বাঙালির চিত্রকলা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন (Essay Type) উত্তর | WBCHSE HS Bengali Solved Question Answer
বাঙালির চিত্রকলা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) থেকে বহুবিকল্পীয়, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) আগামী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
বাঙালির চিত্রকলা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
বহুবিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (MCQ) | বাঙালির চিত্রকলা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
১. ‘বেঙ্গল স্কুল অব আর্ট’ এর মূল কাণ্ডারী হলেন-
(ক) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
(গ) সতীশচন্দ্র সিংহ
(ঘ) রবীন মিত্র
উত্তরঃ (ক) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. ‘ভারতমাতা’ ছবিটি এঁকেছিলেন-
(ক) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) যামিনী রায়
(গ) নন্দলাল বসু
(ঘ) সোমনাথ হোড়
উত্তরঃ (ক) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৩. স্কুল অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্ট’ – এর পরবর্তী নামকরণ করা হয়—
(ক) বেঙ্গল আর্ট স্কুল
(খ) ভারতীয় আর্ট স্কুল
(গ) আর্ট স্কুল
(ঘ) গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুল
উত্তরঃ (ঘ) গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুল
৪. পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পীঠস্থান হল-
(ক) বাঁকুড়া
(খ) পূর্ব মেদিনীপুর
(গ) কলকাতা
(ঘ) বীরভূম
উত্তরঃ (গ) কলকাতা
৫. জুবিলি আর্ট অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন–
(ক) রণদাপ্রসাদ গুপ্ত
(খ) হ্যাভেল সাহেব
(গ) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) পিটার গ্র্যান্ট
উত্তরঃ (ক) রণদাপ্রসাদ গুপ্ত
৬. অবনীন্দ্রনাথের পিতা ছিলেন–
(ক) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (ঘ) গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর
৭. বাংলার প্রাচীনতম ছবির নিদর্শন হলো–
(ক) প্রজ্ঞাপারমিতা পুঁথির ছবি
(খ) বিষ্ণুপুরে পাওয়া ছবি
(গ) তালপাতার ছবি
(ঘ) তক্ষশিলায় পাওয়া ছবি
উত্তরঃ (ক) প্রজ্ঞাপারমিতা পুঁথির ছবি
৮. কৃষ্ণলীলা’ সিরিজ অঙ্কন করেন–
(ক) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (ঘ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৯. বাগেশ্বরী প্রবধাবলির রচয়িতা হলেন–
(ক) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (ঘ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১০. নন্দলাল বসু যার ছাত্র, তিনি হলেন–
(ক) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (ঘ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১১. ভারতে প্রথম কিউবিজম ধারণা আনেন-
(ক) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (ক) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
১২. ‘কাটুম কুটুম’ – এর আবিষ্কর্তা হলেন –
(ক) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) যামিনী রায়
(গ) যোগেন চৌধুরী
(ঘ) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (ক) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৩. নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতি (Neo – Bengal – School) – র জনক হিসাবে ধরে নেওয়া হয়-
(ক) ফণীন্দ্রনাথ বসু
(খ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) রামকিঙ্কর বেইজ
(ঘ) গোবর্ধন আশ
উত্তরঃ (খ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৪. যে বাঙালি শিল্পী প্রথমেই ‘ওয়াশ’ পদ্ধতিতে ছবি আঁকতেন তিনি হলেন-
(ক) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়
(ঘ) হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার
উত্তরঃ (ক) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৫. ‘দশরথের মৃত্যু’ ছবিটি এঁকে প্রসিদ্ধিলাভ করেছেন –
(ক) হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার
(খ) নন্দলাল বসু
(গ) যামিনী রায়
(ঘ) অতুল বসু
উত্তরঃ (খ) নন্দলাল বসু
১৬. সহজপাঠের অলংকরণ করেন
(ক) নন্দলাল বসু
(খ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) অতুল সুর।
(ঘ) হেমেন্দ্রনাথ বসু
উত্তরঃ (ক) নন্দলাল বসু
১৭. প্রাচীন বাংলার প্রথম চিত্রকলার নিদর্শন পাওয়া যায় –
(ক) সেন যুগে
(খ) পাল যুগে
(গ) শশাঙ্কের আমলে
(ঘ) গুপ্ত যুগে
উত্তরঃ (খ) পাল যুগে
১৮. বিচিত্রা স্টুডিওর অবস্থান ছিল-
(ক) ধর্মতলায়
(খ) পার্কস্ট্রিটে
(গ) বিশ্বভারতীতে
(ঘ) জোড়াসাঁকোতে
উত্তরঃ (ঘ) জোড়াসাঁকোতে
১৯. ‘সাঁওতাল মেয়ে’- এই উল্লেখযোগ্য ছবিটি এঁকেছেন
(ক) শিল্পী নন্দলাল বসু
(খ) শিল্পী যামিনী রায়
(গ) শিল্পী দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী
(ঘ) শিল্পী অতুল বসু
উত্তরঃ (খ) শিল্পী যামিনী রায়
২০. ‘ঝড়ের পাখি’ অসাধারণ চিত্রটি অঙ্কন করেছেন
(ক) দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী
(খ) যামিনী রায়
(গ) অসিত হালদার
(ঘ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (ক) দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী
২১. ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম ব্যঙ্গচিত্রের সূচনা করেন-
