ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ (শঙ্খ ঘোষ) দশম শ্রেণি বাংলা | Explanatory Question Answer Ai Aro Bedhe Bedhe Thaki (Madhyamik) Class 10 Bengali wbbse

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ (শঙ্খ ঘোষ) দশম শ্রেণি বাংলা |Explanatory Question Answer Ai Aro Bedhe Bedhe Thaki (Madhyamik) Class 10 Bengali wbbse

1. দশম শ্রেণির আর আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার সমস্ত ধরণের প্রশ্নোত্তর Click Here

2. দশম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

3. দশম শ্রেণির বাংলা সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট Click Here

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর : ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ (শঙ্খ ঘোষ) দশম শ্রেণি বাংলা | Explanatory Question Answer Ai Aro Bedhe Bedhe Thaki Class 10 Bengali wbbse

• কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : (প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৩)

১. ‘আমাদের ডান পাশে ধ্বস’– কবি ‘ডান পাশে ধ্বস’ বলতে আসলে কী বুঝিয়েছেন ? এ কথা বলার কারণ কী ? ১+২

উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষ রচিত ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় ‘ডান পাশে ধ্বস’ বলতে কবি আসলে মানুষের পদে পদে বিপদ এবং পতনের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন।

সভ্যতাগর্বী মনুষ্যত্বহীন সাম্রাজ্যলোভী রাষ্ট্রনায়কদের ক্ষমতার দম্ভে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন। তাদের আশ্রয়, খাদ্য, জীবিকা নেই, বেঁচে থাকাটা অনিশ্চয়তায় ভরা। যুদ্ধ-হানাহানি-রক্তপাতে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে বোঝাতেই আলোচ্য উদ্ধৃতিটির উপস্থাপনা।

২. ‘আমাদের বাঁয়ে গিরিখাদ’– ‘বাঁয়ে গিরিখাদ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? গিরিখাত কথাটি তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষ রচিত ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় ‘বাঁয়ে গিরিখাত’ বলতে কবি আসলে মানুষের পদে পদে বিপদ এবং পতনের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন।

গিরিখাদ হলো দুই পর্বতের মাঝে সৃষ্ট গভীর খাদ। সাধারণ মানুষের জীবন গিরিখাদের মতই বিপদময়। ক্ষমতালোভীর হিংসা ও রণোন্মত্ততায় জনগণের জীবন বিপন্ন। আশ্রয়চ্যুত, জীবিকাহীন, সর্বহারা মানুষদের জীবনপথের দু-দিকেই মৃত্যুর হাতছানি। একদিকে ধস, অন্যদিকে গিরিখাদ। এমনই সংকটময় পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

৩. ‘আমাদের মাথায় বোমারু’-‘বোমারু’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? ‘আমাদের মাথায় বোমারু’ কেন ? ১+২

উত্তরঃ ‘বোমারু’ কথাটির সাধারণ অর্থ বোমা নিক্ষেপকারী। এখানে বোমাবর্ষণকারী যুদ্ধবিমানকে বোমারু বলা হয়েছে।

সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলি নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য দুর্বল দেশগুলির উপর বোমারু বিমানের সাহায্যে বোমাবর্ষণ করে চলেছে। সাধারণ নিরীহ জনগণ প্রাণ বাঁচাতে বাসস্থানের মায়া ত্যাগ করে অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। হিংসা ও ধ্বংসের প্রতীক বোমারু বিমান নিরপরাধ মানুষদের উপর প্রহরারত।

৪.’পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ’ – হিমানী কী ? ‘পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

অথবা, ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবি ‘পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ’ বলতে কী নির্দেশ করেছেন ?

