আমরা নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Amra Kobita Question Answer Class 9 [WBBSE]

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

                           আমরা

                সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
 
            বহু বিকল্পীয় প্রশ্ন (MCQ) 
                প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
 
ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখ :
 
১. আমরা কবিতাটি কার লেখা?
(ক) সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
(খ) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
(গ) অজিত দত্ত
(ঘ) মধুসূদন দত্ত
 
উত্তরঃ (খ) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।
 
২. কবির মতে বাঙালি কোথায় বাস করে ?
(ক) অসমে       (খ) বঙ্গে
(গ) বিহারে       (ঘ) উড়িষ্যায়
 
উত্তরঃ (খ) বঙ্গে।
 
৩. দশানন জয়ী বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ?
(ক) দশরথ    (খ) সুগ্রীব
(গ) রাম         (ঘ) লক্ষণ
 
উত্তরঃ (গ) রামকে।
 
৪. বাংলার কবি কাকে বলা হয়েছে ?
(ক) বিদ্যাপতি    (খ) চণ্ডীদাস
(গ) কৃত্তিবাস      (ঘ) জয়দেব
 
উত্তরঃ (ঘ) জয়দেব।
 
৫. ‘ছন্দের যাদুকর’ আখ্যায় কোন কবি ভূষিত হয়েছেন ?
(ক) মধুসূদন দত্ত      (খ) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
(গ) রবীন্দ্রনাথ          (ঘ) জসীমউদ্দিন
 
উত্তরঃ (খ) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।
 
৬. আমরা কাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি?
(ক) কুমির           (খ) সাপ
(গ) বাঘ               (ঘ) সিংহ
 
উত্তরঃ (গ) বাঘ
 
৭. ‘বাঘ্ৰে বৃষভে ঘটাবে সমন্বয়’—’বৃষভ’ শব্দের অর্থ—
(ক) বৃশ্চিক       (খ) ষাঁড়
(গ) ছাগল         (ঘ) ভেড়া
 
উত্তরঃ (খ) ষাঁড়
 
৮. দশানন জয়ী কে?
(ক) সুগ্রীব            (খ) ইন্দ্রজিৎ
(গ) রামচন্দ্র          (ঘ) লক্ষণ
 
উত্তরঃ (গ) রামচন্দ্র
 
৯. বঙ্গভূমির দেহ কি দিয়ে ভূষিত?
(ক) অতসী ও টগর
(খ) অপরাজিতা ও শিউলি
(গ) পদ্ম ও অতসী
(ঘ) অতসী ও অপরাজিতা
 
উত্তরঃ (ঘ) অতসী ও অপরাজিতা
 
১০. লংকা কে জয় করেছিলেন?
(ক) বিজয় সিংহ       (খ) সংগ্রাম সিংহ
(গ) শক্ত সিংহ           (ঘ) প্রতাপ সিংহ
 
উত্তরঃ (ক) বিজয় সিংহ
 
১১. তিব্বতে জ্ঞানের প্রদীপ কে জ্বেলে ছিলেন?
(ক) দীপঙ্কর           (খ) জয়দেব
(গ) কপিল             (ঘ) বিজয়
 
উত্তরঃ (ক) দীপঙ্কর।
 
১২. নিচে কাকে সাংখ্যকার বলা হয়?
(ক) জয়দেব         (খ) অতীশ
(গ) কপিল            (ঘ) বিজয়
 
উত্তরঃ (গ) কপিল।
 
১৩. পক্ষধর কে?
(ক) একটি পাখির নাম
(খ) ন্যায় শাস্ত্রের পন্ডিত
(গ) সাংখ্য দর্শনের পন্ডিত
(ঘ) বৌদ্ধ সাধক
 
উত্তরঃ (খ) ন্যায় শাস্ত্রের পন্ডিত।
 
১৪. কান্ত কমল পদ্ম কে রচনা করেছিলেন ?
(ক) দীপঙ্কর             (খ) কপিল
(গ) জয়দেব             (ঘ) বিজয়
 
