সপ্তম শ্রেণি ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর (তৃতীয় অধ্যায়) ভারতের সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কয়েকটি ধারা | Class 7 History Questions Answers Chapter-3 WBBSE

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

সপ্তম শ্রেণি ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর (তৃতীয় অধ্যায়) ভারতের সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কয়েকটি ধারা | Class 7 History Questions Answers Chapter-3 WBBSE

1. সপ্তম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

2. সপ্তম শ্রেণির ইংরেজি সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

3. সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

4. সপ্তম শ্রেণির ভূগোল সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

5. সপ্তম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন Click Here

পাঠ্য বইয়ের অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর | ভেবে দেখো খুঁজে দেখো প্রশ্ন উত্তর সপ্তম শ্রেণি ইতিহাস | ভারতের সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কয়েকটি ধারা : খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক | Class 7 History Questions Answers Chapter-3 WBBSE

দু-এক কথায় উত্তর দাও : পূর্ণমান (১)

১. নীচের নামগুলির মধ্যে কোনটি বাকিগুলির সঙ্গে মিলছে না তার তলায় দাগ দাও:

(ক) নাড়ু, চোল, উর, নগরম।

উত্তরঃ চোল।

(খ) ওদন্তপুরী, বিক্রমশীল, নালন্দা, জগদ্দল, লখনৌতি।

উত্তরঃ লখনৌতি।

(গ) জয়দেব, ধীমান, বীটপাল, সন্ধ্যাকর নন্দী, চক্রপাণি দত্ত।

উত্তরঃ জয়দেব।

(ঘ) লুইপাদ, অশ্বঘোষ, সরহপাদ, কাহ্নপাদ।

উত্তরঃ অশ্বঘোষ।

২. নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে তার নীচের কোন্ ব্যাখ্যাটি তোমার সবচেয়ে মানানসই বলে মনে হয় ?

(ক) বিবৃতি: বাংলার অর্থনীতি পাল-সেন যুগে কৃষিনির্ভর হয়ে পড়েছিল।

ব্যাখ্যা-১ : পাল-সেন যুগে বাংলার মাটি আগের যুগের থেকে বেশি উর্বর হয়ে গিয়েছিল।

ব্যাখ্যা-২: পাল-সেন যুগে ভারতের পশ্চিম দিকের সাগরে আরব বণিকদের দাপট বেড়ে গিয়েছিল।

ব্যাখ্যা-৩: পাল-সেন রাজারা কৃষকদের উৎপন্ন ফসলের ওপর কর দিতেন। উত্তর

উত্তরঃ ব্যাখ্যা-২: পাল-সেন যুগে ভারতের পশ্চিম দিকের সাগরে আরব বণিকদের দাপট বেড়ে গিয়েছিল

(খ) বিবৃতি: দক্ষিণ ভারতে মন্দির ঘিরে লোকালয় ও বসবাস তৈরি হয়েছিল।

ব্যাখ্যা-১ : রাজা ও অভিজাতরা মন্দিরকে নিষ্কর জমি দান করতেন।

ব্যাখ্যা-২ : নদী থেকে খাল কেটে সেচব্যবস্থার উন্নতি করা হয়েছিল।

ব্যাখ্যা-৩ : দক্ষিণ ভারতে রাজারা অনেক মন্দির তৈরি করেছিলেন।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা-১ : রাজা ও অভিজাতরা মন্দিরকে নিষ্কর জমি দান করতেন।

(গ) বিবৃতি: সেনযুগে বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও প্রসার কমে গিয়েছিল।

ব্যাখ্যা-১: সেন রাজারা বৌদ্ধ ছিলেন।

ব্যাখ্যা-২: সেন রাজারা ব্রাহ্মণ ধর্মকেই প্রাধান্য দিতেন।

ব্যাখ্যা-৩ : সমাজে শূদ্রদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা-২ : সেন রাজারা ব্রাহ্মণ্য ধর্মকেই প্রাধান্য দিতেন।

৩. সংক্ষেপে (৩০–৫০ টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও:

(ক) দক্ষিণ ভারতে খ্রিস্টীয় নবম থেকে একাদশ শতকের মধ্যে বাণিজ্যের উন্নতি কেন ঘটেছিল ?

উত্তরঃ দক্ষিণ ভারতে খ্রিস্টীয় নবম থেকে একাদশ শতকের মধ্যে বাণিজ্যের উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন ‘লেখ’ থেকে জানা যায় যে, চেটটি বা বণিকরা পণ্য সাজিয়ে যাতায়াত করতেন। বিভিন্ন বণিক সংগঠন বা সমবায়ের কথাও পাওয়া যায়। এই সংগঠন গুলি বিভিন্ন মন্দিরকে জমি দান করতেন, তার বর্ণনাও দক্ষিণ ভারতে তাম্রলেখগুলিতে পাওয়া যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চোরদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার বাণিজ্যের ওপর ভারতীয় বণিকদের প্রভাব আস্তে আস্তে বেড়েছিল।

(খ) পাল ও সেন যুগে বাংলায় কি কি ফসল উৎপন্ন হতো ? এই ফসল গুলির কোন কোনটি এখনো চাষ করা হয় ?

উত্তরঃ পাল ও সেন যুগে প্রধান ফসল গুলির মধ্যে ছিল ধান, সরষে ও নানা রকমের ফল, যেমন— আম, কাঁঠাল, কলা, ডালিম, ডুমুর, খেজুর, নারকেল ইত্যাদি। এছাড়া কার্পাস, তুলো, সুপুরি, এলাচ, মহুয়া ইত্যাদি ফল গুলি উৎপন্ন হতো। ওই ফসল ও ফল প্রায় সবগুলিই এখনো চাষ হয়।

(গ) রাজা লক্ষণ সেনের রাজসভার সাহিত্যচর্চার পরিচয় দাও।

উত্তরঃ রাজা লক্ষণ সেন তার রাজসভায় নানা কবি ও সাহিত্যিকগণকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্থান দিয়েছিলেন। বিদ্বান ও বিদ্যার প্রতি তার অপরিসীম শ্রদ্ধা ছিল। পিতা বল্লাল সেনের আরদ্ধ দানসাগর গ্রন্থখানি লক্ষণ সেন সম্পূর্ণ করে নিজের মানসিক উৎকর্ষের পরিচয় দিয়েছিলেন। প্রসিদ্ধ বাঙালি বৈষ্ণব কবি জয়দেব ও কবি ধোয়ী, গোবর্ধন, শরণ, উমাপতিধর প্রভৃতি তার রাজসভা অলংকৃত করেছিলেন। এজন্য একে বলা হত পঞ্চরত্ন।

(বেশি মার্কসের প্রশ্ন আসলে এই উত্তরটি লিখবে)

উত্তরঃ সেন যুগকে বাংলার সংস্কৃত কাব্যের স্বর্ণযুগ বলা হয়ে থাকে। রাজা লক্ষ্মণ সেন নিজে কেবল সুকবি ও সুপণ্ডিত ছিলেন না, তিনি সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন। তাঁর রাজসভা অলংকৃত করতেন পঞ্চরত্ন-জয়দেব, উমাপতি ধর, গোবর্ধন, শরণ ও ধোয়ী। সভাকবি জয়দেব রচনা করেন রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা বিষয়ক গ্রন্থ ‘গীতগোবিন্দ’। সংস্কৃত ভাষায় রচিত এই কাব্য বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। এ ছাড়া ধোয়ীর ‘পবনদূত’, উমাপতি ধরের ‘চন্দ্রচূড় চরিত’ প্রভৃতি গ্রন্থগুলি সে যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে মনে করা হয়। সুপ্রসিদ্ধ পণ্ডিত হলায়ুধ ছিলেন লক্ষণ সেনের সভাপণ্ডিত। হলায়ুধ ‘ব্রাহ্মণ সর্বস্ব’, ‘মীমাংসা সর্বস্ব’ প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিলেন। ত্রয়োদশ শতকের গোড়ায় কবি শ্রীধর দাস কর্তৃক সংকলিত ‘সদুক্তিকর্ণামৃত’ গ্রন্থে লক্ষ্মণ সেনের রাজসভার সাহিত্যচর্চার বহু নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে।

(ঘ) পাল শাসনের তুলনায় সেন শাসন কেন বাংলায় কম দিন স্থায়ী হয়েছিল?

