বাংলা
‘ক’ ভাষা
(নতুন পাঠক্রম)
২০১৮
PART – B
মােট সময় : ৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট
পূর্ণমান : ৮০
পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশ :
১. পরিমিত এবং যথাযথ উত্তরের জন্য বিশেষ মূল্য দেওয়া হবে।
২. বর্ণাশুদ্ধি, অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরিষ্কার হস্তাক্ষরের ক্ষেত্রে নম্বর কেটে নেওয়া হবে।
৩.উপান্তে প্রশ্নের পূর্ণমান সূচিত আছে।
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন্ ২০২৪
বিভাগ – খ (নম্বর – ৩০)
১. সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করাে : ১x১৮=১৮
১.১ ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব—
(ক) নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী
(খ) পঙ্কজ রায়
(গ) মিহির সেন
(ঘ) দিব্যেন্দু বড়ুয়া।
উত্তরঃ (ক) নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী।
১.২ “চারিদিকে পেয়ারা ও নােনার গাছ” —
(ক) গােধূলিমদির মেয়েটির মতাে
(খ) মচকাফুলের পাপড়ির মতাে
(গ) ভােরের রৌদ্রের মতাে
(ঘ) টিয়ার পালকের মতাে
উত্তরঃ (ঘ) টিয়ার পালকের মতাে।
১.৩ বাংলায় প্রথম ধ্রুপদ রচনা করেন-
(ক) রামশঙ্কর ভট্টাচার্য
(খ) বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী
(গ) যদুভট্ট
(ঘ) জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গােস্বামী।
উত্তরঃ (ক) রামশঙ্কর ভট্টাচার্য।
১.৪ রজনীকান্ত ‘রিজিয়া’ নাটকের কোন্ চরিত্রের সংলাপ বলেছেন—
(ক) বক্তিয়ার (খ) মহম্মদ (গ) সাজাহান
(ঘ) মিরজুমলা।
উত্তরঃ (ক) বক্তিয়ার।
অথবা, “তুলসী লাহিড়ির ‘পথিক’ নাটক থেকে বলি (ফিল্মি ঢঙে) “আমি তাে
চললাম…” বক্তা কে ?
(ক) বৌদি (খ) শম্ভু (গ) অমর (ঘ) সার্জেন্ট।
উত্তরঃ (খ) শম্ভু
👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈
১.৫ ‘দারুণ’ শব্দের আদি অর্থ—
(ক) অত্যন্ত (খ) নির্মম, (গ) কাষ্ঠনির্মিত
(ঘ) সুন্দর
উত্তরঃ (গ) কাষ্ঠনির্মিত
১.৬ “সে কুয়াের দিকে এগুলে হঠাৎ একটা প্রশ্ন জাগল ওর মনে।”— প্রশ্নটা কী ?
(ক) গড়িয়ে পড়া পাথর থামানাে সম্ভব কিনা,
(খ) নিরস্ত্র ভারতীয়দের উপর কারা গুলি ,
চালালাে
(গ) মর্দানা কোথায় জল পাবে
(ঘ) মর্দানা কোথা থেকে এসেছে।
উত্তরঃ (ঘ) মর্দানা কোথা থেকে এসেছে।
অথবা,
‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ কবিতাটি অনুবাদ করেছেন—
(ক) অনিন্দ্য সৌরভ
(খ) মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
(গ) শঙ্খ ঘােষ
(ঘ) উৎপলকুমার বসু।
উত্তরঃ (গ) শঙ্খ ঘােষ
১.৭ ‘মেঘমদির মহুয়ার দেশ’ আছে—
(ক) খুব কাছে (খ) অনেক, অনেক দূরে
(গ) নিবিড় অরণ্যে (ঘ) প্রান্তরের শেষে।
উত্তরঃ (খ) অনেক, অনেক দূরে
১.৮ মেজ আর ছােটোর জন্য বারােমাস কোন্ চাল রান্না হয় ?—
(ক) কনকপানি (খ) পদ্মজালি (গ) রামশাল
(ঘ) ঝিঙেশাল।
উত্তরঃ (খ) পদ্মজালি।
১.৯ টুনুর মা নিখিলকে কী অনুরােধ জানিয়েছিল ?
(ক) একবেলার খাবার বিলিয়ে দিতে
(খ) মাইনের অর্থ দান করতে
(গ) আর্থিক সাহায্য করতে
(ঘ) মৃত্যুঞ্জয়ের খেয়াল রাখতে।
উত্তরঃ (ঘ) মৃত্যুঞ্জয়ের খেয়াল রাখতে।
১.১০ যে অব্যয় শব্দের শুরুতে বসে তার অর্থ পরিবর্তন করে তাকে বলা হয়—
(ক) বিভক্তি (খ) উপসর্গ (গ) প্রত্যয়
(ঘ) অনুসর্গ।
উত্তরঃ (খ) উপসর্গ
১.১১ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বিখ্যাত ছবি—
(ক) টুয়েলভ ইংক স্কেচ (খ) হলকর্ষণ
(গ) শ্বেত অভিসারিকা (ঘ) উন্ডস।
উত্তরঃ (গ) শ্বেত অভিসারিকা।
১.১২ ‘হেড পণ্ডিত ইস্কুলে আমাকে প্রমােশন দেননি।”– কারণ—
(ক) সংস্কৃতে বারাে পেয়েছিলাম
(খ) সংস্কৃতে ফেল করেছিলাম
(গ) সংস্কৃতে দশ পেয়েছিলাম
(ঘ) সংস্কৃতে তের পেয়েছিলাম।
উত্তরঃ (ঘ) সংস্কৃতে তের পেয়েছিলাম।
অথবা,
“তাও আর বছর কয়েক পরে মানাবে না আমাকে ভূমিকায় মানাবে না? -কোন চরিত্রের ?
(ক) ঔরঙ্গজীব (খ) দিলদার (গ) সাজাহান (ঘ) মােরাদ।
উত্তরঃ (খ) দিলদার
১.১৩ কাল্পনিক যুদ্ধের মৃত্যুকে নাট্যকার বলেছেন—
(ক) ঈসথেটিক মরা (খ) অস্বাভাবিক মরা
(গ) খুব রােমান্টিক (ঘ) অদ্ভুত মরা।
উত্তরঃ (ক) ঈসথেটিক মরা।
অথবা,
“সেই টাকায় তিনি নিজেই আজকে মদ গিলে পড়ে আছেন।”- তিনি হলেন—
(ক) রজনীকান্ত’চাটুজ্জে (খ) রামব্রীজ
(গ) কালীনাথ সেন (ঘ) রজনীকান্তের বন্ধু
উত্তরঃ (খ) রামব্রীজ
১.১৪ “জানিলাম এ জগৎ”—
(ক) মিথ্যা নয় (খ) নিদ্রা নয় (গ) স্বপ্ন নয়
(ঘ) কঠিন নয়
উত্তরঃ (গ) স্বপ্ন নয়।
১.১৫ চাষাভুষাে মানুষ চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতে প্রতীক্ষা করছিল—
(ক) গরম চায়ের
(খ) রােদঝলমল একটা দিনের
(গ) নীল উর্দিপরা চৌকিদারের
(ঘ) শহরে যাওয়ার বাসের।
উত্তরঃ (খ) রােদঝলমল একটা দিনের
১.১৬ “তাই বলি গাছ”- কবি গাছ বসাতে চান—
(ক) পথের ধারে (খ) বাড়ির ছাদে
(গ) বাগানে (ঘ) টবে।
উত্তরঃ (গ) বাগানে
১.১৭ “এ গল্প গ্রামে সবাই শুনেছে” – গল্পটা হল—
(ক) বাসিনীর মনিব বাড়িতে হেলাঢেলা ভাত
(খ) বাসিনীর মনিব খুব ভালাে লােক
(গ) বাসিনীর মনিৰ সতীশবাবুর আত্মীয়
(ঘ) বাসিনীর মনিব বাড়িতে লােকের মেলা।
উত্তরঃ (ক) বাসিনীর মনিব বাড়িতে হেলাঢেলা ভাত।
১.১৮ “যথেষ্ট রিলিফ ওয়ার্ক” না হওয়ার কারণ—
(ক) টাকার অভাব
(খ) লােকের অভাব
(গ) সদিচ্ছার অভাব
(ঘ) পরিকল্পনার অভাব।
উত্তরঃৎ(খ) লােকের অভাব।
২.অনধিক ২০ টি শব্দে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও : ১x১২=১২
২.১ “সেটাই সবাইকে অবাক করেছিল।”— সবাই অবাক হয়েছিল কেন ?
