জ্ঞানচক্ষু গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) বাংলা | Gyanchokkhu Essay Type Questions and Answers Class 10 Bengali wbbse
জ্ঞানচক্ষু
—আশাপূর্ণা দেবী
1. দশম শ্রেণির জ্ঞানচক্ষু গল্পের সমস্ত ধরণের প্রশ্নোত্তর Click Here
2. দশম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
3. দশম শ্রেণির বাংলা সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট Click Here
জ্ঞানচক্ষু গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) বাংলা | Gyanchokkhu Golper Essay Type Questions and Answers Class 10 Bengali wbbse
• কম-বেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫
১. “তপন আর পড়তে পারে না। বােবার মতাে বসে থাকে।”– তপনের এরকম অবস্থার কারণ বর্ণনা করাে। ৫ [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন একটা গল্প লিখেছিল। তার সেই গল্প যখন ছাপা হল, নিজের লেখা গল্প পড়তে গিয়ে তপন হতবাক হয়েছিল।
ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষে মামাবাড়িতে এসে তপন জানতে পেরেছিল তার নতুন মেসো একজন লেখক। তাকে দেখেই জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল তপনের। সে ভাবে, নতুন মেসো যদি একজন লেখক হন তবে তপনের বা লেখক হতে বাধা কোথায়? এরপর সে হোমটাস্কের খাতায় আস্ত একখানা গল্প লিখে ফেলে। সেই গল্প ছোটোমাসির হাত ধরে নতুন মেসোর কাছে পৌঁছায়। গল্প পড়ে লেখক মেসো তপনের অনেক প্রশংসা করেন এবং সেই গল্পটি কোনো পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
তার লেখা গল্প হাজার হাজার ছেলের হাতে হাতে ঘুরবে- এই স্বপ্ন নিয়ে তপন অধীর আগ্রহে দিন গুনতে থাকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর একদিন নতুন মেসো একসংখ্যা সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে তপনদের বাড়িতে আসেন। তপন বুঝতে পারে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
কিন্তু ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা গল্প পড়তে বসে তপন বুঝতে পারে সেই গল্পে তার হাতের ছোঁয়া নেই। নতুন মেসো সেই গল্পটা আগাগোড়া কারেকশন করে নতুন রূপ দিয়েছেন, যে গল্পের প্রতিটা লাইন তার কাছে অপরিচিত। এইজন্য তপন আর পড়তে পারে না, বােবার মতাে বসে ছিল।
২. “শুধু এই দুঃখের মুহুর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন”— কী সংকল্প করেছিল ? তার ‘এই দুঃখের মুহুর্তের’ প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। ১+৪
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন সংকল্প করেছিল যে যদি কোনোদিন তার লেখা ছাপাতে দিতে হয় তো সে নিজে গিয়ে সম্পাদককে তার লেখা দিয়ে আসবে- তাতে তার গল্প ছাপানো হোক বা না হোক।
ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষে মামার বাড়িতে গিয়েছিল তপন। সেখানে সে নিজের হোমটাস্কের খাতায় একটা আস্ত গল্প লিখে ফেলেছিল। আসলে, তপনের নতুন মেসো ছিল একজন লেখক এবং তাকে দেখেই তপনের লেখক হওয়ার বাসনা জেগেছিল। যাইহোক, তপনের গল্প ছোটোমাসির হাত দিয়ে নতুন মেসোর কাছে পৌঁছায়। মেসো তপনের লেখার প্রশংসা করেন এবং সেই গল্প কোনো পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তপন কৃতার্থ হয়ে বসে বসে দিন গুনতে থাকে।
বেশ কিছুদিন পর নতুন মেসো একসংখ্যা ‘সন্ধ্যাতারা’ নিয়ে তপনদের বাড়িতে এলেন। পত্রিকা দেখে তার বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল। সে বুঝতে পেরেছিল যে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সত্যিই তপনের গল্প ছাপা হয়েছিল। কিন্তু গল্পটা কারেকশন করার এবং ছাপিয়ে দেওয়ার পুরো কৃতিত্বের দাবীদার হয় তার মেসো। গল্প ছাপা হলে যে আহ্লাদ হবার কথা, সেই আহ্লাদ খুঁজে পায়না তপন।
