বাংলা গানের ধারা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE HS Bangla Ganer Dhara MCQ, SAQ, Essay Type Solved Question Answer

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

বাংলা গানের ধারা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন (Essay Type) উত্তর | WBCHSE HS Bengali Solved Question Answer

বাংলা গানের ধারা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) থেকে বহুবিকল্পীয়, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) আগামী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলা গানের ধারা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

বহুবিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (MCQ) | বাংলা গানের ধারা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. বাংলা সঙ্গীত জগতে ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম গীতশৈলী হল—
(ক) খেয়াল (খ) ধ্রুপদ (গ) টপ্পা (ঘ) ঠুংরি

উত্তরঃ (ক) খেয়াল।

২. শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের খণ্ডিত পুঁথিটি পাওয়া গিয়েছিল—
(ক) বাঁকুড়া জেলার ক্যাকিলা গ্রামে
(খ) নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থ গারে
(গ) নদিয়া জেলার নবদ্বীপে
(ঘ) মথুরার কৃষ্ণ মন্দিরে

উত্তরঃ (ক) বাঁকুড়া জেলার ক্যাকিলা গ্রামে।

৩. ভাটিয়ালি গানের উদ্ভব হয়েছিল—
(ক) পাঞ্জাবে
(খ) রাজস্থানে
(গ) অবিভক্ত বাংলায়
(ঘ) ছোটোনাগরপুর অঞ্চলে

উত্তরঃ (গ) অবিভক্ত বাংলায়।

৪. চর্যা গান গুলির আবিষ্কারক হলেন— (ক) বসন্ত রঞ্জন রায় (খ) মুনি দত্ত
(গ) দীনেশ রঞ্জন সেন (ঘ) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

উত্তরঃ (ঘ) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

৫. ‘কবি ঈশ্বর গুপ্ত’ কাকে পক্ষির দলের প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন—
(ক) নবকৃষ্ণদেবকে
(খ) রামনারায়ান মিশ্রকে
(গ) রামচন্দ্র মিত্রকে
(ঘ) শিবচন্দ্র ঠাকুরকে

উত্তরঃ (ঘ)শিবচন্দ্র ঠাকুরকে।

৬. সন্তুর বাদ্য যন্ত্রের বিখ্যাত শিল্পী হলেন—
(ক) জ্যোতি গোহ (খ) মনিরার নাগ
(গ) দুলাল রায় (ঘ) মহম্মদ আলি খাঁ

উত্তরঃ (গ) দুলাল রায়।

৭. সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন—
(ক) রবি শংকর (খ) সত্যজিৎ রায়
(গ) বিসমিল্লা খাঁ (ঘ) বিলায়েত খাঁ

উত্তরঃ (ক) রবি শংকর।

৮. বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানের সুরের উৎস হলো—
(ক) লালন গীতই (খ) সেতার
(গ) মীরার ভজন (ঘ) হিন্দি লঘুসংগীত

উত্তরঃ (ক) লালন গীতি।

৯. বিখ্যাত কবিয়াল হলেন—
(ক) নজরুল ইসলাম (খ) লালন শাহ
(গ) লালন ফকির (ঘ) ভি. বালসারা

উত্তরঃ (খ) লালন শাহ।

১০. চারণ কবি বলা হয়—
(ক) দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (খ) রজনীকান্ত
(গ) অতুল প্রসাদ সেন (ঘ) মুকুন্দ দাস

উত্তরঃ (ঘ) মুকুন্দ দাসকে।

১১. দ্বিজেন্দ্র গীতির বিখ্যাত শিল্পী হলেন—
(ক) নির্মলা মিশ্র
(খ) কৃষ্ণা চট্টোপধ্যায়
(গ) প্রতিমা বন্দোপাধ্যায়
(ঘ) লোপামুদ্রা মিত্র

উত্তরঃ (খ) কৃষ্ণা চট্টোপধ্যায়।

১২. বাঁশিতে বিখ্যাত ছিলেন—
(ক) মেহেদী হুসেন খাঁ
(খ) আফতাবউদ্দিন খাঁ
(গ) বাহাদুর খাঁ
(ঘ) কৃষ্ণচন্দ্র দে

উত্তরঃ (ক) মেহেদী হুসেন খাঁ।

১৩. মাঝি মাল্লাদের গান হল—
(ক) টপ্পা (খ) ভাওইয়া (গ) ভাটিয়ালি
(ঘ) ঝুমুর

উত্তরঃ (গ) ভাটিয়ালি।

১৪. নিখিল ব্যানার্জি বাজাতেন—
(ক) বাঁশি (খ) সরোদ (গ) তবলা (ঘ) সেতার

উত্তরঃ (ঘ) সেতার।

১৫. দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় কোন গানের শিল্পী ছিলেন—
(ক) ধ্রুপদ (খ) টপ্পা (গ) খেয়াল (ঘ) ঠুংরী

উত্তরঃ (গ) খেয়াল।

১৬. ভূপেন হাজারিকা মূলত যে ভাষায় গান লিখতেন—
(ক) ওড়িয়া (খ) অহমিয়া (গ) বাংলা
(ঘ) হিন্দি

উত্তরঃ (খ) অহমিয়া।

১৭. আখড়াই গানের বিশিষ্ট শিল্পী হলেন—
(ক) রামনিধি গুপ্ত (খ) রাম ঠাকুর
(গ) শ্রীদাম দাস (ঘ) মোহনচাঁদ বসু

উত্তরঃ (ক) রামনিধি গুপ্ত।

১৮. রূপচাঁদ পক্ষীর আসল নাম হল—
(ক) রামনারায়ন মিশ্র
(খ) শিবচন্দ্র ঠাকুর
(গ) গৌর হরি দাস মহাপাত্র
(ঘ) মধুসূদন কিন্নর

উত্তরঃ (গ) গৌর হরি দাস মহাপাত্র।

১৯. বাংলায় প্রথম বীণা বাদক হিসেবে যার নাম করা যায়—
(ক) মাধব ভট্টাচার্য
(খ) অতুল চন্দ্র মিত্র
(গ) রাম শংকর ভট্টাচার্য্য
(ঘ) ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী

উত্তরঃ (ক) মাধব ভট্টাচার্য।

২০. পূর্বরাগ কোন সঙ্গীত-এর অন্তর্গত ?
(ক) মঙ্গল গীতি (খ) লোকসংগীত
(গ) শ্যামা সংগীত (ঘ) বৈষ্ণব পদাবলী

উত্তরঃ (ঘ) বৈষ্ণব পদাবলী।

২১. বাউল শব্দের উল্লেখ আছে যে গ্রন্থে—
(ক) চৈতন্যচরিতামৃত (খ) গীতগোবিন্দ
(গ) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন (ঘ) রঘুবংশ

উত্তরঃ (ক) চৈতন্যচরিতামৃত।

২২. নবজীবনের গান নামক গণসংগীত টির রচয়িতা হলেন—
(ক) সুকান্ত ভট্টাচার্য (খ) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
(গ) জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র (ঘ) সলিল চৌধুরী

