ভাঙার গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি | Bhangar Gaan Kobitar Question Answer Class 9 [WBBSE]

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now
                       ভাঙার গান
       —কাজী নজরুল ইসলাম
             বহু বিকল্পীয় প্রশ্ন (MCQ) 
                 প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
• ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখ :
১. ভাঙার গান’ কবিতার মূল কাব্যগ্রন্থ হল—
(ক) অগ্নিবীণা
(খ) বিষের বাঁশি
(গ) ভাঙার গান
(ঘ) সিন্ধু হিন্দোল
উত্তরঃ (গ) ভাঙার গান।
২. ‘ভাঙার গান’ কবিতাটি লিখেছেন—
(ক) বন্দে আলি মিঞা
(খ) কাজী নজরুল ইসলাম
(গ) জসীমউদ্দীন
(ঘ) শামসুর রাহমান
উত্তরঃ (খ) কাজী নজরুল ইসলাম।
৩. ‘ভাঙার গান’ কবিতায় যে-ঐতিহাসিক চরিত্রের প্রসঙ্গ এসেছে, তার নাম—
(ক) মহাদেব
(খ) প্রতাপ সিংহ
(গ) সাজাহান
(ঘ) হায়দার
উত্তরঃ (ঘ) হায়দার।
৪. ভাঙার গান’ কবিতায় ক-টি পঙক্তি আছে ?
(ক) ২৬টি
(খ) ৩২টি
(গ) ৩৩টি
(ঘ) ৩০টি
উত্তরঃ (খ) ৩২টি
৫. ‘ভাঙার গান’ কবিতাটি লেখা হয়েছিল —
(ক) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ (ঘ) ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে।
৬. ‘ভাঙার গান’ কবিতায় যে দেবতার কথা রয়েছে, তা হল—
(ক) বিষ্ণ
(খ) ব্রহ্মা
(গ) মহাদেব
(ঘ) কালী
উত্তরঃ (গ) মহাদেব।
৭. ‘কারার’ কপাট যা দিয়ে তৈরি, তা হলো—
(ক) লোহা দিয়ে
(খ) সোনা দিয়ে
(গ) কাঠ দিয়ে
(ঘ) পেতল দিয়ে
উত্তরঃ (ক) লোহা দিয়ে।
৮. ‘ভেঙে ফেল, কররে লোপাট’—এখানে ‘লোপাট’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন—
(ক) চুরি করা
(খ) অন্যত্র সরানো
(গ) বন্ধ করা
(ঘ) নির্মূল করা
উত্তরঃ (ঘ) নির্মূল করা।
৯. ভাঙার গান কবিতায় কবি ভেঙে ফেলতে বলেছেন—
(ক) জেলখানা
(খ) পাষাণ-বেদী
(গ) প্রাচীন প্রাচীর
(ঘ) লৌহ-কপাট
উত্তরঃ (ঘ) লৌহ-কপাট।
১০. যত সব বন্দিশালায় …কবি কী করতে বলেছেন?
(ক) ধাক্কা মারতে
(খ) জল ঢালতে
(গ) আগুন জ্বালাতে
(ঘ) গুঁড়িয়ে দিতে
উত্তরঃ (গ) আগুন জ্বালাতে।
১১. ‘শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী।” -এখানে ‘শিকল-পুজো’ বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন—
(ক) পরাধীনতা
(খ) ইংরেজ অপশাসনের প্রতি পরাধীন দেশবাসীর আনুগত্য
(গ) ইংরেজ শাসন
(ঘ) ইংরেজ অপশাসন
উত্তরঃ (খ) ইংরেজ অপশাসনের প্রতি পরাধীন দেশবাসীর আনুগত্য
১২. “ভগবান পরবে ফাঁসি।—কে ভগবানকে ফাঁসি পরাতে চান?