গল্পটা পড়তে গিয়ে তপন বুঝতে পারে যে নতুন মেসো আগাগোড়া কারেকশন করে পুরো গল্পটাই পাল্টে ফেলেছেন। সেই গল্পে তপনের হাতের ছোঁয়া ছিল না- সবকটা লাইন তার অপরিচিত। বইটা ফেলে রেখে ছাদে গিয়ে সে শার্টের তলাটা দিয়ে চোখ মুছে। এরপরেই তপন এই সংকল্প করেছিল।
৩. ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প অবলম্বনে তপনের চরিত্র বিশ্লেষণ করো। ৫
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হল তপন। গল্পটি পড়ে তপনের চরিত্র সম্পর্কে যা জানা যায় তা হল—
(ক) কল্পনাপ্রবণ : তপন মনে মনে তার কল্পনার জগতে বিচরণ করতে ভালোবাসে। তাই তার কল্পনার জগতে লেখকরা ছিলেন ভিন গ্রহের প্রাণী। সাধারণ মানুষদের সঙ্গে তাদের বুঝি বা কোনো মিলই নেই।
(খ) সাহিত্যপ্রীতি : তপন ছেলেবেলা থেকে অনেক গল্প শুনেছে ও পড়েছে। অর্থাৎ, বরাবরই তার সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে। লেখকদের সম্পর্কেও তার কৌতুহল অসীম। ছোটমেসোকে দেখে তার মনেও লেখক হবার ইচ্ছে জাগে। বেশ কয়েকটা গল্প লিখে ফেলে।
(গ) আত্মবিশ্বাসী : লেখক মেসোমশাইকে দেখে তার নিজের লেখার ক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্বাস জন্মায়- “লেখক হতে বাধা কী ?” প্রথম লেখা গল্পটি দেখে ছোটো মেসোমশাই প্রশংসা করে সেটি ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে তপন আরও উৎসাহিত হয়ে একের পর এক গল্প লেখার নেশায় মেতে ওঠে।
(ঘ) অভিমানী : ছোটোমাসির সঙ্গে তপনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক তাই সে তার প্রথম লেখা গল্প তাকেই দেখায়। কিন্তু গল্পটি ছোটোমাসি “কোনোখান থেকে টুকলিফাই করিসনি তো ?” বললে তপন অভিমানী হয়ে পড়ে।
(ঙ) বাস্তববোধ : ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় তপনের লেখা গল্প দেখে পরিবারের সবাই প্রশংসা করে। কিন্তু মেসোমশাই কারেকশানের কথা বললে তপনের কৃতিত্ব ছোটো হয়ে যায়, বরং মেসোমশাইয়ের বদান্যতার কথাই বারবার উঠে আসে। নিজের গল্প নিজে পড়তে গিয়ে তপন লক্ষ করে যে গল্পের প্রায় প্রতিটি লাইনই মেসোমশাইয়ের তৈরি করা। বাড়ির অন্যরা বিষয়টি বুঝতে না পারলেও তপন নিজের লেখার পরিবর্তিত রূপটি বুঝতে পারে। এরপর সে প্রতিজ্ঞা করে নিজের লেখা অন্য কারওর মাধ্যমে আর ছাপতে দেবে না, তাতে “ছাপা হয় হোক, না হয় না হোক।”
৪. ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের নামকরণের যথার্থতা বিশ্লেষণ করো। ৫
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা একটি ভিন্ন স্বাদের ছোটগল্প হল ‘জ্ঞানচক্ষু’। জ্ঞানচক্ষু কথার আক্ষরিক অর্থ হল জ্ঞান রূপ চক্ষু। জ্ঞানচক্ষু খুলে গেলে মানুষ প্রকৃত সত্যের সন্ধান পায়।
আলোচ্য গল্পের প্রধান চরিত্র তপন নামের একটি ছেলে। ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষে সে মামাবাড়িতে এসেছিল। যার সঙ্গে ছোটোমাসির বিয়ে হল, সেই নতুন মেসো নাকি একজন লেখক। এর আগে লেখকদের সম্পর্কে তপনের কোন ধারণা ছিল না। তারা যে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই হয়, সে একথা জানত না। এই লেখক-মেসোকে দেখেই তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। সেও গল্প লিখতে শুরু করে এবং তার প্রথম গল্প পড়ে নতুন মেসো সেটি ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন।
সেই গল্প ছাপা হলে আরেকবার জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় তপনের। গল্পটা লেখার জন্য তপন যেটুকু বাহবা পেয়েছিল, গল্পটা ছাপিয়ে দেওয়ার সুবাদে নতুন মেসো তার থেকে বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। আবার, ছাপার অক্ষরে নিজের গল্প পড়তে গিয়ে সে বুঝতে পারে যে মেসো তার গল্পটা আগাগোড়া কারেকশন করেছেন এবং সেই গল্পে তপন নিজেকে খুঁজে পায় না। সেদিন সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে এরপর কোনোদিন কোনো গল্প ছাপাতে হলে সে নিজে গিয়ে পত্রিকার দপ্তরে দিয়ে আসবে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, তপনের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হওয়াই এই গল্পের প্রধান বিষয়বস্তু। সেই অর্থে এই গল্পের নামকরণ সার্থক হয়েছে বলা যেতে পারে।