উত্তরঃ (গ) জয়দেব
 
১৫. বরভূধর হলো একটি—
(ক) বৌদ্ধ মন্দির
(খ) বৌদ্ধস্তূপ
(গ) হিন্দুদের মন্দির
(ঘ) জৈন মন্দির
 
উত্তরঃ (গ) হিন্দুদের মন্দির।
 
১৬. “একহাতে মোরা মগেরে রুখেছি” – মগ কাদের বলা হত?
(ক) বৈদেশিক শত্রুদের
(খ) পূর্ববঙ্গীয় সম্প্রদায়কে
(গ) জলদস্যুদের
(ঘ) দক্ষিণবঙ্গের উপজাতিদের
 
উত্তরঃ (গ) জলদস্যুদের
 
১৭. রামচন্দ্রের প্রপিতামহ ছিলেন—
(ক) দিলীপ 
(খ) দশরথ
(গ) রঘু
(ঘ) অজ
 
উত্তরঃ (গ) রঘু।
 
১৮. ‘মারী নিয়ে ঘর করি।’— ‘মারী’ শব্দটির অর্থ হল
(ক) মারামারি 
(খ) মড়ক
(গ) লড়াই
(ঘ) যুদ্ধ
 
উত্তরঃ (খ) মড়ক।
 
১৯. বিট পাল আর ধীমান বিখ্যাত ছিলেন—
(ক) কবি ও গীতিকার হিসেবে 
(খ) স্থপতি ও শিল্পী হিসেবে 
(গ) যোদ্ধা হিসেবে 
(ঘ) বিজ্ঞানী হিসেবে 
 
উত্তরঃ (খ) স্থপতি ও শিল্পী হিসেবে।
 
২০. আমরা কবিতাটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের যে কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত—
(ক) কুহু ও কেকা
(খ) ফুলের ফসল 
(গ) বেণু ও বীণা
(ঘ) তুলির লিখন
 
উত্তরঃ (ক) কুহু ও কেকা।
 
 
   অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর ধর্মী প্রশ্নেত্তর 
           (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)
 
কমবেশি ১৫ টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
 
 
১. “মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে৷”–গঙ্গা কোথায় মুক্তি বিতরণ করে?
 
উত্তরঃ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত ‘আমরা’ কবিতানুসারে গঙ্গার বিশুদ্ধ ও পবিত্র জলরাশি বঙ্গদেশে মুক্তি বিতরণ করছে। 
 
২. ‘ভালে কাঞ্চন-শৃঙ্গ-মুকুট’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
 
উত্তরঃ বাংলার উত্তরে তুষার আবৃত হিমালয়ের উপর সূর্যের কিরণ পড়ে সোনার রং ধারণ করে। কবি একেই বাংলা মায়ের কপালে কাঞ্চন শৃঙ্গ মুকুট বলে বর্ণনা করেছেন। 
 
৩. বাংলা মায়ের দেহ কোন্ কোন্ ফুলে ভূষিতৎ?
 
উত্তরঃ বাংলা মায়ের দেহ অতসী ও অপরাজিতা ফুলে ভূষিত। তার বামহাতে কমলার ফুল আর গান হাতে মহুয়ার ফুল শােভা পায়।
 
৪. কে বঙ্গভূমির বন্দনা গান করে ?
 
উত্তরঃ বঙ্গভূমির দক্ষিণতম প্রান্তে থাকা বঙ্গোপসাগর অনবরত অজস্র ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার মধ্য দিয়ে বঙ্গভূমির বন্দনা করে।
 
৫. ‘যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি।’— বাঙালি জাতি কীসের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন ? 
 
উত্তরঃ বাংলার দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে হিংস্র বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঙালি বেঁচে থাকে।
 
৬. ‘আমরা হেলায় নাগেরে খেলাই’- কবি কেন বলেছেন?
 