উত্তরঃ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ রচিত ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে, বুড়ি কীভাবে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে বেঁচেবর্তে হেঁটে আসতে পারল, সেটাই চায়ের দোকানের লোকেদের অবাক করেছিল।
২.২ স্যার উইলিয়াম জোনস সংস্কৃত ভাষার
সঙ্গে যে সব ভাষার মিল খুঁজে পেয়েছিলেন,
তার মধ্যে দুটি ভাষার নাম লেখো।
উত্তরঃ স্যার উইলিয়াম জোন্স সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে গ্রিক, লাতিন এবং ফারসি ভাষার প্রচুর মিল খুঁজে পেয়েছিলেন।
২.৩ “এমনি এলাম-একেবারে এমনি নয়”—
কে কোথায় এসেছিলেন ?
উত্তরঃ বিভাব নাটকে শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলীর বাড়িতে এসেছিল।
অথবা,
“দিলুম, তোকে বকশিশ দিলুম”— কে
কাকে বকশিশ দিলেন ?
উত্তরঃ “নানা রঙের দিন” নাটকে রজনীকান্ত
চট্টোপাধ্যায় রামব্রিজকে বকশিশ দিলেন।
২.৪ “বহুদিন শহরেই আছি”— শহরে থেকে
কী উপলব্ধি করেছেন ?
উত্তরঃ বহুদিন শহরে থেকে কবি উপলব্ধি
করেছেন যে, শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল
সবুজ খায় এবং সবুজের অনটন ঘটে।
২.৫ ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে না
পেলে কবির কী মনে হবে ?
উত্তরঃ ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে না
পারলে ছবি আঁকা, লেখালেখি এবং গান
গাওয়া অর্থহীন বলে কবির মনে হয়।
২.৬ “তারা থাকত কোন বাসায় ?”— কাদের
কথা বল হয়েছে ?
উত্তরঃ যেসব শ্রমিকেরা সোনা ঝকঝকে লিমা বানিয়েছিল, এখানে তাদের কথা বলা
হয়েছে।
অথবা,
“পাঞ্জাসাহেবের লোকজন খবরটা পেয়ে সবাই উত্তেজিত”— খবরটি কী ?
উত্তরঃ ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত ভারতীয়দের নিয়ে একটি ট্রেন পাঞ্জাসাহেবের উপর দিয়ে যাবে, এই খবরটির কথা বলা হয়েছে।
২.৭ মুখের মান্য বাংলায় স্বরধ্বনি ও
ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা কত ?
উত্তরঃ মুখের মান্য বাংলায় স্বরধ্বনির সংখ্যা
সাত এবং ব্যঞ্জন ধ্বনির সংখ্যা তিরিশ।
২.৮ “তাহলে উচ্ছবের বুকে শত হাতির বল
থাকত আজ।”— কী হলে এমন হত ?
উত্তরঃ উচ্ছবের স্ত্রী-সন্তান বেঁচে থাকলে তার
বুকে শত হাতির বল থাকত।
২.৯ “তারপর একদিন, বুঝলে- চাকরিটা
ছেড়ে দিলাম”— বক্তা চাকরি ছেড়ে
দিয়েছিলেন কেন ?
উত্তরঃ বক্তা অর্থাৎ রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়
থিয়েটারে অভিনয় করার জন্য চাকরিটা
ছেড়ে দিয়েছিলেন।
অথবা,
“তমে ঘোড়া নেই করি চঞ্চল খবর
নেই আসিবি”— এই নির্দেশ কে কাকে
দিয়েছিল বলে ‘বিভাব’ নাটকে উল্লেখ করা
হয়েছে ?
উত্তরঃ উড়ে দেশের যাত্রায় রাজা তার দূতকে এই নির্দেশ দিয়েছিল।
২.১০ ঐতিহাসিক শব্দার্থতত্ত্বের আলোচ্য
বিষয় কী ?
উত্তরঃ ঐতিহাসিক শব্দার্থতত্ত্ব একটি ভাষার
বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করে।
২.১১ “নদীর তীব্র শীতল ঢেউয়ে সে নামল” –‘সে’ নদীতে কেন নামল”— কবি জীবনকে ‘দুঃখের তপস্যা মনে করেছেন কেন ?
উত্তরঃ সে অর্থাৎ সুন্দর বাদামি হরিণটি
অনিদ্রাজনিত ক্লান্তি দূর করে নিজের
শরীরটাকে স্রোতের মতো একটা আবেগ
দেওয়ার জন্য নদীর তীক্ষ্ণ শীতল ঢেউয়ে
নেমেছিল।
২. ১২ “আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন”— কবি জীবনকে “দু:খের তপস্যা” বলেছেন কেন ?