৫. ‘জ্ঞানচক্ষু‘ গল্পে তপনের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনটি কিভাবে দুঃখের দিনে পরিণত হল তা নিজের ভাষায় লেখ।
উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম লেখিকা আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু ‘ শীর্ষক ছোটগল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র তপনের সুখের দুঃখের দিনে পরিণত হয়েছিল।
তপনের জীবনের সুখের দিন : মামার বাড়িতে গিয়ে লেখা তপনের একটি গল্প সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি তপনকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁর লেখা গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার সম্পাদক কে বলে ছাপানোর ব্যবস্থা করে দেবেন। এরপর বেশ কিছু দিন কোন খবর না আসায় তপন অনেকটা আশাহত হয়ে গেলে হঠাৎ তপনের বাড়িতে – “ছোট মাসি আর মেসো একদিন বেড়াতে এল, হাতে এক সংখ্যা সন্ধ্যাতারা।” সেই পত্রিকা দেখে এবং তাতে তপনের লেখা গল্পের কথা মনে করে পুলকিত হয়ে ওঠে। এটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে সুখের দিন।
সুখের দিন দুঃখের দিনে পরিণত হওয়া : তবে সেই সুখের দিনে শেষ পরিণতি তপনের কাছে হয়ে উঠেছিল অত্যন্ত বেদনার্ত। পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পটি একদিকে যেমন কারেকশন করতে হয়েছে অন্যদিকে মেসোর সুপারিশেই তা ছাপা হয়েছে- বাড়িসুদ্ধ এরকম আলোচনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এতে তখন মনে মনে খুব কষ্ট পায়। এরপর মায়ের আদেশ গল্পটি পড়তে গিয়ে তখন দেখে-” এর প্রত্যেকটি লাইন তো নতুন আনকোরা ,তপনের অপরিচিত।” অর্থাৎ অসম্পূর্ণ গল্প লিখে দিয়েছেন তার পাকা হাতে কলমে ।একমাত্র শিরোনাম ছাড়া তাতে তপনের কোনো অস্তিত্বই নেই। কিছুক্ষণ গড়িয়ে পড়ার পর তপন বইটা ফেলে রেখে বইটা ফেলে রেখে চলে যায় ।আসলে দুঃখে -কষ্টে তপন ছাদে উঠে গিয়ে কেঁদে ফেলে সংকল্প করে -“যদি কখনো লেখা ছাড়তে দেয় তখন নিজে গিয়ে দেবে। নিজের কাছে লেখা ছাপা হয় হোক, না হয় না হোক ” এভাবে তপনের সুখের মুহূর্তটি শেষে দুঃখের মুহূর্তে পরিণত হয়েছিল।
৬. ‘তবে তপনেরই আর লেখক হতে বাধা কি ?’— লেখক হতে তপনের বাধা নেই কেন ? প্রথম গল্প ছাপা হবার পরে তপনের কি অভিজ্ঞতা হয়েছিল ?
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি আশাপূর্ণা দেবী রচিত জ্ঞানচক্ষু গল্পের অন্তর্গত। গল্পের প্রধান চরিত্র তপন মামারবাড়ি এসে দেখে যে তার ছোটমেসো একজন নামী লেখক এবং তিনি তপনের বাবা-মামা-কাকার মত খুব সাধারণ একজন মানুষ। তপন বুঝতে পারে ‘লেখক মানে কোন আকাশ থেকে পড়া জীব নয়, তপনদের মতোই মানুষ’। তাই সে ভাবতে শুরু করে যে একজন সাধারণ মানুষ হয়ে তার ছোটমেসো যদি লেখক হতে পারেন, সেক্ষেত্রে তপনেরও লেখক হতে কোন বাধা নেই।
তপনের প্রথম গল্পটি সন্ধ্যাতারা নামক একটি নামী পত্রিকায় ছাপা হয়, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা তপনের জন্য সুখকর ছিল না। এর কারণ তপনের লেখা গল্পটিকে আগাগোড়া পরিবর্তন করেন তপনের ছোটমেসো এবং তিনি তাঁর পরিচিত – সন্ধ্যাতারা পত্রিকার সম্পাদকের সাহায্যে গল্পটি ছাপিয়ে দেন। তাই তপন যখন বুঝতে পারে যে তপনের গল্পটি তার নিজের কৃতিত্বে ছাপা হয়নি তখন তার আনন্দ ম্লান হয়ে যায়।
৭. ‘এর মধ্যে তপন কোথা ?’ – উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি আশাপূর্ণা দেবী রচিত জ্ঞানচক্ষু গল্পের অন্তর্গত। গল্পের প্রধান চরিত্র তপন তার লেখক ছোটমেসোকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি গল্প লেখে এবং সেই গল্পটি ছোটমেসো একটি পত্রিকায় ছাপিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন।
