বাংলা শব্দার্থতত্ত্ব – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন (Essay Type) উত্তর | WBCHSE HS Bengali Solved Question Answer
বাংলা শব্দার্থতত্ত্ব থেকে বহুবিকল্পীয়, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) আগামী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলা শব্দার্থতত্ত্ব – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
বহুবিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (MCQ) | শব্দার্থতত্ত্ব – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
১. শব্দার্থকে প্রধানত ভাগ করা যায়–
(ক) একভাগে (খ) দুইভাগে (গ) তিনভাগে (ঘ) চারভাগে
উত্তরঃ (খ) দুইভাগে
২. ‘থিসরাস’ শব্দটি হলো–
(ক) ইংরেজি শব্দ (খ) বর্মি শব্দ
(গ) গ্রিক শব্দ (ঘ) লাতিন শব্দ
উত্তরঃ (গ) গ্রিক শব্দ
৩. শব্দার্থ এর দ্বিতীয় ভাগটিকে বলা হয়–
(ক) খণ্ডিত অর্থ (খ) ব্যঞ্জনা অর্থ
(গ) সাধারণ অর্থ (ঘ) নিদর্শন
উত্তরঃ (ঘ) নিদর্শন
৪. ‘থিসরাস’ শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ হলো–
(ক) ধারাবাহিকতা (খ) শব্দার্থ (গ) রত্নাগার
(ঘ) বিপরীতার্থ
উত্তরঃ (গ) রত্নাগার
৫. ‘থিসরাস’– শব্দ বিন্যস্ত থাকে–
(ক) বর্ণানুক্রমিক (খ) শব্দনুক্রমিক
(গ) অর্থানুক্রমিক (ঘ) বিষয়ানুক্রমিক
উত্তরঃ (ঘ) বিষয়ানুক্রমিক
৬. শব্দের আদি অর্থের সঙ্গে পরিবর্তিত অর্থের যোগসূত্র না পাওয়া গেলে সেই পরিবর্তনকে বলা হয়—
(ক) উৎকর্ষ (খ) অপকর্ষ (গ) সংকোচ
(ঘ) রূপান্তর
উত্তরঃ (ঘ) রূপান্তর
৭. ‘অন্ন’ শব্দের আদি অর্থ ‘খাদ্য’ পরিবর্তিত অর্থ ‘ভাত’ এটি শব্দার্থ পরিবর্তনের কোন ধারা ?
(ক) অর্থের সংকোচ
(খ) অর্থের প্রসার
(গ) অর্থের রূপান্তর
(ঘ) এদের কোনোটিই নয়
উত্তরঃ (ক) অর্থের সংকোচ
৮. ‘দারুন’ শব্দের আদি অর্থ—
(ক) নির্মম (খ) কাষ্ঠনির্মিত
(গ) সুন্দর (ঘ) অত্যন্ত
উত্তরঃ (খ) কাষ্ঠনির্মিত
৯. ‘গবেষণা’ শব্দের আদি অর্থ—
(ক) গোরু খোঁজা (খ) অনুসন্ধান কক্ষ
(গ) গবাদি পশুসমুহ (ঘ) তথ্যানুসন্ধান
উত্তরঃ (ক) গোরু খোঁজা
১০. ‘গোষ্ঠী’ শব্দের আদি অর্থ হল—
(ক) সমূহ (খ) গবেষণা
(গ) গবাদি পশুর থাকার ব্যবস্থা
(ঘ) গরু খোঁজা
উত্তরঃ (গ) গবাদি পশুর থাকার ব্যবস্থা
১১. ‘বিড়াল’ শব্দের একটি প্রতিশব্দ হল—
(ক) মার্জার (খ) দাদুরি (গ) অজিন
(ঘ) শার্দুল
উত্তরঃ (ক) মার্জার
১২. শব্দার্থতত্ত্বের ইংরেজি পরিভাষা কী ?
(ক) Lexicography (খ) Semantics
(গ) Morphology (ঘ) Phonology
উত্তরঃ (খ) Semantics
১৩. শব্দার্থতত্ত্বের কোন বিভাগে শব্দের অর্থ নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রসঙ্গের উপর অধিক
গুরুত্ব দেওয়া হয় ?
