HS History 2016 Question Paper With Answer | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস ২০১৬ উত্তরসহ প্রশ্নপত্র।

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now
WBCHSE HIGHER SECONDARY HISTORY QUESTION WITH ANSWER 2016
    উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০১৬
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র যত্নসহকারে সঠিক এবং নির্ভুল উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বড় প্রশ্ন, বহু বিকল্পধর্মী প্রশ্ন (MCQ) এবং অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নের (SAQ) উত্তর দেওয়া হলো। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জানানো যাচ্ছে তোমরা অবশ্যই তোমাদের সাবজেক্ট শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলিয়ে নেবে। উত্তরপত্রে কোন ভুল থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।

2016
HISTORY
(New Syllabus)
Total Time : 3 hours 15 Minutes
Total Marks : 80

1. পরিমিত এবং যথাযথ উত্তরের জন্য বিশেষ মূল্য দেওয়া হবে।
Special credit will be given for answers which are brief and to the point.

2. বর্ণাশুদ্ধি, অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরিষ্কার হস্তাক্ষরের ক্ষেত্রে নম্বর কেটে নেওয়া হবে।
Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting.

3. উপান্তে প্রশ্নের পূর্ণমান সূচিত আছে।
Figures in the margin indicate full marks for the questions.

PART – A (Marks – 40)

1. কোনো পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দাও (প্রতিটি বিভাগ থেকে ন্যূনতম দুটি প্রশ্নের উত্তর আবশ্যক) 8 × 5 = 40


👉HS History MCQ Online Mock Test👈


খণ্ড-ক

(i) জাদুঘর কাকে বলে ? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা করো। 3+5

উত্তরঃ

জাদুঘরঃ জাদুঘর হলো এমন এক সংগ্রহশালা যেখানে মানব সমাজের অগ্রবর্তী ও কার্যকলাপের বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে রাখা হয়। অতীতকে জ্ঞানের বিষয় হিসেবে তুলে ধরে জাদুঘর । এই জাদুঘরের সংজ্ঞা বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে দিয়েছেন, যেমন—

জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের সংজ্ঞাঃ তার মতে যে গৃহে অদ্ভুত অদ্ভুত পদার্থসমূহের সংগ্রহ আছে এবং যা দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হতে হয়, তাকে জাদুঘর বলে।

বাংলা অভিধানের সংজ্ঞাঃ পশ্চিমবঙ্গের বাংলা একাডেমি জাদুঘরের সংজ্ঞা হিসেবে বলেছেন- যেখানে প্রাচীন জিনিস সংরক্ষণ করে রাখা হয়, তাকে জাদুঘর বলে।

J.C.D.M এর সংজ্ঞাঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছেন- জাদুঘর হল অলাভজনক স্থায়ী সেবামূলক শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান, যেখানে স্পর্শযোগ্য ও অস্পর্শযোগ্য বস্তুকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়, তাকেই জাদুঘর বলে।

সাধারণ সংজ্ঞাঃ জাদুঘরের সাধারণ সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- যেখানে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, শিল্পবিষয়ক প্রভৃতি নিদর্শন সংরক্ষণ করে জনসাধারণের উদ্দেশে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়, তাকেই জাদুঘর বলে।

অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকাঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- ‘কথা কও কথা কও / অনাদি অতীত, অনন্ত রাতে / বিস্মৃত যত নীরব কাহিনী / স্তম্ভিত হয়ে বও।’ তাই এই বাণী অনুযায়ী বলা যায়, অতীতের উপাদান থেকে বর্তমান কালকে সহজভাবে বোঝা যায়, অতীতের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জীবনকে যাতে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারা যায়, সেই কাজটি করে চলে জাদুঘর। তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকাগুলি হলো—

বিবর্তনের ধারাঃ জাদুঘর বহু প্রাণীর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করে রাখে। যেমন– মানুষের কঙ্কাল, মাথার খুলি, দেহাবশেষ, ডাইনোসর ও বিভিন্ন প্রাণীর দেহ কাঠামো প্রভৃতি সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রাণীর বিবর্তন সম্পর্কে আমরা জানতে পারি।

অতীত সম্পর্কে ধারণাঃ জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন সময়ের মুদ্রা, শিলালেখ, শিল্পকর্ম, বিভিন্নগ্রন্থ, প্রাচীনতম নিদর্শন যা থেকে অতীতের সমাজ ও সংস্কৃতির পরিচয় জানা যায়।

অতীত ও বর্তমানের যোগসাধনঃ অতীত ও বর্তমানকে যুক্ত করে জাদুঘর। জাদুঘরের বিভিন্ন চিত্রলিপি, ভাস্কর্য, বস্ত্র, অলংকার, মূর্তি প্রভৃতি প্রত্যক্ষ করে দর্শক ও ঐতিহাসিকরা। যা থেকে মানব সভ্যতার অগ্রগতির পথ বা ঘটনার কথা জানতে পারেন তারা। ফলে রচিত হয় অতীত ও বর্তমানের যোগসুত্র।

ধারাবাহিকতাঃ জাদুঘরে সংরক্ষিত বস্তুগুলি থেকে মানুষ বুঝতে পারে কীভাবে প্রাচীন সংস্কৃতি থেকে আধুনিক সংস্কৃতির উৎপত্তি হয়েছে। যেমন- প্রাচীন বৈদিক সংস্কৃতি থেকে আধুনিক হিন্দু সংস্কৃতির উৎপত্তি হয়েছে।

গবেষণায় সাহায্যঃ জাদুঘরে বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য থাকে। যেগুলি ছাত্র-ছাত্রী ও ঐতিহাসিকদের গবেষণার কাজে সাহায্য করে। এছাড়া জাদুঘরের বিভিন্ন বিষয় থেকে অজানা অনেক তথ্য পাওয়া যায়, যা অতীত পুনর্গঠনে সাহায্য করে।

মন্তব্যঃ জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন বস্তুর দুটি উদ্দেশ্য। যথা-(১) পুরাবস্তু সংরক্ষণ (২) পুরাবস্তু সংক্রান্ত ব্যাখ্যা। তবে এই দুটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য জাদুঘর নির্মাণ করা খরচসাপেক্ষ ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাই জাদুঘর গড়ে উঠলে সাধারণ মানুষ অতীত জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবে।


👉আরও দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈


(ii) সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝো ? সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো। 3+5

উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদ—

সাধারণ ধারণাঃ সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা নিয়ে নানা মত রয়েছে। প্রথমদিকে এর অর্থ ছিল সামরিক কর্তৃত্ব। পরবর্তীকালে বলা হয় একটি দেশ নিজের স্বার্থে অন্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিনাশ বা সংকুচিত করে সেই দেশ ও জাতির ওপর যে প্রভুত্ব বা কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা করে তা হল সাম্রাজ্যবাদ (Imperialism)।

সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা—

লেনিনের মতঃ ভি. আই. লেনিন তার ‘Imperialism: the Highest Stage of Capitalism’ গ্রন্থে লিখেছেন, “সাম্রাজ্যবাদ হল পুঁজিবাদের একচেটিয়া পর্যায়।”

হবসনের মতঃ জন এ. হবসন তার ‘Imperialism: A Study’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “প্রাথমিক স্তরে জাতীয়তাবােধ অন্যদেশে উপনিবেশ গড়ে তােলার প্রেরণা জোগায়, যা পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদের রূপ নেয়।” এ ছাড়া সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে মরগ্যানথাট, পামারও পারকিনস, বন, সি ডি বার্নস, সুম্যান, হিলফারডিং, কার্ল কাউৎস্কি, হজ, ওয়েলস এবং বেয়ার্ড সাম্রাজ্যবাদের নানা সংজ্ঞা দিয়েছেন।

সাম্রাজ্যবাদের উদ্দেশ্যঃ সাম্রাজ্যবাদের নানা উদ্দেশ্য ছিল, যেমন— (১) অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ, (২) জাতীয়তাবাদের সম্প্রসারণ, (৩) জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা, (৪) জনসংখ্যার সংকুলান এবং (৫) ধর্ম ও সভ্যতার আদর্শ প্রচার।

সাম্রাজ্যবাদের বিভিন্ন রূপ—

১. সামরিক সাম্রাজ্যবাদঃ সাম্রাজ্যবাদের একটি প্রধান রূপ হল– এর সামরিক রাজনৈতিক দিক। আলেকজান্ডার, নেপােলিয়ান, হিটলারের মতাে সমর বিজেতাগণ সামরিক বিজয়ের মধ্যে দিয়ে অপরের রাজ্য দখল করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ নিজ স্বার্থে অন্য দেশের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে এবং সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করেছে। চেকোশ্লোভাকিয়া এবং হাঙ্গেরিতে সােভিয়েত সামরিক হস্তক্ষেপের মধ্যে অথবা নিকারাগুয়াতে বিদ্রোহীদের মার্কিন তরফে সামরিক অস্ত্র জোগানের মধ্যে সামরিক সাম্রাজ্যবাদের পরিচয় মেলে।

২. অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদঃ সামরিক সাম্রাজ্যবাদ ছাড়াও অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ। বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষার তাগিদেই মূলত এটির উদ্ভব। ইউরােপে শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী পর্যায়ে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ইত্যাদি দেশের শিল্পপতিগণ এই সাম্রাজ্যবাদকে ত্বরান্বিত করেন। পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি বণিক কোম্পানিগুলির উদ্যোগে এবং রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের দরুন সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটে। দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থের লক্ষ্যে লাতিন আমেরিকার ওপর শােষণ চালায়। তৈলসম্পদের লােভে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতাে দেশগুলি আরব বিশ্বের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করে।

৩. সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদঃ সাম্রাজ্যবাদের আর একটি রূপ হল– সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ। অন্য দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, অধিবাসীর রুচিবােধ, মননশীলতা, পছন্দ ও অপছন্দের দিকগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টাই হল সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ। সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের মূল উদ্দেশ্য হল সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে নিজ নিজ দেশের সংস্কৃতির প্রসার ঘটানাে। অনেক সময় সংস্কৃতির ধ্যানধারণার প্রচারের নামে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রসারেরও চেষ্টা চালানাে হয়, যেমন পূর্বতন সােভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরােপের দেশগুলিতে কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটানাের চেষ্টা চালিয়েছিল। মূলত ১৯৫০-এর দশক থেকেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব বাড়তে থাকে।

(iii) ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 8

উত্তরঃ

সূচনাঃ ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর বাংলার গভর্নর লর্ড ক্লাইভ পূর্বতন মুঘল আমলের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা বজায় রাখেন। পরবর্তীকালে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হয়ে ভারতের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে, রাজস্ব আদায়ের ভার কোম্পানির হাতে তুলে দেন।

কোম্পানির আমলে ভারতের বিভিন্ন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা—

(ক) পাঁচসালা বন্দোবস্তঃ গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব আদায়ের জন্য ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে একটি ভ্রাম্যমাণ কমিটি গঠন করেন। যে ইজারাদার কোম্পানিকে সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে রাজি হত, এই ভ্রাম্যমাণ কমিটি তাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত প্রদান করত। পুরােনাে জমিদার সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে অক্ষম হলে, তিনি জমিদারি হারাতেন। এই ব্যবস্থা ইজারাদারি ব্যবস্থা বা ‘পাঁচসালা’ বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থায় রাজস্ব-সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্বতন সুপারভাইজারদের তিনি নতুন নামকরণ করেন ‘কালেক্টর’, যারা জেলার রাজস্ব আদায়, বিচার ও শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত। ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে ভ্রাম্যমাণ কমিটি দুর্নীতিগ্রস্ত হলে, এই কমিটি বাতিল করে হেস্টিংস ‘রাজস্ব বোর্ড’ বা ‘Board of Revenue’ গঠন করেন।

(খ) একসালা বন্দোবস্তঃ ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় পাঁচসালা বন্দোবস্তের কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি লক্ষ করা যায়, যা দূর করার উদ্দেশ্যে ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে হেস্টিংস পাঁচসালা বন্দোবস্ত বাতিল করে এক নতুন ভূমি বন্দোবস্তের প্রচলন করেন যা একসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। এই বন্দোবস্ত অনুসারে一

১. প্রতি বছর পুরােনাে জমিদারদেরই জমি দেওয়া হবে।

২. বিগত তিন বছরের রাজস্বের গড় অনুসারে এই বন্দোবস্তে রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারিত হয়।

৩. জমিদার রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হলে তার জমিদারির একাংশ বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব পরিশােধের নিয়ম চালু হয়।

হেস্টিংস প্রবর্তিত দুটি ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা, তথা পাঁচসালা বন্দোবস্ত এবং একসালা বন্দোবস্ত-এ কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়। এই ত্রুটিগুলি দূর করার জন্য ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে পিটের ভারত শাসন আইন পাস হয়। এই আইন অনুসারে জমিদারদের স্থায়ীভাবে ভূমি প্রদান করার কথা বলা হয়। কর্নওয়ালিশ বড়ােলাট হয়ে ভারতে এলে তিনি বিস্তৃতভাবে এদেশের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার সম্পর্কে অনুসন্ধান চালান।

(গ) দশসালা বন্দোবস্তঃ জন শশারের বক্তব্যে আকৃষ্ট হয়ে কর্নওয়ালিশ ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ও বিহারে এবং ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যায় দশ বছরের জন্য জমি দেওয়ার প্রথা চালু করেন, যা ‘দশসালা বন্দোবস্ত’ নামে পরিচিত হয়। এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঘােষণা করেন যে ব্রিটেনের পরিচালক সভা অনুমােদন দিলে এই দশ বছর মেয়াদি বন্দোবস্তকে চিরস্থায়ী করা হবে।

(ঘ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তঃ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা এবং পরবর্তীকালে বারাণসী, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কিছু কিছু অঞ্চলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা হয়। চিরস্থায়ী ব্যবস্থার শর্তাবলি হল—

১. জমিগুলি বংশানুক্রমিকভাবে জমিদার ও তার পরিবারের হবে।

২. জমিদার ইচ্ছামতাে জমি দান, বিক্রি বা বন্ধক রাখতে পারবেন।

৩. ভূমিরাজস্বের পরিমাণ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের হারেই বহাল থাকবে।

৪. নির্ধারিত ভূমিরাজস্বের শতকরা ৮৯ ভাগ সরকার ও ১১ ভাগ জমিদার পাবেন।

৫. সূর্যাস্ত আইন অনুসারে জমিদাররা সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের মধ্যে পরিশােধ করতে বাধ্য ছিল।

৬. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজস্ব দিতে না পারলে জমিদারির অংশ বিক্রি করে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব মেটাতে হবে, না হলে জমিদারি বাজেয়াপ্ত হবে।

৭. প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন—খরা, বন্যা, মহামারি হলেও রাজস্ব মুকুব করা হবে না।

(ঙ) রায়তওয়ারি বন্দোবস্তঃ ঔপনিবেশিক ভারতের কিছু অংশে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত চালু হয়। আলেকজান্ডার রিড ও স্যার টমাস মনরাের উদ্যোগে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কিছু অঞ্চল বাদে ভারতের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে রায়তওয়ারি ব্যবস্থা চালু করা হয়। রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় রায়তকে জমিতে স্থায়ীভাবে অধিকার না দিয়ে তাকে ৩০ বা ৪০ বছরের জন্য জমি দেওয়া হত। এই ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

১. এই ব্যবস্থায় কোনাে মধ্যস্বত্বভােগী শ্রেণির উপস্থিতি ছিল না। রায়ত বা কৃষকদের থেকে সরকার সরাসরি ভূমিরাজস্ব আদায় করত।

২. এই ব্যবস্থায় জমি জরিপ করে কৃষকদের দেওয়া হত এবং উৎপাদন অনুযায়ী জমিকে ৯টি শ্রেণিতে ভাগ করা হত।

৩. এই ব্যবস্থায় জমির সম্পূর্ণ মালিকানা সরকারের হাতেই থাকে।

৪. এই ব্যবস্থায় রাজস্বের হার খুব বেশি ছিল না এবং ৩০ বছর অন্তর সেই হার পুনর্বিবেচনা করা হত।

(চ) মহলওয়ারি ব্যবস্থাঃ ভারতের বৃহদংশে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা হলেও উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কোন্ ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা অনুসরণ করা উচিত, এই নিয়ে কোম্পানির মধ্যে মতবিরােধ দেখা দেয়। এই অবস্থায় উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মধ্য ভারতের কিছু অঞ্চলে মহলওয়ারি ব্যবস্থা চালু করা হয়। এই ব্যবস্থার প্রবর্তনে এলফিনস্টোনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

১. মহলওয়ারি ব্যবস্থায় কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি ‘মহল’ বা ‘তালুক’ তৈরি করা হত এবং গ্রামের ওপর সামগ্রিকভাবে রাজস্ব নির্ধারণ করা হত। ২০ থেকে ৩০ বছরের জন্য জমির বন্দোবস্ত দেওয়া হত।

২. এই ব্যবস্থায় একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তিকে জমির শর্ত দেওয়া হত না, বরং একটি নির্দিষ্ট মহল (Mahal)-এর ইজারা দেওয়া হত। ইজারাপ্রাপক গ্রামের মােড়ল বা প্রধান রাজস্ব আদায় করে সরকারের কাছে জমা দিত।

৩. জমির উৎপাদিকা শক্তি অনুসারে রাজস্বের হার নির্ধারিত হত। এই ব্যবস্থায় আদায় করা রাজস্বের ৮০ শতাংশ সরকার এবং ২০ শতাংশ ইজারাদারের প্রাপ্য ছিল।

৪. সরকার মহলগুলি থেকে সরাসরি রাজস্ব আদায় করত, তাই কোনাে মধ্যবর্তী শােষক গােষ্ঠী ছিল না।

এ ছাড়াও কোম্পানি নানা ধরনের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করে যেমন, ভাইয়াচারি বন্দোবস্ত পাঞ্জাবের কিছু অঞ্চলে চালু করা হয়। পরীক্ষানিরীক্ষা করে, যাতে সর্বোচ্চ রাজস্ব ভারতের চাষিদের জমি থেকে জোগাড় করা যায়, সেই লক্ষ্য পূরণে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উদ্যত হয়। এর ফলে সাধারণ কৃষকের ওপর অতিরিক্ত রাজস্বের বােঝা এসে পড়ে।

অথবা,

চীনের উপর আরোপিত বিভিন্ন অসম চুক্তিগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো। 8

উত্তরঃ

সূচনাঃ উনবিংশ ও বিংশ শতকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান প্রভৃতি ইউরােপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি চিনকে বিভিন্ন যুদ্ধে পরাজিত করে এবং নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামরিক আধিপত্যের প্রসার ঘটিয়ে তার ওপর বেশ কয়েকটি একতরফা শােষণমূলক চুক্তি চাপিয়ে দেয়। এই চুক্তিগুলি সাধারণভাবে ‘অসম চুক্তি’ বা ‘বৈষম্যমূলক চুক্তি’ নামে পরিচিত।

চিনের ওপর আরােপিত বিভিন্ন অসম বা বৈষম্যমূলক চুক্তি—

১. নানকিং-এর চুক্তি

যুদ্ধঃ প্রথম ইঙ্গ-চিন যুদ্ধ বা প্রথম অহিফেন যুদ্ধে (১৮৩৯-৪২ খ্রি.) পরাজিত হয়ে চিন ব্রিটিশদের সঙ্গে নানকিং-এর সন্ধি (১৮৪২ খ্রি.) স্বাক্ষরে বাধ্য হয়।

সন্ধির শর্তাবলিঃ নানকিং-এর সন্ধির দ্বারা- (ক) ক্যান্টন, সাংহাই, অ্যাময়, ফুচাও, নিংপােচিনের এই পাঁচটি বন্দর ইউরােপীয় বণিকদের বাণিজ্য ও বসবাসের জন্য খুলে দেওয়া হয়। (খ) হংকং বন্দর চিরকালের জন্য ইংরেজদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। (গ) ক্যান্টন বন্দরের বাইরে অবস্থান করে কোন নামে বণিকদের মাধ্যমে চিনের সঙ্গে ব্রিটিশদের বাণিজ্য করার প্রথা বাতিল হয়।

২. বগ-এর চুক্তিঃ নানকিং-এর সন্ধির কিছুকাল পর ব্রিটিশ সরকার চিনের ওপর বগ-এর সন্ধি (১৮৪৩ খ্রি.) চাপিয়ে দেয়। এই সন্ধির দ্বারা ব্রিটেন চিনে কিছু ‘অতি রাষ্ট্রিক অধিকার’ (Extra-Territorial Rights) লাভ করে। এই চুক্তির দ্বারা一

(ক) চুক্তি বন্দর পুলিতে বসবাসকারী চিনা ও ব্রিটিশ অধিবাসীদের ওপর চিনের আইন ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ লুপ্ত হয়। তারা ব্রিটিশ আইন ও বিচারব্যবস্থার অধীনে আসে।

(খ) চিন অন্য কোনাে বিদেশি রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে যেসব সুযােগসুবিধা দেবে সেগুলি ব্রিটেনকেও দিতে প্রতিশ্রুতি দেয়।

৩. ওয়াংঘিয়ার চুক্তিঃ অন্যান্য ইউরােপীয় শক্তিগুলি চিনের কাছ থেকে বেশ কিছু বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করলে দুর্বল চিন আমেরিকার সঙ্গে ওয়াংঘিয়ার চুক্তি (১৮৪৪ খ্রি., ৩ জুলাই) সাক্ষর করে। এই চুক্তির দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনে বিভিন্ন অতি রাষ্ট্রিক সুবিধা লাভ করে।

৪. হােয়ামপােয়ার চুক্তিঃ ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর ফ্রান্স চিনের ওপর হােয়ামপােয়ার চুক্তি চাপিয়ে দেয়। চিনের কাছ থেকে ব্রিটেন ইতিমধ্যে যেসব সুযােগসুবিধা আদায় করেছিল ফ্রান্সও হােয়ামপােয়া চুক্তির দ্বারা সেসব সুযােগসুবিধা আদায় করে। এই সন্ধির দ্বারা一
(ক) চিনের নতুন পাঁচটি বন্দর ফরাসি বণিকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

(খ) ফরাসি নাগরিকরা চিনে অতি-রাষ্ট্রিক সুবিধা লাভ করে।

(গ) চিন ও ফরাসি বণিকদের মধ্যে বণিক-শুল্ক নির্দিষ্ট হয়।

৫. আইগুন-এর সন্ধিঃ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের কাছে দ্বিতীয় অহিফেন যুদ্ধে চিন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সেই সুযােগে চিনের ওপর রাশিয়া আইগুন-এর সন্ধি (১৮৫৮ খ্রি. ২৮ মে) চাপিয়ে দেয়। এই সন্ধির দ্বারা—

(ক) চিনের উত্তরাংশের বেশ কিছু এলাকায় রাশিয়ার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

(খ) চিনের আমুর, উসুরি ও সংঘুয়াজিয়াং নদীতে একমাত্র রাশিয়া ও চিনের নৌ-চলাচল স্বীকৃত হয়।

৬. টিয়েনসিনের চুক্তিঃ ইউরােপীয় শক্তিগুলি চিনে আরও সুবিধা পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে।

যুদ্ধঃ ব্রিটেন ও ফ্রান্স চিনকে দ্বিতীয় অহিফেন যুদ্ধে (১৮৫৬-৫৮ খ্রি.) পরাজিত করে টিয়েনসিনের সন্ধি (১৮৫৮ খ্রি. জুন) স্বাক্ষরে বাধ্য করে।

সন্ধির শর্তাবলিঃ টিয়েনসিনের সন্ধির শর্তানুসারে, (ক) চিন সরকার ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়। (খ) বিদেশি বণিকদের জন্য চিনের আরও ১১টি বন্দর খুলে দেওয়া হয়। (গ) রাজধানী পিকিং-এ বিদেশি দূতাবাস স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

৭. পিকিং-এর সন্ধিঃ চিন সরকার টিয়েনসিনের চুক্তি অনুমােদনে টালবাহানা করলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। শেষপর্যন্ত ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর চিন আরও কিছু সুযােগসুবিধা দিয়ে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সঙ্গে পিকিং-এর সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়।

৮. শিমােনাসেকির সন্ধিঃ চিনের কোরিয়ার ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে চিন-জাপান যুদ্ধ (১৮৯৪-৯৫ খ্রি.) শুরু হয়। এই যুদ্ধে হেরে চিনের ওপর জাপান শিমােনােসেকির সন্ধি (১৮৯৫ খ্রি.) চাপিয়ে দেয়। চিনে জাপানের সাফল্যে আতঙ্কিত হয়ে ইউরােপীয় শক্তিগুলি চিনের বিভিন্ন অংশে নিজ নিজ ‘প্রভাবাধীন অঞ্চল’ গড়ে তােলে। ঐতিহাসিক হ্যারল্ড ভিনাক এই অবস্থাকে ‘চিনা তরমুজের খণ্ডীকরণ’ বলে অভিহিত করেছেন। শিমােনােসেকির সন্ধির শর্তানুসারে一

(ক) কোরিয়াকে চিন স্বাধীনতা দেয়।

(খ) চিনের কাছ থেকে জাপান পেস্কাডােরেস, তাইওয়ান, লিয়াও টুং উপদ্বীপ ও পাের্ট আর্থার লাভ করে।

(৩) জাপানকে চিন ২৩০ মিলিয়ন কিউপিং টেল ক্ষতিপূরণ দেয়।

(৪) চিন তার বেশ কয়েকটি বন্দর জাপানের জন্য খুলে দেয়।

৯. বক্সার প্রােটোকল—

বক্সার বিদ্রোহঃ চিং (বা কিং) বংশের (১৬৪৪-১৯১২ খ্রি.) শাসনকালে চিনে বিদেশি শক্তিগুলির শােষণ, নির্যাতন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনে বক্সার বিদ্রোহ (১৮৯৯-১৯০১ খ্রি.) শুরু হয়।

শান্তি চুক্তিঃ শেষপর্যন্ত বিদেশি সম্মিলিত বাহিনী বিদ্রোহ দমন করে এবং চিনের ওপর ‘বক্সার প্রােটোকল’ (১৯০১ খ্রি., ৭ সেপ্টেম্বর) নামে এক চুক্তি চাপিয়ে দেয়। বক্সার প্রােটোকলের শর্তানুসারে一

(ক) বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত ১২ জন রাজপুরুষের প্রাণদণ্ড এবং শতাধিক রাজপুরুষকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।

(খ) চিনের ওপর বিরাট অঙ্কের ক্ষতিপূরণের বােঝা চাপানাে হয়।

(গ) পিকিং-এর বিদেশি দূতাবাসগুলি রক্ষার জন্য সেখানে স্থায়ীভাবে বিদেশি সেনা মােতায়েন করা হয়।

(ঘ) চিনের ২৫টি দুর্গ ভেঙে ফেলা হয় এবং ১২৫টি রেলস্টেশন ইউরোপীয় সেনাদের দখলে রাখা হয়।

উপসংহারঃ চিনে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকা যেসব অতিরাষ্ট্রিক সুযােগসুবিধা লাভ করেছিল তা অন্তত ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বজায় থাকে। চিনের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটেন ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে হংকং-এর ওপর এবং পাের্তুগাল ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ম্যাকাও-এর ওপর তাদের দাবি ত্যাগ করে।

(iv) চিনের চৌঠা মে (May Fourth) আন্দোলনের কারণগুলি বিশ্লেষণ করো। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা করো। 4+4

ভূমিকাঃ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনের প্রতি আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর চিন কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন- তু-শিউ এর নেতৃত্বে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা মে পিকিং-এর ‘তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার’ -এ সমবেত হয়ে এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত।

আন্দোলনের কারণ বা পটভূমিঃ

এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। যেমন—

(১) ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতাঃ ১৯১১ সালের বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান- ইয়াৎ-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান- সি-কাই -এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর ইউয়ান-সি-কাই সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিবাদ করলে কুয়োমিনতাং দলের নেতা সুং- চিয়াও-জেন সহ অনেক বিরোধী নেতাকে হত্যা করেন। ফলে জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

(২) কুয়োমিনতাং দল নিষিদ্ধঃ ইউয়ান-সি-কাই এর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সান-ইয়াৎ-সেন ১৯১৩ সালে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দেন। ইউয়ান-সি-কাই কঠোর হাতে এই বিদ্রোহ দমন করেন এবং কুয়োমিনতাং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এর ফলে চিনা জনগণের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়।

(৩) জাপানের একুশ দফা দাবিঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান জার্মানির কাছ থেকে চিনের শান্টুং প্রদেশ দখল করে। এরপর ১৯১৫ সালে সমগ্র চিনের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একুশ দফা দাবি পেশ করে। এই আধিপত্যবাদী দাবির বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিবাদ জানায়।

একুশ দফা দাবির প্রতিবাদ জাপানের একুশ দফা দাবির বিরোধিতায় ১৯১৫ সালে চিনে ‘নাগরিকদের দেশপ্ৰেমী সমিতি’ ও ‘জাপ-বিরোধী কমরেডদের জাতীয় সমিতি’ গড়ে ওঠে। এই সমিতি জাপানি পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় ৷ একুশ দফা দাবির বিরুদ্ধে আমেরিকার চিনা ছাত্ররাও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

(৪) জাপানের সঙ্গে গোপন চুক্তিঃ সম্রাট পদের লোভে ইউয়ান-সি-কাই জাপানের সঙ্গে গোপন চুক্তি করেন। জাপানের পরামর্শে তিনি বয়কট আন্দোলন প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলে চিনে তীব্র জনরোষের সৃষ্টি হয়।

(৫) চিনা শিল্পের সংকটঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় চিনে বিদেশি পণ্যের আমদানি কমে যায়। এই সুযোগে চিনা শিল্প কিছুটা বিকাশ লাভ করে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে বিদেশি পণ্য পুনরায় বাজার দখল করলে চিনা শিল্পগুলি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে।

(৬) প্রত্যক্ষ কারণঃ ১৯১৯ সালে প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে চিনের প্রতিনিধিরা ‘জাপানের একুশ দফা দাবি’ সহ সমস্ত অসমচুক্তি এবং শান্টুং প্রদেশে জাপানি কর্তৃত্ব বাতিলের দাবি জানায়। কিন্তু ইউরোপীয় কতৃপক্ষ চিনের দাবিগুলিকে ‘আলোচনা বহির্ভুত’ বিষয় বলে এড়িয়ে যায়।

(৭) আন্দোলনের সূত্রপাতঃ এই পরিস্থিতিতে চিনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চেন-তু-শিউ ১৯১৯ সালের ৪ ঠা মে বয়কট আন্দোলনের ডাক দেন। দেশ ও বিদেশের চিনা ছাত্ররা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ক্রমে চিনা শ্রমিক শ্রেণি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে।

আন্দোলনের প্রভাব বা গুরুত্বঃ ৪ ঠা মে-র আন্দোলন চিনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। যেমন—

(১) দেশাত্মবোধ ও আধুনিকতার উদ্ভবঃ এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই চিনে আধুনিকতা, দেশপ্রেম, ও জাতীয়তাবোধের সূচনা হয়।

(২) সরকারের নতি স্বীকারঃ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চাপে সরকার ধৃত ছাত্রদের ছেড়ে দিতে এবং ভার্সাই সন্ধিতে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়

(৩) কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাঃ এই আন্দোলনের ফলেই চিনে কুয়োমিনতাং দলের পুনর্গঠন হয় এবং কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান ঘটে। জঁ-শোনো- র মতে চিনের শ্রমিক শ্রেণি রাজনৈতিক সংগ্রামের আঙিনায় প্রবেশ করে।

(৪) ব্যাপকতাঃ ৪ ঠা মে -র আন্দোলনের প্রভাব ছিল চিনের সর্বত্র এবং এর গণভিত্তি ছিল ব্যাপক।

(৫) সাংস্কৃতিক অগ্রগতিঃ এই সময় চিনের পুরোনো কনফুসীয় মতাদর্শ সমালোচিত হতে থাকে এবং নতুন সংস্কৃতিকে সবাই স্বাগত জানায়। ফলে ব্যাপক সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ঘটে।

উপসংহারঃ ঐতিহাসিক ইমানুয়েল সু-র মতে, ৪ ঠা মে-র আন্দোলন চীনের সাংস্কৃতিক জগতে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আনে। চিনা ঐতিহাসিক হো-কান-চি বলেন, ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নতুন বিপ্লবী ঝড়ের জন্ম দেয় এবং চিনের বিপ্লবকে এক নতুন স্তরে পৌঁছে দেয়।

খণ্ড-খ

(vi) জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট কী ছিল ? এই ঘটনার গুরুত্ব আলোচনা করো। 4+4

উত্তরঃ

সূচনাঃ রাওলাট আইনের প্রতিবাদে গান্ধীজীর আহবানে সাড়া দিয়ে সমগ্র দেশ জুড়ে শুরু হয় সত্যাগ্রহ আন্দোলন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ১৩ ই এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরে জালিয়ানওয়ালাবাগ নামক উদ্যানে এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে জেনারেল ও’ ডায়ারের নির্দেশে ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী গুলি চালালে সরকারি মতে ৩৭৯ জন নিহত ও ১২০০ জন আহত হন। যদিও বেসরকারি মতে এই সংখ্যাটা অনেক বেশি। বর্বর ব্রিটিশ পুলিশের এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত।

প্রেক্ষাপটঃ এই জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট নিম্নে আলোচনা করা হল।
(১) ব্রিটিশ সরকারের তীব্র অত্যাচারঃ
অত্যাচারী বৃটিশ সরকারের বিভিন্ন দমনমূলক পদক্ষেপ এর বিরুদ্ধে পাঞ্জাবে ব্রিটিশ বিরোধী গণআন্দোলন ক্রমশ তীব্র হতে থাকে। পাঞ্জাবির মুখ্য প্রশাসক লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল এর অত্যাচারী শাসন পাঞ্জাবকে বারুদের স্তূপে পরিণত করে জুলুম চালিয়ে যুদ্ধের জন্য পাঞ্জাব থেকে সেনা ও অর্থ সংগ্রহ এবং বিদ্রোহ বিপ্লব প্রতিরোধ করতে পাঞ্জাবীদের ওপর চরম নির্যাতন চালানো বঞ্চনার প্রতিবাদ সমাবেশ ঘটনা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করে তোলে।

(২) কুখ্যাত রাওলাট আইন প্রণয়নঃ

সরকার ভারতীয় যাবতীয় স্বাধীনতার অধিকার কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে কূখ্যাত নিষ্ঠুর দমনমূলক 1919 খ্রিস্টাব্দে রাওলাট আইন প্রবর্তন করলে দেশবাসী ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে। এবং এই বিক্ষোভের আঁচ পাঞ্জাবে সবথেকে গভীর এবং অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

(৩) বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের গ্রেপ্তারঃ এই সময় সরকার ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ১০ এপ্রিল অমৃতসরের স্থানীয় দুই নেতা সইফুদ্দিন কি ছিল ও সত্য পাল কে হিংসায় মদত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করলে জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে অন্যদিকে গান্ধীজিকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে লাহোরে স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট পালিত হয় মারমুখী জনতা বিভিন্ন সরকারি অফিস-আদালত টেলিগ্রাফ লাইন ইউরোপীয় নারী-পুরুষের ওপর আক্রমণ চালায়।

(৪) সামরিক শাসন জারিঃ অমৃতসরে আন্দোলন প্রবল হয়ে উঠলে জেনারেল মাইকেল ও’ ডায়ারের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর হাতে পাঞ্জাবের শাসনভার তুলে দেওয়া হয় সামরিক আইন জারি করে ১১ ই এপ্রিল শহরে জনসভা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।

হত্যাকান্ডঃ এই অবস্থায় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ নামক উদ্যানে প্রায় ১০ হাজার জনতা সমবেত হয়েছিল দুই জনপ্রিয় নেতা সইফুদ্দিন কিচলু ও ডক্টর সত্যপালের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। সভাস্থলটি চারদিকে ছিল বড় বড় পাকা বাড়ি এবং প্রাচীর দিয়ে বেষ্টিত একটি উদ্যান এই উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছিল একটি পথ এবং প্রস্থানের জন্য ছিল চারটি সংকীর্ণ গলিপথ। এই নির্দিষ্ট স্থানে বৈশাখী মেলা উপলক্ষে উপস্থিত হওয়ার নারী-পুরুষ ও শিশুদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যারা ১১-ই এপ্রিল ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পাঞ্জাবে সামরিক শাসন জারি ও জনসভা ও সমাবেশ নিষিদ্ধের কথা জানত না।
পাঞ্জাবের সামরিক শাসন কর্তা মাইকেল ও ডায়ার বিশাল সেনাবাহিনী সেখানে উপস্থিত হন এবং মাঠের ওই প্রবেশ পথ আটকে ৫০ টি রাইফেল থেকে জনগণকে কোন প্রকার সতর্কবার্তা না দিয়ে সেনাবাহিনীকে নির্বিচারে গুলি করার নির্দেশ দেন। সেনাবাহিনী ১০ মিনিট ধরে প্রায় ১৬ রাউন্ড গুলি চালায়। প্রচুর মানুষ হতাহত হয় সরকারি হিসাব অনুসারে নিহতের সংখ্যা ছিল ৩৭৯ জন এবং আহতের সংখ্যা ছিল ১২ জন। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারের তরফ থেকে কোনো ক্ষমা স্বীকার করা হয়নি শুধু তাই নয় ওই দিন অমৃতসরের সান্ধ্য আইন জারি করে মৃতদেহগুলোকে তাদের আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া কিংবা আহতদের সেবা শুশ্রূষা করার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।

প্রতিক্রিয়াঃ এই ভয়ানক ও মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনায় ব্রিটিশ শাসনের প্রকৃত নগ্ন রূপটি প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং সারা দেশে বিদেশে সর্বত্রই এই নগ্ন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

(১) এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজদের দেওয়ার ‘নাইট’ উপাধি ঘৃণাভরে ত্যাগ করেন এবং বলেন “পাঞ্জাবের দুঃখের তাপ আমার বুকের পাঁজর পুড়িয়ে দিলে।”

(২) রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন “জালিয়ানওয়ালাবাগ সমগ্র ভারতে এক মহাযুদ্ধের আগুন জ্বেলে দেয়।”

(৩) মহাত্মা গান্ধী বলেন “এই শয়তান সরকারকে আর সংশোধন করা যাবে না একে শেষ করতেই হবে।”

(৪) জাতীয় কংগ্রেস একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে জেনারেল ডায়ার কে শাস্তি দানের সুপারিশ করে।

(৫) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল বলেন “জালিয়ানওয়ালাবাগের মত মর্মান্তিক ঘটনা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে আর কখনো ঘটেছে বলে আমার মনে হয় না।”

(৬) এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সমগ্র দেশের মানুষ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

(৭) এই হত্যাকাণ্ড ভারতবাসীকে এক তীব্র ইংরেজ বিরোধী শক্তিতে পরিণত করেছিলো যার প্রভাব দেখা দিয়েছিল অসহযোগ আন্দোলনে।

(৮) অবশ্য এত প্রতিবাদ ও সমালোচনা সত্ত্বেও ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের কথায় কোন প্রকার কর্ণপাত করেনি।

মূল্যায়নঃ পরিশেষে বলা যায় ব্রিটিশ সরকার কর্ণপাত না করলেও শেষ পর্যন্ত উধম সিং নামে এক ভারতীয় 1941 খ্রিস্টাব্দে জেনারেল ও ডায়ারকে হত্যা করে জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন।

(v) 1935 খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট ও শর্তাবলী আলোচনা করো। এই আইনের গুরুত্ব কী ছিল ? 4+4

উত্তরঃ ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট—
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন উপাদান সক্রিয় ছিল। যেমন一

(১) মন্ট-ফোর্ড আইনের ব্যর্থতাঃ ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু চেমসফোর্ড আইন প্রণয়নের পরবর্তীকালে ভারতীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যায়। এই আইন ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হলে গান্ধিজির নেতৃত্বে সারা ভারতে প্রবল গণ আন্দোলন শুরু হয়। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই সময় বিপ্লববাদী কার্যকলাপও যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের প্রসার ব্রিটিশ সরকারকে ভাবিয়ে তােলে।

(২) সাইমন কমিশনের রিপোর্টঃ এই সময় ভারতীয়রা স্বায়ত্তশাসন লাভের উপযুক্ত কিনা তা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে সাইমন কমিশন ভারতে আসে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে কমিশনের রিপাের্টে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের ওপর সুপারিশ করা হয়।

(৩) গােলটেবিল বৈঠকঃ সাইমন কমিশনের রিপাের্টের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় নেতৃবর্গের সঙ্গে আলাপ-আলােচনার উদ্যোগ নেয়। প্রথম (১৯৩০ খ্রি.), দ্বিতীয় (১৯৩১ খ্রি.) ও তৃতীয় (১৯৩২ খ্রি.)—এই তিনটি গােলটেবিল বৈঠকের আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার নতুন সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়ােজন অনুভব করে। শেষপর্যন্ত সাইমন কমিশনের রিপাের্ট ও গােলটেবিল বৈঠকের আলােচনা ও প্রস্তাবগুলির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য প্রস্তাবসমূহ নামে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে (১৯৩৩ খ্রি.)। অতঃপর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে এই সকল প্রস্তাব এবং যৌথ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভারত শাসন আইন বা Government of India Act, 1935 পাস হয়।

1935 খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের শর্তাবলি

(১) যুক্তরাষ্ট্র গঠনঃ এই আইনে ব্রিটিশ শাসনাধীন রাজ্য ও বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার দেওয়া হয় বড়ােলাট ও তার অধীনস্থ একটি মন্ত্রীসভার হাতে।

(২) কেন্দ্রীয় সরকারঃ ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনে কেন্দ্রে পাঁচ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠনের কথা বলা হয়। কেন্দ্রে মুসলিম সদস্যদের জন্য সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে এবং তপশিলি সদস্যদের পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.)র ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। কেন্দ্রীয় প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে সংরক্ষিত (পররাষ্ট্র সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা, সেনাবাহিনী, রেলপথ ইত্যাদি বিষয়) এবং হস্তান্তরিত (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণের মতাে বিষয়গুলি) দপ্তরে রেখে কেন্দ্রে এক দ্বৈত শাসনব্যবস্থার (Dyarchy) প্রচলন ঘটানাে হয়। কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনার কাজে বড়ােলাটকে চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়।

(৩) প্রাদেশিক সরকারঃ ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দ্বারা প্রদেশগুলিকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রদান করা হয়। কেন্দ্রের অনুকরণেই প্রদেশগুলােরও শাসনকাঠামাে গঠন করা হয়। তবে প্রদেশগুলিতে আইনসভা এককক্ষ বা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট উভয়ই হতে পারত। প্রদেশের ছােটোলাট বা গভর্নর তাঁর মন্ত্রীপরিষদের সাহায্যে শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পান। তার হাতে বিশেষ ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়।

(৪) ক্ষমতার বণ্টনঃ ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তােলার কথা বলা হয় সেখানে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের উদ্দেশ্যে তিনটি তালিকা তৈরির কথা বলা হয়। যথা一

• কেন্দ্রীয় তালিকাঃ এর মধ্যে ছিল বিদেশনীতি, রেল, ডাক, মুদ্রা প্রভৃতি।

• প্রাদেশিক তালিকাঃ এর মধ্যে ছিল শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, পুলিশ, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয় ইত্যাদি।

• যুগ্মতালিকাঃ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল মুদ্রণ, সংবাদপত্র, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন, বিবাহ, উত্তরাধিকার প্রভৃতি।

(৫) প্রাদেশিক বিভাজনঃ ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইন দ্বারা ভারতের প্রদেশগুলিকে দুইটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা一

• গভর্নর শাসিত প্রদেশঃ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল বাংলা, বােম্বাই, মাদ্রাজ, যুক্তপ্রদেশসহ মােট ১১টি প্রদেশ।

• চিফ কমিশনার শাসিত প্রদেশঃ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল মাড়ােয়ার, আজমীর, বেলুচিস্তান, কুর্গ এবং আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এই পাঁচটি প্রদেশ।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব—

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনও ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তবুও এই আইন নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল一

(১) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনের ভিত্তি রচনাঃ ১৯৩৫-এর ভারতশাসন আইনের দ্বারা ভারতের শাসন ব্যবস্থাকে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামাে প্রদান করা হয়। তাই এই আইনের ফলে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।

(২) দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার প্রবর্তনঃ এই আইনে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টনের মধ্য দিয়ে এক দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়।

(৩) ভােটাধিকার বৃদ্ধিঃ ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনের দ্বারা প্রথম বারের জন্য সরাসরি নির্বাচন উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি ভােট দেওয়ার অধিকারও বৃদ্ধি করা হয়।

(৪) ভারতীয় সংবিধানের ভিত্তিঃ স্বাধীন ভারতের সংবিধানের যে কাঠামােটি আমরা দেখি তা ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে।

(৫) স্বায়ত্তশাসনের অধিকার লাভঃ ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন ভারতীয়দের বহুদিনের স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের বাসনা পূরণ করে। এই আইনের মাধ্যমে প্রদেশগুলি যেটুকু স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছিল, জিন্না ও মুসলিম লিগ তার প্রশংসা করে।

(vii) জোট নিরপেক্ষ নীতি কী ছিল ? জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য আলোচনা করো। 4+4

উত্তরঃ জোটনিরপেক্ষ নীতি—
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সােভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের কোনাে একটি জোটে যােগ না দিয়ে নিরপেক্ষ থাকার নীতিই হল জোটনিরপেক্ষ বা নিজোর্ট নীতি। এই জোটনিরপেক্ষ দেশগুলি নিজেদের স্বার্থে যে আন্দোলন গড়ে তােলে তার নাম নির্জোট আন্দোলন। এই নীতির প্রবক্তা হলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং যুগােশ্লাভিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্শাল টিটো।

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য—

(১) জাতীয় ঐতিহ্য রক্ষাঃ সুপ্রাচীন কাল থেকেই অহিংসা, শান্তি, সহমর্মিতা ও সহনশীলতার আদর্শে ভারত বিশ্বাসী। হিংসা- জর্জরিত পৃথিবীতে বুদ্ধ ও অশােকের শান্তির বাণী ভারতবর্ষের সীমানা ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ক্ষমতার শীর্ষে উঠেও আকবর ও শিবাজি সহনশীলতার কথা প্রচার করেন। এই সুমহান আদর্শ ও জাতীয় ঐতিহ্য বহন করার উদ্যোগ থেকেই ভারত সরকার জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণে অগ্রসর হয়।

(২) রাজনৈতিক স্বতন্ত্রতাঃ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারত পুঁজিবাদ বা সাম্যবাদকোনােটিকেই সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করেনি। কারণ ভারত গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু নিজেই ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরােধী ছিলেন। নেহরু বলেছিলেন—বিশ্বের পক্ষে ও আমাদের পক্ষে যা ক্ষতিকর তা আমরা নির্দ্বিধায় নিন্দা করব।

(৩) আর্থসামাজিক উন্নতিঃ স্বাধীনতা লাভের ঠিক পরের মুহূর্ত থেকেই ভারত এক গভীরতর আর্থসামাজিক সংকটের মুখে পড়ে। দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা, বেকারত্ব, খাদ্যাভাব, কালােবাজারি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা—এসব সমস্যার ফলে ভারতীয় অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়লে নেহরু স্বতন্ত্র আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণের দ্বারা আর্থসামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সচেষ্ট হন।

(৪) জাতীয় স্বার্থের সংরক্ষণঃ জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে কোনাে দেশেরই পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয় না। তবে এই স্বার্থ সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু কখনােই উপেক্ষিত হতে পারে না। সাম্যবাদী বা ধনতন্ত্রবাদী কোনাে জোটের মধ্যে না গিয়ে নেহরু মিশ্র অর্থনীতি ও স্বাধীন বিদেশনীতি গ্রহণের দ্বারা জাতীয় স্বার্থের সংরক্ষণ চেয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে নেহরু বলেছেন- “স্বাভাবিকভাবেই আমি ভারতের স্বার্থের দিকে লক্ষ রেখেছি, কারণ এটিই আমার প্রধান কর্তব্য”।

(৫) নিরপেক্ষতাঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্যবাদী ও ধনতন্ত্রবাদী— এই দুই পরস্পরবিরােধী শক্তিজোটে বিভক্ত বিশ্ব যখন ঠান্ডা লড়াইয়ে মত্ত, তখন ভারত কোনাে জোটেই অংশগ্রহণ না করে নিরপেক্ষনীতি গ্রহণ করে।

(৬) তৃতীয় শক্তিজোটের নেতৃত্বঃ যে সমস্ত দেশ ঠান্ডা লড়াইয়ের বাইরে থাকতে চাইছিল, কী আয়তন, কী জনসংখ্যা উভয় ব্যাপারেই ভারতের কাছে তারা ছিল নিতান্তই নগণ্য। সুতরাং নিজের নেতৃত্বে বিশ্বে একটা জোটনিরপেক্ষ গােষ্ঠী বা তৃতীয় শক্তিজোট গড়ে তােলার লক্ষ্যেও ভারত জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে।

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের গুরুত্ব—

(১) নবলব্ধ স্বাধীনতা রক্ষাঃ জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন এশিয়া আফ্রিকার নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগােষ্ঠীর নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষা করে তাদের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের প্রয়াসকে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে।

(২) ভারসাম্য রক্ষাঃ দ্বিমেরুকরণ রাজনীতির মাঝে তৃতীয় বিশ্বের আবির্ভাব ঘটিয়ে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন বিশ্ব রাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(৩) শান্তিপ্রতিষ্ঠাঃ বর্ণবৈষম্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও আণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে এই আন্দোলন বিশ্বে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

(৪) জঙ্গি আগ্রাসন রােধঃ এই আন্দোলন বিশ্বে সােভিয়েত-মার্কিন জঙ্গি আগ্রাসনকে যে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল তাতে সন্দেহ নেই। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের এ এক ব্যতিক্রমী সাফল্য।

(৫) তৃতীয় বিশ্বের আত্মর্যাদা প্রতিষ্ঠাঃ এই আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার আগে পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলিই বিশ্বরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করত। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্যই ছিল শেষ কথা। কিন্তু এই আন্দোলন তৃতীয় বিশ্বের সদ্য স্বাধীন, দরিদ্র ও অনুন্নত দেশ ও জাতিগুলিকে আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে।

অথবা,

ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝায় ? ঠান্ডা লড়াই-এর তাত্ত্বিক ভিত্তি ব্যাখ্যা করো। 3+5

ভূমিকাঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা এবং রাশিয়ার নেতৃত্বে বিশ্ব রাজনীতিতে পরস্পর বিরোধী দুটি রাষ্ট্রজোটের উদ্ভব ঘটে।

ঠাণ্ডা লড়াই—

১৯৪৫ খ্রী: দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অবসানের পর সমগ্র বিশ্ব আমেরিকা ও তার নেতৃত্বাধীন ধণতন্ত্র গোষ্ঠী এবং সোভিয়েত রাশিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক গোষ্ঠী – এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না হলেও দীর্ঘদিন ধরে পারস্পারিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সন্দেহ এবং ছায়াযুদ্ধ চলতে থাকে। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান এই বিশেষ স্নায়ু যুদ্ধকে Cold War বা ঠান্ডা লড়াই বলে আখ্যা দিয়েছেন।

ঠাণ্ডা লড়াইয়ের তাত্ত্বিক ভিত্তি—

আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রজোটের মধ্যে সংঘটিত ঠান্ডা যুদ্ধের দায়বদ্ধতা, প্রকৃতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রতত্ত্ববিদদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী ধারণা লক্ষ্য করা যায়। এই পরস্পরবিরোধী ধারণাগুলিই হল ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণা।

ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণাসমূহ—

ঠান্ডা লড়াইয়ের তাত্ত্বিক ধারণাগুলি নিম্নলিখিত ভাবে আলোচনা করা যেতে পারে।

(১) চিরায়ত বা ঐতিহ্যবাহী ধারণা—

(i) সমর্থকগণঃ ঐতিহ্যবাহী ধারণার সমর্থক হলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ. কেন্নান, হার্বার্ট ফিস, ম্যাক্সিম লিটভিনভ, জন স্পেনিয়ার, উইলিয়াম এইচ. ম্যাকলিন, মার্টিন ম্যাককাউলে, জে. আর. ম্যাককারথি, জন ডব্লিউ. ম্যাসন প্রমুখ ।

(ii) মূল বক্তব্যঃ ঐতিহ্যবাহী ধারণার মূল বক্তব্য হল ঠান্ডা লড়াইয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষা সোভিয়েত ইউনিয়নই বেশি দায়ী। এই ধারণা অনুযায়ী মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের শ্রেণিসংগ্রাম থেকেই ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা ঘটেছে। এই মতামত অনুসারে রাশিয়া তার কমিউনিস্ট জগতের পরিধি বাড়াতে চেয়েছিল, আর তা করতে গিয়ে রাশিয়া অকমিউনিস্ট শক্তিগুলির প্রতি মিত্ৰতামূলক সম্পর্ক নষ্ট করে। রাশিয়ার এই অগ্রগতি প্রতিরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সচেষ্ট হলে বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা ঘটে।

(২) সংশোধনবাদী ধারণা—

(i) সমর্থকগণঃ ঠান্ডা যুদ্ধে সংশোধনবাদী তাত্ত্বিক ধারণার পথপ্রদর্শক ছিলেন ওয়াল্টার লিপম্যান । এই ধারণার অন্যান্য কয়েকজন সমর্থক ছিলেন ডি. এফ. ফ্লেমিং, গ্যাব্রিয়েল কলকো, গার অ্যালপারোভিজ, হেনরি এ. ওয়ালেস, ওলিভার এডওয়ার্ডস, উইলিয়াম অ্যাপেলম্যান উইলিয়াম, ওয়াল্টার লেফেভর, ডেভিড হরোউইজ, লয়েড গার্ডনার প্রমুখ।

(ii) মূল বক্তব্যঃ সংশোধনবাদী তাত্ত্বিক ধারণার সমর্থকগণের মূল বক্তব্য হল সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্প্রসারণশীল নীতি নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতি ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছিল। এই ধারণা অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিহত করতে না পেরে নিজস্ব প্রভাবাধীন অঞ্চলের সম্প্রসারণ ঘটাতে শুরু করে ও ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনাকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।

(৩) বাস্তববাদী ধারণাঃ ঐতিহ্যবাহী এবং সংশোধনবাদী উভয় ধারণার মধ্যবর্তী অবস্থান গ্রহণ করে একদল গবেষক ও ঐতিহাসিক ঠান্ডা যুদ্ধের যে তত্ত্ব পেশ করেছেন তা ‘বাস্তববাদী তত্ত্ব’ নামে পরিচিত।

(i) সমর্থকগণঃ এই তত্ত্বের কয়েকজন সমর্থক হলেন হ্যানস্ জে. মরগ্যানথাউ, লুই জে. হ্যালে, রিচার্ড ক্রকেট, জন লুইস গ্যাডিস প্রমুখ।

(ii) মূল বক্তব্যঃ বাস্তববাদী ধারণার সমর্থকেরা ঠান্ডা যুদ্ধের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো-একটি পক্ষকে চূড়ান্তভাবে দায়ী করায় বিশ্বাসী নন। এঁদের ধারণায় ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনার জন্য সোভিয়েত বা মার্কিন উভয়পক্ষই দায়ী ছিল অথবা কোনো পক্ষই দায়ী ছিল না।

(৪) অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাখ্যাঃ

(i) কেউ কেউ মনে করেন যে, ঠান্ডা লড়াই ছিল প্রকৃতপক্ষে আমেরিকার অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের অন্যতম দিক। গ্যাব্রিয়েল কলকো, কর্ডেল প্ৰমুখ এই অভিমতের সমর্থক।

(ii) গ্যাব্রিয়েল কলকো দেখিয়েছেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। আমেরিকা তার এই আর্থিক শক্তিকে ব্যবহার করে বিশ্ব-অর্থনীতির প্রধান চালকের আসন লাভের চেষ্টা করেছিল। এই লক্ষ্যে আমেরিকা তার বিদেশনীতিতে পরিবর্তন ঘটায়। মার্শাল পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে বিপুল পরিমাণ অর্থসাহায্য দিয়ে আমেরিকা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে নিজেকে পরিত্রাতা হিসেবে তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বৈদেশিক ক্ষেত্রে আমেরিকার অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়নের প্রধান বাধা ছিল সোভিয়েত রাশিয়া।

মূল্যায়ণঃ সাধারণ ভাবে দেখা যায় যে, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভবের জন্য হয় সোভিয়েত রাশিয়া নয় আমেরিকার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যে ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভবে অনুঘটকের কাজ করেছিল তা দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়।

উপসংহারঃ রাশিয়া ও তার অনুগত রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে আমেরিকা একপ্রকার ক্রুসেড ঘোষণা করে। এর ফলেই ঠান্ডা লড়াইয়ের সূত্রপাত ঘটে।

(viii) সার্ক কীভাবে গঠিত হয়েছিল ? সার্ক-এর উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল ? 4+4

উত্তরঃ ‘সার্ক’ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট—

(১) জিয়াউর রহমানের শ্রীলঙ্কা সফরঃ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে কোনাে আঞ্চলিক সহযােগিতা সংস্থা গড়ে তােলার উদ্যোগ সর্বপ্রথম ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়। এ বিষয়ে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (১৯৩৬-১৯৮১খ্রি.)। তিনি ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কা সফরকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযােগিতার উদ্দেশ্যে একটি আঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন এবং নিজে সক্রিয় উদ্যোগ নেন।

(২) সার্ক গঠনের সিদ্ধান্তঃ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে একটি সহযােগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিদেশম্ত্রীগণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হন। পরবর্তী কয়েক বছরে কলম্বাে (১৯৮১ খ্রি.), কাঠমান্ডু (১৯৮১ খ্রি.), ইসলামাবাদ (১৯৮২ খ্রি.), ঢাকা (১৯৮৩ খ্রি.) প্রভৃতি স্থানে একাধিক সম্মেলনে মিলিত হন। অবশেষে এসব দেশের বিদেশমন্ত্রীগণ ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের দিল্লি সম্মেলনে সমবেত হয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযােগিতা সংস্থা বা সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।

(৩) সার্ক-এর প্রতিষ্ঠাঃ জিয়াউর রহমানের উদ্যোগ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে (৭-৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলিকে নিয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযােগিতা সংস্থা বা সার্ক গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সার্কের পর্যবেক্ষক নির্বাচিত হয়েছে চিন ও জাপান। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে সার্কের সদর দফতর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে স্থাপিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা হল দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযােগিতা সংস্থা বা South Asian Association for Regional Co-operation (SAARC)। সার্কের বর্তমান সদস্য রাষ্ট্রগুলি হল—

(i) ভারত, [ii) বাংলাদেশ, (iii) পাকিস্তান,

(iv) শ্রীলঙ্কা, (v) নেপাল, (vi) ভুটান,

(vii) মালদ্বীপ, (viii) আফগানিস্তান।

‘সার্ক’-এর উদ্দেশ্য—

ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী রাজীব গান্ধি বলেছিলেন যে, সার্ক দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির আত্মনির্ভরতার সমস্যার সমাধান, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সাক্ষরতার প্রসার, অপুষ্টি ও রােগ দূরীকরণের সঙ্গে যুক্ত। সার্ক বা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযােগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি হল—

(১) উন্নয়নঃ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি এবং সামাজিক উন্নয়ন ঘটানাে।

(২) আত্মনির্ভরতাঃ সার্কের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষা এবং যৌথ আত্মনির্ভরতার শক্তি বৃদ্ধি করা।

(৩) উৎসাহ প্রধানঃ অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় সক্রিয় সহযােগিতার বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে উৎসাহিত করা।

(৪) যােগাযােগ বৃদ্ধিঃ সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদান এবং সেসব দেশের জনগণের মধ্যে যােগাযােগ বৃদ্ধি করা।

(৫) জনকল্যাণঃ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির জনগণের কল্যাণসাধন এবং তাদের জীবনযাত্রার মানােন্নয়ন ঘটানাে।

(৬) সহযােগিতাঃ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, কারিগরি, বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযােগিতা বৃদ্ধি করা। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলির সঙ্গেও এই সহযােগিতার সম্পর্ক গড়ে তােলা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

(৭) উন্নয়নঃ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযােগিতা বৃদ্ধির দ্বারা সার্কের সদস্যগুলির অর্থনৈতিক বিকাশ, সামাজিক অগ্রগতি ও সাংস্কৃতিক উন্নতি ঘটানাে।

(৮) বােঝাপড়াঃ সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, বােঝাপড়া ও সংবেদনশীলতার পরিবেশ তৈরি করা।

(৯) হস্তক্ষেপ না করাঃ সদস্য রাষ্ট্রগুলির ভৌগােলিক অখণ্ডতা রক্ষা ও অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।

(১০) নিরাপত্তা বিধানঃ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরােধ করা।

(১১) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানঃ সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা।

PART – B

1. বিকল্প উত্তরগুলির মধ্যে থেকে সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো : 1×24 = 24

(i) ‘সব ইতিহাসই সমকালীন ইতিহাস’– এটি কার উক্তি ?
(a) ক্রোচের, (b) র‍্যাঙ্কের, (c) র‍্যালের,
(d) ই. এইচ. কার-এর।

উত্তরঃ (a) ক্রোচের

(ii) ‘‘রাজতরঙ্গিনী’ রচনা করেন –
(a) কৌটিল্য, (b) কলহন, (c) বিলহন,
(d) কালিদাস।

উত্তরঃ (b) কলহন

(ii) পোর্তুগিজরা ‘ব্ল্যাক গোল্ড’ বলত—
(a) কয়লাকে, (b) গোলমরিচকে,
(c) লবঙ্গকে, (d) দারুচিনিকে।

উত্তরঃ (b) গোলমরিচকে

(iv) ভারতে এশিয়াটিক সোসাটির প্রতিষ্ঠা হয়—
(a) 1784 খ্রিস্টাব্দে (b) 1774 খ্রিস্টাব্দে
(c) 1798 খ্রিস্টাব্দে (d) 1874 খ্রিস্টাব্দে।

উত্তরঃ (a) 1784 খ্রিস্টাব্দে


👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈


(v) ভারতের কোন্ রাজ্যে প্রথম ইংরেজরা রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ?
(a) বোম্বে, (b) গুজরাট, (c) মাদ্রাজ,
(d) বাংলা।

উত্তর (d) বাংলা।

(vi) স্তম্ভ-১ এর সঙ্গে স্তম্ভ-২ মেলাও :

স্তম্ভ-১ স্তম্ভ-২
(i) ফারুকশিয়রের ফরমান (A) 1773
(ii) পিটের ভারত শাসন আইন (B) 1717
(iii) রেগুলেটিং আইন (C) 1765
(iv) কোম্পানির দেওয়ানি লাভ (D) 1784

বিকল্পসমূহ :
(a) (i) – B, (ii) – D, (iii) – A, (iv) – C
(b) (i) – C, (ii) – B, (iii) – D, (iv) – A
(c) (i) – D, (ii) – C, (iii) – A, (iv) – B
(d) (i) – A, (ii) – B, (iii) – C, (iv) – D

উত্তরঃ (a) (i) -B, (ii) -D, (iii) -A, (iv) -C

(vii) নানকিং-এর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল –
(a) 1839 খ্রিস্টাব্দে, (b) 1841 খ্রিস্টাব্দে,
(c) 1843 খ্রিস্টাব্দে, (d) 1845 খ্রিস্টাব্দে।

উত্তরঃ (b) 1841 খ্রিস্টাব্দে।

(viii) ‘বর্তমান ভারত’ রচনা করেন—
(a) বিবেকানন্দ, (b) বিদ্যাসাগর,
(c) রামমোহন, (d) রবীন্দ্রনাথ।

উত্তরঃ (a) বিবেকানন্দ

(ix) শুদ্ধি আন্দোলনের প্রবর্তক ছিলেন—
(a) দয়ানন্দ সরস্বতী, (b) লালা হংসরাজ,
(c) কেশবচন্দ্র সেন, (d) বাল গঙ্গাধর তিলক

উত্তরঃ (a) দয়ানন্দ সরস্বতী

(x) রামমোহন রায়কে কে ‘রাজা’ উপাধি দিয়েছিলেন ?
(a) লর্ড মিন্টো,
(b) সম্রাট বাহাদুর শাহ,
(c) মুঘল সম্রাট ‘দ্বিতীয় আকবর,
(d) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

উত্তরঃ (c) মুঘল সম্রাট ‘দ্বিতীয় আকবর’

(xi) ‘Poverty and un-British rule in India’ রচনা করেন—
(a) অরবিন্দ, (b) গান্ধিজি,
(c) দাদাভাই নৌরজি, (d) সুরেন্দ্রনাথ।

উত্তরঃ (c) দাদাভাই নৌরজি

(xi) মুসলিম লিগের কোন্ অধিবেশনে পাকিস্তান দাবি করা হয় ?
(a) লাহোর, (b) লক্ষ্ণৌ, (c) মাদ্রাজ,
(d) পাঞ্জাব।