উত্তরঃ সারাজীবন ‘দুঃখের তপস্যা’ করেই
‘সত্যের দারুণ মূল্য’ লাভ করা যায়, এজন্য
কবি জীবনকে দুঃখের তপস্যা বলেছেন।
বিভাগ – ‘ক’ (নম্বর – ৫০)
১. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x১=৫
১.১ “দিন দিন কেমন যেন হয়ে যেতে লাগল মৃত্যুঞ্জয়।”— মৃত্যুঞ্জয় কেমন হয়ে যেতে
লাগল ? তার এমন হয়ে যাওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবর্তনঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটগল্প থেকে উদ্ধৃতিটি সংকলিত হয়েছে। অনাহারে মৃত্যু দেখার কিছুদিন পরই অফিসের মাইনের তারিখ আসে। সে-দিন মৃত্যুঞ্জয় তার মাইনের পুরাে টাকাটা নিখিলের মাধ্যমে রিলিফফান্ডে দান করে দেয়। সে-দিনের পর থেকেই মৃত্যুঞ্জয় কেমন যেন হয়ে যেতে থাকে। অফিসে আসতে দেরি করে, কাজে ভুল করে, প্রায়ই চুপচাপ বসে বসে ভাবে, তারপর একসময় বেরিয়ে যায়। বাড়িতেও তাকে বিশেষ একটা পাওয়া যায় না। দিনরাত শহরের ফুটপাথ ধরে সে হেঁটে বেড়ায়। বড়াে গাছের নীচে, ডাস্টবিনের ধারে বা খােলা ফুটপাথে যেসব দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ পড়ে থাকে, তাদের শুধু দাঁড়িয়ে থেকে লক্ষ করে সে। এইসব অনাহারীরা সন্ধ্যা থেকেই শুয়ে থাকে, কিন্তু অনেক রাতে, দোকানপাট বন্ধ যাওয়ার পর হামাগুড়ি দিয়ে সামনের কোনাে রােয়াকে উঠে সেখানে শুয়ে পড়ে। এরাই ভোর চারটের সময় লঙ্গরখানায় গিয়ে খাবারের জন্য লাইন দেয়। সকালের দিকে মৃত্যুঞ্জয় তাই বিভিন্ন পাড়ার লঙ্গরখানায় গিয়ে অন্নপ্রার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করে।
মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবর্তনের কারণঃ মন্বন্তরকালে নিজের চোখে ফুটপাথে ঘটা অনাহার-মৃত্যুর দৃশ্য দেখে ভীষণ রকমের মানসিক আঘাত পেয়েছিল মৃত্যুঞ্জয়। একজন মানুষ না-খেতে পেয়ে মরার সময় কীরকম কষ্ট পায়, খিদের যন্ত্রণা না মৃত্যু যন্ত্রণা কোনটা বেশি কষ্টদায়ক এসব প্রশ্ন তাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। মন্বন্তরকালে মৃত্যুঞ্জয় সপরিবারে চার বেলা খেয়ে চলেছে এবং ত্রাণকার্যেও কখনও এগিয়ে যায়নি বলে নিজেকে ধিক্কার দেয় মৃত্যুঞ্জয়। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের বাঁচাতে তাই সে মাইনের সব টাকাটা ত্রাণ তহবিলে দান করে দেয়। এমনটা করেও তার অপরাধবােধ না কমায় সে অমন হয়ে গিয়েছিল।
১.২ “এ সংসারে সব কিছুই চলে বড়াে পিসিমার নিয়মে।”- বড়াে পিসিমা কে? গল্পে
তার চরিত্রের কী পরিচয় পাওয়া যায় ? ১+৪
উত্তরঃ মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পের অন্যতম একটি চরিত্র হলো বড়ো পিসিমা৷ কলকাতা শহরের বড়ো বাড়িতে, যেখানে গল্পের ঘটনাগুলি ঘটেছে, সেই বাড়ির অবিবাহিতা বয়স্কা মহিলা। তিনি ঐ বাড়িরই মেয়ে। সংসারের দায়িত্ব সামলানোর কারণেই তার বিয়ে হয় নি।
বড়ো পিসিমার চরিত্রের যে যে দিকগুলি লক্ষ করা গেছে তা সূত্রাকারে আলোচিত হলো—
সর্বময় কর্ত্রীঃ বড়ো পিসিমা ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন মহিলা। তাঁর সিদ্ধান্তকে বাড়ির কেউ আপত্তি জানায় না। তিনি চিরকাল সংসারের সমস্ত দায়িত্ব সামলেছেন, বাড়ির দেখভাল তিনিই করে থাকেন। বাড়িতে যে হোমযজ্ঞের আয়োজন হয়েছিল তার নেতৃত্বও তিনি দিচ্ছিলেন। তার অধিকারবোধ বড়ো বাড়িতে প্রবল ছিল।
সেবাপরায়ণাঃ বড়ো পিসিমার মধ্যে একজন সেবাপরায়ণা নারীকে খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি দাদাকে সেবা করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।
কুসংস্কার আচ্ছন্নাঃ সাধারণ বয়স্কা মহিলারদের মতো তিনি কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন। হোম-যজ্ঞের অনুমতি দিয়েছেন এবং যজ্ঞের নিয়মকানুন সঠিক ভাবে পালিত হচ্ছে কিনা তার দিকে নজর রেখেছেন। আবার বুড়ো কর্তা মারা গেলে তান্ত্রিক ও ছোটো বউয়ের বাবাকে দোষ দিয়েছেন।
মানবিক চরিত্রঃ পিসিমাকে আপাতভাবে কঠোর মনে হলেও তার চরিত্রে মানবিকতার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। সংস্কারের বশে হয়তো যজ্ঞের পরে তিনি উচ্ছবকে ভাত দেওয়ার কথা বলেছেন, তবু উচ্ছবের প্রতি তার সহানুভূতি ছিল। বড়ো বউয়ের কথার উত্তরে সেই অনুভূতি ধরা পড়েছে।
এককথায় বড়ো পিসিমা চরিত্রটি বাস্তবসম্মত, এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র।
২. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x১=৫
২.১ ‘শিকার’ কবিতায় ভােরের পরিবেশ যেভাবে চিত্রিত হয়েছে, তা নিজের ভাষায়
লেখাে। সেই পরিবেশ কোন্ ঘটনায় করুণ হয়ে উঠল ? ৩+২
উত্তরঃ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় নানা দৃশ্যপট রচনার মাধ্যমে কবি ভোরের পরিবেশ আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। কবিতায় বর্ণিত ভোরের প্রথম দৃশ্যটি একটি অকৃত্রিম প্রাকৃতিক ভোর।
তখন আকাশের রং ঘাস ফড়িং-এর শরীরের মতো কোমল নীল। চারিদিকে পেয়ারা, নোনা প্রভৃতি গাছগাছালি। ভোরের আলো তখনও সম্পূর্ণ প্রকাশ পায়নি। তাই একটি তারা তখনও আকাশে ছিল। কবির কল্পনায় এই তারাটি কোন এক গ্রাম্য বধূর মতো অথবা সেই মুক্তার মতো যা মিশরের এক মানবী কবির নীল মদের গ্লাসে রেখেছিল। দেশোয়ালিরা শরীরকে উষ্ণ রাখার জন্য আগুন জ্বেলেছিল মোরগ ফুলের মতো লাল সেই আগুন সূর্য ওঠা পর্যন্ত জ্বেলেছিল। সব মিলিয়ে কবি এমন এক ভোরের চিত্ররূপ আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন যেখানে প্রকৃতি ময়ুরের ডানার মতো ঝলমল করছে।
২.২ “আমি তা পারি না।” – কবি কী পারেন না ? “যা পারি কেবল”– কবি কী পারেন ? ৩+২