উত্তরঃ বাংলায় ৪০০ বছরের বেশি সময় পাল শাসন ব্যবস্থা স্থায়ী হয়েছিল। কারণ—

(১) জন সমর্থনঃ খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকের পরবর্তীকালে পাল রাজারাও জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু বিজয় সেন একসময় পাল রাজাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাংলার সিংহাসন দখল করেন।

(২) গ্রহণযোগ্যতাঃ পাল আমলে বাংলার গ্রাম কেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা বেশ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু সেন আমলে স্থানীয় গ্রামীণ শাসন অবনীতির পথে এগিয়ে চলেছিল।

(৩) সাহিত্য-সংস্কৃতিঃ শিক্ষাদিক্ষা, ধর্মচর্চায় শিল্পকলায় পালযুগে যতখানি উন্নত ছিল সেন যুগে ততখানি ছিল না।

৪. বিশদে (১০০–১২০ টি শব্দের মধ্যে) উত্তর লেখো:

(ক) ভারতের সামন্ত ব্যবস্থার ছবি আঁকতে গেলে কেন তা একখানা ত্রিভুজের মতো দেখায় ? এই ব্যবস্থায় সামন্তরা কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করত ?

উত্তরঃ ভারতের সামন্তব্যবস্থায় ছবি আঁকতে গেলে তা একখানা ত্রিভুজের মতো দেখাই, কারণ— এই সামন্ত ব্যবস্থায় সবার উপরে থাকে রাজা। সবার নিচে থাকে সাধারণ জনগণ বা খেটে খাওয়া মানুষজন। আর তাদের ওপর বেশকিছু সামন্ত বা মাঝারি শাসক এবং তাদের উপরে থাকে অল্প কিছু মহাসামন্ত। ফলে এই ব্যবস্থার ছবি ত্রিভুজের মাথা থেকে নিচ অবধি ক্রমশ চওড়া হয়ে গেছে বলে ত্রিভুজের মতো দেখায়। রাজা থেকে জনগণ অবধি রাজস্ব ও শাসনের এই স্তরে স্তরে ভাগ হয়ে যাওয়াকে সামন্ত ব্যবস্থা বলে।

সামন্তদের জীবিকা নির্বাহঃ সামন্তব্যবস পরিশ্রম করে সাসল উৎপাদন সামন্তরা বোর্ড উৎপাদন করতেন না। তারা অন্যের শ্রমে উৎপন্ন অন্য বা রাজস্ব থেকে নিজেদের জীবিকানির্বাহ করতেন। কৃষককদের কাছ থেকে ছোটো সামন্ত থেকে রাজস্ব আদায় করতেন তিনি তার কিছু অংশ নিজের জন্য রেখে বাকি অংশ উর্ধ্বতন সামন্তদের দিতেন তার ওপরের মাঝারি সামন্তরা ও তাদের নিজের নিজের অংশ রেখে বাকি অংশ রাজাকে দিতেন। কৃষক ও রাজার মাঝের এই সামান্তরা সমস্ত কিছুর ভোগীদার হয়ে বেঁচে থাকত।

(খ) পাল ও সেন যুগের বাংলার বাণিজ্য ও কৃষির মধ্যে তুলনা কর।

উত্তরঃ পাল ও সেন যুগের বাংলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য। গ্রামবাসীর প্রয়োজনীয় প্রায় যাবতীয় জিনিসপত্রই গ্রামে তৈরি হতো। সে যুগে বাংলার অর্থনীতিতে বাণিজ্যের গুরুত্ব ক্রমশই কমে এসেছিল। আরব বণিকদের অত্যাচারে বাংলার বণিকরা পিছু হটেছিল। সেই যুগে বাণিজ্যের অবনতির সঙ্গে সঙ্গে সোনা রুপার ব্যবহার কমে যায়। তার ফলে কড়ি হয়ে গিয়েছিল বেচা-কেনার প্রধান মাধ্যম। হস্তশিল্পের মধ্যে কাঠ ও ধাতুর তৈরি দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিস, গয়নার কথা জানা যায়। শিল্পীরা বিভিন্ন নিগম বা গোষ্ঠীতে সঙ্ঘবদ্ধ ছিলেন।

পাল ও সেনযুগে বাংলার কৃষিঃ পাল ও সেনযুগে বাণিজ্যের অবনতির ফলে কৃষির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়—

(১) রাজারা উৎপন্ন ফসলের এক ষষ্ঠাংশ অর্থাৎ ছয়ভাগের একভাগ কৃষকদের কাছ থেকে কর নিতেন।

(২) এ যুগের উৎপন্ন ফসলগুলির মধ্যে প্রধান ছিল ধান, সরষে। তা ছাড়া নানা রকমের ফল, যেমন-আম, কাঁঠাল, কল ডালিম, খেজুর, নারকেল ইত্যাদি। এ ছাড়া কার্পাস বা তুলো, সুপুরি, এলাচ, মহুয়া প্রভৃতিও প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হত।

(৩) কৃষকদের অবহেলা করা হত না।

(৪) অনেক সময় ব্রাহ্মণ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিষ্কর জমি দান করা হত। বংশানুক্রমে ব্রাহ্মণরা এই জমি ভো করতেন।

(৫) সে যুগে বাঁশের নল দিয়ে জমি জরিপ করা হত।

(গ) পাল আমলের বাংলার শিল্প ও স্থাপত্যের কি পরিচয় পাওয়া যায় তা লেখো।

উত্তরঃ পাল যুগের বাংলার শিল্প ও স্থাপত্যের এক অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছিল। পাল রাজাগনের সাহায্যে নালন্দা, ওদন্তপুর, বিক্রমশীল ও সোমপুরী মহাবিহার গুলি নির্মিত হয়েছিল। পাল যুগের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বিহারে প্রসিদ্ধ লাভ করেছিল। বিক্রমশীল মহাবিহারে মোট ১০৭টি মন্দির ও ৮ টি মহাবিদ্যালয় ছিল। মন্দিরের গায়ে পাথরের ফলক থাকতো। এই সকল মঠের নির্মাণ পদ্ধতি সে যুগের স্থাপত্য কৌশল এর পরিচয়ক। সোমপুরি মহাবিহারএর ভগ্নাবশেষ রাজশাহী জেলায় আবিষ্কৃত হয়েছে। পাল যুগের স্তূপ, বিহার মন্দিরের নির্মাণ কৌশল ছিল বিভিন্ন ধরনের। পাল যুগের শিল্পরীতিকে প্রাচ্য শিল্পরীতি বলা হয়। এই যুগে নির্মিত কয়েকটি মূর্তি পাওয়া গিয়েছে। এগুলি গড়ন দেখলে পাল যুগের ভাস্কর্য শিল্পের উন্নতির কথা জানা যায়। ধীমান ও তার পুত্র বিট পাল ছিলেন সে যুগের শ্রেষ্ঠ ভাস্কর, চিত্রশিল্পী ও ধাতু মূর্তি শিল্পী। ভাস্কর্যের মধ্যে পোড়ামাটির শিল্প সামগ্রী ছিল। এগুলিতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, সমাজ জীবন, ধর্মবিশ্বাস এর ছবি ফুটে উঠেছে।