উত্তরঃ বাংলার নদী-খাল-বিলে অসংখ্য সাপের বাস। তাদের সঙ্গে অর্থাৎ সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে বাঙালিরা এগিয়ে চলেছে।
 
৭. ‘ আমাদের সেনা যুদ্ধ করেছে সজ্জিত চতুরঙ্গে’— চতুরঙ্গ কী ?
 
উত্তরঃ হাতি, ঘােড়া, রথ ও পদাতিক—এই চার প্রকার শাখাবিশিষ্ট সেনাবাহিনীকে চতুরঙ্গ বলে।
 
৮. কবির মতে বাঙালি সেনা কার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল ?
 
উত্তরঃ কবির মতে বাঙালি সেনা রামচন্দ্রের প্রপিতামহ রঘুর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল।
 
৯. কোন্ বাঙালি লঙ্কাকা জয় করেছিলেন ?
 
উত্তরঃ রাঢ় বাংলার সিংহপুরের রাজপুত্র বিজয়সিংহ লঙ্কাদ্বীপ জয় করে সেখানে রাজত্ব ও রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
 
১০. সিংহল নামের মধ্য দিয়ে কোন্ বাঙালি নিজের শৌর্যের পরিচয় রেখেছেন ?
 
উত্তরঃ বাঙালি বিজয়সিংহ লঙ্কা জয় করে সিংহল নামকরণের মধ্য দিয়ে নিরে শৌর্যের পরিচয় রেখেছেন।
 
১১. কবির মতে কাদের হুকুমে দিল্লিনাথকে হটতে হয়েছিল?
 
উত্তরঃ কবির মতে বাংলার বিখ্যাত বারাে ভূঁইয়ার অন্যতম চাঁদ রায় ও প্রতাপাদিত্যের হুকুমে দিল্লিনাথকে হটতে হয়েছিল।
 
১২. ‘‘আদিবিদ্বান্ কাকে বলা হয়েছে?
 
উত্তরঃ বৈদিক ঋষি তথা সাংখ্যদর্শনের প্রণেতা মহামুনি কপিলকে আদিবিদ্বান্ বলা হয়েছে।
 
১৩. তিব্বতে জ্ঞানের দীপ কে জ্বেলেছিলেন ?
উত্তরঃ বাঙালি পন্ডিত অতীশ দীপঙ্কর বা দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান তিব্বতে জ্ঞানের দীপ জ্বেলেছিলেন তথা বৌদ্ধধর্মের প্রচার করেছিলেন।
 
১৪.“বাঙালির ছেলে ফিরে এল দেশে যশের মুকুট পরি।”—বাঙালির ছেলে কাকে বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ বাঙালির ছেলে বলতে এখানে পণ্ডিত রঘুনাথ শিরােমপির কথা বলা হয়েছে। 
 
১৫. ‘পক্ষধরের পক্ষশাতন করি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
 
উত্তরঃ বাঙালি পণ্ডিত রঘুনাথ শিরােমণি মিথিলার মহাপণ্ডিত পক্ষধর মিশ্রকে বিতর্কসভায় পরাজিত করেছিলেন। একেই কবি ‘পক্ষধরের পক্ষশাতন’ বলেছেন।
 
১৬. প্রাচীন বাংলার দুজন বিখ্যাত ভাস্করের নাম লেখাে। 
 
উত্তরঃ প্রাচীন বাংলার দুজন বিখ্যাত ভাস্কর হলেন বিটপাল ও ধীমান।
 
১৭. ‘অক্ষয় করে রেখেছে অজন্তায়।’— অজন্তা কেন বিখ্যাত ?
 
উত্তরঃ খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্যে বুদ্ধদেব ও বৌদ্ধ জাতকের কাহিনি নিয়ে আঁকা গুহাচিত্রগুলির জন্য অজন্তা বিখ্যাত।
 
১৮. বাঙালি কোন্ গানে তার হৃদয়ের গােপন দ্বার খুলে দিয়েছে?
 