(ক) শাসক
(খ) জনগণ
(গ) বিপ্লবী
(ঘ) তরুন ঈশান
উত্তরঃ (ক) শাসক।
১৩. ‘বিষাণ’ আসলে হল—
(ক) যুদ্ধাস্ত্র
(খ) ডুগডুগি
(গ) বিশেষ ধরনের অলংকার
(ঘ) বাদ্যযন্ত্র
উত্তরঃ (ঘ) বাদ্যযন্ত্র।
১৪. ‘নিশান’ শব্দটির অর্থ হল—
(ক) নিশানা
(খ) রাত্রি
(গ) চিহ্ন
(ঘ) পতাকা
উত্তরঃ (ঘ) পতাকা।
১৫. ‘শিখায় এ হীন তথ্য কে রে?—হীন তথ্যটি হল—
(ক) লৌহ-কপাট ভেঙে ফ্যালা যায়
(খ) ভগবানকে ফাঁসি দেওয়া যায়
(গ) পাগলা ভোলাকে অবরুদ্ধ করা যায়
(ঘ) দেশকে স্বাধীন করা যায়
উত্তরঃ (খ) ভগবানকে ফাঁসি দেওয়া যায়।
১৬. ‘সর্বনাশী / শিখায়…..’— কী শিক্ষা দেয়?
(ক) হীন তথ্য
(খ) ঠিক তথ্য
(গ) দীন তথ্য
(ঘ) অর্থহীন তথ্য
উত্তরঃ (ক) হীন তথ্য।
১৭. ‘হীন তথ্য’ বলতে কবি এখানে বুঝিয়েছেন –
(ক) ভুল খবর
(খ) মিথ্যা ও বানানো কথা
(গ) বিকৃত সংবাদ
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তরঃ (খ) মিথ্যা ও বানানো কথা। 
১৮. ‘নাচে ওই কাল-বোশেখি, —পরের লাইন কী হবে ?
(ক) যতসব বন্দি-শালায়
(খ) সর্বনাশী শিখায়
(গ) ভেঙে ফেল, কররে লোপাট
(ঘ) কাটাবি কাল বসে কি?
উত্তরঃ (ঘ) কাটাবি কাল বসে কি?
১৯. কবি হেঁচকা টান দিতে বলেছেন—
(ক) ভগবানকে
(খ) প্রাচীন প্রাচীরকে
(গ) গারদগুলিকে
(ঘ) মালিককে
উত্তরঃ (গ) গারদগুলিকে।
২০. ‘কারার’ শব্দটির অর্থ কী?
(ক) কারুর
(খ) রাজপ্রাসাদ
(গ) কারাগার
(ঘ) বিচারালয়
উত্তরঃ (গ) কারাগার।
২১. ‘নাচে ওই কাল বোশেখি’, এখানে ‘কাল-বোশেখি’ হল—
(ক) রুদ্র তান্ডবের প্রতীক
(খ) প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতীক
(গ) মুক্তিকামী মানুষের বিদ্রোহ ও বিপ্লবের প্রতীক
(ঘ) সময়ের পদচিহ্ন
উত্তরঃ (গ) মুক্তিকামী মানুষের বিদ্রোহ ও বিপ্লবের প্রতীক।
২২. ‘ভাঙার গান’ কবিতায় কবি ভিত্তি নাড়িয়ে দিতে বলেছেন—
(ক) ভীম কারার
(খ) পাষাণ-বেদীর
(গ) প্রাচীরের
(ঘ) দুন্দুভির
উত্তরঃ (ক) ভীম কারার।
        অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর ধর্মী প্রশ্নেত্তর 
               (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)
• কমবেশি ১৫ টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
১. ভাঙার গান কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে ?
উত্তরঃ ভাঙার গান কবিতাটি কবির ‘ভাঙার গান’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
২. “কারার ওই লৌহকপাট”- বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উত্তরঃ ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ বলতে কবি পরাধীন ভারতের ইংরেজ শাসকের কারাগারের কথা বলেছেন।
৩. “কারার ওই লৌহ-কপাট / ভেঙে ফেল, কররে লােপাট”—কবি কাদের এই আহ্বান জানিয়েছেন ?