উত্তরঃ কবির না-পারা বিষয়ঃ কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় তার স্বদেশপ্রেম এবং সমাজচেতনার স্বাক্ষর রেখেছেন। কবির মনে হয়েছে, অস্থির সময়ের সামাজিক অস্থিরতায় বিপন্ন মানুষের দুঃখে দেশমাতা কাঁদছেন। চোখের সামনে কবি দেখেন তার ভাইয়ের মৃতদেহ এবং জঙ্গলে উদ্ধার হওয়া নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ। শাসকের এই অন্যায়-অত্যাচার বর্বরতার হাত থেকে মুক্তি পেতে কবি কি বিধাতার সুবিচারের জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন? এটাই তিনি পারেন না, কারণ, আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধির বিচার চাওয়ার মধ্য দিয়ে যেমন নিয়তিনির্ভরতা প্রকাশ পায়, তেমনই প্রকাশিত হয় আত্মশক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবও। মানুষের অধিকার যখন বিপন্ন হয় তখন বেঁচে থাকার সুস্থ পরিবেশ আর থাকে না। এমনকি রাষ্ট্রশক্তি যখন নিজের নিরঙ্কুশতাকে প্রকাশ করতে তার নখ-দাঁত বিস্তার করে তখন ঈশ্বরের কাছে ন্যয়বিচার চেয়ে বসে থাকা আসলে অনাবশ্যক সময়-ব্যয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
কবির পারার বিষয়ঃ সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ, সহানুভূতিশীল কবি অত্যাচারী শাসকের আনুগত্য বর্জন করতে চান। নিজের মানবিকতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং মূল্যবােধকে জাগিয়ে রাখতে কবিতাকেই হাতিয়ার করেন কবি। প্রতিবাদী কবিতার মাধ্যমেই নিজের বিবেককে জাগিয়ে রাখেন তিনি। এই জাগরণে থাকে মানবতা, আর তার কাঠামােয় থাকে রাজনীতিও। এভাবেই কবি কবিতাকে প্রতিবাদের অস্ত্র করে তােলেন। কবি হিসেবে এটাই পারেন তিনি।
৩. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x১=৫
৩.১ বিভাব কথাটির সাধারণ অর্থ কী ? বিভাব নাটকের নামকরণ কতখানি তাৎপর্যপূর্ণ,আলােচনা । ১+৪
উত্তরঃ
সাধারণ অর্থঃ ‘বিভাব’ শব্দটি ভারতীয় অলঙ্কারশাস্ত্র থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। শব্দটির তাৎপর্য গভীর হলেও এর সাধারণ অর্থ হল -‘বিশেষ ভাব’।
নামকরণের সার্থকতা বিচারঃ সাহিত্যে নামকরণ হলো বিষয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশের চাবিকাঠি। তাই সাহিত্যের নামকরণ করা হয় বিশেষ অভিপ্রায় ব্যক্ত করার জন্য ।আমাদের আলোচ্য নাটকের নামকরণ করা হয়েছে ‘বিভাব’। ‘বিভাব’- শব্দটি অলঙ্কারশাস্ত্র থেকে গৃহীত হলেও নাট্যকার শম্ভু মিত্র দর্শক মনে অনুভূতি জানানোর জন্যই নাটকের নামকরণ করেন বিভাব। এরূপ নামকরণের উদ্দেশ্য ছিল দর্শকের হৃদয়ে আনন্দ জাগানো ও মনোরঞ্জন প্রদান করা। তাই নাট্যকার সহজ প্রকৃতিতে নাটক লিখে দর্শককে নাটকের অংশ করে নিয়েছেন।
হাসির খোরাকঃ নাটকের বেশি অংশ জুড়ে আছে হাসির খোরাক খোঁজর ব্যর্থ চেষ্টা। কিন্তু হাসি এই নাটকের প্রধান বিষয় নয় বরং মহামারী,মন্বন্তর,দেশভাগের যন্ত্রণা, দাঙ্গা প্রভৃতি এ নাটকের প্রেক্ষাপট। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু ভিটেমাটি হারিয়ে যখন অন্ন বস্ত্রের অভাবে জর্জরিত তখন তাদের কোনো বিষয়ই হাসাতে পারে না । অথচ বল্লভ ভাই প্যাটেল এর ওপরে বাঙালি জাতিকে “কাঁদুনে জাত” বিশেষণে ব্যঙ্গ করেন ।তখন তার প্রতিক্রিয়া হয় তীব্র এবং প্রখর ।
হাস্যরসের ব্যর্থ চেষ্টাঃ শম্ভু মিত্র বাঙালির “কাঁদুনে জাত” তকমা ঘোচানোর জন্য নাটকে দর্শককে হাসানোর নানান প্রচেষ্টা করেন। যেমন- নানান অঙ্গভঙ্গি ও প্রেমের দৃশ্য, নায়ক-নায়িকার সংঘর্ষ, ফিল্মি কায়দায় মালতীলতা দোলে গান, নায়িকার কাল্পনিক গাছের ডাল ধরে থাকা প্রভৃতি। কিন্তু এসবের দারাও হাসির উদ্রেক হয়নি। অবশেষে দর্শকদের জন্য রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অবলম্বন করেন তা সত্ত্বেও কাঙ্খিত হাস্যরস সৃষ্টি হয়নি।
নামকরণের তাৎপর্যঃ শেষ পর্যন্ত জীবনকে উপলব্ধি করার জন্য ও হাসির খোরাক জোগাড় করার জন্য সম্ভু ও অমর ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু তারা বাইরের পথে বাস্তবের মুখোমুখি হন ।দেখা যায় ক্ষুধার্ত মানুষ অন্নবস্ত্রের পরিবর্তে গুলি খায়। লুটিয়ে পড়ে প্রতিবাদী ছেলেটি ও মেয়েটি। এরূপ পরিস্থিতিতে কন্ঠে শম্ভু বলেন ” কী অমর এবার হাসি পাচ্ছে ? এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাচ্ছে।” অর্থাৎ বাস্তব দৃশ্য দেখে দর্শকের হাসি হারিয়ে যায়। এরূপ অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে ‘বিভাব’ থেকে। তাই বলা যায় বিভাব নাটকের নামকরণ সার্থক হয়েছে।
৩.২ “আমি রােজ লুকিয়ে লুকিয়ে গ্রিনরুমে ঘুমােই চাটুজ্জেমশাই- কেউ জানে না” –কোন নাটকের অংশ ? বক্তা কে ? তিনি কেন ঘুমান ? ১+১+৩
উত্তরঃ
উৎসঃ প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটি অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের অংশ।
বক্তাঃ উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন থিয়েটারের প্রম্পটার কালীনাথ সেন।
গ্রিনরুমে ঘুমানাের কারণঃ প্রায় ষাট বছর বয়সি বৃদ্ধ কালীনাথ সেন ময়লা পাজামা পড়ে, কালাে চাদর গায়ে দিয়ে, এলােমেলাে চুল নিয়ে গভীর রাতে মঞ্চে প্রবেশ করেছিলেন। নেশাগ্রস্ত রজনীকান্তকে দেখে অবাক হয়ে গেলে কালীনাথ প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটি করেন। এরপরই হতদরিদ্র প্রম্পটার কালীনাথ রজনীকান্তকে গ্রিনরুমে ঘুমােনাের কারণটা বলেন। কালীনাথ নেহাতই হা-ঘরে, তার শােওয়ার কোনাে জায়গা নেই। একারণেই তিনি রাতে থিয়েটার হলের গ্রিনরুমেই ঘুমোন। কালীনাথের এই গােপন আস্তানার কথা কেউ জানে না। স্বাভাবিকভাবেই এ কথা থিয়েটার মালিকের কানে গেলে কালীনাথ ‘একেবারে বেঘােরে মারা’ পড়বেন। বৃদ্ধ কালীনাথ তাই রজনীকান্তকে সনির্বন্ধ অনুরােধ করেন এ কথাটা মালিকের কানে না তুলতে।
৪. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি উত্তর দাও : ৫x১=৫
৪.১ “কে আবার গড়ে তুলল এতবার ?” কী গড়ে তােলার কথা বলা হয়েছে ? এই
প্রশ্নের মাধ্যমে কবি কী বলতে চেয়েছেন ?