উত্তরঃ বাঙালি তার একান্ত নিজস্ব কীর্তন আর বাউলগানে হৃদয়ের গােপন দ্বার খুলে দিয়েছে।
 
১৯. ‘মন্বন্তরে মরিনি….।’— কারা মন্বন্তরে মরেনি?
 
উত্তরঃ মন্বন্তরে বহু মানুষের মৃত্যু হলেও বাঙালি জাতি শেষপর্যন্ত মরেনি, তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
 
২০. মন্বন্তর এবং মহামারির পরেও বাঙালি কীভাবে বেঁচেছে ?
 
উত্তরঃ কবির মতে, বিধাতার আশীর্বাদে বাঙালি জাতি অমৃতের টিকা পরে মন্বন্তর এবং মহামারির পরেও নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে।
 
২১. আকাশে প্রদীপ জ্বালা হয় কেন?
 
উত্তরঃ বাঙালি হিন্দুরা স্বর্গত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে কার্তিক মাসের সন্ধ্যায় বাঁশের ডগায় প্রদীপ জ্বেলে দেয়।
 
২২. ‘মানুষের ঠাকুরালি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
 
উত্তরঃ নিজের কর্মগুণে রক্তমাংসের মানুষের দেবত্বে উত্তীর্ণ হওয়াকেই কবি ‘মানুষের ঠাকুরালি’ বলেছেন।
 
২৩. “বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বাণী ছুটেছে জগৎময়।”—কীভাবে বিবেকের বাণী জগৎময় প্রচারিত হয়েছে ?
 
উত্তরঃ সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের মতাদর্শ সারা পৃথিবীর মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং গ্রহণযােগ্য হয়ে উঠেছে। এ কথা বোঝাতেই খুবই ছুটেছে জগৎময় শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেছেন।
 
২৪. “জড়ের সাড়া’ কে পেয়েছিলেন?
 
উত্তরঃ বাঙালি বিজ্ঞানসাধক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, আপাতদৃষ্টিতে জড়পদার্থ গাছের মধ্যে প্রাণের সাড়া পেয়েছিলেন।
 
২৫. ‘নবীন সাধনা শব-সাধনার বাড়া।’— শব-সাধনা কী ?
 
উত্তরঃ সদ্যোমৃত পুরুষের শবের ওপর ঘােড়ায় চড়ার ভঙ্গিতে বসে তান্ত্রিক সাধনাকেই শব-সাধনা বলা হয়। 
 
২৬. ‘বিষম ধাতুর মিলন’ কে ঘটিয়েছেন?
 
উত্তরঃ বিষম অর্থাৎ ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট ধাতুর রাসায়নিক সংযােগ ঘটিয়েছেন বাঙালি বিজ্ঞানী, রসায়নবিদ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।
 
২৭. জগতে মহামিলনের গান কে গেয়েছেন ?
উত্তরঃ বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জগতে মহামিলনের গান গেয়েছেন।
 
২৮. ‘আমরা রোপন করেছি পঞ্চবটি।’— পঞ্চবটী কোন্ কোন্ বৃক্ষের সমাহার? 
 
উত্তরঃ পঞ্চবটী হল বট, বেল, অশ্বথ, অশােক, আমলকী—এই পাঁচটি বৃক্ষের সমাহার।
 
২৯. ‘আমরা’ কবিতায় পঞ্চবটীর ছায়ায় বাঙালি কী করবে বলে কবি জানিয়েছেন?
 
উত্তরঃ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মতে পঞ্চবটীর ছায়ায় বাঙালি জগতের শতকোটি মানুষের মধ্যে মিলন ঘটবে।
 
৩০. “আমরা’ কবিতায় বিধাতার বরে কী হবে বলে কবি মনে করেছেন?
 
