উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নোত্তর
কে বাঁচায় কে বাঁচে! (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন উত্তর | HS Bengali Ke Bachay Ke Bache Solved Question Answer
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত উচ্চমাধ্যমিক কে বাঁচায় কে বাঁচে! গল্প থেকে বহুবিকল্পীয়, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) আগামী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
কে বাঁচায় কে বাঁচে! (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal HS Class 12th Bengali Ke Bachay Ke Bache Question and Answer
বহুবিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (MCQ) | কে বাঁচায় কে বাঁচে! (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Ke Bachay Ke Bache Question and Answer :
প্রশ্নঃ “মৃত্যুঞ্জয় একতাড়া নোট নিখিলের সামনে রাখলো”- টাকাটা– (H.S 2015)
(ক) নিখিলকে ধার দেবে বলে
(খ) রিলিফ ফান্ডে দেবে বলে
(গ) নিখিলকে ঘুষ দেবে বলে
(ঘ) অফিসের সকলকে ভুরিভোজ করাবে বলে।
উত্তরঃ (খ) রিলিফ ফান্ডে দেবে বলে।
প্রশ্নঃ ‘মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী’র‘ কেবলি মনে পড়ে’— (H.S 2016)
(ক) সংসারের অভাবের কথা
(গ) ফুটপাথের লোকগুলির কথা
(খ) স্বামীর কথা
(ঘ) ছেলেমেয়েদের কথা
উত্তরঃ (গ) ফুটপাথের লোকগুলির কথা।
প্রশ্নঃ নিখিল জীবনটা কীভাবে কাটাতে চায় ? (H.S 2017)
(ক) বই পড়ে আর একটা চিন্তাজগৎ গড়ে
(খ) সংসারধর্ম পালন করে
(গ) সামাজিক কাজকর্ম করে
(ঘ) অসুস্থ স্ত্রীর সেবাযত্ন করে।
উত্তরঃ (ক) বই পড়ে আর একটা চিন্তাজগৎ গড়ে।
প্রশ্নঃ টুনুর মা নিখিলকে কী অনুরােধ জানিয়েছিল?— (H.S 2018)
(ক) একবেলার খাবার বিলিয়ে দিতে
(খ) মাইনের অর্থ দান করতে
(গ) আর্থিক সাহায্য করতে
(ঘ) মৃত্যুঞ্জয়ের খেয়াল রাখতে।
উত্তরঃ (ঘ) মৃত্যুঞ্জয়ের খেয়াল রাখতে।
প্রশ্নঃ “কয়েক মিনিটে মৃত্যুঞ্জয়ের সুস্থ
শরীরটা অসুস্থ হয়ে গেল।’- কারণ— (H.S 2019)
(ক) অফিসে কাজের চাপ প্রবল
(খ) প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হেঁটে সে অফিসে
এসেছিল
(গ) প্রথমবার অনাহারে মৃত্যু দেখে সে প্রবল
আঘাত পেয়েছিল
(ঘ) বেশি খাবার খেয়ে ফেলায় তার বমি
হচ্ছ।
উত্তরঃ (গ) প্রথমবার অনাহারে মৃত্যু দেখে সে প্রবল আঘাত পেয়েছিল।
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয়ের বাজার ও কেনাকাটা
করে – (H.S 2020)
(ক) নিখিল
(খ) টুনুর মা
(গ) সে নিজে
(ঘ) চাকর ও ছােট ভাই।
উত্তরঃ (ঘ) চাকর ও ছােট ভাই।
প্রশ্নঃ ‘যথেষ্ট রিলিফ ওয়ার্ক’ না হওয়ার কারণ— (H.S 2023)
(ক) টাকার অভাব (খ) লোকের অভাব
(গ) সদিচ্ছার অভাব (ঘ) সামগ্রীর অভাব।
উত্তরঃ (খ) লোকের অভাব।
প্রশ্নঃ “নিখিল ভাবছিল বন্ধুকে বুঝিয়ে বলবে”— (H.S 2023)
(ক) যা ঘটেছে ভুলে যেতে
(খ) অফিসের কাজে মন বসাতে
(গ) সংসারে মন দিতে
(ঘ) এভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না।
উত্তরঃ (ঘ) এভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না।
** ২০২১ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়নি।
** ২০২২ কমানো সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় মৃত্যুঞ্জয় গল্পটি ছিল না।
প্রশ্নঃ “বাড়িটাও তার শহরের …!” মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ী শহরের ?
(ক) কেন্দ্রস্থলে
(খ) এক প্রান্তে
(গ) বাইরে
(ঘ) এক নিরিবিলি অঞ্চলে
উত্তরঃ এক নিরিবিলি অঞ্চলে।
প্রশ্নঃ গ্রুয়েল কথার অর্থ হলো –
(ক) এক ধরনের টনিক
(খ) ভাতের ফ্যান
(গ) ফলের সরবত
(ঘ) সুস্বাদু খাবার
উত্তরঃ (খ) ভাতের ফ্যান।
প্রশ্নঃ ফুটপাতে ব্যক্তিটির মৃত্যুর কারণ –
(ক) রোগ
(খ) দুর্ঘটনা
(গ) খাদ্যে বিষক্রিয়া
(ঘ) অনাহার।
উত্তরঃ (ঘ) অনাহার।
প্রশ্নঃ ‘…চলতে থাকে শারীরিক কষ্ঠবোধ।’ – মৃত্যুঞ্জয়ের শরীরে কষ্ঠবোধ হওয়ার কারণ কী ?
(ক) সে আঘাত পেয়েছে
(খ) তার খাওয়া হয়নি
(গ) তার মনে আঘাত লেগেছে
(ঘ) ভাত খাওয়া বেশি হয়ে গেছে
উত্তরঃ তার মনে আঘাত লেগেছে
প্রশ্নঃ সেদিন কোথায় যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখে ?
(ক) বাজার
(খ) নিখিলের বাড়ি
(গ) অফিস
(ঘ) বাড়ি ফেরার পথে।
উত্তরঃ (গ) অফিস।
প্রশ্নঃ ” সংসারে তার নাকি মন নেই ।” এখানে যার কথা বলা হয়েছে , সে হলো—
(ক) মৃত্যুঞ্জয় (খ) মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী
(গ) নিখিল (ঘ) নিখিলের স্ত্রী
উত্তরঃ (ক) মৃত্যুঞ্জয়
প্রশ্নঃ “ফুটপাতে হাঁটা তার বেশি প্রয়োজন হয় না” – কার প্রয়োজন হয় না ?