(ক) উপাদানমূলক তত্ত্ব
(খ) বিষয়মূলক তত্ত্ব
(গ) প্রয়োগতত্ত্ব
(ঘ) সত্যসাপেক্ষ তত্ত্ব
উত্তরঃ (খ) বিষয়মূলক তত্ত্ব
১৪. আগে ‘মৃগ’ শব্দের অর্থ ছিল বন্যজন্তু, বর্তমানে মৃগ বলতে বোঝায়। এটি শব্দার্থ পরিবর্তনের কোন ধারায় পড়ে ?
(ক) সংকোচন (খ) প্রসারণ (গ) রূপান্তর (ঘ) কোনোটিও নয়
উত্তরঃ (ক) সংকোচন
১৫. ‘কালি’ শব্দটি বর্তমানে যে অর্থে ব্যবহৃত হয় তা শব্দার্থ পরিবর্তনের কোন ধারার অন্তর্গত ?
(ক) রূপান্তর (খ) সংকোচন (গ) প্রসারণ (ঘ) অপরিবর্তিত রয়েছে
উত্তরঃ (গ) প্রসারণ
১৬. সংস্কৃত ভাষায় লিখিত একটি থিসরাস
হল—
(ক) অষ্টাধ্যায়ী (খ) নাট্যশাস্ত্র
(গ) অমরকোষ (ঘ) চরকসংহিতা
উত্তরঃ (গ) অমরকোষ
১৭. বর্তমানে গাঙ শব্দটির অর্থ—
(ক) সংকোচন ঘটেছে
(খ) প্রসারণ ঘটেছে
(গ) রূপান্তর ঘটেছে
(ঘ) অর্ধ অপরিবর্তিত রয়েছে
উত্তরঃ (খ) প্রসারণ ঘটেছে
১৮. ইংরেজি ভাষায় প্রথম থিসরাস কে রচনা করেছিলেন ?
(ক) পিটার মার্ক রজেট (খ) নোয়াম চমস্কি (গ) পল ব্রোকা (ঘ) উইলিয়াম জোন্স
উত্তরঃ (ক) পিটার মার্ক রজেট
১৯. পিটার মার্ক রজেটের থিসরাসটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল ?
(ক) ১৮৫২ (খ) ১৮৫৪ (গ) ১৮৫৬
(ঘ) ১৮৬০
উত্তরঃ (ক) ১৮৫২
২০. শব্দার্থতত্ত্বের কোন বিভাগে শব্দকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাগে বিশ্লেষণ করা হয় ?
(ক) বিষয়মূলক (খ) উপাদানমূলক
(গ) সত্যসাপেক্ষ (ঘ) প্রয়োগমূলক
উত্তরঃ (খ) উপাদানমূলক
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (SAQ) | শব্দার্থতত্ত্ব – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
১. গোষ্ঠী শব্দের আদি অর্থ গবাদি পশুর থাকার জায়গা এবং বর্তমান অর্থ সমূহ এটি শব্দার্থের পরিবর্তনের কোন ধারা ?
উত্তরঃ গোষ্ঠী শব্দের আদি অর্থ গবাদি পশুর থাকার জায়গা এবং বর্তমান অর্থ সমূহ – এটি শব্দার্থের রূপান্তর।
২. দারুণ শব্দের আদি অর্থ কী ?
উত্তরঃ দারুণ শব্দের আদি অর্থ কাষ্ঠনির্মিত।
৩. অন্ন শব্দের আদি অর্থ খাদ্য, পরিবর্তিত অর্থ ভাত – এটি শব্দার্থ পরিবর্তনের কোন ধারা ?
উত্তরঃ অন্ন শব্দের আদি অর্থ খাদ্য, পরিবর্তিত অর্থ ভাত – এটি অর্থের সংকোচ।
৪. বঙ্গীয় শব্দ কোশ গ্রন্থের লেখক কে ?
