হারিয়ে যাওয়া কালি কলম (প্রবন্ধ) আলোচনা, সারাংশ, বিষয়বস্তু শ্রীপান্থ দশম শ্রেণি বাংলা | Hariye Jawa Kali Kolom Summary Class 10 wbbse

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

হারিয়ে যাওয়া কালি কলম (প্রবন্ধ) আলোচনা, সারাংশ, বিষয়বস্তু শ্রীপান্থ দশম শ্রেণি বাংলা | Hariye Jawa Kali Kolom Summary Class 10 wbbse

1. দশম শ্রেণি সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র | Class 10 All Subject Unit Test Question Paper CLICK HERE

2. দশম শ্রেণি বাংলা পাঠ্যবই সমাধান | Class 10 Bengali Textbook Solution CLICK HERE

3. মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যসূচী ২০২৪-২৫ | Madhyamik Bengali Syllabus 2024-25 CLICK HERE

4. মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫ | Madhyamik Exam Routine 2025 CLICK HERE

5. মাধ্যমিক বিগত বছরের সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র | Madhyamik Previous Years Question Paper CLICK HERE

6. মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি অনলাইন MCQ মক্ টেস্ট | Madhyamik Preparation MCQ Mock Test CLICK HERE

প্রবন্ধকার পরিচিতি—

জন্ম ও শৈশব – ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর গ্রামে নিখিল সরকারের জন্ম হয়। শৈশবজীবন থেকেই সাহিত্যের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ ছিল।

শিক্ষাজীবন – ময়মনসিংহতেই নিখিল সরকারের শিক্ষাজীবনের সূচনা। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক হন।

কর্মজীবন – তরুণ বয়সে সাংবাদিকতা দিয়ে নিখিল সরকারের কর্মজীবনের সূচনা হয়। তিনি প্রথমে যুগান্তর পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারপর আনন্দবাজার পত্রিকা-র সম্পাদকীয় বিভাগে দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি করেন। ‘পুস্তক পর্যালোচনা’ এবং প্রতি সোমবার ‘কলকাতার কড়চা’-এই দুটি বিষয় তাঁর কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য কীর্তি।

সাহিত্যজীবন – সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকার সময়ই নিখিল সরকারের সাহিত্যপ্রতিভার বিকাশ ঘটে। আদি কলকাতার সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে তিনি দীর্ঘ লেখালেখি ও গবেষণা করেন। প্রবন্ধ আকারে তাঁর লেখাগুলি বিভিন্ন ইংরেজি পত্রিকাতেও প্রকাশিত হতে থাকে। লেখালেখির প্রতি গভীর আগ্রহ এবং সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে শ্রীপান্থ বহু কবি-সাহিত্যিকের সান্নিধ্যে আসেন। তিনি বাংলায় প্রথম ধাতব হরফে ছাপা হ্যালহেডের আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গোয়েজ গ্রন্থটির সম্পাদিত সংস্করণের দীর্ঘ ভূমিকা লিখেছেন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল- আজব নগরী (প্রথম গ্রন্থ), শ্রীপান্থের কলকাতা, যখন ছাপাখানা এলো, মোহন্ত এলোকেশী সম্বাদ, কেয়াবাৎ মেয়ে, মেটিয়াবুরুজের নবাব, দেবদাসী, ঠগী, হারেম, বটতলা।

পুরস্কার – নিখিল সরকার ১৯৭৮-এ আনন্দ পুরস্কার পান।

জীবনাবসান – ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ৭৩ বছর বয়সে ফুসফুসের ক্যানসারে এই পণ্ডিত মানুষটির জীবনাবসান ঘটে।

উৎসঃ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধটি কালি আছে কাগজ নেই, কলম আছে মন নেই রচনা থেকে গৃহীত।

সারাংশঃ প্রবন্ধটির নাম ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’। লেখক শ্রীপান্থ। আসল নাম নিখিল সরকার। গল্পটির নামের মধ্যেই আমরা আভাস পাই, হারিয়ে যাওয়া কালি ও কলমের জন্মের ইতিহাস অর্থাৎ কালি কলমের বিবর্তনের ইতিহাস। আধুনিক যুগে কম্পিউটার এর প্রভাবে কাগজ কলম দিয়ে লেখা রীতি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে-এই রকম একটি ঘটনা দিয়ে লেখক প্রবন্ধটি শুরু করেছেন।

লেখক শ্রীপান্থ একটি সংবাদপত্রের অফিসে কাজ করেন। সেখানে সবাই লেখক। কেউ বলে সেটা লেখালেখির অফিস,কেউ লেখকের কারখানা। কিন্তু শ্রীপান্থ ছাড়া সকলেই সেখানে কম্পিউটারের মাধ্যমে লেখেন। লেখকই শুধু কলম দিয়ে লেখেন। লেখক কলম দিয়ে যা লেখেন তার সহকর্মীরা ভালোবেসে উনার লেখাকেও ছাপার জন্য কম্পিউটারে লিখে দেন। কোন কারণে লেখক যদি কলম নিয়ে যেতে ভুলে যান, তাহলেই বিপদ। কারো কাছে কলম চেয়ে পেতেন না। যদি বা কারো কাছে কলম পেতেন, সেই কলমে লিখে কোন সুখ ছিল না।