(ক) নিখিলের (খ) টুনুর মা’র
(গ) মৃত্যুঞ্জয়ের (ঘ) টুনুর ।
উত্তরঃ (গ) মৃত্যুঞ্জয়ের ।
প্রশ্নঃ “এ অপরাধের প্রায়শ্চিত কি ?” বক্তা এখানে অপরাধ মনে করেন –
(ক) নিজের বেঁচে থাকাকে
(খ) নিজের চারবেলা করে ভাত খাওয়াকে
(গ) যথাযথ রিলিফ ওয়াক না হওয়াকে
(ঘ) নিজের উদাসীন থাকাকে
উত্তরঃ নিজের চারবেলা করে ভাত খাওয়াকে
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে থাকে –
(ক) দশ জন লোক (খ) পাঁচ জন লোক
(গ) সাতজন লোক (ঘ) ন জন লোক ।
উত্তরঃ (ঘ) ন জন লোক
প্রশ্নঃ “.. না খেয়ে মরা টা উচিত নয় ভাই ।” কথাটি বলেছে–
(ক) মৃত্যুঞ্জয় (খ) নিখিল
(গ) মৃত্যুঞ্জয়ের ছোটো ভাই (ঘ) টুনুর মা
উত্তরঃ (খ) নিখিল
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয়ের প্রকৃত বন্ধু হল–
(ক) কৈলাস (খ) মানিক (গ) নিখিল
(ঘ) সুব্রত ।
উত্তরঃ (গ) নিখিল
প্রশ্নঃ “আমাকে দু তিন দিন সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল।”– মৃত্যুঞ্জয় তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল–
(ক) তার অফিসে (খ) নিখিলের বাড়িতে
(গ) ফুটপাতের লোকগুলোর কাছে
(ঘ) লঙ্গরখানায়
উত্তরঃ ফুটপাতের লোকগুলোর কাছে
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয় অফিসে ঠিকমতো না এসে কোথায় যায়–
(ক) বাজারে (খ) আত্মীয়ের বাড়িতে
(গ) নিজের বাড়িতে
(ঘ) শহরের ফুটপাতে ঘুরে বেড়ায় ।
উত্তরঃ (ঘ) শহরের ফুটপাতে ঘুরে বেড়ায়
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের থেকে মাইনে বেশি পায়—
(ক) কুড়ি টাকা (খ) পঞ্চাশ টাকা
(গ) একশো টাকা (ঘ) তিরিশ টাকা
উত্তরঃ পঞ্চাশ টাকা।
প্রশ্নঃ নিখিল দেখেছিলো যে মৃত্যুঞ্জয় শার্সিতে আটকানো মৌমাছির মতো–
(ক) উড়ে বেড়াচ্ছে (খ) মধু খাচ্ছে
(গ) গুন গুন করছে (ঘ) মাথা খুঁড়ছে
উত্তরঃ (ঘ) মাথা খুঁড়ছে
প্রশ্নঃ নিখিল কার কাছে মাঝে মধ্যেই কাবু হয়ে যায় ?
(ক) মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে
(খ) অফিসের অন্যান্যের কাছে
(গ) তার স্ত্রীর কাছে
(ঘ) অফিসের বড় বাবুর কাছে।
উত্তরঃ (ক) মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে।
প্রশ্নঃ নিখিলকে প্রতি মাসে কিছু কিছু টাকা পাঠাতে হয়–
(ক) দুই জয়াগায় (খ) তিন জায়গায়
(গ) চার জায়গায় (ঘ) পাঁচ জায়গায়
উত্তরঃ (খ) তিন জায়গায়।
প্রশ্নঃ নিখিল রোগা তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং একটু– (ক) আলসে প্রকৃতির লোক
(খ) সাহসী প্রকৃতির লোক
(গ) ভীরু প্রকৃতির লোক
(ঘ) চালক প্রকৃতির লোক।
উত্তরঃ (ক) আলসে প্রকৃতির লোক
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয় ধূলিমলিন সিল্কের জমা এখন—
(ক) পরিচ্ছন্ন হয়েছে (খ) ছিঁড়ে গেছে
(গ) অদৃশ্য হয়েছে (ঘ) নতুন হয়েছে।
উত্তরঃ (গ) অদৃশ্য হয়েছে
প্রশ্নঃ “কয়েক মিনিট মৃত্যুঞ্জয়ের সুস্থ শরীরটা অসুস্থ হয়ে গেল” কারণ–
(ক) অফিসে কাজের প্রবল চাপ ছিল
(খ) প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হেঁটে সে অফিসে এসেছিল
(গ) প্রথমবার অনাহারে মৃত্যু দেখে সে প্রবল আঘাত পেয়েছিল
(ঘ) বেশি খাবার খেয়ে ফেলায় তার বমি হচ্ছিল।
উত্তরঃ (গ) প্রথমবার অনাহারে মৃত্যু দেখে সে প্রবল আঘাত পেয়েছিল
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি নজর রাখার জন্য কুনুর মা কার কাছে কাতর অনুরোধ করেন ?
(ক) প্রতিবেশীর কাছে
(খ) নিখিলের কাছে
(গ) অফিসের বড় বাবুর কাছে
(ঘ) ডাক্তারের কাছে।
উত্তরঃ (খ) নিখিলের কাছে
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয় রোজ অফিসে যায়–
(ক) বাসে করে (খ) ট্রামে করে
(গ) পায়ে হেঁটে (ঘ) নিজের গাড়িতে।
উত্তরঃ (খ) ট্রামে করে
প্রশ্নঃ “গাঁ থেকে এইচি। খেতে পাই নে বাবা । আমায় খেতে দাও।”– কথাগুলো বলেছে–
(ক) টুনুর মা (খ) মৃত্যুঞ্জয়
(গ) মৃত্যুঞ্জয়ের ছেলে (ঘ) নিখিল।
উত্তরঃ (খ) মৃত্যুঞ্জয়
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (SAQ) | কে বাঁচায় কে বাঁচে! (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নোত্তর | HS Bengali Ke Bachay Ke Bache Question and Answer :
(প্রশ্নের মান – ১)
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয় এতদিন কী শুনে বা পড়ে এসেছে ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয় এতদিন শুনে বা পড়ে এসেছে ফুটপাথের মানুষের মৃত্যুর কথা।
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয় সেদিন অফিস আসার পথে কী দেখল ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয় সেদিন অফিস আসার পথে প্রথম মৃত্যু দেখল, অনাহারে মৃত্যু।
প্রশ্নঃ নিখিলের সমপদস্থ মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের তুলনায় কত টাকা মাইনে বেশি পায় এবং কেন ? (2015)
উত্তরঃ নিখিল ও মৃত্যুঞ্জয় সমপদস্থ হলেও মৃত্যুঞ্জয়ের বেতন পঞ্চাশ টাকা বেশি। কারণ সে একটা বাড়তি দায়িত্ব পালন করে।
প্রশ্নঃ ‘মৃত্যুঞ্জয় শোনে কিন্তু তার চোখ দেখেই টের পাওয়া যায়।’- কী টের পাওয়া যায় ? (2020)
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ দেখেই টের পাওয়া যায় যে কথার মানে সে আর বুঝতে পারছে না কারণ তার অভিজ্ঞতার কাছে কথার মারপ্যাঁচ অর্থহীন হয়ে গেছে।
প্রশ্নঃ “অন্য সকলের মতো মৃত্যুঞ্জয়কে সেও খুব পছন্দ করে।” – কী কারণে ‘সে’ মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করে ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয় আদর্শবাদের কল্পনা তাপস, এক সরল মনের যুবক বলে নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করে।
প্রশ্নঃ “নইলে দর্শনটা অনেক আগেই ঘটে যেত সন্দেহ নেই।” – কীসের দর্শন ?
উত্তরঃ দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে মৃত্যুঞ্জয়ের ফুটপাথে অনাহার- মৃত্যুর দর্শনের কথা এখানে বলা হয়েছে ।
প্রশ্নঃ লােকে কোথায় মরতেও যায় না বেশি ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িটা শহরের এমন এক নিরিবিলি অঞ্চলে, যেখানে ফুটপাথ বেশি না থাকায় দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ মরতেও সেখানে যায় না।
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয়ের সুস্থ শরীরটা কয়েক মিনিটে অসুস্থ হয়ে পড়ল কেন?
উত্তরঃ ফুটপাথে অনাহারে মানুষকে প্রথম মরতে দেখে মৃত্যুঞ্জয় এমনই আঘাত পায় যে, মনে বেদনাবােধ ও শরীরে কষ্টবােধ হতে থাকায় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
প্রশ্নঃ “নিখিলকে বার বার আসতে হয়।” – নিখিলকে কোথায়, কেন বারবার আসতে হয় ?