কিছু সময় পরে গল্পটি সন্ধ্যাতারা নামক নামী একটি পত্রিকায় ছাপা হয় এবং ছোটমেসো নিজে সেই পত্রিকাটি তপনদের বাড়ি নিয়ে আসেন। বাড়ির সবাই আনন্দিত হয়ে তপনকে তার লেখা গল্পটি পড়ে শোনাতে অনুরোধ করে। তপন আগ্রহের সঙ্গে সেই লেখা পড়তে শুরু করলে তার মোহভঙ্গ হয়। কারণ, শ্বশুরবাড়িতে নিজের মান বৃদ্ধির জন্য তপনের ছোটমেসো গল্পটি ছাপিয়ে দিয়েছেন কিন্তু গল্পটি তিনি নিজের মতো আগাগোড়া কারেকশন করেছেন। তপন বুঝতে পারে, গল্পটি ছোটমেসো ‘নতুন করে লিখেছেন, নিজের পাকা হাতের কলমে’ অর্থাৎ তপনের নামে গল্পটি ছাপা হলেও তাতে তপনের লেখক সত্তার কোন অস্তিত্ব সেই গল্পে ছিল না। তাই তপন গল্পটি পড়ার সময়, নিজেকে খুঁজে পায় না।
৮. “কিন্তু নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের।”– নতুন মেসোর পরিচয় দাও। তাকে দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যাওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের নতুন মেসো তার ছোটোমাসির স্বামী। তিনি একজন লেখক, বই লেখেন। ইতিমধ্যে তাঁর অনেক বই ছাপাও হয়েছে। সর্বোপরি তিনি একজন প্রফেসর।
তপনের ছোটোমাসির বিয়ের পর নতুন মেসো যে লেখক, এ কথা শুনে তার কৌতূহলের অন্ত ছিল না ষ। তার কাছে লেখক মানে ভিন গ্রহের কোনো মানুষ, যারা সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। একজন লেখককে যে এত কাছ থেকে দেখা যায় কিংবা লেখকরা যে তপনের বাবা, ছোটো মামা বা মেজোকাকুদের মতো সাধারণ মানুষ হতে পারে, এ বিষয়েও তার যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। কিন্তু তার সেই ধারণাগুলো ভেঙে গেল, যখন দেখল তার ছোটো মেসোও তার বাবা, ছোটো মামা বা মেজো কাকুর মতোই দাড়ি কামান, সিগারেট খান, খেতে বসে অর্ধেক খাবার তুলে দেন, সময় মতো স্নান করেন ও ঘুমোন। ছোটোমামাদের মতোই খবরের কাগজের কথায় তর্ক ও শেষ পর্যন্ত দেশ সম্পর্কে একরাশ হতাশা ঝেড়ে ফেলে সিনেমা দেখতে বা বেড়াতে চলে যান। এসব বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে মেসোর মিল দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হয়। সে বুঝতে পারে লেখকরা আকাশ থেকে পড়া জীব নয়, নিছকই মানুষ।
৯. ‘রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই।’— ‘রত্ন’ ও ‘জহুরি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? উদ্ধৃত উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবীর ‘ ষজ্ঞানচক্ষু’ গল্পে উদ্ধৃতিটি পাই। ‘রত্ন’ বলতে মূল্যবান পাথর বোঝায়। ‘জহুরি’ বলতে বোঝায় জহর অর্থাৎ রত্ন বিশেষজ্ঞকে। যে-কোনো পাথরকে রত্ন বলে চালালে তা জহুরির চোখ এড়ানো মুশকিল। ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে ‘রত্ন’ বলতে তপনের লেখা গল্পকে আর ‘জহুরি’ বলতে তার ছোটোমাসির স্বামী তথা নতুন মেসোমশাইকে বোঝানো হয়েছে।
সীমিত জীবনবৃত্তের পরিধিতে তপনের গল্পের বইয়ের সঙ্গে পরিচিতি থাকলেও লেখকদের সম্পর্কে তার কিছুই অভিজ্ঞতা ছিল না। তপন তাদের গ্রহান্তরের কোনো জীব ভাবত। নতুন মাসির বিয়ের পর লেখক নতুন মেসোর সঙ্গে যখন পরিচিত হল তখনই তপনের লেখক সম্পর্কে সমস্ত ধারণা বদলে গেল। তার জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল। তপন তার বাবা, কাকা ও মামাদের সঙ্গে নতুন মেসোর কোনো তফাত পেল না। এসব কিছু মিলিয়েই তপন ভাবে তারই বা লেখক হতে বাধা কোথায় ? তাই সে গল্প লিখতে গিয়ে আস্ত একটা গল্প লিখে ফেলায় উত্তেজনায় ছোটোমাসিকে দেখায়। ছোটোমাসি তা মেসোকে ঘুম থেকে তুলে দেখায়। ব্যাপারটায় তপনের মত না থাকলেও সে মনে মনে পুলকিত হয়, কেন- না জহুরির রত্ন চেনার মতো তার লেখার কদর একমাত্র নতুন মেসোই বুঝতে পারবে।
১০. “আর সবাই তপনের গল্প শুনে হাসে।”– সকলের তপনের গল্প শুনে হাসার কারণ কী ? তার গল্পের যথাযথ মূল্যায়ন কে, কীভাবে করেছিলেন ?
অথবা, ‘বিকেলে চায়ের টেবিলে ওঠে কথাটা।’– চায়ের টেবিলে ওঠা কথাটি সম্পর্কে বাড়ির মানুষদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ? নতুন মেসোরই বা এই ঘটনায় বক্তব্য কী ছিল ? হাসার কারণ ?
