াদি শিক্ষার একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বুনিয়াদি শিক্ষার দুটি বৈশিষ্ট্য হল– (১) এই শিক্ষা অবৈতনিক, বাধ্যতামূলক এবং উৎপাদনমুখী। (২) এই শিক্ষার মাধ্যম হল মাতৃভাষা

9. নিম্নলিখিত যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নটি লক্ষণীয়)। 8×1=8

(i) প্রাথমিক শিক্ষা ও স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো। 4+4

উত্তরঃ

প্রাথমিক শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের অবদানঃ

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান অবিস্মরণীয়। বিদ্যাসাগরের কালে প্রাথমিক শিক্ষা ছিল অত্যন্ত অবহেলিত। তিনি দেশজ বিদ্যালয়গুলির শােচনীয় অবস্থা উপলব্ধি করে, সেগুলির সংস্কারের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

বিদ্যাসাগর প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশের জন্য যেসব সুপারিশ করেছিলেন, তার মূল বিষয়গুলি হল—

(১) শিক্ষার মাধ্যমঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষাকে ব্যবহার করার সপক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন।

(২) পাঠ্যবিষয়ঃ প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে পড়াশােনার জন্য বিদ্যাসাগর সাধারণ গাণিতিক হিসাব, ভূগোল, ইতিহাস, জীবনবৃত্তান্ত, জ্যামিতি, প্রকৃতিবিজ্ঞান, নীতিবিজ্ঞান, শারীরতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, প্রারম্ভিক লেখাপড়া ইত্যাদি বিষয়ের উল্লেখ করেন।

(৩) মডেল স্কুল স্থাপনঃ বিদ্যাসাগর প্রত্যেকটি জেলায় তিন থেকে পাঁচ শ্রেণিযুক্ত মডেল স্কুল স্থাপনের সুপারিশ করেন। তিনি ওই সমস্ত বিদ্যালয়ে কমপক্ষে একজন প্রধানশিক্ষক এবং দুজন সহকারী শিক্ষক নিযুক্ত করার কথা বলেন।

(৪) পরিদর্শন ব্যবস্থাঃ বিদ্যালয়গুলির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য দুটি জেলা প্রতি একজন করে পরিদর্শক নিয়ােগ করার সুপারিশ করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ অবৈতনিকভাবে পরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন।

(৫) প্রশাসনিক ব্যবস্থাঃ বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের‌ ক্ষেত্রে যাতে সুবিধা হয় সেজন্য বিদ্যাসাগর সার্কেল প্রথা চালু করার সুপারিশ করেন।

(৬) শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থাঃ বিদ্যাসাগর লক্ষ করেছিলেন, দেশে ভালাে শিক্ষকের খুবই অভাব। সেই কারণে নর্মাল স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে তিনি শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন।

বিদ্যাসাগরের এই সমস্ত সুপারিশ বড়ােলাট লর্ড ডালহৌসি এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নর মি. হ্যালিডে অনুমােদন করেন। বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া ও মেদিনীপুর জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি থেকে কিছুটা দূরে মডেল স্কুলগুলি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিদ্যাসাগরের চেষ্টায় বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া এবং মেদিনীপুর জেলার প্রত্যেকটিতে 5টি করে মােট 20টি মডেল স্কুল খােলা হয়।

নারী শিক্ষার প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদানঃ

ভূমিকাঃ বাংলাদেশে নারী শিক্ষার বিস্তারে যে সকল মনীষী নিরলস প্রয়াস চালিয়েছিলেন সমাজসংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাদের মধ্যে স্মরণীয়। ইতিপূর্বে খ্রিস্টান মিশনারি ও কিছু উদার ইংরেজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে নারী শিক্ষার সূচনা হলেও বিদ্যাসাগরই ছিলেন বাংলা তথা ভারতের নারী শিক্ষা বিস্তারের পথিকৃৎ।

উদ্দেশ্যঃ নবজাগরণের প্রতিমূর্তি এই সংস্কৃত পণ্ডিত উপলব্ধি করেছিলেন একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভারতীয় নারীর মুক্তিলাভ সম্ভব। নারীর উন্নতি ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ঃ ব্রিটিশ সরকারের আইন সচিব ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন 1849 খ্রিস্টাব্দে ‘হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলে বিদ্যাসাগর তাকে সাহায্য করেন। এটি ছিল ভারতের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। তিনি ছিলেন এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক। বর্তমানে এটি ‘বেথুন স্কুল’ নামে পরিচিত।