উত্তরঃ (গ) জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র।

২৩. চর্যাগানের মোট সংখ্যা—
(ক) ৪৯টি (খ) ৫০টি (গ) ৫১টি (ঘ) ৫২টি

উত্তরঃ (খ) ৫০টি।

২৪. মানুষের প্রথম সাংগীতিক যন্ত্র হলো—
(ক) বাঁশি (খ) একতারা (গ) কন্ঠ (ঘ) ঢোল

উত্তরঃ (গ) কন্ঠ।

২৫. ঝুমুর হলো—
(ক) কীর্তন (খ) শাক্ত গীতি (গ) ভক্তিগীতি
(ঘ) লোকসংগীত

উত্তরঃ (ঘ) লোকসংগীত।

২৬. চলচ্চিত্রে গান ব্যবহারের কারণ হলো—
(ক) গানকে ছড়িয়ে দিতে
(খ) চলচ্চিত্রকে আকর্ষণীয় করে তুলতে
(গ) চলচ্চিত্রকে গতিশীল করার জন্য
(ঘ) পরিচালকের শখ

উত্তরঃ (গ) চলচ্চিত্রকে গতিশীল করার জন্য

২৭. জারি গানের অধিক প্রচলন লক্ষ্য করা যায়—
(ক) উত্তরবঙ্গে
(খ) পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহ জেলার মুসলমান সমাজে
(গ) অসম-ত্রিপুরায়
(ঘ) সুন্দরবন অঞ্চলে

উত্তরঃ (খ) পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহ জেলার মুসলমান সমাজে।

২৮. ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবির সঙ্গীত নির্দেশক ছিলেন—
(ক) আলী আকবর খাঁ (খ) বিলায়েত খাঁ
(গ) বিসমিল্লাহ খাঁ (ঘ) বাহাদুর খাঁ

উত্তরঃ (ঘ) বাহাদুর খাঁ।

২৯. ভাওয়াইয়া গান যে অঞ্চলের—
(ক) কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, রংপুর
(খ) দার্জিলিং, কোচবিহার, রংপুর
(গ( মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি
(ঘ) কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, মালদা

উত্তরঃ (ক) কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, রংপুর

৩০. মান্না দে’র প্রকৃত নাম–
(ক) প্রবোধ চন্দ্র দে (খ) প্রবোধ কুমার দে
(গ) প্রাণতোষ দে (ঘ) প্রবীর চন্দ্র দে

উত্তরঃ (খ) প্রবোধ কুমার দে।

৩১. ভক্তি সংগীত এর শ্রেষ্ঠ উদগাতা কে?
(ক) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
(খ) অতুল প্রসাদ সেন
(গ) দিলীপ কুমার রায়
(ঘ) রজনীকান্ত সেন

উত্তরঃ (ঘ) রজনীকান্ত সেন।

৩২. শচীন দেব বর্মন বাংলা যে চলচ্চিত্রে নির্দেশনা দেন-
(ক) সুদূরের প্রিয়ে (খ) দেবদাস
(গ) মাটির ঘর (ঘ) ছদ্ম বেশি

উত্তরঃ (ক) সুদূরের প্রিয়ে।

৩৩. সঙ্গীত পরিচালক রূপে চলচ্চিত্রজগতে সলিল চৌধুরীর আত্মপ্রকাশ ঘটে _______ ছবির সংগীত পরিচালনা’র মধ্য দিয়ে।
(ক) বাঁশের কেল্লা (খ) গঙ্গা (গ) পরিবর্তন
(ঘ) বাড়ি থেকে পালিয়ে

উত্তরঃ (গ) পরিবর্তন।

৩৪. রবীন্দ্রসঙ্গীতের সংকলন হলো-
(ক) গীতবিতান (খ) গীতিমাল্য
(গ) গীতালি (ঘ) গীতাঞ্জলি

উত্তরঃ (ক) গীতবিতান।

৩৫. ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ গানটির রচয়িতা-
(ক) রজনীকান্ত সেন (খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) অতুলপ্রসাদ সেন (ঘ) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

উত্তরঃ (ঘ) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।

৩৬. ভাটিয়ালি গান যে গানের অন্তর্গত-
(ক) উচ্চাঙ্গসংগীতের (খ) লোকগীতির
(গ) পল্লীগীতির (ঘ) ভক্তিগীতির

উত্তরঃ (গ) পল্লীগীতির।

৩৭. বাংলাদেশের প্রথম খেয়াল চর্চা শুরু করেন-
(ক) রাম শংকর ভট্টাচার্য্য (খ) রঘুনাথ রায়
(গ) রামনিধি গুপ্ত (ঘ) কালী মির্জা

উত্তরঃ (খ) রঘুনাথ রায়।

৩৮. গম্ভীরা মূলত-
(ক) বৃষ্টি বাদলের সময় গাওয়া গান
(খ) মালদহ জেলার নিজস্ব লোকসংগীত
(গ) গম্ভীরভাবে গাওয়া গান
(ঘ) দক্ষিণবঙ্গের লোকসংগীত

উত্তরঃ (খ) মালদহ জেলার নিজস্ব লোকসংগীত।

৩৯. প্রথম যুগের যাত্রা গানের বিষয় ছিল-
(ক) কৃষ্ণলীলা বিষয়ক
(খ) সমাজ সংস্কার বিষয়ক
(গ) বৌদ্ধ সহজিয়া বিষয়ক
(ঘ) মনসামঙ্গল বিষয়ক

উত্তরঃ (ক) কৃষ্ণলীলা বিষয়ক।

৪০. বাংলায় জুড়ির গানের প্রবর্তক হলেন-
(ক) রামচাঁদ চট্টোপাধ্যায়
(খ) ঈশ্বর গুপ্ত
(গ) মদনমোহন চট্টোপাধ্যায়
(ঘ) রূপচাঁদ পক্ষী

উত্তরঃ (গ) মদনমোহন চট্টোপাধ্যায়।

৪১. পান্নালাল ভট্টাচার্য হলেন-
(ক) রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী
(খ) শাক্ত সংগীত শিল্পী
(গ) বাউল শিল্পী
(ঘ) লোক সংগীত শিল্পী

উত্তরঃ (খ) শাক্ত সংগীত শিল্পী।

৪২. কীর্তন গানের যে বাদ্যযন্ত্রটি অবশ্য প্রয়োজনীয়-
(ক) শ্রীখোল (খ) হারমোনিয়াম (গ) বাঁশি
(ঘ) করতাল

উত্তরঃ (ক) শ্রীখোল।

৪৩. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মোট খন্ড-
(ক) ১৬টি (খ) ১৫টি (গ) ১৪টি (ঘ) ১৩টি

উত্তরঃ (ঘ) ১৩টি।

৪৪. মনসা গীতি দক্ষিণবঙ্গে __________ নামে পরিচিত।
(ক) ঝাপান (খ) রয়ানী (গ) ভাসান
(ঘ) শ্যামা সংগীত