এরপর লেখক বাল্যকালে কিভাবে কলম তৈরি করতেন সে কথা শুনিয়েছেন। ছোটবেলায় গ্রামে থাকাকালীন বাঁশের কঞ্চি কেটে কলম বানাতেন। কালি যাতে একবারে অনেকটা না গড়িয়ে ধীরে ধীরে চুঁইয়ে পড়ে সেজন্য কলমের মুখটা চিরে দিতেন। শৈশবে লেখকরা কলাপাতা কেটে কাগজের মতো সাইজ করে তাতে লিখতেন এবং হোমটাস্ক করতেন। হোমটাস্ক গুলো মাস্টারমশাইয়ের দেখা হয়ে গেলে সেগুলো পুকুরে ফেলে দিতেন, যাতে গরু খেয়ে না নেয়। বাইরে ফেললে গরু খেয়ে নিলে নাকি অমঙ্গল হয়। গরুকে অক্ষর খাওয়ানো নাকি পাপ।

কলম তৈরির পাশাপাশি তাঁরা কালিও তৈরি করতেন। ভালো কালি তৈরি করতে লাগতো তিল, ত্রিফলা, শিমুল গাছের ছাল, ছাগলের দুধ ও লোহা। এতসব ব্যবস্থা না থাকায় লেখকরা সহজ পদ্ধতিতে কালি তৈরি করতেন। অবশ্য মা পিসি দিদিরাও কালি তৈরিতে সাহায্য করতেন। বাড়ির রান্না হত কাঠের উনুনে। তাতে কড়াইয়ের তলায় বেশ কালি জমত। কড়াইয়ের নিচে জমে থাকা কালি ঘষে তুলে জলে গুলে তার সঙ্গে অনেক কিছু মিশিয়ে ঘরোয়া কালি তৈরি হতো।সেই কালি রাখা হতো মাটির দোয়াতে।

কলমের বিবর্তনের ইতিহাস বলতে গিয়ে লেখক কল্পনার জগতে চলে গেছেন। লেখক কল্পনা করেছেন তিনি যদি খ্রিস্টের জন্মের আগে প্রাচীন মিশরে জন্মাতেন তাহলে হয়তো নীল নদীর তীর থেকে নলখাগড়া তুলে নিয়ে কলম বানাতেন। ফিনিশীয় হলে বনের ধার থেকে পশুর হাড় কুড়িয়ে নিয়ে তিনি প্রথম কলম বানাতেন। তিনি যদি রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার হতেন, তাহলে কারিগরদের দিয়ে তৈরি করাতেন ব্রোঞ্জের শলাকা বা স্টাইলাস অর্থাৎ লেখার সামগ্রী আরকি। আসলে কল্পনার জগতে বিচরণ করতে করতে লেখক বলতে চেয়েছেন পৃথিবীর প্রায় সব প্রাচীন সভ্যতায় কলম হিসেবে যা ব্যবহার করা হত তা আসলে শলাকা বিশেষ অর্থাৎ মাথা ছুঁছোলো কোন দন্ড। কোথাও বাঁশের কঞ্চি বা খাগড়ার নল দিয়ে, কোথাও হাড় দিয়ে, কোথাও ধাতুর শলাকা কিংবা পাখির পালক দিয়ে কলম তৈরি করা হতো। আর প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কালির দোয়াতে কলমের মাথা ডুবিয়ে রাখা হতো।

তারপর আবার সমসাময়িক জীবনে ফিরে গেছেন। তিনি আমাদের জানাচ্ছেন এখনকার স্কুলের ছেলেমেয়েদের কাছে নানা রকমের কলম থাকে। খাগের কলম শুধু সরস্বতী পুজোর সময় দেখা যায়। দোয়াতে কালির বদলে থাকে দুধ। পালকের কলম বা হুইল দেখতে পাওয়া যায় প্রাচীন তৈলচিত্রে ফটোগ্রাফে। কলমের ইতিহাস বলতে বলতে নানা প্রসঙ্গে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন তাদের মধ্যে বিদেশী ব্যক্তিরা হলেন-যীশু খ্রীষ্ট, জুলিয়াস সিজার, লর্ড কার্জন, উয়িলিয়াম জোন্স, উইলিয়াম কেরি, লুইস এডসন ওয়াটারম্যান, শেক্সপিয়ার, দান্তে ও মিল্টন।
ভারতীয় ব্যক্তিরা হলেন-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, শুভ ঠাকুর, কালিদাস, ভবভূতি, কাশীরাম দাস, কৃত্তিবাস, অন্নদাশঙ্কর রায়, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়।

আজ বিজ্ঞানের যুগে কম্পিউটারের দৌলতে পালকের কলম, দোয়াত কলম, বাঁশের কলম হারিয়ে গেছে। একসময় কলকাতার চৌরঙ্গী এলাকায় ফেরিওয়ালাদের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ ছিল কলম বিক্রেতা। যে কলম একসময় মানুষকে বিশিষ্ট করে তুলতো সে কলম এখন সবার হাতে।

Leave a Reply