উত্তরঃ হিমানী কথার অর্থ বরফ বা তুষার পর্বতের গায়ে জমে থাকা বরফ হল হিমানী।

পাঠ্য কবিতায় পায়ে পায়ে বলতে মানুষের প্রতি পদক্ষেপকে বোঝানো হয়েছে। মানুষের চলার পথে নানান প্রতিকূলতা প্রতিমুহূর্তে বরফের দেয়ালের মতোই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। হিমানীর বাঁধ সেই বাধার প্রতীক। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজদের ক্রমাগত হামলায়, বোমাবর্ষণে, হানাহানি, রক্তপাতে সাধারণ শান্তিকামী মানুষদের জীবন বিপর্যস্ত অসহায়।

৫. “আমাদের পথ নেই কোনো”– এখানে কোন পথের কথা বলা হয়েছে ? পথ না থাকার কারণ কী ? ১+২

উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষ রচিত ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় ‘পথ’ বলতে সাধারণ মানুষের জীবনপথের কথা বলা হয়েছে। যে জীবন পথে সাধারন মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকবে।

এখানে পথ মানে হলো উপায়। সাধারণ মানুষের পথ নেই, তারা নিরুপায়, অসহায়। পৃথিবীজুড়ে চলছে ক্ষমতাবানদের আস্ফালন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনে মানুষ আজ দিশেহারা। বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, দাঙ্গা, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা মানুষকে দিশেহারা করে তুলেছে। মানুষ আজ সন্ত্রাস আর বঞ্চনার শিকার। জীবনের প্রতি পদে প্রতিবন্ধকতা তার অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। তাই সর্বহারা মানুষের পথ আজ অবরুদ্ধ।

৬. ‘আমাদের ঘর গেছে উড়ে’– কাদের ঘরের কথা বলা হয়েছে ? তাদের ঘর উড়ে গেছে কেন ? ১+২

উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষ রচিত ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় আলোচ্য অংশে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের নিরীহ, নিরপরাধ এবং শান্তিপ্রিয় সাধারণ জনগণের ঘরের কথা বলা হয়েছে।

সাম্রাজ্যলোভীরা বিমান থেকে নির্বিচারে দুর্বলদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে চলেছে। সেই বোমার আঘাতে হাজার হাজার নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হচ্ছে। সেই ধ্বংসের তান্ডব মানুষকে গৃহহীন করেছে। সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য, সাম্রাজ্যের বিস্তারের জন্য এবং অর্থনৈতিক লালসায় এই অমানবিক কাজ করে চলেছে।

৭. ‘আমাদের শিশুদের শব’– উদ্ধৃত পংক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। ৩

উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা থেকে প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। শিশুরা দেশ-জাতি তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিশ্বের সম্পদ। তারাই সভ্যতার ভবিষ্যৎ। তাদের মৃত্যু মানে মানবিকতার সামগ্রিক বিনাশ। শিশুরা সুন্দর, তাদের হাতেই গড়ে ওঠে ভবিষ্যতের সুন্দর সমাজ। তাদের মৃত্যু মানে সুন্দর-সুস্থ সমাজের সমাধি। ‘শিশুদের শব’ বলতে কবি শঙ্খ ঘোষ এই বেদনাঘন দিকটিকেই বুঝিয়েছেন।

৮. ‘ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!’- কী ছড়ানো রয়েছে ? ছড়িয়ে থাকার কারণ কী ? ১+২

উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষ রচিত আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতায় নিষ্পাপ মানবশিশুর শব বা মৃতদেহ ছড়ানো রয়েছে।

সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন; শাসকের মদতপুষ্ট স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর রক্তক্ষয়ী হানাহানি থেকে শিশুরাও বাদ যায়নি। ‘কাছে দূরে’ গোটা পৃথিবী জুড়েই এখন সদ্যোজাতরাও হিংসাশ্রয়ী যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের বলি। কবির আক্ষেপ আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করি যেখানে শিশুদেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষা দিতে অক্ষম। এই অক্ষমতা মানবতার পক্ষে গভীর অত্যন্ত বেদনার।

৯. “আমরাও তবে এইভাবে / এ মুহূর্তে মরে যাব না কি ?”— এমনটা মনে হচ্ছে কেন ? [মাধ্যমিক-২০১৮]