উত্তরঃ (গ) ভাসান।

৪৫. গীতগোবিন্দম্ কাব্যটি কোন ভাষায় রচিত ?
(ক) বাংলা (খ) মৈথিলী (গ) পালি
(ঘ) সংস্কৃত

উত্তরঃ (ঘ) সংস্কৃত।

৪৬. নিম্নলিখিত রাজ্য গুলির মধ্যে কোনটি বর্তমানে বিলুপ্ত ?
(ক) শবরী (খ) মোল্লারী (গ) রামকেলি
(ঘ) ভৈরবী

উত্তরঃ (ক) শবরী।

৪৭. যাঁকে ছাড়া টপ্পা গান ভাবা যায় না, তিনি হলেন-
(ক) রামপ্রসাদ (খ) কমলাকান্ত
(গ) রামনিধি গুপ্ত (ঘ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উত্তরঃ (গ) রামনিধি গুপ্ত।

৪৮. শিশির রায়চৌধুরী হলেন বিশিষ্ট-
(ক) বাঁশি শিল্পী (খ) বীণা শিল্পী
(গ) সন্তুর শিল্পী (ঘ) ভায়োলিন শিল্পী

উত্তরঃ (ঘ) ভায়োলিন শিল্পী।

৪৯. কত সালে টেলিভিশনে বাংলা বিজ্ঞাপন এর প্রচলন শুরু হয় ?
(ক) ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে।

উত্তরঃ (ক) ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে।

৫০. ‘তুমি নির্মল করো, মঙ্গল করো’ গানটির রচয়িতা হলেন-
(ক) অতুলপ্রসাদ সেন
(খ) রামপ্রসাদ সেন
(গ) রজনীকান্ত সেন
(ঘ) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

উত্তরঃ (গ) রজনীকান্ত সেন।

(বিঃ দ্রঃ শিল্প,সাহিত্য,সংস্কৃতির ইতিহাস থেকে SAQ প্রশ্ন থাকে না)

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (SAQ) | বাংলা গানের ধারা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ?

উত্তরঃ চার ভাগে ভাগ করা যায়।

২. বাংলা সংগীতের আদিতম লিখিত নিদর্শন এর নাম কি ?

উত্তরঃ চর্যাপদ।

৩. চর্যাচর্যবিনিশ্চয় গ্রন্থে মোেট কয়টি গান আছে ?

উত্তরঃ ৫১টি। মতান্তরে ৫০টি।

৪. চর্চার গানগুলি কোন সময় রচিত হয় ?

উত্তরঃ দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে।

৫. চর্যাচর্যবিনিশ্চয় গ্রন্থে চর্যাগানের গুলি কতজন বৌদ্ধ সহজিয়া সিদ্ধাচার্যের রচনা?

উত্তরঃ তেইশ জন।

৬. চর্যার যুগে সংগীতের কয়টি অঙ্গ দেখা যায়?

উত্তরঃ ছয়টি অঙ্গের।

৭. চর্যাপদ এ ব্যবহৃত দুটি রাগের উল্লেখ করো।

উত্তরঃ পটমঞ্জরী মালসি।

৮. চর্যাপদ এ কোন রাগ বেশি ব্যবহৃত হয়েছে?

উত্তরঃ পটমঞ্জরী।

৯. গীতগোবিন্দ কার রচনা?

উত্তরঃ কবি জয়দেব গোস্বামীর রচনা।

১০. আদি মধ্যযুগের বাংলা ভাষার একমাত্র প্রামাণ্য সাহিত্যিক নিদর্শন কোনটি?

উত্তরঃ শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন।

১১. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে মোট পদের সংখ্যা কয়টি?

উত্তরঃ ৪১৮ কি।

১২. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে মোট কতগুলি রাগ-রাগিণীর ব্যবহার আছে?

উত্তরঃ ৩২ টি।

১৩. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মোট কয়টি চরিত্র আছে?

উত্তরঃ তিনটি চরিত্র আছে– (১) রাধা (২) কৃষ্ণ। (৩) বড়াই।

১৪. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কোন অংশটি ব্যতিক্রম ?

উত্তরঃ রাধাবিরহ অংশটি।

১৫. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি কার লেখা ?

উত্তরঃ বড়ু চণ্ডীদাসের রচনা।

১৭. মহাভারতের প্রথম অনুবাদক কে ?

উত্তরঃ কবীন্দ্র পরমেশ্বর দাস।

১৮. মঙ্গলকাব্য গুলি কোন ছন্দে গাওয়া হয় ?

উত্তরঃ লাচারি নামক লৌকিক ছন্দে গাওয়া হয়।

১৯. মঙ্গলকাব্য আখ্যায়িকা গুলি কয়টি পালায় বিভক্ত ?

উত্তরঃ ১৬টি পালায় বিভক্ত।

২০. মনসামঙ্গল কোথায়, কি নামে পরিচিত ?

উত্তরঃ মনসা মঙ্গলের পালা গুলি—
(১) রাঢ় বঙ্গে ঝাপান নামে পরিচিত।
(২) দক্ষিণবঙ্গে ভাসান নামে পরিচিত।
(৩) পূর্ববঙ্গে রয়ানী নামে পরিচিত।
(৪) উত্তরবঙ্গে সাইটোল বিষহরীর গান বা ডগজিয়ানী / মড়াজিয়ানীপালা নামে পরিচিত।

২১. বিষয় অনুসারে বৈষ্ণব পদাবলীকে কয়টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়?

উত্তরঃ বিষয় অনুসারে বৈষ্ণব পদাবলীকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। এগুলি হল –
(১) রাধাকৃষ্ণ প্রণয় পদাবলী।
(২) গৌর পদাবলী।
(৩) ভজন পদাবলী।
(৪) রাগাত্মক পদাবলী।

২২. বৈষ্ণব সাহিত্যে কোন রস সর্বোৎকৃষ্ট?

উত্তরঃ শৃঙ্গার বা মধুর রসে।

২৩. কীর্তন গান কিভাবে গড়ে উঠেছে ?

উত্তরঃ বৈষ্ণব পদাবলীকে আশ্রয় করে কীর্তন গান করে উঠেছে।

২৪. কীর্তনকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি ?

উত্তরঃ কীর্তনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
(১) নাম কীর্তন বা সংকীর্তন।
(২) লীলা কীর্তন বা রসকীর্তন।

২৫. কীর্তন এর কয়টি অঙ্গ ?

উত্তরঃ ৫টি। কথা, দোঁহা, আখর, তুক, ছুট।

২৬. কীর্তনে মোেট কয়টি রসের সন্ধান পাওয়া যায়?

উত্তরঃ ৬৪টি রসের।

২৭. গৌরচন্দ্রিকা বলতে কী বোঝো ?

উত্তরঃ প্রত্যেক পালা শুরু করার আগে সেই রস ও পর্যায় অনুসারে যে একটি গৌরপদ গাওয়া হতো তাকে গৌরচন্দ্রিকা বলে।

২৮. শাক্ত সংগীতের প্রথম ও প্রধান কবি কে ?