(ক) উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
(খ) সুকুমার রায়
(গ) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) নন্দলাল বসু
উত্তরঃ (গ) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
২২. পটচিত্রে জগৎবিখ্যাত হল-
(ক) কোচবিহারের পটচিত্র
(খ) বিষ্ণুপুরের পটচিত্র
(গ) মুর্শিবাদের পটচিত্র
(ঘ) কালীঘাটের পটচিত্র
উত্তরঃ (ঘ) কালীঘাটের পটচিত্র
২৩. Wounds (উন্ডস) সিরিজটি কোন্ শিল্পী অঙ্কন করেছেন ?
(ক) শিল্পী গোবর্ধন চৌধুরী
(খ) শিল্পী যোগেন চৌধুরী
(গ) শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) শিল্পী চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য
উত্তরঃ (ঘ) শিল্পী চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য
২৪. ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন –
(ক) অতুল বসু
(খ) নন্দলাল বসু
(গ) যোগেন চৌধুরী
(ঘ) যামিনী রায়
উত্তরঃ (ক) অতুল বসু
২৫. ‘সীতার অগ্নিপরীক্ষা’- এই কিংবদন্তী ছবিটি এঁকেছেন?
(ক) যামিনী রায়
(খ) নন্দলাল বসু
(গ) রমেন বসু
(ঘ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (ক) যামিনী রায়
২৬. রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতীকচিহ্নের রূপকার হলেন
(ক) ভূতেশানন্দ মহারাজ
(খ) রাজা রবি বর্মা
(গ) বীরেশ্বরানন্দ মহারাজ
(ঘ) নন্দলাল বসু
উত্তরঃ (খ) রাজা রবি বর্মা
২৭. ট্রায়াম্ফ অব লেবার’ ভাস্কর্যটি কোন্ শিল্পীর আঁকা ?
(ক) শিল্পী রামকিংকর বেইজ এর আঁকা
(খ) শিল্পী দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর আঁকা
(গ) শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা
(ঘ) শিল্পী নন্দলাল বসুর আঁকা।
উত্তরঃ (খ) শিল্পী দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর আঁকা
২৮। ক্যালকাটা গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল-
(ক) ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ (ক) ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে
২৯. রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্পকে ভলক্যানিক ইরাপশন বলেছিলেন –
(ক) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) নন্দলাল বসু
(ঘ) যামিনী রায়
উত্তরঃ (খ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৩০. চলমান গান্ধিজির ছবিটি এঁকেছেন –
(ক) নন্দলাল বসু
(খ) যামিনী রায়
(গ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) রামকিঙ্কর বেইজ
উত্তরঃ (ক) নন্দলাল বসু
৩২. জুবলি আর্ট অ্যাকাডেমি গড়ে তুলেছিলেন-
(ক) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) রণদাপ্রসাদ গুপ্ত
(ঘ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (গ) রণদাপ্রসাদ গুপ্ত
৩৩. মন্বন্তরের শিল্পী বলা হয় যাকে তিনি হলেন–
(ক) রণদা প্রসাদকে
(খ) চিত্তপ্রসাদকে
(গ) প্রকাশ কর্মকারকে
(ঘ) গণেশ হালুইকে
উত্তরঃ (খ) চিত্তপ্রসাদকে
৩৪. বাংলাদেশের সংবিধানের অঙ্গ সজা করেছিলেন
(ক) গণেশ হালুই
(খ) গোবর্ধন আশ
(গ) নন্দলাল বসু
(ঘ) জয়নুল আবেদিন
উত্তরঃ (গ) জয়নুল আবেদিন
৩৫. হলকর্ষণ ছবিটির স্রষ্টা হলেন
(ক) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) নন্দলাল বসু
(গ) যামিনী রায়
(ঘ) রামকিঙ্কর বেইজ
উত্তরঃ (খ) নন্দলাল বসু
৩৬. অস্বচ্ছজল রং-এ আঁকা ছবিকে বলে-
(ক) গুয়াস
(খ) ওয়াশ
(গ) পটচিত্র
(ঘ) ইরাপশান
উত্তরঃ (ক) গুয়াস
৩৭. ‘টুয়েলভ ইঙ্ক স্ক্যাচেস’ অ্যালবামটির স্রষ্টা –
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (গ) গগনেন্দ্রনাথ
৩৮. রয়েল অ্যাকাদেমি অবস্থিত-
(ক) প্যারিসে।
(খ) লন্ডনে
(গ) স্পেনে
(ঘ) ইতালিতে
উত্তরঃ (খ) লন্ডনে
৩৯. শিল্পি নামক আর্ট জানালের প্রকাশক –
(ক) হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার
(খ) পরিতোষ সেন
(গ) সোমনাথ হোড
(ঘ) প্রকাশ কর্মকার
উত্তরঃ (ক) হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার
৪০. ক্ষুধার্ত ও পথের পাঁচালি’ ভাস্কর্যের স্রষ্টা হলেন-
(ক) রামকিঙ্কর বেইজ
(খ) পরিতোষ সেন
(গ) সোমনাথ হোড়
(ঘ) চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য
উত্তরঃ (গ) সোমনাথ হোড়
৪১. সত্যজিতের The Inner Eye তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছিল যার উপর ভিত্তি করে –
(ক) বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়
(খ) রামকিঙ্কর বেইজ
(গ) জয়নাল আবেদিন
(ঘ) নন্দলাল বসু
উত্তরঃ (ক) বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়
(বিঃ দ্রঃ শিল্প,সাহিত্য,সংস্কৃতির ইতিহাস থেকে SAQ প্রশ্ন থাকে না)
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর (Essay Type) | বাঙালির চিত্রকলা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
১. চিত্রশিল্পী হিসেবে যামিনী রায়ের শিল্প প্রতিভার পরিচয় দাও।
ভূমিকাঃ মেধা আর নিজস্ব প্রতিভার উপর ভর করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিলাভ করেছিলেন বাঙালি চিত্রশিল্পী যামিনী রায়। বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রাম্য পরিবেশে শিল্পীর বেড়ে ওঠা। জন্মসূত্রেই লাভ করেছিলেন চিত্রচর্চার উত্তরাধিকার। গ্রামের মৃৎ শিল্পীদের সাধারণ হাতের কাজ তার শিল্পী মনের ভিত্তিভূমিকে তৈরি করে দিয়েছিল।
শিল্পী জীবনের সূচনাঃ স্কুলের পড়াশুনোর পাঠ চুকিয়ে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার আর্ট কলেজে ভর্তি হন। সেখানে ১৯১৬ পর্যন্ত তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই সময়েই তিনি ফাইন আর্ট বিভাগে ইউরোপীয় আকাদেমিক রীতির চিত্রাঙ্কন শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
স্বতন্ত্ররীতিঃ ইউরোপীয় শিক্ষার তেল রং ও জল রং এ তার মন ওঠেনি। আবার ফরাসি ইম্প্রেশনিস্টদের চিত্রশৈলীতেও দীর্ঘ সময় মনোনিবেশ করতে পারেন নি। নিজস্ব মৌলিকতা তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন লৌকিক চিত্রকলার মধ্যে।
পটচিত্রের প্রতি আকর্ষণঃ পটচিত্রের প্রতি
আকর্ষণের কারণে তিনি মেদিনীপুর, বেলিয়াতোড়, কালীঘাট প্রভৃতি অঞ্চলে পটসংগ্রহ করেছিলেন। কালীঘাটের পটচিত্র তার মনকে আচ্ছন্ন করেছিল। এখান থেকেই তিনি পেয়েছিলেন নিজস্ব চিত্রের ভাষা
বিষয়ঃ তেল রং এর দক্ষ শিল্পী হয়েও জল রং এর প্রতি তার দক্ষতা ছিল। তার চিত্রের বিষয় হিসেবে ধরা পড়ে গ্রামীণ নিঃ সর্গ প্রকৃতির ধর্মীয় জগৎ, আদিবাসী জীবন ও জীবিকা প্রভৃতি।
বিখ্যাত শিল্প কর্মঃ শিল্পীর তুলিতে জীবন্ত রূপ লাভ করেছে। সাঁওতাল মা ও দুই ছেলে এছাড়া তার অসামান্য কয়েকটি বিখ্যাত শিল্পকর্মের মধ্যে পড়ে গণেশ জননী, রাধাকৃয়, কৃষ্ণ ও নাগিনী প্রভৃতি।
সম্মাননাঃ ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত হন।
শেষকথাঃ লোকশিল্পের আঙ্গিকে তিনি তার শিল্প বৈশিষ্ট্যকে এক ভিন্নমাত্রা দান করেছিলেন। সে কারণেই হয়ে উঠেছিলেন সমকালীন শিল্পীদের চেয়ে এক স্বতন্ত্রধারার চিত্রকর।
২। চিত্রশিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। (২০১৫)
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ দারিদ্র্যকে উপেক্ষা করে দীপ্ত চিত্রকলাকে সমগ্রবিশ্বের কাছে তুলে ধরে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন রামকিঙ্কর বেইজ। শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর সান্নিধ্যে ও সাহচর্যে আর প্রাচ্য পাশ্চাত্য শিল্পকলার মেলবন্ধনে নিজের শৈলীর মধ্যে এনেছিলেন এক অনন্যতা।
