ঘাসফড়িং কবিতার প্রশ্ন উত্তর
শব্দার্থ: আত্মীয়তা– কুটুম্বিতা। ঝিরঝির বৃষ্টি– মৃদু বৃষ্টিপাত। ভাব– বন্ধুত্ব।
ঘাসফড়িং কবিতার কবি পরিচিতি:
অরুণ মিত্র (১৯০৯-২০০০) : জন্মস্থান বাংলাদেশের যশোহর জেলা। পিতা হীরালাল মিত্র, মাতা যামিনীবালা মিত্র। তিনি ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষজ্ঞ। দীর্ঘকাল ফ্রান্সে ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হলো প্রান্তরেখা, ঘনিষ্ঠ তাপ, শুধু রাতের শব্দ নেই, খুঁজতে খুঁজতে এতদূর, শেষ সরাইখানা, ফরাসি সাহিত্য প্রসঙ্গে ইত্যাদি। এছাড়া তিনি বহু প্রাচীন সাহিত্যের অনুবাদও করেছেন।
ঘাসফড়িং কবিতার সারসংক্ষেপঃ
কবি অরুণ মিত্রের ‘ঘাস ফড়িং’ কবিতায়
একটি ঘাসফড়িং-এর সঙ্গে কবির বন্ধুত্ব হয়েছে। ভাব না করে তিনি পারতেন না। ঝিরঝিরে বৃষ্টির পর ভিজে ঘাসে পা দিতেই তাদের মধ্যে নতুন আত্মীয়তা শুরু হয়। ফড়িংটি তার সবুজ মাথা তুলে কবিকে অনেক খেলা দেখায়। তার কাছ থেকে চলে আসার সময় কবির খুব মন খারাপ হয়। কবি ঘাসফড়িং-কে কথা দেন তিনি আবার আসবেন। কবি তার ঘরের দরজা সবুজে ভরে দেন। আবার ঝিরঝির বৃষ্টি নামে। ঘাসফড়িং-কে দেওয়া কথা রাখার জন্য কবিকে আবার ভিজে ঘাসের ওপর যেতেই হবে।
কবিতার ব্যাখ্যাঃ
এই কবিতাটি প্রকৃতির সাথে কবি-মনের আত্মীয়তার সম্পর্ক বিষয়ক কবিতা। কবির সাথে একটি ঘাসফড়িং-এর ভাব হয়েছে। কবি যখন সবুজ প্রকৃতির কাছে গেছেন, তখনই তিনি নতুন আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধা পড়েছেন। বাঁধা না পড়ে উপায় ছিলো না। মানুষ যখনই সবুজ প্রকৃতির কাছে যায়, তখনই সবুজের ভালোবাসায় বাঁধা পড়ে যায়। ঘাসফড়িং এখানে সবুজ প্রকৃতির প্রতিনিধি। তার কাছ থেকে চলে আসতে কবির মন খারাপ হয়। সবুজের সঙ্গ ত্যাগ করতে আমাদের সবারই কষ্ট হয়। তাই আমরা আবার ফিরে যাওয়ার কথা না দিয়ে পারি না। আমাদের ঘরের দরজা তখন সবুজ হয়ে ওঠে। আসলে এ দরজা ঘরের নয়, মনের দরজা। সবুজ প্রকৃতির প্রেমে কবির মনের দরজা সবুজ হয়ে ওঠে। তাই আবার যেদিন ঝিরঝির বৃষ্টির দিন আসে, কবিকে ফিরে যেতে হয় সবুজের কাছে।
আরও দেখোঃ বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর
(হাতে কলমে প্রশ্নের উত্তর)
১.১ কবি অরুণ মিত্র কোন বিদেশি ভাষায় বিশেষজ্ঞ ছিলেন?
