খেয়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি | Kheya Kobitar Question Answer [WBBSE]

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

খেয়া —রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

• গ্রাম ও নাগরিক জীবনের তুলনামূলক আলোচনা।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সবচেয়ে সেরা তারকা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । তাঁর একটি স্বরণযোগ্য কবিতা হল ‘খেয়া’। যেখানে পৃথিবীর দ্বন্দসংঘাতময় নাগরিক জীবন অন্যদিকে কোমল শান্তির নীড়রূপ গ্রামীণ জীবনের ছবি জীবন্তভাবে বাস্তব হয়ে উঠেছে ।
কবিতার শুরুতেই কবিগুরু গ্রামের শান্তিপ্রিয় মানুষের সহজ সরল জীবনের ছবি অঙ্কন করেছেন ।একটা নাম না জানা নদীর দুপাশে দুটি নাম না জানা গ্রাম ।নাগরিক জীবনের মত পর্যাপ্ত সুখ সুবিধা নেই ।কিন্তু এঁদের নাড়ীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একে অন্যের প্রতি মমত্ব বোধ ,ভালবাসা ।নদী পারাপারের খেয়া নৌকাই হয়ে উঠেছে দুপারের দুটি গ্রামের মানুষের আত্বীত্বের অবিচ্ছেদ্য বন্ধন ।
অন্যদিকে, নাগরিক জীবনে অভ্যস্থ মানুষের জীবনে রয়েছে উন্নত সভ্যতার সমস্ত সুখ সমৃদ্ধি । তবে ,পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ মানব প্রেমের বড় অভাব এখানে । এরা ক্ষমতার লোভে বসিয়ে দিতে পারে একে অন্যের বুকে ছুরি ।ফলত ,রক্তাত্ব সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এক সাম্রাজ্যের পতনের মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠে অন্য একটি সাম্রাজ্য । একদিকে সভ্যতার অগ্রগতি যেমন মানুষকে দিয়েছে উন্নতর জীবন ,অন্যদিকে কেড়ে নিয়েছে আবেগ ,মমত্ব বোধের মত মানবিক গুণ সমূহ ।এর ক্ষতিকর দিকগুলো মানব জীবনকে করে তুলেছে বিষাক্ত । নাগরিক সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে সরে গেছে নেচার ,তৈরী হয়েছে উন্নত মারণাস্ত্র ।পারস্পরিক সম্পর্ক এসে দাঁড়িয়েছে তলানিতে ।
নগর জীবনের এই স্বার্থ সংঘাত এর পাশাপাশি পল্লীবাংলার জীবন কিন্তু অবহমান কাল ধরে একইরকম । আসলে মানব প্রেমিক দার্শনিক কবি হৃদয়হীন নাগরিক জীবনের থেকে সহজ সরল ,মানবিক পল্লীজীবনের প্রতি হৃদয়ের ভালবাসা ব্যক্ত করেছেন ।
—ঋণ স্বীকার আরিফুল ইসলাম সাহাজি
• সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।
১. খেয়া’ কবিতাটির কবি হলেন—
(ক) নজরুল ইসলাম
(খ) বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) নবীনচন্দ্র সেন
(ঘ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (ঘ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২. ‘খেয়া’ কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
(ক) চিত্রা
(খ) চৈতালী
(গ) লিপিকা
(ঘ) মানসী
উত্তরঃ (খ) চৈতালী।
৩. ‘খেয়া’ কবিতাটিতে ক-টি পছত্তি আছে?