উত্তরঃ বিধাতার বরে অর্থাৎ আশীর্বাদে সারা পৃথিবী বাঙালির গৌরবেপরিপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে কবি আশা করেন।
 
৩১. ‘ভরিবে ভুবন বাঙালির গৌরবে।’— ভুবন কেমন করে বাঙালির গৌরবে ভরে উঠবে ?
 
উত্তরঃ বিধাতার আশীর্বাদে এবং বাঙালির প্রতিভা ও তপস্যা বা সাধনায় পৃথিবী তার গৌরবে ভরে উঠবে।
 
৩২. ‘মুক্ত হইব দেব-ঋণে মোরা।’— আমরা কীভাবে ‘দেব-ঋণে’ মুক্ত হব ?
 
উত্তরঃ সারা পৃথিবীর মানুষকে মিলনের মহামন্ত্রে দীক্ষিত করে আমরা বাঙালিরা ‘দেব-ঋণে’ মুক্ত হব।
 
 
ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
          (প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৩)
 
কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
 
 
১, “মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে”—পংক্তিটি ব্যাখ্যা করাে।
 
উত্তরঃ সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতায় ‘মুক্তবেণী’ শব্দটির অর্থ হল বাধাহীন জলপ্রবাহ। গঙ্গা নদী গঙ্গােত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশে যাওয়া পর্যন্ত বহু নদী তার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। কিন্তু তার নিজস্ব জলধারা অন্য কোনাে নদীতে হারিয়ে যায়নি। তাই সে ‘মুক্তবেণী। হিন্দুদের বিশ্বাস গঙ্গাজল মানুষকে পাপ থেকে মুক্তি দেয়। তাই কবি বলেছেন মুক্তধারা গঙ্গা আমাদের পাপমােচন করে এই বাংলায় আনন্দের সাথে মুক্তি বিতরণ করে।
 
২.“আমরা বাঙালি বাস করি সেই তীর্থে—বরদ বঙ্গে;”— এই পঙক্তিটির মাধ্যমে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন ?
 
উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
 
বঙ্গভূমির বর্ণনা করতে গিয়ে কবি উক্ত কথাটি বলেছেন। আমাদের এই বাংলায় রয়েছে অজস্র তীর্থক্ষেত্র। মানুষ বিশ্বাস করে তীর্থদর্শন করলে পুণ্য অর্জন করা যায়, ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করা যায়। বাঙালি জাতির সৌভাগ্য যে তারা এমন একটি দেশে বাস করে যে দেশের মাটি তাদের শত তীর্থের পুণ্য আর বর দান করে।
 
৩. “বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি”—কবি কেন এ কথা বলেছেন?
 
উত্তরঃ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা কবিতা থেকে উদ্ধৃত পঙক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
 
বাংলার দক্ষিণের সুন্দরবন প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত। কিন্তু এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবিকা নির্বাহের কারণে কাঠ, মধু, মাছ ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য জঙ্গলে যেতে হয়। আর সেই কারণে প্রতিনিয়তই তাদের এই হিংস্র প্রাণীটির আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। তাই কবি বলেছেন যে বাঙালি বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে।
 
 
৪. “জ্বালিল জ্ঞানের দীপ তিব্বতে বাঙালি দীপঙ্কর।”— পঙক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
 
উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
 
এখানে বিখ্যাত বাঙালি বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের কথা বলা হয়েছে। শীলভদ্রের শিষ্য অতীশ দীপঙ্কর পাল যুগে বিক্রমশীলা মহাবিহারের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। পাল যুগেই তিনি হিমালয়ের বরফে ঢাকা অতি দুর্গম পথ অতিক্রম করে তিব্বতে যান মহাযান বৌদ্ধধর্মের প্রচারের উদ্দেশ্যে। সেখানে ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি তিনি শিক্ষাদান এবং গ্রন্থরচনার কাজও করেন। অতীশ দীপঙ্করের কীর্তি বাঙালি জাতির পক্ষে অত্যন্ত গৌরবের।
 
