কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি (কবিতা) মুকুন্দরাম চক্রবর্তী – নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্নের সমাধান | Class 9 Bengali Kalinga Deshe Jhar Brishti Question and Answer

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি (কবিতা) মুকুন্দরাম চক্রবর্তী – নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্নের সমাধান | Class 9 Bengali Kalinga Deshe Jhar Bristi Question and Answer

কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি (কবিতা) মুকুন্দরাম চক্রবর্তী – নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্নের সমাধান | Class 9 Bengali Kalinga Deshe Jhar Brihsti Question and Answer

সাহিত্য সঞ্চয়ন
নবম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)

নবম শ্রেণি বাংলা কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতার প্রশ্ন উত্তর | Class 9 Bengali Kalinga Deshe Jhar Brihsti Kobitar Question Answer wbbse

নবম শ্রেণির বাংলা ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কবিতার কবি পরিচিতি, উৎস, বিষয় সংক্ষেপ, নামকরণ, বহু বিকল্পীয়, অতি সংক্ষিপ্ত, ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | Class 9 Bengali Kalinga Deshe Jhar Brihsti Kobitar Question Answer wbbse

1. নবম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

2. নবম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন Click Here

নবম শ্রেণির বাংলা ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কবিতার কবি পরিচিতি, উৎস, বিষয় সংক্ষেপ, নামকরণ, বহু বিকল্পীয়, অতি সংক্ষিপ্ত, ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | West Bengal Class 9 Bengali Kalinga Deshe Jhar Brihsti Kobitar Question Answer wbbse

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর : ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কবিতা (মুকুন্দরাম চক্রবর্তী) নবম শ্রেণি বাংলা | MCQ Question Answer Class 9 Bengali wbbse

• ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো : প্রতিটি প্রশ্নের মান-১

১. ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতাটি কোন্ মঙ্গলকাব্যের অন্তর্গত ?
(ক) চণ্ডীমঙ্গল
(খ) মনসামঙ্গল
(গ) ধর্মমঙ্গল
(ঘ) শিবমঙ্গল

উত্তরঃ (ক) চণ্ডীমঙ্গল।

২. মেঘ কোথায় উচ্চনাদে ডাকে –
(ক) অট্টালিকা পরে
(খ) কলিঙ্গে
(গ) গুজরাটে
(ঘ) গগন মন্ডলে

উত্তরঃ (ঘ) গগন মন্ডলে।

৩. ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতাটির রচয়িতা—
(ক) মুকুন্দ চক্রবর্তী
(খ) দ্বিজ মাধব
(গ) মুক্তারাম সেন
(ঘ) মানিক দত্ত

উত্তরঃ (ক) মুকুন্দ চক্রবর্তী।

৪. কোন মাসে তাল পড়ে –
(ক) বৈশাখ মাসে (খ) আষাঢ় মাসে
(গ) আশ্বিন মাসে (ঘ) ভাদ্র মাসে

উত্তরঃ (ঘ) ভাদ্র মাসে।

৫. কবিতার ভণিতায় উল্লিখিত ‘চণ্ডীমঙ্গল’-এর অন্য নাম—
(ক) কলিঙ্গমঙ্গল (খ) মুকুন্দমঙ্গল
(গ) অম্বিকামঙ্গল (ঘ) চণ্ডীগান

উত্তরঃ (গ) অম্বিকামঙ্গল।

৬. কী উলটিয়ে পড়ে ?
(ক) শস্য (খ) পাথরের মূর্তি (গ) গাছপালা
(ঘ) ঘরবাড়ি

উত্তরঃ (ক) শস্য

৭. মুকুন্দ চক্রবর্তী কোন্ উপাধি পেয়েছিলেন ?
(ক) মঙ্গল কবি (খ) কঙ্কণ কবি
(গ) কবিকঙ্কণ (ঘ) চণ্ডীমঙ্গলের কবি

উত্তরঃ (গ) কবিকঙ্কন।

৮. ‘মেঘে কৈল অন্ধকার’— ফলে কী হল ?
(ক) কেউ কারোর শরীর দেখতে পাচ্ছিল না
(খ) কেউ নিজের শরীর দেখতে পাচ্ছিল না
(গ) সবাই দিনকেই রাত ভাবছিল
(ঘ) কেউ নিজের বাড়ি দেখতে পাচ্ছিল না

উত্তরঃ কেউ নিজের শরীর দেখতে পাচ্ছিল না।

৯. মঠ অট্টালিকা খানখান করে কে ভেঙে দিল ?
(ক) চন্ডী (খ) গজরাজ (গ) প্রবল ঝড়
(ঘ) হনুমান

উত্তরঃ (ঘ) হনুমান

১০. কলিঙ্গদেশে কতদিন ধরে বৃষ্টি হয়েছিল ?
(ক) দুইদিন (খ) সাত দিন (গ) চার দিন
(ঘ) দশ দিন

উত্তরঃ (খ) সাত দিন

১১. ‘মেঘে কৈল অন্ধকার’ – বাক্যটি কবিতায় কতবার আছে ?
(ক) একবার (খ) তিনবার (গ) দুইবার
(ঘ) একবারও না

উত্তরঃ (গ) দুইবার।

১২. ‘ঈশানে উড়িল মেঘ সঘনে চিকুর।’—এখানে ‘চিকুর’ বলতে বোঝানো হয়েছে–
(ক) আকাশকে (খ) বিদ্যুৎকে (গ) বাতাসকে
(ঘ) কোনোটিই নয়।

উত্তরঃ (খ) বিদ্যুৎকে।

১৩. চণ্ডীর আদেশ কে পেয়েছিল ?
(ক) কলিঙ্গ বাসীরা (খ) গুজরাট বাসীরা
(গ) বীর হনুমান (ঘ) জৈমিনি

উত্তরঃ (গ) বীর হনুমান

১৪. ‘সঘনে চিকুর পরে’- “চিকুর” শব্দের অর্থ কি ?
(ক) নারকেল (খ) তাল (গ) বাজ (ঘ) বিদ্যুৎ

উত্তরঃ (ঘ) বিদ্যুৎ

১৫. ‘মুষলধারে’ শব্দের অর্থ কী ?
(ক) গদা (খ) অত্যন্ত বেগে। (গ) পেষণদণ্ড
(ঘ) অত্যন্ত মোটা ধারায়

উত্তরঃ (খ) অত্যন্ত বেগে।

১৬. কবিতায় কোন্ দেশের ঝড়-বৃষ্টির কথা বলা হয়েছে ?
(ক) বঙ্গদেশ (খ) অঙ্গদেশ (গ) কলিঙ্গদেশ
(ঘ) উত্তর দেশ।

উত্তরঃ (গ) কলিঙ্গদেশ।

১৭. ‘ঈশানে উড়িলো মেঘ সঘনে _________’ শূন্যস্থান পূরণ করো।
(ক) বরিষণ (খ) জলদ (গ) মেঘ (ঘ) চিকুর

উত্তরঃ (ঘ) চিকুর

১৮. চাল বিদরিয়া কি পড়ছে ?
(ক) তাল (খ) ডাব (গ) বরফ (ঘ) শিলা

উত্তরঃ (ঘ) শিলা।

১৯. ________ উড়িল মেঘ সঘনে চিকুর।’ (শূন্যস্থান পূরণ করো)
(ক) নৈঋতে (খ) ঈশানে (গ) গগনে
(ঘ) বায়ুতে।