(ক) বারো
(খ) পনেরো
(গ) তেরো
(ঘ) চৌদ্দো
উত্তরঃ (ঘ) চৌদ্দো
৪. নদীস্রোতে পারাপার করার মাধ্যম হলো—
(ক) জাহাজ
(খ) খেয়া নৌকা
(গ) খেয়া
(ঘ) ভেলা
উত্তরঃ (খ) খেয়া নৌকা।
৫. ‘খেয়া নৌকা’-র কাজ হল—
(ক) মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়া
(খ) যাত্রী পারাপার করা
(গ) সীমান্তে পাহারা দেওয়া
(ঘ) মাছ ধরা
উত্তরঃ (খ) যাত্রী পারাপার করা।
৬. ‘খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে;’ –‘পারাপার’ শব্দটির অর্থ হল—
(ক) লাফঝাঁপ
(খ) উড়ান
(গ) এক তীর থেকে অন্য তীরে যাওয়া
(ঘ) হাঁটাচলা
 উত্তরঃ (গ) এক তীর থেকে অন্য তীরে যাওয়া।
৭. ‘কেহ যায় _____ কেহ আসে ______ হতে।’—
(ক) ঘর, ঘরে
(খ) গৃহে, গেহ
(গ) ঘরে,ঘর
(ঘ) বাড়ি, মাঠ
উত্তরঃ (গ) ঘরে,ঘর।
৮. নদীর দুই তীরে আছে—
(ক) দুটি নগর
(খ) দুটি গ্রাম
(গ) বাঁশবন
(ঘ) আম বাগান
 উত্তরঃ (খ) দুটি গ্রাম।
৯. ‘আনাগোনা’ শব্দটির অর্থ—
(ক) আসা
(খ) যাওয়া
(গ) আসা-যাওয়া
(ঘ) ফেরা
 উত্তরঃ (গ) আসা-যাওয়া।
১০.’ নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস’– পৃথিবীতে নানাবিধ নতুন ইতিহাস গড়ার কারণ—
(ক) দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশ
(খ) নদীস্রোত
(গ) ঐ দুটি গ্রাম
(ঘ) রাজপুরুষেরা
উত্তরঃ (ক) দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশ।
১১. ‘সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে।’-‘টুটে’ বলতে বোঝায়—
(ক) মুক্ত হয়
(খ) ছিঁড়ে যায়
(গ) ভেঙে যায়
(ঘ) সরে যায়
উত্তরঃ (গ) ভেঙে যায়।
১২. সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে!’— পঙ্ক্তিটিতে বোঝানো হয়েছে—
(ক) রাজার অহংকার ও পতনকে
(খ) রাজত্বের গড়ে ওঠাকে
(গ) কোনো দেশের রাজার রাজ্যাভিষেক ও ধ্বংসকে
(ঘ) রাজতন্ত্রের উত্থানপতনকে
উত্তরঃ (ক) রাজার অহংকার ও পতনকে।
১৩. ‘সোনার….কত ফুটে আর টুটে।’— শূন্যস্থান পূরণ—
(ক) কুন্তল
(খ) কিরীট
(গ) মুকুট
(ঘ) দেউল
উত্তরঃ (গ) মুকুট।
১৪. নব নব সভ্যতার বিকাশে প্রেরণা জোগায় কারা?
(ক) তৃষ্ণা-ক্ষুধা
(খ) দ্বন্দ্ব, সর্বনাশ
(গ) নদী, স্রোত
(ঘ) সকাল, সন্ধ্যা
 উত্তরঃ (ক) তৃষ্ণা-ক্ষুধা।
১৫. ‘নব নব কত তৃষ্ণা ক্ষুধা’— এই লাইনটিতে কীসের কথা বলা হয়েছে?
(ক) সভ্যতার
(খ) নগরের
(গ) মানুষের
(ঘ) যন্ত্রের
উত্তরঃ (ক) সভ্যতার।
১৬. “উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুখা’— এখানে ‘হলাহল’ ও ‘সুধা’-র প্রকৃত স্বরুপটি হল—
(ক) বিষ ও অমৃত
(খ) উত্থানপতন
(গ) দ্বন্দ্ব সর্বনাশ
(ঘ) সভ্যতার কুফল ও সুফল
উত্তরঃ (ঘ) সভ্যতার কুফল ও সুফল।
১৭. “উঠে কত হলাহল’—এখানে ‘হলাহল’ শব্দের অর্থ হল—
(ক) অমৃত
(খ) সুধা
(গ) সমুদ্র
(ঘ) গরল
উত্তরঃ (ঘ) গরল।
১৮. ‘কেবা জানে নাম,’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন—
(ক) মানুষের নাম জানা যায় না
(খ) গ্রাম দুটির নাম অজানা
(গ) নদীটির নাম অজানা
(ঘ) সভ্যতার নাম অজানা
উত্তরঃ (খ) গ্রাম দুটির নাম অজানা।
১৯. ‘দোঁহা-পানে চেয়ে আছে—’দোঁহা’ কারা?