উত্তরঃ
বের্টোল্ট ব্রেখটের শঙ্খ ঘােষ অনূদিত কবিতা ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ থেকে সংকলিত উক্তিটিতে প্রাচীন নগরী ব্যাবিলনের বারংবার গড়ে তােলার কথা বলা হয়েছে।
আলােচ্য কবিতাটির এই প্রশ্নের মাধ্যমে কবি মা বলতে চেয়েছেন—
শ্রমজীবী মানুষের প্রতি গুরুত্বঃ পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রমজীবী মানুষের গুরুত্বই সর্বাপেক্ষা বেশি। অথচ যারা ক্ষমতাবান শাসক, তারাই খ্যাতির আলােকে আলােকিত হন।
প্রথাগত ইতিহাসঃ বহুযুগ ধরে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের নিয়েই প্রথাগত ইতিহাস লেখা হয়ে আসছে। আমাদের প্রচলিত ইতিহাসে রাজারাজড়া এবং সাম্রাজ্যবাদী শাসকের জয়কেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর, সমাজের উঁচুতলার বিত্তবান মানুষরাই সেই ইতিহাসকে নিয়ন্ত্রণ করেন।
ইতিহাসের প্রকৃত কারিগরঃ অথচ কবি যথার্থই এই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, ইতিহাসের প্রকৃত কারিগর সাধারণ শ্রমজীবী মানুষেরাই। প্রাচীনতম মেসােপটেমিয়া সভ্যতার নগররাষ্ট্র ব্যাবিলন যেমন নির্মাণ করেছেন তারাই, তেমনই বারংবার ধ্বংস হবার পর তা পুনরায় গড়ে তুলেছেন ইতিহাসে স্থান না-পাওয়া সেই শ্রমজীবী মানুষেরাই। শ্রমজীবী মানুষের ঘাম-রক্ত-শ্রমের ইতিহাস প্রথাগত ইতিহাসের আড়ালেই থেকে যায় এইভাবে। সাধারণ, শ্রমজীবী মানুষের হাতেই যে থাকে ইতিহাসের প্রকৃত চাবিকাঠি—প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটির মাধ্যমে সে কথাই বলতে চেয়েছেন কবি।
৪.২ ‘অলৌকিক’ গল্পে হাত দিয়ে পাথরের চাঁই থামানাের ঘটনাটি লেখক প্রথমে বিশ্বাস করেননি কেন ? পরে কীভাবে সেই ঘটনা তার কাছে বিশ্বাসযােগ্য হয়ে উঠল ? ২+৩
বিশ্বাস না করার কারণঃ কর্তার সিং দুগগালের ‘অলৌকিক’ গল্পে আমরা দেখি যে, দরবেশ বলী কান্ধারীর নিকট তৃষ্ণার জল বারংবার প্রার্থনা করে প্রত্যাখ্যাত হয়ে নানকের শিষ্য মর্দানা যখন তৃষ্ণায় মূৰ্ছিতপ্রায়, তখন নানকের কথায় সামনের পাথরটা তুললে তিনি জলের ঝরনা দেখতে পান। এ দৃশ্য দেখে পাহাড়চূড়াবাসী কান্ধারী ক্রুদ্ধ ও ঈর্ষান্বিত হয়ে পাথরের একটা চাঙড় নীচে গড়িয়ে দিলে অন্যদের ভয়ার্ত চিৎকারের মধ্যে নানক জয় নিরঙ্কার ধ্বনি বলে হাত দিয়ে সেই পাথরটা থামিয়ে দেন। এই গল্প মার কাছে শুনে বালক লেখক প্রথমে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেননি। যুক্তিবাদী বালক-লেখক তা বিশ্বাস করেননি, কারণ একজন মানুষের পক্ষে হাত দিয়ে পাথরের বড়াে চাঙড় থামিয়ে দেওয়া অসম্ভব ছিল।
বিশ্বাসযােগ্য হয়ে ওঠার কারণঃ পরবর্তীকালে পাঞ্জাসাহেবে পৌঁছে লেখক তার মায়ের বান্ধবীর কাছে শুনেছিলেন এক আশ্চর্য ঘটনা। শহরের নিরীহ ভারতীয়দের অনেককে হত্যা করে বাকিদের ট্রেনে বন্দি করে নিয়ে যাচ্ছিল ফিরিঙ্গিরা। খিদে-তেষ্টায় তারা কাতর হলেও ট্রেন থামানাের কোনাে নির্দেশ ছিল না। এই ঘটনায় উত্তেজিত পাঞ্জাসাহেবের লোকেরা যেভাবেই হােক ট্রেন থামানাের সিদ্ধান্ত নেয়। চলন্ত ট্রেনের সামনে নিজেদের জীবন বিপন্ন করেও তারা ট্রেন থামায়। জীবন দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করার এই কাহিনি শােনার পরেই লেখকের মনে হয়েছিল প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে চলন্ত ট্রেনকে থামানাে সম্ভব হলে পাথরের চাই থামানােও মােটেই অসম্ভব নয়। এভাবেই গল্পকথক নানকের গল্পের প্রতি অবিশ্বাস পরিবর্তিত হয়ে বিশ্বাসের জন্ম দেয়।
৫. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x১=৫
৫.১ জেলখানাটা পাহাড়ের তিনতলা সমান একটা হাঁটুর ওপর।”— কোন্ জেলখানা ?