স্ত্রী-শিক্ষা সম্মিলনী গঠনঃ নারীদের মধ্যে শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তিনি বর্ধমান, হুগলি, মেদিনীপুর প্রভৃতি জেলায় গড়ে তোলেন স্ত্রী-শিক্ষা সম্মিলনী। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিনি নারী শিক্ষার সপক্ষে লেখালেখি শুরু করেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে অভিভাবকদের বুঝিয়ে ছাত্রী সংগ্রহের নিরলস প্রচেষ্টা চালান।

বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনঃ 1854 খ্রিস্টাব্দে উডের নির্দেশনামায় স্ত্রী-শিক্ষা বিস্তারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বাংলার ছোটোলাট স্যার ফ্রেডারিক হ্যালিডে কর্তৃক ঈশ্বরচন্দ্র দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শক নিযুক্ত হন। স্ত্রী-শিক্ষায় সরকারের আগ্রহ দেখে তিনি 1857 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1858 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে মাত্র সাত মাসের মধ্যে নিজ ব্যয়ে নদিয়া, বর্ধমান, হুগলি ও মেদিনীপুর জেলায় 35টি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এগুলিতে প্রায় 1300 ছাত্রী পড়াশুনো করতো। কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন-এর নতুন ডিরেক্টর গর্ডন ইয়ং নতুন স্কুলগুলিকে অর্থ বরাদ্দ করতে অস্বীকার করলে তিনি পরিদর্শক ও সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদে ইস্তফা দেন। তবে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে বিদ্যালয়গুলির জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা আদায় করেন।

মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনঃ বিদ্যাসাগর নিজ উদ্যোগে ও খরচে কলকাতায় ‘মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটি ‘বিদ্যাসাগর কলেজ’ নামে পরিচিত।

ভগবতী বিদ্যালয়ঃ মাতা ভগবতী দেবীর স্মৃতিতে তিনি 1890 খ্রিস্টাব্দে নিজ জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে ভগবতী বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

উপসংহারঃ স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, রামকৃষ্ণের পর, আমি বিদ্যাসাগরকে অনুসরণ করি (After Ramakrishna, I follow Vidyasagar.) নারীশিক্ষায় বিদ্যাসাগরের অবদান ছিল অসামান্য। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “বিধাতা বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্গভূমিকে মানুষ করিবার ভার দিয়াছিলেন”। তিনিই ছিলেন বাংলার নবজাগরণের এক উজ্জ্বল পথিকৃৎ।

(ii) রবীন্দ্রনাথের শিক্ষার লক্ষ্য ও পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো। 3+5

উত্তরঃ

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গিতে শিক্ষার লক্ষ্যঃ

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মানবপ্রেমী। মানুষের মহত্ত্বের প্রতি তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। তাই তাঁর মতে প্রকৃত মানুষ তৈরি করাই হবে শিক্ষার লক্ষ্য। তাঁর চিন্তা, মনন ছিল সর্বজনীন, সর্বত্রব্যাপী। তাঁর শিক্ষার দর্শন ছিল জীবনদর্শন দ্বারা প্রভাবিত। তার মতে শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হল—

(১) বৌদ্ধিক বিকাশঃ মানুষের মধ্যের
অজ্ঞানতা দূর করে শিক্ষা। তিনি পুঁথিনির্ভর শিক্ষা, পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পরিপন্থী ছিলেন। শিক্ষার্থীর সর্বদা থাকবে অবাধ স্বাধীনতা, যা অবশ্যই হবে সুশৃঙ্খল। তার মধ্যে স্বাধীন চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটবে এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি জাগ্রত হবে। তার মতে “শিক্ষা আমাদের মনকে অবুদ্ধির প্রভাব থেকে মুক্ত করতে পারে এবং বুদ্ধিবৃত্তিকে জাগ্রত ও সক্রিয় করে।