উত্তরঃ (খ) ঈশানে।

২০. চারি মেঘে বর্ষণ হচ্ছিল—
(ক) ভয়ংকর বেগে (খ) মুষলধারে
(গ) উচ্চনাদে (ঘ) অল্প বেগে।

উত্তরঃ (খ) মুষলধারে।

২১. অম্বিকা মঙ্গল গান কে গেয়েছেন ?
(ক) নদ-নদী (খ) বীর হনুমান
(গ) শ্রীকবিকঙ্কণ (ঘ) চন্ডী

উত্তরঃ (গ) শ্রীকবিকঙ্কণ

২২. ‘মেঝ্যাতে পড়য়ে শিল __________।’
(ক) বৃষ্টি নিরন্তর (খ) যেন পাকা তাল
(গ) কলিঙ্গ-মণ্ডলে (ঘ) বিদারিয়া চাল

উত্তরঃ (ঘ) বিদারিয়া চাল।

২৩. শিলগুলির আকার কেমন ছিল ?
(ক) ছোটো শস্যদানার মতো
(খ) বড়ো বড়ো পাথর আকৃতি
(গ) ভাদ্রের তালের মতো
(ঘ) পর্বত সমান।

উত্তরঃ (গ) ভাদ্রের তালের মতো।

২৪. “চারি মেঘে বরিষে মুষলধারে জল।” – এখানে যে ভাবনাটি প্রকাশ পেয়েছে, তা হল—
(ক) চার রকমের মেঘ মুষলধারে জল বর্ষণ করছে
(খ) চারিদিক থেকে মেঘ জল বর্ষণ করছে
(গ) চারি মেঘে নামক মুষলধারে জল বর্ষণ করছে
(ঘ) কোনোটিই নয়

উত্তরঃ (ক) চার রকমের মেঘ মুষলধারে জল বর্ষণ করছে।

২৫. “না পাই দেখিতে কেহ রবির কিরণ।” এখানে যে ভাবনাটি প্রকাশ পেয়েছে, তা হল-
(ক) সূর্য ডুবে যাওয়ায় কেউ আর রবির কিরণ দেখতে পায় না।
(খ) ঘন মেঘ আকাশ ঢেকে যাওয়ায় সূর্যের আলো কেউ দেখতে পায়না।
(গ) সূর্য গ্রহণ হওয়ার ফলে রবির কিরণ দেখা যায় না।
(ঘ) কোনটিই নয়

উত্তরঃ (খ) ঘন মেঘ আকাশ ঢেকে যাওয়ায় সূর্যের আলো কেউদেখতে পায়না।

২৬. হনুমান আর কাদের চণ্ডী আদেশ দিয়েছিলেন?
(ক) বিশাল পর্বতদের
(খ) ভুজঙ্গদের
(গ) কলিঙ্গ প্রজাদের
(ঘ) নদনদীদের।

উত্তরঃ (ঘ) নদনদীদের।

২৭. কে অম্বিকামঙ্গল গান ?
(ক) মঙ্গলকাব্যের কবি
(খ) চণ্ডীদাস
(গ) শ্রীকবিকঙ্কণ
(ঘ) বীর হনুমান।

উত্তরঃ (গ) শ্রীকবিকঙ্কণ।

২৮. “দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার” – এখানে যে ভাবনাটি প্রকাশ পেয়েছে, তা হল—
(ক) মেঘ করার জন্য চারিদিক অন্ধকার হওয়ায় কেউ কারোর অঙ্গ দেখতে পায়না।
(খ) সূর্য ডুবে যাওয়ার জন্য কেউ কারোর অঙ্গ দেখতে পায় না।
(গ) সন্ধ্যে হয়ে যাবার জন্য কেউ কারোর অঙ্গ দেখতে পায় না।
(ঘ) কোনোটিই নয়।

উত্তরঃ (ক) মেঘ করার জন্য চারিদিক অন্ধকার হওয়াই কেউ কারো অঙ্গ দেখতে পায় না।

২৯. নিরবধি কতদিন নিরন্তর বৃষ্টি হল?
(ক) তিনদিন (খ) একমাস (গ) পাঁচদিন
(ঘ) সাতদিন।

উত্তরঃ (ঘ) সাত দিন।

৩০. ” __________ কাৰ্য্য হেজ্যা গেল ঘর।।’
(ক) কলিঙ্গ প্রজার (খ) বীর হনুমানের
(গ) আছুক শস্যের (ঘ) নদনদীগণের।

উত্তরঃ (গ) আছুক শস্যের।

৩১. কোন্ মাসে তাল পড়ে ?
(ক) বৈশাখ (খ) কার্তিক (গ) ফাল্গুন
(ঘ) ভাদ্র।

উত্তরঃ (ঘ) ভাদ্র।

৩২. বীর হনুমান কী করেন ?
(ক) বৃষ্টি থামিয়ে দেন
(খ) মঠ অট্টালিকা ভেঙে খান খান করেন
(গ) প্রলয় থামান
(ঘ) চণ্ডীর আদেশের অপেক্ষায় থাকেন।

উত্তরঃ (খ) মঠ অট্টালিকা ভেঙে খান খান করেন।

৩৩. ঢেউগুলির আকার কেমন ?
(ক) ছোটো ছোটো (খ) তাল গাছের সমান
(গ) বিশাল পর্বত সমান
(ঘ) ভয়ংকর আকৃতির।

উত্তরঃ (গ) বিশাল পর্বত সমান।

৩৪. কী দলমল করচ্ছিল ?
(ক) পর্বত (খ) মঠ-অট্টালিকা
(গ) মাঝারি আকৃতির (ঘ) ঘরগুলি

উত্তরঃ (ঘ) ঘরগুলি।

৩৫. কবিতার শেষে কবির নামোল্লেখকে কী বলা হয় ?
(ক) বণিতা (খ) ভণিতা (গ) প্রকাশ
(ঘ) অহংকার

উত্তরঃ (খ) ভণিতা।

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নেত্তর : ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’(মুকুন্দ চক্রবর্তী) নবম শ্রেণি বাংলা | Very Short Answer Type Question Answer Class 9 Bengali wbbse

• কমবেশি ১৫ টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)

১.’কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশটি কার লেখা, কোন্ কাব্যের অন্তর্গত ?

উত্তরঃ কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কাব্যাংশটি মধ্যযুগের কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত ‘অম্বিকামঙ্গল’ কাব্যের অন্তর্গত।

২. মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীযাল কাব্যটি অন্য কী কী নামে পরিচিত ?

উত্তরঃ মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটি ‘অভয়ামঙ্গল’,’চন্ডিকামঙ্গল’, ‘কবিকঙ্কণ চণ্ডী’,’অম্বিকাঙাল’ প্রভৃতি নামেও পরিচিত।

৩, মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমণ্ডল কাব্যটির ক-টি খণ্ড ও কী কী ?

উত্তরঃ মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটির দুটি খণ্ড, যথা— আখেটিক খণ্ড এবং বণিক খন্ড।

৪. কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ চণ্ডীমণ্ডল কাব্যের কোন্ খণ্ডের অন্তর্গত ?

উত্তরঃ ‘কলিদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কাব্যাংশটি চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খন্ডের অন্তর্গত।

৫. “দেখিতে না পায় কেহ অঙগ আপনার’— কলিঙ্গবাসী নিজেদের অঙ্গ দেখতে পাচ্ছে না কেন ?

