বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা MCQ, বড় প্রশ্ন (Essay Type) উত্তর | WBCHSE HS Bengali Solved Question Answer
বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) থেকে বহুবিকল্পীয় এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি (MCQ, Descriptive Question and Answer) আগামী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
বহুবিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (MCQ) | বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
১. বোটানিক্যাল গার্ডেনের আদি নাম কী ছিল ?
(ক) রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেন
(খ) জগদীশচন্দ্র বসু বোটানিক্যাল গার্ডেন
(গ) শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন
(ঘ) কোম্পানির বোটানিক্যাল গার্ডেন
উত্তরঃ (ক) রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেন।
২. এশিয়াটিক সোসাইটির প্রথম ভারতীয় সভাপতির নাম—
(ক) পঞ্চানন কর্মকার
(খ) রাজা রাজেদ্রলাল মিত্র
(গ) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
(ঘ) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
উত্তরঃ (খ) রাজা রাজেদ্রলাল মিত্র।
৩. হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়—
(ক) ১৮৪৭ সালে
(খ) ১৮২৭ সালে
(গ) ১৮১৭ সালে
(ঘ) ১৮৩৭ সালে
উত্তরঃ (গ) ১৮১৭ সালে।
৪. কুন্তলীন পুরস্কার কে প্রবর্তন করেন ?
(ক) রসিকলার দত্ত
(খ) হেমেন্দ্রমোহণ বসু
(গ) সুকুমার রায়
(ঘ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (খ) হেমেন্দ্রমোহণ বসু।
৫. বেঙ্গল কেমিক্যালস-এর প্রতিষ্ঠাতা—
(ক) প্রফুল্লচন্দ্র রায়
(খ) মেখনাথ সাহা
(গ) সত্যেন্দ্রনাথ বসু
(ঘ) গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য্য
উত্তরঃ (ক) প্রফুল্লচন্দ্র রায়।
৬. হিন্দু কলেজের নতুন নামকরণ হয়—
(ক) প্রেসিডেন্সি কলেজ
(খ) স্কটিচার্চ কলেজ
(গ) সেন্ট পলস কলেজ
(ঘ) সেন্ট ক্যাথিড্রাল কলেজ
উত্তরঃ (ক) প্রেসিডেন্সি কলেজ।
৭. কালা জ্বরের প্রতিষেধক ‘ইউরিয়া স্টিবামাইন’ আবিষ্কার করেন –
(ক) স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী
(খ) বনবিহারী মুখোপাধ্যায়
(গ) মহেন্দ্রলাল সরকার
(ঘ) চুনীলাল বসু
উত্তরঃ (ক) স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী।
৮. ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কলটিভেশন অব সায়েন্স প্রতিষ্ঠা কার শ্রেষ্ঠ কীর্তি ?
(ক) নীলরতন সরকার
(খ) প্রফুল্লচন্দ্র রায়
(গ) রাধাগোবিন্দ কর
(ঘ) মহেদ্রলাল সরকার
উত্তরঃ (ঘ) মহেদ্রলাল সরকার।
১. ‘শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন’ প্রতিষ্ঠিত
হয়— ১৭৮৭ খ্রিঃ
২. শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের বর্তমান নাম— আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বোটানিক্যাল গার্ডেন।
৩. ‘ভারতীয় উদ্ভিদবিদ্যার জনক’ বলা হয়—
ড. উইলিয়াম রকসবার্গকে।
৪. এশিইয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়—
১৭৮৪ খ্রিঃ ১৫ই জানুয়ারি।
৫. এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন—
উইলিয়াম জোন্স।
৬. সর্বপ্রথম বাংলা মুদ্রা অক্ষর খোদাই করেন— পঞ্চানন কর্মকার।
৭. বাংলা ভাষায় প্রথম সাময়িকপত্র—
দিগদর্শন।
৮. হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়— ১৮১৭ খ্রিঃ
৯. স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন—
ডেভিড হেয়ার
১০. আত্মীয় সভা গড়ে ওঠে— ১৮১৫ খ্রিঃ
১১. নীলরতন সরকার যার সাথে যৌথভাবে ‘কলিকাতা মেডিক্যাল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন— সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারী
১২. আর.জি.কর মেডিক্যাল কলেজের নামকরণ হয়— রাধাগোবিন্দ করের নামে
১৩. বিজ্ঞানসম্মত দূষণমুক্ত ট্যানারি এবং সার ও সাবানের কারখানা স্থাপন করেন— নীলরতন সরকার
১৪. ‘সিরোসিস অব লিভার ইন চিলড্রেন’ প্রকাশ করেন— নীলরতন সরকার
১৫. এশিয়ার প্রথম সরকার স্বীকৃত বালিকা বিদ্যালয় হল— বেথুন স্কুল