উত্তরঃ বঙ্গীয় শব্দ কোশ গ্রন্থের লেখক হলেন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
৫. সন্দেশ শব্দের অর্থ পরিবর্তনের ধারাটি লেখ।
উত্তরঃ সন্দেশ শব্দের অর্থ পরিবর্তনের ধারাটি হল অর্থের সংশ্লেষ।
৬. থিসরাস অভিধানের আবিষ্কর্তা কে ?
উত্তরঃ থিসরাস অভিধানের আবিষ্কর্তা হলেন পিটার মার্ক রজেন্ট।
৭. গাং শব্দের পূর্ব অর্থ ছিল গঙ্গা নদী, বর্তমানে গাং এর অর্থ যে কোনো নদী – এটি শব্দার্থ পরিবর্তনের কোন ধারা ?
উত্তরঃ গাং শব্দের পূর্ব অর্থ ছিল গঙ্গা নদী, বর্তমানে গাং এর অর্থ যে কোনো নদী – এটি শব্দার্থের প্রসার।
৮. গবেষণা শব্দের আদি অর্থ গভীর অন্বেষণ, পরিবর্তিত অর্থ কোনো বিষয়ের বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ এটি শব্দার্থ পরিবর্তনের কোন ধারা ?
উত্তরঃ গবেষণা শব্দের আদি অর্থ গভীর অন্বেষণ, পরিবর্তিত অর্থ কোনো বিষয়ের বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ এটি অর্থের রূপান্তর।
৯. থিসরাস অভিধানটি রচিত হয় কবে ?
উত্তরঃ থিসরাস অভিধানটি রচিত হয় ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে।
১০. শব্দের সার্থকতা কী ধরণের সম্পর্ক ?
উত্তরঃ শব্দের সার্থকতা হল প্রতিশব্দ মূলক সম্পর্ক।
১১. ঐতিহাসিক শব্দার্থ তত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয় কী ?
উত্তরঃ ঐতিহাসিক শব্দার্থ তত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয় হল সময়ের সঙ্গে ভাষার অর্থের পরিবর্তনের আলোচনা।
১২. শব্দার্থ তত্ত্বের দুটি শাখার নাম লেখ।
উত্তরঃ শব্দার্থ তত্ত্বের দুটি শাখা হল ঐতিহাসিক শব্দার্থতত্ত্ব এবং শব্দভিত্তিক শব্দার্থতত্ত্ব।
১৩. থিসরাস কী ?
উত্তরঃ শব্দার্থের এই বিশাল জগতকে সুশৃঙ্খল ও সমষ্টিবদ্ধ ভাবে বিন্যাস করার এক একটি নিদর্শনকে বলে থিসরাস। এখানে শব্দগুলি সমার্থক বা বিপরীতার্থক শব্দ অনুযায়ী গুচ্ছের মধ্যে আবদ্ধ থাকে।
১৪. শব্দার্থের রূপান্তর অন্য কি নামে পরিচিত ?
উত্তরঃ শব্দার্থের রূপান্তর অর্থসংক্রম নামেও পরিচিত।
১৫. উপাদান মূলক শব্দার্থতত্ত্ব কী?
উত্তরঃ কোনো শব্দের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদানগুলিকে বিশ্লেষণ করে সেই শব্দ এবং অন্যান্য শব্দের সঙ্গে তার সম্পর্কের যথাযথ ধারণা পাওয়া যায় যে শব্দার্থতত্ত্বে তাই’ই হল উপাদানমূলক শব্দার্থতত্ত্ব।
১৬. শব্দার্থতত্ত্ব কাকে বলে ?
উত্তরঃ ভাষা বিজ্ঞানের যে শাখায় ভাষার অর্থ সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে শব্দার্থতত্ত্ব বলে। এককথায় অর্থের চর্চায় হল শব্দার্থতত্ত্ব।
১৭. লোকনিরুক্তি কাকে বলে ? উদাহরণ
দাও ?