উন্মেষঃ বাঁকুড়ার যুগীপাড়ায় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই খুব কাছ থেকে দেখেছেন স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের কাজ, ছুতোর ও কামারদের কাজ। এগুলিই তার শিল্পদক্ষতাকে প্রণোদিত করে। পরবর্তীকালে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় শান্তিনিকেতনে আসেন । শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন নন্দলাল বসুকে। তার সান্নিধ্যে রামকিঙ্করের শিল্পী জীবনে বহুমাত্রিকতার জন্ম হয়।
বিষয়ঃ রামকিঙ্করের শিল্পকর্মের বিষয়ছিল চারপাশের উন্মুক্ত গ্রামজীবন। তার ছবি ও ভাস্কর্যে রাঢ়বঙ্গের মাটি ও মানুষের প্রাধান্য ধরা পড়েছে।
অভিনবত্বঃ রামকিঙ্করের তেল রং ও জল রং-এ তিনি ছবি আঁকেন। তার অধিকাংশ ছবিই প্রকৃতিকেন্দ্রিক। সিমেন্ট আর বোলপুরের কাকরের মিশ্রণে তৈরি লেই তার ভাস্কর্যের কায়া নির্মাণের মূল উপাদান ছিল।
সৃষ্টিঃ রামকিঙ্করের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সৃষ্টি হল সুজাতা, হাটের সাঁওতাল পরিবার, বুদ্ধদেব, মা ও ছেলে, রবীন্দ্রনাথ, মহিলা ও কুকুর প্রভৃতি।
সম্মান ও স্বীকৃতিঃ যে প্রতিষ্ঠানে তার শিক্ষা সেই প্রতিষ্ঠানেই তিনি শিক্ষকতার পদ অলংকৃত করেন। দেশ বিদেশে তার বহুচিত্র ও ভাস্কর্য সমাদর লাভ করেছে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাকে পদ্মবিভূষণ’ উপাধি ভূষিত করে। ১৯৭৬ – এ বিশ্বভারতী তাঁকে’ দেশিকোত্তম’ উপাধিতে সম্মানিত করে।
শেষকথাঃ প্রখ্যাত চিত্রকর ও ভাস্কর রামকিঙ্কর সৃষ্টির অভিনবত্বে বিশ্বের কাছে উপহার দিয়েছেন মূর্ত ও বিমূর্ত শিল্প চেতনাকে আর স্থান করে নিয়েছেন জগৎবাসীর হৃদয়ের অন্তস্থলে।
৩. বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথের অবদান আলোচনা করো।
উত্তরঃ বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি কলাচর্চাকে সমগ্র বিশ্বে পৌছে দিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের অনেকেই চিত্রকলার প্রতি অত্যন্ত মনোনিবিষ্ট ছিলেন।
(১) অসংখ্যা ছবি নির্মাণঃ ১৯২৭ থেকে ১৯৪০ পর্যন্ত তিনি রেখাচিত্র ও নানারকম অসাধারণ ছবি এঁকে দেশ-বিদেশের কলাশিল্পীদের আকৃষ্ট করেছিলেন। জীবনের শেষ সতেরোটি বছর তিনি প্রায় ২০০০- এর অধিক ছবি আঁকেন। তাঁর ভ্রাতুস্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ তাঁর ছবিকে তুলনা করেছেন আগ্নেয় অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে।
(২) অভিনব আঙ্গিকঃ রবীন্দ্র চিত্রকলা অভিনব আঙ্গিক সংযোজন করেছিল। তিনি ঐতিহ্য সচেতন ছিলেন। ফলে নানা লোকায়ত ছবি তার তুলিতে উঠে আসে।
(৩) দেশজ চিত্রকলাঃ ১৯৩১ সাল থেকে তেল ও জল রঙের সঙ্গে প্যাস্টেল, রঙিন চক, ড্রাই পেন্ট এবং এচিং – এর কাজ আরম্ভ করেন। তার ছবি জীবন্ত হয়ে ওঠে তার নির্মাণের অসাধারণ নৈপুণ্যে। ইউরোপীয় ঘরানা অপেক্ষা দেশজ চিত্রকলা রবীন্দ্রনাথকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। আর সেই ভাবনা থেকে তিনি নানারকম ড্রয়িং শুরু করেন যেখানে মানুষ, পশু, পাখি, ফুল, সাপ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনকি মানুষের চলার ভঙ্গি উঠে আসে।
(৪) প্যারিসে চিত্রকলা প্রদর্শনীঃ ১৯৩২, ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখে আর্ট স্কুলে তার চিত্র প্রদর্শিত হয়। বিদেশে তার প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয় প্যারিসে। ১৯৩২ – এ কলকাতায় প্রদর্শিত ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-শেষ নিঃশ্বাস, অহল্যা হল পাষাণী , কচ ও দেবযানী, আবু হোসেন। চিত্রশিল্পকে ভালোবাসতেন বলেই এই বিশ্ববরেণ্য মানুষটি শান্তিনিকেতনে কলাভবন গড়ে তোলেন।
৪. বাংলা চিত্রকলা চর্চায় জয়নুল আবেদিনের অবদান আলোচনা করো।
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ বর্তমান বাংলাদেশে ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন জয়নুল আবেদিন। কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে ১৯৩৩ সালে পাশ করেন।