(ক) দুটি খেয়া
(খ) দুটি নৌকা
(গ) দুটি তীর
(ঘ) দুটি গ্রাম
উত্তরঃ (ঘ) দুটি গ্রাম।
২০. ‘এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে—’ এখানে ‘নদীস্রোত’ বলতে আসলে কবি বুঝিয়েছেন—
(ক) নদীর জলস্রোত
(খ) জীবনপ্রবাহ
(গ) পৃথিবী
(ঘ) কালস্রোত
উত্তরঃ (ঘ) কালস্রোত।
২১. ‘এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে—’এখানে ‘খেয়া’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন—
(ক) মানবজীবন প্রবাহ
(খ) ছোটো নৌকা
(গ) ছোটো ছোটো আকাঙ্ক্ষা
(ঘ) কালস্রোত
উত্তরঃ (ক) মানবজীবন প্রবাহ।
         • অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।
১. ‘খেয়া’ কবিতাটি কার লেখা?
উত্তরঃ খেয়া কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা।
২. রবীন্দ্রনাথের কোন কাব্য গ্রন্থে খেয়া কবিতাটি সংকলিত হয়েছে?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের চৈতালি কাব্যগ্রন্থ থেকে খেয়া কবিতাটি সংকলিত হয়েছে।
৩. “দোঁহা-পানে চেয়ে আছে”– কারা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে ?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের ‘খেয়া’ কবিতানুসারে গ্রাম্য নদীর দুই তীরবর্তী দুটি গ্রাম পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
৪. সকাল থেকে সন্ধ্যা দুই গ্রামের মানুষ কী করে?
উত্তরঃ সকাল থেকে সন্ধ্যা দুই গ্রামের মানুষ নানা প্রয়ােজনে একে অন্যের গ্রামে আনাগােনা অর্থাৎ যাতায়াত করে।
৫. খেয়া’ কবিতায় দুটি গ্রাম কোন ব্যঞ্জনা নিয়ে আসে?
উত্তরঃ ‘খেয়া কবিতায় দু-পারের দুটি গ্রাম জীবন ও মৃত্যুর ব্যঞ্জনা নিয়ে আসে।
৬. ‘খেয়া’ কবিতায় নদীর দুই তীরে কী আছে?
উত্তরঃ ‘খেয়া’ কবিতায় নদীর দুই তীরে পরস্পরের পরিচিত দুটি গ্রাম আছে।
৭. ‘সকাল হইতে সন্ধ্যা করে আনাগোনা’— কে আনাগােনা করে ?
উত্তরঃ সকাল থেকে সন্ধ্যা দুই গ্রামের মানুষের খেয়া পারাপার করাকে আনাগোনা বলা হয়েছে।
৮. নদীতে কী পারাপার করে?
উত্তরঃ নদীর একপারের মানুষকে বিভিন্ন প্রয়ােজনে অন্য পারে পৌঁছে দিতে নদীস্রোতে খেয়া নৌকা পারাপার করে।
৯. পৃথিবীতে নতুন নতুন কী গড়ে ওঠে?
উত্তরঃ পৃথিবীতে নতুন নতুন ইতিহাস অর্থাৎ সামাজিক ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কাহিনি ও ক্ষমতা বদলের কাহিনী গড়ে ওঠে।
১০. খেয়ানৌকা বলতে কী বােঝ ?
উত্তরঃ নদী বা বড়াে জলাশয় পারাপারের জন্য ব্যবহৃত ছােটো নৌকাকে খেয়া নৌকা বলা হয়ে থাকে।
১১. “সভ্যতার নব নব কত তৃষ্ণা ক্ষুধা—” —কবি ‘তৃষ্ণা’ ও ‘ক্ষুধা’ শব্দ দুটি দিয়ে কী বােঝাতে চেয়েছেন ?
উত্তরঃ ‘তৃষ্ণা’ ও ‘ক্ষুধা’ শব্দ দুটি দিয়ে কবি সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের বেড়ে যাওয়া চাহিদাকে বুঝিয়েছেন৷
১২. ‘দুই তীরে দুই গ্রাম আছে জানাশােনা’ —কাদের মধ্যে জানাশােনা রয়েছে?