১৬. কাদম্বিনী বসু ও চন্দ্রমুখী বসু স্নাতক ডিগ্রি লাভ করন— ১৮৮২ খ্রিঃ
১৭. কাদম্বিনী বসুর স্বামীর নাম—
দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়।
১৮. কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ছাত্রী হিসেবে কাদম্বিনী বসু ভরতি হন— ১৮৮৪ খ্রিঃ
১৯. ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন— মহেন্দ্রলাল সরকার।
২০. উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী যে বিষয়ে অনার্স- সহ বি.এ পাস করেন— গণিত।
২১. কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন— উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী।
২২. যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘বাঘাযতীন’ নামকরণ করেন— সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারী।
২৩. বাংলার লতাপাতা, শাকসবজির খাদ্য ও ভেষজ গুণাবলী বিষয়ে গবেষণা করেন— চুনীলাল বসু।
২৪. ‘রসায়নাচার্য’ উপাধি পান—
চুনীলাল বসু।
২৫. বিধানচন্দ্র রায় এম.ডি ডিগ্রি লাভ করেন— ১৯০৮ খ্রিঃ
২৬. ডঃ বিধানচন্দ্র রায় ভারতরত্ন পান— ১৯৬১ খ্রিঃ
২৭. ‘চিকিৎসক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়— ১লা জুলাই।
২৮. এশিয়ার প্রথম মনোরোগ চিকিৎসক হলেন— গিরীন্দ্রশেখর বসু।
২৯. বস্ত্রবয়ন যন্ত্রের আবিষ্কর্তা— সীতানাথ ঘোষ।
৩০. নীরোদচন্দ্র চৌধুরী তাঁর ‘অটোবায়োগ্রাফি অব অ্যান আননোন ইন্ডিয়ান’ গ্রন্থে যার কথা বলেছেন— মহেন্দ্রচন্দ্র নন্দী।
৩১. ভারতবর্ষে হাফটোন ব্লকের প্রবর্তন করেন— উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।
৩২. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী যে শিল্পে অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিচিতি লাভ করেছিলেন— মুদ্রণশিল্প।
৩৩. বাংলা সাহিত্যে ননসেন্স-এর প্রবর্তক হলেন— সুকুমার রায়।
৩৪. ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটি প্রকাশ করেন— উপেন্দকিশোর রায়চৌধুরী।
৩৫. ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়— ১৯১৩ খ্রিঃ
৩৬. ‘কলকাতার বিশ্বকর্মা’ বলে পরিচিত ছিলেন— বিপিনবিহারী দাস।
৩৭. ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’-এর প্রথম অধ্যক্ষ— প্রমথনাথ বসু।
৩৮. প্রথম পঞ্জিকা প্রকাশিত হয়— ১৮৮৬ খ্রিঃ
৩৯. উদ্ভিদের চেতনা ও অনুভূতি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন— জগদীশচন্দ্র বসু।
৪০. ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ স্থাপিত হয়—
১৯১৭ খ্রীষ্টাব্দে।
৪১. জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা গ্রন্থ হল—
অব্যক্ত।
৪২. জগদীশচন্দ্র বসু আবিষ্কার করেন—
ক্রেসকোগ্রাফ, স্ফিগ্মোগ্রাফ, পোটোমিটার।
৪৩. ‘বাঙালির মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার’ গ্রন্থের লেখক— প্রফুল্লচন্দ্র রায়।
৪৪. খাবারে ভেজাল নির্ণয়ের রাসায়নিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন— প্রফুল্লচন্দ্র রায়।
৪৫. মারকিউরাস নাইট্রেট আবিষ্কার করেন— প্রফুল্লচন্দ্র রায়।
৪৬. প্রফুল্লচন্দ্র রায় পারদ সংক্রান্ত কয়টি মিশ্র ধাতু আবিষ্কার করেন ? ১১টি।
৪৭. ‘সুপার ফসফেট অব লাইম’ তৈরি করেন— প্রফুল্লচন্দ্র রায়।
৪৮. ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস’-এর প্রতিষ্ঠাতা—
প্রফুল্লচন্দ্র রায়।
৪৯. ‘ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়— ১৯২৪ খ্রিঃ
৫০. ‘History of Hindu chemistry’ গ্রন্থটি লিখেছেন— প্রফুল্লচন্দ্র রায়।
৫১. রিলেটিভিটি, প্রেশার অব লাইট ও অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করেছেন—
মেঘনাদ সাহা।
৫২. ‘অন ম্যাক্সোওয়েল স্ট্রেসেস’ রচনা করেন— মেঘনাদ সাহা।
৫৩. ‘ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’ প্রতিষ্ঠা করেন— মেঘনাদ সাহা।
৫৪. ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন— মেঘনাদ সাহা।
৫৫. মেঘনাদ সাহা রচনা করেন—
The Principle of Relativity, Treatise on Heat, Treatise on Modern Physics
৫৬. কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্বের জনক হিসেবে যে বাঙালি বৈজ্ঞানিক স্মরণীয়— সত্যেন্দ্রনাথ বসু।