৫. “স্থপতি মােদের স্থাপনা করেছে ‘বরভূধরের ভিত্তি”—পঙক্তিটি ব্যাখ্যা করাে।
 
উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
 
খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে জাভা দ্বীপে (বর্তমান ইন্দোনেশিয়া) শৈলেন্দ্র রাজবংশের রাজত্বকালে গড়ে ওঠা সুবিশাল বৌদ্ধস্তুপ হল বরভূধর। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাংলার বাণিজ্যিক যােগাযােগের প্রমাণ পাওয়া যায়। ওই অঞ্চলের স্থাপত্যে পাল-সেন যুগের প্রভাবের কথাও জানা যায়। এই সূত্রের ওপর ভিত্তি করেই সম্ভবত কবি বরভূধর স্তূপকে বাঙালির তৈরি বলেছেন।
 
৬. “ঘরের ছেলে চক্ষে দেখেছি বিশ্বভূপের ছায়া”—এ কথা বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? 
উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
 
 পঙক্তিটির অর্থ হল বাঙালি তার ঘরের ছেলের মধ্যেই বিশ্বসম্রাটকে প্রত্যক্ষ করেছেন। নিঃসন্দেহে কবি এখানে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যকেই বুঝিয়েছেন। শুধু জমি এবং ক্ষমতার অধিকারী হলেই রাজা হওয়া যায় না। শ্রীচৈতন্যদেব ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ না করে, উচ্চ-নীচ ভেদ না করে সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে ভালােবাসা বিতরণ করে মানুষের হৃদয়ের রাজা হয়ে উঠেছিলেন। তার এই ভালােবাসার আদর্শ সকলের কাছে গ্রহণযােগ্য হয়ে উঠেছিল। তাই কবি উক্ত মন্তব্যটি করেছেন। 
 
৭. “তপের প্রভাবে বাঙালি সাধক জড়ের পেয়েছে সাড়া”– পঙক্তিটি ব্যাখ্যা করাে। 
 
উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
 
যে-কোনাে বিষয় নিয়ে কঠোর সাধনাকেই তপস্যা বলা যায় আর যিনি তপস্যা করেন তিনি হলেন সাধক। বাঙালি বিজ্ঞানসাধক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কঠোর সাধনার ফলে আবিষ্কার করেন যে, গাছেরও প্রাণ আছে। এর আগে পর্যন্ত মানুষ গাছকে জড়পদার্থ ভাবত৷ জগদীশচন্দ্র সেই জড়ের মধ্যে প্রাণের স্পন্দন আবিষ্কার করেন। তাই কবি বলেছেন যে তপস্যার ফলে বাঙালি সাধক জড়ের সাড়া পেয়েছেন।
 
৮.“আমাদের এই নবীন সাধনা শব-সাধনার বাড়া।”—পঙক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
 
উত্তরঃ সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে।
 
সদ্যমৃত পুরুষের শবের ওপর ঘোড়ায় চড়ার ভঙ্গিতে বসে তান্ত্রিক সাধনাকেই শবসাধনা বলে। তান্ত্রিক সাধন পদ্ধতি ভারতবর্ষে বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। জগদীশচন্দ্র বসু বা প্রফুল্লচন্দ্র রায় যে ধরনের বিজ্ঞানসাধনা বা চর্চার সূত্রপাত করেন তা মানবজীবনের পক্ষে কল্যাণকর হলেও দীর্ঘ জ্ঞানতপস্যার ফসল।
 
 
         রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর 
        (প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৫)
 
কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও:
 
১.’আমরা’ কবিতাতে কবি বঙ্গভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যে বর্ণনা করছেন তা নিজের ভাষায় লেখাে।
 