উত্তরঃ পথে পথে ঘুরে বেড়ানো বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির লোকেদের খোঁজ খবর নিতে নিখিলকে মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে বারবার আসতে হয় ।
প্রশ্নঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে।’ গল্পে কোন্ ঘটনা নিখিলের কাছে সাধারণ সহজবােধ্য ঘটনা বলে মনে হয়?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে।’ গল্পে ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যু নিখিলের কাছে সাধারণ সহজবােধ্য বলে মনে হয়।
প্রশ্নঃ ফুটপাথে মানুষ মরার কথা কে, কোথায় শুনেছে ?
উত্তরঃ ফুটপাথে মানুষ মরার কথা মৃত্যুঞ্জয় কাগজে পড়ে বা লােকমুখে শুনেছে।
প্রশ্নঃ“একেবারে মুষরে যাচ্ছেন দিনকে দিন।”– উক্তিটি কার ?
উত্তরঃ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে প্রশ্নোধৃত এই উক্তিটি মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রীর।
প্রশ্নঃ “কী হল হে তোমার ?”– কে, কাকে এ কথা বলেছিল ?
উত্তরঃ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের বমি করা ও শরীর খারাপ দেখে সহকর্মী নিখিল তাকে এ কথা বলেছিল ।
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয় অফিসে নিজের কুঠরিতে ঢুকেই চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল কেন?
উত্তরঃ ধপ করে বসে পড়ার কারণ হল, সে মানসিক বেদনায় ও শারীরিক কষ্টবােধে রীতিমতাে কাবু হয়ে পড়েছে।
প্রশ্নঃ গ্লাসে জলপান করে খালি গ্লাসটা নামিয়ে রেখে সে কী করল ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয় খালি গ্লাসটা নামিয়ে রেখে শূন্যদৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল।
প্রশ্নঃ “শত ধিক্ আমাকে।” – কে, কেন নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিল ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিল কারণ দেশের লোকের অনাহার জনিত মৃত্যুর কথা জেনেও সে চারবেলা পেট পুরে খেয়েছে ।
প্রশ্নঃ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পটি প্রথম কোথায় প্রকাশিত হয় ?
উত্তরঃ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে ’ গল্পটি প্রথম সারদাকুমার দাস সম্পাদিত ‘ভৈরব’ পত্রিকার প্রথম শারদ সংখ্যায় ১৩৫০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়।
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী নিখিলের কেমন চেহারা ও কী প্রকৃতির মানুষ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী নিখিল চেহারা ও প্রকৃতির দিক থেকে রােগা, তীক্ষবুদ্ধি এবং আলসে প্রকৃতির মানুষ।
প্রশ্নঃ নিখিল অবসর জীবনটা কীভাবে কাটাতে চায় ?
উত্তরঃ নিখিল অবসর জীবনটা বই পড়ে আর একটা চিন্তাজগৎ গড়ে তুলে কাটিয়ে দিতে চায়।
প্রশ্নঃ “আনমনে অর্ধ-ভাষণে যেন আর্তনাদ করে উঠল মৃত্যুঞ্জয়।” – আর্তনাদটা কী ছিল ?
উত্তরঃ আর্তনাদটা ছিল— “মরে গেল। না খেয়ে মরে গেল ।”
প্রশ্নঃ “ সকলে এক কথাই বলে।” –কী কথা বলে ?
উত্তরঃ সকল দুর্ভিক্ষ পীড়িতই বলে, ‘গাঁ থেকে এইছি। খেতে পাইনে বাবা। আমায় খেতে দাও।’
প্রশ্নঃ নিখিলের মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করা ও ভালােবাসা কেমন ?
উত্তরঃ নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে অন্য সকলের মতাে বেশ পছন্দ করে এবং হয়তাে অল্প একটু অবজ্ঞার সঙ্গে ভালােও বাসে।
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয়কে নিখিলের ভালােবাসার কারণ কী ?
উত্তরঃ নিখিলের ভালােবাসার কারণ, মৃত্যুঞ্জয় নিরীহ শান্ত দরদি ভালাে মানুষ, সৎ ও সরল, তা ছাড়া মানবসভ্যতার সবচেয়ে পুরােনাে ও সবচেয়ে পচা আদর্শবাদের কল্পনাতাপস।
প্রশ্নঃ“এ অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কি ? ” অপরাধটা কী ?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে !’ গল্পে দেখা যায়, মানুষ অনাহারে মরছে আর মৃত্যুঞ্জয় এই দুর্বস্থার সময়েও চারবেলা পেটভরে খেয়েছে। সে এটাকেই অপরাধ বলে গণ্য করেছে ।
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয় কী বলে আনমনে আর্তনাদ করে উঠল ?
উত্তরঃ ‘মরে গেল! না খেয়ে মরে গেল।’ আনমনে বলে মৃত্যুঞ্জয় আর্তনাদ করে উঠল।
প্রশ্নঃ “ধিক। শত ধিক আমাকে।”— মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে ধিক্কার জানাল কেন?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে ধিক্কার জানাল, কারণ লােকের অভাবে দুর্ভিক্ষে যথেষ্ট রিলিফ-ওয়ার্ক হচ্ছে না, অথচ সময় কাটাবে কীভাবে ভেবে পাচ্ছে না মৃত্যুঞ্জয়।
প্রশ্নঃ “মরে গেল ! না খেয়ে মরে গেল ” — কার উক্তি এবং কে মরে গেল ?
উত্তরঃ উক্তিটি মৃত্যুঞ্জয়ের। একজন ফুটপাথবাসী বুভুক্ষু মানুষ অনাহারে মরে গেল ।
প্রশ্নঃ ‘একটা কাজ করে দিতে হবে ভাই’— কাজটা কী ?
উত্তরঃ কাজটা হল মৃত্যুঞ্জয়ের দেওয়া টাকা নিখিল কোনাে রিলিফ ফান্ডে দিয়ে আসবে।
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয় ও টুনুর মা একবেলা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে কেন ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয় আর টুনুর মা একবেলা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, কারণ তাদের সেই বেলার ভাত দুর্ভিক্ষপীড়িত ক্ষুধার্ত মানুষদের বিলিয়ে দেয়।
প্রশ্নঃ “তখন সে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছে” – সে কাবু হয়ে পড়েছিল কেন ?
উত্তরঃ পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের দিনে অফিসকর্মী মৃত্যুঞ্জয় প্রথম পথে এক অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে মানসিক আঘাত পায়। তাই সে কাবু হয়ে পড়েছিল ।
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয়ের ছেলেমেয়েগুলি চেঁচিয়ে কাঁদে কেন ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয়ের ছেলেমেয়েগুলি অনাদরে, অবহেলায় ও ক্ষুধার জ্বালায় চেঁচিয়ে কাঁদে।
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয়ের মনে হতাশা জেগেছে কেন ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয়ের মনে হতাশা জেগেছে, কারণ তার ধারণা হয়েছে সর্বস্ব দান করেও কিছু ভালাে করতে পারবে না।
প্রশ্নঃ টুনুর মা বিছানায় পড়ে থেকে বাড়ির লোকদের কীভাবে মৃত্যুঞ্জয়ের খোঁজ নিতে পাঠান ?