৫৭. বোসন কণার নাম হয়েছে যার নামানুসারে— সত্যেন্দ্রনাথ বসু।
৫৮. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘বিশ্বপরিচয়’ যাকে উৎসর্গ করেছিলেন— সত্যেন্দ্রনাথ বসু।
৫৯. ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ’ প্রতিষ্ঠা করেন— সত্যেন্দ্রনাথ বসু।
৬০. ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ’ প্রতিষ্ঠিত হয়—
১৯৪৮ খ্রিঃ
৬১. ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ পত্রিকাটি প্রকাশ করেন— সত্যেন্দ্রনাথ বসু।
৬২. আধুনিক ভারতীয় রাশিবিজ্ঞানের জনক হলেন— প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ।
৬৩. ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন— প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ।
৬৪. ভারতের কৃষি গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত করেন— নীলরতন ধর।
৬৫. বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ ‘পৃথিবী’-র রচয়িতা হলেন— স্বর্ণকুমারী দেবী।
৬৬. ‘বিশ্বপরিচয়’ গ্রন্থটি রচনা করেছেন—
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৬৭. ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’-র সম্পাদনা করেন— অক্ষয়কুমার দত্ত।
৬৮. বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ নিয়ে গবেষণা করেন— গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য।
৬৯. গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য ‘বাংলার কীটপতঙ্গ’ গ্রন্থের জন্য ‘রবীন্দ্র স্মৃতি পুরষ্কার’ লাভ করেন— ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে।
৭০. ‘বাঙালির খাদ্য’ গ্রন্থটি রচনা করেন— চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য।
৭১. বাংলায় বিজ্ঞান রচনায় পথিকৃৎ পত্রিকা হল— দিগ্দর্শন
৭২. বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘বিজ্ঞানরহস্য’ প্রবন্ধটি যে পত্রিকায় লেখেন— বঙ্গদর্শন
৭৩.’প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানচর্চার নিদর্শন’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন— প্রফুল্লচন্দ্র রায়
৭৪. প্রথম পঞ্জিকা প্রকাশিত হয়— ১৮৮৬ খ্রিঃ
৭৫. ‘টলস্টয় অব বেঙ্গল’ বলা হত—
মহেন্দ্রচন্দ্র নন্দী
রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা – বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Question and Answer :
১. বাংলা চিকিৎসাবিজ্ঞানে কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকা সম্পর্কে আলােচনা করাে। ৫ (২০১৯)
উত্তরঃ বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসের প্রথম পর্যায়েই অসামান্য অবদানের জন যাঁদের নাম স্মরণীয় হয়ে আছে, তার মধ্যে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম অন্যতম। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি এবং চন্দ্রমুখী বসু নামে আর একজন কৃতি মহিলা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা স্নাতক হিসেবে সম্মানিত হন। স্নাতক হওয়ার পর কাদম্বিনি উদারমনস্ক স্ত্রী শিক্ষাব্রতী দ্বারকানাথের প্রেরণায় চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নে মনোনিবেশ করেন। সে যুগের নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে কাদম্বিনীর এই সাধনা নিঃসন্দেহে বৈপ্লবিক। ডাক্তারি পরীক্ষায় শত বাধা সত্ত্বেও শেষপর্যন্ত কাদম্বিনী উর্ত্তীর্ণ হন এবং শেষাবধি ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে বিলেত গমন করে সেখান থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বেশ কিছু দুর্লভ ডিগ্রি নিয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনিই ভারতের প্রথম বিলেতি ডিগ্রিধারী মহিলা চিকিৎসক হিসেবে চিহ্নিত। তিনি বিহার ও ওড়িশায় গিয়ে সেখানকার মহিলা শ্রমিকের দুঃখদুর্দশার সমস্যা খতিয়ে দেখেন। এমনকী সুদূর নেপালেও তিনি মানব সেবাকর্মের মহান ব্রতে নিজের অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সুতরাং বাংলার বিজ্ঞানচর্চার সূচনাপর্বে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জয়যাত্রা রচনার ক্ষেত্রে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকার কথা সকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করতেই হয়।