(১) উপজাতি মহিলার ছবিঃ প্রথমে আবেদিনের আঁকার বিষয়বস্তু ছিল প্রধানত রোমান্টিক ল্যান্ডস্ক্যাপ ও বর্ণময় উপজাতি মহিলা। ‘ম্যাডোনা ১৯৪৩’ ছবিতে দুর্ভিক্ষের শিকার হওয়ায় মৃতপ্রায় সন্তানের সদ্যমৃত মায়ের বুক থেকে দুধ খাওয়ার দৃশ্য দেখে সবাই চমকে ওঠে।
(২) যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলা ছবিঃ ১৯৪৭ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় আর্ট কলেজ। ১৯৪৯ সালে সেখানে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন জয়নুল আবেদিন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘Faculty of Fine Art’- এর ডিন পদে আসীন হন। ১৯৭১ সালে কলকাতায় তাঁর ছবির প্রদর্শনী দেখানো হয়। সেখানে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মর্মান্তিক চিত্র ধরা পরে। বলিষ্ঠ রেখারস্কেচে জয়নুল আবেদিন তুলে ধরেন একটির পর একটি অমূল্য সম্পদ।
(৩) জাতীয় শিল্পীর মর্যাদাঃ বাংলাদেশ স্বাধীন হলে এই সর্বজন স্বীকৃত শিল্পী এদেশের জাতীয় শিল্পীর মর্যাদা পান। শিল্পাচার্য রূপে তিনি পরিচিতি লাভ করেন।
৫. বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে হেমেন্দ্রনাথ মজুমদারের অবদান আলোচনা করো।
উত্তরঃ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন চিত্রশিল্পী হেমেন্দ্র মজুমদার (১৮৯৪-১৯৪৮)। তিনি কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে কৃতি ছাত্র ছিলেন।
(১) ছবির প্রশংসাঃ মুম্বাই, চেন্নাই, দিল্লি, কলকাতা সর্বত্রই হেমেন্দ্রনাথের ছবি প্রদর্শিত হয়। বসুমতী, প্রবাসী, ভারতবর্ষ প্রভৃতি সর্বকালীন নামী পত্রিকায় তার বহু ছবি মুদ্রিত হয়।
(২) রাজশিল্পী রূপে যোগদানঃ ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার পঞ্জাবের পাতিয়ালা রাজ্যের রাজশিল্পী পদে যোগ দেন। ইতিপূর্বে ১৯১১ সালে যামিনী রায়, অতুল বসু প্রমুখের সহযোগী হিসাবে তিনি ‘ Indian Academy of Fine Art’ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেন। ১৯২১ সালে বোম্বে আর্ট এক্সিবিশনে কয়েকটি ছবি পাঠান। এখানে ‘স্মৃতি’ নামাঙ্কিত ছবিটির জন্যে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। এই বছরেই কলকাতায় Society of Fine Arts- এর প্রদর্শনীতে তার ‘পল্লী প্রাণ’ ছবিটি পুরস্কৃত হয়।
(৩) চারুকলা প্রতিষ্ঠান নির্মাণঃ ১৯১৯ সালে তিনি তার তৎকালীন বাসস্থান ২৪ বিডন স্ট্রিটের বাড়িতে’ Indian Academy of Fine Art’ নামে চারুকলা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হলো- স্মৃতি, মানস কমল, পরিণাম, অনন্তের সুর। এমন একজন শিল্পী বাংলার চিত্রকলার ইতিহাসে যে অমরত্ব পাবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না।
৬. বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের অবদান আলোচনা করো।
উত্তরঃ বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মানুষ ছিলেন চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য (১৯১৫-১৯৭৮)। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুলের ছাত্র।
(১) ছবির প্রতি আগ্রহঃ বাল্যকাল থেকেই ছবি আঁকার নেশা ছিল। ছবিও যেন চিত্তপ্রসাদের প্রাণের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কলেজে পড়ার সময় তিনি পোস্টার, ড্রয়িং, ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন।
(২) মন্বন্তরের ছবিঃ ১৯৪০-৪১ সালে তিনি তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। এইসময় গ্রাম থেকে শহরে ঘুরে বেড়ান। অসহায় মানুষের কাছে আসেন। ১৯৪৩ – এ মেদিনীপুরের দুর্ভিক্ষপীক্ষিত মানুষের চিত্র তুলে ধরেন। ১৯৪৫ মুম্বাই যান। ১৯৪৬ – এর নৌবিদ্রোহ তার ছবিতে জীবন্ত হয়ে ওঠে।