(ঘ) পাল ও সেন যুগে সমাজ ও ধর্মের পরিচয় দাও।

উত্তরঃ পাল ও সেন যুগের বাংলার সমাজের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল বিভিন্ন জাতির উদ্ভব। পাল রাজারা ব্রাহ্মণ ছিলেন না তারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী। সমাজের সাধারণ মানুষরা মোটামুটি সচ্ছল ছিল। ভূমিহীন ব্যক্তি ও শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। একাদশ শতকের শেষ দিকে উত্তরবঙ্গে যে কৈবর্ত বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল তা নিঃসন্দেহে নিম্ন শ্রেণীর মধ্যে সামাজিক প্রতিবাদের দিকচিহ্ন হিসেবে আজও স্মরণীয়।

সেন রাজারা কিন্তু ব্রাহ্মণ্য ধর্মকে প্রাধান্য দিতেন। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মধ্যে বৈদিক ধর্ম ও পৌরাণিক ধর্মের মিশ্রণ ছিল। স্ত্রী লোকেরা নানারকম ব্রত, উপবাস পালন করতো। ইন্দ্র, অগ্নি, কুবের, সূর্য, গঙ্গা, যমুনা, শিব, দুর্গা, কালী পুজো করা হত। ব্রাহ্মণরা অন্যান্য সবার কাজ করতে পারতেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ ছাড়া তাদের কাজ কেউ করতে পারতো না। ব্রাহ্মণরা সমাজপতি হিসেবে সুবিধা ভোগ করতেন। সেন যুগে সমাজে আদিবাসী উপজাতি মানুষের কথাও জানা যায়।

সেন রাজাদের আমলে গ্রাম্য শাসনব্যবস্থার অবনতি ঘটেছিল। সেই সময় রাষ্ট্র অসংখ্য ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত ছিল। সমাজ বিভক্ত ছিল চারটি শ্রেণীতে, যথা— ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র।

অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর | সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস (তৃতীয় অধ্যায়) – ভারতের সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কয়েকটি ধারা : খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক প্রশ্ন ও উত্তর | Class 7 History Questions Answers Chapter-3 WBBSE

১. চোল রাজ্যের প্রধান ছিলেন __________।

উত্তরঃ রাজা।

২. _________ শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপে ইসলাম ধর্মের উদ্ভব হয়।

উত্তরঃ সপ্তম।

৩. আরবের পশ্চিমে ________ সাগর অবস্থিত।

উত্তরঃ লোহিত।

৪. হজরত মহম্মদ আনুমানিক _________ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

উত্তরঃ ৫৭০।

৫. ইসলাম ধর্মের অনুগামীরা ________ নামে পরিচিত।

উত্তরঃ মুসলমান।

৬. __________ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ও তাঁর অনুগামীরা মদিনা শহরে আসেন।

উত্তরঃ ৬২২

৭. মক্কা থেকে মদিনা চলে যাওয়াকে আরবি ভাষায় _________ বলে।

উত্তরঃ হিজরত।

৮. __________ হলেন ইসলামীয় জগতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা।

উত্তরঃ খলিফা।

৯. ‘খলিফা’ শব্দের অর্থ __________।

উত্তরঃ প্রতিনিধি।

১০. পাল-সেন যুগে বাংলার প্রধান ফসল ছিল _________।

উত্তরঃ ধান।

১১. বাঙালিরা ________ কাছ থেকে আলুর ব্যবহার শিখেছে।

উত্তরঃ পোর্তুগিজদের।

১২. পালযুগে জিনিসপত্র কেনাবেচার প্রধান মাধ্যম ছিল _________।

উত্তরঃ কড়ি।

১৩. ‘চিকিৎসা সংগ্রহ’ রচনা করেন ________।

উত্তরঃ চক্রপাণি দত্ত।

১৪. পালরাজারা ছিলেন _________ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক।

উত্তরঃ বৌদ।

১৫. গজনির শাসক ছিলেন __________।

উত্তরঃ সুলতান মাহমুদ।

১৬. লক্ষ্মণ সেন ছিলেন __________ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক।

উত্তরঃ বৈষ্ণব।

১৭. বিক্রমশীল মহাবিহারের প্রতিষ্ঠা করেন __________।

উত্তরঃ ধর্মপাল।

১৮. লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন ________।

উত্তরঃ জয়দেব।

১৯. বখতিয়ারের সঙ্গে ________ জন সৈন্য ছিল।

উত্তরঃ আঠারো।

২০. _________ যুগ বাংলা ভাষার উৎপত্তির সময়কাল।

উত্তরঃ পাল।

২১. অতীশ দীপঙ্কর তিব্বতে _______ বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন।

উত্তরঃ মহাযান।

২২. ভুসুকপাদ ছিলেন একজন বৌদ্ধ __________।

উত্তরঃ সিদ্ধাচার্য।

২৩. পশ্চিমবঙ্গোর বর্ধমান জেলায় _________ গ্রামে বৌশস্তূপ পাওয়া গেছে।

উত্তরঃ ভরতপুর।

২৪. কবি ধোয়ী লিখেছিলেন ________ কাব্য।

উত্তরঃ পবনদূত।

ক-স্তম্ভের সঙ্গে খ-স্তম্ভ মিলিয়ে লেখো।

(১) মহম্মদ ঘুরি (ক) শাহনামা

(২) আবু বকর (খ) রামচরিত কাব্য

(৩) ফিরদৌসি (গ) দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধ

(৪) অলবিরুনি (ঘ) ধীমান

(৫) সন্ধ্যাকর নন্দী (ঙ) খলিফা

(৬) পাল যুগের শিল্পী (চ) কিতাব আল হিন্দ

উত্তরঃ

(১) মহম্মদ ঘুরি (গ) দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধ

(২) আবু বকর (ঙ) খলিফা

(৩) ফিরদৌসি (ক) শাহনামা

(৪) অলবিরুনি (চ) কিতাব আল হিন্দ

(৫) সন্ধ্যাকর নন্দী (ঘ) রামচরিত কাব্য

(৬) পাল যুগের শিল্পী (চ) ধীমান

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো: মান – 1 | সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস – ভারতের সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কয়েকটি ধারা : খ্রিস্টীয় সপ্তম – দ্বাদশ শতক প্রশ্ন ও উত্তর | Class 7 History Question Answer

১. পাল এবং সেন যুগে বাংলার কেনাবেচার প্রধান মাধ্যম ছিল-
(A) স্বর্ণমুদ্রা
(B) কড়ি
(C) রৌপ্যমুদ্রা
(D) তাম্রমুদ্রা

উত্তরঃ (B) কড়ি

২. তিব্বতের রাজা জ্ঞানপ্রভের অনুরোধে হিমালয় অতিক্রম করে তিব্বতে গিয়েছিলেন-
(A) শীলভদ্র
(B) শান্তরক্ষিত
(C) দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান
(D) গোরক্ষনাথ

উত্তরঃ (C) দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান

৩. কোন রাজা তাঞ্জোরের মন্দির তৈরি করেন ?
(A) বল্লাল সেন
(B) রাজরাজ চোল
(C) রাজেন্দ্র চোল
(D) লক্ষ্মণ সেন

উত্তরঃ (B) রাজরাজ চোল

৪. তাঞ্জোর ও গঙ্গাইকোণ্ডচোলপুরমে কোন্ রাজ্যের শাসক দুটি অসাধারণ মন্দির তৈরি করেন ?
(A) প্রতিহার
(B) চোল
(C) চালুক্য
(D) পুষ্যভূতি