উত্তরঃ পরাধীন ভারতে তরুণ বিপ্লবী বীরদের প্রতি কবি এই আহ্বান জানিয়েছেন।
৪. ‘কারার ওই লৌহ-কপাট’- কবি কেন ভেঙে ফেলতে বলেছেন ?
উত্তরঃ স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর বিপ্লবীদের কারাগার থেকে মুক্ত করে তাদের অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করার জন্য কবি লৌহকপাট ভেঙে ফেলতে বলেছেন |
৫. ‘শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী’-তে কাদের রক্ত জমাট হয়ে আছে?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকার দ্বারা অত্যাচারিত ভারতের বীর সন্তান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রক্ত জমাট হয়ে আছে।
৬. “ওরে ও তরুণ ঈশান!”-‘তরুণ ঈশান’কে কবি কী করতে বলেছেন?
উত্তরঃ ‘তরুণ ঈশান’কে কবি প্রলয় বিষাণ অর্থাৎ ধ্বংস ঘােষণাকারী শিঙা বাজাতে বলেছেন।
৭. “ওরে ও তরুণ ঈশান!—’তরুণ ঈশান’ বলতে কবি প্রকৃতপক্ষে কাদের বুঝিয়েছেন ?
উত্তরঃ ‘তরুণ ঈশান’ বলতে কবি প্রকৃতপক্ষে ভারতমাতার বীর সন্তান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বুঝিয়েছেন।
৮. “ঈশান’ শব্দের দুটি অর্থ লেখাে।
উত্তরঃ ‘ঈশান’ শব্দের অর্থ শিব। অন্যদিকে, ‘ঈশান’ হল উত্তর-পূর্ব দিক, যা দশটি দিকের একটি।
৯.“ওরে ও তরুণ ঈশান! / বাজা তাের প্রলয়-বিষাণ’—কবি কেন তরুণদলকে প্রলয়-বিষাণ বাজাতে বলেছেন?
উত্তরঃ ইংরেজদের কারাগারে স্বদেশের মুক্তিযােদ্ধারা বন্দি আছে। সেই কারাগার ভেঙে ফেলার জন্যই কবি প্রলয়-বিষাণ বাজাতে বলেছেন।
১০. “ধবংস-নিশান, / উড়ুক প্রাচী’র প্রাচীর ভেদি।”—কীসের ‘ধ্বংস-নিশান’?
উত্তরঃ স্বাধীনতাকামী বহু বীর বিপ্লবীকে ইংরেজ সরকার কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। সেইসব কারাগার ধবংস করে নিশান ওড়াতে হবে।
১১. “গাজনের বাজনা বাজা!”–’গাজনে’ কী ?
উত্তরঃ চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে শিব বা ধর্ম ঠাকুরকে কেন্দ্র করে যে উৎসব হয় তা ‘গাজন’ নামে পরিচিত।
১২. “কে দেয় সাজা / মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে ?”—‘মুক্ত স্বাধীন সত্য’ কী?
উত্তরঃ স্বাধীনতা ভারতবাসীর জন্মগত অধিকার এবং তারা তা অর্জন করবেই। এটিই ‘মুক্ত স্বাধীন সত্য’।
১৩, “ভগবান পরবে ফাঁসি?”— ‘ভগবান’ বলতে কবি কাকে বা কাদের বুঝিয়েছেন ?
উত্তরঃ এখানে ‘ভগবান’ বলতে কবি মৃত্যুঞ্জয়ী বীর বিপ্লবীদের, যাঁরা স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাঁদের বুঝিয়েছেন।
১৪. “ভগবান পরবে ফাঁসি?”— ভগবান ফাঁসি পরবে কেন ?
উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের অত্যাচারের প্রতিবাদ ও স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনের কারণেই ‘ভগবান’ অর্থাৎ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ফাঁসি হয়।
১৫. “শিখায় এ হীন তথ্য কে রে ?”—‘হীন তথ্য’ বলতে কী বােঝান হয়েছে ?
উত্তরঃ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ফাঁসি দিয়ে তাদের স্বপ্নকে ধবংস করা যায়— এটাই হল হীন তথ্য।
১৬. “হা হা হা পায় যে হাসি”—কবির হাসি পাওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ কবির হাসি পাওয়ার কারণ হল- অত্যাচারী ইংরেজ শাসক ভগবানতুল্য মৃত্যুঞ্জয়ী বিপ্লবীদের ফাঁসি দিতে চায়।
১৭. “ভগবান পরবে ফাঁসি ?”-কে ভগবানকে ফাঁসি দিতে চায় ?
উত্তরঃ অত্যাচারী ইংরেজ শাসক ভগবানকে ফাঁসি দিতে চায়।
১৮. “ওরে ও পাগলা ভােলা, /দে রে দে প্রলয়-দোলা”—‘পাগলা ভােলা’ কীভাবে প্রলয় দোলা দেবে ?
উত্তরঃ গারদগুলাে সজোরে ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে ‘পাগলা ভােলা’ প্রলয় দোলা দেবে।
১৯.‘মার হাঁক হৈদরী হাঁক”—“হৈদরী হাঁক’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?
উত্তরঃ হজরত মহম্মদের জামাতা হায়দার যেমন শত্রুর উদ্দেশে হাড় হিম করা হুংকার দিতেন, তেমন হাঁক তরুণ সম্প্রদায়ের কন্ঠে কবি শুনতে চান।
২০. “মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে!”—কে ডাকবে ?
উত্তরঃ তরুণ স্বাধীনতা সংগ্রামীরা মৃত্যুকে তাদের জীবনে ডাকবে অর্থাৎ হাসিমুখে বরণ করে নেবে।
২১. “নাচে ওই কাল-বােশেখি,”—‘কাল বােশেখি’ কীসের প্রতীক ?
উত্তরঃ ভাঙার গান কবিতায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সমবেত ভারতবাসীর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের সংগ্রামীঅবস্থানকে কবি কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
  ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
                (প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৩)
• কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
১.“রক্ত-জমাট / শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী!’— পঙক্তিটির অন্তর্নিহিতঅর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ পরাধীন ভারতের বিপ্লবকে স্তব্ধ করার অন্যতম হাতিয়ার হল কারাগার।
অত্যাচারী ইংরেজ শাসক স্বাধীনতা সংগ্রামী ভারতীয়দের কারাগারে বন্দি করে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। শােষক ইংরেজদের অত্যাচারে বিপ্লবীদের অনেক রক্ত ঝরেছে। কারাগারে লেগে রয়েছে সেই রক্ত। বিপ্লবীদের রক্ত লেগে থাকা সেই কারাগারই কবির কাছে হয়েছে দেশমাতার পূজার পাষাণ বেদি, যাতে শহিদের রক্ত জমাট হয়ে আছে।
২.“কারার ওই লৌহকপাট / ভেঙে ফেল, কররে লােপাট’— এই আহ্বানের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করাে।
উত্তরঃ লৌহ কপাট শব্দটির অর্থ হলো লোহার দরজা। এখানে লৌহ কপাট হল পরাধীন ভারতে ইংরেজ শাসকের কারাগার।
কারাগার অর্থাৎ বিদেশি শক্তির বাঁধন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কবি তরুণ বিপ্লবী শক্তিকে আহ্বান জানিয়েছেন। অত্যাচারী ইংরেজ শাসক দেশপ্রেমী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যে কারাগারে আটকে রেখেছে বা রাখতে চায় সেই সমস্ত কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন কবি।
৩.“ওরে ও তরুণ ঈশান! /বাজা তাের প্রলয়-বিষাণ”—তরুণ ঈশান প্রলয় বিষাণ বাজাবে কেন?