উত্তরঃ টুনুর মা বিছানায় পড়ে থেকে বাড়ির ছেলে, বুড়ো সকলকে তাগাদা দিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের খোঁজ নিতে পাঠান।
প্রশ্নঃ মৃত্যুঞ্জয়ের গা থেকে কী অদৃশ্য হয়ে যায় ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয়ের গা থেকে ধূলিমলিন সিল্কের জামা অদৃশ্য হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ ‘তখন সে রীতিমতাে কাবু হয়ে পড়েছে।’ —সে কাবু হয়ে পড়েছিল কেন ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাথে মানুষকে প্রথম অনাহারে মরতে দেখে শরীরে কষ্ট ও মনে বেদনাবোধ নিয়ে অফিসে নিজের চেয়ারে বসে রীতিমতাে কাবু হয়ে পড়ে।
প্রশ্নঃ “সেটা আশ্চর্য নয়।”— কোনটা আশ্চর্য নয় ?
উত্তরঃ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে !’ গল্পে অনাহারে ফুটপাতে মৃত্যুর ঘটনাটি আশ্চর্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
প্রশ্নঃ অনাহারক্লিষ্ট মানুষদের জন্য খাদ্যের সংস্থান করতে নিখিল কী ব্যবস্থা নিয়েছে ?
উত্তরঃ অনাহারক্লিষ্ট মানুষদের জন্য খাদ্যের সংস্থান করতে নিখিল তার পরিবারের রোজকার খাওয়াদাওয়ার বহর যতদূর সম্ভব কমিয়ে দিয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যই তারা খায়।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর (Essay Type) | কে বাঁচায় কে বাঁচে! (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Ke Bachay Ke Bache Question and Answer :
(প্রশ্নের মান – ৫)
প্রশ্নঃ “মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির অবস্থা শোচনীয়।” — মৃত্যুঞ্জয় কে ? তার বাড়ির অবস্থা শোচনীয় কেন ? (২০১৫)
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘মহামন্বন্তর’ গল্পগ্রন্থের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পের অন্যতম চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়। তিনি একজন শহুরে মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী, আদর্শবাদী যুবক।
মৃত্যুঞ্জয় তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। সে একটি অফিসে চাকরি করত। একদিন অফিস যাওয়ার পথে একটি অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা প্রত্যক্ষ
করেছিল। তারপর থেকে তাঁর মনোজগতে এমন পরিবর্তন এসেছিল যে দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষদের জন্য একবেলার খাবার বিলি করে দেয়। তারপর মাইনের সমস্ত টাকাটা রিলিফ ফান্ডে দান করে দেয়।
এরপর যত দিন যায় সেও ক্রমশ পাল্টে যেতে থাকে। অফিস থেকে আগে বেরিয়ে যাওয়া এবং সময়মতো বাড়ি না ফেরা। এমনকি শহরের ফুটপাতে এবং বিভিন্ন লঙ্গরখানায় নিরন্ন মানুষের সঙ্গে সে সময় কাটায়। দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মানুষদের মুখে অন্ন জোগানোর জন্য সে নিজের পরিবারের প্রতি অবহেলা করতে থাকে। অন্যদিকে —
» টুনুর মা অর্থাৎ মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী শয্যাশায়ী। তার স্বাস্থ্য ভালো ছিল না অথচ এতদিন ধরে নিজের খাবার অপরকে বিলি করে এসেছে। তার ফলেই এখন সে শয্যাশায়ী।
» সে বাড়ির লোকেদের বারবার স্বামীর খোঁজে পাঠিয়ে দেয়। তারা কেউ মৃত্যুঞ্জয়ের খোঁজ পায় না। ফলে বাধ্য হয়ে বাড়িতে এসে তাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দেয়।
» মৃত্যুঞ্জয়ের ছেলেমেয়েগুলি অবহেলায়, অনাদরে, ক্ষুধার জ্বালায় চেঁচিয়ে কাঁদে। এইভাবে, দেশের লোকের ভালো করার নেশায় মৃত্যুঞ্জয় যে পাগলামি শুরু করেছিল তার ফলেই তার বাড়ির অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছিল।
প্রশ্নঃ “নিখিল ভাবছিল বন্ধুকে বুঝিয়ে বলবে, এ ভাবে দেশের লোককে বাঁচনো যায় না।”– কোন্ প্রসঙ্গে নিখিলের এই ভাবনা ? এই ভাবনার মাধ্যমে নিখিলের চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে ? ১ + ৪ (উঃ মাঃ ২০১৬)
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পে নিখিল যখন জানতে পারে যে মৃত্যুঞ্জয় এবং তার স্ত্রী একবেলার খাবার বিলি করে দেয়, তখন সে ভেবেছিল মৃত্যুঞ্জয়কে বুঝিয়ে বলবে যে এভাবে
দেশের লোককে বাঁচানো যায় না।
রাতের অন্ধকার যেমন আকাশের তারাকে আরো উজ্জ্বল কোরে তোলে তেমনি নায়ক চরিত্রকে উজ্জ্বল করে তোলার জন্য লেখকেরা মাঝে মাঝে কিছু কিছু বিপরীতমুখী চরিত্র সৃষ্টি করেন। নিখিল তেমনই একটি চরিত্র।
নিখিল চরিত্রটি গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী ও বন্ধু। সেও প্রায় সমপদস্থ মধ্যবিত্ত চাকুরে। দুই সন্তানের পিতা সে। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন, অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী।
নিখিল একটু অলস প্রকৃতির মানুষ। গল্পে দেখি মৃত্যুঞ্জয় নিজ দায়িত্বের সঙ্গে একটি বাড়তি দায়িত্ব বহন করত কিন্তু নিখিল এমন কোন বাড়তি দায়িত্ব পালন করত না।
আট বছর বিবাহিত জীবন যাপন এবং দুই সন্তানের জনক হলেও নিখিলের নাকি সংসারে মন নেই। তাই—”অবসর জীবনটা সে বই পড়ে আরেকটা চিন্তার জগৎ গড়ে তুলে কাটিয়ে দিতে চায়”। এটি উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। তাই চরিত্রটি কিছুটা অন্তর্মুখী।
নিখিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন হলেও মৃত্যুঞ্জয়ের অপরাজেয় শক্তির প্রতি ঈর্ষান্বিত। মাঝে মাঝে— “মৃদু ঈর্ষার সঙ্গেই সে তখন ভাবে যে নিখিল না হয়ে মৃত্যুঞ্জয় হলে মন্দ ছিল না”।
বন্ধু প্রীতি নিখিল চরিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। দুঃসময়ে নিখিল বারবার মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে গিয়েছে। খোঁজখবর নিয়েছে। অফিসে চেষ্টা করে মৃত্যুঞ্জয়ের ছুটির ব্যবস্থা করেছে। অফিস ছুটির পর মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা করে তাকে ফেরানোর চেষ্টা করেছে। তবে আবেগপ্রবণ মৃত্যুঞ্জয় এর বিপরীতে নিখিল কিন্তু বাস্তববাদী। দুর্ভিক্ষের দিনে ফুটপাতে মৃত্যু তার কাছে সহজ ও সাধারণ ঘটনা। এই দুর্দিনে বাস্তব পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে অর্থসাহায্য কমানোর কথা সে ভাবে।
নিখিল যুক্তিবাদী। সে বিশ্বাস করে অর্থ সাহায্য করা একার পক্ষে দুর্ভিক্ষ এবং অনাহারে মৃত্যু প্রতিরোধ করা যায় না। তার যুক্তি “নিজেকে না খাইয়ে মারা বড় পাপ”।
নিখিল চরিত্রে বেশ কিছু মানবিক গুণের সমন্বয় ঘটলেও সে মধ্যবিত্ত মানসিকতার পোষক। নিরন্ন মানুষের মৃত্যু তাকে ভাবায় না। সে মনোবিলাসি এবং নিজেকে বাঁচানোর জন্য সে অমানবিক। আর এভাবেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের পাশাপাশি নিখিল চরিত্রটিও হয়ে উঠেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, যাকে আমরা কেও এড়িয়ে যেতে পারিনা।