উত্তরঃ ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প থেকে গৃহীত অংশটিতে ‘সবাই’ বলতে তপনের বাড়ির লোকজনকে বোঝানো হয়েছে। বাড়ির বড়োদের চোখে সে ছিল নেহাতই ছোটো, তার গুরুত্ব কম। সে যে রাতারাতি একটা গল্প লিখে ফেলতে পারে, আর সে গল্প যে ছাপানোর যোগ্য হতে পারে তা প্রথমে কেউই বিশ্বাস করতে পারেননি। তাই সকলে তপনের গল্প শুনে হেসেছিলেন। বাড়ির সকলে তার লেখা গল্পকে গুরুত্ব না দিলেও, তার লেখক নতুন মেসো কিন্তু এই গল্পের যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছিলেন। তপনের মাসি তার গল্পটি মেসোকে দেখালে, তিনি তা একটি পত্রিকায় গল্পের মূল্যায়ন কে, কীভাবে করেছিলেন ? প্রকাশ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। বিকেলে চায়ের টেবিলে সকলে তপনের লেখা গল্প নিয়ে হাসাহাসি ত করলেও, লেখক মেসো কিন্তু তপনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন যে, না তপনের লেখার হাত ও দেখার চোখ দুই-ই আছে। কারণ তার বয়সি ছেলেমেয়েরা সাধারণত রাজারানি, খুন, জখম, অ্যাকসিডেন্ট, নয়তো না খেতে পেয়ে মরে যাওয়া প্রভৃতি বিষয়ে গল্প লেখে। কিন্তু তপন সেসব না লিখে তার ভরতি হওয়ার দিনের অভিজ্ঞতা আর অনুভূতি নিয়ে গল্প লিখেছে। তপনের লেখক মেসোর মতে, এ খুব বিরল লক্ষণ। এইভাবে তপনের মেসো তার লেখা গল্পের মূল্যায়ন করেছিলেন। তবে তপনের গল্পে আনাড়ি হাতের ছাপ থাকায়, তিনি তা সংশোধন করে দিয়েছিলেন।
১১. “পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে ?”– কোন্ ঘটনাকে অলৌকিক বলা হয়েছে ? একে অলৌকিক বলার কারণ কী ?
উত্তরঃ প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর গল্প ‘জ্ঞানচক্ষু’র কেন্দ্রীয় চরিত্র তপন। বিশাল পৃথিবীতে স্বল্প বাস্তবতাবোধ নিয়ে আর পাঁচটা শিশুর মতোই তারও পথ চলা। লেখকদের সম্পর্কে তার ধারণা সে কথাই বলে। সেই তপন তার নতুন লেখক মেসোমশাইয়ের অলৌকিক ঘটনা সান্নিধ্যে এসে তার প্রতিভাকে বিকশিত করে কাঁচা হাতে লিখে ফেলে একটা আস্ত গল্প। সেই গল্প মেসোর হাতে গেলে তপনের ও বাড়ির লোকেদের মন রাখার জন্য তা সামান্য কারেকশন করে সন্ধ্যাতারা ‘পত্রিকায়’ ছাপিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন ও সেটি নিয়ে যান। এর বেশ কিছু দিন পর ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় গল্পটি ছেপে বেরোয়। তপনের কাছে এই চমকপ্রদ ঘটনাটিই অলৌকিক বলে মনে হয়েছিল।
‘অলৌকিক’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল মানুষের পক্ষে যা সম্ভব নয় বা পৃথিবীতে সচরাচর যা ঘটে না। এক্ষেত্রে ছোট্ট তপনের লেখা গল্প পরিবেশ ও পরিস্থিতির সমন্বয়ে যেভাবে ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হয়েছিল সেটাই অলৌকিক। আসলে তপনের লেখক সম্পর্কে ধারণার অবসান, গল্প লেখা, তা মেসোর হাত ধরে ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হওয়া প্রভৃতি ঘটনাগুলি তার কাছে এতটাই অবিশ্বাস্য যে, তার মনে হয় সমস্ত ঘটনাটিই যেন অলৌকিক।
১২. ‘এর প্রত্যেকটি লাইনই তো নতুন আনকোরা, তপনের অপরিচিত’ – ‘এর’ বলতে কীসের কথা বলা হয়েছে ? বিষয়টি পরিস্ফুট করো ।
উত্তরঃ উদ্ধৃত লাইনটি আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের অংশবিশেষ। এখানে ‘এর’ বলতে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র তপনের প্রথম ছেপে বেরোনো গল্প ‘প্রথম দিন’ এর কথা বলা হয়েছে।
গল্পের নায়ক তপন ছোটোবেলা থেকেই ভাবত লেখকরা বুঝি অন্য জগতের মানুষ। কিন্তু ছোটোমাসির সঙ্গে বিয়ে হওয়া নতুন মেসোকে দেখে তার সেই ভুল ভাঙে। তার নতুন মেসো বই লেখেন। সেসব বই ছাপাও হয় অথচ মেসোর আচার-আচরণের সঙ্গে তার বাবা, ছোটোমামা বা মেজোকাকুর আচার-আচরণের কোনো তফাতই সে খুঁজে পায় না। তপন বোঝে, লেখকরা আকাশ থেকে পড়া কোনো জীব নয়। অনুপ্রাণিত তপন একটা আস্ত গল্প লেখে যেটা তার মাসির হাত ঘুরে মেসোর হাতে পড়ে। মাসির পীড়াপীড়িতে সামান্য কারেকশন করে সে গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’য় ছাপিয়ে দেন নতুন মেসো। বাড়িতে সে নিয়ে আনন্দের শেষ নেই। কিন্তু ছোট্ট তপন সকলের অনুরোধে গল্প পড়তে শুরু করতেই সুর কেটে যায়। তপন দেখে কারেকশনের নাম করে মেসো তার লেখাটা আগাগোড়াই বদলে দিয়েছেন। গল্পের প্রত্যেকটি লাইনই তার কাছে নতুন লাগে। তার শিশুমন ব্যথায় ভরে ওঠে।
১৩. ‘তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন।’— ‘আজ’ বলতে কোন দিনের কথা বলা হয়েছে ? তপনের এমন মনে হওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ ‘আজ’ বলতে সেই দিনটির কথা বলা হয়েছে, যেদিন তপনের মাসি ও মেসো ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার একটি সংস্করণ নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন।