উত্তরঃ কবি রামপ্রসাদ সেন।

২৯. রামপ্রসাদ সেনের উপাধি কি ?

উত্তরঃ কবিরঞ্জন।

৩০. রামপ্রসাদ সেনের গান কি নামে পরিচিত?

উত্তরঃ রামপ্রসাদী সুর/ রামপ্রসাদী গান নামে পরিচিত।

৩১. ঈশ্বরগুপ্তের মতে কবিগানের জন্মভূমি কোথায়?

উত্তরঃ শান্তিপুর।

৩২. আধুনিক পাঁচালীর রূপকার ছিলেন কারা ?

উত্তরঃ লক্ষীকান্ত বিশ্বাস ও গঙ্গানারায়ণ নস্কর।

৩৩. পাঁচালী গানে শাস্ত্রীয় রাগ ও তালের ব্যবহার প্রথম করেন কে?

উত্তরঃ লক্ষীকান্ত বিশ্বাস।

৩৪. ঈশ্বরগুপ্তের মতে কিভাবে আখড়াই গানের উৎপত্তি?

উত্তরঃ শান্তিপুরের খেউড় আর প্রভাতী গানের সমন্বয়ে আখড়াই গানের উৎপত্তি।

৩৫. আখড়াই গানের শ্রেষ্ঠ শিল্পী ছিলেন কে ?

উত্তরঃ রামনিধি গুপ্ত।

৩৬. হাফ- আখড়াই গানের জন্ম দেন কে?

উত্তরঃ মোহন দাস বসু।

৩৭. ‘যাত্রা’ শব্দটির বর্তমান অর্থে কোথায় প্রয়োগ ছিল?

উত্তরঃ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে।

৩৮. কোনগুলিকে হিন্দুস্তানি মার্গ সংগীত বলা হয়?

উত্তরঃ ধ্রুপদ, ধামার, টপ্পা, খেয়াল, ঠুংরি।

৩৯. টপ্পা গানকে বাংলায় প্রচলিত ও জনপ্রিয় করে তোলেন কে?

উত্তরঃ রামনিধি গুপ্ত বা নিধুবাবু।

৪০. টপ্পা শব্দটি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে?

উত্তরঃ পাঞ্জাবের লোকগান ‘ডপা’ বা ‘টপে’ থেকে টপ্পার সৃষ্টি হয়েছে।

৪১. টপ্পা মূলত কাদের গান ?

উত্তরঃ মেয়েদের গান।

৪২. টপ্পা শব্দের অর্থ কি ?

উত্তরঃ লাফ।

৪৩. কালী মির্জার প্রকৃত নাম কি ?

উত্তরঃ কালিদাস চট্টোপাধ্যায়।

৪৪. খেয়াল কি ধরনের শব্দ? এর অর্থ কি?

উত্তরঃ খেয়াল আরবী শব্দ। এর অর্থ হল যথেচ্ছাচার।

৪৫. খেয়াল শব্দের উৎপত্তি হয়েছে কিভাবে ?

উত্তরঃ ‘কাওয়ালী’ নামক উত্তর ভারতীয় লোকসংগীত থেকে খেয়াল শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।

৪৬. বাংলায় প্রথম ধ্রুপদ রচনা করেন কে?

উত্তরঃ রাম শংকর ভট্টাচার্য্য ।।

৪৭. বিষ্ণুপুর ঘরানা কোন বংশের রাজাদের সময় সংগীতের পীঠস্থান ছিল?

উত্তরঃ মল্ল রাজাদের সময়।

৪৮. জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সাংগীত শিক্ষক ছিলেন কে?

উত্তরঃ বিষ্ণু চন্দ্র চক্রবর্তী।

৪৯. বাংলার প্রথম বীণাবাদক কে ?

উত্তরঃ রাম শংকর ভট্টাচার্যের জ্যেষ্ঠপুত্র মাধব ভট্টাচার্য।

৫০. খান্ডারবাণী রীতির ধ্রুপদ বাংলায় প্রথম প্রবর্তন করেন কে ?

উত্তরঃ যদুভট্ট।

৫১. ‘গীত মঞ্জুরী’ কার গানের সংকলন ?

উত্তরঃ কার্তিকেয় চন্দ্র রায়ের রাগাশ্রয়ী বাংলা গানের সংকলন হল ‘গীত মঞ্জরী’। এটি প্রকাশিত হয় ১৮৭৮ সালে।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর (Essay Type) | বাংলা গানের ধারা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. বাংলা সংগীতের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান আলোচনা করো ?

উত্তরঃ

ভূমিকাঃ রবীন্দ্র সমসাময়িক যে সকল সংগীত শিল্পী উল্লেখযোগ্য ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন অতুলপ্রসাদ সেন। তিনি মূলত দেশাত্মবোধক গান লিখেছেন কীর্তন ও বাউলের সুরে। এই গানগুলি তার ‘অতুলপ্রসাদী সংগীত’ নামে পরিচিত। গানগুলি বৈচিত্র ও ভাষার গভীরতায় বাংলা গানের জগতে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছে। তার মোট গানের সংখ্যা ২০০র বেশি । তিনি বিভিন্ন পর্যায়ের গান রচনা করেছেন।

উল্লেখযোগ্য গানঃ অতুল প্রসাদ সেন বিভিন্ন রাগের সংমিশ্রণে গান লিখেছেন। যেগুলি ভাষার মাধুর্যে, ছন্দে ও সুরে অনবদ্য রসোত্তীর্ণ হয়ে উঠেছে। তার উল্লেখযোগ্য স্বদেশ প্রেমের গান হল- “উঠগো ভারত লক্ষ্মী”, আবার মিশ্র রাগের গান হল- “কে আবার বাজায় বাঁশি”, গৌড়মল্লার “ডাকে কোয়েল বারে বারে “- গানগুলি খ্যাতীয় অর্জন করেছিল।

বিভিন্ন গানের প্রভাবঃ লখনৌ এর বাসিন্দা হওয়ায় অতুলপ্রসাদ সেনের গানে টপ্পা,ঠংরি গানের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও হিন্দুস্তানি গানের ঢং এর প্রভার তার গানে দেখা যায়। তিনি প্রথম বাংলা ভাষায় গজল নির্মাতা। যেমন- “কত গান তো হল গাওয়া”, “কে যেন আমারে বারে বারে চায়”, “কাঙাল বলিয়া করো না হেলা।” ইত্যাদি গানে টপ্পা ও ঠুংরির সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।