উত্তরঃ চারদিকের আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন হওয়ায় সমগ্র কলিঙ্গদেশ অন্ধকারে ঢেকে গেছে, ফলে কলিঙ্গবাসী নিজেদের অঙ্গ দেখতে পাচ্ছেন না।

৬. উচ্চনাদে কলিঙ্গ দেশে কীসের ডাক শােনা গিয়েছে ?

উত্তরঃ ঘন মেঘে ঢাকা কলিঙ্গের আকাশে জোরে জোরে মেঘের ডাক শােনা গিয়েছে।

৭. ‘প্রলয় গনিয়া প্রজা ভাবয়ে বিষাদ।’— মন্তব্যটির অর্থ লেখাে।

অথবা,

কলিঙ্গের প্রজাদের মন বিষাদগ্রস্ত কেন ?

উত্তরঃ চারদিক মেঘে ঢাকা অবস্থায় মুশলধারে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ঘনঘন মেঘের ডাকে প্রজারা ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কায় বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

৮, ‘হুড় হুড় দুড় দুড় বহে ঘন ঝড়।’— উক্তিটির তাৎপর্য কী ?

উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটিতে কলিঙ্গদেশে মেঘের প্রবল গর্জন এবং মুশলধারে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যে প্রচন্ড ঝড় হচ্ছিল তার ভয়ানক রূপ প্রকাশ পাচ্ছে।

৯. ‘বিপাকে ভবন ছাড়ি গ্রজা দিল রড়’— কোন্ বিপাকে পড়ে প্রজারা পালিয়েছিল ?

উত্তরঃ মুশলধারায় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ভয়ংকর ঝড়ের তাণ্ডবে আসন্ন পদ্যেকেথা ভেবে প্রজারা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল।

১০ .শ্রীকবিকঙ্কণ কার উপাধি ?

উত্তরঃ শ্রীকবিকঙ্কণ কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর উপাধি।

১১. ‘ধূলে আচ্ছাদিত হইল যে ছিল হরিত’— লাইনটির অর্থ লেখাে।

উত্তরঃ উস্তৃত পত্তিটির অর্থ হল সবুজ শস্যখেত ধুলােয় ঢেকে গেল।

১২. প্রজা চমকিত হল কেন ?

উত্তরঃ বিধ্বংসী ঝড়বৃষ্টির তাণ্ডবে সমগ্র কলিঙ্গদেশ ধুলােয় ডেকে যায়।এবং প্রবল দুর্যোগে শস্যখেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রজারা চমকিত হয়।

১৩. ‘চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ’– ‘চারি মেঘ’-এর নাম লেখাে।

উত্তরঃ ‘চারি মেঘ’ হল সম্বৰ্ত, আবর্ত, পুষ্কর এবং দ্ৰোণ।

১৪. চারদিকে মেঘে জল দেয় কারা ?

উত্তরঃ কলিঙ্গদেশে প্রবল ঝড়বৃষ্টির সময় চারদিকে মেঘে জল দিয়েছিল ‘অষ্ট গজরাজ’ বা আটটি শ্রেষ্ঠ হাতি।

১৫. জলধারার বর্ষণকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ?

উত্তরঃ জলধারার প্রবল বর্ষণকে করি-কর অর্থাৎ হাতির শুঁড় দিয়ে জল তোলার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

১৬. ‘কারাে কথা শুনিতে না পায় কোন্ জন।’— কারও কথা শুনতে না পাওয়ার কারণ কী ?

উত্তরঃ প্রবল বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বারবার মেঘের প্রবল গর্জনে কলিঙ্গবাসী কেউ কারও কথা শুনতে পাচ্ছিল না।

১৭. মেঘ ঝড়বৃষ্টির থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কলিঙ্গবাসী কার কথা স্মরণ করেছেন ?

অথবা,

কলিঙ্গবাসী জৈমিনিকে স্মরণ করে কেন ?

উত্তরঃ মেঘ ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে প্রবল বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কলিঙ্গবাসী ঋষি জৈমিনির কথা স্মরণ করেছেন।

১৮. ‘না পায় দেখিতে কেহ রবির কিরণ’— রবির কিরণ দেখতে না পাওয়ার কারণ কী ?

উত্তরঃ ভয়ংকর কালাে মেঘে চারদিক ডেকে গিয়ে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে কেউ সূর্যরশ্মি দেখতে পাচ্ছিল না।

১৯. গর্ত ছেড়ে কারা জলে ভেসে বেড়াচ্ছে ?

উত্তরঃ প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে কলিঙাদেশ জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় গর্ত ছেড়ে সাপ জলে ভেসে বেড়াচ্ছে।

২০. কলিঙ্গদেশে কত দিন টানা বৃষ্টিপাত হয়েছিল ?

উত্তরঃ কলিঙ্গদেশে টানা সাত দিন প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছিল।

২১. সাত দিনের বৃষ্টিতে কৃষিকাজ ও ঘরবাড়ির কী ক্ষতি হল ?

উত্তরঃ সাত দিনের বৃষ্টিতে শস্যখেত জলে ডুবে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেল এবং প্রবল শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেল।

২২. “ভাদ্রপদ মাসে যেন পড়ে থাকা তাল’— কবি কোন বিষয়ের সঙ্গে এমন তুলনা করেছেন ?

উত্তরঃ প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে ঘরের চাল ভেদ করে যে শিল মেঝেতে এসে পড়ে তার সঙ্গে ভাদ্র মাসের পাকা তালের তুলনা করা হয়েছে।

২৩. কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি’ কাব্যাংশে শিল পড়াকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ?

উত্তরঃ ‘কলিজাদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কাব্যাংশে বড়াে আকারের শিল পড়াকে ভাদ্র মাসে তাল পড়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

২৪. ‘চণ্ডীর আদেশ পান বীর হনুমান।’— আদেশ পেয়ে হনুমান কী করেছিল ?

উত্তরঃ দেবী চণ্ডীর আদেশ পেয়ে বীর হনুমান মঠ, অট্টালিকা ভেঙে খানখান করেছিল।

২৫. ‘উঠে পড়ে ঘরগুলা করে দলমল’— এর কারণ কী ?

উত্তরঃ পর্বতের সমান নদীর ঢেউয়ের দাপটে কলিঙ্গদেশের বাড়িঘর জলে ভাসতে ভাসতে টলমল করছিল।

ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর : কলিঙ্গদেশের ঝড়-বৃষ্টি (মুকুন্দরাম চক্রবর্তী) নবম শ্রেণি বাংলা | MCQ Question Answer Class 9 Bengali wbbse

• প্রসঙ্গ নির্দেশসহ কম-বেশি কমবেশি ৬০টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : (প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৩)

১. ‘দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার।’— কারাের অঙ্গ দেখতে না পাওয়ার কারণ কী ?