২. ঠাকুর পরিবারের বিজ্ঞানচর্চার ইতিবৃত্ত বর্ণনা করো।
অথবা,
বাঙালির বিজ্ঞানভাবনা ও বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে জোড়াসাকো ঠাকুর বাড়ির অবদান আলোচনা করো। (২০১৮, ২০২২)
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতাব্দীতে জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবার এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। এই পরিবারের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও আরো অনেকে বিজ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ করেন। ঠাকুর পরিবার থেকে প্রকাশিত একাধিক পত্রিকা ভারতী, সাধনা, বালক ইতাদিতে বিজ্ঞানবিষয়ক বহু রচনা প্রকাশিত হতো। শবব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে চিকিৎসাবিদ্যা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে দ্বারকানাথ ঠাকুরের ভূমিকা স্মরণীয়। কলকাতায় ফিবার হাসপাতাল স্থাপনের নেপথ্যেও তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চর্চার অন্যতম প্রিয় বিষয় ছিল জ্যোতির্বিদ্যা। রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ দ্বিজেন্দ্রনাথ গণিতশাস্ত্রে তাঁর পাণ্ডিত্যের পরিচয় রাখেন। ইউক্লিডের জ্যামিতি নিয়ে তিনি মৌলিক চিন্তাভাবনা করেন। রবীন্দ্রনাথের আরেক জ্যেষ্ঠ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ফ্রেনোলজি নিয়ে গবেষণা করেন। স্বর্ণকুমারীদেবী বিজ্ঞানবিষয়ক বহু নিবন্ধ রচনা করেন যেগুলি তাঁর ‘পৃথিবী’ নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে তাঁর মৌলিক ভাবনার পরিচয় দেন। তাঁর ‘বিশ্বপরিচয়’ গ্রন্থটি তাঁর বিজ্ঞানচেতনার অনবদ্য নিদর্শন।
৩. বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে জগদীশচন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা করো।
অথবা,
বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞানের চর্চা ও গবেষণার জন্য কলকাতায় যে সংস্থা তৈরি করেছিলেন তা কী নামে পরিচিত ? জগদীশচন্দ্রের বৈজ্ঞানিক গবেষণার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর নাম কেবল স্বদেশে নয়, আন্তর্জাতিক গুণীসমাজেও বিশেষভাবে সম্মানিত। পদার্থবিজ্ঞানের একনিষ্ঠ গবেষক জগদীশচন্দ্র তাঁর গবেষণার প্রথম পর্যায়ে কোনোরকম তারের যোগসূত্র ছাড়াই শব্দসংকেত প্রেরণের উপায় অনুসন্ধানে রত ছিলেন এবং বহু পরিশ্রমে ও সাধনায় শেষাবধি তিনি সেই কৌশল আয়ত্ত করেন। বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় বিদ্যুৎ – চুম্বকীয় তরঙ্গ, যার সাহায্যে জগদীশচন্দ্র বিনা তারেই শব্দসংকেত পাঠিয়েছিলেন । লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে এজন্য ‘ডক্টর অব সায়েন্স’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে ।
জগদীশচন্দ্র বসুর গবেষণায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল অন্য সমস্ত জীবের মতো উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে, সমস্ত রকম অনুভূতি আছে তা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রমাণ করা। গাছকে কষ্ট দিলে গাছও যে কষ্ট পায়, তা জগদীশচন্দ্র হাতেকলমে প্রমাণ ক’রে দেখিয়েছেন। উদ্ভিদ গবেষণার ক্ষেত্রে এই অত্যাশ্চর্য সত্যকে প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি বিরাট স্থান অর্জন করেছেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণার সহায়ক ও উপযোগী কেন্দ্র হিসেবে তিনি ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। বাংলার বিজ্ঞানচর্চার সাফল্য সাধনে জগদীশচন্দ্র বসুর অবদানের পরিমাপ করা একপ্রকার দুঃসাধ্য ব্যাপার।
৪. বাংলা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ড. বিধানচন্দ্র রায়ের অবদান অলোচনা করো। (২০১৭)