উত্তরঃ অনেক সময় দুরূহ কোনো শব্দ সাধারণ মানুষের মুখে সহজতর রূপ নেয় এবং কখনো কখনো অন্য কোনো পরিচিত শব্দের ধ্বনিসাম্যের প্রভাবে নতুন একটি শব্দ তৈরি হয়, একে লোেকনিরুক্তি বলে। যেমন – হসপিটাল থেকে হাসপাতাল।
শব্দার্থতত্ত্ব রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর (Essay Type) | শব্দার্থতত্ত্ব – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
১. শব্দার্থের সত্যসাপেক্ষ তত্ত্বটি আলোচনা করো।
উত্তরঃ ভাষাবিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা হলো শব্দার্থতত্ত্ব। শব্দের অর্থ সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক নিয়ে এই শাখাতে আলোচনা করা হয়। শব্দার্থ নিরূপনের যেক’টি পদ্ধতি রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সত্যসাপেক্ষ তত্ত্ব। এই তত্ত্ব অনুযায়ী বাক্য শুধু শব্দসমষ্টি নয়, তা হলো অর্থবহ শব্দের সমষ্টি।
সত্যসাপেক্ষ তত্ত্বে একটি বাক্যের অর্থ কে বাস্তব জগতের নিরিখে বিচার করা হয়। যদি সেই বাক্যটি বাস্তব জগতে সত্য বলে প্রমাণিত হয় তবেই সেটি ‘সত্য’ বলে বিবেচিত হবে, নতুবা সেটিকে ‘মিথ্যা’ বলা হবে। যেমন-
শিক্ষক ছাত্র পড়ায়।
ছাত্র শিক্ষক পড়ায়।
উপরের দুটি বাক্যে একই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু তাদের বিন্যাস ভিন্ন প্রকৃতির এবং সেইজন্য তাদের অর্থও ভিন্ন ভিন্ন। প্রথম বাক্যটির অর্থ বাস্তব জগতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাই এটি সত্য এবং দ্বিতীয় বাক্যটি মিথ্যা।
সত্যসাপেক্ষ তত্ত্ব শুধুমাত্র চিরন্তন সত্যকে তুলে ধরে না, বাক্যের আক্ষরিক অর্থকে প্রাকৃতিক জগতের মানদন্ডে বিচার করে তার সত্যতা নিরূপণ করে। যেমন- “আকাশ থেকে বৃষ্টির বারিধারা মাটিতে নেমে আসে”- এই বাক্যটি চিরন্তন সত্য। কিন্তু যদি বলা হয় “এখন বৃষ্টি পড়ছে”, তবে এই বাক্যের সত্যতা নির্ভর করবে যখন এটি বলা হচ্ছে সেই সময় সত্যিই বৃষ্টিপাত হচ্ছিল কিনা তার ওপর।
শব্দার্থতত্ত্বের আলোচনায় সত্যসাপেক্ষ তত্ত্বটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার অস্পষ্টতা দূরীকরণে এই তত্ত্ব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
(শব্দার্থ পরিবর্তনের উপর বিগত বছরের প্রশ্ন)
৬.২ শব্দার্থের পরিবর্তন বলতে কী বােঝাে ?