বিভিন্ন পর্যায়ের গানঃ অতুলপ্রসাদ সেন যে গানগুলি রচনা করেছেন, সেগুলিকে কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়। যেমন- স্বদেশ প্রেমের গান, টপ্পা ও ঠুংরি পর্যায়ের গান, বাউল সংগীত, ঋতু পর্যায়ের গান, রাগ পর্যায়ের গান ইত্যাদি। এইসকল পর্যায়ের গানে তার রোমান্টিক মনের পরিচয় পাওয়া যায় । গানগুলো সংকলিত হয়েছে “গীতগুঞ্জ”, “কাকলি”, “কয়েকটি গান” গ্রন্থে। এই বৈচিত্র্যময় গান রচনা করে তিনি বাঙালির গর্ব হয়ে রয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।

মন্তব্যঃ বাংলা সংগীত চর্চার ইতিহাসে গীতিকার ও সুরকার অতুলপ্রসাদ সেন সত্যিই অতুলনীয়। তার অসংখ্য দেশাত্মবোধক গান কালজয়ী হয়ে রয়েছে । সংগীত শিল্পী রেনুকা দাশগুপ্ত, তৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, সবিতাব্রত দত্ত প্রমুখেরা অতুলপ্রসাদী গানকে অন্য মাত্রা দিয়েছেন।

২. বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান আলোচনা করো। (২০১৫)

ভূমিকাঃ উত্তর উনিশ শতকের মননের ক্ষেত্রে চেতনার যে জোয়ার এসেছিল তার আবহে এক ঐতিহাসিক যুগ সন্ধিক্ষণে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় আপন প্রতিভাবলে শ্রোতাকে সুরের প্রবাহে ভাসিয়ে নিয়ে গেলেন সুর ও বাণীর বৈচিত্র্যে । ভারতীয় সংগীতের গভীরতার সঙ্গে পাশ্চাত্য সংগীতের প্রাণশক্তি মিশ্রিত করে এক নতুন সুরধারা সৃষ্টি করলেন।

গানের পরম্পরাঃ কৃষ্ণনগরের রাজসভার দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলালের পিতা, যিনি উনিশ শতকের খেয়ালচর্চাকারী একজন শিল্পী ছিলেন। পিতৃসূত্রে দ্বিজেন্দ্রলাল ভারতীয় মার্গসংগীতে অনায়াস বিচরণ করেছেন।

বাণী ও সুরের বৈচিত্র্যঃ ইংল্যান্ডে বসবাসকালে দ্বিজেন্দ্রলাল সহজাত প্রতিভাবলে বিদেশি সুরকে আত্মস্থ করে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সুরের সমন্বয় ঘটান। ধ্রুপদ, খেয়াল, টপ্পা, ঠুংরি, বাউল, কীর্তন, বৈঠকি, স্বদেশি গান, হাসির গান ও প্যারোডি- ( বিচিত্র ও বহুমুখী শাখায় বিবিধ সুরের প্রয়োগে প্রায় 300 টি গান রচনা করেন ) সংস্কৃত লঘুগুরু ছন্দে লেখা ‘এ কি মধুর ছন্দ’, ‘পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে’ ইত্যাদি জনপ্রিয় গানের পাশাপাশি ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার হতে’, ‘ও কে গান গেয়ে চলে যায়’ ‘ধনধান্য পুষ্পভরা‘ , ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ ইত্যাদি গান বাঙালি জীবনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছে।

বিষয়বৈচিত্রঃ দ্বিজেন্দ্রলালের খ্যাতিমান সংগীতও পুত্র শ্রীদিলীপ রায় পিতার রচনাকে বিষয়বৈচিত্র্য অনুসারে পূজা, দেশ, প্রেম, প্রকৃতি ও বিবিধ- পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছেন। নাট্যকার হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত হলেও দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর সমস্ত নাটকেই গানের ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ‘সোরাব রুস্তম’, ‘সাজাহান’, ‘ চন্দ্রগুপ্ত’, ‘মেবার পতন’ ইত্যাদি নাটকে ব্যবহৃত গানগুলি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। তাঁর রচিত স্বদেশসংগীত তাঁকে গানের ভুবনে স্মরণীয় করে রাখবে। তাঁর রচিত গানগুলি ‘আর্যগাথা’ গ্রন্থে দুটি খণ্ডে গ্রথিত হয়েছে, যাকে বাঙালি ধরে রাখতে পারবে চিরদিন।

৩. বাংলার দুটি লোকসংগীতের ধারার নাম লেখো। যে-কোনো একটি ধারার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। ১+৪ (২০১৬)

উত্তরঃ বাংলা লোকসংগীতের ভান্ডার বেশ সমৃদ্ধ। বাংলার দুটি লোকসংগীতের ধারা হল- সারিগান এবং বাউল।

বাউলগানঃ বাংলার গ্রামে গ্রামে গেরুয়া
বসনধারী, হাতে একতারা নিয়ে যারা আপনমনে গান গেয়ে যায়, তাদেরকে বলা হয় বাউল। বাউল হল এক সাধক সম্প্রদায়। তারা গানের মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা করে থাকে। তাদের গানকে বলা হয় বাউলগান। এপার বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের সর্বাধিক জনপ্রিয় লোকগান হল বাউলগান।

বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

(১) ধর্মীয় সংকীর্ণতার উর্দ্ধে- বাউল সাধকরা ধর্মীয় ভেদাভেদ বা জাতপাতের ঊর্ধ্বে মানবতার গান গায়।

(২) দেহতত্ত্ব- বাউল সাধকদের মতে, দেহের মধ্যেই থাকেন ঈশ্বর। তাদের মতে, ঈশ্বর সাধনা মানে দেহ সাধনা। সেইজন্য তাদের গানেও গূঢ় দেহতত্ত্বের আভাস থাকে। তবে, সকলের পক্ষে সেই ইঙ্গিত বোঝা সম্ভব নয়।

(৩) একতারা- সাধারণত একতারা সহযোগে বাউল গান গাওয়া হয়।

অনেক পন্ডিতের মতে, বাংলাদেশে বাউল মতের উদ্ভব সতের শতকে। তবে, মূলত উনিশ শতক থেকেই বাউল গান জনপ্রিয়তা অর্জন করে। লালন ফকির ছিলেন বাউল গানের অন্যতম প্রবক্তা। তাঁর অনেক গান আজও সমান জনপ্রিয়। এমনকি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত বাউল গানের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। বাউল গানের অন্যান্য স্বনামধন্য শিল্পীরা হলেন গোষ্ঠ গোপাল দাস, পূর্ণদাস বাউল প্রমুখ।

৪. বাংলা সংগীতের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান আলোচনা করো। ৫ (২০১৭)

উত্তরঃ বাংলা সঙ্গীতের ধারায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯- ১৯৭৬) নিজেই যেন একটা অধ্যায়। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং সর্বোপরি একজন সঙ্গীতজ্ঞ। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা তিন হাজারের কিছু বেশি এবং এগুলি বাঙালি সংস্কৃতির অতুলনীয় সম্পদবিশেষ।