উত্তরঃ বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ধারায় একজন কিংবদন্তি হিসেবে চিহ্নিত ড. বিধানচন্দ্র রায় । শুধুমাত্র চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বা কীর্তি চিকিৎসকরূপেই নয়, তিনি বাংলার বুকে বিজ্ঞানচর্চার গৌরবময় সম্ভবনাকে গড়ে তোলার জন্য যে উদ্যোগী ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন তার মূল্য অপরিসীম।
বিধানচন্দ্ৰ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে এল. এম. এস. ও এম. বি. পাশ করেন এবং ১৯০৮ সালে এম. ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯০৯ সালে উচ্চশিক্ষার্থে বিলেত থেকে এম. আর. সি. পি. (লন্ডন) এবং এফ আর. সি. এস. পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯১৮ সালে তিনি সরকারী চাকরী ছেড়ে রায় কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজে মেডিসিনের অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন। ১৯২৩ সালে স্যার আশুতোষ ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের নির্দেশে স্বরাজ্য পার্টির পক্ষে প্রার্থী হয়ে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথকে পরাজিত করে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় সদস্য নির্বাচিত হন বিধানচন্দ্র।
১৯৩৫ সালে ‘বিধানচন্দ্র রয়্যাল সোসাইটি অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজেন’ এবং ১৯৪০ সালে ‘আমেরিকান সোসাইটি অফ চেস্ট ফিজিসিয়ানের ফেলো’ নির্বাচিত হন। এর মধ্যেই স্যার আশুতোষ ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের স্নেহধন্য বিধানচন্দ্র কালক্রমে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন। কিন্তু এই গুরুভার পালন করার পাশাপাশি চিকিৎসক হিসেবে নিজের ভূমিকাকে কখনোই উপেক্ষা করেননি।
বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের স্থান যাতে দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে সেজন্য তারই প্রস্তাব অনুসারে IIT খড়গপুর গড়ে উঠে। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও তার উদ্যোগ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কিংবদন্তী এই চিকিৎসক, শিক্ষক ও দেশসেবক ১৯৬১ সালে ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৬২ সালে ১ লা জুলাই নিজের জন্মদিনেই প্রয়াত হন বিধানচন্দ্র। এই দিনটিকে এখনও তাই যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে ‘চিকিৎসক দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।
৫. বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে মেঘনাদ সাহার অবদান লেখো।
উত্তরঃ বাঙালি তথা ভারতবর্ষের বিজ্ঞানের জগতে অন্যতম স্মরণীয় নাম মেঘনাদ সাহা। জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী এই মানুষটি পদার্থবিজ্ঞানে থার্মাল আয়নাইজেশন তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করেন। নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্ম বোঝার জন্য সাহার তত্ত্বের সাহায্য নেওয়া হয়। তিনি রিলেটিভিটি, প্রেশার অফ লাইট, অ্যাসট্রোফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করেছেন।
মেঘনাদ সাহা সৌরকিরণের ওজন ও চাপ মাপার যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগ চালু করার পাশাপাশি কলকাতায় ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স চালু করেন। সায়েন্স অ্যান্ড কালচার নামে তিনি একটি জার্নালও চালু করেছিলেন। এসবের পাশাপাশি তিনি ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটি, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স চালু করার উদ্যোগ নেন। হ্যালির ধূমকেতু নিয়ে মেঘনাদ সাহার কাজ বিশেষভাবে স্বীকৃত।