(৩) অধিকার রক্ষার ছবিঃ মুম্বাই, দিল্লি, কলকাতার বিভিন্ন স্থানে তার ছবিগুলি প্রদর্শিত হয়। সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম তার অঙ্কনের উৎস। তিনি স্কেচ ও উড কাটের মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি আঁকেন। জীবনের একটা বিরাট সময় মুম্বাইতে অতিবাহিত করেন। তার উল্লেখযোগ্য দুটি ছবি হলো- (i) তেভাগার প্রতিরোেধ (ii) ফসলের অধিকার
চিত্তপ্রসাদের চিত্রকলার মধ্যে একটি সময়ের ঘাত- প্রতিঘাতের সামগ্রিক চিত্র উঠে আসে।
৭. চিত্রশিল্পী হিসেবে নন্দলাল বসুর অবদান আলোচনা করো। (২০১৮, ২০২২)
উত্তরঃ
শিক্ষা জীবনঃ বাংলা চিত্রকলা চর্চায় এক স্বতন্ত্র ধারার পথিক ছিলেন নন্দলাল বসু। ছোটোবেলায় কুমোরদের মৃৎ কর্ম তাকে আকৃষ্ট করত। পরবর্তীকালে পিসতুতো ভাই অতুল মিত্রের পরামর্শে ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ লাভ করেন। গুরু হিসেবে পেয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে।
ছবির বিষয়ঃ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংস্পর্শে আসার পর থেকেই তাঁর জীবন ও কর্মধারার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। গুরুর ব্যবহৃত জল রং এর ওয়াস পদ্ধতির ছবির পাশাপাশি তিনি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণমূলক ছবি নিয়ে কাজ শুরু করেন। শান্তিনিকেতনের গ্রামীণ প্রকৃতি, দরিদ্রমানুষের পাশাপাশি নারী, পুরুষ, শিশু পথিক এ সমস্ত কিছুই তার ছবির বিষয় হয়ে উঠেছিল।
কলাভবনের ভূমিকাঃ ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি
শান্তিনিকেতনের কলা ভবনে যোগ দেন। এখানে তিনি নিজস্ব ধারার চর্চা করেন। অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর মধ্যে তিনি চালিত করতে চেয়েছিলেন প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও পরম্পরার মিলনে এক নিজস্ব শিক্ষানীতি।
স্বদেশি চেতনাঃ আইন অমান্য আন্দোলনের পুরোধা গান্ধিজি গ্রেফতারের পর লাঠি হাতে তার চলমান যে ছবিটি নন্দলাল বসু অঙ্কন করেছিলেন তাতে তার স্বদেশি চেতনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।
শিল্পকৃতিত্বঃ নন্দলাল বসুর অঙ্কিত বিভিন্ন
চিত্রকলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শোকার্ত সিদ্ধার্থ, জগাই-মাধাই, ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা, মহাপ্রস্থানের পথে, যুধিষ্ঠির, পঞ্চপাণ্ডবের মহাপ্রস্থান প্রভৃতি। এছাড়াও হ্যারিংহামের সহযোগী হিসেবে তিনি অজন্তা গুহা চিত্রের নকল করার কাজ করেন। বরোদা মহারাজের কীর্তি মন্দির, শান্তিনিকেতন ও শ্রী নিকেতনের দেয়াল চিত্রে তার হাতের ছাপ রয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের অলংকরণ তারই অবদান। ১৯৩৭ খ্রি. হরিপুরা কংগ্রেসের অধিবেশনে গান্ধিজির অনুরোধে ৮৩ টি পট অঙ্কন করেছিলেন। সেগুলি’ হরিপুরা পট’ নামে খ্যাত।
সম্মাননাঃ ভগিনী নিবেদিতা তার নব্যরীতির চিত্রকলায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তার ‘সহজপাঠ’ বই – এর অলংকরণ তাকে দিয়েই করেছিলেন। কাশি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পেয়েছিলেন ডি.লিট। ভারত সরকার ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তাকে পদ্মবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করে। বিশ্বভারতী থেকে পেয়েছিলেন দেশিকোত্তম।
৮. পট শব্দটির অর্থ কী ? বাংলা লোকশিল্প হিসেবে পটশিল্পের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ ‘পট’ শব্দের অর্থ হল চিত্র। সংস্কৃত ‘পটু’ শব্দ ভাষাতাত্ত্বিক বিবর্তনের মাধ্যমে কালক্রমে বাংলা ‘পট ‘পরিণতি লাভ করেছে। লোকশিল্পের অন্যতম প্রাচীন মাধ্যম হল পট শিল্প। লোকসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে আছে লোকশিল্প। সেই লোকশিল্পের অন্যতম প্রশস্ত জায়গা হল পটশিল্প।