গীতিকার হিসেবে নজরুলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯২৮ সালে, গ্রামোফোন রেকর্ড কোম্পানির গীতিকার হিসাবে। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে নজরুলের শিল্পী জীবনের সূত্রপাত হয় ছোটবেলাতেই। লেটোর দলে কাজ করার সময়ই তাঁর গান রচনার সূচনা হয়েছিল। এই ভ্রাম্যমাণ যাত্রাদলের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে নজরুল বাংলার লোকসঙ্গীতের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন এবং একইসঙ্গে হিন্দু পুরাণ-সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। আবার, সৈনিক হিসেবে মিলিটারি ব্যান্ডের মাধ্যমে তিনি পাশ্চাত্য সঙ্গীত ও ফারসি কবিতার সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁর বিচিত্র জীবন- অভিজ্ঞতা গীতিকার নজরুলকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল।

নজরুলের সঙ্গীত প্রতিভা বিচিত্র এবং বহুমুখী। তাঁর গানগুলিকে নিম্নোক্ত শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে—

দেশাত্মবোধক গানঃ ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল’ ইত্যাদি।

গজলঃ ‘আসে বসন্ত ফুলবনে’, ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই’, ‘দুরন্ত বায়ু পুরবইয়া’, ‘চেয়ো না সুনয়না’, ‘বসিয়া নদীকূলে’ ইত্যাদি।

রাগাশ্রয়ীঃ বিভিন্ন রাগ-রাগিনী ব্যবহার করে নজরুল অসংখ্য গান লিখেছেন। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল- ‘ভোরের হাওয়া এলে ঘুম ভাঙাতে’ (রামকেলী), ‘আমার কোনো কূলে আজ ভিড়লো তরী’ (খাম্বাজ- দাদরা) ইত্যাদি।

হিন্দু ভক্তিগীতিঃ ‘শ্যামা বড়ো লাজুক মেয়ে’, ‘জাগো জাগো শঙ্খ-চক্র-গদা- পদ্মধারী’, ‘জাগো হে রুদ্র জাগো রুদ্রাণী’ ইত্যাদি।

ইসলামি গানঃ ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে’, ‘ইসলামের ঐ সওদা লয়ে’, ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’ প্রভৃতি।

লোকসংগীতঃ ‘আমি ভাই ক্ষ্যাপা বাউল’, ‘সারাদিন পিটি কার দালানের ছাদ’, ‘কুচ বরণ কন্যারে’ ইত্যাদি।

প্রভাবিত গানঃ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন
গানের সুরে প্রভাবিত হয়ে নজরুল যেসব গান রচনা করেছিলেন, সেগুলিকে প্রভাবিত গান বলা হয়। যেমন, ‘মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে’, ‘দূর দ্বীপবাসিনী’ ইত্যাদি।

এছাড়াও রয়েছে হাস্যরসাত্মক এবং প্যারোডি গান, নতুন তালের গান, হিন্দি গান এবং ছায়াছবির গান। এইভাবে তাঁর গানে বাংলা সঙ্গীতের সমস্ত ধারার মিলন ঘটেছে।

৫. বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান আলোচনা করো। (২০১৮)

অনুপ্রেরণাঃ 1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় রচিত এই গান আজও বাঙালির চেতনায় ‘ প্রত্যেক নিভৃত ক্ষণে মত্ততা ছড়ায় যথারীতি। এই গান এবং আরও অনেক গান নিয়ে বাঙালি মননে যিনি আজও বেঁচে আছেন তিনি রজনীকান্ত সেন (1865-1910)। ভক্তিমূলক, দেশাত্মবোধক এবং হাস্যরসাত্মক গানে তাঁর খ্যাতি সর্বজনবিদিত। যৌবনে রাজশাহিতে থাকাকালীন অক্ষয়কুমার মৈত্রের বাড়ির গানের আসরে গান গেয়ে বাহবা পাওয়াই পরবর্তীতে তাঁর সংগীত নির্মাণের অনুপ্রেরণা। রবীন্দ্র – অনুজ এই স্বভাব কবি ও সুরকার সমসাময়িক সংগীতস্রষ্টা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কর্তৃকও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

কান্তকবিঃ রজনীকান্ত সেনের ভক্তিমূলক গানে আত্মনিবেদনের আর্তি ও আন্তরিকতার পরিপূর্ণতা লক্ষ করা যায়। তাঁর রচিত উমাসংগীতগুলিতে প্রকাশিত হয়েছে ভক্তহৃদয়ের আকুতি ও আনন্দ। ‘আমি অকৃতি অধম’ , কিংবা ‘তুমি নির্মল করো মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে‘ ইত্যাদি ভক্তিমূলক গান তাঁর রচনার সারল্যে, করুণ রসের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশে বাংলা গানের ইতিহাসে বিশিষ্ট হয়ে আছে। এই পর্যায়ের গানে তাঁর ভক্তির প্রাবল্য, গভীরতা এবং সারল্যমণ্ডিত কান্তির জন্য বাঙালি সমাজ তাঁকে ‘কান্তকবি’ নামে মনে রেখেছে। ‘

স্বদেশপ্রীতি পরিচয়ঃ নমো নমো নমো জননী বঙ্গ’, ‘শ্যামল শস্যভরা চিরশান্তি বিরাজিত’ ইত্যাদি গানে রজনীকান্তের স্বদেশপ্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়। আবার ‘যদি কুমড়োর মতো চালে ধরে রত পানতোয়া শত শত’ কিংবা ‘ বাজার হুদ্দা কিন্যা আইন্যা ঢাইলা দিছি পায়’ ইত্যাদি গানে প্রকাশিত হয়ে পড়ে রজনীকান্তের হাস্যরসিক মন।

রজনীকান্তের গানগুলি সংকলিত হয়েছে ‘বাণী’ (1902 খ্রিঃ ) ও ‘কল্যাণী’ (1905 খ্রিঃ) গ্রন্থ দুটিতে। তাঁর গান সহজসরল বাংলার নিজস্ব সুরে গড়া। বাউল, কীর্তন, টপ্পা ইত্যাদি সুরের প্রভাব রয়েছে তাঁর গানে। তিনি স্বভাবকবি এবং সুর তাঁর সহজাত। বাঙালির আপন প্রাণের স্পর্শ আজও তাঁর গানকে জীবন্ত রেখেছে। পান্নালাল ভট্টাচার্য, অনুপ ঘোষাল, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন প্রমুখ সংগীতশিল্পী রজনীকান্তের গানকে আপামর বাঙালির কাজে পৌঁছে দিয়েছেন।

৬. বাংলা গানের ইতিহাসে মান্নাদের অবদান আলোচনা করো। (২০২০)

