ধরাতল – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | কবিতার প্রশ্ন উত্তর | Class 6 [WBBSE]

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

ধরাতল

                     — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছোটো কথা, ছোটো গীত, আজি মনে আসে।
চোখে পড়ে যাহা-কিছু হেরি চারি পাশে।
আমি যেন চলিয়াছি বাহিয়া তরণী,
কূলে কূলে দেখা যায় শ্যামল ধরণী।
সবই বলে, ‘যাই যাই’ নিমেষে নিমেষে,
ক্ষণকাল দেখি ব’লে দেখি ভালোবেসে।
তীর হতে দুঃখ সুখ দুই ভাইবোনে
মোর মুখপানে চায় করুণ নয়নে।
ছায়াময় গ্রামগুলি দেখা যায় তীরে—
মনে ভাবি, কত প্রেম আছে তারে ঘিরে।
যবে চেয়ে চেয়ে দেখি উৎসুক নয়ানে
আমার পরান হতে ধরার পরানে—
ভালোমন্দ দুঃখসুখ অন্ধকার-আলো
মনে হয়, সব নিয়ে এ ধরণী ভালো।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১) : জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী ও বালক পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। কথাকাহিনী, সহজপাঠ, রাজর্ষি, ছেলেবেলা,শিশু, শিশু ভোলানাথ, হাস্যকৌতুক, ডাকঘর প্রভৃতি রচনা শিশু ও কিশোর মনকে আলোড়িত করে। দীর্ঘ জীবনে অজস্র কবিতা, গান, ছোটোগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন। ১৯১৩ সালে Song Offerings (গীতাঞ্জলি)-এর জন্য এশিয়ার মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার পান। দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তাঁর রচনা । পাঠ্য কবিতাটি তাঁর চৈতালি নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া।
• সারসংক্ষেপ : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন সায়াহ্নে স্মৃতি মুখরিত দিনগুলির ছোটো সকল কথা ও ছোটো গীত মনে উদ্ভাসিত হয়। কবিজীবন নদীতে নৌকা বেয়ে চলেছেন। যেতে যেতে চারিপাশের ছোটো ছোটো বস্তু চোখে পড়ছে। কূলে কূলে দেখতে পান সবুজ পৃথিবী। সেগুলিকে ক্ষণকাল দেখলেও খুব ভালোবেসে দেখেন। কিন্তু সেই সময় নদীর তীর থেকে জীবনের প্রধান দুই উপাদান দুঃখ এবং সুখ দুই—ভাইবোন কবির মুখপানে চেয়ে থাকে করুণ নয়নে। নদীর তীরের ছায়া ঘেরা গ্রামগুলিকে কত প্রেম ঘিরে রয়েছে। উৎসাহী দৃষ্টি নিয়ে কবি যখন পৃথিবীর দিকে তাকান তাঁর মনে হয় এই পৃথিবীতে ভালোমন্দ, সুখ-দুঃখ, আলো-অন্ধকারের অস্তিত্ব সর্বদাই পাশাপাশি বিরাজ করছে। আর বিপরীতধর্মী এই সব বিষয় পরস্পর অবস্থান করার কারণেই পৃথিবীকে এত সুন্দর লাগে।
সারাংশ: কবি রবীন্দ্রনাথ নদীপথে ভ্রমণ করতে করতে প্রকৃতির যে রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন তাতে তাঁর জীবন সত্যের প্রকাশ ঘটেছে। ‘ধরাতল’ অর্থাৎ পৃথিবীর বুকে সুখ-দুঃখ ভালো-মন্দের খেলা প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে এই বিপরীত ধর্মীতায় পৃথিবীর প্রাণ।