উত্তরঃ (B) চোল

৫. চক্রপাণিদত্ত বই লিখেছিলেন—
(A) কবিতার
(B) উপন্যাসের
(C) জ্যোতিষশাস্ত্রের
(D) চিকিৎসাবিজ্ঞানের

উত্তরঃ (D) চিকিৎসাবিজ্ঞানের

৬. চেট্টি বলা হত—
(A) বণিকদের
(B) কৃষকদের
(C) ভূস্বামীদের
(D) ভবঘুরেদের

উত্তরঃ (A) বণিকদের

৭. পাল-সেন যুগে সাহিত্য, ব্যাকরণ, ধর্ম, দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্র লেখা হত—
(A) হিন্দি ভাষায়
(B) সংস্কৃত ভাষায়
(C) বাংলা ভাষায়
(D) পালি ভাষায়

উত্তরঃ (B) সংস্কৃত ভাষায়

৮. আঙ্কোরভাটে রয়েছে—
(A) বৌদ্ধ মন্দির
(B) শৈব মন্দির
(C) জৈন মন্দির
(D) বিষ্ণু মন্দির

উত্তরঃ (D) বিষ্ণু মন্দির

৯. চোল রাজ্যে কোন্ দুই সভার ওপর বিচার এবং রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল?
(A) উর-কোণ্ডা
(B) পুরম-নাড়ু
(C) উর-নাড়ু
(D)নাড়ু-পট্টনম

উত্তরঃ (C) উর-নাড়ু

১০. জয়দেব রচনা করেন—
(A) রামায়ণ
(B) মহাভারত
(C) গীতগোবিন্দম্
(D) পবনদুত

উত্তরঃ (C) গীতগোবিন্দম্

১০. বিক্রমশীল মহাবিহার অবস্থিত—
(A) ভাগলপুরে
(B) ঢাকায়
(C) পাহাড়পুরে
(D) রাজশাহীতে

উত্তরঃ (A) ভাগলপুরে

১১. তিব্বতের রাজা জ্ঞানপ্রভের অনুরোধে হিমালয় অতিক্রম করে তিব্বতে গিয়েছিলেন—
(A) শীলভদ্র
(B) শান্তরক্ষিত
(C) দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান
(D) গোরক্ষনাথ

উত্তরঃ (C) দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান

১২. চোল রাজ্যে ব্যবসায়ীদের জন্য গড়ে-ওঠা সভার নাম ছিল—
(A) উর
(B)পুরম
(C) নাড়ু
(D) নগরম

উত্তরঃ (D) নগরম

১৩. নগরম গঠিত হয়েছিল—
(A) বণিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য
(B) শিল্প গঠনের জন্য
(C) যুদ্ধের জন্য
(D) কৃষির জন্য

উত্তরঃ (A) বণিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য

১৪. পাল ও সেন যুগে জমিতে মূল অধিকার ছিল—
(A) কৃষকের
(B) জমিদারের
(C) সামন্তের
(D) রাজার

উত্তরঃ (D) রাজার

১৫. কৈবর্ত বিদ্রোহের কাহিনি জানা যায়—
(A) রামচরিত কাব্য থেকে
(B) রামচরিতমানস কাব্য থেকে
(C) চর্যাপদ থেকে
(D) বৌদ্ধগ্রন্থ থেকে

উত্তরঃ (A) রামচরিত কাব্য থেকে

১৬. পাল রাজারা ছিলেন-
(A) ব্রাহ্মণ
(B) ক্ষত্রিয়
(C) বৈশ্য
(D) শূদ্র

উত্তরঃ (B) ক্ষত্রিয়

১৭. পাল আমলে শিল্পীদের সঙ্ঘবদ্ধ গোষ্ঠীকে বলা হত—
(A) নাড়ু
(B) পট্টনম
(C) নিগম
(D) কোণ্ডা

উত্তরঃ (C) নিগম

১৮. চোল রাজ্যের প্রদেশগুলি যে নামে পরিচিত—
(A) উর
(B) নাড়ু
(C) মণ্ডলম
(D) নগরম

উত্তরঃ (C) মণ্ডলম

১৮. উচ্চ রাজকর্মচারীদের নগদ বেতন দেওয়ার বদলে মাঝে-মধ্যে পারিশ্রমিক হিসেবে কী দেওয়া হত ?
(A) জমি
(B) রুপো
(C) সোনা
(D) ফসল

উত্তরঃ (A) জমি

১৯. কোন আমলে জমি কেনাবেচার সময় কৃষককেও তার খবর দিতে হত ?
(A) রাষ্ট্রকূট আমলে
(B) চোল আমলে
(C) সেন আমলে
(D) পাল আমলে

উত্তরঃ (C) সেন আমলে

২০. দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান কোন বৌদ্ধবিহারের মহাচার্য ছিলেন ?
(A) নালন্দা
(B) বিক্রমশীল
(C) জগদ্দল
(D) সোমপুরী

উত্তরঃ (B) বিক্রমশীল

২১. কোন শতক থেকে উত্তর ভারতের বেশকিছু জায়গায় ব্যাবসাবাণিজ্যে মন্দা দেখা গিয়েছিল ?
(A) অষ্টম শতক
(B) ষষ্ঠ শতক
(C) সপ্তম শতক
(D) নবম শতক

উত্তরঃ (C) সপ্তম শতক

২২. বাঙালি বৌদ্ধ আচার্যদের মধ্যে সবথেকে বিখ্যাত এবং শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ছিলেন-
(A) দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান
(B) শীল রক্ষিত
(C) গোরক্ষনাথ
(D) কাহ্নপাদ

উত্তরঃ (C) গোরক্ষনাথ

২৩. চোল শাসনে রাজ্যকে ভাগ করা হত কয়েকটি-
(A) উরে
(B) নগরমে
(C) মণ্ডলমে
(D) নাড়ুতে

উত্তরঃ ‌(C) মণ্ডলমে

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস – ভারতের সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কয়েকটি ধারা : খ্রিস্টীয় সপ্তম – দ্বাদশ শতক (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Class 7 History Question Answer Ch-3 

একটি বাক্যে উত্তর দাও : প্রশ্নের মান– ১

১. খ্রিস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতকের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্রের নাম লেখো।

উত্তরঃ খ্রিস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতকের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্রের নাম থানেসর এবং কনৌজ।

২. ‘রৌণক’ কাদের বলা হয় ?

উত্তরঃ খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের ভারতীয় ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর লোকেরা ‘রৌণক’ নামেও পরিচিত হতেন।

৩. কোন্ সময়ে ইউরোপে সামন্ত ব্যবস্থায় ভাঙন শুরু হয়েছিল ?

উত্তরঃ খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতকে ইউরোপে সামন্ত ব্যবস্থায় ভাঙন শুরু হয়েছিল।

৪. তাঞ্জোরের বিখ্যাত মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তরঃ তাঞ্জোরের বিখ্যাত মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা চোল শাসক রাজরাজ।

৫. চোল রাজ রাজেন্দ্র কোথায় বিখ্যাত মন্দির নির্মাণ করেছিলেন ?

উত্তরঃ চোল রাজ রাজেন্দ্র গঙ্গাই কোন্ডচোলপুরমে বিখ্যাত মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।

৬. চোল রাজ্যের প্রধান কে ছিলেন?

উত্তরঃ চোল রাজ্যের প্রধান ছিলেন রাজা।

৭. চোল রাজ্যে গ্রামের শাসনব্যবস্থার তদারকির দায়িত্বে কে ছিল ?

উত্তরঃ চোল রাজ্যে গ্রামের শাসনব্যবস্থার তদারকির দায়িত্বে ছিল গ্রাম-পরিষদ বা উর।

৮. চোল রাজ্যে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কোন্ পরিষদ গঠিত হয়েছিল ?