উত্তরঃ সমাজব্যবস্থার মর্মান্তিক শোষণে যে সকল সাধারণ মানুষ জর্জরিত তাদের আশঙ্কা উক্ত উদ্ধৃতিতে প্রকাশ পেয়েছে।
চারপাশের অরাজকতা, ধর্ম কিংবা রাজনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসহিষ্ণুতা, সাম্রাজ্যবাদের সীমাহীন লোভ পৃথিবী জুড়ে হত্যা আর ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। বেঁচে থাকাটাই যেন এক বিস্ময় হয়ে উঠেছে। শিশুরা পর্যন্ত এই ধ্বংসলীলা থেকে রেহাই পাছে না। এই অবস্থায় প্রতিটি মানুষই যেন বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তায় ভুগছে। সর্বোপরি, এই পরিজনহীন অবস্থাতে বেঁচে থাকা যেন মৃত্যুর মতো যন্ত্রনাদায়ক। এ কারণেই কবি প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।

১০. আমাদের পথ নেই আর’– ‘আমাদের’ বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন ? ‘পথ নেই আর’ শব্দবন্ধের তাৎপর্য উল্লেখ করো। ১+২

উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় উল্লিখিত ‘আমরা’ হল যুদ্ধবিধ্বস্ত, আশ্রয়চ্যুত, সর্বহারা সাধারণ মানুষ।

সমাজে চলেছে এক অরাজক পরিস্থিতি। যার প্রভাবে সাধারণ মানুষ সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক শোষণের শিকার। এই বিপন্ন মানুষদের চলার পথ রুদ্ধ, ডানদিকে ধস আর বামে রয়েছে গিরিখাত। মাথার উপরে বোমারু বিমানের ভয় আর পায়ের নীচে হিমানীর বাঁধ। এককদম এগিয়ে যাওয়ার পথটুকুও নেই। এ কথাটা জোর দিয়ে বলার জন্যই খুবই সচেতন ভাবে ‘পথ নেই আর’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। তাই যে কোন সময় পা হড়কে নেমে আসতে পারে মৃত্যু।

১১. আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।’– কবি কাদের ডাক দিয়েছেন ? বেঁধে বেঁধে থাকার প্রয়োজনীয়তা কোথায় ? ১+২

উত্তরঃ ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবি বর্তমান যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর গৃহহীন, অসহায়, নিরন্ন, নিপীড়িত সাধারণ মানুষদের ডাক দিয়েছেন।

আশাবাদী কবি তাদের নিয়ে ঐক্যের স্বপ্ন দেখেন আর দেখেন নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন। কারণ মানুষের একতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সহাবস্থানের বিকল্প নেই। চরম সংকটের দিনে সংঘবদ্ধ থাকলে অশুভ শক্তিকে, প্রতিহত করা যায়। একতাই বল। সংঘবদ্ধ সাধারণ মানুষ যখন বিরাট শক্তিতে পরিণত হয়, তখন উদ্ধত সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও সেই প্রতিরোধী ও প্রতিবাদী জনশক্তিকে ভয় পায় তাই বেঁধে বেঁধে থাকা প্রয়োজন।

১২. “আমাদের ইতিহাস নেই”— কে, কেন এ কথা বলেছেন ? [মাধ্যমিক-২০১৮]

উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর রচিত ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় প্রশ্নের উদ্ধৃত অংশটির কথা বলেছেন ।

ইতিহাস হলো কোনো জাতির এবং সভ্যতার আত্মবিকাশের পথ ও পর্যায়ের কাহিনী। কিন্তু যখন সেই ইতিহাস নিয়ন্ত্রিত হয় কোনো ক্ষমতাবান গোষ্ঠী, ধর্মসম্প্রদায় কিংবা রাজনীতির দ্বারা, তখন ইতিহাসের বিকৃতি ঘটে। ক্ষমতাবানরা নিজেদের স্বার্থে ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে গড়ে তোলে। মানুষ একসময় ভুলে যায় তার প্রকৃত ইতিহাস, আর চাপিয়ে দেওয়া ইতিহাসকেই নিজের বলে মেনে নেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতেই এখানে কবি বলেছেন আমাদের ইতিহাস নেই।

১৩. “আমাদের ইতিহাস নেই”- এমন আক্ষেপের কারণ কী ?