উত্তরঃ গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা নদীর দুই তীরের মানুষদের মধ্যে জানাশােনা রয়েছে। একেই কবি দুই তীরের দুই গ্রামের জানাশােনা বলেছেন।
১৩. শিরােনাম সূচি অনুযায়ী ‘খেয়া’ কবিতাটি চৈতালি কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা ?
উত্তরঃ শিরােনাম সূচি অনুযায়ী ‘খেয়া’ কবিতাটি চৈতালি কাব্যগ্রন্থের উনিশ সংখ্যক কবিতা।
১৪. চৈতালি কাব্যগ্রন্থে মােট কতগুলি কবিতা রয়েছে?
উত্তরঃ চৈতালি কাব্যগ্রন্থে মােট ৭৯টি কবিতা রয়েছে।
১৫. ‘চিরদিন খেয়া চলে’ বলতে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ চিরদিন খেয়া চলাচলের মধ্য দিয়ে কবি আবহমানকাল ধরে জীবনপ্রবাহ বয়ে চলাকে বােঝাতে চেয়েছেন।
১৬. দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশের ছায়া কোথায়, কেন পড়ে?
উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও পারস্পরিক স্বার্থের সংঘাত পৃথিবীর বুকে ছায়া ফেলে।
১৭. পৃথিবীৱ দ্বন্দ্ব সংঘাত কাকে স্পর্শ করতে পারে না?
উত্তরঃ নিস্তরঙ্গ গ্রাম জীবনকে পৃথিবীর দ্বন্দ্ব-সংঘাত স্পর্শ করতে পারে না।
১৮. কীভাবে নতুন নতুন ইতিহাস গড়ে ওঠে ?
উত্তরঃ পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সর্বনাশকে অতিক্রম করে মানব সভ্যতায় রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস।
১৯. চৈতালি’ কাব্যের কবিতাগুলির আঙ্গিকগত বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তরঃ সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত শিরােনামহীন এই কবিতাগুলি সনেট বা চতুর্দশপদী জাতীয় কবিতা।
২০. খেয়া’র যাত্রীরা কোথায় যায় ও কোথা থেকে আসে?
উত্তরঃ নদী পার হয়ে খেয়ার যাত্রীরা কেউ ঘরে যায় কিংবা কেউ বা ঘর থেকে আসে।
২১. পৃথিবীতে কীভাবে নতুন নতুন ইতিহাস গড়ে উঠছে ?
উত্তরঃ পৃথিবীতে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন ইতিহাস গড়ে উঠছে।
২২. কীভাবে কত সােনার মুকুট ফুটছে আর টুটছে ?
উত্তরঃ রাজত্ব অর্জনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে যে রক্তপ্রবাহ ছুটছে, তাতে কেউ হচ্ছে রাজা, কারও বা টুটছে রাজশক্তি।
২৩. এখনে নদী তীরের দুটি গ্রাম কী করছে?
উত্তরঃ এখানে নদীর দুই তীরের দুটি গ্রাম পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে।
• ৩ নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর।
১. ‘খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে;’— খেয়া পারাপারের মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিটি বর্ণনা করো।
উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের অন্যতম কবিতা ‘খেয়া’। খেয়ানৌকা নিত্যদিন নদী পারাপারের কাজ করে। নদীর দুই তীরে গ্রামবাংলার দুই নাম না জানা গ্রাম। গ্রামের যােগাযােগের সূত্র হলাে নদী পারাপারের খেয়া নৌকা। পারস্পরিক আত্মীয়তার ভিত্তিতে গ্রাম্য মানুষের জীবনধারা চলেছে আবহমানকাল ধরে। বহমান নদীর খেয়া পারাপার আত্মীয়তার যােগসূত্রকে করেছে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর। সে পারাপারের মাধ্যমে এই ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
২.কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে।”— এই পঙক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উত্তরঃ আলােচ্য পঙক্তিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেয়া’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় কবি নদীর দুই পাড়ে দুটি নাম না-জানা গ্রামের মধ্য দিয়ে সারা বাংলার পল্লিসমাজের শান্ত স্নিগ্ধ ছবিকে তুলে ধরেছেন। গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা শহরের থেকে অনেক বেশি সহজসরল। সেখানে মানুষে-মানুষে সম্পর্ক অনেক নিবিড়। গ্রামের সাধারণ মানুষ খেয়া নৌকা করে কেউ কাজ সেরে ঘরে ফেরে, কেউবা ঘর থেকে বেরিয়ে কাজে যায়। ক্ষমতা দখলের রক্তাক্ত লড়াইয়ে তারা শামিল নয়। এরাই প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর আদি, অকৃত্রিম জীবনধারার বাহক। এইভাবে চিরন্তন জীবনধারা বয়ে চলে।
৩. “পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ,”— উদ্ধৃত প্রকৃতির মাধ্যমে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন ?
উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙক্তিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘খেয়া’ কবিতা থেকে গৃহীত। কবিতাটিতে কবি নাগরিক জীবন ও গ্রামীণ জীবনের একটি তুলনামূলক ছবি পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন৷ নাগরিক জীবন ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে উত্তাল। গ্রামের তুলনায় নগরে সুযােগসুবিধা, সুখস্বাচ্ছন্দ্য অনেক বেশি কিন্তু সেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের হৃদয়ের যােগ খুব কম। মানুষের সুখের চাহিদা ও বাসনা সেখানে এত বেশি যে তারা নিজেরাই পরস্পর হানাহানি ও দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। এই হিংসা ও লড়াইই পৃথিবীর বুকে ডেকে আনে চরম সর্বনাশ
৪. ‘সােনার মুকুট কত ফুটে আৱ টুটে!উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ রাজতন্ত্রের যুগে রাজাদের মাথায় শােভা পেত সােনার মুকুট। সেই সােনার মুকুট ছিল রাজশক্তির প্রতীক। ক্ষমতা ও সাম্রাজ্যলােভী মানুষ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়। পারস্পরিক অস্ত্রের আঘাতে রক্তের প্রবাহ। ছছাটে। সংগ্রামে যে জয়ী হয় রাজসিংহাসন আসে তার অধিকারে। তার মাথায় তখন ওঠে রাজার স্বর্ণমুকুট। আর পরাজিত প্রতিপক্ষ সব হারিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়। এও হয়ে যায় আর-এক নতুন ইতিহাস। পরাজিত রাজার সােনার মুকুট ভেঙে পড়া— এ হলাে প্রবহমান মানবজীবন ধারার চিরন্তন ঘটনা। এভাবেই কবি সোনার মুকুটের ফুটে ওঠা অর্থাৎ শোভা পাওয়া কিংবা টুটে বা ভেঙে পড়াকে আসলে ইতিহাসের প্রবহমানতাকেই তুলে ধরেছেন ।
৫. ‘উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা!’— ‘হলাহল’ ও ‘সুধা’র অর্থ লেখাে। উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ ‘হলাহল’-এর অর্থ বিষ, ‘সুধা’-র অর্থ হলাে অমৃত। মানবসমাজের উন্নত জীবনযাত্রার প্রতীক হলাে সভ্যতা। সভ্যতার নিত্যনতুন অসংখ্য চাহিদা হলাে তার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা-তৃষ্ণা। এই চাহিদা মেটানাের জন্য সভ্যতাই মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে সংঘাতের অস্ত্র। ফলে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, প্রাণহননই তাে হলাে হলাহল তুল্য বিষ। অপরপক্ষে সভ্যতাই যুদ্ধ নয় শান্তির মন্ত্রে দীক্ষিত করেছে। শিখিয়েছে প্রেম-প্রীতি ও সখ্যের মহান বােধের কথা। এই তাে অমৃত।
৬. কেবা জানে নাম / দোঁহা-পানে চেয়ে আছে দুইখানি গ্রাম’— উদ্ধৃতাংশটির মাধ্যমে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উত্তরঃ চৈতালি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘খেয়া’ কবিতাটিতে রবীন্দ্রনাথ কোনাে নির্দিষ্ট গ্রাম নয়, সারা বাংলার যে-কোনাে গ্রামকে বুঝিয়েছেন। নাম না জানা দুটি গ্রামের উল্লেখ করেছেন। দুটি গ্রাম একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে কারণ তাদের মধ্যে রয়েছে একটি নদী। খেয়া নৌকা তাদের মধ্যে যােগসূত্র তৈরি করে। নদীর দুই পারে দুটি গ্রামের মানুষকে আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধে এই খেয়া নৌকাই। উদ্ধৃতিটি মানববন্ধনের নিবিড় সম্পর্কেরই ইঙ্গিত দেয়।