উত্তরঃ চোল রাজ্যে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নগরম পরিষদ গঠিত হয়েছিল।

৯. ‘চেট্টি’ কথাটির অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘চেট্টি’ কথাটির অর্থ হল বণিক।

১০. পাল-সেন যুগে বাংলায় অর্থনীতির মূল ভিত্তি কী ছিল ?

উত্তরঃ পাল-সেন যুগে বাংলায় অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি, শিল্প এবং বাণিজ্য।

১১. পাল-সেন যুগে জমির মূল মালিক কে ছিলেন ?

উত্তরঃ পাল-সেন যুগে জমির মূল মালিক ছিলেন রাষ্ট্র বা রাজা।

১২. পাল-সেন যুগে রাজারা উৎপন্ন ফসলের কতখানি কৃষকদের কাছ থেকে কর হিসেবে সংগ্রহ করতেন ?

উত্তরঃ পাল-সেন যুগে রাজারা উৎপন্ন ফসলের এক-ষষ্ঠাংশ ভাগ কৃষকদের কাছ থেকে কর হিসেবে সংগ্রহ করতেন।

১৩. বাঙালিরা কোন্ বিদেশি শক্তির কাছ থেকে খাদ্যে আলুর ব্যবহার করতে শিখেছিল ?

উত্তরঃ বাঙালিরা পোর্তুগিজদের কাছ থেকে খাদ্যে আলুর ব্যবহার করতে শিখেছিল।

১৫. সামন্ত ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ রাজস্ব আদায় ও শাসনের অধিকার স্তরে স্তরে ভাগ হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাকে বলে সামন্ত ব্যবস্থা।

১৫. পাল-সেন যুগে সমাজের উঁচুতলার মানুষদের মধ্যে কোন্ ভাষা প্রচলিত ছিল ?

উত্তরঃ পাল-সেন যুগে সমাজের উঁচুতলার মানুষদের মধ্যে সংস্কৃত ভাষা প্রচলিত ছিল।

১৬. চক্রপাণিদত্ত রচিত প্রসিদ্ধ বইটির নাম লেখো।

উত্তরঃ চক্রপাণিদত্ত রচিত প্রসিদ্ধ বইটির নাম হল ‘চিকিৎসা-সংগ্রহ’।

১৭. কবি সন্ধ্যাকর নন্দী কার আমলে ‘রামচরিত’ কাব্য রচনা করেছিলেন ?

উত্তরঃ কবি সন্ধ্যাকর নন্দী পাল রাজা মদনপালের আমলে ‘রামচরিত’ কাব্য রচনা করেছিলেন।

১৮. ‘রামচরিত’-এর কাহিনি কোন্ মহাকাব্য অনুযায়ী রচিত ?

উত্তরঃ ‘রামচরিত’-এর কাহিনি ‘রামায়ণ’ মহাকাব্য অনুযায়ী রচিত।

১৯. রামপালের রাজধানী কোথায় ছিল ?

উত্তরঃ রামাবতী নগরে রামপালের রাজধানী ছিল।

২০. ‘রামচরিত’-এ রামায়ণের সীতা উদ্ধারের কাহিনির সঙ্গে কোন ঘটনার তুলনা করা হয়েছে ?

উত্তরঃ ‘রামচরিত’-এ রামায়ণের সীতা উদ্ধারের কাহিনির সঙ্গে রামপালের বরেন্দ্রভূমি উদ্ধার ঘটনার তুলনা করা হয়েছে।

২১. পাল যুগে কোন্ বৌদ্ধ ধর্মমতের উদ্ভব ঘটেছিল ?

উত্তরঃ পাল যুগে বজ্রযান বা তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মমতের উদ্ভব ঘটেছিল।

২২. বজ্রযান ছাড়া পাল যুগে অন্য কোন্ বৌদ্ধ ধর্মমতের উদ্ভব ঘটে ?

উত্তরঃ বজ্রযান ছাড়া পাল যুগে সহজযান ও কালচক্রযান বৌদ্ধ ধর্মমতের উদ্ভব ঘটে।

২৩. ‘নির্বাণ’ কথার অর্থ কী ?

উত্তরঃ বৌদ্ধ ধর্মমতে ‘নির্বাণ’ কথার অর্থ হল মুক্তি।

২৪. নালন্দা বৌদ্ধবিহার কোন্ আমলে গড়ে উঠেছিল ?

উত্তরঃ নালন্দা বৌদ্ধবিহার গুপ্ত সম্রাটদের আমলে গড়ে উঠেছিল।

২৫. বিক্রমশীল মহাবিহারের বিখ্যাত এক মহাচার্যের নাম লেখো।

উত্তরঃ বিক্রমশীল মহাবিহারের বিখ্যাত এক মহাচার্যের নাম হল দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।

২৬. খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে পৃথিবীর বৃহত্তম বৌদ্ধকেন্দ্র কোথায় ছিল ?

উত্তরঃ খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে পৃথিবীর বৃহত্তম বৌদ্ধকেন্দ্র ছিল ইন্দোনেশিয়ায়।

২৭. বিক্রমশীল মহাবিহারকে কোন্ অভিযানকারীরা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল ?

উত্তরঃ বিক্রমশীল মহাবিহারকে তুর্কি অভিযানকারীরা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।

২৮. প্রাচ্য শিল্পরীতির পূর্বসূরি হিসেবে কোন্ শিল্পকলাকে চিহ্নিত করা হয় ?

উত্তরঃ প্রাচ্য শিল্পরীতির পূর্বসূরি হিসেবে গুপ্তযুগের শিল্পকলাকে চিহ্নিত করা হয়।

২৯. পাল আমলের একটি উল্লেখযোগ্য বিহারের নাম লেখো।

উত্তরঃ পাল আমলের একটি উল্লেখযোগ্য বিহার হল পাহাড়পুরের সোমপুরী বিহার।

৩০. পাল আমলের ভাস্কর্যের সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন কোথায় পাওয়া গেছে ?

উত্তরঃ পাল আমলের ভাস্কর্যের সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন পাওয়া গেছে পাহাড়পুর প্রত্নক্ষেত্রে।

৩১. পাল যুগে বরেন্দ্রভূমির দুজন প্রসিদ্ধ শিল্পীর নাম লেখো।

উত্তরঃ পাল যুগে বরেন্দ্রভূমির দুজন প্রসিদ্ধ শিল্পীর নাম হল ধীমান এবং তাঁর ছেলে বীটপাল।

৩২. ‘রাজ্ঞী’ কথাটির অর্থ কী ?

উত্তরঃ ‘রাজ্ঞী’ কথাটির অর্থ হল রাজমহিষী।

৩৩. লক্ষ্মণসেনের পূর্ববর্তী সেন রাজারা কোন্ ধর্মমতে বিশ্বাসী ছিলেন ?

উত্তরঃ লক্ষ্মণসেনের পূর্ববর্তী সেন রাজারা শৈব ধর্মমতে বিশ্বাসী ছিলেন।

৩৪. সেন যুগে সংকর হিসেবে সমাজে কারা পরিচিত ছিলেন ?

উত্তরঃ সেন যুগে সংকর হিসেবে সমাজে অব্রাহ্মণেরা পরিচিত ছিলেন।

৩৫. কবি শ্রীধর দাস সংকলিত গ্রন্থের নাম কী ?

উত্তরঃ কবি শ্রীধর দাস সংকলিত গ্রন্থের নাম ‘সদুক্তিকর্ণামৃত’।

৩৬. বল্লালসেনের লেখা দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তরঃ বল্লালসেনের লেখা দুটি গ্রন্থের নাম হল ‘দানসাগর’ ও ‘অদ্ভুতসাগর’।

৩৭. প্রাচীন বাংলায় কৃষকের কৃষি সম্পর্কিত জ্ঞানের উৎস কী ছিল ?