উত্তরঃ কোনো জাতির ইতিহাস না থাকলে সেই জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। কারণ, অতীত অভিজ্ঞতা, আত্ম গৌরব, ঐতিহ্য তাকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। কিন্তু সেই ইতিহাস লেখে পুঁজিপতি শাসকশ্রেণির মানুষরা। তাই সেই ইতিহাস পক্ষপাতপূর্ণ। কারণ, তা লেখা হয় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী, ধর্মসম্প্রদায় কিংবা রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। তাই ওই ইতিহাসে স্থান পায় না সাধারণ মানুষের কর্মের-ঘর্মের বঞ্চনার ইতিহাস। একসময় প্রকৃত ইতিহাস চিরদিনের জন্য চাপা পড়ে যায়-তাই সাধারণ মানুষের আক্ষেপ– ‘আমাদের ইতিহাস নেই।’

১৪. ‘অথবা এমনই ইতিহাস’— কবি কোন ইতিহাসের কথা বলতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ কবি মনে করেন, সারা পৃথিবীর ইতিহাসে সাধারণ মানুষের কথা সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। ইতিহাস কেবল ক্ষমতাবানদের কথা বলে। কারণ ইতিহাসকে নিয়ন্ত্রণ করে শাসক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। আপামর জনগণের কোন ইতিহাস নেই অর্থাৎ ইতিহাসে তারা উপেক্ষিত। আর সাধারণ মানুষের যদিও-বা কোনো ইতিহাস থাকে তবে তা অস্পষ্ট, অর্ধসত্য এবং অসম্পূর্ণ। ক্ষমতাবান শাসকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ইতিহাসে মানুষের অবস্থার যথার্থ প্রতিফলন ঘটে না।

১৫. ‘আমাদের চোখমুখ ঢাকা’– ‘চোখমুখ ঢাকা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? ৩

উত্তরঃ মানবসভ্যতার প্রকৃত ইতিহাস ক্ষমতাবান শাসকের দ্বারা বিকৃত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করতে বদলে দেওয়া হয় ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি। অসহায় ও দুর্বল সাধারণ মানুষ এই সত্য জেনেও না জানার ভান করে। প্রতিবাদী বিবেককে জলাঞ্জলি দিয়ে ভয়ে-বিপন্নতায় বিকৃতি আর বিভ্রান্তিকেই সত্যিকারের ইতিহাস বলে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। আপসকামী সাধারণ মানুষের এই চারিত্রিক দৈন্যতাকে কবি ‘চোখমুখ ঢাকা’ শব্দবন্ধের মাধ্যমে ব্যঙ্গাত্মক বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছেন।

১৬. ‘আমরা ভিখারী বারোমাস।’– বলার কারণ কী ?

উত্তরঃ শঙ্খ ঘোষ রচিত ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবি স্বয়ং সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হয়ে সাধারণ শ্রমজীবী কৃষিজীবী বা অন্যান্য নিম্ন বৃত্তিজীবী মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। সমাজের এই সমস্ত মানুষদের দারিদ্র্য, বঞ্চনা, অবহেলায় জীবন কাটাতে হয়। সমাজের ওপর তোলার সমস্ত সুবিধা ভোগী মানুষের দৈাদক্ষিণের উপর নির্ভর করে শ্রমজীবী মানুষের জীবন।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শোষন, অত্যাচারে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন ভাবে বঞ্চিত হয়ে আশ্রয় এবং কর্মহীন হয়ে আজ তারা চিরভিখারিতে পরিণত হয়েছে।