মেঘনাদ সাহার দিগন্তকারী আবিষ্কার তাপ আয়নকরণতত্ত্ব যেটি ম্যাগাজিনে ‘On lonization in the Solar Chromosphere’ নামে প্রকাশিত হয়। এই তত্ত্ব দিয়েই প্রথম তারকার বর্ণালি ব্যাখ্যা সম্ভব হয়। ভারতীয় হিসেবে তিনিই একমাত্র বিজ্ঞানী যিনি সেইসময় বর্ষপঞ্জি সংস্কার কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁর আজীবনের গবেষণা মূল্যায়ন করে লন্ডনের রয়েল সোসাইটি তাঁকে ফেলোশিপ প্রদান করে। তাঁর হাতে গড়ে ওঠে ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’ এবং ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স’৷ বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে তাঁর রচিত বইগুলি হলো ‘The Principle of Relativity’ , ‘Treatiseon Heat’, ‘Treatiseon Modern Physics’, ‘Junior Textbook of Heat with Meteorology’. অসামান্য প্রতিভাধর এই বিজ্ঞানী চারবার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেও এই পুরস্কার পাননি। বাঙালির কাছে এটি দুঃখের বিষয় ঠিকই কিন্তু বিজ্ঞানের ইতিহাসে তাঁর নাম আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করা হয়। বিশ্ববিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন— “সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলে মেঘনাদ সাহা নিঃসন্দেহে জয় করে নিয়েছেন একটা সম্মানজনক স্থান।”
৬. বাংলা বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান। (২০২০)
ভূমিকাঃ সত্যেন্দ্রনাথ বসু (1894–1974) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী, কোয়ান্টাম স্ট্যাটিসটিক্সের উদ্ভাবক ও মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম প্রবক্তা। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ছিল গাণিতিক পদার্থবিদ্যা। ‘বোস- সংখ্যায়ন’ এর স্রষ্টা সত্যেন্দ্রনাথ বসু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি স্বীকৃত এবং স্মরণীয় নাম। যতদিন এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের পরিচয় অস্তিত্ব থাকবে ততদিন সত্যেন্দ্রনাথ ভাস্বর হয়ে থাকবেন তাঁর বোসন কনার মাধ্যমে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়ে সত্যেন্দ্রনাথ ‘প্ল্যাঙ্ক সূত্র ও আলোকতত্ত্বের কোয়ান্টাম প্রকল্প’ নামে একটি প্রবন্ধ রচনা করে তা আপেক্ষিক তত্ত্বের উদ্ভাবক বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কাছে পাঠান। আইনস্টাইন ওই প্রবন্ধের অনুবাদ করে Zeitschrift fur physik জার্নালে প্রকাশ করেন। আইনস্টাইন সেখানে বলেন- “ The method used here yields also the quantum theory of ideal gas, as I shall show elsewhere.”
অবদানঃ প্যারিসে সত্যেন্দ্রনাথ ম্যাডাম কুরির গবেষণাগারে কিছুকাল কাজ করার সুযোগ পান। তিনি অটো হ্যান, ওয়ার্নার হাইসেনবার্গ, পাউলির মতো বিজ্ঞানীদের সংস্পর্শে আসেন। এত কিছু সত্ত্বেও মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন অবদান একনিষ্ঠ পূজারি। বাঙালির ছেলেরা বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চা করবেন, যারা গবেষণাকর্মে যুক্ত আছেন, তারা বাংলায় গবেষণাপত্র লিখবেন- সত্যেন্দ্রনাথ এটাই চাইতেন।
৭. বাঙালির বিজ্ঞান-সাধনায় সত্যেন্দ্রনাথ
বসুর অবদান আলােচনা করাে। (২০২০)
ভূমিকাঃ সত্যেন্দ্রনাথ বসু (1894-1974) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী, কোয়ান্টাম স্ট্যাটিসটিক্সের উদ্ভাবক ও মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম প্রবক্তা। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ছিল গাণিতিক পদার্থবিদ্যা। ‘বোস- সংখ্যায়ন’ এর স্রষ্টা সত্যেন্দ্রনাথ বসু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি স্বীকৃত এবং স্মরণীয় নাম। যতদিন এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের পরিচয় অস্তিত্ব থাকবে ততদিন সত্যেন্দ্রনাথ ভাস্বর হয়ে থাকবেন তাঁর বোসন কনার মাধ্যমে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়ে সত্যেন্দ্রনাথ ‘প্ল্যাঙ্ক সূত্র ও আলোকতত্ত্বের কোয়ান্টাম প্রকল্প’ নামে একটি প্রবন্ধ রচনা করে তা আপেক্ষিক তত্ত্বের উদ্ভাবক বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কাছে পাঠান। আইনস্টাইন ওই প্রবন্ধের অনুবাদ করে Zeitschrift fur physik জার্নালে প্রকাশ করেন। আইনস্টাইন সেখানে বলেন- “The method used here yields also the quantum theory of ideal gas, as I shall show elsewhere”.