উত্তরঃ কবি অরুণ মিত্র ফরাসি ভাষায় বিশেষজ্ঞ ছিলেন।
১.২ তাঁর লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখো।
উত্তরঃ কবি অরুণ মিত্রের লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম– শুধু রাতের শব্দ নেই, শেষ সরাইখানা।
২. বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ আলাদা করে দেখাও :
২.১ ভাব না করে পারতামই না আমরা।
২.২ সবুজ মাথা তুলে কত খেলা দেখাল ঘাসফড়িং।
২.৩ আমার ঘরের দরজা এখন সবুজে সবুজ।
২.৪ ভিজে ঘাসের ওপর আমাকে যেতেই হবে আবার।
উত্তরঃ
উদ্দেশ্য | বিধেয় |
২.১ আমরা | ভাব না করে পারতাম না। |
২.২ ঘাসফড়িং | সবুজ মাথাতুলে কত খেলা দেখাল। |
২.৩ আমার ঘরের দরজা | সবুজে সবুজ। |
২.৪ আমাকে | ভিজে ঘাসের ওপর যেতেই হবে আবার। |
৩. নীচের শব্দগুলি বাক্যে ব্যবহার করে একটি অনুচ্ছেদ তৈরি করো :
ভাব, ভিজে, নতুন, আত্মীয়তা, মনখারাপ, সবুজ, ঝিরঝির।
এভাবে আমরা শুরু করতে পারি : খোলা মাঠের সঙ্গে আমার ভারি ভাব। বিশেষ করে তার উপরে গালচের মতো সবুজ ঘাস যখন ভিজে থাকে। যেন একটা নতুন পৃথিবীর মধ্যে দিয়ে আমি হেঁটে যাচ্ছি……
উত্তরঃ খোলা মাঠের সঙ্গে আমার ভারি
ভাব। বিশেষ করে তার উপরে গালচের মতো সবুজ ঘাস যখন ভিজে থাকে। যেন একটা নতুন পৃথিবীর মধ্যে দিয়ে আমি হেঁটে যাচ্ছি। আমি প্রকৃতির কতো কাছে, প্রকৃতির সাথে আমার আত্মীয়তা বহুদিনের। ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে, চারিদিক ধোঁয়া ধোঁয়া দেখাচ্ছে। যত রাজ্যের মন খারাপ মনের মধ্যে চেপে বসেছে। শুধু মনে হচ্ছে কী যেন নেই কী হারিয়ে গেছে।
৪. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণে এবং বিশেষণ শব্দগুলিকে বিশেষ্যে রূপান্তরিত করো : আত্মীয়তা, ঘাস, সবুজ, নতুন।
উত্তরঃ
বিশেষ্য | বিশেষণ | বিশেষ্য | বিশেষণ |
ঘাস | ঘেসো | আত্মীয়তা | আত্মীয় |
সবুজতা | সবুজ | নতুনত্ব | নতুন |
৫. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো :
৫.১ কবির সঙ্গে ঘাসফড়িং-এর নতুন আত্মীয়তা কীভাবে গড়ে উঠল ?
উত্তরঃ ঝিরঝিরে বৃষ্টির পর কবি যখন ভিজে ঘাসের ওপর পা দিয়েছেন তখন ঘাসফড়িং সবুজ মাথা তুলে বহু খেলা দেখাল। এই দৃশ্য দেখে কবি মুগ্ধ হলেন এবং ঘাস ফড়িং এর সঙ্গে নতুন আত্মীয়তা গড়ে উঠল।
৫.২ কবির কৌতূহল ও ভালোলাগায় ঘাসফড়িং কীভাবে সাড়া দিল বলে তোমার মনে হয় ?
উত্তরঃ সবুজ ঘাসের মধ্যে একটি ছোটো ঘাস ফড়িংকে দেখে কবির মনে কৌতূহল জেগেছিল এবং তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন। ঘাসফড়িং ভালোবাসায় খুশি হয়ে সবুজমাথা তুলে অনেক খেলা দেখিয়ে কবির মন কেড়ে নিয়েছিল।
৫.৩ ঘাসফড়িং এর কাছ থেকে চলে আসার সময় কবির মন খারাপ হল কেন বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ ঘাসফড়িং এর সঙ্গে কবির নতুন একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ঘাসফড়িং এর সবুজ মাথা তুলে নাচ কবিকে মুগ্ধ করেছিল ।কাজের তাগিদে কবিকে সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছিল। চলে আসার সময় খুব স্বভাবত কারণেই কবির মন খারাপ হল।
৫.৪ ‘বলে এলাম আমি আবার আসব’— পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে কবির কোন্ মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে ?