(অথবা, নিচের উত্তরটাও লিখতে পারো)
উত্তরঃ গল্পকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পের ঘটনা যাকে কেন্দ্র করে অগ্রসর হয়েছে সে হল এই গল্পের প্রধান ও অন্যতম চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়। মৃত্যুঞ্জয় আদর্শ বাদী, ন্যায়নিষ্ট ভাবুক প্রকৃতির মানুষ। তার একমাত্র সুহৃদ তথা বন্ধু ছিল নিখিল যে কিনা আবার তার সহকর্মীও বটে। গল্পের সংক্ষিপ্ত পরিসরে গল্পকার চরিত্রটিকে নির্মাণ করেছেন তার স্বভাবসিদ্ধ দক্ষতায়। নিখিল মৃত্যুঞ্জয়ের অফিসের সহকর্মী। মধ্যবিত্ত মানসিকতার অধিকারী, শিক্ষিত দায়িত্ব সচেতন মানুষ নিখিল। সে রোগা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং একটু অলস প্রকৃতির লোকও বটে। নিখিল মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী সে মৃত্যুঞ্জয়ের আদর্শ ও ধ্যান ধারণাকে সন্মান করে। অন্যান্য সহকর্মীদের থেকে মৃত্যুঞ্জয়কে একটু বেশিই ভালোবাসে সে।
বন্ধুর প্রতি তার সহমর্মিতা তাকে আরো বিশেষ করে তুলেছে। মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি তার মৃদু অবজ্ঞা থাকলেও সে যখন মানসিক ভাবে অস্থির হয়ে পরেছে তার পরিবার যখন বিপদে পরেছে তখন নিখিল মৃত্যুঞ্জয়ের ছায়া সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
মৃত্যুঞ্জয়কে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। তাকে সংসারাভিমুখ করতে চেয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক অস্থিরতায় নিখিল কাতর হয়ে পড়েছে। সাময়িক ভাবে সেও দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু তার বাস্তব বুদ্ধি, তার দায়িত্ব কর্তব্য বোধ তাকে মৃত্যুঞ্জয়ের মতো অধীর করে তুলতে পারেনি। তাই মৃত্যুঞ্জয় যখন সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছে তখন নিখিল তার সংসারকে সাহায্য করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং বার বার ছুটে গিয়েছে মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে তাদের সকলের খবর নিতে তারা কেমন আছে কি করছে ইত্যাদি জানার জন্য।
আর এভাবেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের পাশাপাশি নিখিল চরিত্রটিও হয়ে উঠেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, যাকে আমরা কেউ এড়িয়ে যেতে পারিনা।
প্রশ্নঃ “দিন দিন কেমন যেন হয়ে যেতে লাগল মৃত্যুঞ্জয়।”— মৃত্যুঞ্জয় কেমন হয়ে যেতে লাগল ? তার এমন হয়ে যাওয়ার কারণ কী ? ৩ + ২ (উঃ মাঃ ২০১৮)
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটগল্পানুসারে অনাহারে মৃত্যু দেখার কিছুদিন পরই অফিসের মাইনের তারিখ আসে। সে-দিন মৃত্যুঞ্জয় তার মাইনের পুরাে টাকাটা নিখিলের মাধ্যমে রিলিফফান্ডে দান করে দেয়। সে-দিনের পর থেকেই মৃত্যুঞ্জয় কেমন যেন হয়ে যেতে থাকে। অফিসে আসতে দেরি করে, কাজে ভুল করে, প্রায়ই চুপচাপ বসে বসে ভাবে, তারপর একসময় বেরিয়ে যায়। বাড়িতেও তাকে বিশেষ একটা পাওয়া যায় না। দিনরাত শহরের ফুটপাথ ধরে সে হেঁটে বেড়ায়। বড়াে গাছের নীচে, ডাস্টবিনের ধারে বা খােলা ফুটপাথে যেসব দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ পড়ে থাকে, তাদের শুধু দাঁড়িয়ে থেকে লক্ষ করে সে। এইসব অনাহারীরা সন্ধ্যা থেকেই শুয়ে থাকে, কিন্তু অনেক রাতে, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর হামাগুড়ি দিয়ে সামনের কোনাে রােয়াকে উঠে সেখানে শুয়ে পড়ে। এরাই ভোর চারটের সময় লঙ্গরখানায় গিয়ে খাবারের জন্য লাইন দেয়। সকালের দিকে মৃত্যুঞ্জয় তাই বিভিন্ন পাড়ার লঙ্গরখানায় গিয়ে অন্নপ্রার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করে।
» মন্বন্তরকালে নিজের চোখে ফুটপাথে ঘটা অনাহার-মৃত্যুর দৃশ্য দেখে ভীষণ রকমের মানসিক আঘাত পেয়েছিল মৃত্যুঞ্জয়। একজন মানুষ না-খেতে পেয়ে মরার সময় কীরকম কষ্ট পায়, খিদের যন্ত্রণা না মৃত্যু যন্ত্রণা কোনটা বেশি কষ্টদায়ক এসব প্রশ্ন তাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। মন্বন্তরকালে মৃত্যুঞ্জয় সপরিবারে চার বেলা খেয়ে চলেছে এবং ত্রাণকার্যেও কখনও এগিয়ে যায়নি বলে নিজেকে ধিক্কার দেয় মৃত্যুঞ্জয়। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের বাঁচাতে তাই সে মাইনের সব টাকাটা ত্রাণ তহবিলে দান করে দেয়। এমনটা করেও তার অপরাধবােধ না কমায় সে এমন হয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্নঃ “ভূরিভােজনটা অন্যায়, কিন্তু না খেয়ে মরাটা উচিত নয় ভাই।”- বক্তা কে ? এই বক্তব্যের মধ্যে বক্তার চরিত্রের কোন দিক আভাসিত হয়েছে ? ১+৪ (উঃ মাঃ ২০১৯)
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পে প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী ও বন্ধু নিখিল একথা বলেছিল।
নিখিলের এই বক্তব্য থেকে তার চরিত্রের বাস্তববাদী দিকটি আভাসিত হয়েছে। মন্বন্তরের সময় বহু মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছিল। তখন অনাহারে মৃত্যুর
ব্যাপারটা নিতান্তই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আদর্শবাদী মৃত্যুঞ্জয়ের পক্ষে না খেতে পেয়ে মৃত্যুর দৃশ্য সহ্য করা সহজসাধ্য ছিল না। সেইজন্য মাইনের দিন তার বেতনের সমস্ত টাকাটা সে নিখিলের হাতে তুলে দিয়েছিল
এবং বলেছিল কোনো রিলিফ ফান্ডে সেটা দিয়ে দিতে। অর্থাৎ, অন্যকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে মেরে ফেলার আয়োজন করেছিল সে। নিখিল তাকে এই বাস্তব ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে, এইভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যাবে না।
» প্রতিটি মানুষেরই বেঁচে থাকার জন্য খাবারের প্রয়োজন। দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষগুলোকে বাঁচাতে হলে যেমন খাবারের প্রয়োজন, তেমনি মৃত্যুঞ্জয়ের নিজের বেঁচে থাকার জন্যও খাবার প্রয়োজন। দুর্ভিক্ষের সময় ভুরিভোজন করাটা উচিত নয়, সেটা কাম্যও নয়। কিন্তু নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যেটুকু খাবার দরকার সেটুকু খেতেই হবে। উপায় থাকতেও নিজেকে না খাইয়ে মারা অন্যায়। আদর্শবাদী মৃত্যুঞ্জয়ের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়ে নিখিলের এই বাস্তববোধ চরিত্রটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
প্রশ্নঃ “সেদিন অফিস যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখল – অনাহারে মৃত্যু।”– এই দেখা’র ফলে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল ?