অবদানঃ প্যারিসে সত্যেন্দ্রনাথ ম্যাডাম কুরির গবেষণাগারে কিছুকাল কাজ করার সুযোগ পান। তিনি অটো হ্যান, ওয়ার্নার হাইসেনবার্গ, পাউলির মতো বিজ্ঞানীদের সংস্পর্শে আসেন। এত কিছু সত্ত্বেও মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন অবদান একনিষ্ঠ পূজারি। বাঙালির ছেলেরা বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চা করবেন, যারা গবেষণাকর্মে যুক্ত আছেন, তারা বাংলায় গবেষণাপত্র লিখবেন- সত্যেন্দ্রনাথ এটাই চাইতেন।
1945 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বাংলায় স্নাতকোত্তর পদার্থবিদ্যা ক্লাসে বাংলাতেই পড়াতে শুরু করলেন। 1947 খ্রিস্টাব্দে অক্টোবর মাসে বিজ্ঞানের বিকাশ এবং জনপ্রিয়করণের জন্য বিজ্ঞান কলেজে যে সভা হয় তাতে সভাপতিত্ব করেন সত্যেন্দ্রনাথ। 1948 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ’ গঠিত হলে বাংলাভাষায় বিজ্ঞান প্রচারের জন্য ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। বলাবাহুল্য, রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বিশ্বপরিচয়’ গ্রন্থটি এই বৈজ্ঞানিককে উৎসর্গ করেছিলেন।
সম্মানঃ 1929 খ্রিস্টাব্দে সত্যেন বসু ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের পদার্থবিজ্ঞান শাখার সভাপতি এবং 1944 খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। 1958 খ্রিস্টাব্দে তিনি লন্ডনের রয়েল সোসাইটির ‘ফেলো’ হন।
মূল্যায়নঃ ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চার আধুনিক পর্বে সত্যেন্দ্রনাথের ভূমিকা ছিল অনেকটা পিতৃপুরুষের মতো। উদাসীন এই বিজ্ঞানী তাঁর প্রতিভার যথাযোগ্য ব্যবহার করেননি বলে বিজ্ঞানীমহলে অভিযোগ শোনা যায় বটে, কিন্তু বিজ্ঞানের ইতিহাসে তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়।
৮. ভারতীয় রাশিবিজ্ঞানের জনক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের অবদান আলোচনা করো।
উত্তরঃ আধুনিক ভারতীয় রাশিবিজ্ঞানের জনক হিসেবে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ (১৮৯৩- ১৯৭২) চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আই এস.সি পাস করেন এবং ১৯১২ সালে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স সহ বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি পদার্থবিদ্যা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্য ইংল্যান্ড যান এবং সেখানে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে ট্রাইপস সম্পন্ন করেন এবং পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণি অর্জন করেন।
উল্লেখযোগ্য অবদান—
(১) ভারতে পরিসংখ্যানবিদ্যার চর্চা শুরু হয় তাঁর হাত ধরেই। ১৯৩১ সালে কলকাতার বরানগরে তিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর উদ্যোগেই ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র রাশিবিজ্ঞান বিভাগের সূচনা হয়েছিল।
(২) নৃবিজ্ঞানে রাশিবিজ্ঞানের প্রয়োগ করে তিনি ‘মহলানবিশ ডিসট্যান্স’ নামক এক তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন। জনগণনার সময় এখনও পর্যন্ত তাঁর আবিষ্কৃত এই পদ্ধতিটিই ব্যবহার করা হয়।
(৩) ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিস (NSSO) এবং সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অর্গানাইজেশন (CSO) স্থাপনের মাধ্যমে তিনিই প্রথম ভারতে একটি সার্বিক পরিসংখ্যান ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।
পরিসংখ্যান সংক্রান্ত তাঁর মৌলিক ভাবনার জন্য তিনি সারাজীবন ধরে বহু সম্মান লাভ করেছেন। ১৯৫৪ সালে তিনি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির সাম্মানিক সভ্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে তিনি আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক প্রেসিডেন্টের পদ লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি আমেরিকান স্ট্যাটিসটিক্যাল এসোসিয়েশনের (ASA) একজন ফেলো নির্বাচিত হন।
৯. চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর অবদান আলোচনা করো।
উত্তরঃ যে চিকিৎসাবিজ্ঞানী তাঁর আবিষ্কারের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন, তিনি হলেন স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী (১৮৭৩- ১৯৪৬)। তিনি কালাজ্বরের ওষুধ ইউরিয়া স্টিবামাইন আবিষ্কার করেন।