উদাহরণসহ ‘শব্দার্থের সংকোচ’ ও
শব্দার্থের প্রসার’ সম্বন্ধে আলােচনা করাে।
১+২+২ (২০২০)
৬.২ শব্দার্থ পরিবর্তনের ধারা ক-টি ভাগে বিভক্ত ও কী কী ? যে-কোনাে একটি ভাগ উদাহরণ-সহ বুঝিয়ে লেখাে। (২০১৭)
৬.১ শব্দার্থ পরিবর্তনের ধারাগুলি উল্লেখ করে যে-কোনো দুটি ধারার উদাহরণসহ পরিচয় দাও। ১+২+২ (২০১৫)
২. শব্দার্থ পরিবর্তনের স্বরূপ আলোচনা করো।
উত্তরঃ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শব্দের অর্থেরও পরিবর্তন ঘটে। শব্দার্থের এই পরিবর্তন শব্দার্থতত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। মূলত তিনটি ধারাতে শব্দার্থের এই পরিবর্তন সাধিত হয়। সেগুলি হল-
(১) শব্দার্থের প্রসারঃ একটি শব্দ আদিতে যে অর্থ প্রকাশ করত বর্তমানে যদি তার থেকে ব্যাপকতর কোন অর্থ প্রকাশ করে থাকে তবে শব্দার্থতত্ত্বের আলোচনায় সেটিকে শব্দার্থের প্রসার বলে গণ্য করা হয়। যেমন, আগে ‘কালি’ বলতে কালো রঙের তরল পদার্থকে বোঝাত কিন্তু বর্তমানে কালো ছাড়াও লাল, নীল, সবুজ প্রকৃতি সকল রঙের তরলকেই কালি বলা হয়।
(২) শব্দার্থের সংকোচঃ একটি শব্দ আদিতে যে অর্থ প্রকাশ করত বর্তমানে যদি সেই অর্থের ব্যাপকতা হ্রাস পায় তবে শব্দার্থ তত্ত্বের আলোচনায় সেটিকে শব্দার্থের সংকোচ হিসাবে গণ্য করা হয়। যেমনঃ ‘অন্ন’ শব্দের আদি অর্থ ছিল খাদ্য কিন্তু বর্তমানে অন্ন বলতে কেবলমাত্র ভাতকেই বোঝায়।
(৩) শব্দার্থের রূপান্তরঃ অনেক সময়ই শব্দের অর্থ এইভাবে পরিবর্তিত হয় যে বর্তমান রূপ দেখে তার আগের অর্থ বোঝা দুষ্কর হয়ে পড়ে। এই ধরণের পরিবর্তনকে শব্দর্থের রূপান্তর বলা হয়। যেমনঃ ‘দারুণ’ শব্দের আদি অর্থ কাষ্ঠনির্মিত কিন্তু বর্তমানে ‘দারুণ’ বলতে বোঝায় অত্যন্ত।
৩. শব্দার্থের উপাদান মূলক তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা করো। এই তত্ত্বের সীমাবদ্ধতাগুলি লেখো।
উত্তরঃ
উপাদানমূলক তত্ত্বঃ কোনাে শব্দ সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পেতে এবং তার সঙ্গে অন্যান্য শব্দের যথার্থ সম্পর্ক খুঁজে পেতে শব্দটিকে ভেঙে তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অর্থপূর্ণ অংশকে বিশ্লেষণ করতে হয়। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শব্দার্থ-উপাদানকে ‘শব্দার্থগত বিষয়শ্রেণি’ বা ‘শব্দার্থ উপাদান’ বলা হয়। শব্দার্থের উপাদানমূলক তত্ত্বে শব্দের ‘শব্দার্থ উপাদান’-গুলিকে নির্ণয় করে সেই উপাদানের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন শব্দকে কতকগুলি নির্দিষ্ট শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। যেমন一
» পুরুষ : বৃষ, মােরগ
» নারী : গাভি, মুরগি
» শিশু : বাছুর, মােরগছানা
ওপরের শব্দগুলির মধ্যে নারী-শিশু, গাভিবাছুর এবং মুরগি-মােরগছানার মধ্যেকার অর্থগত সম্পর্ক অনুরূপ। আবার পুরুষ নারী, বৃষ-গাভি এবং মােরগ- মুরগির মধ্যেকার অর্থগত সম্পর্ক অনুরূপ। প্রথম পর্যায়টির (পুরুষঃ বৃষ, মােরগ) মধ্যেকার সাধারণ অর্থ-উপাদান—’পুরুষ-জাতীয় ও প্রাপ্তবয়স্ক’, দ্বিতীয় পর্যায়টির ‘স্ত্রী-জাতীয় ও প্রাপ্তবয়স্ক’ এবং তৃতীয় পর্যায়টির ‘কেবল অপ্রাপ্তবয়স্ক’। শব্দার্থের উপাদানমূলক তত্ত্ব অনুযায়ী এই উপাদানগুলির সমষ্টিই শব্দের অর্থের সৃষ্টি করে। ওপরের প্রথম সারির শব্দ তিনটিকেও এইভাবে কয়েকটি অর্থ-উপাদানের সমষ্টি হিসেবে দেখানাে যায়一