 শব্দার্থ : ধরা— পৃথিবী। হেরি— দেখি। তরণী— নৌকো। শ্যামল— সবুজ। নিমেষ— মুহূর্ত। ধরণী— পৃথিবী। নয়ন/নয়ান— চোখ। প্রেম— ভালোবাসা। উৎসুক— ব্যগ্র। পরাণ— প্রাণ, জীবন। বাহিয়া— বেয়ে। গীত— গান। ক্ষণকাল— অল্প সময়।
           হাতেকলমে’র প্রশ্নোত্তর
১.১ কবি রবীন্দ্রনাথের লেখা একটি গীতিনাট্যের নাম লেখো।
উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথের লেখা একটি গীতিনাট্যের নাম ‘শ্যামা’।
১.২ তোমাদের পাঠ্য কবিতাটি তাঁর কোন্ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া?
উত্তরঃ আমাদের পাঠ্য কবিতাটি তার ‘চৈতালি’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর লেখো :
২.১ কবির মনে আজ কী ভাবনা এসেছে?
উত্তরঃ কবির মনে আজ ছোটো ছোটো গীত ও কথার ভাবনা এসেছে।
২.২ যেতে যেতে নদী তীরে কবির চোখে কোন্ দৃশ্য ধরা পড়েছে?
উত্তরঃ যেতে যেতে নদী তীরে কবির চোখে সবুজ পৃথিবীর দৃশ্য ধরা পড়েছে।
২.৩ সবাই প্রতি মুহূর্তে কী কথা বলছে?
উত্তরঃ সবাই প্রতি মুহূর্তে ‘যাই যাই’ বলে যাচ্ছে।
২.৪ যা কিছু দেখেন তাকেই কবি ভালোবাসেন কেন?
উত্তরঃ নদীপথে যেতে যেতে ক্ষণকালের জন্য সব কিছু দেখেন বলে কবি যা দেখেন, তাকেই ভালোবাসেন।
২.৫ কবি কাদের ভাই বোনের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তরঃ কবি সুখ-দুঃখকে ভাই বোনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
২.৬ গ্রামগুলি দেখে কবির কী মনে হয়েছে?
উত্তরঃ গ্রামগুলিকে দেখে কবির মনে হয়েছে সেখানে কত প্রেম তাদেরকে ঘিরে রয়েছে।
২. ৭ পৃথিবীর দিকে তাকালে কবির কী মনে হয়?
উত্তরঃ পৃথিবীর দিকে তাকালে কবির মনে হয়, ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, আলো-অন্ধকার নিয়েই এই পৃথিবী ভালো।
৩. নীচের বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণ এবং বিশেষণগুলিকে বিশেষ্যে রূপান্তরিত করো :
শ্যামল, দুঃখ, সুখ, করুণ, ছায়াময়, গ্রাম, উৎসুক, আলো।
উত্তরঃ
     বিশেষ্য             বিশেষণ
    শ্যামলিমা→       শ্যামল
      দুঃখিত→          দুঃখ
         সুখ→             সুখী
        কারুণ্য→        করুণ
         ছায়া→          ছায়াময়
        গ্রাম→            গ্রাম্য
        উৎসুক→         উৎসুক্য
        আলো→        আলোকিত
৪. শব্দঝুড়ি থেকে ঠিক শব্দ নিয়ে নীচের ছকটি সম্পূর্ণ করো :
উত্তরঃ
» বাহিয়া > বেয়ে।    » হেরি > দেখি।
» মোর > আমার।    » প্রাণ > পরাণ।
৫. দুটি বিপরীতার্থক শব্দ যুক্ত হয়ে একটি শব্দ পরিণত হওয়া শব্দগুলি কবিতা থেকে খুঁজে বের করো। ওই শব্দগুলি দিয়ে একটি করে বাক্য লেখো