উত্তরঃ ঘাসফড়িং এর সবুজ মাথা তুলে অনেক নাচের দৃশ্য দেখে কবি আনন্দিত ও মুগ্ধ হয়েছিলেন। ঘাসফড়িং-এর সঙ্গে কবির নতুন একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সময়ের অভাবে কবি যখন ফিরতে বাধ্য হলেন তখন তাকে কথা দিয়েছিলেন আবার তার কাছে ফিরে আসবেন। এখানে কবির প্রকৃতিপ্রেমিক মনের ও ক্ষুদ্র পতঙ্গের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে।
৫.৫ ‘আমার ঘরের দরজা এখন সবুজে সবুজ’।— কবির এরূপ সবুজের সমারোহ দেখার কারণ কী ?
উত্তরঃ বর্ষার ঝিরঝিরে বৃষ্টি পেয়ে কবির বাড়ির দরজার সামনে খোলা মাঠে ঘাসেরা সবুজ রূপ ধারণ করেছে। তাছাড়া কবির মনেও সবুজের ছোঁয়া লেগেছে; সেই সঙ্গে কবির ঘাসফড়িং-এর সঙ্গে আত্মীয়তা গড়ে ওঠার কথা মনে পড়ছিল। তাই কবি এরূপ সবুজের সমারোহ দেখেছেন।
৫.৬ ‘ভিজে ঘাসের ওপর আমাকে যেতেই হবে আবার।’— কোন্ ভিজে ঘাসের ওপর কবিকে ফিরতেই হবে ? সেখানে তিনি যেতে চান কেন ?
উত্তরঃ বর্ষার ঝিরঝির বৃষ্টির জল পেয়ে যে ঘাস সবুজ হয়ে উঠেছিল যার উপর পা দিয়ে কবি প্রথম ঘাসফড়িং এর সবুজ মাথা তুলে কত খেলা দেখানোর দৃশ্য দেখেছিলেন। সেই খোলা মাঠের সবুজ ঘাসের ওপর কবিকে ফিরতেই হবে।
সেখানে কবি যেতে চান কারণ ঘাস ফড়িং এর সঙ্গে তাঁর নতুন এক গভীর আত্মীয়তা গড়ে উঠেছিল। ভালোবাসার টানেই কবি আবার সেখানে ভিজে ঘাসের ওপর যেতে চান।
৫.৭ প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার নিবিড় টান কীভাবে কবি অরুণ মিত্রের ‘ঘাস ফড়িং’ কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ কবি অরুণ মিত্রের লেখা ‘ঘাসফড়িং’ কবিতাটি আগাগোড়া একটি প্রকৃতিপ্রেমের কবিতা। সবুজ প্রকৃতির সাথে কবি-মনের নিবিড় সম্পর্ক ও সংযোগের কথা অনুভব করা যায় এই কবিতায়। ঘাসফড়িং এই কবিতায় একটি প্রতীকের কাজ করছে। সে আসলে সমগ্র সবুজ প্রকৃতির প্রতিনিধি। ঘাসফড়িং-এর সাথে ভাব হয়ে যাওয়ার পর কবি তাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট পেয়েছেন এবং কথা দিয়েছেন, আবার ফিরে আসবেন। কবি কথা রেখেছেন। যখন আবার বৃষ্টি নামলো ঝিরঝির করে, তখন তিনি আবার ফিরে যেতে উদ্যত হয়েছেন প্রিয় সবুজ প্রকৃতির কাছে, প্রিয় ঘাসফড়িং-এর কাছে। কবি ভুলে যাননি। আর এই মনে রাখার মধ্যেই নিবিড় ভালোবাসার পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তী পাঠঃ কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি।