2015
HISTORY
(New Syllabus)
Total Time : 3 hours 15 Minutes
Total Marks : 80
1. পরিমিত এবং যথাযথ উত্তরের জন্য বিশেষ মূল্য দেওয়া হবে।
Special credit will be given for answers which are brief and to the point.
2. বর্ণাশুদ্ধি, অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরিষ্কার হস্তাক্ষরের ক্ষেত্রে নম্বর কেটে নেওয়া হবে।
Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting.
3. উপান্তে প্রশ্নের পূর্ণমান সূচিত আছে।
Figures in the margin indicate full marks for the questions.
PART – A (Marks – 40)
1. যে-কোনো পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দাও (প্রতিটি বিভাগ থেকে ন্যূনতম দুটি প্রশ্নের উত্তর আবশ্যক) : 8×5=40
খণ্ড-ক
(i) মিথ (উপকথা) ও লিজেন্ড (পুরাকাহিনি) বলতে কী বোঝো ? অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে এরা কীভাবে রূপদান করে ? 5+3
👉HS History MCQ Online Mock Test👈
উত্তরঃ মিথ (পৌরাণিক বা কল্পকাহিনি) :
মিথ বা পৌরাণিক কাহিনি হল প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন কাহিনি বা ঘটনার বিবরণ, যেগুলির ভিত্তি হল মানব সভ্যতার উদ্ভবের পূর্বে ঐশ্বরিক জগতে সংঘটিত হওয়া নানান কাল্পনিক ঘটনা। এটি সাহিত্যের সর্বপ্রথম রূপ, যা এককথায় হল মৌখিক ইতিহাস।
১. বিষয়বস্তুঃ পৌরাণিক কাহিনির বিষয়বস্তুগুলির মধ্যে থাকে—
(ক) নৈসর্গিক ঘটনাবলি, যেমন—ঋতু পর্যায়, সূর্য-চন্দ্রকে নিয়ে কাল্পনিক গল্পকথা ইত্যাদি।
(খ) দেবদেবী সংক্রান্ত বিষয়, যেমন—দেবী দুর্গার কাহিনি, বিভিন্ন দেবতার কাহিনি, দেবতার সাথে মানুষের সম্পর্ক বিষয়ক কাহিনি ইত্যাদি।
২. বৈশিষ্ট্যঃ মিথ বা পৌরাণিক কাহিনির বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
(ক) এগুলি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত।
(খ) এই সকল কল্পকাহিনি প্রাগৈতিহাসিক যুগে মৌখিকভাবে রচিত।
(গ) মিথ হল অলৌকিক বা অতিন্দ্রীয় জগতের বিবরণ।
(ঘ) কোনাে সমাজ ও সম্প্রদায়ের মূল ভিত্তি হল এইসব পৌরাণিক কাহিনি।
৩. উদাহরণঃ পৃথিবীতে বহু পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি হল— (ক) হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি, যেমন— দেবী দুর্গার কাহিনি।
(খ) বাইবেলের পৌরাণিক কাহিনি, যেমন— নােয়া-এর কাহিনি।
(গ) গ্রিসের পৌরাণিক কাহিনি, যেমন—দেবরাজ জিউসের কাহিনি।
(ঘ) রােমের পৌরাণিক কাহিনি, যেমন—রােমুলাসের জীবনকাহিনি ইত্যাদি।
লেজেন্ড (কিংবদন্তি) :
কিংবদন্তি হল অতীতের কোনাে চরিত্রের এমন সব ঘটনার বিবরণ, যা অতীতে একসময় ঘটেছিল এবং সে-সব চরিত্র জীবন্ত ছিল বলে লােকসমাজ বিশ্বাসও করে থাকে।
১. বিষয়বস্তুঃ কিংবদন্তির বিষয়বস্তু হল এখানে অতীতের কোনাে চরিত্রকে অতিমানবরূপে তুলে ধরা হয়। এখানে বাস্তব অপেক্ষা কল্পনার আধিক্য বেশি থাকে।
২. বৈশিষ্ট্যঃ লেজেন্ড বা কিংবদন্তির বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
(ক) কিংবদন্তিগুলিতে বিস্ময় ও কল্পনার আধিক্য থাকে।
(খ) এর অন্যতম একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল অতিরঞ্জন করার প্রবণতা।
(গ) প্রতিটি কিংবদন্তিতে একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র থাকে এবং সেই চরিত্র একসময় জীবন্ত ছিল বলে মনে করা হয়।
(ঘ) কিংবদন্তিতে ভিত্তিহীন ঘটনার অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়।
৩. উদাহরণ— পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অসংখ্য কিংবদন্তির উদাহরণ পাওয়া যায়। যেমন-ভারতের রামচন্দ্র, গােপাল ভাড়, শ্রীকৃষ্ণ, গ্রিসের হারকিউলিস, প্রমিথিউস, ইংল্যান্ডের রবিন হুড প্রমুখ।
অতীত বিষয়ের রূপদানে মিথ ও লিজেন্ডের ভূমিকাঃ
প্রচলিত মিথ ও লিজেন্ডগুলি যে যে ভাবে মানুষের অতীত কৌতূহলকে সমৃদ্ধ করে, তা নিম্নরূপ—
(ক) ঐতিহাসিক উপাদানের সূত্রঃ মিথ
ও লিজেন্ডগুলি অনেকাংশেই কল্পনানির্ভর হলেও এগুলি থেকে ঐতিহাসিক উপাদানের সূত্র পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রিসের মিথের সূত্র ধরেই বর্তমান কালের ট্রয় নগরী ও ট্রয়ের যুদ্ধ ক্ষেত্রের অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব
হয়েছে।
আবার, ভারতে প্রচলিত মৌর্য সম্রাট অশোক, রানি দুর্গাবতী, মীরাবাই, ফ্রান্সের লুই নেপোলিয়ান সম্পর্কে প্রচলিত লিজেন্ডগুলি তাঁদেরকে যেমন জাতীয় বীরের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে, অন্যদিকে তেমনি এঁদের রাজত্বকাল সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রদানও করে ।
(খ) সময়কাল ও বংশতালিকা নিৰ্মাণঃ অতীতকালের বিভিন্ন রাজবংশের বংশতালিকা বহু মিথ বা লিজেন্ডে পাওয়া যায়। এ ছাড়া উপকথা ও পৌরাণিক কাহিনি থেকে বিভিন্ন প্রাচীন রাজবংশের নাম ও শাসনকাল সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
(গ) সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভঃ উপকথা ও পুরাকাহিনিগুলি কল্পনানির্ভর হলেও যে প্রেক্ষাপটে কাহিনিগুলি রচিত হয়েছে তার আলোচনা থেকে সমকালীন সমাজ, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায় ৷
উপসংহারঃ বলা যায়, মিথ ও লিজেন্ডগুলি কল্পকাহিনি নির্ভর হলেও প্রাচীন যুগের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। অতীতকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ও সে বিষয়ে কোনো চিন্তা করার ক্ষেত্রেও এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
👉আরও দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈
(ii) উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো। 8
উত্তরঃ আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল নয়া উপনিবেশবাদ ও নয়া সাম্রাজ্যবাদ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন উক্ত দুটি বিষয় সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসনের ব্যাখ্যা—
ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তার ‘সাম্রাজ্যবাদ : একটি সমীক্ষা’ (‘Imperialism : A Study’) নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল一
১. অর্থনৈতিক মুনাফা লাভঃ হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনাে মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে মূলধনের পাহাড় সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়ােগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে।
২. পুঁজিপতিদের চাপঃ হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়ােগ করার জন্য পুঁজিপতিরা নিজ দেশের সরকারকে উপনিবেশ দখলে বাধ্য করে। অর্থাৎ হবসনের মতে, বাড়তি মূলধনের চাপ-ই সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশ দখলের মূল কারণ।
৩. অর্থনৈতিক শােষণঃ হবসন দেখিয়েছেন যে, অধিক মুনাফা ও সম্পদ অর্জনের জন্য ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র উপনিবেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং উপনিবেশের বাজারে নিজেদের শিল্পজাত পণ্য বিক্রয় করতে থাকে। এইভাবে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র কর্তৃক উপনিবেশগুলি শােষিত হয় এবং পরিণামে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও ফুলে ফেঁপে ওঠে।
৪. ঔপনিবেশিকতাবাদের অবসানের উপায়ঃ হবসনের মতে, এই ব্যবস্থার প্রতিকার করতে হলে পুঁজিপতিদের বাড়তি মূলধন দরিদ্র শ্রেণির মানুষগুলাের মধ্যে বিতরণ এবং বিভিন্ন উন্নয়নকার্যে তা ব্যবহার করতে হবে। তার মতে, যদি লােকের জীবনযাত্রার মান বাড়ে, তবে তারা কলকারখানায় তৈরি বাড়তি জিনিস কিনে উদ্বৃত্ত মালকে ব্যবহার করতে পারবে। ফলে উদ্বৃত্ত মালের বিক্রির জন্য উপনিবেশ দখলের দরকার হবে না।
উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে লেনিনের ব্যাখ্যা—
রাশিয়ার বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার ‘সাম্রাজ্যবাদ : পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর’ (‘Imperialism, the Highest Stage of Capitalism’) নামক গ্রন্থে (১৯১৬ খ্রীঃ)। এ সম্পর্কে তার প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল一
১. পুঁজির উদ্ভব এবং তা বিনিয়ােগঃ ইউরোপের দেশগুলিতে শিল্পের অগ্রগতি ঘটার ফলে পুঁজিপতিদের হাতে বিপুল পরিমাণ পুঁজি জমা হয়। এবার তারা আরও বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য সেই পুঁজি পুনরায় বিনিয়ােগ করতে উদ্যত হয় এবং এজন্য তারা বেছে নেয় উপনিবেশগুলিকে। তারা উপনিবেশ থেকে সংগ্রহ করা কাঁচামাল নিজের দেশে না নিয়ে গিয়ে উপনিবেশেই পুঁজি বিনিয়ােগ করতে চায়। তাই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পুঁজিবাদী শ্রেণির স্বার্থে উপনিবেশ দখল করে এবং পুঁজিবাদীরা সেখানেই পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা চালায়।
২. বাজার দখল ও কাঁচামাল সংগ্রহঃ অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের শিল্প মালিকরা নিজ দেশের প্রয়ােজনের তুলনায় অনেক বেশি পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করে। প্রয়ােজনের অতিরিক্ত এই পণ্য উৎপাদনের জন্য সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহ এবং সেই পণ্যকে বিক্রি করার জন্য প্রয়ােজন ছিল উপনিবেশের। লেনিনের মতে, এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি উপনিবেশ দখলের চেষ্টা চালায়।
৩. প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সাম্রাজ্যবাদঃ লেনিন বলেছেন, পুঁজিবাদের জঠরে সাম্রাজ্যবাদের জন্ম। উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে যায়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা জন্ম দেয় যুদ্ধের। অর্থাৎ পুঁজিবাদী অর্থনীতিই হল যুদ্ধের জন্মদাতা, যার সূত্রপাত হয় উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে।
৪. অনুগত অভিজাত শ্রমিক শ্রেণির প্রতিষ্ঠাঃ পুঁজিবাদী অর্থনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, মালিক শ্রেণির কর্তৃক শ্রমিক শ্রেণির শােষণ। কিন্তু লেনিনের মতে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিকে উপনিবেশে পরিণত করে সেখানকার নতুন শ্রমিক শ্রেণির ওপর শােষণ চালালেও নিজ দেশের শ্রমিকদের উৎকোচ দিয়ে বশীভূত করেছিল। কারণ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির লক্ষ্য ছিল নিজ দেশের এই অনুগত অভিজাত শ্রমিক শ্রেণিকে শ্রমিক বিপ্লব থেকে বিরত রাখা।
মূল্যায়ণঃ উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন ও লেনিনের তত্ত্ব সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয়। বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই তত্ত্বের ভ্রান্তি ধরা পড়ে। তবে এই তত্ত্বের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। তাই ডেভিড থমসনকে সমর্থন করে বলা যায় যে, সাগরপারে নিরাপদ বিনিয়ােগের ক্ষেত্র সন্ধানের আগ্রহই ইউরােপীয় দেশগুলিকে উপনিবেশ দখলে বিশেষ উদ্যোগী করে তুলেছিল।
(iii) ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ? এই বাণিজ্যের অবসান কেন হয় ? 4+4
উত্তরঃ
• ক্যান্টন বাণিজ্য—
প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত ক্যান্টন ছিল চিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। নানকিং-এর সন্ধির (১৮৪২ খ্রি.) আগে পর্যন্ত গােটা চিন বিদেশিদের কাছে রুদ্ধ থাকলেও একমাত্র ক্যান্টন ছিল বিদেশিদের কাছে উন্মুক্ত বন্দর। চিনা আদালত ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে এক নির্দেশনামার দ্বারা একমাত্র ক্যান্টন বন্দরকেই বিদেশি বাণিজ্যের জন্য খুলে দেয়। এভাবে ক্যান্টন বন্দরকে কেন্দ্র করে চিনে বিদেশিদের এক বন্দরকেন্দ্রিক যে বাণিজ্য প্রথার সূচনা হয় তা ‘ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা’ নামে পরিচিত। এই প্রথা ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে নানকিং-এর সন্ধি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে পর্যন্ত চলে। ক্যান্টনের বাণিজ্যে প্রথম পর্বে পাের্তুগিজরা এবং পরে ব্রিটেনসহ অন্যান্য ইউরােপীয় জাতিগুলি নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে।
• ক্যান্টন বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য—
১. রুদ্ধদ্বার নীতিঃ ক্যান্টন বাণিজ্যে অংশগ্রহণকারী বিদেশি বণিকদের চিনা ভাষা ও আদবকায়দা শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। তারা ক্যান্টনে চিনা ফৌজদারি ও বাণিজ্যিক আইন মেনে চলতে বাধ্য ছিল। বিদেশি বাণিজ্য কুঠিতে মহিলা ও আগ্নেয়াস্ত্রের প্রবেশ, দাসী নিয়ােগ প্রভৃতি নিষিদ্ধ ছিল। বাণিজ্যের মরশুম শেষে ক্যান্টনে আসা বিদেশি বণিকদের এই বন্দর ছেড়ে চলে যেতে হত। চিনে বিদেশি বণিকদের প্রতি এই কঠোর নীতি ‘রুদ্ধদ্বার নীতি’ নামে পরিচিত।
২. মূল শহরে প্রবেশে বাধাঃ ক্যান্টন বন্দরে বাণিজ্য করতে আসা ইউরােপীয় বণিকরা শহরের প্রধান ফটকের বাইরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে। বসবাস ও বাণিজ্যিক কার্যকলাপ চালাতে বাধ্য হত। বণিকরা ক্যান্টন শহরের প্রাচীরের বাইরে বাস করলেও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের রেখে আসতে হত ম্যাকাও-এ।
৩. কো-হং প্রথাঃ বিদেশি বণিকরা চিনের ক্যান্টন বন্দরে এসে স্বাধীনভাবে বা সরাসরি এখানকার বাণিজ্যে অংশ নিতে পারত না। কেন না, বিদেশি বণিকদের কোনাে অবস্থাতেই চিনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেওয়া হত না বা অন্য যে-কোনাে বণিকদের কাছ থেকেও সস্তা দরে তাদের মাল কেনার অধিকার ছিল না। চিন সরকার একমাত্র ‘কো-হং’ নামক বণিকসংঘকে একচেটিয়া বাণিজ্য করার অধিকার দিয়েছিল এবং বিদেশি বণিকরা ক্যান্টন বন্দরে একমাত্র কো-হং বণিকদের কাছ থেকেই মাল কিনতে বাধ্য ছিল।
৪. কো-হং-দের দুর্নীতিঃ ক্যান্টনের একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার পেয়ে কো-হং বণিকরা অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একচেটিয়া তারা চিনা রাজদরবার, আদালত ও শুল্ক অধিকর্তাকে বিপুল অর্থ উৎকোচ হিসেবে দিত। বাণিজ্যের বেশির ভাগ লভ্যাংশ কো-হং বণিকরা আত্মসাৎ করত।
৫. ব্যক্তিগত বাণিজ্যঃ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি-সহ অন্যান্য ইউরােপীয় দেশের বণিকরা চিনের ক্যান্টন বন্দরে যে বাণিজ্য করত তা ছিল মূলত ব্যক্তিগত মালিকানা ভিত্তিক বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের জন্য চিনের সঙ্গে বিদেশি বণিকদের কোনাে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তােলার প্রয়ােজন পড়ত না।
৬. ব্রিটিশ বণিকদের প্রাধান্যঃ ক্যান্টন বাণিজ্যে প্রথমদিকে পাের্তুগিজরা প্রবেশ করলেও পরবর্তীকালে ব্রিটিশ বণিকরা এই বাণিজ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। ক্যান্টনে ব্রিটিশ বণিকদের চায়ের বাণিজ্য সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য ছিল। এ ছাড়া তারা রেশম, মৃৎপাত্র, দারুচিনি, ঔষধপত্র প্রভৃতি ইংল্যান্ডে রপ্তানি করত। তারা ইংল্যান্ড থেকে পশম বস্ত্র, লােহা, টিন, সিসা, পশুর লােম প্রভৃতি চিনে আমদানি করত। চিনের সঙ্গে ইংল্যান্ডের এই বাণিজ্য দেশীয় বাণিজ্য নামে পরিচিত ছিল।
• ক্যান্টন বাণিজ্যের অবসানের কারণ—
১. বাণিজ্যিক কার্যকলাপ বন্ধঃ ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অন্তর্গত ইউরােপীয় দেশগুলির ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দূরীকরণের জন্য বিদেশি শক্তিসমূহ চিনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কস্থাপন করার চেষ্টা করে। কিন্তু চিন বিদেশিদের প্রতি উদারনৈতিক বাণিজ্যিক অবস্থান গ্রহণ করেনি, বরং চিনের সাথে তাদের সবরকম বাণিজ্যিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানায়।
২. আফিম যুদ্ধঃ চিনের ক্যান্টন বাণিজ্যে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটেন আঠারাে শতক থেকে চিনে দূত পাঠাতে শুরু করে। কিন্তু কেউই সফল হতে পারেননি। ব্রিটিশ বণিকরা উনিশ শতকের প্রথম থেকে ভারত থেকে চোরাপথে চিনে আফিম রপ্তানি করতে থাকে। ফলে ক্যান্টন বাণিজ্যের চরিত্র বদলাতে শুরু করে। আফিমের ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে চিনের সঙ্গে ব্রিটেনের বিরােধের ফলে প্রথম আফিম যুদ্ধ বা প্রথম ইঙ্গ-চিন যুদ্ধ (১৮৩৯-৪২ খ্রি.) সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে চিনের পরাজয়ের ফলে ক্যান্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।
৩. অন্যান্য বন্দরের উত্থানঃ ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দের নানকিং চুক্তির ফলে নানকিং, সাংহাই, নিংপাে প্রভৃতি বন্দর বিদেশি বণিকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর ফলে ক্যান্টন বিদেশি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তার একাধিপত্য হারায়। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ক্যান্টন বাণিজ্য সাপিং দ্বীপে স্থানান্তরিত হয়। ইতিমধ্যে চিনের সাথে বিদেশি বাণিজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে হংকং এবং অন্যান্য উত্তরের বন্দরগুলি। এই বন্দরগুলি বেজিং এবং হােয়াংহাে নদী যা চিনের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ, তার নিকটে অবস্থিত হওয়ায় বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অধিকাংশ বিদেশি শক্তি ক্যান্টন থেকে তাদের কার্যালয় হংকং-এ স্থানান্তরিত করে। এর ফলে ক্রমে ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান ঘটে।
উপসংহারঃ ব্রিটিশ বণিকরা উনিশ শতকের প্রথম থেকে ভারত থেকে চোরাপথে চিনে আফিম রপ্তানি করতে থাকে। ফলে ক্যান্টন বাণিজ্যের চরিত্র বদলাতে শুরু করে। আফিমের ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে চিনের সঙ্গে ব্রিটেনের বিরােধের ফলে প্রথম আফিম যুদ্ধ বা প্রথম ইঙ্গ-চিন যুদ্ধ (১৮৩৯-৪২ খ্রি.) সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে চিনের পরাজয়ের ফলে ক্যান্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। চিন ক্যান্টন-সহ বেশ কয়েকটি বন্দর বিদেশি বণিকদের জন্য খুলে দিতে বাধ্য হয়।
অথবা,
পলাশি ও বক্সারের যুদ্ধের ফলাফলের তুলনামূলক আলোচনা করো। 8
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধ এবং ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে এক একটি দিক চিহ্ন হিসেবে প্রতিভাত হয়। এই দুই যুদ্ধের ফলাফলই ভারতের ইতিহাসে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভাগ্য নির্ণায়ক হয়ে ওঠে। এই দুটি যুদ্ধ জয়ই ছিল ব্রিটেনের কাছে ভারতে উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের শুভ লগ্ন। এখানে উভয় যুদ্ধের ফলাফলের তুলনামূলক আলোচনা করা প্রয়োজন।
(ক) পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফলাফলের তুলনাঃ পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাব ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে ইংরেজ কোম্পানির কাছে পরাজিত হয়। এরপর থেকেই বাংলার নবাব কোম্পানির হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছিল এবং কোম্পানি হয়ে উঠেছিল king maker.
বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজ কোম্পানির কাছে তিনটি ( বাংলা, অযোধ্যা ও মোঘল) মিলিত শক্তির পরাজয় ঘটলে বাংলার স্বাধীন নবাবির শেষ দীপ টুকুও নিভে যায়। এখন থেকে বাংলার সামগ্রিক ক্ষেত্রেই কোম্পানির সার্বিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
(খ) রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের ফলাফলের তুলনাঃ পলাশীর যুদ্ধের পর মিরজাফর বাংলার নবাব হলেও তার হাতে কোনো ক্ষমতা ছিল না। এই সময় থেকে একদিকে যেমন বাংলার সমস্ত ক্ষমতা কোম্পানির হাতে চলে যায়, তেমনি বাংলার নবাব নাম সৰ্বস্ব নবাবে পরিণত হন।
বক্সারের যুদ্ধে তিন মিলিত শক্তিকে পরাজিত করার ফলে ইংরেজ কোম্পানির একদিকে যেমন রাজনৈতিক ও সামরিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায় তেমনি তাদের আধিপত্য বাংলা ছাড়িয়ে অযোধ্যা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এই যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানির অধিকার লাভ করার ফলে বাংলা তথা ভারতে কোম্পানির অধিকার কায়েম হয় ৷
(গ) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের ফলাফলের তুলনাঃ পলাশীর যুদ্ধের পর কোম্পানি বাংলাদেশে অবাধ একচেটিয়া বাণিজ্য শুরু করে। কোম্পানি ও তার কর্মচারীরা দস্তকের অপব্যবহার, বিনা শুল্কে বাণিজ্য করায় দেশীয় বণিকরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এরপর থেকে কোম্পানি এদেশের অর্থ ও সম্পদ বিনা বাধায় ইংল্যান্ডে চালান করতে শুরু করে। ঐতিহাসিক ব্রুকস অ্যাডাম এই প্রক্রিয়াকে পলাশীর লুণ্ঠন বলেছেন।
বক্সারের যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা দেওয়ানি বা বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে। এর ফলে তাদের কাছে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার আর কোনো বাধাই থাকল না। বলা হয় এরপর থেকেই কোম্পানি ভারতে শুরু করেছিল তাদের নির্লজ্জ ও নির্মম শোষণ।
(ঘ) শাসন ক্ষেত্রে পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের ফলাফলের তুলনাঃ পলাশীর যুদ্ধে জিতে বাংলায় ইংরেজ কোম্পানির জয়যাত্রার সূচনা হয়। বক্সারের যুদ্ধে জিতে ইংরেজ কোম্পানি শাসনক্ষেত্রে চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
(ঙ) সাম্রাজ্যের প্রসারে পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের ফলাফলের তুলনাঃ পলাশীর যুদ্ধে শুধু বাংলার নবাব পরাজিত হয়েছিলেন। ফলে ইংরেজদের আধিপত্য বাংলাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
বক্সারের বাংলার নবাবের সাথে অযোধ্যার নবাব এবং দিল্লির বাদশাহও পরাজিত হন। ফলে সমগ্র উত্তর ভারতে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
• পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের পরোক্ষ ফলাফলের তুলনাঃ সামরিক দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় পলাশীর যুদ্ধ ছিল নিছক একটি অসম খণ্ড যুদ্ধ মাত্র। স্যার যদুনাথ সরকারের মতে, পলাশীর যুদ্ধের ফলে ভারতে মধ্যযুগের অবসান ঘটে এবং আধুনিক যুগের সূচনা হয়।
বক্সারের যুদ্ধ ছিল প্রকৃত ও চুড়ান্ত ফল- নির্ণয়কারী যুদ্ধ। ঐতিহাসিক স্মিথের মতে, ‘পলাশির যুদ্ধ ছিল কয়েকটি কামানের লড়াই, কিন্তু বক্সারের যুদ্ধ ছিল চূড়ান্ত যুদ্ধ’।
উপসংহারঃ সুতরাং বক্সারের যুদ্ধ ছিল
ভারত ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পলাশি ‘যদিও নির্ণায়ক যুদ্ধ, তথাপি কখনই বৃহৎ যুদ্ধরূপে বিবেচিত হতে পারে ‘না’ (Plassey though decisive, can never be considered as a great battle) – ম্যালেসন। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধ ছিল ‘এক চূড়ান্ত যুদ্ধ’ (a decisive battle) – স্মিথ।
(iv) ভারতের সমাজ সংস্কারক হিসেবে রামমোহনের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো। 8
উত্তরঃ উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ভারতে যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদ এর বিকাশ ঘটে। এই সময় পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয় মনীষীগণ কুসংস্কারের অভিশাপ থেকে সমাজের মুক্তির জন্য বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিলেন। এই মনীষীদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন ‘রাজা রামমোহন রায়’। যাকে ভারতীয় সমাজ সংস্কারের ‘অগ্রদূত’ বা ‘পথিকৃৎ’ বলে সম্মানিত করা হয়।
• সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়—
পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত, আধুনিক মনোভাবসম্পন্ন ‘রাজা রামমোহন রায়’ উপলব্ধি করেছিলেন- প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন না করলে দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন প্রথা পরিবর্তনে তিনি উদ্যোগী হন। যথা—
(১) সতীদাহ প্রথা বন্ধ করা।
(২) জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতা।
(৩) নারী কল্যাণ।
(৪) বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বিরোধিতা।
(৫) অন্যান্য সামাজিক সংস্কার।
(১) সতীদাহ প্রথার বিরোধিতাঃ মানবদরদি রামমোহন তৎকালীন হিন্দু সমাজে প্রচলিত সতীদাহ প্রথা মেনে নিতে পারেনি। যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে শেষ পর্যন্ত এই সতীদাহ প্রথাকে আইনবিরুদ্ধ করতে সক্ষম হন।
(ক) সংবাদপত্রে প্রতিবাদ— অমানবিক সতীদাহ প্রথার বিরোধিতা করে রামমোহন ‘সংবাদ কৌমুদী’ পত্রিকার মাধ্যমে তার মতামত প্রকাশ করেন।
(খ) গ্রন্থ রচনা— সতীদাহ প্রথার বিরোধিতা করে রামমোহন বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় একাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। যেমন- সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক নিবর্তক সংবাদ (১৮১৯- খ্রি:) গ্রন্থটি উল্লেখ্য।
(গ) জনসমর্থন— হিন্দু শাস্ত্র ও বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে তিনি প্রমাণ করেন সতীদাহ ধর্মবিরুদ্ধ ও অশাস্ত্রীয়। এর সম্পর্কে তিনি জনসমর্থন আদায় করে ৩০০ জন বিশিষ্ট নাগরিকের এক স্বাক্ষর পত্র লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর কাছে জমা দেন।
(ঘ) প্রথার নিষিদ্ধকরণ— রামমোহনের আবেদনে সাড়া দিয়ে বেন্টিং ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে এক আইনের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথা বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য বলে এই প্রথা নিষিদ্ধ করেন।
২. জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতাঃ রামমোহন হিন্দু সমাজে জাতি ভেদ ও অস্পৃশ্যতা প্রথার বিরুদ্ধে ‘বজ্রসূচী’ গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করে প্রমাণ করেন জাতিভেদ শাস্ত্র সম্মত নয়।
৩. নারী কল্যাণঃ মধ্যযুগীয় সমাজ ব্যবস্থায় নারীসমাজ ছিল অবহেলিত। দরদী রামমোহন তাই নারী কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। যথা—
(ক) তিনি প্রমাণ করেন পিতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকার আছে।
(খ) স্ত্রী শিক্ষার প্রসারে তিনি তার মতামত প্রকাশ করেন এবং উদ্যোগ নেন।
(গ) বিধবাদের বিবাহ সম্পর্কীয় দিকটি রামমোহন প্রচলন করেছিলেন।
(ঘ) বয়সে ছোট কন্যাদের বিবাহের বিরোধিতা করেন রামমোহন।
৪. বাল্যবিবাহ বহুবিবাহের বিরোধিতাঃ
বাল্যবিবাহ ও পুরুষের বহুবিবাহ ছিল নারীর কাছে এক অভিশাপ স্বরূপ। সমাজ সংস্কারক রামমোহন এই সমস্যার বিরোধিতা করে জনমত গঠনের চেষ্টা করেন।
৫. অন্যান্য সামাজিক সংস্কারঃ
সমাজে প্রচলিত আরো একাধিক প্রথার বিরুদ্ধে রামমোহন প্রতিবাদী হয়েছিল। যেমন—
(ক) কন্যা পণ।
(খ) গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন।
(গ) কৌলিন্য প্রথা প্রভৃতির বিরোধিতা।
(ঘ) এছাড়া অসবর্ণ বিবাহ সমর্থন করেন।
শিক্ষা বিস্তারঃ রামমোহন রায় উপলব্ধি করেছিলেন প্রথাগত শিক্ষা নয় পাশ্চাত্য শিক্ষার দাঁড়ায় এদেশের মানুষের মনে কুসংস্কারের মুক্তি ঘটবে। তাই তিনি বিজ্ঞান ভিত্তিক পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাই হিন্দু কলেজ, জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন (১৮৩০ খ্রি:) প্রভৃতি পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন।
উপসংহারঃ রাজা রামমোহন রায় তার সমাজ সংস্কারের মধ্য দিয়ে গতিহীন এদেশীয় সমাজ জীবনে বিপ্লব এনেছিলেন। আর এই কারণেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘ভারত পথিক’ বলেছিলেন। যার মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন ভারতের “নবজাগরণের অগ্রদূত”।
খণ্ড-খ
(v) মন্টেগু-চেম্সফোর্ড সংস্কার আইনের (1919) সমালোচনামূলক আলোচনা করো। 8
উত্তরঃ মন্টেগু-চেম্সফোর্ড সংস্কার আইনঃ ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন সংস্কারের ইতিহাসে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন ভারতীয়দের খুশি করতে পারেনি। এই পাশাপাশি পরবর্তী প্রায় এক দশকের ভারতীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যায়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে নতুন আইন প্রণয়ন করে তা মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার নামে পরিচিত।
মন্টেগু চেমসফর্ড সংস্কার আইনের উদ্দেশ্য—
(১) 1909 খ্রিস্টাব্দে মরলে মিন্টো শাসনের ব্যার্থতা দূর করা ।
(২) শাসন বিভাগে ভারতীয়দের যুক্ত করা।
(৩) দায়িত্বশীল সরকার গঠন করে বিভিন্ন শাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরো শক্তিশালী করে তোলা।
(৪) প্রাদেশিক সরকারের ক্ষেত্রে ভারতীয়দের আরো বেশি করে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্যঃ
ভারত সচিবের ক্ষমতা আগের থেকে আরও বাড়িয়ে ভারত সরকারের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করা।
প্রস্তাবনায় বলা হয়—
(১) ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
(২) ভারতে ধাপে ধাপে দায়িত্বশীল সরকার গঠিত হবে।
(৩) প্রশাসনে ভারতীয়দের যোগদানের সুযোগ দেওয়া হবে।
(৪) প্রদেশগুলোতে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা চালু হবে। আইন ও বিচার বিভাগ বড়োলাটের ওপর, আর স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগের কর্তৃত্ব আইন সভার প্রতিনিধিদের হাতে থাকবে।
(৫) বড়োলাটের কার্যনির্বাহী সমিতিতে পাঁচজন শ্বেতাঙ্গ সদস্য ও তিনজন ভারতীয় সদস্যকে নিয়ে আইন পরিষদ গঠন করা হবে।
(৬) কেন্দ্ৰীয় আইনসভাগুলি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট অর্থাৎ উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সমন্বয়ে গঠন করা হবে।
(৭) গভর্নর জেনারেলের অনুমতি ছাড়া কেন্দ্রীয় আইনসভায় পেশ করা বাজেটের ওপর আলোচনা চলবে না।
(৮) কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকবে সামরিক পররাষ্ট্র, পরিবহন (রেল), প্রচার (ডাক ও তার) ও মুদ্রা ইত্যাদি বিভাগ। আর প্রাদেশিক বিভাগে থাকবে পুলিশ, বিচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেচ, রাজস্ব, আবগারিসহ বিভিন্ন বিষয়।
(৯) সম্পত্তির মালিকানাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আয়করের ভিত্তিতে ভোটের অধিকার পাবেন।
(১০) সংখ্যালঘু মুসলিমরা আলাদা নির্বাচন নীতির অনুমোদন পাবে।
(১১) সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভটাধিকারের বদলে গুণীজনদের ভোটাধিকার বেশি গুরুত্ব পাবে। এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আইনসভার মেয়াদ তিন বছর থাকবে।
(১২) মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কারের দ্বারা নির্বাচন ব্যবস্থায় অনুন্নতশ্রেণির জন্য আসন সংরক্ষিত থাকবে।
মন্টেগু চেমসফর্ড সংস্কার আইনের সমালোচনাঃ বিভিন্ন দৃষ্টি কোন থেকে 1919 খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন এর সমালোচনা করা হয় তিলক বলেন এই আইন সূর্যালোকহিন প্রভাতের সৃষ্টি করেছ।
(১) এই আইনের দ্বারা ভারতে প্রতিনিধিমূলক শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার কোনো চেষ্টা করা হয়নি।
(২) এই আইনের দ্বারা কোনো দায়িত্বশীল শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
(৩) প্রদেশগুলি স্থায়ত্ব শাসন পাইনি।
(৪) সর্বসাধারণের ভোটদানের অধিকার স্বীকৃত হয়নি।
(৫) মুসলিমদের পৃথক ভোটাধিকার দান করা হলে সাম্প্রদায়িক বৃদ্ধি পায়।
(vi) হো-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। 8
সূচনাঃ হাে-চি-মিনের নেতৃত্বে, ভিয়েতনামবাসী (১৯৪৫-৭৫ খ্রি.) যে সংগ্রাম চালিয়েছিল, তা ইতিহাসে ভিয়েতনাম যুদ্ধ নামে পরিচিত। ভিয়েতনাম যুদ্ধে ভিয়েতনামিরা প্রথমে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ ও পরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে ধ্বংস করে স্বাধীনতা অর্জন করে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ
১. প্রথম পর্ব (১৯৪৫-৫৪ খ্রি.) :
(ক) ফরাসি নীতিঃ ফ্রান্স প্রথমে দক্ষিণ ইন্দোচিনে আধিপত্য কায়েম করেছিল। কিন্তু ফ্রান্স শুধুমাত্র তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে রাজি ছিল না। সে চেয়েছিল গােটা ইন্দোচিনে ফরাসি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে। অপরদিকে হাে-চি-মিন চেয়েছিলেন ভিয়েতনামের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধের সূচনা ঘটে।
(খ) ভিয়েতমিন-ফ্রান্স চুক্তিঃ ভিয়েতনাম সংঘর্ষের প্রথম দিকে ভিয়েতমিন ও ফ্রান্সের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (১৯৪৬ খ্রি., ১ মার্চ), যাতে ফ্রান্স ভিয়েতনামকে ইন্দোচিন ফেডারেশন ও ফরাসি ইউনিয়নের অংশ রূপে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে ফ্রান্স হাইফং অঞ্চলে বােমা নিক্ষেপ করে ৬ হাজার নিরীহ অসামরিক ভিয়েতনামিকে হত্যা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
(গ) ইন্দোচিনে স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠাঃ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর থেকে টানা তিন বছর সংঘর্ষের পর বাওদাইয়ের নেতৃত্বে ইন্দোচিনে এক স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
(ঘ) নেভারে প্ল্যান-দিয়েন-বিয়েন-ফু ঘটনাঃ ফরাসি বাহিনী ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের শেষদিক থেকে একের পর এক রণক্ষেত্রে হারতে থাকে। এই অবস্থায় ফরাসি সেনাপতি নেভারে ভিয়েতমিনদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এক নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যা নেভারে প্ল্যান নামে পরিচিত। এই পরিকল্পনা অনুসারে ফ্রান্স উত্তর ভিয়েতনামের টংকিং-এর দিয়েন-বিয়েন-ফু নামে একটি স্থানে অস্ত্রশস্ত্র সমেত একটি দুর্ভেদ্য ঘাঁটি নির্মাণ করে। কিন্তু সেনাপতি জেনারেল নগুয়েন গিয়াপের নেতৃত্বে ভিয়েতমিন সেনারা ফরাসি সেনাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে।
২. জেনেভা সম্মেলন (১৯৫৪ খ্রি.) : জেনেভা সম্মেলনে ২০ জুলাই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদিত হয়। নির্ধারিত হয়—
(ক) ১৭° অক্ষরেখা বরাবর ভিয়েতনামকে দু-ভাগে ভাগ করা হবে।
(খ) ওই অক্ষরেখার উত্তরাঞ্চলে ভিয়েতমিনদের এবং দক্ষিণাঞ্চলে ফরাসি নিয়ন্ত্রণাধীন ন-দিন-দিয়েমের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
(গ) উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের কোথাও কোনাে বিদেশি সেনা থাকবে না।
(ঘ) ভিয়েতনামের ওই বিভাজন হবে সম্পূর্ণ অস্থায়ী।
(ঙ) শান্তিপূর্ণ উপায়ে দুই ভিয়েতনামের মিলনের জন্য রাষ্ট্রসংঘ গঠিত একটি তদারকি কমিশনের নেতৃত্বে নির্বাচন আহ্বান করা হবে (১৯৫৬ খ্রি., জুলাই)।
৩. দ্বিতীয় পর্ব (১৯৫৬-৭৫ খ্রি.)
(ক) জেনেভা সম্মেলনের ব্যর্থতাঃ জেনেভা সম্মেলনের (১৯৫৪ খ্রি.) দ্বারা ভিয়েতনাম সমস্যার সমাধান হয়নি। জেনেভা সম্মেলন ভিয়েতনাম যুদ্ধের একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটালেও আর একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
(খ) যুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণঃ ইন্দোচিনে হাে-চি-মিনের প্রভাব-প্রতিপত্তিকে আটকানাের জন্য ফরাসি নিয়ন্ত্রণাধীন ন-দিন-দিয়েম-কে দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি পদে বসানাে হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামে ব্যাপক আর্থিক ও সামরিক সাহায্য পাঠাতে শুরু করে।
(গ) ভিয়েতকংদের সঙ্গে সংঘর্ষঃ উত্তর ভিয়েতনামে মার্কিন অপচেষ্টাকে রুখে দিয়ে হাে-চি-মিন বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি রূপায়ণের দ্বারা নিজের সরকারের জনপ্রিয়তা অক্ষুন্ন রাখেন। অপরদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে দিয়েম সরকার নির্বাচনের বিরােধিতা করলে, সমগ্র ইন্দোচিন জুড়ে প্রবল বিক্ষোভ দেখা দেয়। দক্ষিণ ভিয়েতনামে নবগঠিত জাতীয় মুক্তি ফ্রন্টের যােদ্ধা ভিয়েতকংদের সঙ্গে দিয়েম সরকারের সংঘর্ষ বাধে।
(ঘ) স্বৈরাচারী দিয়েম সরকারের পতনঃ ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভিয়েতকংদের বিরুদ্ধে মার্কিন ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম বাহিনী একজোট হয়ে আক্রমণ করে। ভিয়েতনামে মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে গােটা বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। এদিকে গণ- অভ্যুত্থানে দিয়েম সরকারের পতন ঘটে (১৯৬৩ খ্রি., নভেম্বর)।
(ঙ) স্বাধীন ভিয়েতনামের আত্মপ্রকাশঃ ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি উত্তর ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে আমেরিকার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভিয়েতনাম থেকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র তার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাস নাগাদ দক্ষিণ ভিয়েতনামের জেনারেল ভ্যান-মিন সায়্যানে ভিয়েতকংদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম ঐক্যবদ্ধ হয়। আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন ঐক্যবদ্ধ সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্রের (Socialist Republic of Vietnam)
উপসংহারঃ হাে-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুক্তিযুদ্ধগুলােতে অনুপ্রেরণা জোগায়।
(vii) সুয়েজ সংকট কেন দেখা দিয়েছিল ? 8
উত্তরঃ মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের মেয়াদে খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘােষণার মাধ্যমে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি— দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। ফলে সুয়েজ খালকে কেন্দ্র করে এক সমস্যা তৈরি হয়। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বােঝায়।
সুয়েজ সংকটের কারণ—
(১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্বঃ আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুদ্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনােমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখনও ব্রিটেন ও ফ্রান্স সে প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এর ফলে সুয়েজ সংকট তৈরি হয়। পরে জাতিপুঞ্জে মিশর এই প্রস্তাব তুলে ধরলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স সুয়েজ খালের ওপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়, যা নাসেরের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
(২) আসওয়ান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পঃ নাসের চেয়েছিলেন মিশরের আর্থিক উন্নয়নের জন্য নীলনদের ওপর আসওয়ান বাঁধ নির্মাণ করতে। কেননা, এই বাঁধের সাহায্যে ৮ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে জলসেচ করে সেগুলি আবাদি জমিতে পরিণত করা যাবে। আবার এই বাঁধের জলাধার থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তা শিল্পোন্নয়নে সাহায্য করবে। এই নির্মাণ প্রকল্পের মােট খরচ ধরা হয়েছিল ১৪০০ মিলিয়ন ডলার। ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও বিশ্বব্যাংক মিলিতভাবে এই প্রকল্পের জন্য ৭০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজিও হয়। কিন্তু এক বছর আলােচনা চলার পর আমেরিকা ও ব্রিটেনের প্ররােচনায় বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রস্তাব বাতিল করে দিলে নাসের প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন।
(৩) সুয়েজ খাল জাতীয়করণঃ ক্ষুল্ধ নাসের সুয়েজ খাল এবং সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানির জাতীয়করণ করেন (২৬ জুলাই, ১৯৫৬ খ্রি.) এবং ঘােষণা করেন যেㅡ
(ক) এই সুয়েজ খাল থেকে আদায় করা অর্থ আসওয়ান বাঁধ নির্মাণে খরচ করা হবে।
(খ) কোম্পানির বিদেশি অংশীদারদের প্রচলিত বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
(গ) আন্তর্জাতিক যােগসূত্র হিসেবে সব দেশের জাহাজ এই জলপথ ব্যবহার করতে পারবে। এর ঠিক তিনমাস পরে (২৯ অক্টোবর, ১৯৫৬ খ্রি.) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের গােপন প্ররােচনায় ইজরায়েল মিশর আক্রমণ করে।
অথবা,
সুয়েজ সংকটের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। এই সংকটে ভারতের ভূমিকা কী ? 4+4
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ঠাণ্ডা যুদ্ধের আবহে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে যে সমস্ত ঘটনা উত্তেজনাময় করে তুলেছিল সুয়েজ সংকট হল তাদের অন্যতম । সুয়েজ খাল হল মিশর দেশের উত্তরপূর্ব দিকে অবস্থিত ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্বাবধানে খনন করা একটি খাল। 1859 খ্রিঃ থেকে এই খাল খনন করা শুরু হয় এবং 1869 খ্রিঃ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয় । ইউনিভার্সাল সুয়েজ চুক্তির ভিত্তিতে এই খাল পরিচালনার দায়িত্ব পায়, যদিও মিশর সুয়েজ খাল থেকে যে অর্থ পেত তার পরিমাণ ছিল অত্যন্ত কম। কিন্তু 99 বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মিশরের রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের একটি ঘোষণার মাধ্যমে সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করে নেন। সুয়েজ খালকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি সংকট তৈরি হয় যা, সুয়েজ সংকট নামে পরিচিত।
কারণঃ যে সমস্ত কারণের প্রেক্ষিতে সুয়েজ সংকট সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—
(১) মিশরের মধ্যে দিয়ে সুয়েজ খাল প্রবাহিত হলেও সুয়েজ খালের নিরাপত্তার জন্য ব্রিটিশ সেনারা মোতায়েন থাকত, ফলে সুয়েজ খাল বা তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মিশরের কোনো আধিপত্য ছিল না।
(২) 99 বছর মেয়াদের চুক্তির ভিত্তিতে সুয়েজ খাল পরিচালনার দায়িত্ব ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানেল কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সুয়েজ খাল থেকে আদায়ীকৃত অর্থের খুব কম অংশ মিশর পেত।
(৩) যেহেতু সুয়েজ খাল ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন থাকায় মিশরের কোনো কর্তৃত্ব ছিল না। কিন্তু মিশরের নীলনদের উপর আসওয়ান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প তৈরি করা গেলে মিশর প্রায় ৪ লক্ষ 76 হাজার হেক্টর জমি আবাদযোগ্য করতে পারত এবং বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারত ।
(৪) আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যেমন আফ্রিকায় অবস্থিত আলজেরিয়াতে ফ্রান্সের আধিপত্যের বিরুদ্ধে নাসের আলজেরিয়ার বিদ্রোহীদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন যা মিশরের প্রতি ফ্রান্সকে ক্ষুব্ধ করে ।
(৫) মধ্যপ্রাচ্যে রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ করার জন্য 1955 খ্রিঃ বাগদাদ চুক্তি থেকে দূরে থাকলে পশ্চিমী শক্তিগুলি মিশরের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় ।
(৬) মধ্যপ্রাচ্যে আরব জাতীয়তাবাদের বিরোধী ইজরায়েলের উত্থান মিশর ভালোভাবে নেয়নি ।
(৭) এছাড়া পশ্চিমী শক্তিবর্গ মিশরকে বারবার আর্থিক ও সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পূরণ না করলে মিশর ক্ষুব্ধ হয়।
উপরিউক্ত এই পরিস্থিতির আবহে নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করার কথা ঘোষণা করেন—
(ক) এখন থেকে সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করা হল এই খাল পরিচালনা করবে মিশর নিজে ।
(খ) মিশর খাল থেকে যে অর্থ সংগৃহীত হবে তা আসওয়ান বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে।
(গ) কোম্পানির যে সমস্ত বিদেশী অংশীদার ছিল তাদের বাজার দর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ।
সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা—
(১) প্রাথমিক প্রচেষ্টাঃ সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে নিজস্বার্থেই ভারত সুয়েজ সমস্যা (১৯৫৬ খ্রি.) সমাধানে এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ভারত মনে করত ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ‘কনস্ট্যান্টিনোপল কনভেনশন’ অনুসারে সুয়েজ খাল মিশরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবে সেই সঙ্গে সে এ-ও মনে করত যে, খাল ব্যবহারকারীদের একটি উপদেষ্টামূলক ভূমিকা থাকা দরকার।
(২) যোগসুত্র স্থাপনের চেষ্টাঃ ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে সুয়েজ সমস্যার সমাধানে লন্ডন সম্মেলনে মিশরের কোনো প্রতিনিধি যোগদান না করায় ভারতের প্রতিনিধি বিদেশমন্ত্রী কৃষ্ণ মেনন দু-পক্ষের মধ্যে যোগসূত্রের ভূমিকা পালন করেছিলেন। সুয়েজ সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কৃষ্ণ মেনন পাঁচ দফা পরিকল্পনা পেশ করেন। তিনি সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে এক কমিটি গঠন করে সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দেন। তিনি মিশরের ওপরও খাল রক্ষার দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেন।
(৩) আক্রমণের নিন্দাঃ ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্ররোচনায় মিশরের ওপর ইজরায়েলের আক্রমণকে ভারত সরকার কঠোরভাবে নিন্দা করে। প্রধানমন্ত্রী নেহরু এটিকে এক ‘নগ্ন আক্রমণ’ বলে নিন্দা করেন।
(৪) জাতিপুঞ্জে যোগদানঃ জাতিপুঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনী হিসেবে ভারত মিশরে সেনা পাঠায়। যুদ্ধবিরতি কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে এবং বিদেশি সৈন্য অপসারণের বিষয়ে জাতিপুঞ্জে আলাপ-আলোচনাকালে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(vii) স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবর রহমানের ভূমিকা আলোচনা করো। 5+3
উত্তরঃ
সূচনাঃ পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের বঞ্চনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মনে ক্ষোভ জমতে থাকে। এর পরিণতি হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে।
স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা—
১. পূর্ববঙ্গের প্রতি বঞ্চনাঃ পাকিস্তান সৃষ্টির তিন-চার বছর পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তান তীব্র অর্থনৈতিক বৈষম্য চাপিয়ে দেয়। পাকিস্তানের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ করে পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করা হয়। তারা পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের দাবিদাওয়ার প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীনতা দেখায়। ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়।
২. ভাষা আন্দোলনঃ পূর্ব পাকিস্তানে ৯৮.১৬ শতাংশের বেশি এবং উভয় পাকিস্তান মিলে ৫৬.৪০ শতাংশের বেশি মানুষের মাতৃভাষা ছিল বাংলা; অথচ পাকিস্তানের জনক মহম্মদ আলি জিন্না বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা করেন। পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনও মনে করেন যে, বাংলা হল হিন্দুদের ভাষা। এই পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষা রক্ষার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র আন্দোলন শুরু হয়।
৩. সামরিক অসাম্যঃ পাক সেনাবাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা অবহেলিত ছিল। পাক সরকার বাঙালিদের ভীতু জাতি বলে মনে করত। মাত্র ৫ শতাংশ বাঙালি সশস্ত্র বাহিনীতে ছিল। এদের অধিকাংশই আবার আদেশদানকারীর ন্যায় উচ্চপদে নিযুক্ত হতে পারেননি।
৪. রাজনৈতিক অসাম্যঃ পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যা কম হলেও দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তান কুক্ষিগত করে রেখেছিল। পূর্ব পাকিস্তানের খাজা নাজিমুদ্দিন, মহম্মদ আলি বগুড়া, হােসেন শহীদ সুরাবর্দি প্রমুখ যখনই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তখনই পশ্চিম পাকিস্তানিরা কোনাে না কোনাে অজুহাতে তাদের পদচ্যুত করেছেন। জেনারেল আইয়ুব খাঁ ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে স্বৈরশাসন চালিয়ে পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক অধিকার বহুলাংশে কেড়ে নেন।
৫. ১৯৭০-এর নির্বাচনঃ ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামি লিগ দল ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তারা সেখানকার ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসনে জয়লাভ করে এবং পাকিস্তানে সরকার গঠনের অধিকার পায়। কিন্তু ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তানের কোনাে ব্যক্তির হাতে পাকিস্তানের ক্ষমতা ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তা ছাড়া নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো অনৈতিকভাবে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষমতা লাভের বিরােধিতা করেন।
৬. শেখ মুজিবরের নেতৃত্বঃ সরকার গঠনে আওয়ামি লিগ ব্যর্থ হলে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। শেখ মুজিবরের ধর্মঘটের ডাকে গােটা পূর্ব পাকিস্তান অচল হয়ে পড়ে। মুজিবুর ২৫ মার্চ (১৯৭১ খ্রি.) ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের এক সভার ঐতিহাসিক ভাষণে ঘােষণা করেন যে, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তাঁর ভাষণে পূর্ববঙ্গের গােটা বাঙালি জাতির মধ্যে উন্মাদনার সৃষ্টি হয়।
৭. গণহত্যাঃ বেলুচিস্তানের কসাই নামে পরিচিত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর করে ঢাকায় পাঠানাে হয়। পূর্ব পাকিস্তানে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ আনা হয়। ২৫ মার্চ রাতে পাক সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ব্যাপক হারে হত্যা করতে শুরু করে। এই হত্যা অভিযানের পােশাকি নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সার্চ লাইট’।
৮. স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মঃ ২৫ মার্চ মধ্যরাতে শেখ মুজিবুর গ্রেপ্তার হলেও আন্দোলন দমন করা যায়নি। স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ও মুক্তি বাহিনী ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতীয় সেনা পূর্ববঙ্গে মুক্তি বাহিনীকে সহায়তা শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই পাক বাহিনী বিপাকে পড়ে যায়। শেষপর্যন্ত পাক বাহিনীর প্রধান জেনারেল এ. এ. কে. নিয়াজি ভারতীয় বাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরােরার কাছে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেন এবং স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম হয়।
উপসংহারঃ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সুস্থিতি অধরাই থেকে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট আততায়ীর হাতে নিহত হন
PART – B
1. বিকল্প উত্তরগুলির মধ্যে থেকে সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো : 1×24 = 24
(i) ঢাকায় সার্ক (SAARC)-এর প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়—
(a) 1980 খ্রিস্টাব্দে, (b) 1985 খ্রিস্টাব্দে,
(c) 1990 খ্রিস্টাব্দে, (d) 1983 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তরঃ (b) 1985 খ্রিস্টাব্দে।
(ii) 1990-এর দশকের অর্থনৈতিক উদারীকরণ নীতি প্রবর্তিত হয় কোন্ প্রধানমন্ত্রীর সময় ?
(a) মনমোহন সিং,
(b) পি ভি নরসিমা রাও,
(c) রাজীব গান্ধি,
(d) অটলবিহারী বাজপেয়ী।
উত্তরঃ (b) পি ভি নরসিমা রাও।
(iii) ওলন্দাজদের হাত থেকে ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদস্যপদ লাভ করে—
(a) 1971 খ্রিস্টাব্দে, (b) 1950 খ্রিস্টাব্দে,
(c) 1955 খ্রিস্টাব্দে, (d) 1960 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তরঃ (b) 1950 খ্রিস্টাব্দে
(iv) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন—
(a) মহম্মদ আলি জিন্নাহ,
(b) জুলফিকর আলি ভুট্টো,
(c) ইয়াহিয়া খাঁ,
(d) নুরুল আমিন।
উত্তরঃ (c) ইয়াহিয়া খাঁ।
👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈
(v) আরব লিগে যোগদানকারী দেশ হল –
(a) সিরিয়া, (b) মিশর, (c) লেবানন,
(d) ট্রান্স-জর্ডন।
বিকল্প সমূহ :
(a) A, B ঠিক এবং C, D ভুল
(b) B, C, D ঠিক এবং A ভুল
(c) A, B, C, D সবকটি ঠিক
(d) A, B, C, D সবকটি
উত্তরঃ (b) B, C, D ঠিক এবং A ভুল
(vi) উত্তর আটলান্টিক সামরিক জোট (NATO) কবে গঠিত হয় ?
(a) 1948 খ্রিস্টাব্দে, (b) 1949 খ্রিস্টাব্দে,
(c) 1950 খ্রিস্টাব্দে, (d) 1952 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তরঃ (b) 1949 খ্রিস্টাব্দে।
(vii) ইয়াল্টা সম্মেলন আহৃত হয়—
(a) 1943 খ্রিস্টাব্দে, (b) 1944 খ্রিস্টাব্দে,
(c) 1945 খ্রিস্টাব্দে, (d) 1946 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তরঃ (c) 1945 খ্রিস্টাব্দে
(viii) সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করেন
(a) নেহরু, (b) নাসের,
(c) টিটো, (d) চার্চিল।
উত্তরঃ (b) নাসের
(ix) স্তম্ভ-১-এর সাথে স্তম্ভ-২ মেলাও :
স্তম্ভ-১ | স্তম্ভ-২ |
(i) জেনারেল তোজো | (A) ইন্দোনেশিয়া |
(ii) হো-চি-মিন | (B) চিন |
(iii) চৌ-এন-লাই | (C) জাপান |
(iv) সুকর্ণ | (D) ভিয়েতনাম |
বিকল্প সমূহ :
(a) (i) B, (ii) A, (iii) D, (iv) C
(b) (i) C, (ii) A, (iii) B, (iv) D
(c) (i) A, (ii) C, (iii) B, (iv) D
(d) (i) C, (ii) D, (iii) B, (iv) A
উত্তরঃ (d) (i) C, (ii) D, (iii) B, (iv) A
(x) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন রাষ্ট্রপতি ছিলেন—
(a) উড্রো উইলসন, (b) হুভার,
(c) রুজভেল্ট, (d) ট্রুম্যান।
উত্তরঃ (c) রুজভেল্ট।
(xi) ত্রিপুরি কংগ্রেসের অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল –
(a) জহরলাল নেহরু,
(b) চক্রবর্তী রাজা গোপালাচা
(c) পট্টভি সীতারামাইয়া,
(d) মতিলাল নেহরু।
উত্তরঃ (c) পট্টভি সীতারামাইয়া
(xii) নৌবিদ্রোহ প্রথম শুরু হয় –
(a) কাসেল ব্যারাকে,
(b) কোমাগাটামারু জাহাজে,
(c) তলোয়ার জাহাজে
(d) আমেরিকান জাহাজে
উত্তরঃ (c) তলোয়ার জাহাজে
(xiii) 1909 খ্রিস্টাব্দে ভারতের ভাইসরয় ছিলেন
(a) মন্টেগু, (b) চেমসফোর্ড,
(c) লর্ড কার্জন, (d) লর্ড মিন্টো।
উত্তরঃ (b) চেমসফোর্ড।
(xiv) গান্ধি প্রবর্তিত ‘হরিজন’-এর অর্থ –
(a) অস্পৃশ্য, (b) নিপীড়িত,
(c) ঈশ্বরের সন্তান, (d) তপশিলী জাতি।
উত্তরঃ (c) ঈশ্বরের সন্তান।
(xv) তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা প্রকাশ করেন –
(a) রামমোহন রায়,
(b) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর,
(c) কেশবচন্দ্র সেন,
(d) ডিরোজিয়ো।
উত্তরঃ (b) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
(xvi) সিং-চুং-হুই-এর প্রবর্তক ছিলেন—
(a) সান-ইয়াৎ-সেন,
(b) চিয়াং কাই-শেখ,
(c) চৌ-এন-লাই,
(d) মাও-সে-তুঙ।
উত্তরঃ (a) সান-ইয়াৎ-সেন।
(xvii) চিনে ইউরোপের বাণিজ্যিক সম্পর্কের সূত্রপাত হয় ________ বন্দরের মধ্য দিয়ে।
(a) ম্যাকাও, (b) সাংহাই,
(c) ক্যান্টন, (d) নানকিং ।
উত্তরঃ (b) সাংহাই।
(xviii) বীরসালিঙ্গম দক্ষিণের ______ নামে পরিচিত।
(a) গান্ধি, (b) রামকৃয়,
(c) বিবেকানন্দ, (d) বিদ্যাসাগর।
উত্তরঃ (d) বিদ্যাসাগর।
(xix) কে বাংলায় দ্বৈত শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটান ?
(a) রবার্ট ক্লাইভ,
(b) ভেরেলেস্ট,
(c) ওয়ারেন হেস্টিংস,
(d) লর্ড ওয়েলেসলি।
উত্তরঃ (c) ওয়ারেন হেস্টিংস।
(xx) লর্ড কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা হল–
(A) দশশালা ব্যবস্থা
(B) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
(C) পাঁচশালা ব্যবস্থা
(D) রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত
বিকল্প সমূহ :
(a) A ঠিক এবং B, C, D ভুল
(b) A, C ঠিক এবং B, D ভুল
(c) A, B ঠিক C, D ভুল
(d) A, B, C ঠিক এবং D ভুল।
উত্তরঃ (c) A, B ঠিক C, D ভুল।
(xxi) আফ্রিকাতে প্রথম উপনিবেশ স্থাপন করেছিল—
(a) ইংরেজরা, (b) ফরাসিরা,
(c) পোর্তুগিজরা, (d) ওলন্দাজরা।
উত্তরঃ (b) ফরাসিরা।
(xxii) ‘Imperialism: The Highest State of Capitalism’ গ্রন্থের লেখক—
(a) হবসন, (b) হিলফারডিং,
(c) লেনিন, (d) স্তালিন।
উত্তরঃ (c) লেনিন।
(xxiii) ভারতের ইতিহাসের জাতীয়তাবাদী ব্যাখ্যাকার হলেন—
(a) রমেশচন্দ্র মজুমদার,
(b) জেমস্ মিল,
(c) রামশরণ শর্মা,
(d) রণজিৎ গুহ।
উত্তরঃ (a) রমেশচন্দ্র মজুমদার।
(xxiv) ‘Early History of India’ গ্রন্থের রচয়িতা—
(a) জন স্টুয়ার্ট মিল,
(b) জেমস্ প্রিন্সেপ,
(c) কোলব্রুক,
(d) ভিনসেন্ট স্মিথ।
উত্তরঃ (d) ভিনসেন্ট স্মিথ।
2. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও : 1×16 = 16
(i) দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধানের নাম কী ?
উত্তরঃ নেলসন ম্যান্ডেলা।
অথবা,
ভারত সরকারের বরাদ্দ অর্থকে যথাযথভাবে ব্যয় করার জন্য কীভাবে ভাগ করা হয় ?
উত্তরঃ ভারত সরকারের বরাদ্ধ অর্থকে দু-ভাগে ভাগ করা যায় – (১) কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয় এবং (২) রাজ্য তালিকাভুক্ত।
(ii) দিয়েন বিয়েন ফু-তে কী ঘটেছিল ?
উত্তরঃ ভিয়েতমিনদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ফরাসি সেনাপতি নেভারে টংকিং এর দিয়েন বিয়েন ফু নামক স্থানে একটি অস্ত্র ভান্ডার ও দুর্ভেদ্য ঘাঁটি তৈরি করেন। ভিয়েতমিন সেনাপতি নগুয়েন গিয়াপের নেতৃত্বে ভিয়েতমিনরা ওই অস্ত্র ঘাঁটি ধ্বংস করে দেন। এই ঘটনা দিয়েন বিয়েন ফুর ঘটনা নামে পরিচিত।
অথবা,
বেন বেল্লা কে ছিলেন ?
উত্তরঃ স্বাধীন আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি।
(iii) ফিদেল কাস্ত্রো কে ছিলেন ?
উত্তরঃ কিউবার রাষ্ট্রপতি।
অথবা,
কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট বলতে কী বোঝায় ?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সর্ববৃহৎ দ্বীপ কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণকে কেন্দ্র করে সােভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক স্বল্পকালীন দ্বন্দ্ব শুরু হয় যার নাম কিউবার ক্ষেপনাস্ত্র সংকট।
(iv) ট্রুম্যান নীতি কী ছিল ?
উত্তরঃ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসের এক বক্তৃতায় আশ্বাস দেন যে যদি কোনো মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বা কোনো বিদেশি রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হয় তা হলে আমেরিকা তাদের সাহায্য করবে। রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যানের এই ঘোষণা ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত।
(v) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন ?
উত্তরঃ হিদেকি তোজো।
অথবা,
উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট বাহিনী কী নামে পরিচিত ছিল।
উত্তরঃ ভিয়েতমিন।
(vi) ক্যাবিনেট মিশন কেন ভারতে আসে ?
উত্তরঃ 1946 খ্রিস্টাব্দে 19শে ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ঘোষণা করেন যে ভারতের স্বাধীনতার বিষয়ে আলোচনার জন্য ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভারতে পাঠানো হবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলির ঘোষণা অনুসারে ভারতের স্বাধীনতার বিষয়ে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনার উদ্দেশ্যে মন্ত্রী মিশন বা ক্যাবিনেট মিশন 1946 খ্রিস্টাব্দের 24শে মার্চ ভারতে আসে।
(vii) ভারতীয়রা সাইমন কমিশন বর্জন করেছিল কেন ?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকার ভারতে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য জন সাইমনের নেতৃত্বে সাত জন সদস্য বিশিষ্ট যে কমিশন গঠন করে তাতে কোন ভারতীয় সদস্য না থাকায় ভারতীয়রা একে জাতীয় অপমান বলে গণ্য করে এই কমিশন বর্জন করেছিল।
অথবা,
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় দুজন বিদেশি অভিযুক্তের নাম লেখো।
উত্তরঃ ফিলিপ স্প্র্যাট, বেঞ্জামিন ব্রাডলি
(viii) রাওলাট আইনের পিছনে কী উদ্দেশ্য ছিল ?
উত্তরঃ রাওলাট আইন প্রবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতবাসীর সর্বপ্রকার রাজনৈতিক আন্দোলন দমন করা এবং সর্বপ্রকার বিপ্লবী কর্মপ্রচেষ্টাকে দমন করে ভারতে ব্রিটিশ শাসন চালিয়ে যাওয়া ।
(ix) ‘মানুষ গড়ার’ আদর্শে কে বিশ্বাসী ছিলেন ?
উত্তরঃ স্বামী বিবেকানন্দ।
(x) দলিত কাদের বলা হয় ?
উত্তরঃ খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে আর্যরা ভারতে আসে। এই সময় আর্যরা ভারতীয় জনসমাজকে ব্ৰাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র— এই চারটি বর্ণে ভাগ করেন। প্রথম তিন বর্ণের মানুষকে সেবা করতে বাধ্য করত শূদ্রদের। উচ্চবর্ণের মানুষের কাছে এরা ছিল অস্পৃশ্য। পরবর্তীকালে (ব্রিটিশ শাসনকালে) এরাই ‘দলিত’ নামে পরিচিত হয়।
(xi) আলেকজান্ডার ডাফ কে ছিলেন ?
উত্তরঃ স্কটল্যান্ডের মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ ছিলেন জেনারেল এসেম্বলিজ ইনস্টিটিউটশন-এর (১৮৩০) প্রতিষ্ঠাতা। এর বর্তমান নাম ‘স্কটিশ চার্চ কলেজ’ নামে পরিচিত। বাংলায় শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে।
অথবা,
চুঁইয়ে পড়া নীতি কী ?
উত্তরঃ লর্ড বেন্টিঙ্কের আইন সচিব / শিক্ষাসচিব মেকলে তাঁর বিখ্যাত মিনিটস-এ বলেন যে, ভারতে উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার হলে তা মধ্যবিত্তদের মাধ্যমে কর্মে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। মেকলে প্রকল্পিত এই নীতি ‘চুঁইয়ে পড়া নীতি’ বা ‘ক্রমনিম্ন পরিশ্রুত নীতি’ (Downward Filtration Theory)।
(xii) নানকিং-এর সন্ধির দুটি শর্ত লেখো।
উত্তরঃ (a) চিন গ্রেট ব্রিটেনকে হংকং সমর্পন করবে অর্থাৎ হংকং ইংরেজদের অধীনে আসবে। (b) চিন সর্বমােট ব্রিটেনকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২১ মিলিয়ন ডলার দেবে।
অথবা,
তাইপিং বিদ্রোহ কবে ও কেন হয় ?
উত্তরঃ ১৮৫১-৫৪ সালে চীনে বিদেশিদের শোষনের হাত থেকে রক্ষার জন্য তাইপিং বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
(xii) কোন চার্টার আইনে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার বন্ধ হয়ে যায় ?
উত্তরঃ ১৮১৩ সালের সনদ আইনে।
(xiv) বাণিজ্যিক মূলধন কাকে বলে ?
উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের আগে পুঁজিপতিরা বাণিজ্যে মূলধন বিনিয়োগ করতেন। বাণিজ্যে নিয়োজিত এই মূলধন ‘বাণিজ্যিক মূলধন’ বা ‘বাণিজ্যিক পুঁজি’ নামে পরিচিত।
(xv) জে এ হবসনের বইটির নাম কী ?
উত্তরঃ Imperialism: A Study বা সাম্রাজ্যবাদ একটি সমীক্ষা’ (১৯০২ খ্রিস্টাব্দ)।
অথবা,
হিলফারডিং-এর বইটির নাম লেখো।
উত্তরঃ Finance Capital.
(xvi) আমেরিকা মহাদেশ কে আবিষ্কার করেন ?
উত্তরঃ ক্রিস্টোফার কলোম্বাস।
অথবা,
ভারতের কোন্ কোন্ স্থানে পোর্তুগিজ বাণিজ্য কুঠি ছিল ?
উত্তরঃ ভারতের মধ্যে মুম্বাই, কোচিন, বেসিন, সলসেট, দিউ, হুগলি ইত্যাদি অঞ্চলে পাের্তুগিজরা তাদের বাণিজ্যকুঠি গড়ে তুলেছিল।
H.S HISTORY QUESTION PAPER | ||||
---|---|---|---|---|
2015 | 2016 | 2017 | 2018 | 2019 |
2020 | NoEx | 2022 | 2023 |
Pingback: HS History 2020 Question Paper With Answer | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস ২০২০ উত্তরসহ প্রশ্নপত্র। -
Pingback: WB HS Previous Years Question Paper | উচ্চমাধ্যমিক বিগত বছরের প্রশ্নপত্র [WBCHSE] -
Pingback: HS History 2019 Question Paper With Answer | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস ২০১৯ উত্তরসহ প্রশ্নপত্র। -
Pingback: HS History 2018 Question Paper With Answer | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস ২০১৮ উত্তরসহ প্রশ্নপত্র। -
Pingback: HS History 2016 Question Paper With Answer | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস ২০১৬ উত্তরসহ প্রশ্নপত্র। -
Pingback: WBCHSE Class 12 History Solved Question Paper 2022 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২২ - Prosnodekho -
Pingback: WBCHSE HS History Solved Question Paper 2023 -
Pingback: HS History 2017 Question Paper With Answer | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস ২০১৭ উত্তরসহ প্রশ্নপত্র। -
Answer the question of physical education from next year.
I will start soon.
Thank You