কারণ শিশুমন কোমল, সামান্য আঘাত পেলেই তারা ভীষণভাবে মুষড়ে পড়ে। এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। ছোট্ট তপনের লেখক সম্পর্কে সব কৌতূহলের শেষ হয় নতুন মেসোকে দেখে। অনুপ্রাণিত তপন একটি গল্প লেখে। সেই গল্প মাসির পীড়াপীড়িতে মেসোর হাত ধরে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপা হয়। স্বাভাবিক কারণে তপন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। নানান বিরুপতা সত্ত্বেও সে গর্ব অনুভব করে। কিন্তু তার গর্ব মাটিতে মিশে যায় গল্পটি পড়ার সময়। সে দেখে প্রকাশিত গল্পে তার লেখার লেশমাত্র নেই। কারণ গল্পটা সামান্য কারেকশনের নামে পুরোটাই বদলে গিয়েছিল। এতে তপনের লেখকসত্তা অপমানিত হয়। তার চোখে জল এসে যায়। এই কারণে দিনটিকে তার সবচেয়ে দুঃখের মনে হয়।
১৪. নতুন মেসোর চরিত্রটি আলোচনা করো।
উত্তরঃ লেখিকা আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের মূল চরিত্র তপনের আত্মোপলব্ধির পিছনে যে চরিত্রটির প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে, তিনি হলেন তপনের নতুন মেসো। এই মেসো পেশায় অধ্যাপক এবং লেখক। তাঁর লেখক পরিচয় তপনের মনের বহু ভুল ধারণা ভেঙে দেয়।
মিশুকে : অধ্যাপক ও লেখক হওয়া সত্ত্বেও মেসো ব্যক্তিটি বেশ মিশুকে, ফুর্তিবাজ। তিনি শ্যালক-শ্যালিকাদের সঙ্গে গল্প করেন, তর্ক করেন, কবজি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়া করেন, সিনেমায় মিশুকে যান ও বেড়াতেও যান।
সহানুভূতিশীল : শ্বশুরবাড়ির সদস্য হিসেবে তপনের প্রথম লেখা গল্পের তিনি প্রশংসা করেন ও তা ছাপার দায়িত্ব নিয়ে নেন।
নিজের প্রতিপত্তি জাহিরে আগ্রহী : শুধু যে তপনকে উৎসাহ দিতে ছোটোমেসো তার গল্পটা ছাপিয়ে দেন, এমনটা নয়। শ্বশুর বাড়িতে নিজের প্রতিপত্তি জাহির করতেও তিনি এ কাজ করেন।
অন্যের আবেগ বুঝতে অক্ষম : তপনের গল্প যাতে প্রসিদ্ধি পায়, তাই সংশোধনের নামে গল্পের খোলনলচে বদলে দেন মেসো। তাঁর উদ্দেশ্য হয়তো মহৎ ছিল। কিন্তু তাঁর এই উদ্যোগ তপনের লেখকসত্তাকে আঘাত করে। একদিকে চারিত্রিক উদারতায় ও মহত্ত্বে আবার অন্যদিকে অসতর্কতায়, তপনের নতুন মেসো এক পরিপূর্ণ রক্তমাংসের চরিত্র হয়ে ওঠেন। যদিও একজন লেখক হয়ে অন্য লেখকের এই আত্মসম্মান ও অহংবোধকে উপলব্ধি করা তাঁর উচিত ছিল।
১৫. তপনের ছোটোমাসির চরিত্রটি আলোচনা করো। অথবা, ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের ছোটোমাসির স্বভাব ও ভাবনার যে পরিচয় ফুটে উঠেছে, আলোচনা করো।
উত্তরঃ লেখিকা আশাপূর্ণা দেবী নারীচরিত্র অঙ্কনে অনন্যা। তাঁর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের ছোটোমাসি চরিত্রটিকে তিনি অতি সাধারণভাবে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছেন।
চঞ্চলতা : প্রথম পরিচয়েই আমরা বুঝতে পারি তপনের ছোটোমাসি চঞ্চলা স্বভাবের। তার প্রমাণ আমরা পাই কাহিনিতে যখন তপনের মেসোমশাই ছুটি উপলক্ষ্যে শ্বশুরবাড়িতে এসে একটু দিবানিদ্রা দিচ্ছিলেন, তখনই তপনের নিষেধ সত্ত্বেও ছোটোমাসি হইচই করে গিয়ে তার ঘুম ভাঙিয়ে দেয়।
মমতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ : ছোটোমাসির চরিত্রে মমতা, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের পরিচয় পাওয়া যায়। তাই বয়সে আট বছর বড়ো হওয়া সত্ত্বেও মামার বাড়িতে ছোটোমাসিই ছিল তপনের একমাত্র বন্ধু এবং সুখ-দুঃখের সাথি। এই কারণেই তপন তার প্রথম লেখা গল্পের খবরটা ছোটো মাসিকেই প্রথম দেয়।
স্বামীর গৌরবে গর্বিতা : তপনের ছোটোমাসি তার সদ্যবিবাহিত স্বামীর লেখক পরিচয়ে গর্বিত। তাই তপনের লেখা গল্প ‘প্রথম দিন’ শিরোনামে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ছোটোমাসির মধ্যে আত্মপ্রসাদের প্রসন্নতা লক্ষ করা যায়।
সহানুভূতিশীল : সহানুভূতিপরায়ণা স্বভাবের ছোটোমাসি তাই সে তপনের গল্পটা ছাপিয়ে দেওয়ার জন্য তপনের মেসোমশাইকে সুপারিশ করে। আবার ছোটোমেসো গল্পটি ‘কারেকশান’-এর কথা বললে মাসি বলে, ‘তা হোক, নতুন নতুন এমন হয়।’
আলোচ্য গল্পে এভাবেই সাধারণ ছোটমাসি নারীচরিত্রটি স্নেহশীলা ও মাতৃত্বময়ী নারীর যথার্থ প্রতিরূপ হয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।
১৬. ‘নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের’— কোন্ ঘটনায় তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল ? এই ঘটনায় তপনের সত্যিকারের জ্ঞানচক্ষু খুলেছিল কীভাবে ? ?