উত্তরঃ কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কবিতায় কলিঙ্গদেশে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। হঠাৎই কলিঙ্গদেশে ভয়ংকর প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দেয়। আকাশ ঘন কালাে মেঘে ছেয়ে যায়। ফলে সমগ্র কলিঙ্গদেশ অন্ধকারে ঢেকে যায়। কালাে মেঘের বুক চিরে ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়। অন্ধকার এতটাই ঘন হয়ে ওঠে যে, তা ভেদ করে প্রজাদের নিজেদের চেহারা পর্যন্ত দেখার উপায় থাকে না।

২. ‘ঈশানে উড়িল মেঘ সঘনে চিকুর।’— উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।

উত্তরঃ কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতায় আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় শুরু হয়। তৈরি হয় বন্যার আশঙ্কা প্রবল। ঝড়বৃষ্টি কলিঙ্গদেশে সর্বনাশ ডেকে আনে। উদ্ধৃতাংশটিতে সেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের বর্ণনা করা হয়েছে। কলিঙ্গদেশে আকাশের উত্তর-পূর্ব অর্থাৎ ঈশান কোণে মেঘের ঘনঘটায় চারদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। প্রজারা সেই অন্ধকারে নিজেদেরকেও দেখতে পাচ্ছে না। মেঘের বুক চিরে অবিরাম বিদ্যুতের ঝিলিক পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তােলে।

৩. প্রলয় গনিয়া প্ৰজা ভাবয়ে বিষাদ।’— প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রজাদের বিষাদের কারণ আলােচনা করাে।

উত্তরঃ কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি’ কাব্যাংশ থেকে নেওয়া উধৃতিটিতে কলিঙলাদেশের প্রজাদের কথা বলা হয়েছে।

কলিঙ্গদেশের আকাশে হঠাৎ প্রচুর মেঘ জমাট বাঁধে। ঈশান কোণে জমাটবাঁধা মেঘ সারা আকাশ ঢেকে ফেললে সর্বত্র অন্ধকার নেমে আসে। উত্তরের প্রবল বাতাসে দূর থেকে মেঘের গম্ভীর আওয়াজ ভেসে আসে। মেঘের প্রবল গর্জন ও ঘনঘন বিদ্যুৎচমকের সঙ্গে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টিপাত। মহাপ্লাবনের আশঙ্কায় প্রজারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

৪. ‘বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড়।’— ‘রড়’ শব্দের অর্থ কী ? কোথাকার প্রজারা কী কারণে বিপাকে পড়েছিল ? ১+ ২

উত্তরঃ ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কাব্যাংশ থেকে নেওয়া উধৃতাংশে উল্লিখিত ‘রড়’ শব্দের অর্থ পালিয়ে যাওয়া।

দেবী চণ্ডীর ইচ্ছা অনুযায়ী কলিঙ্গদেশে প্রবল ঝড়বৃষ্টি বিপর্যয় ডেকে আনে। আকাশ ঘন মেঘে ঢেকে যায়। ঘন অন্ধকারে প্রজাদের নিজেদের চেহারা পর্যন্ত দেখার উপায় থাকে না। প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে মেঘের গম্ভীর গর্জন ও ঝড়ের তাণ্ডবে সেখানকার প্রজারা বিপদের আশঙ্কায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।

৫. ‘পরিচ্ছিন্ন নাহি সন্ধ্যা দিবস রজনী।’— ‘পরিচ্ছিন্ন’ শব্দের অর্থ কী ? কবি এরকম বলেছেন কেন ? ১+২

উত্তরঃ কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতায় পাওয়া ‘পরিচ্ছিন্ন’ শব্দটির অর্থ হল ‘বিভেদ’ বা পার্থক্য’।

দেবীচণ্ডীর ইচ্ছায় কলিঙ্গদেশে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়| সমগ্র আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। বিদ্যুৎ চমক আর মেঘগর্জনের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। প্রজারা ভয় পেয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। সবুজ শস্যের খেত ধুলােয় ঢেকে যায়। প্রবল বৃষ্টিতে জলে ডুবে যায় চারপাশ। জল-স্থল একাকার হয়ে পথ হারিয়ে যায়। মেঘের গর্জনে কেউ কারাের কথা শুনতে পায় না। অন্ধকার এতটাই নিবিড় হয়ে যায় যে দিন এবং রাত্রিকেও কেউ আলাদা করতে পারে না।

৬.’চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ।’— উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।

উত্তরঃ কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতায় দেবী চণ্ডীর নির্দেশে কলিঙ্গদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে ঘন কালাে মেঘে আকাশ ঢেকে যায়। প্রবল মেঘগর্জনে প্রজারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। ঝড়ের তাণ্ডবে তারা ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। সবুজ শস্যের খেত ধুলােয় ঢেকে যায়। বৃষ্টি এতটাই তীব্র হয় যে কবি মনে করেন, আটটি দিকের পাহারাদার আটটি হাতি-ঐরাবত, পুণ্ডরীক, বামন, কুমুদ, অঞ্জন,পুষ্পদন্ত, সার্বভৌম এবং সুপ্রতীক যেন তাদের খুঁড়ের সাহায্যে চারমেঘে জল দিচ্ছে। আর তার ফলেই প্রবল বৃষ্টিপাতে চারপাশ জলে ডুবে গেছে।

৭.’কলিঙে সােঙরে সকল লােক যে জৈমিনি’— জৈমিনি কে ? কলিঙ্গবাসীর জৈমিনিকে স্মরণের কারণ কী ? ১+ ২

উত্তরঃ কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কাব্যাংশে উল্লিখিত জৈমিনি হলেন এক বাক্‌সিদ্ধ ঋষি। এনার নাম স্মরণ করলে বজ্রপাত বন্ধ হয়ে যায় এই বিশ্বাসে বজ্রপাতের সময় মানুষ এঁর নামকীর্তন করে।

কলিঙাদেশের আকাশে হঠাৎ ঘন কালাে মেঘ জমে ওঠে। আকাশভাঙা মেঘ থেকে বৃষ্টি নামে মুশলধারায়। মেঘের গম্ভীর গর্জন, ঘনঘন বজ্রপাত, ঝড়ের প্রবল তাণ্ডবে ভীত কলিঙ্গাবাসী এই ভীষণ বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার আশায় ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে।

৮.“না পায় দেখিতে কেহ রবির কিরণ’— কারা, কেন রবির কিরণ দেখতে পায়নি ? ১+২

উত্তরঃ ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কাব্যাংশ থেকে নেওয়া উধৃতাংশটিতে ঝড়বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কলিঙ্গবাসীর কথা বলা হয়েছে।

কলিগদেশের আকাশে হঠাৎই প্রচুর মেঘ জমাট বাঁধে। মেঘের ঘনঘটার।মাঝে বিদ্যুতের ঝলকে সমগ্র কলিঙদেশ কেঁপে ওঠে। দূরদিগন্তে মেঘের। গম্ভীর আওয়াজের সঙ্গে শুরু হয় মুষলধারায় বৃষ্টি। কালাে মেঘে চারদিকঅন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায় দিনরাত্রির পার্থক্যও বােঝা সম্ভব হয় না। কলিঙ্গাবাসীর সাত দিন একটানা প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে তারা সূর্যের। আলাে দেখতে পায় না।

৯. ‘জলে মহী একাকার পথ হইল হারা।’— কী কারণে কোথাকার পথ হারিয়ে গেছে ?