সেখানে সাধারণ কয়েদিদের ওপর কীরকম অত্যাচার করা হত ? ১+৪
উত্তরঃ
জেলখানার পরিচয়ঃ সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনা থেকে সংকলিত এই উদ্ধৃতিটিতে বক্সা জেলখানার কথা বলা হয়েছে।
কয়েদিদের ওপর অত্যাচারের স্বরূপঃ কোনাে কয়েদির বিরুদ্ধে অভিযােগ উঠলে কেসটেবিলে ডাক পড়ত তার। অপরাধ প্রমাণিত হলে ডিগ্রিবন্ধ, মার্কাকাটা, কম্বল-ধােলাই, মাড়ভাত, পায়ে বেড়ি ইত্যাদির কোনাে না কোনাে একটি শাস্তি জুটত তার কপালে। জেলখানার নির্জন, বদ্ধ কুঠুরিতে কয়েদিকে মাসের পর মাস বন্ধ রাখাকে বলা হত ডিগ্রিবন্ধ। দরজার নীচের সরু ফাঁক দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হত তাদের খাবার। জেলের কয়েদিরা একবছর ভালােভাবে বন্দিজীবন কাটালে তাদের শাস্তির মেয়াদ তিনমাস কমে যেত। এটাই হল মার্কা। কর্তাদের মন জোগাতে না পারলেই এই মার্কা প্রাপ্তির স্বাভাবিক অধিকার থেকে কয়েদিদের বঞ্চিত করা হত। বেচাল করলে কোনাে কোনাে কয়েদিকে কম্বলে ঢেকে প্রহার করা হত, আবার কখনও কয়েদির পায়ে পড়িয়ে দেওয়া হত লােহার ভারী বেড়ি। জেলের নিয়মশৃঙ্খলা ভাঙলে বা জেলের কর্তাব্যক্তিদের তােয়াজ না করলে কয়েদিদের এইসব শাস্তি ভােগ করতে হত। এভাবেই বক্সা জেলের কয়েদিরা অত্যাচারিত হত এবং দুর্দশাগ্রস্ত ও দুরবস্থার জীবন কাটাত।
৫.২ “ছিল জোতদার আর তালুকদারের নিরঙ্কুশ শাসন।”- শাসন সম্পর্কে লেখক কী
জানিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখাে।
উত্তরঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার বাংলা’ গ্রন্থের ‘ছাতির বদলে হাতি’ শীর্ষক পরিচ্ছদে ‘জোতদার আর তালুকদারের নিরঙ্কুশ শাসন’ সম্পর্কে জানা যায়।
আলোচ্য পরিচ্ছদে লেখক গারো পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী মানুষদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরেছেন। এই অঞ্চলে জমিদার- মহাজনদের অত্যাচার ছিল অসহনীয়। একদিকে জমিদারের খাজনা দিতে গিয়ে প্রজারা সর্বস্বান্ত হতো, আরেকদিকে, ধূর্ত মহাজন ছাতির বদলে হাতি আদায় করে নিত। এইসব কথা বলতে গিয়ে লেখক এক জায়গায় জোতদার আর তালুকদারের নিরঙ্কুশ শাসন উল্লেখ করেছেন।
জোতদার-তালুকদারের শাসনঃ প্রজারা জমিতে যে ধান চাষ করত সেই ধান তুলতে হতো জমিদারের খামারে । হিসেব অনুযায়ী জমিদারের পাওনাগন্ডা মিটিয়ে দেওয়ার পর অবশিষ্ট ধানটুকু চাষী ঘরে নিয়ে যেতে পারতো। শুধু চলতি বছরের চুক্তির ধান নয়, বিগত বছরের কর্জার ধানও শোধ করতে হতো টাকায় এক মন হিসেবে। সেইসঙ্গে আদায় করা হত আবওয়াব বা অতিরিক্ত কর। লেখক বলেছেন, ‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। চাষিরা বুকের রক্ত জল করে যে ফসল ফলাতো তার প্রায় সবটাই জমিদারের খামারে তুলে শূন্য হাতে ঘরে ফিরত। এমনই ছিল জোতদার আর তালুকদারের নিরঙ্কুশ শাসন।
৬. অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাওঃ ৫x১=৫
৬.১ অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে? দুটি অবিভাজ্য ধ্বনির পরিচয় দাও। ১+২+২
উত্তরঃ প্রত্যেক ভাষায় কিছু ধ্বনির ব্যবহার হয় যেগুলোকে স্বাভাবিক বা কৃত্রিম কোনভাবেই বিভক্ত বা ভাঙ্গা যায় না অথচ একাধিক ধ্বনির সমন্বয়ে গঠিত হয় । এগুলোকেই অবিভাজ্য ধ্বনি বলা হয়।
দুটি অবিভাজ্য ধ্বনির পরিচয়—
» শ্বাসাঘাতঃ উচ্চারনের সময় কোনো
একটি বিশেষ ধ্বনি বা অক্ষরের উপর
জোর দেওয়াকে বলে শ্বাসাঘাত।
সাধারণত বহুদল শব্দের প্রথম দলে শ্বাসাঘাত পড়ে। যেমন, ‘বিদ্যাসাগর’ শব্দের ‘বিদ্’ দলটিতে শ্বাসাঘাত পড়েছে।
» দৈর্ঘ্যঃ কোনো দল উচ্চারণের সময়
স্বরধ্বনির দীর্ঘতাকেই বলে গবেষণায় প্রমানিত যে, একদল শব্দের দৈর্ঘ্য।
দৈর্ঘ্য তুলনামুলকভাবে বেশি। ‘জাম’ আর ‘জামা’ শব্দদুটির মধ্যে ‘জাম’ শব্দে ‘আ’ স্বরধ্বনিটির দৈর্ঘ্য বেশি।
৬.২ শব্দার্থের উপাদানমূলক তত্ত্বটি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ
শব্দার্থের উপাদানমূলক তত্ত্বঃ
কোনো বস্তুকে ক্রমাগত ভাঙতে থাকলে তার মধ্যে যেমন অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ পাওয়া যায়, তেমনি কোনো শব্দকে বিশ্লেষণ করলেও এইরকম অনেক ক্ষুদ্ৰ ক্ষুদ্র উপাদান পাওয়া যায়। শব্দের এই ছোট ছোট উপাদান গুলিকে বলা হয় শব্দার্থ উপাদান। এই ধারণা অনুযায়ী, শব্দ হল কিছু শব্দার্থ উপাদানের সমষ্টি। শব্দার্থ উপাদানগুলির মাধ্যমেই কোনো শব্দ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা সম্ভব এবং শব্দটিকে কোনো বিশেষ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। নিচে একটি উদাহরণের সাহায্যে শব্দার্থের উপাদানামূলক তত্ত্বটি প্রয়োগ করা হল—
পুরুষ, নারী এবং শিশু- এই তিনটি শব্দই মানুষকে বোঝাচ্ছে। অর্থাৎ, এই তিনটি শব্দেই যে শব্দার্থ উপাদানটি রয়েছে সেটি হল- মানবজাতীয়। আবার, পুরুষ এবং নারী শব্দদুটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে বোঝায় কিন্তু শিশু বলতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে বোঝানো হয়। তাছাড়া, পুরুষ বলতে বোঝায় পুরুষজাতীয় মানুষ, নারী বলতে বোঝায় স্ত্রীলোক এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এই শ্রেণিকরণ প্রযোজ্য নয়।
এইভাবে দেখা যাচ্ছে যে, ‘পুরুষ’, ‘নারী’ এবং ‘শিশু’ এই তিনটি শব্দ তিনরকম শব্দার্থ উপাদানের সমষ্টি। সেগুলি হল- প্রজাতিগত (মানব), বয়সগত (প্রাপ্তবয়স্ক অথবা অপ্রাপ্তবয়স্ক) এবং লিঙ্গগত (স্ত্রী, পুরুষ ইত্যাদি)।
৭.অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে দুটি প্রশ্নের উত্তর দাওঃ