(২) শারীরিক বিকাশঃ তিনি শিক্ষার্থীর দৈহিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। ভারতীয় ছাত্ররা পাঠক্রমের বোঝা বইতে বইতে ক্লান্ত। তাঁর মতে ‘আমাদের শিক্ষাকে আমাদের বাহন করিলাম না, শিক্ষাকে আমরা বহন করিয়াই চলিলাম।’ তাই তিনি মুক্ত প্রকৃতির বুকে শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে নৃত্য, গীত, খেলাধুলো, উৎসব প্রভৃতি গ্রহণ করেছেন।

(৩) আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নতিঃ রবীন্দ্রনাথের মতে পরমসত্তা হল সত্য ও সব সৃষ্টির উৎস। আর তাকে উপলদ্ধি করাই হল শিক্ষার উদ্দেশ্য। তাই তার শিক্ষা পরিকল্পনা, আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিক মূল্যবোধের ওপর গুরুত্ব পেয়েছে। সবার কর্ম ও চিন্তা সেই পরমসত্তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলেছেন মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধূলার তলে।

(৪) সামাজিক বন্ধন রচনাঃ তাঁর মতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিকতার বিকাশ ঘটাতে হবে। শিশুকে শেখাতে হবে ভ্রাতৃত্ব বোধ ও সামাজিকতা। তার সেই ভ্রাতৃত্ব হবে বিশ্বজনীনতার ভাষায়—“সব দেশে মোর ঘর আছে।”

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়— রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন এর প্রকৃত লক্ষ্য হল আনন্দ আর ব্যক্তিসত্তাতে মিলন এবং ব্যক্তিসত্তার সাথে চিরস্থায়ী সত্তার মেলবন্ধন।

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গিতে শিক্ষার পদ্ধতি—

রবীন্দ্রনাথ গতানুগতিক শিক্ষাপদ্ধতির সপক্ষে ছিলেন। তার মতে শিক্ষা পদ্ধতি হবে বিজ্ঞানভিত্তিক ও শিশুর জীবনকেন্দ্ৰিক; যেখানে শিশু স্বাধীন।

(১) স্বাধীনভাবে শিক্ষালাভঃ তিনি শিশুর অন্তর্নিহিত শক্তি ও সত্তার প্রতি গভীর আস্থাশীল ছিলেন। তার বিকাশের জন্য প্রয়োজন শিশুর স্বাধীনতা। তাকে কোনো নির্দিষ্ট বিধিনিষেধের মধ্যে আবদ্ধ রাখা চলবে না। শিশু প্রকৃতির মধ্যে মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা অর্জন করবে। সে আনন্দের সাথে সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষাগ্রহণ করবে।

(২) ইন্দ্রিয় সংযম শিক্ষাঃ শিশু গুরুর নিকট ইন্দ্রিয় সংযমের শিক্ষালাভ করবে। তাই শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্য পালন ও ইন্দ্রিয় সংযম-এর রীতি প্রচলিত। ফলে শিশু দেহ ও মনের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।

(৩) সক্রিয়তার শিক্ষাঃ তিনি বিশ্বাস করতেন ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয় সক্রিয়তার মধ্য দিয়ে সহজে আয়ত্ত করা যায়। সেইজন্য তাদের প্রয়োজন হাতেকলমে শিক্ষা অর্থাৎ শিল্প শিক্ষা, উদ্যান পালন, ফসল ফলানো ইত্যাদি। এ ছাড়া ভ্রমণের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা লাভ।

(৪) পারস্পরিক নিবিড়তার মধ্য দিয়ে শিক্ষালাভঃ শিক্ষার্থী শুধু পাঠ্যপুস্তকের ভাষার সাহায্যে শিক্ষা সহজে অর্জন করতে পারে না। সে অন্যান্য ভাষাভাষী মানুষের সাথে নিবিড় মেলামেশা করবে। ফলে পরস্পরের মধ্যে সংস্কৃতি, ভাষার আদানপ্রদান ঘটবে। ফলে শিক্ষার্থী ভাষামুলক দক্ষতা অর্জন করবে।

উপসংহারঃ রবীন্দ্রনাথ নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষাপদ্ধতির কথা বলেননি। তবুও তাঁর শিক্ষাবিস্তারের মধ্যে বিভিন্ন পদ্ধতির উল্লেখ পাওয়া যায়। যা আধুনিক যুগের সাপেক্ষে যুগোপযোগী ও সৃজনশীলতার ছোঁয়ায় ভরা।

Leave a Reply