উত্তরঃ বাক্যটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতা থেকে নেওয়া। কবি এখানে চারি মেঘের বৃষ্টিতে কলিঙ্গদেশে কী ঘটেছে সেই ছবি এঁকেছেন।
চার মেঘ বর্ষণের জন্য আকাশে জড়াে হয়েছিল। তাদের মিলিত বর্ষণ তাে সাধারণ বর্ষণ নয়। মুশলধারে প্রবলতম বর্ষণ। সে বর্ষণ এক সপ্তাহ ধরে অবিরাম বর্ষণ। সেই বিপুল জলধারায় সব কিছু ডুবে একাকার। ডাঙার চিহ্নমাত্র নেই। জল আর জল। এইভাবে ভয়াবহ প্লাবনে যাতায়াতের পথ গভীর জলের তলে হারিয়ে গেছে।

১০. ‘ভাদ্রপদ মাসে যেন পড়ে থাকা তাল’— প্রসঙ্গসহ উপমার্থ বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতার এই অংশে কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী শিলাবৃষ্টির ছবি এঁকেছেন। মিলিত চার মেঘে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। সঙ্গে পড়ছিল শিল। এক-একটি শিলের চেহারা বিশাল। ভাদ্র মাসে তালগাছ থেকে পাকা তাল পড়ে। শিলার চেহারা এক-একটি পাকা তালের মতাে। বড়াে আকারের শিল। ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে পড়ছিল।

১১. ‘প্রজা ভাবয়ে বিষাদ।’— প্রজাদের মন বিষাদগ্রস্ত কেন ?

উত্তরঃ আকাশের ঘনীভূত মেঘের অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে। এমনকি নিজের অঙ্গও। ঈশান কোণ থেকে উড়তে থাকা মেঘে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, মেঘ ডাকছে। আকাশে চার রকমের মেঘ মিলিত হয়ে একসঙ্গে বৃষ্টি শুরু করেছে। মুষলধারে বৃষ্টি। কলিঙ্গদেশে শুরু হয়েছে মহাদুর্যোগ। মহাপ্রলয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের মনে। প্রলয় মানে তাে ধ্বংস। ঘরবাড়ি, খেতখামার, রুজিরােজগার সবকিছুই নষ্ট এমনকি জীবনহানিও। এ কথা ভেবে প্রজারা চিন্তিত, উদবিগ্ন ও ব্যাকুল। আর সেজন্য তাদের মন বিষাদগ্রস্ত।

১২. জলে মাহি কীভাবে একাকার হয়েছে ? ‘পৱিচ্ছিন্ন নাহি সন্ধ্যা দিবস রজনী।’— অর্থ বুঝিয়ে দাও ?

উত্তরঃ চারি মেঘ বর্ষণের জন্য আকাশে জড়াে হয়েছে। তাদের মিলিত বর্ষণ সাধারণ বর্ষণ নয়। যেন মহাপ্রলয়ের মুশলধারে বর্ষণ এবং সে বর্ষণ এক সপ্তাহ ধরে অবিরাম বর্ষণ। সেই বিপুল জলধারায় সবকিছু ডুবে একাকার। স্থলের চিহ্নমাত্র নেই। শুধুই জল আর জল। এভাবে জলে ডুবে মহি একাকার।

আকাশ মেঘে ঢেকে থাকায় আর বিরামহীন বর্ষণে এমনই পরিস্থিতি হয়েছে দিন, সন্ধ্যা ও রাত্রি যেন একাকার। মনে হচ্ছে তাদের সীমাবদ্ধতা যেন নেই।

১৩. ‘মেঘে কৈল অন্ধকার’–মেঘ কীভাবে অন্ধকার করল ?

উত্তরঃ কালকেতু মা চণ্ডীর বরপুত্র। চণ্ডীদেবীর কৃপায় কালকেতু গুজরাট নগরী গড়েছে। কিন্তু তা জনশূন্য। গুজরাট নগরীতে বসবাসের জন্য কলিঙ্গবাসীদের আহ্বান করা হয়। কিন্তু তা মান্য না করায় মা চণ্ডী তাদের ওপর রুষ্ট হন। তিনি দেবরাজ ইন্দ্রের শরণাপন্ন হন। দেবরাজ চণ্ডীর অনুরােধ রক্ষার জন্য চার মেঘদলকে কলিঙ্গদেশে মহাপ্রলয়ের আদেশ দেন। মেঘদল কলিঙ্গের আকাশে হাজির হয়। ঘনীভূত মেঘমালার অন্ধকারে কলিঙ্গদেশে নেমে আসে যেন রাতের অন্ধকার। মেঘ এইভাবে কলিঙ্গদেশকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে।

১৪. ‘দুড় দুড় হড় হুড’— কী শব্দ এবং শব্দগুলি কী অর্থ প্রকাশ কৱছে ? এই ধরনের শব্দের প্রভাবে কী ঘটল ?

উত্তরঃ ‘দুড় দুড়’ ও ‘হুড় হুড়’ ধ্বনি বা আওয়াজ প্রকাশক শব্দ বা ধ্বন্যাত্মক শব্দ। ‘দুড়’ বা ‘হুড়’ দু-বার করে উচ্চারিত হয়েছে। সেজন্য ‘দুড়দুড়’ বা ‘হুড়হুড়’ শুধু ধ্বন্যাত্মক শব্দ নয়, ধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বৈত। এই শব্দজোড়া ধ্বনি বা আওয়াজের প্রাবল্য প্রকাশ করছে।

ধেয়ে-আসা ঝড়-ঝঞ্জায় ও ‘দুড় দুড় হুড় হুড়’ আওয়াজে কলিঙ্গবাসী মহাপ্রলয় ও ঘােরতর প্রলয়ের আশঙ্কায় প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ঘর ছেড়ে পালাতে লাগল।

১৫. চণ্ডীর আদেশে কলিঙ্গদেশে কারা কীভাবে ধ্বংস ঘটিয়েছেন ?

উত্তরঃ দেবী মা চণ্ডীর আদেশে বীর হনুমান ও নদনদী কলিঙ্গদেশে প্রলয় বা ধ্বংস ঘটিয়েছেন।

বীর হনুমান পবননন্দন কলিঙ্গদেশে হাজির হন। যত মঠ। মন্দির ছিল সেগুলি ভেঙে খানখান করে ধ্বংস করেন। আর নদনদী বৃষ্টির জলে ফুলে-ফেঁপে প্রবল বন্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাহাড়-প্রমাণ বড়াে বড়াে ঢেউয়ে ঘরবাড়ি দলমল করে ধ্বংস করে।

১৬. কলিঙ্গদেশে সাপ জলে ভেসে বেড়াচ্ছে কেন ?

উত্তরঃ এক সপ্তাহ ধরে বিরামহীন বৃষ্টি হয়েছে মুশলধারে। ওই মহাদুর্যোগে কলিঙ্গদেশে জল-স্থল বলে আলাদা করে কোনাে অস্তিত্ব নেই। জলে সব ডুবে একাকার। সাপেরা গর্তে থাকে। সে-সব জলের তলে। সাপেরাও কলিঙ্গবাসীদের মতাে গৃহহারা, উদ্বাস্তু। কাজেই তারা জলে ভেসে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মহাদুর্যোগ কাউকে রেয়াত করেনি।

১৭. কী পরিস্থিতিতে কলিঙ্গের সকল লােক ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করছে ? স্মরণ করার কারণ কী ?