১৭. ‘পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে’– এ কথা বলা হয়েছে কেন ? এমন সংশয়ের কারণ কী ? ১+২

উত্তরঃ পৃথিবীতে হারিয়ে যাচ্ছে মানবিকতা। পৃথিবী এখন জীবনস্মৃত। তাই ‘হয়তো’ শব্দের মাধ্যমে পৃথিবীর যথার্থরূপে বেঁচে থাকার বিষয়ে সংশয় প্রকাশিত হয়েছে।

অজস্র মানুষের আবাসস্থল এই মাতৃস্বরূপা পৃথিবী। পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতার মাঝে পীড়িত, ঘর হারা ও ইতিহাসে ঠাঁই না পাওয়া মানুষগুলির কাছে বেঁচে থাকার অর্থটাই হারিয়ে গেছে। যেখানে পৃথিবীর সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন, সেখানে কবি দৃঢ়তার সঙ্গে নিশ্চিত করে বলতে পারেন না যে, পৃথিবী বেঁচে আছে। তাঁর সংশয় জাগে। পৃথিবী যদি আজও বেঁচে থাকে তবে সে গভীরতর অসুখ নিয়েই বেঁচে আছে। এই সংশয়ের কারণেই ‘হয়তো’ কথাটি কবি বলেছেন।

১৮. ‘পৃথিবী হয়তো গেছে মরে’— এমন সংশয়ের কারণ কী ?

উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় এমন সংশয়পূর্ণ উক্তিটি করেছেন। পৃথিবী এখন যেভাবে রয়েছে তাকে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা বলা যায় না। পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতার মাঝে পীড়িত ঘরহারা ও ইতিহাসের ঠাঁই না পাওয়া মানুষগুলির কাছে বেঁচে থাকার অর্থটাই হারিয়ে গেছে। তাই পৃথিবীর বেঁচে থাকা বা না থাকায় তাদের কিছু যায় আসে না।
জীবনের অর্থহীনতায় বেঁচে থাকার আশা তারা হারিয়েছে। তাই সমস্ত পৃথিবীটা তাদের কাছে জীবন্মৃত বলে মনে হয়েছে।

১৯. ‘আমাদের কথা কে-বা জানে’– বলার কারণ কী ?

উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষ রচিত ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় ‘আমাদের কথা’ অর্থাৎ এখানে আমাদের বলতে সাধারণ মানুষের কথা বলা হয়েছে। সমাজে কখনোই সাধারন মানুষের প্রয়োজন, তাদের অবস্থা, তাদের চাহিদা কী এসব জিনিস এই দ্রুতগতিতে চলা সমাজের অন্যান্য মানুষেরা শুনতে বা জানতে চাই না। আত্মসর্বস্বতার যুগে সাধারণ মানুষের দুঃখ দূর্দশার কথা কেউ খোঁজ রাখে না। সাধারন মানুষের কথা সাধারণ ব্যপার হয়ে সাধারন মানুষের মধ্যেই থেকে যায়।

২০. ‘আমরা ফিরেছি দোরে দোরে’– ‘ আমরা কারা ? কেন এই অবস্থা ? ১+২

উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় ‘আমরা’ বলতে বিপন্ন ও অসহায় সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয়েছে।

যুদ্ধের ভয়াবহতা হানাহানি হিংসা রক্তপাত লক্ষ মানুষের মৃত্যু জনসাধারণের জীবন জীবিকা কে অনিশ্চিত করে তুলেছে। মেহনতি মানুষগুলি দারিদ্র্য-বঞ্চনার কারণে বারোমাস ভিখারি হয়ে থাকে। চরম সংকটকালে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের আর্জি নিয়ে তারা দোরে দোরে ফিরেছে। আর ফিরেছে শান্তি ও সুস্থিরতার আবেদন নিয়ে। হতভাগ্য, নিরাপত্তাহীন ও দিশাহীন মানুষের এই নিরুপায় দুর্দশার ছবিটি ফুটে উঠেছে প্রশ্নোক্ত পঙক্তিটিতে।

২১. ‘কিছুই কোথাও যদি নেই’— কিছু না থাকার কারণ কী ? কিছু না থাকলেও কী আছে বলে কবি সান্ত্বনা দিয়েছেন ?