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপন। তার শিশুমনে লেখক বা সাহিত্যিক সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না। সে ভাবত লেখকেরা বুঝি কোনো ভিন গ্রহের জীব। তার ছোটোমাসির বিয়ে হওয়ার পর তপন জানতে পারে নতুন মেসো একজন লেখক এবং তাঁর অনেক বই ছাপা হয়েছে। জলজ্যান্ত একজন লেখককে চোখের সামনে দেখে সে বুঝতে পারে লেখকেরা ছোটোমামা কিংবা মেজোকাকুর মতোই নিছক সাধারণ মানুষ। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই তপনের প্রাথমিক জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। জ্ঞানচক্ষু উন্মোচনে ঘটনার প্রেক্ষিত
লেখক মেসোমশাইয়ের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত তপন নিজেও একটা আস্ত গল্প লিখে ফেলে। এভাবে সহজেই একটা গল্প লিখে ফেলার রোমাঞ্চে ও উত্তেজনায় তা সে বন্ধুমনোভাবাপন্ন ছোটোমাসিকে দেখায়। এরপর ছোটোমাসির প্ররোচনায় আর নতুন মেসোর প্রভাবে সেই গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু পত্রিকায় ছাপা গল্পটি পড়ে তপন বুঝতে পারে কারেকশনের নামে মেসো লেখাটি পুরোপুরি বদলে দিয়েছেন। এ গল্পে তপনের লেখা নেই। এদিকে বাড়িতেও মুখে মুখে রটে যায় মেসোর দৌলতেই তার গল্প ছাপা হয়েছে। এ ঘটনা আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন তপনের সংবেদনশীল লেখক মনে আঘাত করে। লজ্জায় অনুশোচনায় সে সিদ্ধান্ত নেয় ভবিষ্যতে কারও সুপারিশে নির্ভর না করে নিজের লেখা নিজেই ছাপতে দেবে। তাতে তার লেখা ছাপা হয়, হোক না হয় না হোক। আর এখানেই আত্মস্বরূপ উপলব্ধির মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে জ্ঞানচক্ষুর জাগরণ ঘটেছে।
১৭. ‘তার চেয়ে দুঃখের কিছু নেই , তার থেকে অপমানের!’– কার এ কথা মনে হয়েছে ? জীবনের কোন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে ?
অথবা, ‘তার চেয়ে দুঃখের কিছু নেই, তার থেকে অপমানের।’– উদ্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে কোন্ ঘটনা কেন দুঃখের ও অপমানের ?