উত্তরঃ প্রাচীন বাংলায় কৃষকের কৃষি সম্পর্কিত জ্ঞানের উৎস ছিল ডাক ও খনার বচন।

৩৮. বাঙালি বৌদ্ধচার্যদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত কে ছিলেন ?

উত্তরঃ বাঙালি বৌদ্ধচার্যদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ছিলেন দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ)।

৩৯. কার বাড়ি ‘নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা’ নামে পরিচিত ?

উত্তরঃ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (অতীশ)-এর বাড়ি ‘নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা’ নামে পরিচিত।

৪০. আদি বাংলা ভাষার উদাহরণ পাওয়া যায় কোন্ লেখায় ?

উত্তরঃ চর্যাপদের লেখায় আদি বাংলা ভাষার উদাহরণ পাওয়া যায়।

৪১. ব্রহ্মদেয় ব্যবস্থা কাকে বলে ?

উত্তরঃ দক্ষিণ ভারতে চোল রাজ্যে ব্রাহ্মণদের নিষ্কর জমিদানের ব্যবস্থা ব্রহ্মদেয় ব্যবস্থা নামে পরিচিত।

৪২. পাল যুগের কয়েকজন সিদ্ধাচার্যের নাম লেখো।

উত্তরঃ পাল যুগের কয়েকজন বিখ্যাত সিদ্ধাচার্যের নাম হল লুইপাদ, সরহপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ প্রমুখ।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর দু/তিনটি বাক্যে উত্তর দাও: [প্রশ্নের মান– ২]

১. সামন্ত কাদের বলা হয় ?

উত্তরঃ খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকে ভারতীয় সমাজে এক বিশেষ ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে। এরা ছিল উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী এবং এদের নগদে বেতনের পরিবর্তে জমির রাজস্ব আদায়ের অধিকার দেওয়া হত। এরাই সামন্ত নামে পরিচিত হত।

২. সামন্তপ্রভুরা কী কী কাজ করতেন ?

উত্তরঃ সামন্তপ্রভুরা কখনোই পরিশ্রম করে উৎপাদন করতেন না। তাঁরা তাঁদের দখলিকৃত গ্রাম থেকে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি গ্রামের শাসন এবং বিচারকার্য সম্পাদনার কাজ করতেন।

৩. দক্ষিণ ভারতে কারা মন্দির কর্তৃপক্ষকে নিষ্কর জমি দান করতেন ?

উত্তরঃ দক্ষিণ ভারতের রাজশক্তিগুলি বহু মন্দির তৈরি করেন। সেখানকার রাজা, ব্যবসায়ী ও অভিজাতরা এই মন্দির কর্তৃপক্ষকে নিষ্কর জমি দান করতেন।

৪. দক্ষিণ ভারতে মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলে কারা বসবাস করতেন ?

উত্তরঃ দক্ষিণ ভারতে রাজা, ব্যবসায়ী ও অভিজাতরা মন্দির কর্তৃপক্ষকে নিষ্কর জমি দান করতেন। এই মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলে পুরোহিত, মালাকার, রাঁধুনি, গায়ক, নর্তক-নর্তকী প্রমুখ বসবাস করতেন।

৫. উর এবং নাড়ু কী কাজ সম্পাদন করত ?

উত্তরঃ উর এবং নাড়ু হল চোল রাজ্যের দুই স্থানীয় সভা। এই দুই স্থানীয় সভা স্বায়ত্তশাসন, বিচার এবং রাজস্ব বা কর সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করত।

৬. ব্রাহ্মণদের ব্রহ্মদেয় জমি দানের ফলে কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

উত্তরঃ চোল রাজ্যে ব্রাহ্মণদের কিছু ব্রহ্মদেয় অর্থাৎ নিষ্কর জমি দান করা হত। কাবেরী উপত্যকায় ব্রাহ্মণদের এই ব্রহ্মদেয় জমি দানের ফলে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে বহু নতুন নতুন গ্রামের পত্তন ঘটেছিল।

৭. দক্ষিণ ভারতের রাজারা কী কী উপাধি গ্রহণ করতেন ?

উত্তরঃ দক্ষিণ ভারতের রাজারা অনেকেই নিজেদের উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন উপাধিতে ভূষিত করতেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় তাঁরা ‘মহারাজা-অধিরাজ’, ‘ত্রিভুবন-চক্রবর্তীন’ ইত্যাদি উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।

৮. পাল-সেন যুগের প্রধান ফসলগুলির নাম লেখো।

উত্তরঃ পাল-সেন যুগের সমাজ ছিল কৃষিনির্ভর। এই যুগের প্রধান ফসলগুলি ছিল ধান, সরষে এবং নানা রকমের ফল, যেমন-আম, কাঁঠাল, কলা, ডালিম, খেজুর, নারকেল ইতাদি।

৯. সন্ধ্যাকর নন্দী ‘রামচরিত’-এ সীতার রূপ বর্ণনার মাধ্যমে কীসের বিবরণ দিয়েছেন ?

উত্তরঃ সন্ধ্যাকর নন্দী পাল আমলে তাঁর বিখ্যাত ‘রামচরিত’ কাব্য রচনা করেছিলেন। তাঁর কাব্যে তিনি সীতার রূপ বর্ণনার মাধ্যমে বরেন্দ্রভূমি এবং তার চারপাশের এলাকার নদনদী, ফুলফল, গাছপালা, ফসল, বর্ষাকাল ইত্যাদির বিবরণ দিয়েছেন।

১০. সিদ্ধাচার্য কাদের বলা হত ?

উত্তরঃ পাল যুগে মহাযান বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে অন্যান্য দার্শনিক চিন্তাধারা মিলে গিয়ে বজ্রযান বা তান্ত্রিক বৌদ্ধমতের জন্ম। হয়েছিল। এই মতের নেতাদের বলা হত সিদ্ধাচার্য।

১১. চর্যাপদ কী ?

উত্তরঃ চর্যাপদ হল খ্রিস্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকে লেখা বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের কবিতা ও গানের সংকলন। চর্যাপদে ব্যবহৃত ভাষা হল আদি বাংলা ভাষার নিদর্শন।

১২. পাল যুগে কয়েকটি বৌদ্ধ জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রের নাম লেখো।

উত্তরঃ পাল আমলের শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা এবং বিহারে বহু বৌদ্ধ জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। এরকম কয়েকটি বিখ্যাত বৌদ্ধ জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র হল- নারদা, ওদন্তপুরী, বিক্রমশীল, সোমপুরী, জগদ্দল, ‘বিক্রমপুরী ইত্যাদি।

১৩. বিক্রমশীল বৌদ্ধবিহারে কী কী বিষয়ে শিক্ষাদান করা হত ?

উত্তরঃ পাল সম্রাট ধর্মপাল খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে মগধের উত্তরে বিক্রমশীল মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিক্রমশীল বৌদ্ধবিহারে ব্যাকরণ, তর্কশাস্ত্র, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষাদান করা হত।

১৪. পাল আমলে কেন বেশি স্তূপ বানানো হয়েছিল ?

উত্তরঃ পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধধর্মের পরম পৃষ্ঠপোষক। পাল রাজা ধর্মপাল, দেবপাল প্রমুখের প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে বাংলার ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বর্ধমান প্রভৃতি স্থানে বহু বৌদ্ধস্তূপ নির্মিত হয়।

১৫. বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের কোথায় বৌদ্ধস্তূপের নিদর্শন পাওয়া গেছে ?

উত্তরঃ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার ভরতপুর গ্রামে বৌদ্ধস্তূপের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এই বৌদ্ধস্তূপ হল পাল আমলের স্থাপত্যের নিদর্শন।

১৬. সেন আমলে ব্রাহ্মণ্যধর্মে কোন্ দুই ধর্মের সংমিশ্রণ ঘটেছিল ?

উত্তরঃ সেন যুগের রাজারা ব্রাহ্মণ্যধর্মকেই প্রাধান্য দিতেন। সেন আমলে ব্রাহ্মণ্যধর্মে বৈদিক ধর্ম ও পৌরাণিক ধর্মের সংমিশ্রণ ঘটেছিল।

১৭. সেন আমলের বিখ্যাত কবিদের নাম লেখো।

উত্তরঃ সেন আমলের সবচেয়ে বিখ্যাত কবি হলেন জয়দেব। এ ছাড়াও ধোয়ী, গোবর্ধন, উমাপতিধর এবং শরণ ছিলেন সেন আমলের বিখ্যাত কবি।

১৮. দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান কোন্ কোন্ মহাবিহারের আচার্য ও অধ্যক্ষ ছিলেন ?

উত্তরঃ ভারত এবং বহির্ভারতের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার অন্যতম উদাহরণ হল দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান। তিনি সম্ভবত বিক্রমশীল, ওদন্তপুরী এবং সোমপুরী মহাবিহারের আচার্য ও অধ্যক্ষ ছিলেন।

১৯. চর্যাপদ কেন পাল আমলে বাংলার সামাজিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় ?

উত্তরঃ চর্যাপদ হল খ্রিস্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকে লেখা বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের কবিতা ও গানের সংকলন। চর্যাপদের মধ্যে দিয়ে পাল যুগে বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ছবি ফুটে ওঠে। তাই চর্যাপদ পাল আমলে বাংলার সামাজিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০. জনসমর্থনের নিরিখে বাংলার পাল ও সেন শাসনের তুলনা করো।

উত্তরঃ পাল আমল—

[a] চারশো বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়।
[b] জনগণের সমর্থনে গোপাল ক্ষমতাসীন হন।
[c] সমাজে পাল রাজারা নিজেদের গ্রহণযোগ্য করে তোলেন।

সেন আমল—

a] একশো বছরের কিছু বেশি স্থায়ী হয়।
[b] জনগণের সমর্থনে বিজয়সেন ক্ষমতায় আসেন।
[c] সেন রাজারা সমাজে তেমন গ্রহণযোগ্য ছিলেন না।

চার/পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও: [প্রশ্নের মান– ৩]

১. টীকা লেখো: চর্যাপদ।

উত্তরঃ খ্রিস্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকে লেখা বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের কবিতা ও গানের সংকলন হল চর্যাপদ। পাল যুগের শেষ দিক থেকে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা প্রাচীন বাংলা ভাষায় চর্যাপদ লেখা শুরু করেন। এককথায় বলা যায়, চর্যাপদে যে ভাষা রয়েছে তা একেবারেই আদি বাংলা ভাষার নিদর্শন। লুইপাদ, সরহপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ প্রমুখ চর্যাপদকে কবিতায় ভরিয়ে তোলেন। চর্যাপদের মধ্যে দিয়ে সেই সময়ের বাংলার পরিবেশ ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ছবি ফুটে ওঠে।

2. পাল রাজাদের বৌদ্ধধর্মের প্রতি অনুরাগ বাংলার সংস্কৃতিতে কী প্রভাব ফেলেছিল বলে তোমার মনে হয়, বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ পাল রাজাদের বৌদ্ধধর্মের প্রতি অনুরাগ বাংলার সংস্কৃতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটিয়েছিল। পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ও বিহারে শিক্ষাদীক্ষায় বৌদ্ধ প্রভাব অনেক বেশি পড়েছিল। নালন্দা, ওদন্তপুরী, বিক্রমশীল, সোমপুরী, জগদ্দল, বিক্রমপুরী প্রভৃতি বৌদ্ধবিহারগুলি সেকালের শিক্ষাদীক্ষায় বড়ো ভূমিকা নিয়েছিল। বিখ্যাত বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের মধ্যে শান্তরক্ষিত, শান্তিদেব, কম্বলপাদ, শবরীপাদ, কাহ্নপাদ, গোরক্ষনাথ এবং অতীশ দীপঙ্কর ছিলেন উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া চর্যাপদ-সহ ভাষা-সাহিত্য, স্থাপত্য-ভাস্কর্য ও চিত্রশিল্পে বৌদ্ধধর্মের বিশেষ প্রভাব পড়েছিল। পাল আমলে স্থাপত্য নিদর্শনগুলির মধ্যে বৌদ্ধস্তূপ ও বিহার ছিল প্রধান। পোড়ামাটির শিল্পসামগ্রী-গুলিতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, সমাজজীবন ও ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদি ফুটে উঠত। বৌদ্ধধর্মের পান্ডুলিপি অলংকরণ করতে মিনিয়েচার বা অণুচিত্র আঁকার চল জনপ্রিয় হয়েছিল।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর আট/দশটি বাক্যে উত্তর দাও: [প্রশ্নের মান– ৫]

১. সামন্ত ব্যবস্থায় স্তরভেদের চিত্রটির বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ খ্রিস্টীয় নবম শতকে পশ্চিম ইউরোপে এক রকম সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছিল, একে সামন্ততন্ত্র বলে।

[a] সমাজকাঠামোঃ সামন্ত সমাজের কাঠামো ছিল ত্রিভুজের মতো। এই সমাজকাঠামোয় ছিল রাজা, বিভিন্ন সামন্ত, উপসামন্ত এবং জনগণের অবস্থান।

[b] বিভিন্ন স্তরঃ সামন্ত সমাজে সবার ওপরে রাজার অবস্থান, রাজার নীচে অল্প কিছু মহাসামন্ত ছিলেন, মহাসামন্তদের পরবর্তী ধাপে মাঝারি সামন্ত ও সবার নীচেজনগণ। অর্থাৎ রাজা, সামন্ত এবং জনগণকে নিয়ে স্তরভিত্তিক সামন্ত সমাজ গড়ে ওঠে।

(c) সম্পর্কঃ মহাসামন্ত, সামন্তদের মধ্যে সব সময় যুদ্ধ-বিবাদ লেগে থাকত। সবাই চাইত নিজের ক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে। কখনো আবার এরা জোট বেঁধে রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামত এবং রাজার ক্ষমতাকেও তারা অস্বীকার করত। এর ফলে রাজশক্তির দুর্বলতা পরিষ্কার হয়ে যায়। সামন্ত প্রভুরা দুর্গ তৈরি করত। সামন্ত প্রভুদের ম্যানরে বা খামারে ভূমিদাস বা সার্ফদের খাটিয়ে উৎপাদন করা হত। এ ছাড়া ছিল স্বাধীন চাষি। অর্থাৎ রাজস্ব ও শাসনের অধিকার এইভাবে স্তরে স্তরে ভাগ হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা সামন্ততন্ত্রের উদ্ভবকে নিশ্চিত করেছিল।

২. প্রাচীনকালে বাঙালির খাওয়াদাওয়া সম্পর্কে পরিচয় দাও।

উত্তরঃ প্রাচীনকালে বাংলার প্রধান ফসল ছিল ধান। তাই বাঙালির প্রধান খাদ্য ছিল ভাত। প্রাচীন কাব্যে বর্ণনা রয়েছে যে, গরম ভাতে গাওয়া ঘি, তার সঙ্গে মৌরলা মাছ, নালতে (পাট) শাক, সরপড়া দুধ, আর পাকা কলা দিয়ে খাবার বাঙালির রসনায় তৃপ্তি আনত। বাংলায় উৎপন্ন লবণ অন্য মাত্রা যোগ করেছিল।