(১) পট শিল্পীদের অবস্থানঃ মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম প্রভৃতি পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পটুয়ারা থাকেন। এরা অধিকাংশই অশিক্ষিত ও নিরক্ষর। কিন্তু এদের অসম্ভব স্মৃতিশক্তি। পুরাণ সম্পর্কে এদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে।
(২) পটের প্রস্তুতিঃ পটুয়ারা পটের জন্য তুলট কাগজ নিজেরাই বানিয়ে নেয়। পাট, সুত, ছেড়া কাপড় – চোপড়, গাছের ছাল প্রভৃতি উপকরণের মাধ্যমে এই পট প্রস্তুত হয়। পট মূলত কাগজ বা কাপড়ে লেখা হয় । বিশেষ ক্ষেত্রে মাটির আঁধারেও চিত্রিত করা হয়ে থাকে।
(৩) উল্লেখযোগ্য পটের ছবিঃ পটচিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মনসামঙ্গলের কাহিনি। রামায়ণ দশাবতার কাহিনি, কৃষ্ণলীলা, চণ্ডীকথা ইত্যাদি বিষয়ও বিশেষ প্রচলিত।
(৪) কালীঘাটের পটঃ চৌকো পটের মধ্যে খুব উল্লেখযোগ্য হল কালীঘাটের পটুয়াদের আঁকা ছবিগুলি। উনিশ শতকের ‘বাবু’ কালচারকে সামনে রেখে কালীঘাটের পটচিত্র আঁকা হয়েছিল।
৯. বাঙালির চিত্রকলা চর্চার ধারায় বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো।
উত্তরঃ বাংলা চিত্রকলা চর্চায় বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম। তিনি অবনীন্দ্রনাথের যোগ্য উত্তরাধিকারী। নন্দলালের হাতের শান্তিনিকেতনের আবহাওয়ায় তিনি সমৃদ্ধ হয়েছিলেন । একসময় তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। কিন্তু তার মনের গহনে থাকা ছবি কখনো মারা যায়নি।
(১) সত্যজিতের শিক্ষকরূপেঃ শান্তিনিকেতনে
বিনোদবিহারী ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের শিক্ষক। সত্যজিৎ রায় তার এই শিক্ষককে নিয়ে তথ্যচিত্র করেন, নাম দেন ‘The Inner Eye’ অর্থাৎ শিষ্য অনুধাবন করেন তার শিক্ষাগুরুর মধ্যে ছিল তৃতীয় একটি নয়ন – জ্ঞানচক্ষু।
(২) কলাভবনের শিক্ষকরূপেঃ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কলাভবনের শিক্ষক হন বিনোদবিহারী। ১৯৩৭-৩৮- এ জাপান গমন করেন। ভারতীয় শিল্পকলায় জাপানি ভাবধারা আনয়নে তিনি রবীন্দ্রনাথের যথার্থ উত্তরসূরী। ১৯৪৯ সালে নেপাল সরকারের অনুরোধে তিনি কাঠমাণ্ডু যান। বেশ কিছুকাল নেপালের সরকারি মিউজিয়ামের কিউরেটর পদে আসীন হন।
(৩) অধ্যক্ষ রূপেঃ ১৯৫৮ সালে বিনোদবিহারী কলাভবনে ফিরে আসেন। এখানে তিনি একসময় অধ্যক্ষ পদে উপনীত হন। ১৯৭৩ সালে এমেরিটাস অধ্যাপক হিসাবে যুক্ত হন।
দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার পরেও তিনি মনের আনন্দে ছবি এঁকেছেন। এমনকি ভাস্কর্যের কাজ করেছেন। জীবনের শেষ কয়েকদিন তিনি নিমগ্ন থেকে ছিলেন ছবি নিয়ে নানা বক্তব্য ও লেখা-লেখির মাধ্যমে।
১০. ‘পট’ কথার অর্থ কী ? বাংলার পটশিল্প নিয়ে আলোচনা করো। (২০১৮, ২০২০)
উত্তরঃ ‘পট’ কথাটির আভিধানিক অর্থ হল চিত্র।
লোকশিল্পের একটি অতিপ্রাচীন ধারা হল পট। কাপড়ের উপর কাদামাটি কিম্বা গোবরের প্রলেপ দিয়ে জমিন তৈরি করে পট আঁকা হত। ওই পট নিয়ে শিল্পী গান গাইতেন। সপ্তম শতকেও পটের চল ছিল বলে জানা যায়। সেই সময় পটের বিষয় ছিল বুদ্ধদেবের জীবনী। ত্রয়োদশ শতকে পটশিল্প বিস্তার লাভ করেছিল। আরও পরে পনেরো শতকে গাজীর পট জনপ্রিয় হয়েছিল। ষোড়শ শতকে চৈতন্যদেবের বাণী প্রচারের জন্যও পটের ব্যবহার হত। উনিশ শতকে কালীঘাট পট বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য চিত্রশৈলী মিশিয়ে কালীঘাট পট তৈরি হত। ‘মোহন্ত ও এলোকেশী’ এই পটের উদাহরণ।
যারা পট তৈরি করতেন তাদের বলা হত পটুয়া। কয়েকটি প্যানেলে ক্যানভাসকে ব্যবহার করে পটুয়ারা কোনো কাহিনীকে ফুটিয়ে তুলতেন। সাধারণত পৌরাণিক কাহিনী বা লোকগাথা পটের মাধ্যমে তুলে ধরা হত। পটের কাহিনীকে গায়েনরা গান গেয়ে প্রকাশ করতেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে এটি মানুষের মনোরঞ্জনের মাধ্যম ছিল। তবে রামায়ণ, মহাভারতের পাশাপাশি সত্যপীর বা গাজীর পটও মানুষের প্রিয় ছিল।