উত্তরঃ খেটে-খাওয়া জনসাধারণের জীবন অভাবের, বঞ্চনার। তার উপর স্বার্থান্বেষী মানুষ তাদের জীবনকে আরও রিক্ত করে তোলে। এই কারণে জীবন-জীবিকা-আশ্রয় কিছুই তাদের নেই।

যুদ্ধের বীভৎসতা কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য প্রাণ। তবু সমূহ প্রতিকূলতার মাঝেও বেঁচে আছে কয়েকজন সাধারণ মানুষ। তারা সব জীবিকা, আশ্রয়, স্বজন, স্বদেশ হারিয়েছে। তবু হারায়নি তাদের মানবিকতা। সব কিছু হারানোর বেদনা বুকে নিয়েই বাকি কজনকে কবি আরও নিবিড় সহমর্মিতা ও সংঘবদ্ধ হয়ে থাকতে বলেছেন। সমগ্র সাধারণ মানুষের নিঃস্ব অবস্থাকে অনুভব করে কবি বলেছেন– ‘তবু তো কজন আছি বাকি’।

২২. ‘তবু তো কজন আছি বাকি’– কবি এই উক্তিটির সাহায্যে কী বোঝাতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় উদ্ধৃত উক্তিটি যেন ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’। কবির মতে, সাম্রাজ্যবাদী ও স্বার্থান্বেষী একদল মানুষ নানান প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের চলার পথ রুদ্ধ করে দিতে চাইছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে তারা নানানভাবে বিপন্ন। তাদের অতীত অস্পষ্ট, অসম্পূর্ণতায় অন্ধকার। আর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সাম্রাজ্যবাদী শাসকের চক্রান্তে দুর্বিষহ। এরকম প্রতিকূল অবস্থার মাঝে বিবেকবান যে কয়েকজনের অস্তিত্ব আছে, কবি তাদের নিয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধের আশায় এমন উক্তি করেছেন।

২৩. ‘আয় আরো হাতে হাত রেখে’– ‘হাতে হাত রাখা’ বলতে কী বোঝায় ? এক্ষেত্রে ‘আরো’ শব্দটির প্রয়োগের তাৎপর্য লেখো।

উত্তরঃ শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় হাতে হাত রাখা সংঘবদ্ধতার প্রতীক; হাতে হাত রাখা বলতে কবি সংঘবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন।

বিচ্ছিন্নতা, আগ্রাসন, হিংসা, অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে কবি সাহিত্যিকদের লড়াই চিরকালের। তারা চায় শান্তি, যা সমাজের বৃহত্তর অংশের চাওয়া। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও অশুভ শক্তির প্রভাবে সাধারণ মানুষ আজ বিপন্ন। তবু এত প্রতিকূলতার মাঝেও তাদের মধ্যে যতটুকু প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে সেটুকু একত্রিত করার জন্য কবি ‘আরো’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ‘আরো’ শব্দটির উপর জোর দিয়ে আরো বেশি করে ঐক্যবদ্ধ হবার কথা বুঝিয়েছেন।

📌 আরও দেখুনঃ

1. মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যসূচী ২০২৪-২৫ Click Here

2. মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫ Click Here

3. মাধ্যমিক বিগত বছরের সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র | Madhyamik Previous Years Question Paper Click Here

4. মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি অনলাইন MCQ মক্ টেস্ট | Madhyamik Preparation MCQ Mock Test Click Here

📌 অন্যান্য বিষয় দেখুনঃ

1. দশম শ্রেণির ইংরেজি সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

2. দশম শ্রেণির ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

3. দশম শ্রেণির ভূগোল সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

4. দশম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

5. দশম শ্রেণির ভৌত বিজ্ঞান সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

Leave a Reply