উত্তরঃ (a) লাহোর

(xii) 1943-এর বাংলার দুর্ভিক্ষের সময় ভারতের ভাইসরয় কে ছিলেন ?
(a) ওয়াভেল, (b) রিপন, (c) আরউইন,
(d) ক্লাইভ।

উত্তরঃ (a) ওয়াভেল।

(xiv) স্তম্ভ-১-এর সঙ্গে স্তম্ভ-২ মেলাও :

স্তম্ভ-১ স্তম্ভ-২
(i) RIN বিদ্রোহ (A) 1943
(ii) ক্রিপস্ মিশন (B) 1946
(iii) লিনলিথগো প্রস্তাব (C) 1942
(iv) আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা (D) 194

বিকল্পসমূহ :
(a) (i) – B, (ii) – D, (iii) – C, (iv) – A
(b) (i) – D, (ii) – C, (iii) – A, (iv) – B
(c) (i) – B, (ii) – C, (iii) – D, (iv) – A
(d) এগুলির কোনোটিই নয়।

উত্তরঃ (c) (i) -B, (ii) -C, (iii) -D, (iv) -A

(xv) স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার জন্ম হয়—
(a) 1949 খ্রিস্টাব্দে, (b) 1948 খ্রিস্টাব্দে,
(c) 1947 খ্রিস্টাব্দে, (d) 1849 খ্রিস্টাব্দে।

উত্তরঃ (a) 1949 খ্রিস্টাব্দে

(xvi) ব্রিটিশ ভারতের শেষ ভাইসরয় ছিলেন—
(a) মাউন্টব্যাটেন, (b) এটলি, (c) ক্যানিং,
(d) ওয়ারেন হেস্টিংস।

উত্তরঃ (a) মাউন্টব্যাটেন।

(xvii) পটডাম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল—
(a) 1943 খ্রিস্টাব্দে, (b) 1944 খ্রিস্টাব্দে,
(c) 1945 খ্রিস্টাব্দে, (d) 1946 খ্রিস্টাব্দে।

উত্তরঃ (c) 1945 খ্রিস্টাব্দে।

(xviii) 1949 খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত বিরোধী যে সামরিক চুক্তি হয়েছিল তা হল—
(a) ন্যাটো, (b) ব্রাসেলস্, (c) সিয়েটো,
(d) ওয়ারশ।

উত্তরঃ (c) সিয়েটো

(xix) 27 দফা দাবি পেশ করা হয়েছিল কোন সম্মেলনে ?
(a) বান্দুং, (b) বেলগ্রেড, (c) তেহেরান,
(d) নতুন দিল্লি।

উত্তরঃ (b) বেলগ্রেড

(xx) জিওনিস্ট-দের সংগঠনের সভাপতি ছিলেন—
(a) নাসের, (b) বেন গুরিয়ান,
(c) ওয়াইজম্যান, (d) আরাফত।

উত্তরঃ (c) ওয়াইজম্যান।

(xxi) পি. সি. মহলানবীশ ভারতে কোন্ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করেন ?
(a) প্রথম, (b) দ্বিতীয়, (c) তৃতীয়, (d) চতুর্থ।

উত্তরঃ (b) দ্বিতীয়।

(xxii) বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে ________ খ্রিস্টাব্দে।
(a) 1972, (b) 1971, (c) 1947, (d) 1975

উত্তরঃ (b) 1971

(xxiii) পেরেস্ত্রৈকার প্রবর্তক ছিলেন—
(a) ক্রুশ্চেভ, (b) লেনিন,
(c) স্তালিন, (d) গর্বাচেভ

উত্তরঃ (d) গর্বাচেভ

(xxiv) ভারতের প্রথম পারমাণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন—
(a) ভাটনাগর, (b) মেঘনাদ সাহা,
(c) রাজা রমন্না, (d) হোমি ভাবা।

উত্তরঃ (d) হোমি ভাবা

2. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির সংক্ষেপে উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) : 1×16=16

(i) মার্কেন্টাইলবাদ কী ?

উত্তরঃ অ্যাডাম স্মিথ ১৭৭৬ সালে তাঁর ‘দি ওয়েলথ অব নেশন’ গ্রন্থে বলেছিলেন ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলি পণ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারক কাঁচামাল সংগ্রহ ও বিক্রীর বাজার দখলের জন্য যে নীতি নিয়েছিল তা মার্কেন্টাইলবাদ।

অথবা,

1612 খ্রিস্টাব্দে ভারতের কোথায় প্রথম ইংরেজ বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপিত হয় ?

উত্তরঃ গুজরাটের সুরাটে ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে ভারতে প্রথম ইংরেজ বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপিত হয়।

(ii) কোন্ ইউরোপীয় দেশ চিনের সঙ্গে প্রথম ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল ?

উত্তরঃ পোর্তুগাল।

অথবা,

বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য চিনের কোন্ বন্দর দুটি সীমাবদ্ধ ছিল ?

উত্তরঃ ম্যাকাও ও ক্যান্টন

(iii) আলিনগরের সন্ধি কত খ্রিস্টাব্দে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ?

উত্তরঃ ১৭৫৭ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি, সিরাজ-উদ-দৌল্লা এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।

(iv) কোন্ ভূমিব্যবস্থা জমিদারদের জমির উপর মালিকানা স্বত্ব দিয়েছিল ?

উত্তরঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত।

অথবা,

কে, কবে পাঞ্জাবকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন ?

উত্তরঃ লর্ড ডালহৌসি।

(v) চিনে কোন্ বছর আফিং আমদানি বন্ধ হয় ?

উত্তরঃ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে।

অথবা,

উন্মুক্ত দ্বার নীতি কী এবং কে এর প্রবক্তা ?

উত্তরঃ মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিনে বিভিন্ন অঞ্চলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্যের সমান সুযোগ দেওয়ার নীতি উন্মুক্ত দ্বার নীতি নামে পরিচিত।

(vi) সাহুকার কাদের বলা হয় ?

উত্তরঃ বোম্বাই প্রেসিডেন্সির দরিদ্র কৃষকরা খাজনার অর্থ উঁচু সুদে যে মহাজনদের কাছ থেকে ধার করত, তাদের সাহুকার বলে।

(vii) কোন্ গভর্নর জেনারেল অ্যাংলিসিস্ট- ওরিয়েন্টালিস্ট বিতর্কের অবসান ঘটান ?

উত্তরঃ লর্ড উইলিয়াম বেন্টিক।

অথবা,

কবে এবং কেন স্যাডলার কমিশন গঠিত হয় ?

উত্তরঃ ১৯১৭ সালে ভারতীয় শিক্ষার উন্নতিকল্পে স্যাডলার কমিশন গঠিত হয়।

(viii) কেরালায় কে অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন ?

উত্তরঃ শ্রী নারায়ণ গুরু।

অথবা,

চীনে কোন বছর মে ফোথ আন্দোলন শুরু হয়েছিল ?

উত্তরঃ ১৯১৯ সালে।

(ix) মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন কবে পাস হয় ?

উত্তরঃ ১৯০৯ খ্রস্টিাব্দে।

(x) কবে এবং কাদের মধ্যে লক্ষ্ণৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ?

উত্তরঃ ১৯১৬ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ।

অথবা,

কবে ও কোথায় ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় ?

উত্তরঃ ১৯২৫ সালে ২৬ শে ডিসেম্বর কানপুরে

(xi) ক্যাবিনেট মিশনের তিনজন সদস্যের নাম লেখো।

উত্তরঃ লর্ড পেথিক লরেন্স, স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস এবং এ.ভি. আলেকজান্ডার।

অথবা,

রশিদ আলি দিবস কবে এবং কেন পালিত হয়েছিল ?

উত্তরঃ ১৯৪৬ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপ্টেন রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে মুসলিম লিগের ছাত্র সংগঠন ধর্মঘটের ডাক দেয়।

(xii) হো-চি-মিন কে ছিলেন ?

উত্তরঃ ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা।

অথবা,

কোন্ বছর ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হয় ?

উত্তরঃ ১৯৪৯ সালে।

(xiii) ‘এশিয়া এশিয়াবাসীর জন্য’ এই স্লোগান কোন্ দেশের ?

উত্তরঃ জাপানের।

(xiv) মার্শাল পরিকল্পনা কী ?

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে ৫ই জুন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আর্থিক পুণরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে মার্শাল যে কর্মসূচি ঘোষণা করেন তাকে মার্শাল পরিকল্পনা বলে।

অথবা,

ওয়ারশ চুক্তি কবে এবং কেন স্বাক্ষরিত হয় ?

উত্তরঃ ১৯৫৫ সালের মে মাসে, কমিউনিস্ট দেশগুলির সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং রুশ কর্তৃক বজায় রাখার জন্য ওয়ারশ চুক্তি করে।

(xv) দাঁতাত কী ?

উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিনীদের ১৯৬০ এর দশকে শেষের দিকে পারস্পরিক
নমনীয় ভাব কে দাঁতাত বলা হয়।

(xvi) বেন বেল্লা কে ?

উত্তরঃ আলজেরিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি।

অথবা,

পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি’ কে গঠন করেন?

উত্তরঃ জুলফিকার আলি ভুট্টো।

H.S HISTORY QUESTION PAPER
2015 2016 2017 2018 2019
2020 NoEx 2022 2023

This Post Has 8 Comments

  1. Anonymous

    Long question answer are not here

Leave a Reply