৭.১ বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান আলােচনা করাে।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমকালীন আর একজন বাঙ্গালি সঙ্গীত বিশেষজ্ঞের নাম হল রজনীকান্ত সেন (১৮৬৫-১৯১০)। বয়সে তিনি রবীন্দ্রনাথের চেয়ে ছোট ছিলেন। তবুও তাঁর স্বল্প আয়ুষ্কালে তিনি অসংখ্য গান রচনা করেছিলেন। ‘বাণী’ ও ‘কল্যাণী’ গ্রন্থদুটিতে রজনীকান্তের গানগুলি সংকলিত হয়ে আছে। তাঁর গানগুলিকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায় – স্বদেশ সঙ্গীত- ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই’, ‘নমো নমো নমো জননী বঙ্গ’ প্রভৃতি দেশাত্মবোধক গান একসময় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। যদিও সংখ্যায় কম তবুও তার স্বদেশ সঙ্গীত গুলি যথেষ্ট উৎকৃষ্ট মানের ছিল।
হাসির গান- রজনীকান্ত বেশকিছু হাসির গান লিখেছিলেন – ‘যদি কুমড়োর মতো চালে ধরে রতো/ পান্তুয়া শত শত’, প্রভৃতি গান এই শ্রেণীতে পড়ে।
ভক্তিগীতি- রজনীকান্ত মুলত তার ভক্তিগীতির জন্য বাঙালির হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার লেখা ভক্তিগীতিগুলি বাণী, সুর, ভাব, কাব্যমাধুর্য, নিজস্বতা এবং সহজ চলনের জন্য বাংলা গানের ভুবনে বিশিষ্ট হয়ে আছে। এই পর্যায়ের একটি বিশিষ্ট গান হল—’তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ ।
বাঙ্গালী সমাজে রজনীকান্ত সেন ‘কান্ত কবি’ এবং তাঁর গান ‘কান্তগীতি’ নামে প্রসিদ্ধ। অনুপ ঘোষাল, পান্না লাল ভট্টাচার্য, হেমন্ত ভট্টাচার্য, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ স্বনামধন্য শিল্পীরা কান্তগীতি গেয়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।
৭.২ চিত্রকলা-চর্চায় শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর স্থান নিরূপণ করাে।
উত্তরঃ বিহারের মুঙ্গের জেলায় বসবাসকারী খড়গপুরের এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নন্দলাল বসু। তিনি ছেলেবেলায় কুমােরদের দেখাদেখি মূর্তি গড়তেন। তাঁর পিসতুতাে ভাই অতুল মিত্র ছিলেন আর্ট কলেজের ছাত্র। তার পরামর্শে নিজের আঁকা ছবি নিয়ে নন্দলাল আর্ট কলেজে অবনীন্দ্রনাথ ও হ্যাভেল সাহেবের সঙ্গে দেখা করেন ও আর্ট স্কুলে ছাত্র হিসেবে গৃহীত হন। ১৯০৬-১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আঁকা বিখ্যাত ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে- সিদ্ধিদাতা গণেশ’, ‘শােকার্ত সিদ্ধার্থ, ‘সতী, ‘শিবসতী, ‘জগাই- মাধাই’, ‘কর্ণ’, ‘গরুড়স্তম্ভতলে শ্রীচৈতন্য’, নটরাজের তাণ্ডব’, ‘ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা’, ‘জতুগৃহদাহ’, ‘অহল্যার শাপমুক্তি’, ‘পার্থসারথি’, ‘শিব মুখমণ্ডল’, শিবের বিষপান’, ‘যম ও নচিকেতা’, ‘মহাপ্রস্থানের পথে যুধিষ্ঠির’, ‘উমার ব্যথা’, ‘উমার তপস্যা’, ‘প্রত্যাবর্তন’ প্রভৃতি। পৌরাণিক বিষয়কে ভিত্তি করে আঁকা তার এই ছবিগুলিতে রুপনির্মাণের বিশেষ ভঙ্গি ধরা পড়েছে।
১৯১১-য় আর্ট স্কুলের পাঠ শেষ করে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে জোড়াসাঁকোয় শিল্পচর্চা নন্দলাল বসুর এক অনন্য অভিজ্ঞতা। ভগিনী নিবেদিতার বইয়ের চিত্রসজ্জা রচনা করা ছাড়াও তিনি রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথেরও বহু বইয়ের অলংকরণ করেন। লেডি হেরিংহ্যামের সহকারী হিসেবে তিনি অজন্তা গুহাচিত্রের নকল করার কাজ করেন (১৯০৯)। তাঁর স্মরণীয় কীর্তির মধ্যে রয়েছে গােয়ালিয়রের বাগ গুহার ভিত্তিচিত্রের প্রতিলিপিগ্রহণ, জগদীশচন্দ্রের আহ্বানে ‘বসু বিজ্ঞানমন্দির’ অলংকরণ, জোড়াসাঁকোর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত বিচিত্র ক্লাবে শিল্প শিক্ষকতা, মহাত্মা গান্ধির আহবানে লখনউ, ফৈজপুর ও হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশন উপলক্ষ্যে ভারতশিল্প প্রদর্শনী সংগঠন, ‘হরিপুরাপট’ অঙ্কন ইত্যাদি। ‘শিল্পচর্চা ও রূপাবলী’ তার লেখা শিল্পসংক্রান্ত গ্রন্থ। তিনি রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনিকে কালীঘাটের রঙিন পটের মতাে করে রূপদান করেন। ভারতীয় সংবিধান তারই আঁকা চিত্রে ও নির্দেশে অলংকৃত হয়।
৭.৩ বাঙালির বিজ্ঞান ভাবনা ও বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অবদান আলােচনা করাে।
উত্তরঃ বাঙালির বিজ্ঞান ভাবনায় ও বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সমাজসংস্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর। চিকিৎসাশিক্ষার ক্ষেত্রে যেমন তিনি প্রচুর অর্থ অনুদান দেন, তেমনি শবব্যবচ্ছেদ প্রবর্তনেও তিনি উদ্যোগী ভূমিকা নেন। দ্বারকানাথের পুত্র দেবেন্দ্রনাথের আগ্রহ ছিল জ্যোতির্বিদ্যায়। বিশ্বপরিচয় গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ পিতার এই বিশেষ দিকটিতে আলােকপাত করেছেন। স্বর্ণকুমারী দেবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহও দেবেন্দ্রনাথের উৎসাহেই।
ভূত্ত্ব, নৃতত্ব, জীবতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়েও দেবেন্দ্রনাথের উৎসাহ ছিল। দেবেন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠপুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথ গণিতে এক বিস্ময়কর প্রতিভা ছিলেন। ইউক্লিডের জ্যামিতি ছিল তার প্রিয় অধ্যয়নের বিষয়। মহেন্দ্রলাল সরকারের ইন্ডিয়ান সায়েন্স অ্যাসােসিয়েশন গঠনে দ্বিজেন্দ্রনাথ বিশেষভাবে সাহায্য করেন। হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর মেডিকেল কলেজে শিক্ষা নিয়েছিলেন। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের স্থূলমর্ম তার লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ফ্রেনলজি বা শিরােমিতিবিদ্যার চর্চা করতেন।
বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথও উল্লেখযােগ্য ভূমিকা নেন। বিশ্বপরিচয় গ্রন্থে ছড়িয়ে আছে তার বিজ্ঞান নির্ভর রচনাসমূহ। গ্রহগণ জীবের আবাস-ভূমি, সামুদ্রিক জীব কীটাণু, বৈজ্ঞানিক সংবাদ, ইচ্ছামৃত্যু, মাকড়সা সমাজে স্ত্রীজাতির গৌরব ইত্যাদি রবীন্দ্রনাথের উল্লেখযােগ্য বিজ্ঞান-বিষয়ক রচনা। অনেকগুলি সমালােচনামূলক বৈজ্ঞানিক নিবন্ধও রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য সুবােধচন্দ্র মহলানবিশের জীবতত্ত্ব-এর সমালােচনা, জগদানন্দ রায়ের বায়ুনভােবিদ্যা-র সমালােচনা, উপেন্দ্রকিশাের রায়চৌধুরীর সৃষ্টির বিশালতত্ত্ব-এর সমালােচনা।