উত্তরঃ আধুনিক বাংলা গানে নিজস্ব গায়কি এবং সংগীতে অসামান্য বুৎপত্তি নিয়ে মান্না দে এক উল্লেখযােগ্য অধ্যায়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১মে উত্তর কলকাতার এক বনেদি বাড়িতে তার জন্ম। তার রক্তেই ছিল সংগীতের উত্তরাধিকার। কাকা কৃয়চন্দ্র দে ছিলেন সেকালের বিস্ময়কর সংগীতস্রষ্টা। তার কাছেই মান্না দের শৈশবের সংগীত শিক্ষা হয়েছিল। এ ছাড়াও ওস্তাদ দবীর খাঁ- র কাছে তিনি উচ্চাঙ্গ সংগীতের শিক্ষা নেন। ১৯৪২-এ কাকা কৃয়চন্দ্র দে-র সঙ্গী হয়ে তিনি মুম্বাই যান। এখানে প্রথমে কাকা এবং পরে শচীনদেব বর্মন ও অন্যান্যদের সঙ্গে সহকারী সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪৩- এ ‘তামান্না’ সিনেমায় সুরাইয়া-র সঙ্গে দ্বৈতসংগীত জাগাে, আয়ি উষা দিয়ে নেপথ্য শিল্পী হিসেবে মান্না দের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৫০-এ মশাল ছবিতে একক শিল্পী হিসেবে মান্না দে-কে পাওয়া যায়। এর মধ্যেই নিজে সংগীত পরিচালনাও শুরু করেন। কিন্তু গানের শিক্ষাকে তিনি থামিয়ে দেননি।

পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যেই উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ আমন আলি খান এবং ওস্তাদ আব্দুল রহমান খানের কাছে এবং ধীরে ধীরে হিন্দি ও বাংলা গানের জগতে অপ্রতিরােধ্য হয়ে ওঠেন মান্না দে। সর্বমােট ১২৫০টি বাংলা গান তিনি গেয়েছেন। আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, ভক্তিগীতি-সহ সংগীতের সব শাখাতেই ছিল তার অবাধ বিচরণ। বাংলা ছাড়াও ভােজপুরি, মৈথিলি, অসমিয়া, ওড়িয়া, গুজরাটি, পাঞ্জাবি-সহ সবকটি প্রধান ভারতীয় ভাষাতেই মান্না দে গান করেছেন। শঙ্খবেলা’, অ্যান্টনি ফিরিজ্গি’, ‘চৌরঙ্গি, তিন অধ্যায়’, ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘মৌচাক’, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘শেষ থেকে শুরু’, ‘সন্ন্যাসী রাজা’ এরকম অসংখ্য বাংলা চলচ্চিত্রে মান্না দের গাওয়া গান ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। বাঙালির হৃদয়ে চিরস্থায়ী জায়গা করেছে ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে’, ‘দীপ ছিল শিখা ছিল’, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা, আমি যে জলসাঘরে ইত্যাদি অজস্র গান। চলচ্চিত্রে একাধিকবার জাতীয় পুরস্কার ছাড়াও ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ এবং দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে।

৭. বাংলা গানের ধারায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো। (২০২০)

উত্তরঃ আধুনিক বাংলা সংগীত সাগরের এক বিশাল তরঙ্গ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। কণ্ঠশিল্পী, সংগীত পরিচালক, সুরস্রষ্টা এমনকি চলচ্চিত্র প্রযোজকরূপেও তাঁর জীবন বর্ণময়। হিন্দি সিনেমার জগতে হেমন্ত কুমার নামে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রবীন্দ্রসংগীতেও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। বাংলা আধুনিক গান ও সিনেমার গান- দুটি ধারাতেই তাঁর অবদান অসামান্য।

অন্যদিকে রবীন্দ্রসংগীতকেও তিনি বিরাট উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। 1937 খ্রিস্টাব্দে বাংলা বেসিক ডিস্কের গানে বাঙালি প্রথম তাঁর কণ্ঠ শুনতে পায়। ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছায়াছবিতে তিনি নেপথ্যশিল্পীরূপে আত্মপ্রকাশ করেন 1941 খ্রিস্টাব্দে। অতি বিখ্যাত বাংলা সিনেমাগুলিতে তাঁর কণ্ঠের জাদু শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। ‘শাপমোচন’, ‘হারানো সুর’, ‘সূর্যতোরণ’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘সপ্তপদী’, ‘দীপ জ্বেলে যাই’, ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, ‘বালিকা বধূ’, ‘দাদার কীর্তি’ ইত্যাদি অসংখ্য ছায়াছবিতে তিনি অমর সুরের মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করে গিয়েছেন।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গানগুলি হল- ‘মুছে যাওয়া দিনগুলি’, ‘আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা’, ‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই’। সলিল চৌধুরীর কথা ও সুরে হেমন্তের গাওয়া গানগুলি বাঙালি কখনও ভুলবে না। ‘কোনো এক গাঁয়ের বধূ’, ‘ধিতাং ধিতাং বোলে’ ইত্যাদি। গানের সঙ্গে কবি সুকান্তের কথা ও সলিল চৌধুরীর সুরে হেমন্ত গেয়েছেন ‘রানার’, ‘ঠিকানা’ ইত্যাদি গান। তাঁর ভরাট সুরেলা গলায় অসংখ্য রবীন্দ্রসংগীত গভীরতর তাৎপর্য নিয়ে বাঙালির হৃদয়ে ধরা দিয়েছে। রবীন্দ্রসংগীতের ধারায় হেমন্তের অবদান আলাদাভাবে আলোচনার দাবি রাখে।

৮. বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথের অবদান লেখো ?

উত্তরঃ

ভূমিকাঃ বাঙালির হৃদয়ের আবেগকে গানের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জীবনের প্রথম পর্বে তিনি নাটকের প্রয়োজনে গান লিখেছিলেন। তবে পরবর্তীতে একের পর এক অসাধারণ গান লিখে যান। এই গানের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২২৩২ টি। যা “গীতবিতান”- এ সংকলিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৩১ টি গানের স্বরলিপি তিনি নিজেই তৈরি করেছেন।

অবদানঃ রবীন্দ্রনাথ সংগীত এর জগতে বিভিন্ন বিষয়ে অবদান রেখেছেন। তিনি আধ্যাত্বিক সংগীত, প্রেম সংগীত, ঋতু ও প্রকৃতি বিষয়ক গান, দেশাত্মবোধক গান, পদাবলী থেকে হাস্য রসাত্মক গান, শিশু সঙ্গীত ইত্যাদি বিষয়ক গান রচনা করেছেন।

প্রেম পর্বের গানঃ এ বিষয়ে প্রায় সাড়ে চারশ গান লিখেছেন। তিনি যখন লেখেন, “আমি তোমারি সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ।”, “সেদিন আমায় বলেছিলে”- তখন আমরা শুনে অভিভূত হয়ে যাই।

পূজা পর্যায়ের গানঃ রবীন্দ্রনাথ তথাকথিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ছিলেন না। কিন্তু তিনি ছিলেন মরমি মানুষ। যে কারণে ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে সহজ সম্পর্ক রচনা করতে পেরেছিলেন। তার পূজা পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য গান হল- “তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা।”