উত্তরঃ ‘আমরা’ কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কাছে বঙ্গভূমি ভৗগােলিক সীমায় আবদ্ধ একটি ভূখণ্ড মাত্র নয়, এই দেশ তার কাছে মাতৃরূপে ধরা দিয়েছে।
 
মুক্তধারা গঙ্গা নদী বাংলার ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে সমুদ্রে মিশেছে। কবির মতে গঙ্গা এদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে গিয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছে এবং তার পবিত্র জলের স্পর্শে এখানকার মানুষকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তিদান করেছে।
 
কবির কল্পনায় বাংলামায়ের বাম হাতে আছে ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পদ্মফুল আর তার ডানদিকে মধুলােভী অসংখ্য মধুকরের আনাগােনা। বাংলার উত্তরে থাকা বরফে ঢাকা হিমালয় পর্বতমালা সূর্যের কিরণে সােনার মুকুটের মতাে ঝলমল করে। সেই মুকুট থেকে ঠিকরে পড়া আলােয় বিশ্বচরাচর আলােকিত হয়। বাংলার দিগন্ত বিস্তৃত সােনালি ধানখেতকে কবি বাংলামায়ের কোলভরা সােনার ধান বলেছেন। মায়ের দেহ অতসী-অপরাজিতা ফুলে শােভিত। বাংলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর যেন তটভূমিতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মাধ্যমে বাংলা-মাকে তার প্রণাম জানায়, ঢেউয়ের কলতানে রচিত হয় মায়ের বন্দনাগীতি। এভাবেই কবি সারা পৃথিবীর মানুষের ‘বাঞ্ছিত ভূমি’ বাংলার রূপ বর্ণনা করেছেন।
 
২. ‘আমরা’ কবিতায় কবি বাঙালির কৃতিত্বকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখাে। 
 
উত্তরঃ সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা’ কবিতাটিতে কবি বাঙালির গৌরবগাথা রচনা করেছেন।
  জলে-জঙ্গলে পূর্ণ বাংলায় বাঙালি জাতি সাপ ও বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। রাঢ় বাংলার সিংহপুরের রাজপুত্র বাঙালি বিজয়সিংহ লঙ্কা জয় করেন এবং তার নামানুসারেই লঙ্কার নামকরণ সিংহল করা হয়। বারােভূঁইয়ার অন্যতম চাঁদ রায়, প্রতাপাদিত্যকে পরাজিত করতে দিল্লির মােগল সম্রাটকে রীতিমতাে লড়াই করতে হয়েছিল। বাঙালি পন্ডিত অতীশ দীপঙ্কর তিব্বতে গিয়ে বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও শিক্ষাবিস্তার করেন। নবদ্বীপের রঘুনাথ শিরােমণি মিথিলার বিখ্যাত পণ্ডিত পক্ষধর মিশ্রকে তর্কযুদ্ধে পরাজিত করে বাংলার গৌরব বৃদ্ধি করেন। বাঙালি কবি জয়দেবের লেখা কাব্য গীতগােবিন্দ সংস্কৃত সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। স্থাপত্য, ভাস্কর্য, শিল্পকলাতেও বাঙালি জাতি কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। পাল যুগের বিখ্যাত দুই ভাস্কর ছিলেন বিটপাল ও ধীমান। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব, শ্রীরামকৃষ্ণদেব আধ্যাত্মিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাঙালিকে অপূর্ব মহিমা দান করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী মুগ্ধ করেছে বিশ্ববাসীকে। বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু গাছের মধ্যে প্রাণের স্পন্দন আবিষ্কার করেছেন। ড. প্রফুল্লচন্দ্র রায় রসায়নশাস্ত্রে অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। বাঙালির কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তার কবিতায় মানুষের মহামিলনের কথা বলেছেন। সবশেষে কবি আশা প্রকাশ করেছেন যে বাঙালি একদিন তার প্রতিভা ও কর্মপ্রচেষ্টায় বিশ্বে শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে।

This Post Has One Comment

Leave a Reply