উত্তরঃ ‘ঈশান’ হলেন ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা শিব। জরাজীর্ণকে, অশুভকে বিনাশ করার জন্য তিনি যখন প্রলয় নৃত্য করেছিলেন, তার আগে বাজিয়েছিলেন ‘বিষাণ’ অর্থাৎ শিঙা। কবি নবীন বিপ্লবীদের ঈশানের সঙ্গে তুলনা করে ধ্বংসের বিষাণ বাজাতে বলেছেন। পরাধীন ভারতের তরুণ বিপ্লবীদের ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লব গড়ে তুলতে প্রলয় বিষানের প্রসঙ্গে এনে তাদের উদ্দীপ্ত করতে চেয়েছেন।
৪.ওরে ও পাগলা ভােলা”—‘পাগলা ভােলা’ কে? কবি এরকম বলেছেন কেন ? ১+২
উত্তরঃ ‘পাগলা ভােলা’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ প্রলয়ংকর মহাদেব, কিন্তু এখানে স্বাধীনতার স্বপ্নে অবিচল তরুণদের কথা বলা হয়েছে।
   » শিব তার প্রলয়রূপে যেরকম অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করে, কবি প্রত্যাশা করেছেন দেশপ্রেমিক তরুণরা ঠিক সেভাবেই শক্তি ও সাহসের উন্মত্ত প্রকাশে কারাগারের গারদগুলােকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে লৌহকপাট ভেঙে ফেলবে। এই উদ্যম, স্পর্ধা এবং সাহস আছে বলেই দেশের তরুণদের কবি ‘পাগলা ভােলা’ বলেছেন।
            রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর 
            (প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৫)
• কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও:
১. ভাঙার গান’ শীর্ষক গানটির নামকরণ কতটা যুক্তিসঙ্গত হয়েছে তা লেখো।
উত্তরঃ পাঠ্য ‘ভাঙার গান’ কবিতাটি বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের ‘ভাঙার গান’ নামক মূল কাব্যগ্রন্থের অংশ। যেকোনো শিল্পের নামকরণের মাধ্যমে শিল্পী তার অন্তর্মনের গুড় অভিপ্রায় কেই ব্যক্ত করেন। ভাঙার গানের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। মুক্তিকামী মানুষের বিদ্রোহের স্বপ্ন সমস্ত নস্যাৎ করে, ধ্বংস করে নব উদ্যমে সৃজনের বাসনা ঘোষিত হয়েছে আলোচ্য কবিতায়।
কবিতার প্রথম দুই চরণে কবি ভাঙার কথা বলেই শুরু করেছেন। তিনি তরুণ বিপ্লবীদের অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকের কারাগারের লৌহ কপাট ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন। আসলে চিরবিদ্রোহী নজরুল কারাগারের প্রতীকী ব্যঞ্জনায় সমস্ত ভারতীয়দের ওপর ব্রিটিশ অত্যাচারের অবসানের জন্য এমন উক্তি করেছেন। আর এই ভাঙন একমাত্র ঘটাতে পারে দেশের তরুণ বিপ্লবীরা। কবি তাই তাদের মধ্যে অশুভ শক্তির ধ্বংস ও শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠার রূপকে ফুটিয়ে তোলার জন্য তাদের ‘তরুণ ঈশান’, ‘পাগলা ভোলা’ রূপে সম্বোধন করেছেন। মহাদেব হলেন একই সঙ্গে সৃষ্টি ও সংহারের দেবতা, তাই কবি তাকে আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে হায়দারের বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠও শাসকের ভীতির কারণ হতে পারে ভেবে কবি আহ্বান জানিয়েছেন। আসলে দেশকে স্বাধীন করতে গেলে পরাধীনতার শৃঙ্খলকে ভাঙতে হবে আর সে-কথাই কবিতাটির বিভিন্ন ছত্রে ফুটে উঠেছে। তাই নামকরণটি যথাযথ ও সার্থক।