উত্তরঃ দেবরাজ ইন্দ্রের নির্দেশে চার প্রকার মেঘ কলিঙ্গ দেশের আকাশে জড়াে হয়ে মহাদুর্যোগ শুরু করেছে। শুরু হয়েছে ভয়ানক ঝড় আর মুশলধারে বৃষ্টি। তাদের সঙ্গী হয়েছে বজ্রের কানফাটানাে গর্জন আর ঘনঘন বজ্রপাত। বজ্রহুংকারের বর্ণনায় কবি বলেছেন, ‘হুড় হুড় দুড় দুড় শুনি ঝন ঝন কিংবা ‘সঘনে চিকুর পড়ে বেঙ্গ-তড়কা বাজ৷’ এই পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে ভীত কলিঙ্গবাসী স্মরণ করছে ঋষি জৈমিনিকে।

কলিঙ্গদেশে প্রবল ঝড় বৃষ্টির কারণে বারবার বাজ পড়ার আতঙ্কে ভিতর কলিঙ্গবাসী মিনিকে স্মরণ করে।

১৮. কলিঙ্গদেশে শিলাবৃষ্টির বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ কলিঙ্গদেশে চার মেঘের মিলিত ধারায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। ‘নিরবধি সাত দিন বৃষ্টি নিরন্তর। শুধু বৃষ্টি নয়, শিলাবৃষ্টিও হচ্ছে। সামান্য হালকা শিল নয়, বেশ বড়ােসড়াে চেহারার। চেহারার বিশালত্ব বােঝানাের জন্য কবি একটি সুন্দর উপমা ব্যবহার করেছেন, ‘ভাদ্রপদ মাসে যেন পড়ে থাকা তাল।’ ভাদ্র মাসে পাকা তাল গাছ থেকে পড়ে। সেই পাকা তালের মতাে শিলের বৃহদাকার চেহারা, তা যখন পড়ছে তখন অক্লেশে ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে পড়ছে।

১৯. ‘করি-কর সমান বরষে জলধারা।’— তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ ‘করি-কর’ হলাে হাতির গুঁড়। সমান’ অর্থাৎ, মতাে বা তুল্য। চারি মেঘের মিলিত বর্ষণধারা প্রবলতম। ওই প্রবলতম বর্ষণধারা হাতির শুড় তুল্য। একটি সুন্দর উপমার মাধ্যমে কবি তুলে ধরেছেন। হাতি শুঁড় দিয়ে যেমন প্রবল গতিতে জল ছোঁড়ে, কলিঙ্গের বৃষ্টির জলোচ্ছাস তেমনই তীব্র। আলোচ্য পঙ্ক্তিতে এই ছবি স্পষ্ট হয়েছে।

২০. ‘দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার৷’— কেউ অঙ্গ দেখতে পাচ্ছে না কেন ?

উত্তরঃ আলােচ্য উদ্ধৃতিতে কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম ঘনীভূত মেঘছায়ার গাঢ়ত্বের কথা বােঝাতে চেয়েছেন। কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি আসন্ন। তার আকাশে চার মেঘ আবর্ত, সংবর্ত, দ্রোণ মিলিত হয়েছে। তাদের ঘনীভূত ছায়ায় অন্ধকার খুবই গাঢ়। ফলে কলিঙ্গ দেশবাসীর কেউ নিজের শরীরের অঙ্গ নিজে দেখতে পাচ্ছে না। সেখানে ঝড়-বৃষ্টির প্রলয় ঘটতে চলেছে। এই অবস্থা তারই পূর্বাভাস।

২১. ‘ঈশানে উড়িল মেঘ সঘনে চিকুর।’— উদ্ধৃতাংশটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি কবিকঙ্কণ মুকুন্দরামের কালকেতু আখ্যানের অংশবিশেষ ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’-র অন্তর্গত। দেবরাজ ইন্দ্রের আদেশে চারি মেঘ আবর্ত, সংবর্ত, পুষ্কর ও দ্রোণ কলিঙ্গের আকাশে একত্র হয়েছে। ফলে আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছন্ন। ঘনীভূত মেঘের ছায়ায় গাঢ় অন্ধকার নেমেছে কলিঙ্গে। এই অবস্থায় আকাশের উত্তর-পূর্ব কোণ, নাম ঈশান, সেখানে মেঘ উড়ে গিয়ে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। কিছু পরেই ঝড়-বৃষ্টির ভয়ংকর প্রলয়কাণ্ড শুরু হবে। এ তারই পূর্বাভাস।

২২. ‘নিমিষেকে জোড়ে মেঘ গগন-মণ্ডল।’— গগনমণ্ডলে মেঘ জড়ো হয়ে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি করল ?

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কবিতা থেকে নেওয়া। কবি এখানে কলিঙ্গদেশের আকাশে চার মেঘের মিলিত শক্তির কথা বলেছেন। দেবরাজ ইন্দ্রের আদেশে চার মেঘ জড়ো হয়েছে। তাতে ভয়ানক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ঘন ঘন ভযংকর মেঘ ডাকছে। মেঘছায়ার অন্ধকারে চারদিক ঢেকে গেছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টি এল বলে। শিগগির ধ্বংসকাণ্ড শুরু হবে। প্রলয়-পরিস্থিতির সব আয়ােজন যেন তৈরি।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি (মুকুন্দরাম চক্রবর্তী) নবম শ্রেণি বাংলা | MCQ Question Answer Class 9 Bengali wbbse

• কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : (প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৫)

১.’প্রলয় গণিয়া প্রজা ভাবয়ে বিষাদ।’— কী দেখে প্রজাদের প্রলয় মনে হয়েছিল ? এই প্রলয়ের ফলে কী হয়েছিল ? ১+ 8

উত্তরঃ মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিঙ্গাদেশে ঝড়বৃষ্টি’ নামক কাব্যাংশে কলিঙদেশের আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। উত্তর-পূর্ব কোণে মেঘের সঙ্গে দেখা দেয় ব্জ্রবিদ্যুৎ। চারদিকে মুশলধারায় বৃষ্টি শুরু হয়। এইসব দেখেই প্রজাদের মনে প্রলয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়। কলিঙ্গের আকাশে ঈশান কোণে মেঘ জমা হয়। ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়৷ দূরদিগন্তে মেঘের গম্ভীর আওয়াজের সঙ্গে শুরু হয় মুশলধারায় বৃষ্টি। বিপদের আশঙ্কায় প্রজারা ঘর ছেড়ে দ্রুত পালাতে থাকে। ঝড়ের দাপটে শস্যখেত এবং সবুজ গাছপালা নষ্ট হয়ে যায়। আটটি দিকের আটটি হাতি যেন বৃষ্টিধারায় সব ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়। প্রবল বৃষ্টিতে পথঘাট জলে ডুবে যায়। ঘাের অন্ধকারে দিনরাত্রির পার্থক্য মুছে যায়। জলমগ্ন রাস্তায় সাপ ভেসে বেড়াতে থাকে। ভীত প্রজারা এই ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে। সাত দিন ধরে একটানা বৃষ্টির ফলে কৃষিকাজ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঘরবাড়িও নষ্ট হয়ে যায়। ভাদ্র মাসের তালের মতাে বড়াে আকারের শিল ঘরের চাল ভেদ করে পড়তে থাকে। দেবীর আদেশে সমস্ত নদনদী কলিঙ্গ নগরের দিকে ছুটে আসে। পর্বতের মতাে উঁচু ঢেউয়ের আঘাতে বাড়িঘর ভেঙে পড়ে। দেবী চণ্ডীর আদেশে সৃষ্ট এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অসহায়, ভীত প্রজারা বিপদের আশঙ্কায় অবশেষে কলিঙ্গ ত্যাগ করে চলে যায়।