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে !’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুঞ্জয় একজন অফিসকর্মী । সমপদস্থ সহকর্মী নিখিলের থেকে সে বরং একটি বাড়তি দায়িত্বের কারণে পঞ্চাশ টাকা বেশি পায় । বাড়ি থেকে বেরিয়েই সে ট্রামে ওঠে এবং অফিসের দরজার সামনে গিয়ে নামে। ফলে পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের সময় কলকাতার পথেঘাটে দুর্ভাগা মানুষের মৃত্যুর ভয়াবহ দৃশ্যের সম্মুখীন তাকে এতদিন হতে হয়নি। কিন্তু সেদিন মৃত্যুঞ্জয়কে আকস্মিকভাবে অনাহারে মৃত্যুর বীভৎস দৃশ্যের মুখোমুখি হতে হলো।
এই মৃত্যুদৃশ্য তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুঞ্জয়ের নরম, দরদি, মানবিক আদর্শে বিশ্বাসী মনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল। তার সুস্থ শরীর যেন মুহূর্তে অসুস্থ হয়ে পড়ল। তার সংবেদনশীল মনে আঘাত লাগলে শরীরেও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে মৃত্যু দৃশ্যে তার মন আলোড়িত হতেই শারীরিক কষ্ট বোধ হতে লাগল। অফিসে পৌঁছেই নিজের কুঠুরিতে বসে সে যেন অবসাদে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। কিন্তু সেখানেও সে স্বস্তিবোধ করে না বলে উঠে কলঘরে যায়। কলঘরে দরজা বন্ধ করে বাড়ি থেকে খেয়ে আসা যাবতীয় খাবার বমি করে উগরে দেয়। তার পর টেবিলে ফিরে জল খেয়ে দেওয়ালের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ “ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা”– কে, কাকে একথা বলেছে ? ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’ শব্দবন্ধ ব্যবহারের কারণ কী ? (উঃ মাঃ ২০২৩)
অথবা,
“ … সমাজদর্শনের দিক থেকে বিচার করলে দশ জনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড়ো পাপ। ” বক্তা কে ? এই উত্তিতে বক্তার যে মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে তা বিশ্লেষণ করো ।
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে !’ গল্পের অন্যতম চরিত্র নিখিল উদ্ধৃত উক্তিটি করেছে।
নিখিল বাস্তববাদী। তার মতে নিজেকে না খাইয়ে মারা ঠিক নয়। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের প্রতি সহানুভূতিবশত মৃত্যুঞ্জয় খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। নিখিল তখন যুক্তি দেখিয়ে বলে মন্বন্তরের দিনে ভূরিভোজনটা অন্যায় কিন্তু নিজেকে না খাইয়ে রাখা আরও অন্যায়। বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু খেলে দুর্ভিক্ষের দিনে অন্যায় কোথায় ? শত শত নিরন্নের দিকে চেয়ে যদি নিজেকে অভুক্ত রেখে দেওয়া হয় তবে সেটা নিজেরই সঙ্গে প্রবঞ্চনা করা।
এর উত্তরে মৃত্যুঞ্জয় বলে ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা। স্বার্থপরতা চরম হলে তবেই এ কাজ করা যায়। নিজেকে খাইয়ে অন্যকে না খাইয়ে রাখা, মৃত্যুঞ্জয় আপন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নিখিলের এই যুক্তিকে ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলেছে।
প্রশ্নঃ “এভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না।”— এভাবে বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? এভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না কেন ?
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্প থেকে। গল্পটি পঞ্চাশের মন্বস্তরের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে। অনাহারক্লিষ্ট মানুষ খাদ্যের আশায় কলকাতায় ভিড় করেছে। দিনের পর দিন কলকাতায় অনাহারে-অর্ধাহারে কাটিয়ে দেওয়া মানুষগুলির ঠিকানা ফুটপাথ। একদিন ফুটপাথে এমনই এক ব্যক্তির মৃত্যু দেখে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে মৃত্যুঞ্জয়। এটা সে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। সে নিজের খাওয়া কমিয়ে দেয়, বেতনের পুরো টাকাটা কোনো রিলিফ ফান্ডে দিয়ে দেওয়ার জন্য নিখিলকে অনুরোধ করে। এভাবে সে অনাহারক্লিষ্ট মানুষকে বাঁচাতে চায়। মৃত্যুঞ্জয়ের এই স্বার্থত্যাগ, পরোপকারবৃত্তি ও মানবিকতাবোধ আসলে বাস্তববর্জিত। তাই নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে বলে, “এভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না।” কারণ নিজে বাঁচো, অন্যকেও বাঁচাও’ – এটাই জীবনের দাবি, বাস্তব সত্য। কেননা একজন মানুষ তার সর্বস্ব দিয়েও দেশের এত অনাহারক্লিষ্ট মানুষকে বাঁচাতে পারবে না। এজন্য দরকার প্রত্যেকের সাধ্যানুযায়ী সাহায্য ও সহযোগিতা করা। সম্মিলিত প্রয়াসে এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব, অর্থাৎ অভুক্ত, নিরন্ন মানুষকে বাঁচাতে একজন মানুষের সর্বস্ব ত্যাগও যথেষ্ট নয়। কোথাও দীর্ঘ খরা, আবার কোথাও অতিবৃষ্টির জন্য ফসল নষ্ট হয়েছে, ফলে গ্রামবাংলায় দেখা দিয়েছিল দুর্ভিক্ষ। গ্রাম ছেড়ে দলে দলে মানুষ ভিড় করেছিল শহরে-বন্দরে। সরকার ত্রাণের ব্যবস্থা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। বেশিরভাগ মানুষ এটা বুঝতে পেরেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়কে এসব প্রচণ্ড নাড়িয়ে দিয়েছে। সে সর্বস্ব দান করেছে, নিজেও ভুখা মানুষগুলির দলে সামিল হয়েছে। তবুও সে পরিস্থিতি একটুও পাল্টাতে পারেনি। তাই পরিস্থিতি বিচার করেই নিখিল এমন মন্তব্য করেছে। তার এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা —একজনের সর্বস্ব ত্যাগ বা একজনকে খাওয়ালে মনের শাস্তি মেলে, দুর্ভিক্ষপীড়িত বৃহত্তর জনগণের মঙ্গল হয় না। তাছাড়া প্রত্যেক মানুষ তার দায়িত্ব যদি যথাযথ ভাবে পালন করে তবেই দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশের মানুষকে বাঁচানো যাবে।
প্রশ্নঃ ‘সেদিন আপিস যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখল– অনাহারে মৃত্যু।’— ‘অনাহারে মৃত্যু’ দেখা’র ফলে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল ?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ নামক ছোটোগল্পটি ১৩৫০ বঙ্গাব্দের (১৯৪৩-৪৪ খ্রিস্টাব্দ) ভয়াবহ মন্বন্তরের পটভূমিকায় লেখা।
গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় একদিন অফিস যাওয়ার পথে শহরের ফুটপাথে অনাহারক্লিষ্ট একজন মানুষকে মারা যেতে দেখে। দুর্ভিক্ষের কলকাতায় এমন ঘটনায় কোনো অস্বাভাবিকতা ছিল না। এ কিন্তু সৎ, সরল ও আদর্শবাদী মৃত্যুঞ্জয় ঘটনার আকস্মিকতায় সম্পূর্ণ ‘কাবু হয়ে পড়ে’। এর আগে সে অনাহারে মৃত্যুর কথা শুনে বা পড়ে থাকলেও দেখেনি। তাই স্রেফ না খেতে পেয়ে একজনকে মারা যেতে দেখে মৃত্যুঞ্জয় শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অফিসে পৌঁছেই সে কলঘরে গিয়ে বাড়ি থেকে খেয়ে আসা সমস্ত খাবার বমি করে দেয়। কাচের গ্লাস থেকে জল খেয়ে শূন্য দৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকে। তীক্ষ্ণবুদ্ধি নিখিল বুঝে যায়, কোনো এক গভীর সমস্যার সঙ্গে মৃত্যুঞ্জয়ের সংঘর্ষ হয়েছে। সমস্যার নিরর্থক কঠোরতায় সে যেন শার্শিতে আটকে পড়া মৌমাছির মতো মাথা খুঁড়ছে। নিখিলের প্রশ্নের উত্তরে গভীরভাবে অন্যমনস্ক মৃত্যুঞ্জয়ের কণ্ঠস্বরে নিরন্ন মানুষের মৃত্যুর যন্ত্রণাবিদ্ধ আর্তনাদ ভেসে আসে। এর থেকেই আহত, অস্থির ও আত্মযন্ত্রণায় বিধ্বস্ত এক আদর্শবাদী মানুষের অনাহারে মৃত্যু দর্শন ও মানসিক প্রতিক্রিয়ার ছবি আমাদের কাছে ফুটে ওঠে।
প্রশ্নঃ “অন্য সকলের মতো মৃত্যুওয়কে সেও খুব পছন্দ করে।”– এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করার কী কারণ ছিল ?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটিতে মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী ও বন্ধু নিখিলের কথা বলা হয়েছে।
চল্লিশের দশকের মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দর্শন ও সমাজভাবনার আদর্শ প্রতিরূপ মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রটি। মৃত্যুঞ্জয় একজন শান্ত-নিরীহ, সৎ, সরল, বিবেকবান মানুষ। শহুরে মানুষের মতো সে আত্মসুখী নয়। কিন্তু শুধু এই কারণেই নিখিল তাকে পছন্দ করে না। মানবসভ্যতার পচা বা পরিত্যক্ত ঐতিহ্য ও আদর্শবাদকে মৃত্যুঞ্জয় চর্চা করত। এ কারণেও নিখিল তাকে পছন্দ করে। ব্যতিক্রমী চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় দুর্বল মনের ভাবপ্রবণ ও আদর্শবাদী হলে সামান্য খোঁচা দিয়ে তার মনের অন্ধকার দূর করা যেত। কিন্তু সে শিথিল বা নিস্তেজ মনের অধিকারী ছিল না। তার হৃদয়ে শক্তির একটা উৎস ছিল। অব্যয়কে শব্দরূপ দেওয়া সম্ভব নয়, তবু আত্মসচেতন ও অমিত সেই অব্যয়কে যদি শব্দরূপ দেওয়ার চেষ্টা শক্তির অধিকারী করা হয় তাহলে অকারণে শক্তিক্ষয় হবে। ফুটপাথের মৃত্যুর ঘটনাকে কোনোভাবে পরিবর্তন করা যাবে না, তবু মৃত্যুঞ্জয় সেই ঘটনা নিয়ে অকারণে ভেবে চলেছে। এ কারণেই নিখিল মাঝেমধ্যে সম্পূর্ণ কাবু হয়ে যেত মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে। এমনকি তার প্রতি মৃদু হিংসা পোষণ করে ভাবত, হয়তো মৃত্যুঞ্জয় হলেও মন্দ হত না। নিখিলের অন্তর্মনে লালিত এইসব চিন্তাভাবনা থেকে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি তার দরদ ও ভালোবাসাই প্রকাশ পায়।
প্রশ্নঃ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ একটি সার্থক ছোটোগল্প আলোচনা করো।
উত্তরঃ ছোটোগল্পের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটোগল্পের সুনির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে যাওয়া খণ্ড-ক্ষুদ্র ঘটনা ছোটোগল্পের বিষয় হয়ে ওঠে। ছোটোগল্পের ঘটনায় বর্ণনার বাহুল্য থাকবে না। ছোটোগল্প হঠাৎ শুরু হয় এবং ঘটনাপ্রবাহ। পাঠককে দ্রুত পরিণতির দিকে টেনে নিয়ে যায়। আদর্শ ছোটোগল্পে পাঠক প্রতিমুহূর্তে কৌতূহলী থাকে। ছোটোগল্প শুরু হয়ে একটা চূড়ান্ত উৎকর্ষে পৌঁছায় এবং ধীরে ধীরে একটা পরিণতিতে শেষ হয়। আদর্শ ছোটোগল্প শেষ হয়েও শেষ হয় না, পাঠক চিত্তে ভাবনার আলোচনা করে একটা রেশ রেখে যায়।
ছোটোগল্প হিসেবে সার্থকতা বিচারঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পটিতে ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্যগুলি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। গল্পটা হঠাৎ শুরু হয়েছে। ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যু দেখে মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক ও শারীরিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। মৃত্যুঞ্জয় ধীরে ধীরে তার কর্মস্থল এবং শেষে সংসার ত্যাগ করে। নিখিলের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এটাই গল্পের climax অর্থাৎ চূড়ান্ত উৎকর্ষের শিখর। তারপর মৃত্যুঞ্জয় একসময় ফুটপাথবাসীদের সঙ্গে মিশে যায়। এটাই গল্পের পরিণতি। গল্প শেষ হলেও পাঠক চিত্তে প্রশ্ন থেকে যায়। এরপর কী হল মৃত্যুঞ্জয়ের, কী হল তার সংসারের ন-জন সদস্যের। গল্পে শব্দচয়নে লেখক যথেষ্ট সাবধানী হয়েছেন। মৃত্যুঞ্জয়ের মনের পরিবর্তনের স্বরূপ লেখক দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। ছোটো পরিসরে বৃহত্তরকে প্রকাশ করাই ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্য । পাঠ্য ছোটোগল্পটি সব শর্ত পুরণ করেই একটি আদর্শ ছোটোগল্প হয়ে উঠেছে ।
প্রশ্নঃ “নিখিল ভাবছিল বন্ধুকে বুঝিয়ে বলবে, এ ভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না।”– কোন্ প্রসঙ্গে নিখিলের এই ভাবনা ? এই ভাবনার মাধ্যমে নিখিলের চরিত্রের কোন্ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে ?
উত্তরঃ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় কলকাতা শহরের ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যু দেখে গভীর বিবেক যন্ত্রণায় তাড়িত হয়ে নিরন্ন মানুষদের বিলিয়ে দেওয়ার জন্য এক বেলা খাওয়া ছেড়ে মাইনের পুরো টাকাটা রিলিফ ফান্ডে দেওয়ার জন্য নিখিলের হাতে তুলে দেয়। মৃত্যুঞ্জয়ের এই অবাস্তব কৃষ্ণসাধনের কথা শুনে নিখিলের মনে আলোচ্য আবেগপ্রবণ ও আদর্শবাদী আত্মত্যাগের ঘটনায় নিখিল স্তম্ভিত হয়। সেও সাধ্যমত্যে অন্যকে সাহায্য করে। আকালের কারণে খাওয়ায় যথাসম্ভব কাটছাঁট করলেও সে বাস্তব পৃথিবীকে কখনও ভোলে না। সে বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা এবং পারিবারিক দায়দায়িত্বের কথা ভেবে তাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করে। কারণ নিখিল জানে দুর্ভিক্ষের বিপুল চাহিদার কাছে মৃত্যুঞ্জয়ের একক প্রচেষ্টার কোনো মূল্য নেই। তা ছাড়া নিখিলের মতে, সমাজধর্মের দিক থেকে বিচার করলেও দশ জনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা অনেক বড়ো পাপ। তাই শতসহস্র নিরন্ন মানুষের হাহাকারে ভূরিভোজনটা অন্যায় কিন্তু নিজে না খেয়ে মরা অনুচিত। এভাবেই বাস্তববাদী, যুক্তিপ্রিয় মানবিক ও বন্ধুবৎসল এক মানুষের চরিত্রবৈশিষ্ট্য নিখিলের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।
প্রশ্নঃ “দরদের চেয়ে ছোঁয়াচে কিছুই নেই এ জগতে”– কোন্ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ? এমন বলার কারণ কী ?