৭. ‘এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে’— উধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উধৃতিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেয়া কবিতা থেকে সংকলিত। এই কবিতায় কবি কৃত্রিম ও জটিল নাগরিক জীবন এবং সরল ও সাদাসিধে গ্রামীণ জীবনের ছবি পাশাপাশি তুলে ধরেছেন। একদিকে তিনি দেখিয়েছেন সভ্যতার গর্বে, ক্ষমতার অহংকারে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত নাগরিক জীবনকে। অপরদিকে নগরের কোলাহল থেকে দূরে আবহমান কাল ধরে গ্রামবাংলার প্রকৃতির কোলে শান্ত-স্নিগ্ধ গতিতে বয়ে চলা মানুষের জীবনধারা। কবিতাটিতে খেয়া নৌকা সেই মানবিক সম্পর্কের যােগসূত্ররূপে আবহমানকাল থেকেই নদী পারাপার করে চলেছে।
৮. ‘এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে/ কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘৱ হতে—উদ্ধৃতিটির রূপকাৰ্থ বিশ্লেষণ করাে।
উত্তরঃ ‘খেয়া’ একটি রূপক কবিতা। রূপকের মধ্যে নিজেকে ২ আড়াল করে রেখেছে এক অপূর্ব জীবনদর্শন। নদীস্রোত প্রবহমান জীবন। নদীর দুই তীর জন্ম আর মৃত্যু। জন্ম আর মৃত্যুর মাঝের গতিময় জীবনের ঘটনাগুলি নিয়েই জীবনপ্রবাহ। জীবনস্রোতের শুরুতে জন্ম। শেষ হওয়া বা সমাপ্তিতে মৃত্যু। জন্মের মধ্য দিয়ে ঘরে আসা। আর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঘর থেকে চলে যাওয়া। এই যাওয়া-আসার খেয়া পারাপার তাে চিরদিনের, শাশ্বতকালের।
         • ৫ নম্বরের বড় প্রশ্ন উত্তর।
১. সােনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে!”—মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করাে এবং প্রসঙ্গটি উল্লেখের কারণ আলােচনা করাে।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘খেয়া’ কবিতায় প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটির দ্বারা সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনকে বােঝাতে চেয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাস যুগে যুগে বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কের ক্ষমতা দখলের লালসায় রক্তাক্ত হয়েছে। তৈরি হয়েছে ইতিহাসের নতুন নতুন অধ্যায়। দেশদেশান্তর যে প্রবল পরাক্রান্ত শাসকের শাসনে কেঁপে উঠেছে তাকেই পরবর্তীতে ক্ষমতা হারাতে হয় নতুন কোনাে শাসকের কাছে। ‘সােনার মুকুট’ এভাবেই যেমন কারুর মাথায় শােভা পায়, আবার তা খসেও পড়ে কারোর মাথা থেকে। রবীন্দ্রনাথ তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বােঝাতে চেয়েছেন যে ইতিহাসে যুদ্ধরক্তপাত ক্ষমতা দখল ইত্যাদি হয়তাে সত্য, কিন্তু মানুষের যে সহজ অনাবিল জীবনযাত্রা তাতে কোনাে প্রভাব এই উত্থান-পতনের ফলে পড়ে না। খেয়া নৌকার মাধ্যমে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ছন্দময় তাকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রাম সেখানে নিজেদের যুক্ত করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা চলে মানুষের আনাগােনা৷ কেউ ঘরে আসে, কেউ ঘর থেকে যায়। মানুষের এই স্বাভাবিক জীবনযাপনে, পারস্পরিক সম্পর্কে সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন কিংবা রক্তাক্ততা কোনাে প্রভাবই ফেলতে পারে না। জীবনের এই বিরতিহীন চলাচলকে বােঝাতে গিয়েই তুলনা হিসেবে ‘সােনার মুকুট’ এর প্রতিষ্ঠা এবং ছিন্ন হওয়ার কথা কবি বলেছেন।