২.কলিজাদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কবিতায় প্রকাশিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চিত্র কতটা বাস্তবতার সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে আলােচনা করাে।

অথবা,

কলিগদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতায় কলিঙ্গে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটেছিল তা কীভাবে কলিঙ্গবাসীর জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছিল বুঝিয়ে দাও। ৫

উত্তরঃ মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খণ্ডের অন্তর্গত ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশে দেবী চণ্ডী তার কৃপাধন্য ব্যাধ কালকেতুর তৈরি গুজরাট নগরে বসতি প্রতিষ্ঠার জন্য কলিঙ্গদেশে প্লাবন ঘটান। কলিঙ্গের আকাশে ঈশান কোণে মেঘ জমা হয়। ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়। দূরদিগন্তে মেঘের গম্ভীর ধ্বনির সঙ্গে শুরু হয় মুষলধারায় বৃষ্টি। বিপদের আশঙ্কায় প্রজারা ঘর ছেড়ে দ্রুত পালাতে থাকে। ঝড়ের দাপটে শস্যখেত এবং সবুজ গাছপালা নষ্ট হয়ে যায়। আটটি দিকের আটটি হাতি যেন বৃষ্টিধারায় সব ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়। প্রবল বর্ষণে পথঘাট জলে ডুবে যায়। ঘাের অন্ধকারে দিন রাত্রির পার্থক্য মুছে যায়। জলমগ্ন রাস্তায় সাপ ভেসে বেড়াতে থাকে। ভীত প্রজারা এই ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে নিস্তার পেতে ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে। সাত দিন ধরে অবিরাম বর্ষণের ফলে কৃষিকাজ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঘরবাড়িও নষ্ট হয়ে যায়। ভাদ্র মাসের তালের মতাে বড়াে আকারের শিল ঘরের চাল ভেদ করে পড়তে থাকে। দেবীর আদেশে সমস্ত নদনদী কলিঙ্গের দিকে ছুটে আসে। দেবীর আদেশে পর্বতের মতাে উঁচু ঢেউয়ের আঘাতে বাড়ি-ঘর ভেঙে পড়ে। দেবী চণ্ডীর আদেশে সৃষ্ট এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অসহায়, ভীত প্রজারা বিপদের আশঙ্কায় শেষপর্যন্ত কলিঙ্গ ত্যাগ করে চলে যায়।

৩. ‘অম্বিকামঙ্গল গান শ্রীকবিকঙ্কণ’— ‘অম্বিকামঙ্গল’ এবং তাঁর কবি ‘শ্রীকবিকঙ্কণ’ এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি অংশে বর্ণিত প্রাকৃতিক দৃশ্যের পরিচয় দাও।

উত্তরঃ কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর লেখা গ্রন্থটি ‘চণ্ডীমঙ্গল’ নামে পরিচিত। ‘চণ্ডী’ই হলেন অম্বিকা। সেজন্য কবি কাব্যের মধ্যে একাধিক জায়গায় ‘চণ্ডীমঙ্গল’কে ‘অম্বিকামঙ্গল’ নামে অভিহিত করেছেন।

‘কবিকঙ্কণ’ উপাধিবিশেষ। আবার কারাে-কারাে মতে পদবি-পরিচায়ক। যাই হােক, নামের বদলে উপাধি অনেক সময় নাম হয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কবি তাঁর কাব্যে ‘মুকুন্দরাম’ নামের পরিবর্তে ‘শ্ৰীকবিকঙ্কণ’ উপাধিকে নাম হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

কলিঙ্গদেশের আকাশে মেঘ ঘনীভূত হয়েছে। মেঘচ্ছায়ায় চারদিকে এমন অন্ধকার নেমেছে যে, কেউ নিজের অঙ্গ দেখতে পাচ্ছে না। ঈশান কোণ থেকে উড়ে আসা মেঘে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ঘনঘন, মেঘ ডাকছে ‘দুর দুর’ করে। চার প্রকার মেঘের সম্মিলিত বৃষ্টি মুশলধারে নেমেছে। মনে হচ্ছে প্রলয় বুঝি আসন্ন। হুড়হুড় দুড়দুড় করে ঝড় এসে যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ধুলায় ধূসরিত সবুজ গাছপালা, লতা-তৃণ, মাঠের সবুজ ফসল। আট দিকহস্তির জল বর্ষণে বৃষ্টি নেমেছে যেন ‘করি-কর’ সমান বরিষে জলধারা। সেই সঙ্গে ‘সঘনে চিকুর পড়ে বেঙ্গতড়কা বাজ।’ বৃষ্টিতে পৃথিবী জলময়। মেঘের ঘনঘন গর্জনে কারও কথা কেউ শুনতে পাচ্ছে না। দিবাভাগে নেমেছে সন্ধ্যার অন্ধকার। গর্ত ছেড়ে সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাত দিন ধরে অবিরাম বর্ষণ চলেছে। ভাদ্র মাসের পাকা তালের মতাে ঘরের চাল ভেদ করে শিল পড়ছে মেঝেতে। জলের বুকে উঠেছে পাহাড়প্রমাণ বড়াে বড়াে ঢেউ। ঢেউগুলি উঠে পড়ে ঘরগুলা করে দলমল। এই হলাে ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’-র মহাদুর্যোগের প্রাকৃতিক দৃশ্য।

৪. ঝড়-বৃষ্টির প্রলয়ে বিধ্বস্ত কলিঙ্গর ছবিটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী কীভাবে চিত্রিত করেছেন লেখাে।

উত্তরঃ ঝড়-বৃষ্টির চিত্রিত ছবিঃ কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের কালকেতু আখ্যানে কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টির প্রলয়ংকর রূপের অসামান্য ছবি এঁকেছেন। কলিঙ্গের আকাশে চার মেঘের মিলিত শক্তির ফলে শুরু হয় তুমুল ঝড়-বৃষ্টি। ঝড় এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল হুড়হুড় দুড়দুড় শব্দে। ঝড়ের প্রচণ্ড আঘাতে বুঝি ঘর ভেঙে পড়ে এমনই আশঙ্কা গৃহবাসীদের সন্ত্রস্ত করে। ফলে তারা ঘর ছেড়ে ছুটে পালায়। ঝড়ের উল্লিখিত ধুলােয় সবুজ ঘাস, গাছ ও মাঠের শস্য ঢাকা পড়ে।

ঝড়ের আঘাতে শস্য উলটে পড়ে। এ ক্ষতিও কম নয়। ঝড় চলতে চলতেই চার মেঘের তুমুল বর্ষণ শুরু হয়। আট দিগহস্তী যেন চার মেঘের জল বর্ষণ করতে থাকে। এ বর্ষণ এক সপ্তাহ ধরে অবিরাম ধারায় চলে। পাল্লা দিয়ে চলে ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকানাে। থেমে থেমে বাজ পড়ে কড় কড় করে। মুশলধারে বর্ষণে স্থলভাগ চলে যায় জলের তলে। সর্বত্র জলময়। জলের তলে পথ হারিয়ে যায়। মাঠের শস্য ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। এমনকি সাপের গর্ত জলের তলায় চলে যায়। তারা গৃহহারা হয়ে জলে ভাসতে থাকে। মেঘগর্জনে কণ্ঠস্বর ডুবে যায়। একে অপরের কথা শুনতে পায় না। মেঘের পর্দার আড়ালে সূর্য অদৃশ্য থাকে। দিন, সন্ধ্যা ও রাত্রি নিজ নিজ সীমারেখার মাঝে চিহ্নিত থাকে না।