উত্তরঃ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় কলকাতা শহরের ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যু দেখে মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অফিসের কলঘরে গিয়ে সে বমি করে দেয়। বন্ধু ও সহকর্মী নিখিল এসে মৃত্যুঞ্জয়ের শূন্যদৃষ্টি দেখে টের পায়, সে এক কঠিন সংকটের মধ্যে পড়েছে। দুর্ভিক্ষপীড়িত কলকাতার বুকে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনায় আবেগপ্রবণ ও আদর্শবাদী মৃত্যুঞ্জয় অপরাধবোধে ভুগতে থাকে। নিরন্ন-বুভুক্ষু মানুষের হাহাকারকে অবজ্ঞা করে নিজের ভালো-মন্দ খেয়ে, স্বাভাবিক জীবন কাটানোকে মৃত্যুঞ্জয় ধিক্কার দেয়। তার চোখ ছলছল করে ওঠে। এই দৃশ্য দেখে নিখিলেরও মনটা খারাপ হয়ে যায়। মৃত্যুঞ্জয়ের মনের যন্ত্রণা ও অস্থিরতা তাকেও স্পর্শ করে। সত্য ফুটিয়ে তুলতেই প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটি উদ্ধৃতাংশের প্রসঙ্গ।
নিরীহ, সরল ও আদর্শবাদী মৃত্যুঞ্জয় অনাহারে মৃত্যু দেখে মর্মাহত হয়। তার মনে হতে থাকে সব জেনেশুনেও চার বেলা পেটপুরে খেয়ে নিষ্ক্রিয়, নির্বিকার এই স্বাভাবিক জীবনযাপনের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কী ? দুঃখে অনুশোচনায় মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ ছলছল করে উঠলে বাস্তববাদী ও মানবিক নিখিলেরও একই অনুভূতিতে মনটা খারাপ হয়ে যায়। এ কারণেই উপরিউক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে ।
প্রশ্নঃ ‘শহরের আদি অন্তহীন ফুটপাথ ধরে সে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।’— এই মন্তব্যটির আলোকে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্প অবলম্বনে মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্রবিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে গল্পটি মন্বন্তর এবং মন্বন্তরজনিত পরিস্থিতির নিরিখে এক মধ্যবিত্ত আদর্শবাদী মানুষের রূপান্তরের কাহিনি। গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় এক নিরীহ– নির্বিবাদী সাধারণ চাকুরিজীবী। একদিন অফিস যাওয়ার পথে সে শহরের ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে ফেলে। ঘটনার আকস্মিকতায় মৃত্যুঞ্জয় শারীরিক মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। নৈতিকতা আর আদর্শবোধের প্রতিভূ মৃত্যুঞ্জয় রুমে নিজেকে অপরাধী ভাবতে থাকে, এতদিন চার বেলা পেটপুরে খাওয়ার জন্য গভীরভাবে অনুতপ্ত হয়। ফলে বিলিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এক বেলা খাওয়া ছাড়ে এবং রিলিফ ওয়ার্কে দেওয়ার জন্য মাইনের পুরো টাকাটাই নিখিলের হাতে তুলে দেয়। যদিও ক্রমশ সে টের পায় যথাসর্বস্ব দান করলেও বুভুক্ষু মানুষগুলির কিছুমাত্র ভালো করা যাবে না। এরপর মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়া বন্ধ করে হতভাগ্য ফুটপাথবাসীদের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে তাদেরই একজন হয়ে যায়। এর থেকেই বোঝা যায় অনাহারগ্রস্ত মানুষগুলিকে উদ্বুদ্ধ উজ্জীবিত করে তাদের ভাগ্য বদলাতে না পারলেও, সে সর্বস্ব ত্যাগ করে যেন তাদেরই একজন অর্থাৎ নিপীড়িত মানবতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
প্রশ্নঃ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোট গল্পের নিখিল চরিত্রটি পর্যালোচনা করাে।
উত্তরঃ
নিখিলের চরিত্র: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটগল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র নিখিলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিম্নলিখিতভাবে আলােচনা করা যায়।
সংসারে-উদাসীনঃ মৃত্যুঞ্জয়ের অফিসের সহকর্মী-বন্ধু ছিল নিখিল। প্রখর বুদ্ধিমান, রােগা চেহারার এই যুবকটি ছিল কিছুটা অলস প্রকৃতির। দুই সন্তানের পিতা নিখিলের সংসারে বিশেষ মন ছিল না বলে কেউ কেউ মনে করতেন। বইপত্র পড়ে এবং নিজের ভাবনার জগতে বিচরণ করেই অবসর সময় কাটাত এই অন্তর্মুখী যুবকটি।
বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাবােধঃ অফিসের সমপদস্থ সহকর্মী মৃত্যুঞ্জয়ের মাইনে নিখিলের থেকে সামান্য কিছু বেশি হলেও অন্য সকলের মতাে নিখিল তাকে বেশ পছন্দই করত। হয়তাে তাতে কিছুটা অবজ্ঞামিশ্রিত ভালোবাসা জড়িয়ে থাকত। তবে মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক শক্তির কাছে নিখিল কিছুটা যেন নিস্তেজ ছিল। মাঝেমাঝে তার এই ভেবে আপশােশ হত যে সে যদি নিখিল না হয়ে মৃত্যুঞ্জয় হত, তাহলে মন্দ হত না।
বন্ধুবৎসলঃ নিখিল স্বার্থপর ছিল না। সে প্রতিমাসে তিন জায়গায় অর্থসাহায্য পাঠাত। তা ছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে সে মৃত্যুঞ্জয়কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট থেকেছে। সে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছে এবং মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়া বন্ধ করলে তার ছুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
সৎ এবং বাস্তববাদীঃ নিখিল দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা উপলব্ধি করেলও প্রিয় বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ের মতাে ভেঙে পড়েনি। সে মৃত্যুঞ্জয়ের মতাে বাস্তব জ্ঞানহীন ছিল না। মৃত্যুঞ্জয় মাইনের পুরাে টাকা রান-তহবিলে দান করলে সে তার প্রতিবাদ করেছে এ কথা ভেবে “এ ভাবে দেশের লােককে বাঁচানাে যায় না।” মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারের প্রতি আন্তরিক ভাবনাও তার কথায় প্রতিফলিত হয়েছে। বাস্তববাদী মানুষের মতােই সে বলেছে- “নিজেকে না খাইয়ে মারা বড়াে পাপ”।
ইতিকথাঃ সুতরাং, নিখিল চরিত্রের বিভিন্ন দিকগুলি পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, সে এ গল্পের হৃদয়বান এক বাস্তববাদী চরিত্র।
আরও পড়ুনঃ
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন্ ২০২৪