৭.৪ আমাদের মহাকাব্যে ‘কুস্তি’ কী নামে পরিচিত ছিল ? সংক্ষেপে বাঙালির কুস্তি চর্চার পরিচয় দাও।
উত্তরঃ আমাদের মহাকাব্যে কুস্তি মল্লযুদ্ধ নামে পরিচিত ছিল।
আধুনিক ভারতে কুস্তি খেলার প্রচলন এবং প্রসারে দেশীয় রাজন্যবর্গ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারতের মধ্যে প্রথম কুস্তি চর্চা শুরু হয় বরোদাতে। বরোদার মহারাজ খাণ্ডেরাম কুস্তির উন্নতির জন্য বিশেষভাবে যত্নবান ছিলেন। বাংলাতেও কুস্তির পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ন, মুর্শিদাবাদের নবাব সহ বেশ কয়েকজন বিত্তবান রাজা এবং জমিদার। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়নেরর উদ্যোগে ১৮৯২-৯৪ সালের মধ্যে ভারতে প্রথম বিশ্ব কুস্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং প্রতিযোগিতায় জিতে করিম বক্স বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কুস্তিগিরের মর্যাদা লাভ করেছিলেন।
এক সময় কুস্তি ছিল বাংলাদেশের বাবু সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ। কুস্তি চর্চার জন্য কলকাতাসহ বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য আখড়া গড়ে উঠেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এইসব আখড়ায় গিয়ে শরীর চর্চা করতেন।
বাঙালির কুস্তিচর্চার ইতিহাসে যাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তারা হলেন- শ্যামাকান্ত নন্দী, যতীন্দ্রচরণ গুহ, ফণীন্দ্রকৃষ্ণ গুপ্ত প্রমূখ। এঁদের মধ্যে যতীন্দ্রচরণ গুহ বা গোবর গুহ ভারতীয় কুস্তিকে আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করেছিলেন। তিনি প্রথম এশীয় হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত বিশ্ব লাইট হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন। গোবর গুহ ভারতীয় কুস্তিরীতিতে অনেক নতুন প্যাচ উদ্ভাবন করেছিলেন। সেগুলি হল ধোঁকা, গাধানেট, ঢাক, পাট কুল্লা ইত্যাদি।
৮. নিম্নলিখিত যে-কোনাে বিষয় নির্বাচন করে, নির্দেশ অনুসারে কমবেশি ৪০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রবন্ধ রচনা করাে : ১০×১=১০
৮.১ নিম্নে প্রদত্ত মানস-মানচিত্র অবলম্বনে একটি প্রবন্ধ রচনা করাে : ৫
৮.২ প্রদত্ত অনুচ্ছেদটিকে প্রস্তাবনা বা ভূমিকাস্বরূপ গ্রহণ করে বিষয়ের গভীরে
প্রবেশ করে, পরিণতি দানের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা করাে :
পল্লিসাহিত্য ও রূপকথা, পল্লিগাথা, ছড়া প্রভৃতি দেশের আলাে জল বাতাসের মতাে সকলেরই সাধারণ সম্পত্তি। তাতে হিন্দু মুসলমান কোনাে ভেদ নাই যেমন মাতৃস্তন্যে সন্তান মাত্রেরই অধিকার, সেইরূপ
এই পল্লিসাহিত্যে পল্লি জননীর হিন্দু মুসলমান সকল সন্তানেরই সমান অধিকার। এক বিরাট পল্লিসাহিত্য বাংলায় ছিল। তার কঙ্কাল বিশেষ এখনও কিছু আছে, সময়ের ও রুচির পরিবর্তনে সে অনাদৃত হয়ে ধ্বংসের পথে দাঁড়িয়েছে। নেহাত সেকেলে পাড়াগেঁয়ে লােক ছাড়া সেগুলি
আর কেউ আদর করে না।
৮.৩ প্রতিপক্ষের যুক্তির সারতা প্রমাণ করে স্বপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ
রচনা করাে :
বিতর্কের বিষয় : ‘দূরদর্শন মানবজীবনকে সমস্যা জর্জরিত করে তুলেছে।
মতের পক্ষে : দূরদর্শনের অপকারিতা নিয়ে আজ অনেকেই সােচ্চার। এটি মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে তুলেছে। নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আকর্ষণে বহু মানুষ এখন অনেকটা সময় দূরদর্শনের সামনে বসে কাটায়। ফলে তাদের নিত্যকর্মে বিঘ্ন ঘটে। এর আকর্ষণে শিক্ষার্থী ভুলে যায় পঠন
পাঠনের কথা। মানুষ ভুলতে বসেছে সামাজিক আদান প্রদানের প্রয়ােজনীয়তা। এর কোনাে কোনাে অনুষ্ঠানে থাকে নৈতিক অধঃপতনের বীজ। বর্তমান সমাজে কিশাের অপরাধীর সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য অনেকেই দূরদর্শনকে দায়ী মনে করেন। তাই বলা যায় দূরদর্শন মানব জীবনে যতই আনন্দের আয়ােজন করে থাকে, তার কুপ্রভাব কোনাে অংশে কম নয়।
৮.৪ প্রদত্ত সূত্র ও তথ্য অবলম্বনে একটি প্রবন্ধ রচনা করা।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
জন্ম : ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৮, দিনাজপুর। পিতা : প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায়
শিক্ষা : দিনাজপুর জেলা স্কুল, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ, বরিশাল ব্রজমােহন কলেজ থেকে বি.এ. পাশ (১৯৩৮), কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. (বাংলা) এবং ডি.ফিল. (১৯৬০)।
কর্মজীবন : জলপাইগুড়ি কলেজ, সিটি কলেজ (কলকাতা) এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা।
সাহিত্য কীর্তি : ‘উপনিবেশ’, ‘শিলালিপি’, ‘পদসঞ্চার’, ‘লালমাটি’, ‘চারমূর্তি’,‘পটলডাঙার টেনিদা’, ‘সুনন্দর জার্নাল’ প্রভৃতি।
মৃত্যু : নভেম্বর, ১৯৭০, কলকাতা।
H.S BENGALI QUESTION PAPER | ||||
---|---|---|---|---|
2015 | 2016 | 2017 | 2018 | 2019 |
2020 | NoEx | 2022 | 2023 | 2024 |
Pingback: WB HS Previous Years Question Paper | উচ্চমাধ্যমিক বিগত বছরের প্রশ্নপত্র [WBCHSE] -
Pingback: H.S Bengali Question Paper 2020 with answer / বাংলা প্রশ্নপত্র উচ্চ মাধ্যমিক ২০২০ উত্তর সহ । -
Pingback: H.S Bengali Question Paper 2016 / উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নপত্র ২০১৬ / WBCHSE Questions Paper With Answe H.S -
Pingback: WBCHSE HS Bengali Solved Question Paper 2023 -
This is very useful for every examiners
History
দেওয়া হয়েছে।