উত্তরঃ
» ভাইবোন— পাশের বাড়ির ভাইবোনে খুব মিল।
» ভালোমন্দ— সমাজে মানুষকে ভালোমন্দ নিয়েই চলতে হয়।
» দুঃখসুখ— সকল মানুষের জীবনেই দুঃখ সুখ থাকে।
» অন্ধকার-আলো— পৃথিবীতে অন্ধকার আলো পাশাপাশি অবস্থান করছে।
৬. নীচের বাক্যগুলির রেখাঙ্কিত অংশে কোন্ বচনের ব্যবহার হয়েছে লেখো :
৬.১ চোখে পড়ে যাহা কিছু হেরি চারিপাশে।
উত্তরঃ বহুবচন।
৬.২ কূলে কূলে দেখা যায় শ্যামল ধরণি।
উত্তরঃ বহুবচন।
৬.৩ ক্ষণকাল দেখি বলে দেখি ভালোবেসে।
উত্তরঃ একবচন।
৬.৪ সবি বলে, ‘যাই যাই’ নিমেষে নিমেষে।
উত্তরঃ বহুবচন।
৬.৫ যবে চেয়ে চেয়ে দেখি উৎসুক নয়ানে।
উত্তরঃ একবচন।
৭. নীচের কবিতাংশটি ভেঙে পৃথক পৃথক বাক্যে লেখো :
যবে চেয়ে চেয়ে দেখি উৎসুক নয়নে
আমার পরাণ হতে ধরার পরাণে-
ভালোমন্দ দুঃখ সুখ অন্ধকার-আলো
মনে হয়, সব নিয়ে এ ধরণী ভালো।
উত্তরঃ
(১) আমি উৎসুক নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখি আমার পরাণ থেকে ধরার পরাণকে।
(২) এ ধরণী ভালোমন্দ, দুঃখসুখ, অন্ধকার-আলো এসব নিয়েই মনে হয় ভালো।
৮. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো :
৮.১ ‘আমি যেন চলিয়াছি বাহিয়া তরুণী’—এখানে ‘যেন’ শব্দটি কেন ব্যবহার হয়েছে লেখো।
উত্তরঃ কবি কল্পনা করছেন যে তিনি নৌকো বেয়ে চলেছেন। কিন্তু বাস্তবে কবি নৌকো বেয়ে যাননি, তাই এখানে ‘যেন’ শব্দটি কবি ব্যবহার করেছেন ।
৮.২ কবির কল্পনার নৌকাযাত্রায় কী কী দৃশ্য তিনি দেখছেন?
উত্তরঃ কবির নৌকা ভ্রমণ বেরিয়ে ছায়াময় গ্রামগুলিকে প্রত্যক্ষ করতে করতে ভাবেন কত প্রেম ঘিরে রয়েছে। সবকিছুই ক্ষণকালের দৃষ্টিতে ধরা দেয় বলে তিনি ভালোবেসে ছোটো ছোটো জিনিসগুলিকে প্রত্যক্ষ করেন।
৮.৩ সুখ-দুঃখকে কবির ভাইবোন মনে হয়েছে কেন?
উত্তরঃ সুখ ও দুঃখ নিয়েই এই পৃথিবী। এরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। কারো জীবনে কেবল সুখ বা কেবল দুঃখ থাকতে পারে না। আবার সুখ ছাড়া দুঃখের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তাই সুখদুঃখকে কবি ভাই বোন মনে করেছেন।
৮.৪ ‘মনে হয় সব নিয়ে এ ধরণী ভালো’—কখন পৃথিবীকে ভালো মনে হয়? এরকম মনে হওয়ার কারণ কী?
উত্তরঃ সুখ ও দুঃখ নিয়েই এই পৃথিবী। এরা পরস্পর একে অপরের পাশে অবস্থান করে।
আমরা যখন মেনে নেই যে সুখের মতো দুঃখ জীবনের অপরিহার্য পরিণতি তখন পৃথিবীকে ভালো মনে হয়। সুখকে সাদরে গ্রহণ করে নিলেও দুঃখকে মেনে নিতে পারি না। মানুষের জীবনে সুখ দুঃখ বারবার ঘুরে ফিরে আসে। আমরা এই সত্যটি উপলব্ধি করতে পারলেই পৃথিবীকে ভালো মনে হবে।

This Post Has One Comment

  1. Anonymous

    Op

Leave a Reply