রাজস্থানেও পটশিল্পের প্রচলন ছিল। তবে বিষয়বৈচিত্র্যে তা বাংলার পটের সমতুল্য ছিল না। এক আনা মুল্যের বিনিময়ে একটি পট কেনার জন্য মানুষ ভিড় জমাত বলে জানা যায়। এমনকি বাংলার এই পট প্যারিসে পসার জমিয়েছিল। আর সেখানে এর অন্যতম খদ্দের ছিলেন পিকাসো। পিকাসোর চিত্রশৈলীতে কালীঘাটের প্রভাব আছে বলে অনেকে মনে করেন। যাইহোক, উনিশ শতক পর্যন্ত বাংলায় এই পটশিল্পের রমরমা ছিল। এগুলি শুধু উৎকৃষ্ট শিল্পসামগ্রী নয়, সমকালীন সমাজের মুল্যবান দলিল হিসেবেও বাংলার পটের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
১১. চিত্রশিল্পী হিসাবে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো। (২০১৬, ২০২৩)
ভূমিকাঃ নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতির জনক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আধুনিক ভারতের চিত্রকলার পুরোধা বলা যেতে পারে। তার তুলিতেই প্রথম ধরা পড়েছিল ইউরোপীয় চিত্ররীতির পাশাপাশি ভারতীয় চিত্রকলা।
শিক্ষাজীবনঃ তিনি চিত্রকলার চর্চা শুরু করেছিলেন আর্ট স্কুলের ইতালি শিক্ষক গিলার্ডির কাছে। ড্রয়িং, পেস্টেল অয়েল পেন্টিং ও বাঙালির চিত্রকলা জল রং এর কাজ শুরু করেছিলেন। আইরিশ ইল্যুমিনেশন এবং মুঘল মিনিয়েচারের কিছু নিদর্শন করার সময় কাকা রবীন্দ্রনাথের উপদেশে বৈষব পদাবলির বিষয় নিয়ে অঙ্কন করেন শ্বেত অভিসারিকা চিত্রখানি। এরপর শুরু করেন কৃষ্ণলীলা সিরিজ’ যা থেকে ভারতীয় চিত্রকলায় আধুনিকতার সূত্রপাত।
স্বতন্ত্রধারার জনকঃ অবনীন্দ্রনাথ ভারতীয়
চিত্রকলায় এক স্বতন্ত্র ধারার জন্ম দিয়েছিলেন। কলকাতা আর্ট স্কুলের সহকারি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তার শিল্পকলায় স্বকীয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তিনি জাপানি ওয়াস পদ্ধতিকে সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ না করে এক স্বতন্ত্র ধারার জন্ম দেন। মুঘল মিনিয়েচারের থেকে তিনি অনুচিত্রমূলক গুণমান গ্রহণ করেন রং- এর পেলব ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তার আঁকা ছবিগুলিতে অনুভূতি জগতের আশ্চর্য আবহ তৈরি করেন।
প্রাচ্য পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনঃ অবনীন্দ্রনাথের শিক্ষা জীবনে পাশ্চাত্যের ছাপ থাকলেও পরবর্তীকালে তিনি প্রাচ্য রীতিকে যথাযথভাবে অনুসরণ করেছিলেন। হ্যাভেল সাহেবের সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনি আধুনিক ভারতীয় চিত্রচর্চাকে পাশ্চাত্যের বন্ধন থেকে মুক্ত করে সমৃদ্ধ করেন।
শিল্পকৃতিত্বঃ অবনীন্দ্রনাথের বিখ্যাত চিত্রগুলির মধ্যে রয়েছে নির্বাসিতযক্ষ, কচ ও দেবযানী, ভারতমাতা, কাজির মৃত্যু, দেবদাসী, অন্তিম শয্যায় সাজাহান প্রভৃতি। তাঁর ভারতমাতা চিত্রখানি বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছিল। শিল্পের প্রতি নিষ্ঠার কারণে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটি।
সম্মাননাঃ পারিবারিক ঐতিহ্যের প্রতি সারাজীবন ধরে সুবিচার করেছিলেন। ১৯২২ খ্রি. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাগেশ্বরী অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনের আচার্য হিসেবে শেষ জীবন অতিবাহিত করেন।
শেষকথাঃ অবনীন্দ্রনাথ ভারতীয় চিত্রকলার
নবরূপদাতা। কলাবিদ্যার একজন ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে তিনি তুলনারহিত। সমকালীন শিল্পীদের মধ্যে নিজস্বশৈলীতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনন্য। তার হাত ধরেই ভারতীয় চিত্রকলা পৌঁছে গিয়েছিল আন্তর্জাতিকতার স্তরে।
আরও পড়ুনঃ
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন্ ২০২৪