ঋতু পর্যায়ের গানঃ প্রকৃতির নানা বর্ণ তার রূপ-রং-স্পর্শ রবীন্দ্রনাথ প্রতিমুহূর্তে অনুভব করেছেন। প্রতিটি ঋতু অনুসরণে তিনি গান লিখেছেন। যেমন- শরৎ নিয়ে লিখেছেন, “শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি” আবার বসন্তকাল নিয়ে তিনি লিখেছেন “এসো এসো বসন্ত ধরাতলে।”

স্বদেশ সংগীতঃ রবীন্দ্রনাথ ছিলেন স্বদেশপ্রেমিক। তার স্বদেশপ্রেম মূলক গানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারত ভাগ্যবিধাতা।” এভাবে নানা বিষয়ক গান নিয়ে রবীন্দ্রনাথ আমাদের স্মৃতি সত্তার ভবিষ্যৎকে জাগিয়ে রাখেন।

অন্যান্য অবদানঃ এছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু গানের সুর নিজে দিয়েছেন। তাঁর সৃষ্ট কয়েকটি নতুন তাল হল- ঝম্পক, ষষ্ঠী, রূপকড়া, একাদশী, নবপঞ্চ প্রভৃতি। এছাড়াও তার গানে ধ্রুপদ-ধামার, খেয়াল-ঠুংরি-টপ্পা, লোকসংগীত ইত্যাদির সুর লক্ষ্য করা যায়।

৯. বাংলা গানের ধারায় সলিল চৌধুরীর অবদান আলোচনা করো। (২০১৯)

ভূমিকাঃ বাংলা গানের ধারায় সলিল চৌধুরীর অবদান অসামান্য। তিনি গণনাট্যের সূত্র ধরে বাংলা গানের জগতে প্রবেশ করেন। সংগীত নিয়ে গবেষণা করায় ছিল তার জীবন চর্চা। তিনি নিরন্তর সুর নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন ২০ শতকের ছয় সাত এর দশকে বাংলা গানে তিনি সুরের জাদু এনে দিয়েছেন বলাবল হল তার গান এমন একটি বাণিজ্য সফল জায়গায় চলে আসে পরবর্তীকালে এমনটি আর অন্যত্র দেখা যায় না।

অবদানঃ সলিল চৌধুরীর সংগীত জীবন শুরু হয় গণনাট্য সংঘের সূত্র ধরে। ‘রানার’, ‘বিচারপতি’, ‘আবাক পৃথিবী’ জাতীয় গণ সংগীতের সার্থক স্রষ্টা তিনি। সঙ্গীত নিয়ে গবেষণায় ছিল তার জীবনচর্চা। তার গানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের প্রভাব থাকলেও বিশেষত বাংলা গানে পাশ্চাত্য রীতির ব্যবহারে তিনি নানা উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখান। বাঙালি তথা সমগ্র ভারতবর্ষের প্রিয় এই গায়ক সলিল চৌধুরী ছিলেন অনেক প্রতিভার অধিকারী। তিনি একাধারে ছিলেন গীতিকার , সুরকার , সংগীত পরিচালক। এছাড়াও বাংলা হিন্দি ও মালয়ালম্ ভাষার বিভিন্ন ছবিতে তিনি সংগীত পরিচালনা করেছেন।

সংগীত পরিচালকঃ ১৯৪৯ সালে ‘পরিবর্তন’ ছবির সংগীত পরিচালক রূপে চলচ্চিত্র জগতে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫৩ সালে হিন্দি ছায়াছবির দুনিয়ায় তিনি পা রাখেন “দো বিঘা জমিন’ ছবির সূত্রে। ১৯৬৪ সালে ‘চেম্মিন’ ছায়াছবির সংগীত নির্দেশনা করেন। সংগীত নির্দেশনার জীবনে তিনি প্রায় ৭৫ টি হিন্দি ছবিতে, প্রায় 40 টি বাংলা ছবিতে, অন্তত ২৬ টি মালায়ালাম ছবিতে এবং বেশ কিছু মারাঠি, তামিল ছবিরও সংগীত পরিচালনা করেন। সেগুলি হল- ‘বাঁশের কেল্লা’, ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, ‘কিনু গোয়ালার গলি’, ‘আকালের সন্ধানে’, হাফটিকেট’ প্রভৃতি।

মন্তব্যঃ রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের পর বাংলা গানের সব থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন সলিল চৌধুরী। ‘এক দিক- ফেরানো’র স্রষ্টা হিসাবে বাংলা গানের শ্রোতারা তাকে মনে রাখবে। এখনো ‘কোন এক গায়ের বধু’, ‘রানার’, ‘পালকির গান’ প্রভৃতি গানগুলি মুখে মুখে ফেরে।

১০. বাংলা লোকসংগীত এর অন্তর্গত সারি ও জারি গান সম্পর্কে যা জানো লেখো।

উত্তরঃ

ভূমিকাঃ ইংরেজী ‘folk’ থেকে এসেছে ‘লোক’ ‘Folksong’ কথার বাংলা তরজমা লোকসংগীত বা লোকগান। গোষ্ঠী মানুষ বা সমষ্টি মানুষের একক বা সমবেত গানকে লোকসংগীত বলে। লোকসংগীত এর বৈশিষ্ট্য গুলি হল—
(ক) সরল, প্রাণবন্ত।
(খ) নাগরিকতা মুক্ত ।
(গ) নিত্যান্তই দেশজ ।
(ঘ) আধুনিকতা বা উত্তর-আধুনিকতা মুক্ত।

সারি গানঃ সারিবদ্ধ নৌকা থেকে একাধিক মাঝি-মাল্লাদের সুরবদ্ধ গানকে সারি গান বলে। নদী প্রধান রাজশাহী, দিনাজপুর, জশোহর জেলায় এই গান সমাধিক প্রচলিত। পদ্মা- মেঘনা -যমুনায় নৌকা ভাসানো জেলে মাঝিরা মনের আনন্দে এই গান করেন । অবশ্য এখন বিভিন্ন মঞ্চে সারি গান গাওয়া হয়। এই গানের বিষয় এমন—
(ক) রাধা কৃষ্ণ
(খ) শিবপার্বতী
(গ) লৌকিক প্রেম-প্রণয়।

বর্তমানে চাষি, তাঁতি, কামার-কুমোর প্রত্যেকেই এই গান করেন।

জারি গানঃ মহরমের বিষাদ স্মৃতি বুকে নিয়ে জারি গান ও জারি নাচ করা হয়। হাসান হোসেন সহ তাদের পরিবারের প্রত্যেকে কীভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন, সেই বিষয়কে নিয়ে জারি গান করা হয়। এই গান পরিবেশিত হয় তিনটি পর্বে। যথা—
(ক) বন্দনা
(খ) মূল আখ্যান
(গ) বিদায় পর্ব

একজন মূল গায়েন থাকেন যিনি কাহিনীকে বলে চলেন অন্যেরা দোহারের কাজ করেন। অঞ্চল বা মানুষের মন বুঝে আঞ্চলিক হিন্দু ধর্ম উঠে আসে জারি গানের মধ্যে।

আরও পড়ুনঃ

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন্ ২০২৪

Leave a Reply