» পুরুষ = + মানব-জাতীয় + প্রাপ্তবয়স্ক + পুরুষ-জাতীয়
» নারী = + মানব-জাতীয় + প্রাপ্তবয়স্ক + স্ত্রী-জাতীয়
» শিশু = + মানব-জাতীয় – প্রাপ্তবয়স্ক
এভাবেই এই পদ্ধতিতে এই তত্ত্বের মাধ্যমে শব্দার্থ উপাদান’-এর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন শব্দের মধ্যেকার অন্তর্নিহিত সাধারণ উপাদানকে শনাক্ত করা হয় এবং শব্দগুলিকে শ্রেণিভুক্ত করা হয়। শব্দের স্বাভাবিক শ্রেণি-নির্ধারণ এবং বিন্যাসের আলােচনায় এই তত্ত্বটি বিশেষভাবে উপযােগী।
শব্দার্থ তত্ত্বের সীমাবদ্ধতাঃ শব্দার্থের উপাদানমূলক তত্ত্বের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে।
প্রথমতঃ এই তত্ত্বটি সবরকম শব্দের অর্থের ব্যাখ্যা করতে সমর্থ নয়।
দ্বিতীয়তঃ সব শব্দের উপাদানের প্রাচুর্য নেই। শব্দের ‘শব্দার্থ উপাদান’গুলি হয় কেবলমাত্র বহুল-প্রচলিত নতুবা একেবারে নতুন।
তৃতীয়তঃ বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির উপযােগী সর্বজন গ্রাহ্য ‘শব্দার্থ উপাদান’ বিরল।
৪. শব্দার্থের উপাদানমূলক তত্ত্বটি উদাহরণসহ আলোচনা করো। (২০১৮,২৩)
উত্তরঃ শব্দার্থতত্ত্বের আলোচনায় একটি বিশিষ্ট ধারা হলো শব্দার্থের উপাদানমূলক বিশ্লেষণ তত্ত্ব। এই দত্তের মূল কথা হল, শব্দ আসলে কয়েকটি শব্দার্থ উপাদানেরে সমষ্টি।
শব্দার্থের উপাদানমূলক তত্ত্বঃ
কোনো বস্তুকে ক্রমাগত ভাঙতে থাকলে তার মধ্যে যেমন অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ পাওয়া যায়, তেমনি কোনো শব্দকে বিশ্লেষণ করলেও এইরকম অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপাদান পাওয়া যায়। শব্দের এই ছোট ছোট উপাদান গুলিকে বলা হয় শব্দার্থ উপাদান। এই ধারণা অনুযায়ী, শব্দ হল কিছু শব্দার্থ উপাদানের সমষ্টি। শব্দার্থ উপাদানগুলির মাধ্যমেই কোনো শব্দ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা সম্ভব এবং শব্দটিকে কোনো বিশেষ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। নিচে একটি উদাহরণের সাহায্যে শব্দার্থের উপাদানামূলক তত্ত্বটি প্রয়োগ করা হল—
পুরুষ, নারী এবং শিশু- এই তিনটি শব্দই মানুষকে বোঝাচ্ছে। অর্থাৎ, এই তিনটি শব্দেই যে শব্দার্থ উপাদানটি রয়েছে সেটি হল- মানবজাতীয়। আবার, পুরুষ এবং নারী শব্দদুটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে বোঝায় কিন্তু শিশু বলতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে বোঝানো হয়। তাছাড়া, পুরুষ বলতে বোঝায় পুরুষজাতীয় মানুষ, নারী বলতে বোঝায় স্ত্রীলোক এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এই শ্রেণিকরণ প্রযোজ্য নয়।
এইভাবে দেখা যাচ্ছে যে, ‘পুরুষ’, ‘নারী’ এবং ‘শিশু’ এই তিনটি শব্দ তিনরকম শব্দার্থ উপাদানের সমষ্টি। সেগুলি হল- প্রজাতিগত (মানব), বয়সগত (প্রাপ্তবয়স্ক অথবা অপ্রাপ্তবয়স্ক) এবং লিঙ্গগত (স্ত্রী, পুরুষ ইত্যাদি)।
আরও পড়ুনঃ
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন্ ২০২৪