তাঁর বাবা নীলমণি ব্রহ্মচারী ছিলেন রেলের ডাক্তার। উপেন্দ্রনাথ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৮৯৩ সালে হুগলি মহসিন কলেজ থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণির অনার্স-সহ বি এ পাস করেন। ১৮৯৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়নে এম এ-তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। আবার ১৮৯৮ সালে মেডিসিন ও সার্জারিতে প্রথম স্থান নিয়ে এমবি পাশ করেন এবং গুডিভ ও ম্যাকলাউড পদক পান। ১৯০২ সালে এম.ডি. এবং ১৯০৪ সালে শারীরতত্ত্বে পি.এইচ.ডি. উপাধি পান। পি.এইচ.ডিতে তার গবেষণার বিষয় ছিল রক্তের লোহিতকণিকার ভাঙ্গণ।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল স্কুলে, পরে ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলে (বর্তমানে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল) তিনি চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলে তিনি দীর্ঘদিন অধ্যাপনাও করেছেন। এরপর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অতিরিক্ত চিকিৎসক হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
উল্লেখযোগ্য অবদান—
(১) কালাজ্বরের ওষুধ ইউরিয়া স্টিবামাইন আবিষ্কার।
(২) দেশীয় ওষুধ নিয়ে গবেষণার লক্ষ্যে স্বগৃহে ব্রহ্মচারী রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপন।
(৩) ফাইলেরিয়া, ডায়াবেটিস, কুষ্ঠ, মেনিনজাইটিস ইত্যাদি বিষয়ে মৌলিক গবেষণা।
(৪) চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্বন্ধে রচনা ট্রিটিজ অন কালাজ্বর।
কালাজ্বরের ওষুধ আবিষ্কার করে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে ও তিনি নোবেল পাননি, এটা সত্যি আশ্চর্যের।
১০. বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অবদান আলোচনা করো। (২০১৬)
উত্তরঃ যে কয়েকজন বাঙালী বিজ্ঞানী বিজ্ঞানকে জনকল্যাণের কাজে লাগিয়েছিলেন আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় (১৮৬১-১৯৪৪) তাদের মধ্যে অন্যতম। প্রেসিডেন্সি কলেজের এই কৃতী ছাত্র স্নাতক উত্তীর্ন হবার আগেই গিলক্রাইস্ট বৃত্তি নিয়ে বিলেতে যান। সেখানে বি এস সি এবং ডি এস সি (এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়) ডিগ্রি লাভ করেন। রসায়ন শাস্ত্রে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তাঁকে হোপ পুরস্কারও দেওয়া হয়। দেশে ফিরে ১৮৮৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। সারাজীবন তিনি গবেষণা এবং অধ্যাপনার কাজেই নিজেকে নিযুক্ত রেখেছিলেন।
তাঁর প্রথম মৌলিক গবেষণার বিষয় ছিল খাবারে ভেজাল নির্নয়ের রাসায়নিক পদ্ধতির উদ্ভাবন। মারকিউরাস নাইট্রাইট তাঁর আরেকটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। এছাড়া তিনি পারদ-সঙ্ক্রান্ত ১১ টি মিশ্র ধাতু আবিষ্কার করেছিলেন। গবাদি পশুর হাড় পুড়িয়ে তাতে সালফিউরিক অ্যাসিড মিশিয়ে তিনি তৈরি করেন ফসফেট অফ লাইম।
শুধুমাত্র গবেষণা আর আবিষ্কারের মধ্যেই তিনি নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। গবেষণার ফলকে কাজে লাগানোর জন্য তিনি সাধারণ মানুষকে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে উৎসাহ দিতেন।তাঁর তৈরি ‘বেঙ্গল ক্যামিকাল অ্যান্ড ফারমাসিউটিক্যাল’ তেমনি এক প্রতিষ্ঠান ছিল। তাঁরই অর্থসাহায্যে গড়ে উঠেছিল ‘ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি’। এছাড়া সমবায় আইন পাশ হবার পর তিনি সাধারণ মানুষকে নিয়ে ৪১টি সমবায় সমিতি গড়ে তোলেন।
এসবের পাশাপাশি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা প্রবর্তনের একজন প্রবক্তা হিসেবেও তিনি স্মরনীয় হয়ে থাকবেন। তিনি নিজে একজন সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর আত্মচরিত ‘লাইফ অ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স অফ অ্যা বেঙ্গলি কেমিস্ট’ ছাড়াও তিনি রচনা করেছেন ‘বাঙালীর মস্তিষ্ক এবং তাহার অপব্যবহার’, ‘অন্নসমস্যায় বাঙালীর পরাজয় এবং তাহার প্রতিকার’ প্রভৃতি পুস্তক। চিরকুমার এই মানুষটি নিজে অনাড়ম্বর জীবন যাপন করে গেছেন আর মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।
আরও পড়ুনঃ
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন্ ২০২৪