উত্তরঃ কথাশিল আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের নায়ক তপনের এ কথা মনে হয়েছিল। শিশুমন কোমল, সামান্য আঘাত পেলেই তারা ভীষণভাবে মুষড়ে পড়ে। এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে । ছোট্ট তপনের লেখক সম্পর্কে সব কৌতূহলের শেষ হয় নতুন মেসোকে দেখে । অনুপ্রাণিত তপন একটি গল্প লেখে।
সেই গল্প মাসির পীড়াপীড়িতে মেসোর হাত ধরে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপা হয়। স্বাভাবিক কারণে তপন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। নানান বিরূপতা সত্ত্বেও সে গর্ব অনুভব করে। কিন্তু তার গর্ব মাটিতে মিশে যায় গল্পটি পড়ার সময়। সে দেখে প্রকাশিত গঙ্গে তার লেখার লেশমাত্র নেই। কারণ গল্পটা সামান্য কারেকশনের নামে পুরোটাই বদলে গিয়েছিল। এতে তপনের লেখকসত্তা অপমানিত হয়। তার চোখে জল এসে যায়। নিজের গল্প পড়তে বসে অন্যের লেখা লাইন পড়ার দুঃখ ও যন্ত্রণা তাকে কুরেকুরে খায়। লজ্জা, অনুশোচনা ও আত্মসম্মানহীনতার সংকোচ থেকে এভাবেই সে উপরিউক্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
১৮. “তপন আর পড়তে পারে না। বোবার মতো বসে থাকে”– তপনের এরকম অবস্থার কারণ বর্ণনা করো।
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র তপনের ইচ্ছে ছিল লেখক হওয়ার। একই সঙ্গে লেখকদের সম্বন্ধে তার ধারণা ছিল, তাঁরা বুঝি আকাশ থেকে পড়া অতিলৌকিক কোনো প্রতিভা। কিন্তু তার ছোটোমাসির বিয়ের পর নতুন মেসোকে দেখে তার সেই ভুল ভাঙে। তার নতুন মেসো অধ্যাপক, বই লেখেন। সেসব বই ছাপাও হয় অথচ প্রান্তিক, মাধ্যমিক বা মেসোর আচার-আচরণের সঙ্গে তার বাবা, ছোটোমামা বা মেজোকাকুর আচার- অচারণের কোনো তফাতই সে খুঁজে পায় না। নতুন মেসোকে দেখে অনুপ্রাণিত তপন একটি আস্ত গল্প লেখে, যেটি তার মাসির হাত ঘুরে মেসোর হাতে গিয়ে পড়ে। মাসির পীড়াপীড়িতে সামান্য কারেকশন করে সেই গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপানোর আশ্বাস দেন নতুন মেসো। বাড়িতেও সে নিয়ে আনন্দের শেষ নেই। অনেকদিনের ইচ্ছে হয়তো এবার পূরণ হতে চলেছে— এই ভেবেই একটু সংশয়কে সঙ্গী করেই তপনের মনও উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। কিন্তু যথাসময়ে ‘সন্ধ্যাতারা’য় ছাপা লেখাটি পড়তে গিয়ে তপন টের পায় কারেকশনের নামে লেখক মেসো গল্পের আগাগোড়া বদলে দিয়েছেন। নির্বিচারে কলম চালানোয় নিজের নামে ছাপানো গল্পে সে আর নিজেকেই খুঁজে পায় না। তপনের লেখকমন আহত হয়। নিজের গল্প পড়তে বসে অন্যের লেখা লাইন পড়ার দুঃখযন্ত্রণা তাকে কুরে কুরে খায়। লজ্জা, অনুশোচনা আর আত্মসম্মানহীনতায় তার বাক্রোধ হয়ে আসে।
১৯. ছোটোগল্প হিসেবে আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের সার্থকতা বিচার করো। ৫
উত্তরঃ গল্প ছোটো হলেই কোনো গল্প ছোটোগল্পের পর্যায়ে পড়ে না। ছোটোগল্পের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। সেই বৈশিষ্ট্যগুলির আলোকে ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটিকে বিচার করলে বোঝা যাবে সেটি ছোটোগল্প হিসেবে কতটা সার্থক।
গল্পের হঠাৎ শুরু : ছোটোগল্প শুরু হয় হঠাৎ করে। ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পতেও এই বৈশিষ্ট্যটি লক্ষ করা যায়। ‘কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল’- এই বাক্যটি দিয়ে আচমকাই গল্পটি শুরু হয়েছে।
একটি মাত্র বিষয় : গল্প লেখাকে কেন্দ্র করে তপনের উৎসাহ এবং সেই উৎসাহ ভেঙে যাওয়ার কাহিনিকে ঘিরেই এই গল্প। গল্পে অন্য কোনো উপকাহিনি গড়ে ওঠেনি। তাই গল্পটি তার সংক্ষিপ্ত পরিধির মধ্যে একটি মাত্র বিষয়েই সীমাবদ্ধ।
স্বল্প চরিত্র : ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন ছাড়াও যে চরিত্রগুলির ভূমিকা নজর কাড়ে, তাঁরা হলেন তপনের ছোটোমাসি এবং মেসো। বাকি চরিত্রগুলি নেহাতই গৌণ। এক্ষেত্রেও ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রয়েছে। অতিরিক্ত চরিত্রের ভিড় নেই।
শেষে অতৃপ্তি : ছোটোগল্প যেমন হঠাৎ করে শুরু হয়, তেমনই হঠাৎ করেই শেষ হয়। গল্প শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও পাঠকের মনে এক ধরনের অতৃপ্তি থেকে যায়। ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটিও এর ব্যতিক্রম নয়। ছাপার অক্ষরে নিজের নামের মতোই নিজের লেখাকেও দেখতে চেয়েছিল তপন। তার সেই স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়েই গল্পটি শেষ হয়।
‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটির মধ্যে ছোটোগল্পের প্রতিটি বৈশিষ্ট্যই রয়েছে। সুতরাং ছোটোগল্প হিসেবে এটি নিঃসন্দেহে সার্থক।
📌 আরও দেখুনঃ
1. মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যসূচী ২০২৪-২৫ Click Here
2. মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫ Click Here
3. মাধ্যমিক বিগত বছরের সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র | Madhyamik Previous Years Question Paper Click Here
4. মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি অনলাইন MCQ মক্ টেস্ট | Madhyamik Preparation MCQ Mock Test Click Here
📌 অন্যান্য বিষয় দেখুনঃ
1. দশম শ্রেণির ইংরেজি সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
2. দশম শ্রেণির ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
3. দশম শ্রেণির ভূগোল সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
4. দশম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
5. দশম শ্রেণির ভৌত বিজ্ঞান সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here