২. ‘ভাঙার গান’ রচনাটির পটভূমি উল্লেখ করে মমার্থ লেখাে।
উত্তরঃ ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ‘ভাঙার গান’ গানটি কাজী নজরুল ইসলাম অসহযােগ আন্দোলনের পটভূমিতে রচনা করেছিলেন । এই গানটিতে পরাধীন দেশমাতার শৃঙ্খলমােচনের কথা বিদ্রোহের ভঙ্গিতে প্রকাশিত হয়েছে। অত্যাচারী ইংরেজ শাসক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কারারুদ্ধ করেছে। কবি সেই কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে লােপাট করার ডাক দিয়েছেন। ইংরেজের অত্যাচারে দেশমাতার পূজার বেদি রক্তে লাল হয়ে গেছে। বিদেশি শাসকরা স্বদেশপ্রেমীদের গলায় ফাঁসির দড়ি পরাতে চায়। কিন্তু তারা জানে বিপ্লবী বীরদের মৃত্যু নেই, তাঁরা মৃত্যুঞ্জয়ী রুদ্র মহেশ্বর বা খ্যাপা ভােলানাথের মতাে প্রলয়নৃত্যে সমস্ত বাঁধ ভেঙে তরুণ দেশপ্রেমীরা স্বদেশকে মুক্ত করবেই। অর্থাৎ পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন হবে। তীব্র ঘৃণার পদাঘাতে ভেঙে পড়বে ভীমকারার তালা৷ গােটা দেশটাই আজ যেন এক কারাগার। সেই কারাগার থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন কবি। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ ভারতবাসী এভাবেই দেশমাতাকে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত করবে।
৩. “যতসব বন্দীশালায়— / আগুন জ্বালা।”— ‘ভাঙার গান’ কবিতাটিতে কবি নজরুলের বিদ্রোহী মানসিকতার যে পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে তা সংক্ষেপে লেখাে।
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলামের ‘ভাঙার গান’ কবিতাটি স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ মানুষের প্রতিবাদ এবং প্রতিরােধের আকাঙ্ক্ষাকেই যেন প্রকাশ করে। এই কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী শাসক শ্রেণির প্রতি কবির বিদ্রোহী মনােভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কারাগারের লৌহকপাটকে ভেঙে ফেলে সেখানে থাকা ‘রক্ত-জমাট/ শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী’-কে কবি ধ্বংস করতে বলেছেন। জেলখানার গারদগুলােয় ‘হেঁচকা টান দিতে বলেছেন। আত্মদানের মধ্যে দিয়েই কবি চেয়েছেন জীবনকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করতে, বলেছেন- “ডাক ওরে ডাক / মৃত্যুকে ডাক জীবনপানে। কখনওবা বলেছেন বন্দিশালায় আগুন জালিয়ে তাকে উপড়ে ফেলার জন্য। এই আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে কবি নজরুলের শুধু দুঃসাহস নয়, বরং বিদ্রোহ, সত্য ও স্বাধীনতার প্রতি আনুগত্যও প্রকাশ পেয়েছে। আপসহীন প্রতিবাদী মানসিকতায় কবি শুধু বিদ্রোহের কথা বলেননি, স্বাধীনতার জয় ঘােষণা করেছেন। গাজনের বাজনা বাজিয়ে ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির আগমনকে ঘােষণা করেছেন কবি। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেখানে জীবনের নতুন অভিষেক ঘটবে। শাসক আর শাসিতের মধ্যেকার দূরত্ব মিটে যাবে। এভাবেই ‘ভাঙার গান’ কবিতাটিতে নজরুলের স্বাধীনতাপ্রিয় বিদ্রোহী মনােভাবের প্রকাশ ঘটেছে।

This Post Has One Comment

Leave a Reply