মনে হয় তারা তাদের পৃথক অস্তিত্ব হারিয়ে ‘এক দেহে লীন’। শিলাবৃষ্টিও চলতে থাকে। বড়াে বড়াে শিল। চেহারায় ভাদ্র মাসের পাকা তালের মতাে। ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে পড়ে। চারিদিকের জলে ওঠে পর্বতপ্রমাণ বিশাল বিশাল ঢেউ। সে ঢেউ ঘরগুলির মাথায় চড়ে চালায় দলন-মলন। কাজেই কলিঙ্গদেশের সর্বত্র ধ্বংস আর ধ্বংস। অপূর্ব দক্ষতায় মুকুন্দরাম ধ্বংসের নিখুঁত ও বাস্তব ছবি তুলে ধরেছেন।

৫. ‘চারি মেঘে বরিষে মুষলধারে জল।’ – চারি মেঘ’ কী কী ? দেবরাজ ইন্দ্র কর্তৃক আদিষ্ট মেঘেরা কীভাবে সজ্জিত হয়ে ঝড়, বিদ্যুৎ চমকানাে, বজ্রপাত ও শিলাসহ বর্ষণ করেছে তা সবিস্তারে আলােচনা করাে।

উত্তরঃ ‘চারি মেঘ’ হলাে আবর্ত, সংবর্ত, পুষ্কর ও দ্রোণ।

মেঘের সজ্জা ও ঝড়ের আগমনঃ দেবরাজ ইন্দ্র চার মেঘকে আদেশ করেন কলিঙ্গদেশে গিয়ে বর্ষণ করতে। মেঘেরা কলিঙ্গদেশের আকাশে মিলিত হয়ে আকাশ ঢেকে ফেলে। মেঘসজ্জায় অন্ধকার নেমে আসায় কেউ নিজের অঙ্গও দেখতে পায় না। ঈশান কোণে ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকায়। মেঘ ডাকে। মেঘযাত্রা শুরু হয়। ঝড় হুড়হুড় দুড়দুড় করে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কলিঙ্গবাসী ভয়ে ঘর ছেড়ে ছুটে পালায়। বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড় ।

তারপর শুরু হয় ‘চারি মেঘ’-এর মিলিত ধারার তুমুল বৃষ্টি। ‘করি-কর সমান বরিষে জলধারা। চারি মেঘের জল আট দিগহস্তী বর্ষণ করতে থাকে। চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ। বিদ্যুৎ চমকায় ঘনঘন। ব্যাং-এর মতন থেকে থেকে তড়াক করে লাফিয়ে লাফিয়ে বাজ পড়ছে।

বর্ষণ ও বজ্রপাতঃ প্রবল বর্ষণে স্থল ডুবে জলের সঙ্গে একাকার হয়। পথ ডুবে যায়। গর্তও জলের তলে চলে যাওয়ায় আশ্রয়হীন সাপ জলে ভেসে বেড়ায়। দিন, সন্ধ্যা ও রাত্রির সীমাবদ্ধতা মুছে গিয়ে এক হয়ে যায়। পৃথক অস্তিত্ব থাকে না। সাত দিন ধরে নিরন্তর বৃষ্টি ঝরে। ঘরগুলি জলে বিনষ্ট হয়। মাঠে চাষের কাজ বন্ধ থাকে। বজ্রপাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য কলিঙ্গবাসী বজবারক ঋষি জৈমিনির নাম স্মরণ করে। শিল ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে পড়ে। সেগুলির চেহারা ভাদ্র মাসের পাকা তালের মতাে। চারিদিকে পর্বতপ্রমাণ বিশাল বিশাল ঢেউ ওঠে। সেগুলি ঘরের মাথার ওপর চড়ে দল-মল করে।

৬. কলিঙ্গে ঝড়-বৃষ্টি-প্রলয়ের কারণ ও তার প্রস্তুতি আলােচনা করাে।

উত্তরঃ ঝড়-বৃষ্টি-প্রলয়ের কারণঃ ‘কবিকঙ্কণ চণ্ডী মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কালজয়ী সৃষ্টি। চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি। এই কাব্যের কালকেতু উপাখ্যানের প্রধান চরিত্র মা চণ্ডীর স্নেহধন্য কালকেতু। মায়ের কৃপায় প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে কালকেতু গুজরাট নগরী স্থাপন করে মায়ের নির্দেশ অনুযায়ী। কালকেতুর চেষ্টায় গুজরাট নগরী স্থাপিত হয়। কিন্তু অধিবাসী না থাকায় তা জনশূন্য। মনের দুঃখে কালকেতু মা চণ্ডীর কাছে প্রার্থনা করে তার নির্মিত গুজরাট নগরী যাতে লােকে ভরে ওঠে। কালকেতু। জানে মায়ের কৃপা ছাড়া সম্ভব নয়। ভক্তের দুঃখ ও বেদনা মা বােঝেন। মা কালকেতুর মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য চেষ্টা করেন। কলিঙ্গদেশের লােকজন যাতে গুজরাট নগরে আসে, সেজন্য মা কলিঙ্গবাসীদের কাছে আবেদন রাখেন। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। মা দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে যান। সিদ্ধান্ত হয় ঝড়-বৃষ্টির প্রলয় ঘটাবেন ইন্দ্র। কলিঙ্গের মানুষকে উদ্বাস্তু করে গুজরাট নগরে আসতে বাধ্য করবেন। সেইমতাে ইন্দ্র মেঘেদের আদেশ করেন কলিঙ্গদেশে গিয়ে ঝড়-বৃষ্টি-প্রলয় ঘটাতে। সেজন্য কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি।

ঝড়-বৃষ্টি-প্রলয়ের প্রস্তুতিঃ তারই প্রস্তুতি হিসেবে কলিঙ্গদেশের আকাশে চার ধরনের মেঘের মিলিত সাজসজ্জা। আকাশময় ঘনীভূত মেঘ। মেঘের গাঢ় ছায়ায় অন্ধকার নেমেছে ঘন হয়ে। অন্ধকারে কেউ নিজের অঙ্গ দেখতে পাচ্ছে না। ঈশান কোণ থেকে মেঘ উড়তে শুরু করেছে। ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। উচ্চনাদে মেঘগর্জন। হুড়হুড় দুড়দুড় শব্দে ঝড় ধেয়ে আসছে। চার মেঘের মিলিত জলধারা বর্ষণের জন্য দিগহস্তীরা তৈরি। এইভাবে ঝড়-বৃষ্টি-প্রলয়ের প্রস্তুতিপর্ব গড়ে উঠেছে।

আরও পড়ুনঃ—

কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতার বিষয়বস্তু, সারাংশ, আলোচনা, শব্দার্থ

ধীবর-বৃত্তান্ত নাটকের বিষয়বস্তু, সারাংশ, আলোচনা, শব্দার্থ

ধীবর-বৃত্তান্ত নাটকের প্রশ্নোত্তর | নবম শ্রেণির বাংলা

ইলিয়াস গল্পের বিষয়বস্তু, সারাংশ, আলোচনা, নামকরণ, শব্দার্থ

ইলিয়াস গল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর | নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্নোত্তর

Leave a Reply