২.’এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে’— কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখাে।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ তার ‘খেয়া’ কবিতায় নদী-তীরবর্তী দুটি গ্রামের পারস্পরিক সম্পর্কের কথা বলেছেন | নাম-না-জানা সেই দুটি গ্রাম যেন গভীর আত্মীয়তায় পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর তাদের মধ্যে সম্পর্কের সূত্র রচনা করে নদীতে পারাপার করা খেয়া নৌকা। নৌকায় প্রতিদিনের বিরতিহীন যাতায়াত প্রসঙ্গেই মন্তব্যটি করা হয়েছে।
   » নদীতে খেয়া নৌকার চলাচল আসলে গ্রামীণ জীবনের অন্তহীন প্রবাহ বিস্তারের দিকে ইঙ্গিত করে। দুই গ্রামের মানুষেরা খেয়া নৌকায় পারাপার করে ঘরে যায় বা ঘর থেকে বাইরে যায়, তৈরি হয় দুটি গ্রামের আত্মীয়তার সম্পর্ক। যখন পৃথিবীর ইতিহাস আন্দোলিত হয় যুদ্ধ রক্তপাতের ঘটনায়, ঠিক তখনই তার বিপরীতে খেয়া নৌকার চলাচল অব্যাহত থাকে। খােয়নৌকার চিরকালীন যাতায়াত যেন জীবনের স্বচ্ছন্দ প্রবাহকেই নির্দেশ করে যায়। রাজত্বের অবসান ঘটে কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন একইভাবে বহমান থাকে— এ কথাই কবি “এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে” পঙক্তিটির সাহায্যে বােঝাতে চেয়েছেন।
৩.’খেয়া’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নগর ও গ্রামজীবনের যে তুলনামূলক ছবিটি তুলে ধরেছেন তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করাে।
উত্তরঃ ‘খেয়া’ কবিতাটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একদিকে পৃথিবীর ক্ষমতালােভী রক্তাক্ত নাগরিক জীবন আর অন্যদিকে শান্ত-স্নিধ মানবিক সম্পর্কের ডােরে বাঁধা গ্রামজীবনের ছবি পাশাপাশি তুলে ধরেছেন। একটি নাম না-জানা নদীর দুপাশের দুটি গ্রাম এখানে সারা বাংলার পল্লিগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন। গ্রামের সাধারণ মানুষ সহজসরল ভাবে তাদের জীবন কাটায়। নদী পারাপারের খেয়া নৌকাটিই দুপাশের দুটি গ্রামের মানুষকে আত্মীয়তার বন্ধনে বেঁধেছে। অন্যদিকে, নাগরিক জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য অনেক বেশি থাকলেও মানুষের সঙ্গে মানুষের হৃদয়ের যােগ খুব কম। তাই ক্ষমতা বা সম্পদের লােভে তারা একে অন্যকে আঘাত করতেও দ্বিধাবােধ করে না। সভ্যতার অগ্রগতি মানুষকে উন্নততর জীবন দিয়েছে। নাগরিক মানুষ প্রকৃতির থেকে অনেক দূরে সরে গেছে, অজস্র উন্নত ব্যবস্থার মাঝেও তাদের পরস্পরের মধ্যেও তৈরি করেছে অসীম ব্যবধান। নগরজীবনের এই উত্থানপতন, দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে অনেক দূরে পৃথিবীর এককোণে পল্লিগ্রামের জীবন কিন্তু আবহমান কাল ধরে একইরকমভাবে বয়ে চলেছে। কবিতাটিতে সভ্যতার অহংকারে গর্বিত, হৃদয়হীন নাগরিক জীবনের থেকে সহজসরল-অনাড়ম্বর এবং মানবিক পল্লিজীবনের প্রতিই রবীন্দ্রনাথের গভীর ভালােবাসা ব্যক্ত হয়েছে।

This Post Has One Comment

Leave a Reply