[a] শাকসবজিঃ বাঙালির খাদ্য তালিকায় নানা ধরনের শাকসবজি ছিল। সেই সময় তাদের খাবারে জায়গা করে নিয়েছিল বেগুন, লাউ, কুমড়ো, ঝিঙে, কাঁকরোল, কচু ইত্যাদি।

[b] মাছঃ বাংলা হল নদীনালার দেশ। নানা ধরনের মাছে ভরতি ছিল নদনদীগুলি। রুই, পুঁটি, মৌরলা, শোল, ইলিশ ইত্যাদি মাছ খাওয়ার অভ্যাস ছিল।

[c] মাংস-জাতীয় খাবারঃ প্রাচীনকালে বাঙালি সমাজের সকলে না হলেও অনেকেই হরিণ, ছাগল, নানা রকমের পাখি, কচ্ছপের মাংস, কাঁকড়া, শামুক, শুকনো মাছ ইত্যাদি খেত।

[d] আলু ও ডালঃ মধ্যযুগে বাঙালি পোর্তুগিজদের কাছ থেকে আলু খাওয়া শিখেছিল। তারা ডাল খাওয়ার অভ্যাস পেয়েছিল উত্তর ভারতের মানুষের কাছ থেকে।

[e] মিষ্টান্ন-জাতীয় খাবারঃ বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে ছিল মিষ্টি-জাতীয় খাদ্যবস্তু। দুধ ও তার থেকে তৈরি দই, পায়েস, ক্ষীর ও আখের গুড় ছিল প্রধান।

[f] পানীয়ঃ বাঙালি সমাজে পানীয় খাওয়ার চলও ছিল। মহুয়া ও আখ থেকে তৈরি পানীয় তাদের সমাজে চালু ছিল।

৩. নালন্দা মহাবিহার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তরঃ প্রাচীন ভারতের একটি বিশ্বখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্র ছিল নালন্দা মহাবিহার। সম্ভবত গুপ্ত সম্রাটদের আমলে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে বিহারের নালন্দায় এই বৌদ্ধবিহার তৈরি হয়েছিল।

[a] শিক্ষাদীক্ষাঃ নালন্দার সমৃদ্ধির যুগে এখানে দশ হাজার আবাসিক ভিক্ষুর মধ্যে ১৫০০ জন ছিলেন শিক্ষক এবং ৮৫০০ জন ছিলেন ছাত্র। কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছাত্ররা এখানে পড়ার সুযোগ পেত। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে নালন্দায় শিক্ষালাভ করেছেন।

[b] রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতাঃ কনৌজরাজ হর্ষবর্ধন এবং পাল রাজাদের আমলে নালন্দা রাজকীয় আনুকূল্য লাভ করেছিল। কেবল স্থানীয় রাজা এবং জমির মালিকরাই নয় সুদূর সুমাত্রা দ্বীপের শাসকও নালন্দা মহাবিহারের জন্য সম্পদ দান করেছিলেন। এর ফলে ছাত্রদের বিনা পয়সায় খাবার, জামাকাপড়, শয্যাদ্রব্য এবং ওষুধপত্র দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।

[c] আন্তর্জাতিক খ্যাতিঃ নালন্দায় পড়াশোনার জন্য চিন, তিব্বত, কোরিয়া, মোঙ্গলিয়া থেকে ছাত্ররা আসত। চিলা ছাত্রদের জন্য বিশেষ তহবিলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ত্রয়োদশ শতকেও এর খ্যাতি বজায় ছিল। কিন্তু এই শতকেই তুর্কি অভিযানকারীরা বিহার আক্রমণ করে নালন্দা মহাবিহারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসাধন করেছিল।

৪. বিক্রমশীল মহাবিহার সম্পর্কে পরিচয় দাও।

উত্তরঃ পালরাজ ধর্মপাল (৭৭০-৮১০ খ্রি.) মগধে (বিহারের ভাগলপুর জেলা) বিক্রমশীল মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন।

[a] শিক্ষা পরিকাঠামোঃ বিক্রমশীল মহাবিহার ছিল নালন্দার মতো বিদ্যাচর্চার একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার। এই মহাবিহারে ব্যাকরণ, তর্কশাস্ত্র, দর্শন ইত্যাদি পড়ানো হত এবং ভরতির জন্য ছাত্রদের প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হত। শিক্ষা শেষ হলে ছাত্রদের উপাধি দেওয়া হত।

[b] অধ্যাপকবৃন্দঃ বিক্রমশীল মহাবিহারে বৌদ্ধধর্ম চর্চা ও শিক্ষার জন্য একশোরও বেশি আচার্য ছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শান্তিপদ, কল্যাণ রক্ষিত, শ্রীধর প্রমুখ। দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ) ছিলেন বিক্রমশীল মহাবিহারের অধ্যক্ষ।

[c] মহাবিহারের ধ্বংসসাধনঃ ধর্মপালের সময় থেকে পরবর্তী প্রায় ৫০০ বছর বিক্রমশীল মহাবিহার শিক্ষাচর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। লক্ষ্মণসেনের রাজত্বের শেষদিকে বখতিয়ার খলজির নেতৃত্বে তুর্কিরা বাংলা আক্রমণ করে বিক্রমশীল মহাবিহার ধ্বংস করেন।

৫. পাল ও সেন আমলে বাংলায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ধরন কেমন ছিল বলে তোমার মনে হয় ? [পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন]

উত্তরঃ পাল ও সেন আমলে বাংলার সাধারণ মানুষের জীবন ছিল মোটামুটি সচ্ছল। তবে ভূমিহীন ব্যক্তি ও শ্রমিকের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। সমসাময়িক সাহিত্যে গরিব মানুষের জীবনের ছায়া পড়েছে। সমসাময়িক কবিদের রচনায় খিদেয় কাতর শিশু, গরিব লোকের ভাঙা কলসি, ছেঁড়া কাপড় প্রভৃতির উল্লেখ পাওয়া যায়। চর্যাপদের একটি কবিতায় আছে- ‘হাঁড়িতে ভাত নেই, নিত্য উপবাস।’ এটাই চরম দারিদ্র্যের নিদর্শন।

পাল-সেন আমলে গ্রামের সম্পন্ন কৃষকের জীবনযাত্রার ছবি ফুটে উঠেছে এমন একটি রচনায় লেখা হয়েছে-বর্ষার জল পেয়ে চমৎকার ধান গজিয়েছে, গোরুগুলো ঘরে ফিরে এসেছে, খেতে ভালো আখ হয়েছে, আর কোনো ভাবনা নেই।

পাল আমলের তুলনায় সেন আমলে বর্ণব্যবস্থা কঠোর ও অনমনীয় হয়ে পড়েছিল। এই সময় ব্রাহ্মণরাই সমাজপতি হিসেবে সুবিধা ভোগ করত। অব্রাহ্মণরা ব্রাহ্মণদের কাজগুলি করতে পারত। পাল-সেন আমলে পোড়ামাটির শিল্পসামগ্রীতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, সমাজজীবন ও ধর্ম বিশ্বাস ইত্যাদি ফুটে উঠেছে।

প্রাচীন কাব্য থেকে জানা যায়, গরিব লোকের খাদ্য তালিকায় থাকত নানা ধরনের শাকসবজি। সেই সময় বেগুন, লাউ, কুমড়ো, ঝিঙে, কাকরোল, ডুমুর, কচু প্রভৃতি শাকসবজি এবং কই, পুঁটি, মৌরলা, শোল, ইলিশ ইত্যাদি মাছ খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এ ছাড়া আখের গুড় ও দুধ ছিল বাঙালির প্রিয় খাদ্যবস্তু।

Leave a Reply